মেঘনাদবধ-কাব্যের দ্বিতীয় সর্গোক্ত ঘটনার ম্যায় তৃতীয় সর্গোক্ত ঘটনাও সম্পূর্ণরূপে বামায়ণ-বহিভূত। প্রথম দর্গের শেষ ভাগে লঙ্কাপুরীর বহির্দেশে প্রমোদোগ্ভানে মেঘনাদের ব্যসনমত্তভাবে অবস্থ।নের কথা বলা হইয়াছে । এই চিত্রটি ট্যাসো-রচিত 'জেরুদালেম উদ্ধার” কাব্য হইতে গৃহীত । বীরবাহু-নিধনের পর ছদ্মবেশিনী লক্ষমীদেবীর নিকট লক্কার শোঁচনীয় অবস্থার কথা জ্ঞাত হইয়া বীর মেঘনাদ তৎক্ষণাৎ বিলাসবেশ পরিত্যাগ করিয়া বীর-সঙ্জায় সঙ্জিত হইয়া বিমানযানে রামচন্দ্র কর্তৃক অবরুদ্ধ লঙ্কাপুরীতে প্রবেশ করিলেন এবং রাবণের নিকট উপস্থিত হইয়া! রামচন্ত্রের সহিত পুনরায় যুদ্ধ করিবার অনুমতি লাভ করিয়। সেনাপতিত্বে কৃত হইলেন। এখানেই প্রথম সর্গোক্ত ঘটনার পরিসমাপ্তি ।
খবিতীয় সর্গের" ঘটনা আগ্যন্ত দৈব-বড়যন্্। বীর মেঘনাদ ইতংপূর্বে দুইবার রামলক্ণকে যুদ্ধে পরাজিত করিয়াছিলেন। পুনরায় তাঁহাকে যুদ্ধোগ্যত দেখিয়া লঙ্কাপুরী ত্যাগ করিতে সমূৎহক লক্মীদেবী স্বর্গে ইন্ত্রনভায় যাইয়া! ইন্দ্রকে শিবের আম্কল্যলাভের জন্য কৈলাসে প্রেরণ করিলেন। ইন্দ্র ও শচী'টকৈলালে যাইয়া পার্বতীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়া তাহাকে রামচন্দ্রের প্রতি সদয় হইয়। মেঘনাদবধের ব্যবস্থা! করিতে বলিলেন। শিবানুগৃহীত রাবণের বিরুদ্ধে কোন কার্য করিতে দেবী প্রথমে সম্মত হইলেন না। কিন্তু ঠিক এই সময়ে বিপন্ন রামচন্ত্র,মর্ত্যে তাঁহার আরাধনা করায় দেবী ভক্তের মঙ্গলের জন্য যোগাসন নামক পর্বতশূঙ্গে তপশ্যারত শিবের নিকট গমন করিতে এবং শিবকে বশীভূত করিয়া মেঘনাদবধের ব্যবস্থা করিতে স্বীকৃত হইলেন। রতির সাহায্যে মোহিনীবেশে সজ্জিত হুইয়া পার্বতী কামদেবকে সঙ্গে লইয়! শিবের ধ্যানভঙ্গ করিলেন এবং রূপমুগ্ধ. শিবের নিকট জ্ঞাত হইলেন যে, মায়াদেবীর প্রসাদে লক্ষ্মণ ,মেঘনাদকে বধ করিতে সমর্থ হইবে। কামদেব এই সংবাদ ইন্ত্রকে দিলে উন্জ 'তৎক্ষণ।ৎ মায়াদেবীর নিকটে যাইয়। পুরাকালে কার্ডিকেয় যে সকল দৈবাস্ত্রে তারকা'স্থুরকে নিহত করিয়াছিলেন, সেই অস্ত্র সমুদয় গ্রহণ করিয়া স্বর্গে গ্রত্যাগমন করিলেন 'এবং গন্ধর্বপতি চিত্ররথের সাহায্যে রাক্ষমগণের অগোচরে সেই সকল দৈবাস্ত লঙ্কায ' রাম-শিবিরে প্রেরণ করিয়া রামচন্ত্রকে দেবতাগণের শুভেচ্ছা ও সাহায্যের কথা জ্ঞাপন করিলেন। এই কাহিনীটি ইলিয়ড কাব্যের চতুর্দশ সর্গোক্ত কাহিনী হইতে গৃহীত। সেই স্থলে ট্রয়নগরীর প্রতি বিরূপা জুনোদেবী উক্ত নগরীর প্রতি সহান্ঠভূতিপরায়ণ জুপিটারকে 'আইডা+-পর্বতশৃ্গে স্বীয় রূপে মুগ্ধ এবং নিদ্রাদদেব সম্নাসের লাহায্যে নিদ্রাভিভূত করিয়া সেই অবপরে উয়ের সর্বনাশ সাধন করিবার ব্যবস্থা করেন। সম্পূর্ণরূপে অভিনব বিদেশীয় পুরাণের এই ঘটনাটিকে মধুস্দন অতি সকৌশলে রামায়ণীয় ঘটনার সহিত সংমিশ্রিত করিয়া দ্বিতীয় সর্গোক্ত ঘটন! পরিবেশন করিয়াছেন । তৃতীয় সর্গোক্ত ঘটনা হইতেছে মেঘনাদের প্রমোদোগ্ভান ত্যাগের পর বিরহিণী মেঘনাদপত্ী প্রমীলার স্বামীব সহিত খিলিত হইবার অভিপ্রায়ে অবরুদ্ধ লঙ্কানগরীতে প্রবেশ । রামায়ণে প্রমীলার উল্লেখমাত্র নাই। নামটি যে কবি কাশীরাম দাসের মহাভারতের অশ্বমেধপর্বে উল্লিখিত নাপীরাষ্রের অধিনেত্রী প্রমীল৷ নাম হইতে গ্রহণ করিয়াছেন, তাহার প্রমাণ পাওয়া যায়__ “যুথা যবে পরস্তপ পার্থ মহারথী, যজ্ঞের তুরঙ্গ সঙ্গে আমি উতরিলা নারীদেশে, দেবদত্ত শঙ্খনাদে রুষি, রণরক্গে বাঁরাঙ্গন। সাঞ্জিল কৌতুকে ১৮ এই উপমাটির সাহায্যে লঙ্কপুরীতে নারিবাহিনীসহ প্রমীলার প্রবেশোগ্ঠম বর্ণনায়। কাশীরামের কল্লিত বীগাঙ্গন! প্রমীলার প্রভাব মধুক্দন-কল্পিত প্রমীলার উপর অত্যন্ত বেশি পরিমাণে আশিয়। পড়িলেও এই চরিত্রটি কবির একটি অনবদ্য ক্ষ্টি। [সমগ্র মেঘনাদবধ-কাব্যে মেঘনাদ, রাবণ এবং চতুর্থ সে চিত্রিত সীতাচরিত্র ব্যতীত অন্ত কোন চরিব্রই কবির সহান্ুভৃতিরদে অভিষিক্ত হইয়৷ এরূপ উজ্জ্বল ও মনোজ্ঞ হইয়া উঠিতে পারে নাই। কাশীরামের প্রমীলাচরিত্রের প্রভাব ছাড়াও স্থানে স্থানে মেঘনাদপত্বী প্রমীলার উপর ট্যাসোর 'জেরুলালেম-উদ্ধ।র' কাব্যের কুহকিনী আমিডার, বীরাঙ্গনা ক্লোরিগাঁর, হেক্টর-পত্তী এ মেকীর এবং রঙ্গলালের পল্মিনীকাব্োর পদ্মিনীর চরিত্রের ছায়! আসিয়া পড়িয়াছে বটে, কিন্তু তথ।পি প্রমীলাচরিত্রের মধ্যে অতি অল্প পরিসরেও কবি এমন একটি তেজন্বিতা, মনোজ্ঞতা এবং সজীবতা আনিয়া ফেলিতে সমর্থ হইয়াছেন যাহার ফলে এই চরিত্রটি কাব্যে একটি অপূর্ব পরিণতি লাভ করিয়াছে। প্রথম, পঞ্চম, সপ্তম ও নবম সর্গে অতি স্বল্প পরিসরের মধ্যে প্রমীলাচরিত্রের নানাদিক ইঙ্গিত হইয়াছে বটে, কিন্তু এই তৃতীয় সর্গে ই তাহার অপূর্ব চিত্র ববি সম্পূর্ণরূপে উদঘাটিত করিয়া! তুলিয়াছেন। বীর ও প্রগল্ভ হন্মান এই তেজোমগ্ডিত মহিমময় রূপের সম্মুখে সম্পূর্ণরূপে স্তম্ভিত স্বয়ং রামচন্দ্র দূর হইতে তাহাকে দেখিয়া! বিম্ময়ে নির্বাক; বিভীষণ তাহার পরিচয় দিতে যাইয়া বলিয়াছেন,_ _-“নিশার স্বপন
নহে এ, বৈদেহীনাথ, কহিহ্থ তোমারে।
কালনেমি নামে দৈত্য বিখ্যাত জগতে
করাঁরি, তনয়! তার প্রমীল। হ্বন্দরী।
মহাশক্তি-অংশে, দেব, জনম বামার,
মহাশক্তি-মম তেজে! কার সাধ্য আটে
বিক্রমে এ দানবীরে ?%
এবং পুনরায়, “মরিবে তোমার শরে স্বরীশ্বর-অরি মেঘনাদ, কিন্তু তবু থাক সাবধানে । মহাবীর্ধবতী এই প্রমীল] দানবী; নৃুমুণ্ডমালিনী, যথা নু-মুণ্-মালিনী রণপ্রিয়া! কালসিংহী পশে যে বিপিনে, তার পাশে বাস যার, সতর্ক সতত উচিত থাকিতে তার ।*
স্বয়ং পার্বতী দেবী কৈলামে বসিয়া মর্ত্যে প্রমীলার অপূর্ব বীরাঙ্গনা মৃততি দেখিয়া! সখী বিজয়াকে বলিয়াছেন, _লঙ্কাপানে দেখ লে! চাহিয়া বিধুমুখি ! বীরবেশে পশিছে নগরে প্রমীলা, সঙ্গিনীদল সঙ্গে বরাঙ্গনা। সবর্ণকঞ্চুকবিভা উঠিছে আকাশে! সবিন্ময়ে দেখ ওই ফাড়ায়ে নুমণি রাঘব, সৌমিত্রি, মিত্র বিভীষণ-আরি বীর যত! হেন রূপ কার নরলোকে ? সাজিন্ধ এ বেশে আমি নাশিতে দানবে সত্যযুগে ।” সত্যই তৃতীয় সগেচ_তথা সমগ্র কাব্যের মধ্যে, প্রমীলা কবির একটি অপূর্ব ও নার্থক টি ৷
বিষয়-সংক্ষেপ_
দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্গোস্ত ঘটন তুল্যকালীন। যে সময়ে মেঘনাদনিধন ব্যবস্থার জন্য স্বর্গে ও কৈলাসে ষড়যন্ত্র চলিতেছিল, ঠিক সেই সময়েই লঙ্কার বহিদেশস্থ প্রমোদকাননে প্রমীলা পতিবিরহে.সন্তপ্ত হইয়া মেঘনাদের সহিত মিলিত হুইবার জন্য ব্যাকুল হইলেন । মেঘনাদের প্রমোদোগ্ঠান ত্যাগের পর রাত্রি আসিল। শক্রকে দমন করিয়া অবিলম্বে প্রত্যাবর্তন করিবেন এই আশ্বাস দিয়া মেঘনাদ বিদায় লইয়াছিলেন। রাত্রি বাড়িবার সঙ্গে সঙ্গে প্রমীলার উৎকঠ্ঠাও বাড়িতে লাগিল। তিনি সখী বাসস্তীকে স্বামীর প্রত্যাবর্তনে বিলম্বের হেতু জিজ্ঞাসা করিলে বাগস্তী তাহাকে সান্তনা দিয় বলিলেন যে, দেব-দৈত্যবিজযী মেঘনাদ অবিলদ্বে রামচন্দ্রকে বধ করিয়া ফিরিয়া আগিবেন 1 তাহার অভ্যর্থনা করিবার জন্য পুষ্পবনে যাইয়া উভয়ে আচল ভরিয়া ফুল তুলিয়া সযত্রে চিকণ মালা গ্রস্তত করিলেন। পুষ্প চয়ন করিবার সময়েও বিরহাশ্রুতে প্রমীলাত্ব চক্ষু পূর্ণ হইতেছিল। মাল্যরচনীকার্ধ শেষ হইলে প্রমীলা! সখীকে বলিলেন, “এই তু তোমার কথামত রাশি রাশি ফুল তুলিয়া মাল! গাখিলাম; কিন্তু ধাহার পূজার জন্ত এই আয়োজন, তিনি ত এখনও আমিলেন না। তাহার বিলম্বের হেতু আমি বুঝিতে পারিতেছি না। চল, আমরীও সকলে লঙ্কাপুরীতে গমন করি ।”
সথী শত্রবেষ্টিত লঙ্কায় প্রবেশের অসম্তাব্যতার বিষয় উল্লেখ করিলে প্রমীলা কু হইয়া বলিলেন, "আমি বীরকন্তা, বীরপত্বী এবং বীরের পুত্রবধূ; ভিথারী রাঘবকে আমি তুচ্ছ জ্ঞান করি। যদি শক্র বাধা দেয়, তবে বাহুবলে শক্রদমন করিয়া আমি লঙ্কায় প্রবেশ করিব ।”
প্রমীলার আদেশে রণদামামা বাঁজিয়] উঠিল এবং প্রমীলার অন্ুচরী বীর্ধবতী দানবকন্তাগণ অন্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হইতে লাগিল। যুদ্ধের অশ্ব ও হস্তিসমৃহও রণবাদ্ধ্বনি শুনিয়। উত্তেজিত হুইয়া উঠিল। শান্ত ও স্তব্ধ গ্রমোদকানন অকন্মাৎ কলরব ও, উত্তেজনায় পূর্ণ হইঞ্ছ! উঠিল। নৃমু্মালিনী নামী প্রমীলার প্রধান অশ্থচরী একশত অশ্ব সজ্জিত করিয়া আনিলে একশত সুন্দরী অনুচরী অস্ত্রে শস্্রে সজ্জিত হুইয়! অশ্খে আরোহণ করিল। প্রমীলাও অপূর্ব বীরসঙ্জায় সজ্দিত হইয়া “বড়বা” নামক তাহার নিজের ঘোটকীতে আরোহণ করিয়। অনুচরীগণকে বলিলেন,-_-অবরুদ্ধ| লঙ্কাঁপুরীতে বীর মেঘনাদ বন্দীর স্তায় অবস্থিত। শক্রসৈম্ত মথিত করিয়া আমর! লঙ্কায় প্রবেশ করিব এই আম্মাদের পণ। সহচরীগণ জয়ধ্বনিসহু সম্মতি জানাইল এবং প্রমীল।
তাহার নারী-বাহিনী লইয়া লঙ্কার পশ্চিম ঘারে উপস্থিত হইলেন।প্রমীল। ও তাহার সহচরীগণের শঙ্ঘধ্বনিতে ও ধনুকের টঞ্চারে সমস্ত দেশ সংক্ষুব্ধ হইয়া] উঠিল। পশ্চিম দ্বারে প্রহরীর কার্ধে নিষুক্ত হনুমান প্রমীলাবাহিনীর সম্মুখীন হইয়৷ বলিল, “এই গভীর নিশীথে নারীর ছন্মবেশে কে তোরা মরিবার উদ্দেশ্টে এখানে আপিয়াছিস? বাক্ষসেরা পরম মাঁয়াবী সত্য, কিন্তু আমি বাহুবলে মায়াজাল ছিন্ন করিয়া থাকি ।”
প্রমীলার প্রধান! অনুচরী নৃমুণ্ডমালিনী অগ্রসর হইয়া বলিল, “তোর মত বর্বরের সহিত আমাদের শক্তিপরীঙ্গণ হইতে পারে না। তুই, রাম লক্্ণ অথবা দেশদ্রোহী বিভীষণকে এখানে পাঠাইয়! দে। ইন্দ্রজিং-পত্বী প্রমীলা এখানে সদলবলে উপস্থিত । তিনি স্বামীর সহিত মিলনেচ্ছায় বাহুবলের সাহায্যে লঙ্কায় প্রবেশ করিবেন।” নৃুমুণ্মালিনীর উক্তি শ্রবণ করিয়া উৎসুক হনুমান একটু অগ্রসর হইয়! নাপীবাহিনীর মধ্যে অশ্বপৃষ্ঠে অবস্থিত প্রমীলার অতুলনীয মহিমময় রূপ দর্শনে বিস্ময়ে সুস্ভিত হইয়া বিনীতভাবে উত্তর করিল, “প্রভূ রামচন্দ্র তাহার শত্রু 'রাবণের সহিত যুদ্ধ করিতে উপস্থিত হইয়াছেন। স্ত্রীলোকের সহিত তীহার কোন বিবাদ নাই। তোমাদের প্রার্থনা কি জানাইলে তিনি অবশ্যই তাহা! পূরণ করিবেন”
প্রমীলা অতি মধুর কণ্ে উত্তর করিলেন, রামচন্দ্র আমার স্বামীর শক্ত; কিন্তু তাই বলিয়। তাহার সহিত আমার খিবাদের প্রয়োজন নাই। আমার স্বামী নিজেই শত্রদমনে সমর্থ। রামের নিকট আমার প্রার্থনা কি তাহা আমার দূত্তী তাহাকে বলিবে।» অনন্তর হনুমানের সহিত নৃমুণ্মালিনী রামের শিবিরে যাইয়। উপস্থিত হইল। শিবিরে তখন রামচন্দ্র ইন্ত্রর্তক সদ্যংপ্রেরিত দৈবান্্সমূহের প্রশংসা করিতেছিলেন। হঠাৎ শিবিরদ্বারে তেজস্বিনী ও স্ুন্দনী নৃমুণ্ডমালিনীর আবির্ভাবে রামচন্দ্র বিশ্মিত হইয়া বিভীষণকে তাহার পরিচয় জিজ্ঞাস! করিলেন । নৃমুণ্ডমালিনী স্বয়ং অগ্রসর হইয়। নিজের পরিচয় দিয়] বলিল যে, হয় রামচন্দ্র প্রমীলাকে লঙ্কা প্রবেশের পথ দিন, নতুব! প্রমীলা অথব| অন্ত যে কোন দানব-কন্তার সহিত শক্তি পণীক্ষার জন্ত ্রস্তত হউন | ,“রামচন্্রপ্রত্যুত্তরে বলিলেন যে, রাবণই তীহার শক্র; রক্ষঃকুলবধূ ও রক্ষঃকুল-ললনাগণের সহিত তীহার কোন বিরোধ নাই । প্রমীলা নিঃশক্ক হৃদয়ে লঙ্কায় প্রবেশ করিতে পারেন; বিন! যুদ্ধেই' রামচন্দ্র তাহার ম্তায় বীরাঙ্গনার নিকট পরাজয় স্বীকার করিতেছেন । ইহা বলিয়া রাম হনৃমানকে প্রমীলার পথের বাধা অপসারণ করিতে আদেশ করিলেন । ন্বৃতী প্রণাম করিয়| প্রস্থান করিলে রামচন্দ্র বিভীষণের সহিত শিবিরের বাহিরে আসিয়া দলবলসহ প্রমীলার লক্কাগ্রবেশ দেখিতে বাগিলেস। রাঁমচন্দ্রের সৈন্য দুই শ্রেণীতে বিভক্ত হইয়] মধ্যে পথ হ্ষ্টি করিয়াছে ;--সেই পথ দিয়! স্বন্দরী বীরাঙ্গনাগণ অশ্বপৃষ্ঠে সমানীন হইয়া অস্ত্রের ঝনৎকারে ও অলগ্কারের শিঞ্জনে দেশ পূর্ণ করিয়! শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে লঙ্গার সিংহদ্বারাভিমুখে অগ্রসর হইতে লাগিল। সর্বপ্রথমে চলিয়াছে কৃষ্ণবর্ণ অশ্বপৃষ্ঠে নৃমুওমাঁলিনী | তাহার পশ্চাতে অগ্রসর হইতেছিল বাগ্তকরীগণ। তাহাদের পশ্চাতে শৃলধারিণী বীরাঙ্গনাগণ কর্তৃক বেষ্টিত হইয়া এবং “বড়বার" পৃষ্ঠে সমাসীন হইয়। সিংহবাহিনী ছূর্গার স্তাঁয়, কিংবা এরাবতপৃষ্ঠে সমামীনা শচীর ন্তায়, অথবা গরুড়বাহিনী লক্ষ্মীর স্তায় মহিমময়ী স্থন্দরী প্রমীলা ধীবে ধীরে অগ্রসর হইতেছিলেন। রামচন্দ্র প্রমীলার লঙ্কাভিমুখে নদলবলে যাত্র। দেখিয়া অত্যন্ত বিস্মিত হইয়! বিভীষণকে প্রশ্ন করিলেন,_-"আমি কি স্বপ্নে এই অলৌকিক ঘটনা দেখিতেছি ? অথবা পূর্বে চিত্ররথ দৈবাস্্ব দান করিতে আসিয়া! মায়াদেবীর আবিতভ।বের কথা বলিয়া গিয়ছেন। মায়াদেবীই কি তবে প্রমীলার ছন্মবেশে লঙ্কায় গ্রবেশ করিলেন ?” |
বিভীষণ উত্তর করিলেন, “ইহ! নিশার স্বপ্ন নহে, বাস্তব সত্য । কাঁলনেমি দানবের কন্| প্রমীলা! মহাঁশক্তির অংশে জন্মগ্রহণ করিয়াছে । পৃথিবীতে কাহারও সাধ্য নাই যে, ইহাঁকে শক্তিতে পরান্ত করে। স্বয়ং ইন্দ্রকে যুদ্ধে যে মেঘনাদ পরাজিত করিয়াছে, মেই মেঘনাদকে এই তেজস্থিনী নারী বশীভূত করিয়! রাখিয়াছে !” রামচন্দ্র বলিলেন, “মেঘনাদ যে রথিত্রেষ্ঠ সে বিষয়ে কোন সন্দেহই নাই। আমি পরশুরামের ন্যায় বীরেরও শক্তি পরীক্ষা করিয়াছি, কিন্তু ম্ঘনাদের ন্তাঁয় দ্বিতীয় বীর দেখি নাই। সেই মেঘনাদের সহিত বীর্ধবতী প্রমীলা আসিয়] মিলিত হইল 1 এক্ষণে আমাদের কে রক্ষা করিবে? তোমার সাহায্যে যি কোনক্রমে মেধনাদকে বধ করিতে পারি, তবেই রাবণকে পরাজিত করিয়া! সীতার উদ্ধারের আশা করিতে পারি;-_ নতুবা বুখাই লমুদ্র বন্ধন করিয়া লঙ্কায় আসিয়াছি।”
রামচন্দত্রের মংশয়ের কথ৷ শুনিয়া লক্ণ বলিলেন যে, স্বয়ং ইন্দ্র যখন তাহাদের সহায়, তখন ভয়ের কোন কারণ নাই। রাবণের পাপের ফলে তাহার বীরপুত্র যুদ্ধে নিহত হইবে; কারণ অধর্ম কখনও জয়লাভ করিতে পারে না। চিত্ররথও পরদিন প্রভাতে মেঘনাদের মৃত্যুর কথ! বলিয়! গিয়াছেন। স্থতরাং রামচন্দ্রের আশঙ্কা বৃথ!। বিভীষণ উত্তর করিলেন যে, লক্ষণের কথাই সত্য এবং পাপিষ্ঠ রাবণের দোষে মেঘনাদ লক্ষণের হন্তেই নিহত হুইবে। তথাপি প্রমীলার ন্য় বীর রমণী যখন মেঘনাদের গৃহিত আসিয়া মিলিত হইয়াছে তখন বাকি রাত্রিটুকু অত্যস্ত সাবধানে থাকা উচিত । পাত্রে রক্ষ। পাইলে প্রভাতে মেধনাদবধের চেষ্ট/ করা যাইবে ।
বিভীষণের কথা শুনিয়া রামচন্দ্র তাহাকে লক্ষণের গহিত লঙ্কার বিভিন্ন দ্বারে তাহার সম্তগণের ব্যবস্থা পরিদর্শন করিতে অনুরোধ করিলেন। বিভীষণ ও লক্ষণ রামচন্দ্রের আদেশ পালনের জন্ত বহির্গত হইলেন।
প্রমীল। অবশেষে লঙ্কার পশ্চিমন্বারে উপস্থিত হইলে রাক্ষপসেনাগণ শক্র মনে করিয়' দলবলসহ তাহাকে প্রতিরোধ করিল। চারিদিকে অস্ত্রের ঝঙ্কার ও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতির সাড়া পড়িয়া গেল। সমস্ত লঙ্কা ভয়ে কাপিয়া উঠিল। বাক্ষদগণ শর নিক্ষেপ করিতে উদ্যত হইলে অগ্রবতিনী নৃমৃণ্মালিনী উচ্চকণ্ঠে বলিলেন,__“এই অন্ধকারে কাহার প্রতি তোরা অস্ত্র নিক্ষেপ করিতেছিস্। আমরা রক্ষোরিপু নহি, রক্ষোবধূ। ভাল করিয়া চাহিয়া দেখ।” তৎক্ষণাৎ প্রহরী রাক্ষপগণ দ্বার উদঘাটন করিয়! দিল এবং জয়ধ্বনির মধ্যে প্রমীল। লক্কায় প্রবেশ করিলেন।
প্রমীলার আগমনে চারিদিকে সাড়া পড়িয়া গেল এবং দলে দলে রাক্ষপগণ প্রমীলাকে দেখিতে আসিল, কুলবধূর| মাঙ্গল্যস্থচক হুলুধ্বনি করিল এবং পুষ্পবৃষ্টি করিল। রুদ্ধ গৃহের বাতায়ন উন্মোচন করিয়া বাক্ষসবধূরা! প্রমীলার বীরত্বদেখিয়া প্রশংসা করিতে লাগিল। ক্রমে প্রমীল। আসিয়! মেঘনাদের ভবনে উপস্থিত হইলেন। মেঘনাদ কৌতুকচ্ছলে বলিলেন যে, রক্তবীজ বধ করিয়া! দেবী বুঝি কৈলাসে আসিয়াছেন! যদি আদেশ হয়ত দেবীর পদতলে স্থিত শিবের ন্াঁয় তিনিও প্রমীলার পদতলে পতিত হুইতে প্রস্তত আছেন। প্রমীলা প্রত্যুত্তরে রহস্যচ্ছলে বলিলেন ষে, পতির আশীর্বাদে তিনি সর্বজয়িনী-_-কেবল মন্মথকেই জয় করিতে পারেন নাই। পতির বিরহে সন্তপ্ধ হইয়!-তাঁই তিনি স্বামিসকাশে আগমন করিয়াছেন ।
অতঃপর গ্রমীল! বীরবেশ পরিত্যাগ করিয়া রক্ষঃকুলবধূর বেশভৃষা ধারণ করিয়া মেঘনাের সহিত স্ব্ণীসনে উপবেশন করিলেন । গায়কগণ গীত, এবং নর্তকীগণ নৃত্য আরম্ভ করিল। চারিদিকে স্থখের হিল্লোল বহিল।
এদিকে রামচন্দ্রের আদেশে বিভীষণ লক্ষণের সহিত একে একে উলন্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ বারে সৈম্তগণের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করিয়া এবং সকলেই সতর্কভাবে অবস্থিতি করিতেছে দেখিয়। সন্তষ্টচিতে পশ্চিম দ্বারে রাঁমচন্জের শিবিরে সংবাঁদ দিতে গেলেন ।
প্রমীলা যখন লঙ্কায় প্রবেশ করিতেছিলেন, তখন ঠকলাসে পার্বতী বিজয়াকে সগ্বোধন করিয়। বলিলেন, “চাহিয়। দেখ, গ্রমীলা বীরবেশে লকঙ্কায় প্রবেশোগ্যত। প্রমীলার অপূর্ব রূপচ্ছটায় রাম, লক্ষণ, বিভীষণাদি সকলে বিশ্মিত। এ দেখ মুুগতি ঘোটকের উপর. ঈষৎ আন্দোলিত বীরাঙজনা প্রমীলাকে কি হন্দরই ন দেখাইতেছে 1” | বিজয়া বলিলেন, “সত্যই রূপলাবণ্যশালিনী প্রমীল1 তোমার উপযুক্ত দাসী। কিন্ত তুমি রামলক্ষ্ষণকে রক্ষা করিবার ষে ভার লইয়াঁছ তাহা কিভাবে পালন করিবে তাহার চিন্তা কর। মেঘনাদ আপন হইতেই জগজ্জয়ী। এখন আবার প্রমীলা আপিয়৷ তাহার সহিত মিলিত হইল। এখন তুমি রামকেই বা কিভাবে রক্ষা করিবে এবং লক্ষ্মণই বা কি উপায়ে যেঘনাঁদকে বধ করিবে ?”
দেবী ঈষৎ চিস্তা করিয়া বলিলেন যে, তাহার শক্তি হইতেই প্রমীলার উৎপত্তি। আগামী দিবস প্রভাতে তিনি প্রমীলার শক্তি আকর্ষণ করিয়৷ তাহ।কে শক্তিহীন! করিবেন এবং তাহ! হইলেই লক্ষ্পণ মেঘনাদমিধনে সমর্থ হইবে। মৃত্যুর পর মেঘনাদ ও প্রমীলা কৈলাধামেই আগমন করিবে। মেঘনাদ শিবের সেবা করিবে এবং প্রমীলা দেবীর অন্যতম! সখীর স্থান অধিকার করিবে।
ইহা বলিয়া দেবী বিশ্রামার্থ নিজের মন্দিরে প্রবেশ করিলেন। অতি সন্তর্পণে নিদ্রা কৈলামে নামিয়া আসিল । শিবের ললাটে চন্দ্রকলা প্রদীপ্ত হইয়। স্থখময় কৈলাসধামকে শুত্র জ্যোতস্বালোকে উজ্জল করিয়া! তুলিল।
প্রমোদ-উদ্ভানে-_প্রথম সর্গোক্ত লঙ্কাঁপুরীর বহির্দেশস্থ মেঘনাঁদের গ্রমোদকাননে । কাদে মেঘনাদ বীরবাহুর মৃত্যুসংবাঁদ শ্রবণে অকম্মাৎ উপবন ত্যাগ করিয়া যাওয়ায় পতির বিরহে ব্যাকুল হইয়া! । দানব-নন্দিনী_কালনেমি নামক দানবের কন্তারপে কবি প্রমীলার কল্পনা করিয়াছেন । তুলনীয়, “কালনেমি নামে দৈত্য বিখ্যাত জগতে ক্থুরারি, তনয়! তার প্রমীল! সুন্দরী” (ওয় সর্গ, ৪১৫১৬)
প্রমীল1-_মহাঁবীর্বতী ও অতুলনীয়] স্থন্দরী মেঘনাদপত্রীরূপে এই কাব্যে চিত্রিত। প্রমীল! নামটি কাশীরামের মহাভারতের অস্বমেধ-পর্বোক্ত নারীদেশের অধিনেত্রীর নাম হইতে গৃহীত। কাশীরাম-কল্পিত অসাধারণ তেজস্থিতা এই প্রমীলার মধ্যেও রহিয়াছে এবং উভয় চরিত্রের মধ্যে এই দিক দিয়া খানিকটা সাদৃশ্তও আসিয়া গিয়াছে বটে, তথাপি মধুন্দন-কল্পিত প্রমীল! চরিত্র কোমলে কঠোরে আরও বিচিত্র ৩ উঠিয়াছে। | শ্রু-আীথি-_অশ্রপূর্ণ আখি যাহার ( বহুত্রীহি মমাস ) |ভ্রমে ফুলবনে- পুণ্পোষ্ঠানের মনোরম আবেষ্টনীর মধ্যে বিরহ-সস্তাপ তুলিবার উদ্দেশ্তে।
গীতধড়া-_-গীত (হরিজ্রীবর্ণের) ধড়া -ধট (উত্তরীয়) যাহার, শ্রীরুষ্ণ।
গীতাম্বর-_গীতধড়া ও পীতাশ্বর প্রায় সমার্থক শব । এস্থলে, পীতবসনপরিহিত। ' মুরলী-বংশী।
বিবশ।-_ব্যাকুলা, অধীবা।।
কভু ব। উঠি ইত্যাদি__মেঘনাদের বিরহে কারা প্রমীলা কখনও বা উচ্চ ছাদে উঠিয়া মেঘনাদের বর্তমান অবস্থানস্থল দূরবর্তী লঙ্কানগরীর দিকে সাগ্রহ ব্যাকুল দৃষ্টি নিক্ষেপ করিতেছিল। :
পু'ছিয়।-_মুছিয়। প্র+উঞ্ ধাতু হইতে উৎপন্ন ।
মুরজ-_মৃদঙ্গ জাতীয় বাগ্যন্ধু।
মন্দির।এমগ্তীর-_ ক্ষুদ্র করতাল।
.কে না জানে ইত্যাদি__প্রমীল! পতিবিরহে বিষাদিনী বলিয়া তাহার আশ্রিতা সহচরীগণও বিষগ্রবঘনা। একটি 'উপমার সাহায্যে এই ভাবটি ব্যক্ত করা হইয়াছে । বণস্তের অবপানে গ্রীষ্মের প্রথর উত্তীপে যখন বনভূমি সন্তপ্ত হইয়া উঠে তখন সেই বনের মধ্যে প্রশ্ুটিত ফুলগুলিও শান হইয়] যাঁয়। এখানে মধু অর্থাৎ বসন্তের সহিত মেঘনাদের, বনস্থলীর সহিত প্রমীলার, গ্রীক্মতাপের সহিত বিরহ-সম্তাপের এবং ফুলকুলের সহিত প্রমীলার স্থন্দরী সখীবুন্দের তুলন1 করা হইয়াছে । এখানে উপযেয় প্রমীলা, সখীগণ, মেঘনাদ ও বিরহতাপের সহিত উপমান বনস্থলী, ফুলকুল, মধু ও গ্রীষ্মতাপের সাধারণ ধর্ম এক, অথচ উপমাস্থচক ঘথাঁদি শব্ধ প্রযুক্ত না হওয়ায় ; প্রতিবস্ত,পম। অলঙ্কার হইয়াছে।
উতরিল। নিশাদেবী প্রমোদ-উদ্ভানে_ লঙ্কার বহির্দেশস্থ গ্রমীলার উপবনে রাত্রি নামিয়া আসিল। বীরবাহুবধের পর যে রাত্রিতে দ্বিতীয় সর্গোক্ত ঘটন৷ সংঘটিত হইয়াছে, তৃতীয় সর্গোক্ত ঘটনাও সেই রাত্রিতেই ঘটিয়াছে। তুলনীয়,
“উতরিলা শখিপ্রিয়! ত্রিদশ আলয়ে।” (২য় সর্গ ১৪)
উতরিল! - অবতরণ করিল, উপস্থিত হইল। অব+ +/ত--অবতর €ওতরউত্তর «উর, উর। |
শিহুরি-বিরহহেতু রোমাঞ্চিত দেহে । রাত্রিকালেই বিরহজনিত ছুঃখ তীব্রতর হইয়। উঠে বলিয়। রাত্রির আগমনের সহিত গ্রীল শিহরিয়া উঠিল।
কলস্বরে-_অব্যক্ত মধুর স্বরে ।
বসন্ত-সৌরভ|--ব্ন্ত খতুর স্তায় মৌরভবিশিষ্টা। স্থগন্ধি প্রসাধন ।দি ব্যবহারহেতু হ্থবাসিত দেহবিশিষ্টা | |
তিমির যামিনী-_তিমিরময়ী অর্থাৎ অন্ধকারময়ী রাত্রি।
কালভুজলিনীরূপে- কালসর্পারূপে। রাত্রিকালেই বিরহি-বিরহিণীর সম্ভাপ অত্যন্ত বৃদ্ধি পায় বলিয়! বিরহিণী প্রমীলা! অন্ধকারময়ী আসন্ন রাত্রিকে কৃষ্ণবর্ণা কালসপ্পাঁর সহিত তুলনা করিয়াছে।
অরিন্দম শক্রদমনকারী । মেঘনাদ নিজের শক্তিতে সকল শক্রকেই দমন করিতে সমর্থ। আসন্না রজনী প্রমীলার বিরহ-মন্্রণা বৃদ্ধি করিতেছে বলিয়া উহ। প্রমীলার পরম শক্র; কিন্তু উহার হস্ত হইতে প্রমীলাকে রক্ষা! করিতে সমর্থ শক্তিমান মেঘনাদ এখন উপস্থিত নাই ।
এখনি আমিব বলি ইত্যাদি-_মেঘনাদ পূর্বে অনায়াসে দুইবার রামচন্দ্রকে যুদ্ধে পরাভূত করিয়াছিল। এবারেও অতি অল্প সময়ের মধ্যে রামচন্ত্রকে পরাস্ত ও বন্দী করিয়া ফিরিয়া আপিবে ভাবিয়! “ত্বরাঁয় আমি আগিব ফিরিয়া” বলিয়া সন্ধ্যার পূর্বে প্রমীলার নিকট বিদায় লইয়াছিল। কিন্তু রাবণের আদেশে সে রাত্রিকালে যুদ্ধযাত্রায় বিরত থাকে । প্রমীল! এই সংবাদ জানিত ন| বলিয় মেঘনাদের প্রত্যাগমনে বিলম্বহেতু তাহার এই উত্কা।
ব্য/জ-_বিলম্ব।
কুহুরে-_কুহুর্বনি করে।
বসন্তপখাকে।কিল। সংস্কৃত ব্যাকরণান্থ্যায়ী 'বসম্তসথ' পদটিই শ্তদ্ধ।
সীমন্তিনি__(স্বোধনে) সাধবাসথচক সিন্দুরাঞ্কিত-সীমস্তবিশিষ্টা নারী, আযুদ্মতী। মেঘনাদ সম্বন্ধে প্রমীলার উৎকঠ! ভবিষ্যৎ ছুমিমিত্তস্থচক | মখী বাসস্তী স্থরাস্থর কর্তৃক অপরাজেয় মেঘনাদের বিপদাশঙ্কা যে সম্পূর্ণ অমূলক তাহাই 'দীমন্তিনী” সম্বোধন ভ্বারা ব্ক্ত করিতে চাহিয়াছে।
কে তারে অঁ।টিবে বিগ্রহে- যুদ্ধে কে তাহাকে পরাস্ত করিতে সমর্থ হইবে?
চিকণিয়া_চিকণ অর্থাৎ স্থন্দর করিয়া।
বিজয়ী রথ-চুড়ায় _যুদ্ধজয্ী বীরের রথের শীর্ষদেশে ।
যথায় সরসী সহ ইত্যাদি__-উদ্চানে যে স্থলে সরোবরের জলে জ্যোৎস্না ঝলমল করিতেছে ।
নথি (সী'ি€সীমস্তিকা)__-কপালের উপরিস্থ কেশরাশির মধ্যরেখায় মংলগ্ন অলঙ্কার বিশেষ ) 6185.
জোনাক (জোনাকি €জোণহা+কি এজ্যোৎসা! )_ খগ্যোৎ। সিদ্ধ আলোক বিকিরণ করে বলিয়! এই নাম।
পঁতি-পংক্তি__অ্রেণী।
শোভিছে আনন্দময়ী ইত্যাদি--বনের মধ্যে বৃক্ষাদির স্ত-উচ্চ শাখা প্রশাখায় সংলগ্ন উজ্জল জোনাকি পোঁকা'র সারি বনভূমির ললাটস্থ মণিমীণিকাখচিত উজ্জল ও আনন্দজনক সী'থিরূপে শোভা পাইতেছে। িনরাজী-ভালে” শব্দটি সমস্ত পদ হুওয়ায় “আনন্দময়ী' শব্দটিকে “বনরাঁজী' শবের পরিবর্তে পাতি” শবের বিশেষণরূপে গ্রহণ করাই সঙ্গত। ইহাতে দৃরান্বয় দেষ আসিয়া পড়ে বটে, কিন্ত মধুসছদনের রচনায় এইরূপ প্রয়োগের অভাব নাই।
কত যে ফুলের দলে ইত্যাদি পুষ্পচয়ন করিতে যাইয়। পতির বিরহে প্রমীলা অজত্র অশ্রবর্ণ করিতে থাকায় তাহার অশ্রবিন্দু্চলি স্বচ্ছ মুক্তাফলের ন্যায় অসংখ্যপুষ্পদলের উপর শোভিত হইতেছিল। অশ্রুর সহিত মুক্তার তুলনা সর্বদেশীয় কবিপ্রসিদ্ধি। তুলনীয়,
মুকুতা-মণ্ডিত-বুকে নয়ন বধিল উজ্জলতর মুক্তা ! ( ৫ম সর্গ, ৫৬1৫৭) এবং মুক্তিল-_মূক্তাদ্বারা শোভিত করিল ।
সূর্বমূখী দুঃঘী- হুর্ষমূখী ুর্যোদয়ে প্রন্ষুটিত হয় এবং সর্বদা সর্ষের অভিমুখীন থাকে। স্থর্ষ অস্ত গেলে ফুলটি শান হইয়] যায়।
মিহির-বিরহে-_হুর্যের অভাবে ।
ভানুপ্রিয়ে-( সন্বোধনে ) হে সুর্ধ-প্রেয়মি সুর্ঘমুখী ফুল !
যে রবির ছবি পানে চাহি বাঁচি আমি- প্রদীপ্ত সুর্ধের ন্যায় তেজত্বী যে মেঘনাদের লাবণ্যময় কান্তি নিরীক্ষণ করিয়া! আমি প্রাণধারণ করি ।
অস্তীচলে আচ্ছন্ন__অন্তগত সুর্যের ন্যায় দৃষ্টিবহিভূর্তি।
আর কি পাইব আমি--এই কথাটির দ্বারা প্রমীলার হাদয়ে আলন্ন বিপদ যে ছায়! ফেলসিয়াছিল তাহা। স্পষ্টভাবে ব্যক্ত হইয়াছে ।
উষার প্রসাদে-উধাই যেন দূতীরূপে সূর্য ও সৃর্ধমুখীর পুনগরিলনের ব্যবস্থা ফরিবে।
প্রাণেশখখরে- হর্যমুখীর হৃদয়েশ্বর সৃর্বকে।অবচয়ি- চয়ন করিয়া, তুলিয়!।
ফুল-চয়ে_ পুষ্পসমূহকে ; চয় সমৃহার্থক শব্দ ।
্বজনি-__( সন্বোধনে ) হে সথি। স্বজন-্বান্ধব স্ত্রীলিঙ্গে স্বজনী।
ম্বগরাজে- সিংহকে অর্থাৎ সিংহপরাক্রম মেঘনাদকে। উপমেয়ের উল্লেখ না করিয়! উপমান মুগরাজকেই উপমেয়রূপে উল্লেখহেতু অতিশয়ে।ক্তি অলঙ্কার ।
চমূ-_সৈম্ত। প্রত অর্থ হইতেছে একটি বিশেম আয়তনের সেনাদল।