shabd-logo

মেঘনাদবধ কাব্য- দ্বিতীয় সর্গ

19 December 2023

138 Viewed 138

অস্তে গেলা দিনমণি; আইলা গোধূলি, একটি রতন ভালে। ফুটিলা কুমুদী। মুদিল। সরসে আঁখি বিরসবদনা নলিনী; কৃজনি পাথী পশিল কুলায়ে; গোষ্ঠ-গৃহে গাভী-বৃন্দ ধাব হঙ্গা রবে। আইলা শুচারু-তারা শশী সহ হাসি, শর্বরী, সুগন্ধবহ বহিল চৌদিকে, সুস্বনে সবার কাছে কহিয়া বিলাসী, কোন্ কোন্ ফুল চুম্বি কি ধন পাইলা। আইলেন নিদ্রা দেবী; ক্রান্ত শিশুকুল জননীর ক্রোড় নীড়ে লভয়ে যেমতি বিরাম, ভূচর সহ জলচর-আদি দেবীর চরণাশ্রমে বিশ্রাম লভিলা।

উত্তরিলা শশিপ্রিয়া ত্রিদশ-আলয়ে। বসিলেন দেবপতি দেবসভা মাঝে, হৈমাসনে; বামে দেবী পুলোম-নন্দিনী চারুনেত্রা। রাজ-ছত্র, মণিময় আভা, • শোভিল দেবেন্দ্র-শিরে। রতনে খচিত চামর যতনে ধরি, চুলায় চামবী। আইলা সুসমীরণ, নন্দন-কানন- গন্ধমধু বহি রঙ্গে। রাজিল চৌদিকে ত্রিদিব-বাদিত্র। ছয় রাগ, মূর্তিমতী ছত্রিশ রাগিণী সহ, আসি আরম্ভিলা
সঙ্গীত।
উর্বশী, রম্ভা সুচারুহাসিনী, চিত্রলেখা, সুকেশিনী মিশ্রকেশী, আসি নাচিলা, শিজিতে রঞ্জি দেব-কুল-মনঃ! যোগায় গন্ধর্ব স্বর্ণ-পাত্রে সুধারসে। কেহ বা দেব-ওদন; কুরুম, কস্তুরী, কেশর বহিছে কেহ। চন্দন কেহ বা; সুগন্ধ মন্দার-দাম গাঁথি আনে কেহ। বৈজয়ন্ত-ধামে সুখে ভাসেন বাসব ত্রিদিব নিবাসী সহ; হেন কালে তথা, রূপের আভায় আলো করি সুর-পুরী, রক্ষঃ-কুল-রাজলক্ষ্মী আসি উত্তরিলা।

সসম্ভ্রমে প্রণমিলা রমার চরণে শচীকান্ত। আশীধিয়া হৈমাসনে বসি,

পদ্মাঞ্চী পুণ্ডরীকাক্ষ-বক্ষোনিবাসিনী কহিলা; "হে শুরপতি, কেন যে আইমু তোমার সভায় আজি, শুন মনঃ দিয়া।" উত্তর করিলা ইন্দ্র, "হে বারীন্দ্র-শুতে,  বিশ্বরমে, এ বিশ্বে ও রাঙা পা দুখানি বিশ্বের আকাঙ্ক্ষা মাগো! যার প্রতি তুমি, রুপা করি, রুপা-দৃষ্টি কর, কৃপাময়ি, সফল জনম তারি! কোন্ পুণ্য-ফলে, লভিল এ স্থথ দাস, কহ, মা, দাসেরে?"

কহিলেন পুনঃ রমা, "বহুকালাবধি আছি আমি, সুরনিধি, স্বর্ণ-লঙ্কাধামে। বহুবিধ রত্বদানে, বহু যত্ন করি, পূজে মোরে রক্ষোরাজ। হায়, এত দিনে বাম তার প্রতি বিধি! নিজ কর্ম-দোষে, মজিছে সবংশে পাপী; তবুও তাহারে না পারি ছাড়িতে, দেব। বন্দী যে, দেবেন্দ্র, কারাগার-দ্বার নাহি গুলিলে কি কহু পারে সে বাহির হতে? যত দিন বাঁচে রাবণ, থাকিব আমি বাঁদা তার ঘরে। মেঘনাদ নামে পুভ্র, হে বৃত্রবিজ্ঞযি, রাবণের, বিলক্ষণ জান তুমি তারে। একমাত্র বীর সেই আছে লঙ্কাধামে এবে, আর বীর যত, হত এ সমরে। বিক্রম কেশরী শূর আক্রমিবে কালি  রামচন্দ্রে; পুনঃ তারে সেনাপতি-পদে বরিয়াছে দশানন। দেব-কূল-প্রিয় রাঘব; কেমনে তারে রাখিবে, তা দেখ। নিকুন্তিলা যজ্ঞ সাঙ্গ করি, আরম্ভিলে যুদ্ধ দন্তী মেঘনাদ, বিষম সঙ্গটে ঠেকিবে বৈদেহীনাথ, কহিমু তোমারে। অজেয় জগতে মন্দোদবীর নন্দন, দেবেন্দ্র! বিহঙ্গকুলে বৈনতেয় যথ। বল-জ্যেষ্ঠ, রক্ষা-কুল-শ্রেষ্ঠ শূরমণি!"
এতেক কহিয়া রমা কেশব-বাসনা কি দোষ নীরবিলা; আহা মরি, নীরবে যেমতি বীণা, চিত্ত বিনোদিয়া সুমধুর নাদে! ছয় রাগ, ছত্রিশ রাগিণী আদি ষত, শুনি কমলার বাণী, ভুলিলা সকলে স্বকর্ম; বসন্তকালে পাখীকুল যথা, মুঞ্জরিত কুঞ্জে, শুনি, পিকবর-ধ্বনি! কহিলেন স্বরীশ্বর; "এ ঘোর বিপদে, হরিপ্রিয়া।
অনম্বর-পথে সুকেশিনী,
কেশব-বাসনা দেবী গেলা অধোদেশে।

বিশ্বনাথ বিনা, মাতঃ, কে আর রাখিবে রাঘবে? দুর্বার রণে রাবণ নন্দন। পন্নগ-অশনে নাগ নাহি ডরে যত, ততোধিক ডরি তারে আমি! এ দম্ভোলি, বৃত্রাসুর-শিরঃ চূর্ণ যাহে, বিম্বয়ে অস্ত্র-বলে মহাবলী, তেঁই এ জগতে ইন্দ্রজিং নাম তার। সর্বশুচি-বরে সর্বজয়ী বীরবর। দেহ আজ্ঞা দাসে, যাই আমি কহিলা শীঘ্রগতি কৈলাস-সদনে।" উপেন্দ্র-প্রিয। বারীন্দ্রনন্দিনী,-

"যাও তবে, সুরনাথ, যাও ত্বরা করি। চন্দ্রশেখরের পদে, কৈলাস-শিখরে, নিবেদন কর, দেব, এ সব বারতা। কহিও সতত কাঁদে, বসুন্ধরা সতী, না পারি সহিতে ভার, কহিও, অনন্ত ক্লান্ত এবে। না হইলে নির্মল সমূলে রক্ষঃপতি, ভবতল রসাতলে যাবে! বড ভাল বিরূপাক্ষ বাসেন লক্ষ্মীরে। কহিও, বৈকুণ্ঠপুরী বহু দিন ছাড়ি আছযে সে লঙ্কাপুরে! কত যে বিরলে ভাবয়ে সে অবিরল, এক বার তিনি, দেখিয়া, তারে না ভাবেন মনে? কোন্ পিতা দুহিতারে পতি-গৃহ হতে রাখে দূরে-জিজ্ঞাসিও, বিজ্ঞ জটাধরে! এ্যম্বকে না পাও যদি, অম্বিকার পদে কহিও এ সব কথা।"-এতেক কহিয়া, বিদায় হইয়া চলি গেলা শশিমুখী  সোনার প্রতিমা, যথা! বিমল সলিলে ডুবে তলে জলরাশি উজলি স্বতেজে!

আনিলা মাতলি রথ; চাহি শচী পানে কহিলেন শচীকান্ত মধুর বচনে একান্তে; "চলহ, দেবি, মোর সঙ্গে তুমি! পরিমল-স্থণা সহ পবন বহিলে, দ্বিগুণ আদর তার! মৃণালের কচি বিকচ কমল-গুণে, শুন লো ললনে।" শুনি প্রণয়ীর বাণী, হাসি নিতম্বিনী, ধরিয়া পতির কর, আরোহিল। বথে।

স্বর্গ-হৈম-দ্বারে রণ উতরিল ত্ববা। আপনি খুলিল দ্বার মধুর নিনাদে অমনি! বাহিরি বেগে, শোভিন্ন আকাশে দেবযান; সচকিতে জগত জাগিলা, ভাবি রবিদের বুঝি উদয়-অচলে উদিলা! ডাকিল কিঙা; আর পাখী যত পূরিল নিকুঞ্চ-পুঞ্চ প্রভাতী সংগীতে! বাসরে কুহুম-শয্যা ত্যজি লজ্জাশীল। কুলবধূ, গৃহকার্য উঠিল। সাদিতে!

'মানস-ব্লকাশে শোভে কৈলাসশিথরী আভাময়; 'তাব শিরে ভবের ভবন, শিখি-পুচ্ছ-চূড়া যেন মাধবের শিরে! সুশ্যামাঙ্গ শৃঙ্গধর; স্বর্ণ-ফুল-শ্রেণী শোভে তাহে, আহা মরি পীত ধড়া যেন!  নিঝর-ঝরিত-বারি-রাশি স্থানে স্থানে- বিশদ চন্দনে যেন চচিত সে বপুঃ!

ত্যজি রথ, পদব্রজে, সহ স্বরীশ্বরী, প্রবেশিলা স্বরীশ্বর আনন্দ-ভবনে। রাজরাজেশ্বরী-রূপে বসেন ঈশ্বর
স্বর্ণাসনে চুলাইছে চামর বিজয়া;

• ধরে রাজ-ছত্র জয়া। হায় রে, কেমনে, ভবভবনের কবি বল্লিবে বিভব?

দেখ, হে ভাবুক জন, ভাবি মনে মনে!

পূজিলা শক্তির পদ মহাভক্তিভাবে মহেন্দ্র ইন্দ্রাণী সহ। আশীবি অম্বিকা জিজ্ঞাসিলা, "কহ, দেব, কুশল বারতা,- কি কারণে হেথা আজি তোমা দুই জনে?" কর-খোড়ে আরম্ভিল। দম্ভোলি-নিক্ষেপী,- "কি না তুমি জান, মাতঃ, অখিল জগতে? দেবদ্রোহী লঙ্কাপতি, আকুল বিগ্রহে, বরিয়াছে পুনঃ পুভ্র মেঘনাদে আজি সেনাপতি-পদে।
কালি প্রভাতে কুমার পরন্তপ প্রবেশিবে রণে, ইষ্টদেবে পূজি, মনোনীত বর লভি তাঁর কাছে। অবিদিত নহে, মাতঃ, তার পরাক্রম।

রক্ষঃ-কুল-রাজলক্ষ্মী, বৈজয়ন্ত-ধামে,
আসি, এ সংবাদ দাসে দিলা, ভগবতী। কহিলেন হরিপ্রিয়া, কাঁদে বসুন্ধরা, এ অসহ ভার সতী না পারি সহিতে; 'ক্লান্ত বিশ্বণর শেষ; তিনিও আপনি চঞ্চলা সতত এবে ছাড়িত কনক- লঙ্কাপুরী। তব পদে এ সংবাদ দেবী আদেশিলা নিবেদিতে দাসেরে, অন্নদে!
দেব-কুল-প্রিয় বীর রঘু-কুল-মণি।
কিন্তু দেবকুলে হেন আছে কোন্ রণী

যুঝিবে যে রণ-ভূমে রাবণির সাথে? বিশ্বনাশী কুলিশে, মা, নিস্তেজে সমরে রাক্ষস, জগতে খ্যাত ইন্দ্রজিৎ নামে!
কি উপায়ে, কাত্যায়নি, রক্ষিবে রাঘবে, দেখ ভাবি। তুমি রূপা ন। করিলে, কালি অরাম করিবে ভব দুরন্ত রাবণি!"

উত্তরিলা কাত্যায়নী; - "শৈব-কুলোত্তম নৈকদেয়; মহা স্নেহ করেন ত্রিশূলী তার প্রতি; তার মন্দ, হে সুরেন্দ্র, কহু সম্ভবে কি মোর হতে? তপে মগ্ন এবে তাপসেন্দ্র, তেঁই, দেব, লঙ্কার এ গতি।"

ক্বতাঞ্জলি-পুটে পুনঃ বাসব কহিল।, "পরম-অধর্মাচারী নিশাচর-পতি- দেব-দ্রোহী! আপনি, হে নগেন্দ্র-নন্দিনি, দেখ বিবেচনা করি। দরিদ্রের ধন হরে যে দুর্মতি, তব রুপা তার প্রতি কভু কি উচিত, মাতঃ? সুশীল রাঘব, পিতৃ-সতা-রক্ষা-হেতু, সুখ-ভোগ ত্যজি পশিল ভিখারী-বেশে নিবিড কাননে। একটি রতনমাত্র তাহার আছিল অমূল; যতন কত করিত সে তারে, কি আর কহিবে দাস? সে রতন, পাতি মায়াজাল, হরে দুষ্ট! হায়, মা, স্মরিলে কোপানলে দহে মনঃ! ত্রিশূলীর বরে বলী রক্ষঃ, তৃণ-জ্ঞান করে দেব-গণে! পর-ধন, পর-দার লোভে সদা লোভী

পামর। তবে যে কেন (বুঝিতে না পারি)

হেন মুঢ়ে দয়া তুমি কর, দয়াময়ি ?"

নীরবিলা স্বরীশ্বর; কহিতে লাগিলা বীণাবাণী স্বরীশ্বরী মধুর সুস্বরে;- "বৈদেহীর দুঃখে, দেবি, কার না বিদরে হৃদয়? অশোক-বনে বসি দিবা নিশি

(কুঞ্জবন-সখী পাখী পিঞ্জরে যেমতি) কাঁদেন রূপসী শোকে! কি মনোবেদনা সহেন বিধুবদনা পতির বিহনে,

ও রাঙা চরণে মাতঃ, অবিদিত নহে। আপনি না দিলে দণ্ড, কে দণ্ডিবে, দেবি, এ পাষণ্ড রক্ষোনাথে? নাশি মেঘনাদে, দেহ বৈদেহীরে পুনঃ বৈদেহীরঞ্জনে; দাসীর কলঙ্ক ভয়, শশাঙ্কধারিণি! মরি, মা, শরমে আমি, শুনি লোকমুখে, ত্রিদিব-ঈশ্বরে রক্ষঃ পরাভবে রণে!"

হাসিয়া কহিলা উমা; "রাবণের প্রতি দ্বেষ তব, জিষ্ণু! তুমি, হে মঞ্জুনাশিনী শচি, তুমি ব্যগ্র ইন্দ্রজিতের নিধনে। দুই জন অনুরোধ করিছ আমারে নাশিতে কনক-লঙ্কা। মোর সাধ্য নহে সাধিতে এ কার্য। বিরূপাক্ষের রক্ষিত রক্ষঃ-কুল; তিনি বিনা তব এ বাসনা,  বাসব, কে পারে, কহ, পূর্ণিতে জগতে? যোগে মগ্ন, দেবরাজ, বৃষধ্বজ আজি। যোগাসন নামে শৃঙ্গ, মহাভয়ার, ঘন ঘনাবৃত, তথা বসেন বিরলে

যোগীন্দ্র। কেমনে যাবে তাঁহার সমীপে? পক্ষীন্দ্র গরুড় সেথা উড়িতে অক্ষম!"

কহিলা বিনত-ভাবে অদিতিনন্দন;- "তোমা বিনা কার শক্তি, হে মুক্তি-দায়িনি জগদম্বে, যায় যে সে যথা ত্রিপুরারি ভৈরব? বিনাশি, দেবি, রক্ষঃ-কুল, রাখ ত্রিভুবন; বৃদ্ধি কর ধর্মের মহিমা; হাসো বহুধার ভার; বসুন্ধরাধর-
বাসুকিরে কর স্থির; বাঁচাও রাঘবে।"

এইরূপে দৈত্য-রিপু স্তুতিলা সতীরে।

হেন কালে গন্ধামোদে সহসা পূরিল পুরী; শঙ্খঘণ্টাধ্বনি বাজিল চৌদিকে মঙ্গল নিরুণ সহ, মৃদু যথা যবে দূর কুঞ্জবনে গাহে পিককুল মিলি!

টলিল কনকাসন! বিজয়া সঙ্গীরে সন্তাদিয়া মধুস্বরে, ভবেশ-ভাবিনী  সুধিলা; "লো বিদুমুখি, কহ শীঘ্র করি, কে কোথা, কি হেতু মোরে পূজিছে অকালে?"

মন্ত্র পড়ি, খড়ি পাতি, গণিযা গণনে, নিবেদিল। হাসি সঙ্গী; "হে নগনন্দিনি, দাশরবি রণী তোমা পূজে লঙ্কাপুরে। বারি-সংঘটিত-ঘটে, শুসিন্দুরে আঁকি ও সুন্দর পদযুগ, পূজে রঘুপতি নীলোৎপলাগুলি দিয়া, দেখ্যি গণনে। অভয়-প্রদান তারে কর গো, অভয়ে। পরম ভকত তব কৌশল্যা-নন্দন  রঘুশ্রেষ্ঠ; তার তারে বিপদে, তারিণি!"

কাঞ্চন-শাসন ত্যজি, রাজরাজেশ্বরী

উঠিয়া, কহিলা পুনঃ বিজয়ারে সতী;

"দেব-দম্পতীরে তুমি সেব যথাবিধি,

বিজয়ে! যাইব আমি যথা যোগাসনে (বিকটশিখর!) এবে বসেন ধূর্জটি।" এতেক কহিয়া দুর্গা দ্বিরদ-গামিনী প্রবেশিলা হৈম গেহে। দেবেন্দ্র বাসবে ত্রিদিব-মহিষী সহ, সম্ভাষি আদরে, স্বর্ণাসনে বসাইলা বিজয়া সুন্দরী।  পাইলা প্রসাদ দোঁহে পরম-আহ্লাদে।

শচীর গলায় জয়া হাসি দোলাইলা তারাকারা ফুলমালা; কংরী-বন্ধনে বসাইলা চিররুচি, চির-বিকচিত কুহুম-রতন-রাজী; বাঞ্জিল চৌদিকে যন্ত্রদল, বামাদল গাইল নাচিয়া। মোহিল কৈলাসপুরী; ত্রিলোক মোহিল! স্বপনে শুনিয়া শিশু সে মধুর ধ্বনি, হাসিল মায়ের কোলে, মুদিত নয়ন! নিদ্রাহীন বিরহিণী চমকি উঠিলা,  ভাবি প্রিয়-পদ-শব্দ শুনিলা ললনা দুয়ারে! কোকিলকুল নীরবিল বনে। উঠিলেন যোগিব্রজ, ভাবি ইষ্টদেব, বর মাগ বলি, আসি দরশন দিলা!

প্রবেশি সুবর্ণ-গেহে, ভবেশ-ভাবিনী ভাবিলা, "কি ভাবে আজি ভেটিব ভবেশে?" ক্ষণ কাল চিন্তি সতী চিন্তিলা রতিরে। যথায় মন্মথ-সাথে, মন্মথ-মোহিনী বরাননা, কুঞ্জবনে বিহারিতেছিলা, তথায় উমার ইচ্ছা, পরিমলময়- বায়ু-তরঙ্গিণী-রূপে, বহিলা নিমিষে। নাচিল রতির হিয়া বীণা-তার যথা অঙ্গুলির পরশনে! গেলা কামবধূ, দ্রুতগতি বায়ু-পথে, কৈলাস-শিখরে। (সরসে নিশান্তে যথা ফুটি, সরোজিনী নমে বিষাপতি-দূতী উযার চরণে, নমিলা মদন-প্রিয়া হরপ্রিয়া-পদে!) আশীষি রতিরে, হাসি কহিলা অম্বিকা;- "যোগাসনে তপে মগ্ন যোগীন্দ্র; কেমনে, কোন্ রঙ্গে, ভঙ্গ করি তাঁহার সমাধি, কহ মোরে, বিধুমুখি?” উত্তরিলা নমি সুকেশিনী, "ধর, দেবি, মোহিনী মূরতি। দেহ আজ্ঞা, সাজাই ও বর বন্ধুঃ, আনি নানা আভরণ; হেরি যে সবে, পিনাকী ভুলিবেন, ভুলে যথা ঋতুপতি, হেরি মধুকালে বনস্থলী কুহুম-কুন্তলা!"

এতেক কহিয়া রতি, সুবাসিত তেলে মাজি চুল, বিনানিল। মনোহর বেণী। যোগাইলা আনি ধনী বিবিধ ভূষণে; হীরক, মুকুতা, মণি-পচিত; আনিলা তপে চন্দন, কেশর সহ কুহুম, কস্তুরী; রত্ন-সম্বলিত-আভা কৌষেয় বসনে। লাক্ষারসে পা দুখানি চিত্রিল। হরষে চারুনেত্রা। ধরি মূর্তি ভুবনমোহিনী, সাজিলা নগেন্দ্র-বালা; রসানে মার্জিত হেম-কান্তি-সম কান্তি দ্বিগুণ শোভিল! হেরিলা দর্পণে দেবী ও চন্দ্র-আননে; প্রফুল্ল নলিনী যথা বিমল সলিলে নিজ-বিকচিত-রুচি। হাসিয়া কহিলা, চাহি স্মর-হর-প্রিয়া স্মর-প্রিয়া পানে, "ডাক তব প্রাণনাথে। অমনি ডাকিল। (পিককুলেশ্বরী যথা ডাকে ঋতুবরে!) মদনে মদন-বাঞ্ছা। আইলা ধাইয়া ফুল-ধনুঃ; আসে যথা প্রবাসে প্রবাসী,

স্বদেশ-সঙ্গীত-ধ্বনি শুনি রে উল্লাসে!

কহিলা শৈলেশস্থতা, "চল মোর সাথে, হে মন্মথ, যাব আমি যথা যোগিপতি যোগে মগ্ন এবে; বাছা, চল ত্বরা করি।"

অভয়ার পদতলে মায়ার নন্দন,
মদন আনন্দময়, উত্তরিলা ভয়ে;
"হেন আজ্ঞা কেন, দেবি, কর এ দাসেরে?

স্মরিলে পূর্বের কথা, মরি মা, তরাসে! মৃঢ় দক্ষ-দোষে যবে দেহ ছাড়ি, সতি, হিমাদ্রির গৃহে জন্ম গ্রহিলা আপনি, তোমার বিরহ-শোকে বিশ্ব-ভার ত্যজি বিশ্বনাথ, আরম্ভিলা ধ্যান; দেবপতি ইন্দ্র আদেশিল। দাসে সে ধ্যান ভাঙিতে। কুলয়ে গেন্ত, মা, যথা মল্ল বামদেব ; ধরি ফুল-ধহঃ, হানিম্ন কুক্ষণে ফুল-শর। যথা সিংহ সহসা আক্রমে গজরাজে, পূরি বন ভীষণ গর্জনে, গ্রাসিলা দাসেরে আসি রোষে বিভাবসু, বাস যাঁর, ভবেশ্বরি, ভবেশ্বর-ভালে। হায়, মা, কত যে জাল। সহিন্স, কেমনে নিবেদি ও রাঙা পায়ে? হাহাকার রবে, ডাকিন্তু বাসবে, চন্দ্রে, পবনে, তপনে।

কেহ না আইল; ভস্ম হইনু সত্বরে!- ভয়ে ভগ্নোদ্যম আমি ভাবিয়া ভবেশে;- ক্ষম " দাসে, ক্ষেমঙ্করি! এ মিনতি পদে।" আশ্বাসি মদনে, হাসি কহিলা শঙ্করী, চল রঙ্গে মোর সঙ্গে নির্ভয় হৃদয়ে, অনঙ্গ। আমার বরে চিরজয়ী তুমি! যে অগ্নি কুলগ্নে তোমা পাইয়া স্বতেজে জালাইল, পূজা তব করিবে সে আজি, ঔষধের গুণ ধরি, প্রাণ-নাশ-কারী

বিষ যথা রক্ষে প্রাণ বিদ্যার কৌশলে!" প্রণমিয়া কাম তবে উমার চরণে,

কহিলা; "অভয় দান কর যারে তুমি, অভয়ে, কি ভয় তার এ তিন ভুবনে? কিন্তু নিবেদন করি ও কমল-পদে; কেমনে মন্দির হতে, নগেন্দ্র-নন্দিনি, বাহিরিবা, কহ দাসে, এ মোহিনী-বেশে? মুহূর্তে মাতিবে, মাতা, জগত, হেরিলে 'ও রূপ-মাধুরী; সত্য কহিয় তোমারে। হিতে বিপরীত, দেবি, সত্বরে ঘটিবে। সুরাহুর-বৃন্দ যবে মথি জলনাথে, লভিলা অমৃত, দুষ্ট দিতিস্থত যত বিবাদিল দেব সহ সুধামস্-হেতু। মোহিনী মুরতি ধরি আইলা শ্রীপতি। ছদ্মবেশী হৃষীকেশে ত্রিভূবন হেরি, হারাইলা জ্ঞান সবে এ দাসেব শরে! অধর-অমৃত আশে ভুলিলা অমৃত দেব-দৈত্য, নাগদল নম্রশিবঃ লাজে, হেরি পৃষ্ঠদেশে বেণী: মন্দর আপনি

অচল হইল হেরি উচ্চ কুচ-যুগে! স্মরিলে সে কথা, সতি, হাসি আসে মুখে। মলম্বা-অম্বরে তাম্র এত শোভা যদি ধরে, দেবি, ভাবি দেখ বিশুদ্ধ কাঞ্চন- কান্তি কত মনোহর!") অমনি অধিকা, সুবর্ণ বরণ ঘন মায়ায় সৃজিয়া, মায়াময়ী, আবদিলা চারু অবয়বে। হায় রে, নলিনী যেন দিবা-অবসানে ঢাকিল বদনশশী! কিম্বা অগ্নি-শিখা, ভন্মরাশি মাঝে পশি, হাসি লুকাইলা! কিম্বা স্বধা-ধন যেন, চক্র-প্রসরণে, বেড়িলেন দেব শত্রু সুধাংশু-মগুলে! দ্বিবৃদ-রদ-নির্মিত গৃহদ্বার দিয়া
বাহিরিলা সুহাসিনী, মেঘাবৃতা যেন ঊষা! সাথে মনমথ, হাতে ফুল-ধশুঃ, পৃষ্ঠে তৃণ, খরতর ফুল-শরে ভরা কণ্টকময় মৃণালে ফুটিল নলিনী!

কৈলাস-শিখরি-শিরে ভীষণ শিখর ভূগুমান, যোগাসন নামেতে বিখ্যাত ভুবনে; তথায় দেবী ভুবন-মোহিনী উতরিলা গজগতি। অমনি চৌদিকে গভীর গহবরে বন্ধ, ভৈরব-নিনাদী । জলদল নীরবিলা, জল-কান্ত যথা শান্ত শান্তিসমাগমে; পলাইল দূরে মেঘদল, তমঃ যথা উষার হসনে! । দেখিলা সম্মুখে দেবী কপর্দী তপসী, বিভূতি-ভূষিত দেহ, মুদিত নয়ন, ! তপের সাগরে মন্ত্র, বাহা-জ্ঞান-হতু।।

কহিলা মদনে হাসি সূচারুহাসিনী, "কি কাজ বিলম্বে আর, হে শম্বর-অরি? হান তব ফুল-শর।" দেবীর আদেশে, হাঁটু পাড়ি মীনধ্বজ, শিঞ্জিনী টংকারি, সম্মোহন-শরে শুর বি'বিলা উমেশে! শিহরিলা শূলপাণি। লড়িল মস্তকে জটাজুট, তরুরাজি যথা গিরিশিরে ঘোর মড় মড় রবে লড়ে ভূকম্পনে। ৩৯ অধীর হইলা প্রভু! গরজিলা ভালে চিত্রভানু, ধকধকি উজ্জল জলনে! ভয়াকুল ফুল-ধশুঃ পশিলা অমনি ভবানীর বক্ষঃ-স্থলে, পশয়ে যেমতি কেশরি-কিশোর ত্রাসে, কেশরিণী-কোলে, গম্ভীর নির্ঘোষে ঘোষে ঘনদল যবে,  বিজলী ঝলসে আঁখি কালানল তেজে! উন্মীলি নয়ন এবে উঠিলা ধূর্জটি। মায়া-ঘন-আবরণ ত্যজিলা গিরিজা।

মোহিত মোহিনীরূপে, কহিলা হরষে পশুপতি; "কেন হেথা একাকিনী দেখি, এ বিজন স্থলে, তোমা, গণেন্দ্রজননি? কোথায় মুগেন্দ্র তব কিঙ্কর, শঙ্করি? কোথায় বিজয়া, জয়া?" হাসি উত্তরিলা সুচারুহাসিনী উমা; "এ দাসীরে, ভুলি, হে যোগীন্দ্র, বহুদিন আছ এ বিরলে; তেঁই আসিয়াছি, নাথ, দরশন-আশে পা দুখানি। যে রমণী পতিপরায়ণা, সহচরী সহ সে কি যায় পতি-পাশে? একাকী প্রত্যূষে, প্রভু, যায় চক্রবাকী  যথা প্রাণকান্ত তার!" আদরে ঈশান, ঈষৎ হাসিয়া দেব, অজিন-আসনে বসাইলা ঈশানীরে। অমনি চৌদিকে প্রফুল্লিল ফুলকুল; মকরন্দ-লোভে মাতি শিল্পীমুখবৃন্দ আইল ধাইয়া, বহিল মলয়-বায়ু; গাইল কোকিল; নিশার শিশিরে ধৌত কুহুম-আসার আচ্ছাদিল শৃঙ্গবরে! উমার উরসে (কি আর আছে রে বাসা সাজে মনসিজে

ইহা হতে!) কুহুমেষু, বসি কুতূহলে, হানিলা, কুসুম-ধনুঃ টঙ্কারি কৌতুকে শর-জাল; প্রেমামোদে মাতিলা ত্রিশূলী! লজ্জা-বেশে রাহু আসি গ্রাসিল চাঁদেরে, হাসি ভন্মে লুকাইলা দেব বিভাবস্থ। মোহন মূরতি ধরি, মোহি মোহিনীরে
কহিলা হাসিয়া দেখ; "জানি আমি, দেবি,

তোমার মনের কথা,বাসব কি হেতু

শচী সহ আসিয়াছে কৈলাস-সদনে; কেন বা অকালে তোমা পূজে রঘুমণি? পরম ভকত মম নিকদানন্দন; কিন্তু নিজ কর্ম-ফলে মজে দুষ্টমতি। বিদরে হৃদয় মম স্মরিলে সে কথা, মহেশ্বরি! হায়, দেবি, দেবে কি মানবে, কোথা হেন সাধ্য রোধে প্রাক্তনের গতি? পাঠাও কামেরে, উমা, দেবেন্দ্র-সমীপে। সত্বরে যাইতে তারে আদেশ, মহেশি, মায়াদেবী-নিকেতনে। মায়ার প্রসাদে, ! বদিবে লক্ষ্মণ শূর মেঘনাদ শূরে।"

চলি গেলা মীনধ্বজ, নীড় ছাড়ি উড়ে বিহঙ্গম-রাজ যথা, মুহুর্মুহুঃ চাহি সে সুখ-সদন পানে! ঘন রাশি রাশি, স্বর্ণবর্ণ, সুবাসিত বাস শ্বাসি ঘন, বরধি প্রস্থনাসার-কমল, কুমুদী, । মালতী, সেউতি, জাতি, পারিজাত-আদি মন্দ-সমীরণ-প্রিয়া-ঘিরিল চৌদিকে দেবদেব মহাদেবে মহাদেবী সই।

দ্বিরদ-রদ-নির্মিত হৈমময় দ্বারে দাঁড়াইলা বিধুমুখী মদন-মোহিনী, অশ্রুময় আঁখি, আহা! পতির বিহনে! হেন কালে মধু-সখা উতরিলা তথা। অমনি পসারি বাহু, উল্লাসে মন্মথ আলিঙ্গন-পাশে বাঁধি, তুষিলা ললনে প্রেমালাপে। শুথাইল অশ্রুবিন্দু, যথা শিশির-নীরের বিন্দু শতদল-দলে,  দরশন দিলে ভানু উদয়-শিখরে।

পাই প্রাণ-ধনে ধনী, মুখে মুখ দিয়া, (সরস বসন্তকালে সারী শুক যথা) কহিলেন প্রিয়-ভাষে; "বাঁচালে দাসীরে আশু আসি তার পাশে, হে রতি-রঞ্জন! কত যে ভাবিতেছিন্ত, কহিব কাহারে ? বামদেব নামে, নাথ, সদা, কাঁপি আমি, স্মরি পূর্ব-কথা যত! দুরস্ত হিংসক শূলপাণি! যেযো না গো আর তাঁর কাছে, মোর কিরে প্রাণেশ্বর!" সুমধুর হাসে উত্তরিলা পঞ্চশর, "ছায়ার আশ্রমে, কে কবে ভাম্বর-কবে ভরায়, সুন্দরি! চল এবে যাই যথা দেবকুল-পতি।"

সুবর্ণ-আসনে যথ। বসেন বাসব, উতরি মন্মথ তথা, নিবেদিলা নমি বারতা। আরোহি রথে দেবরাজ রথী সুবর্ণে চলি গেলা দ্রুতগতি মায়ার সদনে। অগ্নিময় তেজঃ বাজী দাইল অম্বরে, অকম্প চামর শিরে; গম্ভীর নির্ঘোসে ঘোষিল রথের চক্র, চূর্ণি মেঘদলে। কত ক্ষণে সহস্রাক্ষ উতরিলা বলী

যথা বিরাজেন মায়া। ত্যঙ্গি রথ-বরে, সুরকুল-রথিবর পশিলা দেউলে। কত যে দেখিলা দেব কে পারে বর্ণিতে? সৌর-খরতর-কর-জাল-সঙ্কলিত

আভাময় স্বর্ণাসনে বসি কুহকিনী শত্রুীশ্বরী। কর-যোড়ে বাসব প্রণমি কহিলা;-"আশীষ দাসে, বিশ্ব-বিমোহিনি!" আশীষি সুবিলা দেবী:- "কহ, কি কারণে,
গতি হেথা আছি তব, অদিতি-নন্দন?" উত্তরিলা দেবপতি; "শিবের আদেশে মহামায়া, আসিযাছি তোমার সদনে। কহ দাসে, কি কৌশলে সৌমিত্রি জিনিবে দশানন-পুত্রে কালি? তোমার প্রসাদে (কহিলেন বিরূপাক্ষ) ঘোরতর রণে নাশিবে লক্ষ্মণ শূর মেঘনাদ শূরে।”

ক্ষণ কাল চিন্তি দেবী কহিলা বাসবে,- "দুরন্ত তারকাসুর, সুর-কুল-পতি, কাড়ি নিল স্বর্গ যবে তোমায় বিমূষি সমরে, কুত্তিকা-কুল-বল্লভ সেনানী, পার্বতীর গর্ভে জন্ম লভিলা তংকালে। বদিতে দানব-রাজে সাজাইলা বীরে আপনি বৃষভ-ধ্বজ, সৃজি রুদ্র-তেজে অগ্নে। এই দেখ, দেব, ফলক, মণ্ডিত , ওই যে অসি, নিবাসে উহীতে আপনি ক্বতান্ত; এই দেখ, স্বনাসীর, ভয়ঙ্কর তৃণীরে, অক্ষয়, পূর্ণ শরে, বিষাকর ফণি-পূর্ণ নাগ-লোক যথা! ওই দেখ ধশ্নঃ, দেব!" কহিলা, হাসিয়া, হেরি সে ধন্তর কান্তি, শচীকান্ত বলী, "কি ছার ইহার কাছে দাসের এ ধশ্নঃ রত্নময়! দিবাকর-পরিধি যেমতি, জলিছে ফলক-বর-ধাঁধিয়া নয়নে! অগ্নিশিখা-সম অসি মহাতেজস্কর!

হেন তৃণ আর, মাতঃ, আছে কি জগতে?" "শুন দেব," (কহিলেন পুনঃ মায়াদেবী) "ওই সব অস্ত্রবলে নাশিলা তারকে ষড়ানন। ওই সব অস্ত্রবলে, বলি,  মেঘনাদ-মৃত্যু, সত্য কহিমু তোমারে। কিন্তু হেন বীর নাহি এ তিন ভুবনে, দেব কি মানব, ন্যায়যুদ্ধে যে বধিবে রাবণিরে।) প্রের তুমি অস্ত্র রামানুজে, আপনি যাইব আমি কালি লঙ্কাপুরে, রক্ষিব লক্ষ্মণে, দেব, রাক্ষস-সংগ্রামে। যাও চলি সুর-দেশে, সুরদল-নিধি। ফুল-কুল-সঙ্গী উদা যখন খুলিবে পূর্বাশার হৈমদ্বারে পদ্মকর দিয়া কালি, তব চির-হ্রাস, বীরেন্দ্রকেশরী ইন্দ্রজিৎ-ত্রাস-হীন করিবে তোমারে- লঙ্কার পঙ্কজ-রবি যাবে অস্তাচলে!",

মহানন্দে দেব-ইন্দ্র বন্দিয়া দেবীরে, অস্ত্র লয়ে গেলা চলি ত্রিদশ-আলয়ে।

বসি দেব-সভাতলে কনক-আসনে বাসব, রাইলা শূর চিত্ররথ শূরে,- "বতনে লইয়া অস্ত্র, যাও মহাবলি,- স্বর্ণ-লঙ্কা-ধামে তুমি। সৌমিত্রি কেশরী' মায়ার প্রসাদে কালি ববিবে সমরে মেঘনাদে। কেমনে, তা দিবেন কহিয়া মহাদেবী মায়া তারে। কহিও রাঘবে, হে গন্ধর্ব-কুল-পতি, ত্রিদিব-নিবাস? মঙ্গল-আকাঙ্ক্ষী তার; পার্বতী আপনি হর-প্রিয়া, সুপ্রসন্ন তার প্রতি আজি। অভয় প্রদান তারে করিও সুমতি!

মরিলে রাবণি রণে, অবশ্য মরিবে রাবণ; লভিবে পুনঃ বৈদেহী সতীরে বৈদেহী-মনোরঞ্জন রঘুকুল-মণি। মোর রথে, রথিবর, আরোহণ করী যাও চলি।
পাছে তোমা হেরি লঙ্কাপুরে বাধায় বিবাদ রক্ষঃ; মেঘদলে আমি আদেশিব আবরিতে গগনে; ডাকিয়া প্রভঞ্জনে, দিব আজ্ঞা ক্ষণ ছাড়ি দিতে বায়ু-কুলে; বাহিরিয়া নাচিবে চপলা; দম্ভোলি-গম্ভীর-নাদে পূরিব জগতে।"

প্রণমি দেবেন্দ্র-পদে, সাবধানে লয়ে অস্ত্রে, চলি গেলা মর্ত্যে চিত্ররথ রথী। তবে দেব-কুল-নাথ ডাকি প্রভয়নে
কহিলা,-"প্রলয়-ঝড় উঠাও সত্বরে লঙ্কাপুরে, বায়ুপতি; শীঘ্র দেহ ছাড়ি কারাবদ্ধ বাযুদলে; লহ মেঘদলে; দ্বন্দ্ব ক্ষণ-কাল বৈরী বারি-নাধ সনে নির্ঘোষে!" উল্লাসে দেব চলিলা অমনি, ভাঙিলে শৃঙ্খল লল্ফি কেশরী যেমতি, যথায় তিমিরাগারে রুদ্ধ বায়ু যত গিরি-গর্ভে। কত দূরে শুনিলা পবন

ঘোর কোলাহলে; গিরি (দেখিলা) লড়িছে অন্তরিত পরাক্রমে, অসমর্থ যেন রোধিতে প্রবল বায়ু আপনার বুলে। শিলাময় দ্বার দেব খুলিলা পরণে। হুহুঙ্কারি বায়ুকুল বাহিরিল বেগে যথা অম্বুরাশি, যবে ভাঙে আচম্বিতে জাঙাল! কাঁপিল মহী; গজিল জলধি! তুঙ্গ-শৃঙ্গধরাকারে তরঙ্গ-আবলী কল্লোলিল, বায়ু-সঙ্গে রণরঙ্গে মাতি! ধাইল চৌদিকে মন্ত্রে জীমূত; হাসিল
ক্ষণ-প্রভা; কড়মড়ে নাদিল দম্ভোলি।
পলাইলা তারানাথ তারাদলে লয়ে। ছাইল লঙ্কায় মেঘ, পাবক উগরি রাশি রাশি; বনে বৃক্ষ পড়িল উপড়ি মড়মড়ে, মহাঝড় বহিল আকাশে; বর্ষিল আসার যেন সৃষ্টি ডুবাইতে প্রলয়ে। বৃষ্টিল শিলা তড়-তড়-তড়ে।

পশিল আতঙ্কে ব্রহ্মঃ যে যাহার ঘরে। যথায় শিবির মাঝে বিরাজেন বলী রাঘবেন্দ্র, আচম্বিতে উতরিলা রখী চিত্ররথ, দিবাকর যেন অংশুমালী, রাজ-আভরণ দেহে! শোভে কটিদেশে সারসন, রাশি-চক্র-সম তেজোরাশি, ঝোলে তাহে অসিবর-ঝল ঝল ঝলে! কেমনে বর্ণিবে কবি দেব-তৃণ, পশুঃ, চর্ম, বর্ম, শূল, সৌর-কিরীটের আভা স্বর্ণময়ী? দেববিভা ধাবিল নয়নে। স্বর্গীয় সৌরভে দেশ পূরিল সহসা। সসম্ভ্রমে প্রণমিয়া, দেবদূত-পদে

রঘুবর, জিজ্ঞাসিলা, "হে ত্রিদিববাসি, ত্রিদিব ব্যতীত, আহা, কোন্ দেশ সাজে, এ হেন মহিমা, রূপে? কেন হেথা আজি,  নন্দন-কানন ত্যজি, কহ এ দাসেরে?' নাহি স্বর্ণাসন, দেব, কি দিব বসিতে? তবে যদি কুপা, প্রভু, থাকে দাস প্রতি, পাদ্য, অর্ঘ্য লয়ে বসো এই কুশাসনে।
ভিখারী রাঘব হায়!" আশীষিয়া রথী কুশাসনে বসি তবে কহিলা সুস্বরে;-

"চিত্ররথ নাম মম, শুন দাশরথি; চির-অন্তচর আমি সেবি অহরহঃ দেবেন্দ্রে; গন্ধর্বকুল আমার অধীনে। আইশু এ পুরে আমি ইন্দ্রের আদেশে।  তোমার মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী দেবকুল সহ দেবেশ। এই যে অস্ত্র দেখিছ নৃমনি, দিয়াছেন পাঠাইয়। তোমার অনুজে দেবরাজ। আবির্ভাবি মায়া মহাদেবী প্রভাতে, দিবেন কহি, কি কৌশলে কালি নাশিবে লক্ষ্মণ শূর মেঘনাদ শূরে। দেবকুল-প্রিয় তুমি, রঘুকুল-মণি।

সুপ্রসন্ন তব প্রতি আপনি অভয়া! কহিলা রঘুনন্দন; "আনন্দ-সাগরে ভাসিহু, গন্ধর্বশ্রেষ্ঠ, এ শুভ সংবাদে!অজ্ঞ নর আমি; হায়, কেমনে দেখাব কৃতজ্ঞতা? এই কথা জিজ্ঞাসি তোমারে।" !

হাসিয়া কহিলা দূত; "শুন, রঘুমণি, দেব প্রতি কৃতজ্ঞতা, দরিদ্র-পালন, ইন্দ্রিয়-দমন ধর্মপথে সদা গতি; নিত্য সত্য-দেবী-সেবা; চন্দন, কুসুম, নৈবেদ্য, কৌষিক বন্ধু আদি বলি যত, অবহেলা করে দেব, দাতা যে যজ্ঞপিঅসং! এ সার কথা কহিমু তোমারে!"

প্রণমিলা রামচন্দ্র; আশীষিয়া রথী চিত্ররণ, দেবরথে গেলা দেবপুরে। থামিল তুমুল ঝড়; শান্তিলা জলবি; হেরিয়া শশাঙ্কে পুনঃ তারাদল সহ, হাসিল কনকলঙ্কা। তরল সলিলে ইতি

পশি, কৌমুদিনী পুনঃ অবগাহে দেহ রজোময়; কুমুদিনী হাসিল কৌতুকে। আইল ধাইয়া পুনঃ রণ-ক্ষেত্রে, শিবা শবাহারী; পালে পালে গৃধিনী, শকুনি, পিশাচ। রাক্ষসদল বাহিরিল পুনঃ ভীম-প্রহরণ-পারী-মত্ত বীরমদে।  শ্রীমেঘনাদবধে কাব্যে অস্ত্রলাভো নাম দ্বিতীয়ঃ সর্গঃ।

More Books by মাইকেল মধুসূদন দত্ত

30
Articles
মেঘনাদবধ কাব্য
0.0
মেঘনাদবধ কাব্য ১৯-শতকীয় বাঙালি কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত কর্তৃক রচিত মহাকাব্য।[১] 'মেঘনাদবধ কাব্য' মধুসূদনের অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখা দ্বিতীয় কাব্য । কাব্যটি কবির সর্বশ্রেষ্ঠ কবিকীর্তি। এই অমর মহাকাব্য প্রকাশের সঙ্গে আমরা কবির প্রতিভার পূর্ণ বিকাশকালে উপস্থিত হয়। [২] ১৮৬১ সালে কাব্যটির দুইখণ্ডে প্রকাশ হয় । প্রথম খণ্ড(১–৫ সর্গ) ১৮৬১ সালের জানুয়ারী মাসে, এবং দ্বিতীয় খণ্ড (৬—৯ সর্গ) ঐ বৎসরের প্রথমার্ধে প্রকাশিত হয়। কাব্যটি মোট নয়টি সর্গে বিভক্ত। মেঘনাদবধ কাব্য হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণ অবলম্বনে রচিত[৩], যদিও এর মধ্যে নানা বিদেশী মহাকাব্যের ছাপও সুস্পষ্ট।
1

ভূমিকা মহাকাব্যের প্রকৃতি

14 December 2023
1
0
0

ইহাতে নাটকের সমস্ত সন্ধিগুলি থাকিবে, কাহিনীটি ঐতিহাসিক ঘটনা হইতে উন্নত হইবে অথব। কোন সজ্জনকে আশ্রয করিবে। ইহার ফল হইবে চতুর্বর্গপ্রাপ্তি অথবা চতুর্বর্গের যে কোন একটিও হইতে পারে। আরম্ভে নমস্কার, আশীর্ব

2

বিস্তৃতিবোধ-বিশাল রস

14 December 2023
0
0
0

আমাদের দেশের অলঙ্কারশাস্ত্র মানবহৃদয়ের প্রবৃত্তিগুলিকে প্রধানতঃ আট বা নয়টি স্থায়ীভাবে বিভক্ত করিযা আট বা নয়টি রসের পরিকল্পনা করিয়াছে। এইরূপ সাহিত্যবিচারের কতকগুলি অসুবিধা আছে। যদি স্থায়ী ভাবগুলিকে বাঁ

3

মেঘনাদবধ কাব্যে'র বৈশিষ্ট্য-পরিকল্পনা

14 December 2023
0
0
0

কিন্তু বিষয়টি গভীরভাবে বিচার করিলে মাইকেলের এই বিক্বতি সাহিত্যের দিক্ দিয়া তেমন দোষাবহ নাও হইতে পারে। সমস্ত প্রাচীন কাহিনীই কালক্রমে বিবর্তনের মধ্য দিয়া গড়িয়া উঠে এবং তাহাদের অল্পবিস্তর পরিবর্তন হইয়া

4

মেঘনাদবধ কাব্য

14 December 2023
0
0
0

হায়, নাথ, নিজ কর্মফলে মজালে রাক্ষসকুলে, মজিলে আপনি। রাবণের শক্তির মূলে ছিল দেবশ্রেষ্ঠ মহেশ্বরের রূপা। তাই স্বয়ং উমা যখন মহেশ্বরকে বশীভূত করিতে গেলেন তখন তিনি কন্দর্পের সাহায্য গ্রহণ করিলেন যাহাতে তপ

5

চরিত্রসৃষ্টি-দেবদেবী

14 December 2023
0
0
0

শুধু মৌলিক পরিকল্পনায় নহে, চরিত্রস্বষ্টিতেও 'মেঘনাদবধ কাব্য' মহাকাব্যের লক্ষণাক্রান্ত। প্রথমেই দেবদেবীদের কথা ধরা যাইতে পারে। ইলিয়াডে দেবদেবীগণ মানব-মানবীর স্থায়। মানব-মানবীর সব দোষগুণই তাঁহাদের আছে,

6

রাম-লক্ষ্মণ-রাবণ-মেঘনাদ

14 December 2023
0
0
0

এই পরিপ্রেক্ষিতে রাম ও লক্ষ্মণের এবং তাঁহাদের সহযোগীদের চরিত্র বিচার করিতে হইবে। 'মেঘনাদবধ কাব্যে'র রাম ও লক্ষ্মণ মাইকেলের প্রতিভার অপূর্ণতার পরিচায়ক এইরূপ মত বহু লোকে প্রকাশ করিয়াছেন এবং এই মন্তের আং

7

প্রমীলা

15 December 2023
0
0
0

মেঘনাদের জীবনের এশ্বব ও মৃতার মহিমা সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করিবাব জন্য কৰি প্রমীলার চরিত্রের অবতারণা করিযাহেন , মেঘনাদ শুধু বাসববিলধী বীব নহেন, তিনি যোগ্য পিতামাতার ঘোগ্য পুন্র? তছুপরি তিনি বীধবতী সাধ্বী

8

সীতা

15 December 2023
0
0
0

মেঘনাদ ও প্রমীলার দ্রাম্পত্যজীবনের যে চিত্র এই গ্রন্থে দেওয়া! হইয়াছে তাহা মাইকেলের পরিকল্পনার স্বকীয়তা প্রমাণ করে। ইহা! পরোক্ষভাবে গ্রন্থের মৌলিক পরিকল্পনার উপরেও আলোকসম্পাত করে । মেঘনাদ ও প্রমীলার

9

মেঘনাদবধ কাব্যের ভাব

15 December 2023
0
0
0

“মেধনাদবধ কাব্যের মহাকাঁব্যোচিত পরিকল্পনা ও চওিত্রস্্টির মহিমার উল্লেখের পর উহার বর্ণনার গজন্বিতার কথা বলা প্রয়োজন | . ভাঘ। ভাব্রেই বহন মাত্র এবং ভাষা ছড়া কপির ভ।ব৪ অভিব্যক্ত হইতে পালে ন।। মাইকেলের

10

উপমা

15 December 2023
0
0
0

মহাদেবের যে বর্ণনা উল্লিখিত হইয়াছে তাহার উপমা-সমৃদ্ধি লক্ষণীয় । হোমারের অন্ততম প্রধান গুণ উপমার বৈশিষ্ট্য । হোমার অধিকাংশ বিষয়কে উপমাঁর সাহায্যে বর্ণনা করিয়ীছেন। সাধারণতঃ তাহার উপমাগুলি উপমান ও উপ

11

বর্ণনা

15 December 2023
0
0
0

'মেঘনাদবধ কাব্যে বহু স্দীর্ঘ বর্ণনা আছে এবং সেই সব বর্ণনার বৈচিত্র্য ও মাধুর্য মাইকেলের প্রতিভার স্বকীয়তার সাক্ষ্য দেয়। এই প্রতিভার বৈশিষ্ট্য-_এশ্বর্বোধ। কাব্যের প্রারন্তেই দেখি রাবণ এক অপূর্ব সভায়

12

দোষ

15 December 2023
1
0
0

বহগুণসম্বন্বিত হইলেও মেঘনাদবধ কাব্য ক্রটিশূন্ত নহে এবং সেই প্রসঙ্গের আলোচনা! আবশ্যক । প্রথমেই বল যাইতে পারে যে এই গ্রন্থের পরিধি অতিশয় সঙ্কীর্ণ। সপ্তকাণ্ড রামায়ণের একটি কাণ্ডের একটি খণ্ডাংশ লইয়া ইহ

13

অমিত্রচ্ছন্দ

18 December 2023
1
0
0

মীইকেল মধুস্ছদনের অন্যতম প্রধান কীতি বঙ্গলাহিতো অমিত্রাক্ষরের প্রবর্তন; বাংলার প্রচলিত ছন্দ ছিল পয়ার, তাহ] মিত্রন্ন্দ অর্থাৎ তাহার মধো অন্ত অক্ষরের মিল আছে। তাহার আর একটি লক্ষণ এই যে তাঁহার মধ্যে প্র

14

মেঘনাদবধ কাব্য- দ্বিতীয় সর্গ

19 December 2023
0
0
0

অস্তে গেলা দিনমণি; আইলা গোধূলি, একটি রতন ভালে। ফুটিলা কুমুদী। মুদিল। সরসে আঁখি বিরসবদনা নলিনী; কৃজনি পাথী পশিল কুলায়ে; গোষ্ঠ-গৃহে গাভী-বৃন্দ ধাব হঙ্গা রবে। আইলা শুচারু-তারা শশী সহ হাসি, শর্বরী, সুগন্ধ

15

মেঘনাদবধ কাব্য- তৃতীয় সর্গ

19 December 2023
1
0
0

প্রমোদ-উদ্যানে কাঁদে দানব-নন্দিনী প্রমীলা, পতি-বিরহে কাতরা যুবতী। অশ্রুজপি বিধুমুখী ভ্রমে ফুলবনে কহু, ব্রজ-কুঞ্জ-বনে, হায় রে, যেমনি ব্রজবালা, নাহি হেরি কদম্বের মূলে পীতধড়া পীতাম্বরে, অধরে মুরলী। কহু ব

16

মেঘনাদবধ কাব্য- চতুর্থ সর্গ

20 December 2023
1
0
0

নমি আমি, কবি-গুরু, তব পদাম্বুজে, বাল্মীকি! হে ভারতের শিরঃচূড়ামণি, তব অনুগামী দাস, রাজেন্দ্র-সঙ্গমে দীন যথা যায় দূর তীর্থ-দরশনে তব পদ-চিহ্ন ধ্যান করি দিবা নিশি, পশিয়াছে কত যাত্রী যশের মন্দিরে, দমনিয়া ভ

17

মেঘনাদবধ কাব্য -প্রথম সর্গ

19 December 2023
0
0
0

উড়িল কলম্বকুল অম্বর প্রদেশে শনশনে!বল্প শিক্ষা বীর বীরবাহ! কত যে মরিল অরি, কে পারে গণিতে? এইরূপে শত্রুমাকে বুঝিলা স্বদলে পুত্র তব, হে রাজন! কতক্ষণ পরে, প্রবেশিলা যুদ্ধে আসি নরেন্দ্র রাঘব। কনক-মুকুট

18

মেঘনাদবধ কাব্য- পঞ্চম সর্গ

21 December 2023
0
0
0

হাসে নিশি তারাময়ী ত্রিদশ-আলয়ে।। দাসীর সাধনে সাধ্বী কহিলা, সুসিদ্ধ কিন্তু চিন্তাকুল এবে বৈজয়ন্ত-ধামে মহেন্দ্র; কুরুম-শয্যা তাজি, মৌন-ভাবে বসেন ত্রিদিব-পতি রত্ন-সিংহাসনে;- সুবর্ণ-মন্দিরে স্বপ্ত আর দেব য

19

মেঘনাদবধ কাব্য- ষষ্ঠ সর্গ

21 December 2023
0
0
0

ত্যজি সে উদ্যান, বলী সৌমিত্রি কেশরী কুঞ্জবনবিহারিণী; ক্বতাঞ্জলি-পুটে চলিলা, শিবিরে যথা বিরাজেন প্রভু রঘু-রাজ; অতি দ্রুতে চলিলা সুমতি, হেরি মৃগরাজে বনে, ধায় ব্যাধ যথা অস্ত্রালয়ে, বাছি বাছি লইতে সত্বরে

20

মেঘনাদবধ কাব্য- সপ্তম সর্গ

22 December 2023
0
0
0

উদিলা আদিত্য এবে উদয়-অচলে, পদ্মপর্ণে স্বপ্ত দেব পদ্মযোনি যেন, উন্মীলি নয়নপদ্ম স্বপ্রসন্ন ভাবে, চাহিলা মহীর পানে! উল্লাসে হাসিলা কুহুমকুন্তলা মহী, মুক্তামালা গলে। উৎসবে মঙ্গলবাদ্য উথলে যেমতি দেবালয়ে, উ

21

মেঘনাদবধ কাব্য-অষ্টম সর্গ

23 December 2023
0
0
0

রাজকাজ সাধি যথা, বিরাম-মন্দিরে, প্রবেশি, রাজেন্দ্র খুলি রাখেন যতনে কিরীট; রাখিলা খুলি অস্তাচলচুড়ে দিনান্তে শিরের রত্ন তমোহ। মিহিরে দিনদেব; তারাদলে আইল। রজনী; আইলা রজনীকান্ত শান্ত সুধানিধি। শত শত অগ

22

বিশদ টীকা-টিপ্পনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যাদি (প্রথম সর্গ)

25 December 2023
0
0
0

বিষয়-সংক্ষেপ:- প্রাচীন বঙ্গীয় কবিগণ নানা দেবদেবীর বন্দনা ও মঙ্গলাচরণ করিয়া যেভাবে কাব্যের সূচনা করিতেন, তাহা না করিয়া মধুসুদন যুরোপীয় কবিগণের অনুকরণে বীণাপাণির এবং কল্পনার আবাহন (invocation) করিয়া

23

বিশদ টীকা-টিপ্পনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যাদি (দ্বিতীয় সর্গ)

25 December 2023
1
0
0

বিষয়-সংক্ষেপ:-বীরবাহুর মৃত্যুর পর মেঘনাদ রাবণের সেনাপতিপদে বৃত হইলে দিবাবসান হইল এবং রাত্রি আসিল। স্বর্গেও রাত্রির আবির্ভাব হইল। ইন্দ্র শচীসহ দেবসভায় স্বর্গসুখ উপভোগ করিতেছেন, এমন সময়ে সেখানে লক্ষ্মীদ

24

বিশদ টীকা-টিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাধ্যাদি (তৃতীয় সর্গ)

27 December 2023
0
0
0

মেঘনাদবধ-কাব্যের দ্বিতীয় সর্গোক্ত ঘটনার ম্যায় তৃতীয় সর্গোক্ত ঘটনাও সম্পূর্ণরূপে বামায়ণ-বহিভূত। প্রথম দর্গের শেষ ভাগে লঙ্কাপুরীর বহির্দেশে প্রমোদোগ্ভানে মেঘনাদের ব্যসনমত্তভাবে অবস্থ।নের কথা বলা হইয

25

বিশদ টীকাটিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যা (চতুর্থ সর্গ)

27 December 2023
0
0
0

মেঘনাদরবধ কাব্যের চতুর্থ সর্গে অশোকবনে অবরুদ্ধা সীতার সহিত সরমার' কথোপকথন-গ্রসঙ্গে সরমার নিকট সীতার পূর্বজীবনের ঘটনাবলী বিবৃত হইয়াছে ।, এই সকল ঘটন! অল্পবিস্তর রামায়ণান্থগত হইতে বাধ্য বলিয়া, সমগ্র ম

26

বিশদ টীকাটিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যাদি (পঞ্চম সর্গ)

27 December 2023
1
0
0

দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ সর্গোক্ত ঘটনাবলীর সহিত পঞ্চম সর্গোক্ত ঘটনাও বীরবাহুর মৃত্যুদিবসের রাত্রিকালে সংঘটিত হইয়াছে । এই সর্গে প্রধান বর্ণনীয় বিষয়,_মেঘনাদবধে চণ্তীদেবীর সাহাধ্য-প্রাপ্তির উদ্দেশে ল

27

বিশদ টীকা টিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাথ্যাদি (ষষ্ঠ সর্গ)

27 December 2023
1
0
0

ষষ্ঠ সর্গের মূল ঘটনা" লক্ষ্মণকতৃকি মেঘনাদবধ-_বামায়ণ হইতে গৃহীত। স্থৃতরাং ছিতীয় তৃতীয় ও পঞ্চম সর্গোক্ত ঘটনাবলীর ন্যায় ইহাঁকে রামায়ণবহিভূতি ঘটনা বলা চলে না। কিন্তু ঘটনাটি যে ভাবে নিষ্পন্ন হইয়াছে

28

বিশদ টীকা-টিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাথ্যাদি (সপ্তম সর্গ)

28 December 2023
1
0
0

সপ্তম সর্গে বধিত মূল ঘটনাটি হইতেছে,_মেঘনাদের মৃত্যুসংবাদ শ্রবণে রাবণের' ক্রোধ, এবং প্রতিহিংমাপরায়ণ রাবণের সহিত যুদ্ধে শক্তিশেলাহত হইয়া! লক্ষণের পতন। এই মূল ঘটনাটি রামায়ণ হইতে গৃহীত। কিন্তু রাঁবণের

29

বিশদ টীকা টিগ্লনী ও দুরূহ অংশের ব্যাখ্যা (অষ্টম সর্গ)

28 December 2023
1
0
0

মেঘনাদবধ কাব্যের ২য়, ৩য় ও ৫ম সর্গে বগিত বিষয়সমূহের ন্ায় ৮ম সর্গে বধিত বিষয়ের সহিতও রাযায়ণের কোন সম্বন্ধ নাই। বাল্সীকির রামায়ণে উল্লিখিত হয়াছে, শক্তিশেলাহত লম্্মরণের জন্য রামচন্দ্র বিলাপ করিতে

30

বিশদ টীকা-টিগ্ননী ও ছুরহ অংশের ব্যাখ্যাদি- (নবম সর্গ)

29 December 2023
2
0
0

দৈববলে ঘে লকল কার্য সাধন করিয়াছে, তাহাতে তাহার পক্ষে অসাধ্য কোন কাধই নাই। মন্ত্রী সারণ বিনীতভাবে নিবেদন করিলেন যে, দেবানুগ্রহে ওষধি-পর্বত গন্ধমাদন স্বয়ং লঙ্কায় আসিয়। ওধধদানে লক্ষ্মণের দেহে গ্রাণসঞ

---