সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয় কি কাজ করেছি আর কি কথা ভেবেছি। সেই সব একদিন হয়তো বা কোনো এক সমুদ্রের পারে আজকের পরিচিত কোনো নীল আভার পাহাড়ে অন্ধকারে হাড়কঙ্করের মতো শুয়ে' নিজের আয়ুর দিন তবুও গণনা ক'রে যায় চিরদিন; নীলিমার থেকে ঢের দূরে স'রে গিয়ে, সূর্যের আলোর থেকে অন্তর্হিত হ'য়ে: পেপিরাসে- সেদিন প্রিন্টিং প্রেসে কিছু নেই আর; প্রাচীন চীনের শেষে নবতম শতাব্দীর চীন সেদিন হারিয়ে গেছে।
আজকে মানুষ আমি তবুও তো- সৃষ্টির হৃদয়ে
হৈমন্তিক স্পন্দনের পথের ফসল; আর এই মানবের আগামী কঙ্কাল: আর নব- নব-নব মানবের তরে কেবলি অপেক্ষাতুর হ'য়ে পথ চিনে নেওয়া- চিনে নিতে চাওয়া;
আর সে-চলার পথে বাধা দিয়ে অন্নের সমাপ্তিহীন ক্ষুধা; (কেন এই ক্ষুধা কেনই সমাপ্তিহীন!) যারা সব পেয়ে গেছে তাদের উচ্ছিষ্ট, যারা কিছু পায় নাই তাদের জঞ্জাল; আমি এই সব।
সময়ের সমুদ্রের পারে কালকের ভোরে আর আজকের এই অন্ধকারে সাগরের বড়ো শাদা পাখির মতন দুইটি ছড়ানো ডানা বুক নিয়ে কেউ কোথাও উচ্ছল প্রাণশিখা জালায়ে সাহস সাধ স্বপ্ন আছে- ভাবে। ভেবে নিক- যৌবনের জীবন্ত প্রতীক: তার জয়:
প্রৌঢ়তার দিকে তবু পৃথিবীর জ্ঞানের বয়স
অগ্রসর হ'য়ে কোন্ আলোকের পাখিকে দেখেছে? জয়, তার জয়, যুগে-যুগে তার জয়! ডোডো পাখি নয়।
মানুষেরা বার-বার পৃথিবীর আয়ুতে জন্মেছে; নব-নব ইতিহাস-সৈকতে ভিড়েছে; তবুও কোথাও সেই অনির্বচনীয় স্বপনের সফলতা- নবীনতা- শুভ্র মানবিকতার ভোর?
নচিকেতা জরাথুষ্ট্র লাওৎ-সে এঙ্গেলো রুশো লেনিনের মনের পৃথিবী হানা দিয়ে আমাদের স্মরণীয় শতক এনেছে?
অন্ধকারে ইতিহাসপুরুষের সপ্রতিভ আঘাতের মতো মনে হয় যতই শাস্তিতে স্থির হ'য়ে যেতে চাই;
কোথাও আঘাত ছাড়া- তবুও আঘাত ছাড়া অগ্রসর সূর্যালোক নেই। হে কালপুরুষ তারা, অনন্ত দ্বন্দ্বের কোলে উঠে যেতে হবে
কেবলি গতির গুণগান গেয়ে- সৈকত ছেড়েছি এই স্বচ্ছন্দ উৎসবে; নতুন তরঙ্গে বৌদ্রে বিপ্লবে মিলনসূর্যে মানবিক রণ ক্রমেই নিস্তেজ হয়, ক্রমেই গভীর হয় মানবিক জাতীয় মিলন? নব-নব মৃত্যুশব্দ রক্তশব্দ ভীতিশব্দ জয় ক'রে মানুষের চেতনার দিন অমেয় চিন্তায় খ্যাত হ'য়ে তবু ইতিহাসভুবনে নবীন হবে না কি মানবকে চিনে- তবু প্রতিটি ব্যক্তির যাট বসন্তের তরে! সেই সব সুনিবিড় উদ্বোধনে- 'আছে আছে আছে' এই বোধির ভিতরে চলেছে নক্ষত্র, রাত্রি, সিন্ধু, রীতি, মানুষের বিষয় হৃদয়; জয় অস্তসূর্য, জয়, অলথ অরুণোদয়, জয়।