মেঘনাদবধ কাব্যের ২য়, ৩য় ও ৫ম সর্গে বগিত বিষয়সমূহের ন্ায় ৮ম সর্গে বধিত বিষয়ের সহিতও রাযায়ণের কোন সম্বন্ধ নাই। বাল্সীকির রামায়ণে উল্লিখিত হয়াছে, শক্তিশেলাহত লম্্মরণের জন্য রামচন্দ্র বিলাপ করিতে আর্ত করিলে, ভেষজতত্বজ্ঞ বানর হুষেণ রামকে সাত্বনা দিয়া বলিলেন যে, লক্ষণের দেহের বর্ণ ও অন্য লক্ষণসমূহ দেখিয়! তিনি তাহার প্রাণবিয়োগ হয় নাই বলিয়া বুঝিতে পারিয়াছেন। অতঃপর তিনি “বিশল্যকরণী', “সাবণ্যকরণী” “সক্বীবকরণী” এবং 'সন্ধানী”--এই চারিপ্রকার ওষধ আনয়ন করিবার জন্য হুনূমানকে ওষধি-পর্বতে প্রেরণ করিলেন । ওঁষধ চিনিতে না পারিয়া হনৃমান সমগ্র পর্বতশৃঙ্গ উৎপাটন করিয়! আনিলে, স্ষে তাহ হইতে উপযুক্ত ওষধি নির্বাচন করিয়। লক্্ণকে পুনরুজ্জীবিত করিয়াছিলেন । অষ্টম সর্গের শেষ দিকে উঁষধ সংগ্রহের জন্য হনৃমানকে প্রেরণ করিবার কথা আছে বটে,-তবৰে এই ওুষধের সন্ধান মায়াদেবীর সাহায্যে প্রেতপুরীতে গমন করিয়া মৃত পিতা৷ দশরথের প্রেতাত্মার নিকট রাম পাইয়াছিলেন বলিয়৷ উল্লিখিত হইয়াছে । পরলোকগত দশরথের সহিত: রাঁমচন্দ্রের সাক্ষাৎকারের কথা রামায়ণেও আছে ;-কিন্তু উহা! ঘটিয়াছিল রাবণবধ ও সীতার অগ্রি-পরীক্ষাঁর পরে | সেই সময়ে অন্থান্ত দেবগণের সহিত ইন্দ্রলৌকবাসী দশরথ বিমানে আবিভূত হইয়া রামচন্দ্র ও লক্ষ্মণকে আশীবাদ করিয়! গিয়াছিলেন। রামায়ণোক্ত রায়-দশরথ-সাক্ষাৎকার ব্যাপারটিকে একটু পরিবন্তিত করিয়! কৰি প্রেতপুরীতে উভয়ের সাক্ষাৎকার কল্পনা করিয়াছেন? এই প্রসঙ্গে রামচন্দ্রের প্রেতপুরীদর্শনের যে বর্ণনা কর! হইক্সাছে, তাহা গ্রধানতঃ ভাজিল ও দাস্তের কাঁব্য হইতে গৃহীত। নরকের ভয়ানকতা ও বীভৎসতা৷ অতি চমৎকারভাবে বর্ণনা .করিয়া এই সর্গের কয়েকস্থলে কবি ভয়ানক ও বীভত্স রস স্টি করিয়াছেন। কাধষোর উপজীব্য রসসমূহের মধ্যে অন্ততম প্রধান বম হইলেও, বীভৎস রসের সার্থক পরিবেশন অতি দুরূহ কার্ধ। মরক্ষের ভীষণ ও বীভৎস পরিবেশের মাহায্যে এই দুরূহ কার্ধটি কবি অতিশয় সাফল্যের. সহিত সম্পাদন করিয়াছেন। বিষয়-সংক্ষেপ 2 রাবণের হন্তে লক্ষ্মণ শেলাহত হুইয়া পতিত হইবার পর বীরবাহুর মৃত্যুর পরদিবসে দিবাবসানে নুর্য অন্ত গেল। যুদ্ধক্ষেত্রে চারিদিকে অগ্রিকুণ্ত প্রজালিত হইল। ভূপতিত লক্ষণের নিকটে মৃছিতাবস্থায় লুণ্ঠিত রামচন্দ্র ভ্রাতার শোকে অবিরল অক্রবর্ণ করিতেছেন। বিভীষণ, স্থগ্রীব, হনুমান প্রভৃতি বিষ্রমুখে সম্মুথে অবস্থিত ।
কিছুক্ষণ পরে চেতনাপ্রাঞ্ধ হইয়! রাম লক্ষণের অপামান্ত ভ্রাতৃপ্রেমের নানা! কথা স্মরণ করিয়া করুণভাঁবে বিলাপ করিতে লাগিলেন।
কৈলামে রামচন্দ্রের ছুঃখে ছুঃখিত পার্বতীর অশ্রু ঝরিয় মহাদেবের অঙ্গে পতিত হইতেছে । শিব পার্বতীর অশ্রবর্ষণের হেতু জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলিলেন ষে লঙ্কায় লক্ষণের শোকে রাম যে করুণ বিলাপ করিতেছে, তাহ কি তিনি শুনিতে পাইতেছেন না? রামের বিলাপে তাহার মন আকুল হইয়াছে। এখন হইতে কোন ভক্তই আর তাহার পুজ। করিবে না) তাহার নাম কলঙ্কে পূর্ণ হইল। দেবী শিবের অনিচ্ছাসত্বেও তীহার তপোভ্গ করিয়াছেন, তাই বোধ হয় ভক্তের নিকটে এইরূপে হতমান করিয়া! শিব দেবীর দণ্ডবিধান করিলেন। এইভাবে শিবকে অন্নুষোগ করিয়া দেবী অভিমানভরে চুপ করিলেন। শিব তখন ঈষৎ হাপিয়া বলিলেন যে, এইরূপ তুচ্ছ বিষয় লইয়া! দেবীর দুঃখ করা উচিত নয়। তিনি দেবীকে বলিলেন যে,.তিনি যেন মায়াদেবীর সহিত রামকে যমপুরীতে প্রেরণ করেন। দেখানে রামের পিতা দশরথ লক্ষণের পুনজাঁবন লাভের উপায় রামকে বলিয়া দিবেন । শিবের প্রদত্ত ত্রিশূল লইয়া মায়া অনায়াসে যমালয়ে পৌঁছিতে পারিবেন ।
দুর্গা স্মরণ করিলে মায়! ততক্ষণাৎ কৈলামে আমিয়! পৌছিলেন। হুর্গা তাহাকে লঙ্কাপুরে লক্ষণের শোকে আকুল রামের নিকটে যাইয়া তাহাকে ঘমপুরে লইয়া ঘাইতে বলিলেন। সেখানে দশরথের প্রেতাতা লক্ষ্মণ ও রামপক্ষীয় অন্তান্ত বীরের পুনর্জাবন লাভের উপায় বলিয়া দিবেন। এই বলিয়া দেবী অন্ধকার ষমপুরীতে পথপ্রদর্শনের জন্য মায়ার হঝ্ডে শিবের ব্রিশুল দান করিলেন।
মায়া কৈলাস হইতে আকাশপথে লঙ্কায় রামের নিকটে আসিয়া তাহার কানে কানে বলিলেন, “রাম শোক ত্যাগকর। লক্ষণ পুনর্জীবন লাভ করিবে; সমান করিয়া পৰিত্র দেহে তুমি আমার সঙ্গে যমালয়ে যাত্রা কর। শিবের কৃপায় তুমি সশরীরে সেখানে প্রবেশ করিতে পারিবে। সেখানে তোমার পিতা দশরথ লক্ষণের পুনরজীবন লাভের উপায় বলিয়] দিবেন”. .
অনৃশ্থা। মায়ার কথা শ্রবণে রামচন্দ্র বিস্মিত হইলেদ.। ্বগ্রীর প্রভৃতির সাবধানে লক্ষণের দেহ রক্ষা] করিতে বলিয়া মমুত্রে যাইয়া স্বানতর্পণ করিয়া শিবিরে ফিরিয়। তিনি স্ড়ঙ্গপথে মায়াদেবীর অন্গমরণ করিলেন। কিছুক্ষণ অগ্রসর হইবার পর রাম ভীষণ জলকল্লোলধবনি শ্রবণ করিবেন। তিনি সভয়ে চাহিয়া দেখিলেন সম্মুথে চিরতমমাবৃত ষমালয় এবং তাহার পার্খ দিয়া পরিখার মত উত্তপ্ত ৫বতরণী নদী প্রবাহিত। সেখানে স্ুর্ধ-চন্্রনক্ষত্রের কোন আলোক নাই। বাযুগর্ড অগ্নিময় মেঘে মে আকাশ পরিপূর্ণ। রামচন্দ্র সবিস্ময়ে বৈতরণীর উপর একটি অদ্ভুত সেতু দেখিলেন। সে সেতু মুহুর্তে মুহূর্তে সুন্দর ও ভীষণ নান! রূপ ধারণ করিতেছে । এদিক হইতে লক্ষ কোটি প্রাণী কেহ বা হাহাকার ধ্বনি করিয়া, কেহ বা মনের আনন্দে সেই সেতুর দিকে ধাবিত হইতেছে । রামচন্দ্র সেতুর এইরূপ রূপ পরিবর্তনের এবং অগণিত প্রাণীর সে দিকে ধাবিত হুইবার কারণ মায়াদেবীকে জিজ্ঞাসা করিলে, তিনি বলিলেন যে, এই সেতু কামরূপী। ইহ! পাপীদের পক্ষে অতি ভীষণ, কিন্ত পুণ্যাত্মাদের পক্ষে অতি মনোরম এবং সুখকর । সমাগত প্রাণিগণের মধ্যে পুণ্যবান্ যাহারা, তাহারা অনায়াসে সেতুর সাহায্যে বৈতরণী পার হইয়া যায়? কিন্তু পাপাত্মারা সেতুদর্শনে ভীত হুইয়! াতরাইয়৷ পার হইতে চীয়। নদীর তপ্ত জলে তাহাদের দেহ দগ্ধ হয় এবং তীরে যমদুতেরাও নানারপ যন্ত্রণা দেয়। রাম মায়ার সহিত ধীরে ধীরে দেতুর নিকটে উপস্থিত হইলে, ভীষণাকৃতি যমদূত তাহাদের পথরোধ করিয় পরিচয় জিজ্ঞাসা করিল। মায়াদেবী ঈষৎ হাসিয়া শিবের ত্রিশূল দেখাইলেন। যমদূত প্রণাম করিয়। সরিয়। দাড়াইল এবং পেতুও স্ব্ণময় কাস্তি ধারণ করিল। বৈতরণী পার হুইয়! উভয়ে সম্মুখে অগ্নিচক্রবেষিত লৌহময় যমপুরীর ভ্বার দেখিতে পাইলেন। এখানে রাম প্রমূর্ত অবস্থায় জর, অজীর্ণতা, স্থরামত্ততা, কামোন্সত্ততা, যক্ষা, বিহ্ুচিক।, উন্মাদ প্রভৃতি প্রাণবিনাশক রোগসমূহকে দেখিতে পাইলেন। ইহাদের সহিত রামচন্দ্র যুদ্ধ, হত্যা, আত্মহত্য। প্রভৃতিকেও প্রনূর্ত অবস্থায় দেখিতে পাইলেন। মায়াদেবী বলিলেন যে, এই সকল যমদৃত প্রাণিসমূহকে যমালয়ে আনয়ন করিবার জন্য পৃথিবীতে নানাবেশে ভ্রমণ কৰিয়! বেড়ায়। এই _দ্বারটি যমালয়ের দক্ষিণ ঘ্ধার। যমালয়ে জীবাত্মারা কি ভাবে বপবাম করে, তাহা তিনি আজ রামকে দ্রেখাইবেন বলিলেন। রাম মায়ার নহিিত যমপুরীতে প্রবেশ করিলেন। চারিদিক যেন ভূকম্পনে কম্পিত হইতেছে । মেধসমূহ অগ্নিবর্ষণ করিতেছে এবং শ্শানের দুর্গন্ধ, সমস্ত দেশ পূর্ণ হইয়া রহিয়াছে। রামচনত স্মুখে আর্তনীদকারী অসংখ্য গ্রাণিপূর্ণ একটি প্রজবন্ত স্থুদ দেখিতে পাইবেন। মীয়াদেবী বঙ্িলেন ইহার নাম 'রৌরব নরকঃ। ইহার পরে মায়। রামকে অদুরস্থিত পৃতিগদ্ধময় তপ্ত তৈলপূর্ণ 'কুস্তীপাক নরক, কিংবা “অন্ধতম নরক' কোনটি প্রথম দেখিতে চান জিজ্ঞাসা করিলে রাম বলিলেন ষে, তিনি আর জীবাত্মাদের যন্ত্রণা দেখিয়া! সহ. করিতে পারিতেছেন ন|। পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করিলেই নান। প্রলোভনে পড়িয়া! মানুষকে পাপ করিতেই হয়; সেই পাপের শান্তি যদি এতই ভীষণ হয়, তবে পৃথিবীতে স্বেচ্ছায় কে জন্মগ্রহণ করিতে চাহিবে? মায়া বলিলেন যে, এমন কোন বিষ নাই, যাহার প্রতিষেধক ওধধও নাই। পৃথিবীর কর্মক্ষেত্রে পাপের মধ্যে থাকিয়া যে পাপের প্রলোভনের সহিত সংগ্রাম করে, দেবগণ সর্বদা তাহার সহায় এবং ধর্ম তাহাকে রক্ষা করেন। নরকদর্শনে যদ্দি রামের আর ইচ্ছা না থাকে, তবে তিনি রামকে অন্তত্র লইয়! যাইবেন।
কিছুদূর অগ্রপর হইয়! রাম একটি নিস্তব্ধ ্লানমআলোকিত, বিশাল অরণ্যে প্রবেশ করিলেন। সহসা লক্ষ লক্ষ আত্মা আপিয়া৷ রাঁমকে বেষ্টন করিয়া তিনি কে, এবং দেহধারী প্রাণী হইয়াও তিনি কিরূপে সেখানে আসিয়ীছেন, তাহা জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল। মৃত্যুর পর হইতে তাহারা মানুষের কোন কথাই শুনিতে পায় নাই বলিল। রাম নিজের পরিচয় দয়া বলিলেন যে, শিবের আদেশে তিনি পিতা দশরথের সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিয়াছেন। জনৈক প্রেতাত্মা বলিল যে, রামের হুস্তেই পঞ্চবটা বনে সে নিহত হইয়াছিল। রাঁম চমকিতভাবে চাহিয়া দেখিলেন যে, মে মারীচ। রামের প্রশ্নের উত্তরে সে বলিল ষে, রাবণের আদেশে রামকে প্রতারিত করায় তাহার এই নিরানন্দ নিস্তব্ধ বনে অবস্থিতি। সেই বনে রাম খর ও দুষণকেও দেখিলেন) তাহারা রামকে দেখিয়া দূরে সরিয়৷ গেল। হঠাৎ ভীষণ শবে বন পূর্ণ হইল এবং প্রেতগণ ভীতমন্ত্রস্তভাবে চারিদিকে পলায়ন করিল। মায়াদেবী বলিলেন যে, এই সকল প্রেতাতব। বিভিন্ন নরককুণ্ডে বান করে এবং মধ্যে মধ্যে এই নিস্তব্ধ “বিলাপ-বনে” আসিয়! নীরবে বিলাপ করে। প্রেতাত্মাদিগকে যমদূতগণ স্ব স্ব নরককুণ্ডে তাড়াইয়। লইয়া যাইতেছে, ইহা তিনি রামকে দেখাইলেন।
আরও কিছুদূর অগ্রমর হইয়৷ রাম ভীষণ আর্তনাদ শুনিয়া চমকিয়া চাহি দেখিলেন যে, কাস্তি ও লাবপাশুন্য লক্ষ লক্ষ নারী কেহ মন্তকের দীর্ঘ কেশ ছি'ডিতেছে, কেহ নখে বক্ষ বিদীর্ণ করিতেছে, কেহ বা চক্ুদ্বপ্প উৎপাঁটিত করিবার চেষ্টা করিতেছে এবং আত্মধিক্কার সহকারে বিলাপ করিয়া বলিতেছে যে, এই সকল অন্গগ্রত্যঙ্গের সেবায় পাপের মধ্যে জীবন কাটাইয়! এখন তাহারা তাহার ফল ভোগ করিতেছে। 'কুখমিত কদাকার যমদৃতীগণ কর্তৃক তাড়িত হইয়া! নারীগণলিয়। গেল। মায়াদেবী রামকে বলিলেন যে, এই সকল নাবী রূপযৌবন-মত্বা-হইয়| পৃথিবীতে বিলাস-ব্যদমে জীবন কাটাইয়াছে। অনস্তর মায়াদেবী অন্যদিকে রামের দৃষ্টি আকর্ষণ করিলেন। রাম চাছিয়। দেখিলেন,_স্থন্দর বেশভূষায় মণ্ডিত মনোমুগ্ধকরী স্থন্দরী নারীর দল মধুর নৃঙ্গীত করিতে করিতে অগ্রসর হইতেছে । অন্য দিক হইতে অতি রূপবান একদল পুরুষ অগ্রসর হইল। পুরুষগণকে দেখিয়া নারীগণ হাবভাববিগামে তাহাদের মন মুগ্ধ করিয়া, এক এক জন নারী এক এক জন পুরুষের মহিত বন্মধ্যে অনৃস্ত হইল। ক্ষণেক পরেই বন আর্ভনাদে পূর্ণ হইল। রাম বিশন্মিত হইয়া দেখিলেন ষে, পুরুষ ও নারীগণ পরস্পর মারামীরি করিয়া রক্তপাত করিতেছে । যমদূতগণ আসিয়। মুদগরাঘাতে উভয় দলকে বিতাড়িত করিল। মায়া বলিলেন,_এই নারীগণ এবং পুরুষগণ জীবনে কামের বশীভূত হইয়া ধর্মীধর্মজ্ঞান ও লঙ্জ] বিসর্জন দিয় কাম-বাসন। চরিতার্থ করিয়াছে। এইরূপ লাঁলসাময় মিলনের বিষময় ফল জীবনেই বহব্যক্তি/ ভোগ করিয়! আসে। রাম মায়াকে বলিলেন যে, মায়ার কপায় তিনি যমপুরে অনেক অদ্ভুত ব্যাপার দেখিলেন। কিন্তু কোথায় তিনি দশরথের দর্শন পাইবেন? লক্ষণের পুনজীঁবন লাভের উপায় জানিবার জন্য রামকে দশরথের নিকট লইয়া যাইতে তিনি মায়ার নিকট প্রার্থনা করিলেন। মায়! ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন যে, রাম বিশাল প্রেতপুরীর অতি অল্প অংশই দেখিয়াছেন। ইহার পূর্বপ্রান্তে সতী লাধবী নারীগণ অতীব মনোহর স্থানে পরম আনন্দে বাঁস করেন। সেখানে যাইবার প্রয়োজন নাই। তীহীরা এখন পুরীর উত্তরাংশে যাইবেন এবং সেইখানেই রাম পিতার দর্শন পাইবেন । যমালয়ের উত্তর দিকে গমনকাঁলে রাম নানারূপ পর্বত দেখিলেন,-কোন কোনটি ৃক্ষাদিশূত্য, কোন কোনটি বা উত্তঙ্গ ও তুষারাচ্ছারদিত এবং কোন কোনটি বা আগ্নেয়গিরি । রাম অসংখ্য উত্তপ্ত মরুভূমি এবং সর্পাদিপুর্ণ বিশাল বিস্তীর্ণ একটি হর্দ দেখিতে পাইলেন। এই অংশে পকল বস্বই চঞ্চল ও গতিশীল। এখানে পাপিগণ শূন্যে শীতঘ্বারা এবং ভূমিতে অগ্নিতাপ, দ্বারা পীড়িত হইয়া মর্ঘদা বিলাপ করিতেছে। মা এই ভীষণ নিরানন্দ স্থান অতিক্রম করিয়! রাম অবশেষে নিকটে মধুর বা্াধনি : শুনিতে পাইরেন। , এবং চারিদিকে মনোরম অট্টালিকা ও উপবন দেখিয়া মুগ্ধ হইলেন | মায়া বলিলেন যে, সম্মুখ সমরে নিহত বীরগণ এইস্থানে আসিয়া চিরস্থখ ভোগ করেন; বনপথে অগ্রসর হইলে রাম “সপ্তীবনী পুরীতে' যণস্বী পুণ্যাআ ব্যক্তিদের দর্শন পাইবেন । মায়ার সহিত অগ্রসর হইয়া রাম সম্মুখে নান! অন্ত্রশস্তরে পূর্ণ একটি »রিশাল যল্পক্ষেত্র দেখিতে পাঁইলেন। বীরগণ সেখানে পরম্পরের সহিত ম্যুদধ করিতেছেন এবং কবিগণ বীরগণের প্রশস্তি গান করিতেছেন ।, চারিদিকে পারিজাত বর্ষণ হইতেছে এবং অপ্নরা ও কিন্নরগণ নৃত্যগীত করিতেছে ।
মায়। রামচন্দ্রকে দেখাইলেন যে, সতাধুগে সম্মুখ সমরে নিহত নিশুস্ শুস্ত, মহিষাস্তর, ত্রিপুর, বৃত্র, স্থন্দ, উপহ্থন্দ প্রভৃতি দৈত্যগণ সেখানে আনন্দে অবস্থান করিতেছে । সম্প্রতি লঙ্কামমরে নিহত কুস্তকর্ণ, অতিকায়, নরাস্তক, ইন্দ্রজিৎ প্রভৃতি বীরগণকে রাম দেখিতেছেন না! কেন জিজ্ঞাল! করায়, মায়াদেবী বলিলেন যে, আত্মীয়স্বজন কর্তৃক পৃথিবীতে অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া না হওয়া পর্যন্ত কোন প্রেতাত্মা এই স্থানে আগিতে পারে না। বালির প্রেতাত্মা সেদিকে আঁমিতেছেন দেখাইয়া, রামকে তাহার সহিত, শিষ্টালাপ করিতে বলিয়া, মায়! অনৃশ্যভাবে নিকটে অবস্থিতি করিতে লাগিলেন। বালি অগ্রধর হইয়! রামকে সম্ভাষণ করিয়া সশরীরে তাহার প্রেতপুরে আগমনের হেতু জিজ্ঞানা করিলেন। যদিও স্ুগ্রীবকে তুষ্ট করিবার জন্য রাম তাঁহাকে অন্যায় যুদ্ধে বধ করিয়াছিলেন, তথাপি রামের প্রতি যমপুরে আগত বালির কোন বিদ্বেষ নই। বালি রামকে তীহাঁর পিতৃবন্ধু জটায়ুর নিকটে লইয়া যাইবেন বলিলেন। রাম বাঁলিকে এখানে তাহারা কলে সমস্খী কিনা জিজ্ঞাসা করিলে, বালি উত্তর করিলেন যে, তাহারা সকলেই সমান স্ুখভোগ ন] করিলেও, কেহই এখানে নিরানন্দ নহেন ।
বালির সহিত রাম মধুরনলিলা নদীতীরে মনোরম বনে জটাুর সাক্ষাৎ পাইলেন। জটায়ু রামকে সন্সেহে মন্তাষণ করিয়! জিজ্ঞাদ! করিলেন ষে, পাপিষ্ঠ রাবণ যুদ্ধে নিহত হইয়াছে কিনা । রাম বলিলেন যে, জটায়ুর আশীর্বাদে অন্য সকল রাক্ষস বীর নিহত হইয়াছে এবং একমাত্র রাবণই এখন জীবিত। তাহার হস্তে লক্ষ্মণ নিহত হওয়ায়, শিবের 'আদেশে পিত! দশরথের সহিত সাক্ষাতের জন্য রাম সেখানে আসিয়াছেন। জটায়ু বলিলেন যে, প্রেতপুরীর পশ্চিম প্রান্তে রাজধিগণের সহিত দশরথ বাস করিতেছেম। তাহার সেখানে যাইবার কোন বাধা নাই ;_তিনি রামকে দেখানে লইয়! যাইবেন।
রাম বু মনোরয় স্থান দেখিতে দেখিতে দ্রুতপদে জটীযুর সহিত অগ্রসর হইতে থাকিলে লক্ষ লক্ষ প্রেতাতু! আনিয়! রামকে বেষ্টন করিল । জটাষু রামের পরিচয় দিয়া তাহার আগমনের কারণ জানাইলে, তাহার! রামকে আশীর্বাদ করিয়! গ্রস্থান' করিল। উভয়ে অতিশয় শোভা-সৌন্দর্য ও এশবর্ষ-পরিপূর্ণ পশ্চিম দ্বারে উপস্থিত হইমা, প্রথমে রঘুবংশের আদি পুরুষ দিলীপকে পত্রী সদক্ষিণার সহিত ্র্ণাসনে উপবিষ্ট দেখিলেন। জটাম়ু বপ্লিলেম যে, ইক্ষা কু, মান্ধাতাঁ, নহুষ প্রভৃতি,রাজধিগণও এইন্থানে বাস করেন জটায়ুর নির্দেশমত রাম দিলীপ ও হৃদক্ষিণাকে প্রণাম করিলে তাহারা উভয়ে আশীর্বাদ করিয়া তাহার পরিচয় জিজ্ঞান! করিলেন। রাঁম নিজের পরিচয় দিলে দিলীপ বলিলেন যে, ষশস্বী রামের আবির্তীবে তাহার কুল উজ্জল হইয়াছে। অদূরে বৈতরণীতীরে স্বরয় পর্বতের নিকটে বিখ্যাত অক্ষয়-বটমূলে দশরথ রামের কল্যাণে সর্বদা ধর্মরাজার পূজায় রত রহিয়াছেন। জটায়ুকে বিদায় দিয়া রাম একাকী অক্ষয়বটের দিকে যাত্রা করিলেন। দুর হইতে পুত্রকে দেখিয়া! দশরথ অশ্রপূর্ণনেত্রে ছুই বাহু প্রমারিত করিয়। সম্মুখে আসিয়া বলিলেন, “দেবতার কৃপায় আমার নয়ন সার্থক করিতে কি এতদিন পরে এই দুর্গম স্থানে তুই আসিয়! উপস্থিত হুইয়াছিঘ? আমার দৌধেই ধর্মপথগামী হইয়াও তুই জীবনে এত ছুঃখ ভোগ করিতেছিস !” এই বলিয়! রথ রোদন করিলেন । রামও নীরবে অশ্রপাঁত করিতে লাগিলেন ।
রাম তখন বলিলেন যে, তিনি মহাবিপদ্দে পড়িয়া পিতার নিকটে আনিয়াছেন। পৃথিবীর সকল ঘটন1 যদ্দি এস্থানে -বঙ্সিয়৷ জানা যায়, তবে দশরথ নিশ্চয়ই রামের আগমনের কারণ জানিয়াছেন। লক্ষ্ণকে বাচাইতে না পারিলে রাম আর পৃথিবীতে ফিরিবেন না। দশরথ বলিলেন যে, তিনি বামের আগমনের কারণ জানেন। লক্ষণের প্রাণবিয়োগ হয় নাই। গদ্ধমাদন পর্বতের শৃঙ্গে বিশল্যকরণী নামক যে লতা! আছে, তাহার সাহায্যে লক্ণকে পুনর্জাবিত করা যাইবে। স্বয়ং যমরাজ কূপ] করিয়া তাহাকে এই গুঁধধের কথা বলিয়া দিয়াছেন। রামের অন্থচর হনৃমানকে প্রেরণ করিলে সে মৃহর্তের মধ্যে গুঁধধ আনয়ন করিবে । উপযুক্ত সময়ে রামের হস্তে রাবণ
নিহত হইবে এবং সীতার উদ্ধার হইবে। কিন্তু রামের আনুষ্টে স্থখভোগ নাই। রন ছুঃখ বরণ করিয়াই রাম নিজের কীততি দ্বারা জগৎ পূর্ণ করিবেন। দশরথ রও বলিলেন যে, এক্ষণে পৃথিবীতে রাত্রি মাত্র দ্বিগ্রহর। দৈববলে বলী রাম এ পৃথিবীতে ফিরিয়া হুনৃমানের সাহায্যে যেন রাত্রি থাকিতে থাকিতেই ওঁষধ আনয়ন করেন।
. দশরথ রামচন্ত্রকে আশীর্বাদ করিয়া বিদায় দিলেন। রাম পিতার পদধূলি নইতে হ্ত প্রসারণ করিয়। পদ স্পর্শ করিতে পারিলেন না। দশরথ বলিলেন যে, তাহার, দেহ এক্ষণে ছায়ামাত্র ;--ইহা ম্পর্শ করা যায় না। তিনি রামকে শীঘ্র ফিরিয়া যাইতে বলিলেন । রাম বিস্মিত হুইয়! মায়াদেবীর সহিত প্রত্যাবর্তন করিলেন এবং লঙ্কায় যেস্থানে ভূপতিত লক্ষণের দেহের চৃতুষ্পার্থ্ে বীরবৃন্দ শোকে নিদ্রাহীনভাবে অবস্থিত, সেইস্থানে আনিয়া উপস্থিত হইলেন। তমোহা-_অন্ধকার-বিনাশক ; তমঃ+হন্্+ক্কিপ,-তমোহন্। ১মা একবচনে তমোহা।
মিহিরে-হৃর্ধবি্বরূপ মন্তকের উজ্জল ভূষণকে।
দিনদেব--দিবসের অধিপতি দেবতা । দিনদেব ও মিহির ছুইটিই হূর্যবাচক শব্ব। কবি এখানে জ্যেতিশ্ছটা সম্পন্ন স্্যবি্বকে মানবনেত্রে অদৃশ্য দিবমের অধিপতি দেবতার দৃষ্ঠমান বত্বমুকুটরূপে কল্পনা করিয়াছেন। তুলনীয়,
“র্যেরে বহিয়া যথা! ধায় বেগে দিব্য অগ্রি-তরী মহাব্যোম-নীলসিস্ধু প্রতিদিন সম্তরণ করি.**” ( ভাষা! ও ছন্দ; রবীন্দ্রনাথ )।
রাজকাজ সাধি যথ৷ বিরাম-মন্দিরে ইত্যাদি_সম্রাটু সারাদিন রাজমুকুট মন্তকে দিয়! সিংহানলনে বনিয়া রাজকার্ধ সমাপনের পর যেবপ বিশ্রামকক্ষে প্রবেশ করিয়! মুকুটখানি খুলিয়া রাখেন, সেইরূপ দিনের শেষে দিবদের অধিপতি দেবতা! সারাদিনের কার্ষের পর অস্তাচলের চূড়ায় সমুজ্জল কৃর্ধবিষ্বব্ূপ রত্ব-মুকুটখানি খুলিয়া রাখিলেন। উপমা অলঙ্কার। এস্থলে উপমান রাজেন্্র এবং উপমেয় দিনদের দুইটি পৃথক বাঁক্যে থাকিয়। বস্ত-গ্রতিবস্ত সম্বন্ধে সন্বদ্ধ হইয়াছে । তুলনীয়,_“এবে দিনমণি দেব, মুদুমন্দগতি অন্তাচলে চালা ইলা স্বর্ণচক্ররথ, বিশ্রীমবিলাস-আশে মহীপতি যথা সাঙ্গ করি রাঁজ-কার্ধ অবনীমণ্ডলে। (তিলোত্বমীসম্ভব কাব্য, ১১৮০-১৮৩) তারাদলে-_তারাসমূছের সহিত। আইল! রজনী-_বীরবাহুর মৃত্যুর পরদিবসের এবং মেঘনাদের মৃত্যু- ও লক্ষণের শেলাঘাত-দিবসের রাত্রি আনিল। জাতৃঙগোহ-ভ্রাতার রক্ত। নয়ন*জল অবিরল বহি ইত্যাদি--পর্বতের উপর দিয়! প্রবাহিত বর্নার জল গিরিমাটির সহিত মিশিত হইলে যেরূপ লাল রঙ্গে রঞ্জিত হুইয়৷ নীচে আপিয়া পড়ে, রামচন্দ্র অশ্রধারাও সেইরূপ লক্ষণের শোণিতাক্ত বিশাল দেহে পতিত হুইয়া রক্তের নহিত মিশ্রণহেতু লাল রঙ্গে রঞ্চিত হইয়া ভূমিকে সিক্ত করিতেছে । এস্থলেও বস্তুপ্রতিবন্ত ভাবের উপম! অলঙ্কার ।
মুত্যামলাঃ--বিমনা, বিমর্ষ।
নাথ- প্রভূ রামচন্দ্র। বামকে মধুহ্দন সাধারণ মাছষ হিসাবেই চিত্রিত ৯৬ কাজেই কৃত্বিবাসের অনুকরণে অবভারবাচক নাথ শবের প্রয়োগ নিরর্থক | জুধন্ি-_(সম্বোধনে) ধন্নবিগ্ঠায় স্থনিপুণ। ধন্ব (ধন্থ)+ইন্-্ধহ্বী) কিন্ত শমাসে স্থ ধন্ব যাহার -স্থ্ধন্থা। পৌলস্ত্যেয়-_পুলস্তা খধির পৌত্র রাবণ । বীরবীর্ষে সর্বভুকৃসম দুর্বার সংগ্রামে তুমি_ প্রচণ্ড পরাক্রমহেতু অগ্নির ন্যায় সংগ্রামে অপ্রতিরোধনীয়। রঘুকুল-জয়কেতু__রঘুবংশের বিজয়পতাকাম্বরূপ 7 অর্থাং-যুদ্ধে সর্বত্র বিজয়ী । শৃম্তাচত্র- চক্রহীন। বলি-_-( সম্বোধনে ) হে শক্তিমান বীর । মিতাএমিত্র-_বন্ধু। কবু'রোত্তম-_রক্ষঃশ্রেষ্ট। কিন্তু ক্লান্ত বদি তুমি, এ দুরস্ত রণে ইত্যাদি রামচন্দ্র গ্রথমে লক্ষণের ভ্রাতা প্রতি অসীম ভক্তি ও ভ্রাতার আজ্ঞান্থবততিতা, ভ্রাতৃবধূর প্রতি শ্রদ্ধা ও অনুরাগ এবং অসাধারণ বীরত্বের কথ! উল্লেখ করিয়া, তাহার যে ভ্রাতীর ও ভ্রাতৃবধূর বিপদ উপেক্ষা করিয়া বিশ্রাম করা উচিত নয়, পরন্ত ভ্রাতার কাতর আহ্বানে তাহার ন্যায় একাস্ত ব্শংবদ ভ্রাতার অবিলম্বে গাত্রোখান করাই উচিত,- ইহা বলিয়! বিলাপ করিয়া, পরিশেষে বলিতেছেন যে, এতকাল কঠিন সংগ্রামে রত থাকায় লক্ষণের দারুণ ক্লাস্তিবোধ একান্তই স্বাভাবিক। সেই ক্লাস্তিবশেই যদি লক্ষ্মণ রামের আহ্বানে সাড়া দিতে অসমর্থ হইয়া থাকেন, তবে আর যুদ্ধে প্রয়োজন নাই। লম্্রণ নিদ্রা হইতে গাত্রোথান করিলে তাহারা ভাগ্যহীনা সীতাকে লঙ্কায় ত্যাগ করিয়া! আবার বনেই ফিরিয়! যাইবেন। কৃত্তিবাও রামের বিলাঁপে বলিয়াছেন £--“রাঁজ্যধনে কার্ধ নাই, নাহি চাই সীতে ।” কেমনে দেখাব এ মুখ- তুলনীয়, “কথং বক্ষ্যামহং তম্বাং হমিত্রাং পুত্রবৎসলাম।” (লঙ্কাকাণ্--১০২।১৫) আজন্ম আমি ধর্মে লক্ষ্য করি ইত্যাদি_ ধর্মপরায়ণ হইয়] সর্বদা! দেবগণের পূজা করিয়াছি বলিয়! দেবগণ কি আমাকে আজ এই দারুণ ছুঃখ দিলেন? রামায়ণে রাম বিলাপ করিয়াচ্ছন £-_-“কিং ময়া ছুষ্কৃতং কর্ম কৃতমন্তত্র জন্মনি। যেন মে ধামিকো ভ্রাতা নিহতশ্কাগ্রতঃ স্থিতঃ |” (&--১৮) শিশির আসারে--শিশিরধারাবর্ষদে। "ধারাসম্পাত আপার--» (অমরকোষ) সরস-_( অকারাস্ত উচ্চারণ ) সরম কর। (নাম ধাতু), নিদাঘার্ত--গ্রীষ্মতাপে বিশুদ্ধ ।
প্রশ্থনে-_-পুষ্পবং স্বন্দর লক্ষষণকে।
হে রজনি, দয়াময়ী তুমি ইত্যাদি-সমাগত রাত্রিকে সম্বোধন করিয়া রাম কাতর প্রার্থনা জানাইতেছেন। গ্রীম্মতাপদগ্ধ ফুলগুলির দুর্দশা দেখিয়া দয়াময়ী রাত্রি শতল শিশির বর্ষণ করিয়া তাহাদিগকে পুনরায় সরম ও সতেঙ্জ করিয়। তুলেন। পুষ্পের যায় সুন্বর লক্ষণও যেন তাহার কৃপায় পুনজীবন লাভ করেন।
প্রাণদান দেহ এ প্রসূনে- এস্থলে উপমেয় লক্ষণের উল্লেখমাত্র না করিয়া উপমান প্রস্থনকেই উপমেয়রূপে কল্পনায় অতিশয়োক্তি অলঙ্কার হইয়াছে।
উচ্ছ সিল বীরবৃন্দ বিষাদে চৌদিকে ইত্যাদি-_গভীর অরণ্য স্তব্ধ রজনীতে বাযু প্রবাহিত হইলে বৃহৎ বৃক্ষসমূহের শাখা গ্রশাখায় যেরূপ বিষাদময় মর্মরধ্বনি উিত হয়, রামপক্ষীয় বীরগণও বিষাদে লেইরপ দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করিতে লাগিলেন ।
শৈলম্তা-_হিমালয়কন্তা৷ পার্বতী ।
উৎসঙ্গ- প্রদেশে ক্রোড়দেশে ।
উৎসঙ্গ-প্রদেশে ধূর্জটির পাদপক্সে পড়িছে সঘনে ইত্যাদি-মহাদেব শায়িত ছিলেন এবং পার্বতী পাশে বসিয়া তাহার পদমেবা করিতেছিলেন। এইরূপ অবস্থায়, প্রভাতে পদ্মের উপর যেরূপ শিশিরবিন্দু পতিত হয়, দেবীর চক্ষু হইতে ভক্তের প্রতি অন্বকম্পাজনিত অশ্রবিন্দু স্যলিত হইয়া! সেইরূপে মহাদেবের ক্রোড়দেশে ও চরণছয়ে অজশ্রভাবে পতিত হইতেছিল।
সকরুণে-_কাতরভাবে। ক্রিয়াবিশেষণ। করুণার সহিত বর্তমান সকরুণ ; বিশেষণ ।
কে আর, হে বিশ্বনাথ, পুজিবে দাসীরে ইত্যাদি__পার্বতী অভিমানে ক্ষন্ধ হইয়। শিবকে অন্থযোগ করিয়া বলিতেছেন যে, পরমভক্ত রামের স্বার্থ রক্ষা করিতে তিনি অনমর্থ হইয়াছেন বলিয়া, এ জগতে অতঃপর কেহ ভক্তিলহকারে তাহার পুজা করিতে চাহিবে না| রামের স্বার্থ ছিল রাবণের আক্রমণ হইতে লক্ষ্রণকে রক্ষা! কর! । রাবণের পুত্রশোকে দয়ার্জ হইয়া শিব রাবণকে রুদ্রেতেজে পূর্ণ করায়, ইন্দ্রাদি-দেবগণের প্রত্যক্ষ সাহায্যদত্বেও লক্্রণকে রক্ষা করা যায় নাই। ভক্তের নিকটে ইহাতে দেবীর মর্যাদা একেবারে নষ্ট হইয়! গিয়াছে এবং ভক্তবৎসলারূপে প্রনিদ্ধ দেবীর নাম কলঙ্কে পূর্ণ হইয়াছে ।
তপোভঙ্গ দোষে দোষী-_দ্বিতীয় সর্গোক্জ মহাদেবের ধ্যানভজের অপরাধে অপরাধী | ইজ্জ ও শচীয় অহরোধে এবং মর্তো বামচন্দ্রের কাতর প্রার্থনায় দেবী কাম দেবের সাহায্যে অলময়ে তপোমগ্র শিবের তপস্যা ভঙ্গ করিয়। তাহার নিকট হইতে মেঘনাদ বধের উপাঁয় জ্ঞাত হইয়াছিলেন।
কুক্ষণে আইল। ইন্দ্র আমার নিকটে ! ইত্যাদি দেবী শিবের প্রতি অভিমান করিয়া বলিতেছেন যে, ইন্দ্র কুক্ষণে মেঘনাদবধকার্ধে দেবীর সাহায্য ভিক্ষা করিতে কৈলামে আপিয়াছিলেন, এবং বামও কুক্ষণে দেবীর কৃপাভিক্ষা করিয়া তাহার পুজা করিয়াছিলেন । কারণ ইন্দ্র ও রামের জন্যই তিনি শিবের ধ্যানভঙ্গ করিয়া তাহার বিরাগভাঁজন হইয়াছেন, এবং সেই বিরাগের ফলেই শিব দেবীর একাস্ত ভক্ত রামের অমঙ্গল সাধন করিয়া এবং ভক্তের নিকটে দেবীর মর্ধাদা লাঘব করিয়। তাহাকে শান্তি প্রদান করিয়াছেন।
হাদি উত্তরিল। শ্গু__ভক্তের বিপদে দেবীকে কষু্ধ ও বিচলিত দেখিয়া ।
এ অল্প বিষয়ে- _মেঘনাঁদবধ এবং তাহার প্রতিক্রিঘ্াম্বরূপ লক্ষণের শক্তিশেলাহত হইয়া পতন, পৃথিবীতে মানুষের বিচারে যত বড় ঘটনাই হউক না কেন, এই সকল পাঁথিব স্থখছুঃখের ব্যাপার দেবাদিদেবের নিকট অতি তুচ্ছ বিষয়।
কৃতান্তনগরে- যমালয়ে, যমপুরীতে।
প্রেতদেশে- মৃত্যুর পর প্রেতাকআ্মাদিগের বাসস্থান ঘমপুরীতে।