সেদিন এ-ধরণীর
সবুজ দ্বীপের ছায়া- উতরোল তরঙ্গের ভিড় মোর চোখে জেগে-জেগে ধীরে-ধীরে হ'লো অপহত কুয়াশায় ঝ'রে পড়া আতসের মতো। দিকে-দিকে ডুবে গেল কোলাহল, সহসা উজানঙ্গলে ভাটা গেল ভাসি, অতিদূর আকাশের মুখখানা আসি বুকে মোর তুলে গেল যেন হাহাকার। সেইদিন মোর অভিসার
মৃত্তিকার শূন্য পেয়ালার ব্যথা একাকারে ভেঙে বকের পাখার মতো শাদা লঘু মেঘে ভেসেছিলো আতুর উদাসী; বনের ছায়ার নিচে ভাসে কার ভিজে চোগ কাঁদে কার বাঁবোয়ার বাঁশি সেদিন শুনিনি তাহা; ক্ষুধাতুর দুটি আঁপি তুলে অতিদূর তারকার কামনায় আপি মোর দিয়েছিষ্ট খুলে।
আমার এ শিরা-উপশিরা
চকিতে ছিঁড়িয়া গেল ধরণীর নাভীর বন্ধন,
শুনেছিন্ন কান পেতে জননীর স্থবির ক্রন্দন- মোর তরে পিছু ডাক মাটি-মা-তোমার;
ডেকেছিলে। ভিজে ঘাস- হেমন্তের হিম মাস- জোনাকির ঝাড
কঙ্কালের রাশি,
, আমারে ডাকিযাছিলো আলেয়ার লাল মাঠ- শ্মশানের খেয়াঘাট আসি,
দাউ-দাউ চিতা,
কতো পূর্ব জাতকের পিতামহ পিতা,
সর্বনাশ ব্যসন বাসন!,
কতো মৃত গোক্ষুবার ফণা,
কতো তিথি- কতো যে অতিথি-
কতো শত যোনিচক্রস্বতি
করেছিলো উতলা আমারে।
আধো আলো- আধেক আঁধারে
মোর সাথে মোর পিছে এলো তা'রা ছুটে,
মাটির বাঁটের চুমো শিহরি উঠিল মোর ঠোঁটে, রোমপুটে;
ধুধু মাঠ- ধানখেত- কাশফুল- বুনো হাঁস- বালুকার চর
বকের ছানার মতো যেন মোর বুকের উপর
এলোমেলো ডানা মেলে মোর সাথে চলিল নাচিয়া; মাঝপথে থেমে গেল তা'রা সব;
শকুনের মতো শূন্তে পাখা বিথারিয়া দূরে- দূরে- আরো দূরে- আরো দূরে চলিলাম উড়ে, নিঃসহায় মানুষের শিশু একা- অনন্তের শুরু অন্তঃপুরে অসীমের আঁচলের তলে
স্ফীত সমুদ্রের মতো আনন্দের আর্ত কোলাহলে উঠিলাম উথলিয়া দুরন্ত সৈকতে-
দূর ছায়াপথে।
পৃথিবীর প্রেতচোগ বুঝি সহসা উঠিল ভাসি তারকাদর্পণে মোর অপহৃত আননের প্রতিবিম্ব খুঁ'জি;
ভ্রূণভ্রষ্ট সন্তানের তরে
মাটি-মা ছুটিয়া এলো বুকফাটা মিনতির ভরে।
সঙ্গে নিয়ে বোবা শিশু- বৃদ্ধ মৃত পিতা,
স্বতিকা-আলয় আর শ্মশানের চিতা,
মোর পাশে দাঁড়ালো সে গর্ভিণীর ক্ষোভে; মোর ছটি শিশু আঁথি-তারকার লোভে কাঁদিয়া উঠিল তার পীনস্তন- জননীর প্রাণ; জরায়ুর ডিম্বে তার জন্মিয়াছে যে ঈপ্সিত বাঞ্ছিত সন্তান তার তরে কালে-কালে পেতেছে সে শৈবালবিছানা শালতমালের ছায়া, এনেছে সে নব-নব ঋতুরাগ- পউষনিশির শেষে ফাগুনের ফাগুয়ার মাযা; তার তরে বৈতরণীতীরে সে যে ঢালিয়াছে গঙ্গার গাগরী, মৃত্যুব অঙ্গার মথি স্তন তার ভিজে রসে উঠিয়াছে ভরি,
উঠিয়াছে দুর্বাসানে শোভি,
মানবের তরে সে যে এনেছে মানবী;
মশলাদরাজ এই মাটিটার ঝাঁঝ যে রে-
কেন তবে দু-দণ্ডের অশ্রু অমানিশা দূর আকাশের তরে বুকে তোর তুলে যায় নেশাপোর মক্ষিকার তৃষা! নষন মুদিশু ধীরে- শেষ আলো নিভে গেল পলাতকা নীলিমার পারে, সম্ভ-প্রস্থতির মতো অন্ধকার বসুন্ধর। আবরি আমারে।