মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ জানিয়েছেন, বিদেশ থেকে আসা আততায়ীরাই এ সব করেছে। তাদের ধরতে চিরুনি তল্লাশি চলছে। বছরের শুরুতে আবার অশান্ত মণিপুর। মোরেহ জেলায় ব্যারাকে ঢুকে পুলিশ বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি চালাল এক সশস্ত্র দুষ্কৃতী। আহত হয়েছেন সাত জন জওয়ান। তাঁদের মধ্যে চার জন মণিপুরের পুলিশ কর্মী, এক জন বিএসএফ জওয়ান। ওই বিএসএফ জওয়ানের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের কপ্টারে করে মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলে চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছে। আরআইএমএস (রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স) হাসপাতালে ভর্তি তাঁরা।
মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ জানিয়েছেন, বিদেশ থেকে আসা আততায়ীরাই এ সব করেছে। তাদের ধরতে চিরুনি তল্লাশি চলছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের সন্দেহ মায়ানমার থেকে আসা ভাড়াটে আততায়ীরা এ সব করেছে। আমরা কোনও চাপের কাছে নতি স্বীকার করব না। রাজ্য এবং দেশবাসীর কাছে আমরা এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’’ জঙ্গিদের দমন করতে সব রকম পদক্ষেপ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বছরের প্রথম দিনেই থৌবল জেলার লিলং এলাকায় তিন জনকে গুলি করে খুন করা হয়েছে। আহত পাঁচ জন। নিরাপত্তা আধিকারিকেরা সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে এ খবর জানিয়েছেন। অভিযুক্তেরা ফৌজির পোশাকে ছিলেন। তাঁরা লিলংয়ে সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করেন। তাতেই মৃত্যু হয়। তার পরেই মণিপুরের ইম্ফল পূর্ব, ইম্ফল থৌবল, কাকচিং, বিষ্ণুপুর জেলায় কারফিউ জারি করা হয়। এই পরিস্থিতিতে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ নাগরিকদের সংযত হওয়ার আবেদন জানান। মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন তিনি। ভিডিয়ো বার্তায় বীরেন জানান, এই ঘটনাকে হালকা ভাবে নেওয়া হচ্ছে না। দোষীদের ধরতে উদ্যোগী মণিপুর পুলিশ। আইন মেনে পদক্ষেপ করা হবে। লিলংবাসীদের হিংসা থেকে দূরে থাকারও আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
২০২২ সালের ৩ মে জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল মণিপুরে। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দেয়। এর পরেই জনজাতি সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই মণিপুরের আদি বাসিন্দা হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকি জ়ো-সহ কয়েকটি তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ের (যাদের অধিকাংশই খ্রিস্টান) সংঘাতের সূচনা হয়েছিল। অশান্তি ঠেকাতে গত ৬ মে মণিপুরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। নামানো হয় সেনা এবং অসম রাইফেলসকে। তার পরেও হিংসা থামেনি। এখনও পর্যন্ত সে রাজ্যে নিহত অন্তত ১৭০ জন। আহত হাজারের বেশি। ঘরছাড়া ৬০ হাজারের বেশি মানুষ।