হায়, নাথ, নিজ কর্মফলে
মজালে রাক্ষসকুলে, মজিলে আপনি।
রাবণের শক্তির মূলে ছিল দেবশ্রেষ্ঠ মহেশ্বরের রূপা। তাই স্বয়ং উমা যখন মহেশ্বরকে বশীভূত করিতে গেলেন তখন তিনি কন্দর্পের সাহায্য গ্রহণ করিলেন যাহাতে তপস্বী মহাদেব পার্বতীর প্রতি অনুকূল হইতে পারেন। কিন্তু দেখা গেল, এত বিশদ প্রস্তুতির কোন প্রয়োজন ছিল না। মহাদেব খুব সহজেই বলিলেন,
পরম ভকত মম নিকযা-নন্দন;
কিন্তু নিজ কর্মফলে মজে দুষ্টমতি।
মায়ার প্রসাদে,
বধিবে লক্ষ্মণ শুর মেঘনাদ শূরে।
লক্ষ্মণ যে মেঘনাদবধ-অভিযানে অগ্রসর হইলেন তাহার অন্যতম কারণ এই যে পিতার অধর্মের ফলে মেঘনাদ পূর্বের মত অপরাজেয় থাকিতে পারিবেন না। তিনি রামকে এই বলিয়া আশ্বাস দিলেন-
অধর্ম-আচারী এই রক্ষঃ-কুল-পতি; তার পাপে হতবল হবে রণভূমে মেঘনাদ; মরে পুত্র জনকের পাপে।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হইবে যে লক্ষ্মণ অন্যায় যুদ্ধে মেঘনাদকে হত্যা করিয়াছিলেন। কিন্তু গভীরভাবে বিচার করিলে দেখা যাইবে যে অন্যায় সমরে লক্ষ্মণ ব্রতী হইয়াছেন ন্যায়েরই জন্য; এই উপায়েই পরস্ত্রী-অপহারকের যথাযোগ্য শাস্তি সম্ভব। লক্ষ্মণ যে মায়ার আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিলেন তাহাতে স্বয়ং মহাদেবের নির্দেশ ছিল। রাবণও পরোক্ষভাবে ইহা স্বীকার করিয়াছেন:
কি কুক্ষণে তোর (শূর্পণখার) দুখে দুখী
পাবক-শিখা-রূপিণী জানকীরে আমি
আনিম্ন এ হৈম গেহে?
অন্যত্রও তিনি প্রাক্তনের বা পূর্বজন্মফলের অলঙ্ঘনীয়তা স্বীকার করিয়াছেন। ইলিয়াডেরও মূল ঘটনা পরস্ত্রী-অপহরণ। এই গ্রন্থে কোন কোন জায়গায় এইরূপ মত ব্যক্ত হইয়াছে যে হেলেন মেনেলাউসের বিবাহিতা পত্নী এবং সেই হিসাবে তাঁহাকে ফিরাইয়া দেওয়াই ট্রয়বাধীদের কর্তব্য। কিন্তু এই মত প্রাধান্য পায় নাই, পাওয়ার কোন সঙ্গত কারণও নাই।