shabd-logo

মেঘনাদবধ কাব্য- সপ্তম সর্গ

22 December 2023

0 Viewed 0

উদিলা আদিত্য এবে উদয়-অচলে, পদ্মপর্ণে স্বপ্ত দেব পদ্মযোনি যেন, উন্মীলি নয়নপদ্ম স্বপ্রসন্ন ভাবে, চাহিলা মহীর পানে! উল্লাসে হাসিলা কুহুমকুন্তলা মহী, মুক্তামালা গলে। উৎসবে মঙ্গলবাদ্য উথলে যেমতি দেবালয়ে, উথলিল সুস্বরলহরী নিকুঞ্জে স্থলে । বিমল জলে শোভিল নলিনী; সমপ্রেমাকাঙ্ক্ষী হেম সূর্যমুখী।

নিশার শিশিরে যথা অবগাহে দেহ কুহুম, প্রমীলা সতী, সুবাসিত জলে স্নানি পীনপয়োধরা, বিনানিলা বেণী। শোভিল মুকুতাপাতি সে চিকণ কেশে, চন্দ্রমার রেখা যথা ঘনাবলী মাঝে শরদে! 'রতনময় কঙ্কণ লইলা ভূষিতে মৃণালভূজ শুমৃণালভুজা;- বেদনিল বাহু, আহা দৃঢ় বাঁধে যেন, কঙ্কণ! কোমল কণ্ঠে স্বর্ণকণ্ঠমালা ব্যথিল! কোমল কণ্ঠে সন্তাষি বিস্ময়ে বসন্তসৌরভা সখী বাসন্তীরে, সতী কহিলা,-"কেন লো, সই, না পারি পরিতে অলঙ্কার? লঙ্কাপুরে কেন বা শুনিছি

রোদন-নিনাদ দূরে, হাহাকার ধ্বনি?
বামেতর আঁখি মোর নাচিছে সতত;
কাঁদিয়া উঠিছে প্রাণ!
না জানি, স্বজনি, হায় লো না জানি আজি পড়ি কি বিপদে! যজ্ঞাগারে প্রাণনাথ, যাও তাঁর কাছে, বাসন্তি! নিবার যেন না যান সমরে এ কুদিনে বীরমণি। কহিও জীবেশে, অম্লরোণে দাদী তাঁর ধরি পা দুখানি!"৩০

নীরবিলা বীণাবাণী, উত্তরিলা সখী বাসন্তী, "বাড়িছে ক্রমে, শুন কান দিয়া, আর্তনাদ, সুবদনে! কেমনে কহিব কেন কাঁদে পুরবাসী? চল আশুগতি দেবের মন্দিরে যথা দেবী মন্দোদরী পূজিছেন আশুতোষে। মত্ত রণমদে, রথ, রখী, গজ, অশ্ব চলে রাজপথে; কেমনে যাইব আমি যজ্ঞাগারে, যথা সাজিছেন রণবেশে সদা রণজয়ী কান্ত তব, সীমন্তিনি?" চলিলা দুজনে চন্দ্রচূড়ালয়ে, যথা রক্ষঃকুলেশ্বরী আরাধেন চন্দ্রচূড়ে রক্ষিতে নন্দনে- ! ব্যগ্রচিত্ত দোঁহে চলিলা সত্বরে।

বৃথা বিরসবদন এবে কৈলাস-সদনে গিরিশ। বিষাদে ঘন নিশ্বাসি ধূর্জটি, হৈমবতী পানে চাহি, কহিলা, "হে দেবি, পূর্ণ মনোরথ তব; হত রথিপতি ইন্দ্রজিং কাল রণে! যজ্ঞাগারে বলী সৌমিত্রি নাশিল তারে মায়ার কৌশলে!। রক্ষোদৃতবেশে তুমি; ভর, রুদ্রতেজে, পরম ভকত মম রক্ষাকুলনিধি, ৫০ বিধুমুখি! তার দুঃখে সদা দুঃখী আমি। এই যে ত্রিশূল, সতি, হেরিছ এ করে, ইহার আঘাত হতে গুরুতর বাজে পুত্রশোক! চিরস্থায়ী, হায়, সে বেদনা, সর্বহর কাল তাহে না পারে হরিতে! কি কবে রাবণ, সতি, শুনি হত রণে পুত্রবর? অকস্মাৎ মরিবে, যদ্যপি নাহি রক্ষি রক্ষে আমি রুদ্রতেজোদানে। তুষিন্তু বাসবে, সাব্বি, তব অনুরোধে; দেহ অনুমতি এবে তুষি দশাননে!" উত্তরিলা কাত্যায়নী, "যাহা ইচ্ছা কর, ত্রিপুরারি! বাদবের পুরিবে বাসনা, ছিল ভিক্ষা তব পদে, সফল তা এবে। দাসীর ভকত, প্রভু, দাশরথি রথী; এ কথাটি, বিশ্বনাথ, থাকে যেন মনে! আর কি কহিবে দাসী ও পদরাজীবে?"

হাসিয়া স্মরিলা শূলী বীরভদ্র শূরে। ভীষণ-মূরতি রথী প্রণমিলে পদে সাষ্টাঙ্গে, কহিলা হর,-"গতজীব রণে আজি ইন্দ্রজিৎ, বৎস! পশি যজ্ঞাগারে, নাশিল সৌমিত্রি তারে উমার প্রসাদে।

ভয়াকুল দূতকুল এ বারতা দিতে রক্ষোনাথে। বিশেষতঃ, কি কৌশলে বলী সৌমিত্রি নাশিলা রণে দুর্মদ রাক্ষসে, নাহি জানে রক্ষোদূত। দেব ভিন্ন, রথি, কার সাধ্য দেবমায়া বুঝে এ জগতে? কনক-লঙ্কায় শীঘ্র যাও, ভীমবাহু,
নিকষানন্দনে আজি আমার আদেশে।" চলিলা আকাশপথে বীরভদ্র বলী ভীমাক্বতি; ব্যোমচর নমিলা চৌদিকে সভয়ে; সৌন্দর্যতেজে হীনতেজাঃ রবি, সুধাংশু নিরংশু যথা সে রবির তেজে। ভয়ঙ্করী শূলছায়া পড়িল ভূতলে। গম্ভীর নিনাদে নাদি অম্বুরাশিপতি পূজিলা ভৈরবদূতে। উতরিলা রখী রক্ষঃপুরে; পদচাপে থর থর পূরি কাঁপিল কনক-লঙ্কা, বৃক্ষশাথা যথা পক্ষীন্দ্র গরুড় বৃক্ষে পড়ে উড়ি যবে। পশি যজ্ঞাগারে শূর দেখিলা ভূতলে বীরেন্দ্রে! প্রফুল্ল, হায়, কিংশুক যেমতি ভূপতিত বনমাঝে প্রভঞ্জন-বলে। সজল নয়নে বলী হেরিলা কুমারে।

ব্যথিল অমর-হিয়া মর-দুঃখ হেরি। কনক-আসনে যথা দশানন রথী, রক্ষাকুলচূড়ামণি, উতরিলা তথা দূতবেশে বীরভদ্র, ভস্মরাশি মাঝে গুপ্ত বিভাবসু সম তেজোহীন এবে। প্রণামের ছলে বলী আশীষি রাক্ষসে, দাঁড়াইলা করপুটে, অশ্রুময় আঁখি, সম্মুখে। বিস্ময়ে রাজা সুধিলা, "কি হেতু, হে দূত, রসনা তব বিরত সাধিতে স্বকর্ম? মানব রাম, নহ ভৃত্য তুমি রাঘবের, তবে কেন, হে সন্দেশ-বহ, মলিন বদন তব? দেবদৈত্যজয়ী লঙ্কার পঙ্কজয়বি সাজিছে সমরে।
আজি, অমঙ্গল বার্ত। কি মোরে কহিবে? মরিল রাঘব যদি ভীষণ অশনি- সম প্রহরণে রণে, কহ সে বারতা, প্রসাদি তোমারে আমি।" দীরে উত্তরিলা ছদ্মবেশী; 'হায়, দেব, কেমনে নিবেদি অমঙ্গল বার্তা পদে, ক্ষুদ্র প্রাণী আমি? অভয় প্রদান অগ্রে, হে কর'রপতি, কর দাসে!" ব্যগ্রচিত্তে উত্তরিলা বলী, "কি ভয় তোমার, দূত? কহ ত্বরা করি, শুভাশুভ ঘটে ভবে বিধির বিধানে।- দানিম্ন অভয়, ত্বরা কহ বার্ত। মোরে!"

বিরূপাক্ষচর বলী রক্ষোদৃতবেশী কহিলা, "হে রক্ষঃশ্রেষ্ঠ, হত রণে আজি কবুর-কুলের গর্ব মেঘনাদ রথী!” যথা যবে ঘোর বনে নিষাদ বিবিলে মৃগেন্দ্রে নম্বর শরে, গর্জি ভীম নাদে পড়ে মহীতলে হরি, পড়িলা ভূপতি সভায়! সচিববৃন্দ, হাহাকার রবে, বেড়িল চৌদিকে শূরে; কেহ বা আনিল সুশীতল বারি পাত্রে, বিউনিল কেহ।

রুদ্রতেজে বীরভদ্র আশু চেতনিলা রক্ষোবরে। অগ্নিকণা পরশে যেমতি বারুদ, উঠিয়া বলী, আদেশিলা দূতে- "কহ, দূত, কে বধিল চিররণজয়ী ইন্দ্রজিতে আজি রণে? কহ শীঘ্র করি।"

উত্তরিলা ছদ্মবেশী; "ছদ্মবেশে পশি নিকুন্তিলা যজ্ঞাগারে সৌমিত্রি কেশরী, রাজেন্দ্র, অন্যায় যুদ্ধে বধিল কুমতি বীরেন্দ্রে! প্রফুল্ল, হায়, কিংশুক যেমনি ভূপতিত বনমাঝে প্রভঞ্জন-বলে, মন্দিরে দেখিন্ত শূরে। বীরশ্রেষ্ঠ তুমি, রক্ষোনাথ বীরকর্মে ভুল শোক আছি। রক্ষাকুলাঙ্গনা, দেব, আদ্রিবে মহীরে চক্ষুঃজলে। পুত্রহানী শত্রু যে দুর্গতি, ভীম প্রহরণে তারে সংহারি সংগ্রামে, তোষ তুমি, মহেষাস, পৌর জনগণে!"

আচম্বিতে দেবদূত অদৃশ্য হইলা, স্বর্গীয় সৌরভে সভা পূরিল চৌদিকে। দেখিলা রাক্ষসনাথ দীর্ঘজট।বলী, ভীষণ ত্রিশূল-ছায়া। ক্বতাঞ্জলিপুটে প্রণমি, কহিলা শৈব; "এত দিনে, প্রন্থ, ভাগ্যহীন ভৃত্যে এবে পড়িল কি মনে তোমার? এ মায়া, হায়, কেমনে বুঝিব মৃঢ় আমি, মায়াময়? কিন্তু অগ্রে পালি আজ্ঞা তব, হে সর্বজ্ঞ। পরে নিবেদিব যা কিছু আছে এ মনে ও রাজীব পদে।" 'সরোষে-তেজস্বী আজি মহারুদ্রতেজে- কহিলা রাক্ষসশ্রেষ্ঠ, "এ কনক-পুরে, ধনুর্ধর আছ যত, সাজ শীঘ্র করি চতুরঙ্গে! রণরঙ্গে ভুলিব এ জ্বালা- এ বিষম জালী যদি পারি রে ভুলিতে!"

উথলিল সভাতলে দুন্দুভির ধ্বনি, শৃঙ্গনিনাদক যেন, প্রলয়ের কালে, বাজাইলা শৃঙ্গবরে গম্ভীর নিনাদে! যথা সে ভৈরব রবে কৈলাস-শিখরে সাজে আশু ভূতকুল, সাজিল চৌদিকে রাক্ষস; টন্সিল লঙ্কা বীরপদভরে! বাহিরিল অগ্নিবর্ণ রথগ্রাম বেগে স্বর্ণধ্বজ, ধূমবর্ণ বারণ, আম্ফালি ভীষণ মুদ্গর শুণ্ডে; বাহিরিল হেষে তুরঙ্গম, চতুরঙ্গে আইলা গঙ্গিয়া চামর, অমর-ত্রাস, রথিবৃন্দ সহ উদগ্র, সমরে উগ্র; গঙ্গবৃন্দ মাঝে বাস্কল, জীমূতবৃন্দ মাঝারে যেমতি জীমূতবাহন বজ্রী ভীম বজ্র করে! বাহিরিল হুহুঙ্কারি অসিলোমা বলী অশ্বপতি; বিড়ালাক্ষ পদাতিকদলে,

মহাভয়ঙ্কর রক্ষঃ, দুর্মদ সমরে!
আইল পতাকিদল, উড়িল পতাকা,
ধূমকেতুরাশি যেন উদিল সহসা
আকাশে! রাক্ষসবাদ্য বাজিল চৌদিকে।

যথ। দেবতেজে জন্মি দানবনাশিনী চণ্ডী, দেব-অগ্নে সতী সাজিল। উল্লাসে অট্টহাসি, লগধামে সাজিলা ভৈরবী রক্ষাকুল-অনীকিনী-উগ্রচণ্ডা রণে। গজরাজতেঞ্জঃ ভূজে; অগ্রগতি পদে; স্বর্ণরব শিরঃচূড়া; অঞ্চল পতাকা রত্নময়; ভেরী, তুরী, দুন্দুভি, দামামা আদি বাদ্য সিংহনাদ! শেল, শক্তি, জাটি, তোমর, ভোমর, শূল, মুষল, মুদ্গর, পট্টিশ, নারাচ, কৌস্ত-শোভে দন্তরূপে! জন'মল নয়নায়ি সাঁজোয়াব তেজে! থর থর থরে মহী কাঁপিলা সঘনে;

কল্লোলিলা উথলিয়া সভয়ে জলধি; অধীর ভূধরব্রজ, ভীমার গর্জনে,- পুনঃ যেন জন্মি চণ্ডী নিনা দিলা রোষে! চমকি শিবিরে শূর রবিকুলরবি

কহিলা সম্ভাষি মিত্র বিভীষণে, "দেখ, হে সথে, কাঁপিছে লম্বা মূহুর্মুহুঃ এবে ঘোর ভূকম্পনে যেন! ধুমপুঞ্জ উড়ি আবরিছে দিননাথে ঘন ঘনরূপে; উজলিছে নভহল ভয়ঙ্করী বিভা, কালাগ্নিসম্ভবা কল্লোল, যেন! শুন কান দিয়া,

জলধি যেন উথলিছে দূরে লয়িতে প্রলয়ে বিশ্ব!" কহিলা-সত্রাসে পাণ্ডুগ গুদেশ-রক্ষঃ, মিত্রচূড়ামণি, "কি আর কহিব, দেব? কাঁপিছে এ পুরী রক্ষোবীর পদভরে, নহে ভূকম্পনে! কালানিসম্ভবা বিভা নহে যা দেখিছ গগনে, বৈদেহীনাথ; স্বর্ণবর্ম-আভা অস্বাদির তেজঃ সহ মিশি উজলিছে দশ দিশ! রোধিছে যে কোলাহল, বলি, শ্রবণকুহর এবে, নহে সিন্ধুধ্বনি; গরজে রাক্ষসচম্, মাতি বীরমদে। আকুল পুত্রেন্দ্রশোকে, সাজিছে সুরথী লঙ্কেশ! কেমনে, কহ রক্ষিবে লক্ষ্মণে, আর যত বীরে, বীর, এ ঘোর সঙ্কটে ?"

সুস্বরে কহিলা প্রভু, "যাও ত্বরা করি মিত্রবর, আন হেথা আহ্বানি সত্বরে সৈন্যাধ্যক্ষদলে তুমি। দেবাশ্রিত সদা, এ দাস; দেবতাকুল রক্ষিবে দাসেরে!"

শৃঙ্গ ধরি রক্ষোবর নাদিলা ভৈরবে। আইলা কিষ্কিন্ধ্যানাথ গজপতিগতি; রণবিশারদ শূর অঙ্গদ; আইলা নল, নীল দেবাক্বতি; প্রভঞ্জনসম ভীমপরাক্রম হন্; জাম্বুবান বলী; বীরকুলর্ষভ বীর শরভ; গবাক্ষ

রক্তাক্ষ; রাক্ষসত্রাস আর নেতা ষত। সম্ভাষি বীরেন্দ্রদলে যথাবিধি বলী রাঘব, কহিলা প্রভু; "পুত্রশোকে আজি বিকল রাক্ষসপতি সাজিছে সত্বরে সহ রক্ষঃ-অনীকিনী; সঘনে টলিছে বীরপদভরে লঙ্কা! তোমরা সকলে ত্রিভুবনজয়ী রণে; সাজ ত্বরা করি; রাখ গো রাঘবে আজি এ ঘোর বিপদে। স্ববন্ধুবান্ধবহীন বনবাসী আমি ভাগ্যদোষে; তোমরা হে রামের ভরসা, বিক্রম, প্রতাপ, রণে! একমাত্র রথী জীবে লঙ্কাপুরে এবে; বন্ধ আজি তারে, বীরবৃন্দ! তোমাদেরি প্রসাদে বাঁধিমু সিন্ধু; শূলিশভূনিভ কুম্ভকর্ণ শূরে বধিমু তুমুল যুদ্ধে। নাশিল সৌমিত্রি

দেবদৈত্যনরন্ত্রাস ভীম মেঘনাদে! কুল, মান, প্রাণ মোর রাখ হে উদ্ধারি, রঘুবন্ধু, রঘুবধূ, বদ্ধা কারাগারে রক্ষঃ-ছলে! স্নেহপণে কিনিয়াছ রামে তোমরা; বাঁধ হে আজি কৃতজ্ঞতা পাশে রঘুবংশে, দাক্ষিণাত্য, দাক্ষিণ্য প্রকাশি!"

নীরবিলা রঘুনাথ সজল নয়নে। বারিদপ্রতিম স্বনে স্বনি উত্তরিলা সুগ্রীব; "মরিব, নহে মারিব রাবণে, এ প্রতিজ্ঞা, শৃরশ্রেষ্ঠ, তব পদতলে! ভুল্লি রাজ্যসুখ, নাথ, তোমার প্রসাদে, ধনমানদাতা তুমি; কৃতজ্ঞতা-পাশে চির বাঁধা, এ অধীন, ও পদপঙ্কজে!

আর কি কহিব, শূর? মম সঙ্গিদলে নাহি বীর, তব কর্ম সাধিতে যে ডরে ক্বতাস্তে! সাজুক রক্ষা, যুঝিব আমরা অভয়ে!" গঞ্জিলা রোষে সৈন্যাধ্যক্ষ যত, গঞ্জিল বিকট ঠাট জয়রাম নাদে!

সে ভৈরব রবে রুষি, রক্ষ:-অনীকিনী নিনাদিলা বীরমদে, নিনাদেন যথা দানবদলনী দুর্গা দানবনিনাদে!- পূরিল কনক-লঙ্কা গম্ভীর নির্ঘোষে!

কমল-আসনে যথা বসেন কমলা; রক্ষ কুলরাজলক্ষ্মী, পশিল সে স্থলে আরাব; চমকি সতী উঠিলা সত্বরে। দেখিলা পদ্মাক্ষী, রক্ষঃ সাজিছে চৌদিকে ক্রোধান্ধ; রাক্ষসধ্বজ উড়িছে আকাশে, জীবকুল-কুলক্ষণ! বাজিছে গম্ভীরে রক্ষোবাদ্য। শূন্যপথে চলিলা ইন্দিরা-শরদিন্দুনিভাননা-বৈজয়ন্ত ধামে।

বাজিছে বিবিধ বাগ্য ত্রিদশ-আলয়ে; নাচিছে অপ্সরাবৃন্দ; গাইছে সুতানে কিন্নর; সুবর্ণাসনে দেবদেবীদলে দেবরাজ, বামে শচী সুচারুহাসিনী; অনন্ত বাসস্তানিল বহিছে স্বম্বনে; বর্ষিছে মন্দারপুঞ্জ গন্ধর্ব চৌদিকে।

পশিলা কেশব-প্রিয়া দেবসভাতলে। প্রণমি কহিলা ইন্দ্র, "দেহ পদধূলি, জননি; নিঃশঙ্ক দাস তোমার প্রসাদে- গতজীব রণে আজি দুরস্ত রাবণি! • ভুল্লিব স্বর্গের সুখ নিরাপদে এবে। কৃপাদৃষ্টি যার প্রতি কর, রুপাময়ি, তুমি, কি অভাব তার?" হাসি উত্তরিলা রত্নাকর-রত্নোত্তমা ইন্দিরা সুন্দরী,-

"ভূতলে পতিত এবে, দৈত্যকুলরিপু, রিপু তব; কিন্তু সাজে রক্ষোবলদলে লঙ্কেশ; আকুল রাজা প্রতিবিধানিতে পুত্রবধ! লক্ষ রক্ষঃ সাজে তার সনে। দিতে এ বারতা, দেব, আইমু এ দেশে। সাবিল তোমার কর্ম সৌমিত্রি স্বমতি; রক্ষ তাঁরে, আদিতেয়! উপকারী জনে, মহৎ যে প্রাণ-পণে উদ্ধারে বিপদে! আর কি কহিব, শত্রু? অবিদিত নহে রক্ষঃকুলপরাক্রম! দেখ চিন্তা করি, কি উপায়ে, শচীকান্ত, রাখিবে রাঘবে।"

উত্তরিলা দেবপতি,-"স্বর্গের উত্তরে, দেখ চেয়ে, জগদম্বে, অম্বর প্রদেশে;- সুসজ্জ অমরদল। বাহিরায় যদি রণ-আশে মহেষাস রক্ষঃকুলপতি, সমরিব তার সঙ্গে রঙ্গে, দয়াময়ি।- না ডরি রাবণে, মাতঃ, রাবণি বিহনে!"

বাসবীয় চম্ রমা দেখিলা চমকি স্বর্গের উত্তর ভাগে। যত দূর চলে দেবদৃষ্টি, দৃষ্টি দানে হেরিলা শুন্দরী রথ, গজ, অশ্ব, সাদী, নিষাদী, সুরথী, পদাতিক যমজয়ী, বিজয়ী সমরে। গন্ধর্ব, কিন্নর, দেব, কালাগ্নি-সদৃশ তেজে; শিখিধ্বজরথে স্কন্দ তারকাবি সেনানী, বিচিত্র রথে চিত্ররথ রথী। জলিছে অম্বর যথা বন দাবানলে;

ধূমপুঞ্জ সম তাহে শোভে গজরাজী;
শিখারূপে শূলগ্রাম ভাতিছে ঝলসি নয়ন! চপলা যেন অচলা, শোভিছে পতাকা; রবিপরিধি জিনি তেজোগুণে, ঝকঝকে চর্ম; বর্ম ঝলে ঝলঝলে!

সুধিলা মাধবপ্রিয়া,"কহ দেবনিধি আদিতেয়, কোথা এবে প্রভঞ্জন-আদি দিপাল? ত্রিদিবসৈন্য শূণ্য কেন হেরি এ বিরহে?" উত্তরিলা শচীকান্ত বলী; "নিজ নিজ রাজ্য আজি রক্ষিতে দিক্সালে আদেশিশু, জগদম্বে! দেবরক্ষোরণে, (দুর্জয় উভয় কুল) কে জানে কি ঘটে! হয়ত মজিবে মহী, প্রলয়ে যেমতি,

আজি; এ বিপুল সৃষ্টি যাবে রসাতলে!" আশীধিয়া স্বকেশিনী কেশববাসনা দেবেশে, লঙ্কায় মাতা সত্বরে ফিরিলা সুবর্ণ ঘনবাহনে; পশি স্বমন্দিরে, বিষাদে কমলাসনে বসিলা কমলা,- আলো করি দশ দিশ রূপের কিরণে, বিরসবদন, মরি, রক্ষঃকুলদুঃখে!

রণমদে মত্ত, সাজে রক্ষঃকুলপতি;- হেমকুট-হেমশৃঙ্গ-সমোজ্জল তেজে চৌদিকে রথীন্দ্রদল! বাজিছে অদূরে রণবাগ্য; রক্ষোঞ্চজ উড়িছে আকাশে; অসখ্য রাক্ষসবৃন্দ নাদিছে হুঙ্কারে। হেন কালে সভাতলে উত্তরিলা রাণী মন্দোদরী, শিশুশূন্য নীড় হেরি যথা

আকুলা কপোতী, হায়! ধাইছে পশ্চাতে সধীদল। (রাজপদে পড়িলা মহিষী। ১ যতনে সতীরে তুলি, কহিলা বিষাদে রক্ষোরাজ, "বাম এবে, রক্ষঃ-কুলেন্দ্রাণি, আমাদোহা প্রতিবিধি! তবে যে বাঁচিছি এপনও, সে কেবল প্রতিবিধিংসিতে মৃত্যু তার! যাও ফিরি শূন্য ঘরে তুমি; রণক্ষেত্রযাত্রী আমি, কেন রোধ মোরে? বিলাপের কাল, দেবি, চিরকাল পাব! বুখ। রাজ্যসুখে, সতি, জলাঞ্জলি দিয়া, বিরলে বসিয়া দোঁহে স্মরিব তাহারে অহরহঃ। যাও ফিরি; কেন নিবাইবে এ রোষাগ্নি অশ্রনীরে, রাণি মন্দোদরি? বনসুশোভন শাল ভূপতিত আজি; চূর্ণ তুঙ্গতম শৃঙ্গ গিরিবরশিরে; গগনরতন শশী চিররাহুগ্রাসে!"

ধরাধরি করি সখী লইলা দেবীবে অবরোধে! ক্রোধভরে বাহিরি, ভৈরবে কহিলা রাক্ষসনাথ, সম্বোধি রাক্ষসে;- "দেব দৈত্য-নর-রণে যার পরাক্রমে জয়ী রক্ষঃ-অনীকিনী; যার শরজালে কাতর দেবেন্দ্র সহ দেবকুল-রথী; অতল পাতালে নাগ, নর নরলোকে;- হত সে বীরেশ আজি অন্যায় সমরে, বীরবৃন্দ! চোরবেশে পশি দেবালয়ে, সৌমিত্রি বধিল পুত্রে, নিরস্ত্র সে যবে নিভৃতে! প্রবাসে যথা মনোদুঃখে মরে প্রবাসী, আসন্নকালে না হেরি সম্মুখে স্নেহপাত্র তার যত-পিতা, মাতা, ভ্রাতা, দয়িতা,-মরিল আজি স্বর্ণ-লঙ্কাপুরে, স্বর্ণলঙ্কা-অলঙ্কার! বহুকালাবধি পালিয়াছি পুত্রসম তোমা সবে আমি;
জিজ্ঞাসহ ভূমণ্ডলে, কোন্ বংশধ্যাতি
রক্ষোবংশখ্যাতিসম? কিন্তু দেব নরে

পরাভবি, কীতিবৃক্ষ রোপিন্ন জগতে বৃথা! নিদারুণ বিধি, এত দিনে এবে বামতম মম প্রতি; তেই শুধাইল. জলপূর্ণ আলবাল অকাল নিদাঘে! কিন্তু না বিলাপি আমি। কি ফল বিলাপে? আর কি পাইব তারে? অশ্রুবারিধারা, হায় রে, এবে কি কহু কুতাস্তের হিয়। কঠিন? সমরে এবে পশি বিনাশিব অধর্মী সৌমিত্রি মূঢ়ে, কপ-সমরী, বৃথা যদি যত্ন আজি, আর না ফিরিব,- পদার্পণ আর নাহি করিব এ পুরে এ জন্মে! প্রতিজ্ঞ। মম এই, রক্ষোরখি! দেবদৈত্যনরহ্রাস তোমরা সমরে, বিশ্বজয়ী; স্মরি তাবে, চল রণস্থলে;- মেঘনাদ হত রণে, এ বারত। শুনি, কে চাহে বাঁচিতে আজি এ কবু'রকুলে? কবুরকুলের গর্ব মেঘনাদ বলী!"

নীরবিলা ক্ষোভে রোষে মহেষাস নিশ্বাসি বিষাদে। রক্ষঃসৈন্য নাদিল নির্ঘোষে, তিতিয়া মহীরে, মরি, নয়ন-আসারে! শুনি সে ভীষণ স্বন নাদিলা গণ্ডীরে রঘুসৈন্য। ত্রিবিন্দ্রে নাদিলা ভিদিবে! রুষিলা বৈদেহীনাথ, সৌমিত্রি কেশরী, হুগ্রীব, অঙ্গদ, হন, নেতৃনিধি ষত, রক্ষোযম; নল, নীল, শরভ সুমতি,- গজিল বিকট ঠাট জয় রাম নাদে! মন্দ্রিলা জীমূতবৃন্দ আবরি অম্বরে; ইরম্মদে ধাঁধি বিশ্ব, গঞ্জিল অশনি; চামুণ্ডার হাসিরাশিসদৃশ হাসিল সৌদামিনী, যবে দেবী হাসি বিনাশিলা দুর্মদ দানববলে, মত্ত রণমদে। ডুবিলা তিমিরপুঞ্জে তিমির-বিনাশী দিনমণি; বায়ুদল বহিলা চৌদিকে বৈশ্বানর-শ্বাসরূপে; জলিল কাননে দাবাগ্নি; প্লাবন নাদি গ্রাসিল সহসা পুরী, পল্লী, ভূকম্পনে পড়িল ভূতলে অট্টালিকা, তরুরাজী, জীবন ত্যজিল উচ্চ কাঁদি জীবকুল, প্রলয়ে যেমতি!-

মহাভয়ে ভীত। মহী কাদিযা চলিলা বৈকুণ্ঠে। কনকাসনে বিরাজেন যথা মাধব, প্রণমি সাব্বী আরাদিল। দেবে; "বারে বারে অধীনীরে, দয়াসিন্ধু তুমি, হে রমেশ, তরাইল। বহু মৃতি ধরি;- কুর্মপৃষ্ঠে তিষ্ঠাইলা দাসীরে প্রলযে কুর্মরূপে; বিরাজিহু দশনশিসরে আমি, (শাঙ্কের দেহে কলঙ্কের রেখা- সদৃশী) বরাহমূর্তি ধরিলা যে কালে, দীনবন্ধু! নরসিংহবেশে বিনাশিয়া হিরণ্যকশিপু দৈত্যে, জুড়ালে দাসীবে! খবিলা বলির গর্ব খর্বাকারছলে, বামন! বাঁচিহ্ন, প্রভু, তোমার প্রসাদে !আর কি কহিব, নাথ! পদাশ্রিতা দাসী! তেঁই পাদপদ্মতলে এ বিপত্তিকালে।"

হাসি সুমধুর স্বরে শুধিলা মুরারি, "কি হেতু কাতরা আজি, কহ জগন্মাতঃ বহুধে? আয়াসে আজিকে, বংসে, তোমারে।
উত্তরিলা কাঁদি মহী; "কি না তুমি জান, সর্বজ্ঞ? লঙ্কার পানে দেখ, প্রভু, চাহি। রণে মত্ত রক্ষোরাজ; রণে মত্ত বলী রাঘবেন্দ্র; রণে মত্ত ত্রিদিবেন্দ্র রথী! মদকল করিত্রয় আয়াসে দাসীরে! দেবাক্বতি রখিপতি সৌমিত্রি কেশরী বধিলা সংগ্রামে আজি ভীম মেঘনাদে; আকুল বিষম শোকে রক্ষঃকুলনিদি করিল প্রতিজ্ঞা, রণে মারিবে লক্ষ্মণে; করিলা প্রতিজ্ঞা ইন্দ্র রক্ষিতে তাহারে বীরদর্পে; অবিলম্বে, হায়, আরত্তিবে কাল রণ, পীতাম্বর, স্বর্ণলঙ্কাপুরে দেব, রক্ষঃ, নর রোদে। কেমনে সহিব

এ ঘোর যাতনা, নাথ, কহ তা আমারে?" চাহিলা রমেশ হাসি স্বর্ণলঙ্কা পানে। দেখিলা রাক্ষসবল বাহিরিছে দলে অসস্থ্য, প্রতিঘ-অন্ধ, চতুঃস্কন্ধরূপী। চলিছে প্রতাপ আগে জগৎ কাঁপায়ে; পশ্চাতে শব্দ চলে শ্রবণ বধিরি; চলিছে পরাগ পরে দৃষ্টিপথ রোধি ঘন ঘনাকাররূপে! টলিছে সঘনে স্বর্ণলঙ্কা! বহির্ভাগে দেখিলা শ্রীপতি রঘুসৈন্ত; উর্মিকুল সিন্ধুমুখে যথা চির-অবি প্রভঞ্জন দেখা দিলে দূরে। দেখিলা পুণ্ডরীকাক্ষ, দেবদল বেগে  ধাইছে লঙ্কার পানে, পক্ষিরাজ যথা গরুড়, হেরিয়া দূরে সদা-ভক্ষ্য ফণী, হুঙ্কারে! পুরিছে বিশ্ব গভীর নির্ঘোষে!

পলাইছে যোগিকুল যোগ যাগ ছাড়ি; কোলে করি শিশুকুলে কাঁদিছে জননী, ভয়াকূলা; জীবব্রঙ্গ ধাইছে চৌদিকে ছন্নমতি! ক্ষণকাল চিন্তি চিন্তামণি (যোগীন্দ্র-মানস-হংস) কহিলা মহীরে, "বিষম বিপদ, সতি উপস্থিত দেখি তব পক্ষে! বিরূপাক্ষ, রুদ্রতেজোদানে, রঘুসৈন্ন তেজস্বী করিলা আজি রক্ষাকুলরাজে। না হেরি উপায় কিছু; যাহ তাঁর কাছে, মেদিনি!" পদারবিন্দে কাঁদি উত্তরিলা বহুন্ধরা; "হায়, প্রভু, দুরন্ত সংহারী ত্রিশূলী; সতত রত নিধনসাধনে ! নিরন্তর তমোগুণে পূর্ণ ত্রিপুরারি। কাল-সর্প-সাধ, সৌরি, সদা দগ্ধাইতে, উগরি বিষাগ্নি, জীবে! দয়াসিন্ধু তুমি, বিশ্বস্তর; বিশ্বভার তুমি না বহিলে, কে আর বহিবে, কহ? বাঁচাও দাসীরে,  হে শ্রীপতি, এ মিনতি ও রাঙা চরণে!" 1!"

উত্তরিলা হাসি বিষ্ণু, "যাও নিজ স্থলে, বহুধে; সাধিব কার্য তোমার, সম্বরি দেববীর্য। না পারিবে রক্ষিতে লক্ষ্মণে দেবেন্দ্র, রাক্ষসদুঃখে দুঃখী উমাপতি।"

মহানন্দে বহুন্ধর। গেলা নিজ স্থলে। কহিলা গরুডে প্রভু, "উড়ি নভোদেশে, গরুত্মান, দেবতেজঃ হর আজি রণে, হরে অম্বুরাশি যথা তিমিরারি রবি; কিম্বা তুমি, বৈনতেয়, হরিলা যেমতি অমৃত। নিস্তেজ দেবে আমার আদেশে।" বিস্তারি বিশাল পক্ষ, উড়িলা আকাশে পক্ষিরাজ; মহাছায়া পড়িল ভূতলে,
আঁধারি অযুত বন, গিরি, নদ, নদী। যথা গৃহমাঝে বহ্নি জলিলে উত্তেজে, গবাক্ষ-দুয়ার-পথে বাহিরায় বেগে শিগাপুঞ্জ, বাহিরিল চারি দ্বার দিয়া রাক্ষস, নিনাদি রোষে; গঞ্জিলা চৌদিকে ; দেববৃন্দ পশিলা সমরে। আইলা মাতঙ্গবর ঐরাবত, মাতি রণরঙ্গে; পৃষ্ঠদেশে দম্ভোলিনিক্ষেপী সহস্রাক্ষ, দীপ্যমান মেরুশৃঙ্গ যথা রবিকরে, কিম্বা ভানু মধ্যাহ্নে; আইলা শিখিধ্বজ রথে রথী স্কন্দ তারকারি সেনানী; বিচিত্র রণে চিত্ররথ রথী; কিন্নর, গন্ধর্ব, যক্ষ বিবিধ বাহনে! আতঙ্কে শুনিলা লঙ্কা স্বর্গীয় বাজনা; কাঁপিল চমকি দেশ অমর-নিনাদে! সাষ্টাঙ্গে প্রণমি ইন্দ্রে কহিলা নুমণি,-

" দেবকুলদাস দাস, দেবকুলপতি! কত যে কি করিন্ত পুণ্য পূর্বজন্মে আমি, আর কহিব তার? তেই সে লভিমু পদাশ্রয় আজি তব এ বিপত্তি-কালে, বজ্রপাণি! তেঁই আজি চরণ-পরশে পবিত্রিলা ভূমণ্ডল ত্রিদিবনিবাসী?"

উত্তরিলা স্বরীশ্বর সম্ভাষি রাঘবে,- "দেবকুলপ্রিয় তুমি, রঘুকুলমণি! উঠি দেবরথে, রথি, নাশ বাহুবলে রাক্ষস অধর্মাচারী। নিজ কর্মদোষে মজে রক্ষঃকুলনিরি, কে রক্ষিবে তারে?

লভিনু অমৃত যথা মথি জলদলে, লণ্ডভত্তি লঙ্কা আজি, দণ্ডি নিশাচরে, সাধ্বী মৈখিলীরে, শূর, অর্পিবে তোমারে দেবকুল! কত কাল অতল সলিলে বনিবেন আর রমা, আঁধারি জগতে?"

বাজিল তুমুল রণ দেবরক্ষোনরে।
অম্বুরাশি সম কছু ঘোষিল চৌদিকে
অযুত, টঙ্কারি ধমুঃ ধনুর্ধর বলী

রোধিলা শ্রবণপথ! গগন ছাইয়া উড়িল কলম্বকুল, ইরম্মদতেজে ভেদি বর্ম, চর্ম, দেহ বহিল প্লাবনে শোণিত! পড়িল রক্ষোনরকুলরথী; পড়িল কুঞ্জরপুঞ্জ, নিকুঞ্জে যেমতি পত্র প্রভঞ্জনবলে; পড়িল নিনাদি বাজিরাজী; রাভূমি পূরিল ভৈরবে! আক্রমিলা সুরবৃন্দে চতুরঙ্গ বলে চামর-অমরত্রাস। চিত্ররথ রথী সৌরতেজঃ রখে শূর পশিলা সংগ্রামে, বারণারি সিংহ যথা হেরি সে বারণে। আহ্বানিল ভীম রবে সুগ্রীবে উদগ্র রথীশ্বর; রথচক্র ঘুরিল ঘর্ঘরে শতজলস্রোতোনাদে। চালাইলা বেগে বাঞ্চল মাতঙ্গযূখে, যূথনাথ যথা দুবার, হেরিয়া দূরে অঙ্গদে, রুষিলা যুবরাজ, রোষে যথা সিংহশিশু হেরি মৃগদলে! অসিলোমা, তীক্ষ্ণ অসি করে, বাজিরাজী সহ ক্রোধে বেড়িল শরভে বীরর্ষভ। বিড়ালাক্ষ (বিরূপাক্ষ যথা সর্বনাশী) হনু সহ আরম্ভিলা কোপে সংগ্রাম। পশিলা রণে দিব্য রথে রথী
রাঘব, দ্বিতীয়, আহা, স্বরীশ্বর যথা
বজ্রধর! শিখিধ্বজ স্বন্দ তারকারি,

সুন্দর লক্ষ্মণ শূরে দেখিলা বিস্ময়ে নিজপ্রতিমূর্তি মর্ত্যে। উড়িল চৌদিকে ঘনরূপে রেণুরাশি; টলটল টলে টলিলা কনক-লঙ্কা; গজিলা জলধি। সৃজিলা অপূর্ব ব্যূহ শচীকান্ত বলী। বাহিরিলা রক্ষোরাজ পুষ্পক-আরোহী;

ঘর্গরিল রথচক্র নির্ঘোষে, উগরি বিস্ফুলিঙ্গ; তুরঙ্গম হেবিল উল্লাসে। রতনসম্ভবা বিভা, নয়ন ধাঁধিয়া, ধায় অগ্রে, ঊষা যথা, একচক্র রথে উদেন আদিত্য যবে উদয়-অচলে! নাদিল গম্ভীরে রক্ষঃ হেরি রক্ষোনাথে।

সম্ভাষি সারবিবরে, কহিলা সুরথী,- "নাহি যুঝে নর আজি, হে স্বত, একাকী, দেশ চেয়ে! ধূমপুরে অগ্নিরাশি যথা, শোভে অগুরারিদল রঘুসৈন্ত মাঝে। আইলা লঙ্কায় ইন্দ্র শুনি হত রণে ইন্দ্রজিৎ!" স্মরি পুত্রে রক্ষঃকুলনিধি, সরোষে গর্জিয়া রাজা কহিলা গভীরে; "চালাও, হে মৃত, রথ যথা বজ্রপানি বাসব।" চলিল রথ মনোরথগতি। পালাইল রঘুসৈন্য, পালায় যেমনি মদকল করিরাজে হেরি, উর্ধ্বশ্বাসে বনবাসী! কিম্বা যথা ভীমারুতি ঘন, বজ্র-অগ্নিপূর্ণ, যবে উড়ে বায়ুপথে ঘোর নাদে, পশুপক্ষী পালায় চৌদিকে আতঙ্কে। টঙ্কারি ধনুঃ, তীক্ষ্ণতর শরে

মুহূর্তে ভেদিলা ব্যূহ বীরেন্দ্র-কেশরী, সহজে প্লাবন যথা ভাঙে ভীমাঘাতে বালিবন্ধ! কিম্বা যথা ব্যাঘ্র নিশাকালে গোষ্ঠবৃতি! অগ্রসরি শিখিধ্বজ রথে, শিক্মিনী আকর্ষি রোষে তারকারি বলী বোধিলা সে রথগতি। ক্বতাঞ্জলিপুটে নমি শূরে লঙ্কেশ্বর কহিলা গম্ভীরে,- "শঙ্করী শঙ্করে, দেব, পূজে দিবানিশি কিঙ্কর! লঙ্কায় তবে বৈরিদল মাঝে কেন আজি হেরি তোমা? নরাধম রামে হেন আনুকূল্য দান কর কি কারণে, কুমার? রথীন্দ্র তুমি; অন্যায় সমরে মারিল নন্দনে মোর লক্ষ্মণ; মারিব কপটসমরী মূঢ়ে; দেহ পথ ছাড়ি!"

কহিলা পার্বতীপুত্র, "রক্ষিব লক্ষ্মণে, রক্ষোরাজ, আজি আমি দেবরাজাদেশে। বাহুবলে, বাহুবল, বিমুখ আমারে, নতুবা এ মনোরথ নারিবে পূর্ণিতে!"

সরোষে, তেজস্বী আজি মহারুদ্রতেজে, হুঙ্কারি হানিল অস্ত্র রক্ষঃকুলনিধি অগ্নিসম, শরজালে কাতরিয়া রণে  শক্তিধরে! বিজয়ারে সম্ভাষি অভয়া কহিলা, “দেখ লো, সখি, চাহি লঙ্কা পানে, তীক্ষ্ণ শরে রক্ষেশ্বর বিধিছে কুমারে নির্দয়! আকাশে দেখ, পক্ষীন্দ্র হরিছে- দেবতেজঃ; যালো তুই সৌদামিনীগতি, নিবার কুমারে, সই। বিদরিছে হিয়া আমার, লো সহচরি, হেরি রক্তধার। বাছার কোমল দেহে। ভকত-বৎসল সদানন্দ; পুত্রাধিক স্নেহেন ভকতে;

তেঁই সে রাবণ এবে দুর্বার সমরে, স্বজনি!" চলিলা আশু সৌরকররূপে নীলাম্বরপথে দূতী। সম্বোধি কুমারে বিধুমুখী, কর্ণমূলে কহিলা-"সম্বর অস্ত্র তব, শক্তিধর, শক্তির আদেশে। মহারুদ্রতেজে আজি পূর্ণ লঙ্কাপতি!" ফিরাইলা রথ হাসি স্কন্দ তারকারি মহাস্বর। সিংহনাদে কটক কাটিয়া অসঙ্খ্য, রাক্ষসনাথ ধাইলা সহরে ঐরাবত-পৃষ্ঠে যথ। দেব বজ্রপাণি।

বেড়িল গন্ধর্ব নর শত প্রসরণে রক্ষেন্দ্রে; হুঙ্কারি শূর নিরস্তিলা সবে নিমিষে, কালারি যথা ভম্মে বনরাজী। পালাইলা বীরদল জলাঞ্জলি দিয়া লজ্জায়! আইলা রোগে দৈত্যকুল-অরি, হেরি পার্থে কর্ণ যথা কুরুক্ষেত্ররণে। ভীষণ তোমর রক্ষঃ হানিল। হুঙ্কারি

ঐরাবতশিরঃ লক্ষি। অর্ধপথে তাহে শর বৃষ্টি স্বরীগর কাটিলা সত্বরে। কহিলা কবু'রপতি গর্বে সুরনাথে;- "যার ভয়ে বৈজয়স্তে, শচীকান্ত বলি, চির কম্পবান্ তুমি, হত সে রাবণি, তোমার কৌশলে, আজি কপট সংগ্রামে! তেঁই বুঝি আসিয়াছ লঙ্কাপুরে তুমি, নির্লজ্জ! অবধ্য তুমি, অমর; নহিলে দমনে শমন যথা, দমিতাম তোমা মুহূর্তে! নারিবে তুমি রক্ষিতে লক্ষ্মণে, এ মম প্রতিজ্ঞা, দেব!" ভীম গদা ধরি, লম্ফ দিয়া রথীশ্বর পড়িলা ভূতলে,সঘনে কাঁপিলা মহী পদযুগভরে, উরুদেশে কোষে অসি বাজিল ঝনঝনি!

হুঙ্কারি কুলিশী রোষে ধরিলা কুলিশে! অমনি হরিল তেজঃ গরুড়; নারিলা লাড়িতে দম্ভোলি দেব দম্ভোলিনিক্ষেপী! প্রহারিলা ভীম গদা গজরাজশিরে রক্ষোরাজ, প্রভঞ্জন যেমতি, উপাড়ি অভ্রভেদী মহীরুহ, হানে গিরিশিরে ঝড়ে! ভীমাঘাতে হস্তী নিরন্ত, পড়িল। হাটু গাড়ি। হাসি রক্ষঃ উঠিলা স্বরথে। যোগাইলা মুহুর্তেকে মাতলি সারথি স্বরণ; ছাড়িলা পথ দিতিস্থতরিপু অভিমানে। হাতে দন্তঃ, ঘোর সিংহনাদে দিব্য রথে দাশরখি পশিল। সংগ্রামে।

কহিলা রাক্ষসপতি; "না চাহি তোমারে আঙ্গি, হে বৈদেহীনাথ। এ ভবমগুলে আর এক দিন তুমি জীব নিরাপদে! কোথা সে অনুজ তব কপটসমন্ত্রী পামর? মারিব তারে; যাও ফিরি তুমি শিবিরে, রাঘবশ্রেষ্ঠ!" নাদিলা ভৈরবে মহেষাস, দূরে শুর হেরি রামানুজে। বৃষপালে সিংহ যথা, নাশিছে রাক্ষসে শূরেন্দ্র! কভু বা রথে, কভু বা ভূতলে।

চলিল পুষ্পক বেগে ঘর্ঘরি নির্ঘোষে; অগ্নিচক্র-সম চক্র বধিল চৌদিকে অগ্নিরাশি; ধূমকেতু-সদৃশ শোভিল রখচূড়ে রাজকেতু! যথ। হেরি দূরে কপোত, বিস্তারি পাখা, ধায় বাজপতি অম্বরে; চলিলা রক্ষঃ, হেরি রণভূমে
পুত্রহা সৌমিত্রি শূরে; ধাইলা চৌদিকে হুহুঙ্কারে দেব নর রক্ষিতে শূরেশে। ধাইল রাক্ষসবৃন্দ হেরি রক্ষোনাথে। বিড়ালাক্ষ রক্ষঃশূরে বিমুখি সংগ্রামে,

আইলা অঞ্জনাপুত্র,-প্রভঞ্জনসম ভীমপরাক্রম হন, গঞ্জি ভীম নাদে। যথ। প্রভঞ্জনবলে উড়ে তুলারাশি

চৌদিকে, রাক্ষসবৃন্দ পালাইলা রড়ে হেরি যমাকৃতি বীরে। রুষি লঙ্কাপতি চোক্ চোক্ শরে শূর অস্থিরিলা শূরে। অধীর হইলা হন, ভূধর যেমতি ভূকম্পনে! পিতৃপদ স্মরিল। বিপদে বীরেন্দ্র, আনন্দে বায়ু নিজ বল দিলা নন্দনে, মিহির যথা নিজ করদানে ভূষেন কুমুদ্রবাঞ্ছা সুধাংশুনিধিরে। কিন্তু মহারুদ্রতেজে তেজস্বী স্বরণী নৈকষেয়, নিবারিলা পবনতনয়ে;- ভঙ্গ দিয়া রণরঙ্গে পালাইলা হন।

আইলা কিষ্কিন্ধ্যাপতি, বিনাশি সংগ্রামে উদগ্রে বিগ্রহপ্রিয়। হাসিয়া কহিলা লঙ্কানাথ,-"রাজ্যভোগ ত্যজি কি কুক্ষণে, বর্বর, আইলি তুই এ কনকপুরে? ভ্রাতৃবধূ তারা তোর তারাকারা রূপে; তারে ছাড়ি কেন হেথা রথিকুল মাঝে তুই, রে কিষ্কিন্ধ্যানাথ? ছাড়িহু, যা চলি স্বদেশে! বিধবাদশা কেন ঘটাইবি আবার তাহার, মৃঢ়? দেবর কে আছে আর তার ?" ভীম রবে উত্তরিলা বলী

স্বগ্রীব,-"অধর্মাচারী কে আছে জগতে তোর সম রক্ষোরাজ? পরদারালোভে। সবংশে মজিলি, দুষ্ট! রক্ষঃকুলকালি তুই, রক্ষঃ! মৃত্যু তোর আজি মোর হাতে। উদ্ধারিব মিত্রবধূ বধি আজি তোবে!"

এতেক কহিয়া বলী গর্জি নিক্ষেপিলা গিরিশৃঙ্গ। অনম্বর আঁধারি ধাইল শিখর; সুতীক্ষ্ণ শরে কাটিলা সুরথী রক্ষোরাজ, খান খান করি সে শিখরে। টঙ্কারি কোদণ্ড পুনঃ রক্ষঃ-চূড়ামণি তীক্ষ্ণতম শরে শূর বিধিলা সুগ্রীবে হুঙ্কারে! বিঘ্নাঘাতে ব্যথিত সুমতি, পালাইলা; পালাইলা সত্রাসে চৌদিকে রঘুসৈন্য, (জল যথা জাঙাল ভাঙিলে কোলাহলে), দেবদল, তেজোহীন এবে, পালাইলা নর সহ, ধূম সহ যথা যায় উড়ি অগ্নিকণা বহিলে প্রবলে পবন! সম্মুখে রক্ষঃ হেরিলা লক্ষ্মণে দেবাক্বতি! বীরমদে দুর্মদ সমরে রাবণ, নাদিলা বলী হুহুঙ্কার রবে; - নাদিলা সৌমিত্রি শূর নির্ভয় হৃদয়ে, নাদে যথা মত্ত করী মত্তকরিনাদে! দেবদত্ত ধমুঃ ধন্বী টঙ্কারিলা রোষে। "এত ক্ষণে রে লক্ষ্মণ", - কহিলা সরোষে রাবণ, "এ রণক্ষেত্রে পাইমু কি তোরে,  নরাধম? কোথা এবে দেব বজ্রপাণি?

শিখিধ্বজ শক্তিধর? রঘুকুলপতি, ভ্রাতা তোর? কোথা রাজা সুগ্রীব?কে তোরে রক্ষিবে পামর, আজি? এ আসন্ন কালে সুমিত্রা জননী তোর, কলত্র উর্মিলা,
ভাব, দোঁহে। মাংস তোর মাংসাহারী জীবে দিব এবে; রক্তস্রোতঃ শুধিবে ধরণী! কুক্ষণে সাগর পার হইলি, দুর্মতি, পশিলি রাক্ষসালয়ে চোরবেশ ধরি, হরিলি রাক্ষসরত্ব-অমূল জগতে!"

গঞ্জিলা ভৈরবে রাজা বসাইয়া চাপে অগ্নিশিখাসম শর; ভীম সিংহনাদে উত্তরিলা ভীমনাদী সৌমিত্রি কেশরী,- "ক্ষত্রকুলে জন্ম মম, রক্ষঃকুলপতি, নাহি ডরি যমে আমি: কেন ডরাইব তোমায়? আকুল তুমি পুত্রশোকে আজি, যথা সাধ্য কর, রথি; আশু নিবারিব শোক তব, প্রেরি তোমা পুত্রবর যথা!

বাজিল তুমূল রণ; চাহিলা বিস্ময়ে দেব নর দোঁহা পানে; কাটিলা সৌমিত্রি শরজাল মুহুমু হুঃ হুহুঙ্কার রবে! সবিস্ময়ে রক্ষোরাজ কহিলা, "বাথানি বীরপণা তোর আমি, সৌমিত্রি কেশরি! শক্তিধরাধিক শক্তি ধরিস্ স্থরথি, তুই; কিন্তু নাহি রক্ষা আজি মোর হাতে!"

স্মরি পুত্রবরে শূর, হানিলা সরোষে মহাশক্তি! বজ্রনাদে উঠিল গজিয়া, উজ্জলি অম্বরদেশ সৌদামিনীরূপে, ভীষণরিপুনাশিনী! কাঁপিলা সভয়ে দেব, নর! ভীমাঘাতে পড়িল ভূতলে লক্ষ্মণ, নক্ষত্র যথা; বাজিল ঝন্মনি দেব-অস্ত্র, রক্তস্রোতে আভাহীন এবে। সপন্নগ গিরিসম পড়িলা সুমতি। গহন কাননে যথা বিধি মৃগবরে
কিরাত অব্যর্থ শরে, ধায় দ্রুতগতি তার পানে, রথ ত্যজি রক্ষোরাজ বলী ধাইলা ধরিতে শবে! উঠিল চৌদিকে আর্তনাদ! হাহাকারে দেবনররথী বেড়িলা সৌমিত্রি শূরে। কৈলাসসদনে শঙ্করের পদতলে কহিলা শঙ্করী, "মারিল লক্ষ্মণে, প্রভু, রক্ষঃকুলপতি সংগ্রামে! ধূলায় পড়ি যায় গড়াগড়ি সুমিত্রানন্দন এবে! তুষিলা রাক্ষসে, ভকত-বংসল তুমি; লাঘবিলা রণে বাসবের বীরগর্ব; কিন্তু ভিক্ষা করি, বিরূপাক্ষ, রক্ষ, নাথ, লক্ষ্মণের দেহে!"

হাসিয়া কহিলা শূলী বীরভদ্র শূরে- "নিবার লঙ্কেশে, বীর!" মনোরথ-গতি, রাবণের কর্ণমূলে কহিলা গম্ভীরে
বীরভদ্র; "যাও ফিরি স্বর্ণলঙ্কাধামে, রক্ষোরাজ! হত রিপু, কি কাজ সমরে?"

স্বপ্নসম দেবদূত অদৃশ্য হইলা। সিংহনাদে শুবসিংহ আরোহিলা রথে; বাজিল রাক্ষস-বাদ্য, নাদিল গম্ভীরে রাক্ষস; পশিলা পুরে রক্ষঃ-অনীকিনী- রণবিজয়িনী ভীমা, চামুণ্ডা যেমতি রক্তবীজে নাশি দেবী, তাগুবি উল্লাসে, অট্টহাসি রক্তাধরে, ফিরিলা নিনাদি, রক্তস্রোতে আর্দ্রদেহ! দেবদল মিলি স্তুতিলা সতীরে যথা, আনন্দে বন্দিলা বন্দিবৃন্দ রক্ষঃসেনা বিজয়সংগীতে!

হেথা পরাভূত যুদ্ধে মহা-অভিমানে সুরদলে সুরপতি গেলা সুরপুরে।

ইতি মেঘনাদবদে কাব্যে শক্তিনির্ভেদো নাম
সপ্তমঃ সর্গঃ।

More Books by মাইকেল মধুসূদন দত্ত

30
Articles
মেঘনাদবধ কাব্য
0.0
মেঘনাদবধ কাব্য ১৯-শতকীয় বাঙালি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত কর্তৃক রচিত মহাকাব্য।[১] 'মেঘনাদবধ কাব্য' মধুসূদনের অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখা দ্বিতীয় কাব্য । কাব্যটি কবির সর্বশ্রেষ্ঠ কবিকীর্তি। এই অমর মহাকাব্য প্রকাশের সঙ্গে আমরা কবির প্রতিভার পূর্ণ বিকাশকালে উপস্থিত হয়। [২] ১৮৬১ সালে কাব্যটির দুইখণ্ডে প্রকাশ হয় । প্রথম খণ্ড(১–৫ সর্গ) ১৮৬১ সালের জানুয়ারী মাসে, এবং দ্বিতীয় খণ্ড (৬—৯ সর্গ) ঐ বৎসরের প্রথমার্ধে প্রকাশিত হয়। কাব্যটি মোট নয়টি সর্গে বিভক্ত। মেঘনাদবধ কাব্য হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণ অবলম্বনে রচিত[৩], যদিও এর মধ্যে নানা বিদেশী মহাকাব্যের ছাপও সুস্পষ্ট।
1

ভূমিকা মহাকাব্যের প্রকৃতি

14 December 2023
1
0
0

ইহাতে নাটকের সমস্ত সন্ধিগুলি থাকিবে, কাহিনীটি ঐতিহাসিক ঘটনা হইতে উন্নত হইবে অথব। কোন সজ্জনকে আশ্রয করিবে। ইহার ফল হইবে চতুর্বর্গপ্রাপ্তি অথবা চতুর্বর্গের যে কোন একটিও হইতে পারে। আরম্ভে নমস্কার, আশীর্ব

2

বিস্তৃতিবোধ-বিশাল রস

14 December 2023
0
0
0

আমাদের দেশের অলঙ্কারশাস্ত্র মানবহৃদয়ের প্রবৃত্তিগুলিকে প্রধানতঃ আট বা নয়টি স্থায়ীভাবে বিভক্ত করিযা আট বা নয়টি রসের পরিকল্পনা করিয়াছে। এইরূপ সাহিত্যবিচারের কতকগুলি অসুবিধা আছে। যদি স্থায়ী ভাবগুলিকে বাঁ

3

মেঘনাদবধ কাব্যে'র বৈশিষ্ট্য-পরিকল্পনা

14 December 2023
0
0
0

কিন্তু বিষয়টি গভীরভাবে বিচার করিলে মাইকেলের এই বিক্বতি সাহিত্যের দিক্ দিয়া তেমন দোষাবহ নাও হইতে পারে। সমস্ত প্রাচীন কাহিনীই কালক্রমে বিবর্তনের মধ্য দিয়া গড়িয়া উঠে এবং তাহাদের অল্পবিস্তর পরিবর্তন হইয়া

4

মেঘনাদবধ কাব্য

14 December 2023
0
0
0

হায়, নাথ, নিজ কর্মফলে মজালে রাক্ষসকুলে, মজিলে আপনি। রাবণের শক্তির মূলে ছিল দেবশ্রেষ্ঠ মহেশ্বরের রূপা। তাই স্বয়ং উমা যখন মহেশ্বরকে বশীভূত করিতে গেলেন তখন তিনি কন্দর্পের সাহায্য গ্রহণ করিলেন যাহাতে তপ

5

চরিত্রসৃষ্টি-দেবদেবী

14 December 2023
0
0
0

শুধু মৌলিক পরিকল্পনায় নহে, চরিত্রস্বষ্টিতেও 'মেঘনাদবধ কাব্য' মহাকাব্যের লক্ষণাক্রান্ত। প্রথমেই দেবদেবীদের কথা ধরা যাইতে পারে। ইলিয়াডে দেবদেবীগণ মানব-মানবীর স্থায়। মানব-মানবীর সব দোষগুণই তাঁহাদের আছে,

6

রাম-লক্ষ্মণ-রাবণ-মেঘনাদ

14 December 2023
0
0
0

এই পরিপ্রেক্ষিতে রাম ও লক্ষ্মণের এবং তাঁহাদের সহযোগীদের চরিত্র বিচার করিতে হইবে। 'মেঘনাদবধ কাব্যে'র রাম ও লক্ষ্মণ মাইকেলের প্রতিভার অপূর্ণতার পরিচায়ক এইরূপ মত বহু লোকে প্রকাশ করিয়াছেন এবং এই মন্তের আং

7

প্রমীলা

15 December 2023
0
0
0

মেঘনাদের জীবনের এশ্বব ও মৃতার মহিমা সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করিবাব জন্য কৰি প্রমীলার চরিত্রের অবতারণা করিযাহেন , মেঘনাদ শুধু বাসববিলধী বীব নহেন, তিনি যোগ্য পিতামাতার ঘোগ্য পুন্র? তছুপরি তিনি বীধবতী সাধ্বী

8

সীতা

15 December 2023
0
0
0

মেঘনাদ ও প্রমীলার দ্রাম্পত্যজীবনের যে চিত্র এই গ্রন্থে দেওয়া! হইয়াছে তাহা মাইকেলের পরিকল্পনার স্বকীয়তা প্রমাণ করে। ইহা! পরোক্ষভাবে গ্রন্থের মৌলিক পরিকল্পনার উপরেও আলোকসম্পাত করে । মেঘনাদ ও প্রমীলার

9

মেঘনাদবধ কাব্যের ভাব

15 December 2023
0
0
0

“মেধনাদবধ কাব্যের মহাকাঁব্যোচিত পরিকল্পনা ও চওিত্রস্্টির মহিমার উল্লেখের পর উহার বর্ণনার গজন্বিতার কথা বলা প্রয়োজন | . ভাঘ। ভাব্রেই বহন মাত্র এবং ভাষা ছড়া কপির ভ।ব৪ অভিব্যক্ত হইতে পালে ন।। মাইকেলের

10

উপমা

15 December 2023
0
0
0

মহাদেবের যে বর্ণনা উল্লিখিত হইয়াছে তাহার উপমা-সমৃদ্ধি লক্ষণীয় । হোমারের অন্ততম প্রধান গুণ উপমার বৈশিষ্ট্য । হোমার অধিকাংশ বিষয়কে উপমাঁর সাহায্যে বর্ণনা করিয়ীছেন। সাধারণতঃ তাহার উপমাগুলি উপমান ও উপ

11

বর্ণনা

15 December 2023
0
0
0

'মেঘনাদবধ কাব্যে বহু স্দীর্ঘ বর্ণনা আছে এবং সেই সব বর্ণনার বৈচিত্র্য ও মাধুর্য মাইকেলের প্রতিভার স্বকীয়তার সাক্ষ্য দেয়। এই প্রতিভার বৈশিষ্ট্য-_এশ্বর্বোধ। কাব্যের প্রারন্তেই দেখি রাবণ এক অপূর্ব সভায়

12

দোষ

15 December 2023
1
0
0

বহগুণসম্বন্বিত হইলেও মেঘনাদবধ কাব্য ক্রটিশূন্ত নহে এবং সেই প্রসঙ্গের আলোচনা! আবশ্যক । প্রথমেই বল যাইতে পারে যে এই গ্রন্থের পরিধি অতিশয় সঙ্কীর্ণ। সপ্তকাণ্ড রামায়ণের একটি কাণ্ডের একটি খণ্ডাংশ লইয়া ইহ

13

অমিত্রচ্ছন্দ

18 December 2023
1
0
0

মীইকেল মধুস্ছদনের অন্যতম প্রধান কীতি বঙ্গলাহিতো অমিত্রাক্ষরের প্রবর্তন; বাংলার প্রচলিত ছন্দ ছিল পয়ার, তাহ] মিত্রন্ন্দ অর্থাৎ তাহার মধো অন্ত অক্ষরের মিল আছে। তাহার আর একটি লক্ষণ এই যে তাঁহার মধ্যে প্র

14

মেঘনাদবধ কাব্য- দ্বিতীয় সর্গ

19 December 2023
0
0
0

অস্তে গেলা দিনমণি; আইলা গোধূলি, একটি রতন ভালে। ফুটিলা কুমুদী। মুদিল। সরসে আঁখি বিরসবদনা নলিনী; কৃজনি পাথী পশিল কুলায়ে; গোষ্ঠ-গৃহে গাভী-বৃন্দ ধাব হঙ্গা রবে। আইলা শুচারু-তারা শশী সহ হাসি, শর্বরী, সুগন্ধ

15

মেঘনাদবধ কাব্য- তৃতীয় সর্গ

19 December 2023
1
0
0

প্রমোদ-উদ্যানে কাঁদে দানব-নন্দিনী প্রমীলা, পতি-বিরহে কাতরা যুবতী। অশ্রুজপি বিধুমুখী ভ্রমে ফুলবনে কহু, ব্রজ-কুঞ্জ-বনে, হায় রে, যেমনি ব্রজবালা, নাহি হেরি কদম্বের মূলে পীতধড়া পীতাম্বরে, অধরে মুরলী। কহু ব

16

মেঘনাদবধ কাব্য- চতুর্থ সর্গ

20 December 2023
1
0
0

নমি আমি, কবি-গুরু, তব পদাম্বুজে, বাল্মীকি! হে ভারতের শিরঃচূড়ামণি, তব অনুগামী দাস, রাজেন্দ্র-সঙ্গমে দীন যথা যায় দূর তীর্থ-দরশনে তব পদ-চিহ্ন ধ্যান করি দিবা নিশি, পশিয়াছে কত যাত্রী যশের মন্দিরে, দমনিয়া ভ

17

মেঘনাদবধ কাব্য -প্রথম সর্গ

19 December 2023
0
0
0

উড়িল কলম্বকুল অম্বর প্রদেশে শনশনে!বল্প শিক্ষা বীর বীরবাহ! কত যে মরিল অরি, কে পারে গণিতে? এইরূপে শত্রুমাকে বুঝিলা স্বদলে পুত্র তব, হে রাজন! কতক্ষণ পরে, প্রবেশিলা যুদ্ধে আসি নরেন্দ্র রাঘব। কনক-মুকুট

18

মেঘনাদবধ কাব্য- পঞ্চম সর্গ

21 December 2023
0
0
0

হাসে নিশি তারাময়ী ত্রিদশ-আলয়ে।। দাসীর সাধনে সাধ্বী কহিলা, সুসিদ্ধ কিন্তু চিন্তাকুল এবে বৈজয়ন্ত-ধামে মহেন্দ্র; কুরুম-শয্যা তাজি, মৌন-ভাবে বসেন ত্রিদিব-পতি রত্ন-সিংহাসনে;- সুবর্ণ-মন্দিরে স্বপ্ত আর দেব য

19

মেঘনাদবধ কাব্য- ষষ্ঠ সর্গ

21 December 2023
0
0
0

ত্যজি সে উদ্যান, বলী সৌমিত্রি কেশরী কুঞ্জবনবিহারিণী; ক্বতাঞ্জলি-পুটে চলিলা, শিবিরে যথা বিরাজেন প্রভু রঘু-রাজ; অতি দ্রুতে চলিলা সুমতি, হেরি মৃগরাজে বনে, ধায় ব্যাধ যথা অস্ত্রালয়ে, বাছি বাছি লইতে সত্বরে

20

মেঘনাদবধ কাব্য- সপ্তম সর্গ

22 December 2023
0
0
0

উদিলা আদিত্য এবে উদয়-অচলে, পদ্মপর্ণে স্বপ্ত দেব পদ্মযোনি যেন, উন্মীলি নয়নপদ্ম স্বপ্রসন্ন ভাবে, চাহিলা মহীর পানে! উল্লাসে হাসিলা কুহুমকুন্তলা মহী, মুক্তামালা গলে। উৎসবে মঙ্গলবাদ্য উথলে যেমতি দেবালয়ে, উ

21

মেঘনাদবধ কাব্য-অষ্টম সর্গ

23 December 2023
0
0
0

রাজকাজ সাধি যথা, বিরাম-মন্দিরে, প্রবেশি, রাজেন্দ্র খুলি রাখেন যতনে কিরীট; রাখিলা খুলি অস্তাচলচুড়ে দিনান্তে শিরের রত্ন তমোহ। মিহিরে দিনদেব; তারাদলে আইল। রজনী; আইলা রজনীকান্ত শান্ত সুধানিধি। শত শত অগ

22

বিশদ টীকা-টিপ্পনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যাদি (প্রথম সর্গ)

25 December 2023
0
0
0

বিষয়-সংক্ষেপ:- প্রাচীন বঙ্গীয় কবিগণ নানা দেবদেবীর বন্দনা ও মঙ্গলাচরণ করিয়া যেভাবে কাব্যের সূচনা করিতেন, তাহা না করিয়া মধুসুদন যুরোপীয় কবিগণের অনুকরণে বীণাপাণির এবং কল্পনার আবাহন (invocation) করিয়া

23

বিশদ টীকা-টিপ্পনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যাদি (দ্বিতীয় সর্গ)

25 December 2023
1
0
0

বিষয়-সংক্ষেপ:-বীরবাহুর মৃত্যুর পর মেঘনাদ রাবণের সেনাপতিপদে বৃত হইলে দিবাবসান হইল এবং রাত্রি আসিল। স্বর্গেও রাত্রির আবির্ভাব হইল। ইন্দ্র শচীসহ দেবসভায় স্বর্গসুখ উপভোগ করিতেছেন, এমন সময়ে সেখানে লক্ষ্মীদ

24

বিশদ টীকা-টিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাধ্যাদি (তৃতীয় সর্গ)

27 December 2023
0
0
0

মেঘনাদবধ-কাব্যের দ্বিতীয় সর্গোক্ত ঘটনার ম্যায় তৃতীয় সর্গোক্ত ঘটনাও সম্পূর্ণরূপে বামায়ণ-বহিভূত। প্রথম দর্গের শেষ ভাগে লঙ্কাপুরীর বহির্দেশে প্রমোদোগ্ভানে মেঘনাদের ব্যসনমত্তভাবে অবস্থ।নের কথা বলা হইয

25

বিশদ টীকাটিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যা (চতুর্থ সর্গ)

27 December 2023
0
0
0

মেঘনাদরবধ কাব্যের চতুর্থ সর্গে অশোকবনে অবরুদ্ধা সীতার সহিত সরমার' কথোপকথন-গ্রসঙ্গে সরমার নিকট সীতার পূর্বজীবনের ঘটনাবলী বিবৃত হইয়াছে ।, এই সকল ঘটন! অল্পবিস্তর রামায়ণান্থগত হইতে বাধ্য বলিয়া, সমগ্র ম

26

বিশদ টীকাটিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যাদি (পঞ্চম সর্গ)

27 December 2023
1
0
0

দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ সর্গোক্ত ঘটনাবলীর সহিত পঞ্চম সর্গোক্ত ঘটনাও বীরবাহুর মৃত্যুদিবসের রাত্রিকালে সংঘটিত হইয়াছে । এই সর্গে প্রধান বর্ণনীয় বিষয়,_মেঘনাদবধে চণ্তীদেবীর সাহাধ্য-প্রাপ্তির উদ্দেশে ল

27

বিশদ টীকা টিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাথ্যাদি (ষষ্ঠ সর্গ)

27 December 2023
1
0
0

ষষ্ঠ সর্গের মূল ঘটনা" লক্ষ্মণকতৃকি মেঘনাদবধ-_বামায়ণ হইতে গৃহীত। স্থৃতরাং ছিতীয় তৃতীয় ও পঞ্চম সর্গোক্ত ঘটনাবলীর ন্যায় ইহাঁকে রামায়ণবহিভূতি ঘটনা বলা চলে না। কিন্তু ঘটনাটি যে ভাবে নিষ্পন্ন হইয়াছে

28

বিশদ টীকা-টিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাথ্যাদি (সপ্তম সর্গ)

28 December 2023
1
0
0

সপ্তম সর্গে বধিত মূল ঘটনাটি হইতেছে,_মেঘনাদের মৃত্যুসংবাদ শ্রবণে রাবণের' ক্রোধ, এবং প্রতিহিংমাপরায়ণ রাবণের সহিত যুদ্ধে শক্তিশেলাহত হইয়া! লক্ষণের পতন। এই মূল ঘটনাটি রামায়ণ হইতে গৃহীত। কিন্তু রাঁবণের

29

বিশদ টীকা টিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যা (অষ্টম সর্গ)

28 December 2023
1
0
0

মেঘনাদবধ কাব্যের ২য়, ৩য় ও ৫ম সর্গে বগিত বিষয়সমূহের ন্ায় ৮ম সর্গে বধিত বিষয়ের সহিতও রাযায়ণের কোন সম্বন্ধ নাই। বাল্সীকির রামায়ণে উল্লিখিত হয়াছে, শক্তিশেলাহত লম্্মরণের জন্য রামচন্দ্র বিলাপ করিতে

30

বিশদ টীকা-টিগ্ননী ও ছুরহ অংশের ব্যাখ্যাদি- (নবম সর্গ)

29 December 2023
2
0
0

দৈববলে ঘে লকল কার্য সাধন করিয়াছে, তাহাতে তাহার পক্ষে অসাধ্য কোন কাধই নাই। মন্ত্রী সারণ বিনীতভাবে নিবেদন করিলেন যে, দেবানুগ্রহে ওষধি-পর্বত গন্ধমাদন স্বয়ং লঙ্কায় আসিয়। ওধধদানে লক্ষ্মণের দেহে গ্রাণসঞ

---