কিশোর ঘোষ: বছর খানেক আগের কথা। প্রকাশ্যে এসেছে পদ্ম পুরস্কারের তালিকা। নাম রয়েছে উস্তাদ রাশিদ খানের। তবু হালকা মন খারাপ রামপুর-সহসওয়ান ঘরানার জগতখ্যাত এই শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পীর। কেন? যেহেতু বাংলার নয়, পুরস্কারের তালিকায় উত্তরপ্রদেশের শিল্পী হিসেবে তাঁকে উল্লেখ করা হয়েছিল। এই বিষয়ে একটি সংবাদমাধ্যমকে রাশিদ বলেছিলেন, ‘উত্তরপ্রদেশ দেশের বাইরে নয়। এই সম্মান দেশের সম্মান।’ যদিও এর পরেই তাঁর সংযোজন ছিল- ‘বছরের পর বছর আমি বাংলায় আছি। এটাই আমার কর্মস্থল। এখান থেকেই আমি সবকিছু করেছি। আমি যেখানেই যাই সেখানে বাংলার শিল্পী হিসেবে যাই। এই সম্মান পেয়েছি। তাতে আমি খুশি। তবে এই সম্মান যদি বাংলার শিল্পী হিসেবে দেওয়া হত, তাহলে আরও ভালো লাগত।’ অতএব, বলাই যায়, সেদিন ভারত সরকার কর্তৃক তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মভূষণ পেয়েছিলেন ‘বাংলার গর্ব’ রাশিদ খান। ৯ জানুয়ারি, ২০২৪ যে তারা খসার দিন!
হতে পারে উত্তরপ্রদেশে বদায়ুঁতে জন্ম শিল্পীর। ঘরানা ছিল রামপুর-সাসওয়ান। যে ঘরানার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাশিদেরই পূর্বজ ইনায়েত হুসেন খাঁ-সাহিব। রাশিদ তালিম নিয়েছেন এই ঘরানারই আর এক দিকপাল উস্তাদ নিসার হুসেন খাঁ-সাহিবের কাছ থেকে। যিনি ছিলেন আবার রাশিদের দাদু। রাশিদের মামা গোয়ালিয়র ঘরানার উস্তাদ গুলাম মুস্তাফা খাঁ-সাহেবের থেকেও তালিম পেয়েছেন রাশিদ। পরবর্তীকালে তরুণ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে ভারত জোড়া নাম। তাঁর জাদুকণ্ঠের ছোঁয়া পায় বলিউডের সিনেমার গানও। তথাপি তিনি বাংলার। বাঙালিরই উস্তাদ গর্ব। কেন? কীভাবে?
ছোটবেলায় যার গানে বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না, সেই ছেলেই ১১ বছর বয়সে প্রথম সঙ্গীতানুষ্ঠান করেন। ভোরের সূর্য বলে দিয়েছিল দিনটা কেমন যাবে। কয়েক বছর পরে যুবক রাশিদ খানকে বিরাট ‘সার্টিফিকেট’ দিয়েছিলেন পণ্ডিত ভীমসেন যোশী। গান শুনে মন্তব্য করেন- “ভারতীয় কণ্ঠ সঙ্গীতের ভবিষ্যত উজ্জ্বল।” উল্লেখ্য, যে দুই শিল্পীর ওস্তাদি গায়ন অনুপ্রাণিত করেছিল রাশিদ খানের সঙ্গীত জীবনকে, তাঁদের অন্যতম ভীমসেন যোশী। দ্বিতীয় মানুষটির সঙ্গে আবার বাংলার গভীর যোগ, তিনি উস্তাদ আমির খান।শহর কলকাতা ছিল যাঁর সাধনস্থল।