shabd-logo

টাইগার

3 December 2023

0 Viewed 0

তাকে উলটে দেখলাম থাবার তলাটা গোলাপী মখমলের মতো, মাঝে- মাঝে কচি-কচি সাদা লোম। পেটের তলাটাও গোলাপী-নরম তুলতুলে এক জায়গায় একটা শিরা না কি যেন ধুন্ধুক্ করছে। মুণ্ডুটাকে তুলে আবার নিজের পেট দেখতে চেষ্টা করছে, চোখ দুটো, বিল্-বিল্ করছে। মুখের কাছে তুলে ধরতেই কচি একটা লাল জিব বের করে আমার গাল-গলা চেটে দিতে লাগল। আঃ!

একটু দুধ পেলে বেশ হত। খুকুর বাটিটা হাতে নিয়ে গুটিগুটি গেলাম রান্নাঘরের দরজার কাছে।

"ও পিসিমা, একটু দুধ দেবে?" পিসিমা হাসি-হাসি মুখ করে হাতা ভরে দুধ নিয়ে দরজার কাছে এলেন।

"খিদে পেয়েছে বুঝি, দেখি বাটি!"

বাটি এগিয়ে দিলাম।

পিসিমা হাতা হাতে অবাক হয়ে আমার বগলের দিকে চেয়ে রইলেন।

"ছি, ছি, ওটাকে ফেলে দে বলছি! ভারি নোংরা জানোয়ার, ঘর- দোর একাকার করবে এখুনি!"

বাচ্চাটাকে তুলে ধরলাম, "দ্যাখ, পিসিমা, কিরকম গুগুল্ করে তাকাচ্ছে। দাড়ির নীচের খাঁজগুলো দ্যাখ।"

পিসিমা দুধের হাতা মাটিতে ফেলে দিয়ে দু হাত সরে গেলেন "আহা, কি করিস, কি করিস, রান্না করছি যে! যেখান থেকে এনেছিস সেখানে দিয়ে আয়!" ভালো চাস তো

বাচ্চাটাকে নীচে নামিয়ে দিলাম। লাল একটা ক্ষুদে জিব দিয়ে চুচুক্ করে মাটি থেকে দুধ চেটে খেতে লাগল। পিসিমা কি দেখতে পাচ্ছেন না?

পিসিমা বললেন-"তোমার বাবা একবার দেখলে হয়। এমনিতেই বিষম রেগে আছে, তোমার দাদা-রত্নটি অঙ্কে বারো পেয়েছে। তাই নিয়ে অনেক লাঞ্ছনা-গঞ্জনা হয়ে গেছে। এখন ছুটির দিনে, চাঁদ, তুমি এলে নেড়িকুত্তোর বাচ্চা কোলে করে। তাও যদি মোটাসোটা সাদা রঙের হত! তোমার কপালে আজ কি আছে কে জানে! তোমার রিপোর্ট এসেছে? যাও-না উপরে, কি হয় দেখো!"

বিষম রাগ হল। বাচ্চাটাকে তুলে নিতে চেষ্টা করলাম।

"পিসিমা ভালো না, খাস না ও দুধ। আমি তোকে ভালো দুধ কিনে দেব।"

কিন্তু বাচ্চাটা কিছুতেই ছাড়বে না, ভীষণ ভাবে দুধ চেটে সাফ করে দিতে লাগল ।

"ওঃ, লবাব! মাস-কাবারে পাস তো একটা টাকা। তাও তো খেয়ে-দেয়ে দেনায় ডুবে থাকিস! উনি আবার দুধ কিনবেন!" জোর করে বাচ্চাটাকে তুলে নিলাম।

"আচ্ছা আচ্ছা, দ্যাখা যাবে, দুধ কিনতে পারি কি না দ্যাখা যাবে! আর, কি রিপোর্টের ভয় দ্যাখাচ্ছ? আমার রিপোর্ট কোথায় হারিয়ে গেছে।"

পিসিমা আঁৎকে উঠলেন- "রিপোর্ট হারিয়ে গেছে কি রে? ওরে শোন্-না, আবার কোথায় চললি-"

আমি উঠোন পার হয়ে, চৌবাচ্চার পাশের খিড়কি দরজা দিয়ে

বেরিয়ে, আস্তে আস্তে পিছনের বাগানে গেলাম। পেয়ারাগাছ তলায় দাদা চুপ করে শুয়ে আছে। নিচু ডালে দুটো

ইয়া বড়া-বড়া পাকা পেয়ারা ঝুলছে, দাদা সেগুলো পাড়ছে না।

আমি কুকুর-বাচ্চা কোলে নিয়ে সে দুটো পেড়ে দাদার পাশে আসন- পিঁড়ি হয়ে বসলাম। কুকুর-বাচ্চাটাকে আমার সামনে বসালাম। সে দুটো ছোট-ছোট থাবা গেড়ে উঁচু হয়ে বসে, ঘাড় কাত করে অবাক হয়ে দাদাকে দেখতে লাগল।

দাদা মুখ তুলে রেগে-মেগে বলল, "যা এখান থেকে। চান কর গে, ভাত খাগে।"

আমি বললাম, "তুমি করবে না?"

"না, যা বলছি এখান থেকে, নইলে ভালো হবে না।"

কুকুর-বাচ্চাটা আস্তে আস্তে উঠে গিয়ে দাদার কান চাটতে লাগল। 'দাদা চমকে, হাত-পা ছুড়ে, একেবারে উঠে বসল। ইস্, মুখটা কি লাল টক্টকে। দাদা হাঁ করে কুকুর-বাচ্চাকে দেখতে লাগল। সে দাদার হাঁটুর উপর ক্ষুদে মাথাটা রেখে সরু দড়ির মতো ল্যাজটা নাড়তে লাগল। দাদা শেষটা ওর মাথায় হাত বুলোল, ওকে কোলে তুলে নিল, ওর পেটে মুখ গুঁজে দিল।

তার পর ওকে কোলের উপর নামিয়ে রেখে বলল, "দে তো একটা পেয়ারা! ইস্, কি বড়-বড় হয়েছে এই কদিনে!" দুজনে পেয়ারা দুটো খেয়ে ফেললাম, বিচি-টিচি সব গিলে ফেললাম।

দাদা বলল, "পেয়ারা গাছের ছায়াটা পাঁচিলের কাছে চলে গেছে।

কত বেলা হয়ে গেছে। তুই যা, চান কর।"

আমি মাথা নাড়লাম। দাদা বলল, "খাবি না?"

"না, আমার পেটব্যথা হয়েছে।"

"বাচ্চাটা খাবে না?"

"পিসিমার কাছ থেকে দুধ নিয়ে খাইয়েছি। পিসিমা হয়তো বাবাকে বলে দেবে, তা হলে হয়তো বাবা ওকে রাখতে দেবে না।" দাদা ঘাসের উপর চিত হয়ে শুয়ে বাচ্চাটাকে বুকের উপর বসিয়ে

রেখেছিল।

"তবে কি হবে?"

"হয়তো বলবে না। দাদা, মা থাকলে বেশ হত, কেন যে মা আবার মামাবাড়ি গেল! কি বাজে জায়গা, কেন যে যায়।" দাদা চোখ বুজে কুকুরটাকে বুকে চড়িয়ে চুপ করে শুয়ে রইল। "কি নাম রাখা যায় বল তো?"

দাদা চোখ খুলে বলল, " 'টাইগার' বেশ নাম।"

আমি বাচ্চাটাকে শূন্যে উঁচু করে ধরে বললাম-

"এই টাইগার! বুক তুলে মাথা উঁচু করে দাঁড়া! টাইগার হয়েছিস, ব্যাঘ্র হয়েছিস।"

টাইগার শূন্যের উপর ল্যাজ নাড়তে চেষ্টা করতে লাগল। পিসিমা উঠোন থেকে আমাকে ডাকতে ডাকতে খিড়কি দরজা অবধি এলেন। দাদা বলল-

"যা শিগির!" বলেই কাঁটা-ঝোপটার পেছনে লুকিয়ে পড়ল। আমি আস্তে আস্তে পা টানতে টানতে পিসিমার কাছে গেলাম।

"আচ্ছা ছেলে বাপু তুমি! বারোটা বাজল, স্নান নেই, খাওয়া নেই! তোমার মা এলে আমি বাঁচি।"

আমি বললাম, "মা এলে আমিও বাঁচি। আমার অসুখ করেছে, আমি স্নানও করব না, খাবও না।" বলে আমি খুব খানিকটা কেঁদে- তেঁদে পিসিমাকে ব্যস্ত করে তুললাম।

শেষটা গরম জল দিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে মুছে কাপড় ছেড়ে শুতে গেলাম। দাদা যে কোথায় গেল?

পিসিমা বললেন, "যাই বাবা, খাওয়ার পালা সেরে আসি। বেশ ছুটির দিনটা কাটছে! একজনের অঙ্কে বারো পেয়ে খাওয়া বন্ধ, একজনের শরীর খারাপ, বাপ গেলেন মাছ ধরতে। যাই আমি একাই খানিকটা গিলে আসি।"

তাই বল। দাদা অঙ্কে বারো পেয়েছে বলে দাদার খাওয়া বন্ধ। কাল দাদা আমাকে কয়েকটা রঙিন খড়ি দিয়েছিল। বালিশে মুখ <ভজে খানিকক্ষণ শুয়ে থাকলাম।

পিসিমা খেয়ে দেয়ে এসে, পাশের ঘরে মাটিতে মাদুর পেতে শুয়ে পড়লেন। আমাকে ডেকে বললেন-"কুকুর-বাচ্চাটার কি করলে? ও-সব নোংরা জিনিস ঘাঁটো বলেই তো শরীর খারাপ হয়। এখন থাক চুপ করে শুয়ে, তোমার রিপোর্ট হারানোর কথা শুনলে তো আছে বিকেলে আরেক পালা। তোমরা দুটি ভাই দুটি মানিক-জোড়! নাও, -এখন ঘুমোও তো!"

একটু পরেই সুড় ও সুড়ৎ করে পাখি উড়ে যাওয়ার মতো আওয়াজ করে পিসিমা নাক ডাকাতে লাগলেন।

আমিও উঠে পড়ে বাগানে চলে গেলাম। দাদা কাঁটাঝোপের ছায়ায় টাইগারকে নিয়ে খেলা করছে। বললাম- "দাদা, চল, টাইগারকে নিয়ে কোথাও চলে মাওয়া যাক!"

দাদা বললে, "কোথায় যাবি?"

"কেন মামাবাড়িতে, মার কাছে। ওরা টাইগারকে দেখে খুব খুশি হবে। ওরা কুকুর ভালোবাসে, বেড়াল ভালোবাসে, কাকাতুয়া ভালোবাসে, খরগোশ ভালোবাসে। চল দাদা, হেঁটেই চলে যাওয়া যায় না?"

দাদা মাথা নাড়ল, "না রে, সে অনেক দূর। জানিস, আমার এ- বছর সার্কাস দ্যাখা বন্ধ, সিনেমা দ্যাখা বন্ধ, আসছে রবিবার মা এলে তোরা সবাই পিকনিক যাবি, আমি যাব না।"

আমি উঠে পড়ে দাদার হাত ধরে হিড়হিড় করে টেনে অনেকটা এগিয়ে আনলাম।

"দাদা তুই একটা স্টুপিড্! অঙ্কে বারো পাস কেন। আমি তো

বত্রিশ পেয়েছি।” দাদা কোনো উত্তর না দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিল। কুকুর-বাচ্চাটা এ-সব দেখে মহা কেঁই-কেঁই জুড়ে দিল। তাকে

আবার কোলে নিতে হল।

দাদা বলল-"ওকে কোথায় পেলি?"

"শিকাদারদের মালী ওকে বেচে দিয়েছে। ওর মার সাতটা বাচ্ছা হয়েছিল। একটা রেখে সব-কটা বিলিয়ে দিয়েছে। বুড়ো শিকদারমশাই নাকি বলেছেন, একটা রেখে সব-কটাকে জলে ডুবিয়ে দাও।"

"ই-স্! কি নিষ্ঠুর।"

"মালী কিন্তু জলে ডুবোয় নি। চার-আনা করে দামে বেচে দিয়েছে। বলেছে নাকি বিলিতি কুকুরের খুব দাম হয়। আমি চার- আনা দিয়ে ওকে কিনেছি।"

"পিসিমাও ওকে রাখতে দেবে না, আর বাবাও দেবে না। কুকুর- বাচ্চা কেন জন্মায়?"

"এই টাইগার, তুই জন্মালি কেন? তোকে কেউ চায় না।" টাইগার তাই শুনে আনন্দের চোটে আমার কোলে নেচে-কু দে, ল্যাজ নেড়ে, ঘেউ-ঘেউ শব্দ করে একাকার! দাদাকে বললাম-"বাবা কক্ষনো ওকে রাখতে দেবে না, দাদা। আমার রিপোর্টটা কোথায় হারিয়ে গেছে।"

দাদা বিরক্ত হয়ে টাইগারকে একটু ঠেলে দিল, টাইগার মহা খুশি হয়ে ছুটতে ছুটতে এসে, দাদাকে খেলা করে কামড় দিতে লাগল। ছোট্ট ইঁদুরের ল্যাজের মতো ল্যাজ, নড়ে নড়ে খসে পড়বার জোগাড়! দাদা রাগ-রাগ গলায় বলল-"জেনে-শুনে আনলি কেন? বাবা যদি রামদীনকে বলে ওকে জলে ডুবিয়ে দিতে?"

"ইস্, বাবা কক্ষনো বলবে না।"

"আজ বলতে পারে।"

আমি চুপ করে রইলাম।

দাদা টাইগারকে কোলে নিয়ে বলল-"চল, চলে যাই। বাবা বলেছে আমার লেখাপড়া হবে না। তা হলে তোরও বোধ হয় হবে না। হেঁটে-হেঁটেই মামাবাড়ি চল। কত লোক তো হেঁটে-হেঁটে জগন্নাথ দেখতে পুরী যায়।"

তখন আমরা আস্তে-আস্তে পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। দাদার পায়ে জুতো ছিল, আমার খালি পা, হাঁটতে-হাঁটতে বিকেল হয়ে গেল। আমার জল-তেষ্টা পাচ্ছিল, পা ব্যথা করছিল। কত সব বাড়ি-টাড়ি ছাড়িয়ে চলে গেলাম, পাড়াগাঁ সব এসে গেল। এক জায়গায় একজনের বাড়িতে জল খেলাম, টাইগারও খেল।

বিকেল হয়ে গেল, সন্ধে হয়ে গেল। দাদা হাঁটছে তো হাঁটছেই। শেষটায় আমি একটা বড় গাছের গুড়িতে ঠেস দিয়ে বসে পড়লাম। "দাদা, আমি আর হাঁটতে পারছি না।"

দাদা আমার পাশে বসে আমার পায়ের গুলি টিপে দিতে লাগল। আমি কোলের উপর টাইগারকে নিয়ে পা ছড়িয়ে বসলাম, আর দাদা আমার পা টিপে দিল। শেষটা দুজনেই ঘুমিয়ে পড়লাম।

যখন রাত আটটা-নটা হবে, বাবা এসে আমাদের বাড়ি নিয়ে গেল। গাড়ি নিয়ে খুঁজে খুঁজে দেখল গাছতলায় তিনজনে ঘুম লাগাচ্ছি।

দাদা গাড়িতে উঠে টাইগারকে জাপটে ধরে বাবাকে বলল-"খুব ভালো বিলিতি কুকুর বাবা। মন্টু চার-আনা দিয়ে কিনেছে। বড় হয়ে খুব ভালো শিকারী-কুকুর হবে। আমাদের বাড়ি পাহারা দেবে।" বাবা কিছু না-বলে গাড়ি চালাতে লাগল।

তখন আমি কেঁদে ফেললাম-

"তুমি কি ওকে জলে ডুবিয়ে মেরে ফেলবে? ওর নাম টাইগার।"

বাবা খ্যাঁচ্ করে গাড়ি থামিয়ে আমাদের বলল-"কেন, আমি কি একটা পাষণ্ড?" আমরা কেউ কিছু বললাম না দেখে আরো বলল- "বেশ নাম টাইগার। একটা কলার কিনতে হবে, লাইসেন্স করাতে হবে।" আমি বললাম, "স্লাইসেন্স কেন করাতে হবে বাবা? গাড়ির লাইসেন্স তো আছে।"

দাদা বলল, "স্টুপিড্! ফুল!"

বাবা বলল, "আমি যখন ছোট ছিলাম, একটা নেড়িকুত্তোকে বাড়িতে এনেছিলাম। আমার বাবা তাকে কিছুতেই বাড়িতে ঢুকতে দেবে না, সেও কিছুতেই যাবে না। রোজ আমাদের দারোয়ান তাকে ঠেঙিয়ে তাড়িয়ে দিত, আর রোজ সে ঘুরে-ঘুরে ফিরে আসত। শেষটা দারোয়ানের ভাই একদিন তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেল। লোকটা ভালো ছিল। ঐ কুকুরটার নাম দিয়েছিলাম বাঘা।"

টাইগার কি বুঝল জানি না, এই পর্যন্ত শুনে হঠাৎ বাবার কনুই কামড়ে দিল। আমি তো ভয়ে আধমরা। বাবা জায়গাটা একটু ঘষে বলল, "আরে! ব্যাটার তো এরই মধ্যে খুব দাঁতের জোর হয়েছে!" প্রশংসা পেয়ে টাইগার আহ্ াদে আটখানা হয়ে মাথা দিয়ে বাবাকে প্রাণপণে ঠেলতে লাগল।

23
Articles
লীলা মজুমদার রচনাবলী ১
0.0
লীলা মজুমদারের ছোট ছোট কিছু অবিস্মরণীয় সৃষ্টি একত্রে আনা হয়েছে রচনাবলী ১ বইটির মধ্যে। এটি এমন একটি উপন্যাস যেখানে গল্পগুলি এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যাতে বইটি সব বয়সের মানুষই পড়তে পারেন, এবং এর মজা উপলব্ধি করতে পারেন।
1

পদিপিসীর বর্মিবাক্স

28 November 2023
0
0
0

পাঁচুমামার প্যাকাটির মতন হাত ধরে টেনে ওকে ট্রেনে তুললাম। শূন্যে খানিক হাত-পা ছুড়ে, ও বাবাগো মাগো বলে চেঁচিয়ে-টে চিয়ে শেষে পাঁচুমামা খচ্ করে বেঞ্চিতে উঠে বসল। তার পর পকেট থেকে লাল রুমাল বের করে কপালের

2

বক-বধ পালা

28 November 2023
0
0
0

পালা শুরু জুড়ির সুর করে আবৃত্তি, মৃদু মুনু তবলা ইত্যাদি সহযোগে পোড়া জতুগৃহ থেকে বাহিরিয়া যবে, পাণ্ডব বঝিলা মনে এ বিশাল ভবে গৃহ বন্ধু কিছু নেই, নিলা বনবাস। দুঃখে কষ্টে বৃক্ষতলে কাটে দিনমাস। কত যে বিপদ

3

এই যা দেখা

29 November 2023
2
0
0

কলকাতা শহরের উত্তর দিকে সরু একটা সদর রাস্তা, তাতে লোকজন গাড়িঘোড়ার ভিড় কত, ভোর থেকে গভীর রাত অবধি হাঁকডাক ঠেলাঠেলি। লোকে বলে পথটা খুব পুরনো, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্ব কালে তৈরি, ঘরবাড়িগুলো এ ওর গায়

4

ছেলেবেলার গল্প

30 November 2023
0
0
0

গণশার চিঠি ভাই সন্দেশ, অনেকদিন পর তোমায় চিঠি লিখছি। এর মধ্যে কত কী যে সব ঘটে গেল যদি জানতে, তোমার গায়ের লোম ভাই খাড়া হয়ে গেঞ্জিটা উঁচু হয়ে যেত, চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসত, হাঁটুতে হাঁটুতে ঠকাঠক্ হয়ে কড়া পড়

5

হলদে পাখির পালক

1 December 2023
0
0
0

এক কত দেরি হয়ে গেল ভুলো তবু বাড়ি এল না, সন্ধে হয়ে গেল, রাত হয়ে গেল। দাদু তাস খেলতে যাবার আগে বললেন, "খুঁজতে যাবার কিছু দরকার নেই, কেউ তোদের নেড়িকুত্তো চুরি করবে না, খিদে পেলে সুড়সুড় করে নিজেই বাড়ি ফি

6

বহুরূপী

2 December 2023
0
0
0

ছোটবেলাকার কত কথাই যে মনে পড়ে, কত কান্ডই যে তখন হত। একবার গুপের মামাতো ভাই ভোঁদা বলেছিল যে বহুরূপীরা পর পর সাতদিন আসে, একেক দিন এক এক নতুন সাজে। কখনো কখনো সবাই তাকে বহুরূপী বলে চিনে ফেলে, আবার কখনো কখ

7

মহালয়ার উপহার

2 December 2023
0
0
0

শিবু, শিবুর মা আর শিবুর বউ তিন নম্বর হোগলাপট্টি লেনের দোতলার তিনখানি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকত। একটা ঘরে শিবুর মা শুত, সেটা সব থেকে বড় ও ভালো, কারণ বুড়ি ভারি খিটখিটে। আরেকটাতে শিবু আর শিবুর বউ, শুত, সেটা মাঝ

8

ভানুমতীর খেল

3 December 2023
0
0
0

গোরুদের ঘরের পিছনের ছোট ফটকটার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই লোকটাকে দেখতে পেলাম। গোয়ালের কোনায় একটা মাটির ঢিবির উপর ঝোপের আড়ালে বসে-বসে একটা দেশলাই কাঠি দিয়ে দাঁত খুঁটছে আর একটু-একটু পা দোলাচ্ছে। সারা গায়ে ধুলো

9

পঞ্চমুখী শাঁখ

3 December 2023
0
0
0

বন্ধুদের দেশের বাড়িতে একটা প্রকাণ্ড পঞ্চমুখী শাঁখ আছে! শুনেছি শাঁখটা নাকি দেড়শো বছর ধরে ওদের বাড়িতে রয়েছে। ওর নানা- রকম গুণটুনও নাকি আছে। আগে রোজ ওর পুজো হত, পুরুতঠাকুর আসত, খাওয়া-দাওয়া হত। তবে সত্তর

10

হুঁশিয়ার

3 December 2023
0
0
0

যখন সামনের লোকটার লোমওয়ালা ঘেমো ঘাড়টার দিকে আর চেয়ে থাকা অসম্ভব মনে হল, চোখ দুটো ফিরিয়ে নিলাম। অমনি কার জানি একরাশি খোঁচা-খোঁচা গোঁফ আমার ডান দিকের কানের ভিতর ঢুকে গেল। চমকে গিয়ে ফিরে দেখি ভীষণ রোগা,

11

সেকালে

3 December 2023
0
0
0

পঁয়ষট্টি বছর আগে আমার মামাবাড়ির দেশে এক দিকে যেমন সাধু- সজ্জনের ভিড় ছিল এবং তার ফলে পুজোপার্বণ, তিথিপালন, হরির লুট, ব্রাহ্মণ-ভোজন, কাঙালী-বিদায় লেগেই থাকত, আবার তেমনি অন্য দিক দিয়ে ঠগ-ঠ্যাঙাড়ে, জোচ্চো

12

চোর

3 December 2023
0
0
0

ঠিক যেই নিতাইদের বাড়ির পেছনের সেই ঝাঁকড়ান্ডুলো ঝোপটার কাছে এসেছি, পকেট হাতড়ে দেখি যে আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে! সেই কোনা-মোড়া আধ-ময়লা নোটটা কে যেন বুক-পকেট থেকে তুলে নিয়েছে! ভীষণ ঘাবড়ে গেলাম। ভয়ের চোটে ক

13

টাইগার

3 December 2023
0
0
0

তাকে উলটে দেখলাম থাবার তলাটা গোলাপী মখমলের মতো, মাঝে- মাঝে কচি-কচি সাদা লোম। পেটের তলাটাও গোলাপী-নরম তুলতুলে এক জায়গায় একটা শিরা না কি যেন ধুন্ধুক্ করছে। মুণ্ডুটাকে তুলে আবার নিজের পেট দেখতে চেষ্টা কর

14

লোমহর্ষণ

3 December 2023
0
0
0

রাজামশাই ব্যস্ত হয়ে দরদালানে পায়চারি করে বেড়াচ্ছেন, খিদেয় পেটের এ-দেয়াল ও-দেয়াল একসঙ্গে লেপটে যাচ্ছে, টেবিল পাতা, সোনার বাসন-কোসন সাজানো, মুক্তো-বসানো গেলাসে কেয়ার গন্ধ-দেওয়া জল, রানী ওদিকে মখমলের গদি

15

ভালোবাসা

3 December 2023
0
0
0

আজকাল সবই অন্যরকম লাগে। দরজার কড়া নাড়বামাত্র ভিতর থেকে একটা ভারী জিনিস দরজার উপর আর আছড়েও পড়ে না। নখ দিয়ে কেউ দরজায় আঁচড়িয়ে, পালিশ উঠিয়ে, বকুনিও খায় না; ঘরে ঢুকবামাত্র নেচেকঁদে গায়ের উপর চড়ে একাকারও ক

16

তেজী বুড়ো

3 December 2023
0
0
0

আয়না দেখে আঁতকে উঠলুম। এ তো আমার সেই চিরকেলে চেহারা নয়! সেই যাকে ছোটবেলা দেখেছিলুম ন্যাড়া মাথা, নাকে সদি, চোখ ফুলো! তার পর দেখেছিলুম চুল খোঁচা, নাক খাঁদা, গালে-টালে কাজল! এই সেদিনও দেখলুম খাকি পেন্টেল

17

দিনের শেষে

5 December 2023
0
0
0

লক্ষ্ণৌ থেকে ওস্তাদ এসেছে। দাদু আর দিদিমা শ্যামলবাবুদের বাড়িতে গান শুনতে গেছেন, ফিরতে রাত হবে। ঝগড় বলল, "তা তোমরা যদি সব-কিছুই বিশ্বাস না করে আনন্দ পাও, তা হলে আমার আর কিছু বলবার নেই। তবে সর্বদা মনে

18

আমাদের দেশে

5 December 2023
0
0
0

আমাদের দেশের কথা আর কী বলব, সে কি আর এখন আমাদের আছে? একেবারে পাকিস্তানের পূর্বকোণে ঠুসে দিয়েছে। কিন্তু সেখানকার লাল-লাল গোল-আলু আর সেখানকার পাকা সোনালী আনারস আর আঠাল দুধের ক্ষীর যে একবার খেয়েছে সে সার

19

পালোয়ান

5 December 2023
0
0
0

নিউ মার্কেটের পিছনে বাঁদরের দোকান আছে। ছোট-ছোট খাঁচায় পোরা বাঁদরের ভিড়, এ-ওর গায়ে চিকে রয়েছে। তা ছাড়া সাদা ইঁদুর, বেজি, কাকাতুয়া, কালোমুখো ল্যাজ-প্যাঁচানো শ্যামদেশের বেড়াল, ভালুক বাচ্চা, আরো কত কি যে

20

গুণ-করা

5 December 2023
0
0
0

বুঝলে, আমার মামাবাড়িতে ফান্ড বলে একটা চাকর ছিল। বাঙালি নয়। ঐ গারো পাহাড়ে অঞ্চলে ওর বাড়ি। আশা করি গারো পাহাড় কোথায় সে কথা আর তোমাদের বলে দিতে হবে না। ফান্ড যে বাঙালি নয় সে ওকে দেখলেই বোঝা যেত। বেঁটে, ম

21

কি বুদ্ধি

5 December 2023
0
0
0

জন্তু জানোয়ারদের বিষয়ে কতরকম অদ্ভুত গল্পই যে শোনা যায় তার আরু ঠিক নেই। একবার নাকি একটি ব্যাঙ কেমন করে পাথরের ফোকরের মধ্যে বদ্ধ হয়ে গিয়ে, ঐভাবে কতকাল যে ছিল তার ঠিক নেই। বোধ হয় অনেক শো বছর। তার পর যেই

22

বনের ধারে

5 December 2023
0
0
0

ছোটবেলায় পাহাড়ে দেশে থাকতাম। চার দিকে ছিল সরলগাছের বন। তাদের ছুচের মতো লম্বা পাতা, সারা গায়ে ধুনোর গন্ধ, একটুখানি বাতাস বইলেই শোঁ শোঁ একটা শব্দ উঠত। শুকনো সময় গাছের ডালে ডালে ঘষা লেগে অমনি আগুন লেগে য

23

মেজোমামার প্রতিশোধ

5 December 2023
0
0
0

আমার মেজোমামাকে নিশ্চয় তোমরা কেউ দ্যাখ নি। হাড় জিজিরে রোগা বেঁটে মতন, সরু লিক্লিকে হাত-পা, সারা মুখময় খোঁচা-খোঁচা দাড়ি গোঁফ। কারণ মেজোমামা দু সপ্তাহে একবার দাড়ি চাঁচেন, নাকি দাড়ি কামালেই মুখময় আঁচড়ে য

---