☆☆☆
নাসিরুদ্দিনের বন্ধুরা একদিন তাকে বললে, 'চলো, আজ রাত্রে আমরা তোমার বাড়িতে খাব।' 'বেশ, এসো আমার সঙ্গে', বললে নাসিরুদ্দিন।
বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে সে বললে, 'তোমরা একটু সবুর করো, আমি আগে গিন্নিকে বলে আসি
ব্যবস্থা করতে।' গিন্নি তো ব্যাপার শুনে এই মারে তো সেই মারে। বললেন, 'চালাকি পেয়েছ? এত লোকের রান্না কি চাট্টিখানি কথা? যাও, বলে এসো ওসব হবে-টবে না।'
নাসিরুদ্দিন মাথায় হাত দিয়ে বললে, 'দোহাই গিন্নি, ও আমি বলতে পারব না। ওতে আমার ইজ্জত
থাকবে না।'
'তবে তুমি ওপরে গিয়ে ঘরে বসে থাকো। ওরা এলে যা বলার আমি বলব।'
এদিকে নাসিরুদ্দিনের বন্ধুরা প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে শেষটায় তার বাড়ির সামনে এসে হাঁক দিল, 'ওহে নাসিরুদ্দিন, আমরা এসেছি, দরজা খোলো।'
দরজা ফাঁক হল, আর ভিতর থেকে শোনা গেল গিন্নির গলা।
'ও বেরিয়ে গেছে।'
বন্ধুরা অবাক! 'কিন্তু আমরা তো ওকে ভিতরে ঢুকতে দেখলাম। আর সেই থেকে তো আমরা দরজার দিকেই চেয়ে আছি। ওকে তো বেরোতে দেখিনি।' গিন্নি চুপ। বন্ধুরা উত্তরের অপেক্ষা করছে। নাসিরুদ্দিন দোতলার ঘর থেকে সব শুনে আর থাকতে
না পেরে বললে, 'তোমরা তো সদর দরজায় চোখ রেখেছ; সে বুঝি খিড়কি দিয়ে বেরোতে পারে না?'
নাসিরুদ্দিন তার বাড়ির বাইরে বাগানে কী যেন খুঁজছে। তাই দেখে এক পড়শি জিজ্ঞেস করলে, 'ও মোল্লাসাহেব, কী হারালে গো?' 'আমার চাবিটা', বললে নাসিরুদ্দিন।তাই শুনে লোকটিও বাগানে এসে চাবি খুঁজতে লাগল। কিছুক্ষণ খোঁজার পর সে জিজ্ঞেস করলে, 'ঠিক কোনখানটায় ফেলেছিলে চাবিটা, মনে পড়ছে?'
'আমার ঘরে।'
'সে কী! তা হলে এখানে খুঁজছ কেন?'
'ঘরটা অন্ধকার', বললে নাসিরুদ্দিন। 'যেখানে খোঁজার সুবিধে সেইখানেই তো খুঁজব!'
নাসিরুদ্দিনের পোষা পাঁঠাটার উপর পড়শিদের ভারী লোভ, কিন্তু নানান ফিকির করেও তারা সেটাকে হাত করতে পারে না। শেষটায় একদিন তারা নাসিরুদ্দিনকে বললে, 'ও মোল্লাসাহেব, বড় দুঃসংবাদ। কাল নাকি প্রলয় হবে। এই দুনিয়ার সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।'
'তা হলে পাঁঠাটাকেও ধ্বংস করা হোক', বললে নাসিরুদ্দিন। সন্ধেবেলা পড়শিরা দলেবলে এসে দিব্যি ফুর্তিতে পাঁঠার ঝোল খেয়ে গায়ের জামা খুলে নাসিরুদ্দিনের বৈঠকখানায় নাক ডাকিয়ে ঘুমোতে লাগল। সকালে ঘুম থেকে উঠে তারা দেখে তাদের জামা উধাও।
'প্রলয়ই যদি হবে,' বললে নাসিরুদ্দিন, 'তা হলে জামাগুলো আর কোন কাজে লাগবে ভাই? তাই আমি সেগুলোকে আগুনে ধ্বংস করে ফেলেছি।
فا
নাসিরুদ্দিন বাজার থেকে মাংস কিনে এনে তার গিন্নিকে দিয়ে বললে, 'আজ কাবাব খাব; বেশ ভাল করে রাঁধো দিকি।'
গিন্নি রান্নাটান্না করে লোভে পড়ে নিজেই সব মাংস খেয়ে ফেললে। কর্তাকে তো আর সে-কথা বলা যায় না, বললে, 'বেড়াল খেয়ে ফেলেছে।' 'এক সের মাংস সবটা খেয়ে ফেলল?' 'সবটা।'
বেড়ালটা কাছেই ছিল, নাসিরুদ্দিন সেটাকে দাঁড়িপাল্লায় চড়িয়ে দেখলে ওজন ঠিক এক সের। 'এটাই যদি সেই বেড়াল হয়', বললে নাসিরুদ্দিন, 'তা হলে মাংস কোথায়? আর এটাই যদি সেই মাংস হয়, তা হলে বেড়াল কোথায়?' নাসিরুদ্দিনের যখন বয়স খুব কম তখন একদিন তার বাপ তাকে বললেন, 'ওরে নসু, এবার থেকে খুব ভোরে উঠিস।'
'কেন বাবা?'
'অভ্যেসটা ভাল,' বললেন নসুর বাপ। 'আমি সেদিন ভোরে উঠে বেড়াতে গিয়ে রাস্তার মধ্যিখানে পড়ে থাকা এক থলে মোহর পেয়েছি।'
'সে থলে তো আগের দিন রাত্রেও পড়ে থাকতে পারে, বাবা।' 'সেটা কথা নয়। আর তা ছাড়া আগের দিন রাত্রেও ওই পথ দিয়ে হাঁটছিলুম আমি; তখন কোনও
মোহরের থলে ছিল না।' 'তা হলে ভোরে উঠে লাভ কী বাবা?' বললে নাসিরুদ্দিন। 'যে লোক মোহরের থলি হারিয়েছিল
সে নিশ্চয় তোমার চেয়েও বেশি ভোরে উঠেছিল।'
শিকারে বেরিয়ে পথে প্রথমেই নাসিরুদ্দিনের সামনে পড়ে রাজামশাই খেপে উঠলেন। 'লোকটা অপয়া। আজ আমার শিকার পণ্ড। ওকে চাবকে হটিয়ে দাও।'
রাজার হুকুম তামিল হল। কিন্তু শিকার হল জবরদস্ত।
রাজা নাসিরুদ্দিনকে ডেকে পাঠালেন।
'কসুর হয়ে গেছে নাসিরুদ্দিন। আমি ভেবেছিলাম তুমি অপয়া। এখন দেখছি তা নয়।'
নাসিরুদ্দিন তিন হাত লাফিয়ে উঠল। 'আপনি ভেবেছিলেন আমি অপয়া? আমায় দেখে আপনি ছাব্বিশটা হরিণ মারলেন, আর আপনাকে দেখে আমি বিশ ঘা চাবুক খেলাম। অপয়া যে কে, সেটা বুঝতে পারলেন না?'
کا
নাসিরুদ্দিন একজন লোককে মুখ ব্যাজার করে রাস্তার ধারে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলে, তার কী হয়েছে। লোকটা বললে, 'আমার জীবন বিষময় হয়ে গেছে মোল্লাসাহেব। হাতে কিছু পয়সা ছিল, তাই নিয়ে দেশ ঘুরতে বেরিয়েছি, যদি কোনও সুখের সন্ধান পাই।'
লোকটির পাশে তার বোঁচকায় কতগুলো জিনিসপত্র রাখা ছিল। তার কথা শেষ হওয়ামাত্র নাসিরুদ্দিন সেই বোঁচকাটা নিয়ে বেদম বেগে দিলে চম্পট। লোকটাও হাঁ হাঁ করে তার পিছু নিয়েছে, কিন্তু নাসিরুদ্দিনকে ধরে কার সাধ্য! দেখতে দেখতে সে রাস্তা ছেড়ে জঙ্গলে ঢুকে হাওয়া। এইভাবে লোকটিকে মিনিটখানেক ধোঁকা দিয়ে সে আবার সদর রাস্তায় ফিরে বোঁচকাটাকে রাস্তার মাঝখানে রেখে একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে রইল। এদিকে সেই লোকটিও কিছুক্ষণ পরে এসে হাজির। তাকে এখন আগের চেয়েও দশগুণ বেশি বেজার দেখাচ্ছে। কিন্তু রাস্তায় তার বোঁচকাটা পড়ে আছে দেখেই সে মহাফুর্তিতে একটা চিৎকার দিয়ে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।
গাছের আড়াল থেকে নাসিরুদ্দিন বললে, 'দুঃখীকে সুখের সন্ধান দেবার এও একটা উপায়।'
তর্কবাগীশ মশাই নাসিরুদ্দিনের সঙ্গে তর্ক করবেন বলে দিনক্ষণ ঠিক করে তার বাড়িতে এসে দেখেন মোল্লাসাহেব বেরিয়ে গেছেন। মহা বিরক্ত হয়ে তিনি মোল্লার সদর দরজায় খড়ি দিয়ে লিখে গেলেন 'মূর্খ'।
নাসিরুদ্দিন বাড়ি ফিরে এসে কাণ্ড দেখে এক হাত জিভ কেটে এক দৌড়ে তর্কবাগীশ মশাইয়ের বাড়ি গিয়ে তাঁকে বললে, 'ঘাট হয়েছে পণ্ডিতমশাই, আমি বেমালুম ভুলে গেসলুম আপনি আসবেন। শেষটায় বাড়ি ফিরে দরজায় আপনার নামটা লিখে গেছেন দেখে মনে পড়ল।'
গাঁয়ের লোকে একদিন ঠিক করল নাসিরুদ্দিনকে নিয়ে একটু মশকরা করবে। তারা তার কাছে গিয়ে সেলাম ঠুকে বললে, 'মোল্লাসাহেব, আপনার এত জ্ঞান, একদিন মসজিদে এসে আমাদের তত্ত্বকথা শোনান না!' নাসিরুদ্দিন এককথায় রাজি।
দিন ঠিক করে ঘড়ি ধরে মসজিদে হাজির হয়ে নাসিরুদ্দিন উপস্থিত সবাইকে সেলাম জানিয়ে বললে, 'ভাই সকল, বলো তো দেখি আমি এখন তোমাদের কী বিষয় বলতে যাচ্ছি?' সবাই বলে উঠল, 'আজ্ঞে সে তো আমরা জানি না।'
মোল্লা বলল, 'এটাও যদি না জানো তা হলে আর আমি কী বলব! যাদের বলব তারা এত অজ্ঞ হলে চলে কী করে?'
☆☆☆এই বলে নাসিরুদ্দিন রাগে গজগজ করতে করতে মসজিদ ছেড়ে সোজা বাড়ি চলে এল। গাঁয়ের লোক নাছোড়বান্দা। তারা আবার তার বাড়িতে গিয়ে হাজির। 'আজ্ঞে, আসছে শুক্রবার আপনাকে আর একটিবার আসতেই হবে মসজিদে।'
নাসিরুদ্দিন গেল, আর আবার সেই প্রথম দিনের প্রশ্ন দিয়েই শুরু করল। এবার সব লোকে একসঙ্গে
বলে উঠল, 'আজ্ঞে হ্যাঁ, জানি।' 'সবাই জেনে ফেলেছ? তা হলে তো আর আমার কিছু বলার নেই', এই বলে নাসিরুদ্দিন আবার বাড়ি ফিরে গেল। গাঁয়ের লোক তবুও ছাড়ে না। পরের শুক্রবার নাসিরুদ্দিন আবার মসজিদে হাজির হয়ে তার সেই বাঁধা প্রশ্ন করল। এবার আর মোল্লাকে রেহাই দেবে না গাঁয়ের লোক, তাই অর্ধেক বলল 'জানি', অর্ধেক বলল 'জানি না।'
'বেশ, তা হলে যারা জানো তারা বলো, আর যারা জানো না তারা শোনো' এই বলে নাসিরুদ্দিন
আবার ঘরমুখো হল।
নাসিরুদ্দিন বাড়ির ছাতে কাজ করছে, এমন সময় এক ভিখিরি রাস্তা থেকে হাঁক দিল, 'মোল্লাসাহেব, একবারটি নীচে আসবেন?' নাসিরুদ্দিন ছাত থেকে রাস্তায় নেমে এল। ভিখিরি বলল, 'দুটি ভিক্ষে দেবেন মোল্লাসাহেব?' 'তুমি এই কথাটা বলার জন্য আমায় ছাত থেকে নামালে?'
ভিখিরি কাঁচুমাচু হয়ে বললে, 'মাফ করবেন মোল্লাসাহেব,-গলা ছেড়ে ভিক্ষে চাইতে শরম লাগে।'
'ই...তা তুমি ছাতে এসো আমার সঙ্গে।'
ভিখিরি তিনতলার সিঁড়ি ভেঙে ছাতে ওঠার পর নাসিরুদ্দিন বললে, 'তুমি এসো হে; ভিক্ষেটিক্ষে
হবে না।'
নাসিরুদ্দিন লেখাপড়া বেশি জানে না ঠিকই, কিন্তু তার গাঁয়ে এমন লোক আছে যাদের বিদ্যে তার চেয়েও অনেক কম। তাদেরই একজন নাসির দ্দিনকে দিয়ে নিজের ভাইকে একটা চিঠি লেখালে। লেখা শেষ হলে পর সে বললে, 'মোল্লাসাহেব কী লিখলেন একবারটি পড়ে দেন, যদি কিছু বাদটাদ গিয়ে থাকে।' নাসিরুদ্দিন 'প্রিয় ভাই আমার' পর্যন্ত পড়ে ঠেকে গিয়ে বললে, 'পরের কথাটা 'বাক্স' না 'গরম' না 'ছাগল' সেটা বোঝা যাচ্ছে না।'
'সে কী মোল্লাসাহেব, আপনার লেখা চিঠি আপনিই পড়তে পারেন না তো অপরে পড়বে কী করে?' 'সেটা আমি কী জানি?' বললে নাসিরুদ্দিন। 'আমায় লিখতে বললে আমি লিখলাম। পড়াটাও কি আমার কাজ নাকি?'
লোকটা কিছুক্ষণ ভেবে মাথা নেড়ে বললে, 'তা ঠিকই বললেন বটে। আর এ চিঠি তো আপনাকে লেখা নয়, কাজেই আপনি পড়তে না পারলে আর ক্ষতি কী?' 'হক কথা', বললে নাসিরুদ্দিন।
خان
নাসিরুদ্দিন একবার ভারতবর্ষে এসে এক সাধুর দেখা পেয়ে ভাবলে, 'আমার মতো জ্ঞানপিপাসু ব্যক্তির পক্ষে সাধুর সাক্ষাৎ পাওয়া পরম সৌভাগ্য। এঁর সঙ্গে আলাপ না করলেই নয়!'
তাঁকে জিজ্ঞেস করতে সাধু বললেন তিনি একজন যোগী; ঈশ্বরের সৃষ্ট যত প্রাণী আছে সকলের সেবাই তাঁর ধর্ম।
নাসিরুদ্দিন বললে, 'ঈশ্বরের সৃষ্টি একটি মৎস্য একবার আমাকে মৃত্যুর কবল থেকে রক্ষা করেছিল।' এ-কথা শুনে যোগী আহ্লাদে আটখানা হয়ে বললেন, 'আমি এত দীর্ঘকাল প্রাণীর সেবা করেও তাদের এত অন্তরঙ্গ হতে পারিনি। একটি মৎস্য আপনার প্রাণরক্ষা করেছে শুনে এই দেখুন আমার রোমাঞ্চ হচ্ছে। আপনি আমার সঙ্গে থাকবেন না তো কে থাকবে?'
নাসিরুদ্দিন যোগীর সঙ্গে থেকে তার কাছ থেকে যোগের নানা কসরত শিক্ষা করলে। শেষে একদিন
যোগী বললেন, 'আর ধৈর্য রাখা সম্ভব নয়। অনুগ্রহ করে যদি সেই মৎস্যের উপাখ্যানটি শোনান।'
'একান্তই শুনবেন?'
'হে গুরু!' বললেন যোগী, 'শোনার জন্য আমি উদ্গ্রীব হয়ে আছি।' 'তবে শুনুন,' বললে নাসিরুদ্দিন, 'একবার খাদ্যাভাবে প্রাণ যায় যায় অবস্থায় আমার বঁড়শিতে একটি মাছ ওঠে। আমি সেটা ভেজে খাই।' এক ধনীর বাড়িতে ভোজ হবে খবর পেয়ে নাসিরুদ্দিন সেখানে গিয়ে হাজির।
ঘরের মাঝখানে বিশাল টেবিলের উপর লোভনীয় সব খাবার সাজানো রয়েছে রুপোর পাত্রে। টেবিল ঘিরে কুরসি পাতা, তাতে বসেছেন হোমরা-চোমরা সব খাইয়েরা। নাসিরুদ্দিন সেদিকে এগোতেই কর্মকর্তা তার মামুলি পোশাক দেখে তাকে ঘরের এক কোনায় ঠেলে দিলেন। নাসিরুদ্দিন বুঝলে সেখানে খাবার পৌঁছতে হয়ে যাবে রাত কাবার। সে আর সময় নষ্ট না করে সোজা বাড়ি ফিরে গিয়ে তোরঙ্গ থেকে তার ঠাকুরদাদার আমলের একটা ঝলমলে আলখাল্লা আর একটা মণিমুক্তো বসানো আলিশান পাগড়ি বার করে পরে আবার নেমন্তন্ন বাড়িতে ফিরে গেল।
এবার কর্মকর্তা তাকে একেবারে খাস টেবিলে বসিয়ে দিলেন, আর বসামাত্র নাসিরুদ্দিনের সামনে এসে হাজির হল ভুরভুরে খুশবুওয়ালা পোলাওয়ের পাত্র। নাসিরুদ্দিন প্রথমেই পাত্র থেকে খানিকটা পোলাও তুলে নিয়ে তার আলখাল্লায় আর পাগড়িতে মাখিয়ে দিলে। পাশে বসেছিলেন এক আমীর। তিনি ভারী অবাক হয়ে বললেন, 'জনাব, আপনি খাদ্যদ্রব্য যেভাবে ব্যবহার করছেন তা দেখে আমার কৌতূহল জাগ্রত হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার অর্থ জানতে পারলে আমি বিশেষ বাধিত হব।'
'অর্থ, খুবই সোজা', বললে নাসিরুদ্দিন। 'এই আলখাল্লা আর এই পাগড়ির দৌলতেই আমার সামনে এই ভোজের পাত্র। এদের ভাগ না দিয়ে আমি একা খাব সে কি হয়?'
☆☆☆☆☆☆ ১৪ ০০০০০ ☆☆
একদিন রাত্রে দু'জনের পায়ের শব্দ পেয়ে নাসিরুদ্দিন ভয়ে একটা আলমারিতে ঢুকে লুকিয়ে রইল। লোক দুটো ছিল চোর। তারা বাক্সপ্যাঁটরা সবই খুলছে, সেইসঙ্গে আলমারিটাও খুলে দেখে তাতে মোল্লাসাহেব ঘাপটি মেরে আছেন।
'কী হল মোল্লাসাহেব, লুকিয়ে কেন?'
'লজ্জায়', বললে নাসিরুদ্দিন। 'আমার বাড়িতে তোমাদের নেবার মতো কিছুই নেই তাই লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছি না ভাই।' এক চাষা নাসিরুদ্দিনের কাছে এসে বললে, 'বাড়িতে চিঠি দিতে হবে মোল্লাসাহেব। মেহেরবানি করে আপনি যদি লিখে দেন।' নাসিরুদ্দিন মাথা নাড়লে। 'সে হবে না।'
'কেন মোল্লাসাহেব?' 'আমার পায়ে জখম।'
'তাতে কী হল মোল্লাসাহেব?' চাষা অবাক হয়ে বললে, 'পায়ের সঙ্গে চিঠির কী?' নাসিরুদ্দিন বললে, 'আমার হাতের লেখা কেউ পড়তে পারে না। তাই চিঠির সঙ্গে আমাকেও যেতে হবে সে চিঠি পড়ে দিতে। জখম পায়ে সেটা হবে কী করে শুনি?'
B
নাসিরুদ্দিন এক বাড়িতে চাকরের কাজ করছে। মনিব তাকে একদিন ডেকে বললেন, 'তুমি অযথা সময় নষ্ট করো কেন হে বাপু? তিনটে ডিম আনতে কেউ তিনবার বাজার যায়? এবার থেকে একবারে সব কাজ সেরে আসবে।'
একদিন মনিবের অসুখ করেছে, তিনি নাসিরুদ্দিনকে ডেকে বললেন, 'হাকিম ডাকো।' নাসিরুদ্দিন গেল, কিন্তু ফিরল অনেক দেরিতে, আর সঙ্গে একগুষ্টি লোক নিয়ে। মনিব বললেন, 'হাকিম কই?'
'তিনি আছেন, আর সঙ্গে আরও আছেন,' বললে নাসিরুদ্দিন। • 'আরও কেন?'
'আজ্ঞে হাকিম যদি বলেন পুলটিশ দিতে, তার জন্য লোক চাই। জল গরম করতে কয়লা লাগবে, কয়লাওয়ালা চাই। আপনার শ্বাস উঠলে পর কোরান পড়ার লোক চাই, আর আপনি মরলে পরে লাশ বইবার লোক চাই।'