shabd-logo

দিনের শেষে

5 December 2023

0 Viewed 0

লক্ষ্ণৌ থেকে ওস্তাদ এসেছে। দাদু আর দিদিমা শ্যামলবাবুদের বাড়িতে গান শুনতে গেছেন, ফিরতে রাত হবে।

ঝগড় বলল, "তা তোমরা যদি সব-কিছুই বিশ্বাস না করে আনন্দ পাও, তা হলে আমার আর কিছু বলবার নেই। তবে সর্বদা মনে রেখো, বোগিদাদা, যা বিশ্বাস করবার মতো নয়, তা যে সত্যি করে হয় না, এরকম কোনো কথা নেই।"

ঝগড় রাগ করে উঠে দাঁড়াল। ওর পেছনে কুচি কুচি ঘাস লেগে- ছিল, তার কতকগুলো ঝরে ঝরে পড়তে লাগল। তাই দেখে বোগি নরম গলায় বললে, "তাই বলে ঘুটঘুটে অন্ধকারেও মানুষ চোখে দেখতে পায়, সে কথা কি করে বিশ্বাস করি? অসম্ভব জিনিস যে হয় না, ঝগড়।"

ঝগড় আরো রেগে গেল। "অসম্ভব বলেই সে-জিনিস হবে না? এ কি একটা কাজের-কথা হল, বোগিদাদা?"

বাগান যেখানে গিয়ে শেষ হয়েছে, সেখানে একটা মর্চে-ধরা কাঁটা- তারের বেড়া। তার পরেই রেলের লাইনের বাঁধ আকাশ পর্যন্ত জুড়ে রয়েছে। দুপুরে দুখু ঘাস কেটেছে, যেখানে-সেখানে কুচি-কুচি ঘাস পড়ে আছে; পাখিরা সব বাসায় ফিরে আসছে। শ্যামলবাবুদের গোয়ালে এখন গোরু দোয়া হচ্ছে। বাঁধের ওপারে কিছু দ্যাখা যায় না। বাঁধের উপরে একটা ন্যাড়া মনসার ঝোপ কান খাড়া করে দাঁড়িয়ে আছে;পিছন দিকে সূর্য ডুবে যাচ্ছে।

কারো মুখে কথা নেই। কানে এল একটা শব্দ, উংলিং টংলিং টংলিং। ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে চেন-শেকল ঝোলাতে ঝোলাতে একটা মালগাড়ি বাঁধের উপর দিয়ে চলে যেতে থাকে।

যেই সূর্যের সামনে আসে, অমনি সেই গাড়িটা কুকুচে কালো হয়ে ফুটে ওঠে। শেষ গাড়িটার দু দিককারই বড় টানা দরজা খোলা। সেই খোলা দরজার মধ্যে দিয়ে ওপারের সূর্যটাকে এই মস্ত হয়ে দ্যাখা গেল। আর দ্যাখা গেল, সূর্যের সামনে গাড়ির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে, কালো পাতলা ছিছিপে একটা মানুষ। তার মাথার উপর খাড়া দুটো শিং।

বোগি, রুমু, ঝগড়, কেউ আর কথা বলে না। ঠিক সেই সময় বাঁধের পিছনে সূর্যও টুপ করে ডুবে গেল। আর অমনি চার দিক ধোঁয়া ধোঁয়া আবছায়া হয়ে উঠল। শীত-শীত মনে হতে লাগল। বকের মতো একটা সাদা পাখি কোঁ-ও-ও-ও, কোঁ-ও-ও-ও বলে ডাকতে ডাকতে মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেল। ঝগড় উঠে পড়ে গা ঝাড়া দিয়ে নিল, "আর নয়, এখন ভিতরে চল।"

রুম বললে, "ঝগড়, লুচি ভাজতে বল-না, আমার খিদে পেয়েছে।" ঝগড় রান্নাঘরের দিকে চলে যেতেই বোগি বললে, "স্-স্-স্, দ্যাখ।"

বাঁধের ধার বেয়ে হাঁচড়-পাঁচড় করে নেমে, এক লাফে কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে, শিংওয়ালা লোকটা একেবারে ওদের কাছে এসে দাঁড়াল। ওর পিঠে একটা লম্বা ঝোলা।

"এই, শোন! আমাকে লুকিয়ে রাখবে?" বোগি রুমু ওর মুখের দিকে তাকাল, এ ওর মুখের দিকে তাকাল।

লোকটা বলল, "আমার পা ব্যথা করছে, তেষ্টা পাচ্ছে, ঘুম পাচ্ছে। রাখবে লুকিয়ে? তা হলে তোমাদের জাদু-পড়া, গুণ-করা, ভেল্কি- বাজি সব শিখিয়ে দেব। দেখবে?” বলেই লোকটা দিদিমার মার হাতে লাগানো সাদা গোলাপ ফুলের ঝোপের পিছনে গিয়ে দাঁড়াল। সেখান থেকে ডেকে বলল, বসেই আবার উঠে দাঁড়াল। কালো পোশাক, কোথায় শিং। মাথায় মুকুট। লোকটা একটু "এই দ্যাখ।" বলে টুপ করে একবার বোগি রুমু অবাক হয়ে দেখলে-কোথায় সাদা চুল, সাদা দাড়ি, সাদা পোশাক, হেসে আবার টুপ্ করে একবার বসেই উঠে পড়ল! আবার কালো পোশাক, মাথায় শিং যে-কে সেই।

বোগি রুমু উঠে একবার গোলাপগাছের পিছনটা ভালো করে দেখে এল। কোথাও কিছু নেই।

"কি দেখছ, দিদি? ভেল্কি লাগিয়ে দিতে পারি, কিন্তু ঠকাই না।" বোগি বললে, "এসো, তোমাকে লুকিয়ে রেখে দেব, শোবার জন্য দড়ির খাট দেব, জল খেতে দেব, কিন্তু আমাদের অন্ধকারে দেখতে শিখিয়ে দিতে হবে, মাটিতে কান পেতে এক মাইল দূরে বনের মধ্যে হরিণ-চলা শুনতে শিখিয়ে দিতে হবে।"

রুম বললে, "আর সেই ?"

লোকটা অবাক হয়ে বলল, "কি সেই, দিদি?"

"সেই যে, বাঁশি বাজালে জন্তু-জানোয়ার বশ হয়?"

"হ্যাঁ, তা-ও শিখিয়ে দেব, চোখের সামনে আমের আঁঠি থেকে আম গাছ করে তাতে ফল ধরাতে শেখাব, দড়ি বেয়ে শূন্যে মিলিয়ে যেতে শেখাব-" বোগি বলল, "ধ্যেৎ !"

লোকটা বললে, "ধ্যেৎ? এই নাও ধর।” বলেই পাশের পেয়ারা

গাছ থেকে একটা প্রকান্ড নীল রঙের কাকাতুয়া ধরে দিল।

বোগি ঢোক গিলে বলল, "চলো।” লোকটা তক্ষুনি নীল পাখিটাকে অন্ধকারে উড়িয়ে দিল। বলল, "হরিণ-চল্লার শব্দ আর এমন কি। আমাদের মণিপুরে তুঁতফলের গাছে রেশমী-গুটির গুঁয়োপোকারা থাকে। রাত্রে যদি গাছতলায় দাঁড়াও, ওদের পাতা চিবুনোর শব্দ শুনতে পাবে।"

দূরে রান্নাঘরের আলো দ্যাখা যাচ্ছে সেদিকে তাকিয়ে লোকটা বলল, "আমার মা দুধ দিয়ে কমলালেবু দিয়ে মেখে শীতের রাত্রে বাইরে রেখে • দিত, আর পাহাড় দেশের বেঁটে মানুষরা এসে সে-সব খেয়ে যেত। তাই

আমাদের কোনো অভাব থাকত না।"

রুমু বলল, "তুমি তাদের দেখেছ?" বোগি বলল, "রুমু, বোকার মতো কথা বোলো না।"

দুষ্টু ভূতের ভয় পায়, মালীর ঘরে থাকে না। ঘরের পাশে জলের কল আছে। তাই শিংওয়ালাকে ওরা সেখানে থাকতে দিল। "যাও,

ঢুকে পড়। ঝগড় দেখলে আবার মুশকিল হবে।"

লোকটা একটু ইতস্তত করে বলল, "একটা মোমবাতি হলে হত- না? যদি ইয়ে-মাকড়সা-টাকড়সা থাকে?"

বোগি বললে, "তবে-না বললে, অন্ধকারে দেখতে জানো ?"

সে বললে, "আহা, আমি দেখতে পারি কখন বললাম? বলেছি, তোমাদের শিখিয়ে দেব। আমার অন্ধকারে ভয় করে।" রুমু বললে, "দাদা, দাও-না তোমার নতুন টর্চটা ওকে।" রান্নাঘরের বারান্দা থেকে ঝগড় ডাকল, "বোগিদাদা-আ-আ, রুমুদিদি-ই-ই।" আর অমনি ওরাও লোকটার হাতে টর্চ গুজে দিয়ে ধুপধাপ্ দৌড় লাগল।

সব শেষের পেটফোলা গরম লুচিটা লাল কাশীর হয়। রান্নাঘরের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ওরা মুখ ধুল। জল পড়ে, সেখানে একটা মস্ত লঙ্কা গাছ হয়েছে। চিনি দিয়ে খেতে যেখানে মুখ ধোয়া দুখু বলেছে, ওকে কেউ লাগায় নি, আপনা থেকেই হয়েছে। তাতে ছোট্ট-ছোট্ট তারার মতো সাদা ফুল ফুটেছে আর রাশি রাশি লাল টুকটুকে লঙ্কা ঝুলে রয়েছে। মাথার উপর আকাশটার ঘন বেনী রঙ, কিন্তু দূরের আকাশ আলো হয়ে রয়েছে। কালো বাঁধের উপর দিয়ে কালো গুঁয়োপোকার মতো একটা মালগাড়ি যাচ্ছে, টংলিং, টংলিং, টংলিং করে চেন-শেকল ঝোলাতে ঝোলাতে।

শুনে শুনে ঘুম পায়। রুমু বায়না ধরে, আজ কিছুতেই একলা শোবে না। ঝগড় বিড় বিড় করে কি সব বলতে বলতে বোগির খাটে ওর বালিশটা দিয়ে দেয়। বোগির কানে কানে রুমু বলে, "দাদা!"

"কি, রুম্?"

"ওর যদি ভয় করে?"

বোগি কোনো উত্তর দেয় না। তার পর বিরক্ত হয়ে বলে, "ও কি রুম, আবার কান্নার কি হল ?"

"ও-ঘরে মাকড়সা আছে দাদা, আমি দেখেছি।"

বোগি বললে, "ওকে টর্চ দিয়েছি তো, রুম।" "ঝগড়র ঘরে অনেক জায়গা।"

ঝগড়ু বলল, "কি কানাকানি হচ্ছে। ও-সব ভালো নয় বলে দিচ্ছি। কি, লুকোচ্ছ কি! আজ গল্প শুনবে না ?"

বোগি বললে, "তুমি যাও-না, তোমার কত কাজ বাকি আছে। যাও- না রান্নাঘরে।"

কিন্তু ঝগড় কিছুতেই যাবে না। চৌকাঠের উপর বসে পড়ল। "অসম্ভব জিনিস হয় না বলে?"

বোগি পাশ ফিরে শুল। "হয়, ঝগড় হয়, আমি ভুল বলেছিলাম।" ঝগড় রাগ করে আলো নিবিয়ে সত্যি করেই চলে যাচ্ছে দেখে রুমু

হাত বাড়িয়ে ওর ফতুয়ার পকেটে গুঁজে দিল।

"কি কর দিদি, তামাকের গন্ধ হবে হাতে। কি, চাও, কি?"

"অসম্ভবের গল্প বল ঝগড় ।"

ঝগড় খাটের পায়ের দিকের রেলিং ধরে দাঁড়াল। "তোমরা হয়তো বলবে পরশপাথরও অসম্ভব।"

বোগি গায়ের ঢাকা খুলে ফেলে উঠে বসল। "পরশপাথর অসম্ভব

জিনিস নয়? পরশপাথর থাকলে এত গরিব লোক হবে কেন?"

রুমু বলল, "তুমিই তো বলেছ, এত গরিব যে, বীচিসুদ্ধু কুল ছেঁচে 'খায়।" ঝগড় বলল, “বেশ, তা হলে পৌষ মাসের সন্ধ্যাবেলায় কম্বল গায়ে

দিয়ে বুড়ো লোকটা আমার ঠাকুরদার কাছে আসে নি।" ঝগড় আবার

উঠে দাঁড়াল।

"না, ঝগড় না, দাদা কিছু জানে না, তুমি বল!"

ঝগড় শুরু করলে-"চার দিক চাঁদের আলোয় ঝিঝিম্ করছে এমন সময় সে লোকটা এল। বলল, 'খিদে পেয়েছে, খেতে দাও।' ঠাকুরদা বললেন, 'কোত্থেকে দেব, এ বছর অজন্মা, আমাদেরই খাবার কুলোয় না, মুরগি সব মরে গেছে, শালকাঠ ভালো দরে বিকোয় নি, দেব কোত্থেকে বল?' লোকটা বলল, 'তোমাদের এ বেলাকার খাওয়া-দাওয়া হয়ে গেছে?' 'না'। 'বেশ, তবে তোমার ভাগটাই নাহয় দাও আমাকে।' বাড়িতে যা ছিল চেঁচেপুঁছে ঠাকুরদা সব তার সামনে ধরে দিলেন। বলেছি তো, দুমকার ব্যাপারই আলাদা। লোকটা দাওয়ায় বসে বাড়ি- সুদ্ধ সবাকার ভুট্টা দিয়ে ভাত দিয়ে সেদ্ধ সবটুকু খেল, তার পর আমাদের পাহাড়তলির কুয়োর মিষ্টি জলও এক ঘটি খেল। তার পর আঁচিয়ে উঠে ট্যাক থেকে একটা হরতুকি আর একটা ছোট্ট কালো পাথর বের করে হরতুকিটা মুখে ফেলে বলল, 'বড্ড অভাব তোমাদের, তাই-না?' বলে পাথরটা দিয়ে পাথরের বড় থালাটাকে ছুয়ে দিল, অমনি থালাসুদ্ধু সোনা হয়ে গেল।

"সকলে তো থ! বুড়ো লোকটিও কালো পাথরটাকে ট্যাঁকে গুঁজে জঙ্গলের দিকের পথ ধরল। তখন সকলের চোখ চক্চক্ করে উঠল, সোনা থাকলে দুর্ভিক্ষেরও কোনো ভয় থাকবে না। চার দিক থেকে একটা 'ধর, ধর', 'গেল, গেল', রব উঠল। বুড়ো লোকটি একবার ওদের মুখের দিকে তাকাল তার পর একটা লাফ দিয়ে হরিণ হয়ে জঙ্গলের মধ্যে মিলিয়ে গেল।"

বোগি রুমু কিছু বলল না।

ঝগড় বলল, "বল, এ-ও অসম্ভব।"

বোগি বালিশে মুখ গুঁজে বলল, "অসম্ভব হবে কেন?"

ঝগড় তো অবাক। এমনি সময় দাদু আর দিদিমা শ্যামলবাবুদের বাড়ি থেকে ফিরে এলেন। "সে এক কান্ড শুনে এলাম রে। রামহাটি স্টেশনে কে একটা জাদুকর নানারকম খেলা দ্যাখাচ্ছিল, দেখতে দেখতে দারুণ ভিড় জমে গেল, তার পর কি নতুন খেলা দ্যাখাবে বলে সে এর ঘড়ি, ওর আংটি, তার উর্চ সব নিয়ে দে লম্বা! ঐ ভিড় স্টেশনের মধ্যে একেবারে নিখোঁজ হয়ে গেল, সবাই মিলে আঁতিপাঁতি খুঁজেও তার টিকিটি পেল না। কিন্তু তোদের ঘুমুবার সময় হয়ে গেছে, তোরা এখন ঘুমো।"

অনেকক্ষণ পরে রুমু বললে, "দাদা!"

"কি ?"

"টর্চ তো ছিল না ওর কাছে।"

বোগি চুপ করে রইল। রুমু আবার ডাকল, "দাদা!"

"কি বল?"

"ওর কপাল কেটে গিয়েছিল।"

বোগি বললে, "আঃ, রুমু, ফের কাঁদছ কেন?"

"রক্ত বেরুচ্ছিল যে দাদা, টর্চের আলোতে দেখলাম।"

বোগি রুমুর পিঠে মুখ গুঁজে চুপ করে শুয়ে রইল।

ঘড়ির শব্দ দূরে সরে যেতে লাগল। আরো দূরে বাঁধের উপর

মালগাড়ি যাচ্ছিল উংলিং টংলিং টংলিং। পরদিন সকালে মালীর ঘরে গিয়ে বোগি রুমু দেখল, দড়ির খাটে

উর্চটা রয়েছে, আর-একটা ছোট বাঁশি। লোকটা নেই।




23
Articles
লীলা মজুমদার রচনাবলী ১
0.0
লীলা মজুমদারের ছোট ছোট কিছু অবিস্মরণীয় সৃষ্টি একত্রে আনা হয়েছে রচনাবলী ১ বইটির মধ্যে। এটি এমন একটি উপন্যাস যেখানে গল্পগুলি এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যাতে বইটি সব বয়সের মানুষই পড়তে পারেন, এবং এর মজা উপলব্ধি করতে পারেন।
1

পদিপিসীর বর্মিবাক্স

28 November 2023
0
0
0

পাঁচুমামার প্যাকাটির মতন হাত ধরে টেনে ওকে ট্রেনে তুললাম। শূন্যে খানিক হাত-পা ছুড়ে, ও বাবাগো মাগো বলে চেঁচিয়ে-টে চিয়ে শেষে পাঁচুমামা খচ্ করে বেঞ্চিতে উঠে বসল। তার পর পকেট থেকে লাল রুমাল বের করে কপালের

2

বক-বধ পালা

28 November 2023
0
0
0

পালা শুরু জুড়ির সুর করে আবৃত্তি, মৃদু মুনু তবলা ইত্যাদি সহযোগে পোড়া জতুগৃহ থেকে বাহিরিয়া যবে, পাণ্ডব বঝিলা মনে এ বিশাল ভবে গৃহ বন্ধু কিছু নেই, নিলা বনবাস। দুঃখে কষ্টে বৃক্ষতলে কাটে দিনমাস। কত যে বিপদ

3

এই যা দেখা

29 November 2023
2
0
0

কলকাতা শহরের উত্তর দিকে সরু একটা সদর রাস্তা, তাতে লোকজন গাড়িঘোড়ার ভিড় কত, ভোর থেকে গভীর রাত অবধি হাঁকডাক ঠেলাঠেলি। লোকে বলে পথটা খুব পুরনো, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্ব কালে তৈরি, ঘরবাড়িগুলো এ ওর গায়

4

ছেলেবেলার গল্প

30 November 2023
0
0
0

গণশার চিঠি ভাই সন্দেশ, অনেকদিন পর তোমায় চিঠি লিখছি। এর মধ্যে কত কী যে সব ঘটে গেল যদি জানতে, তোমার গায়ের লোম ভাই খাড়া হয়ে গেঞ্জিটা উঁচু হয়ে যেত, চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসত, হাঁটুতে হাঁটুতে ঠকাঠক্ হয়ে কড়া পড়

5

হলদে পাখির পালক

1 December 2023
0
0
0

এক কত দেরি হয়ে গেল ভুলো তবু বাড়ি এল না, সন্ধে হয়ে গেল, রাত হয়ে গেল। দাদু তাস খেলতে যাবার আগে বললেন, "খুঁজতে যাবার কিছু দরকার নেই, কেউ তোদের নেড়িকুত্তো চুরি করবে না, খিদে পেলে সুড়সুড় করে নিজেই বাড়ি ফি

6

বহুরূপী

2 December 2023
0
0
0

ছোটবেলাকার কত কথাই যে মনে পড়ে, কত কান্ডই যে তখন হত। একবার গুপের মামাতো ভাই ভোঁদা বলেছিল যে বহুরূপীরা পর পর সাতদিন আসে, একেক দিন এক এক নতুন সাজে। কখনো কখনো সবাই তাকে বহুরূপী বলে চিনে ফেলে, আবার কখনো কখ

7

মহালয়ার উপহার

2 December 2023
0
0
0

শিবু, শিবুর মা আর শিবুর বউ তিন নম্বর হোগলাপট্টি লেনের দোতলার তিনখানি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকত। একটা ঘরে শিবুর মা শুত, সেটা সব থেকে বড় ও ভালো, কারণ বুড়ি ভারি খিটখিটে। আরেকটাতে শিবু আর শিবুর বউ, শুত, সেটা মাঝ

8

ভানুমতীর খেল

3 December 2023
0
0
0

গোরুদের ঘরের পিছনের ছোট ফটকটার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই লোকটাকে দেখতে পেলাম। গোয়ালের কোনায় একটা মাটির ঢিবির উপর ঝোপের আড়ালে বসে-বসে একটা দেশলাই কাঠি দিয়ে দাঁত খুঁটছে আর একটু-একটু পা দোলাচ্ছে। সারা গায়ে ধুলো

9

পঞ্চমুখী শাঁখ

3 December 2023
0
0
0

বন্ধুদের দেশের বাড়িতে একটা প্রকাণ্ড পঞ্চমুখী শাঁখ আছে! শুনেছি শাঁখটা নাকি দেড়শো বছর ধরে ওদের বাড়িতে রয়েছে। ওর নানা- রকম গুণটুনও নাকি আছে। আগে রোজ ওর পুজো হত, পুরুতঠাকুর আসত, খাওয়া-দাওয়া হত। তবে সত্তর

10

হুঁশিয়ার

3 December 2023
0
0
0

যখন সামনের লোকটার লোমওয়ালা ঘেমো ঘাড়টার দিকে আর চেয়ে থাকা অসম্ভব মনে হল, চোখ দুটো ফিরিয়ে নিলাম। অমনি কার জানি একরাশি খোঁচা-খোঁচা গোঁফ আমার ডান দিকের কানের ভিতর ঢুকে গেল। চমকে গিয়ে ফিরে দেখি ভীষণ রোগা,

11

সেকালে

3 December 2023
0
0
0

পঁয়ষট্টি বছর আগে আমার মামাবাড়ির দেশে এক দিকে যেমন সাধু- সজ্জনের ভিড় ছিল এবং তার ফলে পুজোপার্বণ, তিথিপালন, হরির লুট, ব্রাহ্মণ-ভোজন, কাঙালী-বিদায় লেগেই থাকত, আবার তেমনি অন্য দিক দিয়ে ঠগ-ঠ্যাঙাড়ে, জোচ্চো

12

চোর

3 December 2023
0
0
0

ঠিক যেই নিতাইদের বাড়ির পেছনের সেই ঝাঁকড়ান্ডুলো ঝোপটার কাছে এসেছি, পকেট হাতড়ে দেখি যে আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে! সেই কোনা-মোড়া আধ-ময়লা নোটটা কে যেন বুক-পকেট থেকে তুলে নিয়েছে! ভীষণ ঘাবড়ে গেলাম। ভয়ের চোটে ক

13

টাইগার

3 December 2023
0
0
0

তাকে উলটে দেখলাম থাবার তলাটা গোলাপী মখমলের মতো, মাঝে- মাঝে কচি-কচি সাদা লোম। পেটের তলাটাও গোলাপী-নরম তুলতুলে এক জায়গায় একটা শিরা না কি যেন ধুন্ধুক্ করছে। মুণ্ডুটাকে তুলে আবার নিজের পেট দেখতে চেষ্টা কর

14

লোমহর্ষণ

3 December 2023
0
0
0

রাজামশাই ব্যস্ত হয়ে দরদালানে পায়চারি করে বেড়াচ্ছেন, খিদেয় পেটের এ-দেয়াল ও-দেয়াল একসঙ্গে লেপটে যাচ্ছে, টেবিল পাতা, সোনার বাসন-কোসন সাজানো, মুক্তো-বসানো গেলাসে কেয়ার গন্ধ-দেওয়া জল, রানী ওদিকে মখমলের গদি

15

ভালোবাসা

3 December 2023
0
0
0

আজকাল সবই অন্যরকম লাগে। দরজার কড়া নাড়বামাত্র ভিতর থেকে একটা ভারী জিনিস দরজার উপর আর আছড়েও পড়ে না। নখ দিয়ে কেউ দরজায় আঁচড়িয়ে, পালিশ উঠিয়ে, বকুনিও খায় না; ঘরে ঢুকবামাত্র নেচেকঁদে গায়ের উপর চড়ে একাকারও ক

16

তেজী বুড়ো

3 December 2023
0
0
0

আয়না দেখে আঁতকে উঠলুম। এ তো আমার সেই চিরকেলে চেহারা নয়! সেই যাকে ছোটবেলা দেখেছিলুম ন্যাড়া মাথা, নাকে সদি, চোখ ফুলো! তার পর দেখেছিলুম চুল খোঁচা, নাক খাঁদা, গালে-টালে কাজল! এই সেদিনও দেখলুম খাকি পেন্টেল

17

দিনের শেষে

5 December 2023
0
0
0

লক্ষ্ণৌ থেকে ওস্তাদ এসেছে। দাদু আর দিদিমা শ্যামলবাবুদের বাড়িতে গান শুনতে গেছেন, ফিরতে রাত হবে। ঝগড় বলল, "তা তোমরা যদি সব-কিছুই বিশ্বাস না করে আনন্দ পাও, তা হলে আমার আর কিছু বলবার নেই। তবে সর্বদা মনে

18

আমাদের দেশে

5 December 2023
0
0
0

আমাদের দেশের কথা আর কী বলব, সে কি আর এখন আমাদের আছে? একেবারে পাকিস্তানের পূর্বকোণে ঠুসে দিয়েছে। কিন্তু সেখানকার লাল-লাল গোল-আলু আর সেখানকার পাকা সোনালী আনারস আর আঠাল দুধের ক্ষীর যে একবার খেয়েছে সে সার

19

পালোয়ান

5 December 2023
0
0
0

নিউ মার্কেটের পিছনে বাঁদরের দোকান আছে। ছোট-ছোট খাঁচায় পোরা বাঁদরের ভিড়, এ-ওর গায়ে চিকে রয়েছে। তা ছাড়া সাদা ইঁদুর, বেজি, কাকাতুয়া, কালোমুখো ল্যাজ-প্যাঁচানো শ্যামদেশের বেড়াল, ভালুক বাচ্চা, আরো কত কি যে

20

গুণ-করা

5 December 2023
0
0
0

বুঝলে, আমার মামাবাড়িতে ফান্ড বলে একটা চাকর ছিল। বাঙালি নয়। ঐ গারো পাহাড়ে অঞ্চলে ওর বাড়ি। আশা করি গারো পাহাড় কোথায় সে কথা আর তোমাদের বলে দিতে হবে না। ফান্ড যে বাঙালি নয় সে ওকে দেখলেই বোঝা যেত। বেঁটে, ম

21

কি বুদ্ধি

5 December 2023
0
0
0

জন্তু জানোয়ারদের বিষয়ে কতরকম অদ্ভুত গল্পই যে শোনা যায় তার আরু ঠিক নেই। একবার নাকি একটি ব্যাঙ কেমন করে পাথরের ফোকরের মধ্যে বদ্ধ হয়ে গিয়ে, ঐভাবে কতকাল যে ছিল তার ঠিক নেই। বোধ হয় অনেক শো বছর। তার পর যেই

22

বনের ধারে

5 December 2023
0
0
0

ছোটবেলায় পাহাড়ে দেশে থাকতাম। চার দিকে ছিল সরলগাছের বন। তাদের ছুচের মতো লম্বা পাতা, সারা গায়ে ধুনোর গন্ধ, একটুখানি বাতাস বইলেই শোঁ শোঁ একটা শব্দ উঠত। শুকনো সময় গাছের ডালে ডালে ঘষা লেগে অমনি আগুন লেগে য

23

মেজোমামার প্রতিশোধ

5 December 2023
0
0
0

আমার মেজোমামাকে নিশ্চয় তোমরা কেউ দ্যাখ নি। হাড় জিজিরে রোগা বেঁটে মতন, সরু লিক্লিকে হাত-পা, সারা মুখময় খোঁচা-খোঁচা দাড়ি গোঁফ। কারণ মেজোমামা দু সপ্তাহে একবার দাড়ি চাঁচেন, নাকি দাড়ি কামালেই মুখময় আঁচড়ে য

---