গভীর হাওয়ার রাত ছিলো কাল- অসংখ্য নক্ষত্রের রাত;
সারা রাত বিস্তীর্ণ হাওয়া আমার মশারিতে খেলেছে। মশারিটা ফুলে উঠেছে কখনো মৌহুমী সমুদ্রের পেটের মতো, কখনো বিছানা ছিড়ে
নক্ষত্রের দিকে উড়ে যেতে চেয়েছে;
এক-একবার মনে হচ্ছিলো আমার- আধো ঘুমের ভিতর হয়তো-
মাথার উপরে মশারি নেই আমার, স্বাতী তারার কোল ঘেঁষে নীল হাওয়ার সমুদ্রে শাদা বকের মতো উড়ছে সে! কাল এমন চমৎকার রাত ছিলো।
সমস্ত মৃত নক্ষত্রেরা কাল জেগে উঠেছিলো- আকাশে এক তিল
ফাঁক ছিলো না।
পৃথিবীর সমস্ত ধূসর প্রিয় মৃতদের মুখও সেই নক্ষত্রের ভিতর দেখেছি আমি; অন্ধকার রাতে অশ্বথের চূড়ায় প্রেমিক চিলপুরুষের শিশির-ভেজা চোখের মতো
ঝলমল করছিলো সমস্ত নক্ষত্রেরা।
জ্যোৎস্নারাতে বেবিলনের রানীর ঘাড়ের ওপর চিতার উজ্জ্বল চামড়ার
শালের মতো জলজল করছিলো বিশাল আকাশ!
কাল এমন আশ্চর্য রাত ছিলো।
যে-নক্ষত্রেরা আকাশের বুকে হাজার-হাজার বছর আগে ম'রে গিয়েছে
তারাও কাল জানালার ভিতর দিয়ে অসংখ্য মৃত আকাশ সঙ্গে ক'রে এনেছে; যে-রূপসীদের আমি এশিরিয়ায়, মিশবে, বিদিশায় ম'রে যেতে দেখেছি।
কাল তারা অতিদূর আকাশের সীমানার কুয়াশায়-কুয়াশায দীর্ঘ বর্ণা হাতে ক'রে
কাতারে-কাতারে দাড়িয়ে গেছে যেন-
মৃত্যুকে দলিত করবার জন্য? জীবনের গভীর জয় প্রকাশ করবার জন্য? প্রেমের ভয়াবহ গম্ভীর স্তম্ভ তুলবার জন্য? আড়ষ্ট-অভিভূত হ'য়ে গেছি আমি, কাল রাতের প্রবল নীল অত্যাচার আমাকে ছিড়ে ফেলেছে যেন; আকাশের বিরামহীন বিস্তীর্ণ ডানার ভিতর পৃথিবী কীটের মতো মুছে গিয়েছে কাল। আর উত্তঙ্গ বাতাস এসেছে আকাশের বুক থেকে নেমে আমার জানালার ভিতর দিযে সাঁই সাঁই ক'রে, সিংহের হুংকারে উৎক্ষিপ্ত হরিৎ প্রান্তরের অজস্র জেব্রার মতো।
হৃদয় ভ'রে গিযেছে আমার বিস্তীর্ণ ফেন্টের সবুজ ঘাসের গন্ধে, দিগন্ত-প্লাবিত বলীযান রৌদ্রের আঘ্রাণে, মিলনোন্মত্ত বাঘিনীর গর্জনের মতো অন্ধকারের চঞ্চল বিরাট সজীব রোমশ উচ্ছ্বাসে,
জীবনের দুর্দান্ত নীল মত্ততায়।
আমার হৃদয় পৃথিবী ছিঁড়ে উড়ে গেল,
নীল হাওয়ার সমুদ্রে স্ফীত মাতাল বেলুনের মতো গেল উডে,
একটা দূর নক্ষত্রের মাস্তলকে তারায-তারায উড়িয়ে নিয়ে চললো
একটা দুরস্ত শকুনের মতো।