আন্তর্জাতিক আদালতে অবিলম্বে যুদ্ধ থামানোর দাবি জানিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে তারা দু’টি অভিযোগ তুলেছে— এক, যুদ্ধের নামে গাজ়ায় নৃশংসতা চালিয়ে যাওয়া।
৯৮ দিনে পা দিল হামাস-ইজ়রায়েল যুদ্ধ। গাজ়ার হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, ইজ়রায়েলের হামলায় গাজ়ায় কমপক্ষে ২৩,৭০৮ জন নিহত। তা বাদ দিয়েও অসংখ্য দেহ ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়ে রয়েছে। যুদ্ধে জখম ৬০ হাজারের বেশি মানুষ। জলের অভাব, খাবার নেই, বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, চিকিৎসা সামগ্রীর অভাব, রাষ্ট্রপুঞ্জ হাতাশা প্রকাশ করে জানিয়েছে, গাজ়া স্ট্রিপ আর বাসযোগ্য নেই। এ অবস্থায় দ্য হেগ-এর ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস কোর্টে ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। গত কাল থেকে মামলার শুনানি শুরু হয়েছে।
আন্তর্জাতিক আদালতে অবিলম্বে যুদ্ধ থামানোর দাবি জানিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে তারা দু’টি অভিযোগ তুলেছে— এক, যুদ্ধের নামে গাজ়ায় নৃশংসতা চালিয়ে যাওয়া। দুই, প্যালেস্টাইনিদের নিয়ে ইজ়রায়েলি আধিকারিকদের বিতর্কিত মন্তব্য। আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকার আইন মন্ত্রী রোনাল্ড লামোলা জানিয়েছেন, ১৯৪৮ সাল থেকে ইজ়রায়েলের হাতে অত্যাচারিত হয়ে চলেছে প্যালেস্টাইন। তিনি বলেন, ‘‘৭ অক্টোবর থেকে হিংসা, হানাহানি শুরু হয়নি। প্যালেস্টাইন গত ৭৬ বছর ধরে এই হিংসা সহ্য করে চলেছে।’’ লামোলার কথায়, ‘‘২০০৪ সাল থেকে গাজ়ায় স্থলপথে ঢোকা-বেরোনো (ল্যান্ড ক্রসিং) নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে ইজ়রায়েল। সাধারণ মানুষ ঘরবাড়ি, পরিকাঠামোর উপরেও তাদের নিয়ন্ত্রণ।’’ যদিও মিশর সীমান্ত দিয়ে গাজ়ায় প্রবেশ করা যায়।
দক্ষিণ আফ্রিকার মন্ত্রী বলেন, ‘‘গাজ়া কিন্তু আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় পড়ে। ২০২৩-এর ৭ অক্টোবর হামাস যা করেছিল, দক্ষিণ আফ্রিকা সেটারও নিন্দা করছে। কিন্তু তার পরেও এ ভাবে আইন, নৈতিকতা ভঙ্গ করে গাজ়ায় হামলা চালানোকে যুক্তিসঙ্গত বলা যায় না। ইজ়রায়েল সব সীমা অতিক্রম করে গিয়েছে। ‘১৯৪৮ জিনোসাইড কনভেনশন’ ভেঙে গাজ়ায় গণহত্যা চালিয়েছে। সেই কারণেই দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা
দায়ের করেছে।’’
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধি আইনজীবী আদিলা হাসিম বলেন, জিনোসাইড কনভেনশনের দ্বিতীয় উচ্ছেদ ভঙ্গ করেছে ইজ়রায়েল। তিনি বলেন, ‘‘প্রতি সপ্তাহে ৬ হাজার বোমা ফেলেছে ওরা... কাউকে রেহাই দেওয়া হয়নি। এমনকি সদ্যোজাতদেরও ছাড়া হয়নি। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিবও বলেছে, গাজ়া শিশুদের কবরস্থান হয়ে গিয়েছে।’’ আদিলা জানিয়েছেন, কেউ যুদ্ধ-যন্ত্রণা থামাতে পারবে না, একমাত্র আদালত যদি না পদক্ষেপ করে।
ইজ়রায়েল এ সব শুনতে রাজি নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরোধিতা করে আদালতে সরব হন তাদের একাধিক প্রতিনিধি। ইজ়রায়েলের বিদেশ মন্ত্রকের আইনি উপদেষ্টা টাল বেকার কোর্টকে বলেন, ৭ অক্টোবর হামাস যে নৃশংস হামলা চালিয়েছিল, সেটা দেখছে না দক্ষিণ আফ্রিকা। সম্পূর্ণ ‘উপেক্ষা’ করে যাচ্ছে। আত্মরক্ষা করার অধিকার ইজ়রায়েলের রয়েছে। তিনি উল্টো চাপ দিয়ে বলেন, হামাসের সঙ্গে যোগসাজশের জন্য বরং দক্ষিণ আফ্রিকাকে কাঠগড়ায় তোলা উচিত আন্তর্জাতিক আদালতের। ইজ়রায়েলের সমর্থনে আদালতে গলা চড়ান আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ক ব্রিটিশ অধ্যাপক ম্যালকম শ। ক্রিস্টোফার স্টেকার নামক এক আন্তর্জাতিক আইনজীবী (ইজ়রায়েলের প্রতিনিধি) বলেন, ইজ়রায়েল গাজ়ায় ত্রাণ-সাহায্য পাঠিয়েছিল। ইজ়রায়েলের আইন মন্ত্রকের প্রতিনিধি গালিট রাগুয়ান বলেন, গাজ়ায় এত মৃত্যুর জন্য দায়ী হামাস-ই। তিনি এ-ও দাবি করেন, ইজ়রায়েল কোনও হাসপাতালে বোমা ফেলেনি। শুনানির চূড়ান্ত পর্যায়ে ইজ়রায়েলের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল গিলাড নোয়াম বলেন, হামাস ইজ়রায়েল-ঘোষিত একটি জঙ্গি গোষ্ঠী। আরও বহু দেশ তাদের জঙ্গি সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে। তারা ইজ়রায়েলে একের পর এক সন্ত্রাস হামলা চালিয়ে গিয়েছে।