shabd-logo

হুঁশিয়ার

3 December 2023

0 Viewed 0

যখন সামনের লোকটার লোমওয়ালা ঘেমো ঘাড়টার দিকে আর চেয়ে থাকা অসম্ভব মনে হল, চোখ দুটো ফিরিয়ে নিলাম। অমনি কার জানি একরাশি খোঁচা-খোঁচা গোঁফ আমার ডান দিকের কানের ভিতর ঢুকে গেল। চমকে গিয়ে ফিরে দেখি ভীষণ রোগা, ভীষণ লম্বা, ভীষণ কালো একটা লোক গলাবন্ধ কালো কোট পরে ঠিক আমার পিছনে দাঁড়িয়ে! তার পিছনে আরো অনেক লোক সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য কোন পা-জোড়া তার বুঝে নিতে আমার একটু সময় লাগল। শেষটা টের পেলাম খুব সরু লোমওয়ালা, আর খুব কালো ঠ্যাং দুটো ওর। তায় আবার একজোড়া দাঁত-বের-করা ছেঁড়া চটি পরা, তার ফুটো দিয়ে নোংরা বুড়ো আঙুল বেরিয়েছে।

এই লোকটা হাসি-হাসি মুখ করে আস্তে আস্তে আমার কানের মধ্যে থেকে তার গোঁফটাকে সরিয়ে নিতে নিতে বলল, "মনিব্যাগটা আরেকটু খামচে ধরুন, যা চোর-চামারের উপদ্রব!" লোকটার কথাগুলো যেন কত দূর থেকে এল, কিরকম একটা হালকা ফিস্ফিস্ আওয়াজ। তার চোখ দুটোও যেন আর কিছুতেই গর্তের মধ্যে থাকছিল না, একে- বারে বেরিয়ে এসে আমার মনিব্যাগের ভিতরের খোপের মধ্যে পড়ে যেতে চাচ্ছিল। সবাই একজনের পিছনে একজন দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে শেয়ালদা স্টেশনের ইনটার ক্লাস টিকিট-ঘরের দিকে এগোচ্ছিলাম। খুব সাবধানে, কারণ একটু এক পাশে সরলেই ধাক্কার চোটে লাইন থেকে বেরিয়ে পড়বার ভয়। এমনি করে যখন খাঁচার ভিতরে বেশ কালো-কালো মেম- সাহেবের কাছে পৌছলাম, তখনো টের পাচ্ছিলাম, পিছনে সেই লোকটার ফোঁসফোঁস্ নিঃশ্বাস আর আস্তে আস্তে গোঁফ-নাড়া।

লোকটা দেখলাম আমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছে। মেমসাহেবকে যখন টাকা দিলাম লোকটা ঝুঁকে ব্যাগের মধ্যে দেখতে দেখতে বলল, "চেঞ্জ গুনে নেবেন, বেটিরা ভারি ছ্যাঁচড়!" মেম রেগে এ-গাল থেকে ও-গালে চুইং-গামটা ঠুসে দিয়ে বলল-"চোপরাও বাবু।" তার পর লোকটা আমাকে সেইরকম যত্ন করে উপদেশ দিতে দিতে প্ল্যাটফর্মের দিকে নিয়ে 'চলল। একটা কলার খোসা আর কি যেন খানিকটা খুব কসরত করে এড়িয়ে বলল, "সংসারে কাউকে বিশ্বাস করা যায় না। সবাই সবারটা গিলবার ফিকিরে আছে।" গেটের কাছে চেকার বাবু চিকিত চিকিত করে টিকিট ছেঁটে দিলে পর আমার সঙ্গে সঙ্গে সেও প্ল্যাটফর্মে ঢুকল। বলল, "এই যে গাড়ি"-অবিশ্যি সেটা বলবার কিছু দরকার ছিল না।

আমার সঙ্গে একটা ইনটার ক্লাস গাড়িতে ঢুকে আমার পাশে বসে বলল, "জিনিসপত্র আগলে রাখুন, সুটকেসটা দূরে রাখবেন না, নিজের সীটের তলায় রাখাই ভালো। এটা জেনে রাখবেন শিয়ালদা স্টেশন, চোর-বাটপাড়ের আড়ত।" তার পর আমরা দুজনেই জুতো খুলে পা তুলে আরাম করে বসলে পর বলতে লাগল, "সংসারে কাউকে বিশ্বাস করা যায় না। আমি নিজে যতগুলো চোর-জোচ্চর দেখেছি সবগুলোকে একটার পিছনে একটা দাঁড় করালে এখান থেকে বোলপুর স্টেশন অবধি লম্বা একটা লাইন হয়।" এ কথা শুনে আমি অবাক হলাম।

তখন সে আরো বলতে লাগল, "আর ছিঁচকে চুরির জন্য তারা যে অধ্যবসায়, ধৈর্য ও বুদ্ধি দেখিয়েছে, ভালো কাজে যদি লাগাত এতদিনে ভারতবর্ষ উদ্ধার হয়ে যেত।"

তার পর তার কালো কোটের পকেট থেকে একটা চারকোনা পানের ডিবে বের করে বলল-"গিরিডির মতন সভ্য শহরে, যে জায়গা সজ্জনের বাস বলে বিখ্যাত এমন শহরে, সেবার পুজোর সময়ে সচ্চিদানন্দ জ্যাঠামশাইয়ের পাজামা-সুটের ইজের গা থেকে খুলে চোরে নিয়ে চলে গেল, এর বেশি আর কি বলা যায়।"

আমি নিবিষ্ট মনে শুনতে লাগলাম। আর সে গোটা দুই পান মুখে পুরে, একটু চুন দাঁতে লাগিয়ে বলে যেতে লাগল-"গরমের জন্য বাইরে মাদুর পেতে, তায় চাদর বিছিয়ে, বালিশ মাথায়, চাদর গায়ে, পায়ের কাছে চটি, বালিশের নীচে হাতঘড়ি, মাথার কাছে জলের গেলাস নিয়ে, ভগবানের নাম করে রোজকার মতন শুয়ে পড়েছেন। আর সকালে উঠে দ্যাখেন কিনা চটি নেই, গেলাস নেই, বালিশ নেই, হাতঘড়ি নেই, এমন-কি, পরনের ইজেরটা পর্যন্ত কখন যেন আস্তে আস্তে খুলে নিয়েছে!"

শুনে আমি আশ্চর্য হলাম।

তখন সে বলল "কাউকে মশাই বিশ্বাস করা যায়? অরুণবাবু ট্রেনে করে আসছেন। সেকেন কেলাস গাড়ি, সঙ্গে উঠলেন দিব্যি খাকি প্যান্ট-শার্ট-হ্যাট-পরা বাঙালি-সাহেব! ক্যায়সা ভাব জমে গেল দেখতে দেখতে। ইনি ওঁর বিস্কুট খেলেন, আবার উনি এর সিগারেট টানলেন! তার পর মুড়ি-সুড়ি দিয়ে দুজনে ঘুম। সকালে উঠে অরুণ- বাবু দেখলেন বাঙালি-সাহেবও নেই, তার জিনিসপত্রও নেই, আর অরুণবাবুর সুটকেসও নেই।"

আমি একবার আমার সুটকেস ও পুঁল্লিটা দেখে নিয়ে ঠ্যাং বদলে বসলাম। আর সে বাইরে এঁদো পুকুরে ধোপাদের কাপড় কাচা দেখতে দেখতে নিচু গলায় বলতে লাগাল:

"ছোটবেলায় পাড়াগাঁয়ে পিসিমার কাছে থাকতাম। গ্রামের এক- ধারে বাঁশঝাড়ের কাছে খড়ের চালের বাড়ি। যেই-না সন্ধে হওয়া আর অমনি বাড়ির আর উঠোনের আনাচে-কানাচে ভয়ভীতিরা ভিড় করে আসত। বাঁশঝাড়ের শুকনো পাতা খসার শব্দ থেকে আরম্ভ করে আমাদের মেনি বেড়ালটার ক্যাক্ করে ইঁদুর ধরার আওয়াজটা পর্যন্ত সূর্য ডোবার পর কেমন যেন অন্যরকম লাগত। আর পিসিমা শোবার আগে প্রত্যেক ঘরের প্রত্যেকটা খিল ভালো করে দেখে নিতেন, বাক্স- প্যাটরার উপর নানান ভাবে ঘণ্টা বাসন সব এমন করে সাজিয়ে রাখতেন যাতে একটু সরালেই সব দুম্ম্পাম্ পড়ে আমাদের কেন, পাড়ার অন্য লোকদেরও ঘুম ভাঙিয়ে দেয়। এই-সব করতে করতে পিদ্দিমের তেলটুকু পুড়ে যেত আর আলো নিবে যেত। পিসিমাও অমনি খ্যুচ্ করে বিছানায় ঢুকতেন। মাঝে মাঝে ওর ঠান্ডা খড়খড়ে পা আমার পায়ে লেগে যেত, আমি শিউরে উঠতাম! 'শুয়েই আবার পিসিমার • 'মনে হত-কি হবে, খাটের তলা দ্যাখা হয় নি, যদি কোনো ধূর্ত চোর ছোরা-হাতে সেখানে ঘাটি মেরে বসে থাকে! আমাকে বলতেন 'এই, তোর একটা মার্বেল খাটের তলা দিয়ে গড়িয়ে দে-না, ওদিক দিয়ে বেরোলে বুঝব খাটের তলায় কেউ নেই।' ভয়ে আমার হাত-পা পেটের মধ্যে সেঁদিয়ে যেত, পিসিমা যা বলতেন তাই করতাম। একবার খাটের পায়ায় মার্বেল আটকে গেল, আর সারারাত পিসিমা আর আমি জেগে ঠক্টক্ করে কাঁপতে লাগলাম। আর কখনো যদি পিসিমা আগে শুতেন আর আমাকে অন্ধকারে পরে শুতে হত, খাটের তিন হাত দূর থেকে এক লাফ মেরে খাটে উঠে পড়তাম, যাতে খাটের তলায় লুকিয়ে বসা বদমায়েসটা তার ঠান্ডা হাত দিয়ে আমার ঠ্যাং ধরে টেনে নিতে না পারে। একদিন হিসেব ভুল হওয়াতে পিসিমার পেটের উপর ল্যান্ড করেছিলাম, আর পিসিমা আমার কান-টান মলে বার বার বলতে লাগলেন যে উনি পষ্ট টের পাচ্ছেন ওর নাড়িভুঁড়ি সব এলিয়ে গেছে!"

এতটা বলে লোকটা একবার আড়চোখে আমার দিকে চেয়ে বলল, "ছোটবেলা থেকে এমনি আমার ট্রেনিং যে কোনো শা-র চোরও আমার কাছ থেকে কানাকড়িটিও পায় নি! এই দেখুন নোটের তাড়া নিয়ে নিবিয়ে যাচ্ছি!"

এই অবধি বলেই হঠাৎ সে এদিক-ওদিক চেয়ে সটাং শুয়ে পড়ে নাক ডাকতে লাগল। গাড়িতে আর যে দু-চার জন ছিল তারাও সবাই একসঙ্গে নেমে গেল। আর আমিও আমার যে দু-একটা কাজ ছিল সেরে নিয়ে অন্য এক বেঞ্চিতে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লাম ও একটু পরেই ঘুমিয়ে পড়লাম।

যখন ঘুম ভাঙল তখন ভোর হয়ে এসেছে, চোখ ঘষে উঠে দেখি আমার সঙ্গীটি কখন জানি নেমে গেছে। তার কথা মনে উঠতেই আর তার চোরের ভয় মনে করতেই বেজায় হাসি পেল। ঠিক এই সময় চোখে পড়ল বেঞ্চির তলায় আমার সুটকেস, পুঁটলি ও চটি কিচ্ছু নেই। আছে কেবল তার সেই দাঁত-বের-করা ছেঁড়া চটি জোড়া।

ভীষণ রাগ হল। ভন্ড, জোচ্চোর, বকধামিক কোথাকার। রাগের চোটে হঠাৎ নিজের ট্যাকের উপর হাত পড়ে গেল। ট্যাক খুলে দেখলাম কাল রাত্রে লোকটা ঘুমিয়ে পড়বার পর তার বুক-পকেট থেকে যে নোটের তাড়াটা সরিয়েছিলাম-আমার সুটকেস ইত্যাদি চুরি যেতে পারে-কিন্তু সেটি ঠিকই আছে।

বেশ একট খশি মনে আবার শুয়ে এক ঘুম দিয়ে উঠলাম।


23
Articles
লীলা মজুমদার রচনাবলী ১
0.0
লীলা মজুমদারের ছোট ছোট কিছু অবিস্মরণীয় সৃষ্টি একত্রে আনা হয়েছে রচনাবলী ১ বইটির মধ্যে। এটি এমন একটি উপন্যাস যেখানে গল্পগুলি এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যাতে বইটি সব বয়সের মানুষই পড়তে পারেন, এবং এর মজা উপলব্ধি করতে পারেন।
1

পদিপিসীর বর্মিবাক্স

28 November 2023
0
0
0

পাঁচুমামার প্যাকাটির মতন হাত ধরে টেনে ওকে ট্রেনে তুললাম। শূন্যে খানিক হাত-পা ছুড়ে, ও বাবাগো মাগো বলে চেঁচিয়ে-টে চিয়ে শেষে পাঁচুমামা খচ্ করে বেঞ্চিতে উঠে বসল। তার পর পকেট থেকে লাল রুমাল বের করে কপালের

2

বক-বধ পালা

28 November 2023
0
0
0

পালা শুরু জুড়ির সুর করে আবৃত্তি, মৃদু মুনু তবলা ইত্যাদি সহযোগে পোড়া জতুগৃহ থেকে বাহিরিয়া যবে, পাণ্ডব বঝিলা মনে এ বিশাল ভবে গৃহ বন্ধু কিছু নেই, নিলা বনবাস। দুঃখে কষ্টে বৃক্ষতলে কাটে দিনমাস। কত যে বিপদ

3

এই যা দেখা

29 November 2023
2
0
0

কলকাতা শহরের উত্তর দিকে সরু একটা সদর রাস্তা, তাতে লোকজন গাড়িঘোড়ার ভিড় কত, ভোর থেকে গভীর রাত অবধি হাঁকডাক ঠেলাঠেলি। লোকে বলে পথটা খুব পুরনো, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্ব কালে তৈরি, ঘরবাড়িগুলো এ ওর গায়

4

ছেলেবেলার গল্প

30 November 2023
0
0
0

গণশার চিঠি ভাই সন্দেশ, অনেকদিন পর তোমায় চিঠি লিখছি। এর মধ্যে কত কী যে সব ঘটে গেল যদি জানতে, তোমার গায়ের লোম ভাই খাড়া হয়ে গেঞ্জিটা উঁচু হয়ে যেত, চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসত, হাঁটুতে হাঁটুতে ঠকাঠক্ হয়ে কড়া পড়

5

হলদে পাখির পালক

1 December 2023
0
0
0

এক কত দেরি হয়ে গেল ভুলো তবু বাড়ি এল না, সন্ধে হয়ে গেল, রাত হয়ে গেল। দাদু তাস খেলতে যাবার আগে বললেন, "খুঁজতে যাবার কিছু দরকার নেই, কেউ তোদের নেড়িকুত্তো চুরি করবে না, খিদে পেলে সুড়সুড় করে নিজেই বাড়ি ফি

6

বহুরূপী

2 December 2023
0
0
0

ছোটবেলাকার কত কথাই যে মনে পড়ে, কত কান্ডই যে তখন হত। একবার গুপের মামাতো ভাই ভোঁদা বলেছিল যে বহুরূপীরা পর পর সাতদিন আসে, একেক দিন এক এক নতুন সাজে। কখনো কখনো সবাই তাকে বহুরূপী বলে চিনে ফেলে, আবার কখনো কখ

7

মহালয়ার উপহার

2 December 2023
0
0
0

শিবু, শিবুর মা আর শিবুর বউ তিন নম্বর হোগলাপট্টি লেনের দোতলার তিনখানি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকত। একটা ঘরে শিবুর মা শুত, সেটা সব থেকে বড় ও ভালো, কারণ বুড়ি ভারি খিটখিটে। আরেকটাতে শিবু আর শিবুর বউ, শুত, সেটা মাঝ

8

ভানুমতীর খেল

3 December 2023
0
0
0

গোরুদের ঘরের পিছনের ছোট ফটকটার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই লোকটাকে দেখতে পেলাম। গোয়ালের কোনায় একটা মাটির ঢিবির উপর ঝোপের আড়ালে বসে-বসে একটা দেশলাই কাঠি দিয়ে দাঁত খুঁটছে আর একটু-একটু পা দোলাচ্ছে। সারা গায়ে ধুলো

9

পঞ্চমুখী শাঁখ

3 December 2023
0
0
0

বন্ধুদের দেশের বাড়িতে একটা প্রকাণ্ড পঞ্চমুখী শাঁখ আছে! শুনেছি শাঁখটা নাকি দেড়শো বছর ধরে ওদের বাড়িতে রয়েছে। ওর নানা- রকম গুণটুনও নাকি আছে। আগে রোজ ওর পুজো হত, পুরুতঠাকুর আসত, খাওয়া-দাওয়া হত। তবে সত্তর

10

হুঁশিয়ার

3 December 2023
0
0
0

যখন সামনের লোকটার লোমওয়ালা ঘেমো ঘাড়টার দিকে আর চেয়ে থাকা অসম্ভব মনে হল, চোখ দুটো ফিরিয়ে নিলাম। অমনি কার জানি একরাশি খোঁচা-খোঁচা গোঁফ আমার ডান দিকের কানের ভিতর ঢুকে গেল। চমকে গিয়ে ফিরে দেখি ভীষণ রোগা,

11

সেকালে

3 December 2023
0
0
0

পঁয়ষট্টি বছর আগে আমার মামাবাড়ির দেশে এক দিকে যেমন সাধু- সজ্জনের ভিড় ছিল এবং তার ফলে পুজোপার্বণ, তিথিপালন, হরির লুট, ব্রাহ্মণ-ভোজন, কাঙালী-বিদায় লেগেই থাকত, আবার তেমনি অন্য দিক দিয়ে ঠগ-ঠ্যাঙাড়ে, জোচ্চো

12

চোর

3 December 2023
0
0
0

ঠিক যেই নিতাইদের বাড়ির পেছনের সেই ঝাঁকড়ান্ডুলো ঝোপটার কাছে এসেছি, পকেট হাতড়ে দেখি যে আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে! সেই কোনা-মোড়া আধ-ময়লা নোটটা কে যেন বুক-পকেট থেকে তুলে নিয়েছে! ভীষণ ঘাবড়ে গেলাম। ভয়ের চোটে ক

13

টাইগার

3 December 2023
0
0
0

তাকে উলটে দেখলাম থাবার তলাটা গোলাপী মখমলের মতো, মাঝে- মাঝে কচি-কচি সাদা লোম। পেটের তলাটাও গোলাপী-নরম তুলতুলে এক জায়গায় একটা শিরা না কি যেন ধুন্ধুক্ করছে। মুণ্ডুটাকে তুলে আবার নিজের পেট দেখতে চেষ্টা কর

14

লোমহর্ষণ

3 December 2023
0
0
0

রাজামশাই ব্যস্ত হয়ে দরদালানে পায়চারি করে বেড়াচ্ছেন, খিদেয় পেটের এ-দেয়াল ও-দেয়াল একসঙ্গে লেপটে যাচ্ছে, টেবিল পাতা, সোনার বাসন-কোসন সাজানো, মুক্তো-বসানো গেলাসে কেয়ার গন্ধ-দেওয়া জল, রানী ওদিকে মখমলের গদি

15

ভালোবাসা

3 December 2023
0
0
0

আজকাল সবই অন্যরকম লাগে। দরজার কড়া নাড়বামাত্র ভিতর থেকে একটা ভারী জিনিস দরজার উপর আর আছড়েও পড়ে না। নখ দিয়ে কেউ দরজায় আঁচড়িয়ে, পালিশ উঠিয়ে, বকুনিও খায় না; ঘরে ঢুকবামাত্র নেচেকঁদে গায়ের উপর চড়ে একাকারও ক

16

তেজী বুড়ো

3 December 2023
0
0
0

আয়না দেখে আঁতকে উঠলুম। এ তো আমার সেই চিরকেলে চেহারা নয়! সেই যাকে ছোটবেলা দেখেছিলুম ন্যাড়া মাথা, নাকে সদি, চোখ ফুলো! তার পর দেখেছিলুম চুল খোঁচা, নাক খাঁদা, গালে-টালে কাজল! এই সেদিনও দেখলুম খাকি পেন্টেল

17

দিনের শেষে

5 December 2023
0
0
0

লক্ষ্ণৌ থেকে ওস্তাদ এসেছে। দাদু আর দিদিমা শ্যামলবাবুদের বাড়িতে গান শুনতে গেছেন, ফিরতে রাত হবে। ঝগড় বলল, "তা তোমরা যদি সব-কিছুই বিশ্বাস না করে আনন্দ পাও, তা হলে আমার আর কিছু বলবার নেই। তবে সর্বদা মনে

18

আমাদের দেশে

5 December 2023
0
0
0

আমাদের দেশের কথা আর কী বলব, সে কি আর এখন আমাদের আছে? একেবারে পাকিস্তানের পূর্বকোণে ঠুসে দিয়েছে। কিন্তু সেখানকার লাল-লাল গোল-আলু আর সেখানকার পাকা সোনালী আনারস আর আঠাল দুধের ক্ষীর যে একবার খেয়েছে সে সার

19

পালোয়ান

5 December 2023
0
0
0

নিউ মার্কেটের পিছনে বাঁদরের দোকান আছে। ছোট-ছোট খাঁচায় পোরা বাঁদরের ভিড়, এ-ওর গায়ে চিকে রয়েছে। তা ছাড়া সাদা ইঁদুর, বেজি, কাকাতুয়া, কালোমুখো ল্যাজ-প্যাঁচানো শ্যামদেশের বেড়াল, ভালুক বাচ্চা, আরো কত কি যে

20

গুণ-করা

5 December 2023
0
0
0

বুঝলে, আমার মামাবাড়িতে ফান্ড বলে একটা চাকর ছিল। বাঙালি নয়। ঐ গারো পাহাড়ে অঞ্চলে ওর বাড়ি। আশা করি গারো পাহাড় কোথায় সে কথা আর তোমাদের বলে দিতে হবে না। ফান্ড যে বাঙালি নয় সে ওকে দেখলেই বোঝা যেত। বেঁটে, ম

21

কি বুদ্ধি

5 December 2023
0
0
0

জন্তু জানোয়ারদের বিষয়ে কতরকম অদ্ভুত গল্পই যে শোনা যায় তার আরু ঠিক নেই। একবার নাকি একটি ব্যাঙ কেমন করে পাথরের ফোকরের মধ্যে বদ্ধ হয়ে গিয়ে, ঐভাবে কতকাল যে ছিল তার ঠিক নেই। বোধ হয় অনেক শো বছর। তার পর যেই

22

বনের ধারে

5 December 2023
0
0
0

ছোটবেলায় পাহাড়ে দেশে থাকতাম। চার দিকে ছিল সরলগাছের বন। তাদের ছুচের মতো লম্বা পাতা, সারা গায়ে ধুনোর গন্ধ, একটুখানি বাতাস বইলেই শোঁ শোঁ একটা শব্দ উঠত। শুকনো সময় গাছের ডালে ডালে ঘষা লেগে অমনি আগুন লেগে য

23

মেজোমামার প্রতিশোধ

5 December 2023
0
0
0

আমার মেজোমামাকে নিশ্চয় তোমরা কেউ দ্যাখ নি। হাড় জিজিরে রোগা বেঁটে মতন, সরু লিক্লিকে হাত-পা, সারা মুখময় খোঁচা-খোঁচা দাড়ি গোঁফ। কারণ মেজোমামা দু সপ্তাহে একবার দাড়ি চাঁচেন, নাকি দাড়ি কামালেই মুখময় আঁচড়ে য

---