shabd-logo

পালোয়ান

5 December 2023

0 Viewed 0

নিউ মার্কেটের পিছনে বাঁদরের দোকান আছে। ছোট-ছোট খাঁচায় পোরা বাঁদরের ভিড়, এ-ওর গায়ে চিকে রয়েছে। তা ছাড়া সাদা ইঁদুর, বেজি, কাকাতুয়া, কালোমুখো ল্যাজ-প্যাঁচানো শ্যামদেশের বেড়াল, ভালুক বাচ্চা, আরো কত কি যে পাওয়া যায়! চার দিকে একটা সোঁদা-সোঁদা চীনাবাদাম-পাকা-কলা-বাঘ-বাঘ-গন্ধ ।

সেখানে প্রায়ই যেতাম। হাঁ করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাকিয়ে থাকতাম। কিনবার তো আর উপায় ছিল না। টিপিনের পয়সা জমিয়ে গোটা-দুই সাদা ইঁদুর যে কিনতে পারতাম না তা নয়। তবে পিসিমা, বড় জ্যেঠিমা, মা, এরা সব তা হলে কি কান্ডটাই যে করবেন সে আমার বেশ জানা ছিল। শেষটা বাবা বাধ্য হয়েই বলবেন-"জগা! যেখান থেকে এনেছিলি সেইখানে দিয়ে আয়।” এই ভয়েই কিছু করতে পারছিলাম না।

ঐখানেই একদিন পালোয়ানটার সঙ্গে দ্যাখা হল। ইয়া বুকের ছাতি। দেখতে যেন একটা বিরাট পিপে। কোথায় যে ঘাড় শেষ হয়েছে, কোথায় যে বুক, কোথায় যে ভুঁড়ি শুরু হয়েছে, কিছুই বাবা বোঝা যায় না। আমাকে দেখে গুম্ গুম্ করে নিজের বুকে কীল মেরে বলল, "কি রে মুরগি। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাঁদর-বাচ্চা দেখছিস? এই আমার মতো আধসের করে দাঁত দিয়ে খোলা ভেঙে বাদাম খাবি, আর পাঁচশো বার ডন-বৈঠক করবি।” এই বলে সে সেখানেই দু-চার বার ওঠ-বোস করে দেখিয়ে দিলে। বাঁদরগুলো তো তার কান্ড দেখে এ-ওর পিঠে মুখ লুকিয়ে হেসেই একাকার!

লোকটি আমার কাছে এসে দুই আঙুল দিয়ে আমার বাইসেপ টিপে হ্যা হ্যা করে হেসে বলল, "কি খাও হে? গোলাপ জল দিয়ে মাখন তোলা দুধ বুঝি? ছি, ছি, লজ্জা করে না? ঐরকম শরীর দিয়ে দেশ রক্ষা করবি কি করে? জানিস ভীমভবানী দিন্তে-দিন্তে মোটা-মোটা লাল 'আটার রুটি, গাওয়া ঘি আর অড়র ডাল দিয়ে খেয়ে দুটো দু-মণি মুগুর নিয়ে দু-ঘণ্টা ভাঁজতেন।"

ততক্ষণে বেশ একটা ছোটখাটো ভিড় দাঁড়িয়ে গেছে। "আমি কে, 'তা জানিস? আমি ঐ ভীমভবানীর নাতি। জানিস আমার দাদামশাই 'স্যান্ডোর শিষ্য ছিলেন। তাঁর পায়ের গুলিতে মোটা-মোটা লোহার ডান্ডা । মেরে বেঁকিয়ে বিনুনি বানিয়ে ফেলা হত।"

আবার বুক চাপড়ে লোকটা বলল, "আর সেই আমি কিনা তোদের মতো গঙ্গা-ফড়িংদের সঙ্গে সময় নষ্ট করি।" বলে লোকটা চলে গেল। তার পর আরো অনেকবার দ্যাখা হয়েছে। সর্বদা একই ড্রেস। 'খাকি হাতকাটা মিলিটারি শার্ট, খাকি হাফ প্যান্ট, পায়ে ব্রাউন ক্যাম্বিসের জুতো। ছোট্ট-ছোট্ট করে চুল ছাঁটা, খোঁচা-খোঁচা দাঁতের বুরুসের মতো গোঁফ।

কত কি যে বলত তার ঠিক নেই।

"আবার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাঁদর দেখছিস? জানিস, আমার বাবা 'বিখ্যাত বাঘ-শিকারী ছিলেন। এমনি তাঁর সাহস ছিল যে, মাচা-ফাচা বাঁধতেন না, কত সময় বন্দুক নিয়ে যেতে পর্যন্ত ভুলে যেতেন। এমনি করে বাঘের ল্যাজ ধরে বাঁই বাঁই করে বার-কুড়িক চার দিকে ঘুরিয়ে দিতেন ছেড়ে। পঞ্চাশ গজ দূরে ব্যাঘ্রমশাই পড়ে একেবারে ইহলীলা সংবরণ।"

মাঝে-মাঝে হঠাৎ আমার দিকে ফিরে, চোখ-টোখ পাকিয়ে ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করত-

"কি? বিশ্বাস হল না বুঝি? তবে চল্ ব্যাটা আমার পিসেমশাইয়ের কুস্তির আখড়ায় নিয়ে যাই, আমার দু-চার প্যাঁচ শিরমোড়া দাড়িমোড়া না খেলে দেখছি তোদের বিশ্বাস হবে না। কেমন, যাবি কি না?" বলে খপ্ করে কুলোর মতো দুই হাত দিয়ে আমার ঘাড় ধরে টান! ব্যস্ত হয়ে বলি-"আরে না, না। আপনি যা যা বলেন আমি ভীষণ বিশ্বাস করি।" তক্ষুনি খুশি হয়ে গিয়ে আরো বলতে থাকে-

"দেশে আমাদের বাড়ির বাগানে বুনো হাতি ছাড়া থাকে, লোকের বাড়িতে যেমন হরিণ-টরিণ থাকে। সকালে-বিকেলে যখন-তখন আমার ভাইরা এক হাত দিয়ে বুনো হাতির এক হাঁটু ধরে ঠেলতে ঠেলতে তাদের মাটিতে বসিয়ে দেয়।" মাথা নিচু করে একটু লজ্জার সঙ্গে হাসে আর বলে-"বুঝলি, ভগবানের ইচ্ছেয় পয়সাকড়ির আমাদের অভাব নেই। ঠাকুরদার ঠাকুরদার সময় থেকে সোনা-রুপোর পাহাড় জমছে তো জমছেই। এখন আর ওজন-টোজনও করা হয় না, গুদোম ঘরে অমনি পড়ে পড়ে থাকে আর ধুলো জমে। আমাদের বাড়ির মেয়েদের পর্যন্ত কি ভয়ংকর গায়ের জোর! একবার আমার মা আর ঠাকুমা খুন্তির বাড়ি দিয়ে একদল ডাকাতকে স্রেফ ঠেঙিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তখনকার সাহেব বড়লাট সেইজন্য তাঁদের হিন্দী ভাষায় চিঠি লিখে ছিলেন। তাঁরা অবিশ্যি মানে বুঝতে না পেরে সে চিঠি ছিড়ে ফেলে দিয়েছিলেন।"

এই অবধি বলে আমার দিকে ফিরে বললে, "হাসছিস যে? বলি, 'লেখাপড়া শিখে তোর কি সুবিধেটাই হচ্ছে বল-না? দেখতে তো ঐ ভিজেবেড়ালটি, সাত-চড়েও তো মুখে রা নেই, করবি তো কেরানীগিরি কি পোস্টমাস্টারি। আর আমাকে দ্যাখ্ মুক্তাক্ষর পড়তে পারি না, ইচ্ছে করে শিখি নি, আর আমাদের গুদোম ঘরে যে ঢুকবে তাকে মণি- মুক্তো মাড়িয়ে মাড়িয়ে ঢুকতে হবে। যাই, সন্দে হয়ে এল ডন- বৈঠকের সময় হল।"

আরেকদিন অনেক নতুন পাখি এসেছে, লাল, নীল সবুজ সব তোতাপাখি, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাই দেখছি হঠাৎ লোকটা এসে তাই দেখে হেসেই কুটোপাটি-"ওকি রে! তার চেয়ে খাটে শুয়ে-শুয়ে টুনটুনি পাখির ছবি দেখলেই পারিস। আমার বাবার কাকাবাবু হিমালয় থেকে ঈগল পাখি ধরে এনে টিরেটি বাজারে বিক্রি করতেন। ডানা মেললে তাদের এদিক থেকে ওদিক বারো ফুট, তা জানিস? সেগুলোর দুই পা এক হাতে মুঠো করে ধরে আর অন্য হাতে বাঁকানো ঠোঁটদুটো একসঙ্গে চেপে ধরে গঙ্গার ধারে হেঁটে হাওয়া খেতে যেতেন। তোরা আর আমাকে হাসাস নি।"

যেমনি লোকটার গুষ্টিসুদ্ধ সকলের গায়ে জোর, তেমনি তাদের মনে সাহস। একদিন সে বলল, "কি বলাবলি করছিল 'ওরা? দোকানদারের শত্রুরা এসে বাঁদরকে আফিং খাইয়ে দিতে চেষ্টা করছিল? হেসে বাঁচিনে। আরে পুরুষ মানুষের মতো যে পুরুষ মানুষ তার শত্রু থাকবে কেন? আমার বুড়ো ঠাকুরদা হয় স্রেফ পিটুনি দিয়ে সব বন্ধু বানিয়ে ফেলতেন, নয়তো যারা তবু বন্ধু হতে রাজি হত না তারা রাতারাতি কোথায় যে উড়ে যেত তার ঠিক নেই, একদম নিখোঁজ! পুরুষ মানুষের আবার শত্রু কি রে? আমার একজনও শত্রু নেই।" বলে কটমট করে সকলের দিকে তাকাল। আমরা সকলেই হেঁ হেঁ করে হাসতে লাগলাম। আমরা তো তার বন্ধু লোক।

একদিন বিকালে বাঁদরের দোকানে গিয়েছি। বাঁদরওয়ালা বলল, "একটা কুকুর-বাচ্চা দেখবে, খোকাবাবু? একজন দিয়ে গেছে, ভারি সস্তা দাম।" এমন সময় লোকটি এসে বললে-"কি! কুকুর রাখ নাকি তোমরা? এখানকার সব কুকুর দেখলে আমার হাসি পায়। আমাদের বাড়ির উঠোনে ডালকুত্তা ছাড়া থাকে। গলায় একটি কলার পর্যন্ত থাকে না। চোর বাছাধন সোনাদানার লোভে যে কখনো ঢোকেন না তা নয়। কিন্তু পরদিন সকালে এক-আধটা লেংটির সুতো, কি. হাফ প্যান্টের বোতাম ছাড়া কিছু কখনো দ্যাখা যায় নি।"

তার পর দোকানের রোয়াকের উপর পা ঝুলিয়ে বসে বলল-"উঃ ! পা-টাতে একটু ব্যথা হয়েছে। কাল রাতে হেঁটে বর্ধমান ঘুরে এলাম কিনা! তা কিনা বলছিলাম, ও হ্যাঁ, ঐ বর্ধমানে আমার মাসির বাড়িতে এমন সব কুকুর আছে, যা দেখলে শুধু মেসোমশাইকে কেন মাসিমাকে পর্যন্ত পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে। সেগুলোকে একবার দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না যে, ওরা শুধু সাধারণ গোরু-ভেড়ার হাড় খেয়ে মানুষ। আরে আমি নিজেই তো একবার একদল বাড়-হাউন্ড-ও কি, ওটা আবার কি নিয়ে এল"-এই বলে তড়াক্ করে লোকটা লাফিয়ে বারান্দা ছেড়ে একেবারে ফুটপাথে গিয়ে দাঁড়াল। দোকানদার অত বুঝতে না পেরে, কালো কুকুচে মিষ্টি ভুটে কুকুরের বাচ্চাটাকে তুলে ধরে একেবারে তার গা ঘেঁষে দাঁড়াল। দেখলাম লোকটার দুই চোখ ঠিক্সে বেরিয়ে আসছে, তার চুল আর গোঁফ খাড়া খাড়া হয়ে উঠেছে ।

কুকুর-বাচ্চা ক্ষুদে ল্যাজটা নেড়ে লাল ছোট্ট একটা জিব বের করে লোকটার গালে অল্প একটু চেটে দিল। অমনি কিরকম একটা শব্দ করে লোকটা সেখানেই মুচ্ছো গেল! দোকানদার বিরক্ত হয়ে বলল- "মোটর কোম্পানির সব দরওয়ানগুলোই ঐরকম, খালি বসে-বসে খাবে, আর ছু'লেই অজ্ঞান। থাক্ ব্যাটা পড়ে।"

এই দ্যাখ আমি এক টাকা দিয়ে কুকুর-বাচ্চাটাকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। যে যাই বলুক, আমি কিছুতেই ওকে ছাড়ব না। পুজোর সময় সবাই সবাইকে জিনিস দেয়, আমিও নিজেকে কুকুর-বাচ্চা দিলাম। জানো, আমার ঠাকুরদাদা একবার-আচ্ছা, আচ্ছা, থাক গে।

23
Articles
লীলা মজুমদার রচনাবলী ১
0.0
লীলা মজুমদারের ছোট ছোট কিছু অবিস্মরণীয় সৃষ্টি একত্রে আনা হয়েছে রচনাবলী ১ বইটির মধ্যে। এটি এমন একটি উপন্যাস যেখানে গল্পগুলি এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যাতে বইটি সব বয়সের মানুষই পড়তে পারেন, এবং এর মজা উপলব্ধি করতে পারেন।
1

পদিপিসীর বর্মিবাক্স

28 November 2023
0
0
0

পাঁচুমামার প্যাকাটির মতন হাত ধরে টেনে ওকে ট্রেনে তুললাম। শূন্যে খানিক হাত-পা ছুড়ে, ও বাবাগো মাগো বলে চেঁচিয়ে-টে চিয়ে শেষে পাঁচুমামা খচ্ করে বেঞ্চিতে উঠে বসল। তার পর পকেট থেকে লাল রুমাল বের করে কপালের

2

বক-বধ পালা

28 November 2023
0
0
0

পালা শুরু জুড়ির সুর করে আবৃত্তি, মৃদু মুনু তবলা ইত্যাদি সহযোগে পোড়া জতুগৃহ থেকে বাহিরিয়া যবে, পাণ্ডব বঝিলা মনে এ বিশাল ভবে গৃহ বন্ধু কিছু নেই, নিলা বনবাস। দুঃখে কষ্টে বৃক্ষতলে কাটে দিনমাস। কত যে বিপদ

3

এই যা দেখা

29 November 2023
2
0
0

কলকাতা শহরের উত্তর দিকে সরু একটা সদর রাস্তা, তাতে লোকজন গাড়িঘোড়ার ভিড় কত, ভোর থেকে গভীর রাত অবধি হাঁকডাক ঠেলাঠেলি। লোকে বলে পথটা খুব পুরনো, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্ব কালে তৈরি, ঘরবাড়িগুলো এ ওর গায়

4

ছেলেবেলার গল্প

30 November 2023
0
0
0

গণশার চিঠি ভাই সন্দেশ, অনেকদিন পর তোমায় চিঠি লিখছি। এর মধ্যে কত কী যে সব ঘটে গেল যদি জানতে, তোমার গায়ের লোম ভাই খাড়া হয়ে গেঞ্জিটা উঁচু হয়ে যেত, চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসত, হাঁটুতে হাঁটুতে ঠকাঠক্ হয়ে কড়া পড়

5

হলদে পাখির পালক

1 December 2023
0
0
0

এক কত দেরি হয়ে গেল ভুলো তবু বাড়ি এল না, সন্ধে হয়ে গেল, রাত হয়ে গেল। দাদু তাস খেলতে যাবার আগে বললেন, "খুঁজতে যাবার কিছু দরকার নেই, কেউ তোদের নেড়িকুত্তো চুরি করবে না, খিদে পেলে সুড়সুড় করে নিজেই বাড়ি ফি

6

বহুরূপী

2 December 2023
0
0
0

ছোটবেলাকার কত কথাই যে মনে পড়ে, কত কান্ডই যে তখন হত। একবার গুপের মামাতো ভাই ভোঁদা বলেছিল যে বহুরূপীরা পর পর সাতদিন আসে, একেক দিন এক এক নতুন সাজে। কখনো কখনো সবাই তাকে বহুরূপী বলে চিনে ফেলে, আবার কখনো কখ

7

মহালয়ার উপহার

2 December 2023
0
0
0

শিবু, শিবুর মা আর শিবুর বউ তিন নম্বর হোগলাপট্টি লেনের দোতলার তিনখানি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকত। একটা ঘরে শিবুর মা শুত, সেটা সব থেকে বড় ও ভালো, কারণ বুড়ি ভারি খিটখিটে। আরেকটাতে শিবু আর শিবুর বউ, শুত, সেটা মাঝ

8

ভানুমতীর খেল

3 December 2023
0
0
0

গোরুদের ঘরের পিছনের ছোট ফটকটার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই লোকটাকে দেখতে পেলাম। গোয়ালের কোনায় একটা মাটির ঢিবির উপর ঝোপের আড়ালে বসে-বসে একটা দেশলাই কাঠি দিয়ে দাঁত খুঁটছে আর একটু-একটু পা দোলাচ্ছে। সারা গায়ে ধুলো

9

পঞ্চমুখী শাঁখ

3 December 2023
0
0
0

বন্ধুদের দেশের বাড়িতে একটা প্রকাণ্ড পঞ্চমুখী শাঁখ আছে! শুনেছি শাঁখটা নাকি দেড়শো বছর ধরে ওদের বাড়িতে রয়েছে। ওর নানা- রকম গুণটুনও নাকি আছে। আগে রোজ ওর পুজো হত, পুরুতঠাকুর আসত, খাওয়া-দাওয়া হত। তবে সত্তর

10

হুঁশিয়ার

3 December 2023
0
0
0

যখন সামনের লোকটার লোমওয়ালা ঘেমো ঘাড়টার দিকে আর চেয়ে থাকা অসম্ভব মনে হল, চোখ দুটো ফিরিয়ে নিলাম। অমনি কার জানি একরাশি খোঁচা-খোঁচা গোঁফ আমার ডান দিকের কানের ভিতর ঢুকে গেল। চমকে গিয়ে ফিরে দেখি ভীষণ রোগা,

11

সেকালে

3 December 2023
0
0
0

পঁয়ষট্টি বছর আগে আমার মামাবাড়ির দেশে এক দিকে যেমন সাধু- সজ্জনের ভিড় ছিল এবং তার ফলে পুজোপার্বণ, তিথিপালন, হরির লুট, ব্রাহ্মণ-ভোজন, কাঙালী-বিদায় লেগেই থাকত, আবার তেমনি অন্য দিক দিয়ে ঠগ-ঠ্যাঙাড়ে, জোচ্চো

12

চোর

3 December 2023
0
0
0

ঠিক যেই নিতাইদের বাড়ির পেছনের সেই ঝাঁকড়ান্ডুলো ঝোপটার কাছে এসেছি, পকেট হাতড়ে দেখি যে আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে! সেই কোনা-মোড়া আধ-ময়লা নোটটা কে যেন বুক-পকেট থেকে তুলে নিয়েছে! ভীষণ ঘাবড়ে গেলাম। ভয়ের চোটে ক

13

টাইগার

3 December 2023
0
0
0

তাকে উলটে দেখলাম থাবার তলাটা গোলাপী মখমলের মতো, মাঝে- মাঝে কচি-কচি সাদা লোম। পেটের তলাটাও গোলাপী-নরম তুলতুলে এক জায়গায় একটা শিরা না কি যেন ধুন্ধুক্ করছে। মুণ্ডুটাকে তুলে আবার নিজের পেট দেখতে চেষ্টা কর

14

লোমহর্ষণ

3 December 2023
0
0
0

রাজামশাই ব্যস্ত হয়ে দরদালানে পায়চারি করে বেড়াচ্ছেন, খিদেয় পেটের এ-দেয়াল ও-দেয়াল একসঙ্গে লেপটে যাচ্ছে, টেবিল পাতা, সোনার বাসন-কোসন সাজানো, মুক্তো-বসানো গেলাসে কেয়ার গন্ধ-দেওয়া জল, রানী ওদিকে মখমলের গদি

15

ভালোবাসা

3 December 2023
0
0
0

আজকাল সবই অন্যরকম লাগে। দরজার কড়া নাড়বামাত্র ভিতর থেকে একটা ভারী জিনিস দরজার উপর আর আছড়েও পড়ে না। নখ দিয়ে কেউ দরজায় আঁচড়িয়ে, পালিশ উঠিয়ে, বকুনিও খায় না; ঘরে ঢুকবামাত্র নেচেকঁদে গায়ের উপর চড়ে একাকারও ক

16

তেজী বুড়ো

3 December 2023
0
0
0

আয়না দেখে আঁতকে উঠলুম। এ তো আমার সেই চিরকেলে চেহারা নয়! সেই যাকে ছোটবেলা দেখেছিলুম ন্যাড়া মাথা, নাকে সদি, চোখ ফুলো! তার পর দেখেছিলুম চুল খোঁচা, নাক খাঁদা, গালে-টালে কাজল! এই সেদিনও দেখলুম খাকি পেন্টেল

17

দিনের শেষে

5 December 2023
0
0
0

লক্ষ্ণৌ থেকে ওস্তাদ এসেছে। দাদু আর দিদিমা শ্যামলবাবুদের বাড়িতে গান শুনতে গেছেন, ফিরতে রাত হবে। ঝগড় বলল, "তা তোমরা যদি সব-কিছুই বিশ্বাস না করে আনন্দ পাও, তা হলে আমার আর কিছু বলবার নেই। তবে সর্বদা মনে

18

আমাদের দেশে

5 December 2023
0
0
0

আমাদের দেশের কথা আর কী বলব, সে কি আর এখন আমাদের আছে? একেবারে পাকিস্তানের পূর্বকোণে ঠুসে দিয়েছে। কিন্তু সেখানকার লাল-লাল গোল-আলু আর সেখানকার পাকা সোনালী আনারস আর আঠাল দুধের ক্ষীর যে একবার খেয়েছে সে সার

19

পালোয়ান

5 December 2023
0
0
0

নিউ মার্কেটের পিছনে বাঁদরের দোকান আছে। ছোট-ছোট খাঁচায় পোরা বাঁদরের ভিড়, এ-ওর গায়ে চিকে রয়েছে। তা ছাড়া সাদা ইঁদুর, বেজি, কাকাতুয়া, কালোমুখো ল্যাজ-প্যাঁচানো শ্যামদেশের বেড়াল, ভালুক বাচ্চা, আরো কত কি যে

20

গুণ-করা

5 December 2023
0
0
0

বুঝলে, আমার মামাবাড়িতে ফান্ড বলে একটা চাকর ছিল। বাঙালি নয়। ঐ গারো পাহাড়ে অঞ্চলে ওর বাড়ি। আশা করি গারো পাহাড় কোথায় সে কথা আর তোমাদের বলে দিতে হবে না। ফান্ড যে বাঙালি নয় সে ওকে দেখলেই বোঝা যেত। বেঁটে, ম

21

কি বুদ্ধি

5 December 2023
0
0
0

জন্তু জানোয়ারদের বিষয়ে কতরকম অদ্ভুত গল্পই যে শোনা যায় তার আরু ঠিক নেই। একবার নাকি একটি ব্যাঙ কেমন করে পাথরের ফোকরের মধ্যে বদ্ধ হয়ে গিয়ে, ঐভাবে কতকাল যে ছিল তার ঠিক নেই। বোধ হয় অনেক শো বছর। তার পর যেই

22

বনের ধারে

5 December 2023
0
0
0

ছোটবেলায় পাহাড়ে দেশে থাকতাম। চার দিকে ছিল সরলগাছের বন। তাদের ছুচের মতো লম্বা পাতা, সারা গায়ে ধুনোর গন্ধ, একটুখানি বাতাস বইলেই শোঁ শোঁ একটা শব্দ উঠত। শুকনো সময় গাছের ডালে ডালে ঘষা লেগে অমনি আগুন লেগে য

23

মেজোমামার প্রতিশোধ

5 December 2023
0
0
0

আমার মেজোমামাকে নিশ্চয় তোমরা কেউ দ্যাখ নি। হাড় জিজিরে রোগা বেঁটে মতন, সরু লিক্লিকে হাত-পা, সারা মুখময় খোঁচা-খোঁচা দাড়ি গোঁফ। কারণ মেজোমামা দু সপ্তাহে একবার দাড়ি চাঁচেন, নাকি দাড়ি কামালেই মুখময় আঁচড়ে য

---