অযোধ্যায় এসে দিনরাত রামনাম শোনার প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু কলকাতা থেকে অযোধ্যা বিমান সফরও যে রামময় হয়ে উঠবে ভাবা যায়নি। নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে নতুন বিমানবন্দরে নেমে দেখা গেল ভক্তির অন্য রূপ।
বিমানে সবে ঘোষণা হয়েছে— আর কিছু ক্ষণের মধ্যেই অযোধ্যার মহর্ষি বাল্মীকি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ। বিপুল ধ্বনিতে স্লোগান উঠল— ‘জয় শ্রীরাম’
কান অনেক আগে থেকেই অবশ্য অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। মঙ্গলবার কলকাতা থেকে অযোধ্যা সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হয়েছে। বুধবার সেই বিমানের পুরোপুরি দখল রামভক্তদের হাতে। কলকাতা বিমানবন্দর থেকেই সেটা মালুম হয়েছিল। গেরুয়াধারী, পাগড়ি মাথায় মহিলা-পুরুষ বোর্ডিংয়ের লাইনে দাঁড়িয়ে। বিমানে উঠেই তাঁরা শুরু করে দিলেন রামগান। ভজনের সঙ্গে রামচরিত মানস। হনুমান চালিশাও। বিমানসেবিকা তখন নিয়মমাফিক নিরাপত্তার নির্দেশ শোনাচ্ছেন। কিন্তু সে সব কিছু শোনা যাচ্ছে না রামগানের মাহাত্ম্যে।
না জানা থাকলে যে কেউ মনে করতেই পারেন অযোধ্যাগামী বিমান নয়, বরযাত্রী চলেছে। মাঝ আকাশে প্রসাদ বিতরণ থেকে গলা মিলিয়ে জয়ধ্বনি সবই হল। শুধু ধূপধুনোটুকুই বাকি ছিল। বিমান থেকে নামার পরে তৈরি হল নতুন দৃশ্য। একে একে ভক্তেরা নামছেন আর নতুন বিমানবন্দরের মাটি ছুঁয়ে প্রণাম করছেন। কেউ কেউ তো সাষ্টাঙ্গে। অনেকে সিমেন্টের গুঁড়ো দিয়েই কপালে তিলক কাটলেন।
এটা কেন? উত্তর দিলেন কালীঘাটের মেয়ে কিন্তু অযোধ্যার বৌমা। দীপা ওয়াধওয়ানি হাজরার অদূরে খালসা স্কুলের ছাত্রী ছিলেন। বাবার ছিল ইটের ব্যবসা। চার দশক আগে কলকাতার এই কন্যা বৌ হয়ে এসেছিলেন অযোধ্যায়। ১৯৯২ সালে করসেবকদের সেবাও করেছেন। আলাপ বিমানে ওঠার আগেই। বিমান থেকে নেমে দীপা গাড়ির অপেক্ষায় ছিলেন অযোধ্যা বিমানবন্দরের বাইরে। ভূমি-প্রণামের ছবি তুলতে দেখে এগিয়ে এসে স্পষ্ট বাংলায় বললেন, ‘‘এখানে একটা গান খুব গাওয়া হয়। চন্দন হ্যায় ইস দেশ কি মাটি, তপভূমি সব গাঁও হ্যায়, হর বালা হ্যায় দেবী কি প্রতিমা, বাচ্চা বাচ্চা রাম হ্যায়।’’ সুর দিয়ে শোনালেনও। তার পরে অল্প হেসে বললেন, ‘‘এই ভূমির সব শিশুই রাম আর সব ধূলিকণাই চন্দনের মতো পবিত্র।’’
চারপাশে তাকিয়ে মনে হল, নতুন কোনও শহর তৈরি হচ্ছে। চারদিকে ধূ ধূ মাঠ। বিমানবন্দর বলতে যা বোঝায়, আদৌ তা নয়। দ্বিতীয়ায় শুরু করে ষষ্ঠীতে দুর্গাঠাকুর মণ্ডপে এসে যাবে বলে যেমন প্যান্ডেল হয় তেমন। সোমবার রামমন্দিরের উদ্বোধন। দেশ-বিদেশের অতিথিরা তো এই পথেই রামভূমে ঢুকবেন! তবে এটাই হয় তো শাস্ত্র্রের বিধান— অসম্পূর্ণ মন্দির উদ্বোধনের জন্য অসম্পূর্ণ বিমানবন্দর।