shabd-logo

মঙ্গলই স্বর্গ (অনুবাদ)

26 November 2023

0 Viewed 0

মহাকাশ থেকে রকেটটা নেমে আসছে তার গন্তব্যস্থলের দিকে। এতদিন সেটা ছিল তারায় ভরা নিঃশব্দ নিকষ কালো মহাশূন্যে একটি বেগবান ধাতব উজ্জ্বলতা। অগ্নিগর্ভ রকেটটা নতুন। এর দেহ থেকে নিঃসৃত হচ্ছে উত্তাপ। এর কক্ষের মধ্যে আছে মানুষ-ক্যাপ্টেন সমেত সতেরোজন। ওহাইয়ো থেকে রকেটটা যখন আকাশে ওঠে, তখন অগণিত দর্শক হাত নাড়িয়ে এদের শুভযাত্রা কামনা করেছিল। প্রচণ্ড অগ্ন্যুদগারের সঙ্গে সঙ্গে রকেটটা সোজা উঠে ছুটে গিয়েছিল মহাশূন্যের দিকে। মঙ্গল গ্রহকে লক্ষ্য করে এই নিয়ে তৃতীয়বার রকেট অভিযান।

এখন রকেট মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করেছে। তার গতি ক্রমশ কমে আসছে। এই মন্থর অবস্থাতেও তার শক্তির পরিচয় সে বহন করছে। এই শক্তিই তাকে চালিত করেছে মহাকাশের কৃষ্ণসাগরে। চাঁদ পেরোনোর পরেই তাকে পড়তে হয়েছিল অসীম শূন্যতার মধ্যে। যাত্রীরা নানান প্রতিকূল অবস্থায় বিধ্বস্ত হয়ে আবার সুস্থ হয়ে উঠেছিল। একজনের মৃত্যু হয়। বাকি ষোলোজন এখন স্বচ্ছ জানলার ভিতর দিয়ে বিমুগ্ধ চোখে মঙ্গলের এগিয়ে আসা দেখছে।

'মঙ্গল গ্রহ!' সোল্লাসে ঘোষণা করল রকেটচালক ডেভিড লাস্টিগ।

'এসে গেল মঙ্গল' বলল প্রত্নতত্ত্ববিদ স্যামুয়েল হিংস্টন। 'যাক!' স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললেন ক্যাপ্টেন জন ব্ল্যাক।

রকেটটা একটা মসৃণ সবুজ ঘাসে ঢাকা লনের উপর এসে নামল। যাত্রীরা লক্ষ করল, ঘাসের উপর দাঁড়ানো একটি লোহার হরিণের মূর্তি। তারও বেশ কিছুটা পিছনে দেখা যাচ্ছে রোদে বালমল একটা বাড়ি, যেটা ভিক্টোরীয় যুগের পৃথিবীর বাড়ির কথা মনে করিয়ে দেয়। সর্বাঙ্গে বিচিত্র কারুকার্য, জানলায় হলদে নীল সবুজ গোলাপি কাচ। বাড়ির বারান্দার সামনে দেখা যাচ্ছে জেরেনিয়াম গাছ আর বারান্দায় মৃদু বাতাসে আপনিই দুলছে ছাত থেকে ঝোলানো একটি দোলনা। বাড়ির চূড়োয় রয়েছে জানলা সমেত একটি গোল ঘর, যার ছাতটা যেন একটা গাধার টুপি।

রকেটের চতুর্দিকে ছড়িয়ে আছে মঙ্গলের এই শান্ত শহর, যার উপর বসন্ত ঋতুর প্রভাব স্পষ্ট। আরও বাড়ি চোখে পড়ে, কোনওটা সাদা, কোনওটা লাল, আর দেখা যায় লম্বা এম্ মেপল্ ও হর্স চেস্টনাট গাছের সারি। গির্জাও রয়েছে দু-একটা, যার সোনালি ঘণ্টাগুলো এখন নীরব।

রকেটের মানুষগুলি এ দৃশ্য দেখল। তারপর তারা পরস্পরের দিকে চেয়ে আবার বাইরে দৃষ্টি দিল। তারা সকলেই এ-ওর হাত ধরে আছে, সকলেই নির্বাক, শ্বাস নিতেও যেন ভরসা পাচ্ছে না তারা।

'এ কী তাজ্জব ব্যাপার!' ফিসফিসিয়ে বলল লাস্টিগ।

'এ হতে পারে না!' বলল স্যামুয়েল হিংস্টন।

'হে ঈশ্বর!' বললেন ক্যাপ্টেন জন ব্ল‍্যাক। রাসায়নিক তাঁর গবেষণাগার থেকে স্পিকারে একটি তথ্য ঘোষণা করলেন-'বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন আছে। শ্বাস নেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।' লাস্টিগ বলল, 'তা হলে আমরা বেরোই।' 'দাঁড়াও, দাঁড়াও', বললেন ক্যাপ্টেন ব্ল্যাক, 'আগে তো ব্যাপারটা বুঝতে হবে।'

'ব্যাপারটা হল এটি একটি ছোট্ট শহর, যাতে মানুষের শ্বাসের পক্ষে যথেষ্ট অক্সিজেন

আছে-ব্যস।' প্রত্নতাত্ত্বিক হিংস্টন বললেন, 'আর এই শহর একেবারে পৃথিবীর শহরের মতো। এটা একটা অসম্ভব ব্যাপার, কিন্তু তাও সম্ভব হয়েছে।'

ক্যাপ্টেন ব্ল্যাক হিংস্টনের দিকে চেয়ে বললেন, 'তুমি কি বিশ্বাস করো যে, দুটি বিভিন্ন গ্রহে সভ্যতা

ও সংস্কৃতি ঠিক একই সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে গড়ে উঠতে পারে?' 'সেটা সম্ভব বলে আমার জানা ছিল না।'

ক্যাপ্টেন ব্ল্যাক বাইরের শহরের দিকে চেয়ে বললেন, 'তোমাদের বলছি শোনো, জেরেনিয়াম হচ্ছে এমন একটি গাছ, যার অস্তিত্ব পৃথিবীতে পঞ্চাশ বছর আগেও ছিল না। ভেবে দেখো, কত হাজার বছর লাগে একটি উদ্ভিদের আবির্ভাব হতে। এবার তা হলে বলো এটা যুক্তিসম্মত কিনা যে, আমরা মঙ্গল গ্রহে এসে দেখতে পাব-এক, রঙিন কাচ বসানো জানলা দুই, বাড়ির মাথায় গোল ঘরের উপর গাধার টুপি; তিন, বারান্দার ছাত থেকে ঝুলন্ত দোলনা চার, একটি বাদ্যযন্ত্র, যেটা পিয়ানো ছাড়া আর কিছু হতে পারে না আর পাঁচ-যদি তোমার এই দূরবিনের মধ্যে দিয়ে দেখো তা হলে দেখবে পিয়ানোর উপর একটি গানের স্বরলিপি রয়েছে, যার নাম "বিউটিফুল ওহাইয়ো"। তার মানে কি মঙ্গলেও একটি নদী আছে, যার নাম ওহাইয়ো?'

'কিন্তু ক্যাপ্টেন উইলিয়াম্‌স্ কি এর জন্য দায়ী হতে পারেন না?'

'তার মানে?'

'ক্যাপ্টেন উইলিয়ামস্ ও তাঁর তিন সহযাত্রী। অথবা ন্যাথেনিয়াল ইয়র্ক ও তাঁর সহযাত্রী। এটা

নিঃসন্দেহে এঁদেরই কীর্তি।' 'এই বিশ্বাস যুক্তিহীন', বললেন ক্যাপ্টেন ব্ল্যাক। 'আমরা যতদূর জানি ইয়র্কের রকেট মঙ্গলে পৌঁছনোমাত্র ধ্বংস হয়। ফলে ইয়র্ক ও তাঁর সহযাত্রীর মৃত্যু হয়। উইলিয়ামসের রকেট মঙ্গল গ্রহে পৌঁছনোর পরের দিন ধ্বংস হয়। অন্তত দ্বিতীয় দিনের পর থেকে তাঁদের সঙ্গে পৃথিবীর রেডিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। উইলিয়ামসের দল যদি বেঁচে থাকত, তা হলে তারা নিশ্চয়ই পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ করত। ইয়র্ক মঙ্গলে এসেছিল এক বছর আগে, আর উইলিয়াম্স্ গত অগস্ট মাসে। ধরো যদি তারা এখনও বেঁচে থাকে, এবং মঙ্গল গ্রহে অসাধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রাণী বাস করে, তা হলেও কি তাদের পক্ষে এই ক' মাসের মধ্যে এমন একটা শহর গড়ে তোলা সম্ভব? শুধু গড়ে তোলা নয়, সেই শহরের উপর কৃত্রিম উপায়ে বয়সের ছাপ ফেলা সম্ভব? শহরটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে, এটা অন্তত বছর সত্তরের পুরনো। ওই বাড়ির বারান্দার কাঠের থামগুলো দেখো। গাছগুলোর বয়স একশো বছরের কম হওয়া অসম্ভব। না-এটা ইয়র্ক বা উইলিয়ামসের কীর্তি হতে পারে না। এর রহস্যের চাবিকাঠি খুঁজতে হবে অন্য জায়গায়। আমার কাছে ব্যাপারটা অত্যন্ত গোলমেলে বলে মনে হচ্ছে। এই শহরের অস্তিত্বের কারণ না জানা পর্যন্ত আমি এই রকেট থেকে বেরোচ্ছি না।'

লাস্টিগ বলল, 'এটা ভুললে চলবে না যে, ইয়র্ক ও উইলিয়াম্স নেমেছিল মঙ্গলের উলটোপিঠে।

আমরা ইচ্ছে করেই এ পিঠ বেছে নিয়েছি।'

'ঠিক কথা', বললেন ক্যাপ্টেন ব্ল্যাক। 'হিংস্র মঙ্গলবাসীদের হাতে যদি ইয়র্ক ও উইলিয়ামসের দলের মৃত্যু হয়ে থাকে, তাই আমাদের বলা হয়েছিল ল্যান্ডিং-এর জন্য অন্য জায়গা বেছে নিতে, যাতে আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়। তাই আমরা নেমেছি এমন একটি জায়গায়, যার সঙ্গে ইয়র্ক বা উইলিয়ামসের কোনও পরিচয়ই হয়নি।'

হিংস্টন বলল, 'যাই হোক, আমি আপনার অনুমতি নিয়ে শহরটা একবার ঘুরে দেখতে চাই। এমনও হতে পারে যে, দুই গ্রহ ঠিক একই সঙ্গে একই নিয়মের মধ্যে গড়ে উঠেছে। একই সৌরজগতের গ্রহে হয়তো এটা সম্ভব। হয়তো আমরা এক যুগান্তকারী আবিষ্কারের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি।'

'আমার মতে আর একটুক্ষণ অপেক্ষা করা উচিত। হয়তো এই আশ্চর্য ঘটনাই সর্বপ্রথম ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিশ্চিত ভাবে প্রমাণ করবে।'

'ঈশ্বরের বিশ্বাসের জন্য এমন একটা ঘটনার কোনও প্রয়োজন হয় না, হিংস্টন।'

'আমি নিজেও ঈশ্বরে বিশ্বাসী', বলল হিংস্টন, 'কিন্তু এমন একটা শহর ঈশ্বরের ইচ্ছা ব্যতীত গড়ে উঠতে পারে না। শহরের প্রতিটি খুঁটিনাটি লক্ষ করুন। আমি তো হাসব কি কাঁদব বুঝতে পারছি না।'

'আসল রহস্যটা কী, সেটা জানার আগে হাসি-কান্না কোনওটারই প্রয়োজন নেই।'

লাস্টিগ এবার মুখ খুলল।

'রহস্য? দিব্যি মনোরম একটি শহর, তাতে আবার রহস্য কী? আমার তো নিজের জন্মস্থানের

কথা মনে পড়ছে।'

'তুমি কবে জন্মেছিলে লাস্টিগ?' ব্ল্যাক প্রশ্ন করলেন।

'১৯৫০ সালে, স্যার।'

'আর তুমি, হিংস্টন?'

'১৯৫৫। আমার জন্ম আইওয়ার গ্রিনেল শহরে। এই শহরটাকে দেখে মনে হচ্ছে আমি আমার

জন্মস্থানে ফিরে এসেছি।'

'তোমাদের দু'জনেরই বাপের বয়সী আমি', বললেন ক্যাপ্টেন ব্ল্যাক। 'আমার বয়স আশি। ইলিনয়ে ১৯২০ সালে আমার জন্ম। বিজ্ঞানের দৌলতে গত পঞ্চাশ বছরের বৃদ্ধদের নবযৌবন দান করার উপায় আবিষ্কার হয়েছে। তার জোরেই আমি আজ মঙ্গল গ্রহে আসতে পেরেছি, এবং এখনও ক্লান্তি বোধ করছি না। কিন্তু আমার মনে সন্দেহের মাত্রা তোমাদের চেয়ে অনেক বেশি। এই শান্ত শহরের চেহারার সঙ্গে ইলিনয়ের গ্রিন ক্লাফ শহরের এত বেশি মিল যে, আমি অত্যন্ত অস্বস্তি বোধ করছি। এত মিল স্বাভাবিক নয়।'

কথাটা বলে ব্ল্যাক রেডিও অপারেটরের দিকে চাইলেন।

'শোনো-পৃথিবীতে খবর পাঠাও। বলো যে, আমরা মঙ্গল গ্রহে ল্যান্ড করেছি। এইটুকু বললেই হবে। বলো, কালকে বিস্তারিত খবর পাঠাব।' 'তাই বলছি স্যার।'

ক্যাপ্টেন ব্ল্যাক এখনও চেয়ে আছেন শহরটার দিকে। তাঁর চেহারা দেখলে তাঁর আসল বয়সের অর্ধেক বলে মনে হয়। এবার তিনি বললেন, 'তা হলে যেটা করা যেতে পারে, সেটা হচ্ছে এই-লাস্টিগ, হিংস্টন আর আমি একবার নেমে ঘুরে দেখে আসি। অন্যেরা রকেটেই থাকুক। যদি প্রয়োজন হয়, তখন তারা বেরোতে পারে। কোনও গোলমাল দেখলে তারা এর পরে যে রকেটটা আসার কথা আছে, সেটাকে সাবধান করে দিতে পারে। এর পর ক্যাপ্টেন ওয়াইলডারের আসার কথা। আগামী ডিসেম্বরে রওনা হবেন। যদি মঙ্গল গ্রহে সত্যিই অমঙ্গল কিছু থাকে, তা হলে তাদের সে বিষয়ে তৈরি হয়ে আসতে হবে।'

'আমরাও তো সে ব্যাপারে তৈরিই আছি। আমাদের তো অস্ত্রের অভাব নেই।' 'তা হলে সকলে অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত থাকুক। -চলো, আমরা নেমে পড়ি।' তিনজন পুরুষ রকেটের দরজা খুলে নীচে নেমে গেল।

দিনটা চমৎকার। তার উপর আবার বসন্তকালের সব লক্ষণই বর্তমান। একটি রবিন পাখি ফুলে ভরা আপেল গাছের ডালে বসে আনমনে গান গাইছে। মৃদুমন্দ বাতাসে ফুলের পাপড়ি মাঝে মাঝে ঝরে পড়ছে মাটিতে। ফুলের গন্ধও ভেসে আসছে সেই সঙ্গে। কোথা থেকে যেন পিয়ানোর মৃদু টুং-টাং শোনা যাচ্ছে, আর সেইসঙ্গে অন্য কোনও বাড়ি থেকে ভেসে আসছে সেই আদ্যিকালের চোঙাওয়ালা গ্রামোফোনে বাজানো আদ্যিকালের প্রিয় গাইয়ে হ্যারি লডারের গান।

তিনজন কিছুক্ষণ রকেটের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর তারা হাঁটতে শুরু করল খুব সাবধানে, কারণ বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ পৃথিবীর চেয়ে কিছু কম, তাই বেশি পরিশ্রম করা চলবে না।

এবারে গ্রামোফোনের রেকর্ড বদলে গেছে। এবার বাজছে, 'ও, গিভ মি দ্য জুন নাইট।'

লাস্টিগের স্নায়ু চঞ্চল। হিংস্টনেরও তাই। পরিবেশ শান্ত। দূরে কোথা থেকে যেন একটা

জলের কুল কুল শব্দ আসছে, আর সেইসঙ্গে একটা ঘোড়ায় টানা ওয়াগনের অতি পরিচিত ঘড় ঘড়।

শব্দ।

হিংস্টন বলল, 'স্যার, আমার এখন মনে হচ্ছে, মঙ্গল গ্রহে মানুষ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে থেকেই আসতে আরম্ভ করেছে।'

'অসম্ভব!

'কিন্তু তা হলে এইসব ঘরবাড়ি, এই লোহার হরিণ মূর্তি, এই পিয়ানো, পুরনো রেকর্ডের গান-এগুলোর অর্থ করবেন কী করে?' হিংস্টন ক্যাপ্টেনের হাত ধরে গভীর আগ্রহের সঙ্গে তার মুখের দিকে চাইল। 'ধরুন যদি এমন হয় যে, বিংশ শতাব্দীর শুরুতে কিছু যুদ্ধবিরোধী লোক একজোট হয়ে বৈজ্ঞানিকের সাহায্যে একটা রকেট বানিয়ে এখানে চলে আসে?'

'সেটা হতেই পারে না, হিংস্টন।' 'কেন হবে না? তখনকার দিনে পৃথিবীতে ঢাক না পিটিয়ে গোপনে কাজ করার অনেক বেশি সুযোগ ছিল।'

'কিন্তু রকেট জিনিসটা তো আর মুখের কথা নয়! সেটা নিয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করা তখনকার দিনেও অসম্ভব হত।' 'তারা এখানেই এসে বসবাস শুরু করে,' হিংস্টন বলে চলল, 'এবং যেহেতু তাদের রুচি, তাদের

সংস্কৃতি তারা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল, তাই তাদের বসবাসের পরিবেশও তৈরি করে নিয়েছিল

পৃথিবীর মতো করেই।'

'তুমি বলতে চাও, তারাই এতদিন এখানে বসবাস করছে?'

'হ্যাঁ, এবং পরম শান্তিতে। হয়তো তারা আরও বার-কয়েক পৃথিবীতে ফিরে গিয়েছিল আরও লোকজন সঙ্গে করে আনার জন্য। একটা ছোট শহরে স্বচ্ছন্দে থাকতে পারে, এমন সংখ্যক লোক এনে তারা যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছিল। পৃথিবীর লোকে তাদের কীর্তি জেনে ফেলে এটা নিশ্চয়ই তারা চায়নি। এই কারণেই এই শহরের চেহারা এত প্রাচীন। এ শহর ১৯২৭-এর পর আর এক দিনও এগিয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। তাই নয় কি? অথবা এমনও হতে পারে যে, মহাকাশ অভিযান ব্যাপারটা আমরা যা মনে করছি, তার চেয়ে অনেক বেশি প্রাচীন। হয়তো পৃথিবীর কোনও একটা অংশে কয়েকজনের চেষ্টায় এটার সূত্রপাত হয়েছিল। তাদের লোক হয়তো মাঝে মাঝে পৃথিবীতে ফিরে গেছে।'

'তোমার যুক্তি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠছে।'

'হতেই হবে স্যার। প্রমাণ আমাদের চোখের সামনেই রয়েছে। এখন শুধু দরকার এখানকার

কিছু লোকের সাক্ষাৎ পাওয়া।'

পুরু ঘাসের জন্য তিনজনের হাঁটার শব্দ শোনা যাচ্ছিল না। ঘাসের গন্ধ তাজা। ক্যাপ্টেন ব্ল্যাকের মনে যতই সন্দেহ থাকুক না কেন, একটা পরম শান্তির ভাব তাঁর দেহ-মন আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। ত্রিশ বছর পরে তিনি এমন একটা শহরে এলেন। মৌমাছির মৃদু গুঞ্জন তাঁর মনে একটা প্রসন্নতা এনে দিয়েছিল। আর পরিবেশের সুস্থ সবলতা তাঁর আত্মাকে পরিতুষ্ট করছিল।

তিনজনেই বাড়িটার সামনের বারান্দায় গিয়ে উঠল। দরজার দিকে এগোনোর সময়ে কাঠের মেঝেতে ভারী বুটের শব্দ হল। ভিতরের ঘরটা এখন দেখা যাচ্ছে। একটা পুঁতির পরদা ঝুলছে। উপরে একটা ঝাড়লণ্ঠন। দেওয়ালে ঝুলছে উনবিংশ শতাব্দীর এক জনপ্রিয় শিল্পীর আঁকা একটা বাঁধানো ছবি। ছবির নীচে একটা চেনা ঢঙের আরাম কেদারা। শব্দও শোনা যাচ্ছে-জাগের জলের বরফের টুং টাং। ভিতরের রান্নাঘরে কে যেন পানীয় প্রস্তুত করছে। সেইসঙ্গে নারীকণ্ঠে গুনগুন করে গাওয়া একটি গানের সুর। ক্যাপ্টেন ব্ল্যাক কলিং বেল টিপলেন।

ঘরের মেঝের উপর দিয়ে হালকা পায়ের শব্দ এগিয়ে এল। একটি বছর চল্লিশেকের মহিলা-খাঁর পরমে বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকের পোশাক-পরদা ফাঁক করে তিনজন পুরুষের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দিলেন।

'আপনারা?'

'কিছু মনে করবেন না। 'ক্যাপ্টেন ব্ল্যাকের কণ্ঠস্বরে অপ্রস্তুত ভাব- 'আমরা, মানে এ

ব্যাপারে আপনি কোনও সাহায্য করতে পারেন কিনা...'

ভদ্রমহিলা অবাক দৃষ্টিতে দেখলেন ক্যাপ্টেন ব্ল্যাকের দিকে।

'আপনারা কি কিছু বিক্রিটিক্রি করতে এসেছেন?'

'না-না! ইয়ে...এই শহরের নামটা যদি-' 'তার মানে?' মহিলার ভূ কুঞ্চিত। 'এখানে এসেছেন আপনারা, অথচ এই শহরের নাম জানেন

না?' ক্যাপ্টেন বেশ বেকায়দায় পড়ছেন তা বোঝাই যাচ্ছে। বললেন, 'আসলে আমরা এখানে আগন্তুক। আমরা জানতে চাইছি, এ শহর এখানে এল কী করে, আর আপনারাই বা কী করে এসেছেন?'

'আপনারা কি সেন্সাস নিতে বেরিয়েছেন?

'আজ্ঞে না।'

'এখানে সবাই জানে যে, এ শহর তৈরি হয়েছিল ১৮৬৮ সালে। আপনারা কি ইচ্ছা করে বোকা সাজছেন?'

'না-না-মোটেই না', ব্যস্তভাবে বললেন ক্যাপ্টেন, 'আসলে আমরা আসছি পৃথিবী থেকে।'

'পৃথিবী?'

'আজ্ঞে হ্যাঁ। পৃথিবী। সৌরজগতের তৃতীয় গ্রহ। রকেটে করে এসেছি আমরা। আমাদের

লক্ষ্যই ছিল চতুর্থ গ্রহ মঙ্গল।'

মহিলা যেন কতগুলি শিশুকে বোঝাচ্ছেন, এইভাবে উত্তর দিলেন, 'এই শহর হল ইলিনয়ে। নাম গ্রিন ব্ল্যাক। আমরা থাকি যে মহাদেশে, তার নাম আমেরিকা। তাকে ঘিরে আছে অতলান্তিক আর প্রশান্ত মহাসাগর। আমাদের গ্রহের নাম পৃথিবী। আপনারা এখন আসতে পারেন। গুডবাই।'     ভদ্রমহিলা বাড়ির ভিতরে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। তিনজন হতভম্বভাবে পরস্পরের দিকে চাইল।

লাস্টিগ বলল, 'চলুন, সোজা ভিতরে গিয়ে ঢুকি।' 'সে হয় না। এটা প্রাইভেট প্রপার্টি। কিন্তু কী আপদ রে বাবা!'

তিনজন বারান্দার সিঁড়িতে বসল।

ব্ল্যাক বললেন, 'এমন একটা কথা কি তোমাদের মনে হয়েছে যে, আমরা হয়তো ভুল পথে আবার

পৃথিবীতেই ফিরে এসেছি?'

'সেটা কী করে সম্ভব?' বলল লাস্টিগ। 'জানি না! তা জানি না! মাথা ঠাণ্ডা করে ভাবার শক্তি দাও। হে ভগবান!'

হিংস্টন বলল, 'আমরা সমস্ত রাস্তা হিসাব করে এসেছি। আমাদের ক্রোনোমিটার প্রতি মুহূর্তে বলে দিয়েছে, আমরা কতদূর অগ্রসর হচ্ছি। চাঁদ পেরিয়ে আমরা মহাকাশে প্রবেশ করি। এটা মঙ্গল গ্রহ হতে বাধ্য।'

লাস্টিগ বলল, 'ধরো যদি দৈবদুর্বিপাকে আমাদের সময়ের গণ্ডগোল হয়ে গিয়েছে-আমরা ত্রিশ চল্লিশ বছর আগের পৃথিবীতে ফিরে এসেছি?' 'তোমার বকবকানি বন্ধ করো তো লাস্টিগ!' অসহিষ্ণুভাবে বললেন ক্যাপ্টেন ব্ল্যাক।

লাস্টিগ উঠে গিয়ে আবার কলিং বেল টিপল। ভদ্রমহিলার পুনরাবির্ভাব হতে সে প্রশ্ন করল,

'এটা কোন সাল?' 'এটা যে উনিশশো ছাব্বিশ, সেটাও জানেন না?'

ভদ্রমহিলা ফিরে গিয়ে একটা দোলনা-চেয়ারে বসে লেমনেড খেতে শুরু করলেন। 'শুনলেন তো?' লাস্টিগ ফিরে এসে বলল। 'উনিশশো ছাব্বিশ। আমরা সময়ে পিছিয়ে

গেছি। এটা পৃথিবী।'

লাস্টিগ বসে পড়ল। তিনজনেরই মনে এখন গভীর উদ্বেগ। হাঁটুর উপর রাখা তাদের হাতগুলো আর স্থির থাকছে না। ক্যাপ্টেন বললেন, 'এমন একটা অবস্থায় পড়তে হবে, সেটা কি আমরা ভেবেছিলাম? এ কী ভয়াবহ পরিস্থিতি। এমন হয় কী করে? আমাদের সঙ্গে আইনস্টাইন থাকলে হয়তো এর একটা কিনারা করতে পারতেন!'

হিংস্টন বলল, 'আমাদের কথা এখানে কে বিশ্বাস করবে? শেষকালে কী অবস্থায় পড়তে হবে কে

জানে! তার চেয়ে ফিরে গেলে হয় না?' 'না। অন্তত আর একটা বাড়িতে অনুসন্ধান করার আগে নয়।'

তিনজনে আবার রওনা দিয়ে তিনটে বাড়ির পরে ওক গাছের তলায় একটা ছোট্ট বাড়ির সামনে দাঁড়াল।

'রহস্যের সন্ধান যুক্তিসম্মত ভাবেই হবে', বললেন, ক্যাপ্টেন ব্ল্যাক, 'কিন্তু সে যুক্তির নাগাল আমরা এখনও পাইনি। 'আচ্ছা, হিংস্টন-ধরা যাক তুমি যেটা বলেছিলে, সেটাই ঠিক; অর্থাৎ মহাকাশ ভ্রমণ বহুকাল আগেই শুরু হয়েছে, ধরা যাক পৃথিবীর লোকে এখানে এসে থাকার কিছুদিন পরেই তাদের নিজেদের গ্রহের জন্য তাদের মন ছটফট করতে শুরু করেছিল। সেটা ক্রমে অসহ্য হয়ে দাঁড়ায়। এই অবস্থায় একজন মনোবিজ্ঞানী হলে তুমি কী করতে?'

হিংস্টন কিছুক্ষণ ভেবে বললে, 'আমি মঙ্গল গ্রহের জীবনযাত্রাকে ক্রমে বদলিয়ে পৃথিবীর মতন করে আনতাম। যদি এক গ্রহের গাছপালা নদ-নদী মাঠ-ঘাটকে অন্য আর-এক গ্রহের মতো রূপ দেওয়া সম্ভব হত, তা হলে আমি তাই করতাম। তারপর শহরের সমস্ত লোককে একজোটে হিপনোসিসের সাহায্যে বুঝিয়ে দিতাম যে, তারা যেখানে রয়েছে সেটা আসলে পৃথিবী, মঙ্গল গ্রহ নয়।'

'ঠিক বলেছ হিংস্টন। এটাই যুক্তিসম্মত কথা। ওই মহিলার ধারণা, তিনি পৃথিবীতেই রয়েছেন। এই বিশ্বাসে তিনি নিশ্চিন্ত। ওঁর মতো এই শহরের প্রত্যেকটি অধিবাসী এক বিরাট মোহে আচ্ছন্ন হয়ে ভ্রান্ত বিশ্বাসে দিন কাটাচ্ছে।' 'আমি এ-বিষয়ে সম্পূর্ণ একমত।' বলল লাস্টিগ।

'আমিও।' বলল হিংস্টন।

ক্যাপ্টেন ব্ল্যাক স্বস্তির নিশ্বাস ত্যাগ করলেন। 'যাক, এতক্ষণে কিছুটা সোয়াস্তি বোধ করছি।

রহস্যের একটা কিনারা হল। সময়ে এগিয়ে। পেছিয়ে যাওয়ার ধারণাটা আমার মোটেই ভাল লাগছিল না। কিন্তু এইভাবে ভাবতে বেশ ভাল লাগছে। 'ক্যাপ্টেনের মুখে হাসি ফুটে উঠল। 'আমার তো মনে হচ্ছে, এবার আমরা নিশ্চিন্তে এদের কাছে আত্মপ্রকাশ করতে পারি।'

'তাই কি?' বলল লাগি। 'ধরুন যদি এরা এখানে এসে থাকে পৃথিবী থেকে মুক্তি পাওয়ার

উদ্দেশ্যে। আমরা পৃথিবীর লোক জানলে এরা খুশি নাও হতে পারে।' 'আমাদের অস্ত্রের শক্তি অনেক বেশি। চলো দেখি, সামনের বাড়ির লোকে কী বলে!' কিন্তু মাঠটা পেরোনোর আগেই লাস্টিগের দৃষ্টি হঠাৎ রুখে গেল সামনের রাস্তার একটা অংশে।

'স্যার'- 'কী হল লাস্টিগ?'

'স্যার, এ কী দেখছি চোখের সামনে।' লাস্টিগের দৃষ্টি উদ্ভাসিত, তার চোখে জল। সে যেন তার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। তাকে দেখে মনে হচ্ছে, সে এই মুহূর্তেই আনন্দের আতিশয্যে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলবে। সে বেসামাল ভাবে হোঁচট খেতে খেতে রাস্তার দিকে এগিয়ে গেল।

'কোথায় যাচ্ছ তুমি?' ক্যাপ্টেন ব্ল্যাক সঙ্গে সঙ্গে তার পশ্চাদ্ধাবন করলেন। লাস্টিগ দৌড়ে গিয়ে একটা বাড়ির বারান্দায় উঠে পড়ল। বাড়ির ছাতে একটা লোহার মোরগ। তারপর শুরু হল দরজায় ধাক্কার সঙ্গে চিৎকার। হিংস্টন ও ক্যাপ্টেন ততক্ষণে তার কাছে পৌঁছে

গেছে। দুজনেই ক্লান্ত।

'দাদু! দিদিমা! দিদিমা!' চেঁচিয়ে চলেছে লাস্টিগ।

বারান্দার দরজার মুখে এসে দাঁড়ালেন এক বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা। তাঁরা দু'জনেই একসঙ্গে চেঁচিয়ে

উঠলেন-'ডেভিড !!' তারপর তাঁরা এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলেন লাস্টিগকে।

'ডেভিড! কত বড় হয়ে গেছিস তুই। ওঃ, কতদিন পরে দেখছি তোকে! তুই কেমন আছিস?' ডেভিড লাস্টিগ কান্নায় ভেঙে পড়েছে। 'দাদু। দিদিমা। তোমরা তো দিব্যি আছো।' বার বার বুড়ো-বুড়িকে জড়িয়ে ধরেও যেন লাস্টিগের আশ মেটে না। বাইরে সূর্যের আলো, মন-মাতানো

হাওয়া, সব মিলিয়ে পরিপূর্ণ আনন্দের ছবি। 'ভেতরে আয়। বরফ দেওয়া চা আছে-অফুরন্ত।'

'আমার দুই বন্ধু সঙ্গে আছে দিদিমা।' লাস্টিগ দু'জনের দিকে ফিরে বলল, 'উঠে আসুন আপনারা।'

'এসো ভাই এসো', বললেন বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা। 'ভিতরে এসো। ডেভিডের বন্ধু মানে তো আমাদেরও

বন্ধু। বাইরে দাঁড়িয়ে কেন?'

বৈঠকখানাটা দিব্যি আরামের। ঘরের এক কোণে একটা গ্র্যান্ডফাদার ক্লক চলছে টিক টিক করে, চারিদিকে সোফার উপর নরম তাকিয়া, দেওয়ালের সামনে আলমারিতে বইয়ের সারি, মেঝেতে গোলাপের নকশায় ভরা পশমের গালিচা। সকলের হাতেই এখন গেলাসের বরফ-চা তাদের তৃষ্ণা উপশম করছে।

'তোমাদের মঙ্গল হোক।' বৃদ্ধা তাঁর হাতের গেলাসটা ঠোঁটে ঠেকালেন।

'তোমরা এখানে কদিন আছ?' লাস্টিগ প্রশ্ন করল।

'আমাদের মৃত্যুর পর থেকেই।' অত্যন্ত স্বাভাবিক ভাবে বললেন মহিলা।

'কীসের পর থেকে?' ক্যাপ্টেন ব্ল্যাকের হাতের গেলাস টেবিলে নেমে গেছে। 'ওঁরা মারা গেছেন প্রায় ত্রিশ বছর হল', বলল লাস্টিগ।

'আর সে কথাটা তুমি অম্লানবদনে উচ্চারণ করলে?' ক্যাপ্টেন ব্ল্যাক চেঁচিয়ে উঠলেন।

বৃদ্ধা উজ্জ্বল হাসি হেসে চাইলেন ক্যাপ্টেন ব্ল্যাকের ঢিকে, তাঁর দৃষ্টিতে মৃদু ভৎসনা। 'কখন কী ঘটে, তা কে বলতে পারে বলো। এই তো আমরা রয়েছি এখানে। জীবনই বা কী আর মৃত্যুই বা কী, তা কে বলবে? আমরা শুধু জানি যে, আমরা আবার বেঁচে উঠেছি। বলতে পারো আমাদের একটা দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়া হয়েছে।'

বৃদ্ধা উঠে গিয়ে ক্যাপ্টেনের সামনে তাঁর ডান হাতটা এগিয়ে দিলেন। 'ধরে দেখো।' ক্যাপ্টেন ব্ল্যাক বৃদ্ধার কবজির উপর হাত রাখলেন।

'এটা যে রক্তমাংসের হাত, তাতে কোনও সন্দেহ আছে কী?'

বাধ্য হয়েই ব্ল্যাককে মাথা নেড়ে স্বীকার করতে হল যে নেই।

'তাই যদি হয়', বৃদ্ধা বেশ জোরের সঙ্গে বললেন, 'তা হলে আর সন্দেহ কেন?' 'আসল ব্যাপারটা হচ্ছে কি, মঙ্গল গ্রহে এসে এমন একটা ঘটনা ঘটবে, সেটা আমরা ভাবতেই পারিনি।'

'কিন্তু এখন তো আর সন্দেহের কোনও কারণ নেই,' বললেন মহিলা। 'আমার বিশ্বাস প্রত্যেক গ্রহেই ভগবানের লীলার নানান নিদর্শন রয়েছে।'

'এই জায়গাকে কি তা হলে স্বর্গ বলা চলে?' হিংস্টন প্রশ্ন করল।

'মোটেই না। এটা একটা গ্রহ এবং এখানে আমাদের দ্বিতীয়বার বাঁচার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। সেটা কেন দেওয়া হয়েছে, তা কেউ আমাদের বলেনি। কিন্তু তাতে কী এসে গেল? পৃথিবীতেই বা কেন আমরা ছিলাম তার কারণ তো কেউ বলেনি। আমি অবিশ্যি সেই অন্য পৃথিবীর কথা বলছি-যেখান থেকে তোমরা এসেছ। সেটার আগেও যে আর একটা পৃথিবীতে আমরা ছিলাম না, তার প্রমাণ কোথায়?'

'তা বটে।' বললেন ক্যাপ্টেন ব্ল‍্যাক।

লাস্টিগ এখনও হাসিমুখে চেয়ে রয়েছে তার দাদু-দিদিমার দিকে। 'তোমাদের দেখে যে কী ভাল

লাগছে!'

ক্যাপ্টেন ব্ল্যাক উঠে পড়লেন।

'এবার তা হলে আমাদের যেতে হয়। আপনাদের আতিথেয়তার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।' 'আবার আসবে তো?' বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা একসঙ্গে প্রশ্ন করলেন। 'রাত্রের খাওয়াটা এখানেই হোক না?'

'দেখি, চেষ্টা করব। কাজ রয়েছে অনেক। আমার লোকেরা রকেটে রয়েছে, আর-' ক্যাপ্টেনের কথা থেমে গেল। তাঁর অবাক দৃষ্টি বাইরের দরজার দিকে। দূর থেকে সমবেত কণ্ঠস্বর ভেসে আসছে। অনেকে সোল্লাসে কাদের যেন স্বাগত জানাচ্ছে।

ব্ল‍্যাক দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন। দূরে রকেটটা দেখা যাচ্ছে। দরজা খোলা, ভিতরের লোক সব বাইরে বেরিয়ে এসেছে। সবাই হাত নাড়ছে আনন্দে। রকেটটাকে ঘিরে মানুষের ভিড়, আর তাদের মধ্য দিয়ে ব্যস্তভাবে ঘোরাফেরা করছে রকেটের তেরোজন যাত্রী। জনতার উপর দিয়ে যে একটা ফুর্তির ঢেউ বয়ে চলেছে, সেটা বোঝাই যাচ্ছে।

এরই মধ্যে একটা ব্যান্ড বাজতে শুরু করল। তার সঙ্গে ছোট ছোট মেয়েদের সোনালি চুল দুলিয়ে নাচ, 'হুররে! হুররে!' ছোট ছোট ছেলেরা চেঁচিয়ে উঠল। বুড়োরা এ-ওকে চুরুট বিলি করে তাদের মনের আনন্দ প্রকাশ করল।

এরই মধ্যে মেয়র সাহেব একটি বক্তৃতা দিলেন। তার পর রকেটের তেরোজন প্রত্যেকে তাদের খুঁজে-পাওয়া আত্মীয়-স্বজনকে সঙ্গে নিয়ে তাদের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিল। ক্যাপ্টেন ব্ল্যাক আর থাকতে পারলেন না। সমস্ত শব্দ ছাপিয়ে তাঁর চিৎকার শোনা গেল, 'কোথায়

যাচ্ছ তোমরা?'

ব্যান্ডবাদকেরাও চলে গেল। এখন আর রকেটের পাশে লোক নেই, সেটা ঝলমলে রোদে

পরিত্যক্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।

'দেখেছ কাণ্ড,' বললেন ক্যাপ্টেন ব্ল্যাক। 'রকেটটাকে ছেড়ে চলে গেল! ওদের ছাল-চামড়া তুলে

নেব আমি। আমার হুকুম অগ্রাহ্য করে'-

'স্যর, ওদের মাফ করে দিন,' বলল লাস্টিগ। 'এত পুরনো চেনা লোকের দেখা পেয়েছে ওরা।'

'ওটা কোনও অজুহাত নয়!'

'কিন্তু জানলা দিয়ে বাইরে চেনা লোক দেখলে তখন ওদের মনের অবস্থাটা কল্পনা করুন!'

'কিন্তু তাই বলে হুকুম মানবে না?'

'এই অবস্থায় আপনার নিজের মনের অবস্থা কী হত সেটাও ভেবে দেখুন!' 'আমি কখনই হুকুম অগ্রাহ্য-'

ক্যাপ্টেনের কথা শেষ হল না। বাইরে রাস্তার ফুটপাথ দিয়ে হেঁটে আসছে একটি দীর্ঘাঙ্গ যুবক, বছর পঁচিশ বয়স, তার অস্বাভাবিক রকম নীল চোখ দুটো হাসিতে উজ্জ্বল।

'জন!' যুবকটি এবার দৌড়ে এল ক্যাপ্টেন ব্ল্যাকের দিকে। 'এ কী ব্যাপার।' ক্যাপ্টেন ব্ল‍্যাকের যেন স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে।

'জন! তুই ব্যাটা এখানে হাজির হয়েছিস?' যুবকটি ক্যাপ্টেনের হাত চেপে ধরে তার পিঠে একটা চাপড় মারল।

'তুই!' অবাক কণ্ঠে প্রশ্ন এল ক্যাপ্টেন ব্ল্যাকের মুখ থেকে।

'তোর এখনও সন্দেহ হচ্ছে?'

'এডওয়ার্ড!' ক্যাপ্টেন ব্ল‍্যাক এবার লাস্টিগ ও হিংস্টনের দিকে ফিরলেন, আগন্তুকের হাত তাঁর হাতের মুঠোর মধ্যে।

'এ হল আমার ছোট ভাই এডওয়ার্ড। এড-ইনি হলেন হিংস্টন, আর ইনি লাস্টিগ।' দুই ভাইয়ে কিছুক্ষণ হাত ধরে টানাটানির পর সেটা আলিঙ্গনে পরিণত হল।

'এড!'

'জন-হতচ্ছাড়া, তোকে যে আবার কোনও দিন দেখতে পাব। তুই তো দিব্যি আছিস, এড। কিন্তু ব্যাপারটা কী বল তো? তোর যখন ছাব্বিশ বছর বয়স, তখন তোর মৃত্যু হয়। আমার বয়স তখন উনিশ। কত কাল আগের কথা-আর আজ...'

'মা অপেক্ষা করছেন,' হাসিমুখে বলল এডওয়ার্ড ব্ল্যাক।

'মা!' 'বাবাও!'

'বাবা!' ক্যাপ্টেন ব্ল্যাক যেন মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছেন। তাঁর গতি টলায়মান। 'মা-বাবা বেঁচে আছেন? কোথায়?

'আমাদের সেই পুরনো বাড়ি। ওক নোল অ্যাভিনিউ !' 'সেই পুরনো বাড়ি।' ক্যাপ্টেন ব্ল্যাকের দৃষ্টি উদ্ভাসিত।

'শুনলে তোমরা?' হিংস্টন ও লাস্টিগের দিকে ফিরলেন জন ব্ল্যাক। কিন্তু হিংস্টন আর নেই। সে তার নিজের ছেলেবেলার বাসস্থানের দেখা পেয়ে সেই দিকে ছুটে গেছে। লাস্টিগ হেসে বলল, 'এইবার বুঝেছেন ক্যাপ্টেন-আমাদের বন্ধুদের আচরণের কারণটা? হুকুম মানার অবস্থা ওদের ছিল না।'

'বুঝেছি, বুঝেছি।' জন ব্ল্যাক চোখ বন্ধ করে বললেন। 'যখন চোখ খুলব তখন কি আবার দেখব তুই আর নেই?' জন চোখ খুললেন। 'না তো। তুই তো এখনও আছিস। আর কী খোলতাই হয়েছে তোর চেহারা।'

'আয়, লাঞ্চের সময় হয়েছে। আমি মাকে বলে রেখেছি।'

লাস্টিগ বলল, 'স্যর, আমি আমার দাদু ও দিদিমার কাছে থাকব। প্রয়োজন হলে খবর দেবেন।' 'অ্যাঁ? ও, আচ্ছা, ঠিক আছে। পরে দেখা হবে।' এডওয়ার্ড জনের হাত ধরে এগিয়ে গেল একটা বাড়ির দিকে। 'মনে পড়ছে বাড়িটা ?'

'আরেব্বাস্! আয় তো দেখি, কে আগে পৌঁছতে পারে!' দুজনে দৌড়ল। চারপাশের গাছ, পায়ের নীচের মাটি দ্রুত পিছিয়ে পড়ল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এডওয়ার্ডেরই জয় হল। বাড়িটা ঝড়ের মতো এগিয়ে এসেছে সামনে। 'পারলি না, দেখলি তো!' বলল এডওয়ার্ড। 'আমার যে বয়স হয়ে গেছে রে,' বলল জন। 'তবে এটা মনে আছে যে কোনও দিনই তোর সঙ্গে দৌড়ে পারিনি।'

দরজার মুখে মা, স্নেহময়ী মা, সেই দোহারা গড়ন। মুখে উজ্জ্বল হাসি। তাঁর পিছনে বাবা, চুলে ছাই রঙের ছোপ, হাতে পাইপ। 'মা! বাবা।'

শিশুর মতো হাত বাড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে এগিয়ে গেলেন ক্যাপ্টেন জন ব্ল্যাক। দুপুরটা কাটল চমৎকার। খাওয়ার পর জন তাঁর রকেট, অভিযানের গল্প করলেন আর সবাই

সেটা উপভোগ করলেন। জন দেখলেন যে তাঁর মা একটুও বদলাননি, আর বাবাও ঠিক আগের মতো করেই দাঁত দিয়ে চুরুটের ডগা ছিঁড়ে ভূ কুঞ্চিত করে দেশলাই সংযোগ করছেন। রাত্রে টার্কির মাংস ছিল। টার্কির পা থেকে মাংসের শেষ কণাটুকু চিবিয়ে খেয়ে ক্যাপ্টেন জন পরম তৃপ্তি অনুভব করলেন। বাইরে গাছপালায় আকাশে মেঘে রাত্রির রঙ, ঘরের মধ্যে ল্যাম্পগুলোকে ঘিরে গোলাপি আভা। পাড়ায় আরও অন্য শব্দ শোনা যাচ্ছে-গানের শব্দ, পিয়ানোর শব্দ, দরজা-জানালা খোলা ও বন্ধ করার শব্দ।

মা গ্রামোফোনে একটা রেকর্ড চাপিয়ে নতুন করে ফিরে পাওয়া ছেলের সঙ্গে একটু নাচলেন। মা-র গায়ে সেই সেন্টের গন্ধ। এ গন্ধ সে দিনও ছিল, যে দিন ট্রেন দুর্ঘটনায় বাপ-মা দুজনেরই একসঙ্গে মৃত্যু হয়। জন যে মা-কে জড়িয়ে ধরে নাচছে, সেটা যে খাঁটি- সেটা জন বেশ বুঝতে পারছে। মা নাচতে নাচতেই বললেন, 'বল্ তো জন, দ্বিতীয়বার জীবন-ধারণের সুযোগ ক'জনের আসে?'

'কাল সকালে ঘুম ভাঙবে,' আক্ষেপের সুরে বলল জন, 'তার কিছু পরেই রকেটে করে আমাদের এই স্বর্গরাজ্য ছেড়ে চলে যেতে হবে।'

'ও রকম ভেবো না,' বললেন মা। কোনও অভিযোগ রেখো না মনে। ঈশ্বর যা করেন, মঙ্গলের জন্য। আমরা তাতেই সুখী।'

'ঠিক বলেছ, মা।'

রেকর্ডটা শেষ হল।

'তুমি আজ ক্লান্ত,' জনের দিকে পাইপ দেখিয়ে বললেন বাবা। 'তোমার শোবার ঘর তো রয়েইছে, তোমার পিতলের খাটও রয়েছে।'

'কিন্তু আগে আমার দলের লোকদের খোঁজ নিতে হবে তো।'

'কেন?'

'কেন মানে....ইয়ে, বিশেষ কোনও কারণ নেই। সত্যিই তো। ওরাও হয়তো দিব্যি খাওয়া-দাওয়া করে শুয়ে পড়েছে। একটা রাত ভাল করে ঘুমিয়ে নিলে ওদের বরং লাভই হবে।' 'গুড নাইট জন,' মা তার ছেলের গালে চুমু দিয়ে বললেন। 'তোমাকে পেয়ে আজ আমাদের কত আনন্দ।'

'আমারও মন আনন্দে ভরে গেছে।'

চুরুট আর সেন্টের গন্ধে ভরা ঘর ছেড়ে জন ব্ল্যাক সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠতে শুরু করল, তার পিছনে এডওয়ার্ড। দুজনে কথায় মশগুল। দোতলায় পৌঁছে এডওয়ার্ড একটা ঘরের দরজা খুলে দিল। জন দেখল তার পিতলের খাট, দেয়ালে টাঙানো তার স্কুল-কলেজের নানা রকম চিহ্ন, সেই সময়কার একটা অতি-পরিচিত র‍্যাকুনের লোমের কোট, যাতে হাত না বুলিয়ে পারল না জন। 'এ যেন বাড়াবাড়ি', বললেন জন। 'সত্যি, আমার আর অনুভবের শক্তি নেই। দু'দিন সমানে বৃষ্টিতে ভিজলে শরীরের যা অবস্থা হয়, আমার মনটা তেমনই সপ্সপে হয়ে আছে অজস্র বিচিত্র অনুভূতিতে।'

এডওয়ার্ড তার নিজের বিছানায় ও বালিশে দুটো চাপড় মেরে জানালার কাচটা উপরে তুলে দিতে জ্যাসমিন ফুলের গন্ধে ঘরটা ভরে গেল। বাইরে চাঁদের আলো। দূরে কাদের বাড়িতে যেন নাচ-গান হচ্ছে।

'তা হলে এটাই হল মঙ্গল গ্রহ-', তাঁর পোশাক ছাড়তে ছাড়তে বললেন জন ব্ল্যাক

। এডওয়ার্ডও শোবার জন্য তৈরি হচ্ছে। শার্ট খুলে ফেলতেই তার সুঠাম শরীরটা বেরিয়ে পড়ল। এখন ঘরের বাতি নেবানো হয়ে গেছে। দু'জন পাশাপাশি শুয়ে আছে বিছানায়। কত বছর পরে আবার এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। ক্যাপ্টেন ব্ল্যাকের মন নানান চিন্তায় ভরপুর।

হঠাৎ তাঁর ম্যারিলিনের কথা মনে হল। 'ম্যারিলিন কি এখানে?'

জানলা দিয়ে আসা চাঁদের আলোয় শোওয়া এড়ওয়ার্ড কয়েক মুহূর্ত সময় নিয়ে উত্তরটা দিল। 'সে এখানেই থাকে, তবে এখন শহরের বাইরে। কাল সকালেই ফিরবে।' ক্যাপ্টেন ব্ল্যাক চোখ বন্ধ করে প্রায় আপনমনেই বললেন, 'ম্যারিলিনের সঙ্গে একটিবার দেখা হলে

বেশ হত।'

ঘরটায় এখন কেবল দুজনের নিশ্বাসের শব্দ।

'গুড নাইট, এড।'

সামান্য বিরতির পর উত্তর এল, 'গুড নাইট, জন।' জন ব্ল্যাক নিশ্চিন্ত মনে শুয়ে ভাবতে লাগলেন।

এখন দেহ-মনে আর অবসাদ নেই, মাথাও পরিষ্কার। এতক্ষণ নানান পরস্পরবিরোধী অনুভূতি তাকে ঠাণ্ডা মাথায় ভাবতে দিচ্ছিল না। কিন্তু এখন...

প্রশ্ন হচ্ছে-কীভাবে এটা সম্ভব হল? এবং এর কারণ কী? শুধুই কি ভগবানের লীলা। ভগবান কি তাঁর সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এত চিন্তা করেন? হিংস্টন ও লাস্টিগের কথাগুলো তাঁর মনে পড়ল। নানান যুক্তি, নানান কারণ তাঁর মনের অন্ধকারে আলেয়ার আলোর মতো জেগে উঠতে লাগল। মা। বাবা। এডওয়ার্ড। মঙ্গল। পৃথিবী। মঙ্গলগ্রহের অধিবাসী.... হাজার বছর আগে কারা এখানে বাস করত? তারা কি মঙ্গলগ্রহের প্রাণী, নাকি এদেরই মতো

পৃথিবীতে মরে-যাওয়া সব মানুষ।

মঙ্গলগ্রহের প্রাণী। কথাটা দু'বার মৃদুস্বরে উচ্চারণ করলেন জন ব্ল্যাক। হঠাৎ তাঁর চিন্তা এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত হল। সব কিছুর একটা মানে হঠাৎ তাঁর মনে জেগে উঠেছে। রক্ত হিমকরা মানে। অবিশ্যি সেটা বিশ্বাস করার কোনও যুক্তি নেই, কারণ ব্যাপারটা অসম্ভব। নিছক আজগুবি কল্পনা মাত্র। ভুলে যাও, ভুলে যাও... মন থেকে দূর করে দাও।

কিন্তু তবু তাঁর মন বলল-একবার তলিয়ে দেখা যাক না ব্যাপারটা। ধরা যাক যে, এরা মঙ্গলগ্রহেরই অধিবাসী। ওরা আমাদের রকেটকে নামতে দেখেছে, এবং সঙ্গে সঙ্গে ওদের মনে ঘৃণার উদ্রেক হয়েছে। ধরা যাক, এরা তৎক্ষণাৎ স্থির করেছে এই পৃথিবীবাসীদের ধ্বংস করতে হবে। কিন্তু ঠিক সোজাসুজি নয়, একটু বাঁকা ভাবে। যেন তাতে একটু চালাকি থাকে, শয়তানি থাকে; যাতে সেটা পৃথিবীর প্রাণীদের কাছে আসে অপ্রত্যাশিতভাবে, আচমকা। এক্ষেত্রে আণবিক মারণাস্ত্রের অধিকারী মানুষের বিরুদ্ধে এরা কী অস্ত্র প্রয়োগ করতে পারে? এ প্রশ্নেরও উত্তর আছে। টেলিপ্যাথির অস্ত্র, সম্মোহনের অস্ত্র, কল্পনাশক্তির অস্ত্র।

এমন যদি হয় যে, এই সব গাছপালা বাড়িঘর, এই পিতলের খাট-আসলে এর কোনওটাই বাস্তব নয়, সবই আমার কল্পনাপ্রসূত, যে কল্পনার উপর কর্তৃত্ব করছে টেলিপ্যাথি ও সম্মোহনী শক্তির অধিকারী এই মঙ্গলবাসীরা-হয়তো এই বাড়ির চেহারা অন্য রকম, যেমন বাড়ি শুধু মঙ্গল গ্রহেই হয়, কিন্তু এদের টেলিপ্যাথি এবং হিপনোসিসের কৌশলে আমাদের চোখে এর চেহারা হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীরই একটি ছোট পুরনো শহরের বাড়ির মতো। ফলে আমাদের মনে একটা প্রসন্নভাব এসে যাচ্ছে আপনা থেকেই। তার উপর নিজেদের হারানো বাবা-মা ভাইবোনকে পেলে কার না মন আনন্দে ভরে যায়?

এই শহরের বয়স আমি ছাড়া আমাদের দলের সকলের চেয়ে বেশি। আমার যখন ছ' বছর বয়স তখন আমি ঠিক এই রকম শহর দেখেছি, এই রকম গান-বাজনা শুনেছি, ঘরের ভিতর ঠিক এইরকম আসবাব, এই ঘড়ি, এই কার্পেট দেখেছি। এমন যদি হয় যে, এই দুর্ধর্ষ চতুর মঙ্গলবাসীরা আমারই স্মৃতির উপর নির্ভর করে ঠিক আমারই মনের মতো একটি শহরের চেহারা আমাদের সামনে উপস্থিত করেছে। শৈশবের স্মৃতিই সবচেয়ে উজ্জ্বল, এমন কথা শোনা যায়। আমার স্মৃতির শহরকে বাস্তব রূপ দিয়ে তারপর তারা আমার রকেটের অন্য যাত্রীদের স্মৃতি থেকেও তাদের মৃত প্রিয়জনদের এই শহরের বাসিন্দা করে দিয়েছে।

ধরা যাক পাশের ঘরে যে বৃদ্ধ এবং বৃদ্ধা শুয়ে আছেন, তাঁরা আসলে মোটেই আমার মা-বাবা নন। আসলে তাঁরা ক্ষুরধার-বুদ্ধিসম্পন্ন দুই মঙ্গলগ্রহবাসী, যারা আমার মনে তাঁদের ইচ্ছামতো ধারণা আরোপ করতে সক্ষম।

আর রকেটকে ঘিরে আজকের ওই আমোদ ও ব্যান্ড-বাদ্য? কী আশ্চর্য বুদ্ধি কাজ করছে ওর পিছনে যদি সত্যিই এটা টেলিপ্যাথি হয়। প্রথমে লাস্টিগকে হাত করা গেল, তার পর হিংস্টনকে, তার পর রকেটের বাকি সব যাত্রীদের ঘিরে ফেলা হল গত বিশ বছরের মধ্যে হারানো তাদের আত্মীয় ও প্রিয়জনদের দিয়ে, যাতে তারা আনন্দে আত্মহারা হয়ে আমার হুকুম অগ্রাহ্য করে রকেট ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে। এর চেয়ে স্বাভাবিক আর কী হতে পারে? এখানে মনে সন্দেহ প্রবেশ করার সুযোগ কোথায়? তাই তো এখন দলের সকলেই শুয়ে আছে বিভিন্ন বাড়িতে, বিভিন্ন খাটে, নিরস্ত্র অবস্থায়; আর রকেটটাও খালি পড়ে আছে চাঁদনি রাতে। কী ভয়াবহ হবে সেই উপলব্ধি, যদি সত্যিই জানা যায় যে, এই সমস্ত ঘটনার পিছনে রয়েছে আমাদের সকলকে হত্যা করার অভিসন্ধি। হয়তো মাঝরাত্রে আমার পাশের খাটে আমার ভাইয়ের চেহারা বদলে গিয়ে হয়ে যাবে ভয়ঙ্কর একটা কিছু-যেমন চেহারা সব মঙ্গলবাসীরই হয়। আর সেইসঙ্গে অন্য পনেরোটা বাড়িতে আমার দলের লোকদের প্রিয়জনদেরও চেহারা যাবে পালটে, আর তারা শুরু করবে ঘুমন্ত পৃথিবীবাসীদের সংহার... চাদরের তলায় ক্যাপ্টেন জনের হাত দুটো আর স্থির থাকছে না। আর তাঁর সমস্ত শরীর হয়ে গেছে বরফের মতো ঠাণ্ডা। যা এতক্ষণ ছিল কল্পনা, তা এখন বাস্তব রূপ ধরে তাঁর মনে গভীর আতঙ্কের সঞ্চার করছে।

ধীরে ধীরে ক্যাপ্টেন ব্ল্যাক বিছানায় উঠে বসলেন। রাত এখন নিস্তব্ধ। বাজনা থেমে গেছে। বাইরে বাতাসের শব্দও আর নেই। পাশের খাটে ভাই শুয়ে ঘুমোচ্ছে। অতি সন্তর্পণে গায়ের চাদরটা গুটিয়ে পাশে রাখলেন ক্যাপ্টেন ব্ল্যাক। তারপর খাট থেকে নেমে কোনও শব্দ না করে ঘরের দরজার দিকে এগিয়ে যেতেই ভাইয়ের কণ্ঠস্বরে থমকে দাঁড়ালেন। 'কোথায় যাচ্ছ দাদা?'

'কী বললে?'

'এত রাত্রে কোথায় যাচ্ছ?'

'জল খেতে যাচ্ছিলাম।'

'কিন্তু তোমার তো তেষ্টা পায়নি।'

'হ্যাঁ, পেয়েছে।'

'আমি জানি পায়নি।'

ক্যাপ্টেন জন পালাবার চেষ্টায় দৌড়ে গেলেন দরজার দিকে। কিন্তু দরজা পর্যন্ত পৌঁছতে

পারলেন না।

পরদিন সকালে মঙ্গলবাসীদের ব্যান্ডে শোনা গেল করুণ সুর। শহরের অনেক বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল লম্বা লম্বা কাঠের বাক্স বহনকারীর দল। মৃত ব্যক্তিদের বাপ-মা-ভাই-বোন সকলের চোখেই জল, তারা চলেছে গির্জার দিকে, যেখানে মাটিতে ষোলোটি নতুন গর্ত খোঁড়া হয়েছে।

মেয়র আর একটি বক্তৃতা দিলেন-এবার দুঃখ প্রকাশ করার জন্য, যদিও তাঁকে আজ চিনতে পারা মুশকিল, কারণ তাঁর চেহারা দ্রুত রূপান্তরিত হচ্ছে। যেমন হচ্ছে এই শহরের সমস্ত প্রাণীই। ক্যাপ্টেন ব্ল্যাকের মা, বাবা ও ভাইয়ের চোখে জল হলেও তাদের চেহারা দ্রুত বিকৃত হয়ে আসছে, ফলে তাদের এখন চেনা প্রায় অসম্ভব।

কাঠের কফিনগুলো গর্তের মধ্যে নামিয়ে দেওয়া হল। কে যেন মন্তব্য করল, 'রাতারাতি লোকগুলো শেষ হয়ে গেল।'

এখন কফিনের ঢাকনার ওপর মঙ্গলের মাটি নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। এই শুভদিনে আজ এখানে সকলের ছুটি।

99
Articles
গল্প ১০১
0.0
ফেলুদা এবং শঙ্কু বাদে সত্যজিৎ রায়ের যাবতীয় লেখা নিয়ে তৈরি একটি সংকলন।
1

বঙ্কুবাবুর বন্ধু

14 November 2023
0
0
0

বঙ্কুবাবুকে কেউ কোনওদিন রাগতে দেখেনি। সত্যি বলতে কি, তিনি রাগলে যে কীরকম ব্যাপারটা হবে, কী যে বলবেন বা করবেন তিনি, সেটা আন্দাজ করা ভারী শক্ত। অথচ রাগবার যে কারণ ঘটে না তা মোটেই নয়। আজ বাইশ বছর তিনি

2

টেরোড্যাকটিলের ডিম

14 November 2023
0
0
0

বদনবাবু আপিসের পর আর কার্জন পার্কে আসেন না। আগে ছিল ভাল। সুরেন বাঁড়ুজ্যের স্ট্যাচুর পাশটায় ঘণ্টাখানেক চুপচাপ বসে বিশ্রাম করে তারপর ট্রামের ভিড়টা একটু কমলে সন্ধ্যায় সন্ধ্যায় শিবঠাকুর লেনে বাড়ি ফ

3

সেপ্টোপাসের খিদে

14 November 2023
0
0
0

কড়া নাড়ার আওয়াজ পেয়ে আপনা থেকেই মুখ থেকে একটা বিরক্তিসূচক শব্দ বেরিয়ে পড়ল। বিকেল থেকে এই নিয়ে চারবার হল; মানুষে কাজ করে কী করে? কার্তিকটাও সেই যে বাজারে গেছে আর ফেরার নামটি নেই। লেখাটা বন্ধ ক

4

সদানন্দের খুদে জগৎ

14 November 2023
0
0
0

আজ আমার মনটা বেশ খুশি-খুশি, তাই ভাবছি এইবেলা তোমাদের সব ব্যাপারটা বলে ফেলি। আমি জানি তোমরা বিশ্বাস করবে। তোমরা তো আর এদের মতো নও। এরা বিশ্বাস করে না। এরা ভাবে আমার সব কথাই বুঝি মিথ্যে আর বানানো। আমি ত

5

অনাথবাবুর ভয়

14 November 2023
0
0
0

অনাথবাবুর সঙ্গে আমার আলাপ ট্রেনের কামরায়। আমি যাচ্ছিলাম রঘুনাথপুর, হাওয়াবদলের জন্য। কলকাতায় খবরের কাগজের আপিসে চাকরি করি। গত ক'মাস ধরে কাজের চাপে দমবন্ধ হবার উপক্রম হয়েছিল। তা ছাড়া আমার লেখার শখ,

6

দুই ম্যাজিশিয়ান

14 November 2023
0
0
0

'পাঁচ, ছয়, সাত, আট, নয়, দশ, এগারো।' সুরপতি ট্রাঙ্কগুলো শুনে নিয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট অনিলের দিকে ফিরে বলল, ঠিক আছে। দাও, গাড়ি পাঠিয়ে দাও সব ব্রেকভ্যানে। আর মাত্র পঁচিশ মিনিট। ' অনিল বলল, 'আপনার গাড

7

শিবু আর রাক্ষসের কথা

16 November 2023
0
0
0

'অ্যাই শিবু—এদিকে শোন। ' শিবুর ইস্কুল যাবার পথে ফটিকদা তাকে প্রায়ই এইভাবে ডাকে। ফটিকদা মানে পাগলা ফটিক। জয়নারায়ণ বাবুদের বাড়ি ছাড়িয়ে চৌমাথার কাছটায় যেখানে একটা পুরনো মরচে-ধরা স্টিম রোলার আজ

8

পটলবাবু ফিল্মস্টার

16 November 2023
1
0
0

পটলবাবু সবে বাজারের থলিটা কাঁধে ঝুলিয়েছেন এমন সময় বাইরে থেকে নিশিকান্তবাবু হাঁক দিলেন, 'পটল আছ নাকি হে?' “আজ্ঞে হ্যাঁ। দাঁড়ান, আসছি।' নিশিকান্ত ঘোষ মশাই নেপাল ভট্টচাজ্যি লেনে পটলবাবুর তিনখানা বাড

9

বিপিন চৌধুরীর স্মৃতিভ্রম

16 November 2023
0
0
0

নিউ মার্কেটের কালীচরণের দোকান থেকে প্রতি সোমবার আপিস ফেরতা বই কিনে বাড়ি ফেরেন বিপিন চৌধুরী। যত রাজ্যের ডিটেকটিভ বই, রহস্যের বই আর ভূতের গল্প। একসঙ্গে অন্তত খান পাঁচেক বই না কিনলে তাঁর এক সপ্তাহের খোর

10

বাদুড় বিভীষিকা

16 November 2023
0
0
0

বাদুড় জিনিসটা আমার মোটেই ধাতে সয় না। আমার ভবানীপুরের ফ্ল্যাটের ঘরে মাঝে মাঝে যখন সন্ধের দিকে জানলার গরাদ দিয়ে নিঃশব্দে এক-একটা চামচিকে ঢুকে পড়ে, তখন বাধ্য হয়েই আমাকে কাজ বন্ধ করে দিতে হয়। বিশেষত

11

নীল আতঙ্ক

16 November 2023
0
0
0

আমার নাম অনিরুদ্ধ বোস। আমার বয়স ঊনত্রিশ। এখনও বিয়ে করিনি। আজ আট বছর হল আমি কলকাতার একটা সদাগরি আপিসে চাকরি করছি। মাইনে যা পাই তাতে একা মানুষের দিব্যি চলে যায়। সর্দার শঙ্কর রোডে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া ন

12

রতনবাবু আর সেই লোকটা

16 November 2023
0
0
0

ট্রেন থেকে প্ল্যাটফর্মে নেমে এদিক ওদিক দেখে রতনবাবুর মনে একটা খুশির ভাব জেগে উঠল। জায়গাটা তো ভাল বলেই মনে হচ্ছে। স্টেশনের পিছনে শিরীষ গাছটা কেমন মাথা উচিয়ে রয়েছে, তার ডালে আবার একটা লাল ঘুড়ি আটকে

13

ফ্রিৎস

17 November 2023
0
0
0

জয়ন্তর দিকে মিনিটখানেক তাকিয়ে থেকে তাকে প্রশ্নটা না করে পারলাম না। 'তোকে আজ যেন কেমন মনমরা মনে হচ্ছে? শরীর-টরীর খারাপ নয় তো?' জয়ন্ত তার অন্যমনস্ক ভাবটা কাটিয়ে নিয়ে একটা ছেলেমানুষি হাসি হেসে বল

14

ব্রাউন সাহেবের বাড়ি

17 November 2023
0
0
0

ব্রাউন সাহেবের ডায়রিটি হাতে আসার পর থেকেই ব্যাঙ্গালোর যাবার একটা সুযোগ খুঁজছিলাম। সেটা এল বেশ অপ্রত্যাশিত ভাবে। আমাদের বালিগঞ্জ স্কুলের বাৎসরিক রি-ইউনিয়নে দেখা হয়ে গেল আমার পুরনো সহপাঠী অনীকেন্দ্র

15

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ্

17 November 2023
0
0
0

আমার ঘটনাটা কেউ বিশ্বাস করবে বলে বিশ্বাস হয় না। না করুক—তাতে কিছু এসে যায় না। নিজে চোখে না দেখা অবধি অনেকেই অনেক কিছু বিশ্বাস করে না। যেমন ভূত। আমি অবিশ্যি ভূতের কথা লিখতে বসিনি। সত্যি বলতে কি, এটাক

16

বাতিকবাবু

17 November 2023
0
0
0

বাতিকবাবুর আসল নামটা জিজ্ঞেস করাই হয়নি। পদবি মুখার্জি। চেহারা একবার দেখলে ভোলা কঠিন। প্রায় ছ' ফুট লম্বা, শরীরে চর্বির লেশমাত্র নেই, পিঠটা ধনুকের মতো বাঁকা, হাতে পায়ে গলায় কপালে অজস্র শিরা উপশিরা চ

17

খগম

17 November 2023
0
0
0

পেট্রোম্যাক্সের আলোতে বসে ডিনার খাচ্ছি, সবেমাত্র ডালনার ডিমে একটা কামড় দিয়েছি, এমন সময় চৌকিদার লছমন জিজ্ঞেস করল, আপলোগ ইমলি-বাবাকো দর্শন নেহি করেঙ্গে ? বলতে বাধ্য হলাম যে, ইমলিবাবার নামটা আমাদের ক

18

বারীন ভৌমিকের ব্যারাম

17 November 2023
0
0
0

কন্‌ডাকটরের নির্দেশমতো 'ডি' কামরায় ঢুকে বারীন ভৌমিক তাঁর সুটকেসটা সিটের নীচে ঢুকিয়ে দিলেন। ওটা পথে খোলার দরকার হবে না। ছোট ব্যাগটা হাতের কাছে রাখা দরকার। চিরুনি, বুরুশ, টুথ-ব্রাশ, দাড়ি কামানোর সরঞ্

19

ভক্ত

17 November 2023
0
0
0

অরূপবাবু—অরূপরতন সরকার—পুরী এসেছেন এগারো বছর পরে। শহরে কিছু কিছু পরিবর্তন চোখে পড়েছে—কিছু নতুন বাড়ি, নতুন করে বাঁধানো কয়েকটা রাস্তা, দু-চারটে ছোট-বড় নতুন হোটেল—কিন্তু সমুদ্রের ধারটায় এসে বুঝতে পা

20

ফটিকচাঁদ

18 November 2023
0
0
0

ও যে কখন চোখ খুলেছে, ও জানে না। চোখে কিছু দেখার আগে ও বুঝেছে ওর শীত করছে, ওর গা ভিজে, ওর পিঠের তলায় ঘাস, ওর মাথার নীচে একটা শক্ত জিনিস। আর তার পরেই বুঝেছে ওর গায়ে অনেক জায়গায় ব্যথা। তবু ডান হাতটাক

21

বিষফুল

18 November 2023
0
0
0

*ওদিকে যাবেন না বাবু । জগন্ময়বাবু চমকে উঠলেন। কাছাকাছির মধ্যে যে আর কোনও লোক আছে সেটা উনি টের পাননি; তার ফলেই এই চমকানি। এবার দেখলেন তাঁর ডাইনে হাত দশেক দূরে দাঁড়িয়ে আছে একটি তেরো-চোদ্দো বছরের ছেল

22

অসমঞ্জবাবুর কুকুর

18 November 2023
0
0
0

হাসিমারায় বন্ধুর বাড়িতে ছুটি কাটাতে এসে অসমঞ্জবাবুর একটা অনেকদিনের শখ মিটল। ভবানীপুরের মোহিনীমোহন রোডে দেড়খানা ঘর নিয়ে থাকেন অসমঞ্জবাবু। লাজপত রায় পোস্টঅফিসের রেজিস্ট্রি বিভাগে কাজ করেন তিনি; কা

23

লোড শেডিং

18 November 2023
0
0
0

ফণীবাবু তাঁর গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ আগে থেকেই আঁচ করলেন যে তাঁর পাড়ায় লোড শেডিং হয়ে গেছে। আজ আপিসে ওভারটাইম করে বেরুতে বেরুতে হয়ে গেছে সোয়া আটটা। ডালহৌসি থেকে বাসে তাঁর পাড়ায় পৌঁছাতে লা

24

ক্লাস ফ্রেন্ড

19 November 2023
0
0
0

সকাল সোয়া নটা। মোহিত সরকার সবেমাত্র টাইয়ে ফাঁসটা পরিয়েছেন, এমন সময় তাঁর স্ত্রী অরুণা ঘরে ঢুকে বললেন, 'তোমার ফোন। *এই সময় আবার কে ? কাঁটায় কাঁটায় সাড়ে ন'টায় অফিসে পৌঁছানোর অভ্যাস মোহিত সরকা

25

সহদেববাবুর পোট্রেট

19 November 2023
0
0
0

যেটার আগে নাম ছিল ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, সেই মিরজা গালিব স্ট্রিটে ল্যাজারাসের নিলামের দোকানে প্রতি রবিবার সকালে সহদেববাবুকে দেখা যেতে শুরু করেছে মাস তিনেক হল। প্রথম অবস্থায় লোকাল ট্রেনে হেঁয়ালির বই, গো

26

মিঃ শাসমলের শেষ রাত্রি

19 November 2023
0
0
0

শাসমল আরাম কেদারাটায় গা এলিয়ে দিয়ে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন । মোক্ষম জায়গা বেছেছেন তিনি—উত্তর বিহারের এই ফরেস্ট বাংলো। এর চেয়ে নিরিবিলি মিঃ নিরাপদ নিরুপদ্রব জায়গা আর হয় না। ঘরটিও দিব্যি। স

27

পিন্টুর দাদু

19 November 2023
0
0
0

পিন্টুর আপসোস এইখানেই। তার বন্ধুদের মধ্যে অনেকেরই দাদু আছে, কিন্তু কই, তাদের কেউই তো তার নিজের দাদুর মতো নয়। রাজুর দাদুকে সে দেখেছে নিজে হাতে লাল আর বেগুনি কাগজের ফিতে পর পর জুড়ে রাজুর ঘুড়ির জন্য ল

28

বৃহচ্চঞ্চু

19 November 2023
0
0
0

ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রিটে তাঁর আপিসের যেখানে বসে তুলসীবাবু কাজ করেন, তার পাশেই জানালা দিয়ে পশ্চিম আকাশে অনেকখানি দেখা যায়। সেই আকাশে এক বর্ষাকালের সকালে যখন জোড়া রামধনু দেখা দিল, ঠিক তখনই তুলসীবাবুর

29

চিলেকোঠা

19 November 2023
0
0
0

ন্যাশনাল হাইওয়ে নাম্বার ফর্টি থেকে ডাইনে রাস্তা ধরে দশ কিলোমিটার গেলেই ব্রহ্মপুর। মোড়টা আসার কিছু আগেই আদিত্যকে জিজ্ঞেস করলাম, 'কী রে, তোর জন্মস্থানটা একবার ঢুঁ মেরে যাবি নাকি ? সেই যে ছেড়েচিস, তার

30

ভূতো

19 November 2023
0
0
0

নবীনকে দ্বিতীয়বার হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হল। অক্রূরবাবুর মন ভেজানো গেল না। উত্তরপাড়ার একটা ফাংশনে নবীন পেয়েছিল অজুর চৌধুরীর আশ্চর্য ক্ষমতার পরিচয়। ভেনট্রিলোকুইজ্‌জ্ম। খেলার নামটা নবীনের জানা ছিল না।

31

অতিথি

19 November 2023
0
0
0

মন্টু ক'দিন থেকেই শুনেছে তার মা-বাবার মধ্যে কথা হচ্ছে দাদুকে নিয়ে। মন্টুর ছোটদাদু, মা-র ছোটমামা । দাদুর চিঠিটা যখন আসে তখন মন্টু বাড়ি ছিল। মা চিঠি পড়ে প্রথমে আপন মনে বললেন, 'বোঝো ব্যাপার।' তারপর ব

32

ম্যাকেঞ্জি ফ্রুট

19 November 2023
0
0
0

ম্যাকেঞ্জি সাহেবের বাগানে আশ্চর্য গাছটা আবিষ্কার করলেন নিশিকান্তবাবু। সাহেব যে গাছপালা ভালবাসতেন সেটা করিমগঞ্জে এসেই শুনেছিলেন নিশিকান্তবাবু। ভারত স্বাধীন হবার বছর সাতেকের মধ্যেই সাহেব অস্ট্রেলিয়ায়

33

ফার্স্ট ক্লাস কামরা

20 November 2023
0
0
0

আগের আমলের ফার্স্ট ক্লাস কামরা-বাথরুম সমেত ফোর বার্থ বা সিক্স বার্থ কম্পার্টমেন্ট-আজকাল উঠেই গেছে। এটা যে সময়ের গল্প, অর্থাৎ নাইনটিন সেভেনটি-তখনও মাঝে মাঝে এক-আধটা এই ধরনের কামরা কী করে জানি ট্রেনের ম

34

ডুমনিগড়ের মানুষখেকো

20 November 2023
0
0
0

'আমি তখন ছিলাম ডুমনিগড় নেটিভ স্টেটের ম্যানেজার', বললেন তারিণীখুড়ো। 'ডুমনিগড় ম্যাপে আছে?' জিজ্ঞেস করল ন্যাপলা। ন্যাপলার মুখে কিছু আটকায় না। 'তোর কি ধারণা ম্যাপে যা আছে তার বাইরে আর কিছু নেই?' চোখ-কান

35

ধাপ্পা

20 November 2023
0
0
0

'চার্লস ওয়েকম্যানের 'হিস্ট্রি অফ ম্যাজিক' আপনার ক' ভল্যুম ছিল?' সমরেশ ব্রহ্ম ইন্টারন্যাশনাল ম্যাজিক সার্কেলের চিঠির উত্তরে সইটা করে মুখ তুলে চাইল মহিমের দিকে। তার বন্ধু অধ্যাপক রণেন সেনগুপ্তর ছেলে মহ

36

কনওয়ে কাস্লের প্রেতাত্মা

20 November 2023
0
0
0

তারিণীখুড়ো তাঁর এক্সপোর্ট কোয়ালিটি বিড়িতে দুটো টান দিয়ে বললেন, 'ভূতের গল্প অনেকে বলতে পারে, তবে পার্সোনাল এক্সপিরিয়েন্স থেকে বলা গল্পের জাতই আলাদা। সেটা আর কজন পারে বলো।' 'আপনি পারেন?' প্রশ্ন করল ন্য

37

অঙ্ক স্যার, গোলাপীবাবু আর টিপু

20 November 2023
0
0
0

টিপু ভূগোলের বইটা বন্ধ করে ঘড়ির দিকে দেখল। সাতচল্লিশ মিনিট পড়া হয়ে গেছে একটানা। এখন তিনটে বেজে তেরো মিনিট। এবার যদি ও একটু ঘুরে আসে তা হলে ক্ষতি কী? ঠিক এমনি সময় তো সেদিন লোকটা এসেছিল। সে তো বলেছিল

38

শেঠ গঙ্গারামের ধনদৌলত

20 November 2023
0
0
0

'আমার এখন যে চেহারা দেখছিস,' বললেন তারিণীখুড়ো, 'তা থেকে আমার ইয়াং বয়সের চেহারা তোরা কল্পনাই করতে পারবি না।' 'কীরকম চেহারা ছিল আপনার, খুড়ো?' জিজ্ঞেস করল ন্যাপলা, 'ধর্মেন্দরের মতো?' 'য্যা য্যাঃ!' বললে

39

স্পটলাইট

20 November 2023
0
0
0

ছোটনাগপুরের এই ছোট্ট শহরটায় পুজোর ছুটি কাটাতে আমরা আগেও অনেকবার এসেছি। আরও বাঙালিরা আসে; কেউ কেউ নিজেদের বাড়িতে থাকে, কেউ কেউ বাড়ি-বাংলো-হোটেল ভাড়া করে থাকে, দিন দশেকে অন্তত মাস ছয়েক আয়ু বাড়িয়ে নিয়ে

40

তারিণীখুড়ো ও বেতাল

20 November 2023
0
0
0

শ্রাবণ মাস, দিনটা ঘোলাটে, সকাল থেকে টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে, তারই মধ্যে সন্ধের দিকে তারিণীখুড়ো এসে হাজির। হাতের ভিজে জাপানি ছাতাটা সড়াত করে বন্ধ করে দরজার পাশটায় দাঁড় করিয়ে রেখে তক্তপোশে তাঁর জায়গাটায়

41

বহুরূপী

21 November 2023
0
0
0

নিউ মহামায়া কেবিনের একটি চেয়ার দখল করে হাফ কাপ চা আর আলুর চপ অর্ডার দিয়ে নিকুঞ্জ সাহা একবার চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিল। তার চেনা-পরিচিতের কেউ এসেছে কি? হ্যাঁ, এসেছে বইকী। ওই তো রসিকবাবু, আর ওই যে শ্রীধর।

42

মানপত্র

21 November 2023
0
0
0

শতদল সংস্থার সেক্রেটারি প্রণবেশ দত্ত বিস্ফোরক সংবাদটি ঘোষণা করবার পর উপস্থিত সদস্যদের মুখ দিয়ে প্রায় এক মিনিট কোনও কথা বেরোল না। ক্লাবঘরে জরুরি মিটিং বসেছে নববর্ষের পাঁচদিন আগে। মিটিং-এর উদ্দেশ্য প্রণ

43

অপদার্থ

21 November 2023
0
0
0

অপদার্থ কথাটা অনেক লোক সম্বন্ধে অনেক সময়ই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন আমাদের চাকর নবকেষ্ট। 'নব, তুই একটা অপদার্থ'-এই কথাটা ছেলেবেলায় মার মুখে অনেকবার শুনেছি। নব কিন্তু কাজ ভালই করত; দোষের মধ্যে সে ছিল

44

সাধনবাবুর সন্দেহ

21 November 2023
0
0
0

সাধনবাবু একদিন সন্ধ্যাবেলা কাজ থেকে ফিরে তাঁর ঘরে ঢুকে দেখলেন মেঝেতে একটা বিঘতখানেক লম্বা সরু গাছের ডাল পড়ে আছে। সাধনবাবু পিটপিটে স্বভাবের মানুষ। ঘরে যা সামান্য আসবাব আছে-খাট, আলমারি, আলনা, জলের কুঁজো

45

গগন চৌধুরীর স্টুডিও

21 November 2023
0
0
0

একটা ফ্ল্যাট দিনের বেলা দেখে পছন্দ হলেও, সেখানে গিয়ে থাকা না অবধি তার সুবিধে-অসুবিধেগুলো ঠিক বোঝা যায় না। সুধীন সরকার এইটেই উপলব্ধি করল ভবানীপুরের এই ফ্ল্যাটে বসবাস আরম্ভ করে। এই একটা ব্যাপারেই ভাগ্যল

46

লখনৌর ডুয়েল

21 November 2023
0
0
0

'ডুয়েল মানে জানিস?' জিজ্ঞেস করলেন তারিণীখুড়ো। 'বাঃ, ডুয়েল মানে জানব না?' বলল ন্যাপলা। 'ডুয়েল রোল, মানে দ্বৈত ভূমিকা। সন্তোষ দত্ত গুপী গাইনে ডুয়েল রোল করেছিলেন-হাল্লার রাজা, শুণ্ডীর রাজা।' 'সে ডুয়েলে

47

ধুমলগড়ের হান্টিং লজ

21 November 2023
0
0
0

'মাথায় অনেকরকম উদ্ভট শখ চাপে মানুষের', বললেন তারিণীখুড়ো, 'কিন্তু আমার যেমন চেপেছে, তেমন কজনের চাপে জানি না।' আমরা পাঁচজন ঘিরে বসেছি খুড়োকে। বাইরে এক পশলা বেশ ভাল বৃষ্টি হয়ে গিয়ে এখন সেটা অবিরাম ঝিরঝি

48

লাখপতি

21 November 2023
0
0
0

ত্রিদিব চৌধুরী আর থাকতে না পেরে বিরক্তভাবে বেয়ারাকে ডাকার বোতামটা টিপলেন। কিছুক্ষণ থেকেই তিনি অনুভব করছেন যে, কামরাটা যত ঠাণ্ডা থাকার কথা মোটেই তত ঠাণ্ডা নয়। অথচ তাঁর তিন সহযাত্রীই দিব্যি নাক ডাকিয়ে ঘ

49

খেলোয়াড় তারিণীখুড়ো

21 November 2023
0
0
0

ডিসেম্বরের ঊনত্রিশে, শীতটা পড়েছে বেশ জাঁকিয়ে। সন্ধেবেলা তারিণীখুড়ো এলেন গলায় আর মাথায় মাফলার জড়িয়ে। 'তোরা মাঠে যাচ্ছিস না খেলা দেখতে?' তক্তপোষে বসেই প্রশ্ন করলেন খুড়ো, 'নাকি দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবার ত

50

টলিউডে তারিণীখুড়ো

21 November 2023
0
0
0

তাকিয়াটাকে কোলের উপর টেনে নিয়ে আরও জমিয়ে বসে ঝুঁকে পড়ে তারিণীখুড়ো তাঁর গল্প আরম্ভ করলেন। - আমার তখন তেইশ বছর বয়স, তবে একটা তেকোনা ফ্রেঞ্চকাট গোছের দাড়ি রেখেছিলাম বলে মনে হত তেত্রিশ। বেয়াল্লিশ সালের ক

51

আমি ভূত

22 November 2023
1
0
0

আমি ভূত। আজ থেকে ঠিক সাড়ে তিন বছর আগে আমি জ্যান্ত ছিলাম। সেই সময় এই দেওঘরের এই বাড়িতেই আগুনে পুড়ে আমার জ্যান্ত অবস্থার শেষ হয়। এই বাড়ির নাম লিলি ভিলা। আমি এখানে এসেছিলাম আমার এক বন্ধুর সঙ্গে ছুটি কাটা

52

বামধনের বাঁশি

22 November 2023
0
0
0

রামধনের লোকটাকে চেনা চেনা লাগায় আরেকটু কাছে গিয়ে একটা গাছের আড়াল থেকে দেখে তার বুকের ভিতরটা হিম হয়ে গেল। দশ বছর পেরিয়ে গেলেও চিনতে কোনও অসুবিধা নেই। এই সেই খগেশবাবু। খগেশ খাস্তগির, পুরনো ইটপাথর নিয়ে ঘ

53

জুটি

22 November 2023
0
0
0

'আজ আমি একজন ফিল্মস্টারের কথা বলতে যাচ্ছি,' চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন তারিণীখুড়ো। 'কে তিনি? তাঁর নাম কী?' আমরা সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠলাম। 'তাঁর নাম তোরা শুনিসনি,' বললেন তারিণীখুড়ো। 'তিনি যখন রিটায়ার করেন তখন

54

মাস্টার অংশুমান

22 November 2023
0
0
0

সেই সকালটার কথা আমি কোনওদিন ভুলতে পারব না। সেদিন ছিল রবিবার। তিনদিন ধরে সমানে বাদলা করে সেদিনই প্রথম ঝলমলে রোদ বেরিয়েছে। আমি একটা অঙ্ক কষে আমার খাতাটা বন্ধ করেছি এমন সময় বিশুদা এল। বিশুদা, বিশ্বনাথ গা

55

নিধিরামের ইচ্ছাপূরণ

22 November 2023
0
0
0

কোনও মানুষই তার নিজের অবস্থা সম্পর্কে ষোলো আনা সন্তুষ্ট বোধ করে না। কোনও-না-কোনও ব্যাপারে একটা খুঁতখুঁতেমির ভাব প্রায় সবার মধ্যেই থাকে। রাম ভাবে তার শরীরে আরও মাংস হল না কেন-হাড়গুলো বড্ড বেশি বেরিয়ে থ

56

কানাইয়ের কথা

22 November 2023
0
0
0

নসু কবরেজ প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে বলরামের নাড়ি ধরে বসে রইলেন। শিয়রের কাছে দাঁড়িয়ে বলরামের সতেরো বছরের ছেলে কানাই কবরেজের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে আছে। আজ দশদিন হল তার বাপের অসুখ। কোনও কিছু খাবারে তার রুচি নেই;

57

রতন আর লক্ষ্মী

23 November 2023
0
0
0

ঠিক কখন থেকে রতনের মনটা খুশিতে ভরে আছে সেটা রতন জানে। দশদিন আগে ছিল চৈত্র সংক্রান্তি। রতন থাকে শিমুলিতে। সেখান থেকে চার ক্রোশ দূরে উজলপুরে সংক্রান্তির খুব বড় মেলা হয়। রতন গিয়েছিল সেই মেলা দেখতে। শুধু

58

গঙ্গারামের কপাল

23 November 2023
0
0
0

নদীর ধারে খোলামকুচি দিয়ে ব্যাঙবাজি খেলতে খেলতে হঠাৎ গঙ্গারামের চোখে পড়ল পাথরটা। এ নদীতে জল নেই বেশি; যেখানে সবচেয়ে গভীর সেখানেও হাঁটু ডোবে না। জলটা কাচের মতো স্বচ্ছ, তাই তার নীচে লাল নীল সবুজ হলদে খয়ে

59

সুজন হরবোলা

23 November 2023
0
0
0

সুজনের বাড়ির পিছনেই ছিল একটা সজনে গাছ। তাতে থাকত একটা দোয়েল। সুজনের যখন আট বছর বয়স তখন একদিন দোয়েলের ডাক শুনে সে ভাবল-আহা, এ পাখির ডাক কেমন মিষ্টি। মানুষে কি কখনও এমন ডাক ডাকতে পারে? সুজন সেইদিন থেকে

60

নিতাই ও মহাপুরুষ

23 November 2023
0
0
0

কোনও এক জ্ঞানী ব্যক্তি বলে গেছেন যে মানুষের মধ্যে বেশিরভাগই মাঝারি দলে পড়ে। কথাটা হয়তো সত্যি, কিন্তু নিতাইকে মাঝারিও বলা চলে না। অনেক ব্যাপারেই সে অত্যন্ত খাটো। দেহের দিক দিয়ে যেমন, মনের দিক দিয়েও ছেল

61

মহারাজা তারিণীখুড়ো

23 November 2023
0
0
0

'আজ আপনার কপালে ভ্রুকুটি কেন খুড়ো?' জিজ্ঞেস করল ন্যাপলা। এটা অবিশ্যি আমিও লক্ষ করেছিলাম। খুড়ো তক্তপোশের উপর বাবু হয়ে বসে ডান হাতটা পায়ের পাতায় রেখে অল্প অল্প দুলছেন, তাঁর কপালে ভাঁজ। খুড়ো বললেন, 'এই

62

হাউই

23 November 2023
0
0
0

জয়ন্ত নন্দী : ছোটদের পত্রিকা 'হাউই'-এর সম্পাদক তরুণ সান্যাল : জয়ন্তর বন্ধু তিনকড়ি ধাড়া: 'হাউই'-এর দপ্তরের কর্মচারী। কাজ-বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করা তন্ময় সেনগুপ্ত: লেখক মুকুল : দপ্তরের কর্মচারী ধনঞ্জয়/

63

প্রতিকৃতি

23 November 2023
0
0
0

রঞ্জন পুরকায়স্থ কলকাতার একজন নামকরা চিত্রকর। শুধু কলকাতা কেন, তাঁর খ্যাতি পশ্চিমবাংলার বাইরে সারা ভারতবর্ষেই ছড়িয়ে পড়েছে-বোম্বাই, মাদ্রাজ, দিল্লি, ব্যাঙ্গালোর, হায়দ্রাবাদে তাঁর আঁকা ছবির প্রদর্শনী হয়ে

64

তারিণীখুড়ো ও ঐন্দ্রজালিক

23 November 2023
0
0
0

'কই, আর সব কই?' বললেন তারিণীখুড়ো। 'সব্বাইকে খবর দে, নইলে গল্প জমবে কী করে?' আমি বললাম, 'খবর পাঠানো হয়ে গেছে খুড়ো। এই এসে পড়ল বলে!' 'তা হলে এই ফাঁকে চা-টা বলে দে।' বললাম, 'তাও বলা হয়ে গেছে-দুধ চিনি ছা

65

অনুকূল

23 November 2023
0
0
0

'এর একটা নাম আছে তো?' নিকুঞ্জবাবু জিজ্ঞেস করলেন। 'আজ্ঞে হ্যাঁ, আছে বইকী।' 'কী বলে ডাকব?' 'অনুকূল।' চৌরঙ্গিতে রোবট সাপ্লাই এজেন্সির দোকানটা খুলেছে মাস ছয়েক হল। নিকুঞ্জবাবুর অনেকদিনের শখ একটা যান্ত্

66

কাকতাড়ুয়া

24 November 2023
0
0
0

মৃগাঙ্কবাবুর সন্দেহটা যে অমূলক নয় সেটা প্রমাণ হল পানাগড়ের কাছাকাছি এসে। গাড়ির পেট্রল ফুরিয়ে গেল। পেট্রলের ইনডিকেটরটা কিছুকাল থেকেই গোলমাল করছে, সে-কথা আজও বেরোবার মুখে ড্রাইভার সুধীরকে বলেছেন, কিন্তু

67

নরিস সাহেবের বাংলো

24 November 2023
0
0
0

তারিণীখুড়োকে ঘিরে আমরা পাঁচ বন্ধু বসেছি, বাদলা দিন, সন্ধে হব-হব, খুড়োর চা খাওয়া হয়ে গেছে। এবার বিড়ি ধরিয়ে হয়তো গল্প শুরু করবেন। খুড়ো এলে সন্ধেতেই আসেন, আর এলেই একটি করে গল্প লাভ হয় আমাদের। সবই খুড়োর জ

68

কুটুম-কাটাম

24 November 2023
0
0
0

'কোথায় পেলি এটা?' 'আমাদের বাড়ির কাছেই ছিল,' বলল দিলীপ। 'একটা জমি পড়ে আছে কাঠা তিনেক, তাতে কয়েকটা গাছ আর ঝোপঝাড়। একটা গাছের নীচে এটা পড়ে ছিল। অলোকের বাড়িতে সেদিন দেখছিলাম একটা গাছের গুঁড়িকে কেটে তার উপ

69

টেলিফোন

24 November 2023
0
0
0

ক্রিং-ক্রিং... ক্রিং-ক্রিং... ক্রিং-ক্রিং... বীরেশবাবু বিরক্ত হয়ে খাটের পাশের টেবিলের ওপর রাখা টেলিফোনটার দিকে দেখলেন। টেলিফোনের পাশেই ঘড়ি, তাতে বারোটা বাজে। রাত বারোটা। বীরেশবাবু সবে হাতের বইটা বন্ধ

70

গণেশ মুৎসুদ্দির পোট্রেট

24 November 2023
0
0
0

সুখময় সেনের বয়স পঁয়ত্রিশ। এই বয়সেই সে চিত্রকর হিসাবে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে। পোর্ট্রেটেই তার দক্ষতা বেশি। সমঝদারেরা বলে সুখময় সেনের আঁকা কোনও মানুষের প্রতিকৃতি দেখলে সেই মানুষের জ্যান্ত রূপ দেখতে পাওয়

71

মৃগাঙ্কবাবুর ঘটনা

24 November 2023
0
0
0

মৃগাঙ্কবাবু তাঁর সহকর্মী সলিল বসাকের কাছ থেকে প্রথম জানতে পারলেন যে বাঁদর থেকে মানুষের উদ্ভব হয়েছে। এ খবর আজকের দিনে শিক্ষিত লোকমাত্রই জানে, কিন্তু ঘটনাচক্রে খবরটা মৃগাঙ্কবাবুর গোচরে আসেনি। আসলে তাঁর

72

নতুন বন্ধু

24 November 2023
0
0
0

বর্ধমান স্টেশনের রেস্টোর‍্যান্টে ভদ্রলোক নিজেই যেচে এসে আলাপ করলেন। ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি আর গোঁফ, মোটামুটি আমারই বয়সী-অর্থাৎ বছর চল্লিশ-বেয়াল্লিশ-বেশ হাসিখুশি অমায়িক হাবভাব। বারোটা বাজে, তাই লাঞ্চটা সেরে ন

73

শিশু সাহিত্যিক

24 November 2023
0
0
0

ছোটদের মাসিক পত্রিকা 'বহুরূপী' এক বছর হল বেরোচ্ছে। সম্পাদক সুপ্রকাশ সেনগুপ্ত আপ্রাণ চেষ্টা করেন কাগজটাকে ভাল করতে। টাকার জোর নেই, তাই কাজটা সহজ নয়। গ্রাহক সংখ্যা দেড় হাজারের মতো; বিজ্ঞাপন যা আসে তার থ

74

মহিম সান্যালের ঘটনা

24 November 2023
0
0
0

তারিণীখুড়ো তাকিয়াটা বুকের কাছে টেনে নিয়ে বললেন, 'চমকলালের কথা তো তোদের বলেছি, তাই না?' 'হ্যাঁ হ্যাঁ,' বলল ন্যাপলা। 'সেই ম্যাজিশিয়ান তো? যাঁর আপনি ম্যানেজার ছিলেন?' 'হ্যাঁ। কিন্তু আরেকজন জাদুকর আছেন

75

গণৎকার তারিণীখুড়ো

24 November 2023
0
0
0

তারিণীখুড়োর এক ভাইপো এক চা কোম্পানিতে ভাল কাজ করে, সে খুড়োকে এক টিন স্পেশাল কোয়ালিটির চা দিয়েছে। খুড়ো টিনটা আমার হাতে চালান দিয়ে বললেন, 'এটা খোলাবার ব্যবস্থা কর; আজ তোদের চা না খেয়ে এইটে খাব।' বৈশাখ

76

গল্পবলিয়ে তারিণীখুড়ো

24 November 2023
0
0
0

'তোরা তো আমাকে গল্পবলিয়ে বলেই জানিস', বললেন তারিণীখুড়ো, 'কিন্তু এই গল্প বলে যে আমি এককালে রোজগার করেছি সেটা কি জানিস?' 'না বললে জানব কী করে?' বলল ন্যাপলা। 'সে আজ থেকে বাইশ বছর আগের কথা,' বললেন তারিণ

77

নিতাইবাবুর ময়না

24 November 2023
0
0
0

নিতাইবাবুর অনেকদিনের শখ একটা ময়না কেনার। তাঁর বন্ধু শশাঙ্ক সেনের বাড়িতে একটা ময়না আছে। সেটা হেন বাংলা কথা নেই যে বলে না। তার কথা শুনতেই নিতাইবাবু মাসে অন্তত তিনবার করে শশাঙ্কবাবুর বাড়িতে যান। সেদিন তো

78

রন্টুর দাদু

24 November 2023
0
0
0

রন্টুর বয়স পনেরো, কিন্তু এর মধ্যেই তার গানের গলা হয়েছে চমৎকার। সে সকালে ওস্তাদের কাছে একঘণ্টা গান শেখে। যে তার গান শোনে সেই বলে, 'এ ছেলে আর কয়েক বছরের মধ্যেই আসরে গান গাইবে।' এ গুণটা যে সে কোথা থেকে প

79

সহযাত্রী

24 November 2023
0
0
0

ত্রিদিববাবুর সাধারণত একটা হালকা বই পড়েই সময়টা কেটে যায়। কলকাতা থেকে দিল্লি ট্রেনে যাওয়া। কাজের জন্যই যেতে হয় দু মাসে অন্তত একবার। একটা ইলেকট্রনিক্স কোম্পানিতে উচ্চপদস্থ কর্মচারী তিনি, হেড আপিস দিল্লিত

80

ব্রজবুড়ো

25 November 2023
0
0
0

শঙ্কর চৌধুরী আধখানা হাতের রুটি ছিঁড়ে ডালে চুবিয়ে মুখে পুরে একবার পাশে বসা ছেলের দিকে চেয়ে নিলেন। তারপর চিবোতে চিবোতে বললেন, 'তোকে একটা কথা বলব-বলব করেও বলা হয়নি। আমাদের ডাইনে একটা বাড়ির পরে একটা দোতলা

81

দুই বন্ধু

25 November 2023
0
0
0

মহিম বাঁ হাতের কবজি ঘুরিয়ে হাতের ঘড়িটার দিকে এক ঝলক দৃষ্টি দিল। বারোটা বাজতে সাত। কোয়ার্টজ ঘড়ি-সময় ভুল হবে না। সে কিছুক্ষণ থেকেই তার বুকের মধ্যে একটা স্পন্দন অনুভব করছে, যেটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। বিশ বছ

82

শিল্পী

25 November 2023
0
0
0

অবনীশ ছবিটার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল। অয়েল পেন্টিং। একজন মাঝবয়সি সুপুরুষ ভদ্রলোকের পোর্ট্রেট। অবনীশের স্টুডিওর এক কোনায় আরও আট-দশটা ছবির পিছনে দাঁড় করানো ছিল। অবনীশের আঁকা প্রথম অয়েল পোর্ট্রেট। গভর্নমে

83

অক্ষয়বাবুর শিক্ষা

25 November 2023
0
0
0

অক্ষয়বাবু ছেলের হাত থেকে লেখাটা ফেরত নিলেন। 'কী রে-এটাও চলবে না?' ছেলে মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিল-না, চলবে না। এটা অক্ষয়বাবুর পাঁচ নম্বর গল্প যেটা ছেলে নাকচ করে দিল। অক্ষয়বাবুর ছেলের নাম অঞ্জন। তার বয়স চ

84

প্রসন্ন স্যার

25 November 2023
0
0
0

অর্ধেন্দু সেনগুপ্ত সাতদিনের ছুটি নিয়ে শিমুলতলায় এসেছে। সে একটা ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে ভাল চাকরি করে, যদিও মাত্র পঁচিশ বছর বয়স। চেহারা সুশ্রী, চলনে বলনে রীতিমতো স্মার্ট। ব্যাচেলার হিসেবে তার এই শেষ ছুটি ভ

85

অভিরাম

25 November 2023
0
0
0

'তোমার নাম কী?' 'অভিরাম সাউ, বাবু।' 'তোমার বাড়ি কোথায়?' 'উলুইপুর গাঁয়ে বাবু। উড়িষ্যা।' 'বাড়িতে আছে কে?' 'আমার দাদা আছে, বউদি আছে, দুই ভাইপো আছে।' 'তোমার বাড়ি যেতে হয় না?' 'কালে ভদ্রে বাবু। আমি

86

ব্লু-জন গহ্বরের বিভীষিকা (অনুবাদ)

25 November 2023
0
0
0

    ১৯০৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সাউথ কেনসিংটনের ৩৬ নং আপার কভেন্ট্রি ফ্ল্যাটে যক্ষ্মা রোগে ডাঃ জেমস হার্ডকালের মৃত্যুর পর, তাঁর কাগজপত্রের মধ্যে নিম্নলিখিত কাহিনীটি পাওয়া যায়। যাঁরা হার্ডকাফ্লকে ঘনিষ্ঠভাব

87

মোল্লা নাসিরুদ্দিনের গল্প (অনুবাদ)

25 November 2023
0
0
0

☆☆☆ নাসিরুদ্দিনের বন্ধুরা একদিন তাকে বললে, 'চলো, আজ রাত্রে আমরা তোমার বাড়িতে খাব।' 'বেশ, এসো আমার সঙ্গে', বললে নাসিরুদ্দিন। বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে সে বললে, 'তোমরা একটু সবুর করো, আমি আগে গিন্নিকে বলে আ

88

মোল্লা নাসিরুদ্দিনের আরো গল্প (অনুবাদ)

25 November 2023
0
0
0

একদিন এক জ্ঞাতি এসে নাসিরুদ্দিনকে একটা হাঁস উপহার দিলে। নাসিরুদ্দিন ভারী খুশি হয়ে সেটার মাংস রান্না করে জ্ঞাতিকে খাওয়ালে। কয়েকদিন পরে মোল্লাসাহেবের কাছে একজন লোক এসে বললে, 'আপনাকে যিনি হাঁস দিয়েছিলে

89

মোল্লা নাসিরুদ্দিনের আরো গল্প (অনুবাদ)

26 November 2023
0
0
0

রাজদরবারে নাসিরুদ্দিনের খুব খাতির। একদিন খুব খিদের মুখে বেগুন ভাজা খেয়ে ভারী খুশি হয়ে রাজা নাসিরুদ্দিনকে বললেন, 'বেগুনের মতো এমন সুস্বাদু খাদ্য আর আছে কি?' 'বেগুনের জবাব নেই,' বললে নাসিরুদ্দিন। রাজ

90

আবার মোল্লা নাসিরুদ্দিন (অনুবাদ)

26 November 2023
0
0
0

রাজামশাই একদিন নাসিরুদ্দিনকে ডেকে বললেন, 'বনে গিয়ে ভাল্লুক মেরে আনো।' নাসিরুদ্দিন রাজার আদেশ অমান্য করে কী করে? অগত্যা তাকে যেতেই হল। বন থেকে ফেরার পর একজন তাকে জিজ্ঞেস করলে, 'কেমন হল শিকার, মোল্লাসাহ

91

আর এক দফা মোল্লা নাসিরুদ্দিন (অনুবাদ)

26 November 2023
1
0
0

☆☆☆ নাসিরুদ্দিন রাস্তা দিয়ে হাঁটছে, পাশে ফুলে ফলে ভরা বাগিচা দেখে তার মধ্যে গিয়ে ঢুকল। প্রকৃতির শোভাও উপভোগ করা হবে, শর্টকাটও হবে। কিছুদূর যেতে না যেতেই নাসিরুদ্দিন এক গর্তের মধ্যে পড়ল, আর পড়তেই তার

92

ব্রেজিলের কালো বাঘ (অনুবাদ)

26 November 2023
0
0
0

মেজাজটা বনেদি, প্রত্যাশা অসীম, অভিজাত বংশের রক্ত বইছে ধমনীতে, অথচ পকেটে পয়সা নেই, রোজগারের কোনও রাস্তা নেই-একজন যুবকের পক্ষে এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে? আমার বাবা ছিলেন সহজ, সরল মানুষ। তাঁর দাদা

93

মঙ্গলই স্বর্গ (অনুবাদ)

26 November 2023
0
0
0

মহাকাশ থেকে রকেটটা নেমে আসছে তার গন্তব্যস্থলের দিকে। এতদিন সেটা ছিল তারায় ভরা নিঃশব্দ নিকষ কালো মহাশূন্যে একটি বেগবান ধাতব উজ্জ্বলতা। অগ্নিগর্ভ রকেটটা নতুন। এর দেহ থেকে নিঃসৃত হচ্ছে উত্তাপ। এর কক্ষের

94

ঈশ্বরের ন' লক্ষ কোটি নাম (অনুবাদ)

27 November 2023
0
0
0

'আপনাদের অর্ডারটা একটু অস্বাভাবিক ধরনের', বিস্ময়ের মাত্রাটা যথাসম্ভব কমিয়ে বললেন ডাঃ ওয়াগনার- 'আমি যতদূর জানি, এর আগে কোনও তিব্বতি গুম্ফা থেকে অটোমেটিক সিকুয়েন্স কম্পিউটারের জন্য অর্ডার আসেনি। আপনাদের

95

ইহুদির কবচ (অনুবাদ)

27 November 2023
0
0
0

প্রাচ্যের পুরাতত্ত্ব সম্পর্কে আমার বিশিষ্ট বন্ধু ওয়র্ড মর্টিমারের জ্ঞান ছিল অসামান্য। সে এ বিষয়ে বিস্তর প্রবন্ধ লিখেছিল, মিশরের ভ্যালি অফ দ্য কিংস-এ খননকার্য তদারকের সময় একটানা দু' বছর থিবিসের একটি সম

96

ময়ূরকণ্ঠি জেলি (অনুবাদ)

27 November 2023
0
0
0

শশাঙ্ক টেবিলের উপর থেকে খাতাটা তুলে নিল। নীল মলাটের ছোট সাইজের সাধারণ নোটবুক! দাম বোধহয় আজকের দিনে আনা আষ্টেক। কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে শশাঙ্ক এরকম নোটবুক ব্যবহার করেছে, তখন দাম ছিল দু'আনা। মনে আছে

97

সবুজ মানুষ (অনুবাদ)

27 November 2023
0
0
0

আমি যার কথা লিখতে যাচ্ছি তার সঙ্গে সবুজ মানুষের কোনও সম্পর্ক আছে কিনা, তা আমার সঠিক জানা নেই। সে নিজে পৃথিবীরই মানুষ, এবং আমারই একজন বিশিষ্ট বন্ধু-স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক-প্রফেসর নারা

98

আর্যশেখরের জন্ম ও মৃত্যু (অনুবাদ)

27 November 2023
1
0
0

অনেকের মতে আর্যশেখর ছিলেন যাকে ইংরাজিতে বলে চাইল্ড প্রডিজি। তাঁর যখন দশ বছর বয়স তখন একদিন স্টেটসম্যান পত্রিকার প্রথম পাতায় নীচের দিকে এক লাইন লেখা তাঁর চোখে পড়ল-সান রাইজেজ টুডে অ্যাট সিক্স থার্টিন এ এ

99

পিকুর ডায়রি (অনুবাদ)

27 November 2023
0
0
0

আমি ডাইরি লিখছি। আমি আমার নীল নতুন নীল খাতায় ডাইরি লিখছি। আমি আমার বিছানার উপর বসে লিখছি। দাদুও ডাইরি রোজ লেখে কিন্তু এখন না এখন অসুক করেছিল তাই। সেই অসুকটার নাম আমি জানি আর নামটা করোনানি থমবোসি। বাবা

---