shabd-logo

শিল্পী

25 November 2023

0 Viewed 0

অবনীশ ছবিটার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল। অয়েল পেন্টিং। একজন মাঝবয়সি সুপুরুষ ভদ্রলোকের পোর্ট্রেট। অবনীশের স্টুডিওর এক কোনায় আরও আট-দশটা ছবির পিছনে দাঁড় করানো ছিল। অবনীশের আঁকা প্রথম অয়েল পোর্ট্রেট। গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজ থেকে সে দু' বছর হল পাশ করে বেরিয়েছে। ছাত্র অবস্থায় অবিশ্যি সে আরও পোর্ট্রেট করেছে। এবং তাতে বেশ নামও হয়েছিল। অবনীশের ইচ্ছা সে ছবি আঁকাকেই পেশা হিসেবে নেবে। কিন্তু কীভাবে শুরু করবে সেটাই হচ্ছে প্রশ্ন।

অবনীশের বাড়িতে তার বাবা-মা আছেন। একটি বোন ছিল, তার সম্প্রতি বিয়ে হয়েছে। বাবা হিমাংশু বোস ব্যারিস্টার এবং ভাল প্র্যাকটিস। ছেলেকে তিনি চিরকালই উৎসাহ দিয়ে এসেছেন। তিনি একদিন অবনীশকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, 'তুই তো আর্টিস্ট হবি?'

'তাই তো ইচ্ছে আছে,' বলল অবনীশ।

'তোর আঁকার সরঞ্জাম সব রয়েছে?'

'কিছু ক্যানভাস, একটা ইজেল, আর কিছু রঙ কিনতে পারলে ভাল হত।'

'বেশ তো-কিনবি'খন। কত লাগবে বলিস। আমি টাকা দিয়ে দেব।'

সেসব সরঞ্জাম কেনা হয়ে গেছে, কিন্তু অবনীশ এখনও ছবি আঁকতে শুরু করেনি। ইজেলে সাদা ক্যানভাস খাটানো রয়েছে, তাতেই ছবি ফুটে উঠবে, কিন্তু কবে বা কী ছবি তা অবনীশ এখনও ভেবে পায়নি।

অম্বিকা সেনগুপ্তর পোর্ট্রেট আঁকার আইডিয়াটা নিখিলই দেয়। নিখিল অবনীশের অনেকদিনের বন্ধু, যদিও সে আর্টিস্ট নয়। তারা দু'জনে একসঙ্গে স্কুলে পড়েছে। তারপর দু'জনের পথ আলাদা হয়ে গেলেও বন্ধুত্ব রয়েই গেছে। নিখিলের বাবা রজনী দত্ত ডাক্তার। নিখিল একদিন এসে সাদা ক্যানভাস দেখে বলল, 'কী রে, এখনও আঁকা আরম্ভ করিসনি?'

অবনীশ মাথা চুলকে বলল, 'কী আঁকব সেটা ঠিক করলে তবে তো আঁকা শুরু হবে।' 'কেন? পোর্ট্রেট। তোর যেটা স্পেশালিটি।'

'কার পোর্ট্রেট? রাস্তা থেকে লোক ধরে এনে তো পোর্ট্রেট করা যায় না। আর আজকাল ফোটোগ্রাফিক যুগে অয়েল পোর্ট্রেট করানোর রেওয়াজ প্রায় উঠেই গেছে।'

'আমাকে দু'দিন ভাববার সময় দে।'

দু'দিন বাদে নিখিল এসে অবনীশকে জিজ্ঞেস করল, 'অম্বিকা সেনগুপ্তর নাম শুনেছিস?' অবনীশ শোনেনি। 'স্টিফেন অ্যান্ড গিলফোর্ড কোম্পানির একজন চাঁই। বাবার বিশেষ বন্ধু। একদিন ক্লাবে নাকি আক্ষেপ করে বাবাকে বলেছিলেন, 'পুরনো রেওয়াজ সব উঠে যাচ্ছে-এটা অত্যন্ত আফসোসের ব্যাপার। বাবার একট পোর্ট্রেট আছে আমাদের ড্রইং রুমে-পঞ্চাশ বছর আগে বিখ্যাত প্রবোধ চৌধুরীর করা। চমৎকার। ফোটোতে ওই আভিজাত্যই নেই।' বাবা তাতে বললেন, 'তুমি একটা নিজের পোর্ট্রেট করাও না। বাধাটা কোথায়?' সেনগুপ্ত নাকি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছিলেন, 'সেরকম আর্টিস্ট কোথায়?'

এ গল্প নিখিল গতকাল বাবার মুখে শোনার পরেই তার মাথায় বুদ্ধিটা খেলে। তুই খুব ভাল পারবি-একেবারে ভেটারেন আর্টিস্টের মতো

'পোর্ট্রেট বলেছি। বাবা বলেছেন সেনগুপ্তকে বলবেন।' । আমি বাবাকে তোর কথা

তিনদিন বাদে নিখিল অবনীশের কাছে এল। বলল, 'তোর ডাক পড়েছে।'

'কোথায়?'

'সাত নম্বর রয়েড স্ট্রিট। অম্বিকা সেনগুপ্তের বাড়ি।'

'কবে, কখন যেতে হবে?'

'রবিবার সকাল ন'টায়।'

দুরু দুরু বুকে যথাসময়ে অবনীশ গিয়ে হাজির হল সাত নম্বর রয়েড স্ট্রিটে। বেয়ারা বসবার ঘরে বসালো অবনীশকে। তিন মিনিটের মধ্যেই আসল লোকের আবির্ভাব। সত্যিই ছবি আঁকার মতো চেহারা।

'তুমি অয়েল পোর্ট্রেট করো?' ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন।

'আজ্ঞে হ্যাঁ।'

'তোমার খুব প্রশংসা করছে আমার বন্ধু ডাক্তার রজনী দত্তর ছেলে। ক'দিন নাও তুমি একটা পোর্ট্রেট

করতে?'

'দিন দশেকের বেশি লাগে না।'

'তা হলে কালই শুরু করে দাও। আমার আবার কলকাতার পাট গুটিয়ে দিল্লির আপিসে চলে যেতে হতে পারে। আমার এখানেই আসবে। সকাল আটটা থেকে ন'টা পর্যন্ত টাইম দেব তোমায়। তোমার রেট কত?'

'আমি তো প্রোফেশনাল কাজ শুরুই করিনি; কাজেই যা ভাল বোঝেন তাই দেবেন।'

'শ পাঁচেক?' 'ঠিক আছে।'

'আরেকটা কথা-তিনদিনের দিন যদি দেখি ছবি আমার পছন্দ হচ্ছে না, তা হলে সেইখানেই থামতে হবে। তোমার এক্সপেনসেস আমি দিয়ে দেব। তবে স্বভাবতই পুরো পারিশ্রমিক পাবে না।' এতেও অবনীশ বলল, 'ঠিক আছে।'

পরের দিনই কাজ শুরু হয়ে গেল। অবনীশকে একটা রিকশা ভাড়া করতে হয়েছিল সরঞ্জাম আনবার জন্য। অম্বিকা সেনগুপ্ত ঘড়ির কাঁটায় কাঁটায় ঠিক আটটার সময় হাজির হলেন বৈঠকখানায়।

'কোথায় বসাবে আমাকে?' ভদ্রলোক এসেই জিজ্ঞেস করলেন।

'আজ্ঞে এই উত্তরের জানলাটার পাশে হলে ভাল হয়। নর্থ লাইটটা পোর্ট্রেটের পক্ষে সবচেয়ে ভাল

লাইট।'

'হাতে বই-টই কিছু লাগে না? পাশে টেবিল থাকবে না?' 'আজকাল ওসব উঠে গেছে। আমি আপনার যাকে বলে আবক্ষ পোর্ট্রেট করব। আপনি এই

চেয়ারটায় বসবেন। দাঁড়াবার দরকার নেই।' 'বাঃ-এ তো তেমন কঠিন ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে না।'

তিনদিনেই দেখা গেল ছবিতে মিস্টার সেনগুপ্তকে চেনা যাচ্ছে। ভদ্রলোক কাজ দেখে অবনীশের পিঠে দুটো মৃদু চাপড় মেরে বললেন, 'এক্সেলেন্ট! ক্যারি অন।' অবনীশের কাধ থেকে একটা বোঝা নেমে গেল।

কিন্তু তার পরের দিনই এক দুঃসংবাদ। 'তোমাকে আর তিনদিনের বেশি সময় দিতে পারছি না, অবনীশ।' বললেন অম্বিকা সেনগুপ্ত। 'আমাকে বুধবার-অর্থাৎ আজ থেকে চারদিন পরে-দিল্লি চলে যেতে হচ্ছে। তলপি-তলপা গুটিয়ে। ক'দিনের জন্য তা বলতে পারব না। বছর দু-এক তো বটেই। আমকে মাঝে মাঝে আসতে হতে পারে। কিন্তু তার মধ্যে তোমায় সময় দিতে পারব না।'

অবনীশের মনটা ভেঙে গেল। সে নিজেও বুঝতে পারছিল যে কাজটা খুব ভাল এগোচ্ছে!

তিনদিনে যে ছবি শেষ হবে না তাতে কোনও সন্দেহ নেই। 'তা হলে আপনি কি অসমাপ্ত ছবিই সঙ্গে নিয়ে যাবেন?'

'সে আর কী করে হয়। যতদূর করতে পারো সেই অবস্থাতেই তোমার কাছে থাকবে ছবিটা।

অবিশ্যি তোমার পারিশ্রমিক তুমি পাবে।' তিনদিনে মনের জোরের সঙ্গে হাতের জোর মিলিয়ে অবনীশ ছবির বারো আনা শেষ করে ফেলল। অম্বিকা সেনগুপ্ত এবার দেখে বললেন, 'ব্রিলিয়ান্ট, ব্রিলিয়ান্ট। তোমার ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল, অবনীশ। আমি টাকা সঙ্গেই এনেছি। এই নাও তোমার পারিশ্রমিক।'

অবনীশ দেখল মিস্টার সেনগুপ্ত তাকে পাঁচশোর জায়গায় সাতটা করকরে একশো টাকার নোট দিয়েছেন।

অম্বিকা সেনগুপ্তর পোর্ট্রেটের পর্ব এখানেই শেষ হল।

এবার অবনীশ তার পেশাদারি শিল্পীজীবনের জন্য তৈরি হল। ছবি এঁকে রোজগার তাকে করতেই হবে। বাপের অনুগ্রহে আর কতদিন চলে? কী ঢঙে ছবি আঁকবে সে; সাবেকি না আধুনিক-সেই নিয়ে তার মনে প্রশ্ন জেগেছে, যদিও তার উত্তর সে এখনও খুঁজে পায়নি।

অম্বিকাবাবুর চলে যাওয়ার মাসখানেক পরে চিত্রকূট গ্যালারিতে আধুনিক ভারতীয় শিল্পীদের একটা প্রদর্শনী হল। অবনীশ গেল দেখতে, এবং দেখে সে হতবাক হয়ে গেল। যে ছবির না আছে মাথা না আছে মুণ্ডু, তার দাম আকাশছোঁয়া। আর সেই দামে লোকে সে ছবি কিনছে বাড়িতে টাঙিয়ে রাখার জন্য। চল্লিশটার মধ্যে উনিশটা ছবির ফ্রেমে লাল গোল কাগজ আঁটা। তার মানে ছবি বিক্রি হয়ে গেছে, অথচ আজ সবে প্রদর্শনীর চতুর্থ দিন।

মিনিট পনেরো থেকে অবনীশ গ্যালারি থেকে বেরিয়ে এল। সে মনস্থির করে ফেলেছে। চুলোয় যাক মডার্ন আর্ট। সে তার নিজের ঢঙেই ছবি আঁকবে-সে ছবি লোকে নিক বা না নিক।

ছ'মাসে অবনীশ বত্রিশখানা ছবি আঁকল। কিছু প্রাকৃতিক দৃশ্য আঁকার জন্য তাকে বাইরেও যেতে হয়েছিল-পুরী, ঘাটশিলা, গ্যাংটক। সে বুঝেছে ল্যান্ডস্কেপেও তার হাত খারাপ নয়।

নিখিল এল একদিন ছবি দেখতে। দেখে-টেখে বলল, 'দুর্দান্ত হয়েছে তোর ছবি। তবে ভয় হয় কী জানিস?-আজকাল ছবির চেহারা আর লোকের রুচি এত পলিটে গেছে যে, তোর ছবি বাজারে

চলবে কিনা তাই ভাবছি। তুই একজিবিশন করবি তো?' 'ইচ্ছে তো আছে। ছবি বিক্রি না হলে রোজগার হবে কী করে?'

'একটা গ্যালারির নাম হয়তো তুই শুনেছিস-রূপম। তার মালিক পুরুষোত্তম মেহরা বাবার পেশেন্ট। খুব কঠিন ব্যারাম থেকে বাবা ওঁকে সারিয়ে তুলেছিলেন। মেহরা মোটামুটি সেকেলে লোক, যদিও ছবি যা দেখায় সবই মডার্ন। আমি ওঁকে ফোন করে রাখছি। তুই তোর গোটা দু-এক ছবি নিয়ে গিয়ে এঁকে দেখা। ভদ্রলোক হয়তো প্রদর্শনী করতে রাজিও হয়ে যেতে পারেন।'

অবনীশ নিখিলের কথামতো মেহরার সঙ্গে টেলিফোনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে তিনটে বাছাই ছবি সঙ্গে নিয়ে ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা করল।

মিঃ মেহরা ছবিগুলোর দিকে মিনিটখানেক তাকিয়ে থেকে বললেন, 'এ তো দেখছি সবই চিনতে পারছি-মানুষের মতো মানুষ। বাড়ির মতো বাড়ি। গাছের মতো গাছ। আজকাল তো আর কেউ এমন আঁকে না।'

অবনীশ মৃদুস্বরে বলল, 'আজ্ঞে, আমি এরকমই আঁকতে ভালবাসি।'

মেহরা বললেন, 'দেখেন অবনীশবাবু-আমি আপনাকে ফ্র্যাঙ্কলি বলছি, আমরা নামকরা আর্টিস্টের ছাড়া কারও ছবি এগজিবিট করি না। ছবি বিক্রি হবে এই গ্যারান্টি আমাদের চাই, কারণ কি ছবি বিক্রির তিন ভাগের এক ভাগ টাকা আমরা কমিশন নিই; এ থেকে আমাদের ব্যবসা চলে। শুধু আমাদের নয়- অল কমার্শিয়াল গ্যালারিজ।' 'আর যদি ছবি বিক্রি না হয়?'

'তা হলে আমাদের লোকসান। বিক্রি হবে জেনেই তো আমরা ওয়েলনোন আর্টিস্ট ছাড়া কারুর ছবি দেখাই না।'

'তা হলে আমার ছবি আপনি দেখাবেন না?' নৈরাশ্যের সুরে বলল অবনীশ। মিঃ মেহরা অবনীশের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে মৃদু হেসে বললেন, 'আপনি অন্য কেউ হলে আপনাকে রিফিউজ করে দিতাম, কিন্তু ডক্টর দত্তর ছেলে আমাকে রিকুয়েস্ট করেছে বলে আমি আপনাকে ফিরিয়ে দিতে পারছি না। তা ছাড়া এরকম ছবির মার্কেট আছে কিনা সেটাও দেখা যাবে। তবে আপনাকে কিন্তু আমাদের টার্মস মেনে নিতে হবে।'

'নিশ্চয়ই।'

এই ঘটনার এক মাস পর অবনীশের প্রদর্শনী শুরু হল রূপম গ্যালারিতে। দশ দিন চলবে, বত্রিশখানা ছবি। তার মধ্যে অম্বিকা সেনগুপ্তর পোর্ট্রেটটাও ছিল, তবে সেটা নট ফর সেল। তার জীবনের প্রথম পেশাদারি কাজ অবনীশ হাতছাড়া করবে না।

প্রদর্শনীতে প্রথম তিনদিন বিশেষ লোক হয়নি। তারপর থেকে দর্শকের সংখ্যা ক্রমে বাড়তে লাগল। অবনীশ অবাক হয়ে দেখল যে, তার ছবি বিক্রিও হচ্ছে। প্রথমবার বলে সে ছবির দাম বেশ কমই রেখেছিল, তাও চোদ্দখানা ছবি বিক্রি হয়ে কমিশন বাদে তার হাতে এল সাড়ে চার হাজার টাকা। মিঃ মেহরাও তাকে কনগ্র্যাচুলেট করলেন এবং কথা দিলেন যে ভবিষ্যতেও রূপম অবনীশের ছবির এগজিবিশন করবে।

কিন্তু একটা ব্যাপারে অবনীশকে চোট পেতে হল। সেটা হল বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তার প্রদর্শনীর সমালোচনা। বেশিরভাগ সমালোচকই বলেছে যে অবনীশের মস্ত দোষ হল সে সময়ের সঙ্গে তাল রেখে চলছে না। একজন বলেছে, 'আজ যদি কোনও লেখক বঙ্কিমচন্দ্রের ঢঙে উপন্যাস লেখে তা হলে কি সেটা একটা প্রশংসনীয় ব্যাপার হবে?'

এইসব সমালোচকের নাম অনেকেই জানে না। যার নাম জানে, এবং যার সমালোচনা সকলেই পড়ে সে হল 'কৃষ্টি' সাপ্তাহিকের সমালোচক আনন্দ বর্ধন। অবনীশ জানে যে নামটা ছদ্মনাম, কিন্তু এই নামের পিছনে আসল ব্যক্তিটি কে সেটা সে জানে না। এঁর সমালোচনার শিরোনাম হল 'মান্ধাতার আমল'। তীরের মতো চোখা চোখা শব্দের ব্যবহারে সমালোচক অবনীশের প্রদর্শনীকে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছেন। 'যুগ পরিবর্তনের সঙ্গে আর্টের চেহারাও যে আমূল পালটেছে, সে খবর যে এই শিল্পী রাখেন না সেটা এঁর ছবিগুলির দিকে এক ঝলক দৃষ্টি দিলেই বোঝা যায়,' লিখছেন আনন্দ বর্ধন। 'ক্যানভাস ও তেল রঙ আজকাল দুর্মূল্য। তাদের এই অপব্যবহার কোনওমতেই বরদাস্ত করা যায় না। প্রদর্শনীর কথা চিন্তা না করে শিল্পী যদি আজকের শিল্পরীতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার প্রয়াস করেন তা হলে হয়তো এঁর একটা ভবিষ্যৎ গড়ে উঠতে পারে, কারণ রঙ তুলির ব্যবহার যে উনি একেবারে জানেন না তা নয়।'

এই সমালোচনা শুধু অবনীশ নয়, তার বাবা এবং তার বন্ধু নিখিলও পড়ল। বাবা বললেন, 'শিল্পীকে গালমন্দ করাটা, সমালোচকদের একটা হ্যাবিট, কারণ পাঠক প্রশংসার চেয়ে নিন্দাটা বেশি উপভোগ করে। তুই নিরুদ্যম হোস না।'

নিখিল বলল, 'এই আনন্দ বর্ধন ছদ্মনামের আড়ালে কে লুকিয়ে রয়েছে সেটা বার করে সেই

ব্যক্তিকে ধোলাই দিতে হবে।'

অবনীশ কিন্তু সমস্যায় পড়ে গেল। সে অনুভব করল আনন্দ বর্ধনের বাক্যবাণ অনবরত তার মনে বিধছে। সে অত্যন্ত গভীর ভাবে চিন্তা করতে লাগল তার আঁকার ঢং পালটিয়ে সে আধুনিকের দলে চলে আসবে কি না। বারবার সমালোচকের তিরস্কার ও বিদ্রূপ সে সহ্য করতে পারবে না। মডার্ন আর্ট জিনিসটা কী ও কেন, সেটা সে এতদিন জানার চেষ্টা করেনি, এবার করবে।

প্রদর্শনীর পর ছটা মাস অবনীশ ছবিই আঁকল না; তার বদলে রোজ ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে গিয়ে মডার্ন আর্ট সম্বন্ধে যত বই পাওয়া যায়, সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল এবং পড়ল। তার ফলে সে জানল যে বিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকেই প্রধানত ফ্রান্সে কিছু শিল্পীর প্রভাবে আর্টের জগতে এক বিপ্লব ঘটে। তার ফলে ছবির চেহারা একেবারে বদলে যায়, এবং বিপ্লবের প্রভাব ক্রমে সমস্ত পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। এইসব বইয়ে তার নিজের ঢং-এর একটি ছবিও খুঁজে পেল না অবনীশ।

এর পরে অবনীশ লাইব্রেরিতে যাওয়া বন্ধ করে ড্রইং-এর খাতায় প্যাস্টেল দিয়ে নতুন রীতিতে ছবি আঁকার চেষ্টা আরম্ভ করল। এভাবে প্রায় ত্রিশখানা খাতা ছবিতে ভরে গেল। ইজেলে সাদা ক্যানভাস খাটানো রয়েছে, কিন্তু তাতে একটা আঁচড়ও পড়েনি।

নিখিল একদিন এসে বলল, 'কী রে, তুই কি ছবি আঁকা ছেড়ে দিলি নাকি?'

অবনীশ বলতে বাধ্য হল যে, সে তার ছবির ভোল পালটে আজকের দিনের শিল্পীদের দলে আসার

চেষ্টা করছে। 'মডার্ন আর্ট তো খুব সোজা,' বলল নিখিল, 'একটা ক্যানভাস খাটিয়ে তাতে কাগের ঠ্যাং বগের ঠ্যাং এঁকে ভরিয়ে দে-ব্যস। হয়তো হাজার টাকায় বিক্রিও হয়ে যেতে পারে সেই ছবি।'

অবনীশ তার বন্ধুর কথা খুব পছন্দ করল না। সে বুঝেছে মডার্ন আর্ট অত সোজা নয়। সেটা ঠিকভাবে করতে গেলে শিল্পীর দেশ-বিদেশের সাবেকি আর্ট ও লোকশিল্পের সঙ্গে পরিচয় থাকা চাই। সে পরিচয়ের জন্য সময় লাগে, অধ্যবসায় লাগে। তা হোক-অবনীশ বুঝেছে যে তাকে এই পথেই যেতে হবে। আনন্দ বর্ধনকে বলতে হবে-হ্যাঁ, অবনীশ বোস সার্থক শিল্পী। তার ছবিকে আর অবজ্ঞা করা চলে না।

দু' বছর ধরে অবনীশ আধুনিক ছবি আঁকল। একবার ইজেলে ক্যানভাস খাটিয়ে অয়েল পেন্টিং। এই সময়ের মধ্যে স্বভাবতই তার কোনও রোজগার হয়নি। বাবা আবার তাকে সাহায্য করলেন। বললেন, 'তোর ছবি এখন আর বুঝতে পারছি না, কিন্তু এটা বুঝেছি যে তুই একটা তাগিদ অনুভব করছিস। তুই যদ্দিন আবার এগজিবিশন না করছিস, তদ্দিন কী খরচ লাগছে না-লাগছে সেটা আমাকে জানাতে দ্বিধা করিস না।' অবনী বুঝল এমন বাপ না থাকলে তার শিল্পীজীবন এখানেই শেষ হয়ে যেত।আজকাল অবনীশের এক-একটা ছবি আঁকতে বেশ সময় লাগে। একটু বড় ক্যানভাস হলে দু' মাসও লেগে যায়। তাই দু' বছরে তার ছবির সংখ্যা হল মাত্র বাইশ।

এই সময় একদিন মেহরার কাছ থেকে একটা ফোন এল। 'কী খবর অবনীশবাবু? আপনি কি ছবি আঁকা স্টপ করে দিয়েছেন?' অবনীশ বলল সে এখনও নিয়মিত ছবি আঁকছে। 'তা হলে একদিন আপনার বাড়ি গিয়ে দেখি আপনার নতুন ছবি।'

মেহরা এলেন এক রবিবার সকালে। অবনীশ তাঁকে তার স্টুডিওতে নিয়ে গেল। 'এ আপনার কাজ?' অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন মিঃ মেহরা।

'আজ্ঞে হ্যাঁ।'

'আপনি স্টাইল একদম চেঞ্জ করে ফেলেছেন?'

'কেমন লাগছে বলুন।'

'আমি তো নিজে আর্ট বুঝি না। তবে দ্য কালারাস আর ভেরি গুড। আজকাল বড় খদ্দেররা এরকম জিনিসই চায়। এগুলোর সঙ্গে তাদের মডার্ন ফানির্চার খুব ভাল ম্যাচ করে।'

সব ছবির উপর মেহরা একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন। কিছু বেশ বড় ছবিও ছিল। এই বাইশটাতেই যে রূপম ভরে যাবে তাতে সন্দেহ নেই।

অবনীশের প্রদর্শনীর দিন ঠিক হয়ে গেল। এবারও দশদিনের মেয়াদ। এই দশদিনে বাইশটার মধ্যে সতেরোখানা ছবিই বিক্রি হয়ে গেল। বেপরোয়া হয়ে অবনীশ ছবিগুলোর দাম বেশ চড়াই রেখেছিল; সেই দাম দিতেও লোকে দ্বিধা করল না। যা টাকা এল, তাতে অবনীশের দু' বছরের সংস্থান হয়ে গেল।

আর সমালোচনা? অবনীশ দেখল তার বাবাই ঠিক বলেছিলেন। 'পথে এসো বাবা।' লিখেছেন আনন্দ বর্ধন। 'তবে এই নতুন পথে চলাটা শিল্পীর পক্ষে এখনও সহজ হয়নি। এইভাবে আরও পাঁচ বছর লেগে থাকলে হয়তো অবনীশ বোস শিল্পী আখ্যা পেতে পারেন।'

অবনীশ পত্রিকাটা ছুড়ে ফেলে দিল। সেই সঙ্গে এই ছদ্মনামধারী ব্যাক্তিটির আসল পরিচয়টা জানবার আগ্রহ আরও বেড়ে গেল। নিখিল বলল, "কৃষ্টি'-র একজনের সঙ্গে আমার আলাপ ছিল। সে যদি এখনও থেকে থাকে, তা হলে তাকে ভজিয়ে ছদ্মনামের পেছনে লোকটা কে সেটা হয়তো জানা যেতে পারে।'

এর মাসখানেক পরে একদিন সকালে অবনীশ তার স্টুডিওতে কাজ করছে, এমন সময় চাকর

গোবিন্দ এসে ঘরে ঢুকল। 'কী ব্যাপার, গোবিন্দ?' জিজ্ঞেস করল অবনীশ।

'আজ্ঞে একটি বাবু আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন।' কে এল আবার? খদ্দের নাকি? ইতিমধ্যে অবনীশের বাড়িতে লোক এসে তার ছবি কিনে নিয়ে

গেছে। গুজরাতি ভদ্রলোক।

'নাম বলেছেন?'

'আজ্ঞে না, বললেন জরুরি দরকার।'

'বসবার ঘরে বসাও, আমি আসছি।'

অ্যাপ্রন খুলে নিয়ে একটা ন্যাকড়ায় হাতের রঙটা মুছে অবনীশ বৈঠকখানায় গিয়ে হাজির হল। সোফা থেকে একজন চশমা পরা বছর পঁয়ত্রিশ ভদ্রলোক উঠে দাঁড়ালেন।

নমস্কার করে ভদ্রলোক বললেন, 'আমার পরিচয় দিলে হয়তো আপনি চিনবেন। আমার নাম

হিমাংশু সেনগুপ্ত। আমি অম্বিকা সেনগুপ্তর বড় ছেলে।'

'আপনার বাবার মৃত্যুসংবাদ সেদিন কাগজে পড়লাম।' 'আপনি আমার বাবার একটা অয়েল পোর্ট্রেট করেছিলেন।'

'হ্যাঁ-কিন্তু সে সময় তো আপনাকে দেখিনি।'

'আমি তখন দিল্লি ছিলাম। আমিও ফিরলাম আর বাবাও গেলেন।'

'আই সি।'

'এই পোর্ট্রেটটা নিয়েই একটু কথা বলতে এসেছি।'

'কী ব্যাপার?'

'কাল সন্ধ্যায় বাবার স্মৃতিসভা আছে শিশির মঞ্চে। অনেক খুঁজেও বাবার এমন একটাও ফোটো পাইনি যেটা এনলার্জ করে সভায় রাখা যেতে পারে। তাই ভাবছিলাম আপনি যদি একদিনের জন্য আপনার ওই ক্যানভাসটা ধার দেন।'

'নিশ্চয়ই,' বলল অবনীশ। 'এ নিয়ে কোনও প্রশ্নই উঠতে পারে না। আপনি কি এটা এখনই নিয়ে

যেতে চান?'

'হাতের কাছে আছে কি? আমার ঠিক একদিনের জন্য দরকার।'

'আপনি পাঁচ মিনিট বসুন। আমি নিয়ে আসছি।'

অবনীশ জানত ছবিটা কোথায় আছে। সেটা বার করে আবার ধুলো ঝেড়ে একটা খবরের কাগজে

মুড়ে এনে হিমাংশু সেনগুপ্তর হাত দিল। ভদ্রলোক সেটা নিয়ে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে চলে গেলেন।

অবনীশ স্টুডিওতে ফিরে যাচ্ছিল, এমন সময় নিখিল এসে ঢুকল। 'কাকে বেরোতে দেখলাম রে?' প্রশ্ন করল নিখিল।

অবনীশ একটু ম্লান হাসি হেসে বলল, 'আমার প্রথম অয়েল পোর্ট্রেটের সাবজেক্টের ছেলে। অর্থাৎ

অম্বিকা সেনগুপ্তর ছেলে।'

'বটে? নাম বলেছে?'

'হ্যাঁ। হিমাংশু।'

'ছবিটা নিল কেন?'

'ওঁর বাবার স্মৃতিসভা আছে, ভাল ফোটোগ্রাফ পায়নি, তাই ও পোর্ট্রেটটা রাখবে।'

'তুই খুব ভুল করেছিস।'

'কীসে?'

'ছবিটা দিয়ে।' 'কেন?'

'ও-ই বলেছিল মান্ধাতার আমল।' 'অ্যাঁ।' 'ইয়েস স্যার। আনন্দ বর্ধন হিমাংশু সেনগুপ্তর ছদ্মনাম।'

অবনীশের মুখ থেকে অবাক ভাবটা কেটে গিয়ে একটা বিশেষ ধরনের হাসি ফুটে উঠল। তারপর চাপা স্বরে কথাটা বেরোল-

'পথে এসো বাবা, পথে এসো।'

99
Articles
গল্প ১০১
0.0
ফেলুদা এবং শঙ্কু বাদে সত্যজিৎ রায়ের যাবতীয় লেখা নিয়ে তৈরি একটি সংকলন।
1

বঙ্কুবাবুর বন্ধু

14 November 2023
0
0
0

বঙ্কুবাবুকে কেউ কোনওদিন রাগতে দেখেনি। সত্যি বলতে কি, তিনি রাগলে যে কীরকম ব্যাপারটা হবে, কী যে বলবেন বা করবেন তিনি, সেটা আন্দাজ করা ভারী শক্ত। অথচ রাগবার যে কারণ ঘটে না তা মোটেই নয়। আজ বাইশ বছর তিনি

2

টেরোড্যাকটিলের ডিম

14 November 2023
0
0
0

বদনবাবু আপিসের পর আর কার্জন পার্কে আসেন না। আগে ছিল ভাল। সুরেন বাঁড়ুজ্যের স্ট্যাচুর পাশটায় ঘণ্টাখানেক চুপচাপ বসে বিশ্রাম করে তারপর ট্রামের ভিড়টা একটু কমলে সন্ধ্যায় সন্ধ্যায় শিবঠাকুর লেনে বাড়ি ফ

3

সেপ্টোপাসের খিদে

14 November 2023
0
0
0

কড়া নাড়ার আওয়াজ পেয়ে আপনা থেকেই মুখ থেকে একটা বিরক্তিসূচক শব্দ বেরিয়ে পড়ল। বিকেল থেকে এই নিয়ে চারবার হল; মানুষে কাজ করে কী করে? কার্তিকটাও সেই যে বাজারে গেছে আর ফেরার নামটি নেই। লেখাটা বন্ধ ক

4

সদানন্দের খুদে জগৎ

14 November 2023
0
0
0

আজ আমার মনটা বেশ খুশি-খুশি, তাই ভাবছি এইবেলা তোমাদের সব ব্যাপারটা বলে ফেলি। আমি জানি তোমরা বিশ্বাস করবে। তোমরা তো আর এদের মতো নও। এরা বিশ্বাস করে না। এরা ভাবে আমার সব কথাই বুঝি মিথ্যে আর বানানো। আমি ত

5

অনাথবাবুর ভয়

14 November 2023
0
0
0

অনাথবাবুর সঙ্গে আমার আলাপ ট্রেনের কামরায়। আমি যাচ্ছিলাম রঘুনাথপুর, হাওয়াবদলের জন্য। কলকাতায় খবরের কাগজের আপিসে চাকরি করি। গত ক'মাস ধরে কাজের চাপে দমবন্ধ হবার উপক্রম হয়েছিল। তা ছাড়া আমার লেখার শখ,

6

দুই ম্যাজিশিয়ান

14 November 2023
0
0
0

'পাঁচ, ছয়, সাত, আট, নয়, দশ, এগারো।' সুরপতি ট্রাঙ্কগুলো শুনে নিয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট অনিলের দিকে ফিরে বলল, ঠিক আছে। দাও, গাড়ি পাঠিয়ে দাও সব ব্রেকভ্যানে। আর মাত্র পঁচিশ মিনিট। ' অনিল বলল, 'আপনার গাড

7

শিবু আর রাক্ষসের কথা

16 November 2023
0
0
0

'অ্যাই শিবু—এদিকে শোন। ' শিবুর ইস্কুল যাবার পথে ফটিকদা তাকে প্রায়ই এইভাবে ডাকে। ফটিকদা মানে পাগলা ফটিক। জয়নারায়ণ বাবুদের বাড়ি ছাড়িয়ে চৌমাথার কাছটায় যেখানে একটা পুরনো মরচে-ধরা স্টিম রোলার আজ

8

পটলবাবু ফিল্মস্টার

16 November 2023
1
0
0

পটলবাবু সবে বাজারের থলিটা কাঁধে ঝুলিয়েছেন এমন সময় বাইরে থেকে নিশিকান্তবাবু হাঁক দিলেন, 'পটল আছ নাকি হে?' “আজ্ঞে হ্যাঁ। দাঁড়ান, আসছি।' নিশিকান্ত ঘোষ মশাই নেপাল ভট্টচাজ্যি লেনে পটলবাবুর তিনখানা বাড

9

বিপিন চৌধুরীর স্মৃতিভ্রম

16 November 2023
0
0
0

নিউ মার্কেটের কালীচরণের দোকান থেকে প্রতি সোমবার আপিস ফেরতা বই কিনে বাড়ি ফেরেন বিপিন চৌধুরী। যত রাজ্যের ডিটেকটিভ বই, রহস্যের বই আর ভূতের গল্প। একসঙ্গে অন্তত খান পাঁচেক বই না কিনলে তাঁর এক সপ্তাহের খোর

10

বাদুড় বিভীষিকা

16 November 2023
0
0
0

বাদুড় জিনিসটা আমার মোটেই ধাতে সয় না। আমার ভবানীপুরের ফ্ল্যাটের ঘরে মাঝে মাঝে যখন সন্ধের দিকে জানলার গরাদ দিয়ে নিঃশব্দে এক-একটা চামচিকে ঢুকে পড়ে, তখন বাধ্য হয়েই আমাকে কাজ বন্ধ করে দিতে হয়। বিশেষত

11

নীল আতঙ্ক

16 November 2023
0
0
0

আমার নাম অনিরুদ্ধ বোস। আমার বয়স ঊনত্রিশ। এখনও বিয়ে করিনি। আজ আট বছর হল আমি কলকাতার একটা সদাগরি আপিসে চাকরি করছি। মাইনে যা পাই তাতে একা মানুষের দিব্যি চলে যায়। সর্দার শঙ্কর রোডে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া ন

12

রতনবাবু আর সেই লোকটা

16 November 2023
0
0
0

ট্রেন থেকে প্ল্যাটফর্মে নেমে এদিক ওদিক দেখে রতনবাবুর মনে একটা খুশির ভাব জেগে উঠল। জায়গাটা তো ভাল বলেই মনে হচ্ছে। স্টেশনের পিছনে শিরীষ গাছটা কেমন মাথা উচিয়ে রয়েছে, তার ডালে আবার একটা লাল ঘুড়ি আটকে

13

ফ্রিৎস

17 November 2023
0
0
0

জয়ন্তর দিকে মিনিটখানেক তাকিয়ে থেকে তাকে প্রশ্নটা না করে পারলাম না। 'তোকে আজ যেন কেমন মনমরা মনে হচ্ছে? শরীর-টরীর খারাপ নয় তো?' জয়ন্ত তার অন্যমনস্ক ভাবটা কাটিয়ে নিয়ে একটা ছেলেমানুষি হাসি হেসে বল

14

ব্রাউন সাহেবের বাড়ি

17 November 2023
0
0
0

ব্রাউন সাহেবের ডায়রিটি হাতে আসার পর থেকেই ব্যাঙ্গালোর যাবার একটা সুযোগ খুঁজছিলাম। সেটা এল বেশ অপ্রত্যাশিত ভাবে। আমাদের বালিগঞ্জ স্কুলের বাৎসরিক রি-ইউনিয়নে দেখা হয়ে গেল আমার পুরনো সহপাঠী অনীকেন্দ্র

15

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ্

17 November 2023
0
0
0

আমার ঘটনাটা কেউ বিশ্বাস করবে বলে বিশ্বাস হয় না। না করুক—তাতে কিছু এসে যায় না। নিজে চোখে না দেখা অবধি অনেকেই অনেক কিছু বিশ্বাস করে না। যেমন ভূত। আমি অবিশ্যি ভূতের কথা লিখতে বসিনি। সত্যি বলতে কি, এটাক

16

বাতিকবাবু

17 November 2023
0
0
0

বাতিকবাবুর আসল নামটা জিজ্ঞেস করাই হয়নি। পদবি মুখার্জি। চেহারা একবার দেখলে ভোলা কঠিন। প্রায় ছ' ফুট লম্বা, শরীরে চর্বির লেশমাত্র নেই, পিঠটা ধনুকের মতো বাঁকা, হাতে পায়ে গলায় কপালে অজস্র শিরা উপশিরা চ

17

খগম

17 November 2023
0
0
0

পেট্রোম্যাক্সের আলোতে বসে ডিনার খাচ্ছি, সবেমাত্র ডালনার ডিমে একটা কামড় দিয়েছি, এমন সময় চৌকিদার লছমন জিজ্ঞেস করল, আপলোগ ইমলি-বাবাকো দর্শন নেহি করেঙ্গে ? বলতে বাধ্য হলাম যে, ইমলিবাবার নামটা আমাদের ক

18

বারীন ভৌমিকের ব্যারাম

17 November 2023
0
0
0

কন্‌ডাকটরের নির্দেশমতো 'ডি' কামরায় ঢুকে বারীন ভৌমিক তাঁর সুটকেসটা সিটের নীচে ঢুকিয়ে দিলেন। ওটা পথে খোলার দরকার হবে না। ছোট ব্যাগটা হাতের কাছে রাখা দরকার। চিরুনি, বুরুশ, টুথ-ব্রাশ, দাড়ি কামানোর সরঞ্

19

ভক্ত

17 November 2023
0
0
0

অরূপবাবু—অরূপরতন সরকার—পুরী এসেছেন এগারো বছর পরে। শহরে কিছু কিছু পরিবর্তন চোখে পড়েছে—কিছু নতুন বাড়ি, নতুন করে বাঁধানো কয়েকটা রাস্তা, দু-চারটে ছোট-বড় নতুন হোটেল—কিন্তু সমুদ্রের ধারটায় এসে বুঝতে পা

20

ফটিকচাঁদ

18 November 2023
0
0
0

ও যে কখন চোখ খুলেছে, ও জানে না। চোখে কিছু দেখার আগে ও বুঝেছে ওর শীত করছে, ওর গা ভিজে, ওর পিঠের তলায় ঘাস, ওর মাথার নীচে একটা শক্ত জিনিস। আর তার পরেই বুঝেছে ওর গায়ে অনেক জায়গায় ব্যথা। তবু ডান হাতটাক

21

বিষফুল

18 November 2023
0
0
0

*ওদিকে যাবেন না বাবু । জগন্ময়বাবু চমকে উঠলেন। কাছাকাছির মধ্যে যে আর কোনও লোক আছে সেটা উনি টের পাননি; তার ফলেই এই চমকানি। এবার দেখলেন তাঁর ডাইনে হাত দশেক দূরে দাঁড়িয়ে আছে একটি তেরো-চোদ্দো বছরের ছেল

22

অসমঞ্জবাবুর কুকুর

18 November 2023
0
0
0

হাসিমারায় বন্ধুর বাড়িতে ছুটি কাটাতে এসে অসমঞ্জবাবুর একটা অনেকদিনের শখ মিটল। ভবানীপুরের মোহিনীমোহন রোডে দেড়খানা ঘর নিয়ে থাকেন অসমঞ্জবাবু। লাজপত রায় পোস্টঅফিসের রেজিস্ট্রি বিভাগে কাজ করেন তিনি; কা

23

লোড শেডিং

18 November 2023
0
0
0

ফণীবাবু তাঁর গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ আগে থেকেই আঁচ করলেন যে তাঁর পাড়ায় লোড শেডিং হয়ে গেছে। আজ আপিসে ওভারটাইম করে বেরুতে বেরুতে হয়ে গেছে সোয়া আটটা। ডালহৌসি থেকে বাসে তাঁর পাড়ায় পৌঁছাতে লা

24

ক্লাস ফ্রেন্ড

19 November 2023
0
0
0

সকাল সোয়া নটা। মোহিত সরকার সবেমাত্র টাইয়ে ফাঁসটা পরিয়েছেন, এমন সময় তাঁর স্ত্রী অরুণা ঘরে ঢুকে বললেন, 'তোমার ফোন। *এই সময় আবার কে ? কাঁটায় কাঁটায় সাড়ে ন'টায় অফিসে পৌঁছানোর অভ্যাস মোহিত সরকা

25

সহদেববাবুর পোট্রেট

19 November 2023
0
0
0

যেটার আগে নাম ছিল ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, সেই মিরজা গালিব স্ট্রিটে ল্যাজারাসের নিলামের দোকানে প্রতি রবিবার সকালে সহদেববাবুকে দেখা যেতে শুরু করেছে মাস তিনেক হল। প্রথম অবস্থায় লোকাল ট্রেনে হেঁয়ালির বই, গো

26

মিঃ শাসমলের শেষ রাত্রি

19 November 2023
0
0
0

শাসমল আরাম কেদারাটায় গা এলিয়ে দিয়ে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন । মোক্ষম জায়গা বেছেছেন তিনি—উত্তর বিহারের এই ফরেস্ট বাংলো। এর চেয়ে নিরিবিলি মিঃ নিরাপদ নিরুপদ্রব জায়গা আর হয় না। ঘরটিও দিব্যি। স

27

পিন্টুর দাদু

19 November 2023
0
0
0

পিন্টুর আপসোস এইখানেই। তার বন্ধুদের মধ্যে অনেকেরই দাদু আছে, কিন্তু কই, তাদের কেউই তো তার নিজের দাদুর মতো নয়। রাজুর দাদুকে সে দেখেছে নিজে হাতে লাল আর বেগুনি কাগজের ফিতে পর পর জুড়ে রাজুর ঘুড়ির জন্য ল

28

বৃহচ্চঞ্চু

19 November 2023
0
0
0

ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রিটে তাঁর আপিসের যেখানে বসে তুলসীবাবু কাজ করেন, তার পাশেই জানালা দিয়ে পশ্চিম আকাশে অনেকখানি দেখা যায়। সেই আকাশে এক বর্ষাকালের সকালে যখন জোড়া রামধনু দেখা দিল, ঠিক তখনই তুলসীবাবুর

29

চিলেকোঠা

19 November 2023
0
0
0

ন্যাশনাল হাইওয়ে নাম্বার ফর্টি থেকে ডাইনে রাস্তা ধরে দশ কিলোমিটার গেলেই ব্রহ্মপুর। মোড়টা আসার কিছু আগেই আদিত্যকে জিজ্ঞেস করলাম, 'কী রে, তোর জন্মস্থানটা একবার ঢুঁ মেরে যাবি নাকি ? সেই যে ছেড়েচিস, তার

30

ভূতো

19 November 2023
0
0
0

নবীনকে দ্বিতীয়বার হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হল। অক্রূরবাবুর মন ভেজানো গেল না। উত্তরপাড়ার একটা ফাংশনে নবীন পেয়েছিল অজুর চৌধুরীর আশ্চর্য ক্ষমতার পরিচয়। ভেনট্রিলোকুইজ্‌জ্ম। খেলার নামটা নবীনের জানা ছিল না।

31

অতিথি

19 November 2023
0
0
0

মন্টু ক'দিন থেকেই শুনেছে তার মা-বাবার মধ্যে কথা হচ্ছে দাদুকে নিয়ে। মন্টুর ছোটদাদু, মা-র ছোটমামা । দাদুর চিঠিটা যখন আসে তখন মন্টু বাড়ি ছিল। মা চিঠি পড়ে প্রথমে আপন মনে বললেন, 'বোঝো ব্যাপার।' তারপর ব

32

ম্যাকেঞ্জি ফ্রুট

19 November 2023
0
0
0

ম্যাকেঞ্জি সাহেবের বাগানে আশ্চর্য গাছটা আবিষ্কার করলেন নিশিকান্তবাবু। সাহেব যে গাছপালা ভালবাসতেন সেটা করিমগঞ্জে এসেই শুনেছিলেন নিশিকান্তবাবু। ভারত স্বাধীন হবার বছর সাতেকের মধ্যেই সাহেব অস্ট্রেলিয়ায়

33

ফার্স্ট ক্লাস কামরা

20 November 2023
0
0
0

আগের আমলের ফার্স্ট ক্লাস কামরা-বাথরুম সমেত ফোর বার্থ বা সিক্স বার্থ কম্পার্টমেন্ট-আজকাল উঠেই গেছে। এটা যে সময়ের গল্প, অর্থাৎ নাইনটিন সেভেনটি-তখনও মাঝে মাঝে এক-আধটা এই ধরনের কামরা কী করে জানি ট্রেনের ম

34

ডুমনিগড়ের মানুষখেকো

20 November 2023
0
0
0

'আমি তখন ছিলাম ডুমনিগড় নেটিভ স্টেটের ম্যানেজার', বললেন তারিণীখুড়ো। 'ডুমনিগড় ম্যাপে আছে?' জিজ্ঞেস করল ন্যাপলা। ন্যাপলার মুখে কিছু আটকায় না। 'তোর কি ধারণা ম্যাপে যা আছে তার বাইরে আর কিছু নেই?' চোখ-কান

35

ধাপ্পা

20 November 2023
0
0
0

'চার্লস ওয়েকম্যানের 'হিস্ট্রি অফ ম্যাজিক' আপনার ক' ভল্যুম ছিল?' সমরেশ ব্রহ্ম ইন্টারন্যাশনাল ম্যাজিক সার্কেলের চিঠির উত্তরে সইটা করে মুখ তুলে চাইল মহিমের দিকে। তার বন্ধু অধ্যাপক রণেন সেনগুপ্তর ছেলে মহ

36

কনওয়ে কাস্লের প্রেতাত্মা

20 November 2023
0
0
0

তারিণীখুড়ো তাঁর এক্সপোর্ট কোয়ালিটি বিড়িতে দুটো টান দিয়ে বললেন, 'ভূতের গল্প অনেকে বলতে পারে, তবে পার্সোনাল এক্সপিরিয়েন্স থেকে বলা গল্পের জাতই আলাদা। সেটা আর কজন পারে বলো।' 'আপনি পারেন?' প্রশ্ন করল ন্য

37

অঙ্ক স্যার, গোলাপীবাবু আর টিপু

20 November 2023
0
0
0

টিপু ভূগোলের বইটা বন্ধ করে ঘড়ির দিকে দেখল। সাতচল্লিশ মিনিট পড়া হয়ে গেছে একটানা। এখন তিনটে বেজে তেরো মিনিট। এবার যদি ও একটু ঘুরে আসে তা হলে ক্ষতি কী? ঠিক এমনি সময় তো সেদিন লোকটা এসেছিল। সে তো বলেছিল

38

শেঠ গঙ্গারামের ধনদৌলত

20 November 2023
0
0
0

'আমার এখন যে চেহারা দেখছিস,' বললেন তারিণীখুড়ো, 'তা থেকে আমার ইয়াং বয়সের চেহারা তোরা কল্পনাই করতে পারবি না।' 'কীরকম চেহারা ছিল আপনার, খুড়ো?' জিজ্ঞেস করল ন্যাপলা, 'ধর্মেন্দরের মতো?' 'য্যা য্যাঃ!' বললে

39

স্পটলাইট

20 November 2023
0
0
0

ছোটনাগপুরের এই ছোট্ট শহরটায় পুজোর ছুটি কাটাতে আমরা আগেও অনেকবার এসেছি। আরও বাঙালিরা আসে; কেউ কেউ নিজেদের বাড়িতে থাকে, কেউ কেউ বাড়ি-বাংলো-হোটেল ভাড়া করে থাকে, দিন দশেকে অন্তত মাস ছয়েক আয়ু বাড়িয়ে নিয়ে

40

তারিণীখুড়ো ও বেতাল

20 November 2023
0
0
0

শ্রাবণ মাস, দিনটা ঘোলাটে, সকাল থেকে টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে, তারই মধ্যে সন্ধের দিকে তারিণীখুড়ো এসে হাজির। হাতের ভিজে জাপানি ছাতাটা সড়াত করে বন্ধ করে দরজার পাশটায় দাঁড় করিয়ে রেখে তক্তপোশে তাঁর জায়গাটায়

41

বহুরূপী

21 November 2023
0
0
0

নিউ মহামায়া কেবিনের একটি চেয়ার দখল করে হাফ কাপ চা আর আলুর চপ অর্ডার দিয়ে নিকুঞ্জ সাহা একবার চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিল। তার চেনা-পরিচিতের কেউ এসেছে কি? হ্যাঁ, এসেছে বইকী। ওই তো রসিকবাবু, আর ওই যে শ্রীধর।

42

মানপত্র

21 November 2023
0
0
0

শতদল সংস্থার সেক্রেটারি প্রণবেশ দত্ত বিস্ফোরক সংবাদটি ঘোষণা করবার পর উপস্থিত সদস্যদের মুখ দিয়ে প্রায় এক মিনিট কোনও কথা বেরোল না। ক্লাবঘরে জরুরি মিটিং বসেছে নববর্ষের পাঁচদিন আগে। মিটিং-এর উদ্দেশ্য প্রণ

43

অপদার্থ

21 November 2023
0
0
0

অপদার্থ কথাটা অনেক লোক সম্বন্ধে অনেক সময়ই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন আমাদের চাকর নবকেষ্ট। 'নব, তুই একটা অপদার্থ'-এই কথাটা ছেলেবেলায় মার মুখে অনেকবার শুনেছি। নব কিন্তু কাজ ভালই করত; দোষের মধ্যে সে ছিল

44

সাধনবাবুর সন্দেহ

21 November 2023
0
0
0

সাধনবাবু একদিন সন্ধ্যাবেলা কাজ থেকে ফিরে তাঁর ঘরে ঢুকে দেখলেন মেঝেতে একটা বিঘতখানেক লম্বা সরু গাছের ডাল পড়ে আছে। সাধনবাবু পিটপিটে স্বভাবের মানুষ। ঘরে যা সামান্য আসবাব আছে-খাট, আলমারি, আলনা, জলের কুঁজো

45

গগন চৌধুরীর স্টুডিও

21 November 2023
0
0
0

একটা ফ্ল্যাট দিনের বেলা দেখে পছন্দ হলেও, সেখানে গিয়ে থাকা না অবধি তার সুবিধে-অসুবিধেগুলো ঠিক বোঝা যায় না। সুধীন সরকার এইটেই উপলব্ধি করল ভবানীপুরের এই ফ্ল্যাটে বসবাস আরম্ভ করে। এই একটা ব্যাপারেই ভাগ্যল

46

লখনৌর ডুয়েল

21 November 2023
0
0
0

'ডুয়েল মানে জানিস?' জিজ্ঞেস করলেন তারিণীখুড়ো। 'বাঃ, ডুয়েল মানে জানব না?' বলল ন্যাপলা। 'ডুয়েল রোল, মানে দ্বৈত ভূমিকা। সন্তোষ দত্ত গুপী গাইনে ডুয়েল রোল করেছিলেন-হাল্লার রাজা, শুণ্ডীর রাজা।' 'সে ডুয়েলে

47

ধুমলগড়ের হান্টিং লজ

21 November 2023
0
0
0

'মাথায় অনেকরকম উদ্ভট শখ চাপে মানুষের', বললেন তারিণীখুড়ো, 'কিন্তু আমার যেমন চেপেছে, তেমন কজনের চাপে জানি না।' আমরা পাঁচজন ঘিরে বসেছি খুড়োকে। বাইরে এক পশলা বেশ ভাল বৃষ্টি হয়ে গিয়ে এখন সেটা অবিরাম ঝিরঝি

48

লাখপতি

21 November 2023
0
0
0

ত্রিদিব চৌধুরী আর থাকতে না পেরে বিরক্তভাবে বেয়ারাকে ডাকার বোতামটা টিপলেন। কিছুক্ষণ থেকেই তিনি অনুভব করছেন যে, কামরাটা যত ঠাণ্ডা থাকার কথা মোটেই তত ঠাণ্ডা নয়। অথচ তাঁর তিন সহযাত্রীই দিব্যি নাক ডাকিয়ে ঘ

49

খেলোয়াড় তারিণীখুড়ো

21 November 2023
0
0
0

ডিসেম্বরের ঊনত্রিশে, শীতটা পড়েছে বেশ জাঁকিয়ে। সন্ধেবেলা তারিণীখুড়ো এলেন গলায় আর মাথায় মাফলার জড়িয়ে। 'তোরা মাঠে যাচ্ছিস না খেলা দেখতে?' তক্তপোষে বসেই প্রশ্ন করলেন খুড়ো, 'নাকি দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবার ত

50

টলিউডে তারিণীখুড়ো

21 November 2023
0
0
0

তাকিয়াটাকে কোলের উপর টেনে নিয়ে আরও জমিয়ে বসে ঝুঁকে পড়ে তারিণীখুড়ো তাঁর গল্প আরম্ভ করলেন। - আমার তখন তেইশ বছর বয়স, তবে একটা তেকোনা ফ্রেঞ্চকাট গোছের দাড়ি রেখেছিলাম বলে মনে হত তেত্রিশ। বেয়াল্লিশ সালের ক

51

আমি ভূত

22 November 2023
1
0
0

আমি ভূত। আজ থেকে ঠিক সাড়ে তিন বছর আগে আমি জ্যান্ত ছিলাম। সেই সময় এই দেওঘরের এই বাড়িতেই আগুনে পুড়ে আমার জ্যান্ত অবস্থার শেষ হয়। এই বাড়ির নাম লিলি ভিলা। আমি এখানে এসেছিলাম আমার এক বন্ধুর সঙ্গে ছুটি কাটা

52

বামধনের বাঁশি

22 November 2023
0
0
0

রামধনের লোকটাকে চেনা চেনা লাগায় আরেকটু কাছে গিয়ে একটা গাছের আড়াল থেকে দেখে তার বুকের ভিতরটা হিম হয়ে গেল। দশ বছর পেরিয়ে গেলেও চিনতে কোনও অসুবিধা নেই। এই সেই খগেশবাবু। খগেশ খাস্তগির, পুরনো ইটপাথর নিয়ে ঘ

53

জুটি

22 November 2023
0
0
0

'আজ আমি একজন ফিল্মস্টারের কথা বলতে যাচ্ছি,' চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন তারিণীখুড়ো। 'কে তিনি? তাঁর নাম কী?' আমরা সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠলাম। 'তাঁর নাম তোরা শুনিসনি,' বললেন তারিণীখুড়ো। 'তিনি যখন রিটায়ার করেন তখন

54

মাস্টার অংশুমান

22 November 2023
0
0
0

সেই সকালটার কথা আমি কোনওদিন ভুলতে পারব না। সেদিন ছিল রবিবার। তিনদিন ধরে সমানে বাদলা করে সেদিনই প্রথম ঝলমলে রোদ বেরিয়েছে। আমি একটা অঙ্ক কষে আমার খাতাটা বন্ধ করেছি এমন সময় বিশুদা এল। বিশুদা, বিশ্বনাথ গা

55

নিধিরামের ইচ্ছাপূরণ

22 November 2023
0
0
0

কোনও মানুষই তার নিজের অবস্থা সম্পর্কে ষোলো আনা সন্তুষ্ট বোধ করে না। কোনও-না-কোনও ব্যাপারে একটা খুঁতখুঁতেমির ভাব প্রায় সবার মধ্যেই থাকে। রাম ভাবে তার শরীরে আরও মাংস হল না কেন-হাড়গুলো বড্ড বেশি বেরিয়ে থ

56

কানাইয়ের কথা

22 November 2023
0
0
0

নসু কবরেজ প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে বলরামের নাড়ি ধরে বসে রইলেন। শিয়রের কাছে দাঁড়িয়ে বলরামের সতেরো বছরের ছেলে কানাই কবরেজের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে আছে। আজ দশদিন হল তার বাপের অসুখ। কোনও কিছু খাবারে তার রুচি নেই;

57

রতন আর লক্ষ্মী

23 November 2023
0
0
0

ঠিক কখন থেকে রতনের মনটা খুশিতে ভরে আছে সেটা রতন জানে। দশদিন আগে ছিল চৈত্র সংক্রান্তি। রতন থাকে শিমুলিতে। সেখান থেকে চার ক্রোশ দূরে উজলপুরে সংক্রান্তির খুব বড় মেলা হয়। রতন গিয়েছিল সেই মেলা দেখতে। শুধু

58

গঙ্গারামের কপাল

23 November 2023
0
0
0

নদীর ধারে খোলামকুচি দিয়ে ব্যাঙবাজি খেলতে খেলতে হঠাৎ গঙ্গারামের চোখে পড়ল পাথরটা। এ নদীতে জল নেই বেশি; যেখানে সবচেয়ে গভীর সেখানেও হাঁটু ডোবে না। জলটা কাচের মতো স্বচ্ছ, তাই তার নীচে লাল নীল সবুজ হলদে খয়ে

59

সুজন হরবোলা

23 November 2023
0
0
0

সুজনের বাড়ির পিছনেই ছিল একটা সজনে গাছ। তাতে থাকত একটা দোয়েল। সুজনের যখন আট বছর বয়স তখন একদিন দোয়েলের ডাক শুনে সে ভাবল-আহা, এ পাখির ডাক কেমন মিষ্টি। মানুষে কি কখনও এমন ডাক ডাকতে পারে? সুজন সেইদিন থেকে

60

নিতাই ও মহাপুরুষ

23 November 2023
0
0
0

কোনও এক জ্ঞানী ব্যক্তি বলে গেছেন যে মানুষের মধ্যে বেশিরভাগই মাঝারি দলে পড়ে। কথাটা হয়তো সত্যি, কিন্তু নিতাইকে মাঝারিও বলা চলে না। অনেক ব্যাপারেই সে অত্যন্ত খাটো। দেহের দিক দিয়ে যেমন, মনের দিক দিয়েও ছেল

61

মহারাজা তারিণীখুড়ো

23 November 2023
0
0
0

'আজ আপনার কপালে ভ্রুকুটি কেন খুড়ো?' জিজ্ঞেস করল ন্যাপলা। এটা অবিশ্যি আমিও লক্ষ করেছিলাম। খুড়ো তক্তপোশের উপর বাবু হয়ে বসে ডান হাতটা পায়ের পাতায় রেখে অল্প অল্প দুলছেন, তাঁর কপালে ভাঁজ। খুড়ো বললেন, 'এই

62

হাউই

23 November 2023
0
0
0

জয়ন্ত নন্দী : ছোটদের পত্রিকা 'হাউই'-এর সম্পাদক তরুণ সান্যাল : জয়ন্তর বন্ধু তিনকড়ি ধাড়া: 'হাউই'-এর দপ্তরের কর্মচারী। কাজ-বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করা তন্ময় সেনগুপ্ত: লেখক মুকুল : দপ্তরের কর্মচারী ধনঞ্জয়/

63

প্রতিকৃতি

23 November 2023
0
0
0

রঞ্জন পুরকায়স্থ কলকাতার একজন নামকরা চিত্রকর। শুধু কলকাতা কেন, তাঁর খ্যাতি পশ্চিমবাংলার বাইরে সারা ভারতবর্ষেই ছড়িয়ে পড়েছে-বোম্বাই, মাদ্রাজ, দিল্লি, ব্যাঙ্গালোর, হায়দ্রাবাদে তাঁর আঁকা ছবির প্রদর্শনী হয়ে

64

তারিণীখুড়ো ও ঐন্দ্রজালিক

23 November 2023
0
0
0

'কই, আর সব কই?' বললেন তারিণীখুড়ো। 'সব্বাইকে খবর দে, নইলে গল্প জমবে কী করে?' আমি বললাম, 'খবর পাঠানো হয়ে গেছে খুড়ো। এই এসে পড়ল বলে!' 'তা হলে এই ফাঁকে চা-টা বলে দে।' বললাম, 'তাও বলা হয়ে গেছে-দুধ চিনি ছা

65

অনুকূল

23 November 2023
0
0
0

'এর একটা নাম আছে তো?' নিকুঞ্জবাবু জিজ্ঞেস করলেন। 'আজ্ঞে হ্যাঁ, আছে বইকী।' 'কী বলে ডাকব?' 'অনুকূল।' চৌরঙ্গিতে রোবট সাপ্লাই এজেন্সির দোকানটা খুলেছে মাস ছয়েক হল। নিকুঞ্জবাবুর অনেকদিনের শখ একটা যান্ত্

66

কাকতাড়ুয়া

24 November 2023
0
0
0

মৃগাঙ্কবাবুর সন্দেহটা যে অমূলক নয় সেটা প্রমাণ হল পানাগড়ের কাছাকাছি এসে। গাড়ির পেট্রল ফুরিয়ে গেল। পেট্রলের ইনডিকেটরটা কিছুকাল থেকেই গোলমাল করছে, সে-কথা আজও বেরোবার মুখে ড্রাইভার সুধীরকে বলেছেন, কিন্তু

67

নরিস সাহেবের বাংলো

24 November 2023
0
0
0

তারিণীখুড়োকে ঘিরে আমরা পাঁচ বন্ধু বসেছি, বাদলা দিন, সন্ধে হব-হব, খুড়োর চা খাওয়া হয়ে গেছে। এবার বিড়ি ধরিয়ে হয়তো গল্প শুরু করবেন। খুড়ো এলে সন্ধেতেই আসেন, আর এলেই একটি করে গল্প লাভ হয় আমাদের। সবই খুড়োর জ

68

কুটুম-কাটাম

24 November 2023
0
0
0

'কোথায় পেলি এটা?' 'আমাদের বাড়ির কাছেই ছিল,' বলল দিলীপ। 'একটা জমি পড়ে আছে কাঠা তিনেক, তাতে কয়েকটা গাছ আর ঝোপঝাড়। একটা গাছের নীচে এটা পড়ে ছিল। অলোকের বাড়িতে সেদিন দেখছিলাম একটা গাছের গুঁড়িকে কেটে তার উপ

69

টেলিফোন

24 November 2023
0
0
0

ক্রিং-ক্রিং... ক্রিং-ক্রিং... ক্রিং-ক্রিং... বীরেশবাবু বিরক্ত হয়ে খাটের পাশের টেবিলের ওপর রাখা টেলিফোনটার দিকে দেখলেন। টেলিফোনের পাশেই ঘড়ি, তাতে বারোটা বাজে। রাত বারোটা। বীরেশবাবু সবে হাতের বইটা বন্ধ

70

গণেশ মুৎসুদ্দির পোট্রেট

24 November 2023
0
0
0

সুখময় সেনের বয়স পঁয়ত্রিশ। এই বয়সেই সে চিত্রকর হিসাবে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে। পোর্ট্রেটেই তার দক্ষতা বেশি। সমঝদারেরা বলে সুখময় সেনের আঁকা কোনও মানুষের প্রতিকৃতি দেখলে সেই মানুষের জ্যান্ত রূপ দেখতে পাওয়

71

মৃগাঙ্কবাবুর ঘটনা

24 November 2023
0
0
0

মৃগাঙ্কবাবু তাঁর সহকর্মী সলিল বসাকের কাছ থেকে প্রথম জানতে পারলেন যে বাঁদর থেকে মানুষের উদ্ভব হয়েছে। এ খবর আজকের দিনে শিক্ষিত লোকমাত্রই জানে, কিন্তু ঘটনাচক্রে খবরটা মৃগাঙ্কবাবুর গোচরে আসেনি। আসলে তাঁর

72

নতুন বন্ধু

24 November 2023
0
0
0

বর্ধমান স্টেশনের রেস্টোর‍্যান্টে ভদ্রলোক নিজেই যেচে এসে আলাপ করলেন। ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি আর গোঁফ, মোটামুটি আমারই বয়সী-অর্থাৎ বছর চল্লিশ-বেয়াল্লিশ-বেশ হাসিখুশি অমায়িক হাবভাব। বারোটা বাজে, তাই লাঞ্চটা সেরে ন

73

শিশু সাহিত্যিক

24 November 2023
0
0
0

ছোটদের মাসিক পত্রিকা 'বহুরূপী' এক বছর হল বেরোচ্ছে। সম্পাদক সুপ্রকাশ সেনগুপ্ত আপ্রাণ চেষ্টা করেন কাগজটাকে ভাল করতে। টাকার জোর নেই, তাই কাজটা সহজ নয়। গ্রাহক সংখ্যা দেড় হাজারের মতো; বিজ্ঞাপন যা আসে তার থ

74

মহিম সান্যালের ঘটনা

24 November 2023
0
0
0

তারিণীখুড়ো তাকিয়াটা বুকের কাছে টেনে নিয়ে বললেন, 'চমকলালের কথা তো তোদের বলেছি, তাই না?' 'হ্যাঁ হ্যাঁ,' বলল ন্যাপলা। 'সেই ম্যাজিশিয়ান তো? যাঁর আপনি ম্যানেজার ছিলেন?' 'হ্যাঁ। কিন্তু আরেকজন জাদুকর আছেন

75

গণৎকার তারিণীখুড়ো

24 November 2023
0
0
0

তারিণীখুড়োর এক ভাইপো এক চা কোম্পানিতে ভাল কাজ করে, সে খুড়োকে এক টিন স্পেশাল কোয়ালিটির চা দিয়েছে। খুড়ো টিনটা আমার হাতে চালান দিয়ে বললেন, 'এটা খোলাবার ব্যবস্থা কর; আজ তোদের চা না খেয়ে এইটে খাব।' বৈশাখ

76

গল্পবলিয়ে তারিণীখুড়ো

24 November 2023
0
0
0

'তোরা তো আমাকে গল্পবলিয়ে বলেই জানিস', বললেন তারিণীখুড়ো, 'কিন্তু এই গল্প বলে যে আমি এককালে রোজগার করেছি সেটা কি জানিস?' 'না বললে জানব কী করে?' বলল ন্যাপলা। 'সে আজ থেকে বাইশ বছর আগের কথা,' বললেন তারিণ

77

নিতাইবাবুর ময়না

24 November 2023
0
0
0

নিতাইবাবুর অনেকদিনের শখ একটা ময়না কেনার। তাঁর বন্ধু শশাঙ্ক সেনের বাড়িতে একটা ময়না আছে। সেটা হেন বাংলা কথা নেই যে বলে না। তার কথা শুনতেই নিতাইবাবু মাসে অন্তত তিনবার করে শশাঙ্কবাবুর বাড়িতে যান। সেদিন তো

78

রন্টুর দাদু

24 November 2023
0
0
0

রন্টুর বয়স পনেরো, কিন্তু এর মধ্যেই তার গানের গলা হয়েছে চমৎকার। সে সকালে ওস্তাদের কাছে একঘণ্টা গান শেখে। যে তার গান শোনে সেই বলে, 'এ ছেলে আর কয়েক বছরের মধ্যেই আসরে গান গাইবে।' এ গুণটা যে সে কোথা থেকে প

79

সহযাত্রী

24 November 2023
0
0
0

ত্রিদিববাবুর সাধারণত একটা হালকা বই পড়েই সময়টা কেটে যায়। কলকাতা থেকে দিল্লি ট্রেনে যাওয়া। কাজের জন্যই যেতে হয় দু মাসে অন্তত একবার। একটা ইলেকট্রনিক্স কোম্পানিতে উচ্চপদস্থ কর্মচারী তিনি, হেড আপিস দিল্লিত

80

ব্রজবুড়ো

25 November 2023
0
0
0

শঙ্কর চৌধুরী আধখানা হাতের রুটি ছিঁড়ে ডালে চুবিয়ে মুখে পুরে একবার পাশে বসা ছেলের দিকে চেয়ে নিলেন। তারপর চিবোতে চিবোতে বললেন, 'তোকে একটা কথা বলব-বলব করেও বলা হয়নি। আমাদের ডাইনে একটা বাড়ির পরে একটা দোতলা

81

দুই বন্ধু

25 November 2023
0
0
0

মহিম বাঁ হাতের কবজি ঘুরিয়ে হাতের ঘড়িটার দিকে এক ঝলক দৃষ্টি দিল। বারোটা বাজতে সাত। কোয়ার্টজ ঘড়ি-সময় ভুল হবে না। সে কিছুক্ষণ থেকেই তার বুকের মধ্যে একটা স্পন্দন অনুভব করছে, যেটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। বিশ বছ

82

শিল্পী

25 November 2023
0
0
0

অবনীশ ছবিটার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল। অয়েল পেন্টিং। একজন মাঝবয়সি সুপুরুষ ভদ্রলোকের পোর্ট্রেট। অবনীশের স্টুডিওর এক কোনায় আরও আট-দশটা ছবির পিছনে দাঁড় করানো ছিল। অবনীশের আঁকা প্রথম অয়েল পোর্ট্রেট। গভর্নমে

83

অক্ষয়বাবুর শিক্ষা

25 November 2023
0
0
0

অক্ষয়বাবু ছেলের হাত থেকে লেখাটা ফেরত নিলেন। 'কী রে-এটাও চলবে না?' ছেলে মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিল-না, চলবে না। এটা অক্ষয়বাবুর পাঁচ নম্বর গল্প যেটা ছেলে নাকচ করে দিল। অক্ষয়বাবুর ছেলের নাম অঞ্জন। তার বয়স চ

84

প্রসন্ন স্যার

25 November 2023
0
0
0

অর্ধেন্দু সেনগুপ্ত সাতদিনের ছুটি নিয়ে শিমুলতলায় এসেছে। সে একটা ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে ভাল চাকরি করে, যদিও মাত্র পঁচিশ বছর বয়স। চেহারা সুশ্রী, চলনে বলনে রীতিমতো স্মার্ট। ব্যাচেলার হিসেবে তার এই শেষ ছুটি ভ

85

অভিরাম

25 November 2023
0
0
0

'তোমার নাম কী?' 'অভিরাম সাউ, বাবু।' 'তোমার বাড়ি কোথায়?' 'উলুইপুর গাঁয়ে বাবু। উড়িষ্যা।' 'বাড়িতে আছে কে?' 'আমার দাদা আছে, বউদি আছে, দুই ভাইপো আছে।' 'তোমার বাড়ি যেতে হয় না?' 'কালে ভদ্রে বাবু। আমি

86

ব্লু-জন গহ্বরের বিভীষিকা (অনুবাদ)

25 November 2023
0
0
0

    ১৯০৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সাউথ কেনসিংটনের ৩৬ নং আপার কভেন্ট্রি ফ্ল্যাটে যক্ষ্মা রোগে ডাঃ জেমস হার্ডকালের মৃত্যুর পর, তাঁর কাগজপত্রের মধ্যে নিম্নলিখিত কাহিনীটি পাওয়া যায়। যাঁরা হার্ডকাফ্লকে ঘনিষ্ঠভাব

87

মোল্লা নাসিরুদ্দিনের গল্প (অনুবাদ)

25 November 2023
0
0
0

☆☆☆ নাসিরুদ্দিনের বন্ধুরা একদিন তাকে বললে, 'চলো, আজ রাত্রে আমরা তোমার বাড়িতে খাব।' 'বেশ, এসো আমার সঙ্গে', বললে নাসিরুদ্দিন। বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে সে বললে, 'তোমরা একটু সবুর করো, আমি আগে গিন্নিকে বলে আ

88

মোল্লা নাসিরুদ্দিনের আরো গল্প (অনুবাদ)

25 November 2023
0
0
0

একদিন এক জ্ঞাতি এসে নাসিরুদ্দিনকে একটা হাঁস উপহার দিলে। নাসিরুদ্দিন ভারী খুশি হয়ে সেটার মাংস রান্না করে জ্ঞাতিকে খাওয়ালে। কয়েকদিন পরে মোল্লাসাহেবের কাছে একজন লোক এসে বললে, 'আপনাকে যিনি হাঁস দিয়েছিলে

89

মোল্লা নাসিরুদ্দিনের আরো গল্প (অনুবাদ)

26 November 2023
0
0
0

রাজদরবারে নাসিরুদ্দিনের খুব খাতির। একদিন খুব খিদের মুখে বেগুন ভাজা খেয়ে ভারী খুশি হয়ে রাজা নাসিরুদ্দিনকে বললেন, 'বেগুনের মতো এমন সুস্বাদু খাদ্য আর আছে কি?' 'বেগুনের জবাব নেই,' বললে নাসিরুদ্দিন। রাজ

90

আবার মোল্লা নাসিরুদ্দিন (অনুবাদ)

26 November 2023
0
0
0

রাজামশাই একদিন নাসিরুদ্দিনকে ডেকে বললেন, 'বনে গিয়ে ভাল্লুক মেরে আনো।' নাসিরুদ্দিন রাজার আদেশ অমান্য করে কী করে? অগত্যা তাকে যেতেই হল। বন থেকে ফেরার পর একজন তাকে জিজ্ঞেস করলে, 'কেমন হল শিকার, মোল্লাসাহ

91

আর এক দফা মোল্লা নাসিরুদ্দিন (অনুবাদ)

26 November 2023
1
0
0

☆☆☆ নাসিরুদ্দিন রাস্তা দিয়ে হাঁটছে, পাশে ফুলে ফলে ভরা বাগিচা দেখে তার মধ্যে গিয়ে ঢুকল। প্রকৃতির শোভাও উপভোগ করা হবে, শর্টকাটও হবে। কিছুদূর যেতে না যেতেই নাসিরুদ্দিন এক গর্তের মধ্যে পড়ল, আর পড়তেই তার

92

ব্রেজিলের কালো বাঘ (অনুবাদ)

26 November 2023
0
0
0

মেজাজটা বনেদি, প্রত্যাশা অসীম, অভিজাত বংশের রক্ত বইছে ধমনীতে, অথচ পকেটে পয়সা নেই, রোজগারের কোনও রাস্তা নেই-একজন যুবকের পক্ষে এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে? আমার বাবা ছিলেন সহজ, সরল মানুষ। তাঁর দাদা

93

মঙ্গলই স্বর্গ (অনুবাদ)

26 November 2023
0
0
0

মহাকাশ থেকে রকেটটা নেমে আসছে তার গন্তব্যস্থলের দিকে। এতদিন সেটা ছিল তারায় ভরা নিঃশব্দ নিকষ কালো মহাশূন্যে একটি বেগবান ধাতব উজ্জ্বলতা। অগ্নিগর্ভ রকেটটা নতুন। এর দেহ থেকে নিঃসৃত হচ্ছে উত্তাপ। এর কক্ষের

94

ঈশ্বরের ন' লক্ষ কোটি নাম (অনুবাদ)

27 November 2023
0
0
0

'আপনাদের অর্ডারটা একটু অস্বাভাবিক ধরনের', বিস্ময়ের মাত্রাটা যথাসম্ভব কমিয়ে বললেন ডাঃ ওয়াগনার- 'আমি যতদূর জানি, এর আগে কোনও তিব্বতি গুম্ফা থেকে অটোমেটিক সিকুয়েন্স কম্পিউটারের জন্য অর্ডার আসেনি। আপনাদের

95

ইহুদির কবচ (অনুবাদ)

27 November 2023
0
0
0

প্রাচ্যের পুরাতত্ত্ব সম্পর্কে আমার বিশিষ্ট বন্ধু ওয়র্ড মর্টিমারের জ্ঞান ছিল অসামান্য। সে এ বিষয়ে বিস্তর প্রবন্ধ লিখেছিল, মিশরের ভ্যালি অফ দ্য কিংস-এ খননকার্য তদারকের সময় একটানা দু' বছর থিবিসের একটি সম

96

ময়ূরকণ্ঠি জেলি (অনুবাদ)

27 November 2023
0
0
0

শশাঙ্ক টেবিলের উপর থেকে খাতাটা তুলে নিল। নীল মলাটের ছোট সাইজের সাধারণ নোটবুক! দাম বোধহয় আজকের দিনে আনা আষ্টেক। কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে শশাঙ্ক এরকম নোটবুক ব্যবহার করেছে, তখন দাম ছিল দু'আনা। মনে আছে

97

সবুজ মানুষ (অনুবাদ)

27 November 2023
0
0
0

আমি যার কথা লিখতে যাচ্ছি তার সঙ্গে সবুজ মানুষের কোনও সম্পর্ক আছে কিনা, তা আমার সঠিক জানা নেই। সে নিজে পৃথিবীরই মানুষ, এবং আমারই একজন বিশিষ্ট বন্ধু-স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক-প্রফেসর নারা

98

আর্যশেখরের জন্ম ও মৃত্যু (অনুবাদ)

27 November 2023
1
0
0

অনেকের মতে আর্যশেখর ছিলেন যাকে ইংরাজিতে বলে চাইল্ড প্রডিজি। তাঁর যখন দশ বছর বয়স তখন একদিন স্টেটসম্যান পত্রিকার প্রথম পাতায় নীচের দিকে এক লাইন লেখা তাঁর চোখে পড়ল-সান রাইজেজ টুডে অ্যাট সিক্স থার্টিন এ এ

99

পিকুর ডায়রি (অনুবাদ)

27 November 2023
0
0
0

আমি ডাইরি লিখছি। আমি আমার নীল নতুন নীল খাতায় ডাইরি লিখছি। আমি আমার বিছানার উপর বসে লিখছি। দাদুও ডাইরি রোজ লেখে কিন্তু এখন না এখন অসুক করেছিল তাই। সেই অসুকটার নাম আমি জানি আর নামটা করোনানি থমবোসি। বাবা

---