shabd-logo

ভালোবাসা

3 December 2023

0 Viewed 0

আজকাল সবই অন্যরকম লাগে। দরজার কড়া নাড়বামাত্র ভিতর থেকে একটা ভারী জিনিস দরজার উপর আর আছড়েও পড়ে না। নখ দিয়ে কেউ দরজায় আঁচড়িয়ে, পালিশ উঠিয়ে, বকুনিও খায় না; ঘরে ঢুকবামাত্র নেচেকঁদে গায়ের উপর চড়ে একাকারও করে না। মিনু শংকর কেউ কারো দিকে তাকায় না।

শোবার ঘরের মেজেটা অদ্ভুতরকম খালি-খালি লাগে; অদ্ভুত চুপচাপও, খচ্ করে কেউ চলে বেড়ায় না, থপ্নপ করে কানের উপর ল্যাজ আছড়ায় না।

শুধু পিসিমা একটা আরামের নিঃশ্বাস ফেলে বলেন, "আঃ, আপদটা বিদায় হয়ে ঘরদোরগুলো যেন কেমন হালকা হয়ে গেল। এবার একটু নিশ্চিন্দি হয়ে হাত-পা মেলে বসা যাবে। সদাই ভয়ে- ভয়ে থাকতাম ঐ বুঝি ক'ন্ থেকে কিসে মুখ দিয়ে আমায় এসে চাটল! আর তোদেরও বাবু বলিহারি! ঠাকুরদা ত্রিসন্দে জপতপ না সেরে জলস্পর্শ করত না, আর তোদের কিনা ঐ কুত্তোটার সতে একপাতে না খেলেই নয়। অস্বীকার করিস নে, স্বচক্ষে দেখেছি টেবিল থেকে সব চুপি চুপি প্লেট নামানো হচ্ছে!"

মিনু শংকর কেউ অস্বীকার করল না। কোনো কথাই বলল না। নিঃশব্দে যে যার বই বের করে নিয়ে পড়তে বসে গেল। সাবধানে ঘুরে বসল যাতে আলমারির ঐ কোণটাতে যেখানে পুরনো সবুজ কম্বল- খানি পাতা থাকত সেদিকে চোখ না পড়ে!

পিসিমার কথা শুনে বাবা দোরগোড়ায় একবার দাঁড়িয়েছিলেন, এবার তিনিও নিঃশব্দে পাশের ঘরে চলে গেলেন। শুধু মা একটা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, "হ্যাঁ, আর তার জন্য কোনো হাঙ্গামা নেই।"

পিসিমা একটু অবাক হয়ে মার মুখের দিকে চেয়ে বললেন, "হাঙ্গামাও নেই, বউ, খরচাও নেই। ওর পেছনে তোমরা এ ক-বছরে যা খরচ করেছ, তাতে এক-আধটা গরিব ছেলের স্বচ্ছন্দে খাওয়া-পরা চলে যেত। সেজদিদিরাও বলছিল, তোমাদের সব-তাতেই বাড়াবাড়ি। কুকুরের জন্য রোজ রোজ দুধ রে, পাঁউরুটি রে, মাংস রে-এ-সমস্ত বাড়াবাড়ি।"

মিনু শংকর আস্তে আস্তে বই হাতে করে উঠে গেল! মা বললেন, "তা হলে জন্তু-জানোয়ার না পোষাই উচিত, ঠাকুরঝি!"

"হ্যাঁ, পুষতে হয়, গোরু মোষ পোষ, দুধটা পাবি। নিদেন একটা ছাগলই পোষ, তার দুধেরও ভারি গুণ, মহাত্মাজি খেতেন। নয়তো বেড়াল পোষ, ইঁদুর মারবে। তা নয়, এ কোথাকার লাট রে বাবা, ইঁদুর-বাঁদরের দিকে ফিরেও তাকায় না, খালি ঐ মিনু শংকরের পিছন পিছন ঘুর-ঘুর করবে!"

মা বললেন, “ওরা বাড়ি পৌছবার অনেক আগে থাকতেই কেমন করে জানি টের পেত। অমনি উঠে দোরগোড়ায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত।"

পিসিমা বিরক্ত হয়ে উঠে পড়লেন, "যাই বাবা, আমারও তো পুজো- "আচ্ছা আছে!”

সবার পাতে মোটা-মোটা হাড়গুলো সব পড়ে থাকে, ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়! সবাই লক্ষ্য করে, কেউ কোনো কথা বলে না। সন্ধেবেলা বাবা একবার বলে বসলেন, "আর কুকুর পুষব না। বাঁচেও না বেশিদিন, শুধু হাঙ্গামা বাধায় আর মায়ায় জড়ায়।"

মা বললেন, "আমিও সেই অবধি মনে-মনে প্রতিজ্ঞা করে বসে 'আছি, আর কখনো নয়।" এতক্ষণ পরে মিনু শংকরের কথা ফুটল। দুজনে জোর গলায় বলে উঠল, "সত্যি মা, আর কখনো নয়।" শংকর আরো বলল, "জানো, রাতে আমার ঘুম ভেঙে যায়, কিরকম নিঃশ্বাস ফেলা শুনতে পাই, ভুলে যাই, উঠে পড়ে দেখতে যাই ও ঘুমুচ্ছে কি না।"

পিসিমা ঘরে এসে শেষ কটি কথা শুনে বললেন, "হয়েছে! বলি, তোদের পিসেমশাই স্বর্গে গেলেন, কই তাঁর নিঃশ্বাস তো একদিনও শুনলাম না, আর তোরা তোদের কুকুরের শোকেই যে হেদিয়ে গেলি! এবার আবার একটিকে এনে দুঃখ ভোলা হবে নাকি?" বাকি চারজনে সমস্বরে বলে উঠল, "না, না, না, আর কখনো নয়।"

"যাক, তবু যে সুবুদ্ধি হল সেই রক্ষে। পই-পই করে বলি নি ও-সব জন্তু-জানোয়ার ঘরে এনে ঢোকাস নি রে বাবা! যত সব রোগের ডিপো। এই কোলে এসে মাথা রাখছে, এই গায়ের উপর থাবা রাখছে, উঃ, দেখে দেখে আমার গা ঘিন্-ঘিন করে উঠত। তা বাপু কিছু বলবার কি জো ছিল ?"

মিনু শংকর একটু অস্বাভাবিকরকম জোরে বলল, "যাক, এখন তো আর সে নেই, এখন খুশি হয়েছ তো?"

• এমনি করে দিন কাটে। পিসিমা ঝিকে জিজ্ঞাসা করেন, "হ্যালা, ওটার বাসনকোসনগুলো ফেলে দিয়েছিস তো? নইলে আবার অন্য বাসনের সঙ্গে তুলে রাখলে মিলে-মিশে একাকার হয়ে যাবে। কোনোই তফাত তো নেই। যত সব আদিখ্যেতা এদের।" ঝিও একগাল হেসে বলল, "কে জানে, পিসিমা, দিয়েছে হয়তো ফেলে। উঃ, কি বলব পিসিমা, হিদুর মেয়ে আমি, আমাকে পর্যন্ত ঐ কুত্তোর সেবায় লাগিয়ে দিয়েছিল! হ্যাঁ সায়েবরাও কুকুর পোষে বটে, কিন্তু তার কাজ করে জমাদার! আর হেথা ঘাটেও আমি, গঙ্গাতেও আমি। তা মন্ম দিয়েছেনও এটা-সেটা আমাকে, মিথ্যে বলব নি। আর আমিও বাসনটা মেজে দিয়েছি, কম্বলটা কেচে দিয়েছি। ও-সব আর এখন করতে হচ্ছে না, বেঁচিছি।"

এক মাস বাদে ঐ ঝিই একটা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলল, "কি জানেন পিসিমা, মনটা কেমন ফাঁকা-ফাঁকা লাগে। ঐ যে ছাদের কোণে লাঠিগাছটি দেখছেন ঐটে টেনে টেনে নিয়ে বেড়াত। আর সক্কাল- বেলায় উঠোনের দুয়োর খুলে ভিতরে যেই-না ঢুকেছি, সে কি ন্যাজ নাড়ার ধুম! সত্যি বলছি মা, আমায় দেখে আর কেউ অমনটি খুশি হয় নি কোনো জন্মে, অথচ কিছু তো পেত না আমার কাছটিতে। হ্যাঁ, পিসিমা মারা কি আর-একটা আনবে-টানবে না?"

পিসিমা এমন একটি চেলা হারিয়ে বিরক্ত হয়ে বললেন, "না রে বাবা, আর দরকার নেই। ওরা চারজনেই প্রতিজ্ঞা করেছে আর কক্ষনো নয়।" ঝি আর-একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললে, "কি জানি, ডাক্তারবাবু একদিন বলেছিলেন, "যাঁরা কুকুর নিয়ে একবার বাস করেছেন, তাঁরা কুকুর ছাড়া আর থাকতে পারেন না। বড় আদুরে ছিল, পিসিমা, আমাকে দেখলেই এত খুশি হত, ধপাধপ্ শব্দ করে ন্যাজটা নাড়ত।"

পিসিমা রবিবার সকালে কথাটা একবার নিজেই পেড়ে, সবাইকে যাচিয়ে নিলেন।

হ্যাঁরে নতুন খবর শুনছিস? ঐ পাতির-মা কুকুরের সঙ্গে এ্যাদ্দিন শুম্ভ-নিশুন্তের লড়াই চালিয়ে এসেছে, এখন ওর নাকি ভারি মন কেমন করে। তা আমিও বলে দিয়েছি, বাপু, সে মনই কেমন করুক কি যাই করুক আর নয়।"

কেউ কোনো কথা বললে না। আরো কদিন কাটল। একদিন ডাক্তারবাবু এসে বললেন, "কি, কুকুরের শোক কমল? ভালো ভালো কুকুরের ছানা বিক্রি হচ্ছে যে।" মার জন্মদিন আজ, সবাই বড় ব্যস্ত। মা সমানে কিসমিস বেছে যেতে লাগলেন, অম্বলে পায়েসে ঘিভাতে লাগবে। শংকর মিনু পরস্পরের দিকে তাকাল আর বাবা একবার খবরের কাগজটা নামিয়ে সকলের মুখ ভালো করে দেখে নিয়ে, আবার খবরের কাগজের মধ্যে ডুবে গেলেন। শেষে মা বললেন, "আবার

কুকুর!"

সন্ধের মধ্যে রাঁধাবাড়া সেরে, ছেলেমেয়ে ও তাদের বাবার হুকুম মতো মা স্নান করে, নতুন কাপড়খানি পরে বসেছেন। পিসিমা খুশি হয়ে বললেন, "বাঃ এই বেশ হয়েছে, বউ! আচ্ছা এদের কাউকে দেখছি না যে, সব গেল কোথায়?"

"কি জানি, সব একে একে তো বেরুল। ঐ যে ঠাকুরঝি, এক- আধজন এল বোধ হয়।"

প্রথমে এল মিনু আর শংকর কাপড়ে করে কি ঢাকা দিয়ে। মার কোলে ফেলে দিয়ে বলল, "এই নাও মা, তোমার জন্মদিনের উপহার।" প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বাবাও এলেন, "এই নাও গো একটা জিনিস 'আনলাম তোমার জন্যে, ধরো।" বলে আরেকটা কাপড়ে 'ঢাকা কি

কোলে ফেলে দিলেন।

পিসিমা অবাক হয়ে দেখলেন, মার কোলে দু-দুটো মিশকালো কুকুর- বাচ্চা এ ওকে ঠেলাঠেলি করছে, মাড়িয়ে দিচ্ছে, ক্ষুদে-ক্ষুদে ল্যাজ নাড়ছে। লাল লাল জিব ঝুলছে।

সবাই হেসে ফেলল, "এ্যাঁ, বাবা! তুমিই বুঝি অন্যটি কিনেছিলে? • ঐ মেম বলল, একজন খুব মোটা ভদ্রলোক কিনে নিয়ে গেছেন।"

বাবা বললেন, "আমিই তো। এই, তোরা অত পয়সা পেলি কোথায় রে?" "বা-বা! আমাদের বুঝি জন্মদিনের জমানো টাকা ছিল না?

আর বাকিটুকু তো পিসিমাই দিলেন।"

পিসিমা হঠাৎ উঠে পড়ে বললেন, "যাই, চট্ করে সন্ধেটা সেরে 'আসি! বা-ব্বাঃ এদ্দিন তো বাড়ি ছিল না, হয়েছিল একটা গোরস্থান! ঐ দ্যাখ, পাতির-মার সব-তাতেই বাড়াবাড়ি, দু-দুটো বাটি কোত্থেকে • আনল বল দিকিনি। ওরে, আমার দুধ থেকেই নিস আজ, কাল থেকে "আনালেই হবে।" +

23
Articles
লীলা মজুমদার রচনাবলী ১
0.0
লীলা মজুমদারের ছোট ছোট কিছু অবিস্মরণীয় সৃষ্টি একত্রে আনা হয়েছে রচনাবলী ১ বইটির মধ্যে। এটি এমন একটি উপন্যাস যেখানে গল্পগুলি এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যাতে বইটি সব বয়সের মানুষই পড়তে পারেন, এবং এর মজা উপলব্ধি করতে পারেন।
1

পদিপিসীর বর্মিবাক্স

28 November 2023
0
0
0

পাঁচুমামার প্যাকাটির মতন হাত ধরে টেনে ওকে ট্রেনে তুললাম। শূন্যে খানিক হাত-পা ছুড়ে, ও বাবাগো মাগো বলে চেঁচিয়ে-টে চিয়ে শেষে পাঁচুমামা খচ্ করে বেঞ্চিতে উঠে বসল। তার পর পকেট থেকে লাল রুমাল বের করে কপালের

2

বক-বধ পালা

28 November 2023
0
0
0

পালা শুরু জুড়ির সুর করে আবৃত্তি, মৃদু মুনু তবলা ইত্যাদি সহযোগে পোড়া জতুগৃহ থেকে বাহিরিয়া যবে, পাণ্ডব বঝিলা মনে এ বিশাল ভবে গৃহ বন্ধু কিছু নেই, নিলা বনবাস। দুঃখে কষ্টে বৃক্ষতলে কাটে দিনমাস। কত যে বিপদ

3

এই যা দেখা

29 November 2023
2
0
0

কলকাতা শহরের উত্তর দিকে সরু একটা সদর রাস্তা, তাতে লোকজন গাড়িঘোড়ার ভিড় কত, ভোর থেকে গভীর রাত অবধি হাঁকডাক ঠেলাঠেলি। লোকে বলে পথটা খুব পুরনো, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্ব কালে তৈরি, ঘরবাড়িগুলো এ ওর গায়

4

ছেলেবেলার গল্প

30 November 2023
0
0
0

গণশার চিঠি ভাই সন্দেশ, অনেকদিন পর তোমায় চিঠি লিখছি। এর মধ্যে কত কী যে সব ঘটে গেল যদি জানতে, তোমার গায়ের লোম ভাই খাড়া হয়ে গেঞ্জিটা উঁচু হয়ে যেত, চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসত, হাঁটুতে হাঁটুতে ঠকাঠক্ হয়ে কড়া পড়

5

হলদে পাখির পালক

1 December 2023
0
0
0

এক কত দেরি হয়ে গেল ভুলো তবু বাড়ি এল না, সন্ধে হয়ে গেল, রাত হয়ে গেল। দাদু তাস খেলতে যাবার আগে বললেন, "খুঁজতে যাবার কিছু দরকার নেই, কেউ তোদের নেড়িকুত্তো চুরি করবে না, খিদে পেলে সুড়সুড় করে নিজেই বাড়ি ফি

6

বহুরূপী

2 December 2023
0
0
0

ছোটবেলাকার কত কথাই যে মনে পড়ে, কত কান্ডই যে তখন হত। একবার গুপের মামাতো ভাই ভোঁদা বলেছিল যে বহুরূপীরা পর পর সাতদিন আসে, একেক দিন এক এক নতুন সাজে। কখনো কখনো সবাই তাকে বহুরূপী বলে চিনে ফেলে, আবার কখনো কখ

7

মহালয়ার উপহার

2 December 2023
0
0
0

শিবু, শিবুর মা আর শিবুর বউ তিন নম্বর হোগলাপট্টি লেনের দোতলার তিনখানি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকত। একটা ঘরে শিবুর মা শুত, সেটা সব থেকে বড় ও ভালো, কারণ বুড়ি ভারি খিটখিটে। আরেকটাতে শিবু আর শিবুর বউ, শুত, সেটা মাঝ

8

ভানুমতীর খেল

3 December 2023
0
0
0

গোরুদের ঘরের পিছনের ছোট ফটকটার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই লোকটাকে দেখতে পেলাম। গোয়ালের কোনায় একটা মাটির ঢিবির উপর ঝোপের আড়ালে বসে-বসে একটা দেশলাই কাঠি দিয়ে দাঁত খুঁটছে আর একটু-একটু পা দোলাচ্ছে। সারা গায়ে ধুলো

9

পঞ্চমুখী শাঁখ

3 December 2023
0
0
0

বন্ধুদের দেশের বাড়িতে একটা প্রকাণ্ড পঞ্চমুখী শাঁখ আছে! শুনেছি শাঁখটা নাকি দেড়শো বছর ধরে ওদের বাড়িতে রয়েছে। ওর নানা- রকম গুণটুনও নাকি আছে। আগে রোজ ওর পুজো হত, পুরুতঠাকুর আসত, খাওয়া-দাওয়া হত। তবে সত্তর

10

হুঁশিয়ার

3 December 2023
0
0
0

যখন সামনের লোকটার লোমওয়ালা ঘেমো ঘাড়টার দিকে আর চেয়ে থাকা অসম্ভব মনে হল, চোখ দুটো ফিরিয়ে নিলাম। অমনি কার জানি একরাশি খোঁচা-খোঁচা গোঁফ আমার ডান দিকের কানের ভিতর ঢুকে গেল। চমকে গিয়ে ফিরে দেখি ভীষণ রোগা,

11

সেকালে

3 December 2023
0
0
0

পঁয়ষট্টি বছর আগে আমার মামাবাড়ির দেশে এক দিকে যেমন সাধু- সজ্জনের ভিড় ছিল এবং তার ফলে পুজোপার্বণ, তিথিপালন, হরির লুট, ব্রাহ্মণ-ভোজন, কাঙালী-বিদায় লেগেই থাকত, আবার তেমনি অন্য দিক দিয়ে ঠগ-ঠ্যাঙাড়ে, জোচ্চো

12

চোর

3 December 2023
0
0
0

ঠিক যেই নিতাইদের বাড়ির পেছনের সেই ঝাঁকড়ান্ডুলো ঝোপটার কাছে এসেছি, পকেট হাতড়ে দেখি যে আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে! সেই কোনা-মোড়া আধ-ময়লা নোটটা কে যেন বুক-পকেট থেকে তুলে নিয়েছে! ভীষণ ঘাবড়ে গেলাম। ভয়ের চোটে ক

13

টাইগার

3 December 2023
0
0
0

তাকে উলটে দেখলাম থাবার তলাটা গোলাপী মখমলের মতো, মাঝে- মাঝে কচি-কচি সাদা লোম। পেটের তলাটাও গোলাপী-নরম তুলতুলে এক জায়গায় একটা শিরা না কি যেন ধুন্ধুক্ করছে। মুণ্ডুটাকে তুলে আবার নিজের পেট দেখতে চেষ্টা কর

14

লোমহর্ষণ

3 December 2023
0
0
0

রাজামশাই ব্যস্ত হয়ে দরদালানে পায়চারি করে বেড়াচ্ছেন, খিদেয় পেটের এ-দেয়াল ও-দেয়াল একসঙ্গে লেপটে যাচ্ছে, টেবিল পাতা, সোনার বাসন-কোসন সাজানো, মুক্তো-বসানো গেলাসে কেয়ার গন্ধ-দেওয়া জল, রানী ওদিকে মখমলের গদি

15

ভালোবাসা

3 December 2023
0
0
0

আজকাল সবই অন্যরকম লাগে। দরজার কড়া নাড়বামাত্র ভিতর থেকে একটা ভারী জিনিস দরজার উপর আর আছড়েও পড়ে না। নখ দিয়ে কেউ দরজায় আঁচড়িয়ে, পালিশ উঠিয়ে, বকুনিও খায় না; ঘরে ঢুকবামাত্র নেচেকঁদে গায়ের উপর চড়ে একাকারও ক

16

তেজী বুড়ো

3 December 2023
0
0
0

আয়না দেখে আঁতকে উঠলুম। এ তো আমার সেই চিরকেলে চেহারা নয়! সেই যাকে ছোটবেলা দেখেছিলুম ন্যাড়া মাথা, নাকে সদি, চোখ ফুলো! তার পর দেখেছিলুম চুল খোঁচা, নাক খাঁদা, গালে-টালে কাজল! এই সেদিনও দেখলুম খাকি পেন্টেল

17

দিনের শেষে

5 December 2023
0
0
0

লক্ষ্ণৌ থেকে ওস্তাদ এসেছে। দাদু আর দিদিমা শ্যামলবাবুদের বাড়িতে গান শুনতে গেছেন, ফিরতে রাত হবে। ঝগড় বলল, "তা তোমরা যদি সব-কিছুই বিশ্বাস না করে আনন্দ পাও, তা হলে আমার আর কিছু বলবার নেই। তবে সর্বদা মনে

18

আমাদের দেশে

5 December 2023
0
0
0

আমাদের দেশের কথা আর কী বলব, সে কি আর এখন আমাদের আছে? একেবারে পাকিস্তানের পূর্বকোণে ঠুসে দিয়েছে। কিন্তু সেখানকার লাল-লাল গোল-আলু আর সেখানকার পাকা সোনালী আনারস আর আঠাল দুধের ক্ষীর যে একবার খেয়েছে সে সার

19

পালোয়ান

5 December 2023
0
0
0

নিউ মার্কেটের পিছনে বাঁদরের দোকান আছে। ছোট-ছোট খাঁচায় পোরা বাঁদরের ভিড়, এ-ওর গায়ে চিকে রয়েছে। তা ছাড়া সাদা ইঁদুর, বেজি, কাকাতুয়া, কালোমুখো ল্যাজ-প্যাঁচানো শ্যামদেশের বেড়াল, ভালুক বাচ্চা, আরো কত কি যে

20

গুণ-করা

5 December 2023
0
0
0

বুঝলে, আমার মামাবাড়িতে ফান্ড বলে একটা চাকর ছিল। বাঙালি নয়। ঐ গারো পাহাড়ে অঞ্চলে ওর বাড়ি। আশা করি গারো পাহাড় কোথায় সে কথা আর তোমাদের বলে দিতে হবে না। ফান্ড যে বাঙালি নয় সে ওকে দেখলেই বোঝা যেত। বেঁটে, ম

21

কি বুদ্ধি

5 December 2023
0
0
0

জন্তু জানোয়ারদের বিষয়ে কতরকম অদ্ভুত গল্পই যে শোনা যায় তার আরু ঠিক নেই। একবার নাকি একটি ব্যাঙ কেমন করে পাথরের ফোকরের মধ্যে বদ্ধ হয়ে গিয়ে, ঐভাবে কতকাল যে ছিল তার ঠিক নেই। বোধ হয় অনেক শো বছর। তার পর যেই

22

বনের ধারে

5 December 2023
0
0
0

ছোটবেলায় পাহাড়ে দেশে থাকতাম। চার দিকে ছিল সরলগাছের বন। তাদের ছুচের মতো লম্বা পাতা, সারা গায়ে ধুনোর গন্ধ, একটুখানি বাতাস বইলেই শোঁ শোঁ একটা শব্দ উঠত। শুকনো সময় গাছের ডালে ডালে ঘষা লেগে অমনি আগুন লেগে য

23

মেজোমামার প্রতিশোধ

5 December 2023
0
0
0

আমার মেজোমামাকে নিশ্চয় তোমরা কেউ দ্যাখ নি। হাড় জিজিরে রোগা বেঁটে মতন, সরু লিক্লিকে হাত-পা, সারা মুখময় খোঁচা-খোঁচা দাড়ি গোঁফ। কারণ মেজোমামা দু সপ্তাহে একবার দাড়ি চাঁচেন, নাকি দাড়ি কামালেই মুখময় আঁচড়ে য

---