shabd-logo

বহুরূপী

2 December 2023

2 Viewed 2

ছোটবেলাকার কত কথাই যে মনে পড়ে, কত কান্ডই যে তখন হত। একবার গুপের মামাতো ভাই ভোঁদা বলেছিল যে বহুরূপীরা পর পর সাতদিন আসে, একেক দিন এক এক নতুন সাজে। কখনো কখনো সবাই তাকে বহুরূপী বলে চিনে ফেলে, আবার কখনো কখনো সে এমনি চেহারা বানিয়ে আসে যে কেউ তাকে বহুরূপী বলে টেরই পায় না। তার পর একদিন নিজের সত্যিকার চেহারা নিয়ে এসে, যে যা কিছু টাকা-পয়সা দেয় চেয়ে নিয়ে যায়।

সেবার মধুপুরেও ঠিক তাই হল। সকালে মামিমা তরকারি কুটছেন, একজন গয়লার মেয়ে এসে কি চমৎকার খোয়া-ক্ষীর বিক্রি করে গেল। পরদিন বিকেলে একজন ঝোলা-ঝোলা পোশাক-পরা ফিরিঙ্গী পাদরি এসে মামার কাছে পোস্টাপিসের রাস্তা জিজ্ঞাসা করে, আধ ঘণ্টা বসে ভাঙা ভাঙা বাংলায় ইংরাজিতে গির্জার ঘণ্টা-মেরামতের গল্প করে গেল। তার পরদিন আবার দেখি যে দশ-মুণ্ডুওয়ালা রাবণ- রাজা সেজে এসেছে। গুপেরা হৈ-চৈ করে উঠল। মামিমার ছোট মেয়ে বুঁকি ভয় পেয়ে খুব খানিকটা কাঁদল। তার পরদিন রাত্রে খাওয়া-দাওয়ার পর অন্ধকার বারান্দায় খট্ খট্ শব্দ শুনে ভোঁদা বাইরে গিয়ে দ্যাখে কি সর্বনাশ, থামে ঠেস দিয়ে বিকট একটা কঙ্কাল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে, বাতাসে তার হাত দুটো একটু একটু দুলছে, আর হাড়গোড় থেকে খটাখট্ শব্দ হচ্ছে। ভোঁদা দারুণ ভয় পেয়েছিল, কিন্তু গুপে এসেই বলল-"এই বহুরূপী! তুমি তো অরি চালাক হয়েছ!" অমনি কঙ্কালটা এমন করে অন্ধকার ঝোপের পাশে গা ঢাকা দিল যে সত্যি মনে হল বুঝি মিলিয়ে গেল? ততক্ষণে মামাও বেরিয়ে এসেছেন, ধমক দিয়ে বললেন-"এই বহুরূপী, সাজতে হয় মজার মজার সাজ কর। এইরকম ভয়াবহ চেহারা করে এলে ছেলে- পিলেরা ভীতু হয়ে যাবে যে।" অন্ধকারের মধ্যে থেকে একটা খিল্- খিল্ হাসি শোনা গেল! তার পর সব চুপচাপ। বড়দের অনেকেরই নাকি গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল!

পরদিন বহুরূপী মাতাল সেজে এসে আধঘণ্টা সবাইকে খুব হাসাল। বললে হয়তো সবাই বিশ্বাস করবে না, কিন্তু সারাক্ষণ সে ঠ্যাং দুটো উঁচু করে হাতে হেঁটে বেড়াচ্ছিল। বলল নাকি মাথা ঘুরছে বলে কিছু ঠাওর করতে পারছে না। আর সে যে কি-সব আবোল- তাবোল বকছিল সবাই হেসে লুটোপাটি। যাবার আগে আবার এক গেলাস জল চেয়ে, সেটা পায়ের আঙুল দিয়ে ধরে, জলটা গলায় ঢেলে নিল। সবাই তো হাঁ।

তার পরদিন সারাদিনই সবাই আশা করে আছে কখন বহুরূপী আসবে, এমন সময় একজন সাপের ওঝা এসে জোরজার করে সাপ খেলা দেখাবেই দেখাবে। সবাই তাকে বহুরূপী মনে করে খুব রসিকতা করছে। এমন সময় একজন পুলিশ-সাহেব এসে মহা সোরগোল লাগিয়ে দিল। ও নাকি সত্যি ওঝা নয়, ডাকসাইটে চোর, বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ-খবর নেয় কোথা দিয়ে কিভাবে গিয়ে জিনিসপত্র সরানো যেতে পারে। ওঝাটাও তাকে দেখেই জিনিসপত্র গুটিয়ে নিয়ে দে দৌড়। তাড়াতাড়িতে একটা সত্যিকারের সাপও ফেলে গেল। কিন্তু শেষপর্যন্ত বটু মালী বলল ওটা হেলে সাপ, কাউকে কিছু বলে না, তবে কেউ কেউ বলে যে ওদের শনি-মঙ্গল বারে বিষ হয়, কাজেই সাবধানের মার নেই। ততক্ষণে সাপটা যে কোথায় পালিয়েছে তাকে খুঁজেই পাওয়া গেল না। কিন্তু ঐ লোক দুটোর মধ্যে কেউ বহুরূপী কি না তা বোঝাই গেল না।

পরদিন বিকেলে একজন বাউল এসে অনেকক্ষণ গান গেয়ে নেচে-

কুঁদে একাকার। বহুরূপীটার কত যে বিদ্যে জানা ছিল! সন্ধেবেলা পাশের বাড়ি থেকে হরিপদবাবুরা বেড়াতে এসে খুব রাগ করতে লাগলেন যে এই-সব বহুরূপী সেজে যারা বেড়ায় তারাই দাগী চোর হয়, বাড়িতে ঢুকতে দেওয়াই উচিত নয়, আর মামা কিনা তাদের আশকারা দেন। একদিন যখন চেঁচেপুঁছে সব নিয়ে যাবে তখন পস্তাতে হবে, ঠিক হবে। যত সব ফেরিওয়ালা, বাউল, বহুরূপী, নাচিয়ে-গাইয়ে বাড়িতে পুরে এখন মহাদেবের মতো বুঁদ হয়ে থাকুন গে, সংসারের ভারি কল্যাণ হবে। এদিকে পাড়ায় তো হামেশাই এটা হারাচ্ছে ওটা হারাচ্ছে। তাতে আর কার কিবা এসে যাচ্ছে! মামার নিশ্চয় মনে মনে খুব রাগ হচ্ছিল, কিন্তু কিছু বললেন না।

তবে হরিপদবাবু চলে গেলে ডাক দিয়ে মামিমাকে বললেন, “দ্যাখ, ওর সাতদিন হয়ে গেছে, কাল দুটো টাকা দিয়ে বিদায় করে দিয়ো। যদিও অনেকদিন থেকেই ওকে জানি, তবু পাড়া-প্রতিবেশীকে চটাতে নেই।" ভোঁদা বলল, "বাব্বা! বিদেয় করে দিয়ো মানে। কাল ও তো একটা সাজ দেখাবে, একদিন যে আসে নি।" মামা অবাক হয়ে বললেন, "সে আবার কবে?" "কেন, যেদিন সেই সাপের ওঝা আর পুলিশ-সাহেব এসেছিল। ঐ ওঝাকে এখানে অনেকে চেনে, ও বহুরূপী নয় কখনো। আর পুলিশ-সাহেবের ওরকম সাজ-পোশাক করা একে তো বহুরূপীর কম্ম নয়, অনেক খরচা লাগে। তার উপর পটলাদের কে হন উনি, নতুন এসেছেন।"

সবাই ভাবল তা হবেও-বা। মামা আবার বললেন, "আচ্ছা, আচ্ছা, কালকের সাজটা নাহয় দেখেই নিয়ো, কিন্তু ও যাবার সময় দুটো টাকা ওর হাতে দেবে আর বলবে যেন আর এদিকে না আসে ।"

পরদিন সবাই তাগ্ করে আছে কখন বহুরূপী আসবে এমন সময় একটা নেংটে-পরা লোক বগলে একটা নোংরা গু টলি নিয়ে ছুটতে ছুটতে এসে মামিমার পা জড়িয়ে ধরে হাঁউ-মাউ করে কাঁদতে লাগল: "মা, মিছিমিছি পাড়ার লোকে আমার পাছু নিয়েছে, আমাকে রক্ষা করুন, দৌড়ে দৌড়ে আর তো পারি নে, এক পেয়ালা চা না পেলে, দু-দন্ড না জিরুলে, আমার বুকটা ফেটে যাবে।"

এমন চমৎকার বলল যে মনে হল সত্যিই যেন অনেক কষ্টে প্রাণ হাতে নিয়ে পালিয়ে এসেছে, চা না পেলে আর বিশ্রাম না করলে এক্ষুনি মরে যাবে।

সবাই মিলে তার পিঠ চাপড়ে চায়ের জন্য বাড়ির পিছনে রান্নাঘরে পাঠিয়ে দিল। মামিমা তার হাতে দুটো টাকা গুঁজে দিয়ে বললেন, খুব ভালো সেজেছ, আজকের সাজটা সব চেয়ে ভালো হয়েছে। আর দ্যাখ বাছা, উনি এখন বাড়ি নেই, তোমায় বলতে বলেছেন যে আমরা খুব খুশি হয়েছি, কিন্তু তুমি আর এ বাড়িতে এসো না, পাড়ার লোকে আমাদের মন্দ বলে। তুমি চা খেয়ে গোয়ালঘরে বিশ্রাম করে, বাড়ি যেয়ো কেমন? বহুরূপী এমনি চালাক যে তবু কিছু ভাঙল না, সুড়সুড় করে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল।

ঘণ্টাখানেক বাদে হন্তদন্ত হয়ে মামা এসে হাজির। "ওগো, সর্বনাশ হয়েছে, একেবারে দিনে ডাকাতি। কাল এত বক্তৃতা করে গেলেন আর আজই হরিপদবাবুরা ওপরে ঘুমুচ্ছেন আর নীচে থেকে তাঁদের সর্বস্ব চোরে নিয়ে গেছে, টাকাকড়ি, গয়নাগাটি, ফাউন্টেন পেন, হাতঘড়ি, মায় চশমাটি অবধি। হরিপদবাবুরা তাকে দেখতে পেয়েছেন পর্যন্ত, হাতে-নাতে ধরাও পড়ত, সবাই মিলে তাড়া করেছিল, কিন্তু এই দিকেই কোথায় যে গিয়ে গা ঢাকা দিল, সবাই মিলে এতক্ষণ গোরুখোঁজা করলাম, তবু টিকিটিও আর দ্যাখা গেল না! এদিকে আসে নি তো ?"

মামিমা মাথা নাড়তে যাচ্ছেন এমন সময় রোগা তেল-চুচুকে একজন লোক এসে নমস্কার করে হাতজোড় করে দাঁড়াল, মামা বললেন-"আরে বহুরূপী যে! তোমাদের সন্দেহ করবে সব। বেড়াচ্ছিলেন। দাও তো ওর এসো-টেসো না।" চুরির কথা শুনেছ তো? এবার হরিপদবাবু কালকেই সে কথা বলে টাকা দুটো! তুমি বাপু এদিকে আর

বহুরূপী একগাল হেসে বলল-"এজে না বাবু, আমি এক্ষুনি আটটার গাড়ি ধরে একেবারে রামকিষ্টপুরের ওদিকে মামাবাড়ি চলে যাচ্ছি। ঐ হরিপদবাবুটির যেমনি সন্দেহ বাতিক তেমনি অসাবধান।" মামিমা কি আর করেন, দিলেন দুটো টাকা, মামা রেগে যাবেন, বলাও যায় না সব কথা। যাবার সময় বহুরূপী মামার মামিমার পায়ের ধুলো নিয়ে, গুপে আর ভোঁদার দিকে ফিরে একবার চোখটা টিপল!

পরে আমরা শুনলাম নেংটি-পরা লোকটা, চা খেয়ে জিরিয়ে-জুরিয়ে, ঠাকুরের কাছ থেকে পান খাবার জন্য চার-আনা চেয়ে কখন গুটিগুটি কেটে পড়েছে। মামিমা বললেন চেপে যেতে। আজ পর্যন্ত ব্যাপারটা ঠিক বোঝা গেল না।


23
Articles
লীলা মজুমদার রচনাবলী ১
0.0
লীলা মজুমদারের ছোট ছোট কিছু অবিস্মরণীয় সৃষ্টি একত্রে আনা হয়েছে রচনাবলী ১ বইটির মধ্যে। এটি এমন একটি উপন্যাস যেখানে গল্পগুলি এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যাতে বইটি সব বয়সের মানুষই পড়তে পারেন, এবং এর মজা উপলব্ধি করতে পারেন।
1

পদিপিসীর বর্মিবাক্স

28 November 2023
0
0
0

পাঁচুমামার প্যাকাটির মতন হাত ধরে টেনে ওকে ট্রেনে তুললাম। শূন্যে খানিক হাত-পা ছুড়ে, ও বাবাগো মাগো বলে চেঁচিয়ে-টে চিয়ে শেষে পাঁচুমামা খচ্ করে বেঞ্চিতে উঠে বসল। তার পর পকেট থেকে লাল রুমাল বের করে কপালের

2

বক-বধ পালা

28 November 2023
0
0
0

পালা শুরু জুড়ির সুর করে আবৃত্তি, মৃদু মুনু তবলা ইত্যাদি সহযোগে পোড়া জতুগৃহ থেকে বাহিরিয়া যবে, পাণ্ডব বঝিলা মনে এ বিশাল ভবে গৃহ বন্ধু কিছু নেই, নিলা বনবাস। দুঃখে কষ্টে বৃক্ষতলে কাটে দিনমাস। কত যে বিপদ

3

এই যা দেখা

29 November 2023
2
0
0

কলকাতা শহরের উত্তর দিকে সরু একটা সদর রাস্তা, তাতে লোকজন গাড়িঘোড়ার ভিড় কত, ভোর থেকে গভীর রাত অবধি হাঁকডাক ঠেলাঠেলি। লোকে বলে পথটা খুব পুরনো, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্ব কালে তৈরি, ঘরবাড়িগুলো এ ওর গায়

4

ছেলেবেলার গল্প

30 November 2023
0
0
0

গণশার চিঠি ভাই সন্দেশ, অনেকদিন পর তোমায় চিঠি লিখছি। এর মধ্যে কত কী যে সব ঘটে গেল যদি জানতে, তোমার গায়ের লোম ভাই খাড়া হয়ে গেঞ্জিটা উঁচু হয়ে যেত, চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসত, হাঁটুতে হাঁটুতে ঠকাঠক্ হয়ে কড়া পড়

5

হলদে পাখির পালক

1 December 2023
0
0
0

এক কত দেরি হয়ে গেল ভুলো তবু বাড়ি এল না, সন্ধে হয়ে গেল, রাত হয়ে গেল। দাদু তাস খেলতে যাবার আগে বললেন, "খুঁজতে যাবার কিছু দরকার নেই, কেউ তোদের নেড়িকুত্তো চুরি করবে না, খিদে পেলে সুড়সুড় করে নিজেই বাড়ি ফি

6

বহুরূপী

2 December 2023
0
0
0

ছোটবেলাকার কত কথাই যে মনে পড়ে, কত কান্ডই যে তখন হত। একবার গুপের মামাতো ভাই ভোঁদা বলেছিল যে বহুরূপীরা পর পর সাতদিন আসে, একেক দিন এক এক নতুন সাজে। কখনো কখনো সবাই তাকে বহুরূপী বলে চিনে ফেলে, আবার কখনো কখ

7

মহালয়ার উপহার

2 December 2023
0
0
0

শিবু, শিবুর মা আর শিবুর বউ তিন নম্বর হোগলাপট্টি লেনের দোতলার তিনখানি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকত। একটা ঘরে শিবুর মা শুত, সেটা সব থেকে বড় ও ভালো, কারণ বুড়ি ভারি খিটখিটে। আরেকটাতে শিবু আর শিবুর বউ, শুত, সেটা মাঝ

8

ভানুমতীর খেল

3 December 2023
0
0
0

গোরুদের ঘরের পিছনের ছোট ফটকটার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই লোকটাকে দেখতে পেলাম। গোয়ালের কোনায় একটা মাটির ঢিবির উপর ঝোপের আড়ালে বসে-বসে একটা দেশলাই কাঠি দিয়ে দাঁত খুঁটছে আর একটু-একটু পা দোলাচ্ছে। সারা গায়ে ধুলো

9

পঞ্চমুখী শাঁখ

3 December 2023
0
0
0

বন্ধুদের দেশের বাড়িতে একটা প্রকাণ্ড পঞ্চমুখী শাঁখ আছে! শুনেছি শাঁখটা নাকি দেড়শো বছর ধরে ওদের বাড়িতে রয়েছে। ওর নানা- রকম গুণটুনও নাকি আছে। আগে রোজ ওর পুজো হত, পুরুতঠাকুর আসত, খাওয়া-দাওয়া হত। তবে সত্তর

10

হুঁশিয়ার

3 December 2023
0
0
0

যখন সামনের লোকটার লোমওয়ালা ঘেমো ঘাড়টার দিকে আর চেয়ে থাকা অসম্ভব মনে হল, চোখ দুটো ফিরিয়ে নিলাম। অমনি কার জানি একরাশি খোঁচা-খোঁচা গোঁফ আমার ডান দিকের কানের ভিতর ঢুকে গেল। চমকে গিয়ে ফিরে দেখি ভীষণ রোগা,

11

সেকালে

3 December 2023
0
0
0

পঁয়ষট্টি বছর আগে আমার মামাবাড়ির দেশে এক দিকে যেমন সাধু- সজ্জনের ভিড় ছিল এবং তার ফলে পুজোপার্বণ, তিথিপালন, হরির লুট, ব্রাহ্মণ-ভোজন, কাঙালী-বিদায় লেগেই থাকত, আবার তেমনি অন্য দিক দিয়ে ঠগ-ঠ্যাঙাড়ে, জোচ্চো

12

চোর

3 December 2023
0
0
0

ঠিক যেই নিতাইদের বাড়ির পেছনের সেই ঝাঁকড়ান্ডুলো ঝোপটার কাছে এসেছি, পকেট হাতড়ে দেখি যে আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে! সেই কোনা-মোড়া আধ-ময়লা নোটটা কে যেন বুক-পকেট থেকে তুলে নিয়েছে! ভীষণ ঘাবড়ে গেলাম। ভয়ের চোটে ক

13

টাইগার

3 December 2023
0
0
0

তাকে উলটে দেখলাম থাবার তলাটা গোলাপী মখমলের মতো, মাঝে- মাঝে কচি-কচি সাদা লোম। পেটের তলাটাও গোলাপী-নরম তুলতুলে এক জায়গায় একটা শিরা না কি যেন ধুন্ধুক্ করছে। মুণ্ডুটাকে তুলে আবার নিজের পেট দেখতে চেষ্টা কর

14

লোমহর্ষণ

3 December 2023
0
0
0

রাজামশাই ব্যস্ত হয়ে দরদালানে পায়চারি করে বেড়াচ্ছেন, খিদেয় পেটের এ-দেয়াল ও-দেয়াল একসঙ্গে লেপটে যাচ্ছে, টেবিল পাতা, সোনার বাসন-কোসন সাজানো, মুক্তো-বসানো গেলাসে কেয়ার গন্ধ-দেওয়া জল, রানী ওদিকে মখমলের গদি

15

ভালোবাসা

3 December 2023
0
0
0

আজকাল সবই অন্যরকম লাগে। দরজার কড়া নাড়বামাত্র ভিতর থেকে একটা ভারী জিনিস দরজার উপর আর আছড়েও পড়ে না। নখ দিয়ে কেউ দরজায় আঁচড়িয়ে, পালিশ উঠিয়ে, বকুনিও খায় না; ঘরে ঢুকবামাত্র নেচেকঁদে গায়ের উপর চড়ে একাকারও ক

16

তেজী বুড়ো

3 December 2023
0
0
0

আয়না দেখে আঁতকে উঠলুম। এ তো আমার সেই চিরকেলে চেহারা নয়! সেই যাকে ছোটবেলা দেখেছিলুম ন্যাড়া মাথা, নাকে সদি, চোখ ফুলো! তার পর দেখেছিলুম চুল খোঁচা, নাক খাঁদা, গালে-টালে কাজল! এই সেদিনও দেখলুম খাকি পেন্টেল

17

দিনের শেষে

5 December 2023
0
0
0

লক্ষ্ণৌ থেকে ওস্তাদ এসেছে। দাদু আর দিদিমা শ্যামলবাবুদের বাড়িতে গান শুনতে গেছেন, ফিরতে রাত হবে। ঝগড় বলল, "তা তোমরা যদি সব-কিছুই বিশ্বাস না করে আনন্দ পাও, তা হলে আমার আর কিছু বলবার নেই। তবে সর্বদা মনে

18

আমাদের দেশে

5 December 2023
0
0
0

আমাদের দেশের কথা আর কী বলব, সে কি আর এখন আমাদের আছে? একেবারে পাকিস্তানের পূর্বকোণে ঠুসে দিয়েছে। কিন্তু সেখানকার লাল-লাল গোল-আলু আর সেখানকার পাকা সোনালী আনারস আর আঠাল দুধের ক্ষীর যে একবার খেয়েছে সে সার

19

পালোয়ান

5 December 2023
0
0
0

নিউ মার্কেটের পিছনে বাঁদরের দোকান আছে। ছোট-ছোট খাঁচায় পোরা বাঁদরের ভিড়, এ-ওর গায়ে চিকে রয়েছে। তা ছাড়া সাদা ইঁদুর, বেজি, কাকাতুয়া, কালোমুখো ল্যাজ-প্যাঁচানো শ্যামদেশের বেড়াল, ভালুক বাচ্চা, আরো কত কি যে

20

গুণ-করা

5 December 2023
0
0
0

বুঝলে, আমার মামাবাড়িতে ফান্ড বলে একটা চাকর ছিল। বাঙালি নয়। ঐ গারো পাহাড়ে অঞ্চলে ওর বাড়ি। আশা করি গারো পাহাড় কোথায় সে কথা আর তোমাদের বলে দিতে হবে না। ফান্ড যে বাঙালি নয় সে ওকে দেখলেই বোঝা যেত। বেঁটে, ম

21

কি বুদ্ধি

5 December 2023
0
0
0

জন্তু জানোয়ারদের বিষয়ে কতরকম অদ্ভুত গল্পই যে শোনা যায় তার আরু ঠিক নেই। একবার নাকি একটি ব্যাঙ কেমন করে পাথরের ফোকরের মধ্যে বদ্ধ হয়ে গিয়ে, ঐভাবে কতকাল যে ছিল তার ঠিক নেই। বোধ হয় অনেক শো বছর। তার পর যেই

22

বনের ধারে

5 December 2023
0
0
0

ছোটবেলায় পাহাড়ে দেশে থাকতাম। চার দিকে ছিল সরলগাছের বন। তাদের ছুচের মতো লম্বা পাতা, সারা গায়ে ধুনোর গন্ধ, একটুখানি বাতাস বইলেই শোঁ শোঁ একটা শব্দ উঠত। শুকনো সময় গাছের ডালে ডালে ঘষা লেগে অমনি আগুন লেগে য

23

মেজোমামার প্রতিশোধ

5 December 2023
0
0
0

আমার মেজোমামাকে নিশ্চয় তোমরা কেউ দ্যাখ নি। হাড় জিজিরে রোগা বেঁটে মতন, সরু লিক্লিকে হাত-পা, সারা মুখময় খোঁচা-খোঁচা দাড়ি গোঁফ। কারণ মেজোমামা দু সপ্তাহে একবার দাড়ি চাঁচেন, নাকি দাড়ি কামালেই মুখময় আঁচড়ে য

---