shabd-logo

মেঘনাদবধ কাব্য -প্রথম সর্গ

19 December 2023

104 Viewed 104

উড়িল কলম্বকুল অম্বর প্রদেশে শনশনে!বল্প শিক্ষা বীর বীরবাহ! কত যে মরিল অরি, কে পারে গণিতে?

এইরূপে শত্রুমাকে বুঝিলা স্বদলে পুত্র তব, হে রাজন! কতক্ষণ পরে, প্রবেশিলা যুদ্ধে আসি নরেন্দ্র রাঘব। কনক-মুকুট শিরে, করে ভীম ধহঃ, বাসবের চাপ যথা বিবিধ রতনে খচিত,"-এতেক কহি, নীরবে কাদিল ভগ্নদূত, কাঁদে যথা বিলাপী, মরিয়া পূর্বছঃখ! সভাজন কাঁদিলা নীরবে।

অশ্রুময়-আধি পুনঃ কহিল। রাবণ, মন্দোদরীমনোহর:-"কহ, রে সন্দেশ- বহু, কহ, শুনি আমি, কেমনে নাশিলা দশাননাত্ম।" দূরে দশরথাত্মজ?"

"কেমনে, হে মহীপতি," পুনঃ আরম্ভিল ভগ্নদূত, "কেমনে, হে রক্ষঃকুলনিবি, কহিব সে কথা আমি, শুনিবে বা তুমি? অগ্নিময় চক্ষুঃ যথা হর্বক্ষ, সরোষে কড়মড়ি ভীম দন্ত, পড়ে লক্ষ দিয়া কৃষঙ্কন্ধে, রামচন্দ্র আক্রমিলা রণে কুমারে! চৌদিকে এবে সমর-তরঙ্গ উথলিল, সিন্ধু যথা দ্বন্দ্বি বাহু সহ নির্দোষে! ভাতিল অসি অগ্নিশিখাসম

ধূমপুত্রসম চর্মাবলীর মাঝারে অযুত! নাদিল কন্তু অধুরাশি-রবে!- আর কি কহিব, দেব? পূর্বজন্মদোযে, একাকী রাঁচিহ্ন আমি! হায় রে বিধাতঃ, ক্লি-রাপে এ তাপ আজি দিলি তুই মোরে? কেন না শুইন্ন আমিশরশয্যোপরি, হৈমলঙ্কা-অলঙ্কার বীরবাহ সহ রণভূমে? কিন্তু নহি নিজ দোষে দোষী। ক্ষত বক্ষঃস্থল মম, দেখ, নৃপমণি,

রিপু-প্রহরণে, পৃষ্ঠে নাহি অস্ত্রলেখা।" এতেক কহিয়া স্তব্ধ হইল রাক্ষস মনস্তাপে। লঙ্কাপতি হরষে বিষাদে কহিলা; "সাবাসি, দূত! তোর কথা শুনি, কোন্ ধীর-হিয়া নাহি চাহে রে পশিতে সংগ্রামে? ডমরুধ্বনি গুনি কাল ফণী, কভু কি অলসভাবে নিবাসে বিবরে?  ধন্ত লঙ্কা, বীরপুত্রধারী! চল, সবে,- চল যাই, দেসি, ওহে সভাসব জন, কেমনে পড়েছে রণে বীর-চুভামণি

বীরবাহু, চল, দেখি জুড়াই নয়নে। উঠিলা রাক্ষসপতি প্রাসাদ-শিখরে, কনক-উদয়াচলে দিনমণি যেন

অংশুমালী। চারি দিকে শোভিল কাঞ্চন- সৌধ-কিরীটিনী লঙ্কা-মনোহরা পুরী!- হেমহা সারি সারি পুষ্পবন মাঝে; কমল-আলয় সরঃ, উৎস রজঃ-ছটা; তরুরাজী; ফুলকুল-চক্ষুঃ বিনোদন, যুবতীযৌবন যথা। হীরাচূড়াশিরঃ দেবগৃহ। নানা রাগে রঞ্জিত বিপণি, বিবিধ রতন-পূর্ণ। এ জগৎ যেন আনিয়া বিবিধ ধন, পূজার বিধানে, রেখেছে, রে চারুলস্কে, তোর পদতলে,
জগত-বাসনা তুই, স্বথেয় সদন।

দেখিলা রাক্ষসেম্বর উন্নত প্রাচীর-সম্মুখ সমরে পড়ি, বীর-চডামনি বীরবাহু, চলি যবে গেলা যমপুরে অকালে, কহ, হে দেবি অমৃতভাগিণি, কোন্ বীরবরে বরি সেনাপতি-পদে, পাঠাইলা রণে পুনঃ রক্ষঃকুলনিসি রাঘবারি? কি কৌশলে, রাক্ষসভরসা ইন্দ্রজিৎ মেঘনাদে-অজেয় জগতে- উর্মিলাবিলাসী নাশি, ইন্দ্রে নিঃশঙ্কিলা? বন্দি চরণারবিন্দ, অতি মন্দমতি আমি, ডাকি আবার তোমায়, শ্বেতভুজে ১০ ভারতি! যেমতি, মাতা, বসিলা আসিয়া, বাল্মীকির রসনায়, (পদ্মাসনে যেন) যবে খরতর শবে, গহন কাননে, ক্রৌফবন্ধু সহ ক্রৌঞ্চে নিষাদ বি'বিলা, তেমতি দাসেরে, আসি, দয়া কর, সতি। কে জানে মহিমা তব এ ভবমগুলে? নরাধম আছিল যে নর নরকুলে চৌবে রত, হইল সে তোমার প্রসাদে, মৃত্যুঞ্জয়, যথা মৃত্যুক্রয়' উমাপতি:

হায়, মা, এ কেন পুণ্য আছে কি এ বাসে? কিন্তু যে গো গুণহীন সন্তানের মাঝে মুঢ়মতি, জননীর স্নেহ তার প্রতি সমধিক। উর তবে, উর দয়াময়ি বিশ্বরমে! গাইব, মা, বীররসে ভাসি, মহাগীত; উরি, দাসে দেহ খুদছায়া। -তুমিও আইস, দেবি, তুমি মধুকরী কল্পনা! কবির চিত্ত-ফুলবনমূধু, লয়ে, বচ মধুচক্র, গৌড়জন যাহে আনন্দে করিবে পান হুধা নিরবধি।

কনক-আসনে বসে দশানন বলী- হেমকূট-হৈমশিরে শৃষ্ণবর যথা তেজঃপুঞ্জ। শত শত পাত্রমিত্র আদি সভাসদ, নতভাবে বসে চারি দিকে। ভূতলে অতুল সভা-স্ফটিকে গঠিত; তাহে শোভে রত্নরাজী, মানস-সরসে সরস কমলকুল বিকশিত যথা। খেত, রক্ত, নীল, পীত গুন্ড সারি সারি ধরে উচ্চ স্বর্ণছাদ, ফণীন্দ্র দেসতি,  বিস্তারি 'অদ্ভুত ফণা, ধরেন আদরে ধরারে। ঝুলিছে ঝলি ঝালরে মুকুতা, পদ্মরাগ, মরকত, হীরা। যথা ঝোলে হে বরদে, তব বরে চোর রত্নাকর কাব্যরত্নাকর কবি! তোমার পরশে, হুচন্দন-বৃক্ষশোতা বিষবৃক্ষ ধরে!
(খচিত মুকুলে ফুলে) পল্লবের মালা ব্রতালয়ে। ক্ষণপ্রভা সম মুহুঃ হাসে রতনসম্ভবা বিভা-ঝলসি নয়নে। সুচারু চামর চারুলোচনা কিঙ্করী চুলায়; মৃণালভুজ আনন্দে আন্দোলি চন্দ্রাননা। ধরে ছত্র চত্রধর; আহা ৫০ হরকোপানলে কাম যেন রে না পুড়ি দাঁড়ান সে সভাতলে ছত্রধর-রূপে!- ফেরে দ্বারে দৌবারিক, ভীষণ মুরতি, পাণ্ডব-শিবির দ্বারে রুদ্রেশ্বর যথা শূলপাণি! মন্দে মন্দে বহে গন্ধে বহি, অনন্ত বসন্ত-বায়ু, রঙ্গে সঙ্গে আনি কাকলী লহরী, মরি! মনোহর, যথা বাঁশরীম্বরলবী গোকুল বিপিনে! কি ছার ইয়ার কাছে, হে দানবপতি ময়, মণিময় সভা, ইন্দ্রপ্রস্থে যাহা স্বহস্তে গড়িলা তুমি তুষিতে পৌরবে?

এ হেন সভায় বসে রক্ষঃকুলপতি, বাক্যহীন পুত্রশোকে! ঝর ঝর ঝরে অবিরল অশ্রুধারা-তিতিয়া বসনে, যথা তরু, তীক্ষ্ণ শর সরস শরীরে বাজিলে, কাঁদে নীরবে। কর ষোড় করি, নিরন্তর!

দাঁড়ায় সম্মুখে ভগ্নদূত, ধূসরিত ধূলায়, শোণিতে আর্দ্র সর্ব কলেবর। বীরবাহু সহ যত যোধ শত শত ভাসিল রণসাগরে, তা সবার মাঝে একমাত্র বাঁচে বীর; যে কাল তরঙ্গ গ্রাসিল সকলে, রক্ষা করিল রাক্ষসে- শ্রীম মকরাক্ষ, বলে যক্ষপতি সম।

অকালে আমার দোষে? আর যোধ যত-
এ দূতের মুখে শুনি স্বতের নিধন, হায়, শোকাকুল আজি রাজকুলমণি নৈকষেয়! সভাজন দুঃখী রাজ দুঃখে। আঁধার জগত, মরি, ঘন আবরিলে দিননাথে! কত ক্ষণে চেতন পাইয়া, বিষাদে নিঃশ্বাস ছাড়ি, কহিলা রাবণ;-

"নিশার স্বপনসম তোর এ বারতা, রে দূত! অমরবৃন্দ যার ভুজবলে কাতর, সে ধশুধরে রাঘব ভিখারী বধিল সম্মুখ রণে? ফুলদল দিয়া কাটিলা কি বিধাতা শাল্মলী তরুবরে!- হা পুত্র, হা বীরবাহু, বীব-চূড়ামণি! কি পাপে হারানু আমি তোমা হেন ধনে? কি পাপ দেখিয়া মোর, রে দারুণ বিধি, হরিলি এ ধন তুই? হায় রে, কেমনে ৬০ সহি এ যাতনা আমি? কে আর রাখিবে এ বিপুল কুল-মান এ কাল সমরে! বনের মাঝারে যথা শাখাদলে আগে একে একে কাঠুরিয়া কাটি, অবশেষে নাশে বৃক্ষে, হে বিধাতা, এ দুরন্ত রিপু তেমনি দুর্বল; দেখ, করিছে আমারে হব আমি নির্মল সমূলে এর শরে! তা না হলে মরিত কি কভু শূলী শম্ভুসম ভাই কৃষ্ণকর্ণ মম,

রাক্ষস-কুল-রক্ষণ? হায়, সূর্পণখা, কি কুক্ষণে দেখেছিলি, তুই রে অভাগী, কাল পঞ্চবটীবনে কালকূটে ভরা এ ভুজগে? কি কুক্ষণে (তোর দুঃখে দুঃখী)  পাবক-শিখা-রূপিণী জানকীরে আমি আনিহু এ হৈম গেছে? হায়, ইচ্ছা করে, ছাডিয়া কনকলঙ্কা, নিবিড কাননে পশি, এ মনের জালা জুডাই বিরলে! কুসুমদাম-সজ্জিত, দীপাবলী-তেজে

উজ্জলিত নাট্যশালাসম রে আছিল এ মোব সুন্দরী পুরী! কিন্তু একে একে শুখাইছে ফুল এবে, নিবিছে দেউটা,  নীবব ববাব, বীণা, মুরজ, মুরলী; তবে কেন আব আমি থাকি বে এখানে? কার রে বাসনা বাস করিতে আঁধারে ?"

এইরূপে বিলাপিলা আক্ষেপে বাক্ষস- বুলপতি রাবণ; হায় রে মবি, যথা হস্তিনায অন্ধরাজ, সঞ্জযের মুখে শুনি, ভীমবাহু ভীমসেনের প্রহাবে • হত যত প্রিযপুভ্র কুকক্ষেত্র-রণে।

তবে মন্ত্রী সারণ (সচিবশ্রেষ্ঠ বুধঃ)

কৃতাঞ্জলিপুটে উঠি কহিতে লাগিলা নতভাবে, "হে রাজন, ভুবনবিখ্যাত, রাক্ষসকূলশেখর, ক্ষম এ দাসেরে!

হেন সাধ্য কার আছে বুঝায় তোমারে এ জগতে? ভাবি, প্রভু, দেখ কিন্তু মনে, অভ্রভেদী চূড়া যদি যায় গুড়া হয়ে বজ্রাঘাতে, কভু নহে ভূধর অধীর

সে পীড়নে। বিশেষতঃ এ ভবমণ্ডল মায়াময়, বৃথা এর দুঃখ-সুখ যত। মোহের ছলনে ভুলে অজ্ঞান যে জন।"

উত্তর করিলা তবে লঙ্কা-অধিপতি; "যা কহিলে সত্য, ওছে অমাত্য-প্রধান সারণ! জানি হে আমি, এ ভব-মণ্ডল মায়াময়, বৃথা এর দুঃখ, সুখ যত।

কিন্তু জেনে শুনে তবু কাঁদে এ পরাণ অবোধ। হৃদয়-বৃস্তে ফুটে যে কুহুম, তাহারে ছিড়িলে কাল, বিকল হৃদয় ডোবে শোক-সাগরে, মৃণাল যথা জলে, যবে কুবলয়ধন লয় কেহ হরি।"

এতেক কহিয়া রাজা, দূত পানে চাহি, আদেশিলা,-"কহ, দূত, কেমনে পড়িল সমরে অমর-হ্রাস বীরবাহু বলী?"প্রণমি রাজেন্দ্রপদে, করযুগ যুড়ি, আবস্তিলা ভগ্নদূত, "হায়, লঙ্কাপতি, কেমনে কহিব আমি অপূর্ব বাহিনী? কেমনে বর্ণিব বীরবাহুর বীরত?- মদকল করী যথা পশে নলবনে পশিলা বীরকুঞ্জর অরিদল মাঝে ধমুর্ণব। এখনও কাঁপে হিয়া মম থরথবি, স্মরিলে সে ভৈরব হুঙ্কারে! শুনেছি, রাক্ষসপতি, মেঘের গর্জনে; সিংহনাদে; জলধির কল্লোলে, দেখেছি দ্রুত ইরম্মদে, দেব, ছুটিতে পর্বন- পথে; কিন্তু কভু নাহি শুনি ত্রিভুবনে, এ হেন ঘোর ঘর্ঘর কোদণ্ড-টঙ্কারে!

কতু নাহি দেখি শর হেন ভয়ঙ্কর!- পশিলা বীরেন্দ্রবৃন্দ বীরবাহু সহ রণে, 'যুথনাথ সহ গজযুথ যথা। ঘন ঘনাকারে ধূলা উঠিল আকাশে,- মেঘদল আলি যেন আবরিলা রুবি গগনে; বিদ্যুতঝলা-সম চকমকি উড়িল কলম্বকুল অম্বর প্রদেশে

শনশনে!-ধন্য শিক্ষা বীর বীরবাহু! কত যে মরিল অরি, কে পারে গণিতে?

এইরূপে শত্রুমাঝে যুঝিলা স্বদলে পুত্র তব, হে রাজন! কতক্ষণ পরে, প্রবেশিলা যুদ্ধে আসি নরেন্দ্র রাঘব।

কনক-মুকুট শিরে, করে ভীম ধনুঃ, বাসবের চাপ যথা বিবিধ রতনে

খচিত,"-এতেক কহি, নীরবে কাঁদিল ভগ্নদূত, কাঁদে যথা বিলাপী, স্মরিয়া পূর্বদুঃখ! সভাজন কাঁদিলা নীরবে।

অশ্রুময়-আঁখি পুনঃ কহিলা রাবণ, মন্দোদরীমনোহর; -"কহ, রে সন্দেশ- বহু, কহ, শুনি আমি, কেমনে নাশিলা দশাননাত্ময়' শূরে দশরথাত্মজ?"

"কেমনে, হে মহীপতি," পুনঃ আরম্ভিল ভগ্নদূত, "কেমনে, হে রক্ষঃকুলনিবি, কহিব সে কথা আমি, শুনিবে বা তুমি? অগ্নিময় চক্ষুঃ যথা হর্যক্ষ, সরোষে কড়মড়ি ভীম দন্ত, পড়ে লম্ফ দিয়া বৃষস্কন্ধে, রামচন্দ্র আক্রমিলা রণে কুমারে! চৌদিকে এবে সমর-তরঙ্গ উথলিল, সিন্ধু যথা দ্বন্দ্বি বায়ু সহ নির্ঘোষে! ভাতিল অসি অগ্নিশিখাসম

ধূমপুঞ্জসম চর্মাবলীর মাঝারে অযুত! নাদিল কন্তু অম্বুরাশি-রবে!- আর কি কহিব, দেব? পূর্বজন্মদোষে, একাকী রাঁচিহ্ন আমি! হায় রে বিধাতঃ, ক্লি গাপে এ তাপ আজি দিলি তুই মোরে?

কেন না শুইন্ন আফিশরশয্যোপরি,  হৈমলঙ্কা-অলঙ্কার বীরবাহু সহ রণভূমে? কিন্তু নহি নিজ দোষে দোষী। ক্ষত বক্ষঃস্থল মম, দেখ, নৃপমণি,

রিপু-প্রহরণে, পৃষ্ঠে নাহি অস্ত্রলেখা।" এতেক কহিয়া স্তব্ধ হইল রাক্ষস

মনস্তাপে। লঙ্কাপতি হরষে বিষাদে কহিলা; "সাবাসি, দূত! তোর কথা শুনি, কোন্ যীর-হিয়া নাহি চাহে রে পশিতে সংগ্রামে? ডমরুধ্বনি শুনি কাল ফণী, কভু কি অলসভাবে নিবাসে বিবরে? ধন্য লঙ্কা, বীরপুত্রধারী! চল, সবে,- চল যাই, দেখি, ওহে সভাসদ জন, কেমনে পড়েছে রণে বীর-চূডামণি বীরবাহু; চল, দেখি জুড়াই নয়নে।

উঠিলা রাক্ষসপতি প্রাসাদ-শিখরে, কনক-উদয়াচলে দিনমণি যেন অংশুমালী। চারি দিকে শোভিল কাঞ্চন- সৌধ-কিরীটিনী লঙ্কা-মনোহরা পুরী!- হেমহর্য্য সারি সারি পুষ্পবন মাঝে; কমল-আলয় সরঃ; উৎস রজঃ-ছটা; তরুরাজী; ফুলকুল-চক্ষুঃ বিনোদন, যুবতীযৌবন যথা; হীরাছড়াশিরঃ দেবগৃহ, নানা রাগে রঞ্জিত বিপণি, বিবিধ রতন-পূর্ণ; এ জগৎ যেন আনিয়া বিবিধ ধন, পূজার বিধানে, রেখেছে, রে চারুলক্ষে, তোর পদতলে, জগত-বাসনা তুই, সুখের সদন। দেখিলা রাক্ষসেম্বর উন্নত প্রাচীর-
অটল অচল যথা; তাহার উপরে, বীরমদে মত্ত, ফেরে অস্ত্রীদল, যথা নাশে শৃঙ্গধরোপরি সিংহ। চারি সিংহদ্বার (রুদ্ধ এবে) হেরিলা বৈদেহীহর; তথা জাগে রথ, রথী, গজ, অশ্ব, পদাতিক অগণ্য। দেখিলা রাজা নগর বাহিরে, রিপুবৃন্দ, বালিবৃন্দ সিন্ধুতীরে যথা, নক্ষত্র-মণ্ডল কিম্বা আকাশ-মণ্ডলে। থানা দিয়া পূর্ব দ্বারে, দুর্বার সংগ্রামে, বসিয়াছে বীর নীল; দক্ষিণ দুয়ারে অঙ্গদ, করভসম নব বলে বলী; কিম্বা বিষদর, যবে বিচিত্র কন্ধুক- ভূষিত ত্রিশূল উত্তর  , হিমান্তে অহি ভ্রমে উর্ধ্ব ফণা- সদৃশ জিহ্বা লুলি অবলেপে! দুয়ারে রাজা সুগ্রীব আপনি বীরসিংহ।
দাশরথি পশ্চিম দুয়ারে- হায় রে বিসন্ন এবে জানকী-বিহনে, কৌমুদী-বিহনে যথা কুমুদরঞ্জন শশাঙ্ক! লক্ষ্মণ সঙ্গে, বায়ুপুভ্র হন, মিত্রবর বিভীষণ। শত প্রসরণে, বেড়িয়াছে বৈরিদল স্বর্ণ-লঙ্কাপুরী, গহন কাননে যথা ব্যাধ-দল মিলি, বেড়ে জালে সাবধানে কেশরিকামিনী,- নয়ন-রমণী রূপে, পরাক্রমে ভীমা ভীমাসমা! অদূরে হেরিলা রক্ষঃপতি রণক্ষেত্র। শিবাকুল, গৃধিনী, শকুনি, কুকুর, পিশাচদল ফেরে কোলাহলে। কেহ উড়ে; কেহ বসে। কেছ বা বিবাদে;

পাকশাট মারি কেহ খেদাইছে দূরে সমলোভী জীবে; কেহ, গরজি উল্লাসে, ক্ষুধা-অগ্নি; কেহ শোষে রক্তস্রোতে! পড়েছে কুঞ্জরপুঞ্জ ভীষণ-আকৃতি; ঝড়গতি ঘোড়া, হায়, গতিহীন এবে! চূর্ণ রথ অগণ্য, নিষাদী, সাদী, শূলী, রথী, পদাতিক পড়ি যায় গড়াগড়ি একত্রে! শোভিছে বর্ম, চর্ম, অসি, ধনুঃ, ভিন্দিপাল, তৃণ, শর, মুদগর, পরশু, স্থানে স্থানে; মণিময় কিরীট, শীর্ষক, আর বীর-আভরণ, মহাতেজস্কর। পড়িয়াছে যন্ত্রীদল যন্ত্রদল মাঝে। হৈমধ্বজ দণ্ড হাতে, যম-দণ্ডাঘাতে, পড়িয়াছে ধ্বজবহ। হায় রে, যেমতি স্বর্ণ-চূড় শস্য ক্ষত কৃষিদলবলে, পড়ে ক্ষেত্রে, পড়িয়াছে রাক্ষসাধকর, রবিকুলরবি শূর রাঘবের শরে! পড়িয়াছে বীরবাহু-বীর-চূড়ামণি, চাপি রিপুচয় বলী, পড়েছিল যথা হিড়িম্বার স্নেহনীড়ে পালিত গরুড় ঘটোৎকচ, যবে কর্ণ, কালপৃষ্ঠধারী, এড়িলা একাত্মী বাণ রক্ষিতে কৌরবে।

মহাশোকে "যে শয্যায় শোকাকুল কহিলা রাবণ;- আজি তুমি শুয়েছ, কুমার প্রিয়তম, বীরকুলসাধ এ শয়নে সদা! রিপুদলবলে দলিয়া সময়ে, জন্মভূমি-রক্ষাহেতু কে ডরে মরিতে? যে ডরে, ভীরু সে মৃঢ়; শত ধিক্ তারে! তবু, বৎস, যে হৃদয়, মুগ্ধ মৌহমদে কোমল সে স্কুল-সম। এ বজ্র-আষাতে,"  কত যে কাতর সে, তা জানেন সে জন, অন্তর্যামী যিনি; আমি কহিতে অক্ষম। হে বিধি, এ ভবভূমি তব লীলাম্বলী; পরের যাতনা কিন্তু দেখি কি হে তুমি ২৮০ হও সুখী? পিতা সদা পুভ্রদুঃখে দুঃখী- তুমি হে জগত-পিতা, এ কি রীতি তব? হা পুত্র! হা বীরবাহু! বীরেন্দ্র-কেশরী! কেমনে ধরিব প্রাণ তোমার বিহনে ?"

এইরূপে আক্ষেপিয়া রাক্ষস-ঈশ্বর রাবণ, ফিরায়ে আঁখি, দেখিলেন দূরে সাগর-মকরালয়। মেঘশ্রেণী যেন অচল, ভাসিছে জলে শিলাকুল, বাঁধা দৃঢ় বাঁধে। দুই পাশে তরঙ্গ-নিচয়, ফেনাময়, ফরাময় যথা ফণিবর, উথলিছে নিরন্তর গম্ভীর নির্ঘোষে। অপূর্ব-বন্ধন সেতু; রাজপথ-সম প্রশস্ত; বহিছে জলস্রোত: কলরবে, স্রোতঃ-পথে জল যথা বরিষার কালে।

অভিমানে মহামানী বীরকুলর্যভ রাবণ, কহিলা বলী সিন্ধু পানে চাহি, কি সুন্দর মালা আজি পরিয়াছ গলে, প্রচেতঃ! হা ধিক্, ওহে জলদলপতি! এই কি সাজে তোমারে, অলঙ্ঘ্য, অজেয় তুমি? হায়, এই কি হে তোমার ভূষণ,  রত্নাকর? কোন্ গুণে, কহ, দেব, শুনি, কোন্ গুণে দাশরথি কিনেছে তোমারে? প্রভঞ্জনবৈরী তুমি; প্রভঞ্জন-সম ভীম পরাক্রমে! কহ, এ নিগড় তবে পর তুমি কোন্ পাপে? অধম ভালুকে
শৃঙ্খলিয়া যাদুকর, খেলে তারে লয়ে; কেশরীর রাজপদ কার সাধ্য বাঁধে বীতংসে? এই যে লঙ্কা, হৈমবতী পুরী, শোভে তব বক্ষঃস্থলে, হে নীলাম্বুস্বামি, কৌস্তুভ-রতন যথা মাধবের বুকে, কেন হে নির্দয় এবে তুমি এর প্রতি? উঠ, বলি, বীরবলে এ জাঙাল ভাঙি, দূর কর অপবাদ; জুডাও এ জালা, ডুবায়ে অতল জলে এ প্রবল রিপু। রেখো না গো তব ভালে এ কলঙ্ক-রেখা, হে বারীন্দ্র, তব পদে এ মম মিনতি।" এতেক কহিয়া রাজরাজেন্দ্র রাবণ, আসিয়া বসিলা পুনঃ কনক-আসনে  সভাতলে; শোকে মগ্ন বসিলা নীরবে মহামতি; পাত্রমিত্র, সভাসদ-আদি বসিলা চৌদিকে, আহা, নীরব বিষাদে! হেনকালে চারিদিকে সহসা ভাসিল রোদন-নিনাদ মুছ; তা সহ মিশিয়া ভাসিল নূপুরধ্বনি, কিঙ্কিণীর বোল ঘোর রোলে। হেমাঙ্গী সঙ্গিনীদল-সাথে, প্রবেশিলা সভাতলে চিত্রাঙ্গদা দেবী। আলু খালু, হায়, এবে কবরীবন্ধন! আভরণহীন দেহ, হিমানীতে যথা কুসুমরতন-হীন বন-সুশোভিনী লতা!
অশ্রুময় আঁখি, নিশার শিশির-পূর্ণ পদ্মপর্ণ যেন! বীরবাহু-শোকে বিবশা রাজমহিষী, বিহঙ্গিনী যথা,. 'যবে গ্রাসে কাল ফণী কুলায়ে পশিয়া শাবকে। শোকের ঝড় বহিল সভাতে সুর-সুন্দরীর রূপে শোভিন্ন চৌদিকে বামাকুল; মুক্তকেশ মেঘমালা, ঘন নিশ্বাস প্রলয়:বায়ু, অশ্রুবারি-ধারা আসার; জীমূত মন্ত্র হাহাকার রব! চমকিলা লঙ্কাপতি কনক-আসনে। ফেলিল চামর দূরে তিতি নেত্রনীরে দিবা কিঙ্করী; কাঁদিল ফেলি ছত্র ছত্রধর; ক্ষোভে, রোষে, দৌবারিক নিষ্কোষিলা অসি উড়ি ভীমরূপী; পাত্র, মিত্র, সভাসদ যত, অধীর, কাঁদিলা সবে ঘোর কোলাহলে।

কত ক্ষণে মৃদু স্বরে কহিলা মহিষী চিত্রাঙ্গদা, চাহি সতী রাবণের পানে;- "একটি রতন মোরে দিয়াছিল বিধি রূপাময়; দীন আমি পৃথুয়েছিনু তারে রক্ষাহেতু তব কাছে, রক্ষঃকুল মণি, তরুর কোটরে রাখে শাবকে যেমতি পাখী। কহ, কোথা তুমি রেখেছ তাহারে, লঙ্কানাথ? কোথা মম অমূল্য রতন? দরিদ্র-ধর্ম-রক্ষণ রাজধর্ম; তুমি রাজকুলেশ্বর; কহ, কেমনে রেখেছ, কাঙ্গালিনী আমি, রাজা, আমার সেধনে?"

উত্তর করিলা তবে দশানন বলী;- "এ বৃথা গঞ্জনা, প্রিয়ে, কেন দেহ মোরে! গ্রহদোষে দোষী জনে কে নিন্দে, সুন্দরি? হায়, বিধিবশে, দেবি, সহি এ যাতনা আমি! বীরপুত্রধারী এ কনকপুরী, দেখ, বীরশূন্য এবে; নিদাঘে যেমতি ফুলশূন্য বনস্থলী, জলশূন্ত নদী! (বরাজ সজারু পশি বারুইর যথা ছিন্ন ভিন্ন করে তারে, দশরথাত্মজ মঙ্গাইছে লঙ্কা মোর! আপনি জলধি পরেন শৃঙ্খল পায়ে তার অনুরোধে! এক পুভ্রশোকে তুমি আকুলা, ললনে, শত পুত্রশোকে বুক আমার ফাটিছে নিশি। হায়, দেবি, যথা বনে বায়ু প্রবল, শিমূলশিম্বী ফুটাইলে বলে, যায় তুলারাশি, এ বিপুল-কুল- শেখর রাক্ষস যত পড়িছে তেমতি এ কাল সমরে। বিধি প্রসারিছে বাহু বিনাশিতে লঙ্কা মম, কহিমু তোমারে।"

নীরবিলা রক্ষোনাথ; শোকে অধোমুখে বিধুমুখী চিত্রাঙ্গদা, গন্ধর্বনন্দিনী, কাঁদিলা, - বিহ্বলা, আহা, স্মরি পুত্রবরে। কহিতে লাগিলা পুনঃ দাশরথি অরি;- ("এ এ বিলা প কভু, দেবি, সাজে কি। দেশবৈরী তোমারে? নাশি রণে পুভ্রবর তব গেছে চলি স্বর্গপুরে; বীরমাতা তুমি; বীরকর্মে হত পুভ্র-হেতু কি উচিত ক্রন্দন? এ বংশ মম উজ্জ্বল হে আজি তব পুত্রপরাক্রমে; তবে কেন তুমি কাঁদ, ইন্দুনিভাননে, তিতি অশ্রুনীরে ?"

উত্তর করিলা তবে চারুনেত্রা দেখী চিত্রাঙ্গদা;-"দেশবৈরী নাশে যে সমরে, শুভক্ষণে জন্ম তার; ধন্ত বলে মানি হেন বীরপ্রস্থনের প্রস্থ ভাগ্যবতী। কিন্তু ভেবে দেখ, নাথ, কোথা লম্বা তব, কোথা সে. অযোধ্যাপুরী? কিসের কারণে, কোম্ লোভে, রুহ, রাজা, এসেছে এ-দেশে রাঘব? এ স্বর্ণ-লঙ্কা দেবেন্দ্রবাঞ্ছিত, অতুল ভবমগুলে; ইহার চৌদিকে রজত-প্রাচীর সম শোভেন জলধি। শুনেছি সরযুতীরে বসতি তাহার- ক্ষুদ্র নর। (তব হৈমসিংহাসন-আশে যুঝিছে কি দাশরথি? বামন হইয়া কে চাহে ধরিতে চাঁদে? তবে দেশরিপু কেন তারে বল, বলি? কাকোদর সদা নম্রশিরঃ; কিন্তু তারে প্রহারয়ে যদি কেহ, উর্ধ্ব-ফণা ফণী দংশে প্রহারকে কে, কহ, এ কাল-অগ্নি জালিয়াছে আজি লঙ্কাপুরে? হায়, নাথ, নিজ কর্ম-ফলে, মজালে রাক্ষসকুলে, মজিলা আপনি!"।

এতেক কহিয়া বীরবাহুর জননী, চিত্রাঙ্গদা, কাদি সঙ্গে সঙ্গীদলে লয়ে, প্রবেশিলা অন্তঃপুরে। শোকে, অভিমানে, ত্যজি স্বকনকাসন, উঠিলা গর্জিয়া রাঘবারি। "এত দিনে"। কহিলা ভূপতি)  অম্বরে "বীরশূন্য লঙ্কা মম! এ কাল সমরে, আর পাঠাইব কারে? কে আর রাখিবে রাক্ষসকুলের মান? যাইব আপনি। সাজ হে বীরেন্দ্রবৃন্দ, লঙ্কার ভূষণ! দেখিব কি গুণ ধরে রঘুকুলমণি! অরাবণ, অরাম বা হবে ভব আজি!"
রোধিল শ্রবণ-পথ মহা কোলাহলে!

এতেক কহিলা যদি নিকষানন্দন শূরসিংহ, সভাতলে বাজিল দুন্দুভি গম্ভীর জীমৃতমন্ত্রে। সে ভৈরব রবে, সাজিল কবূরবৃন্দ বীরমদে মাতি,  দেব-দৈত্য-নর-ত্রাস। বাহিরিল বেগে বারী হতে (বারিস্রোতঃ-সম পরাক্রমে দুর্বার) বারণযূথ; মন্দুরা ত্যজিয়া বাজীরাজী, বক্রগ্রীব, চিবাইয়া রোষে মুখস্। আইল রড়ে রথ স্বর্ণচূড়, বিভায় পূরিয়া পুরী। পদাতিক-ব্রজ, কনক শিরস্ক শিরে, ভাম্বর পিধানে অসিবর, পৃষ্ঠে চর্ম অভেদ্য সমরে, হস্তে শূল, শালবৃক্ষ অভ্রভেদী যথা, আয়সী-আবৃত দেহ, আইল কাতারে। আইল নিষাদী যথা মেঘবরাসনে বজ্রপাণি; সাদী যথা অশ্বিনী কুমার, ধরি ভীমাকার ভিন্দিপাল, বিশ্বনাশী পরশু, উঠিল আভা আকাশ-মণ্ডলে, যথা বনস্থলে যবে পশে দাবানল। রক্ষঃকুলধ্বজ ধরি, ধ্বজণর বলী মেলিলা কেতনবর, রতনে খচিত, বিস্তারিয়া পাখা যেন উড়িলা গরুড় । গম্ভীর রোলে বাজিল চৌদিকে রণবাদ্য, হয়ব্যূহ হেষিল উল্লাসে, গরজিল গজ, শঙ্খ নাদিল ভৈরবে; কোদণ্ড-টঙ্কার সহ অসির ঝনঝুনি

টলিল কনকলঙ্কা বীরপদভরে;- গঞ্জিলা বারীশ রোষে! যথা জলতলে কনক-পঙ্কজ-বনে, প্রবাল-আসনে, বারুণী রূপসী বসি, মুক্তাফল দিয়া কবরী বাঁধিতেছিলা; পশিল সে স্থলে আরাব; চমকি সতী চাহিলা চৌদিকে। কহিলেন বিধুমুখী সখীরে সম্ভাষি মধুস্বরে;-"কি কারণে, কহ, লো স্বজনি, সহসা জলেশ পাশী অস্থির হইলা? দেখ, থর থর করি কাঁপে মুক্তাময়ী গৃহচূড়া। পুনঃ বুঝি দুষ্ট বায়ুকুল যুঝিতে তরঙ্গচয়-সঙ্গে দিলা দেখা। ধিক্ দেব প্রভয়নে! কেমনে ভুলিলা আপন প্রতিজ্ঞা, সথি, এত অল্প দিনে বায়ুপতি? দেবেন্দ্রের সভায় তাঁহারে সাধিশু সেদিন আমি বাঁধিতে শৃঙ্খলে বায়ু-বৃন্দে; কারাগারে রোধিতে সবারে। হাসিয়া কহিলা দেব; -অনুমতি দেহ, জলেশ্বরি, তরঙ্গিণী বিমলসলিলা আছে যত ভবতলে কিঙ্করী তোমারি, তা সবার সহ আমি বিহারি সতত,- তা হলে পালিব আজ্ঞা; তখনি, স্বজনি, সায় তাহে দিমু আমি। তবে কেন আজি, আইলা পবন মোরে দিতে এ যাতনা?"

উত্তর করিলা সঙ্গী কল কল রবে;- 'বুথা গঞ্জ প্রভঞ্জনে, বারীন্দ্রমহিষী, তুমি। এ ত ঝড় নহে; কিন্তু ঝড়াকারে বিবিধ সাজিছে রাবণ রাজা স্বর্ণলঙ্কাধামে, লাঘবিতে রাঘবের বীরগর্ব রণে।"

কহিলা বারুণী পুনঃ; -"সত্য, লো স্বজনি, বৈদেহীর হেতু রাম রাবণে বিগ্রহ। রক্ষঃকুল-রাজলক্ষ্মী মম প্রিয়তমা সখী। যাও শীঘ্র ভূমি তাঁহার সদনে, শুনিতে লালসা মোর রণের বারতা। এই স্বর্ণকমলটি দিও কমলারে। কহিও, যেখানে তাঁর রাঙা পা দুখানি রাখিতেন শশিমুখী বসি পদ্মাসনে, সেখানে ফোটে এ ফুল, যে অবধি তিনি, আঁধারি জলধি-গৃহ, গিয়াছেন গৃহে।"

উঠিলা মুরলা সঙ্গী, বারুণী-আদেশে, জলতল ত্যক্তি, যথা উঠয়ে চটুলা সফরী, দেখাতে ধনী রজঃ-কান্তি-ছটা- বিভ্রম বিভাবস্থরে। উতরিলা দূতী যথায় কমলালয়ে, কমল-আসনে, বসেন কমলময়ী কেশব-বাসনা লঙ্কাপুরে। ক্ষণকাল দাঁড়ায়ে দুয়ারে, জুড়াইলা আখি সখী, দেখিয়া সম্মুখে, যে রূপমাধুরী মোহে মদনমোহনে। বহিছে বাসস্তানিল-চির-অনুচর- দেবীর কমলপদপরিমল-আশে সুস্বনে। কুসুম-রাশি শোভিগে চৌদিকে, ধনদের হৈমাগারে রত্নরাজী যথা। শত স্বর্ণ-ধূপদানে পুড়িছে অগুরু, গন্ধরস, গন্ধামোদে আমোদি দেউলে। স্বর্ণপাত্রে সারি সারি উপহার নানা, উপকরণ।
স্বর্ণদীপাবল দীপিছে, সুরভি তৈলে পূর্ণ-হীনতেজাঃ, খদ্যোতিকাদ্যোতি যথা পূর্ণ-শশী-তেজে! ফিরায়ে বদন, ইন্দু-বদনা ইন্দিরা বসেন বিষাদে দেবী, বসেন যেমতি- বিজয়া-দশমী যবে বিরহের সাথে প্রভাতয়ে গৌড়গৃহে-উমা চন্দ্রাননা। করতলে বিন্তাসিয়া কপোল, কমলা তেজস্বিনী, বসি দেবী কমল-আসনে,- পশে কি গো শোক হেন কুসুম-হৃদয়ে?
প্রবেশিলা মন্দগতি মন্দিরে সুন্দরী মুরলা; প্রবেশি দুতী, রমার চরণে প্রণমিলা, নতভাবে। আশীধি ইন্দিরা- রক্ষঃ-কুল-রাজলক্ষ্মী-কহিতে লাগিলা।

"কি কারণে হেথা আজি, কহ লো মুরলে, গতি তব? কোথা দেবী জলদলেশ্বরী, প্রিয়তমা সখী মম? সদা আমি ভাবি তাঁর কথা। ছিন্ন যবে তাঁহার আলয়ে, কত যে করিলা রূপা মোর প্রতি সতী বারুণী, কহু কি আমি পারি তা ভুলিতে? রমার আশার বাস হরির উরসে;-

সে কেবল বারুণীর স্নেহৌষধ গুণে। ভাগ ত আছেন, কহ, প্রিয়সথী মম বারীন্দ্রাণী?” উত্তরিলা মুরলা রূপসী,- "নিরাপদে জলতলে বসেন বারুণী। বৈদেহীর হেতু রাম রাবণে বিগ্রহ;

শুনিতে লালসা তাঁর রণের বারতা। এই যে পদ্মটি, সতি, ফুটেছিল সুথে যেখানে রাখিতে তুমি রাঙা পা দুখানি; তেঁই পাশি-প্রণয়িনী প্রেরিয়াছে এরে।" বিষাদে নিশ্বাস ছাড়ি কহিলা কমলা, বৈকুণ্ঠধামের জ্যোৎস্না;-"হায় লো স্বজনি, দিন দিন হীন-বীর্য রাবণ দুর্মতি, যাদঃপতি রোদঃ যথা চলোমি-আঘাতে! শুনি চমকিবে তুমি। কুম্ভকর্ণ বলী ভীমাক্বতি, অকম্পন, রণে ধীর, যথা ভূধর, পড়েছে সহ অতিকায় রথী। আর যত রক্ষঃ আমি বর্ণিতে অক্ষম।
মরিয়াছে বীরবাহু-বীর-চূড়ামণি।

ওই যে ক্রন্দন-ধ্বনি শুনিছ, মুরলে, অন্তঃপুরে, চিত্রাঙ্গদা কাঁদে পুভ্রশোকে বিকলা। চঞ্চলা আমি ছাড়িতে এ পুরী। বিদরে হৃদয় মম শুনি দিবা নিশি প্রমদা-কুল-রোদন! প্রতি গৃহে কাঁদে পুত্রহীনা মাতা, দূতি, পতিহীনা সতী!" সুধিলা মুরলা:-"কহ, শুনি, মহাদেবি, কোন্ বীর আজি পুনঃ সাজিছে যুঝিতে বীরদর্পে?" উত্তরিলা মাধব-রমণী;- "না জানি কে সাজে আজি। চল লো মুরলে, হেন হরি হারা হয়ে বাঁচিল যে রমা, বাহিরিয়া দেখি মোরা কে যায় সমরে।" এতেক কহিয়া রমা মুবলার সহ,
রক্ষঃকুল-বালা-রূপে, বাহিরিলা দোঁহে দুকূল-বসনা। রুনু রুণ মধুবোলে বাজিল কিঙ্কিণী; করে শোভিল কঙ্কণ, নয়নরঞ্জন কাঞ্চী রুশ কটিদেশে। দেউল-দুয়ারে দোহে দাঁড়ায়ে দেখিলা, কাতারে কাতারে সেনা চলে রাজপথে, সাগরতরঙ্গ যথা পবন-তাড়নে দ্রুতগামী। ধায় রথ, ঘুরয়ে ঘরে চক্রনেমি। দৌড়ে ঘোড়া ঘোর ঝড়াকারে। অধীরিয়া বহুধারে পদভরে, চলে দন্তী, আম্ফালিয়া শুণ্ড, দওধর যথা কাল-দণ্ড। বাজে বাদ্য গম্ভীর নিরুণে। রতনে খচিত কেতু উড়ে শত শত তেজস্কর। দুই পাশে, হৈম-নিকেতন- বাতায়নে দাঁড়াইয়া ভুবনমোহিনী লঙ্কাবধূ ধরিষয়ে কুসুম-আসার, করিয়া মঙ্গলধ্বনি। কহিলা মুরলা, চাহি ইন্দিরার ইন্দুবদনের পানে; -

"ত্রিদিব-বিভব, দেবি, দেখি ভবতলে আজি! মনে হয় যেন, বাসব আপনি। স্বরীশ্বর, সুর বল-দল সঙ্গে করি, প্রবেশিলা লঙ্কাপুরে। কহ, কুপামনি, কৃপা করি কহ, শুনি, কোন্ কোন্ রথী রণ-হেতু সাজে এবে মত্ত বীরমদে?"

কহিলা কমলা সতী কমলনয়না; - "হায়, সখী, বীরশূন্য স্বর্ণ লঙ্কাপুরী! মহারথীকুল-ইন্দ্র আছিল যাহার, দেব বিকশি বিকশিছে ফুলকুল; মর্মরিছে পাতা; ইন্দ্রজিং। বৈজয়ন্তধাম-সম পুরী,- অলিন্দে সুন্দর হৈমময় স্তম্ভাবলী হীরাচূড; চারি দিকে রম্য বনরাজী নন্দনকানন যথা। কুহরিছে ডালে কোকিল; ভ্রমরদল ভ্রমিছে গুরুরি; বহিছে বাসস্তানিল; ঝরিছে ঝঝরে নির্ঝর। প্রবেশি দেবী সুবর্ণ-প্রাসাদে, দেখিলা সুবর্ণ-দ্বারে ফিরিছে নির্ভয়ে ভীমরূপী বামাবৃন্দ, শরাসন করে। দুলিছে নিষঙ্গ-সঙ্গে বেণী পৃষ্ঠদেশে। বিজলীর ঝলা সম, বেণীর মাঝারে, রত্নরাজী, তৃণে শর মণিময় ফণী! উচ্চ কুচ-যুগোপরি সুবর্ণ কবচ, রবি-কর জাল যথা প্রফুল্ল কমলে। তৃণে মহাথর শর; কিন্তু খরতর আয়ত-লোচনে শর। নবীন যৌবন- মদে মত্ত, ফেরে সবে মাতঙ্গিনী যথা মধুকালে। বাজে কাঞ্চী, মধুর শিল্পিতে, বিশাল নিতম্ববিম্বে; নূপুর চরণে। বাজে বীণা, সপ্তস্বরা, মুরজ, মুরলী; সঙ্গীত-তরঙ্গ, মিশি সে রবের সহ, উথলিছে চারি দিকে, চিত্ত বিনোদিয়া। বিহারিছে বীরবর, সঙ্গে বরাঙ্গনা প্রমদা, রজনীনাথ বিহারেন যথা দক্ষ-বালা-দলে লয়ে; কিম্বা, রে যমুনে, ভানুহুতে, বিহারেন রাখাল যেমতি নাচিয়া কদম্বমূলে, মুরলী অধরে, গোপ-বধূ-সঙ্গে রঙ্গে তোর চারু কূলে! ইন্দ্রজিৎ, প্রণমিয়া ধাত্রীর চরণে,

মেঘনাদধাত্রী নামে প্রভাষা রাক্ষসী। তার রূপ ধরি রমা, মাধব-রমণী, দিলা দেখা, মুষ্টে যষ্টি, বিশদ-বসনা।

কনক-আসন ত্যজি, বীরেন্দ্রকেশরী কহিলা,-"কি হেতু, মাতঃ, গতি তব আজি এ ভবনে? কহ দাসে লঙ্কার কুশল।” শিরঃ চুম্বি, ছদ্মবেশী অম্বুরাশি-সুতা উত্তরিলা; "হায়! পুত্র, কি আর কহিব কনক-লঙ্কার দশা! ঘোরতর রণে, হত প্রিয় ভাই তব বীরবাহু বলী! তার শোকে মহাশোকী রাক্ষসাধিপতি, সসৈন্যে সাজেন আজি যুঝিতে আপনি।"

জিজ্ঞাসিলা মহাবাহু বিস্ময় মানিয়া;-

"কি কহিলা, ভগবতি? কে বধিল কবে প্রিয়ান্তজে?

নিশা-রণে সংহারিন্ত আমি রঘুবরে; খণ্ড খণ্ড করিয়া কাটিন্ত বরধি প্রচণ্ড শর বৈরিদলে; তবে এ বারতা, এ অদ্ভুত বারতা, জননি, কোথায় পাইলে তুমি, শীঘ্র কহ দাসে।" রত্নাকর-রত্নোত্তমা ইন্দিরা সুন্দরী উত্তরিলা; "হায়! পুভ্র, মায়াবী মানব সীতাপতি; তব শরে মরিয়া বাঁচিল।

যাও তুমি ত্বরা করি; রক্ষ রক্ষঃকুল- মান, এ কাল সমরে, রক্ষঃ-চূড়ামণি!". (ছিড়িলা কুসুমদাম রোষে মহাবলী মেঘনাদ; ফেলাইলা কনক-বলয় দূরে; পদ-তলে পড়ি শোভিল কুণ্ডল, যথা অশোকের ফুল অশোকের তলে আভাময়! "ধিক্ মোরে" কহিলা গম্ভীরে কুমার, "হা বিক্ মোরে! বৈরিদল বেড়ে স্বর্ণলঙ্কা, হেথা আমি রামাদল মাঝে? এই কি সাঙ্গে আমারে, দশাননাত্মজ আমি ইন্দ্রজিৎ!আন রথ ত্বর। করি; ঘুচাব এ অপবাদ, ববি রিপুকুলে।":

সাজিলা রথীন্দ্রভ বীর-আভরণে, হৈমবতীস্থত যথা নাশিতে তারকে। মহাম্বর; কিম্বা যথা বৃহন্নলারূপী কিরীটী, বিরাটপুভ্র সহ, উদ্ধারিতে গোধন, সাজিলা শূর শমীবৃক্ষমূলে। মেঘবর্ণ রথ; চক্র বিজলীর ছটা; ধ্বজ ইন্দ্রচাপরূপী; তুরঙ্গম বেগে আশুগতি। রথে চড়ে বীর-চূডামণি বীরদর্পে, হেন কালে প্রমীলা সুন্দরী, ধরি পতি-কর-যুগ (হায় রে, যেমতি হেমলতা আলিঙ্গয়ে তরু-কুলেশ্বরে), কহিলা কাঁদিয়া ধনী; "কোথা, প্রাণসথে, রাখি এ দাসীরে, কহ, চলিলা আপনি? কেমনে ধরিবে প্রাণ তোমার বিরহে এ অভাগী? হায়, নাথ, গহন কাননে, ব্রততী বাঁধিলে সাধে করি-পদ, যদি তার রঙ্গরসে মনঃ না দিয়া মাতঙ্গ যায় চলি, তবু তারে রাখে পদাশ্রমে যুথনাথ। তবে কেন তুমি, গুণনিধি,

ত্যজ কিঙ্করীরে আজি?” হাসি উত্তরিলা

মেঘনাদ, "ইন্দ্রজিতে জিতি তুমি, সতি,

বেঁধেছ যে দূঢ় বাঁধে, কে পারে খুলিতে সে বাঁধে? (ত্বরায় আমি আসিব ফিরিয়া
কল্যাণি, সমরে নাশি তোমার কল্যাণে রাঘবে। বিদায় এবে দেহ, বিধুমুখি।"

উঠিল পবন-পথে, ঘোরতর রবে, রথবর, হৈমপাখা বিস্তারিয়া যেন উডিলা মৈনাক-শৈল, অম্বর উঞ্জলি! শিল্পিনী আকর্ষি রোষে, টঙ্কারিলা ধনুঃ বীরেন্দ্র, পক্ষীন্দ্র যথা নাদে মেঘ মাঝে ভৈরবে। কাঁপিল লঙ্কা, কাঁপিলা জলধি! সাজিছে রাবণ রাজা, বীরমদে মাতি; বাজিছে রণ-বাজনা; গরজিছে গজ; হেষে অশ্ব; হুঙ্কারিছে পদাতিক, রথী; উড়িছে কৌশিক-ধ্বজ; উঠিছে আকাশে কাঞ্চন-কক্কুক-বিভা। হেন কালে তথা দ্রুতগতি উতরিলা মেঘনাদ রথী।

নাদিলা কবুরিদল হেরি বীরবরে মহাগবে। নমি পুত্র পিতার চরণে, করযোড়ে কহিলা; "হে রক্ষঃ-কুল-পতি, শুনেছি, মরিয়া না কি বাঁচিয়াছে পুনঃ রাঘব? এ মায়া, পিতঃ, বুঝিতে না পারি! কিন্তু অনুমতি দেহ; সমূলে নির্মল করিব পামরে আজি! ঘোর শরানলে করি ভস্ম, বায়ু-অস্ত্রে উড়াইব তারে; নতুবা বাধিয়া আনি দিব রাজপদে।"

আলিঙ্গি কুমারে, চুম্বি শিরঃ, মৃদুস্বরে উত্তর করিলা তবে স্বর্ণ-লঙ্কাপতি;- "রাক্ষস-কুল-শেখর তুমি, বংস; তুমি রাক্ষস-কুল-ভরসা। এ কাল সমরে, নাহি চাহে প্রাণ মম পাঠাইতে তোমা বারম্বার। হায়, বিধি বাম মম প্রতি।

কে কবে শুনেছে, পুত্র, ভাসে শিলা জলে, কে কবে শুনেছে, লোক মরি পুনঃ বাঁচে?"

উত্তরিলা বীরদর্পে অম্বুরারি-রিপু, "কি ছার সে নর, তারে ডরাও আপনি, রাজেন্দ্র? থাকিতে দাস, যদি যাও রণে তুমি, এ কলঙ্ক, পিতঃ, ঘুষিবে জগতে। হাসিবে মেঘবাহন; রুধিবেন দেব অগ্নি। দুই বার আমি হারামু রাঘবে; আর এক বার পিতঃ, দেহ আজ্ঞা মোরে; দেখিব এ বার বীর বাচে কি ঔষধে!"

কহিলা রাক্ষসপতি; "কুম্ভকর্ণ বলী ভাই মম,-তায় আমি জাগান্ত অকালে ভয়ে; হায়, দেহ তার, দেখ, সিন্ধু-তীরে ভূপতিত, গিরিশৃঙ্গ কিম্বা তরু যথা বজ্রাঘাতে! তবে যদি একান্ত সমরে ইচ্ছা তব, বংস, আগে পূজ ইষ্টদেবে, নিকুন্তিলা যজ্ঞ সাঙ্গ কর, বীরমণি! সেনাপতি-পদে আমি বরিশু তোমারে। দেখ, অস্তাচলগামী দিননাথ এবে; প্রভাতে যুঝিও, বৎস, রাঘবের সাথ্যে।"

এতেক কহিয়। রাজা, যথাবিধি লয়ে গঙ্গোদক, অভিষেক করিলা কুমারে। অমনি বন্দিল বন্দী, করি বীণাধ্বনি আনন্দে "নয়নে তব, হে রাক্ষস-পুরি,
অশ্রুবিন্দু; মুক্তকেশী শোকাবেশে তুমি;

ভূতলে পড়িয়া, হায়, রতন-মুকুট, আর রাজ-আভরণ, হে রাজসুন্দরি, তোমার! উঠ গো শোক পরিহরি, সতি। রক্ষঃ-কুল-রবি ওই উদয়-অচলে। প্রভাত হইল তব দুঃখ-বিভাবরী! উঠ রাণি, দেগ, এই ভীম বাম করে কোদণ্ড, টংকারে যার বৈজয়ন্ত-ধামে পাণ্ডুবর্ণ আগগুল! দেখ তৃণ, যাহে পশুপতি-ত্রাস অস্ত্র পাশুপত-সম! গুণি-গণ শ্রেষ্ঠ গুণী, বীরেন্দ্র-কেশরী, কামিনীরঞ্জন রূপে, দেখ মেঘনাদে! ধন্য রাণী মন্দোদরী! পন্য রক্ষঃ-পতি নৈকনেয়! ধন্য লঙ্কা, বীরধাত্রী তুমি! আকাশ-দুহিতা ওগো শুন প্রতিধ্বনি, কহ সবে মুক্তকণ্ঠে, সাজে অরিন্দম ইন্দ্রজিৎ। ভয়াকুল কাঁপুক শিবিরে রঘুপতি, বিভীষণ, রক্ষঃ-কুল-কালি,

দত্তক-অরণ্যচর ক্ষুদ্র প্রাণী যত।"
বাজিল রাক্ষস বাঘ, নাদিল রাক্ষস;- পূরিল কনক-লঙ্কা জয় জয় রবে।

ইতি শ্রীমেঘনাদবধে কাব্যে অভিষেকো নাম প্রথমঃ সর্গঃ।

More Books by মাইকেল মধুসূদন দত্ত

30
Articles
মেঘনাদবধ কাব্য
0.0
মেঘনাদবধ কাব্য ১৯-শতকীয় বাঙালি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত কর্তৃক রচিত মহাকাব্য।[১] 'মেঘনাদবধ কাব্য' মধুসূদনের অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখা দ্বিতীয় কাব্য । কাব্যটি কবির সর্বশ্রেষ্ঠ কবিকীর্তি। এই অমর মহাকাব্য প্রকাশের সঙ্গে আমরা কবির প্রতিভার পূর্ণ বিকাশকালে উপস্থিত হয়। [২] ১৮৬১ সালে কাব্যটির দুইখণ্ডে প্রকাশ হয় । প্রথম খণ্ড(১–৫ সর্গ) ১৮৬১ সালের জানুয়ারী মাসে, এবং দ্বিতীয় খণ্ড (৬—৯ সর্গ) ঐ বৎসরের প্রথমার্ধে প্রকাশিত হয়। কাব্যটি মোট নয়টি সর্গে বিভক্ত। মেঘনাদবধ কাব্য হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণ অবলম্বনে রচিত[৩], যদিও এর মধ্যে নানা বিদেশী মহাকাব্যের ছাপও সুস্পষ্ট।
1

ভূমিকা মহাকাব্যের প্রকৃতি

14 December 2023
1
0
0

ইহাতে নাটকের সমস্ত সন্ধিগুলি থাকিবে, কাহিনীটি ঐতিহাসিক ঘটনা হইতে উন্নত হইবে অথব। কোন সজ্জনকে আশ্রয করিবে। ইহার ফল হইবে চতুর্বর্গপ্রাপ্তি অথবা চতুর্বর্গের যে কোন একটিও হইতে পারে। আরম্ভে নমস্কার, আশীর্ব

2

বিস্তৃতিবোধ-বিশাল রস

14 December 2023
0
0
0

আমাদের দেশের অলঙ্কারশাস্ত্র মানবহৃদয়ের প্রবৃত্তিগুলিকে প্রধানতঃ আট বা নয়টি স্থায়ীভাবে বিভক্ত করিযা আট বা নয়টি রসের পরিকল্পনা করিয়াছে। এইরূপ সাহিত্যবিচারের কতকগুলি অসুবিধা আছে। যদি স্থায়ী ভাবগুলিকে বাঁ

3

মেঘনাদবধ কাব্যে'র বৈশিষ্ট্য-পরিকল্পনা

14 December 2023
0
0
0

কিন্তু বিষয়টি গভীরভাবে বিচার করিলে মাইকেলের এই বিক্বতি সাহিত্যের দিক্ দিয়া তেমন দোষাবহ নাও হইতে পারে। সমস্ত প্রাচীন কাহিনীই কালক্রমে বিবর্তনের মধ্য দিয়া গড়িয়া উঠে এবং তাহাদের অল্পবিস্তর পরিবর্তন হইয়া

4

মেঘনাদবধ কাব্য

14 December 2023
0
0
0

হায়, নাথ, নিজ কর্মফলে মজালে রাক্ষসকুলে, মজিলে আপনি। রাবণের শক্তির মূলে ছিল দেবশ্রেষ্ঠ মহেশ্বরের রূপা। তাই স্বয়ং উমা যখন মহেশ্বরকে বশীভূত করিতে গেলেন তখন তিনি কন্দর্পের সাহায্য গ্রহণ করিলেন যাহাতে তপ

5

চরিত্রসৃষ্টি-দেবদেবী

14 December 2023
0
0
0

শুধু মৌলিক পরিকল্পনায় নহে, চরিত্রস্বষ্টিতেও 'মেঘনাদবধ কাব্য' মহাকাব্যের লক্ষণাক্রান্ত। প্রথমেই দেবদেবীদের কথা ধরা যাইতে পারে। ইলিয়াডে দেবদেবীগণ মানব-মানবীর স্থায়। মানব-মানবীর সব দোষগুণই তাঁহাদের আছে,

6

রাম-লক্ষ্মণ-রাবণ-মেঘনাদ

14 December 2023
0
0
0

এই পরিপ্রেক্ষিতে রাম ও লক্ষ্মণের এবং তাঁহাদের সহযোগীদের চরিত্র বিচার করিতে হইবে। 'মেঘনাদবধ কাব্যে'র রাম ও লক্ষ্মণ মাইকেলের প্রতিভার অপূর্ণতার পরিচায়ক এইরূপ মত বহু লোকে প্রকাশ করিয়াছেন এবং এই মন্তের আং

7

প্রমীলা

15 December 2023
0
0
0

মেঘনাদের জীবনের এশ্বব ও মৃতার মহিমা সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করিবাব জন্য কৰি প্রমীলার চরিত্রের অবতারণা করিযাহেন , মেঘনাদ শুধু বাসববিলধী বীব নহেন, তিনি যোগ্য পিতামাতার ঘোগ্য পুন্র? তছুপরি তিনি বীধবতী সাধ্বী

8

সীতা

15 December 2023
0
0
0

মেঘনাদ ও প্রমীলার দ্রাম্পত্যজীবনের যে চিত্র এই গ্রন্থে দেওয়া! হইয়াছে তাহা মাইকেলের পরিকল্পনার স্বকীয়তা প্রমাণ করে। ইহা! পরোক্ষভাবে গ্রন্থের মৌলিক পরিকল্পনার উপরেও আলোকসম্পাত করে । মেঘনাদ ও প্রমীলার

9

মেঘনাদবধ কাব্যের ভাব

15 December 2023
0
0
0

“মেধনাদবধ কাব্যের মহাকাঁব্যোচিত পরিকল্পনা ও চওিত্রস্্টির মহিমার উল্লেখের পর উহার বর্ণনার গজন্বিতার কথা বলা প্রয়োজন | . ভাঘ। ভাব্রেই বহন মাত্র এবং ভাষা ছড়া কপির ভ।ব৪ অভিব্যক্ত হইতে পালে ন।। মাইকেলের

10

উপমা

15 December 2023
0
0
0

মহাদেবের যে বর্ণনা উল্লিখিত হইয়াছে তাহার উপমা-সমৃদ্ধি লক্ষণীয় । হোমারের অন্ততম প্রধান গুণ উপমার বৈশিষ্ট্য । হোমার অধিকাংশ বিষয়কে উপমাঁর সাহায্যে বর্ণনা করিয়ীছেন। সাধারণতঃ তাহার উপমাগুলি উপমান ও উপ

11

বর্ণনা

15 December 2023
0
0
0

'মেঘনাদবধ কাব্যে বহু স্দীর্ঘ বর্ণনা আছে এবং সেই সব বর্ণনার বৈচিত্র্য ও মাধুর্য মাইকেলের প্রতিভার স্বকীয়তার সাক্ষ্য দেয়। এই প্রতিভার বৈশিষ্ট্য-_এশ্বর্বোধ। কাব্যের প্রারন্তেই দেখি রাবণ এক অপূর্ব সভায়

12

দোষ

15 December 2023
1
0
0

বহগুণসম্বন্বিত হইলেও মেঘনাদবধ কাব্য ক্রটিশূন্ত নহে এবং সেই প্রসঙ্গের আলোচনা! আবশ্যক । প্রথমেই বল যাইতে পারে যে এই গ্রন্থের পরিধি অতিশয় সঙ্কীর্ণ। সপ্তকাণ্ড রামায়ণের একটি কাণ্ডের একটি খণ্ডাংশ লইয়া ইহ

13

অমিত্রচ্ছন্দ

18 December 2023
1
0
0

মীইকেল মধুস্ছদনের অন্যতম প্রধান কীতি বঙ্গলাহিতো অমিত্রাক্ষরের প্রবর্তন; বাংলার প্রচলিত ছন্দ ছিল পয়ার, তাহ] মিত্রন্ন্দ অর্থাৎ তাহার মধো অন্ত অক্ষরের মিল আছে। তাহার আর একটি লক্ষণ এই যে তাঁহার মধ্যে প্র

14

মেঘনাদবধ কাব্য- দ্বিতীয় সর্গ

19 December 2023
0
0
0

অস্তে গেলা দিনমণি; আইলা গোধূলি, একটি রতন ভালে। ফুটিলা কুমুদী। মুদিল। সরসে আঁখি বিরসবদনা নলিনী; কৃজনি পাথী পশিল কুলায়ে; গোষ্ঠ-গৃহে গাভী-বৃন্দ ধাব হঙ্গা রবে। আইলা শুচারু-তারা শশী সহ হাসি, শর্বরী, সুগন্ধ

15

মেঘনাদবধ কাব্য- তৃতীয় সর্গ

19 December 2023
1
0
0

প্রমোদ-উদ্যানে কাঁদে দানব-নন্দিনী প্রমীলা, পতি-বিরহে কাতরা যুবতী। অশ্রুজপি বিধুমুখী ভ্রমে ফুলবনে কহু, ব্রজ-কুঞ্জ-বনে, হায় রে, যেমনি ব্রজবালা, নাহি হেরি কদম্বের মূলে পীতধড়া পীতাম্বরে, অধরে মুরলী। কহু ব

16

মেঘনাদবধ কাব্য- চতুর্থ সর্গ

20 December 2023
1
0
0

নমি আমি, কবি-গুরু, তব পদাম্বুজে, বাল্মীকি! হে ভারতের শিরঃচূড়ামণি, তব অনুগামী দাস, রাজেন্দ্র-সঙ্গমে দীন যথা যায় দূর তীর্থ-দরশনে তব পদ-চিহ্ন ধ্যান করি দিবা নিশি, পশিয়াছে কত যাত্রী যশের মন্দিরে, দমনিয়া ভ

17

মেঘনাদবধ কাব্য -প্রথম সর্গ

19 December 2023
0
0
0

উড়িল কলম্বকুল অম্বর প্রদেশে শনশনে!বল্প শিক্ষা বীর বীরবাহ! কত যে মরিল অরি, কে পারে গণিতে? এইরূপে শত্রুমাকে বুঝিলা স্বদলে পুত্র তব, হে রাজন! কতক্ষণ পরে, প্রবেশিলা যুদ্ধে আসি নরেন্দ্র রাঘব। কনক-মুকুট

18

মেঘনাদবধ কাব্য- পঞ্চম সর্গ

21 December 2023
0
0
0

হাসে নিশি তারাময়ী ত্রিদশ-আলয়ে।। দাসীর সাধনে সাধ্বী কহিলা, সুসিদ্ধ কিন্তু চিন্তাকুল এবে বৈজয়ন্ত-ধামে মহেন্দ্র; কুরুম-শয্যা তাজি, মৌন-ভাবে বসেন ত্রিদিব-পতি রত্ন-সিংহাসনে;- সুবর্ণ-মন্দিরে স্বপ্ত আর দেব য

19

মেঘনাদবধ কাব্য- ষষ্ঠ সর্গ

21 December 2023
0
0
0

ত্যজি সে উদ্যান, বলী সৌমিত্রি কেশরী কুঞ্জবনবিহারিণী; ক্বতাঞ্জলি-পুটে চলিলা, শিবিরে যথা বিরাজেন প্রভু রঘু-রাজ; অতি দ্রুতে চলিলা সুমতি, হেরি মৃগরাজে বনে, ধায় ব্যাধ যথা অস্ত্রালয়ে, বাছি বাছি লইতে সত্বরে

20

মেঘনাদবধ কাব্য- সপ্তম সর্গ

22 December 2023
0
0
0

উদিলা আদিত্য এবে উদয়-অচলে, পদ্মপর্ণে স্বপ্ত দেব পদ্মযোনি যেন, উন্মীলি নয়নপদ্ম স্বপ্রসন্ন ভাবে, চাহিলা মহীর পানে! উল্লাসে হাসিলা কুহুমকুন্তলা মহী, মুক্তামালা গলে। উৎসবে মঙ্গলবাদ্য উথলে যেমতি দেবালয়ে, উ

21

মেঘনাদবধ কাব্য-অষ্টম সর্গ

23 December 2023
0
0
0

রাজকাজ সাধি যথা, বিরাম-মন্দিরে, প্রবেশি, রাজেন্দ্র খুলি রাখেন যতনে কিরীট; রাখিলা খুলি অস্তাচলচুড়ে দিনান্তে শিরের রত্ন তমোহ। মিহিরে দিনদেব; তারাদলে আইল। রজনী; আইলা রজনীকান্ত শান্ত সুধানিধি। শত শত অগ

22

বিশদ টীকা-টিপ্পনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যাদি (প্রথম সর্গ)

25 December 2023
0
0
0

বিষয়-সংক্ষেপ:- প্রাচীন বঙ্গীয় কবিগণ নানা দেবদেবীর বন্দনা ও মঙ্গলাচরণ করিয়া যেভাবে কাব্যের সূচনা করিতেন, তাহা না করিয়া মধুসুদন যুরোপীয় কবিগণের অনুকরণে বীণাপাণির এবং কল্পনার আবাহন (invocation) করিয়া

23

বিশদ টীকা-টিপ্পনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যাদি (দ্বিতীয় সর্গ)

25 December 2023
1
0
0

বিষয়-সংক্ষেপ:-বীরবাহুর মৃত্যুর পর মেঘনাদ রাবণের সেনাপতিপদে বৃত হইলে দিবাবসান হইল এবং রাত্রি আসিল। স্বর্গেও রাত্রির আবির্ভাব হইল। ইন্দ্র শচীসহ দেবসভায় স্বর্গসুখ উপভোগ করিতেছেন, এমন সময়ে সেখানে লক্ষ্মীদ

24

বিশদ টীকা-টিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাধ্যাদি (তৃতীয় সর্গ)

27 December 2023
0
0
0

মেঘনাদবধ-কাব্যের দ্বিতীয় সর্গোক্ত ঘটনার ম্যায় তৃতীয় সর্গোক্ত ঘটনাও সম্পূর্ণরূপে বামায়ণ-বহিভূত। প্রথম দর্গের শেষ ভাগে লঙ্কাপুরীর বহির্দেশে প্রমোদোগ্ভানে মেঘনাদের ব্যসনমত্তভাবে অবস্থ।নের কথা বলা হইয

25

বিশদ টীকাটিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যা (চতুর্থ সর্গ)

27 December 2023
0
0
0

মেঘনাদরবধ কাব্যের চতুর্থ সর্গে অশোকবনে অবরুদ্ধা সীতার সহিত সরমার' কথোপকথন-গ্রসঙ্গে সরমার নিকট সীতার পূর্বজীবনের ঘটনাবলী বিবৃত হইয়াছে ।, এই সকল ঘটন! অল্পবিস্তর রামায়ণান্থগত হইতে বাধ্য বলিয়া, সমগ্র ম

26

বিশদ টীকাটিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যাদি (পঞ্চম সর্গ)

27 December 2023
1
0
0

দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ সর্গোক্ত ঘটনাবলীর সহিত পঞ্চম সর্গোক্ত ঘটনাও বীরবাহুর মৃত্যুদিবসের রাত্রিকালে সংঘটিত হইয়াছে । এই সর্গে প্রধান বর্ণনীয় বিষয়,_মেঘনাদবধে চণ্তীদেবীর সাহাধ্য-প্রাপ্তির উদ্দেশে ল

27

বিশদ টীকা টিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাথ্যাদি (ষষ্ঠ সর্গ)

27 December 2023
1
0
0

ষষ্ঠ সর্গের মূল ঘটনা" লক্ষ্মণকতৃকি মেঘনাদবধ-_বামায়ণ হইতে গৃহীত। স্থৃতরাং ছিতীয় তৃতীয় ও পঞ্চম সর্গোক্ত ঘটনাবলীর ন্যায় ইহাঁকে রামায়ণবহিভূতি ঘটনা বলা চলে না। কিন্তু ঘটনাটি যে ভাবে নিষ্পন্ন হইয়াছে

28

বিশদ টীকা-টিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাথ্যাদি (সপ্তম সর্গ)

28 December 2023
1
0
0

সপ্তম সর্গে বধিত মূল ঘটনাটি হইতেছে,_মেঘনাদের মৃত্যুসংবাদ শ্রবণে রাবণের' ক্রোধ, এবং প্রতিহিংমাপরায়ণ রাবণের সহিত যুদ্ধে শক্তিশেলাহত হইয়া! লক্ষণের পতন। এই মূল ঘটনাটি রামায়ণ হইতে গৃহীত। কিন্তু রাঁবণের

29

বিশদ টীকা টিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যা (অষ্টম সর্গ)

28 December 2023
1
0
0

মেঘনাদবধ কাব্যের ২য়, ৩য় ও ৫ম সর্গে বগিত বিষয়সমূহের ন্ায় ৮ম সর্গে বধিত বিষয়ের সহিতও রাযায়ণের কোন সম্বন্ধ নাই। বাল্সীকির রামায়ণে উল্লিখিত হয়াছে, শক্তিশেলাহত লম্্মরণের জন্য রামচন্দ্র বিলাপ করিতে

30

বিশদ টীকা-টিগ্ননী ও ছুরহ অংশের ব্যাখ্যাদি- (নবম সর্গ)

29 December 2023
2
0
0

দৈববলে ঘে লকল কার্য সাধন করিয়াছে, তাহাতে তাহার পক্ষে অসাধ্য কোন কাধই নাই। মন্ত্রী সারণ বিনীতভাবে নিবেদন করিলেন যে, দেবানুগ্রহে ওষধি-পর্বত গন্ধমাদন স্বয়ং লঙ্কায় আসিয়। ওধধদানে লক্ষ্মণের দেহে গ্রাণসঞ

---