আলো-অন্ধকারে যাই- মাথার ভিতরে স্বপ্ন নয়, কোন্ এক বোধ কাজ করে; স্বপ্ন নয়- শাস্তি নয়- ভালোবাসা নয়, হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়; আমি তারে পারি না এড়াতে, সে আমার হাত রাখে হাতে, সব কাজ তুচ্ছ হয়- পণ্ড মনে হয়, সব চিন্তা- প্রার্থনার সকল সময শূন্য মনে হয়, শূন্য মনে হয়।
সহজ লোকের মতো কে চলিতে পারে। কে থামিতে পারে এই আলোয় আঁধারে সহজ লোকের মতো; তাদের মতন ভাষা কথা কে বলিতে পারে আর; কোনে। নিশ্চয়তা কে জানিতে পাবে আর? শরীরের স্বাদ কে বুঝিতে চায় আর? প্রাণের আলাদ সকল লোকের মতো কে পাবে আবার। সকল লোকের মতো বীজ বুনে আর স্বাদ কই, ফসলের আকাঙ্ক্ষায় থেকে, শরীরে মাটির গন্ধ মেখে, শরীরে জলের গন্ধ মেখে, উৎসাহে আলোর দিকে চেয়ে চাষার মতন প্রাণ পেয়ে কে আর বহিবে জেগে পৃথিবীর 'পরে? স্বপ্ন নয়- শাস্তি নয়- কোন্ এক বোধ কাজ করে মাধার ভিতরে।
পথে চ'লে পারে- পারাপারে উপেক্ষ। করিতে চাই তারে; মডার খুলির মতো ধ'রে আছাড় মাবিতে চাই, জীবন্ত মাথার মতো ঘোরে তবু সে মাথার চারিপাশে, তবু সে চোখের চাবিপাশে, তবু সে বুকের চারিপাশে; আমি চলি, সাথে-সাথে সেও চ'লে আসে।
আমি থামি- সেও থেমে যায়;
সকল লোকের মাঝে ব'সে আমার নিজের মুদ্রাদোষে আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা? আমার পথেই শুধু বাধা?
জন্মিযাছে যারা এই পৃথিবীতে সন্তানের মতো হ'যে- সন্তানের জন্ম দিতে-দিতে যাহাদেব কেটে গেছে অনেক সময়, কিংবা আজ সন্তানের জন্ম দিতে হয যাহাদের; কিংবা যারা পৃথিবীর বীজখেতে আসিতেছে চ'লে জন্ম দেবে- জন্ম দেবে ব'লে; তাদের হৃদয় আর মাথার মতন আমার হৃদয় না কি? তাহাদের মন আমার মনের মতো না কি? -তবু কেন এমন একাকী?
তবু আমি এমন একাকী।
হাতে তুলে দেখিনি কি চাষার লাঙল?
বাল্টিতে টানিনি কি জল?
কাস্তে হাতে কতোবার যাইনি কি মাঠে?
মেছোদের মতো আমি কতো নদী ঘাটে ঘুরিয়াছি;
পুকুরের পানা খালা- আঁশটে গায়ের ঘ্রাণ গায়ে গিয়েছে জড়ায়ে;
-এই সব স্বাদ;
-এ-সব পেয়েছি আমি, বাতাসের মতন অবাধ বযেছে জীবন,
নক্ষত্রের তলে শুষে ঘুমাযেছে মন
এক দিন;
এই সব সাধ
জানিয়াছি একদিন- অবাধ- অগাধ;
চ'লে গেছি ইহাদের ছেডে;
ভালোবেসে দেখিয়াছি মেয়েমানুষেরে, অবহেলা ক'রে আমি দেখিযাছি মেয়েমানুষেরে, ঘৃণা ক'রে দেখিয়াছি মেয়েমানুষেরে;
আমারে সে ভালোবাসিয়াছে, আসিয়াছে কাছে, উপেক্ষা সে করেছে আমারে, ঘৃণা ক'রে চ'লে গেছে- যখন ডেকেছি বারে-বারে
ভালোবেসে তারে;
তবুও সাধনা ছিলো একদিন- এই ভালোবাসা;
আমি তার উপেক্ষার ভাষা আমি তার স্বণার আক্রোশ
অবহেলা ক'রে গেছি; যে-নক্ষত্র- নক্ষত্রের দোষ আমার প্রেমের পথে বার-বার দিয়ে গেছে বাধা আমি তা' ভুলিয়া গেছি;
তবু এই ভালোবাসা- ধুলো আর কাদা।
মাথার ভিতরে স্বপ্ন নয়- প্রেম নয়- কোনো এক বোধ কাজ করে। আমি সব দেবতারে ছেড়ে আমার প্রাণের কাছে চ'লে আসি, বলি আমি এই হৃদয়েরে: সে কেন জলের মতো ঘুরে-ঘুরে একা কথা কয়! অবসাদ নাই তার? নাই তার শাস্তির সময়? কোনোদিন ঘুমাবে না? ধীরে শুয়ে থাকিবার স্বাদ পাবে না কি? পাবে না আহলাদ মানুষের মুখ দেখে কোনোদিন! মানুষীর মুখ দেখে কোনোদিন! শিশুদের মুখ দেখে কোনোদিন!
এই বোধ- শুধু এই স্বাদ
পায় সে কি অগাধ- অগাধ! পৃথিবীর পথ ছেড়ে আকাশের নক্ষত্রের পথ চায় না সে? করেছে শপথ দেখিবে সে মানুষের মুখ? দেখিবে সে মানুষীর মুখ? দেখিবে সে শিশুদের মুখ? চোখে কালো শিরার অসুখ, কানে যেই বধিরতা আছে, যেই কুঁজ- গলগণ্ড মাংসে ফলিয়াছে নষ্ট শসা- পচা চাকুমড়ার ছাঁচে, যে-সব হৃদয়ে ফলিয়াছে
-সেই সব।