shabd-logo

বিশদ টীকা-টিপ্পনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যাদি (দ্বিতীয় সর্গ)

25 December 2023

4 Viewed 4

বিষয়-সংক্ষেপ:-বীরবাহুর মৃত্যুর পর মেঘনাদ রাবণের সেনাপতিপদে বৃত হইলে দিবাবসান হইল এবং রাত্রি আসিল। স্বর্গেও রাত্রির আবির্ভাব হইল। ইন্দ্র শচীসহ দেবসভায় স্বর্গসুখ উপভোগ করিতেছেন, এমন সময়ে সেখানে লক্ষ্মীদেবী আসিয়া উপস্থিত হইলেন। ইন্দ্র তাঁহার আগমনের কারণ জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলিলেন যে, রাবণের ভক্তিতে ও সেবাযত্নে আবদ্ধ হইয়া তিনি অনিচ্ছাসত্ত্বেও লঙ্কায় অবস্থান করিতে বাধ্য হইতেছেন। লঙ্কার অন্যান্য সকল রাক্ষসবীর যুদ্ধে নিহত হওয়ায় অনন্যোপায় হইয়া রাবণ এক্ষণে হতাবশিষ্ট একমাত্র বীর মেঘনাদকে সেনাপতিপদে বরণ করিয়াছে। দুর্ধর্ষ মেঘনাদ কল্য প্রভাতে নিকুম্ভিলা যজ্ঞ সমাধা করিয়া রামচন্দ্রকে আক্রমণ করিলে 'দেবকুল-প্রিয়' রামকে রক্ষা করা দুঃসাধ্য ব্যাপার হইয়া উঠিবে। এই আসন্ন বিপদে রামচন্দ্রের রক্ষাব্যবস্থা করিবার জন্য তিনি ইন্দ্রকে অনুরোধ করিতে আসিয়াছেন।

ইন্দ্র বলিলেন যে, তিনি স্বয়ং সর্বদা মেঘনাদের ভয়ে অস্ত। শিব ব্যতীত অন্য কাহারও কিছু করিবার সাধ্য নাই। এই বিপদে বিশ্বনাথ লক্ষ্মীদেবী তখন ইন্দ্রকে অবিলম্বে শিবের নিকট গমন করিতে বলিয়া লঙ্কায় প্রত্যাবর্তন করিলেন।

মাতলি রখ সজ্জিত করিয়া আনিলে ইন্দ্র শচীকে তাঁহার সহযাত্রিণী হইবার জন্য অনুরোধ করিলেন। ইন্দ্র ও শচী কৈলাসে আসিয়া উপস্থিত হইলে শিবানী তাঁহাদের কুশলবার্তা ও কৈলাসে আগমনের হেতু জিজ্ঞাসা করিলেন।

ইন্দ্র বলিলেন, জগন্মাতা পার্বতীর নিকটে জগতের কোন ঘটনাই অজ্ঞাত নহে। লঙ্কার রাজলক্ষ্মী স্বর্গে আগমন করিয়া জানাইয়া গেলেন যে, রাবণ এক্ষণে স্বীয় পুত্র দুর্ধর্ষ মেঘনাদকে রামের সহিত যুদ্ধ করিতে প্রেরণ করিবে। পরদিন প্রভাতে মেঘনায় রামচন্দ্রকে আক্রমণ করিলে, 'দেবকুলপ্রিয়' রামের রক্ষাব্যবস্থা দেবী ব্যতীত অন্য কেহ করিতে পারিবে না। দেবী রামচন্দ্রকে রূপা না করিলে প্রভাতে রামের বিনাশ অবধারিত।

দেবী উত্তর করিলেন,-রাবণ শিবের পরম ভক্ত; সুতরাং রাবণপক্ষের অহিতকর কোন কার্যের ব্যবস্থা করা দেবীর পক্ষে সম্ভবপর নহে। এতদিন শিব বাজ্ঞানশূরু হইয়া তপ্যায় মগ্ন রহিয়াছেন বলিয়াই শিবভক্ত রাবণ এইরূপ দুর্গতি ভোগ করিয়াছে।

ইন্দ্র তখন দেবীকে মিনতি করিয়া বলিলেন যে, পাপিষ্ঠ রাবণ শিববরে বলীয়ান হইয়া এমন কি, দেবগণকেও তৃণজ্ঞান করে। মায়াজাল বিস্তার করিয়া সে সুশীল ও ধর্মাত্মা রামচন্দ্রের পত্নী সীতাকে অপহরণ করিয়াছে। এইরূপ পাপাত্মার প্রতি দেবীর সহানুভূতি একান্তই অসমীচীন। অনন্তর শচীও রাবণ কর্তৃক অপহৃতা সীতার দুঃখের কাহিনী বর্ণনা করিয়া সীতার উদ্ধারের উপায় করিবার জন্ম রাবণবধের ব্যবস্থা করিতে দেবীকে অনুনয় করিলেন। দেবী প্রত্যুত্তরে বলিলেন যে, ইন্দ্র ও শচী উভয়েই রাবণ ও মেঘনাদের মৃত্যুর ব্যবস্থা করিতে অনুরোধ করিতেছেন; কিন্তু স্বয়ং শিব ব্যতীত কাহারও ইহা করিবার শক্তি নাই। শিব এখন দুর্গম যোগাসন-শৃঙ্গে তপস্যারত। ইন্দ্র কি উপায়ে সেখানে উপস্থিত হইবেন? ইন্দ্র তখন দেবীকেই যোগাসন-শৃঙ্গে গমন করিতে অনুরোধ করিলেন।

ঠিক এই সময়ে কৈলাসধামে দেবীর মন অকারণে চঞ্চল হইয়া উঠিল। বিজয়াকে জিজ্ঞাসা করিয়া দেবী জ্ঞাত হইলেন যে, বিপন্ন রাম দেবীর প্রসাদ কামনা করিয়া পৃথিবীতে তাঁহার পূজা করিতেছেন। ভক্তের প্রার্থনা জ্ঞাত হইয়া দেবী আর কোন আপত্তি না করিয়া, বিজয়ার হস্তে ইন্দ্র ও শচীর অভ্যর্থনার ভার দিয়। যোগাসন-শৃঙ্গে যাত্রার জন্য প্রস্তুত হইলেন। দেবী রতিকে স্মরণ করায় তিনি তৎক্ষণাং কৈলাসে উপস্থিত হইয়া দেবীকে মোহিনীবেশে সজ্জিত করিলেন। দেবী অতঃপর কামদেবকে আহ্বান করিবার জন্য রতিকে আদেশ করিলেন। রতি স্মরণ করিলে কামদেব আসিয়া উপস্থিত হইলেন। দেবী কামদেবকে তাঁহার সহিত যোগাসন-শৃঙ্গে শিবের ধ্যানভঙ্গ করিতে যাইতে আদেশ করিলেন। পূর্বে একবার শিবের ধ্যানভঙ্গ করিতে যাইয়া কামদেব যেভাবে বিপন্ন হইয়াছিলেন তাহা স্মরণ করিয়া যাইতে অনিচ্ছাপ্রকাশ করিলেন। দেবী কামদেবকে আশ্বাস দিয়া তাঁহার অনুগামী হইতে বলিলেন। কামের কথামত দেবী তখন স্বর্ণবর্ণ মায়ামেঘে নিজের মোহিনী মূর্তি আবৃত করিয়া যোগাসনের দিকে কামসহ যাত্রা করিলেন।

যোগাসনশৃঙ্গে উপস্থিত হইয়া দেবীর আদেশে কামদেব সম্মোহন শরে শিবকে বিদ্ধ করিলে ধ্যানমগ্ন শিব অকস্মাৎ বিক্ষুব্ধ হইয়া উঠিলেন এবং তাঁহার ললাটস্থ বহ্নি প্রদীপ্ত হইয়া উঠিল। ভীত কামদেব ভবানীর বক্ষঃস্থলে আত্মগোপন করিলেন। শিবের ধ্যানভঙ্গ হইল এবং মায়াময় স্বর্ণ মেঘের আবরণ উন্মোচন করিয়া দেবী শিবের সম্মুখে দাঁড়াইলেন।শিব দেবীকে সেই দুর্গম ও নির্জন স্থানে একাকিনী আগমন করিবার কারণ জিজ্ঞাসা করিলে দেবী বলিলেন যে, বহুদিন স্বামি-সন্দর্শনে বঞ্চিত আছেন বলিয়া তিনি আজ স্বামীর চরণদর্শনাভিলাষে আসিয়াছেন। দেবীর রূপে মুগ্ধ শিব সাদরে দেবীকে নিজের পার্শ্বে বসাইয়া বলিলেন যে, দেবীর অভিপ্রায়, ইন্দ্রের কৈলাসে আগমন এবং রামচন্দ্র কর্তৃক দেবীর আরাধনা,-এই সকল ব্যাপারই তিনি জানেন। ভক্ত রাবণের বিপদে শিব অত্যন্ত ব্যাকুল হইলেও প্রাক্তনের ফল কেহই রোধ করিতে সমর্থ নহে। তিনি দেবীকে বলিলেন,-"তুমি অবিলম্বে কামদেবকে কৈলাসে ইন্দ্রের নিকট প্রেরণ করিয়া তাহাকে মায়াদেবীর আলয়ে যাইতে আদেশ কর। মায়ার সাহায্যে লক্ষ্মণ মেঘনাদকে বধ করিতে সমর্থ হইবে।"

কামদেব দেবীর বক্ষঃস্থল হইতে বহির্গত হইয়া দ্রুতগতি কৈলাসে উপস্থিত হইয়া প্রথমে উৎকণ্ঠিতা রতিকে আশ্বস্ত করিলেন এবং পরে ইন্দ্রের নিকটে উপস্থিত হইয়া তাঁহাকে শিবের আদেশ জ্ঞাপন করিলেন। ইন্দ্রও সেই মুহূর্তে মায়াদেবীর নিকেতনে উপস্থিত হইলেন। পূর্বে যে সকল শৈব অস্ত্রে শিবপুত্র কাত্তিকেয় তারকাস্বরকে বধ করিয়াছিলেন, সেই সকল দৈব অস্ত্র ইন্দ্রকে দেখাইয়া মায়াদেবী বলিলেন যে, এই সকল মহাস্ত্রের সাহায্যে মেঘনাদ নিহত হইবে। কিন্তু এই সকল দৈবাস্থের দ্বারাও স্থায়যুদ্ধে মহাবীর মেঘনাদকে বধ করিতে দেবতা অথবা মানব কেহই সমর্থ হইবে না। সুতরাং মায়াদেবী পরদিন প্রভাতে স্বয়ং উপস্থিত থাকিয়া মেঘনাদের সহিত যুদ্ধরত লক্ষ্মণকে রক্ষা করিবেন।

দৈব অস্ত্রাদি সংগ্রহ করিয়া ইন্দ্র মহানন্দে স্বর্গে প্রত্যাবর্তন করিলেন এবং গন্ধর্বপতি চিত্ররথকে আহবান করিয়া লঙ্কায় রামচন্দ্রের শিবিরে অস্ত্রসমূহ পৌছাইয়া দিতে এবং রামচন্দ্রকে দেবানুকূল্যের বিষয় জানাইয়া আসিতে আদেশ করিলেন। যাহাতে রাক্ষসগণ দৈব ষড়যন্ত্রের বিষয় জানিতে না পারে, সেইজন্য ইন্দ্র ঐ সময়ে প্রবল ঝটিকা সৃষ্টি করিলেন। এইরূপ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে রাক্ষস প্রহরিগণ গৃহাভ্যস্তরে যাইয়া আশ্রয় লইলে, তাহাদের অজ্ঞাতসারে চিত্ররথ অস্ত্রাদিসহ রামচন্দ্রের শিবিরে আসিয়া তাঁহাকে অগ্নাদি প্রদান করিলেন এবং দেবগণের শুভেচ্ছা ও মায়াদেবীর সাহায্যের প্রতিশ্রুতির কথা জানাইলেন। রামচন্দ্র দেবগণের প্রতি নিজের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করিলেন এবং চিত্ররথও স্বর্গে প্রত্যাবর্তন করিলেন। আকস্মিক ঝড়বৃষ্টি প্রশমিত হইয়া আকাশ, পুনরায় চন্দ্র-তারকাশোভিত হইল। দুর্যোগের জন্য যে সকল রাক্ষস প্রহরী অন্যত্র আশ্রয় লইয়াছিল, তাহারাও পুনরায় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হইছা বহির্গত হইল।মেঘনাদ বধ কাব্যের দ্বিতীয় সর্গে বর্ণিত ঘটনার সহিত রামায়ণীয় ঘটনার কোন সম্পর্কই নাই। ইহাতে লক্ষ্মীদেবী, ইন্দ্র-শচী, কাম-রতি, হর-পার্বতী, মায়াদেবী এবং চিত্ররণ প্রভৃতি দেবদেবীগণ মেঘনাদনিধনোদ্দেশ্যে যে ষড়যন্ত্র জাল বিস্তার করিয়াছেন, সেই দৈব ষড়যন্ত্রের উৎস হইতেছে হোমর-র চত ইলিয়ড-কাব্যের চতুর্দশ সর্গোক্ত ঘটনাবলী। দেবরাজ জুপিটারের অনুগ্রহপুষ্ট ট্রয়ের সর্বনাশ-সাধন-মানসে জুপিটার-পত্নী জুনো নিদ্রাদেব সম্মাদের সহায়তায় 'আইডা' পর্বতশৃঙ্গে অবস্থিত জুপিটারকে নিজের রূপে সম্মো। হত করিয়া রাখেন। এই কাহিনীটিই দ্বিতীয় সর্গে কৌশলক্রমে হর- পার্বতীর উপর উপন্যস্ত করা হইয়াছে। ইহার ফলে গ্রীক দেবদেবীর চরিত্রের প্রভাবে পড়িয়া ভারতীয় 'ভক্ত-বৎসল' হর-পার্বতী চরিত্র বিকৃতি লাভ করিয়াছে সত্য; কিন্তু ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনীর সহিত এইরূপ কৌশলপূর্ণ সামঞ্জস্য বিধান করিয়া কবি আখ্যানটি বর্ণনা করিয়াছেন যে. রামায়ণীয় কাহিনীর সহিত স্বপরিচিত পাঠক ব্যতীত অপরের নিকট এই বিদেশীয় পৌরাণিক কাহিনীটির অভিনবত্ব অথবা অসঙ্গতি ধরা পড়ে না।

অস্তে গেলা দিনমণি-প্রথম সর্গের শেষাংশে রাবণ মেঘনাদকে বলিয়াছেন:-

"দেখ, অস্তাচলগামী দিননাথ এবে;

প্রভাতে যুঝি, বৎস, রাঘবের সাথে।"

বীরবাহুর মৃত্যুদিবসে মেঘনাদকে রাবণ সেনাপতিপদে বরণ করিবার অব্যবহিত পরে সূর্য অস্ত গেল।

একটি রতন ভালে-গোধূলিকালে কেবল উজ্জল সন্ধ্যা-তারকাকেই (শুক্রগ্রহ বা শুকতারাকে) আকাশে দেখিতে পাওয়া যায়। উপমেয়ের (শুকতারার) উল্লেখমাত্র না করিয়া উপমানকেই (রত্নকে) উপমেয়রূপে নির্দেশের ফলে অতিশয়োক্তি অলঙ্কার।

মুদিলা সরসে আঁখি বিরস বদনা নলিনী-সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে সরোবরে পদ্ম- গুলি নিমীলিত হইল। এস্থলে গোধূলিতে এবং নলিনীতে সজীবত্ব আরোপ করায় সমাসোক্তি অলঙ্কার।

সরসে- (সরঃ শব্দ সপ্তমীতে) সরোবরে; অপ্রচলিত প্রয়োগ।

কুলায়-নীড়, পাখীর বাসা।

গাষ্ঠীবৃন্দ-গাভী শব্দটি অর্ধতৎসম শব্দ হইলেও (গবী গাভী) সাধু বাংলায়

প্রচুরভাবে প্রযুক্ত।

সুচারুভারা-সুন্দর-নক্ষত্র-শোভিতা। শর্বরীর বিশেষণ। দূরান্বয় দোষ।শর্বরী-রজনী।

কুজনি পাখী.......... শর্বরী-বস্তুর যা স্বভাবের যথাযথ ও মনোজ্ঞ বর্ণনা হওয়ায় এখানে স্বভাবোক্তি অলঙ্কার হইয়াছে।

সুগন্ধবহু-সুরভি বায়ু।

বিলাসী-মৃদু মন্দ বায়ু বলিয়া 'শৌখিন'।

কোন কোন ফুল চুম্বি কি ধন পাইলা-কবি নিজেই লিখিয়াছিলেন:-

These lines, will, no doubt recall to your mind the lines-

"And whisper whence they stole Those balmy spoils" (Milton) And-"Like the sweet sound That breaths upon a bank of violeta Stealing and giving odour". (Twelfth Night 1. 1)

কিন্তু কবির ধারণা ছিল যে, চৌর্যবাচক steal শব্দের পরিবর্তে 'চুম্বন' শব্দের ব্যবহার সার্থকতর হইয়াছে।

দেবীর চরণাশ্রমে-নিদ্রাদেবীর চরণে।

শশিপ্রিয়া-রাত্রি, রজনী। তুলনীয়-রজনীনাথ, নিশাপতি-চন্দ্র।

উত্তরিলা-উপস্থিত হইল, অবতরণ করিল। অব-ত, ধাতু হইতে নিষ্পন্ন। তুলনীয় ঊর শব্দ (১ম সর্গ)। শব্দটি 'উত্তরিলা' (উত্তর করিল) শব্দ হইতে স্বতন্ত্র।

ত্রিদশ-আলয়ে-দেবগণের বাসস্থল স্বর্গে। বাল্য, কৈশোর ও যৌবন, কেবল এই তিনটি দশা প্রাপ্ত হন বলিয়া দেবতাগণকে 'ত্রিদশ' বলা হয়।

পুলোম-নন্দিনী-পুলোমা (পুলোমন্) নামক দানবের কন্যা। পুলোমাকে বন্ধ করিয়া ইন্দ্র শচীকে বিবাহ করেন।

চামন্ত্রী-চামর দ্বারা ব্যজনকারী।

ত্রিদিব-বা'দত্র-স্বর্গীয় বাদ্য। ত্রিদিব-স্বর্গ; ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর-এই দেবতাত্রয়ের আনন্দময় বাসস্থান।

ছয় রাগ, মূর্তিমতী ছত্রিশ রাগিণীসহ-ভারতীয় সংগীতে ভৈরব, কৌশিক, হিন্দোল, দীপক, শ্রী এবং মেঘ এই প্রধান ছয় রাগ এবং প্রত্যেক রাগের সঙ্গিনী ছয়টি

করিয়া মোট ৩৬ রাগিণীর উল্লেখ আছে।

ঊর্বশী, রম্ভা, চিত্রলেখা, মিশ্রকেশী-স্বর্গীয় অপ্সরাদের মধ্যে চারিজন।
সুকেশিনী-শুদ্ধরূপ 'শুকেশা' বা 'সুকেশী'।-ইনভাগান্ত শব্দের স্ত্রীরূপের সাদৃซে 'ছন্দের অনুরোধে-ইনী প্রত্যয় প্রযুক্ত হইয়াছে।

শিঞ্জিতে-শিল্পন অর্থাৎ নূপুরাদি অলঙ্কারের মধুর শব্দের দ্বারা।

সুধারস-অমৃত; nectar |

দেব-ওদন-দেবভোগ্য খাদ্য; ইংরেজি ambrosia শব্দের অন্তর্থক শব্দ চয়ন করা হইয়াছে।

কেশর-পুষ্পরেণু বা পরাগ।

মন্দারদাম-মন্দার ফুলের মালা। নন্দন-কাননের বৃক্ষগুলির মধ্যে মন্দার, পারিজাত, সন্তানক, কল্পতরু, ও হরিচন্দন এই কয়টি প্রসিদ্ধ।

বৈজয়ন্ত ধাম-ইন্দ্রের পুরী, অমরাবতীস্থ ইন্দ্রের প্রাসাদ।

পদ্মাক্ষী-কমল-কোরকের ন্যায় সুন্দর ও আয়ত-লোচন-বিশিষ্টা।

পুণ্ডরীকাক্ষ-পুণ্ডরীক অর্থাৎ শ্বেত পদ্মের ন্যায় আয়তলোচন যাঁহার: বিষ্ণু।

হে বারীন্দ্রযুতে-হে লক্ষ্মীদেবি! দুর্বাসার শাপে লক্ষ্মী কিছুকাল সমুদ্রগর্ভে বাস করায় তাঁহাকে সমুদ্রের কন্যারূপে কল্পনা করা হইয়াছে। ভারতীয় পুরাণসম্মত এই কল্পনার সহিত কিন্তু প্রথমসর্গোক্ত সমুদ্রপত্নী 'বারুণী' কর্তৃক লক্ষ্মীকে 'প্রিয়তমা' সখীরূপে উল্লেখ ভারতীয় পুরাণসম্মত নহে। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য উভয় দেশের পৌরাণিক কাহিনীর সংমিশ্রণের জন্যই এইরূপ অসঙ্গতি আসিয়া পড়িয়াছে।

ছে বৃত্রবিজয়ি-হে বৃত্রাসুর-পরাভবকারি ইন্দ্র!

বিলক্ষণ জান তুমি তারে-কথাটির মধ্যে প্রচ্ছন্ন ব্যঙ্গ রহিয়াছে। অন্য কেহ না জানিলেও রাবণ-পুত্র 'ইন্দ্রজিৎ' মেঘনাদের কথা ইন্দ্র নিশ্চয়ই ভুলেন নাই।

নিকুম্ভিলা যজ্ঞ-লঙ্কাপুরীস্থ নিকুন্তিলা নামক পর্বতগুহায় মেঘনাদ অগ্নিদেবের

উদ্দেশে যজ্ঞ করিয়া যুদ্ধে অজেয় হইতেন।

বৈদেহীনাথ-বিদেহ অর্থাৎ মিথিলার রাজকন্যা সীতাপতি রামচন্দ্র।

বৈনভেয়-বিনতার পুত্র গরুড়।

বল-জ্যেঠ-পরাক্রমে প্রধান।

বিহঙ্গকুলে বৈনতেয় যথা ইত্যাদি-অন্য সকল পক্ষীর সহিত তুলনায় গরুড় যেরূপ শক্তিশালী, বীরশ্রেষ্ঠ মেঘনাদ অন্যান্য রাক্ষস বীরের তুলনায় সেইরূপই পরাক্রমশালী।

স্বকর্ম- রাগ-রাগিণীদের কর্ম, অর্থাৎ গীতবাস্থ্য।বসন্তকালে পাখীকুল যথা ইত্যাদি-লক্ষ্মীদেবীর কণ্ঠস্বর স্বভাবতই এরূপ মধুক যে, বসন্তকালে কোকিলের মধুর স্বর শ্রবণে অন্যান্য পক্ষী যেরূপ স্তব্ধ হইয়া থাকে, লক্ষ্মীদেবীর কণ্ঠস্বর শ্রবণে দেব-সভাস্থ আলাপপরায়ণ রাগরাগিণীসমূহও সেইরূপ স্তব্ধ হইয়া রহিল।

স্বরীশ্বর-স্বর্ অর্থাৎ স্বর্গের অধিপতি ইন্দ্র।

পল্লগ-অশনে-সর্পভক্ষক গরুড়কে। পদ্‌+ন+গ-পল্লগ, যে পদ দ্বারা চলে না। পল্লগ হইয়াছে অশন (খাদ্য) যাহার; বহুব্রীহি সমাস।

দম্ভোলি-বজ্র।

তেঁই-<তেঞি<তেন তেন কারণেন-সেইহেতু।

সর্বশুচি-অগ্নি; অগ্নিস্পর্শে সকল দ্রব্য শুদ্ধ হয়।

উপেন্দ্রপ্রিয়া-বিষ্ণুপ্রিয়া, লক্ষ্মীদেবী। একসময়ে বিষ্ণু ইন্দ্রের অনুজরূপে দিতির গর্ভে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন বলিয়া তাঁহার নামান্তর 'উপেন্দ্র'।

বারতা বার্তা-সংবাদ

না পারি সহিতে ভার-রাবণের পাপভারে প্রপীড়িত হইয়া। কবি রাবণ-চরিত্র অত্যুজ্জ্বলভাবে চিত্রিত করিবার চেষ্টা সত্ত্বেও রামায়ণের রাবণ-চরিত্রের নিন্দনীয় অংশটি একেবারে মুছিয়া ফেলিতে সমর্থ হন নাই,-হওয়া সম্ভবপরও নহে। সেইজন্য লক্ষ্মী প্রভৃতি দেবতাগণের এবং সাঁতা, সরমা, জটায়ু, বিভীষণ প্রভৃতির উক্তিতে রামায়ণীয়- পাপিষ্ঠ রাবণ-চ'রত্র মধ্যে মধ্যে মেঘনাদবধ কাব্যে ইঙ্গিত হইয়াছে।

অনন্ত ক্লান্ত এবে-রাবণের পাপভারে পৃথিবী ভারগ্রস্ত হওয়ায় পৃথিবীধারক- বাসুকিনাগও পরিশ্রান্ত হইয়া পড়িয়াছেন।

বিরূপাক্ষ-শিব।

কোন পিতা দুহিতারে ইত্যাদি-কোন সদ্‌বিবেচক পিতাই বিবাহের পর কন্যাকে স্বামীর নিকট হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া রাখেন না। লক্ষ্মীদেবী শিবের ক্যা; অথচ স্বীয় কন্যা লক্ষ্মীদেবীকে শিবভক্ত রাবণের মঙ্গলকামনায় বিষ্ণুর নিকট হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া লঙ্কায় আবদ্ধ করিয়া রাখিয়াছেন,- ইহা শিবের ন্যায় বিজ্ঞ ব্যক্তির পক্ষে সমীচীন কার্য নহে।

এ্যম্বক-শিব: ত্রি অম্বক (নেত্র) যাহার।

অনম্বর-পথে-আকাশ-পথে। অম্বর শব্দের অর্থও আকাশ। অম্বর শব্দের অর্থাস্তর হইল 'বসন', 'আবরণ'। শেষোক্ত অর্থে ন+অম্বর (আবরণ) যাহার অনম্বর, উন্মুক্ত আকাশ। কেশব-বাসনা-বিষ্ণুর প্রিয়তমা লক্ষ্মীদেবী।

অধোদেশে-স্বর্গ হইতে নিম্নদেশে পৃথিবীস্থ লঙ্কায়।

সোনার প্রতিমা যথা ইত্যাদি-স্বর্গ হইতে লক্ষ্মীদেবী যখন উন্মুক্ত আকাশ-পথে নিম্নে অবতরণ করিতে লাগিলেন, তখন স্বচ্ছ সলিলে বিসর্জিত প্রতিমার উজ্জ্বল বর্ণে জল যেমন ঝল্ল্ করিয়া উঠে, সেইরূপ তাঁহার উজ্জ্বল বর্ণচ্ছটায় চারিদিক উদ্ভাসিত হইয়া উঠিল।

মাতলি-ইন্দ্রের সারথি।

মৃণালের রুচি-পদ্মনালের শোভা।

বিচ কমল গুণে-প্রস্ফুটিত পদ্মের জন্ম।

চলহ দেবীশুনলো ললনে!-কার্যোদ্ধারের সুবিধা হইবে ভাবিয়া ইন্দ্র সুন্দরী শচীকে তাহার সহযাত্রিণী হইবার জন্য অনুরোধ করিয়া বলিতেছেন যে, বায়ুপ্রবাহ সুরভিত হইলে তাহার আদর সমধিক হয় এবং মৃণালের আদর হয় কেবল তদগ্রে বিকশিত সুন্দর পদ্মটির জন্যই। এস্থলে উপযুক্ত দৃষ্টান্ত সাহায্যে ইন্দ্র শচীকে

সহযাত্রিণী হইতে অনুরোধ করায় দৃষ্টান্ত অলঙ্কার হইয়াছে।

বাহিরি বেগে আবরিলা কমল বদন-ইন্দ্রের বিমান আকাশ পথে স্বর্গ হইতে কৈলাসে গমনের সময়ে সেই দেবরণের বিভায় সারা জগৎ আলোকিত হওয়ায় সকলেই প্রভাতে সূর্যোদয় হইতেছে এই ভ্রাস্তিতে প্রভাত-কালোচিত কার্যে প্রবৃত্ত হইল। অত্যধিক সাদৃশ্যবশতঃ অত্যুজ্জ্বল ইন্দ্ররথের আকাশে আবির্ভাবকে সূর্যোদয় বলিয়া কবি-কল্পিত ভ্রমের ফলে এস্থলে চমৎকার ভ্রান্তিমান অলঙ্কার হইয়াছে।

বাসর বাসরঘর-প্রচলিত অর্থঃ-যে ঘরে নব-বিবাহিত বরবধূ রাত্রি যাপন করে। এখানে কুলবধূর সাধারণ শয়নাগার অর্থ ই করিতে হইবে। কিন্তু তাহা হইলে 'কুসুম শয্যা' কেন? স্বামি-স্ত্রী নিত্য পুষ্পশয্যায় শয়ন করেন না।

মানস-সকাশে-মানস সরোবরের তীরে।

শিখিপুচ্ছ চূড়। ইত্যাদি-প্রচুর উদ্ভিজ্জহেতু শ্যামল দেহ কৈলাস পর্বতের চূড়ায় নানা রত্বে গঠিত শিবালয় শ্যামদেহ শ্রীকৃষ্ণের মস্তকে বিচিত্র ময়ূরপুচ্ছের ন্যায় শোভমান। তুলনীয়,-"শিখিপুচ্ছচূড়া যেন হৃষীকেশকেশে।"

ধড়া<ধট-কটিবস্ত্র, বসন।

(তিলোত্তমাসম্ভব ১/৬৭)

মানস-সকাশে শোভে চর্চিত সে বপুঃ।উপমেয় কৈলাস পর্বত এবং তদঙ্গীভূত ভবের ভবন, স্বর্ণবর্ণ ফুলরাশি এবং নির্ঝর-নির্গত শুভ্র জলরাশিকে উপমান শ্রীকৃষ্ণ এবং তদঙ্গীভূত শিখিপুচ্ছ-চূড়া, পীতধড়া এবং শ্বেতচন্দনপ্রলেপ বলিয়া বিতর্ক করায় এখানে অতি চমৎকার 'সাঙ্গ-উৎপ্রেক্ষালঙ্কার' হইয়াছে

আনন্দ ভবনে-চিরানন্দময় কৈলাসপুরীতে।

বিজয়া ও জয়া-দেবীর সহচরীদ্বয়। পূর্বে জয়া, বিজয়া, পদ্মাবতী ইত্যাদি দেবীরই নানা নাম ছিল। পরে ইহাদের স্বতন্ত্র দেবী বলিয়া কল্পনা করা হইয়াছে।

হায়রে, কেমনে, ভাবি মনে মনে!-শিব-ভবনের অতুল ঐশ্বর্য ও সৌন্দয ভাষায় ব্যক্ত করিতে কবি সম্পূর্ণ অক্ষম বলিয়া খেদোক্তি করিতেছেন। ভাবুক ব্যক্তিরা স্ব স্ব কল্পনাশক্তির সাহায্যে যে যাহার সাধ্যমত কৈলাসের এবং শিব-ভবনের শোভা-সৌন্দর্য কল্পনা করিয়া লউক।

কিনা তুমি জান মাতঃ ইত্যাদি-সর্বজ্ঞা দেবীর পক্ষে পৃথিবীস্থ লঙ্কাসমরের হেতু ও গতি অজ্ঞাত থাকার কথা নহে।

আকুল বিগ্রহে-যুদ্ধে বারংবার পরাজিত হওয়ায় অস্থির হইয়া।

বরিয়াছে পুনঃ পুত্র মেঘনাদে আজি-পূর্বে দুইবার মেঘনাদ যুদ্ধে রাম- লক্ষ্মণকে পরাস্ত করিয়াছিল বলিয়া 'পুনঃ'।

পরন্তপ-শত্রু-নিপীড়নে সমর্থ। পর (শত্রু) + তপ+খচ।

বিশ্বধর শেষ-পৃথিবীধারণকারী অনন্তনাগ।

ইষ্টদেবে-ইষ্টদেব অগ্নিকে।

অবিদিত নহে মাতঃ ইত্যাদি-সর্বজ্ঞা দেবীর নিকট বিশ্বের অন্যান্য বিষয়ের ্যায়

মেঘনাদের বলবীর্যের কথাও অজ্ঞাত নহে।

রাবলি-রাবণপুত্র মেঘনাদ।

কুলিশে-বজ্রকে।

কাত্যায়নি- (সম্বোধনে) দেবীর নামাস্তরবিশেষ। কাত্যায়ন ঋষির আশ্রমে পূজিতা।

পরম অধর্মাচারী ইত্যাদি-বাল্মীকির অনুসরণে এস্থলে ইন্দ্র রাবণকে পরম্ পাপিষ্ঠরূপে উল্লেখ করিতেছেন। এই কাব্যে কোন কোন রাবণবিরোধী পাত্রপাত্রীর মুখে রাবণের চরিত্রের নিন্দনীয় দিকটি ইঙ্গিত হইয়াছে বটে, তবে তাহাতে রাবণের কবিকল্পিত চারিত্রিক অভ্যুন্নতি সবিশেষ ক্ষুণ্ণ হয় নাই। পক্ষান্তরে রাবণের তেজস্বী বীর চরিত্রের সহিত তুলনায়, একমাত্র, সীতা চরিত্র ব্যতীত, এই সকল ষড়যন্ত্রকারী রাবণদ্বেষী দেবদেবীচরিত্রের স্বার্থপরতা এবং পক্ষপাতিত্ব অত্যন্ত প্রকট হইয়া তাহাদের চরিত্রকেই যেন কলঙ্কিত করিয়াছে।

More Books by মাইকেল মধুসূদন দত্ত

30
Articles
মেঘনাদবধ কাব্য
0.0
মেঘনাদবধ কাব্য ১৯-শতকীয় বাঙালি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত কর্তৃক রচিত মহাকাব্য।[১] 'মেঘনাদবধ কাব্য' মধুসূদনের অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখা দ্বিতীয় কাব্য । কাব্যটি কবির সর্বশ্রেষ্ঠ কবিকীর্তি। এই অমর মহাকাব্য প্রকাশের সঙ্গে আমরা কবির প্রতিভার পূর্ণ বিকাশকালে উপস্থিত হয়। [২] ১৮৬১ সালে কাব্যটির দুইখণ্ডে প্রকাশ হয় । প্রথম খণ্ড(১–৫ সর্গ) ১৮৬১ সালের জানুয়ারী মাসে, এবং দ্বিতীয় খণ্ড (৬—৯ সর্গ) ঐ বৎসরের প্রথমার্ধে প্রকাশিত হয়। কাব্যটি মোট নয়টি সর্গে বিভক্ত। মেঘনাদবধ কাব্য হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণ অবলম্বনে রচিত[৩], যদিও এর মধ্যে নানা বিদেশী মহাকাব্যের ছাপও সুস্পষ্ট।
1

ভূমিকা মহাকাব্যের প্রকৃতি

14 December 2023
1
0
0

ইহাতে নাটকের সমস্ত সন্ধিগুলি থাকিবে, কাহিনীটি ঐতিহাসিক ঘটনা হইতে উন্নত হইবে অথব। কোন সজ্জনকে আশ্রয করিবে। ইহার ফল হইবে চতুর্বর্গপ্রাপ্তি অথবা চতুর্বর্গের যে কোন একটিও হইতে পারে। আরম্ভে নমস্কার, আশীর্ব

2

বিস্তৃতিবোধ-বিশাল রস

14 December 2023
0
0
0

আমাদের দেশের অলঙ্কারশাস্ত্র মানবহৃদয়ের প্রবৃত্তিগুলিকে প্রধানতঃ আট বা নয়টি স্থায়ীভাবে বিভক্ত করিযা আট বা নয়টি রসের পরিকল্পনা করিয়াছে। এইরূপ সাহিত্যবিচারের কতকগুলি অসুবিধা আছে। যদি স্থায়ী ভাবগুলিকে বাঁ

3

মেঘনাদবধ কাব্যে'র বৈশিষ্ট্য-পরিকল্পনা

14 December 2023
0
0
0

কিন্তু বিষয়টি গভীরভাবে বিচার করিলে মাইকেলের এই বিক্বতি সাহিত্যের দিক্ দিয়া তেমন দোষাবহ নাও হইতে পারে। সমস্ত প্রাচীন কাহিনীই কালক্রমে বিবর্তনের মধ্য দিয়া গড়িয়া উঠে এবং তাহাদের অল্পবিস্তর পরিবর্তন হইয়া

4

মেঘনাদবধ কাব্য

14 December 2023
0
0
0

হায়, নাথ, নিজ কর্মফলে মজালে রাক্ষসকুলে, মজিলে আপনি। রাবণের শক্তির মূলে ছিল দেবশ্রেষ্ঠ মহেশ্বরের রূপা। তাই স্বয়ং উমা যখন মহেশ্বরকে বশীভূত করিতে গেলেন তখন তিনি কন্দর্পের সাহায্য গ্রহণ করিলেন যাহাতে তপ

5

চরিত্রসৃষ্টি-দেবদেবী

14 December 2023
0
0
0

শুধু মৌলিক পরিকল্পনায় নহে, চরিত্রস্বষ্টিতেও 'মেঘনাদবধ কাব্য' মহাকাব্যের লক্ষণাক্রান্ত। প্রথমেই দেবদেবীদের কথা ধরা যাইতে পারে। ইলিয়াডে দেবদেবীগণ মানব-মানবীর স্থায়। মানব-মানবীর সব দোষগুণই তাঁহাদের আছে,

6

রাম-লক্ষ্মণ-রাবণ-মেঘনাদ

14 December 2023
0
0
0

এই পরিপ্রেক্ষিতে রাম ও লক্ষ্মণের এবং তাঁহাদের সহযোগীদের চরিত্র বিচার করিতে হইবে। 'মেঘনাদবধ কাব্যে'র রাম ও লক্ষ্মণ মাইকেলের প্রতিভার অপূর্ণতার পরিচায়ক এইরূপ মত বহু লোকে প্রকাশ করিয়াছেন এবং এই মন্তের আং

7

প্রমীলা

15 December 2023
0
0
0

মেঘনাদের জীবনের এশ্বব ও মৃতার মহিমা সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করিবাব জন্য কৰি প্রমীলার চরিত্রের অবতারণা করিযাহেন , মেঘনাদ শুধু বাসববিলধী বীব নহেন, তিনি যোগ্য পিতামাতার ঘোগ্য পুন্র? তছুপরি তিনি বীধবতী সাধ্বী

8

সীতা

15 December 2023
0
0
0

মেঘনাদ ও প্রমীলার দ্রাম্পত্যজীবনের যে চিত্র এই গ্রন্থে দেওয়া! হইয়াছে তাহা মাইকেলের পরিকল্পনার স্বকীয়তা প্রমাণ করে। ইহা! পরোক্ষভাবে গ্রন্থের মৌলিক পরিকল্পনার উপরেও আলোকসম্পাত করে । মেঘনাদ ও প্রমীলার

9

মেঘনাদবধ কাব্যের ভাব

15 December 2023
0
0
0

“মেধনাদবধ কাব্যের মহাকাঁব্যোচিত পরিকল্পনা ও চওিত্রস্্টির মহিমার উল্লেখের পর উহার বর্ণনার গজন্বিতার কথা বলা প্রয়োজন | . ভাঘ। ভাব্রেই বহন মাত্র এবং ভাষা ছড়া কপির ভ।ব৪ অভিব্যক্ত হইতে পালে ন।। মাইকেলের

10

উপমা

15 December 2023
0
0
0

মহাদেবের যে বর্ণনা উল্লিখিত হইয়াছে তাহার উপমা-সমৃদ্ধি লক্ষণীয় । হোমারের অন্ততম প্রধান গুণ উপমার বৈশিষ্ট্য । হোমার অধিকাংশ বিষয়কে উপমাঁর সাহায্যে বর্ণনা করিয়ীছেন। সাধারণতঃ তাহার উপমাগুলি উপমান ও উপ

11

বর্ণনা

15 December 2023
0
0
0

'মেঘনাদবধ কাব্যে বহু স্দীর্ঘ বর্ণনা আছে এবং সেই সব বর্ণনার বৈচিত্র্য ও মাধুর্য মাইকেলের প্রতিভার স্বকীয়তার সাক্ষ্য দেয়। এই প্রতিভার বৈশিষ্ট্য-_এশ্বর্বোধ। কাব্যের প্রারন্তেই দেখি রাবণ এক অপূর্ব সভায়

12

দোষ

15 December 2023
1
0
0

বহগুণসম্বন্বিত হইলেও মেঘনাদবধ কাব্য ক্রটিশূন্ত নহে এবং সেই প্রসঙ্গের আলোচনা! আবশ্যক । প্রথমেই বল যাইতে পারে যে এই গ্রন্থের পরিধি অতিশয় সঙ্কীর্ণ। সপ্তকাণ্ড রামায়ণের একটি কাণ্ডের একটি খণ্ডাংশ লইয়া ইহ

13

অমিত্রচ্ছন্দ

18 December 2023
1
0
0

মীইকেল মধুস্ছদনের অন্যতম প্রধান কীতি বঙ্গলাহিতো অমিত্রাক্ষরের প্রবর্তন; বাংলার প্রচলিত ছন্দ ছিল পয়ার, তাহ] মিত্রন্ন্দ অর্থাৎ তাহার মধো অন্ত অক্ষরের মিল আছে। তাহার আর একটি লক্ষণ এই যে তাঁহার মধ্যে প্র

14

মেঘনাদবধ কাব্য- দ্বিতীয় সর্গ

19 December 2023
0
0
0

অস্তে গেলা দিনমণি; আইলা গোধূলি, একটি রতন ভালে। ফুটিলা কুমুদী। মুদিল। সরসে আঁখি বিরসবদনা নলিনী; কৃজনি পাথী পশিল কুলায়ে; গোষ্ঠ-গৃহে গাভী-বৃন্দ ধাব হঙ্গা রবে। আইলা শুচারু-তারা শশী সহ হাসি, শর্বরী, সুগন্ধ

15

মেঘনাদবধ কাব্য- তৃতীয় সর্গ

19 December 2023
1
0
0

প্রমোদ-উদ্যানে কাঁদে দানব-নন্দিনী প্রমীলা, পতি-বিরহে কাতরা যুবতী। অশ্রুজপি বিধুমুখী ভ্রমে ফুলবনে কহু, ব্রজ-কুঞ্জ-বনে, হায় রে, যেমনি ব্রজবালা, নাহি হেরি কদম্বের মূলে পীতধড়া পীতাম্বরে, অধরে মুরলী। কহু ব

16

মেঘনাদবধ কাব্য- চতুর্থ সর্গ

20 December 2023
1
0
0

নমি আমি, কবি-গুরু, তব পদাম্বুজে, বাল্মীকি! হে ভারতের শিরঃচূড়ামণি, তব অনুগামী দাস, রাজেন্দ্র-সঙ্গমে দীন যথা যায় দূর তীর্থ-দরশনে তব পদ-চিহ্ন ধ্যান করি দিবা নিশি, পশিয়াছে কত যাত্রী যশের মন্দিরে, দমনিয়া ভ

17

মেঘনাদবধ কাব্য -প্রথম সর্গ

19 December 2023
0
0
0

উড়িল কলম্বকুল অম্বর প্রদেশে শনশনে!বল্প শিক্ষা বীর বীরবাহ! কত যে মরিল অরি, কে পারে গণিতে? এইরূপে শত্রুমাকে বুঝিলা স্বদলে পুত্র তব, হে রাজন! কতক্ষণ পরে, প্রবেশিলা যুদ্ধে আসি নরেন্দ্র রাঘব। কনক-মুকুট

18

মেঘনাদবধ কাব্য- পঞ্চম সর্গ

21 December 2023
0
0
0

হাসে নিশি তারাময়ী ত্রিদশ-আলয়ে।। দাসীর সাধনে সাধ্বী কহিলা, সুসিদ্ধ কিন্তু চিন্তাকুল এবে বৈজয়ন্ত-ধামে মহেন্দ্র; কুরুম-শয্যা তাজি, মৌন-ভাবে বসেন ত্রিদিব-পতি রত্ন-সিংহাসনে;- সুবর্ণ-মন্দিরে স্বপ্ত আর দেব য

19

মেঘনাদবধ কাব্য- ষষ্ঠ সর্গ

21 December 2023
0
0
0

ত্যজি সে উদ্যান, বলী সৌমিত্রি কেশরী কুঞ্জবনবিহারিণী; ক্বতাঞ্জলি-পুটে চলিলা, শিবিরে যথা বিরাজেন প্রভু রঘু-রাজ; অতি দ্রুতে চলিলা সুমতি, হেরি মৃগরাজে বনে, ধায় ব্যাধ যথা অস্ত্রালয়ে, বাছি বাছি লইতে সত্বরে

20

মেঘনাদবধ কাব্য- সপ্তম সর্গ

22 December 2023
0
0
0

উদিলা আদিত্য এবে উদয়-অচলে, পদ্মপর্ণে স্বপ্ত দেব পদ্মযোনি যেন, উন্মীলি নয়নপদ্ম স্বপ্রসন্ন ভাবে, চাহিলা মহীর পানে! উল্লাসে হাসিলা কুহুমকুন্তলা মহী, মুক্তামালা গলে। উৎসবে মঙ্গলবাদ্য উথলে যেমতি দেবালয়ে, উ

21

মেঘনাদবধ কাব্য-অষ্টম সর্গ

23 December 2023
0
0
0

রাজকাজ সাধি যথা, বিরাম-মন্দিরে, প্রবেশি, রাজেন্দ্র খুলি রাখেন যতনে কিরীট; রাখিলা খুলি অস্তাচলচুড়ে দিনান্তে শিরের রত্ন তমোহ। মিহিরে দিনদেব; তারাদলে আইল। রজনী; আইলা রজনীকান্ত শান্ত সুধানিধি। শত শত অগ

22

বিশদ টীকা-টিপ্পনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যাদি (প্রথম সর্গ)

25 December 2023
0
0
0

বিষয়-সংক্ষেপ:- প্রাচীন বঙ্গীয় কবিগণ নানা দেবদেবীর বন্দনা ও মঙ্গলাচরণ করিয়া যেভাবে কাব্যের সূচনা করিতেন, তাহা না করিয়া মধুসুদন যুরোপীয় কবিগণের অনুকরণে বীণাপাণির এবং কল্পনার আবাহন (invocation) করিয়া

23

বিশদ টীকা-টিপ্পনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যাদি (দ্বিতীয় সর্গ)

25 December 2023
1
0
0

বিষয়-সংক্ষেপ:-বীরবাহুর মৃত্যুর পর মেঘনাদ রাবণের সেনাপতিপদে বৃত হইলে দিবাবসান হইল এবং রাত্রি আসিল। স্বর্গেও রাত্রির আবির্ভাব হইল। ইন্দ্র শচীসহ দেবসভায় স্বর্গসুখ উপভোগ করিতেছেন, এমন সময়ে সেখানে লক্ষ্মীদ

24

বিশদ টীকা-টিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাধ্যাদি (তৃতীয় সর্গ)

27 December 2023
0
0
0

মেঘনাদবধ-কাব্যের দ্বিতীয় সর্গোক্ত ঘটনার ম্যায় তৃতীয় সর্গোক্ত ঘটনাও সম্পূর্ণরূপে বামায়ণ-বহিভূত। প্রথম দর্গের শেষ ভাগে লঙ্কাপুরীর বহির্দেশে প্রমোদোগ্ভানে মেঘনাদের ব্যসনমত্তভাবে অবস্থ।নের কথা বলা হইয

25

বিশদ টীকাটিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যা (চতুর্থ সর্গ)

27 December 2023
0
0
0

মেঘনাদরবধ কাব্যের চতুর্থ সর্গে অশোকবনে অবরুদ্ধা সীতার সহিত সরমার' কথোপকথন-গ্রসঙ্গে সরমার নিকট সীতার পূর্বজীবনের ঘটনাবলী বিবৃত হইয়াছে ।, এই সকল ঘটন! অল্পবিস্তর রামায়ণান্থগত হইতে বাধ্য বলিয়া, সমগ্র ম

26

বিশদ টীকাটিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যাদি (পঞ্চম সর্গ)

27 December 2023
1
0
0

দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ সর্গোক্ত ঘটনাবলীর সহিত পঞ্চম সর্গোক্ত ঘটনাও বীরবাহুর মৃত্যুদিবসের রাত্রিকালে সংঘটিত হইয়াছে । এই সর্গে প্রধান বর্ণনীয় বিষয়,_মেঘনাদবধে চণ্তীদেবীর সাহাধ্য-প্রাপ্তির উদ্দেশে ল

27

বিশদ টীকা টিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাথ্যাদি (ষষ্ঠ সর্গ)

27 December 2023
1
0
0

ষষ্ঠ সর্গের মূল ঘটনা" লক্ষ্মণকতৃকি মেঘনাদবধ-_বামায়ণ হইতে গৃহীত। স্থৃতরাং ছিতীয় তৃতীয় ও পঞ্চম সর্গোক্ত ঘটনাবলীর ন্যায় ইহাঁকে রামায়ণবহিভূতি ঘটনা বলা চলে না। কিন্তু ঘটনাটি যে ভাবে নিষ্পন্ন হইয়াছে

28

বিশদ টীকা-টিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাথ্যাদি (সপ্তম সর্গ)

28 December 2023
1
0
0

সপ্তম সর্গে বধিত মূল ঘটনাটি হইতেছে,_মেঘনাদের মৃত্যুসংবাদ শ্রবণে রাবণের' ক্রোধ, এবং প্রতিহিংমাপরায়ণ রাবণের সহিত যুদ্ধে শক্তিশেলাহত হইয়া! লক্ষণের পতন। এই মূল ঘটনাটি রামায়ণ হইতে গৃহীত। কিন্তু রাঁবণের

29

বিশদ টীকা টিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যা (অষ্টম সর্গ)

28 December 2023
1
0
0

মেঘনাদবধ কাব্যের ২য়, ৩য় ও ৫ম সর্গে বগিত বিষয়সমূহের ন্ায় ৮ম সর্গে বধিত বিষয়ের সহিতও রাযায়ণের কোন সম্বন্ধ নাই। বাল্সীকির রামায়ণে উল্লিখিত হয়াছে, শক্তিশেলাহত লম্্মরণের জন্য রামচন্দ্র বিলাপ করিতে

30

বিশদ টীকা-টিগ্ননী ও ছুরহ অংশের ব্যাখ্যাদি- (নবম সর্গ)

29 December 2023
2
0
0

দৈববলে ঘে লকল কার্য সাধন করিয়াছে, তাহাতে তাহার পক্ষে অসাধ্য কোন কাধই নাই। মন্ত্রী সারণ বিনীতভাবে নিবেদন করিলেন যে, দেবানুগ্রহে ওষধি-পর্বত গন্ধমাদন স্বয়ং লঙ্কায় আসিয়। ওধধদানে লক্ষ্মণের দেহে গ্রাণসঞ

---