ভোর;
আকাশের রং ঘাসফড়িঙের দেহের মতো কোমল নীল: চারিদিকের পেয়ারা ও নোনার গাছ টিয়ার পালকের মতো সবুজ। একটি তারা এখনও আকাশে রয়েছে: পাড়াগাঁর বাসরঘরে সব চেয়ে গোধূলি-মদির মেয়েটির মতো; কিংবা মিশরের মানুষী তার বুকের থেকে যে-মুক্তা আমার নীল মদের গেলাসে রেখেছিলো
হাজার-হাজার বছর আগে এক রাতে- তেন্নি-
তেমি একটি তারা আকাশে জলছে এখনও।
হিমের রাতে শরীর 'উম্' রাখবার জন্য দেশোয়ালীরা সারারাত মাঠে আগুন জেলেছে一 মোরগ ফুলের মতো লাল আগুন; শুকনো অশ্বখপাত। দুমড়ে এখনও আগুন জ্বলছে তাদের; সূর্যের আলোয় তার রং কুঙ্কুমের মতো নেই আর; হ'য়ে গেছে রোগা শালিকের হৃদয়ের বিবর্ণ ইচ্ছার মতো। সকালের আলোয় টলমল শিশিরে চারিদিকের বন ও আকাশ ময়ূরের সবুজ নীল ডানার মতো ঝিলমিল করছে।
ভোর;
'সারারাত চিতাবাঘিনীর হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে-বাঁচিয়ে নক্ষত্রহীন, মেহগনির মতো অন্ধকারে হুন্দরীর বন থেকে অর্জনের বনে ঘুরে-ঘুরে সুন্দর বাদামী হরিণ এই ভোরের জন্ম অপেক্ষা করছিলো।
ভারতসমূদ্রের তীরে কিংবা ভূমধ্যসাগরের কিনারে অথবা টায়ার সিন্ধুর পারে আজ নেই, কোনো এক নগরী ছিলো। একদিন, কোনো এক প্রাসাদ ছিলো; মূল্যবান আসবাবে ভরা এক প্রাসাদ: পারম্ভ গালিচা, কাশ্মীরী শাল, বেরিন তরঙ্গের নিটোল মুক্তা প্রবাল, আমার বিলুপ্ত হৃদয়, আমার মৃত চোখ, আমার বিলীন স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষা, আর তুমি নারী- এই সব ছিলো সেই জগতে একদিন।
অনেক কমলা রঙের রোদ ছিলো, অনেক কাকাতুয়া পায়রা ছিলো, মেহগনির ছায়াঘন পল্লব ছিলো অনেক; অনেক কমলা রঙের রোদ ছিলো, অনেক কমলা রঙের রোদ। আর তুমি ছিলে; তোমার মুখের রূপ কতো শত শতাব্দী আমি দেখি না, খুঁজিনা।
ফাল্গুনের অন্ধকার নিয়ে আসে সেই সমুদ্রপারের কাহিনী, অপরূপ খিলান ও গম্বুজের বেদনাময় রেখা, লুপ্ত নাসপাতির গন্ধ, অজস্র হরিণ ও সিংহের ছালের ধূসর পাণ্ডুলিপি, রামধন্ত্র রঙের কাচের জানালা, ময়ূরের পেখমের মতো রঙিন পর্দায়-পর্দায় কক্ষ ও কক্ষান্তর থেকে আরো দূর কক্ষ ও কক্ষান্তরের ক্ষণিক আভাস- আয়ুহীন স্তব্ধতা ও বিস্ময়।
পর্দায়, গালিচায় রক্তাভ রৌদ্রের বিচ্ছুরিত স্বেদ, রক্তিম গেলাসে তরমুজ মদ! তোমার নগ্ন নির্জন হাত;
তোমার নগ্ন নির্জন হাত।