shabd-logo

মেঘনাদবধ কাব্য-অষ্টম সর্গ

23 December 2023

0 Viewed 0

রাজকাজ সাধি যথা, বিরাম-মন্দিরে, প্রবেশি, রাজেন্দ্র খুলি রাখেন যতনে কিরীট; রাখিলা খুলি অস্তাচলচুড়ে দিনান্তে শিরের রত্ন তমোহ। মিহিরে দিনদেব; তারাদলে আইল। রজনী; আইলা রজনীকান্ত শান্ত সুধানিধি।

শত শত অগ্নিরাশি জলিল চৌদিকে রণক্ষেত্রে। ভূপতিত যথায় শুরখী সৌমিত্রি, বৈদেহীনাথ ভূপতিত তথা নীরবে! নয়নজল, অবিরল বহি, ভ্রাতৃলোহ সহ মিশি, তিতিছে মহীরে, গিরিদেহে বহি যথা, মিশ্রিত গৈরিকে, পড়ে তলে প্রস্রবণ! শূন্যমনাঃ খেদে রঘুসৈন্য; বিভীষণ বিভীষণ রণে, কুমুদ, অঙ্গদ, হন, নল, নীল বলী, শরভ, সুমালী, বীরকেশরী সুবাহু, সুগ্রীব, বিষণ্ণ সবে প্রভুর বিষাদে!

চেতন পাইয়া নাথ কহিলা কাতরে, "রাজ্য ত্যজি, বনবাসে নিবাসিন্ন যবে, লক্ষ্মণ, কুটীরদ্বারে, আইলে যামিনী ধনুঃ করে হে সুধন্বি, জাগিতে সতত রক্ষিতে আমায় তুমি; আজি রক্ষঃপুরে- আজি এই রক্ষঃপুরে অরি মাঝে আমি, বিপদ-সলিলে মগ্ন; তবুও ভুলিয়া

আমায়, হে মহাবাহু, লভিছ ভূতলে বিরাম? রাখিবে আজি কে, কহ, আমারে? উঠ, বলি! কবে তুমি বিরত পালিতে ভ্রাতৃ-আজ্ঞা? তবে যদি মম ভাগ্যদোষে- চিরভাগ্যহীন আমি ত্যজিল। আমারে, প্রাণাধিক, কহ, শুনি, কোন্ অপরাধে অপরাণী তব কাছে অভাগী জানকী? দেবর লক্ষ্মণে স্মরি রক্ষঃ কারাগারে

কাঁদিছে সে দিবানিশি! কেমনে ভুলিলে- হে ভাই, কেমনে তুমি ভুলিলে হে আজি মাতৃসম নিত্য যারে সেবিতে আদরে! হে রাঘবকুলচূড়া, তব কুলবধূ, রাখে বাঁধি পৌলস্তেয়? না শাস্তি সংগ্রামে

হেন দুষ্টমতি চোরে উচিত কি তব এ শয়ন বীরবীযে সর্বভুক্ সম দুর্বার সংগ্রামে তুমি? উঠ, ভীমবাহু, রঘুকুল-জয়কেতু! অসহায় আমি

তোমা বিনা, যথা রথী শূন্যচক্র রথে! তোমার শয়নে হনু বলহীন, বলি, গুণহীন ধনুঃ যথা; বিলাপে বিষাদে অঙ্গদ; বিষণ্ণ মিতা সুগ্রীব সুমতি, অধীর কবু রোত্তম বিভীষণ রথী, ব্যাকুল এ বলিদল! উঠ, ত্বরা করি, জুড়াও নয়ন, ভাই, নয়ন উন্মীলি!
"কিন্তু ক্লান্ত যদি তুমি, এ দুরন্ত রণে, ধনুর্ধর, চল ফিরি যাই বনবাসে। নাহি কাজ, প্রিয়তম, সীতায় উদ্ধারি, অভাগিনী! নাহি কাজ বিনাশি রাক্ষসে। তনয়-বংসলা যথা সুমিত্রা জননী কাঁদেন সরযূতীরে, কেমনে দেখাব এ মুখ, লক্ষ্মণ, আমি, তুমি না ফিরিলে সঙ্গে মোর? কি কহিব, সুধিবেন যবে মাতা, 'কোথা, রামভদ্র, নয়নের মণি আমার, অনুজ তোর?' কি বলে বুঝাব উমিলা বন্ধুরে আমি, পুরবাসী জনে?

উঠ, বৎস! আজি কেন বিমুখ হে তুমি " সে ভ্রাতার অনুরোধে, যার প্রেমবশে, রাজ্যভোগ ত্যজি তুমি পশিলা কাননে! সমদুঃখে সদা তুমি কাঁদিতে হেরিলে অশ্রুময় এ নয়ন; মুছিতে যতনে

অশ্রুধারা; তিতি এবে নয়নের জলে আমি, তবু নাহি তুমি চাহ মোর পানে, প্রাণাধিক! হে লক্ষ্মণ, এ আচার কহু (শুভ্রাতৃবংসল তুমি বিদিত জগতে!) সাজে কি তোমারে, ভাই, চিরানন্দ তুমি আমার! আজন্ম আমি ধর্মে লক্ষ্য করি, পূজিশু দেবতাকুলে,-দিলা কি দেবতা এই ফল? হে রজনি, দয়াময়ী তুমি; শিশির-আসারে নিত্য সরস কুসুমে, নিদাঘাত; প্রাণদান দেহ এ প্রসুনে!

সুধানিধি তুমি, দেব সুধাংশু; বিতর
জীবনদায়িনী সুধা, বাঁচাও লক্ষ্মণে-
বাঁচাও, করুণাময়, ভিয়ারী রাঘবে।"

এইরূপে বিলাপিলা রক্ষঃকুলরিপু রণক্ষেত্রে, কোলে করি প্রিয়তমাশুজে; উচ্ছ্বাসিলা বীরবৃন্দ বিষাদে চৌদিকে, মহীরুহব্যূহ যথা উচ্ছ্বাসে নিশীথে, বহে যবে সমীরণ গহন বিপিনে।

নিরানন্দ শৈলসুতা কৈলাস-আলয়ে রঘুনন্দনের দুঃখে; উৎসঙ্গ-প্রদেশে, ধূর্জটির পাদপদ্মে পড়িছে সঘনে অশ্রুবারি, শতদলে শিশির যেমতি প্রত্যুষে! শুধিলা প্রভু, "কি হেতু, সুন্দরি, : কাতরা তুমি হে আজি, কহ তা আমারে?" কি না তুমি জান, দেব?" উত্তরিলা দেবী গৌরী; "লক্ষ্মণের শোকে, স্বর্ণলঙ্কাপুরে, আক্ষেপিছে রামচন্দ্র, শুন, সকরুণে। অধীর হৃদয় মম রামের বিলাপে!

কে আর, হে বিশ্বনাথ, পূজিবে দাসীরে এ বিশ্বে? বিদম লজ্জা দিলে, নাথ, আজি আমায় ডুবালে নাম কলঙ্কসলিলে। তপোভঙ্গ দোষে দাসী দোষী তব পদে, তাপসেন্দ্র; তেঁই বুঝি, দণ্ডিলা এরূপে? কুক্ষণে আইল ইন্দ্র আমার নিকটে!

কুক্ষণে মৈথিলীপতি পুঞ্জিল আমারে!" নীরবিলা মহাদেবী কাঁদি অভিমানে।' হাসি উত্তরিলা শম্ভু, "এ অল্প বিষয়ে, কেন নিরানন্দ তুমি, নগেন্দ্রনন্দিনি? প্রের রাঘবেন্দ্র শূরে ক্বতান্তনগরে মায়া সহ, সশরীরে, আমার প্রসাদে, প্রবেশিবে প্রেতদেশে দাশরথি রখী। পিতা রাজা দশরথ দিবে তারে কয়ে।
কি উপায়ে ভাই তার জীবন লভিবে, আবার; এ নিরানন্দ ত্যজ চন্দ্রাননে! দেহ এ ত্রিশূল মম মায়ায়, সুন্দরি। তমোময় যমদেশে অগ্নিস্তম্ভ সম  জলি উজ্জ্বলিবে দেশ; পুজিবে ইহারে প্রেতকুল; রাজদণ্ডে প্রজাকুল যথা।"
কৈলাস-সদনে দুর্গা স্মরিলা মায়ারে।

অবিলম্বে কুহকিনী আসি প্রণমিলা অম্বিকায়; মৃদু স্বরে কহিলা পার্বতী,- "যাও তুমি লঙ্কাধামে, বিশ্ববিমোহিনি। কাঁদিছে মৈথিলীপতি, সৌমিত্রির শোকে আকুল; সম্বোধি তারে সুমধুর ভাষে, লহ সঙ্গে প্রেতপুরে; দশরথ পিতা আদেশিবে কি উপায়ে লভিবে সুমতি সৌমিত্রি জীবন পুনঃ, আর যোধ যত, হত এ নম্বর রণে। ধর পদ্মকরে ত্রিশূলীর শূল, সতি। অগ্নিস্তস্ত সম তমোময় যমদেশে জলি উজ্জ্বলিবে অস্ত্রবর।" প্রণমিয়া উমায় চলিলা মায়া। ছায়াপথে ছায়া পালাইলা দূরে রূপের ছটায় যেন মলিন! হাসিল তারাবলী-মণিকুল সৌরকরে যথা। পশ্চাতে খমুখে রাখি আলোকের রেখা, সিন্ধুনীরে তরী যথা, চলিলা রূপসী লঙ্কা পানে। কত ক্ষণে উতরিলা দেবী যথায় সসৈন্যে ক্ষুণ্ণ রঘুকুলমণি।

পুরিল কনক-লঙ্কা স্বর্গীয় সৌরভে। রাঘবের কর্ণমূলে কহিলা জননী,- "মুছ অশ্রুবারিধারা, দাশরথি রথি,

বাঁচিবে প্রাণের ভাই, সিন্ধুতীর্থ-জলে করি স্নান, শীঘ্র তুমি চল মোর সাথে যমালয়ে; সশরীরে পশিবে, হুমতি, তুমি প্রেতপুরে আজি শিবের প্রসাদে। পিতা দশরথ তব দিবেন কহিয়া কি উপায়ে সুলক্ষণ লক্ষ্মণ লভিবে জীবন। হে ভীমবাহু, চল শীঘ্র করি। সৃজিব সুড়ঙ্গপথ; নির্ভয়ে, সুরখি, পশ তাহে; যাব আমি পথ দেখাইয়া তবাগ্রে। সুগ্রীব-আদি নেতৃপতি যত, কহ সবে, রক্ষা তারা করুক লক্ষণে।"

সবিস্ময়ে রাঘবেন্দ্র সাবধানি যত নেতৃনাথে, সিন্ধুতীরে চলিলা হুমতি- মহাতীর্থ। অবগাহি পূত স্রোতে দেহ মহাভাগ, তুষি দেব-পিতৃলোক-আদি তর্পণে, শিবির-দ্বারে উতরিলা ত্বরা একাকী। উজ্জ্বল এবে দেখিলা নুমণি দেবতেজঃপুঞ্জে গৃহ। ক্বতাঞ্জলিপুটে, পুষ্পাঞ্জলি দিয়া রথী পূজিলা দেবীরে। ভূষিয়া ভীষণ তনু সুবীর ভূষণে বীরেশ, সুড়ঙ্গপথে পশিলা সাহসে-

কি ভয় তাহারে, দেব সুপ্রসন্ন যারে? চলিলা রাঘবশ্রেষ্ঠ, তিমির কানন- পথে পথী চলে যথা, যবে নিশাভাগে সুধাংশুর অংশু পশি হাসে সে কাননে। আগে আগে মায়াদেবী চলিলা নীরবে।

কত ক্ষণে রঘুবর শুনিলা চমকি কল্লোল, সহস্র শত সাগর উথলি রোষে কল্লোলিছে যেন! দেখিলা সভয়ে অদূরে ভীষণ পুরী, চিরনিশাবৃত! বহিছে পরিথারূপে বৈতরণী নদী বজ্রনাদে; রহি রহি উথলিছে বেগে তরঙ্গ, উথলে যথা তপ্ত পাত্রে পয়ঃ উচ্ছ্বাসিয়া ধূমপুঞ্জ, ত্রস্ত অগ্নিতেজে! নাহি শোভে দিনমণি সে আকাশদেশে; কিম্বা চন্দ্র, কিম্বা তারা; ঘন ঘনাবলী, উগরি পাবকরাশি, ভ্রমে শূন্যপথে বাতগর্ভ, গঞ্জি উচ্চে, প্রলয়ে যেমতি পিনাকী, পিনাকে ইয় বসাইয়া রোষে!

সবিস্ময়ে রঘুনাথ নদীর উপরে হেরিলা অদ্ভুত সেতু, অগ্নিময় কহু, কভু ঘন ধূমাবৃত, সুন্দর কভু বা সুবর্ণে নিমিত যেন! ধাইছে সতত সে সেতুর পানে প্রাণী লক্ষ লক্ষ কোটি- হাহাকার নাদে কেহ; কেহ বা উল্লাসে!

সুধিলা বৈদেহীনাথ, "কহ, রুপাময়ি, কেন নানা বেশ সেতু ধরিছে সতত? কেন বা অগণ্য প্রাণী (অগ্নিশিখা হেরি পতঙ্গের কুল যথা) ধায় সেতু পানে?"
উত্তরিলা মায়াদেবী, -"কামরূপী সেতু,

সীতানাথ; পাপি-পক্ষে অগ্নিময় তেজে, ধূমাবৃত; কিন্তু যবে আসে পুণ্য-প্রাণী প্রশস্ত, সুন্দর, স্বর্গে স্বর্ণপথ যথা! ওই যে অগণ্য আত্মা দেখিছ, নৃমণি, ত্যজি দেহ ভবধামে, আসিছে সকলে প্রেতপুরে, কর্মফল ভুল্লিতে এ দেশে। ধর্মপথগামী যারা যায় সেতুপথে

উত্তর, পশ্চিম, পূর্বদ্বারে; পাপী যারা সাঁতারিয়া নদী পার হয় দিবানিশি মহাক্লেশে; যমদূত পীড়য়ে পুলিনে, জলে জলে পাপ-প্রাণ তপ্ত তৈলে যেন! চল মোর সাথে তুমি; হেরিবে সত্বরে নরচক্ষুঃ কহু নাহি হেরিয়াছে যাহা।"

ধীরে ধীরে রঘুবর চলিলা পশ্চাতে, সুবর্ণ-দেউটী সম অগ্রে কুহকিনী উজ্জলি বিকট দেশ। সেতুর নিকটে সভয়ে হেরিলা রাম বিরাট-মৃরতি যমদূত দণ্ডপাণি। গঞ্জি বজ্রনাদে সুধিল ক্বতান্তচর, "কে তুমি? কি বলে, সশরীরে, হে সাহসি, পশিলা এ দেশে আত্মময়? কহ ত্বরা, নতুবা নাশিব দণ্ডাঘাতে মুহূর্তেকে!" হাসি মায়াদেবী শিবের ত্রিশূল মাতা দেখাইলা দূতে।

নতভাবে নমি দূত কহিল সতীরে,- "কি সাধ্য আমার, সাব্বি, রোধি আমি গতি তোমার? আপনি সেতু স্বর্ণময় দেখ উল্লাসে, আকাশ যথা ঊষার মিলনে!"

বৈতরণী নদী পার হইলা উভয়ে। লৌহময় পুরীদ্বার দেখিলা সম্মুখে রঘুপতি; চক্রাকৃতি অগ্নি রাশি রাশি ঘোরে অবিরাম-গতি চৌদিক উজলি! আগ্নেয় অক্ষরে লেখা দেখিলা নৃমণি ভীষণ তোরণ-মুখে, -"এই পথ দিয়া যায় পাপী দুঃখদেশে চির দুঃখ-ভোগে,-
হে প্রবেশি, ত্যজি স্পৃহা, প্রবেশ এ দেশে!"

অস্থিচর্মসার দ্বারে দেখিলা শুরখী জর-রোগ। কভু শীতে কাঁপে ক্ষীণ তমু থর থরি; ঘোর দাহে কভু বা দহিছে, বাড়বাগ্নিতেজে যথা জলদলপতি।

পিত্ত, শ্লেমা, বায়ু, বলে কভু আক্রমিছে অপহরি জ্ঞান তার। সে রোগের পাশে বিশাল-উদর বসে উদরপরতা:-

অজীর্ণ ভোজন-দ্রব্য উগরি দুর্মতি পুনঃ পুনঃ, দুই হস্তে তুলিয়া গিলিছে সুখাদ্য! তাহার পাশে প্রমত্তত্ব হাসে চুল চুল চুল আঁখি! নাচিছে, গাইছে কহু, বিবাদিছে কহু, কাঁদিছে কহু বা সদা জ্ঞানশূন্য মূঢ়, জ্ঞানহর সদা!

তার পাশে দুষ্ট কাম, বিগলিত-দেহ শব যথা, তবু পাপী রত গো সুরতে- দহে হিয়া অহরহঃ কামানলতাপে! তার পাশে বসি যক্ষ্মা শোণিত উগরে, কাসি কাসি দিবানিশি; হাঁপায় হাঁপানি- মহাপীড়া! বিশ্বচিকা, গতজ্যোতিঃ আঁথি; মুখ-মল-দ্বারে বহে লোহের লহরী শুভ্রজলরয়রূপে! তৃষারূপে রিপু আক্রমিছে মূহুর্মুহুঃ; অঙ্গগ্রহ নামে ভয়ঙ্কর যমচর গ্রহিছে প্রবলে ক্ষীণ অঙ্গ, যথা ব্যাঘ্র, নাশি জীব বনে, রহিয়া রহিয়া পড়ি কামড়ায় তারে কৌতুকে! অদূরে বসে সে রোগের পাশে উন্মত্ততা, উগ্র কভু, আহুতি পাইলে উগ্র অগ্নিশিখা যথা। কভু হীনবলা। বিবিধ ভূষণে কহু ভূষিত; কভু বা উলঙ্গ, সমর-রঙ্গে হরপ্রিয়া যথা কালী! কভু গায় গীত করতালি দিয়া উন্মদা; কভু বা কাঁদে; কভু হাসিরাশি বিকট অধরে; কভু কাটে নিজ গলা তীক্ষ্ণ অস্ত্রে; গিলে বিষ; ডুবে জলাশয়ে, গলে দড়ি! কভু, ধিক্! হাব ভাব-আদি বিভ্রমবিলাসে বামা আহ্বানে কামীরে কামাতুরা! মল, মূত্র, না বিচারি কিছু, অন্ন সহ মাখি, হায়, খায় অনায়াসে! কহু বা শৃঙ্খলাবদ্ধা, কহু দ্বীরা যথা স্রোতোহীন প্রবাহিণী-পবন বিহনে! আর আর রোগ যত কে পারে বণিতে?
দেখিলা রাঘব রথী অগ্নিবর্ণ রথে

(বসন শোণিতে আর্দ্র, পর অসি করে,) !রণে! রথমুখে বসে ক্রোধ সূতবেশে! নরমুণ্ডমালা গলে, নরদেহরাশি সম্মুখে! দেখিল। হত্যা, ভীম খড়গপাণি, উর্ধ্ব বাহু সদা, হায়, নিধনসাধনে! বৃক্ষশাথে গলে রজ্জু দুলিছে নীরবে আত্মহত্যা, লোলজিহ্ব, উন্মীলিত আঁখি ভয়ঙ্কর! রাঘবেন্দ্রে সন্তাষি সুভাসে কহিলেন মায়াদেবী-"এই যে দেখিছ বিকট শমনদূত যত, রঘুরথি, নানা বেশে এ সকলে ভ্রমে ভূমণ্ডলে অবিশ্রাম, ঘোর বনে কিরাত যেমতি মৃগয়ার্থে! পশ তুমি ক্বতান্তনগরে, সীতাকান্ত; দেখাইব আজি হে তোমারে কি দশায় আত্মকুল জীবে আত্মদেশে! দক্ষিণ দুয়ার এই; চৌরাশি নরক-

কুণ্ড আছে এই দেশে। চল ত্বরা করি।" পশিলা ক্বতাস্তপুরে সীতাকান্ত বলী, দাবদগ্ধ বনে, মরি, ঋতুরাজ যেন বসন্ত; অমৃত কিম্বা জীবশূন্য দেহে! অন্ধকারময় পুরী, উঠিছে চৌদিকে আর্তনাদ; ভূকম্পনে কাঁপিছে সঘনে জল, স্থল; মেঘাবলী উগরিছে রোষে কালাগ্নি, দুর্গন্ধময় সমীর বহিছে, লক্ষ লক্ষ শব যেন পুড়িছে শ্মশানে!

কত ক্ষণে রঘুশ্রেষ্ঠ দেখিলা সম্মুখে মহাহ্রদ; জলরূপে বহিছে কল্লোলে কালাগ্নি! ভাসিছে তাহে কোটি কোটি প্রাণী? ছটফটি হাহাকারে! "হায় রে, বিধাতঃ নির্দয়, সৃজিলি কি রে আমা সবাকারে এই হেতু? হা দারুণ, কেন না মরিমু জঠর-অনলে মোরা মায়ের উদরে? কোথা তুমি, দিনমণি? তুমি, নিশাপতি সুধাংশু? আর কি কভু জুড়াইব আঁখি হেরি তোমা দোঁহে, দেব? কোথা স্থত, দারা, আত্মবর্গ? কোথা, হায়, অর্থ, যার হেতু বিবিধ কুপথে রত ছিন্ন রে সতত,- করিনু কুকর্ম, ধর্মে দিয়া জলাঞ্জলি?"

এইরূপে পাপি-প্রাণ বিলাপে সে হ্রদে মুহুর্মুহুঃ। শূন্যদেশে অমনি উত্তরে শূন্যদেশভবা বাণী ভৈরব নিনাদে,- "বৃথা কেন, মূঢ়মতি, নিন্দিস্ বিধিরে তোরা? স্বকরম-ফল ভুঞ্জিস্ এ দেশে! পাপের ছলনে ধর্মে ভুলিলি কি হেতু? স্থবিধি বিধির বিধি বিদিত জগতে!" নীরবিলে দৈববাণী, ভীষণ-মুরতি যমদূত হানে দণ্ড মস্তক-প্রদেশে;

কাটে কুমি; বজ্রনগা, মাংসাহারী পাখী উড়ি পড়ি ছায়াদেহে ছিঁড়ে নাড়ি-ভূড়ি হুহুঙ্কারে! আর্তনাদে পুরে দেশ পাপী! কহিলা বিষাদে মায়া রাঘবে সম্ভাবি,- "রৌরব এ হ্রদ নাম, শুন, রঘুমণি, অগ্নিময়! পরণন হরে যে দুর্মতি,

তার চিরবাস হেথা; বিচারী যদ্যপি অবিচারে রত, সেও পড়ে এই হ্রদে; আর আর প্রাণী যত, মহাপাপে পাপী।

না নিবে পাবক হেথা, সদা কীট কাটে! নহে সাধারণ অগ্নি কহিমু তোমারে, জলে যাহে প্রেতকুল এ ঘোর নরকে,

রঘুবর; অগ্নিরূপে বিদিরোস হেথা জলে নিত্য! চল, রথি, চল, দেখাইব কুঙ্গীপাকে; তপ্ত তৈলে যমদূত ভাঙ্গে পাপিরন্দে যে নরকে! ওই শুন, বলি, অদূরে ক্রন্দনধ্বনি! মায়াবলে আমি রোদিয়াছি নায়াপথ তোমার, নহিলে নারিতে তিষ্টিতে হেথা, রঘুশ্রেষ্ঠ রখি! কিম্বা চল যাই, যথা অন্ধতম কূপে

কাঁদিছে আত্মহা পাপী হাহাকার রবে চিরবন্দী!" করপুটে কহিলা নৃপতি, "ক্ষম, ক্ষেমঙ্করি, দাসে! মরিব এখনি পরদুঃখে, আর যদি দেখি দুঃখ আমি এইরূপ! হায়, মাতঃ, এ ভবমণ্ডলে স্বেচ্ছায় কে গ্রহে জন্ম, এই দশা যদি পরে? অসহায় নর; কলুষকুহকে পারে কি গো নিবারিতে?" উত্তরিলা মায়া,- "নাহি বিষ, মহেঘাস, এ বিপুল ভবে, না দমে ঔষধ যারে! তবে যদি কেহ অবহেলে সে ঔষধে, কে বাঁচায় তারে কর্মক্ষেত্রে পাপ সহ রণে যে স্নমতি, দেবকুল অনুকূল তার প্রতি সদা;- অভেদ্য কবচে ধর্ম আবরেন তারে! এ সকল দণ্ডস্থল দেখিতে যদ্যপি, হে রথি, বিরত তুমি, চল এই পথে!"

কতদূরে সীতাকাস্ত পশিলা কাম্বারে- নীরব, অসীম, দীর্ঘ; নাহি ডাকে পাখী, নাহি বহে সমীরণ সে ভীষণ বনে, না ফোটে কুহুমাবলী-বনসুশোভিনী। স্থানে স্থানে পত্রপুঞ্জে ছেবি প্রবেশিছে রশ্মি, তেজোহীন কিন্তু, রোগিহাস্য যথা।

লক্ষ লক্ষ লক্ষ প্রাণী সহসা বেড়িল সবিস্ময়ে রঘুনাথে, মধুভাণ্ডে যথা মক্ষিক। সুধিল কেহ সকরুণ স্বরে, "কে তুমি, শরীরি? কহ, কি গুণে আইলা এ স্থলে? দেব কি নর, কহ শীঘ্র করি? কহ কথা; আমা সবে তোষ, গুণনিসি, বাক্য-সুধা-বরিষণে! যে দিন হরিল পাপপ্রাণ যমদূত, সে দিন অবধি রসনাজনিত ধ্বনি বঞ্চিত আমরা! জুড়াল নয়ন হেরি অঙ্গ তব, রথি, বরাঙ্গ, এ কর্ণদ্বয়ে জুড়াও বচনে!"

উত্তরিলা রক্ষোরিপু, “রঘুকুলোদ্ভব এ দাস, হে প্রেতকুল; দশরথ রথী পিতা, পাটেশ্বরী দেবী কৌশল্যা জননী; রাম নাম ধরে দাস; হায়, বনবাসী ভাগ্য-দোষে! ত্রিশূলীর আদেশে ভেটিব পিতায়, তেঁই গো আজি এ ক্বতান্তপুরে।" উত্তরিল প্রেত এক, "জানি আমি তোমা শুরেন্দ্র। তোমার শরে শরীর ত্যজিন্ন পঞ্চবটীবনে আমি!" দেখিলা নুমণি চমকি মারীচ রক্ষে-দেহহীন এবে! জিজ্ঞাসিলা রামচন্দ্র, "কি পাপে আইলা

এ ভীষণ বনে, রক্ষঃ, কহ ত। আমারে?" "এ শাস্তির হেতু হায়, পৌলস্ত্য দুর্মতি, রঘুরাজ!" উত্তরিলা শূন্যদেহ প্রাণী, "সাধিতে তাহার কার্য বঞ্চিন্ত তোমারে, তেই এ দুর্গতি মম!" আইল দূষণ সহ খর, (খর যথা তীক্ষ্ণতর অসি সমরে, সজীব রোষে, কবে,) হেরি রঘুনাথে, অভিমানে দোঁহে চলি গেলা দূরে, বিষন্দন্তহীন অহি হেরিলে নকুলে বিষাদে লুকায় যথা! সহসা পূরিল

ভৈরব আরবে বন, পালাইল রড়ে ভূতকূল, শুষ্ক পত্র উড়ি যায় যথা বহিলে প্রবল ঝড়! কহিলা শূরেশে মায়া, "এই প্রেতকুল, শুন রঘুমণি, নানা কুণ্ডে করে বাস; কহু কহু আসি ভ্রমে এ বিলাপবনে, বিলাপি নীরবে। ওই দেখ যমদূত খেদাইছে রোষে নিজ নিজ স্থানে সবে!" দেখিলা বৈদেহী- হৃদয়-কমল-রবি, ভূত পালে পালে, পশ্চাতে ভীষণ-মূর্তি যমদূত; বেগে ধাইছে নিনাদি ভূত, মৃগপাল যথা ধায় বেগে ক্ষুধাতুর সিংহের তাড়নে

উর্ধ্বশ্বাস! মায়া সহ চলিলা বিষাদে দয়াসিন্ধু রামচন্দ্র সজল নয়নে।

কত ক্ষণে আর্তনাদ শুনিলা সুরথী শিহরি! দেখিলা দূরে লক্ষ লক্ষ নারী, আভাহীন, দিবাভাগে শশিকলা যথা আকাশে! কেহ বা ছিড়ি দীর্ঘ কেশাবলী, কহিছে, "চিকণি তোরে বাবিতাম সদা, বাঁধিতে কামীর মনঃ, ধর্ম কর্ম ভুলি, উন্মদা যৌবনমদে!" কেহ বিদরিছে নগে বক্ষঃ, কহি, "হায়, হীরামুক্তা-ফলে বিফলে কাটায় দিন সাজাইয়া তে'রে; কি ফল ফলিল পরে!" কোন নারী খেদে কুডিছে নয়নন্বয়, (নির্দয় শকুনি মৃতজীব-আঁখি যথা) কহিয়া; "অঞ্চনে রঞ্জি তোরে, পাপচক্ষুঃ, হানিতাম হাসি চৌদিকে কটাক্ষশর; সুদর্পণে হেরি বিভা তোর, দ্বণিতাম কুরঙ্গনয়নে! গরিমার পুরস্কার এই কি রে শেষে?"

চলি গেলা বামাদল কাঁদিয়া কাঁদিয়া।

পশ্চাতে কৃতান্তদূতী, কুস্তল-প্রদেশে স্বনিছে ভীষণ সর্প; নথ অসি-সম; রক্তাক্ত অধর ওষ্ঠ; দুলিছে সঘনে কদাকার স্তনযুগ ঝুলি নাভিতলে; নাসাপথে অগ্নিশিখা জ্বলি বাহিরিছে

ধন্ধকি; নয়নাগ্নি মিশিছে তা সহ।  সম্ভাষি রাঘবে মায়া কহিলা, "এই যে নারীকুল, রঘুমণি, দেখিছ সম্মুখে, বেশভূষাসক্তা সবে ছিল মহীতলে। সাঞ্জিত সতত দুষ্টা, বসন্তে যেমতি বনস্থলী, কামি-মনঃ মজাতে বিভ্রমে কামাতুরা! এবে কোথা সে রূপমাধুরী, সে যৌবনধন, হায়?" অমনি বাঙ্গিল প্রতিধ্বনি, "এবে কোথা সে রূপমাধুরী, সে যৌবনদন, হায়!" কাঁদি ঘোর রোলে চলি গেলা বামাকুল যে যার নরকে। আবার কহিলা মায়া, "পুনঃ দেখ চেয়ে সম্মুখে, হে রঙ্গোরিপু!” দেখিলা নুমণি আর এক বামাদল সম্মোহন রূপে!

পরিমলময় ফুলে মণ্ডিত কবরী, কামারির তেজোরাশি কুরঙ্গ-নয়নে, মিষ্টতর হুদা-রস মধুর অপরে!

দেবরাজ-কম্ব সম মণ্ডিত রতনে গ্রীবাদেশ; সূক্ষ্ম স্বর্ণ-সূতার কাঁচলি আন্ডাদন-ছলে ঢাকে কেবল দেখাতে কুচ-রুচি, কাম-ক্ষুধা বাড়ায়ে হৃদয়ে! সুক্ষীণ কটি; নীল পট্টবাসে,

কামীর (সূক্ষ্ম অতি) গুরু উরু যেন ঘৃণা করি আবরণ, রম্ভা-কান্তি দেখায় কৌতুকে, উলঙ্গ বরাঙ্গ যথা মানসের জলে অপ্সরীর, জল-কেলি করে তারা যবে। বাজিছে নূপুর পায়ে, নিতম্বে মেখলা; মৃদঙ্গের রঙ্গে, বীণা, রবাব, মন্দিরা, আনন্দে স্বরঙ্গ সবে মন্দে মিলাইছে।

সঙ্গীত-তরঙ্গে রঙ্গে ভাসিছে অঙ্গনা। রূপস পুরুষদল আর এক পাশে বাহিরিল মৃদু হাসি; সুন্দর যেমতি ক্বত্তিকা-বল্লভ দেব কার্তিকেয় বলী, কিম্বা, রতি, মনমথ, মনোরথ তব! হেরি সে পুরুষ-দলে কামমদে মাতি
কপটে কটাক্ষ-শর হানিলা রমণী,
কঙ্কণ বাজিল হাতে শিঞ্জিনীর বোলে।

তপ্তশ্বাসে উড়ি রজঃ কুহুমের দামে ধূলারূপে জ্ঞান-রবি আশু আবরিল। হারিল পুরুষ রণে; হেন রণে কোথা জিনিতে পুরুষদলে আছে হে শকতি?

বিহঙ্গ বিহঙ্গী যথ। প্রেমরঙ্গে মজি করে কেলি যথ। তথ।-রসিক নাগরে, ধরি পশে বন-মাঝে রসিকা নাগরী- কি মানসে, নয়ন তা কহিল নয়নে।

সহসা পূরিল বন হাহাকার রবে! বিস্ময়ে দেখিলা রাম করি জড়াজড়ি গড়াইছে ভূমিতলে নাগর নাগরী কামড়ি আঁচড়ি, মারি হস্ত, পদাঘাতে; ছিঁড়ি চুল, কুড়ি আঁখি, নাক মুখ চিরি বজ্রনখে। রক্তস্রোতে তিতিলা ধরণী ।৪৭০ যুঝিল উভয়ে ঘোরে, যুঝিল যেমতি কাচকের সহ ভীম নারী-বেশ ধরি বিরাটে। উতরি তথ। যমদূত যত লৌহের মুদগর মারি আশু তাড়াইলা দুই দলে। মৃদুভাষে কহিল। সুন্দরী মায়া রঘুকুলানন্দ রাঘবনন্দনে;-

"জীবনে কামের দাস, শুন, বাছা, ছিল পুরুষ; কামের দাসী রমণী-মণ্ডলী। কাম-ক্ষুধা পুরাইল দোঁহে অবিরামে বিসর্জি ধর্মেরে, হায়, অধর্মের জলে, বর্জি লজ্জা; দণ্ড এবে এই যমপুরে। ছলে যথা মরীচিকা তৃষাতুর জনে, মরু-ভূমে; স্বর্ণকান্তি মাকাল যেমতি মোহে ক্ষুধাতুর প্রাণে; সেই দশা ঘটে এ সঙ্গমে; মনোরথ বৃথা দুই দলে। আর কি কহিব, বাছা, বুঝি দেখ তুমি। এ দুর্ভোগ, হে সুভগ, ভোগে বহু পাপী মর-ভূমে নরকাগ্রে; বিধির এ বিধি-

যৌবনে অন্যায় ব্যয়ে বয়সে কাঙ্গালী। অনির্বেয় কামানল পোড়ায় হৃদয়ে; অনির্বেঘ্ন বিধি-রোষ কামানল-রূপে দহে দেহ, মহাবাহু, কহিমু তোমারে- এ পাপি-দলের এই পুরঙ্গার শেষে!"- মায়ার চরণে নমি কহিলা নৃমণি,
"কত যে অদ্ভুত কাণ্ড দেখিনু এ পুরে,

তোমার প্রসাদে, মাতঃ, কে পারে বর্ণিতে? কিন্তু কোথা রাজ-ঋসি? লইব মাগিয়া কিশোর লক্ষ্মণে ভিক্ষা তাঁহার চরণে- লহ দাসে সে সুধামে, এ মম মিনতি।" হাসিয়া কহিল। মায়া, "অসীম এ পুরী, রাঘব, কিঞ্চিৎ মাত্র দেখান্ত তোমারে। দ্বাদশ বৎসর যদি নিরন্তর ভ্রমি ক্বতান্ত-নগরে, শূর, আমা দোঁহে, তবু না হেরিব সর্বভাগ! পূর্বদ্বারে সুখে পতি সহ করে বাস পতিপরায়ণা

সাধ্বীকুল; স্বর্গে, মর্ত্যে, অতুল এ পুরী সে ভাগে; সুরম্য হর্য্য সুকানন মাঝে, সুসরসী সুকমলে পরিপূর্ণ সদা, বাসন্ত সমীর চির বহিছে স্বম্বনে, গাইছে স্থপিকপুর সদা পঞ্চস্বরে। আপনি বাজিছে বীণা, আপনি বাজিছে মুরজ, মন্দিরা, বাঁশী, মধু সপ্তস্বরা!। দধি, দুগ্ধ, স্বত, উৎসে উথলিছে সদা

চৌদিকে, অমৃতফল ফলিছে কাননে; প্রদানেন পরমান্ন আপনি অন্নদা! চর্বা, চোয়া, লেহ, পেয়, যা কিছু যে চাহে, অমনি পায় সে তারে, কামধুকে যথা কামলতা, মহেষাস, সদ্য ফবতী। নাহি কাজ যাই তথা, উত্তর দুবারে চল, বলি, ক্ষণকাল ভ্রম সে স্বদেশে। অবিলম্বে পিতৃ-পদ হেরিবে, নৃমণি!"

উত্তরাভিমুখে দোহে চলিল। সহরে। দেখিলা বৈদেহীনাথ গিরি শত শত বন্ধ্য, দগ্ধ, আহা যেন দেবরোষানলে! তুপশৃঙ্গশিরে কেহ ধরে রাশি রাশি তুবার; কেহ বা গজি উগরিছে মূহুঃ অগ্নি, জবি শিলাকুলে অগ্নিময় স্রোতে, আবরি গগন ভন্মে, পূরি কোলাহলে চৌদিক্! দেখিলা প্রভু মরুক্ষেত্র শত অসীম, উত্তপ্ত বায়ু বাহ নিরববি তাড়াইছে বালিবৃন্দে উমিদলে যেন! দেখিলা তড়াগ বলী, সাগর-সদৃশ

অকূল; কোথায় ঝড়ে হুঙ্কারি উথলে তরঙ্গ পর্বতাকৃতি; কোথায় পচিছে গতিহীন জলরাশি; করে কেলি তাহে ভীষণ-মূরতি ডেক, চীৎকারি গভীরে! ভাসে মহোরগবৃন্দ, অশেষশরীরী শেষ যথা; হলাহল জলে কোন স্থলে; সাগর-মম্বনকালে সাগরে যেমতি।

এ সকল দেশে পাপী ভ্রমে, হাহারবে বিলাপি! দংশিছে সর্প, বৃশ্চিক কামড়ে,
ভীষ্ণদশন কীট! আগুন ভূতলে, শূন্যদেশে ঘোর শীত। হায় রে, কে কবে লভয়ে বিরাম ক্ষণ এ উত্তর দ্বারে! দ্রুতগতি মায়া সহ চলিলা সুরথী।

নিকটয়ে তট যবে, যতনে কাণ্ডারী দিয়া পাড়ি জলারণ্যে, আশু ভেটে তারে কুহুমবনজনিত পরিমলসখা সমীর; জুড়ায় কান শুনি বহুদিনে পিককুল-কলরব, জনরব সহ; ভাদে সে কাণ্ডারী এবে আনন্দ-সলিলে;-

সেইরূপে রঘুবর শুনিলা অদূরে বাদ্যধ্বনি! চারি দিকে হেরিলা সুমতি সবিস্ময়ে স্বর্ণসৌধ, হুকাননরাজী কনক-প্রস্থন-পূর্ণ, সুদীর্ঘ সংসী, নব-কুবলয়-ধাম! কহিলা স্বম্বরে মায়া, "এই দ্বাবে, বীর, সম্মুখসংগ্রামে পড়ি, চিরস্থ ভুঞ্জে মহারথী যত। অশেষ, হে মহাভাগ, সম্ভোগ এ ভাগে সুখের! কানন-পথে চল ভীমবাহু,  দেখিবে যশস্বী জনে, সঞ্জীবনী পুরী যশে পূর্ণ, নিকুঞ্জ যেমতি

যা সবার সৌরভে । এ পুণ্যভূমে বিধাতার হাসি চন্দ্র-সূর্য-তারারূপে দীপে, অহরহঃ উজ্জলে। " কৌতুকে রখী চলিগা সত্বরে, অগ্রে শূলহস্তে মায়া! কত ক্ষণে বলী দেখিলা সম্মুখে ক্ষেত্র-রঙ্গভূমিরূপে। কোন স্থলে শূলকূল শালবন যথা বিশাল; কোথায় হেষে তুরঙ্গমরাজী মণ্ডিত রণভূষণে; কোথায় গরজে গজেন্দ্র! খেলিছে চর্মী অসি চর্ম ধরি; কোথায় যুঝিছে মল্ল ক্ষিতি লমলি; উড়িছে পতাকাচয় রণানন্দে যেন। কুসুম-আসনে বসি, স্বর্ণবীণ। করে, কোথায় গাইছে কবি, মোহি শ্রোতাকুলে, বীরকুলসংকীর্তনে। মাতি সে সঙ্গীতে, কঙ্কারি'ছ বীরল; বসিছে চৌদিকে, না জানি কে. পাবিজ্ঞাত ফুল রাশি রাশি, স্বসৌরভে পূরি দেশ। নাচিছে অপ্সবা; গাইছে কিপ্লবকুল, ত্রিদিবে যেমতি। কহিলা রাঘবে ম'য়া, "সত্যযুগ-রণে সম্মুখসমরে হত রথীশ্বর যত, দেখ এই ক্ষেত্রে আজি, ক্ষত্রচূড়ামণি! কাঞ্চনশরীর যথা হেমকুট, দেখ নিশুন্তে; কিরীট-আভা উঠিছে গগনে- মহাবীর্যগন্ রথী। দেবতেজোদ্ভবা চণ্ডী ঘোর তব রণে নাশিলা শুবেশে। দেখ শুন্তে, শূলীশম্ভুনিভ পরা রুমে; ভীষণ মহিষান্তরে, তুরঙ্গমখী; ত্রিপুর'রি অরি শূর স্তরথী ত্রিপুরে:-৫৯০ বৃত্র-আদি দৈত্য যত, বিখ্যাত জগতে। সুন্দ-উপসুন্দ শ্বে আনন্দে ভাসিছে ভ্রাতৃপ্রেমনীরে পুনঃ।" সুধিলা সুমতি রাঘব, কেন না হেরি, কহ দয়াময়ি, কুম্ভকর্ণ, অতিকায়, নরান্তক (রণে
নরাস্তক), ইন্দ্রজিং আদি রক্ষঃ শূরে?"

উত্তরিলা কুহকিনী, "অস্তোষ্টি ব্যতাত, নাহি গতি এ নগরে, হে বৈদেহীপতি। নগর বাহিরে দেশ, ভ্রমে তথা প্রাণী,যত দিন প্রেতক্রিয়া, না সাদে বান্ধবে যতনে; বিবির বিধি কহিমু তোমারে। চেয়ে দেখ, বীরবর, আসিছে এদিকে সুবীর; অদৃশ্যভাবে থাকিব, নৃমণি, তব সঙ্গে। মিষ্টালাপ কর রঙ্গে, তুমি।"

এতেক কহিয়। মাতা অদৃশ্য হইলা। সবিস্ময়ে রঘুবর দেখিল। বীরেশে তেজস্বী; কিরীটচুড়ে গেলে সৌদামিনী, ঝলঝলে মহাকায়ে, নয়ন ঝলসি, আভরণ! কবে শূল, গজপতিগতি। অগ্রসরি শূরেশ্বর সম্ভানি রামেরে,

সুধিলা,-"কি হেতু হেথা সশরীরে আজি, রঘুকুলচূডামণি? অন্যায় সমবে স' হারিলে মোরে তুমি তুধিতে সুগ্রীবে; কিন্তু দূর কর ভয়; এ কুতান্তপুরে নাহি জানি ক্রোধ মোরা, জিতেন্দ্রিয় সবে। ম'নবজীবনস্রোতঃ পৃথিণী মণ্ডলে, পঙ্কিল, বিমল রয়ে বহে সে এ দেশে। আমি বালি।" সজ্জায় চিনিলা নুমণি রথীন্দ্র কিষ্কিন্ধ্যানাথে! কহিলা হাসিয়া বালি, "চলমোর সাথে, দাশরথি রধি!  ওই যে উদ্যান, দেব, দেখিছ অদূরে শুবর্ণ-কুসুমময়, বিহারেন সদা ও বনে জটায়ু রথী, পিতৃসখা তব! পরম পিরীতি রথী পাইবেন হেরি তোমায়! জীবনদান দিলা মহামতি ধর্মকর্মে-সতী নারী রাখিতে বিপদে; অসীম গৌবব তেঁই! চল ত্বরা করি।" জিজ্ঞাসিলা রক্ষোরিপু, "কহ, রুপা করি, হে স্থরথি, সমন্বর্থী এদেশে কি তোমা সকলে?" "খনির গর্ভে," উত্তরিলা বালি, "জনমে সহস্র মণি, রাঘব; ক্রিণে নহে সমতুল সবে, কহিমু তোমারে;- তবু আভাহীন কেবা, কহ, রঘুমণি?"

এইরূপে মিষ্টালাপে চলিলা দুজনে।
রমা বনে, বহে যথা পীযূষসলিলা
নদী সদা কলকলে, দেখিল। নৃমণি,

জটায়ু গরুড়পুত্রে, দেবাক্বতি রখী; দ্বিরদ-রদ-নির্মিত, বিবিধ-রতনে খচিত আসনাসীন! উথলে চৌদিকে বীণাধ্বনি! পদ্মপর্ণবর্ণ বিভারাশি  উজ্জলে সে বনরাজী, চন্দ্রাতপে ভেদি সৌরকরপুঞ্জ যথা উৎসব-আলয়ে! চিরপরিমলময় সমীর বহিছে বাসস্ত! আদরে বীর কহিলা রাঘবে,- "জুড়ালে নয়ন আজি, নরকুলমণি মিত্রপুত্র! ধন্য তুমি! ধরিলা তোমারে শুভ ক্ষণে গর্ভে, শুভ, তোমার জননী! ধন্য দশরথ সপ।, জন্মদাতা তব! দেবকুলপ্রিয় তুমি, তেঁই সে আইলে সশরীরে এ নগরে। কহ, বংস, শুনি, রণ-বার্তা! পড়েছে কি সমরে দুর্মতি রাবণ?" প্রণমি প্রভু কহিলা সুস্বরে, "ও পদ-প্রসাদে, তাত, তুমুল সংগ্রামে, বিনাশিশু বহু রক্ষে; রক্ষঃকুলপতি রাবণ একাকী বীর এবে রক্ষঃপুরে। তার শরে হতজীব লক্ষ্মণ সুমতি

অনুজ; আইল দাস এ দুর্গম দেশ!
শিবের আদেশে আজি! কহ, রুপা করি, কহ দাসে, কোথা পিতা, সখা তব, রথি?"

কহিলা জটায়ু বলী, "পশ্চিম দুয়ারে বিরাজেন রাজ-ঋষি রাজ-ঋবিদলে। নাহি মান। মোর প্রতি ভ্রমিতে সে দেশে; যাইব তোমার সঙ্গে, চল, রিপুদমি!"

বহুবিধ রম্য দেশ দেখিলা স্বমতি, বহু স্বর্ণ-অট্টালিকা; দেবাকৃতি বহু রখী; সরোবরকূলে, কুসুমকাননে, কেলিছে হরষে প্রাণী, মধুকালে যথা গুঞ্জরে ভ্রমরকুল সুনিকুঞ্জবনে; কিম্বা নিশাভাগে যখা গদ্যোৎ, উঞ্জলি দশ দিশ! দ্রুতগতি চলিলা দুজনে!  লক্ষ লক্ষ লক্ষ প্রাণী বেড়িল রাঘবে।

কহিলা জটায়ু বলী, “রঘুকুলোদ্ভব এ সুরখী! সশরীরে শিবের আদেশে, আইলা এ প্রেতপুরে, দরশন-হেতু পিতৃপদ; আশীর্বাদি যাহ সবে চলি নিজস্থানে, প্রাণিদল।" গেলা চলি সবে আশীর্বাদি। মহানন্দে চলিলা দুজনে। কোথায় হেমাঙ্গগিরি উঠিছে আকাশে বৃক্ষচূড়, জটাচূড় যথা জটাধারী

কপদী! বহিছে কলে প্রবাহিণী ঝরি! হীরা, মণি, মুক্তাফল ফলে স্বচ্ছ জলে। কোথায় বা নীচদেশে শোভিছে কুহুমে শ্যামভূমি; তাহে সরঃ, খচিত কমলে!. নিরন্তর পিকবর কুহরিছে বনে।

বিনতানন্দনাত্মজ কহিলা সম্ভাষি রাঘবে, "পশ্চিম দ্বার দেখ, রঘুমণি, হিরন্ময়; এ সুদেশে হীরক-নির্মিত গৃহাবলী। দেখ চেয়ে, স্বর্ণবৃক্ষমূলে, মরকত-পত্র-ছত্র দীর্ঘশিরোপরি, কনক-আসনে বসি দিলীপ নূমাণ, সঙ্গে সুদক্ষিণা সাব্বী! পূজ ভক্তিভাবে বংশের নিদান তব। বসেন এ দেশে অগণ্য রাজষিগণ, ইক্ষাকু, মান্ধাতা, নহুষ প্রভৃতি সবে বিখ্যাত জগতে। অগ্রসরি পিতামহে পূজ, মহাবাহু!"

অগ্রদরি রথীশ্বর সাষ্টাঙ্গে নমিলা দম্পতীর পদতলে; শুধিল। আশীষি দিলীপ, "কে তুমি? কহ, কেমনে আইলা সশরীরে প্রেতদেশে, দেবাক্বতি রবি? তব চন্দ্রানন হেরি আনন্দসলিলে ভাসিল হৃদয় মম!" কহিল। সুস্বরে সুদক্ষিণা, "হে স্বভগ, কহ ত্বরা করি, কে তুমি? বিদেশে যথা স্বদেশীয় জনে হেরিলে জুড়ায় আঁখি, তেমনি জুড়াল আধি মম, হেরি তোমা! কোন্ সাধ্বী নারী শুভ ক্ষণে গর্ভে তোমা ধরিল, সুমতি! দেবকুলোদ্ভব যদি, দেবাক্বতি, তুমি, কেন বন্দ আমা দোঁহে? দেব যদি নহ, কোন্ কুল উজ্জ্বলিলা নরদেবরূপে?"

ঔত্তরিলা দাশরথি ক্বতাঞ্জলিপুটে, "ভুবনবিখ্যাত পুত্র রঘু নামে তব, রাজনি, ভুবন যিনি জিনিলা স্ববলে দিগ বিজয়ী; অজ নামে তাঁর জনমিল তনয়-বহুধাপাল; বরিলা অজেরে ইন্দুমতী; তাঁর গর্ভে জনম লভিলা
দশরথ মহামতি; তাঁর পাটেশ্বরী কৌশল্যা, দাসের জন্ম তাঁহার উদরে। সুমিত্রা-জননী-পুত্র লক্ষ্মণ-কেশরী, শত্রুগ্ন-শত্রুগ্ন রণে! কৈকেয়ী জননী ভরত ভ্রাতারে, প্রভু, ধরিলা গরভে!" উত্তরিলা রাজ-ঋবি, "রামচন্দ্র তুমি,

ইক্ষাকু-কুলশেখর, আশীবি তোমারে! নিত্য নিত্য কীতি তব ঘোষিবে জগতে, যত দিন চন্দ্র সূর্য উদয়ে আকাশে, কীর্তিমান্! বংশ মম উজ্জ্বল ভূতলে তব গুণে, গুণিশ্রেষ্ঠ! ওই যে দেখিছ স্বর্ণগিরি, তার কাছে বিখ্যাত এ পুরে, অক্ষয় নামেতে বট বৈতরণীতটে।

বৃক্ষমূলে পিতা তব পুজেন সতত ধর্মরাজে তব হেতু; যাও, মহাবাহু, রঘুকুল-অলঙ্কার, তাঁহার সমীপে। কাতর তোমার দুঃখে দশরথ রথী।"

বন্দি চরণারবিন্দ আনন্দে নৃমণি, বিদায়ি জটায়ু শূরে, চলিলা একাকী (অন্তরীক্ষে সঙ্গে মায়া) স্বর্ণগিরি দেশে সুরম্য, অক্ষয় বৃক্ষে হেরিলা স্বরণী বৈতরণী-নদীতীরে, পীযুষসলিলা এ ভূমে; সুবর্ণ-শাখা, মরকত পাতা, ফল, হায়, ফলছটা কে পারে বণিতে?

দেবারাধ্য তরুরাজ, মুকতিপ্রদায়ী। হেরি দূরে পুত্রবরে রাজর্ষি, প্রসরি বাহুযুগ, (বক্ষঃস্থল আদ্র অশ্রুজলে) কহিলা, "আইলি কি রে এ দুর্গম দেশে এত দিনে, প্রাণাধিক, দেবের প্রসাদে, জুড়াতে এ চক্ষুদ্বয়? পাইনু কি আজি তোরে, হারাধন মোর? হায় রে, কত যে সহিমু বিহনে তোর, কহিব কেমনে, রামভদ্র? লৌহ যথা গলে অরিতেজে, তোর শোকে দেহত্যাগ কবিন্ত অকালে। মূদ্র্যি নয়ন, হায়, হৃদয়জলনে। নিদারুণ বিবি, বংস, মম কর্মদোসে লিখিলা আযাস, মবি, তোর ও কপালে, ধর্মপথগামী তুই। তেঁই দে ঘটিল এ ঘটনা; তেই, হায়, দলিল কৈকেয়ী জীবনকাননশোভা আশালতা মম মত্ত মাতঙ্গিনীরূপে।" বিলাপিলা বলী দশরথ দাশরথি কাঁদিলা নীরবে।

কহিলা রাঘবশ্রেষ্ঠ, "অকূল সাগরে ভাসে দাস, তাত, এবে। কে তারে রক্ষিবে এ বিপদে? এ নগরে বিদিত যদ্যপি ঘটে যা ভবমণ্ডলে, তবে ও চরণে অবিদিত নহে, কেন আইল এ দেশে কিঙ্কর। অকালে, হায়, ঘোরতর রণে, হত প্রিয়াশুজ আজি! না পাইলে তারে, আর না ফিরিব যথা শোভে দিনমণি, চন্দ্র, তারা! আজ্ঞা দেহ, এখনি মরিব, হে তাত, চরণতলে! না পারি ধরিতে তাহার বিরহে প্রাণ!" কাঁদিলা নুমণি পিতৃপদে: পুত্রদুঃখে কাতর, কহিলা

দশরথ, - "জানি আমি কি কারণে তুমি আইলে এ পুরে, পুত্র। সদা আমি পূজি ধর্মরাজে, জলাঞ্জলি দিয়া সুখভোগে, তোমার মঙ্গল হেতু। পাইবে লক্ষ্মণে,

স্থলক্ষণ! প্রাণ তার এখনও দেহে
বন্ধ, ভগ্ন কারাগারে বন্ধ বন্দী যথা।

সুগন্ধমাদন গিরি, তার শৃঙ্গদেশে ফলে মহৌষধ, বৎস, বিশল্যকরণী, হেমলতা; আনি তাহা বাঁচাও অন্তজে। আপনি প্রসন্নভাবে যমরাজ আজি দিলা এ উপায় কহি। অনুচর তব আশুগতিপুত্র হন, আশুগতিগতি; প্রের তারে; মুহূর্তেকে আনিবে ঔষধে, ভীমপরাক্রম বলী প্রভঞ্জনসম। নাশিবে সময়ে তুমি বিষম সংগ্রামে রাবণে; সবংশে নষ্ট হবে দুষ্টমতি তব শরে; রঘুকুললক্ষ্মী পুত্রবধূ রঘুগৃহ পুনঃ মাতা ফিরি উজ্জ্বলিবে,- কিন্তু সুখ ভোগ ভাগ্যে নাহি, বৎস, তব! পুড়ি ধূপদানে, হায়, গন্ধরস যথা সুগন্ধে আমোদে দেশ, বহু ক্লেশ সহি, পুরিবে ভারতভূমি, যশস্বি, স্বযশে! মম পাপ হেতু বিধি দণ্ডিলা তোমারে,- স্বপাপে মরিমু আমি তোমার বিচ্ছেদে।

"অর্ধগত নিশামাত্র এবে ভূমণ্ডলে। দেববলে বলী তুমি, যাও শীঘ্র ফিরি লঙ্কাধামে; প্রের ত্বরা বীর হনুমানে; আনি মহৌষধ, বৎস, বাঁচাও অনুজে; - রজনী থাকিতে যেন আনে সে ঔষধে।"

আশীবিলা দশরথ দাশরথি শূরে। পিতৃ-পদধূলি পুত্র লইবার আশে, অপিলা চরণপদ্মে করপদ্ম; বৃথা! নারিলা স্পর্শিতে পদ! কহিলা সুস্বরে রঘুজ-অজ-অঙ্গজ দশরথাঙ্গজে;-

"নহে ভূতপূর্ব দেহ এবে যা দেখিছ, প্রাণাধিক! ছায়া মাত্র! কেমনে ছু'ইবে এ ছায়া, শরীগী তুমি? দর্পণে যেমতি প্রতিবিম্ব, কিম্বা জলে, এ শরীর মম!-
অবিলম্বে, প্রিয়তম, 'যাও লঙ্কাধামে।"

প্রণমি বিস্ময়ে পদে চলিলা স্বমতি, সঙ্গে মায়া। কতক্ষণে উতরিলা বলী যথায় পতিত ক্ষেত্রে লক্ষ্মণ স্বরথী; চারি দিকে বীরবৃন্দ নিদ্রাহীন শোকে।

ইতি শ্রীমেঘনাদবধে কাব্যে প্রেতপুরী নাম অষ্টমঃ সর্গঃ।

More Books by মাইকেল মধুসূদন দত্ত

30
Articles
মেঘনাদবধ কাব্য
0.0
মেঘনাদবধ কাব্য ১৯-শতকীয় বাঙালি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত কর্তৃক রচিত মহাকাব্য।[১] 'মেঘনাদবধ কাব্য' মধুসূদনের অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখা দ্বিতীয় কাব্য । কাব্যটি কবির সর্বশ্রেষ্ঠ কবিকীর্তি। এই অমর মহাকাব্য প্রকাশের সঙ্গে আমরা কবির প্রতিভার পূর্ণ বিকাশকালে উপস্থিত হয়। [২] ১৮৬১ সালে কাব্যটির দুইখণ্ডে প্রকাশ হয় । প্রথম খণ্ড(১–৫ সর্গ) ১৮৬১ সালের জানুয়ারী মাসে, এবং দ্বিতীয় খণ্ড (৬—৯ সর্গ) ঐ বৎসরের প্রথমার্ধে প্রকাশিত হয়। কাব্যটি মোট নয়টি সর্গে বিভক্ত। মেঘনাদবধ কাব্য হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণ অবলম্বনে রচিত[৩], যদিও এর মধ্যে নানা বিদেশী মহাকাব্যের ছাপও সুস্পষ্ট।
1

ভূমিকা মহাকাব্যের প্রকৃতি

14 December 2023
1
0
0

ইহাতে নাটকের সমস্ত সন্ধিগুলি থাকিবে, কাহিনীটি ঐতিহাসিক ঘটনা হইতে উন্নত হইবে অথব। কোন সজ্জনকে আশ্রয করিবে। ইহার ফল হইবে চতুর্বর্গপ্রাপ্তি অথবা চতুর্বর্গের যে কোন একটিও হইতে পারে। আরম্ভে নমস্কার, আশীর্ব

2

বিস্তৃতিবোধ-বিশাল রস

14 December 2023
0
0
0

আমাদের দেশের অলঙ্কারশাস্ত্র মানবহৃদয়ের প্রবৃত্তিগুলিকে প্রধানতঃ আট বা নয়টি স্থায়ীভাবে বিভক্ত করিযা আট বা নয়টি রসের পরিকল্পনা করিয়াছে। এইরূপ সাহিত্যবিচারের কতকগুলি অসুবিধা আছে। যদি স্থায়ী ভাবগুলিকে বাঁ

3

মেঘনাদবধ কাব্যে'র বৈশিষ্ট্য-পরিকল্পনা

14 December 2023
0
0
0

কিন্তু বিষয়টি গভীরভাবে বিচার করিলে মাইকেলের এই বিক্বতি সাহিত্যের দিক্ দিয়া তেমন দোষাবহ নাও হইতে পারে। সমস্ত প্রাচীন কাহিনীই কালক্রমে বিবর্তনের মধ্য দিয়া গড়িয়া উঠে এবং তাহাদের অল্পবিস্তর পরিবর্তন হইয়া

4

মেঘনাদবধ কাব্য

14 December 2023
0
0
0

হায়, নাথ, নিজ কর্মফলে মজালে রাক্ষসকুলে, মজিলে আপনি। রাবণের শক্তির মূলে ছিল দেবশ্রেষ্ঠ মহেশ্বরের রূপা। তাই স্বয়ং উমা যখন মহেশ্বরকে বশীভূত করিতে গেলেন তখন তিনি কন্দর্পের সাহায্য গ্রহণ করিলেন যাহাতে তপ

5

চরিত্রসৃষ্টি-দেবদেবী

14 December 2023
0
0
0

শুধু মৌলিক পরিকল্পনায় নহে, চরিত্রস্বষ্টিতেও 'মেঘনাদবধ কাব্য' মহাকাব্যের লক্ষণাক্রান্ত। প্রথমেই দেবদেবীদের কথা ধরা যাইতে পারে। ইলিয়াডে দেবদেবীগণ মানব-মানবীর স্থায়। মানব-মানবীর সব দোষগুণই তাঁহাদের আছে,

6

রাম-লক্ষ্মণ-রাবণ-মেঘনাদ

14 December 2023
0
0
0

এই পরিপ্রেক্ষিতে রাম ও লক্ষ্মণের এবং তাঁহাদের সহযোগীদের চরিত্র বিচার করিতে হইবে। 'মেঘনাদবধ কাব্যে'র রাম ও লক্ষ্মণ মাইকেলের প্রতিভার অপূর্ণতার পরিচায়ক এইরূপ মত বহু লোকে প্রকাশ করিয়াছেন এবং এই মন্তের আং

7

প্রমীলা

15 December 2023
0
0
0

মেঘনাদের জীবনের এশ্বব ও মৃতার মহিমা সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করিবাব জন্য কৰি প্রমীলার চরিত্রের অবতারণা করিযাহেন , মেঘনাদ শুধু বাসববিলধী বীব নহেন, তিনি যোগ্য পিতামাতার ঘোগ্য পুন্র? তছুপরি তিনি বীধবতী সাধ্বী

8

সীতা

15 December 2023
0
0
0

মেঘনাদ ও প্রমীলার দ্রাম্পত্যজীবনের যে চিত্র এই গ্রন্থে দেওয়া! হইয়াছে তাহা মাইকেলের পরিকল্পনার স্বকীয়তা প্রমাণ করে। ইহা! পরোক্ষভাবে গ্রন্থের মৌলিক পরিকল্পনার উপরেও আলোকসম্পাত করে । মেঘনাদ ও প্রমীলার

9

মেঘনাদবধ কাব্যের ভাব

15 December 2023
0
0
0

“মেধনাদবধ কাব্যের মহাকাঁব্যোচিত পরিকল্পনা ও চওিত্রস্্টির মহিমার উল্লেখের পর উহার বর্ণনার গজন্বিতার কথা বলা প্রয়োজন | . ভাঘ। ভাব্রেই বহন মাত্র এবং ভাষা ছড়া কপির ভ।ব৪ অভিব্যক্ত হইতে পালে ন।। মাইকেলের

10

উপমা

15 December 2023
0
0
0

মহাদেবের যে বর্ণনা উল্লিখিত হইয়াছে তাহার উপমা-সমৃদ্ধি লক্ষণীয় । হোমারের অন্ততম প্রধান গুণ উপমার বৈশিষ্ট্য । হোমার অধিকাংশ বিষয়কে উপমাঁর সাহায্যে বর্ণনা করিয়ীছেন। সাধারণতঃ তাহার উপমাগুলি উপমান ও উপ

11

বর্ণনা

15 December 2023
0
0
0

'মেঘনাদবধ কাব্যে বহু স্দীর্ঘ বর্ণনা আছে এবং সেই সব বর্ণনার বৈচিত্র্য ও মাধুর্য মাইকেলের প্রতিভার স্বকীয়তার সাক্ষ্য দেয়। এই প্রতিভার বৈশিষ্ট্য-_এশ্বর্বোধ। কাব্যের প্রারন্তেই দেখি রাবণ এক অপূর্ব সভায়

12

দোষ

15 December 2023
1
0
0

বহগুণসম্বন্বিত হইলেও মেঘনাদবধ কাব্য ক্রটিশূন্ত নহে এবং সেই প্রসঙ্গের আলোচনা! আবশ্যক । প্রথমেই বল যাইতে পারে যে এই গ্রন্থের পরিধি অতিশয় সঙ্কীর্ণ। সপ্তকাণ্ড রামায়ণের একটি কাণ্ডের একটি খণ্ডাংশ লইয়া ইহ

13

অমিত্রচ্ছন্দ

18 December 2023
1
0
0

মীইকেল মধুস্ছদনের অন্যতম প্রধান কীতি বঙ্গলাহিতো অমিত্রাক্ষরের প্রবর্তন; বাংলার প্রচলিত ছন্দ ছিল পয়ার, তাহ] মিত্রন্ন্দ অর্থাৎ তাহার মধো অন্ত অক্ষরের মিল আছে। তাহার আর একটি লক্ষণ এই যে তাঁহার মধ্যে প্র

14

মেঘনাদবধ কাব্য- দ্বিতীয় সর্গ

19 December 2023
0
0
0

অস্তে গেলা দিনমণি; আইলা গোধূলি, একটি রতন ভালে। ফুটিলা কুমুদী। মুদিল। সরসে আঁখি বিরসবদনা নলিনী; কৃজনি পাথী পশিল কুলায়ে; গোষ্ঠ-গৃহে গাভী-বৃন্দ ধাব হঙ্গা রবে। আইলা শুচারু-তারা শশী সহ হাসি, শর্বরী, সুগন্ধ

15

মেঘনাদবধ কাব্য- তৃতীয় সর্গ

19 December 2023
1
0
0

প্রমোদ-উদ্যানে কাঁদে দানব-নন্দিনী প্রমীলা, পতি-বিরহে কাতরা যুবতী। অশ্রুজপি বিধুমুখী ভ্রমে ফুলবনে কহু, ব্রজ-কুঞ্জ-বনে, হায় রে, যেমনি ব্রজবালা, নাহি হেরি কদম্বের মূলে পীতধড়া পীতাম্বরে, অধরে মুরলী। কহু ব

16

মেঘনাদবধ কাব্য- চতুর্থ সর্গ

20 December 2023
1
0
0

নমি আমি, কবি-গুরু, তব পদাম্বুজে, বাল্মীকি! হে ভারতের শিরঃচূড়ামণি, তব অনুগামী দাস, রাজেন্দ্র-সঙ্গমে দীন যথা যায় দূর তীর্থ-দরশনে তব পদ-চিহ্ন ধ্যান করি দিবা নিশি, পশিয়াছে কত যাত্রী যশের মন্দিরে, দমনিয়া ভ

17

মেঘনাদবধ কাব্য -প্রথম সর্গ

19 December 2023
0
0
0

উড়িল কলম্বকুল অম্বর প্রদেশে শনশনে!বল্প শিক্ষা বীর বীরবাহ! কত যে মরিল অরি, কে পারে গণিতে? এইরূপে শত্রুমাকে বুঝিলা স্বদলে পুত্র তব, হে রাজন! কতক্ষণ পরে, প্রবেশিলা যুদ্ধে আসি নরেন্দ্র রাঘব। কনক-মুকুট

18

মেঘনাদবধ কাব্য- পঞ্চম সর্গ

21 December 2023
0
0
0

হাসে নিশি তারাময়ী ত্রিদশ-আলয়ে।। দাসীর সাধনে সাধ্বী কহিলা, সুসিদ্ধ কিন্তু চিন্তাকুল এবে বৈজয়ন্ত-ধামে মহেন্দ্র; কুরুম-শয্যা তাজি, মৌন-ভাবে বসেন ত্রিদিব-পতি রত্ন-সিংহাসনে;- সুবর্ণ-মন্দিরে স্বপ্ত আর দেব য

19

মেঘনাদবধ কাব্য- ষষ্ঠ সর্গ

21 December 2023
0
0
0

ত্যজি সে উদ্যান, বলী সৌমিত্রি কেশরী কুঞ্জবনবিহারিণী; ক্বতাঞ্জলি-পুটে চলিলা, শিবিরে যথা বিরাজেন প্রভু রঘু-রাজ; অতি দ্রুতে চলিলা সুমতি, হেরি মৃগরাজে বনে, ধায় ব্যাধ যথা অস্ত্রালয়ে, বাছি বাছি লইতে সত্বরে

20

মেঘনাদবধ কাব্য- সপ্তম সর্গ

22 December 2023
0
0
0

উদিলা আদিত্য এবে উদয়-অচলে, পদ্মপর্ণে স্বপ্ত দেব পদ্মযোনি যেন, উন্মীলি নয়নপদ্ম স্বপ্রসন্ন ভাবে, চাহিলা মহীর পানে! উল্লাসে হাসিলা কুহুমকুন্তলা মহী, মুক্তামালা গলে। উৎসবে মঙ্গলবাদ্য উথলে যেমতি দেবালয়ে, উ

21

মেঘনাদবধ কাব্য-অষ্টম সর্গ

23 December 2023
0
0
0

রাজকাজ সাধি যথা, বিরাম-মন্দিরে, প্রবেশি, রাজেন্দ্র খুলি রাখেন যতনে কিরীট; রাখিলা খুলি অস্তাচলচুড়ে দিনান্তে শিরের রত্ন তমোহ। মিহিরে দিনদেব; তারাদলে আইল। রজনী; আইলা রজনীকান্ত শান্ত সুধানিধি। শত শত অগ

22

বিশদ টীকা-টিপ্পনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যাদি (প্রথম সর্গ)

25 December 2023
0
0
0

বিষয়-সংক্ষেপ:- প্রাচীন বঙ্গীয় কবিগণ নানা দেবদেবীর বন্দনা ও মঙ্গলাচরণ করিয়া যেভাবে কাব্যের সূচনা করিতেন, তাহা না করিয়া মধুসুদন যুরোপীয় কবিগণের অনুকরণে বীণাপাণির এবং কল্পনার আবাহন (invocation) করিয়া

23

বিশদ টীকা-টিপ্পনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যাদি (দ্বিতীয় সর্গ)

25 December 2023
1
0
0

বিষয়-সংক্ষেপ:-বীরবাহুর মৃত্যুর পর মেঘনাদ রাবণের সেনাপতিপদে বৃত হইলে দিবাবসান হইল এবং রাত্রি আসিল। স্বর্গেও রাত্রির আবির্ভাব হইল। ইন্দ্র শচীসহ দেবসভায় স্বর্গসুখ উপভোগ করিতেছেন, এমন সময়ে সেখানে লক্ষ্মীদ

24

বিশদ টীকা-টিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাধ্যাদি (তৃতীয় সর্গ)

27 December 2023
0
0
0

মেঘনাদবধ-কাব্যের দ্বিতীয় সর্গোক্ত ঘটনার ম্যায় তৃতীয় সর্গোক্ত ঘটনাও সম্পূর্ণরূপে বামায়ণ-বহিভূত। প্রথম দর্গের শেষ ভাগে লঙ্কাপুরীর বহির্দেশে প্রমোদোগ্ভানে মেঘনাদের ব্যসনমত্তভাবে অবস্থ।নের কথা বলা হইয

25

বিশদ টীকাটিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যা (চতুর্থ সর্গ)

27 December 2023
0
0
0

মেঘনাদরবধ কাব্যের চতুর্থ সর্গে অশোকবনে অবরুদ্ধা সীতার সহিত সরমার' কথোপকথন-গ্রসঙ্গে সরমার নিকট সীতার পূর্বজীবনের ঘটনাবলী বিবৃত হইয়াছে ।, এই সকল ঘটন! অল্পবিস্তর রামায়ণান্থগত হইতে বাধ্য বলিয়া, সমগ্র ম

26

বিশদ টীকাটিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যাদি (পঞ্চম সর্গ)

27 December 2023
1
0
0

দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ সর্গোক্ত ঘটনাবলীর সহিত পঞ্চম সর্গোক্ত ঘটনাও বীরবাহুর মৃত্যুদিবসের রাত্রিকালে সংঘটিত হইয়াছে । এই সর্গে প্রধান বর্ণনীয় বিষয়,_মেঘনাদবধে চণ্তীদেবীর সাহাধ্য-প্রাপ্তির উদ্দেশে ল

27

বিশদ টীকা টিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাথ্যাদি (ষষ্ঠ সর্গ)

27 December 2023
1
0
0

ষষ্ঠ সর্গের মূল ঘটনা" লক্ষ্মণকতৃকি মেঘনাদবধ-_বামায়ণ হইতে গৃহীত। স্থৃতরাং ছিতীয় তৃতীয় ও পঞ্চম সর্গোক্ত ঘটনাবলীর ন্যায় ইহাঁকে রামায়ণবহিভূতি ঘটনা বলা চলে না। কিন্তু ঘটনাটি যে ভাবে নিষ্পন্ন হইয়াছে

28

বিশদ টীকা-টিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাথ্যাদি (সপ্তম সর্গ)

28 December 2023
1
0
0

সপ্তম সর্গে বধিত মূল ঘটনাটি হইতেছে,_মেঘনাদের মৃত্যুসংবাদ শ্রবণে রাবণের' ক্রোধ, এবং প্রতিহিংমাপরায়ণ রাবণের সহিত যুদ্ধে শক্তিশেলাহত হইয়া! লক্ষণের পতন। এই মূল ঘটনাটি রামায়ণ হইতে গৃহীত। কিন্তু রাঁবণের

29

বিশদ টীকা টিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যা (অষ্টম সর্গ)

28 December 2023
1
0
0

মেঘনাদবধ কাব্যের ২য়, ৩য় ও ৫ম সর্গে বগিত বিষয়সমূহের ন্ায় ৮ম সর্গে বধিত বিষয়ের সহিতও রাযায়ণের কোন সম্বন্ধ নাই। বাল্সীকির রামায়ণে উল্লিখিত হয়াছে, শক্তিশেলাহত লম্্মরণের জন্য রামচন্দ্র বিলাপ করিতে

30

বিশদ টীকা-টিগ্ননী ও ছুরহ অংশের ব্যাখ্যাদি- (নবম সর্গ)

29 December 2023
2
0
0

দৈববলে ঘে লকল কার্য সাধন করিয়াছে, তাহাতে তাহার পক্ষে অসাধ্য কোন কাধই নাই। মন্ত্রী সারণ বিনীতভাবে নিবেদন করিলেন যে, দেবানুগ্রহে ওষধি-পর্বত গন্ধমাদন স্বয়ং লঙ্কায় আসিয়। ওধধদানে লক্ষ্মণের দেহে গ্রাণসঞ

---