দৈববলে ঘে লকল কার্য সাধন করিয়াছে, তাহাতে তাহার পক্ষে অসাধ্য কোন কাধই নাই। মন্ত্রী সারণ বিনীতভাবে নিবেদন করিলেন যে, দেবানুগ্রহে ওষধি-পর্বত গন্ধমাদন স্বয়ং লঙ্কায় আসিয়। ওধধদানে লক্ষ্মণের দেহে গ্রাণসঞ্চার করিয়া গিয়াছেন বলিয়া রামসৈন্ের এইরূপ উল্লা। রাবণ দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করিয়া বলিলেন যে, বিধাতার বিধান অলঙজ্ঘনীয়। যে শক্রকে তিনি স্বহস্তে বধ করিয়া আসিয়াছেন, মেও দৈববলে বীচিয়া উঠিল! বৃথা বিলাপে প্রয়োজন নাই। রাবণ বুঝিতেছেন যে, লঙ্কার পতন আনন; নতুবা! কুন্তকর্ণের ও মেথনার্দের মত বীরের অকালমৃত্যু ঘটিত না। তিনি মন্ত্রীকে রামচন্দ্রের শিবিরে গমন করিয়া মেঘনাদের অস্ত্যেষ্টিক্রিয়! পালনের জন্য সাত দিন যুদ্ধবিরতি প্রার্থনা করিতে বলিলেন। মন্ত্রী সারণ অশ্ুচরসহ লমুদ্রতীরে রামের শিবিরে গমন করিলেন । যেখানে নবজীবনপ্রাপ্ত লক্ষণ এবং অনান্য বীরগণ-বেষ্টিত হুইয়! রামচন্দ্র উপবিষ্ট সেখানে দূত আসিয়া জানাইল যে, রাবণের মন্ত্রী রাঁমচন্দ্রের সহিত সাক্ষাৎ করিবার জন্ত শিবিরঘ্বারে উপস্থিত হইয়াছেন। রামচন্দ্র মন্ত্রীকে সসম্মানে তাহার নিকটে লইয়া! আগিতে বলিলেন। সারণ রামের সম্মুখে উপস্থিত হইয়। রাবণের সপ্তদিন যুদ্ধবিরতির অনুরোধ জ্ঞাপন করিলেন । রামচন্দ্র উত্তর করিলেন ষে, রাবণ তাহার পরম শত্রু হইলেও, তাহার এই শোকে তিনিও অত্যন্ত ছুঃখিত। তিনি রাবণের অনুরোধে সাতদিন অন্ত্রধারণ করিবেন ন!। ধর্মপরায়ণ ব্যক্তি কখনও অপরের ধর্মানুষ্ঠানের সময়ে তাহাকে আক্রমণ করেন না। সারণ রামচন্ত্রের প্রশংসা করিয়া বলিলেন যে, বীরশ্রেষ্ঠ ও বজ্ঞোত্বম রাম তাহার উপযুক্ত কথাই বলিয়াছেন। রক্ষঃকুলে যেমন রাবণ শ্রেষ্ঠ, নরকুলে রামও ঠিক তেমনই । কুক্ষণে এই ছুই শক্তিমান ও গুণবান ব্যক্তি পরস্পরের শক্রবূপে আবিভূতি হইয়াছেন বলিয়া সারণ আক্ষেপ প্রকাশ করিলেন। রাঁমচন্দ্রের নিকট বিদায় লইয়া! সারণ শোকার্ত রাবণের নিকট প্রত্যাবর্তন করিলেন। রামের আদেশে সেনানায়কগণ যুদ্ধ্জা ত্যাগ করিয়! যে যাহার শিবিরে বিশ্রামার্থ গ্রবেশ করিলেন। এদিকে অশোকবনে শীত যেখানে বিষঞ্নভাবে অবস্থিত, সেখানে সরমা আসিয়া তাহার চরণে প্রণাম করিয়া তাহার পার্খে উপবেশন করিলেন। সীতা সরমীকে জিজ্ঞাসা করিলেন, গত ছুইদিন যাবৎ লঙ্কাবাদিগণ শোকে ক্রদদন করিতেছে কেম। পূর্বদিন সারাক্ষণ তিনি যুদ্ধের ভীষণ গর্জন শুনিয়াছেন; দিবাশেষে রাক্ষমসৈন্ত স্জয়ধ্বনি করিয়] লঙ্কায় গ্রবেশ করিয়াছে। এইযুদ্ধে জিতিলই বা কে, হারিলই বা কে, তাহা তিনি জানেন নাঁ। চেড়ীর্দের জিজ্ঞাসা করিলে কোন উত্তর দেয় না। কাল রাত্রিকাঁলে ত্রিজট। নামী ভীষণ! রাক্ষসী ক্রোধে অন্ধ হইয়া! সীতাকে কাটিতে আপিয়াছিল; অন্য চেড়ীরা তাহাকে বাধা দেওয়াতেই শীতার প্রাণ রক্ষা পাইয়াছে। সরমা বলিলেন যে, কাল লক্ষণের হস্তে মেঘনাদ যুদ্ধে নিহত হওয়ায় লঙ্কাবাসিগণ শোকে বিলাপ করিতেছে । এতদিনে রাবণ সম্পূর্ণরূপে বলহীন হইল। সীতা! বলিলেন যে, এই শক্রপুরীতে একমাত্র সরমাই তাহার নিকট শুভ সংবাদ বহন করিয়৷ আনেন। লক্ষ্মণ বীরতরেষ্টগণের মধ্যে ধন্য +_তীহাঁর কল্যাণেই হয়ত এতদিনে তাহার মুক্তির উপায় হইল) কারণ এখন রাবণ অম্পূর্ণরূপে সহায়হীন হইয়া পড়িয়াছে। লীতার দুঃখের অবধান হইবে কিনা কে জানে? ভবিস্ততে কি ঘটে দেখার জন্ত সীতা প্রতীক্ষা করিবেন। এদিকে বিলাপধ্বনি ক্রমে বাঁড়িয়া উঠায় সীতা সেদিকে সরমার দৃষ্টি আকর্ষণ করিলেন। সরমা বলিলেন, _মেঘনাদের শব-সৎকারের জন্য রাব্ণ রাঁমচন্দ্রের সহিত মন্ধি স্থাপন করিয়। পুত্রের মৃতদেহ সমুদ্রতীরে লইয়া যাইতেছে । রাবণের অনুরোধে দয়াবান রাম সাঁতদিনের জন্য যুদ্ধ স্থগিত রাখিয়াছেন। মেঘনাদের সহিত তাহার সাধবী পত্রী প্রমীঙ্লাও সহমৃতা৷ হইবে ;_ প্রমীলার মৃত্যুর কথা ভাবিতে সরমার মন দুঃখে পূর্ণ হইয়া! উঠিতেছে। সীতা পরের ছুঃখের কথা শুনিয়া! অত্যন্ত কাতর হইয়া বলিলেন যে তীহার অতি কুক্ষণে জন্ম হুইয়াছে; তিনি মুতিমতী অমঙ্গলম্বরূপিণী। তাহার অদৃষ্টদোষেই নরোত্বম রামের লক্ষণের সহিত বনবাদ এবং দশরথের অকালমৃত্যু হইয়াছে তাহার জন্যই বীর জটায়ুর, ইন্দ্রজিতের ও অন্যান্য অনংখ্য রাক্ষবীরের নিধন হইয়াছে এবং তাহার জন্যই আজ সুন্দরী প্রমীলা মৃত্যুবরণ করিতে চলিয়াছে। সরমা প্রত্যুত্তরে সীতাকে প্রবোধ দিয়া বলিলেন যে, এই সকল ঘটনায় পীতাঁর কোনই দোষ নাই। লীতাঁকে হরণ করিয়া আনিতে রাবণকে কে বলিয়াছিল? রাবণের কর্মফলেই রাধণ নিজের বিনাশ ভাকিয়! আনিয়াছে। এই বলিয়া নরম! শোকে রোদন করিতে লাগিলেন এবং পরছুঃখকাতর! সীতাও রাক্ষদগণের শোকে অশ্রপাত করিতে লাগিলেন। ্
ইত্যবনরে মেঘনাদের অস্ত্যে্িক্রিয়ার ব্যবস্থা! সম্পূর্ণ হওয়ায়, লঙ্কার পশ্চিম দ্বার ভীষণ শবে উন্মোচিত হইল। লক্ষ লক্ষ পতাকাবাহী রাক্ষদ পথের ছুই পারে শ্রেণীবন্ধভাবে অগ্রপর হইতে লাগিল। শবধাত্রার পুরোভাগে হস্তিপৃষ্ঠে স্থাপিত ছুন্টুভি গম্ভীর শবে ধ্বনিত হইতেছিল। কাতারে কাতারে পদাতিক, অশ্বারোহী, গজারোহী এবং রথারঢ় সৈম্ত ধীর গতিতে অগ্রসর হইতে লাগিল। যতদূর দৃষ্টি চলে ততদূর পর্যন্ত নিরানন্দ রাক্ষদগণ দলে দলে সমূদ্রতীরাভিমুখে চলিয়াছে তাহার পর বাহির হুইয়। আধিল কৃষ্ণবর্ণ অশ্বপৃষ্ঠে আরঢ়া প্রমীলার দাসী মলিনবদনা, অশ্রমুখী নৃমুণ্মালিনী এবং প্রমীলার অন্তান্ত অন্থুচরীগণ। তাহারা কেহ শোকে দীর্ঘনিশ্বাম ফেলিতেছে, কেহ কাদিতেছে, এবং কেহ কেহ রামচন্দ্রের মেনাগণের প্রতি কুদ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করিতেছে। অঙচরীগণ প্রমীলার শূন্যপৃষ্ঠ ঘোটকী 'বড়বাঃকে বেষ্টন করিয়৷ চলিয়াছে। চারিদিকে চামর-বীজনকারিণীগণ চামর দ্বারা বীজন করিতেছে এবং তাহাদের মধ্যে রাক্ষসবধূগণ অশ্রপূর্ণনয়নে অগ্রসর হইতেছে। প্রমীলার ব্যবহৃত অন্ত-শস্ত্র ও বীরবেশ 'বড়বা"র পৃষ্ঠে স্থাপিত হইয়াছে । দানীগণ খই, কড়ি, স্বর্ণমুদ্রা প্রভৃতি চারিদিকে ছড়াইয়া৷ দিতেছে; গায়িকাগণ করুণ সুরে বিলাপের গান গাহিতেছে এবং শোকে বক্ষে করাঘাত করিয়া রাক্ষলরমণীর ক্রন্দন করিতেছে ।
ইহাদের পর অন্ত সকল রথের মধ্যে মেঘনাদের মেঘবর্ণ প্রকাও রথখানি বাহির হইয়া আপিল; কিন্ত সে রথ আজ আরোহিশুন্ত । রথের মধ্যে মেঘনাদের ব্যবহৃত অস্ত্রশত্ত্র রক্ষিত হইয়াছে । গায়কেরা করুণস্থরে শোকগাথা গাহিতেছে ; কেহ স্বর্ণমুদ্রা ছড়াইতেছে এবং জলবাহকের! পথের ধূল! দূর করিবার জন্য পথে জলসেচন করিতেছে । রথখানিও সমুদ্রতীরাভিমুখে অগ্রসর হইতে লাগিল।
অতঃপর স্থবর্ণশিবিকাক্ন রাহিতা, ম্বামীর শবের পার্থ উপবিষ্টা প্রমীলা! দ্বারপথে বৃহির্গত হইলেন। তাহার ললাটে পিন্দুরবিন্দু, গলায় ফুলের মাল! এবং হস্তে কঙ্কণ শোভিত। চামরিণীরা অশ্রপূর্ণ নেত্রে চামর বীজন করিতেছে; কোন কোন রাক্ষসরমণী কাদিতে কাদিতে ফুল ছড়াইতেছে ।
প্রমীলা মৌনমুখে বিষগ্নবদনে উপবিষ্ট । কাতারে কাতারে রক্ষ:সেনা কোবমুক্ত তরবারি হন্তে শিবিক! বেষ্টন করিয়া চলিয়াছে। বেদজ ব্রাঙ্গণগণ বেদমন্ত্র পাঠ করিতেছেন; পুরোহিত মস্ত্োচ্চারণপূর্বক অগ্নি বহন করিয়া চলিয়াছেন রাঙ্গগাবধূরা ব্ণপাত্রে নানারূপ বস্ত্র, অলঙ্কার, পুষ্প, চন্দন, কল্ত,রী ইত্যাদি এবং স্বর্ণকলসে পবিভ্র গঙ্গাজল বহন করিতেছে । চারিদিকে স্থবর্ণদীপ জপিতেছে এবং নানাগ্রকার বাস্ত বাজিতেছে। সধব! নারীর! অশ্রুসিক্ত নয়নে হুলুধ্বনি করিতেছে।
সর্বশেষে বাহির হুইয়া আসিলেন শুশ্রবস্থ ও শুভ্রউত্বরীয়-পরিহিত বিশালকায় রাবণ। তাহার চারিদিকে কিছুদুরে মস্ত্িগণ ও সেনাপতিগণ অশ্রসিক্তনেত্রে, নতমুখে অগ্রসর হুইতেছেন। রাবণের পশ্চাতে লঙ্কাপুরী শুন্ভ করিয় আবালবৃদ্ধবনিত! ভ্রন্দন করিতে করিতে বহির্গত হুইল। সকলে অশ্রপাত করিতে করিতে ধীরে ধীরে ৪৪৮ 'অগ্রধর হইতে লাগিল।রামচন্দ্র অঙগকে দশ শত বীর যোদ্ধার সহিত রাক্ষলগঞ্চের মিব্রভাবে সমুদ্রাতীরে গমন করিতে আদেশ দিলেন। তিনি বলিলেন যে, তিনি ল্ণকেই তাহার প্রতিনিধিরূপে প্রেরণ করিতেন; কিন্তু পাছে লক্ষণকে দেখিয়! রাবণ রুষ্ট হন, এই ভয়ে অঙলগদকেই পাঠাইতেছেন। এক সময়ে অঙ্গদের পিতা বালি রাবণের নিগ্রহ করিয়াছিলেন,-আজ অঙ্গদ শিষ্টাচার রাব্ণকে তুষ্ট করুক।
অঙ্গ? দশশত বীরসহ সমুদ্রতীরে যাত্রা করিল। আকাশে শচীর সহিত ইন্্র, কাত্তিকেয়, চিত্ররথ, যমরাঁজ, পবনদেব, কুবের, চন্দ্র, অশ্বিনীকুমারঘয়, অন্তান্য দেবদেবীগণ, গন্বর্ব, অপ্ধারা। কিন্নর, কিন্নরী গীতি সমবেত হইলেন। আকাশে স্বীয় বাদ্ধ বাজিতে লাগিল।
সমূদ্রতীরে উপস্থিত হইয়া রাক্ষমগণ ভারে ভারে চন্দনকাষ্ঠ ও স্বৃত দ্বার! যথাবিধি চিতারচন| করিল। মন্দাকিনীর পবিত্র জলে শবদেহকে স্নান করাইয়া রক্ষঃপুরোহিত গভ্ভীরকণ্ে মন্ত্রপাঠ করিতে লাগিলেন। প্রমীল! সমূত্ধে স্নান করিয়! নিজের দেহ হইতে অলঙ্কারাদি উন্মোচন করিয়। মকলকে বিতরণ করিলেন এবং গুরুজনবর্গকে প্রণাম করিয়৷ নিজের অন্ুচরীগণকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন যে, এতদিনে তাহার ভবলীল৷ সাঙ্গ হইল। তাহারা সকলে যেন দৈত্যপুরে ফিরিয়া প্রমীলার পিতাকে প্রমীলার সংবাদ বলে। প্রমীল! মাতার কথ! মনে করিতে, আর ধৈর্ধধারণ করিতে না পারিয়। কাদিয়। ফেলিলেন; দানবকন্তাগণও হাহাকার শবে ক্রন্দন করিল। কিন্তু গ্রমীলা তন্মুহূর্তেই শোৌকাবেগ সম্বরণ করিয়া বলিলেন, “আমার মাতাকে বলিও যে, আমার অদৃষ্টে বিধাতা যাহা লিখিয়াছিলেন, তাহাই এতদিনে ফলিয়াছে। তাহারা আমাকে ধাহার হন্তে লমর্পণ করিয়াছিলেন, আমি তাহার সঙ্গেই চলিলাম। তোমরা সকলে 'আমার কথা ভূলিও না।”
চিতায় আরোহণ করিয়! গ্রমীল। পতির পদতলে উপবেশন করিলেন। রাক্ষসবাস্ত বাজিতে লাগিল; বেদজ্ঞ পুরোহিতগণ উচ্চৈংস্বরে বেদমন্ত্র পাঠ করিতে লাগিলেন; রাক্ষদবধূর হুলুধ্বনি করিল): এবং এই মকল ধ্বনির সহিত সমবেত রাক্ষসগণের হাহাকার ধ্বনি উিত হইল। চতুর্দিকে পু্পবৃটটি হইতে লাগিল এবং বস্ত্র, অলঙ্কার, চন্দন, কন্ত:রী প্রভৃতি ভ্রব্য ঘথাবিধি চিতার উপর বধিত হইতে লাগিল। রাঙ্ষসেবা পশ্তব্ধ করিয়া ঘ্বতাক্ত করিয় মেগুলিকে চিতার চারিপাঁশে স্থাপন করিল।
রাবণ চিতার নিকটে আসিয়া কাতরকঠে বলিলেন, "মেঘনাদ, আমার মনের বাঁধনা ছিল ঘে, তোমাকে রাজ্যভার দিপা তোমার সম্মুখে আমি শেষ নিঃশ্বান ত্যাগ করিব? কিন্ত বিধাতা আমাকে সে সুখ হইতে বঞ্চিত করিলেন। তোমাকে ও পুঞবধূ প্রমীলাকে নিংহাসনে রক্ষোরাজ ও রানীরূপে দেখিয়। চক্ষু জুড়াইব, ভাবিয়াছিলাম;কিন্তু তাহার পরিবর্তে তোমাদের উভয়কে চিতার উপরে দেখিতেছি! আমি এই ফল লাভ করিবার জন্যই কি এত ভক্তির সহিত শিবের সেবা করিয়াছি? আমি কেমন করিয়া শূন্য লঙ্কাপুরীতে ফিরিয়া! যাইব? যখন মন্দোদরী আসিয়৷ জিজ্ঞাসা করিবেন যে, পুত্র-পুত্রবধূকে সমুদ্রতীরে রাখিয়া কোন স্থখে লঙ্কায় ফিরিয়া আসিলাম,__তখন তাহাকে আমি কি বলিয়। প্রবোধ দিব? হায়, আমার চিরজয়ী পুত্র! হায় মাতঃ রক্ষ:কুলের রাজলম্ম্ি! জানি না, কোন পাপে বিধাতা আমার এই চরমদণ্ড বিধান করিলেন !”
রাবণের কাতর বিলাপে কৈলামে শিব অধীর হইলেন। তাহার জটাজাল কম্পিত
॥হইল। জটামধ্যস্থ সর্পগণ গর্জন করিতে লাগিল; ললাটে বঙ্ছি প্রচণ্ড দীর্টিতে জলিয়। উঠিল; মন্তকন্থ গঙ্গাত্রোত প্রচণ্ড কল্পোলধ্বনি তুলিল,__কৈলাম পর্বত এবং তাহার সহিত সমগ্র বিশ্ব রুদ্রের ক্রোধে কাপিতে লাগিল। পার্বতী ভীত হুইয়া করজোড়ে বলিলেন যে, শিব অনর্থক কেন ক্রুদ্ধ হইলেন? বিধাতার বিধানেই মেঘনাদের মৃত্যু হইয়াছে; -সেজন্ত রাম দোষী নহে। তাহা সত্বেও যদ্দি অবিচারে শিব রামকে বধ করিতে চান, তবে আগ্রে দেবীকে বধ করুন। ইহা বলিয়া দেবী শিবের চরণযুগল ধারণ করিলেন। শিব তখন শান্ত হইয়া বলিলেন যে, রাবণের দুঃখে তাহার হৃদয় বিদীর্ণ হইতেছে? দেবী ভাল মতেই জানেন যে, বাবণকে শিব কত স্নেহ করেন। যাহা হউক, দেবীর অন্থরোধে তিনি রাম-লম্্ণকে ক্ষমা করিলেন। অনস্তর শিব অগ্নিদেবকে আদেশ করিলেন যে, তিনি তাহার স্পর্শে পবিত্র করিয়। রাক্ষম দম্পতীকে
অবিলঘ্বে কৈলামে আনয়ন করেন ।
শিবের আদেশে অগ্রিদেব বজ্তাপ্নিরূপে পৃথিবীতে অবতরণ করামাত্র তাহার স্পর্শে চিত। হঠাৎ জলিয়! উঠিল। সকলে বিস্মিত হইয়! অগ্নিরথে দিব্যমৃতিধারী মেঘনাদ ও প্রমীলাকে দেখিতে পাইল) অগ্নিরথ তাহাদিগকে লইয়া বেগে আকাশে উঠিল সমবেত দেবগণ পুষ্পবৃষ্টি করিতে লাগিলেন ;--সকল জগৎ আনন্দধ্বনিতে পুর্ণ হইল।
রাক্ষলগণ ছুপ্ধধারায় চিতার অগ্রি নিবাইয়। চিতাভস্ম সংগ্রহ করিয়। সমু বিদর্জন করিল। গঙ্গার পবিত্র জলে চিতাম্থল ধৌত করিয়। রক্ষঃশিল্পিগণ শ্বর্ণময় ইঞ্টকছারা অভ্রভেদী মঠ চিতার উপর তখনই পির্মাণ করিয়! ফেলিল। স্মুত্রে স্নান করিয়া রাক্ষলগণণ অশ্রবর্ষণ করিতে করিতে শৃন্যমনে লঙ্কায় প্রত্যাবর্তন করিল। সপ্ত দিবানিশি লঙ্কাবানিগণ শোকে রোদন করিতে লাগিল।