এখানে বনের কাছে ক্যাম্প আমি ফেলিয়াছি; সারারাত দখিনা বাতাসে আকাশের চাঁদের আলোয় এক ঘাইহরিণীর ডাক শুনি- কাহারে সে ডাকে!
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার; বনের ভিতরে আজ শিকারীবা আসিযাছে, আমিও তাদের ঘ্রাণ পাই যেন, এইখানে বিছানায় শুষে-গুয়ে ঘুম আর আসেনাকো বসন্তের রাতে।
চারিপাশে বনের বিস্ময়, চৈত্রের বাতাস, জ্যোৎস্নার শরীরের স্বাদ যেন; ঘাইমৃগী সারারাত ডাকে; কোথাও অনেক হনে- যেইখানে জ্যোৎস্না আর নাই পুরুষহরিণ সব শুনিতেছে শব্দ তার; তাহাবা পেতেছে টের, আসিতেছে তার দিকে। আজ এই বিস্ময়ের রাতে তাহাদের প্রেমের সময আসিয়াছে; তাহাদের হৃদয়ের বোন বনের আড়াল থেকে তাহাদের ডাকিতেছে জ্যোৎস্নায়-
পিপাসার সান্ত্বনায়- আঘ্রাণে- আস্বাদে;
কোথাও বাঘের পাড়। বনে আজ নাই আর যেন; মৃগদের বুকে আজ কোনো স্পষ্ট ভয় নাই,
সন্দেহের আবছায়া নাই কিছু;
কেবল পিপাসা আছে,
রোমহর্ষ আছে। মুগীর মুখের রূপে হয়তো চিতারও বুকে জেগেছে বিশ্বষ;
লালসা-আকাঙ্ক্ষা-সাধ-প্রেম-স্বপ্ন স্ফুট হ'য়ে উঠিতেছে সব দিকে আজ এই বসন্তের রাতে; এইখানে আমার নকটার্ন।
একে-একে হরিণেরা আসিতেছে গভীর বনের পথ ছেড়ে,
সকল জলের শব্দ পিছে ফেলে অন্ত এক আশ্বাসের খোঁজে
দাঁতের- নখের কথা ভুলে গিয়ে তাদের বোনের কাছে ওই সুন্দরী গাছের নিচে- জ্যোৎস্নায়,
মানুষ যেমন ক'রে ঘ্রাণ পেয়ে আসে তার নোনা মেয়েমানুষের কাছে হরিণেরা আসিতেছে।
-তাদের পেতেছি আমি টের
অনেক পায়ের শব্দ শোনা যায়, ঘাইমৃগী ডাকিতেছে জ্যোৎস্নায়। শুয়ে-শুয়ে থেকে
ঘুমাতে পারি না আর;
বন্দুকের শব্দ শুনি; তারপর বন্দুকের শব্দ শুনি।
চাঁদের আলোয় ঘাইহরিণী আবার ডাকে,
এইখানে প'ডে থেকে একা-একা
আমার হৃদয়ে এক অবসাদ জ'মে ওঠে
বন্দুকের শব্দ শুনে-শুনে
হরিণীর ডাক শুনে-শুনে।
কাল মৃগী আসিবে ফিরিয়া;
সকালে- আলোয় তাকে দেখা যাবে- পাশে তার মৃত সব প্রেমিকেরা প'ড়ে আছে। মানুষেরা শিখায়ে দিয়েছে তাকে এই সব।
আমার খাবার ডিশে হরিণের মাংসের ঘ্রাণ আমি পাবো, ...মাংস-খাওয়া হ'লো তবু শেষ?
...কেন শেষ হবে?
কেন এই মুগদের কথা ভেবে ব্যথা পেতে হবে তাদের মতন নই আমিও কি?
কোনো এক বসন্তের রাতে জীবনের কোনো এক বিশ্বষের রাতে
আমাকেও ডাকেনি কি কেউ এসে জ্যোৎস্নায়- দখিনা বাতাসে ওই ঘাইহরিণীর মতো?
আমার হৃদয়- এক পুরুষহরিণ-
পৃথিবীব সব হিংসা ভুলে গিযে
চিতার চোখের ভয়- চমকের কথা সব পিছে ফেলে রেখে
তোমাকে কি চায় নাই ধবা দিতে? আমার বুকের প্রেম ঐ মৃত মুগদের মতো
যখন ধূলায় রক্তে মিশে গেছে এই হবিণীব মতো তুমি বেঁচেছিলে নাকি জীবনের বিশ্বষের রাতে
কোনো এক বসন্তেব রাতে?
তুমিও কাহার কাছে শিখেছিলে।
মৃত পশুদের মতো আমাদের মাংস ল'য়ে আমরাও প'ড়ে থাকি
বিয়োগের- বিয়োগের- মরণের মুখে এসে পডে সব
ঐ মৃত মৃগদের মতো।
প্রেমের সাহস সাধ স্বপ্ন ল'য়ে বেঁচে থেকে ব্যথা পাই, ঘৃণা-মৃত্যু পাই;
পাই না কি? দোনলার শব্দ শুনি। ঘাইমৃগী ডেকে যায়, আমার হৃদয়ে ঘুম আসেনাকো একা-একা শুয়ে থেকে; বন্দুকের শব্দ তবু চুপে চুপে ভুলে যেতে হয়।
ক্যাম্পের বিছানায় রাত তার অন্ত এক কথা বলে; যাহাদের দোনলার মুখে আজ হরিণেরা ম'রে যায হরিণের মাংস হাড় স্বাদ তৃপ্তি নিয়ে এলো যাহাদের ডিশে তাহারাও তোমার মতন;
ক্যাম্পের বিছানায় শুয়ে থেকে শুকাতেছে তাদেরো হৃদয কথা ভেবে- কথা ভেবে-ভেবে।
এই ব্যথা- এই প্রেম সব দিকে র'য়ে গেছে-
কোথাও ফড়িঙে-কীটে- মানুষের বুকের ভিতরে, আমাদের সবের জীবনে।
বসন্তের জ্যোৎস্নায় ওই মৃত মৃগদের মতো
আমরা সবাই।