shabd-logo

বহুরূপী

21 November 2023

0 Viewed 0

নিউ মহামায়া কেবিনের একটি চেয়ার দখল করে হাফ কাপ চা আর আলুর চপ অর্ডার দিয়ে নিকুঞ্জ সাহা একবার চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিল। তার চেনা-পরিচিতের কেউ এসেছে কি? হ্যাঁ, এসেছে বইকী। ওই তো রসিকবাবু, আর ওই যে শ্রীধর। পঞ্চানন এখনও আসেনি, তবে মিনিট দশেকের মধ্যে এসে যাবে নিশ্চয়ই। যত বেশি চেনা লোক আসে ততই ভাল। চেনা লোক চিনতে না পারলে তবেই না ছদ্মবেশের সার্থকতা।

অবিশ্যি এখনও পর্যন্ত তার সবক টা ছদ্মবেশই আশ্চর্যরকম সফল হয়েছে। আজকে তো তাও দাড়ির আবরণ রয়েছে-মুখের অর্ধেকটা অংশই ঢাকা। বয়সও বাড়িয়ে নিয়েছে নিকুঞ্জ অন্তত বছর পঁচিশ। গতকালের মেক-আপ ছিল একটি ছোট্ট প্রজাপতিমার্কা গোঁফ, আর সেইসঙ্গে প্লাস্টিসিনের সাহায্যে নাকের শেপটা বদলানো। কিন্তু হাবভাব হাঁটাচলা গলার স্বর এমনই চতুর ভাবে পালটে নিয়েছিল নিকুঞ্জ যে, তার দশ বছরের আলাপী পঞ্চানন গুঁই তার কাছ থেকে দেশলাই ধার নেওয়ার সময়ও তাকে চিনতে পারেনি। নিকুঞ্জ অসম সাহসের সঙ্গে কয়েকটা কথাও বলে ফেলেছিল-'আপনি ওটা রাখতে পারেন। আমার কাছে আরেকটা দেশলাই আছে।' পঞ্চানন গলার স্বর শুনেও চেনেনি। একেই বলে আর্ট।

নিকুঞ্জ সাহার আর সব শখ চলে গিয়ে এটাই পোক্তভাবে রয়ে গেছে। শুধু রয়ে গেছে না, উত্তরোত্তর বেড়ে গিয়ে শখটা নেশায় পরিণত হয়েছে। তার হাতে এখন সময়ও অঢেল। আগে একটা চাকরি ছিল। কলেজ স্ট্রিটে ওরিয়েন্ট বুক কোম্পানিতে সে ছিল সেলসম্যান। সম্প্রতি তার এক জ্যাঠামশাই শেয়ার মার্কেটে অনেক টাকা করে গত হয়েছেন; তাঁর নিজের সন্তান ছিল না; স্ত্রীও মারা গেছেন সেভেনটি টুতে। নিকুঞ্জকে তিনি উইল করে যে টাকা দিয়ে গেছেন তার ব্যাঙ্কের সুদ হয় মাসে সাড়ে সাতশো। কাজেই সেলসম্যানের চাকরিটা সে অক্লেশে ছাড়তে পেরেছে। এই জ্যাঠাই বলতেন, 'বই পড়ো নিকুঞ্জ, বই পড়ো। বই পড়ে না শেখা যায় এমন জিনিস নেই। ইস্কুলের দরকার হবে না, মাস্টারের দরকার হবে না-স্রেফ বই। লোকে এরোপ্লেন চালাতে শিখেছে বই পড়ে, এ-কথাও শুনেছি!' জ্যাঠা নিজে বই পড়ে দুটি জিনিস শিখেছিলেন-হাত দেখা আর হোমিওপ্যাথি। দুটোই তিনি বেশ ভাল ভাবেই রপ্ত করেছিলেন বলে জানা যায়। নিকুঞ্জ তাঁর কথা মেনে নিয়েই বই পড়ে শিখেছিল চামড়ার কাজ আর ফোটোগ্রাফি। মাস ছয়েক আগে কলেজ স্ট্রিটের ফুটপাথে মেক-আপ সম্বন্ধে একটা মোটা আমেরিকান বই দেখে সে কেনার লোভ সামলাতে পারেনি। সেইটে পড়ে এই নতুন শখটা তাকে পেয়ে বসে।

অথচ মেক-আপের যেটা আসল জায়গা-থিয়েটার-সে সম্বন্ধে নিকুঞ্জর কোনও উৎসাহই নেই। একবার মনে হয়েছিল-এ তো বেশ নতুন জিনিস শেখা হল, এর থেকে একটা উপরি রোজগারের রাস্তা ধরলে কেমন হয়?

নব নট্ট কোম্পানির ভুলু ঘোষের সঙ্গে নিকুঞ্জর কিছুটা আলাপও ছিল। দু'জনেই ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের মেম্বার, সেই সূত্রেই আলাপ। আমহার্স্ট স্ট্রিটে ভদ্রলোকের বাড়ি গিয়ে কথাটা পাড়তে ভুলু ঘোষ বললে, 'বেশ তো আছ নিকুঞ্জ, আবার থিয়েটার লাইনে আসার ইচ্ছে হল কেন? আর, আমাদের কোম্পানির কথা যদি বলো, সেখানে অপরেশ দত্তকে সরিয়ে তুমি তার জায়গায় বসবে কী করে? সে লোক আজ ছত্রিশ বছর ধরে মেক-আপ করছে; পুরো আর্টটি তার নখের ডগায়। তোমার ছ'মাসের বিদ্যে শুনলে তো সে তোমার দিকে চাইবেই না-কথা বলা দূরের কথা। না হে-ওসব ভুলে যাও। সুখে যখন আছ, তখন ভূতের কিল ভোগ করবে কেন সাধ করে?'

নিকুঞ্জ সেইদিনই পেশাদার মেক-আপের চিন্তা মন থেকে মুছে ফেলে দেয়।

তা হলে মেক-আপ শিখে করবে কী সে? কার মেক-আপ করবে? চুল ছাঁটার সেলুনের মতো তো মেক-আপের সেলুন খোলা যায় না, যেখানে লোক পয়সা দিয়ে নিজের চেহারা পালটে নিতে আসবে! তখনই নিকুঞ্জর মনে হয়-কেন, আমার নিজের চেহারা কী দোষ করল? সত্যি বলতে কি, তার নিজের চেহারায় কয়েকটা সুবিধে আছে-যাকে বলে ন্যাচারেল অ্যাডভানটেজেস। নিকুঞ্জর সবই মাঝারি। সেনা-লম্বা না-বেঁটে, না-কালো, না-ফরসা, না-চোখা, না-ভোঁতা। যে নাক খাড়া তাকে ভোঁতা করা যায় না। যে বেশি লম্বা, তাকে বেঁটে করা যায় না, যে বেশি কালো, তাকে ফরসা বানাতে হলে

যে-পরিমাণ রঙের প্রলেপ লাগে তাতে মেক-আপ ধরা পড়ে যেতে বাধ্য।

দুদিন ধরে আয়নায় নিজের চেহারাটা স্টাডি করে নিকুঞ্জ তাই স্থির করল যে মেক-আপ সে

নিজেকেই করবে, নিজের চেহারার উপরেই চলবে তার যত এক্সপেরিমেন্ট।

কিন্তু তারপর? এই মেক-আপের উদ্দেশ্যটা হবে কী? উদ্দেশ্য হবে দুটি-এক, নিজের শিল্পচাতুরিকে পারফেকশনের সবচেয়ে উঁচু স্তরে নিয়ে যাওয়া; এবং দুই, লোকের চোখে ধূলো দেয়ার আনন্দ উপভোগ করা। বই কেনার দিন-সাতেকের মধ্যেই নিকুঞ্জ মেক-আপের সরঞ্জাম কিনতে শুরু করে। বইয়েতেই সে

জেনেছে ম্যাক্স ফ্যাক্টর কোম্পানির প্যান-কেক, মেক-আপের মাহাত্ম্যের কথা। সে জিনিস আমেরিকায়

তৈরি হয়, কলকাতায় আসে না। অথচ দিশি রঙে নিখুঁত মেক-আপ সম্ভব নয়। নিকুঞ্জকে তাই যেতে

হল প্রতিবেশী ডাক্তার বিরাজ চৌধুরীর কাছে। এই ডাক্তার চৌধুরীই একবার নিকুঞ্জর জনডিস সারিয়ে

দিয়েছিলেন। এঁর ছেলে আমেরিকায় পড়াশুনা করে, নিকুঞ্জ খবর পেয়েছে সে বোনের বিয়েতে

শিগগিরই দেশে আসছে। ডাক্তারবাবুর কাছে গিয়ে নিকুঞ্জ ভণিতা না করে সোজাসুজি বলল, 'আপনার ছেলে যদি একটি জিনিস আমার জন্য আনতে পারে; ও এলেই আমি দামটা দিয়ে দেব।'

'কী জিনিস?' জিজ্ঞেস করলেন ডাক্তার চৌধুরী।

'কিছু রঙ। মেক-আপের রঙ। আমি নাম লিখে এনেছি। এখানে পাওয়া যায় না।' 'বেশ তো। আপনি ডিটেলটা দিয়ে দিন, আমি ওকে পাঠিয়ে দেব।'

ম্যাক্স ফ্যাক্টরের রঙ এসে যায় তিন সপ্তাহের মধ্যেই। তার আগেই অবশ্য বাকি সব জিনিস কেনা হয়ে গেছে-তুলি, স্পিরিট গাম, ভুরু আঁকার কালো পেনসিল, ফোকলা দাঁত করার জন্য কালো এনামেল পেন্ট, পাকা চুল করার জন্য সাদা রঙ, পরচুলা লাগানোর জন্য সূক্ষ্ম নাইলনের নেট। এ ছাড়া কিনতে হয়েছে বেশ কিছু আলগা চুল, যা ওই সূক্ষ্ম নেটের উপর একটা করে বসিয়ে নিকুঞ্জ নিজে হাতে তৈরি করে নিয়েছে বিশ রকমের গোঁফ, বিশ রকমের দাড়ি আর বিশ রকমের পরচুলা। রুক্ষ, মসৃণ, সোজা, ঢেউ খেলানো, কাফ্রিদের মতো পাকানো-কোনওরকম চুল বাদ নেই।

কিন্তু শুধু মুখ পালটালেই তো হল না, সেইসঙ্গে পোশাক না বদলালে চলবে কী করে? নিকুঞ্জর সাতদিন লেগেছে নিউ মার্কেট, বড়বাজার আর গ্রান্ট স্ট্রিট ঘুরে নিজের মাপ অনুযায়ী পোশাক জোগাড় করতে। রেডিমেড আর ক'টা জিনিস পাওয়া যায়? তাই দরজিকে দিয়েও বেশ কিছু পোশাক করিয়ে নিতে হয়েছে। আর শুধু জামাকাপড় তো নয়, পরিধেয় সবকিছুই। সাত রকমের চশমা, বারো রকম চটিজুতো স্যান্ডেল, দশ রকম টুপি-তার মধ্যে দারোগার টুপিও বাদ যায় না-পাগড়ির জন্য পাঁচ রকম কাপড়, পাঁচ রকম হাতঘড়ি। শিখদের হাতের লোহা, তাগা, তাবিজ, মাদুলি, পৈতে, বোষ্টমের মালা, শাক্তের রুদ্রাক্ষ, ওস্তাদের কানে পরার নকল হিরে-কিছুই বাদ যায়নি।

আর কিনতে হয়েছে একটা বড় আয়না, আর তার ফ্রেমে বসানোর জন্য জোরালো বালব।

লোডশেডিং-এ যাতে কাজ বন্ধ না হয়ে যায় তার জন্য একটা ছোট জাপানি জেনারেটরও কিনতে হয়েছে নিকুঞ্জকে। চাকর নিতাইকে সে শিখিয়ে দিয়েছে সেটা কী করে চালাতে হয়।

কাজ শুরু হয় ষোলোই অগ্রহায়ণ। তারিখটা নিকুঞ্জ ডায়রিতে লিখে রেখেছে। সকাল আটটা থেকে শুরু করে বিকেল সাড়ে চারটেয় মেক-আপ শেষ হয়। মোটামুটি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকেরই মেক-আপ নিতে হবে, সেটা নিকুঞ্জ আগেই ঠিক করে রেখেছিল। রাস্তার ভিখিরি বা কুলি-মজুর সেজে তো লাভ নেই, কারণ মেক-আপ উতরেছে কি না সেটা পরীক্ষা হবে নিউ মহামায়া কেবিনে। সেখানে বসে চা খেতে পারে এমন লোক তো হওয়া চাই।

প্রথম দিনেই বাজিমাৎ। ঘন কালো ভুরু, আর তার সঙ্গে মানানসই ঘন কালো ঝুপো-গোঁফ-বিশিষ্ট মোক্তার সেজেছিল নিকুঞ্জ। সাদা প্যান্ট ও বহুব্যবহৃত কালো মোক্তারি কোট; হাতে একটা পুরনো ব্রিফ কেস, পায়ে সুকতলা ক্ষয়ে যাওয়া কালো শু আর ইলাসটিক-বিহীন সাদা মোজা। তারই টেবিলে এসে বসল পঞ্চানন। নিকুঞ্জ যতক্ষণ চা খেয়েছে, তার বুকের ধুকপুকুনি চলেছে সমানে। কিন্তু সামনে বসা অচেনা সাধারণ মানুষ সম্বন্ধে একজন লোক যে কত কম কৌতূহলী হয়-বিশেষত সে লোকের যদি অন্যদিকে মন থাকে—সেটা নিকুঞ্জ সেদিন বুঝেছে। পঞ্চানন তার দিকে দেখেও দেখেনি। বাঁ হাতে রেস বুকের পাতা উলটে দেখেছে আর ডান হাতে চামচ দিয়ে অমলেট ছিঁড়ে খেয়েছে। নিকুঞ্জ যখন বয়ের কাছে বিল চাইল, তখনও পঞ্চাননের দৃষ্টি ঘুরল না তার দিকে। এ এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা, অদ্ভুত আনন্দ। নিকুঞ্জ সেদিনই বুঝেছিল যে, আজ থেকে এটাই হবে তার জীবনের একমাত্র অকুপেশন।

সেদিন বাড়ি ফিরে একটা মজা হল। এটা যে হবে সেটা আগেই বোঝা উচিত ছিল, কিন্তু নিকুঞ্জর খেয়াল হয়নি। শশীবাবু থাকেন একতলার সদর দরজার পাশের ফ্ল্যাটে। তাঁর বসার ঘর থেকে কে ঢুকছে না-ঢুকছে দেখা যায়। নিকুঞ্জ ফিরেছে সোয়া সাতটায়। লোডশেডিং হয়নি বলে দরজার সামনের প্যাসেজে আলো ছিল। মোক্তার-নিকুঞ্জ ঢুকতেই শশীবাবুর হাঁক এল, 'কাকে চাই?'

নিকুঞ্জ থামল। তারপর শশীবাবুর দরজার দিকে এগিয়ে গেল। এবার তারা মুখোমুখি। শশীবাবু আবার বললেন, 'কাকে খুঁজছেন মশাই?'

'নিকুঞ্জ সাহা কি এই বাড়িতে থাকে?'

'আজ্ঞে হ্যাঁ। দোতলার সিঁড়ি উঠে ডান দিকের ঘর।'

উত্তরটা দিয়ে শশীবাবু ঘুরে গেলেন, আর সেই ফাঁকে একটানে গোঁফ-ভুরু খুলে ফেলে নিকুঞ্জ

বলল, 'একটা কথা ছিল।'

'বলুন,' বলেই নিকুঞ্জর দিকে ফিরে শশীবাবুর চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। 'সে কী-এ যে নিকুঞ্জ!'

নিকুঞ্জ শশীবাবুর ঘরে ঢুকে গেল। এঁকে ব্যাপারটা জানানো দরকার। বাড়ির অন্তত একজন জানলে ক্ষতি নেই, বরং সুবিধেই হবে।

'শুনুন শশীদা, আমি এবার থেকে মাঝে মাঝে এইরকম মেক-আপ নিয়ে ফিরব। কোনওদিন ডাক্তার, কোনওদিন মোক্তার, কোনওদিন শিখ, কোনওদিন মারোয়াড়ি-বুঝছেন? বেরোব বিকেলে, ফিরব সন্ধেয়। আপনার ঘরে এসে মেক-আপটা খুলে ফেলব। ব্যাপারটা আমার-আপনার মধ্যেই থাক, কেমন?'

'কিন্তু হঠাৎ এ উদ্ভট শখ কেন? থিয়েটার-টিয়েটার-?'

'না না। থিয়েটার নয়। এটা একটা এক্সপেরিমেন্ট। আপনাকে কনফিডেন্সে নিচ্ছি কারণ আপনি বুঝবেন। মোটকথা, আপনি আর ছড়াবেন না ব্যাপারটা, এইটে আমার রিকোয়েস্ট।'

শশীবাবু সজ্জন ব্যক্তি, পাড়ার বঙ্কিম পাঠাগারের লাইব্রেরিয়ান, নিজেও বইয়ের পোকা। নিকুঞ্জর কথায় রাজি হয়ে গেলেন। বললেন, 'কোনও বদ মতলব নেই যখন বলছ, তখন আর কি? কত লোকের তো কতরকম শখই থাকে।'

কাজটা মেহনতের ও সময়সাপেক্ষ, তাই সপ্তাহে দু'দিনের বেশি মেক-আপ নেওয়া চলবে না এটা নিকুঞ্জ আগেই বুঝেছিল। তবে বাকি সময়টা সদ্ব্যবহার করতে বাধা নেই; নিকুঞ্জ সেই সময়টা শহরে ঘুরে বেড়িয়ে লোকজন স্টাডি করে। নিউ মার্কেট যে এ ব্যাপারে একটা স্বর্ণখনি সেটা একদিন গিয়েই বুঝেছে। তা ছাড়া খেলার মাঠ, হিন্দি সিনেমার কিউ-এসব তো আছেই। ইন্টারেস্টিং টাইপের লোক দেখলেই নিকুঞ্জ খাতায় নোট করে নেয়, এমনকী কোনও ছুতো করে সে-লোকের সঙ্গে দুটো কথাও বলে রাখে। 'কটা বাজল দাদা, আমার ঘড়িটা আবার...।' অথবা 'এখান থেকে গড়িয়াহাট যেতে কত নম্বর বাস ধরব বলতে পরেন?'-এ ধরনের প্রশ্নেও যথেষ্ট কাজ হয়। যেদিন মেক-আপ থাকে না সেদিন বিকেলে সে স্বাভাবিক বেশেই চলে যায় মহামায়া কেবিনে। যে তিন-চারজন আলাপী আসে তাদের সঙ্গে গল্পগুজব করে রাজা উজির মেরে যথা সময়ে ফিরে আসে তার বৃন্দাবন বসাক লেনের ফ্ল্যাটে। ছোকরা চাকর নিতাই অবশ্য বাবুর ব্যাপারটা জানে, বাবুর কাণ্ডকারখানা দেখে এবং রীতিমতো উপভোগ করে। তবে চাকরটি যে খুব বুদ্ধিমান তা বলা চলে না।

'চিনতে পারছিস?'

'হ্যাঁ-!'

'মারব এক থাপ্পড়! তোর বাবু বলে চিনতে পারছিস?' 'আপনি তো বাবু বটেই। সে তো জানি।'

'তোর বাবুর এরকম গোঁফ, এরকম টাক? এরকম পোশাক পরে তোর বাবু? এরকম চশমা পরে?

কাঁধে এরকম চাদর নেয়?'

নিতাই হাসিমুখ করে দাঁড়িয়ে থাকে দরজায় হেলান দিয়ে। নিকুঞ্জ বুঝতে পারে মাথামোটা লোকেদের জন্য তার এই ছদ্মবেশ নয়। তারা এর আর্ট কোথায় তা ধরতে পারবে না।

কিন্তু শুধুমাত্র তিনজন কি চারজন বন্ধুকে ঠকিয়েই কি তার কাজ শেষ?

এ প্রশ্নটা ক'দিন থেকেই নিকুঞ্জকে ভাবিয়ে তুলেছে। সে বুঝেছে যে, তার আকাঙ্ক্ষা ঊর্ধ্বগামী পথ নিতে চাইছে। তার আর্টের দৌড় কতটা, সেটা জানার একটা গোপন বাসনা মাথা উঁচিয়ে উঠছে।

সেই বাসনা চরিতার্থ করার একটা সুযোগ এসে গেল কয়েকদিনের মধ্যেই।

শশীবাবুর ঘরেই কথা হচ্ছিল এই ফ্ল্যাটবাড়ির কয়েকজন বাসিন্দার মধ্যে। নিকুঞ্জ সেখানে উপস্থিত। ভুজঙ্গবাবু একটু-আধটু ধর্মচর্চা করেন, তার মধ্যে প্রাণায়াম, কুম্ভক, রেচক, নাক দিয়ে জল টানা, এসব আছে। 'ওজব শোনা যায়, তিনি নাকি সন্নাসী হতে হতে সংসারী হয়ে পড়েন। তবে অনেক সাধু-সন্ন্যাসীর সঙ্গে আলাপ আছে তাঁর, কেদার-বদ্রী কাশী-কামাখ্যা সব ঘোরা আছে কুণ্ডু স্পেশ্যালে। তিনিই বললেন তারাপীঠে এক তান্ত্রিক সাধু এসে আস্তানা গেড়েছেন, যাঁর ক্ষমতা নাকি পৌরাণিক সাধুদের হার মানায়।

'নামটা কী বললেন?' জিজ্ঞেস করল ব্যাঙ্কের চাকুরে হরবিলাস।

'নাম বলিনি,' বিরক্তভাবে বললেন ভুজঙ্গবাবু। রাগলে এঁর ভুরু উপরে ওঠে, ফলে চশমা নাক দিয়ে হড়কে নীচে নেমে যায়।

'হেঁচকি বাবা কী?' প্রশ্ন করল হরবিলাস।

হেঁচকি বাবা নামে একজন সাধুর কথা কাগজে বেরিয়েছিল বটে! ইনি নাকি ভক্তদের সামনে কথা বলতে বলতে হঠাৎ হঠাৎ এমন হেঁচকি তোলেন যে মনে হয় অন্তিমকাল উপস্থিত, কিন্তু পরক্ষণেই সামলে নিয়ে এমন ভাব করেন, যেন কিছুই হয়নি। অথচ উপস্থিত ডাক্তারেরাও বলেছেন এ-হেঁচকি

মরণ-হেঁচকি ছাড়া কিছুই না।

ভুজঙ্গবাবু ডান হাতের তর্জনী দিয়ে চশমা নাকের উপর ঠেলে তুলে জানালেন সাধুর নাম কালিকানন্দ স্বামী।

'যাবেন নাকি?' জিজ্ঞেস করলেন ইনসিওরেন্সের দালাল তনয়বাবু। 'আপনি যান তো আমিও ঝুলে পড়ি আপনার সঙ্গে। সাধুদর্শনে বেশ একটা ইয়ে হয়। কলকাতার এই হোলসেল নোংরামি আর ভাল্লাগে না।'

ভুজঙ্গবাবু বললেন তিনি যাবেন বলেই স্থির করেছেন। নিকুঞ্জ আর কিছু না বলে দোতলায় নিজের ঘরে চলে গেল। তার ধমনীতে রক্ত যে বেশ দ্রুত চলাচল শুরু করেছে সেটা সে বেশ বুঝতে পারছে। তান্ত্রিক সাজতে হলে কী কী জিনিস লাগে, কী কী তার কাছে আছে, এবং কী কী জোগাড় করতে হবে সেটা জানা চাই।

তাক থেকে বঙ্কিম গ্রন্থাবলী নিয়ে কপালকুণ্ডলার তান্ত্রিকের বর্ণনাটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিল নিকুঞ্জ। আজও এ বর্ণনার কোনও পরিবর্তন হয়নি। সাধু সন্ন্যাসীদের চেহারা পৌরাণিক যুগে যেমন ছিল, আজও তেমনই আছে। নিকুঞ্জ একবার বেনারস গিয়েছিল। দশাশ্বমেধ ঘাটে গিয়ে মনে হয়েছিল যে, প্রাচীন ভারতবর্ষের চেহারাটা এই একটা জায়গায় ধরা রয়েছে।

নিকুঞ্জর প্ল্যান ঠিক হয়ে গেল।

তারাপীঠ হল বীরভূম। রামপুরহাটে নিকুঞ্জর এক খুড়তুতো ভাই থাকে। সেইখানে সে চলে যাবে তান্ত্রিক মেক-আপের সরঞ্জাম নিয়ে। তারপর সেখান থেকে তৈরি হয়ে নিয়ে হাজির হবে তারাপীঠে। তারপর হবে পরীক্ষা। সাধুবাবাজিদের মধ্যে সে বেমালুম মিশে যেতে পারে কিনা সেইটে তাকে দেখতে হবে। ভুজঙ্গবাবুরাও সেখানে থাকবেন; তাঁরাও তার ছদ্মবেশ ধরতে পারেন কিনা দেখা যাবে।

মেক-আপের অধিকাংশ জিনিসই নিকুঞ্জর ছিল, কেবল হাতে নেওয়ার যষ্টি, চিমটে আর কমণ্ডলু ছড়া। ঝাঁকড়া চুল আছে একটা, সেটাকে জটায় পরিণত করতে হবে। ও হয়ে যাবে; চিন্তার কোনও কারণ নেই।

ভুজঙ্গবাবু সপরিবারে বুধবার রওনা দিচ্ছেন খবর পেয়ে নিকুঞ্জ মঙ্গলবার বেরিয়ে পড়ল। ভাই সন্তোষকে আগেই খবর দেওয়া ছিল, যদিও কেন যাচ্ছে সেটা নিকুঞ্জ জানায়নি। ভাইয়ের বয়স বাইশ, বাবা মারা গেছেন গত বছর। তিনি ছিলেন রামপুরহাটে পূর্ণিমা পূর্ণিমা টকিজের মালিক। এখন সন্তোষই মালিকানা ভোগ করছে, এবং হিন্দি ছবি দেখিয়ে পয়সাও কামিয়েছে মন্দ না। হয়তো হিন্দি ছবি দেখার জন্যই সে নিকুঞ্জর প্ল্যানের মধ্যে একটা দারুণ অ্যাডভেঞ্চারের গন্ধ পেল। বলল, 'তোমার কোনও চিন্তা নেই নিকুঞ্জদা। আমার গাড়িতে করে সোজা নিয়ে গিয়ে তোমাকে একেবারে শ্মশানের মুখে নামিয়ে

দেব।' নিকুঞ্জের খেয়াল ছিল না যে, তারাপীঠের শ্মশানেই হচ্ছে মন্দির, আর শ্মশানেই যত সাধুদের আস্তানা। সন্তোষ বলাতে মনে পড়ল তারাপীঠের বিখ্যাত সাধু বামাক্ষ্যাপা তো শ্মশানেই সাধনা করতেন; ঠিক কথা।

বিষ্যুদবার দিন ভোর থেকে মেক-আপ শুরু করে দিল নিকুঞ্জ। দাড়ি গোঁফ জটা লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে তার পরিচয় লোপ পেল। তারপর কপালে চন্দনের প্রলেপ আর লাল ফোঁটা দিয়ে গলায় তিন গাছি বড় বড় রুদ্রাক্ষের মালা পরে গায়ে গেরুয়া বস্ত্র চাপানোর সঙ্গে সঙ্গে সন্তোষ তড়াক করে লাফিয়ে উঠে ঢিপ করে এক প্রণাম করল নিকুঞ্জকে।

'ওফ্-নিকুঞ্জদা-এ যা হয়েছে না! কার বাপের সাধ্যি তোমাকে চেনে। নেহাত তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি বলে, নইলে আমিও ব্যোমকে যেতুম।'

এই ক' মাসে হাত পেকেছে, তাই দুপুর আড়াইটার মধ্যে মেক-আপ হয়ে গেল। চিমটে-কমণ্ডলু নতুন কেনা, তাই তাদেরও একটু মেক-আপ করে পুরনো করে নেওয়া হল। চারটের মধ্যে সম্পূর্ণ তৈরি নিকুঞ্জ সাহা ওরফে ঘনানন্দ মহারাজ। একটা নাম না দিলে চলে না, যদিও নিকুঞ্জ মাঝে মাঝে বম বম ছাড়া কথা বলবে না বলেই স্থির করেছে। সাধুরা অন্য জগতের মানুষ; সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাদের কথা বলতে হবে এমন কোনও কথা নেই। নামটা দরকার হচ্ছে সন্তোষের জন্য। সেই বলেছে, 'নিকুঞ্জদা, তুমি যখন গাড়ি থেকে নামবে, লোকে তো ঘিরে ধরবেই। তখন যদি জিজ্ঞেস করে কে, তার জন্য একটা নামের দরকার।' ঘনানন্দ দিব্যি গম্ভীর নাম। সন্তোষ এখন নিশ্চিন্ত।

সন্তোষ সচরাচর নিজেই গাড়ি চালায়। কিন্তু এবার সে একটা ড্রাইভার সঙ্গে নিল। বলল, 'আমাকে সাধুবাবার সঙ্গে ঘোরাঘুরি করতে হবে, গাড়িটা কিন্তু আপনার জিম্মায় থাকবে।'

একটা কথা নিকুঞ্জ সন্তোষকে না বলে পারল না। 'ওখানে পৌঁছনোর পর আমি কিন্তু একা হয়ে যেতে চাই। আমার লক্ষ্য হবে কালিকানন্দ। তাঁর আশেপাশে আরও পাঁচজন সাধুবাবা কি থাকবে না? নিশ্চয়ই থাকবে। আমি সেই দলে গিয়ে ভিড়ব। তুই বরং আলগা থেকে ভক্তদের দলে গিয়ে বসে পড়িস।'

'তোমার কোনও চিন্তা নেই, নিকুঞ্জদা।'

সন্তোষের গাড়ি যখন তারাপীঠ শ্মশানে পৌঁছল, তখন সূর্য ডুবতে আরও আধ ঘণ্টা বাকি। আর পাঁচটা পীঠস্থানের মতো এখানেও লোকের ভিড়, পাণ্ডার ভিড়, পথের দু'ধারে লাইন করা দোকানে গাঁদাফুল আবির কুমকুম বই ক্যালেন্ডার চা বিস্কুট তেলেভাজা মাছিবসা-জিলিপি ইত্যাদি সবই রয়েছে।

নিউ মহামায়া কেবিনের পর নিকুঞ্জর এখানে এসে এক আশ্চর্য নতুন অভিজ্ঞতা হল। গেরুয়া পরা লোক দেখলেই লোকের মনে যে কী করে ভক্তিভাব জেগে ওঠে সে এক আশ্চর্য ব্যাপার। গাড়ি থেকে নামামাত্র নিকুঞ্জ দেখল যে, গড় করা শুরু হয়ে গেছে। ছেলেবুড়ো মেয়েপুরুষ কেউ বাদ নেই। আপনা থেকেই আশীর্বাদের ভঙ্গিতে নিকুঞ্জর হাতটা উঠে সামনের দিকে এগোতে শুরু করল। শেষে এমন হল যে, হাত টেনে নেওয়ারও অবসর নেই। পাশে সন্তোষ না থাকলে তাকে বোধহয় এক জায়গাতেই আটকে পড়তে হত। 'দাদা সরুন, মা পথ দিন, পথ দিন'-এই করে সন্তোষ কোনওমতে একটা অপেক্ষাকৃত জনবিরল জায়গায় নিয়ে গিয়ে ফেলল নিকুঞ্জকে। এখানে চারদিকে সাধুর অভাব নেই, ফলে আলাদা করে নিকুঞ্জর দিকে লোকের দৃষ্টি পড়ার কোনও কারণ নেই।

এদিক ওদিক চোখ ঘুরিয়ে নিকুঞ্জ দেখল যে, কিছুদূরে একটা বটগাছের নীচে একটা ভিড় দেখা যাচ্ছে। গেরুয়া ছাড়াও অন্য রঙ রয়েছে সেখানে। সন্তোষ বলল, 'আপনি একটু দাঁড়ান, আমি দেখে আসছি ওইখেনেই কালিকানন্দ বসেছেন কিনা। ওঁর সামনে আপনাকে পৌঁছে দিয়ে তবে আমার কাজ শেষ। আমি আপনাকে চোখে চোখে রাখব, তারপর যখন যাওয়ার ইচ্ছে হবে তখন আমাকে ইশারা করলেই আমি বুঝতে পারব।'

সন্তোষ দেখে এসে ফিসফিস করে জানাল ওই ভিড়টা কালিকানন্দের জন্যই বটে। 'আপনি সোজা

এগিয়ে যান নিকুঞ্জদা। কুছ পরোয়া নেই।'

পরোয়া নিকুঞ্জর এমনিতেও নেই। সে এখানে এসে অবধি অত্যন্ত সহজ বোধ করছে। সেইসঙ্গে একটা পরম তৃপ্তির ভাব। মেক-আপে তার জুড়ি কেউ নেই সে বিশ্বাসটা তার মনে আজ পাকা হয়েছে। নিকুঞ্জ এগিয়ে গেল ভিড়ের দিকে। পথে দু-একজন গড় করল। নিকুঞ্জ যথারীতি হাত বাড়িয়ে আশীর্বাদ করল।

উদাত্ত কণ্ঠে উচ্চারিত বাণী কিছুক্ষণ থেকেই শোনা যাচ্ছে; নিকুঞ্জ এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে শব্দ ক্রমশ জোর হয়ে আসছে। আরেকটু এগিয়ে যেতেই সে দেখতে পেল কালিকানন্দকে। বাঘের মতো চেহারা বটে, এবং বাঘছালের উপরেই বসেছেন তিনি। তিনিই বাণী শোনাচ্ছেন ভক্তদের। সবই ছেঁদো কথা, কিন্তু বলার ঢঙে বিশেষত্ব আছে। আর সেইসঙ্গে চোখের দৃষ্টিতেও। মণিকে ঘিরে যে সাদা অংশ সেটা সাদা নয়, গোলাপি। গাঁজা খাওয়ায় ফল কি? হতেও পারে।

ভক্তের সংখ্যা পঞ্চাশ-ষাটের বেশি নয়, তবে একজন দু'জন করে ক্রমেই বাড়ছে। ওই তো

ভুজঙ্গবাবু আর তাঁর স্ত্রী! তনয়বাবুও নিশ্চয়ই আছেন ভিড়ের মধ্যে। ভুজঙ্গবাবুরা মনে হয় বেশ সকাল

সকাল এসেছেন, কারণ তাঁদের স্থান ভক্তদের একেবারে প্রথম সারিতে।

কালিকানন্দের দু'পাশে এবং পিছনে দশ-বারোজন গেরুয়াধারী বসেছেন, তাঁদের সকলেরই গোঁফদাড়ি জটা, রুদ্রাক্ষের মালা, সর্বাঙ্গে ভস্ম। অর্থাৎ নিকুঞ্জর সঙ্গে তাঁদের চেহারার তফাত করা প্রায় অসম্ভব।

নিকুঞ্জ ভিড়ের পিছন দিয়ে এগিয়ে গেল সাধুদের দলের দিকে। কোথেকে যেন একটা গান ভেসে আসছে-

কে হরি বোল হরি বোল বলিতে যায় যা রে মাধাই জেনে আয় বুঝি গৌর যায় আর নিতাই যায় যাদের সোনার নূপুর রাঙ্গা পায়-

হঠাৎ গানটা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল। কেন? কারণ আর কিছুই না-কালিকানন্দের কথা থেমে

গেছে।

নিকুঞ্জের দৃষ্টি গেল সাধুবাবার দিকে।

কালিকানন্দ তার দিকেই চেয়ে আছে। একদৃষ্টে। রাঙা চোখে। নিকুঞ্জের হাঁটা থেমে গেছে।

অন্যান্য সাধু আর ভক্তদের দৃষ্টিও তার দিকে।

এবার কালিকানন্দের উদাত্ত কণ্ঠে প্রশ্ন এল, 'বাবাজির ভেক ধরা হয়েছে, অ্যাঁ? গেরুয়া পরলেই সাধু হয়? গলায় মালা পরলেই সাধু? গায়ে ছাই মাখলেই সাধু? অ্যাঁ? তোর আস্পর্ধা তো কম না? তোর

জটা ধরে যদি টান দিই, তখন কী হবে? কোথায় যাবে তোর সাধুগিরি?'

চোখের পলকে সন্তোষ হাজির নিকুঞ্জের পাশে।

'আর নয় দাদা। সোজা গাড়িতে।'

নিকুঞ্জের সমস্ত দেহ অবশ, কিন্তু তাও পালানো ছাড়া পথ নেই। সন্ডোমের কাঁধে ভর করে প্রায় চোখ বন্ধ করে সে রওনা দিল শ্মশানের গেটের উদ্দেশে। কান তো খোলা, তাই কালিকানন্দের শেষ কথাগুলো না শুনে পারল না-'এই ভণ্ডামির ফল কী তা জানো তুমি, নিকুঞ্জ সাহা?'

কলকাতায় পৌঁছে বাসা বদল করতে হল। আর এ তল্লাটেই নয়। ভুজঙ্গবাবুর সামনে ঘটেছে ঘটনাটা; তিনি এসেই হাটে হাঁড়ি ভাঙবেন। তখন আর টিটকিরিতে কান পাতা যাবে না। ভবানীপুরে কাঁসারিপাড়া লেনে একটা ফ্ল্যাট পাওয়া গেল ভাগ্যক্রমে। ফ্ল্যাট মানে দেড়খানা ঘর। ভাড়া আড়াইশো টাকা। বাপরে বাপ-তান্ত্রিকের কী তেজ, কী অন্তর্দৃষ্টি। পাদ্রি, পুরুত, মোল্লা, দরবেশ এইসব মেক-আপের যা সরঞ্জাম ছিল নিকুঞ্জর কাছে, সব বাক্স থেকে বার করে নিয়ে কাছেই আদিগঙ্গার জলে ফেলে দিল সে।

তিন হপ্তা গেল আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে। ইতিমধ্যে নতুন পাড়ার আলাপী হয়েছে দু-একজন। এখানেও রয়েছে বাড়ি থেকে আধমাইলের মধ্যে বড় রাস্তায় একটি রেস্টোরান্ট, নাম পরাশর কেবিন। এখানে কেউই জানে না নিকুঞ্জের কলঙ্কময় ইতিহাস-তারকবাবু, নগেন মাস্টার, শিবু পোদ্দার। শিবু আবার থিয়েটারে পার্ট করে। নিকুঞ্জকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল একদিন তপন থিয়েটারে 'আগুনের ফুলকি' দেখাতে। 'দেখবেন কেমন ফার্স্ট ক্লাস মেক-আপ নিই', যাওয়ার আগে বলেছিল শিবু। নিকুঞ্জ দেখে হাসবে না কাঁদবে ঠিক করতে পারেনি। এ-ই মেক-আপ! এরা কি ভাল মেক-আপ দেখেছে কোনওদিন? আমার মেক-আপ দেখলে তো এদের লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাবে।

পরক্ষণেই অবিশ্যি মনে পড়ল তারাপীঠের অভিজ্ঞতার কথা। তবু, তান্ত্রিকদের আলৌকিক ক্ষমতার কথা তো শোনাই যায়। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। নিকুঞ্জর চালে একটু ভুল হয়ে গিয়েছিল, এই যা!

কিন্তু তাই বলে কি তার এত সাধের অকুপেশনটি একেবারে বরবাদ করে দিতে হবে? সে হয় না, হতে পারে না। আরও কত কী সাজতে বাকি আছে! যেমন, একটা সত্যি করে ষণ্ডা চরিত্র এখনও সাজা হয়নি। এক তান্ত্রিক ছাড়া যা সেজেছে সবই নিরীহ অমায়িক চরিত্র-যাদের দিকে এমনিতেই লোকের দৃষ্টি যায় না। চোখ যাবে অথচ চেনা যাবে না-তেমন একটা চরিত্রের মেক-আপ না করলে আর সত্যি করে সাফল্যের পরীক্ষা হবে কী করে?

কেমন হবে এই যণ্ড চরিত্র? মাথায় কদমছাঁট চুল, মুখে চারদিনের দাড়ি, চোখের নীচে একটা ক্ষতচিহ্ন-যাকে বলে 'স্কার' নাকটা একটু ভাঙা-মুষ্টিযোদ্ধার মতো-হাতে উলকি, গলায় চেন, পরনে বোতাম ছাড়া চেক শার্ট আর বর্মার লুঙ্গি। তারাপীঠের অভিজ্ঞতার পর নিকুঞ্জর আর ছদ্মবেশের ত্রিসীমানায় যাওয়া উচিত ছিল না, কিন্তু শখটা

বোধহয় এমনই মজ্জাগত যে, কাজের বেলা দেখা গেল সে দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে বসে গেছে আবার

আয়নার সামনে।

সকালবেলা চা খেয়েই কাজে লেগে যাওয়ার ফলে সেদিন আর নিকুঞ্জর খবরের কাগজটা দেখা

হয়নি। ফলে খিদিরপুরে জোড়া খুনের খবরটা, এবং পলাতক আততায়ী ডাকসাইটে গুণ্ডা বাঘা মণ্ডলের

ছবিটাও দেখা হয়নি। যদি হত তা হলে অবিশ্যি নিকুঞ্জ মেক-আপটা অন্যরকম ভাবে করত। বাঘা

মণ্ডলের ছবি মাস ছয়েক আগেও একবার বেরিয়েছিল কাগজে। সেটা একটা দুঃসাহসিক ডাকাতির

পরে। সেবারও বাঘা পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়েছিল। কাগজে ছবি ছাপার উদ্দেশ্য ছিল জনসাধারণকে সতর্ক করা। সেই প্রথমবারের ছবি কি নিকুঞ্জ দেখেছিল, আর সেই চেহারা তার মনের অবচেতনে গাঁথা হয়ে গিয়েছিল? না হলে আজ সে হুবহু বাঘা মণ্ডলের ছদ্মবেশ নেবে কেন? ছবি দেখে থাকলেও, বাঘা সংক্রান্ত ঘটনাবলী নিশ্চয়ই নিকুঞ্জর জানা ছিল না। যদি থাকত তা হলে তাকে এসে টেবিলে বসতে দেখে যেভাবে পরাশর কেবিন খালি হয়ে গেল, সেটা তার মনে কোনও

বিস্ময়ের সৃষ্টি করত না। ব্যাপারটা কী? এরা এরকম করছে কেন? ম্যানেজার উঠে কোথায় গেলেন? বয়টা ওই কোণে

ওরকম ফ্যাকাসে মুখ করে দাঁড়িয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে কেন?

ম্যানেজার যে পাশের ডাক্তারখানায় গিয়েছেন পুলিশে ফোন করতে এবং সেই ফোন যে পুলিশ ভ্যানকে চুম্বকের মতো টেনে আনবে নিকুঞ্জের পাড়ায়, সেটা আর নিকুঞ্জ জানবে কী করে? তবে এমনও দেখা যায় যে, একজন লোকের চরম সংকটের মুহূর্তে তার উদ্ধারকল্পে ভাগ্যদেবতা পুরো হাতটা না হলেও, অন্তত একটা আঙুল তার দিকে বাড়িয়ে দেন। সেই আঙুলই হল নিকুঞ্জর পাশের চেয়ারে পড়ে থাকা একটি দৈনিক কাগজ। কাগজটা পুরো দেখারও দরকার নেই। যে পাতায় সেটা খোলা রয়েছে, তাতেই রয়েছে খুনি বাঘা মণ্ডলের ছবি, আর সঙ্গে সংক্ষিপ্ত গরম খবর।

এই মুখই আজ নিকুঞ্জের আয়নায় তারই চোখের সামনে ক্রমে ফুটে উঠেছে।

নিকুঞ্জর হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেলেও কাগজটা কাছে টেনে এনে খবরটায় একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়ার লোভ সে সামলাতে পারল না। আর নেওয়ামাত্র সমস্ত ব্যাপারটা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেল।

রাস্তায় বেরিয়ে দ্রুতপদে (দৌড়লে লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে) কাঁসারিপাড়া লেনে নিজের বাসায় গিয়ে ঢুকতে সময় লাগল দশ মিনিট। একটা গাড়ির শব্দ সে পিছন থেকে পেয়েছে, এবং ঠিকই সন্দেহ করেছে সেটা পুলিশ ভ্যান-কিন্তু সেদিকে দৃকপাত করেনি। আসুক পুলিশ। পুলিশই বোকা বনবে। তারা সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় পৌঁছনোর আগেই নিকুঞ্জর ছদ্মবেশ উধাও হয়ে যাবে। নিকুঞ্জ সাহা তো কোনও অপরাধ করেনি, করেছে বাঘা মণ্ডল।

ঘরে ঢুকে চাকরকে চায়ের জল চাপাতে বলে নিকুঞ্জ দরজাটা খিল দিয়ে বন্ধ করে দিল। ওই যাঃ!- লোড শেডিং। এখন জাপানি জেনারেটর চালাতে গেলে সময় লাগবে। কুছ পরোয়া নেই। মোমবাতি আছে। কিন্তু আগে জামাটা ছেড়ে ফেলা উচিত। সে কাজটা

অন্ধকারেই হবে। নিকুঞ্জ এক নিমেষে লুঙ্গি শার্ট কালো কোট ছেড়ে খাটের উপর ছুড়ে ফেলে এক ঝটকায় আলনা থেকে পায়জামাটা নামিয়ে নিয়ে সেটাকে পরে ফেলল। তারপর দেশলাইয়ের আলোয় মোমবাতিটা দেরাজ থেকে বার করে সেটাকে জ্বালিয়ে টেবিলের উপর রাখল।

এখনও পুলিশ ভ্যানের কোনও শব্দ নেই। পুলিশ হয়তো পাড়ায় নেমে খোঁজ নিচ্ছে কোন বাড়িতে ঢুকেছে বাঘা মণ্ডল। এ বাড়ির লোক অন্তত তাকে ঢুকতে দেখেনি। সামনের বা আশেপাশের বাড়ির কথা নিকুঞ্জ জানে না।

এইসব চিন্তার মধ্যেই নিকুঞ্জ হাত চালাতে শুরু করল। প্রথমে নকল গোঁফ। নকল গোঁফ?

নকল যদি হবে তো টানলে খোলে না কেন? স্পিরিট গাম দিয়ে আটকানো গোঁফ তো এক টানেই খুলে যায়-তবে?

মোমবাতিটা মুখের কাছে এনে আয়নার দিকে ঝুঁকতে নিকুঞ্জর রক্ত জল হয়ে গেল।

এ গোঁফ তো নকল বলে মনে হয় না! এ যে তার চামড়া থেকেই গজিয়েছে! আঠার কোনও চিহ্ন

তো এ গোঁফে নেই! এ পরচুলাও তো পরচুলা নয়-এ যে তার নিজেরই চুল? এমনকী চারদিনের যে গজানো দাড়ি, যে দাড়ি সে একটি একটি করে গালে লাগিয়েছিল-তাতেও তো কৃত্রিমতার কোনও চিহ্ন নেই।

আর চোখের তলার ওই ক্ষতচিহ্ন? কোন ক্ষণজন্মা মেক-আপ শিল্পীর ক্ষমতা এমন ক্ষতচিহ্ন তৈরি করে রঙ তুলি আঠা আর প্লাস্টিসিনের সাহায্যে? এ তো সেই উনিশ বছর আগে এন্টালির গাঁজা পার্কে বদ্রু শেখের সঙ্গে হাতাহাতির সময় ছুরির আঘাতের ফল। বাঘা তখন বাঘা হয়নি, তখন সে রাধু মণ্ডল, বয়স একুশ, সবে গুণ্ডামিতে তালিম নিচ্ছে মেঘনাদ রক্ষিতের কাছে।...

দরজা ভেঙে ঢুকতে হল পুলিশকে। মাটিতে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকা বাঘা মণ্ডলের দিকে টর্চ ফেলে দারোগা চাকর নিতাইকে জিজ্ঞেস করলেন, 'এই লোক কি এ বাড়িতেই থাকে?'

'নিকুঞ্জবাবু। সাহাবাবু।'

'আজ্ঞে হ্যাঁ। উনি তো আমার মনিব।' 'কী নামে জানো ওঁকে?' 'ইঃ!-ভদ্রলোক সাজা হয়েছে!' বাঁকা হাসি হেসে বললেন দারোগাবাবু। তারপর কনস্টেবলের দিকে ফিরে বললেন, 'ওকে ধরে বেশ করে ঝাঁকাও তো দেখি। হুঁশ ফিরুক, তারপর বাকি কাজ।' রিভলভার বার করে তাগ করে রইলেন দারোগা বেহুঁশ আততায়ীর দিকে। ঝাঁকানি দিতেই প্রথমে বাঘা মণ্ডলের পরচুলাটা খসে মাটিতে পড়ল। তারপর গোঁফটা। তার প্লাস্টিসিন দিয়ে সযত্নে তৈরি ক্ষতচিহ্ন ও নাকের বাড়তি অংশটা উঠে এল নেট সমেত।

ততক্ষণে অবিশ্যি নিকুঞ্জ সাহার জ্ঞান ফিরেছে। কাপালিকের ধমকানিতে যে কাজ হয়নি, আজ পুলিশের শাসানিতে তা হল।

নিকুঞ্জ এখন বই পড়ে মৃৎশিল্প বা ক্লে মডেলিং শিখছে। গঙ্গা কাছেই, নিতাই সেখান থেকে মাটি এনে দেয়। নিকুঞ্জর ইচ্ছা, নিতাই হবে তার প্রথম মডেল।

99
Articles
গল্প ১০১
0.0
ফেলুদা এবং শঙ্কু বাদে সত্যজিৎ রায়ের যাবতীয় লেখা নিয়ে তৈরি একটি সংকলন।
1

বঙ্কুবাবুর বন্ধু

14 November 2023
0
0
0

বঙ্কুবাবুকে কেউ কোনওদিন রাগতে দেখেনি। সত্যি বলতে কি, তিনি রাগলে যে কীরকম ব্যাপারটা হবে, কী যে বলবেন বা করবেন তিনি, সেটা আন্দাজ করা ভারী শক্ত। অথচ রাগবার যে কারণ ঘটে না তা মোটেই নয়। আজ বাইশ বছর তিনি

2

টেরোড্যাকটিলের ডিম

14 November 2023
0
0
0

বদনবাবু আপিসের পর আর কার্জন পার্কে আসেন না। আগে ছিল ভাল। সুরেন বাঁড়ুজ্যের স্ট্যাচুর পাশটায় ঘণ্টাখানেক চুপচাপ বসে বিশ্রাম করে তারপর ট্রামের ভিড়টা একটু কমলে সন্ধ্যায় সন্ধ্যায় শিবঠাকুর লেনে বাড়ি ফ

3

সেপ্টোপাসের খিদে

14 November 2023
0
0
0

কড়া নাড়ার আওয়াজ পেয়ে আপনা থেকেই মুখ থেকে একটা বিরক্তিসূচক শব্দ বেরিয়ে পড়ল। বিকেল থেকে এই নিয়ে চারবার হল; মানুষে কাজ করে কী করে? কার্তিকটাও সেই যে বাজারে গেছে আর ফেরার নামটি নেই। লেখাটা বন্ধ ক

4

সদানন্দের খুদে জগৎ

14 November 2023
0
0
0

আজ আমার মনটা বেশ খুশি-খুশি, তাই ভাবছি এইবেলা তোমাদের সব ব্যাপারটা বলে ফেলি। আমি জানি তোমরা বিশ্বাস করবে। তোমরা তো আর এদের মতো নও। এরা বিশ্বাস করে না। এরা ভাবে আমার সব কথাই বুঝি মিথ্যে আর বানানো। আমি ত

5

অনাথবাবুর ভয়

14 November 2023
0
0
0

অনাথবাবুর সঙ্গে আমার আলাপ ট্রেনের কামরায়। আমি যাচ্ছিলাম রঘুনাথপুর, হাওয়াবদলের জন্য। কলকাতায় খবরের কাগজের আপিসে চাকরি করি। গত ক'মাস ধরে কাজের চাপে দমবন্ধ হবার উপক্রম হয়েছিল। তা ছাড়া আমার লেখার শখ,

6

দুই ম্যাজিশিয়ান

14 November 2023
0
0
0

'পাঁচ, ছয়, সাত, আট, নয়, দশ, এগারো।' সুরপতি ট্রাঙ্কগুলো শুনে নিয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট অনিলের দিকে ফিরে বলল, ঠিক আছে। দাও, গাড়ি পাঠিয়ে দাও সব ব্রেকভ্যানে। আর মাত্র পঁচিশ মিনিট। ' অনিল বলল, 'আপনার গাড

7

শিবু আর রাক্ষসের কথা

16 November 2023
0
0
0

'অ্যাই শিবু—এদিকে শোন। ' শিবুর ইস্কুল যাবার পথে ফটিকদা তাকে প্রায়ই এইভাবে ডাকে। ফটিকদা মানে পাগলা ফটিক। জয়নারায়ণ বাবুদের বাড়ি ছাড়িয়ে চৌমাথার কাছটায় যেখানে একটা পুরনো মরচে-ধরা স্টিম রোলার আজ

8

পটলবাবু ফিল্মস্টার

16 November 2023
1
0
0

পটলবাবু সবে বাজারের থলিটা কাঁধে ঝুলিয়েছেন এমন সময় বাইরে থেকে নিশিকান্তবাবু হাঁক দিলেন, 'পটল আছ নাকি হে?' “আজ্ঞে হ্যাঁ। দাঁড়ান, আসছি।' নিশিকান্ত ঘোষ মশাই নেপাল ভট্টচাজ্যি লেনে পটলবাবুর তিনখানা বাড

9

বিপিন চৌধুরীর স্মৃতিভ্রম

16 November 2023
0
0
0

নিউ মার্কেটের কালীচরণের দোকান থেকে প্রতি সোমবার আপিস ফেরতা বই কিনে বাড়ি ফেরেন বিপিন চৌধুরী। যত রাজ্যের ডিটেকটিভ বই, রহস্যের বই আর ভূতের গল্প। একসঙ্গে অন্তত খান পাঁচেক বই না কিনলে তাঁর এক সপ্তাহের খোর

10

বাদুড় বিভীষিকা

16 November 2023
0
0
0

বাদুড় জিনিসটা আমার মোটেই ধাতে সয় না। আমার ভবানীপুরের ফ্ল্যাটের ঘরে মাঝে মাঝে যখন সন্ধের দিকে জানলার গরাদ দিয়ে নিঃশব্দে এক-একটা চামচিকে ঢুকে পড়ে, তখন বাধ্য হয়েই আমাকে কাজ বন্ধ করে দিতে হয়। বিশেষত

11

নীল আতঙ্ক

16 November 2023
0
0
0

আমার নাম অনিরুদ্ধ বোস। আমার বয়স ঊনত্রিশ। এখনও বিয়ে করিনি। আজ আট বছর হল আমি কলকাতার একটা সদাগরি আপিসে চাকরি করছি। মাইনে যা পাই তাতে একা মানুষের দিব্যি চলে যায়। সর্দার শঙ্কর রোডে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া ন

12

রতনবাবু আর সেই লোকটা

16 November 2023
0
0
0

ট্রেন থেকে প্ল্যাটফর্মে নেমে এদিক ওদিক দেখে রতনবাবুর মনে একটা খুশির ভাব জেগে উঠল। জায়গাটা তো ভাল বলেই মনে হচ্ছে। স্টেশনের পিছনে শিরীষ গাছটা কেমন মাথা উচিয়ে রয়েছে, তার ডালে আবার একটা লাল ঘুড়ি আটকে

13

ফ্রিৎস

17 November 2023
0
0
0

জয়ন্তর দিকে মিনিটখানেক তাকিয়ে থেকে তাকে প্রশ্নটা না করে পারলাম না। 'তোকে আজ যেন কেমন মনমরা মনে হচ্ছে? শরীর-টরীর খারাপ নয় তো?' জয়ন্ত তার অন্যমনস্ক ভাবটা কাটিয়ে নিয়ে একটা ছেলেমানুষি হাসি হেসে বল

14

ব্রাউন সাহেবের বাড়ি

17 November 2023
0
0
0

ব্রাউন সাহেবের ডায়রিটি হাতে আসার পর থেকেই ব্যাঙ্গালোর যাবার একটা সুযোগ খুঁজছিলাম। সেটা এল বেশ অপ্রত্যাশিত ভাবে। আমাদের বালিগঞ্জ স্কুলের বাৎসরিক রি-ইউনিয়নে দেখা হয়ে গেল আমার পুরনো সহপাঠী অনীকেন্দ্র

15

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ্

17 November 2023
0
0
0

আমার ঘটনাটা কেউ বিশ্বাস করবে বলে বিশ্বাস হয় না। না করুক—তাতে কিছু এসে যায় না। নিজে চোখে না দেখা অবধি অনেকেই অনেক কিছু বিশ্বাস করে না। যেমন ভূত। আমি অবিশ্যি ভূতের কথা লিখতে বসিনি। সত্যি বলতে কি, এটাক

16

বাতিকবাবু

17 November 2023
0
0
0

বাতিকবাবুর আসল নামটা জিজ্ঞেস করাই হয়নি। পদবি মুখার্জি। চেহারা একবার দেখলে ভোলা কঠিন। প্রায় ছ' ফুট লম্বা, শরীরে চর্বির লেশমাত্র নেই, পিঠটা ধনুকের মতো বাঁকা, হাতে পায়ে গলায় কপালে অজস্র শিরা উপশিরা চ

17

খগম

17 November 2023
0
0
0

পেট্রোম্যাক্সের আলোতে বসে ডিনার খাচ্ছি, সবেমাত্র ডালনার ডিমে একটা কামড় দিয়েছি, এমন সময় চৌকিদার লছমন জিজ্ঞেস করল, আপলোগ ইমলি-বাবাকো দর্শন নেহি করেঙ্গে ? বলতে বাধ্য হলাম যে, ইমলিবাবার নামটা আমাদের ক

18

বারীন ভৌমিকের ব্যারাম

17 November 2023
0
0
0

কন্‌ডাকটরের নির্দেশমতো 'ডি' কামরায় ঢুকে বারীন ভৌমিক তাঁর সুটকেসটা সিটের নীচে ঢুকিয়ে দিলেন। ওটা পথে খোলার দরকার হবে না। ছোট ব্যাগটা হাতের কাছে রাখা দরকার। চিরুনি, বুরুশ, টুথ-ব্রাশ, দাড়ি কামানোর সরঞ্

19

ভক্ত

17 November 2023
0
0
0

অরূপবাবু—অরূপরতন সরকার—পুরী এসেছেন এগারো বছর পরে। শহরে কিছু কিছু পরিবর্তন চোখে পড়েছে—কিছু নতুন বাড়ি, নতুন করে বাঁধানো কয়েকটা রাস্তা, দু-চারটে ছোট-বড় নতুন হোটেল—কিন্তু সমুদ্রের ধারটায় এসে বুঝতে পা

20

ফটিকচাঁদ

18 November 2023
0
0
0

ও যে কখন চোখ খুলেছে, ও জানে না। চোখে কিছু দেখার আগে ও বুঝেছে ওর শীত করছে, ওর গা ভিজে, ওর পিঠের তলায় ঘাস, ওর মাথার নীচে একটা শক্ত জিনিস। আর তার পরেই বুঝেছে ওর গায়ে অনেক জায়গায় ব্যথা। তবু ডান হাতটাক

21

বিষফুল

18 November 2023
0
0
0

*ওদিকে যাবেন না বাবু । জগন্ময়বাবু চমকে উঠলেন। কাছাকাছির মধ্যে যে আর কোনও লোক আছে সেটা উনি টের পাননি; তার ফলেই এই চমকানি। এবার দেখলেন তাঁর ডাইনে হাত দশেক দূরে দাঁড়িয়ে আছে একটি তেরো-চোদ্দো বছরের ছেল

22

অসমঞ্জবাবুর কুকুর

18 November 2023
0
0
0

হাসিমারায় বন্ধুর বাড়িতে ছুটি কাটাতে এসে অসমঞ্জবাবুর একটা অনেকদিনের শখ মিটল। ভবানীপুরের মোহিনীমোহন রোডে দেড়খানা ঘর নিয়ে থাকেন অসমঞ্জবাবু। লাজপত রায় পোস্টঅফিসের রেজিস্ট্রি বিভাগে কাজ করেন তিনি; কা

23

লোড শেডিং

18 November 2023
0
0
0

ফণীবাবু তাঁর গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ আগে থেকেই আঁচ করলেন যে তাঁর পাড়ায় লোড শেডিং হয়ে গেছে। আজ আপিসে ওভারটাইম করে বেরুতে বেরুতে হয়ে গেছে সোয়া আটটা। ডালহৌসি থেকে বাসে তাঁর পাড়ায় পৌঁছাতে লা

24

ক্লাস ফ্রেন্ড

19 November 2023
0
0
0

সকাল সোয়া নটা। মোহিত সরকার সবেমাত্র টাইয়ে ফাঁসটা পরিয়েছেন, এমন সময় তাঁর স্ত্রী অরুণা ঘরে ঢুকে বললেন, 'তোমার ফোন। *এই সময় আবার কে ? কাঁটায় কাঁটায় সাড়ে ন'টায় অফিসে পৌঁছানোর অভ্যাস মোহিত সরকা

25

সহদেববাবুর পোট্রেট

19 November 2023
0
0
0

যেটার আগে নাম ছিল ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, সেই মিরজা গালিব স্ট্রিটে ল্যাজারাসের নিলামের দোকানে প্রতি রবিবার সকালে সহদেববাবুকে দেখা যেতে শুরু করেছে মাস তিনেক হল। প্রথম অবস্থায় লোকাল ট্রেনে হেঁয়ালির বই, গো

26

মিঃ শাসমলের শেষ রাত্রি

19 November 2023
0
0
0

শাসমল আরাম কেদারাটায় গা এলিয়ে দিয়ে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন । মোক্ষম জায়গা বেছেছেন তিনি—উত্তর বিহারের এই ফরেস্ট বাংলো। এর চেয়ে নিরিবিলি মিঃ নিরাপদ নিরুপদ্রব জায়গা আর হয় না। ঘরটিও দিব্যি। স

27

পিন্টুর দাদু

19 November 2023
0
0
0

পিন্টুর আপসোস এইখানেই। তার বন্ধুদের মধ্যে অনেকেরই দাদু আছে, কিন্তু কই, তাদের কেউই তো তার নিজের দাদুর মতো নয়। রাজুর দাদুকে সে দেখেছে নিজে হাতে লাল আর বেগুনি কাগজের ফিতে পর পর জুড়ে রাজুর ঘুড়ির জন্য ল

28

বৃহচ্চঞ্চু

19 November 2023
0
0
0

ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রিটে তাঁর আপিসের যেখানে বসে তুলসীবাবু কাজ করেন, তার পাশেই জানালা দিয়ে পশ্চিম আকাশে অনেকখানি দেখা যায়। সেই আকাশে এক বর্ষাকালের সকালে যখন জোড়া রামধনু দেখা দিল, ঠিক তখনই তুলসীবাবুর

29

চিলেকোঠা

19 November 2023
0
0
0

ন্যাশনাল হাইওয়ে নাম্বার ফর্টি থেকে ডাইনে রাস্তা ধরে দশ কিলোমিটার গেলেই ব্রহ্মপুর। মোড়টা আসার কিছু আগেই আদিত্যকে জিজ্ঞেস করলাম, 'কী রে, তোর জন্মস্থানটা একবার ঢুঁ মেরে যাবি নাকি ? সেই যে ছেড়েচিস, তার

30

ভূতো

19 November 2023
0
0
0

নবীনকে দ্বিতীয়বার হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হল। অক্রূরবাবুর মন ভেজানো গেল না। উত্তরপাড়ার একটা ফাংশনে নবীন পেয়েছিল অজুর চৌধুরীর আশ্চর্য ক্ষমতার পরিচয়। ভেনট্রিলোকুইজ্‌জ্ম। খেলার নামটা নবীনের জানা ছিল না।

31

অতিথি

19 November 2023
0
0
0

মন্টু ক'দিন থেকেই শুনেছে তার মা-বাবার মধ্যে কথা হচ্ছে দাদুকে নিয়ে। মন্টুর ছোটদাদু, মা-র ছোটমামা । দাদুর চিঠিটা যখন আসে তখন মন্টু বাড়ি ছিল। মা চিঠি পড়ে প্রথমে আপন মনে বললেন, 'বোঝো ব্যাপার।' তারপর ব

32

ম্যাকেঞ্জি ফ্রুট

19 November 2023
0
0
0

ম্যাকেঞ্জি সাহেবের বাগানে আশ্চর্য গাছটা আবিষ্কার করলেন নিশিকান্তবাবু। সাহেব যে গাছপালা ভালবাসতেন সেটা করিমগঞ্জে এসেই শুনেছিলেন নিশিকান্তবাবু। ভারত স্বাধীন হবার বছর সাতেকের মধ্যেই সাহেব অস্ট্রেলিয়ায়

33

ফার্স্ট ক্লাস কামরা

20 November 2023
0
0
0

আগের আমলের ফার্স্ট ক্লাস কামরা-বাথরুম সমেত ফোর বার্থ বা সিক্স বার্থ কম্পার্টমেন্ট-আজকাল উঠেই গেছে। এটা যে সময়ের গল্প, অর্থাৎ নাইনটিন সেভেনটি-তখনও মাঝে মাঝে এক-আধটা এই ধরনের কামরা কী করে জানি ট্রেনের ম

34

ডুমনিগড়ের মানুষখেকো

20 November 2023
0
0
0

'আমি তখন ছিলাম ডুমনিগড় নেটিভ স্টেটের ম্যানেজার', বললেন তারিণীখুড়ো। 'ডুমনিগড় ম্যাপে আছে?' জিজ্ঞেস করল ন্যাপলা। ন্যাপলার মুখে কিছু আটকায় না। 'তোর কি ধারণা ম্যাপে যা আছে তার বাইরে আর কিছু নেই?' চোখ-কান

35

ধাপ্পা

20 November 2023
0
0
0

'চার্লস ওয়েকম্যানের 'হিস্ট্রি অফ ম্যাজিক' আপনার ক' ভল্যুম ছিল?' সমরেশ ব্রহ্ম ইন্টারন্যাশনাল ম্যাজিক সার্কেলের চিঠির উত্তরে সইটা করে মুখ তুলে চাইল মহিমের দিকে। তার বন্ধু অধ্যাপক রণেন সেনগুপ্তর ছেলে মহ

36

কনওয়ে কাস্লের প্রেতাত্মা

20 November 2023
0
0
0

তারিণীখুড়ো তাঁর এক্সপোর্ট কোয়ালিটি বিড়িতে দুটো টান দিয়ে বললেন, 'ভূতের গল্প অনেকে বলতে পারে, তবে পার্সোনাল এক্সপিরিয়েন্স থেকে বলা গল্পের জাতই আলাদা। সেটা আর কজন পারে বলো।' 'আপনি পারেন?' প্রশ্ন করল ন্য

37

অঙ্ক স্যার, গোলাপীবাবু আর টিপু

20 November 2023
0
0
0

টিপু ভূগোলের বইটা বন্ধ করে ঘড়ির দিকে দেখল। সাতচল্লিশ মিনিট পড়া হয়ে গেছে একটানা। এখন তিনটে বেজে তেরো মিনিট। এবার যদি ও একটু ঘুরে আসে তা হলে ক্ষতি কী? ঠিক এমনি সময় তো সেদিন লোকটা এসেছিল। সে তো বলেছিল

38

শেঠ গঙ্গারামের ধনদৌলত

20 November 2023
0
0
0

'আমার এখন যে চেহারা দেখছিস,' বললেন তারিণীখুড়ো, 'তা থেকে আমার ইয়াং বয়সের চেহারা তোরা কল্পনাই করতে পারবি না।' 'কীরকম চেহারা ছিল আপনার, খুড়ো?' জিজ্ঞেস করল ন্যাপলা, 'ধর্মেন্দরের মতো?' 'য্যা য্যাঃ!' বললে

39

স্পটলাইট

20 November 2023
0
0
0

ছোটনাগপুরের এই ছোট্ট শহরটায় পুজোর ছুটি কাটাতে আমরা আগেও অনেকবার এসেছি। আরও বাঙালিরা আসে; কেউ কেউ নিজেদের বাড়িতে থাকে, কেউ কেউ বাড়ি-বাংলো-হোটেল ভাড়া করে থাকে, দিন দশেকে অন্তত মাস ছয়েক আয়ু বাড়িয়ে নিয়ে

40

তারিণীখুড়ো ও বেতাল

20 November 2023
0
0
0

শ্রাবণ মাস, দিনটা ঘোলাটে, সকাল থেকে টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে, তারই মধ্যে সন্ধের দিকে তারিণীখুড়ো এসে হাজির। হাতের ভিজে জাপানি ছাতাটা সড়াত করে বন্ধ করে দরজার পাশটায় দাঁড় করিয়ে রেখে তক্তপোশে তাঁর জায়গাটায়

41

বহুরূপী

21 November 2023
0
0
0

নিউ মহামায়া কেবিনের একটি চেয়ার দখল করে হাফ কাপ চা আর আলুর চপ অর্ডার দিয়ে নিকুঞ্জ সাহা একবার চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিল। তার চেনা-পরিচিতের কেউ এসেছে কি? হ্যাঁ, এসেছে বইকী। ওই তো রসিকবাবু, আর ওই যে শ্রীধর।

42

মানপত্র

21 November 2023
0
0
0

শতদল সংস্থার সেক্রেটারি প্রণবেশ দত্ত বিস্ফোরক সংবাদটি ঘোষণা করবার পর উপস্থিত সদস্যদের মুখ দিয়ে প্রায় এক মিনিট কোনও কথা বেরোল না। ক্লাবঘরে জরুরি মিটিং বসেছে নববর্ষের পাঁচদিন আগে। মিটিং-এর উদ্দেশ্য প্রণ

43

অপদার্থ

21 November 2023
0
0
0

অপদার্থ কথাটা অনেক লোক সম্বন্ধে অনেক সময়ই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন আমাদের চাকর নবকেষ্ট। 'নব, তুই একটা অপদার্থ'-এই কথাটা ছেলেবেলায় মার মুখে অনেকবার শুনেছি। নব কিন্তু কাজ ভালই করত; দোষের মধ্যে সে ছিল

44

সাধনবাবুর সন্দেহ

21 November 2023
0
0
0

সাধনবাবু একদিন সন্ধ্যাবেলা কাজ থেকে ফিরে তাঁর ঘরে ঢুকে দেখলেন মেঝেতে একটা বিঘতখানেক লম্বা সরু গাছের ডাল পড়ে আছে। সাধনবাবু পিটপিটে স্বভাবের মানুষ। ঘরে যা সামান্য আসবাব আছে-খাট, আলমারি, আলনা, জলের কুঁজো

45

গগন চৌধুরীর স্টুডিও

21 November 2023
0
0
0

একটা ফ্ল্যাট দিনের বেলা দেখে পছন্দ হলেও, সেখানে গিয়ে থাকা না অবধি তার সুবিধে-অসুবিধেগুলো ঠিক বোঝা যায় না। সুধীন সরকার এইটেই উপলব্ধি করল ভবানীপুরের এই ফ্ল্যাটে বসবাস আরম্ভ করে। এই একটা ব্যাপারেই ভাগ্যল

46

লখনৌর ডুয়েল

21 November 2023
0
0
0

'ডুয়েল মানে জানিস?' জিজ্ঞেস করলেন তারিণীখুড়ো। 'বাঃ, ডুয়েল মানে জানব না?' বলল ন্যাপলা। 'ডুয়েল রোল, মানে দ্বৈত ভূমিকা। সন্তোষ দত্ত গুপী গাইনে ডুয়েল রোল করেছিলেন-হাল্লার রাজা, শুণ্ডীর রাজা।' 'সে ডুয়েলে

47

ধুমলগড়ের হান্টিং লজ

21 November 2023
0
0
0

'মাথায় অনেকরকম উদ্ভট শখ চাপে মানুষের', বললেন তারিণীখুড়ো, 'কিন্তু আমার যেমন চেপেছে, তেমন কজনের চাপে জানি না।' আমরা পাঁচজন ঘিরে বসেছি খুড়োকে। বাইরে এক পশলা বেশ ভাল বৃষ্টি হয়ে গিয়ে এখন সেটা অবিরাম ঝিরঝি

48

লাখপতি

21 November 2023
0
0
0

ত্রিদিব চৌধুরী আর থাকতে না পেরে বিরক্তভাবে বেয়ারাকে ডাকার বোতামটা টিপলেন। কিছুক্ষণ থেকেই তিনি অনুভব করছেন যে, কামরাটা যত ঠাণ্ডা থাকার কথা মোটেই তত ঠাণ্ডা নয়। অথচ তাঁর তিন সহযাত্রীই দিব্যি নাক ডাকিয়ে ঘ

49

খেলোয়াড় তারিণীখুড়ো

21 November 2023
0
0
0

ডিসেম্বরের ঊনত্রিশে, শীতটা পড়েছে বেশ জাঁকিয়ে। সন্ধেবেলা তারিণীখুড়ো এলেন গলায় আর মাথায় মাফলার জড়িয়ে। 'তোরা মাঠে যাচ্ছিস না খেলা দেখতে?' তক্তপোষে বসেই প্রশ্ন করলেন খুড়ো, 'নাকি দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবার ত

50

টলিউডে তারিণীখুড়ো

21 November 2023
0
0
0

তাকিয়াটাকে কোলের উপর টেনে নিয়ে আরও জমিয়ে বসে ঝুঁকে পড়ে তারিণীখুড়ো তাঁর গল্প আরম্ভ করলেন। - আমার তখন তেইশ বছর বয়স, তবে একটা তেকোনা ফ্রেঞ্চকাট গোছের দাড়ি রেখেছিলাম বলে মনে হত তেত্রিশ। বেয়াল্লিশ সালের ক

51

আমি ভূত

22 November 2023
1
0
0

আমি ভূত। আজ থেকে ঠিক সাড়ে তিন বছর আগে আমি জ্যান্ত ছিলাম। সেই সময় এই দেওঘরের এই বাড়িতেই আগুনে পুড়ে আমার জ্যান্ত অবস্থার শেষ হয়। এই বাড়ির নাম লিলি ভিলা। আমি এখানে এসেছিলাম আমার এক বন্ধুর সঙ্গে ছুটি কাটা

52

বামধনের বাঁশি

22 November 2023
0
0
0

রামধনের লোকটাকে চেনা চেনা লাগায় আরেকটু কাছে গিয়ে একটা গাছের আড়াল থেকে দেখে তার বুকের ভিতরটা হিম হয়ে গেল। দশ বছর পেরিয়ে গেলেও চিনতে কোনও অসুবিধা নেই। এই সেই খগেশবাবু। খগেশ খাস্তগির, পুরনো ইটপাথর নিয়ে ঘ

53

জুটি

22 November 2023
0
0
0

'আজ আমি একজন ফিল্মস্টারের কথা বলতে যাচ্ছি,' চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন তারিণীখুড়ো। 'কে তিনি? তাঁর নাম কী?' আমরা সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠলাম। 'তাঁর নাম তোরা শুনিসনি,' বললেন তারিণীখুড়ো। 'তিনি যখন রিটায়ার করেন তখন

54

মাস্টার অংশুমান

22 November 2023
0
0
0

সেই সকালটার কথা আমি কোনওদিন ভুলতে পারব না। সেদিন ছিল রবিবার। তিনদিন ধরে সমানে বাদলা করে সেদিনই প্রথম ঝলমলে রোদ বেরিয়েছে। আমি একটা অঙ্ক কষে আমার খাতাটা বন্ধ করেছি এমন সময় বিশুদা এল। বিশুদা, বিশ্বনাথ গা

55

নিধিরামের ইচ্ছাপূরণ

22 November 2023
0
0
0

কোনও মানুষই তার নিজের অবস্থা সম্পর্কে ষোলো আনা সন্তুষ্ট বোধ করে না। কোনও-না-কোনও ব্যাপারে একটা খুঁতখুঁতেমির ভাব প্রায় সবার মধ্যেই থাকে। রাম ভাবে তার শরীরে আরও মাংস হল না কেন-হাড়গুলো বড্ড বেশি বেরিয়ে থ

56

কানাইয়ের কথা

22 November 2023
0
0
0

নসু কবরেজ প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে বলরামের নাড়ি ধরে বসে রইলেন। শিয়রের কাছে দাঁড়িয়ে বলরামের সতেরো বছরের ছেলে কানাই কবরেজের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে আছে। আজ দশদিন হল তার বাপের অসুখ। কোনও কিছু খাবারে তার রুচি নেই;

57

রতন আর লক্ষ্মী

23 November 2023
0
0
0

ঠিক কখন থেকে রতনের মনটা খুশিতে ভরে আছে সেটা রতন জানে। দশদিন আগে ছিল চৈত্র সংক্রান্তি। রতন থাকে শিমুলিতে। সেখান থেকে চার ক্রোশ দূরে উজলপুরে সংক্রান্তির খুব বড় মেলা হয়। রতন গিয়েছিল সেই মেলা দেখতে। শুধু

58

গঙ্গারামের কপাল

23 November 2023
0
0
0

নদীর ধারে খোলামকুচি দিয়ে ব্যাঙবাজি খেলতে খেলতে হঠাৎ গঙ্গারামের চোখে পড়ল পাথরটা। এ নদীতে জল নেই বেশি; যেখানে সবচেয়ে গভীর সেখানেও হাঁটু ডোবে না। জলটা কাচের মতো স্বচ্ছ, তাই তার নীচে লাল নীল সবুজ হলদে খয়ে

59

সুজন হরবোলা

23 November 2023
0
0
0

সুজনের বাড়ির পিছনেই ছিল একটা সজনে গাছ। তাতে থাকত একটা দোয়েল। সুজনের যখন আট বছর বয়স তখন একদিন দোয়েলের ডাক শুনে সে ভাবল-আহা, এ পাখির ডাক কেমন মিষ্টি। মানুষে কি কখনও এমন ডাক ডাকতে পারে? সুজন সেইদিন থেকে

60

নিতাই ও মহাপুরুষ

23 November 2023
0
0
0

কোনও এক জ্ঞানী ব্যক্তি বলে গেছেন যে মানুষের মধ্যে বেশিরভাগই মাঝারি দলে পড়ে। কথাটা হয়তো সত্যি, কিন্তু নিতাইকে মাঝারিও বলা চলে না। অনেক ব্যাপারেই সে অত্যন্ত খাটো। দেহের দিক দিয়ে যেমন, মনের দিক দিয়েও ছেল

61

মহারাজা তারিণীখুড়ো

23 November 2023
0
0
0

'আজ আপনার কপালে ভ্রুকুটি কেন খুড়ো?' জিজ্ঞেস করল ন্যাপলা। এটা অবিশ্যি আমিও লক্ষ করেছিলাম। খুড়ো তক্তপোশের উপর বাবু হয়ে বসে ডান হাতটা পায়ের পাতায় রেখে অল্প অল্প দুলছেন, তাঁর কপালে ভাঁজ। খুড়ো বললেন, 'এই

62

হাউই

23 November 2023
0
0
0

জয়ন্ত নন্দী : ছোটদের পত্রিকা 'হাউই'-এর সম্পাদক তরুণ সান্যাল : জয়ন্তর বন্ধু তিনকড়ি ধাড়া: 'হাউই'-এর দপ্তরের কর্মচারী। কাজ-বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করা তন্ময় সেনগুপ্ত: লেখক মুকুল : দপ্তরের কর্মচারী ধনঞ্জয়/

63

প্রতিকৃতি

23 November 2023
0
0
0

রঞ্জন পুরকায়স্থ কলকাতার একজন নামকরা চিত্রকর। শুধু কলকাতা কেন, তাঁর খ্যাতি পশ্চিমবাংলার বাইরে সারা ভারতবর্ষেই ছড়িয়ে পড়েছে-বোম্বাই, মাদ্রাজ, দিল্লি, ব্যাঙ্গালোর, হায়দ্রাবাদে তাঁর আঁকা ছবির প্রদর্শনী হয়ে

64

তারিণীখুড়ো ও ঐন্দ্রজালিক

23 November 2023
0
0
0

'কই, আর সব কই?' বললেন তারিণীখুড়ো। 'সব্বাইকে খবর দে, নইলে গল্প জমবে কী করে?' আমি বললাম, 'খবর পাঠানো হয়ে গেছে খুড়ো। এই এসে পড়ল বলে!' 'তা হলে এই ফাঁকে চা-টা বলে দে।' বললাম, 'তাও বলা হয়ে গেছে-দুধ চিনি ছা

65

অনুকূল

23 November 2023
0
0
0

'এর একটা নাম আছে তো?' নিকুঞ্জবাবু জিজ্ঞেস করলেন। 'আজ্ঞে হ্যাঁ, আছে বইকী।' 'কী বলে ডাকব?' 'অনুকূল।' চৌরঙ্গিতে রোবট সাপ্লাই এজেন্সির দোকানটা খুলেছে মাস ছয়েক হল। নিকুঞ্জবাবুর অনেকদিনের শখ একটা যান্ত্

66

কাকতাড়ুয়া

24 November 2023
0
0
0

মৃগাঙ্কবাবুর সন্দেহটা যে অমূলক নয় সেটা প্রমাণ হল পানাগড়ের কাছাকাছি এসে। গাড়ির পেট্রল ফুরিয়ে গেল। পেট্রলের ইনডিকেটরটা কিছুকাল থেকেই গোলমাল করছে, সে-কথা আজও বেরোবার মুখে ড্রাইভার সুধীরকে বলেছেন, কিন্তু

67

নরিস সাহেবের বাংলো

24 November 2023
0
0
0

তারিণীখুড়োকে ঘিরে আমরা পাঁচ বন্ধু বসেছি, বাদলা দিন, সন্ধে হব-হব, খুড়োর চা খাওয়া হয়ে গেছে। এবার বিড়ি ধরিয়ে হয়তো গল্প শুরু করবেন। খুড়ো এলে সন্ধেতেই আসেন, আর এলেই একটি করে গল্প লাভ হয় আমাদের। সবই খুড়োর জ

68

কুটুম-কাটাম

24 November 2023
0
0
0

'কোথায় পেলি এটা?' 'আমাদের বাড়ির কাছেই ছিল,' বলল দিলীপ। 'একটা জমি পড়ে আছে কাঠা তিনেক, তাতে কয়েকটা গাছ আর ঝোপঝাড়। একটা গাছের নীচে এটা পড়ে ছিল। অলোকের বাড়িতে সেদিন দেখছিলাম একটা গাছের গুঁড়িকে কেটে তার উপ

69

টেলিফোন

24 November 2023
0
0
0

ক্রিং-ক্রিং... ক্রিং-ক্রিং... ক্রিং-ক্রিং... বীরেশবাবু বিরক্ত হয়ে খাটের পাশের টেবিলের ওপর রাখা টেলিফোনটার দিকে দেখলেন। টেলিফোনের পাশেই ঘড়ি, তাতে বারোটা বাজে। রাত বারোটা। বীরেশবাবু সবে হাতের বইটা বন্ধ

70

গণেশ মুৎসুদ্দির পোট্রেট

24 November 2023
0
0
0

সুখময় সেনের বয়স পঁয়ত্রিশ। এই বয়সেই সে চিত্রকর হিসাবে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে। পোর্ট্রেটেই তার দক্ষতা বেশি। সমঝদারেরা বলে সুখময় সেনের আঁকা কোনও মানুষের প্রতিকৃতি দেখলে সেই মানুষের জ্যান্ত রূপ দেখতে পাওয়

71

মৃগাঙ্কবাবুর ঘটনা

24 November 2023
0
0
0

মৃগাঙ্কবাবু তাঁর সহকর্মী সলিল বসাকের কাছ থেকে প্রথম জানতে পারলেন যে বাঁদর থেকে মানুষের উদ্ভব হয়েছে। এ খবর আজকের দিনে শিক্ষিত লোকমাত্রই জানে, কিন্তু ঘটনাচক্রে খবরটা মৃগাঙ্কবাবুর গোচরে আসেনি। আসলে তাঁর

72

নতুন বন্ধু

24 November 2023
0
0
0

বর্ধমান স্টেশনের রেস্টোর‍্যান্টে ভদ্রলোক নিজেই যেচে এসে আলাপ করলেন। ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি আর গোঁফ, মোটামুটি আমারই বয়সী-অর্থাৎ বছর চল্লিশ-বেয়াল্লিশ-বেশ হাসিখুশি অমায়িক হাবভাব। বারোটা বাজে, তাই লাঞ্চটা সেরে ন

73

শিশু সাহিত্যিক

24 November 2023
0
0
0

ছোটদের মাসিক পত্রিকা 'বহুরূপী' এক বছর হল বেরোচ্ছে। সম্পাদক সুপ্রকাশ সেনগুপ্ত আপ্রাণ চেষ্টা করেন কাগজটাকে ভাল করতে। টাকার জোর নেই, তাই কাজটা সহজ নয়। গ্রাহক সংখ্যা দেড় হাজারের মতো; বিজ্ঞাপন যা আসে তার থ

74

মহিম সান্যালের ঘটনা

24 November 2023
0
0
0

তারিণীখুড়ো তাকিয়াটা বুকের কাছে টেনে নিয়ে বললেন, 'চমকলালের কথা তো তোদের বলেছি, তাই না?' 'হ্যাঁ হ্যাঁ,' বলল ন্যাপলা। 'সেই ম্যাজিশিয়ান তো? যাঁর আপনি ম্যানেজার ছিলেন?' 'হ্যাঁ। কিন্তু আরেকজন জাদুকর আছেন

75

গণৎকার তারিণীখুড়ো

24 November 2023
0
0
0

তারিণীখুড়োর এক ভাইপো এক চা কোম্পানিতে ভাল কাজ করে, সে খুড়োকে এক টিন স্পেশাল কোয়ালিটির চা দিয়েছে। খুড়ো টিনটা আমার হাতে চালান দিয়ে বললেন, 'এটা খোলাবার ব্যবস্থা কর; আজ তোদের চা না খেয়ে এইটে খাব।' বৈশাখ

76

গল্পবলিয়ে তারিণীখুড়ো

24 November 2023
0
0
0

'তোরা তো আমাকে গল্পবলিয়ে বলেই জানিস', বললেন তারিণীখুড়ো, 'কিন্তু এই গল্প বলে যে আমি এককালে রোজগার করেছি সেটা কি জানিস?' 'না বললে জানব কী করে?' বলল ন্যাপলা। 'সে আজ থেকে বাইশ বছর আগের কথা,' বললেন তারিণ

77

নিতাইবাবুর ময়না

24 November 2023
0
0
0

নিতাইবাবুর অনেকদিনের শখ একটা ময়না কেনার। তাঁর বন্ধু শশাঙ্ক সেনের বাড়িতে একটা ময়না আছে। সেটা হেন বাংলা কথা নেই যে বলে না। তার কথা শুনতেই নিতাইবাবু মাসে অন্তত তিনবার করে শশাঙ্কবাবুর বাড়িতে যান। সেদিন তো

78

রন্টুর দাদু

24 November 2023
0
0
0

রন্টুর বয়স পনেরো, কিন্তু এর মধ্যেই তার গানের গলা হয়েছে চমৎকার। সে সকালে ওস্তাদের কাছে একঘণ্টা গান শেখে। যে তার গান শোনে সেই বলে, 'এ ছেলে আর কয়েক বছরের মধ্যেই আসরে গান গাইবে।' এ গুণটা যে সে কোথা থেকে প

79

সহযাত্রী

24 November 2023
0
0
0

ত্রিদিববাবুর সাধারণত একটা হালকা বই পড়েই সময়টা কেটে যায়। কলকাতা থেকে দিল্লি ট্রেনে যাওয়া। কাজের জন্যই যেতে হয় দু মাসে অন্তত একবার। একটা ইলেকট্রনিক্স কোম্পানিতে উচ্চপদস্থ কর্মচারী তিনি, হেড আপিস দিল্লিত

80

ব্রজবুড়ো

25 November 2023
0
0
0

শঙ্কর চৌধুরী আধখানা হাতের রুটি ছিঁড়ে ডালে চুবিয়ে মুখে পুরে একবার পাশে বসা ছেলের দিকে চেয়ে নিলেন। তারপর চিবোতে চিবোতে বললেন, 'তোকে একটা কথা বলব-বলব করেও বলা হয়নি। আমাদের ডাইনে একটা বাড়ির পরে একটা দোতলা

81

দুই বন্ধু

25 November 2023
0
0
0

মহিম বাঁ হাতের কবজি ঘুরিয়ে হাতের ঘড়িটার দিকে এক ঝলক দৃষ্টি দিল। বারোটা বাজতে সাত। কোয়ার্টজ ঘড়ি-সময় ভুল হবে না। সে কিছুক্ষণ থেকেই তার বুকের মধ্যে একটা স্পন্দন অনুভব করছে, যেটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। বিশ বছ

82

শিল্পী

25 November 2023
0
0
0

অবনীশ ছবিটার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল। অয়েল পেন্টিং। একজন মাঝবয়সি সুপুরুষ ভদ্রলোকের পোর্ট্রেট। অবনীশের স্টুডিওর এক কোনায় আরও আট-দশটা ছবির পিছনে দাঁড় করানো ছিল। অবনীশের আঁকা প্রথম অয়েল পোর্ট্রেট। গভর্নমে

83

অক্ষয়বাবুর শিক্ষা

25 November 2023
0
0
0

অক্ষয়বাবু ছেলের হাত থেকে লেখাটা ফেরত নিলেন। 'কী রে-এটাও চলবে না?' ছেলে মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিল-না, চলবে না। এটা অক্ষয়বাবুর পাঁচ নম্বর গল্প যেটা ছেলে নাকচ করে দিল। অক্ষয়বাবুর ছেলের নাম অঞ্জন। তার বয়স চ

84

প্রসন্ন স্যার

25 November 2023
0
0
0

অর্ধেন্দু সেনগুপ্ত সাতদিনের ছুটি নিয়ে শিমুলতলায় এসেছে। সে একটা ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে ভাল চাকরি করে, যদিও মাত্র পঁচিশ বছর বয়স। চেহারা সুশ্রী, চলনে বলনে রীতিমতো স্মার্ট। ব্যাচেলার হিসেবে তার এই শেষ ছুটি ভ

85

অভিরাম

25 November 2023
0
0
0

'তোমার নাম কী?' 'অভিরাম সাউ, বাবু।' 'তোমার বাড়ি কোথায়?' 'উলুইপুর গাঁয়ে বাবু। উড়িষ্যা।' 'বাড়িতে আছে কে?' 'আমার দাদা আছে, বউদি আছে, দুই ভাইপো আছে।' 'তোমার বাড়ি যেতে হয় না?' 'কালে ভদ্রে বাবু। আমি

86

ব্লু-জন গহ্বরের বিভীষিকা (অনুবাদ)

25 November 2023
0
0
0

    ১৯০৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সাউথ কেনসিংটনের ৩৬ নং আপার কভেন্ট্রি ফ্ল্যাটে যক্ষ্মা রোগে ডাঃ জেমস হার্ডকালের মৃত্যুর পর, তাঁর কাগজপত্রের মধ্যে নিম্নলিখিত কাহিনীটি পাওয়া যায়। যাঁরা হার্ডকাফ্লকে ঘনিষ্ঠভাব

87

মোল্লা নাসিরুদ্দিনের গল্প (অনুবাদ)

25 November 2023
0
0
0

☆☆☆ নাসিরুদ্দিনের বন্ধুরা একদিন তাকে বললে, 'চলো, আজ রাত্রে আমরা তোমার বাড়িতে খাব।' 'বেশ, এসো আমার সঙ্গে', বললে নাসিরুদ্দিন। বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে সে বললে, 'তোমরা একটু সবুর করো, আমি আগে গিন্নিকে বলে আ

88

মোল্লা নাসিরুদ্দিনের আরো গল্প (অনুবাদ)

25 November 2023
0
0
0

একদিন এক জ্ঞাতি এসে নাসিরুদ্দিনকে একটা হাঁস উপহার দিলে। নাসিরুদ্দিন ভারী খুশি হয়ে সেটার মাংস রান্না করে জ্ঞাতিকে খাওয়ালে। কয়েকদিন পরে মোল্লাসাহেবের কাছে একজন লোক এসে বললে, 'আপনাকে যিনি হাঁস দিয়েছিলে

89

মোল্লা নাসিরুদ্দিনের আরো গল্প (অনুবাদ)

26 November 2023
0
0
0

রাজদরবারে নাসিরুদ্দিনের খুব খাতির। একদিন খুব খিদের মুখে বেগুন ভাজা খেয়ে ভারী খুশি হয়ে রাজা নাসিরুদ্দিনকে বললেন, 'বেগুনের মতো এমন সুস্বাদু খাদ্য আর আছে কি?' 'বেগুনের জবাব নেই,' বললে নাসিরুদ্দিন। রাজ

90

আবার মোল্লা নাসিরুদ্দিন (অনুবাদ)

26 November 2023
0
0
0

রাজামশাই একদিন নাসিরুদ্দিনকে ডেকে বললেন, 'বনে গিয়ে ভাল্লুক মেরে আনো।' নাসিরুদ্দিন রাজার আদেশ অমান্য করে কী করে? অগত্যা তাকে যেতেই হল। বন থেকে ফেরার পর একজন তাকে জিজ্ঞেস করলে, 'কেমন হল শিকার, মোল্লাসাহ

91

আর এক দফা মোল্লা নাসিরুদ্দিন (অনুবাদ)

26 November 2023
1
0
0

☆☆☆ নাসিরুদ্দিন রাস্তা দিয়ে হাঁটছে, পাশে ফুলে ফলে ভরা বাগিচা দেখে তার মধ্যে গিয়ে ঢুকল। প্রকৃতির শোভাও উপভোগ করা হবে, শর্টকাটও হবে। কিছুদূর যেতে না যেতেই নাসিরুদ্দিন এক গর্তের মধ্যে পড়ল, আর পড়তেই তার

92

ব্রেজিলের কালো বাঘ (অনুবাদ)

26 November 2023
0
0
0

মেজাজটা বনেদি, প্রত্যাশা অসীম, অভিজাত বংশের রক্ত বইছে ধমনীতে, অথচ পকেটে পয়সা নেই, রোজগারের কোনও রাস্তা নেই-একজন যুবকের পক্ষে এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে? আমার বাবা ছিলেন সহজ, সরল মানুষ। তাঁর দাদা

93

মঙ্গলই স্বর্গ (অনুবাদ)

26 November 2023
0
0
0

মহাকাশ থেকে রকেটটা নেমে আসছে তার গন্তব্যস্থলের দিকে। এতদিন সেটা ছিল তারায় ভরা নিঃশব্দ নিকষ কালো মহাশূন্যে একটি বেগবান ধাতব উজ্জ্বলতা। অগ্নিগর্ভ রকেটটা নতুন। এর দেহ থেকে নিঃসৃত হচ্ছে উত্তাপ। এর কক্ষের

94

ঈশ্বরের ন' লক্ষ কোটি নাম (অনুবাদ)

27 November 2023
0
0
0

'আপনাদের অর্ডারটা একটু অস্বাভাবিক ধরনের', বিস্ময়ের মাত্রাটা যথাসম্ভব কমিয়ে বললেন ডাঃ ওয়াগনার- 'আমি যতদূর জানি, এর আগে কোনও তিব্বতি গুম্ফা থেকে অটোমেটিক সিকুয়েন্স কম্পিউটারের জন্য অর্ডার আসেনি। আপনাদের

95

ইহুদির কবচ (অনুবাদ)

27 November 2023
0
0
0

প্রাচ্যের পুরাতত্ত্ব সম্পর্কে আমার বিশিষ্ট বন্ধু ওয়র্ড মর্টিমারের জ্ঞান ছিল অসামান্য। সে এ বিষয়ে বিস্তর প্রবন্ধ লিখেছিল, মিশরের ভ্যালি অফ দ্য কিংস-এ খননকার্য তদারকের সময় একটানা দু' বছর থিবিসের একটি সম

96

ময়ূরকণ্ঠি জেলি (অনুবাদ)

27 November 2023
0
0
0

শশাঙ্ক টেবিলের উপর থেকে খাতাটা তুলে নিল। নীল মলাটের ছোট সাইজের সাধারণ নোটবুক! দাম বোধহয় আজকের দিনে আনা আষ্টেক। কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে শশাঙ্ক এরকম নোটবুক ব্যবহার করেছে, তখন দাম ছিল দু'আনা। মনে আছে

97

সবুজ মানুষ (অনুবাদ)

27 November 2023
0
0
0

আমি যার কথা লিখতে যাচ্ছি তার সঙ্গে সবুজ মানুষের কোনও সম্পর্ক আছে কিনা, তা আমার সঠিক জানা নেই। সে নিজে পৃথিবীরই মানুষ, এবং আমারই একজন বিশিষ্ট বন্ধু-স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক-প্রফেসর নারা

98

আর্যশেখরের জন্ম ও মৃত্যু (অনুবাদ)

27 November 2023
1
0
0

অনেকের মতে আর্যশেখর ছিলেন যাকে ইংরাজিতে বলে চাইল্ড প্রডিজি। তাঁর যখন দশ বছর বয়স তখন একদিন স্টেটসম্যান পত্রিকার প্রথম পাতায় নীচের দিকে এক লাইন লেখা তাঁর চোখে পড়ল-সান রাইজেজ টুডে অ্যাট সিক্স থার্টিন এ এ

99

পিকুর ডায়রি (অনুবাদ)

27 November 2023
0
0
0

আমি ডাইরি লিখছি। আমি আমার নীল নতুন নীল খাতায় ডাইরি লিখছি। আমি আমার বিছানার উপর বসে লিখছি। দাদুও ডাইরি রোজ লেখে কিন্তু এখন না এখন অসুক করেছিল তাই। সেই অসুকটার নাম আমি জানি আর নামটা করোনানি থমবোসি। বাবা

---