আমাকে
তুমি দেখিয়েছিলে একদিন:
মস্ত বড়ো ময়দান- দেবদারু পামের নিবিড় মাথা- মাইলের পর মাইল;
দুপুরবেলার জনবিরল গভীর বাতাস
দূর শূন্তে চিলের পাটকিলে ডানার ভিতর অস্পষ্ট হ'য়ে হারিয়ে যায়;
জোযারের মতো ফিরে আসে আবার;
জানালায়-জানালায় অনেকক্ষণ ধ'রে কথা বলে:
পৃথিবীকে মায়াবীর নদীর পারের দেশ ব'লে মনে হয়।
তারপর
দূরে
অনেক দূরে খররৌদ্রে পা ছড়িয়ে বর্ষীয়সী রূপসীর মতো ধান ভানে- গান গায়- গান গায় এই দুপুরের বাতাস।
এক-একটা দুপুরে এক-একটা পরিপূর্ণ জীবন অতিবাহিত হ'য়ে যায় যেন।
বিকেলে নরম মুহূর্ত;
নদীর জলের ভিতর শম্বর, নীলগাই, হরিণের ছায়ার আসা-যাওয়া;
একটা ধবল চিতল-হরিণীর ছায়া আতার ধূসর ক্ষীরে-গড়া মূর্তির মতো নদীর জলে সমস্ত বিকেলবেলা ধ'রে স্থির।
মাঝে-মাঝে অনেক দূর থেকে শ্মশানের চন্দনকাঠের চিতার গন্ধ,
আগুনের- ঘিয়ের ঘ্রাণ;
বিকেলে
অসম্ভব বিষণ্ণতা।
ঝাউ হরিতকী শাল, নিভন্ত সূর্যে পিয়াশাল পিয়াল আমলকী দেবদারু বাতাসের বুকে স্পৃহা, উৎসাহ, জীবনের ফেনা;
শাদা শাদাছিট কালো পায়রার ওড়াউড়ি জ্যোৎস্নায়- ছায়ায়, রাত্রি;
নক্ষত্র ও নক্ষত্রের অতীত নিস্তব্ধতা।
মরণের পরপারে বড়ো অন্ধকার এই সব আলো প্রেম ও নির্জনতার মতো।