shabd-logo

ভানুমতীর খেল

3 December 2023

0 Viewed 0

গোরুদের ঘরের পিছনের ছোট ফটকটার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই লোকটাকে দেখতে পেলাম। গোয়ালের কোনায় একটা মাটির ঢিবির উপর ঝোপের আড়ালে বসে-বসে একটা দেশলাই কাঠি দিয়ে দাঁত খুঁটছে আর একটু-একটু পা দোলাচ্ছে। সারা গায়ে ধুলো মাখা, কাপড়-চোপড় ছেঁড়া-খোঁড়া, খালি পা, এখানে-ওখানে কেটে গেছে।

আমাকে দেখেই বলল, "আঃ, তোকে দেখে ধড়ে প্রাণ পেলুম রে। এখন বড় একঘটি জল দিয়ে প্রাণটাকে বাঁচা দিকিনি বাপ্।"

কেউ কোথাও নেই, গুটিগুটি গোরুর ঘরে গিয়ে শ্যামলী-কপলীদের দুধ দোয়াবার বালতি ভরে ঠান্ডা জল নিলাম, ওদের মস্ত পিতলের ঘটির নীচে অনেকখানি দুধ পড়েছিল, তাও নিলাম।

• লোকটা জল দিয়ে হাত-পা মাথা সব ধুয়ে ফেলল, পকেট থেকে একটা জঘন্য নোংরা রুমাল বের করে ঘাড়টা মুছে নিয়ে চক্চক্ করে সব দুধটুকু এক নিঃশ্বাসে খেয়ে ফেলল।

তার পর তড়াক করে লাফিয়ে উঠে বলা নেই কওয়া নেই আমার পায়ের উপর সটাং এক প্রণাম ঠুকে বসল। আমি তো মহা অপ্রস্তুত।

তার পর আমার মুখের দিকে পিপিট্ করে তাকিয়ে বলল, "তা শাহেন-শার নাকে-চোখে জলের দাগ কেন? কাঁদা-টাঁদা হয়েছে নাকি? আজ্ঞা করেন তো এখুনি সব ব্যাটার মুণ্ডু কেটে নিয়ে আসি।" বলেই খপ্ করে শূন্য থেকে এই মস্ত এক তলোয়ার ধরে নিয়ে, মাথার চার দিকে সেটাকে পাঁই-পাঁই করে বার-দশেক ঘুরিয়ে, আবার সেটাকে শূন্যে 'ছুড়ে দিল আর সেটাও তখুনি কোথায় মিলিয়ে গেল।

লোকটা আমার দিকে চেয়ে একটু মুচকি হেসে বলল, "কি সার্, অবাক হলেন নাকি? চোখ যে গোল-গোল হয়ে গেল, ঠোঁট যে ঝুলে পড়ল। তা, কাঁদাকাটির কি হল তা তো বান্দাকে বললেন না?"

আমি নাকটা একটু মুছে নিয়ে বললাম, "বাড়িসুদ্ধ সব্বাই স্কুলের মাঠে ম্যাজিক দেখতে গেছে। আমার কাল জ্বর হয়েছিল বলে মেজো- মামা আমাকে নিয়ে গেলেন না।"

লোকটা ব্যস্ত হয়ে বলল, "ও কি জাঁহাপনা! আবার চোখে জল কেন? আরে, আপনিও যেমন। কি ম্যাজিক দেখাবে সরু ঠ্যাঙ- ওয়ালা এ গুপো হতভাগা! ও-ব্যাটা জানেই-বা কি, আর পারেই-বা কি! পারে এরকম করতে?" বলেই ঘটিটা তুলে নিয়ে তার ভিতর থেকে একটার পর একটা কুড়ি-পঁচিশটা খরগোশ বের করে চারি দিকে ছেড়ে দিল, তারাও ল্যাজ তুলে যেদিকে পারল ছুটে পালাল ।

"হ্যাঁ। ব্যাটা জোচ্চুরি করে পাঁচজন পার্টনারের টাকা হাতিয়ে মস্ত এক তাঁবু ফেঁদে বসলেই কি ম্যাজিসিয়ান হয়ে গেল! পারে এরকম?" বলেই বালতিটাকে একটা ঠেলা মারতেই সেটা আমার চোখের সামনে একটা কচ্ছপ হয়ে গিয়ে গুড় গুড় করে ঝোপটার দিকে এগিয়ে চলঙ্ক। লোকটাও "আরে! যাও কোথায় চাঁদ!" বলে ছুটে গিয়ে আমাদের বালতিটা এনে আমার হাতে দিল। আমি তো থ!

তার পর পা-দুটোকে সোজা করে পকেট থেকে একটা দাঁতভাঙা চিরুনি বের করে ঝাঁকড়া কটা-রঙের চুলগুলো আঁচড়াতে লাগল আর মাথা থেকে রাশি রাশি হলদে প্রজাপতি উড়ে যেতে লাগল। তার পর চিরুনিটাকে এক ঝাড়া দিয়ে পকেটে পুরল। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলাম চারি দিক ছোট্ট-ছোট্ট সাদা কাগজের ফুলে ছেয়ে গেল।

লোকটা বলল, "ছিঃ! ওটাকে আপনারা ম্যাজিসিয়ান বলবেন না। ব্যাটা শুঁটকি খায়, ঘুমোলেই নাক ডাকে, আর ভারি পাজি, ছোটলোক। তবে আজ একহাত নিয়েছি ব্যাটার উপর। আমার কাছে ম্যাজিক শিখে আমাকেই আজকাল তোয়াক্কা করে না। জানেন, ওটার এমনি আস্পদ্দা বেড়েছে যে দরোয়ানদের বলে দিয়েছে আমাকে যেন তাঁবুতে ঢুকতে না দেয়। হু। পীরের সঙ্গে মামদোবাজি! ওর চোদ্দোপুরুষের ভাগ্যি যে ওকে ধুলো ফুঁকে উড়িয়ে দিই নি। ঠিক দিতাম। নেহাত ওর মার মনে কষ্ট হবে কিনা তাই ছেড়ে দিলাম। তবে এক্কেবারে ছেড়ে দিই নি, সার্। তাঁবুর বাইরে থেকে এমনি করে একটা তুড়ি মারলাম, আর ওর ট্যাকের পয়সা সব এমনি করে আমার ট্যাঁকে চলে এল।" বলেই লোকটা একটা তুড়ি মারল আর অমনি কোত্থেকে সব রাশি রাশি টাকা টুপ্তাপ্ করে ওর পায়ের কাছে জড়ো হল। সেগুলিকে গোছা করে কুড়িয়ে আবার পকেটে রেখে, লম্বা একটা সেলাম ঠুকে আমাকে বলল, "খোদ কর্তা আজ আমাকে দুধে-জলে বাঁচিয়ে দিলেন, নইলে ছুটতে ছুটতে খিদেয় তেষ্টায় প্রাণপাখি এক্ষুনি ভানুমতীর খেল দেখাচ্ছিল আর-কি! ব্যাটাছেলে কি কম বদমাইস! ওর ট্যাকের পয়সা আপনা থেকেই আমার পকেটে চলে এল, আমি মোটে নিই নি, আর হতভাগা আমার পিছনে কিনা পুলিশ লাগিয়ে দিল! উঃ! আরেকটু হলেই বুকটা এক্কেবারে ফেটেই যাচ্ছিল, ভাগ্যিস বাঁচিয়ে দিলেন। এখন আপনাকে কি দেওয়া যায় বলুন দিকি? এগুলোর খানিকটা নিয়ে আমাকে কেতার্থ করবেন কি?" বলেই শূন্য থেকে একমুঠো টাকাপয়সা ধরে আমার দিকে এগিয়ে দিল। আমি মাথা নাড়লাম। সে বললে, "নিন-না সার্। লজ্জা কিসের। আমি হলফ করে বলছি ওর একটা পয়সাও আমার নিজের নয়, সব ভেলকি! সত্যি নেবেন না, সার? আমার কিন্তু কোনো ক্ষতি হত না।" আমি বললাম, "না! পয়সাকড়ি চাই না।" তখন সে টাকাপয়সা- গুলোকে আবার শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে বলল, "মনে বড় দুঃখ দিলেন, জাঁহাপনা। প্রাণটা বাঁচালেন, এখন আমি যদি উলটে কিছু না করি তবে যে আমি ঋণী থেকে যাব। সেটা কি ভালো হবে? আচ্ছা। নাহয় ফরমাশ করুন শেষ একটা খেল দেখিয়েই যাই। কি হুকুম বলুন।"

আমি বললাম, "ঐ লোকটা নাকি টেবিল-চেয়ার নাচাতে পারে।" সে হো হো করে হেসে বলল, "ওঃ, এই! টেবিল-চেয়ার তো যে- সে নাচাতে পারে, সময় থাকলে আপনাকেও শিখিয়ে দিতাম। ও কিছু নয়। তার চেয়ে ঢের ভালো নাচ দেখাচ্ছি আপনাকে।" বলেই তার ময়লা রুমালটাতে তিনটে-চারটে গিট দিয়ে নিল, অবাক হয়ে দেখলাম দূর থেকে দেখতে অবিকল একটা ছোট্ট মানুষের মতো হল। তার পর সেটাকে ছুড়ে একটু তফাতে ফেলতেই সেটা লাফিয়ে উঠে একটা সেলাম ঠুকে, কোমরে হাত দিয়ে ঠ্যাং তুলে এমনি নাচতে শুরু করে দিল যে আমার চোখদুটো ঠিকরে বেরিয়ে আসবার জোগাড়!

তখন লোকটা আমার দিকে ফিরে বলল, "না, একা-একা বেশি জমাতে পারছে না। আপনার রুমালটিও দেবেন সার ?"

আমি বললাম, "না, না, রুমাল যদি নাচে তা হলে আমি নাক মুহব কি দিয়ে?"

সে বললে, "আচ্ছা আচ্ছা, ঠিক আছে সার।" বলে নিজের রুমালটিকে আবার হাতে তুলে নিল, আর ওটা ওর হাতের উপরেই নাচতে থাকল। তার পর আস্তে ওর মাথায় একটা টোকা দিতেই দেখি যে একটা রুমাল নাচছিল, তার জায়গায় দুটো রুমাল নাচছে। কতক্ষণ যে ঐ নাচ দেখলাম তার ঠিক নেই। শেষে যেন দূরে লোক- জনের সাড়া পেলাম। লোকটা অমনি লাফিয়ে উঠে কুনিশ করে বলল, "চলি, জাহাপনা। বান্দাকে মনে রাখবেন।" অমনি রুমাল-দুটোও হাত তুলে আমাকে সেলাম করে ওর সঙ্গ নিল। যতক্ষণ দেখা যায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলাম, ওরা তিনজনে নাচতে নাচতে আমাদের বাড়ির পিছনের রাস্তা ধরে চলে যাচ্ছে। তার পর পথটা যেখানে বেঁকে গেছে, সেইখানে পৌছে ওরা একবার ফিরে দাঁড়িয়ে ঘুরে-ফিরে নেচে নিয়ে, হাত নাড়তে নাড়তে মোড় ঘুরে চলে গেল।

দাদারা সন্ধ্যাবেলা কত কি যে বলতে লাগল তার ঠিক নেই। আমার হাসি পাচ্ছিল। একবার শুধু জিজ্ঞাসা করলাম, "লোকটার মস্ত গোঁফ আছে না, আর পেন্টেলুনের ঠ্যাং সরু না?” “আরে, সত্যিই তোরে তাই। তুই কি করে জানলি? আর জানিস, শেষের খেলাটি অদ্ভুত, স্টেজের উপর টেবিল-চেয়ারগুলো ডুন্ডুগ্‌ করে নাচতে শুরু করে দিল!” আমি বললাম, "ও আর এমন কি? একটু শিখে নিলেই ওরকম সবাই পারে। কুর্নিশ করেছিল? সেলাম করেছিল? যাবারু সময় হাত নেড়েছিল?" দাদা বলল, "হ্যাঁরে, তুই পাগল হলি নাকি?” আমি শুধু পাশ ফিরে একটু মুচকি হাসলাম।

23
Articles
লীলা মজুমদার রচনাবলী ১
0.0
লীলা মজুমদারের ছোট ছোট কিছু অবিস্মরণীয় সৃষ্টি একত্রে আনা হয়েছে রচনাবলী ১ বইটির মধ্যে। এটি এমন একটি উপন্যাস যেখানে গল্পগুলি এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যাতে বইটি সব বয়সের মানুষই পড়তে পারেন, এবং এর মজা উপলব্ধি করতে পারেন।
1

পদিপিসীর বর্মিবাক্স

28 November 2023
0
0
0

পাঁচুমামার প্যাকাটির মতন হাত ধরে টেনে ওকে ট্রেনে তুললাম। শূন্যে খানিক হাত-পা ছুড়ে, ও বাবাগো মাগো বলে চেঁচিয়ে-টে চিয়ে শেষে পাঁচুমামা খচ্ করে বেঞ্চিতে উঠে বসল। তার পর পকেট থেকে লাল রুমাল বের করে কপালের

2

বক-বধ পালা

28 November 2023
0
0
0

পালা শুরু জুড়ির সুর করে আবৃত্তি, মৃদু মুনু তবলা ইত্যাদি সহযোগে পোড়া জতুগৃহ থেকে বাহিরিয়া যবে, পাণ্ডব বঝিলা মনে এ বিশাল ভবে গৃহ বন্ধু কিছু নেই, নিলা বনবাস। দুঃখে কষ্টে বৃক্ষতলে কাটে দিনমাস। কত যে বিপদ

3

এই যা দেখা

29 November 2023
2
0
0

কলকাতা শহরের উত্তর দিকে সরু একটা সদর রাস্তা, তাতে লোকজন গাড়িঘোড়ার ভিড় কত, ভোর থেকে গভীর রাত অবধি হাঁকডাক ঠেলাঠেলি। লোকে বলে পথটা খুব পুরনো, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্ব কালে তৈরি, ঘরবাড়িগুলো এ ওর গায়

4

ছেলেবেলার গল্প

30 November 2023
0
0
0

গণশার চিঠি ভাই সন্দেশ, অনেকদিন পর তোমায় চিঠি লিখছি। এর মধ্যে কত কী যে সব ঘটে গেল যদি জানতে, তোমার গায়ের লোম ভাই খাড়া হয়ে গেঞ্জিটা উঁচু হয়ে যেত, চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসত, হাঁটুতে হাঁটুতে ঠকাঠক্ হয়ে কড়া পড়

5

হলদে পাখির পালক

1 December 2023
0
0
0

এক কত দেরি হয়ে গেল ভুলো তবু বাড়ি এল না, সন্ধে হয়ে গেল, রাত হয়ে গেল। দাদু তাস খেলতে যাবার আগে বললেন, "খুঁজতে যাবার কিছু দরকার নেই, কেউ তোদের নেড়িকুত্তো চুরি করবে না, খিদে পেলে সুড়সুড় করে নিজেই বাড়ি ফি

6

বহুরূপী

2 December 2023
0
0
0

ছোটবেলাকার কত কথাই যে মনে পড়ে, কত কান্ডই যে তখন হত। একবার গুপের মামাতো ভাই ভোঁদা বলেছিল যে বহুরূপীরা পর পর সাতদিন আসে, একেক দিন এক এক নতুন সাজে। কখনো কখনো সবাই তাকে বহুরূপী বলে চিনে ফেলে, আবার কখনো কখ

7

মহালয়ার উপহার

2 December 2023
0
0
0

শিবু, শিবুর মা আর শিবুর বউ তিন নম্বর হোগলাপট্টি লেনের দোতলার তিনখানি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকত। একটা ঘরে শিবুর মা শুত, সেটা সব থেকে বড় ও ভালো, কারণ বুড়ি ভারি খিটখিটে। আরেকটাতে শিবু আর শিবুর বউ, শুত, সেটা মাঝ

8

ভানুমতীর খেল

3 December 2023
0
0
0

গোরুদের ঘরের পিছনের ছোট ফটকটার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই লোকটাকে দেখতে পেলাম। গোয়ালের কোনায় একটা মাটির ঢিবির উপর ঝোপের আড়ালে বসে-বসে একটা দেশলাই কাঠি দিয়ে দাঁত খুঁটছে আর একটু-একটু পা দোলাচ্ছে। সারা গায়ে ধুলো

9

পঞ্চমুখী শাঁখ

3 December 2023
0
0
0

বন্ধুদের দেশের বাড়িতে একটা প্রকাণ্ড পঞ্চমুখী শাঁখ আছে! শুনেছি শাঁখটা নাকি দেড়শো বছর ধরে ওদের বাড়িতে রয়েছে। ওর নানা- রকম গুণটুনও নাকি আছে। আগে রোজ ওর পুজো হত, পুরুতঠাকুর আসত, খাওয়া-দাওয়া হত। তবে সত্তর

10

হুঁশিয়ার

3 December 2023
0
0
0

যখন সামনের লোকটার লোমওয়ালা ঘেমো ঘাড়টার দিকে আর চেয়ে থাকা অসম্ভব মনে হল, চোখ দুটো ফিরিয়ে নিলাম। অমনি কার জানি একরাশি খোঁচা-খোঁচা গোঁফ আমার ডান দিকের কানের ভিতর ঢুকে গেল। চমকে গিয়ে ফিরে দেখি ভীষণ রোগা,

11

সেকালে

3 December 2023
0
0
0

পঁয়ষট্টি বছর আগে আমার মামাবাড়ির দেশে এক দিকে যেমন সাধু- সজ্জনের ভিড় ছিল এবং তার ফলে পুজোপার্বণ, তিথিপালন, হরির লুট, ব্রাহ্মণ-ভোজন, কাঙালী-বিদায় লেগেই থাকত, আবার তেমনি অন্য দিক দিয়ে ঠগ-ঠ্যাঙাড়ে, জোচ্চো

12

চোর

3 December 2023
0
0
0

ঠিক যেই নিতাইদের বাড়ির পেছনের সেই ঝাঁকড়ান্ডুলো ঝোপটার কাছে এসেছি, পকেট হাতড়ে দেখি যে আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে! সেই কোনা-মোড়া আধ-ময়লা নোটটা কে যেন বুক-পকেট থেকে তুলে নিয়েছে! ভীষণ ঘাবড়ে গেলাম। ভয়ের চোটে ক

13

টাইগার

3 December 2023
0
0
0

তাকে উলটে দেখলাম থাবার তলাটা গোলাপী মখমলের মতো, মাঝে- মাঝে কচি-কচি সাদা লোম। পেটের তলাটাও গোলাপী-নরম তুলতুলে এক জায়গায় একটা শিরা না কি যেন ধুন্ধুক্ করছে। মুণ্ডুটাকে তুলে আবার নিজের পেট দেখতে চেষ্টা কর

14

লোমহর্ষণ

3 December 2023
0
0
0

রাজামশাই ব্যস্ত হয়ে দরদালানে পায়চারি করে বেড়াচ্ছেন, খিদেয় পেটের এ-দেয়াল ও-দেয়াল একসঙ্গে লেপটে যাচ্ছে, টেবিল পাতা, সোনার বাসন-কোসন সাজানো, মুক্তো-বসানো গেলাসে কেয়ার গন্ধ-দেওয়া জল, রানী ওদিকে মখমলের গদি

15

ভালোবাসা

3 December 2023
0
0
0

আজকাল সবই অন্যরকম লাগে। দরজার কড়া নাড়বামাত্র ভিতর থেকে একটা ভারী জিনিস দরজার উপর আর আছড়েও পড়ে না। নখ দিয়ে কেউ দরজায় আঁচড়িয়ে, পালিশ উঠিয়ে, বকুনিও খায় না; ঘরে ঢুকবামাত্র নেচেকঁদে গায়ের উপর চড়ে একাকারও ক

16

তেজী বুড়ো

3 December 2023
0
0
0

আয়না দেখে আঁতকে উঠলুম। এ তো আমার সেই চিরকেলে চেহারা নয়! সেই যাকে ছোটবেলা দেখেছিলুম ন্যাড়া মাথা, নাকে সদি, চোখ ফুলো! তার পর দেখেছিলুম চুল খোঁচা, নাক খাঁদা, গালে-টালে কাজল! এই সেদিনও দেখলুম খাকি পেন্টেল

17

দিনের শেষে

5 December 2023
0
0
0

লক্ষ্ণৌ থেকে ওস্তাদ এসেছে। দাদু আর দিদিমা শ্যামলবাবুদের বাড়িতে গান শুনতে গেছেন, ফিরতে রাত হবে। ঝগড় বলল, "তা তোমরা যদি সব-কিছুই বিশ্বাস না করে আনন্দ পাও, তা হলে আমার আর কিছু বলবার নেই। তবে সর্বদা মনে

18

আমাদের দেশে

5 December 2023
0
0
0

আমাদের দেশের কথা আর কী বলব, সে কি আর এখন আমাদের আছে? একেবারে পাকিস্তানের পূর্বকোণে ঠুসে দিয়েছে। কিন্তু সেখানকার লাল-লাল গোল-আলু আর সেখানকার পাকা সোনালী আনারস আর আঠাল দুধের ক্ষীর যে একবার খেয়েছে সে সার

19

পালোয়ান

5 December 2023
0
0
0

নিউ মার্কেটের পিছনে বাঁদরের দোকান আছে। ছোট-ছোট খাঁচায় পোরা বাঁদরের ভিড়, এ-ওর গায়ে চিকে রয়েছে। তা ছাড়া সাদা ইঁদুর, বেজি, কাকাতুয়া, কালোমুখো ল্যাজ-প্যাঁচানো শ্যামদেশের বেড়াল, ভালুক বাচ্চা, আরো কত কি যে

20

গুণ-করা

5 December 2023
0
0
0

বুঝলে, আমার মামাবাড়িতে ফান্ড বলে একটা চাকর ছিল। বাঙালি নয়। ঐ গারো পাহাড়ে অঞ্চলে ওর বাড়ি। আশা করি গারো পাহাড় কোথায় সে কথা আর তোমাদের বলে দিতে হবে না। ফান্ড যে বাঙালি নয় সে ওকে দেখলেই বোঝা যেত। বেঁটে, ম

21

কি বুদ্ধি

5 December 2023
0
0
0

জন্তু জানোয়ারদের বিষয়ে কতরকম অদ্ভুত গল্পই যে শোনা যায় তার আরু ঠিক নেই। একবার নাকি একটি ব্যাঙ কেমন করে পাথরের ফোকরের মধ্যে বদ্ধ হয়ে গিয়ে, ঐভাবে কতকাল যে ছিল তার ঠিক নেই। বোধ হয় অনেক শো বছর। তার পর যেই

22

বনের ধারে

5 December 2023
0
0
0

ছোটবেলায় পাহাড়ে দেশে থাকতাম। চার দিকে ছিল সরলগাছের বন। তাদের ছুচের মতো লম্বা পাতা, সারা গায়ে ধুনোর গন্ধ, একটুখানি বাতাস বইলেই শোঁ শোঁ একটা শব্দ উঠত। শুকনো সময় গাছের ডালে ডালে ঘষা লেগে অমনি আগুন লেগে য

23

মেজোমামার প্রতিশোধ

5 December 2023
0
0
0

আমার মেজোমামাকে নিশ্চয় তোমরা কেউ দ্যাখ নি। হাড় জিজিরে রোগা বেঁটে মতন, সরু লিক্লিকে হাত-পা, সারা মুখময় খোঁচা-খোঁচা দাড়ি গোঁফ। কারণ মেজোমামা দু সপ্তাহে একবার দাড়ি চাঁচেন, নাকি দাড়ি কামালেই মুখময় আঁচড়ে য

---