shabd-logo
Shabd Book - Shabd.in

জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা

জীবনানন্দ দাশ

64 Chapters
0 Person has added to Library
18 Readers
Completed on 17 January 2024
Free

জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি জীবনানন্দ দাশ সংকলিত স্বরচিত কবিতার একটি সংকলন। কবির মৃত্যুর কয়েকমাস পূর্বে ১৯৫৪ সালের মে মাসে এই গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থটি সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার অর্জন করে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে। জীবনানন্দ দাশের জীবদ্দশায় প্রকাশিত এই সংকলন গ্রন্থের জন্য কবিতা নির্বাচন করেছিলেন কবি বিরাম মুখোপাধ্যায় বইটির বর্তমান প্রকাশক ভারবি। কবি পূর্ণেন্দু পত্রী ভারবি সংস্করণের প্রচ্ছদশিল্পী। পরবর্তী কালে এই গ্রন্থের পরিবর্ধিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৫৫ সালে কবির মৃত্যুর পরবর্তী বৎসর ভারত সরকার কর্তৃক এই গ্রন্থখানি শ্রেষ্ঠ বাংলা গ্রন্থ বিবেচিত হয় এবং জীবনানন্দ দাশকে এই গ্রন্থের জন্য মরণোত্তর সাহিত্য অকাদেমী পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জীবনানন্দই এই পুরস্কারের প্রথম প্রাপক। 

jiibnaannd daasher shresstth kbitaa

0.0(0)

Parts

1

নীলিমা

6 January 2024
0
0
0

রৌদ্র-ঝিলমিল উষার আকাশ, মধ্যনিশীথের নীল, অপার ঐশ্বর্যবেশে দেখা তুমি দাও বারে-বারে নিঃসহায় নগরীর কারাগার-প্রাচীরের পারে। উদ্বেলিছে হেথা গাঢ় ধূদ্রের কুণ্ডলী, উগ্র চুল্লীবহ্নি হেথা অনিবার উঠিতেছে জলি'

2

পিরামিড

6 January 2024
1
0
0

বেলা ব'য়ে যায়, গোধূলির মেঘ-সীমানায় ধূম্রমৌন সাঁঝে নিত্য নব দিবসের মৃত্যুঘণ্টা বাজে, শতাব্দীর শবদেহে শ্মশানের ভস্মবহ্নি জলে; পান্থ স্নান চিতার কবলে একে-একে ডুবে যায় দেশ জাতি সংসার সমাজ; কার লাগি, হে সম

3

সেদিন এ-ধরণীর

6 January 2024
0
0
0

সেদিন এ-ধরণীর সবুজ দ্বীপের ছায়া- উতরোল তরঙ্গের ভিড় মোর চোখে জেগে-জেগে ধীরে-ধীরে হ'লো অপহত কুয়াশায় ঝ'রে পড়া আতসের মতো। দিকে-দিকে ডুবে গেল কোলাহল, সহসা উজানঙ্গলে ভাটা গেল ভাসি, অতিদূর আকাশের মুখখানা আস

4

মৃত্যুর আগে

6 January 2024
1
0
0

আমরা হেঁটেছি যারা নির্জন খড়ের মাঠে পউষ সন্ধ্যায়, দেখেছি মাঠের পারে নরম নদীম নারী ছড়াতেছে ফুল কুয়াশার; কবেকার পাড়াগাঁর মেয়েদের মতো যেন হায় তারা সব; আমরা দেখেছি যারা অন্ধকারে আকন্দ ধুন্দুল জোনাকিতে ভ'রে

5

বোধ

8 January 2024
0
0
0

আলো-অন্ধকারে যাই- মাথার ভিতরে স্বপ্ন নয়, কোন্ এক বোধ কাজ করে; স্বপ্ন নয়- শাস্তি নয়- ভালোবাসা নয়, হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়; আমি তারে পারি না এড়াতে, সে আমার হাত রাখে হাতে, সব কাজ তুচ্ছ হয়- পণ্ড মনে হয়

6

নির্জন স্বাক্ষর

8 January 2024
0
0
0

তুমি তা জানো না কিছু- না জানিলে, আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য করে; যখন ঝরিয়া যাবো হেমন্তের ঝড়ে'- পথের পাতার মতো তুমিও তখন আমার বুকের 'পরে শুয়ে রবে? অনেক ঘুমের ঘোরে ভরিবে কি মন সেদিন তোমার! তোমার এ

7

অবসরের গান

8 January 2024
1
0
0

শুয়েছে ভোরের রোদ ধানের উপরে মাথা পেতে অলস গেঁয়োর মতো এইখানে কার্তিকের খেতে; মাঠের ঘাসের গন্ধ বুকে তার- চোখে তার শিশিরের ঘ্রাণ, তাহার আস্বাদ পেয়ে অবসাদে পেকে ওঠে ধান, দেহের স্বাদের কথা কয়; বিক

8

ক্যাম্পে

8 January 2024
0
0
0

এখানে বনের কাছে ক্যাম্প আমি ফেলিয়াছি; সারারাত দখিনা বাতাসে আকাশের চাঁদের আলোয় এক ঘাইহরিণীর ডাক শুনি- কাহারে সে ডাকে! কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার; বনের ভিতরে আজ শিকারীবা আসিযাছে, আমিও তাদের ঘ্রাণ পাই

9

মাঠের গল্প

9 January 2024
0
0
0

মেঠো চাঁদ মেঠো চাঁদ রয়েছে তাকায়ে আমার মুখের দিকে, ডাইনে আর বাঁয়ে পোড়ো জমি- খড়- নাডা- মাঠের ফাটল, শিশিরের জল। মেঠো চাঁদ- কাস্তের মতো বাঁকা, চোখা চেয়ে আছে; এমনি সে তাকায়েছে কতো রাত- নাই লেখা- জোগা।

10

পেঁচা

9 January 2024
0
0
0

প্রথম ফসল গেছে ঘরে- হেমন্তের মাঠে-মাঠে ঝরে শুধু শিশিরের জল; অস্ত্রাণের নদীটির খাসে হিম হ'য়ে আসে বাঁশপাতা- মরা ঘাস- আকাশের তারা; বরফের মতো চাঁদ ঢালিছে ফোয়ারা; ধানখেতে- মাঠে জমিছে ধোঁয়াটে ধারালো কুয়া

11

পঁচিশ বছর পরে

9 January 2024
0
0
0

শেষবার তার সাথে যখন হয়েছে দেখা মাঠের উপরে- বলিলাম- 'একদিন এমন সময আবার আসিও তুমি- আসিবার ইচ্ছা যদি হয়- পঁচিশ বছর পরে।' এই ব'লে ফিরে আআিসিলাম ঘরে। তারপর, কতোবার চাঁদ আর তারা মাঠে-মাঠে ম'রে গেল, ইদুর-পে

12

কার্তিক মাঠের চাঁদ

9 January 2024
0
0
0

জেগে ওঠে হৃদয়ে আবেগ- পাহাড়ের মতো ওই মেঘ সঙ্গে ল'য়ে আসে মাঝরাতে কিংবা শেষরাতের আকাশে যখন তোমারে, -মৃত সে পৃথিবী এক আজ রাতে ছেড়ে দিলো যারে। ছেঁড়া-ছেঁড়া শাদা মেঘ ভয় পেয়ে গেছে সব চ'লে তর

13

সহজ

9 January 2024
0
0
0

আমার এ-গান কোনোদিন শুনিবে না তুমি এসে- আজ রাত্রে আমার আহ্বান ভেসে যাবে পথের বাতাসে, তবুও হৃদয়ে গান আসে। ভাকিবার ভাষা তবুও ভুলি না আমি- তবু ভালোবাসা জেগে থাকে প্রাণে; পৃথিবীর কানে নক্ষত্রের কানে তবু

14

পাখিরা

9 January 2024
0
0
0

ঘুমে চোখ চায় না জড়াতে- বসন্তের রাতে বিছানায় শুয়ে আছি; -এখন সে কতো রাত! ওই দিকে শোনা যায় সমুদ্রের স্বর, স্কাইলাইট মাথার উপর, আকাশে পাখিরা কথা কয় পরস্পর। তারপর চ'লে যায়, কোথায় আকাশে? তাদের ভানার ঘ্রাণ চ

15

শকুন

10 January 2024
0
0
0

মাঠ থেকে মাঠে-মাঠে- সমস্ত দুপুর ভ'রে এশিয়ার আকাশে-আকাশে শকুনেরা চরিতেছে; মানুষ দেখেছে হাট ঘাঁটি বস্তি; নিস্তব্ধ প্রান্তর শকুনের; যেখানে মাঠের দৃঢ় নীরবতা দাঁড়ায়েছে আকাশের পাশে আরেক আকাশ যেন- সেইখানে

16

স্বপ্নের হাতে

10 January 2024
0
0
0

পৃথিবীর বাধা- এই দেহের ব্যাঘাতে হৃদয়ে বেদনা জমে; স্বপনের হাতে আমি তাই আমারে তুলিয়া দিতে চাই। যেই সব ছায়া এসে পড়ে দিনের রাতের ঢেউয়ে- তাহাদের তরে জেগে আছে আমার জীবন; সব ছেড়ে আমাদের মন ধরা দিতো যদি এই স্

17

ধান কাটা হ'য়ে গেছে

10 January 2024
0
0
0

ধান কাটা হ'য়ে গেছে কবে যেন- খেতে মাঠে প'ড়ে আছে খড় পাতা কুটো ভাঙা ডিম- সাপের খোলস নীড় শীত। এই সব উৎরায়ে ওইখানে মাঠের ভিতর ঘুমাতেছে কয়েকটি পরিচিত লোক আজ- কেমন নিবিড়। ওইখানে একজন শুয়ে আছে- দিনরাত দেখা

18

পথ হাঁটা

10 January 2024
0
0
0

কি এক ইশারা যেন মনে রেখে একা-একা শহরের পথ থেকে পথে অনেক হেঁটেছি আমি। অনেক দেখেছি আমি ট্রাম-বাস সব ঠিক চলে; তারপর পথ ছেড়ে শান্ত হ'য়ে চ'লে যায় তাহাদের ঘুমের জগতে: সারা রাত গ্যাসলাইট আপনার কাজ বুঝে ভা

19

বনলতা সেন

10 January 2024
0
0
0

হাজার বছর ধ'রে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে, সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে; আমি ক্লান্ত প্রাণ

20

আমাকে তুমি

10 January 2024
0
0
0

আমাকে তুমি দেখিয়েছিলে একদিন: মস্ত বড়ো ময়দান- দেবদারু পামের নিবিড় মাথা- মাইলের পর মাইল; দুপুরবেলার জনবিরল গভীর বাতাস দূর শূন্তে চিলের পাটকিলে ডানার ভিতর অস্পষ্ট হ'য়ে হারিয়ে যায়; জোযারের

21

তুমি

12 January 2024
1
0
0

নক্ষত্রের চলাফেরা ইশারায় চারিদিকে উজ্জল আকাশ; বাতাসে নীলাভ হ'য়ে আসে যেন প্রান্তরের ঘাস; কাঁচপোকা ঘুমিয়েছে- গঙ্গাফড়িং সে-ও ঘুমে; আম নিম হিজলের ব্যাপ্তিতে প'ড়ে আছো তুমি। 'মাটির অনেক নিচে চ'লে গেছো? ক

22

অন্ধকার

12 January 2024
1
0
0

গভীর অন্ধকারের ঘুম থেকে নদীর চ্ছল চ্ছল শব্দে জেগে উঠলাম আবার; তাকিয়ে দেখলাম পাণ্ডুর চাঁদ বৈতরণীর থেকে তার অর্ধেক ছায়া গুটিয়ে নিয়েছে যেন কীর্তিনাশার দিকে। ধানসিড়ি নদীর কিনারে আমি শুয়েছিলাম- পউ

23

সুরঞ্জনা

12 January 2024
0
0
0

সুরঞ্জনা, আজো তুমি আমাদের পৃথিবীতে আছো; পৃথিবীর বয়সিনী তুমি এক মেয়ের মতন; কালো চোখ মেলে ওই নীলিমা দেগেছো; গ্রীক হিন্দু ফিনিশিয় নিয়মের রূঢ় আয়োজন শুনেছো ফেনিল শব্দে তিলোত্তমা-নগরীর গায়ে কী চেয়েছে? কী পে

24

সবিতা

12 January 2024
1
0
0

সবিতা, মানুষজন্ম আমরা পেয়েছি মনে হয় কোনো এক বসন্তের রাতে: ভূমধ্যসাগর ঘিরে যেই সব জাতি, তাহাদের সাথে সিন্ধুর আঁধার পথে করেছি গুঞ্জন; মনে পড়ে নিবিড় মেরুন আলো, মুক্তার শিকারী রেশম, মদের সার্থবাহ, দুধের ম

25

সুচেতনা

12 January 2024
1
0
0

সুচেতনা, তুমি এক দূরতর দ্বীপ বিকেলের নক্ষত্রের কাছে; সেইখানে দারুচিনি-বনানীর ফাঁকে নির্জনতা আছে। এই পৃথিবীর রণ রক্ত সফলতা সত্য; তবু শেষ সত্য নয়। কলকাতা একদিন কল্লোলিনী তিলোত্তমা হবে; তবুও তোমার কাছ

26

আবহমান

12 January 2024
0
0
0

পৃথিবী এখন ক্রমে হতেছে নিঝুম। সকলেরই চোখ ক্রমে বিজড়িত হ'য়ে যেন আসে; যদিও আকাশ সিন্ধু ভ'রে গেল অগ্নির উল্লাসে; যেমন যখন বিকেলবেলা কাটা হয় খেতের গোধূম চিলের কান্নার মতো শব্দ ক'রে মেঠো ইঁদুরের ভিড় ফসলের

27

ভিখিরী

13 January 2024
0
0
0

একটি পয়সা আমি পেয়ে গেছি আহিরীটোলায়, একটি পয়সা আমি পেয়ে গেছি বাছড়বাগানে, একটি পয়সা যদি পাওয়া যায় আরো- তবে আমি হেঁটে চ'লে যাবো মানে-মানে। -ব'লে সে বাড়ায়ে দিলো অন্ধকারে হাত। আগাগোড়া শরীরটা নিয়ে এক কানা য

28

তোমাকে

13 January 2024
0
0
0

একদিন মনে হ'তো জলের মতন তুমি। সকালবেলার রোদে তোমার মুখের থেকে বিভা- অথবা দুপুরবেলা- বিকেলের আসন্ন আলোয়- চেয়ে আছে- চ'লে যায়- জলের প্রতিভা। মনে হ'তো তীরের উপরে ব'সে থেকে। আবিষ্ট পুকুর থেকে সিঙাড়ার ফল

29

হাজার বছর শুধু খেলা করে

13 January 2024
0
0
0

হাজার বছর শুধু খেলা করে অন্ধকারে জোনাকির মতো: চারিদিকে পিরামিড- কাফনের জ্ঞাণ; বালির উপরে জ্যোৎস্না- খেজুর-ছায়ারা ইতস্তত বিচূর্ণ থামের মতো: এশিরিয় দাড়ায়ে রয়েছে মৃত, স্নান। শরীরে মমির ঘ্রাণ আমাদের- ঘুচে

30

শব

13 January 2024
1
0
0

যেখানে রুপালি জ্যোৎস্না ভিজিতেছে শরের ভিতর, যেখানে অনেক মশা বানায়েছে তাহাদের ঘর; যেখানে সোনালি মাছ খুঁটে-খুঁটে খায় সেই সব নীল মশা মৌন আকাঙ্ক্ষায়; নির্জন মাছের রঙে যেইখানে হ'য়ে আছে চুপ পৃথিবীর একপাশে এ

31

হায় চিল

13 January 2024
0
0
0

হায় চিল, সোনালি ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে তুমি আর কেঁদোনাকো উড়ে উড়ে পনসিড়ি নদীটির পাশে! তোমার কান্নার সুরে বেতের ফলের মতে। তার স্নান চোখ মনে আসে; পৃথিবীর রাঙা রাজকন্যাদের মতো সে যে চ'লে গেছে রূপ

32

সিন্ধুসারস

13 January 2024
0
0
0

দু-এক মুহূর্ত শুধু রৌদ্রের সিন্ধুর কোলে তুমি আর আমি হে সিন্ধুসারস, মালাবার পাহাড়ের কোল ছেড়ে অতি দূর তরঙ্গের জানালায় নামি নাচিতেছ টারান্‌ন্টেলা- রহস্তের; আমি এই সমুদ্রের পারে চুপে থামি চেয়ে দেখি বরফ

33

কুড়ি বছর পরে

13 January 2024
1
0
0

আবার বছর কুড়ি পরে তার সাথে দেখা হয় যদি! আবার বছর কুড়ি পরে- হয়তো ধানের ছড়ার পাশে কার্তিকের মাসে- তখন সন্ধ্যার কাক ঘরে ফেরে- তখন হলুদ নদী নরম-নরম হয় শর কাশ হোগলায়- মাঠের ভিতরে। অথবা নাইকো ধান খেতে

34

ঘাস

14 January 2024
0
0
0

কচি লেবুপাতার মতো নরম সবুজ আলোয় পৃথিবী ভ'রে গিয়েছে এই ভোরের বেলা; কাঁচা বাতাবীর মতো সবুজ ঘাস- তেন্নি সুঘ্রাণ- হরিণেরা দাঁত দিয়ে ছিড়ে নিচ্ছে। আমারো ইচ্ছা করে এই ঘাসের ঘ্রাণ হরিৎ মদের মতো গে

35

হাওয়ার রাত

14 January 2024
0
0
0

গভীর হাওয়ার রাত ছিলো কাল- অসংখ্য নক্ষত্রের রাত; সারা রাত বিস্তীর্ণ হাওয়া আমার মশারিতে খেলেছে। মশারিটা ফুলে উঠেছে কখনো মৌহুমী সমুদ্রের পেটের মতো, কখনো বিছানা ছিড়ে নক্ষত্রের দিকে উড়ে যেতে চেয়েছে;

36

কল্পনার হাঁস

14 January 2024
0
0
0

পেঁচার ধূসর পাখা উড়ে যায় নক্ষত্রের পানে- জলা মাঠ ছেড়ে দিয়ে চাঁদের আহ্বানে বুনো হাঁস পাখা মেলে- সাঁই-সাঁই শব্দ শুনি তার; এক-দুই-তিন-চার অজস্র অপার- রাত্রির কিনার দিয়ে তাহাদের ক্ষিপ্র ডানা ঝাড়া এজিনে

37

শঙ্খমালা

14 January 2024
0
0
0

কান্তারের পথ ছেড়ে সন্ধ্যার আঁধারে সে কে এক নারী এসে ডাকিল আমারে, বলিল, তোমারে চাই: বেতের ফলের মতো নীলাভ ব্যখিত তোমার দুই চোখ খুঁজেছি নক্ষত্রে আমি- কুয়াশার পাখনায়- সন্ধ্যার নদীর জলে নামে যে-আলোক জোনা

38

বিড়াল

14 January 2024
0
0
0

সারাদিন একটা বিড়ালের সঙ্গে ঘুরে-ফিরে কেবলই আমার দেখা হয় গাছের ছায়ায়, রোদের ভিতরে, বাদামী পাতার ভিড়ে; কোথাও কয়েক টুকরো মাছের কাঁটার সফলতার পর তারপর শাদা মাটির কঙ্কালের ভিতর নিজের হৃদয়কে নিয়ে মৌমাছির মত

39

নগ্ন নির্জন হাত

14 January 2024
0
0
0

আবার আকাশে অন্ধকার ঘন হ'য়ে উঠছে: আলোর রহস্তময়ী সহোদরার মতো এই অন্ধকার। যে আমাকে চিরদিন ভালোবেসেছে অথচ যার মুখ আমি কোনোদিন দেখিনি, সেই নারীর মতো ফাল্গুন আকাশে অন্ধকার নিবিড় হ'য়ে উঠছে।

40

শিকার

15 January 2024
1
0
0

ভোর; আকাশের রং ঘাসফড়িঙের দেহের মতো কোমল নীল: চারিদিকের পেয়ারা ও নোনার গাছ টিয়ার পালকের মতো সবুজ। একটি তারা এখনও আকাশে রয়েছে: পাড়াগাঁর বাসরঘরে সব চেয়ে গোধূলি-মদির মেয়েটির মতো; কিংবা মিশরের মানুষী তা

41

আট বছর আগের একদিন

15 January 2024
0
0
0

শোনা গেল লাসকাটা ঘরে নিয়ে গেছে তারে; কাল রাতে ফাল্গুনের রাতের আঁধারে যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ মরিবার হ'লো তার সাধ; বধু শুয়েছিলো পাশে- শিশুটিও ছিলো; প্রেম ছিলো, আশা ছিলো- জ্যোৎস্নায়- তবু সে দেখি

42

মনোকণিকা

15 January 2024
0
0
0

ও. কে. একটি বিপ্লবী তার সোনা রুপো ভালোবেসেছিলো; একটি বণিক আত্মহত্যা করেছিলো পরবর্তী জীবনের লোভে; একটি প্রেমিক তার মহিলাকে ভালোবেসেছিলো; তবুও মহিলা প্রীত হয়েছিলো দশজন মূর্খের বিক্ষোভে। বুকের উপরে

43

সুবিনয় মুস্তফী

15 January 2024
0
0
0

স্থবিনয় মুস্তফীর কথা মনে পড়ে এই হেমন্তের রাতে। এক সাথে বেরাল ও বেরালের-মুখে-ধরা-ইদুর হাসাতে এমন আশ্চর্য শক্তি ছিলো ভূয়োদর্শী যুবার। ইদুরকে খেতে-খেতে শাদা বেরালের ব্যবহার, অথবা টুকরো হ'তে-হ'তে সেই ভারি

44

অনুপম ত্রিবেদী

15 January 2024
0
0
0

এখন শীতের রাতে অনুপম ত্রিবেদীর মুখ জেগে ওঠে। যদিও সে নেই আজ পৃথিবীর বড়ো গোল পেটের ভিতরে সশরীরে; টেবিলের অন্ধকারে তবু এই শীতের স্তব্ধতা এক পৃথিবীর মৃত জীবিতের ভিড়ে সেই স্মরণীয় মানুষের কথা হৃদয়ে জাগায়ে

45

আকাশলীনা

16 January 2024
1
0
0

সুরঞ্জনা, ওইখানে যেওনাকো তুমি, বোলোনাকো কথা, ওই যুবকের সাথে; ফিরে এসো সুরঞ্জনা: নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে; ফিরে এসো এই মাঠে, ঢেউয়ে; ফিরে এসো হৃদয়ে আমার; দূর থেকে দূরে- আরো দূরে যুবকের সাথে তুম

46

ঘোড়া

16 January 2024
0
0
0

আমরা যাইনি ম'রে আজো- তবু কেবলি দৃষ্ণের জন্ম হয়: মহীনের ঘোড়াগুলো ঘাস পায় কার্তিকের জ্যোৎস্নার প্রান্তরে, প্রস্তরযুগের সব ঘোড়া যেন- এখনও ঘাসের লোভে চরে পৃথিবীর কিমাকার ডাইনামোর 'পরে। আস্তাবলের ঘ্রাণ

47

সমারূঢ়

16 January 2024
1
0
0

'বরং নিজেই তুমি লেখোনাকো একটি কবিতা-' বলিলাম স্নান হেসে। ছায়াপিও দিলো না উত্তর; বুঝিলাম সে তো কবি নয়- সে যে আরূঢ় ভণিতা: পাণ্ডুলিপি, ভাষ্য, টীকা, কালি আর কলমের 'পর ব'সে আছে সিংহাসনে- কবি নয়- অজর, অক্ষর

48

নিরঙ্কুশ

16 January 2024
1
0
0

মালয় সমুদ্র পারে সে এক বন্দর আছে শ্বেতাঙ্গিনীদের। যদিও সমুদ্র আমি পৃথিবীতে দেখে গেছি ঢের: নীলাভ জলের রোদে কুয়ালালুপুর, জাভা, হুমাত্রা ও ইন্দোচীন, বালি অনেক ঘুরেছি আমি- তারপর এখানে বাদামী মলয়ালী সমুদ্র

49

গোধূলি সন্ধির নৃত্য

16 January 2024
0
0
0

দরদালানের ভিড়- পৃথিবীর শেষে যেইখানে প'ড়ে আছে- শব্দহীন- ভাঙা- সেইখানে উঁচু-উঁচু হরিতকী গাছের পিছনে হেমন্তের বিকেলের সূর্য গোল-রাঙা- চুপে-চুপে ডুবে যায়- জ্যোৎস্নায়। পিপুলের গাছে ব'সে পেঁচা শুধু একা চ

50

নাবিক

16 January 2024
0
0
0

কোথাও তরণী আজ চ'লে গেছে আকাশ-রেখায়- তবে- এই কথা ভেবে নিদ্রায় আসক্ত হ'তে গিয়ে তবু বেদনায় জেগে ওঠে পরাস্ত নাবিক; সূর্য যেন পরস্পরাক্রম আরো- ওই দিকে- সৈকতের পিছে বন্দরের কোলাহল-পাম সারি; তবু তার পরে স্বা

51

খেতে প্রান্তরে

17 January 2024
0
0
0

ঢের সম্রাটের রাজ্যে বাস ক'রে জীব অবশেষে একদিন দেখেছে দু-তিন ধহু দূরে কোথাও সম্রাট নেই, তবুও বিপ্লব নেই, চাষা বলদের নিঃশব্দতা খেতের দুপুরে। বাংলার প্রান্তরের অপরাহ্ণ এসে নদীর খাড়িতে মিশে ধীরে বেবিল

52

রাত্রি

17 January 2024
0
0
0

হাইড্যান্ট খুলে দিয়ে কুষ্ঠরোগী চেটে নেয় জল; অথবা সে-হাইড্র্যান্ট হয়তো বা গিয়েছিলো ফেঁসে এখন দুপুর রাত নগরীতে দল বেঁধে নামে। একটি মোটরকার গাড়লের মতো গেল কেশে অস্থির পেট্রল ঝেড়ে; সতত সতর্ক থেকে তবু ক

53

লঘু মুহূর্ত

17 January 2024
1
0
0

এখন দিনের শেষে তিনজন আধো আইবুড়ো ভিখিরীর 'অত্যন্ত প্রশান্ত হ'লো মন; ধূসর বাতাস খেয়ে এক গাল- রাস্তার পাশে ধূসর বাতাস দিয়ে ক'রে নিলো মুখ আচমন। কেননা এখন তা'রা যেই দেশে যাবে তাকে রাঙা নদী বলে; সেইখা

54

নাবিকী

17 January 2024
0
0
0

হেমন্ত ফুরায়ে গেছে পৃথিবীর ভাঁড়ারের থেকে; এ-রকম অনেক হেমস্ত ফুরায়েছে সময়ের কুয়াশায়; মাঠের ফসলগুলো বার-বার ঘরে তোলা হ'তে গিয়ে তবু সমূদ্রের পারের বন্দরে পরিচ্ছন্নভাবে চ'লে গেছে। মৃত্তিকার ওই দি

55

উত্তর প্রবেশ

17 January 2024
0
0
0

পুরোনো সময় সুর ঢের কেটে গেল। পুরোনো সময় সুর ঢের কেটে গেল।পুরোনো সময় সুর ঢের কেটে গেল। যদি বলা যেত : সমুদ্রের পারে কেটে গেছে, সোনার বলের মতো সূর্য ছিলো পুবের আকাশে- সেই পটভূমিকায় ঢের ফেনশীর্ষ ঢেউ

56

সৃষ্টির তীরে

17 January 2024
0
0
0

বিকেলের থেকে আলো ক্রমেই নিস্তেজ হ'য়ে নিভে যায়- তবু ঢের স্মরণীয় কাজ শেষ হ'য়ে গেছে: হরিণ খেয়েছে তার আমিষাশী শিকারীর হৃদয়কে ছিড়ে; সম্রাটের ইশারায় কঙ্কালের পাশাগুলো একবার সৈনিক হয়েছে; সচ্ছল কঙ

57

তিমিরহননের গান

17 January 2024
1
0
0

কোনো হ্রদে কোথাও নদীর ঢেউয়ে কোনো এক সমুদ্রের জলে পরস্পরের সাথে দু-দণ্ড জলের মতো মিশে সেই এক ভোরবেলা শতাব্দীর সূর্যের নিকটে আমাদের জীবনের আলোড়ন- হয়তো বা জীবনকে শিখে নিতে চেয়েছিলো।

58

জুহু

17 January 2024
1
0
0

সান্টা ক্রুজ থেকে নেমে অপরাহ্ণে জুহুর সমুদ্রপারে গিয়ে কিছুটা স্তব্ধতা ভিক্ষা করেছিলো সূর্যের নিকটে থেমে সোমেন পালিত; বাংলার থেকে এত দূরে এসে-সমাজ, দর্শন, তত্ত্ব, বিজ্ঞান হারিয়ে, প্রেমকেও যৌবনের কামাখ্

59

সময়ের কাছে

17 January 2024
1
0
0

সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয় কি কাজ করেছি আর কি কথা ভেবেছি। সেই সব একদিন হয়তো বা কোনো এক সমুদ্রের পারে আজকের পরিচিত কোনো নীল আভার পাহাড়ে অন্ধকারে হাড়কঙ্করের মতো শুয়ে' নিজের আয়ুর দিন তবুও

60

জনান্তিকে

17 January 2024
0
0
0

তোমাকে দেখার মতো চোখ নেই- তবু, গভীর বিস্ময়ে আমি টের পাই- তুমি আজো এই পৃথিবীতে র'য়ে গেছ। কোথাও সান্ত্বনা নেই পৃথিবীতে আজ; বহুদিন থেকে শান্তি নেই। নীড় নেই পাখিরো মতন কোনো হৃদয়ের তরে। পাখি নেই। মান

61

সূর্যতামসী

17 January 2024
0
0
0

কোথাও পাখির শব্দ শুনি; কোনো দিকে সমুদ্রের শুর; কোথাও ভোরের বেলা র'য়ে গেছে- তবে। অগণন মানুষের মৃত্যু হ'লে- অন্ধকারে জীবিত ও মৃতের হৃদয় বিস্মিতের মতো চেয়ে আছে; এ কোন্ সিন্ধুর সুর: মরণের-জীবনের? এ কি

62

বিভিন্ন কোরাস

17 January 2024
1
0
0

পৃথিবীতে ঢের দিন বেঁচে থেকে আমাদের আয়ু এখন মৃত্যুর শব্দ শোনে দিনমান। হৃদয়কে চোখঠার দিয়ে ঘুমে রেখে হয়তো দুর্যোগে তৃপ্তি পেতে পারে কান; এ-রকম একদিন মনে হয়েছিলো; অনেক নিকটে তবু সেই ঘোর ঘনায়েছে আজ; আমাদে

63

তবু

17 January 2024
0
0
0

সে অনেক রাজনীতি রুগ্ন নীতি মারী মন্বন্তর যুদ্ধ ঋণ সময়ের থেকে উঠে এসে এই পৃথিবীর পথে আড়াই হাজার বছরে বয়সী আমি; বুদ্ধকে স্বচক্ষে মহানির্বাণের আশ্চর্য শান্তিতে চ'লে যেতে দেখে- তবু- অবিরল অশান্তির দীপ্তি

64

পৃথিবীতে

17 January 2024
0
0
0

শস্তের ভিতরে রৌদ্রে পৃথিবীর সকালবেলায় কোনো এক কবি ব'সে আছে; অথবা সে কারাগারে ক্যাম্পে অন্ধকারে; তবুও সে প্রীত অবহিত হ'য়ে আছে এই পৃথিবীর রোদে- এখানে রাত্রির গন্ধে নক্ষত্রের তরে তাই সে এখানকার ক্লান্

---