shabd-logo

মেঘনাদবধ কাব্য- তৃতীয় সর্গ

19 December 2023

4 Viewed 4

প্রমোদ-উদ্যানে কাঁদে দানব-নন্দিনী প্রমীলা, পতি-বিরহে কাতরা যুবতী। অশ্রুজপি বিধুমুখী ভ্রমে ফুলবনে কহু, ব্রজ-কুঞ্জ-বনে, হায় রে, যেমনি ব্রজবালা, নাহি হেরি কদম্বের মূলে পীতধড়া পীতাম্বরে, অধরে মুরলী। কহু বা মন্দিরে পশি, বাহিরায় পুনঃ বিরহিণী, শূন্য নীড়ে কপোতী যেমতি বিবশা! কভু বা উঠি উচ্চ-গৃহ-চূড়ে, এক-দৃষ্টে চাহে বামা দূর লঙ্কা পানে, অবিরল চক্ষুঃজল পুছিয়া আঁচলে!- নীরব বাঁশরী, বীণা, ফ্রজ, মন্দিরা, গীত-ধ্বনি। চারিদিকে সঙ্গী-দল যত, বিরস-বদন, মরি, সুন্দরীর শোকে! কে না জান ফুলকুল বিরস-বদনা,

মধুর বিরহে যবে তাপে বনস্থলী? উত্তরিলা নিশা-দেবী প্রমোদ-উদ্যানে। শিহরি প্রমীলা সতী, মৃদু কল-স্বরে, বাসন্তী নামেতে সখী বসন্ত-সৌরভা, তার গলা ধরি কাঁদি কহিতে লাগিলা; ওই দেখ, আইল লো তিমির যামিনী, কাল-ভুজঙ্গিনী-রূপে দংশিতে আমারে, বাসস্তি! কোথায়, সখি, রক্ষঃ-কুল-পতি, অরিন্দম ইন্দ্রজিৎ, এ বিপত্তি-কালে?

এখনি আসিব বলি গেলা চলি বঙ্গী; কি কাজে এ ব্যাজ আমি বুঝিতে না পারি। তুমি যদি পার, সই, কহ লো আমারে।"
কহিলা বাসন্তী সখী, বসন্তে যেমতি

কুহরে বসন্তসখা,-"কেমনে কহিব কেন প্রাণনাথ তব বিলম্বেন আজি? কিন্তু চিন্তা দূর তুমি কর, সীমন্তিনি! ত্বরায় আসিবে শূর নাশিয়া রাঘবে। কি ভয় তোমার সখি? স্বরাস্তর-শরে অভেদ্য শরীর যাঁর, কে তাঁরে আঁটিবে বিগ্রহে? আইস মোরা যাই কৃষ্ণ বনে। সরস কুসুম তুলি, চিকণিয়া গাঁথি ফুলমালা। দোলাই ও হাসি প্রিয়গলে সে দামে, বিজয়ী রথ-চূড়ায় যেমতি বিজয়-পতাকা লোক উড়ায় কৌতুকে।" এতেক কহিয়া দোঁহে পশিলা কাননে,

যথায় সরসী সহ খেলিছে কৌমুদী, হাসাইয়া কুমুদেরে; গাইছে ভ্রমরী; কুহরিছে পিকবর; কুসুম ফুটিছে;
শোভিছে আনন্দময়ী বনরাজী-ভালে (মণিময় সিথিরূপে। জোনাকের পাতি; বহিছে মলয়ানিল, মর্মরিছে পাতা।

আঁচল ভরিয়া ফুল তুলিলা দুজনে। কত যে ফুলের দলে প্রমীলার আঁখি  মুক্তিল শিশির-নীরে, কে পারে কহিতে? কত দূরে হেরি বামা সূর্যমুখী দুঃখী,  মলিন-বদনা, মরি, মিহির-বিরহে, দাঁড়াইয়া তার কাছে কহিলা স্বম্বরে;- "তোর লো যে দশা এই ঘোর নিশা-কালে,

ভাই-প্রিয়ে, আমিও লে। সহি যে যাতনা! আঁধার সংসার এবে এ পোড়া নয়নে! এ পরাণ দহিছে লো বিচ্ছেদ-অনলে! যে রবির ছবি পানে চাহি বাঁচি আমি অহরহঃ, অস্তাচলে আচ্ছন্ন লো তিনি! আর কি পাইব আমি (ঊষার প্রসাদে পাইবি যেমতি, সতি, তুই) প্রাণেশ্বরে?"

অবচয়ি ফুল-চয়ে সে নিকুঞ্চ-বনে, বিষাদে নিঃশ্বাস ছাড়ি, সখীরে সন্তাবি কহিলা প্রমীলা সতী; "এই ত তুলিহু ফুল-রাঙ্গি; চিকনিয়া গাথিন্থ, স্বজনি, সুসমালা; কিন্তু কোথা পাব সে চরণে, পুষ্পাঞ্জলি দিয়া যাহে চাহি পূজিবারে! কে বাঁধিল মৃগরাজে বুঝিতে না পারি। চল, সখি, লঙ্কাপুরে যাই মোর। সবে।"

কহিল বাসন্তী সথী; "কেমনে পশিবে লঙ্কাপুরে আজি তুমি? অলঙ্ঘ্য সাগর সম রাঘবীয় চম্ বেড়িছে তাহারে! লক্ষ লক্ষ রক্ষঃ-অরি ফিরিছে চৌদিকে অস্ত্রপাণি, দণ্ডপাণি দওধর যথা।"

রুষিলা দানব-বাল। প্রমীলা রূপসী! "কি কহিলি, বাসন্তি? পর্বত-গৃহ ছাড়ি বাহিরায় যবে নদী সিন্ধুর উদ্দেশে, কার হেন সাধ্য যে সে রোধে তার গতি?

দানবনন্দিনী আমি, 'রক্ষঃ-কুল-বধূ, রাবণ শ্বশুর মম, মেঘনাদ স্বামী,- আমি কি ডরাই, সখি, ভিখারী রাঘবে পশিব লঙ্কায় আজি নিজ ভুজ-বলে; দেখিব কেমনে মোরে নিবারে নৃমণি?" এতেক কহিয়া সতী, গজ-পতি-গতি, রোষাবেশে প্রবেশিলা সুবর্ণ-মন্দিরে। যথা যবে পরন্তপ পার্থ মহারথী, যজ্ঞের ভুরঙ্গ সঙ্গে আসি, উতরিলা নারী-দেশে, দেবদত্ত শঙ্খ-নাদে রুবি, রণ-রঙ্গে বীরাঙ্গনা সাজিল কৌতুকে।- উথলিল চারি দিকে দুন্দুভির ধ্বনি; বাহিরিল বামাদল বীরমদে মাতি, উলঙ্গিয়া অসিরাশি, কামুক টংকারি, আস্ফালি ফলকপুঞ্জে! ঝক্ ঝক্ বঝকি কাঞ্চন-কক্কক-বিভা উজলিল পুরী! মন্দুরায় হেষে অশ্ব, ঊর্ধ্ব কর্ণে শুনি নৃপুরের ঝনঝনি, কিঙ্কিণীর বোলী, ডমরুর রবে যথা নাচে কাল ফণী। বারীমাঝে নাদে গজ শ্রবণ বিদলি, গম্ভীর নির্ঘোষে যথা ঘোষে ঘনপতি দূরে! রঙ্গে গিরি-শৃঙ্গে, কাননে, কন্দরে, নিদ্রা ত্যজিপ্রতিধ্বনি জাগিলা অমনি; সহসা পুরিল দেশ ঘোর কোলাহলে।

নৃমুত্তমালিনী নামে উগ্রচণ্ডা ধনী, সাজাইয়া শত বাজী বিবিধ সাজনে, মন্দুরা হইতে আনে অলিন্দের কাছে আনন্দে। চড়িলা ঘোড়া এক শত চেড়ী। অশ্ব-পার্শ্বে কোষে অসি বাজিল ঝনঝনি নাচিল শীর্ষক-চূড়া; দুলিল কৌতুকে পৃষ্ঠে মণিময় বেণী তৃণীরের সাথে। হাতে শূল, কমলে কণ্টকময় যথা মৃণাল। হেবিল অশ্ব মগন হরনে, দানব-দলনী-পদ্ম-পদ-যুগ ধরি বক্ষে, বিরূপাক্ষ সুখে নাদেন যেমতি! বাজিল সমব-বাদ্য, চমকিলা দিবে অমর, পাতালে নাগ, নর নরলোকে।

রোষে লাজভয় ত্যজি, সাঙ্গে তেজস্বিনী প্রমীলা। কিরীট-ছটা কবরী-উপরি, হায় রে, শোভিগ যথা কাদম্বিনী-শিরে ইন্দ্রচাপ! লেখা ভালে অঞ্চনের রেখা, ভৈরবীর ভালে যথা নয়নরঞ্জিকা শশিকলা! উচ্চ কুচ আবরি কবচে  সুলোচনা, কটিদেশে যতনে আঁটিলা বিবিধ রতনময় স্বর্ণ-সারসনে। নিষঙ্গের সঙ্গে পৃষ্ঠে ফলক দুলিল, রবির পরিনি হেন ধাঁধিয়া নয়নে! ঝকঝকি উরুদেশে (হায় রে, বতু'ল যথা রম্ভা বন-আভা!) হৈমময় কোষে শোভে খরশান অসি; দীর্ঘ শূল করে; ঝলমলি ঝলে অঙ্গে নানা আভরণ!- সাজিলা দানব-বালা, হৈমবতী যথা নাশিতে মহিষাসুরে ঘোরতর রণে,  কিম্বা শুন্ত নিশুন্ত, উন্মদ ধীর-মদে। ডাকিনী যোগিনী সম বেড়িলা সতীরে অশ্বারূঢ়া চেড়ীবৃন্দ। চড়িলা সুন্দরী বড়বা নামেতে বামী-বাড়বাগ্নি-শিখা!
গম্ভীর অম্বরে যথা নাদে কাদম্বিনী,

উচ্চৈঃস্বরে নিতম্বিনী কহিলা সম্ভাধি সখীবৃন্দে; "লঙ্কাপুরে, শুন লো দানবি, অরিন্দম ইন্দ্রজিং বন্দী-সম এবে। কেন যে দাসীরে ভুলি বিলম্বেন তথা প্রাণনাথ, কিছু আমি না পারি বুঝিতে? যাইব তাঁহার পাশে; পশিব নগরে বিকট কটক কাটি, জিনি হুজবলে রঘুশ্রেষ্ঠে, এ প্রতিজ্ঞা, বীরাঙ্গনা, মম; নতুবা মরিব রণে-যা থাকে করালে!

দানব-কুল-সম্ভবা আমরা, দানবি,- দানবকুলের বিধি বধিতে সমরে, দিসৎ-শোণিত-নদে নতুবা ডুবিতে! । অধরে ধরি লো মধু, গরল লোচনে আমরা; নাহি কি বল এ ভুজ-মৃণালে? চল সবে, রাঘবের হেরি বীরপণা।  দেখিব যে রূপ দৌগ সূর্পণখা পিসী মাতিল মদন-মদে পঞ্চবটী-বনে: দেখিব লক্ষ্মণ শূরে; নাগ-পাশ দিয়া বাদি লব বিভীষণে-রক্ষা-কুলাঙ্গারে! । দলিব বিপক্ষ-দলে, মাতঙ্গিনী যথা নলবন। তোমরা লো বিদ্যুৎ-আকৃতি, বিদ্যুতের গতি চল পড়ি অরি-মাঝে!"

নাদিল দানব-বালা হুহুঙ্কার রবে, মাতঙ্গিনীযূথ যথা-মত্ত মধু-কালে!

যথা বায়ু সখা সহ দাবানল-গতি দুর্বার, চলিলা সতী পতির উদ্দেশে। টলিল কনক-লঙ্কা, গজিল জলধি: ঘনঘনাকারে রেণু উড়িল চৌদিকে; কিন্তু নিশাকালে কবে ধূমপুঞ্জ পারে আবরিতে অগ্নিশিখা? অগ্নিশিখা-তেজে চলিলা প্রমীলা দেবী বামা-বল-দলে।

কত ক্ষণে উতবিলা পশ্চিম দুয়ারে বিধুমুখী। একবারে শত শঙ্খ ধরি ধ্বনিলা, টংকারি রোষে শত ভীম ধনুঃ, স্ত্রীবৃন্দ! কাঁপিল লঙ্কা আতঙ্কে; কাঁপিল মাতঙ্গে নিষাদী; রথে রথী; তুরঙ্গমে সাদীবর; সিংহাসনে রাজা; অবরোধে কুলবধূ। বিহঙ্গম কাঁপিল কুলায়ে; পর্বত-গহ্বরে সিংহ; বন-হস্তী বনে; ডুবিল অতল জলে জলচর যত!

পবন-নন্দন হন ভীষণ-দর্শন, রোষে অগ্রসরি শূর গরজি কহিলা;- "কে তোরা এ নিশা-কালে আইলি মরিতে? জাগে এ দুয়ারে হন, যার নাম শুনি থরখরি রক্ষোনাথ কাঁপে সিংহাসনে!  'আপনি জাগেন প্রভু রঘু-কুল-মণি, সহ মিত্র বিভীষণ, সৌমিত্রি কেশরী, শত শত বীর আর-দুর্ধর্ষ সমরে। কি রঙ্গে অঙ্গনা-বেশ ধরিলি দুর্মতি? জানি আমি নিশাচর পরম-মায়াবী। কিন্তু মায়া-বল আমি টুটি বাহু-বলে;- যথা পাই মারি অরি ভীম প্রহরণে।"

নৃমুত্তমালিনী সখী (উগ্রচণ্ডা ধনী!) কোদণ্ড টঙ্কারি রোষে কহিলা হুঙ্কারে; "শীঘ্র ডাকি আন্ হেথা তোর সীতানাথে,  বর্বর! কে চাহে তোরে, তুই ক্ষুদ্রজীবী! নাহি মারি অস্ত্র মোরা তোর সম জনে ইচ্ছায়। শৃগাল সহ সিংহী কি বিবাদে?

দিহু ছাড়ি, প্রাণ লয়ে পালা, বনবাসি! কি ফল বধিলে তোরে, অবোধ? যা চলি, ডাক্ সীতানাথে হেথা, লক্ষ্মণ ঠাকুরে, রাক্ষস-কুল-কলঙ্ক ডাক্ বিভীষণে! অরিন্দম ইন্দ্রজিৎ-প্রমীলা সুন্দরী পত্নী তাঁর; বাহু-বলে প্রবেশিবে এবে লঙ্কাপুরে, পতিপদ পূজিতে যুবতী!

কোন্ যোধ সাধ্য, মৃঢ়, রোবিতে তাঁহারে?
প্রবল পবন-বলে বলীন্দ্র পাবনি

হনু, অগ্রসরি শূর, দেখিলা সভয়ে বীরাঙ্গন। মাঝে রঙ্গে প্রমীলা দানবী। ক্ষণ-প্রভা-সম বিভা খেলিছে কিরীটে; শোভিছে বরাঙ্গে বর্ম, সৌর-অংশু-রাশি, মণি-আভা সহ মিশি, শোভয়ে যেমনি! বিস্ময় মানিয়া হন, ভাবে মনে মনে,- "অলঙ্ঘ্য সাগর লঙ্ঘি, উতরিনু যবে লঙ্কাপুরে, ভয়ঙ্করী হেরিন্তু ভীমারে,  প্রচণ্ডা, খর্পর খণ্ডা হাতে, মুণ্ডমালী। দানব-নন্দিনী যত মন্দোদরী-আদি রাবণের প্রণয়িনী, দেখিমু তা সবে। রক্ষঃ-কুল-বালা-দলে, রক্ষঃ-কুল-বধূ, (শশিকলা-সম রূপে) ঘোর নিশা-কালে, দেখিশু সকলে একা ফিরি ঘরে ঘরে।

দেখিমু অশোক-বনে (হায় শোকাকুলা) রঘু-কুল-কমলেরে; কিন্তু নাহি হেরি এ হেন রূপ-মাধুরী কন্তু এ ভুবনে!

ধন্য বীর মেঘনাদ, যে মেঘের পাশে প্রেম-পাশে বাঁধা সদা হেন সৌদামিনী!" এতেক ভাবিয়া মনে অঞ্জনা-নন্দন (প্রভঞ্জন স্বনে যথা) কহিলা গম্ভীরে; "বন্দীসম শিলাবন্ধে বাঁদিয়া সিন্ধুরে, হে সুন্দরি, প্রভু মম, রবি-কুল-রবি, লক্ষ লক্ষ বীর সহ আইলা এ পুরে। রক্ষোরাজ বৈরী তাঁর; তোমরা অবলা, কহ, কি লাগিয়া হেথা আইলা অকালে? নির্ভয় হৃদয়ে কহ; হনুমান আমি রঘুদাস; দয়া-সিন্ধু রঘু-কুল-নিদি। তব সাথে কি বিবাদ তাঁর, সুলোচনে? কি প্রসাদ মাগ তুমি, কহ ত্বরা করি; কি হেতু আইলা হেথা? কহ, জানাইব তব আবেদন, দেবি, রাঘবের পদে।"

উত্তর করিলা সতী, হায় রে, সে বাণী, ধ্বনিল হনূর কানে বীণাবাণী যথা মধুমাখা! -"রঘুবর পতি-বৈরী মম; কিন্তু তা বলিয়া আমি কহু না বিবাদি তাঁর সঙ্গে। পতি মম বীরেন্দ্র-কেশরী, নিজ-ভুজ-বলে তিনি ভুবন-বিজয়ী; কি কাজ আমার যুঝি তাঁর রিপু সহ? অবলা, কুলের বালা, আমরা সকলে; কিন্তু ভেবে দেখ, বীর, যে বিহাৎ-ছটা রমে আবি, মরে নর, তাহার পরশে। লও সঙ্গে, শূর, তুমি ওই মোর দূতী। কি যাচঞা করি আমি রামের সমীপে বিবরিয়া কবে রামা; যাও ত্বরা করি।"

নৃমুণ্ডমালিনী দুর্তী, নৃ-মুক্ত-মালিনী- আকৃতি, পশিয়া ধনী অবি-দল-মাঝে নির্ভয়ে, চলিলা যথা গরুৎমতী তরি, তরঙ্গ-নিকরে রঙ্গে করি অবহেলা,

অকূল সাগর-জলে ভাসে একাকিনী। আগে আগে চলে হনু পথ দেখাইয়া। চমকিলা বীরবৃন্দ হেরিয়া বামারে, চমকে গৃহস্থ যথা ঘোর নিশা-কালে হেরি অগ্নি-শিখা ঘরে। হাসিলা ভামিনী মনে মনে। একদৃষ্টে চাহে বীর যত দড়ে রড়ে জড সবে হয়ে স্থানে স্থানে। বাজিল নূপুর পায়ে, কাঞ্চী কটি-দেশে। ভীমাকার শূল করে, চলে নিতম্বিনী জরঙ্গরি সর্ব জনে কটাক্ষের শরে তীক্ষ্ণতর। শিরোপরি শীর্ষকের চূড়া, চন্দ্রক-কলাপময় নাচে কুতূহলে; দন্ধকে রত্নাবলী কুচ-যুগমাঝে

পীবর! দুলিছে পৃষ্ঠে মণিময় বেণী, কামের পতাকা যথা উড়ে মধু-কালে! নব-মাতঙ্গিনী-গতি চলিলা রঙ্গিণী, আলো করি দশ দিশ, কৌমুদী যেমতি, কুমুদিনী-সখী, বঝলে বিমল সলিলে, কিম্বা উষা অংশুময়ী গিরিশৃঙ্গ-মাঝে !

শিবিরে বসেন প্রভু রঘু-চূড়ামণি; কর-পুটে শূর-সিংহ লক্ষ্মণ সম্মুখে, পাশে বিভীষণ সখা, আর বীর যত, রুদ্র-কুল-সমতেজঃ, ভৈরব মুরতি। দেব-দত্ত অস্ত্র-পুঞ্জ শোভে পিঠোপরি, রঞ্জিত রঞ্জনরাগে, কুহুম-অঞ্জলি- আবৃত; পুড়িছে ধূপ ধূমি ধূপদানে; সারি সারি চারি দিকে জ্বলিছে দেউটী। বিস্ময়ে চাহেন সবে দেব-অস্ত্র পানে। কেহ বাখানেন খড়ঙ্গ; চর্মবর কেহ, সুবর্ণ-মণ্ডিত যথা দিবা-অবসানে রবির প্রসাদে মেঘ; তৃণীর কেহ বা; কেহ বর্ম, তেজোরাশি! আপনি সুমতি ধরি ধনুঃ-বরে করে কহিলা রাঘব:

"বৈদেহীর স্বয়ম্বরে ভাঙিমু পিনাকে বাহু-বলে; এ দহকে নারি গুণ দিতে! কেমনে, লক্ষ্মণ ভাই নোয়াইবে এরে?" সহসা নাদিল ঠাট; জয় রাম ধ্বনি উঠিল আকাশ-দেশে ঘোর কোলাহলে, সাগর-কল্লোল যথা! এস্তে রক্ষোরথী। দাশরথি পানে চাহি, কহিলা কেশরী, "চেয়ে দেখ, রাঘবেন্দ্র, শিবির বাহিরে। নিশীথে কি ঊষা আসি উত্তরিলা হেথা?” বিশ্বয়ে চাহিলা সবে শিবির বাহিরে।

"ভৈরবীরূপিণী বামা," কহিলা নুমণি, "দেবী এক দানবী, সথে, দেখ নিরখিয়া। "মায়াময় লঙ্কা-ধাম; পূর্ণ ইন্দ্র-জালে; কাম-রূপী তবাগ্রজ। দেখ ভাল করি; এ কুহক তব কাছে অবিদিত নহে। শুভক্ষণে, রক্ষোবর পাইন্ন তোমারে  আমি! তোমা বিনা, মিত্র, কে আর রাপিবে, এ দুর্বল বলে, কহ, এ বিপত্তি-কালে? রামের চির-রক্ষণ তুমি রক্ষঃপুরে!"

হেন কালে হনু সহ উতরিলা দূতী শিবিরে। প্রণমি বামা ক্বতাঞ্জলি-পুটে, (ছত্রিশ রাগিণী যেন মিলি এক তানে!) কহিলা, "প্রণমি আমি রাঘবের পদে, আর যত গুরুজনে;-নৃমুণ্ডমালিনী নাম মম; দৈত্যবালা প্রমীলা সুন্দরী,
বীরেন্দ্র-কেশরী ইন্দ্রজিতের কামিনী,  তাঁর দাসী।" আশীযিয়া, বীর দাশরথি সুবিলা, "কি হেতু, দূতি, গতি হেথা তব? বিশেষিয়া কহ মোরে, কি কাজে তুযিব তোমার ভত্রিণী, শুভে? কহ শীঘ্র করি।"

উত্তরিঙ্গা ভীমা-রূপী; "বীর-শ্রেষ্ঠ তুমি,
রঘুনাথ; আসি যুদ্ধ কর তাঁর সাথে;
নতুবা ছাড়হ পথ, পশিবে রূপসী
স্বর্ণলঙ্কাপুরে আজি পূজিতে পতিরে।

বধেছ অনেক রক্ষঃ নিজ ভুজ-বলে; রক্ষোবন্ধ মাগে রণ, দেহ রণ তারে, বীরেন্দ্র। রমণী শত মোরা; যাহে চাহ, যুঝিবে সে একাকিনী। ধনুর্বাণ ধর, ইচ্ছা যদি, নর-বর; নহে চর্ম, অসি, কিম্বা গদা, মল্ল-যুদ্ধে সদা মোরা রত! যথারুচি কর, দেব; বিলম্ব না সহে। তব অনুরোধে সতী রোদে সখী-দলে, চিত্রবাঘিনীরে যথা রোধে সখী-দলে, চিত্রবাঘিনীরে যথা রোধে কিরাতিনী, মাতে যবে ভয়ঙ্করী-হেরি মৃগ-পালে।" এতেক কহিয়া রাম। শিরঃ নোমাইলা,

প্রফুল্ল কুসুম যথা (শিশিরমণ্ডিত) বন্দে নোমাইয়া শিরঃ বন্দ সমীরণে! উত্তরিলা রঘুপতি, "শুন, সুকেশিনি, বিবাদ না করি আমি কভু অকারণে। অরি মম রক্ষঃ-পতি; তোমরা সকলে কুলবালা, কুলবধূ, কোন্ অপরাধে বৈরি-ভাব আচরিব তোমাদের সাথে? আনন্দে প্রবেশ লঙ্কা নিঃশঙ্ক হৃদয়ে। জনম রামের, রামা, রঘুরাজ-কুলে বীরেশ্বর; বীরপত্নী, হে শুনেত্র। দুত্তি, তব ভত্রী, বীরাঙ্গনা সখী তাঁর যত। কহ তাঁরে শত মুখে বাখানি, ললনে, তাঁব পতি-ভক্তি আমি, শক্তি, বীরপণা- বিনা রণে পরিহার মাগি তাঁর কাছে! ধন্য ইন্দ্রজিৎ! ধন্য প্রমীলা সুন্দরী! ভিখারী রাঘব, দূতি, বিদিত জগতে। 'বন-বাদী, ধন-হীন বিধি-বিড়ঙ্গনে।
কি প্রসাদ, সুবদনে, (সাজে যা তোমারে)
দিব আজি? সুখে থাক, আশীর্বাদ করি!"

এতেক কহিয়া প্রভু কহিলা হনূরে; "দেহ ছাড়ি পথ, বলি। অতি সাবধানে, শিষ্ট আচরণে তুষ্ট কর বামা-দলে।" প্রণমিয়া সীতানাথে বাহিরিলা দূতী।

হাসিয়া কহিলা মিত্র বিভীষণ, "দেখ, প্রমীলার পরাক্রম দেখ বাহিরিয়া, রঘুপতি! দেখ, দেব, অপূর্ব কৌতুক। না জানি এ বামা-দলে কে আঁটে সমরে, ভীমারূপী, বীর্যবর্তী চামুণ্ড। যেমতি- রক্তবীজ-কুল-অরি?" কহিলা রাখব, "দূতীর আকৃতি দেখি ডরিমু হৃদয়ে, রক্ষোবর! যুদ্ধ-সাধ ত্যজিন্ন তগনি!  মূঢ় যে ঘাঁটায়, সখে, হেন বাঘিনীরে!

চল, মিত্র, দেখি তব ভ্রাতৃ-পুত্র-বধূ।" যথা দূর দাবানল-পশিলে কাননে, অগ্নিময় দশ দিশ; দেখিলা সম্মুখে রাঘবেন্দ্র বিভা-রাশি নির্ঘুম আকাশে, সুবর্ণি বারিদ-পুঞ্জে! শুনিলা চমকি কোদণ্ড-ঘর্ঘর ঘোর, ঘোড়া দড়বড়ি, হুহুঙ্কার, কোসে বন্ধ অসির ঝনঝনি।

সে রোলের সহ মিশি বাজিছে বাজনা, ঝড় সঙ্গে বহে যেন কাকলী-লহরী! উড়িছে পতাকা-রত্ন-সঙ্কলিত-আভা; মন্দগতি আস্কন্দিতে নাচে বাজি-রাজী; বোলিছে ঘুঙ্খ রাবলী গৃহ ঘুহু বোলে। গিরি-চূড়ারুতি ঠাট দাঁড়ায় দু-পাশে অটল, চলিছে মধ্যে বামা-কুল-দলে!

উপত্যকা-পথে যথা মাতঙ্গিনী-যূথ,
গরজে পূরিয়া দেশ, ক্ষিতি টলমলি।

সর্ব-অগ্রে উগ্রচণ্ডা নৃমুক্তমালিনী, কুরু-হয়ারূঢ়া ধনী, ধ্বজ-দণ্ড করে হৈমময়; তার পাছে চলে বাদ্যকরী, বিদ্যাধরী দল যথা, হায় রে ভূতলে অতুলিত! বীণা, বাঁশী, মৃদঙ্গ, মন্দিরা- আদি যন্ত্র বাজে মিলি মধুর নিকণে! তার পাছে শূল পানি বীরাঙ্গনা-মাঝে প্রমীলা, তারার দলে শশিকল। যথা! পরাক্রমে ভীমা বামা। খেলিছে চৌদিকে রতন-সম্ভবা বিভা ক্ষণ-প্রভা-সম।

অন্তরীক্ষে সঙ্গে রঙ্গে চলে রতিপতি ধরিয়া কুহুম-ধহঃ, মুহুর্মুহুঃ হানি অব্যর্থ কুসুম-শরে! সিংহ-পৃষ্ঠে যথা  মহিষ-মর্দিনী দুর্গা; ঐরাবতে শচী ইন্দ্রাণী; খগেন্দ্রে রম। উপেন্দ্র-রমণী, শোভে বীর্ষবর্তী সতী বড়বার পিঠে- বড়বা, বামী-ঈশ্বরী, মণ্ডিত রতনে; : ধীরে, ধীরে, বৈরিদলে যেন অবহেলি, চলি গেলা বামাকুল। কেহ টংকারিলা শিঞ্জিনী; হুঙ্কারি কেহ উলঙ্গিলা অসি; আস্ফালিলা শূলে কেই; হাসিলা কেহ বা অট্টহাসে টিটকারি; কেহ বা নাদিলা, গহন বিপিনে যথা নাদে কেশরিণী,  বীর-মদে, কাম-মদে উন্মাদ ভৈরবী!

লক্ষ্য করি রক্ষোবরে, কহিলা রাঘব; "কি আশ্চর্য, নৈকষেয়! কভু নাহি দেখি, কভু নাহি শুনি হেন এ তিন ভুবনে!

নিশার স্বপন আজি দেখিমু কি জাগি? সত্য করি কহ মোরে, মিত্র-রত্নোত্তম। না পারি বুঝিতে কিছু; চঞ্চল হইনু এ প্রপঞ্চ দেখি, সখে, বঞ্চো না আমারে। চিত্ররথ-রথি-মুখে শুনিম্ন বারতা, উরিবেন মায়া-দেবী দাসের সহায়ে; পাতিয়া এ ছল সতী পশিলা কি আমি লঙ্কাপুরে? কহ, বুধ, কার এ ছলনা?” উত্তরিলা বিভীষণ; "নিশার স্বপন নহে এ, বৈদেহী-নাথ, কহিমু তোমারে। কালনেমি নামে দৈত্য বিখ্যাত জগতে সুরারি, তনয়া তার প্রমীলা সুন্দরী।

মহাশক্তি-অংশে, দেব, জনম বামার, মহাশক্তি-সম তেজে! কার সাধ্য আঁটে বিক্রমে এ দানবীরে? দম্ভোলি-নিক্ষেপী সহস্রাক্ষে যে হর্যক্ষ বিমুখে সংগ্রামে, সে রক্ষেন্দ্রে, রাঘবেন্দ্র, রাখে পদতলে বিমোহিনী, দিগম্বরী যথা দিগম্বরে! জগতের রক্ষা-হেতু গড়িলা বিধাতা এ নিগড়ে, যাহে বাঁধা মেঘনাদ বলী
মদ-কল কাল-হস্তী! যথা বারি-ধারা নিবারে কানন-বৈরী ঘোর দাবানলে, নিবারে সতত সতী প্রেম-আলাপনে এ কালাগ্নি! যমুনার সুবাসিত জলে ডুবি থাকে কাল ফণী, দুরন্ত দংশক! সুখে বসে বিশ্ববাসী, ত্রিদিবে দেবতা,  অতল পাতালে নাগ, নর নরলোকে।"

কহিলেন রঘুপতি; "সত্য যা কহিলে, মিত্রবর, রথিশ্রেষ্ঠ মেঘনাদ রথী। না দেখি এ হেন শিক্ষা এ তিন ভূবনে! দেখিয়াছি ভৃগুরামে, ভূগুমান গিরি- সদৃশ অটল যুদ্ধে! কিন্তু শুভক্ষণে তব ভ্রাতৃপুভ্র, মিত্র, ধন্তর্বাণ ধরে! এবে কি করিব, কহ, রক্ষঃকূল-মণি? সিংহ সহ সিংহী আসি মিলিল বিপিনে; কে রাখে এ মুগ-পালে? দেখ হে চাহিয়া  উথলিছে চারি দিকে ঘোর কোলাহলে হলাহল সহ সিন্ধু! নীলকণ্ঠ যথা (নিস্তারিণী-মনোহর) নিস্তারিলে ভবে, নিস্তার এ বলে, সখে, তোমারি রক্ষিত।- ভেবে দেখ মনে শূর, কালসর্প তেজে তবাগ্রজ, বিষ-দস্ত তার মহাবলী ইন্দ্রজিং। যদি পারি ভাঙিতে প্রকারে এ দস্তে, সফল তবে মনোরথ হবে; নতুবা এসেছি মিছে সাগরে বাঁধিয়া এ কনক লঙ্কাপুরে, কহিহু তোমারে।"

কহিলা সৌমিত্রি শূর শিরঃ নোমাইয়া ভ্রাতৃপদে; "কেন আর ডরিব রাক্ষসে, রঘুপতি? সুরনাথ সহায় যাহার, কি ভয় তাহার, প্রভু, এ ভব-মণ্ডলে? অবশ্য হইবে ধ্বংস কালি মোর হাতে রাবণি। অধর্ম কোথা কবে জয় লাভে? অধর্ম-আচারী এই রক্ষঃ-কুলপতি; তার পাপে হত-বল হবে রণ-ভূমে মেঘনাদ মরে পুত্র জনকের পাপে। লঙ্কার পঙ্কজ-রবি যাবে অস্তাচলে কালি, কহিলেন চিত্ররথ সুর-রথী। তবে এ ভাবনা, দেব, কর কি কারণে?"

উত্তরিলা বিভীষণ; "সত্য যা কহিলে, হে বীর-কুঞ্জর! যথা ধর্ম জয় তথা। নিজ পাপে মজে, হায়, রক্ষঃ-কুল-পতি! মরিবে তোমার শরে স্বরীশ্বর-অরি মেঘনাদ; কিন্তু তবু থাক সাবধানে। মহাবীর্যবর্তী এই প্রমীলা দানবী; নৃমুণ্ডমালিনী, যথা নৃমুণ্ডমালিনী, রণ-প্রিয়া! কালসিংহী পশে যে বিপিনে,  তার পাশে বাস যার, সতর্ক সতত উচিত থাকিতে তার। কথন, কে জানে, আসি আক্রমিবে ভীমা কোথায় কাহারে! নিশায় পাইলে রক্ষা, মারিব প্রভাতে।" কহিলেন রঘুমণি মিত্র বিভীষণে;

"কুপা করি, রক্ষোবর, লক্ষ্মণেরে লয়ে, দুয়ারে দুয়ারে সখে, দেখ সেনাগণে; কোথায় কে জাগে আজি? মহাক্লান্ত সবে বীরবাহু সহ রণে। দেখ চারি দিকে- কি করে অঙ্গদ; কোথা নীল মহাবলী;  কোথা বা হুগ্রীব মিতা? এ পশ্চিম দ্বারে আপনি জাগিব আমি ধনুর্বাণ হাতে!"
"ষে আজ্ঞা," বলিয়া শূর বাহিরিলা লয়ে উর্মিলা-বিলাসী শূরে। স্বরপতি-সহ তারক-সূদন যেন শোভিলা দুজনে, কিম্বা ত্বিষাপতি-সহ ইন্দু হুধানিধি।-

লঙ্কার কনক-দ্বারে উতরিলা সতী প্রমীলা। বাজিল শিঙ্গা, বাজিল দুন্দুভি ঘোর রবে; গরজিল ভীষণ রাক্ষস, প্রলয়ের মেঘ কিম্বা করিযুথ যথা! ৪৯০ রোষে বিরূপাক্ষ রক্ষঃ প্রক্ষেড়ন করে; তালজঙ্ঘা-তাল-সম-দীর্ঘ-গদাধারী, ভীমমূর্তি প্রমত্ত! হেষিল অশ্বাবলী। নাদে গজ; রথ-চক্র ঘুরিল ঘর্ঘরে; দুরন্ত কৌস্তিক-কুল কুস্তে আম্ফালিল; উড়িল নারাচ, আচ্ছাদিয়া নিশানাথে। অগ্নিময় আকাশ পূরিল কোলাহলে, যথা যবে ভূকম্পনে, ঘোর বজ্রনারে, উগরে আগ্নেয় গিরি অগ্নি-স্রোতোরাশি' নিশীথে! আতঙ্কে লঙ্কা উঠিল কাঁপিয়া।

উচ্চৈঃস্বরে কহে চণ্ডা নৃমুগুমালিনী; "কাহারে হানিস্ অস্ত্র, ভীরু, এ আঁধারে? নহি রক্ষোরিপু মোরা, রক্ষঃ-কুল-বধূ, খুলি চক্ষুঃ দেখ চেয়ে।" অমনি দুয়ারী টানিল হুডুকা ধরি হড় হড় হড়ে! বজ্রশব্দে খুলে দ্বার। পশিলা সুন্দরী আনন্দে কনক-লঙ্কা জয় জয় রবে।

যথা অগ্নি-শিখা দেখি পতঙ্গ-আবলী ধায় রঙ্গে, চারি দিকে আইলা ধাইয়া পৌর জন; কুলবধূ দিলা হুলাহুলি, বরষি কুহুমাসারে; যন্ত্র-ধ্বনি করি আনন্দে বন্দিল বন্দী। চলিলা অঙ্গনা আগ্নেয় তরঙ্গ যথা নিবিড় কাননে। বাজাইল বীণা, বাণী, মুরজ, মন্দিরা বা্যকরী বিদ্যাধরী; হেবি আস্কন্দিল হয়-বৃন্দ; ঝনঝনিল রুপাণ পিধানে। জননীর কোলে শিশু জাগিল চমকি। খুলিয়া গবাক্ষ কত রাক্ষসী যুবতী, নিরীখিয়া দেখি সবে শুখে বাথানিলা প্রমীলার বীরপণা। কতক্ষণে বামা  উতরিলা প্রেমানন্দে পতির মন্দিরে- মণিহারা ফণী যেন পাইল সে ধনে!

পরি নানা আভরণ সাজিলা রূপসী। ভাসিলা আনন্দ-নীরে রক্ষঃ-চূড়া-মণি মেঘনাদ; স্বর্ণাসনে বসিলা দম্পতী। গাইল গায়ক-দল; নাচিল নর্তকী; বিদ্যাধর বিদ্যাধরী ত্রিদশ-আলয়ে যথা; ভুলি নিজ দুঃখ, পিঞ্জর-মাঝারে, গায় পাথী; উথলিল উৎস কলকলে, সুধাংশুর অংশু-স্পর্শে যথা অধু-রাশি।- বহিল বাসস্তানিল মদুর সুস্বনে,

যথা যবে ঋতুরাজ, বনস্থলী সহ,
বিরলে করেন কেলি-মধু মধুকালে।
হেথা বিভীষণ সহ সৌমিত্রি কেশরী

অরিন্দম ইন্দ্রজিৎ কহিলা কৌতুকে; "রক্তবীজে ববি বুঝি, এবে, বিধুমুখি, আইলা কৈলাস-ধামে? যদি আজ্ঞা কর, জাগেন আপনি তথা বীর-দল সাথে, পড়ি পদ-তলে তবে; চিরদাস আমি তোমার, চামুণ্ডে!" হাসি, কহিলা ললনা; "ও পদ-প্রসাদে, নাথ, ভব-বিজয়িনী স্নাসী; কিন্তু মনমথে না পারি জিনিতে। অবহাল শরানলে; বিরহ-অনলে (দুরূহ) ডরাই সদা; তেঁই সে আইমু, নিত্য নিত্য মন যারে চাহে, তাঁর কাছে! পশিল সাগরে আসি রঙ্গে তরঙ্গিণী।"

চলিলা উত্তর-দ্বারে; সুগ্রীব স্বমতি
বিন্ধ্য-শৃঙ্গ-বৃন্দ যথা- অটল সংগ্রামে!
পূরব দুয়ারে নীল, ভৈরব মূরতি;
বৃথা নিদ্রা দেবী তথা সাধিছেন তারে।

এতেক কহিয়া সতী, প্রবেশি মন্দিরে, ত্যজিলা বীর-ভূষণে; পরিলা দুকূলে রতনময় আঁচল, আঁটিয়া কাঁচলি পীন-স্তনী; শ্রোণিদেশে ভাতিল মেখলা। দুলিল হীরার হার, মুকুতা-আবলী উরসে; জলিল ভালে তারা-গাঁথা সিথি; অলকে মণির আভা, কুণ্ডল শ্রবণে।

দক্ষিণ দুয়ারে ফিরে কুমার অঙ্গদ, ক্ষুধাতুর হরি যথা আহার-সন্ধানে, কিম্বা নন্দী শূল-পাণি কৈলাস-শিখরে। শত শত অগ্নি-রাশি জ্বলিছে চৌদিকে ধূম-শূন্য; মধ্যে লঙ্কা, শশাঙ্ক যেমনি নক্ষত্র-মণ্ডল মাঝে স্বচ্ছ নভঃস্থলে। চারি দ্বারে বীর-ব্যূহ জাগে; যথা যবে বারিদ-প্রসাদে পুষ্ট শস্য-কূল বাড়ে দিন দিন, উচ্চ মঞ্চ গড়ি ক্ষেত্র-পাশে, তাহার উপরে কৃষী জাগে সাবধানে, খেদাইয়া মৃগযুথে, ভীষণ মহিষে, আর তৃণজীবী জীবে। জাগে বীরব্যূহ,
বাক্ষস কুলের ত্রাস, লঙ্কাব চৌদিকে।
হৃষ্টমতি দুই জন চলিলা ফিবিষা যথায শিবিবে বীর ধীর দাশরথি।

হাসিযা কৈলাসে উমা কহিলা সম্ভাষি বিজযারে, "লঙ্কা পানে দেখ লো চাহিযা বিধুমুখি। বীব বেশে পশিচে নগবে প্রমীলা, সঙ্গিনী দল সঙ্গে বরাঙ্গনা। সুবর্ণ কঞ্চক-বিভা উঠিছে আকাশে। সবিস্ময়ে দেখ ওই দাঁডাযে নৃমণি বাঘব, সৌমিত্রি, মিত্র বিভীষণ আদি বীব যত। হেন রূপ কাব নব-লোকে সাজিমু এ বেশে আমি নাশিতে দানবে সত্য-যুগে। এই শোন ভয়ঙ্কব ধ্বনি। শিঞ্জিনী আকর্ষি বোষে টঙ্কাবিছে বামা হুঙ্কাবে। বিকট ঠাট কাঁপিছে চৌদিকে। দেখ লো নাচিছে চূড়া কববী বন্ধনে। তবঙ্গম-আস্বন্দিতে উঠিছে পড়িছে গৌরাঙ্গী, হায় রে মবি, তরঙ্গ-হিল্লোলে কনক-কমল যেন মানস-সবসে।"

উত্তবে বিজযা সখী, "সত্য যা কহিলে, হৈমবতি, হেন রূপ কাব নব-লোকে জানি আমি বীর্যবর্তী দানব-নন্দিনী প্রমীলা, তোমার দাসী, কিন্তু ভাব মনে, কিকপে আপন কথা বাখিবে, ভবানি? একাকী জগত জধী ইন্দ্রজিং তেজে, তা সহ মিলিল আসি প্রমীলা, মিলিল বায়ু-সঙ্গী অগ্নিশিখা সে বায়ুব সহ। কেমনে বক্ষিবে বামে কহ, কাত্যাযনি? কেমনে লক্ষ্মণ শৃব নাশিবে বাক্ষসে ?"

ক্ষণ কাল চিন্তি তবে কহিলা শঙ্করী; "মম অংশে জন্ম ধবে প্রমীলা রূপসী, বিজযে, হরিব তেজঃ কালি তার আমি। রবিচ্ছবি-করস্পর্শে উজ্জ্বল যে মণি আভা হীন হষ সে, লো, দিবা-অবসানে, তেমতি নিস্তেজাঃ কালি কবিব বামারে। অবশ্য লক্ষ্মণ শূর নাশিবে সং গ্রামে মেঘনাদে। পতি সহ আসিবে প্রমীলা এ পুরে, শিবের সেবা কবিবে বাবণি, সখী কবি প্রমীলাবে তুষিব আমবা।"

এতেক কহিয়া সতী পশিলা মন্দিরে। মুছপদে নিদ্রা দেবী আইলা কৈলাসে, লভিলা কৈলাস-বাসী কুসুম-শয়নে বিবাম, ভবেব ভালে দীপি শশি-কলা, উজলিল স্বপ্ন-ধাম বঙ্গোময় তেজে।

ইতি শ্রীমেঘনাদবধে কাব্যে সমাগমো নাম
তৃতীয়ঃ সর্গঃ।

More Books by মাইকেল মধুসূদন দত্ত

30
Articles
মেঘনাদবধ কাব্য
0.0
মেঘনাদবধ কাব্য ১৯-শতকীয় বাঙালি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত কর্তৃক রচিত মহাকাব্য।[১] 'মেঘনাদবধ কাব্য' মধুসূদনের অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখা দ্বিতীয় কাব্য । কাব্যটি কবির সর্বশ্রেষ্ঠ কবিকীর্তি। এই অমর মহাকাব্য প্রকাশের সঙ্গে আমরা কবির প্রতিভার পূর্ণ বিকাশকালে উপস্থিত হয়। [২] ১৮৬১ সালে কাব্যটির দুইখণ্ডে প্রকাশ হয় । প্রথম খণ্ড(১–৫ সর্গ) ১৮৬১ সালের জানুয়ারী মাসে, এবং দ্বিতীয় খণ্ড (৬—৯ সর্গ) ঐ বৎসরের প্রথমার্ধে প্রকাশিত হয়। কাব্যটি মোট নয়টি সর্গে বিভক্ত। মেঘনাদবধ কাব্য হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণ অবলম্বনে রচিত[৩], যদিও এর মধ্যে নানা বিদেশী মহাকাব্যের ছাপও সুস্পষ্ট।
1

ভূমিকা মহাকাব্যের প্রকৃতি

14 December 2023
1
0
0

ইহাতে নাটকের সমস্ত সন্ধিগুলি থাকিবে, কাহিনীটি ঐতিহাসিক ঘটনা হইতে উন্নত হইবে অথব। কোন সজ্জনকে আশ্রয করিবে। ইহার ফল হইবে চতুর্বর্গপ্রাপ্তি অথবা চতুর্বর্গের যে কোন একটিও হইতে পারে। আরম্ভে নমস্কার, আশীর্ব

2

বিস্তৃতিবোধ-বিশাল রস

14 December 2023
0
0
0

আমাদের দেশের অলঙ্কারশাস্ত্র মানবহৃদয়ের প্রবৃত্তিগুলিকে প্রধানতঃ আট বা নয়টি স্থায়ীভাবে বিভক্ত করিযা আট বা নয়টি রসের পরিকল্পনা করিয়াছে। এইরূপ সাহিত্যবিচারের কতকগুলি অসুবিধা আছে। যদি স্থায়ী ভাবগুলিকে বাঁ

3

মেঘনাদবধ কাব্যে'র বৈশিষ্ট্য-পরিকল্পনা

14 December 2023
0
0
0

কিন্তু বিষয়টি গভীরভাবে বিচার করিলে মাইকেলের এই বিক্বতি সাহিত্যের দিক্ দিয়া তেমন দোষাবহ নাও হইতে পারে। সমস্ত প্রাচীন কাহিনীই কালক্রমে বিবর্তনের মধ্য দিয়া গড়িয়া উঠে এবং তাহাদের অল্পবিস্তর পরিবর্তন হইয়া

4

মেঘনাদবধ কাব্য

14 December 2023
0
0
0

হায়, নাথ, নিজ কর্মফলে মজালে রাক্ষসকুলে, মজিলে আপনি। রাবণের শক্তির মূলে ছিল দেবশ্রেষ্ঠ মহেশ্বরের রূপা। তাই স্বয়ং উমা যখন মহেশ্বরকে বশীভূত করিতে গেলেন তখন তিনি কন্দর্পের সাহায্য গ্রহণ করিলেন যাহাতে তপ

5

চরিত্রসৃষ্টি-দেবদেবী

14 December 2023
0
0
0

শুধু মৌলিক পরিকল্পনায় নহে, চরিত্রস্বষ্টিতেও 'মেঘনাদবধ কাব্য' মহাকাব্যের লক্ষণাক্রান্ত। প্রথমেই দেবদেবীদের কথা ধরা যাইতে পারে। ইলিয়াডে দেবদেবীগণ মানব-মানবীর স্থায়। মানব-মানবীর সব দোষগুণই তাঁহাদের আছে,

6

রাম-লক্ষ্মণ-রাবণ-মেঘনাদ

14 December 2023
0
0
0

এই পরিপ্রেক্ষিতে রাম ও লক্ষ্মণের এবং তাঁহাদের সহযোগীদের চরিত্র বিচার করিতে হইবে। 'মেঘনাদবধ কাব্যে'র রাম ও লক্ষ্মণ মাইকেলের প্রতিভার অপূর্ণতার পরিচায়ক এইরূপ মত বহু লোকে প্রকাশ করিয়াছেন এবং এই মন্তের আং

7

প্রমীলা

15 December 2023
0
0
0

মেঘনাদের জীবনের এশ্বব ও মৃতার মহিমা সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করিবাব জন্য কৰি প্রমীলার চরিত্রের অবতারণা করিযাহেন , মেঘনাদ শুধু বাসববিলধী বীব নহেন, তিনি যোগ্য পিতামাতার ঘোগ্য পুন্র? তছুপরি তিনি বীধবতী সাধ্বী

8

সীতা

15 December 2023
0
0
0

মেঘনাদ ও প্রমীলার দ্রাম্পত্যজীবনের যে চিত্র এই গ্রন্থে দেওয়া! হইয়াছে তাহা মাইকেলের পরিকল্পনার স্বকীয়তা প্রমাণ করে। ইহা! পরোক্ষভাবে গ্রন্থের মৌলিক পরিকল্পনার উপরেও আলোকসম্পাত করে । মেঘনাদ ও প্রমীলার

9

মেঘনাদবধ কাব্যের ভাব

15 December 2023
0
0
0

“মেধনাদবধ কাব্যের মহাকাঁব্যোচিত পরিকল্পনা ও চওিত্রস্্টির মহিমার উল্লেখের পর উহার বর্ণনার গজন্বিতার কথা বলা প্রয়োজন | . ভাঘ। ভাব্রেই বহন মাত্র এবং ভাষা ছড়া কপির ভ।ব৪ অভিব্যক্ত হইতে পালে ন।। মাইকেলের

10

উপমা

15 December 2023
0
0
0

মহাদেবের যে বর্ণনা উল্লিখিত হইয়াছে তাহার উপমা-সমৃদ্ধি লক্ষণীয় । হোমারের অন্ততম প্রধান গুণ উপমার বৈশিষ্ট্য । হোমার অধিকাংশ বিষয়কে উপমাঁর সাহায্যে বর্ণনা করিয়ীছেন। সাধারণতঃ তাহার উপমাগুলি উপমান ও উপ

11

বর্ণনা

15 December 2023
0
0
0

'মেঘনাদবধ কাব্যে বহু স্দীর্ঘ বর্ণনা আছে এবং সেই সব বর্ণনার বৈচিত্র্য ও মাধুর্য মাইকেলের প্রতিভার স্বকীয়তার সাক্ষ্য দেয়। এই প্রতিভার বৈশিষ্ট্য-_এশ্বর্বোধ। কাব্যের প্রারন্তেই দেখি রাবণ এক অপূর্ব সভায়

12

দোষ

15 December 2023
1
0
0

বহগুণসম্বন্বিত হইলেও মেঘনাদবধ কাব্য ক্রটিশূন্ত নহে এবং সেই প্রসঙ্গের আলোচনা! আবশ্যক । প্রথমেই বল যাইতে পারে যে এই গ্রন্থের পরিধি অতিশয় সঙ্কীর্ণ। সপ্তকাণ্ড রামায়ণের একটি কাণ্ডের একটি খণ্ডাংশ লইয়া ইহ

13

অমিত্রচ্ছন্দ

18 December 2023
1
0
0

মীইকেল মধুস্ছদনের অন্যতম প্রধান কীতি বঙ্গলাহিতো অমিত্রাক্ষরের প্রবর্তন; বাংলার প্রচলিত ছন্দ ছিল পয়ার, তাহ] মিত্রন্ন্দ অর্থাৎ তাহার মধো অন্ত অক্ষরের মিল আছে। তাহার আর একটি লক্ষণ এই যে তাঁহার মধ্যে প্র

14

মেঘনাদবধ কাব্য- দ্বিতীয় সর্গ

19 December 2023
0
0
0

অস্তে গেলা দিনমণি; আইলা গোধূলি, একটি রতন ভালে। ফুটিলা কুমুদী। মুদিল। সরসে আঁখি বিরসবদনা নলিনী; কৃজনি পাথী পশিল কুলায়ে; গোষ্ঠ-গৃহে গাভী-বৃন্দ ধাব হঙ্গা রবে। আইলা শুচারু-তারা শশী সহ হাসি, শর্বরী, সুগন্ধ

15

মেঘনাদবধ কাব্য- তৃতীয় সর্গ

19 December 2023
1
0
0

প্রমোদ-উদ্যানে কাঁদে দানব-নন্দিনী প্রমীলা, পতি-বিরহে কাতরা যুবতী। অশ্রুজপি বিধুমুখী ভ্রমে ফুলবনে কহু, ব্রজ-কুঞ্জ-বনে, হায় রে, যেমনি ব্রজবালা, নাহি হেরি কদম্বের মূলে পীতধড়া পীতাম্বরে, অধরে মুরলী। কহু ব

16

মেঘনাদবধ কাব্য- চতুর্থ সর্গ

20 December 2023
1
0
0

নমি আমি, কবি-গুরু, তব পদাম্বুজে, বাল্মীকি! হে ভারতের শিরঃচূড়ামণি, তব অনুগামী দাস, রাজেন্দ্র-সঙ্গমে দীন যথা যায় দূর তীর্থ-দরশনে তব পদ-চিহ্ন ধ্যান করি দিবা নিশি, পশিয়াছে কত যাত্রী যশের মন্দিরে, দমনিয়া ভ

17

মেঘনাদবধ কাব্য -প্রথম সর্গ

19 December 2023
0
0
0

উড়িল কলম্বকুল অম্বর প্রদেশে শনশনে!বল্প শিক্ষা বীর বীরবাহ! কত যে মরিল অরি, কে পারে গণিতে? এইরূপে শত্রুমাকে বুঝিলা স্বদলে পুত্র তব, হে রাজন! কতক্ষণ পরে, প্রবেশিলা যুদ্ধে আসি নরেন্দ্র রাঘব। কনক-মুকুট

18

মেঘনাদবধ কাব্য- পঞ্চম সর্গ

21 December 2023
0
0
0

হাসে নিশি তারাময়ী ত্রিদশ-আলয়ে।। দাসীর সাধনে সাধ্বী কহিলা, সুসিদ্ধ কিন্তু চিন্তাকুল এবে বৈজয়ন্ত-ধামে মহেন্দ্র; কুরুম-শয্যা তাজি, মৌন-ভাবে বসেন ত্রিদিব-পতি রত্ন-সিংহাসনে;- সুবর্ণ-মন্দিরে স্বপ্ত আর দেব য

19

মেঘনাদবধ কাব্য- ষষ্ঠ সর্গ

21 December 2023
0
0
0

ত্যজি সে উদ্যান, বলী সৌমিত্রি কেশরী কুঞ্জবনবিহারিণী; ক্বতাঞ্জলি-পুটে চলিলা, শিবিরে যথা বিরাজেন প্রভু রঘু-রাজ; অতি দ্রুতে চলিলা সুমতি, হেরি মৃগরাজে বনে, ধায় ব্যাধ যথা অস্ত্রালয়ে, বাছি বাছি লইতে সত্বরে

20

মেঘনাদবধ কাব্য- সপ্তম সর্গ

22 December 2023
0
0
0

উদিলা আদিত্য এবে উদয়-অচলে, পদ্মপর্ণে স্বপ্ত দেব পদ্মযোনি যেন, উন্মীলি নয়নপদ্ম স্বপ্রসন্ন ভাবে, চাহিলা মহীর পানে! উল্লাসে হাসিলা কুহুমকুন্তলা মহী, মুক্তামালা গলে। উৎসবে মঙ্গলবাদ্য উথলে যেমতি দেবালয়ে, উ

21

মেঘনাদবধ কাব্য-অষ্টম সর্গ

23 December 2023
0
0
0

রাজকাজ সাধি যথা, বিরাম-মন্দিরে, প্রবেশি, রাজেন্দ্র খুলি রাখেন যতনে কিরীট; রাখিলা খুলি অস্তাচলচুড়ে দিনান্তে শিরের রত্ন তমোহ। মিহিরে দিনদেব; তারাদলে আইল। রজনী; আইলা রজনীকান্ত শান্ত সুধানিধি। শত শত অগ

22

বিশদ টীকা-টিপ্পনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যাদি (প্রথম সর্গ)

25 December 2023
0
0
0

বিষয়-সংক্ষেপ:- প্রাচীন বঙ্গীয় কবিগণ নানা দেবদেবীর বন্দনা ও মঙ্গলাচরণ করিয়া যেভাবে কাব্যের সূচনা করিতেন, তাহা না করিয়া মধুসুদন যুরোপীয় কবিগণের অনুকরণে বীণাপাণির এবং কল্পনার আবাহন (invocation) করিয়া

23

বিশদ টীকা-টিপ্পনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যাদি (দ্বিতীয় সর্গ)

25 December 2023
1
0
0

বিষয়-সংক্ষেপ:-বীরবাহুর মৃত্যুর পর মেঘনাদ রাবণের সেনাপতিপদে বৃত হইলে দিবাবসান হইল এবং রাত্রি আসিল। স্বর্গেও রাত্রির আবির্ভাব হইল। ইন্দ্র শচীসহ দেবসভায় স্বর্গসুখ উপভোগ করিতেছেন, এমন সময়ে সেখানে লক্ষ্মীদ

24

বিশদ টীকা-টিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাধ্যাদি (তৃতীয় সর্গ)

27 December 2023
0
0
0

মেঘনাদবধ-কাব্যের দ্বিতীয় সর্গোক্ত ঘটনার ম্যায় তৃতীয় সর্গোক্ত ঘটনাও সম্পূর্ণরূপে বামায়ণ-বহিভূত। প্রথম দর্গের শেষ ভাগে লঙ্কাপুরীর বহির্দেশে প্রমোদোগ্ভানে মেঘনাদের ব্যসনমত্তভাবে অবস্থ।নের কথা বলা হইয

25

বিশদ টীকাটিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যা (চতুর্থ সর্গ)

27 December 2023
0
0
0

মেঘনাদরবধ কাব্যের চতুর্থ সর্গে অশোকবনে অবরুদ্ধা সীতার সহিত সরমার' কথোপকথন-গ্রসঙ্গে সরমার নিকট সীতার পূর্বজীবনের ঘটনাবলী বিবৃত হইয়াছে ।, এই সকল ঘটন! অল্পবিস্তর রামায়ণান্থগত হইতে বাধ্য বলিয়া, সমগ্র ম

26

বিশদ টীকাটিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যাদি (পঞ্চম সর্গ)

27 December 2023
1
0
0

দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ সর্গোক্ত ঘটনাবলীর সহিত পঞ্চম সর্গোক্ত ঘটনাও বীরবাহুর মৃত্যুদিবসের রাত্রিকালে সংঘটিত হইয়াছে । এই সর্গে প্রধান বর্ণনীয় বিষয়,_মেঘনাদবধে চণ্তীদেবীর সাহাধ্য-প্রাপ্তির উদ্দেশে ল

27

বিশদ টীকা টিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাথ্যাদি (ষষ্ঠ সর্গ)

27 December 2023
1
0
0

ষষ্ঠ সর্গের মূল ঘটনা" লক্ষ্মণকতৃকি মেঘনাদবধ-_বামায়ণ হইতে গৃহীত। স্থৃতরাং ছিতীয় তৃতীয় ও পঞ্চম সর্গোক্ত ঘটনাবলীর ন্যায় ইহাঁকে রামায়ণবহিভূতি ঘটনা বলা চলে না। কিন্তু ঘটনাটি যে ভাবে নিষ্পন্ন হইয়াছে

28

বিশদ টীকা-টিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাথ্যাদি (সপ্তম সর্গ)

28 December 2023
1
0
0

সপ্তম সর্গে বধিত মূল ঘটনাটি হইতেছে,_মেঘনাদের মৃত্যুসংবাদ শ্রবণে রাবণের' ক্রোধ, এবং প্রতিহিংমাপরায়ণ রাবণের সহিত যুদ্ধে শক্তিশেলাহত হইয়া! লক্ষণের পতন। এই মূল ঘটনাটি রামায়ণ হইতে গৃহীত। কিন্তু রাঁবণের

29

বিশদ টীকা টিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যা (অষ্টম সর্গ)

28 December 2023
1
0
0

মেঘনাদবধ কাব্যের ২য়, ৩য় ও ৫ম সর্গে বগিত বিষয়সমূহের ন্ায় ৮ম সর্গে বধিত বিষয়ের সহিতও রাযায়ণের কোন সম্বন্ধ নাই। বাল্সীকির রামায়ণে উল্লিখিত হয়াছে, শক্তিশেলাহত লম্্মরণের জন্য রামচন্দ্র বিলাপ করিতে

30

বিশদ টীকা-টিগ্ননী ও ছুরহ অংশের ব্যাখ্যাদি- (নবম সর্গ)

29 December 2023
2
0
0

দৈববলে ঘে লকল কার্য সাধন করিয়াছে, তাহাতে তাহার পক্ষে অসাধ্য কোন কাধই নাই। মন্ত্রী সারণ বিনীতভাবে নিবেদন করিলেন যে, দেবানুগ্রহে ওষধি-পর্বত গন্ধমাদন স্বয়ং লঙ্কায় আসিয়। ওধধদানে লক্ষ্মণের দেহে গ্রাণসঞ

---