shabd-logo

অসমঞ্জবাবুর কুকুর

18 November 2023

1 Viewed 1

হাসিমারায় বন্ধুর বাড়িতে ছুটি কাটাতে এসে অসমঞ্জবাবুর একটা অনেকদিনের শখ মিটল।

ভবানীপুরের মোহিনীমোহন রোডে দেড়খানা ঘর নিয়ে থাকেন অসমঞ্জবাবু। লাজপত রায় পোস্টঅফিসের রেজিস্ট্রি বিভাগে কাজ করেন তিনি; কাজের জায়গা তাঁর বাড়ি থেকে সাত মিনিটের হাঁটা পথ, তাই ট্রাম-বাসের ঝক্কি পোয়াতে হয় না। এমনিতে দিব্যি চলে যায়, কারণ যেসব মানুষ জীবনে কী হল না কী পেল না এই ভেবেই মুখ বেজার করে বসে থাকে, অসমঞ্জবাবু তাদের দলে পড়েন না। তিনি অল্পেই সন্তুষ্ট। মাসে দুটো হিন্দি ছবি, একটা বাঙলা যাত্রা বা থিয়েটার, হপ্তায় দুদিন মাছ আর চার প্যাকেট উইলস সিগারেট হলেই তাঁর চলে যায়। তবে তিনি একা মানুষ, বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজনও বিশেষ নেই, তাই অনেক সময় মনে হয়েছে একটা কুকুর থাকলে বেশ হত। তাঁর বাড়ির দুটো বাড়ি পশ্চিমে তালুকদারদের যে বিশাল অ্যালসেশিয়ানটা আছে, সে রকম কুকুর না হলেও চলে; এমনি একটা সাধারণ কুকুর, যেটা তাঁকে সকাল সন্ধে সঙ্গ দেবে, তাঁর তক্তপোষের পাশে মেঝেতে গা এলিয়ে পড়ে থাকবে, তিনি আপিস থেকে ফিরলে পরে লেজ নেড়ে আহ্লাদ প্রকাশ করবে, তাঁর আদেশ মেনে তার বুদ্ধি আর আনুগত্যের পরিচয় দেবে। কুকুরকে তিনি ইংরিজিতে আদেশ করবেন এটাও অসমঞ্জবাবুর একটা শখ। 'স্ট্যান্ড-আপ' 'সিট ডাউন' 'শেক হ্যান্ড, এসব বললে যদি কুকুর মানে তা হলে বেশ হবে। কুকুর জাতটাকে সাহেবের জাত বলে ভাবতে অসমঞ্জবাবুর বেশ ভাল লাগে, আর উনি হবেন সেই সাহেবের মালিক—মানে হিজ মাস্টার আর কী ।

মেঘলা দিন, সকাল থেকে টিপ্‌ টিপ্ বৃষ্টি পড়ছে, অসমঞ্জবাবু ছাতা ছাড়াই হাসিমারার বাজারে গিয়েছিলেন কমলালেবু কিনতে। বাজারের এক প্রাপ্তে একটা বেঁটে কুলগাছের পাশে বেতের টোকা মাথায় ভুটানি লোকটাকে দেখতে পেলেন তিনি। তিন আঙুলে একটা জ্বলন্ত চুটা ধরে পা ছাড়িয়ে মাটিতে বসে তাঁরই দিকে চেয়ে কেন যে মিটিমিটি হাসছে লোকটা সেটা বুঝতে না পারলেও, কৌতূহলবশে তিনি লোকটার দিকে এগিয়ে গেলেন। ভিখিরি কি ? পোশাক দেখে সেটা মনে হওয়া আশ্চর্য নয়; প্যান্ট আর গায়ের জামাটার অন্তত পাঁচ জায়গায় তাপ্পি লক্ষ করলেন অসমঞ্জবাবু । কিন্তু ভিক্ষের পাত্র বা ঝুলি বলে কিছু নেই; তার বদলে আছে একটা জুতোর বাক্স, সেই বাক্স থেকে উকি মারছে একটা বাদামি রঙের কুকুরছানা।

'গুড মর্নিং!'—চোখ বন্ধ করা হাসি হেসে বলল ভুটানি। উত্তরে অসমঞ্জবাবুও 'গুড মর্নিং' না বলে পারলেন না ।

'বাই ভগ ? ভগ বাই ? ভেরি গুড ডগ। *

কুকুরছানাটাকে বাক্স থেকে বার করে মাটিতে রেখেছে ভুটানি। 'ভেরি চীপ । ভেরি গুড। হ্যাপি ভগ ।

কুকুরছানাটা গা ঝাড়া দিল, বোধ হয় পিঠে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ার দরুন। তারপর অসমঞ্জবাবুর দিকে চেয়ে তার দেড় ইঞ্চি লম্বা ল্যাজটা বার কয়েক নেড়ে দিল। বেশ কুকুর তো ! অসমঞ্জবাবু এগিয়ে গিয়ে কুকুরটার সামনে বসে ডান হাতটা বাড়িয়ে দিলেন তার দিকে। কুকুরটা

দু' পা এগিয়ে এসে তার ছোট্ট জিভটা বার করে, অসমঞ্জবাবুর বুড়ো আঙুলের ডগাটায় একটা মৃদু চাটা দিয়ে দিল। বেশ কুকুর। যাকে বলে ফ্রেন্ডলি ।

কেতনা দাম ? হাউ মাচ ?'

'টেন রুপি। '

সাড়ে সাতে রফা হল। অসমঞ্জবাবু জুতোর বাক্স সমেত কুকুরছানাটাকে নিয়ে বগলদাবা করে বাড়িমুখো হলেন। কমলালেবুর কথাটা তিনি বেমালুম ভুলে গেলেন।

হাসিমারা স্টেট ব্যাঙ্কের কর্মচারী বিজয় রাহা তাঁর বন্ধুর এই শখটার কথা জানতেন না। তাই তাঁর হাতে জুতোর বাক্স এবং বাক্সের মধ্যে কুকুরছানা দেখে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করলেন বইকী। কিন্তু দামটা শুনে খানিকটা আশ্বস্ত হয়ে মৃদু ভৎসনার সুরে বললেন, 'নেড়ি কুত্তাই যদি কেনার ছিল তা সে এখান থেকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার কী ভাই ? এ জিনিস তোমার ভবানীপুরে পেতে না

না, ভবানীপুরে পেতেন না। অসমঞ্জবাবু সেটা জানেন। তাঁর বাড়ির সামনে রাস্তায় অনেক সময় অনেক কুকুরছানা দেখেছেন তিনি। তারা কখনও তাঁকে দেখে লেজ নাড়েনি বা প্রথম আলাপেই তাঁর বুড়ো আঙুল চেটে দেয়নি। বিজয় যাই বলুক- এ কুকুরের একটা বিশেষত্ব আছে। তবে নেড়ি কুত্তা জেনে অসমঞ্জবাবু খানিকটা আক্ষেপ প্রকাশ করাতে বিজয়বাবু তাঁকে বুঝিয়ে দিলেন যে জাত কুকুরের ঝক্কি পোয়ানো অসমঞ্জবাবুর পক্ষে সম্ভব হত না। – তোর কোনও আইডিয়া আছে একটা জাত কুকুরের কত ঝামেলা ? মাসে মাসে ডাক্তারের খরচায় তোর অর্ধেক মাইনে বেরিয়ে যেত। এ কুকুরকে নিয়ে তোর কোনও চিন্তা নেই। আর এর জন্য কোনও স্পেশাল ডায়েটেরও দরকার নেই। তুই যা খাস তাই খাবে। তবে মাছটা দিসনি, ওটা বেড়ালের খাদ্য । কুকুর মাছের কাঁটা ম্যানেজ করতে পারে না । '

কলকাতায় ফিরে এসে অসমঞ্জবাবুর খেয়াল হল যে কুকুরটার একটা নাম দেওয়া হয়নি। সাহেবি নাম ভাবতে গিয়ে প্রথমে টম ছাড়া আর কিছুই মনে পড়ছিল না, তারপর ছানাটার দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ মাথায় এল যে রঙটা যখন ব্রাউন, তখন ব্রাউনি নামটা হয়তো বেমানান হবে না। ব্রাউনি নামে একটা বিলিতি ক্যামেরা তাঁর এক খুড়তুতো ভাইয়ের ছিল। কাজেই নামটা সাহেবি তাতে কোনও সন্দেহ নেই। আশ্চর্য নামটা মনে পড়া মাত্র ব্রাউনি বলে ডাকতেই ছানাটা ঘরের কোণে রাখা বেঁটে মোড়াটার উপর থেকে একটা ছোট্ট লাফ দিয়ে মেঝেতে নেমে তাঁর দিকে লেজ নাড়তে নাড়তে এগিয়ে এল। অসমঞ্জুবাবু বললেন, 'সিট ডাউন', আর অমনি ব্রাউনি তার পিছনের পা দুটো ভাঁজ করে থপ্ করে বসে পড়ে তাঁর দিকে চেয়ে একটা ছোট্ট হাই তুলল। অসমঞ্জবাবু এক মুহুর্তের জন্য যেন চোখের সামনে দেখতে পেলেন যে ব্রাউনি ডগ-শোতে বুদ্ধিমান কুকুর হিসেবে প্রথম পুরস্কার পাচ্ছে।

সুবিধে এই যে চাকর বিপিনেরও কুকুরটাকে পছন্দ হয়ে গেছে, ফলে দিনের বেলায় যে সময়টুকু তিনি বাইরে থাকেন, সে সময়ে ব্রাউনির দিকে নজর রাখার কাজটা বিপিন খুশি হয়েই করে। অসমঞ্জবাবু তাকে সাবধান করে দিয়েছেন যেন ব্রাউনিকে আজেবাজে কিছু খেতে না দেয়। —'আর দেখিস রাস্তায়-টাস্তায় না বেরোয়। আজকালকার ড্রাইভারগুলো চোখে ঠুলি দিয়ে গাড়ি চালায় । অবিশ্যি বিপিনকে ফরমাশ দিয়েও অসমঞ্জুবাবুর সোয়াস্তি নেই; রোজ সন্ধেবেলা বাড়ি ফিরে এসে ব্রাউনির লাঙ্গুলসঞ্চালন না দেখা পর্যন্ত তাঁর উৎকণ্ঠা যায় না।

ঘটনাটা ঘটল হাসিমারা থেকে ফেরার তিনমাস পরে। বারটা ছিল শনি, তারিখ বাইশে নভেম্বর। অসমঞ্জবাবু আপিস থেকে ফিরে তাঁর ঘরে ঢুকে সার্টটা খুলে আলনায় টাঙিয়ে তক্তপোষ ছাড়া তাঁর একমাত্র আসবাব একটা পুরনো কাঠের চেয়ারে বসতেই সেটার একটা পঙ্গু পায়া তাঁর সামান্য ভারও সইতে না পেরে কাজে ইস্তফা দিল, আর তার ফলে চোখের পলকে অসমঞ্জবাবু চেয়ার সমেত সশব্দে মেঝের সংস্পর্শে এসে গেলেন। এতে তাঁর চোট লাগল ঠিকই, এমনকী চেয়ারের পায়ার মতো তাঁর ডানহাতের কনুইটাও বাতিল হয়ে যাবে কি না সে চিন্তাটাও তাঁর মনে উদয় হয়েছিল, কিন্তু একটা অপ্রত্যাশিত শব্দ তাঁকে তাঁর যন্ত্রণার কথা ভুলিয়ে দিল ।

শব্দটা এসেছে তক্তপোষের উপর থেকে। হাসির শব্দ, বোধহয় যাকে বলে খিলখিল হাসি, আর সেটার উৎস হচ্ছে নিঃসন্দেহে তাঁর কুকুর ব্রাউনি, কারণ ব্রাউনিই বসে আছে তক্তপোষের উপর, আর ব্রাউনিরই ঠোঁটের কোণে এখনও লেগে আছে হাসির রেশ।

অসমঞ্জবাবুর সাধারণ জ্ঞানের মাত্রাটা যদি আর সামান্যও বেশি হত তা হলে তিনি জানতেন যে কুকুর কখনও হাসে না। আর এই জ্ঞানের সঙ্গে যদি তাঁর কল্পনাশক্তিও খানিকটা বেশি হত, তা হলে আজকের এই ঘটনা তাঁর নাওয়া-খাওয়া, রাতের ঘুম সব বন্ধ করে দিত। এই দুটোরই অভাবে অসমঞ্জবাবু যেটা করলেন সেটা হল, তিন দিন আগে ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের একটা পুরনো বইয়ের দোকান থেকে আড়াই টাকা দিয়ে কেনা 'অল অ্যাবাউট ডগ্‌স্‌' বইটা হাতে নিয়ে বসলেন। তারপর প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে সেটা উলটে পালটে দেখলেন যে তাতে কুকুরের হাসির কোনও উল্লেখ নেই ।

অথচ ব্রাউনি যে হেসেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। শুধু হাসেনি, হাসির কারণে হেসেছে। অসমঞ্জবাবুর স্পষ্ট মনে আছে, তাঁর যখন বছর পাঁচেক বয়স তখন নরেন ডাক্তার একবার তাঁদের চন্দননগরের বাড়িতে রুগি দেখতে এসে চেয়ার ভেঙে মাটিতে গড়াগড়ি খেয়েছিলেন, আর তাই দেখে অসমঞ্জবাবু হাসিতে ফেটে পড়ায় বাবার কাছে কানমলা খেয়েছিলেন ।

অসমঞ্জবাবু হাতের বইটা বন্ধ করে ব্রাউনির দিকে চাইলেন। চোখাচোখি হতেই বালিশের উপর সামনের পা দুটো ভর করে দাঁড়িয়ে ব্রাউনি তার তিন মাসে দেড় ইঞ্চি বেড়ে যাওয়া লেজটা নেড়ে দিল। তার মুখে এখন হাসির কোনও চিহ্ন নেই। অকারণে হাসাটা পাগলের লক্ষণ; অসমঞ্জবাবু ভেবে আশ্বস্ত হলেন যে ব্রাউনি ম্যাড ডগ নয় ।

এর পর সাতদিনের মধ্যে ব্রাউনি আরও দুবার হাসার কারণে হাসল। প্রথমবারের ব্যাপারটা ঘটল রাত্রে। তখন রাত সাড়ে নটা। ব্রাউনির শোবার জন্য অসমঞ্জবাবু সবে তার তক্তপোষের পাশে মেঝেতে একটা চাদর পেতে দিয়েছেন, এমন সময় ফর ফর শব্দ করে দেওয়ালে একটা আরশোলা উড়ে এসে বসল। অসমঞ্জবাবু তাঁর এক পাটি চটি নিয়ে সেটাকে ভাগ করে মারতে গিয়ে বেমক্কা এক চাপড় মেরে বসলেন দেওয়ালে টাঙানো আয়নাটায়, আর তার ফলে সেটা পেরেক থেকে খসে মাটিতে পড়ে ভেঙে চৌচির। এবারে ব্রাউনির খিলখিলে হাসি তাঁকে ভাঙা আয়নার জন্য আপসোস করতে দিল না।

দ্বিতীয়বারের হাসিটা অবশ্য খিলখিল নয়; সেটা যাকে বলে ফিক্ করে হাসা। অসমঞ্জবাবু এবারে বেশ ধাঁধায় পড়ে গিয়েছিলেন, কারণ ঘটনা বলতে কিছুই ঘটেনি। তবু ব্রাউনি হাসল কেন ? উত্তর জোগাল বিপিন। চা এনে ঘরে ঢুকে মনিবের দিকে চেয়ে সেও ফিক্ করে হেসে বলল, 'আপনার কানের পাশে সাবান লেগে রয়েছে বাবু।' আসলে আয়নার অভাবে জানলার আর্শিতে দাড়ি কামিয়েছেন অসমঞ্জুবাবু, চাকরের কথায় দু'দিকের জুলফিতেই হাত বুলিয়ে দেখলেন বেশ খানিকটা করে শেভিং সোপ লেগে রয়েছে।

এই সামান্য কারণেও যে ব্রাউনি হেসেছে তাতে অসমঞ্জবাবুর বেশ অবাক লাগল। তিনি দেখলেন যে পোস্টাপিসে কাজের ফাঁকে ফাঁকে বার বার ব্রাউনির কৌতুকভরা দৃষ্টি আর হাসির ফিক্ শব্দটা মনে পড়েছে। অল অ্যাবাউট ডস্-এ কুকুরের হাসির কথা না থাকলেও, কুকুরের এনসাইক্লোপিডিয়া গোছের একটা বই জোগাড় করতে পারলে তিনি নিশ্চয়ই এ বিষয় কিছু জানতে পারতেন ।

ভবানীপুরের চারটে বইয়ের দোকান, আর তারপর নিউ মার্কেটের সবক'টা বইয়ের দোকান খুঁজেও যখন তিনি ওই জাতীয় কোনও এনসাইক্লোপিডিয়া পেলেন না, তখন মনে হল—রজনী চাটুজ্যের কাছে গেলে কেমন হয় ? তাঁর পাড়াতেই থাকেন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক রজনী চাটুজ্যে। কী বিষয়ে অধ্যাপনা করতেন ভদ্রলোক সেটা অসমঞ্জুবাবু জানেন না, কিন্তু তাঁর বৈঠকখানাটি যে ভারী ভারী বইয়ে ঠাসা সেটা তাঁর বাড়ির পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেই দেখা যায়।

এক রবিবার সকালে দুগ্‌গা বলে রজনী চাটুজ্যের বাড়ি গিয়ে হাজির হলেন অসমঞ্জবাবু। দুর থেকে ভদ্রলোককে দেখেছেন অনেকবার, কিন্তু তাঁর গলার স্বর যে এত ভারী, আর ভরু যে এত ঘন সেটা জানা ছিল না। রাগি মানুষ হলেও দরজা থেকে ফিরিয়ে দেননি, তাই খানিকটা ভরসা পেয়ে অসমঞ্জবাবু অধ্যাপকের মুখোমুখি সোফাটায় বসে একবার ছোট্ট করে কেশে গলাটা ঝেড়ে নিলেন। রজনীবাবু হাতের ইংরিজি পত্রিকাটি চোখের সামনে থেকে সরিয়ে তাঁর দিকে দৃষ্টি দিলেন ।

"আপনাকে দেখেছি বলে মনে হচ্ছে ?"

“আজ্ঞে আমি এ পাড়াতেই থাকি ।

'অ।... কী ব্যাপার ?'

"আপনার বাড়িতে একটা কুকুর দেখেছি, তাই...'

'তাই কী ? আছে তো কুকুর। একটা কেন, দুটো আছে। '

"ও। আমারও আছে। '

'আপনারও আছে ?

'আজ্ঞে হ্যাঁ। একটা। '

'বুঝলাম। –তা আপনি কি কুকুর-পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে আসছেন ?"

অসমঞ্জবাবু সরল মানুষ, তাই শেষটা ধরতে পারলেন না। বললেন, 'আজ্ঞে না। একটা জিনিসের খোঁজ করতে আপনার কাছে এসেছি।

'কী জিনিস ?'

'আপনার কাছে কি কুকুরের এনসাইক্লোপিডিয়া আছে ?' না, নেই। ...ও জিনিসটার দরকার হচ্ছে কেন ?

'না, মানে—আমার কুকুর হাসে। তাই জানতে চাইছিলাম কুকুরের হাসিটা স্বাভাবিক কিনা ।

আপনার কুকুরও হাসে কি ?

রজনীবাবুর দেয়াল ঘড়িতে ঢং ঢং করে আটটা বাজতে যতটা সময় লাগল, ততক্ষণ একটানা তিনি অসমঞ্জবাবুর দিকে চেয়ে রইলেন। তারপর বললেন, 'কখন হাসে আপনার কুকুর ? রাত্তিরে কি ?" 'হ্যাঁ, তা রাত্তিরেও...'

'রাত্তিরে আপনি ক'রকম নেশা করেন? শুধু গাঁজায় তো হয় না এ জিনিস। তার সঙ্গে ভাঙ, চরস, আফিং—এসবও চলে কি ?'

অসমঞ্জুবাবু বিনীতভাবে জানালেন যে একমাত্র ধূমপান ছাড়া তাঁর আর কোনও নেশা নেই, আর সেটাও তিনি কুকুর আসার পর থেকে হপ্তায় চার প্যাকেট থেকে তিন প্যাকেটে নামিয়েছেন, কারণ

খরচে কুলোয় না।

'তাও বলছেন আপনার কুকুর হাসে ?"

"আমি দেখেছি হাসতে। শুনেছি। আওয়াজ করে হাসে।'

'শুনুন।'

রজনী চাটুজ্যে হাতের পত্রিকাটা বন্ধ করে সোজা হয়ে বসে অসমঞ্জবাবুর দিকে তাকিয়ে একেবারে ষোলো আনা অধ্যাপকের মেজাজে বলেন, 'আপনার একটি তথ্য বোধহয় জানা নেই। সেটা জেনে রাখুন । ঈশ্বরের সৃষ্ট যত প্রাণী আছে জগতে, তার মধ্যে মানুষ ছাড়া আর কেউ হাসে না, হাসতে জানে না, হাসতে পারে না। এটাই হচ্ছে মানুষ আর অন্য প্রাণীর মধ্যে প্রধান পার্থক্য। কেন এমন হল সেটা জিজ্ঞেস করবেন না, কারণ সেটা জানি না। শুনেছি ডলফিন নামে শুশুক জাতীয় একরকম প্রাণীর নাকি রসবোধ আছে, তারা হাসলেও হাসতে পারে, কিন্তু এ ছাড়া আর কোনও প্রাণী

হাসে না। মানুষ যে কেন হাসে সেটার কোনও স্পষ্ট কারণ জানা নেই। বাঘা বাঘা দার্শনিকরা অনেক ভেবে এর কারণ নির্দেশ করতে চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তাঁদের মতের মিল হয়নি। বুঝেছেন?

অসমঞ্জবাবু বুঝলেন, আর এও বুঝলেন যে এবার তাঁকে উঠতে হবে, কারণ রজনী চাটুজ্যের দৃষ্টি কথা শেষ করেই চলে গেছে তাঁর হাতের পত্রিকার দিকে।

ভাঃ সুখময় ভৌমিক—যাঁকে কেউ কেউ ভৌ-ডাক্তার বলেন— কলকাতার একজন নামকরা কুকুরের ডাক্তার। সাধারণ লোকে তাঁর কথা হেসে উড়িয়ে দিলেও একজন কুকুরের ডাক্তার সেটা করবে না এই বিশ্বাসে অসমঞ্জবাবু খোঁজ খবর নিয়ে টেলিফোনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে গোখেল রোডে ভৌমিকের বাড়ি গিয়ে হাজির হলেন। গত চার মাসে সতেরো বার হেসেছে ব্রাউনি। এটা অসমঞ্জবাবু লক্ষ করেছেন যে মজার কথা শুনলে ব্রাউনি হাসে না, কেবল মজার ঘটনা দেখলেই হাসে। যেমন বোম্বাগড়ের রাজা শুনে ব্রাউনির মুখে কোনও পরিবর্তন হয়নি, কিন্তু আধসেদ্ধ আলুর দমের আলু যখন অসমঞ্জবাবুর আঙুলের চাপে পিছলে ছিটকে দইয়ের মধ্যে পড়ল, আর সেই দইয়ের ছিটে যখন অসমঞ্জবাবুর নাকের ডগায় লাগল, তখন ব্রাউনির প্রায় বিষম লাগার জোগাড়। রজনী চাটুজ্যে ঈশ্বরসৃষ্ট প্রাণী-টানি বলে তো তাঁকে বিস্তর জ্ঞান দিলেন, কিন্তু অসমঞ্জুবাবুর চোখের সামনে যে অধ্যাপকের কথা মিথ্যে হয়ে যাচ্ছে তার কী হবে ?

এই সব ভেবে টেবে বিশ টাকা ফি জেনেও অসমঞ্জবাবু গেলেন ভৌ-ডাক্তারের কাছে। কুকুরের হাসির কথা শোনার আগেই তার চেহারা দেখে ডাক্তারের চোখ কপালে উঠল ।

অনেক মংগ্রেল দেখিচি মশাই, কিন্তু এমনটি তো দেখিনি।'

ডাক্তার দুহাতে ব্রাউনিকে তুলে তাঁর টেবিলের উপর দাঁড় করালেন। ব্রাউনি তার পায়ের সামনে।

পিতলের পেপারওয়েটটাকে একবার ওঁকে নিল ।

'কী খাওয়াচ্ছেন একে ?

“আজ্ঞে আমি যা খাই তাই খায়। জাত কুকুর তো নয়, কাজেই অতটা...' ভৌমিক ভুরু কুঁচকোলেন। ভারী মনোযোগ আর কৌতূহলের সঙ্গে দেখছেন তিনি ব্রাউনিকে ।

'জাত কুকুর দেখলে অবিশ্যি আমরা বুঝি', বললেন ভৌমিক, 'তবে সারা বিশ্বের সব জাত কুকুর যে আমাদের চেনা সেকথা জোর দিয়ে বলি কী করে বলুন। এটার চেহারা দেখে ফস করে দোআঁশলা বলতে আমার দ্বিধা হচ্ছে। আপনি একে ডাল ভাত খাওয়াবেন না, আমি একটা খাবারের তালিকা করে দিচ্ছি।'

অসমঞ্জবাবু এবার আসল কথায় যাবার একটা চেষ্টা দিলেন

। 'ইয়ে, আমার কুকুরের একটা বিশেষত্ব আছে, যার জন্য আপনার কাছে আসা।

'কী বলুন তো ?'

'কুকুরটা হাসে। '

"হাসে ?'

হ্যাঁ—মানে, মানুষের মতো করে হাসে ।

'বলেন কী। কই দেখি হাসান তো দেখি। '

এইখানেই মুশকিলে পড়ে গেলেন অসমঞ্জবাবু। এমনিতেই তিনি বেশ লাজুক মানুষ, কাজেই সার্কাসের ক্লাউনের মতো হাস্যকর অঙ্গভঙ্গি করে তিনি ব্রাউনিকে হাসাবেন এমন ক্ষমতা তাঁর নেই আর ঠিক এই মুহূর্তে এই ডাক্তারের ঘরে কোনও হাস্যকর ঘটনা ঘটবে এটাও আশা করা যায় না । তাঁকে তাই বাধ্য হয়ে বলতে হল অত সহজে ফরমাইশি হাসি হাসে না তাঁর কুকুর, কেবল কোনও হাসির ঘটনা দেখলেই হাসে।

এর পরে ডাঃ ভৌমিক আর বেশি সময় দিলেন না অসমঞ্জবাবুকে। বললেন, 'আপনার কুকুরের চেহারাতেই যথেষ্ট বৈশিষ্ট্য আছে; তার সঙ্গে আবার হাসিটাসি জুড়ে দিয়ে আরও বেশি অসাধারণ করে তুলবেন না। তেইশ বছর কুকুরের ডাক্তারির অভিজ্ঞতা থেকে বলছি আপনাকে কুকুর কাঁদে, কুকুর ভয় পায়, কুকুর রাগ ঘৃণা বিরক্তি হিংসে এ সবই প্রকাশ করে, এমন কী কুকুর স্বপ্নও দেখে ;

কিন্তু কুকুর হাসে না। ' এই ঘটনার পর অসমঞ্জবাবু ঠিক করলেন যে আর কোনওদিন কাউকে কুকুরের হাসির কথা বলবেন না। প্রমাণ দেবার উপায় যখন নেই, তখন বলে কেবল নিজেই অপ্রস্তুত হওয়া। কেউ নাই বা জানুক, তিনি তো জানেন। ব্রাউনি তাঁরই কুকুর, তাঁরই সম্পত্তি। তাঁদের দুজনের এই জগতে

বাইরের লোককে টেনে আনার কী দরকার ? কিন্তু মানুষে যা ভাবে সব সময় তো তা হয় না। ব্রাউনির হাসিও একদিন বাইরের লোকের কাছে প্রকাশ পেয়ে গেল ।

বেশ কিছুদিন থেকেই অসমঞ্জবাবু অভ্যাস করে নিয়েছিলেন কাজ থেকে ফিরে এসে ব্রাউনিকে নিয়ে ভিকটোরিয়া মেমোরিয়ালের দিকটায় একটা চক্কর মেরে আসা। একদিন এপ্রিল মাসের একটা বিকেলে বেড়ানোর সময় হঠাৎ আচমকা এল তুমুল ঝড়। আকাশের দিকে চেয়ে অসমঞ্জুবাবু বুঝলেন এখন বাড়ি ফেরা মুশকিল, কারণ বৃষ্টিরও আর বেশি দেরি নেই। তিনি ব্রাউনিকে নিয়ে মেমোরিয়ালের দক্ষিণ দিকে কালো ঘোড়সওয়ার মাথায় করা শ্বেতপাথরের তোরণটার নীচে আশ্রয় নিলেন।

বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা পড়তে শুরু করেছে, চারদিকে লোকজন পরিত্রাহি ছুটছে ছাউনি লক্ষ্য করে, এমন সময় সাদা প্যান্ট আর বুশ শার্ট পরা একটি মাঝবয়সী ফরসা মোটা বেঁটে ভদ্রলোক তাঁদের হাত থেকে হাত পনেরো দূরে দাঁড়িয়ে দু'হাত দিয়ে তার হাতের ছাতাটা খুলে মাথায় দিতেই ঝড়ের দাপটে সেটা হড়াৎ শব্দ করে উলটে গিয়ে অকেজো হয়ে গেল। সত্যি বলতে কী, এই দৃশ্য দেখে অসমঞ্জবাবুরই হাসি পেয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তিনি হাসবার আগেই ব্রাউনির অট্টহাস্য ঝড়ের শব্দকে ছাপিয়ে পৌঁছে গেল সেই অপ্রস্তুত ভদ্রলোকের কানে। ভদ্রলোক ছাতাটা আবার সোজা করার ব্যর্থ চেষ্টা বন্ধ করে অবাক বিস্ময়ে ব্রাউনির দিকে চাইলেন। এদিকে ব্রাউনির এখন কুটিপাটি অবস্থা, অসমঞ্জবাবু তার মুখের উপর হাত চেপে হাসি থামানোর চেষ্টায় বিফল হয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছেন ।

হতভম্ব ভদ্রলোক ভূত দেখার ভাব করে এগিয়ে এলেন অসমঞ্জবাবুর দিকে। ব্রাউনির হাসির তেজ খানিকটা কমেছে, কিন্তু তাও একজন লোকের মুণ্ডু ঘুরিয়ে দেবার পক্ষে যথেষ্ট ।

'লাফিং ডগ। '

ভদ্রলোকের মুখে রা নেই দেখে অসমঞ্জবাবুই বললেন কথাটা ।

'লা-ফিং ডগ।' বহুদূরের পাহাড় থেকে প্রতিধ্বনির মতো ফিরে এল কথাটা ভদ্রলোকের মুখ থেকে। 'হাউ এক্সট্রর্ডিনারি !

অসমঞ্জবাবু দেখেই বুঝেছিলেন যে ভদ্রলোক বাঙালি নন; হয়তো গুজরাটি বা পারসি হবে। কোনও প্রশ্ন যদি করেন ভদ্রলোক তা হলে ইংরিজিতে করবেন, আর অসমঞ্জুবাবুকেও জবাব দিতে হবে ইংরিজিতেই।

বৃষ্টিটা বেড়েছে। ভদ্রলোক অসমঞ্জবাবুর পাশেই আশ্রয় নিলেন ঘোড়সওয়ারের নীচে, এবং যে দশ মিনিট ধরে বৃষ্টিটা চলল তার মধ্যে ব্রাউনি সম্বন্ধে যা কিছু সব তথ্য জেনে নিলেন। সেই সঙ্গে অসমঞ্জবাবুর নিজের ঠিকানাটাও দিতে হল। ভদ্রলোক বললেন তাঁর নাম পিলু পোচকানওয়ালা । তিনি কুকুর সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল, তাঁর এক ড্যালমেশিয়ান নাকি দুবার ডগ-শোতে প্রাইজ পেয়েছে, এমন কী তিনি কুকুর সম্বন্ধে কাগজে লিখেটিখেও থাকেন। বলা বাহুল্য, তাঁর জীবনে আজকের মতো তাক লাগানো ঘটনা আর ঘটেনি, ভবিষ্যতে আর ঘটবে না। তিনি মনে করেন এ বিষয়ে একটা কিছু করা দরকার, কারণ অসমঞ্জবাবু নিজে নাকি বুঝতে পারছেন না তিনি কী আশ্চর্য সম্পদের অধিকারী।

বৃষ্টি থামার পরে চৌরঙ্গির এডওয়ার্ড কোর্টে তাঁর বাসস্থানে ফেরার পথে পোচকানওয়ালা যে মিনিবাসের ধাক্কা খেয়ে কোমর ভাঙলেন, তার জন্য ব্রাউনিকে খানিকটা দায়ী করা চলে, কারণ লাফিং ডগের চিন্তায় বিভোর হয়ে থাকার ফলে ভদ্রলোক রাস্তা পেরোবার সময় যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করেননি। আড়াই মাস হাসপাতালে থেকে সুস্থ হয়ে পোচকানওয়ালা হাওয়া বদলের জন্য যান নৈনিতাল। সেখানে একমাস থেকে কলকাতায় ফিরে এসে সেইদিনই সন্ধ্যায় বেঙ্গল ক্লাবে গিয়ে তিনি তাঁর বন্ধু মিঃ বালাপুরিয়া ও মিঃ বিসোয়াসকে লাফিং ডগের ঘটনাটা বললেন। আধ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনাটা পৌঁছে গেল ক্লাবের সাতাশজন সদস্য ও তিনটি বেয়ারার কানে, এবং পরদিন দুপুরের মধ্যে এই ত্রিশজন মারফত ঘটনাটা জেনে গেল কমপক্ষে হাজার কলকাতাবাসী।

এই সাড়ে তিন মাসে ব্রাউনি আর হাসেনি। তার একটা কারণ হয়তো এই যে, হাসির ঘটনা কোনও ঘটেনি। তাতে অবিশ্যি অসমঞ্জবাবু কোনও উদ্বেগ বোধ করেননি। কুকুরের হাসি ভাঙিয়ে খাবার কোনও অভিপ্রায় তাঁর কোনওদিন ছিল না। এই সাড়ে তিন মাসে তিনি বেশ ভালভাবেই বুঝেছেন যে ব্রাউনি এসে তাঁর নিঃসঙ্গতা সম্পূর্ণ দূর করে দিয়েছে। সত্যি বলতে কী, কোনও মানুষের প্রতি অসমঞ্জবাবু কোনওদিন এতটা মমতা বোধ করেননি।

পোচকানওয়ালার দৌলতে যারা লাফিং ডগের খবরটা পেলেন তাদের মধ্যে ছিলেন স্টেটসম্যান পত্রিকার একজন উচ্চপদস্থ কর্মচারী। তিনি সেই কাগজের এক সাংবাদিক রজত চৌধুরীকে ডেকে অসমঞ্জবাবুর সঙ্গে একটা সাক্ষাৎকারের প্রস্তাব করলেন। অসমঞ্জবাবু যে লাজপত রায় "স্টাপিসের কেরানি সে খবরটা পোচকানওয়ালার জবানিতেই রটে গিয়েছিল।

অসমঞ্জবাবু অবিশ্যি তাঁর বাড়িতে সাংবাদিকদের আগমনের জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না। তাঁর বিস্ময় খানিকটা কাটল যখন রজত চৌধুরী পোচকানওয়ালার উল্লেখ করলেন। অসমঞ্জবাবু ভদ্রলোককে ঘরে এনে নতুন পায়া লাগানো চেয়ারটায় বসিয়ে নিজে খাটে বসলেন। সেই সাতান্ন সালে চাকরির জন্য ইন্টারভিউ-এর পর এই তাঁর প্রথম ইন্টারভিউ। ব্রাউনি ঘরের এক কোণে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে দেওয়ালের গায়ে একটা পিঁপড়ের সারির গতিবিধি লক্ষ করছিল, তার মনিবকে খাটে বসতে দেখে সে এক লাফে তাঁর পাশে গিয়ে হাজির হল।

রজত চৌধুরীকে টেপ রেকর্ডারের চাবি টিপতে দেখে অসমঞ্জবাবুর হঠাৎ খেয়াল হল সাংবাদিককে একটা কথা জানানো দরকার। তিনি বললেন, 'ইয়ে আমার কুকুর আগে হাসত ঠিকই, কিন্তু ইদানীং বেশ কয়েকমাস আর হাসেনি; কাজেই আপনি ওর হাসি চাক্ষুষ দেখতে চাইলে আপনাকে হতাশ হতে হবে। '

আজকালকার অনেক সাংবাদিকদের মতোই রজত চৌধুরী একটা বেশ চনমনে দাঁও মারা ভাব বোধ করেছিলেন এই সাক্ষাৎকারের শুরুতে। কথাটা শুনে তিনি খানিকটা হতাশ হলেও মনের ভাবটা যথাসম্ভব আড়াল করে বললেন, 'ঠিক আছে। তবু কতকগুলো ডিটেলস্ আমি জেনে নিই ।

যেমন প্রথম হচ্ছে, আপনার কুকুরের নাম কী ?

এগোনো মাইকটার দিকে গলা বাড়িয়ে অসমঞ্জুবাবু বললেন, 'ব্রাউনি।'

'ব্রাউনি…..'। এটা রজত চৌধুরীর দৃষ্টি এড়াল না যে নামটা উচ্চারণ হতেই কুকুরের লেজটা দুলে উঠেছে।

'ওর বয়স কত ?' দ্বিতীয় প্রশ্ন করলেন রজত চৌধুরী ।

এক বছর এক মাস।'

'আচ্ছা—আপনি এটাকে পে-প্লে-প্লেলেন কোথায় ?

এটা আগেও হয়েছে। অনেক হোমরা-চোমরার সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েও রজত চৌধুরীর জিভের এই দোষটি তাকে আচমকা অপ্রস্তুত করে ফেলেছে। এখানেও তাই হতে পারত, কিন্তু ফল হল উলটো। এই তোতলামো ব্রাউনির বৈশিষ্ট্যপ্রকাশে আশ্চর্যভাবে সাহায্য করল। পোচকানওয়ালার পরে রজত চৌধুরী হলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি নিজের কানে শুনলেন কুকুরের মুখে মানুষের হাসি ।

পরের রবিবার সকালে গ্র্যান্ড হোটেলের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দুশো সাতষট্টি নম্বর কামরায় বসে আমেরিকায় সিনসিনাটি শহরের অধিবাসী উইলিয়াম পি. মুডি কফি খেতে খেতে স্টেটসম্যান পত্রিকায় লাফিং ডগ-এর বিবরণ পড়ে হোটেলের অপারেটরকে ফোন করে বললেন ট্যুরিস্ট ডিপার্টমেন্টের মিস্টার ন্যানডির সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে। এই ন্যানডি ছোকরাটি যে কলকাতার রাস্তাঘাট ভালই চেনে তার প্রমাণ মুডি সাহেব গত দু'দিনে পেয়েছেন। স্টেটসম্যানে লাফিং ডগ-এর মালিকের নাম ঠিকানা বেরিয়েছে। মুভি সাহেবের তাঁর সঙ্গে দেখা করা একান্ত দরকার।

অসমঞ্জবাবু স্টেটসম্যান পড়েন না। তা ছাড়া তাঁর সাক্ষাৎকারটি যে কবে বেরোবে সেটা রজত চৌধুরী বলে যাননি; দিনটা জানা থাকলে হয়তো তিনি কাগজের খোঁজ করতেন। তাঁকে খবরটা বলল জগুবাবুর বাজারে তাঁর পাড়ার জয়দেব দত্ত ।

'আপনি তো মশাই আচ্ছা লোক, বললেন জয়দেববাবু, 'এমন একটা তাজ্জব জিনিস ঘরে নিয়ে বসে আছেন এক বচ্ছর যাবৎ, আর কথাটা ঘুণাক্ষরেও জানাননি। আজ বেলা করে যাব একবারটি আপনার ওখানে। দেখে আসব আপনার কুকুর।

অসমঞ্জবাবু প্রমাদ গুনলেন। উৎপাতের সমূহ সম্ভাবনা। সত্যি বলতে কী, আপিসের বাইরে মানুষের সঙ্গ তাঁর মোটেই ভাল লাগে না। কোনওদিনই লাগত না — ব্রাউনি আসার পরে তো নয়ই। অথচ কলকাতার লোকেরা যা হুজুগে এমন একটা খবর পড়ে কি আর তারা এই আশ্চর্য কুকুরটি দেখার লোভ সামলাতে পারবে ?

অসমঞ্জবাবু দ্বিধা না করে বাড়ি ফিরে দশ মিনিটের মধ্যে ব্রাউনিকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। তাঁর জীবনে প্রথম একটি ট্যাক্সি ডেকে তাতে চেপে সোজা চলে গেলেন বালিগঞ্জ রেলের স্টেশনে। সেখান থেকে চাপলেন ক্যানিং-এর ট্রেনে। পথে তালিত বলে একটা স্টেশনে গাড়ি থামলে পর জায়গাটাকে বেশ নিরিবিলি মনে হওয়ায় ট্রেন থেকে নেমে পড়লেন। সারা দুপুর বাঁশবন আমবনের ছায়া-শীতল পরিবেশে ঘুরে ভারী আরাম বোধ হল। ব্রাউনিকে দেখে মনে হল তারও ভাল লাগছে। তার ঠোঁটের কোণে যে হাসিটা আজ দেখলেন অসমঞ্জবাবু, সেটা একেবারে নতুন হাসি । এটা হল প্রসন্নতার হাসি, আরামের হাসি, মেজাজখুশ হাসি। অল অ্যাবাউট ডগ্‌স্‌ বইতে অসমঞ্জবাবু পড়েছিলেন যে কুকুরের এক বছর নাকি মানুষের সাত বছরের সামিল। কিন্তু এক বছরের ব্রাউনির হাবভাব দেখে তাঁর মনে হচ্ছে এই কুকুরটির মনের বয়স সাতের চেয়ে অনেক অনেক বেশি ।

বাড়ি ফিরতে হল প্রায় সাতটা। বিপিন দরজা খুলতে অসমঞ্জবাবু জিজ্ঞেস করলেন, 'হ্যারে, কেউ এসেছিল ? বিপিন জানাল সারাদিনে অন্তত চল্লিশবার তাকে কড়া নাড়ার শব্দে দরজা খুলতে হয়েছে। অসমঞ্জবাবু মনে মনে নিজের বুদ্ধির তারিফ করলেন।

বিপিনকে চা করতে বলে গায়ের জামাটা খুলে আলনায় রাখতেই কড়া নাড়ার শব্দ হল। 'ধুত্তেরি ' বলে দরজা খুলে সামনে সাহেব দেখেই অসমঞ্জবাবু বলে ফেললেন, 'রং নাম্বার। তারপর সাহেবের পাশে চশমা পরা এক বাঙালি যুবককে দেখে খানিকটা আশ্বস্ত হয়ে বললেন, 'কাকে চাই?

'বোধহয় আপনাকে', বললেন ট্যুরিস্ট ডিপার্টমেন্টের শ্যামল নন্দী। ‘আপনার পিছনে যে কুকুরটাকে দেখছি সেটার সঙ্গে আজকের কাগজের বর্ণনা মিলে যাচ্ছে। ভেতরে আসতে পারি ?

অসমঞ্জবাবু অগত্যা দুজনকে তাঁর ঘরে এনে বসালেন। সাহেব বসলেন চেয়ারে, নন্দী মোড়াতে আর অসমঞ্জবাবু নিজে বসলেন খাটে। ব্রাউনির যেন কেমন একটা ইতস্তত ভাব; সে ঘরে না ঢুকে চৌকাঠের ঠিক বাইরে রয়ে গেল। তার কারণ বোধহয় এই যে, এর আগে সে এই ঘরে কখনও একসঙ্গে তিনজন পুরুষকে দেখেনি ।

'ব্রাউনি ব্রাউনি ! ব্রাউনি !!

ঘাড় নিচু, চোখ সঙ্কুচিত এবং ঠোঁট ছুঁচলো করে সাহেব হাসি হাসি মুখে ব্রাউনির দিকে চেয়ে মিহি গলায় তার নাম ধরে ডাকছে। ব্রাউনিও একদৃষ্টে সাহেবকে পর্যবেক্ষণ করছে।

স্বভাবতই অসমঞ্জুবাবুর মনে প্রশ্ন জেগেছিল— এঁরা কারা ? সে প্রশ্নের উত্তর দিলেন শ্যামল নন্দী। সাহেব মার্কিন মুলুকের একজন বিশিষ্ট ধনী ব্যক্তি, ভারতবর্ষে এসেছেন পুরনো রোলস রয়েস গাড়ির সন্ধানে। সকালে ব্রাউনির বিষয়ে খবরের কাগজে পড়ে তাকে একবার দেখার লোভ সামলাতে পারেননি। সাহেব ঠিকানা খুঁজে বার করতে পারবেন না বলে শ্যামল নন্দী তাঁকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন ।

অসমঞ্জুবাবু লক্ষ করলেন সাহেব এবার নাম ধরে ডাকা ছেড়ে চেয়ার থেকে নেমে এসে নানারকম মুখভঙ্গি ও অঙ্গভঙ্গি করতে আরম্ভ করেছেন। অর্থাৎ কুকুরকে হাসানোর চেষ্টা চলেছে ।

মিনিট তিনেক এইভাবে সংবাজি চালাবার পর সাহেব হাল ছেড়ে অসমঞ্জবাবুর দিকে ফিরে বললেন, “ইজ হি সিক্ ?

অসমঞ্জবাবু জানালেন তাঁর কুকুরের কোনও ব্যারাম হয়েছে বলে তিনি জানেন না । 'ডাঁজ হি রিয়েলি ল্যাঁফ ?

মার্কিনি ইংরিজি পাছে অসমঞ্জবাবু না বোঝেন তাই শ্যামল নন্দী অনুবাদ করে বুঝিয়ে দিলেন।

সাহেব জানতে চাইছেন কুকুরটা সত্যিই হাসে কি না ।

অসমঞ্জবাবুর অন্তরের ভিতর থেকে একটা বিরক্তির ভাব বাইরে ঠেলে বেরোতে চেষ্টা করছিল। সেটাকে মনের জোরে দাবিয়ে রেখে বললেন, 'সব সময় হাসে না। যেমন সব মানুষও হাসতে বললেই হাসে না।'

এবার দোভাষীর অনুবাদ শুনে সাহেবের মুখে লালের ছোপ পড়ল। তারপর তিনি জানালেন যে প্রমাণ না পেলে তিনি কুকুরের পিছনে খরচ করতে রাজি নন, কারণ দেশে ফিরে অপ্রস্তুতে পড়তে চান না তিনি। তিনি আরও জানালেন তাঁর বাড়িতে তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহে চীন থেকে পেরু পর্যন্ত পৃথিবীর এমন কোনও দেশ নেই যেখানকার কোনও না কোনও আশ্চর্য জিনিস নেই। একটি প্যারট আছে তাঁর কাছে, যেটা ল্যাটিন ভাষা ছাড়া কথা বলে না। – এই লাফিং ডগটি কেনার জন্য আমি - সঙ্গে চেক বই নিয়ে এসেছিলাম।

কথাটা বলে সাহেব তাঁর বুক পকেট থেকে সড়াৎ করে একটি নীল বই করে দেখালেন। অসমঞ্জবাবু আড় চোখে দেখলেন, তার মলাটে লেখা সিটি ব্যাঙ্ক অব নিউ ইয়র্ক ।

'আপনার ভোল পালটে যেত মশাই', বললেন শ্যামল নন্দী, 'আপনার কুকুরকে হাসাবার যদি কোনও উপায় জানা থাকে তা হলে সেইটি এবার ছাড়ুন। ইনি বিশ হাজার ডলার পর্যন্ত দিতে রাজি। আছেন ওই কুকুরের জন্য। মানে টাকার হিসেবে দেড় লাখ। '

বাইবেলে লিখেছে ঈশ্বর সাতদিনে ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছিলেন। মানুষ কিন্তু কল্পনার সাহায্যে সাত সেকেন্ডেই এ কাজটা করতে পারে। শ্যামল নন্দীর কথা শোনামাত্র অসমঞ্জবাবু যে জগৎটা চোখের সামনে দেখতে পেলেন, সেখানে তিনি একটি পেল্লায় ছিমছাম ঘরে বার্ড কোম্পানির বড় সাহেবের মতো পায়ের উপর পা তুলে আরাম কেদারায় বসে আছেন, আর বাইরের বাগান থেকে ভেসে আসছে হাসনাহানা ফুলের গন্ধ । দুঃখের বিষয় তাঁর এই ছবি বুদ্বুদের মতো ফুড়ুৎ হয়ে গেল একটা শব্দে । ব্রাউনি হাসছে।

এ হাসি আগের কোনও হাসির মতো নয়; এ একেবারে নতুন হাসি । 'বাট হি ইজ ল্যাফিং।'

মুডি সাহেব কাঁপতে কাঁপতে মাটিতে বসে পড়েছেন, আর দুই চোখ দিয়ে গিলছেন এই দৃশ্য। জানোয়ার হলে তাঁর কানটাও যে খাড়া হয়ে উঠত সে বিষয়ে সন্দেহ নেই অসমঞ্জবাবুর।

এবার কম্পিত হস্তে মুডি সাহেব তাঁর পকেট থেকে আবার বার করলেন তাঁর চেক বই। আর সেই সঙ্গে একটি সোনার পাকার কলম।

ব্রাউনি কিন্তু হেসে চলেছে। অসমঞ্জুবাবুর মনে খটকা, কারণ তিনি এ হাসির মানে বুঝতে পারছেন না। কেউ তোতলায়নি, কেউ হোঁচট খায়নি, কারুর ছাতা উলটে যায়নি, চটির আঘাতে কোনও আয়না দেয়াল থেকে খসে পড়েনি – তা হলে কেন হাসছে ব্রাউনি ?

'আপনার কপাল ভাল, বললেন শ্যামল নন্দী। তবে আমার কিন্তু একটা কমিশন পাওয়া উচিত, কী বলেন—হেঃ হেঃ।

মুডি সাহেব মেঝে থেকে উঠে চেয়ারে বসে চেক বই খুললেন। "অ্যাস্ক হিম হাঁউ হি স্পেলস্ হিজ নেম। '

'সাহেব আপনার নামের বানান জিজ্ঞেস করছেন', বললেন দোভাষী শ্যামল নন্দী ।

অসমঞ্জবাবু কথাটার উত্তর দিলেন না, কারণ তিনি হঠাৎ আলো দেখতে পেয়েছেন। আর সেই আলো তাঁর মনে গভীর বিস্ময় জাগিয়েছে। নামের বানানের বদলে তিনি বললেন, 'সাহেবকে বলুন কুকুর কেন হাসছে সেটা জানলে তিনি আর টাকার কথা তুলতেন না।”

'আপনি আমাকেই বলুন না, শুকনো গলায় কড়া সুরে বললেন শ্যামল নন্দী। ঘটনার গতি তাঁর মোটেই মনঃপুত হচ্ছে না। মিশন ফেল করলে সাহেবের ধাতানি আছে তাঁর কপালে এটা তিনি জানেন ।

ব্রাউনির হাসি থেমেছে। অসমঞ্জবাবু তাকে কোলে তুলে নিয়ে চোখের জল মুছিয়ে বললেন, “সাহেব ভাবছেন টাকা দিলে দুনিয়ার সব কিছু কেনা যায়, তাই শুনে কুকুর হাসছে। "বটে? আপনার কুকুর বুঝি দার্শনিক ?”

“আজ্ঞে হ্যাঁ। '

“তার মানে আপনি কুকুর বেচবেন না ?”

'আজ্ঞে না।'

শ্যামল নন্দী অবিশ্যি তাঁর অনুবাদে কুকুরের মনের ভাবের কথা কিছুই বললেন না, শুধু জানিয়ে দিলেন যে কুকুরের মালিক কুকুর বেচবেন না। কথাটা শুনে কলম, চেক বই পকেটে পুরে প্যান্টের হাঁটু থেকে অসমঞ্জবাবুর মেঝের ধুলো হাত দিয়ে ঝেড়ে ঘর থেকে বেরোনোর সময় সাহেব শুধু মাথা নেড়ে বলে গেলেন, 'হি মাস্ট বি ক্রেজি!'

বাইরে মার্কিন গাড়িটার আওয়াজ যখন মিলিয়ে এল তখন অসমঞ্জুবাবু ব্রাউনিকে তাঁর কোল থেকে নামিয়ে খাটের উপর রেখে তার দিকে চেয়ে বললেন, 'তোর হাসির কারণটা ঠিক বলিনি রে, ব্রাউনি ?

ব্রাউনি ছোট্ট করে হেসে দিল— ফিক্ ।

অর্থাৎ ঠিক।


99
Articles
গল্প ১০১
0.0
ফেলুদা এবং শঙ্কু বাদে সত্যজিৎ রায়ের যাবতীয় লেখা নিয়ে তৈরি একটি সংকলন।
1

বঙ্কুবাবুর বন্ধু

14 November 2023
0
0
0

বঙ্কুবাবুকে কেউ কোনওদিন রাগতে দেখেনি। সত্যি বলতে কি, তিনি রাগলে যে কীরকম ব্যাপারটা হবে, কী যে বলবেন বা করবেন তিনি, সেটা আন্দাজ করা ভারী শক্ত। অথচ রাগবার যে কারণ ঘটে না তা মোটেই নয়। আজ বাইশ বছর তিনি

2

টেরোড্যাকটিলের ডিম

14 November 2023
0
0
0

বদনবাবু আপিসের পর আর কার্জন পার্কে আসেন না। আগে ছিল ভাল। সুরেন বাঁড়ুজ্যের স্ট্যাচুর পাশটায় ঘণ্টাখানেক চুপচাপ বসে বিশ্রাম করে তারপর ট্রামের ভিড়টা একটু কমলে সন্ধ্যায় সন্ধ্যায় শিবঠাকুর লেনে বাড়ি ফ

3

সেপ্টোপাসের খিদে

14 November 2023
0
0
0

কড়া নাড়ার আওয়াজ পেয়ে আপনা থেকেই মুখ থেকে একটা বিরক্তিসূচক শব্দ বেরিয়ে পড়ল। বিকেল থেকে এই নিয়ে চারবার হল; মানুষে কাজ করে কী করে? কার্তিকটাও সেই যে বাজারে গেছে আর ফেরার নামটি নেই। লেখাটা বন্ধ ক

4

সদানন্দের খুদে জগৎ

14 November 2023
0
0
0

আজ আমার মনটা বেশ খুশি-খুশি, তাই ভাবছি এইবেলা তোমাদের সব ব্যাপারটা বলে ফেলি। আমি জানি তোমরা বিশ্বাস করবে। তোমরা তো আর এদের মতো নও। এরা বিশ্বাস করে না। এরা ভাবে আমার সব কথাই বুঝি মিথ্যে আর বানানো। আমি ত

5

অনাথবাবুর ভয়

14 November 2023
0
0
0

অনাথবাবুর সঙ্গে আমার আলাপ ট্রেনের কামরায়। আমি যাচ্ছিলাম রঘুনাথপুর, হাওয়াবদলের জন্য। কলকাতায় খবরের কাগজের আপিসে চাকরি করি। গত ক'মাস ধরে কাজের চাপে দমবন্ধ হবার উপক্রম হয়েছিল। তা ছাড়া আমার লেখার শখ,

6

দুই ম্যাজিশিয়ান

14 November 2023
0
0
0

'পাঁচ, ছয়, সাত, আট, নয়, দশ, এগারো।' সুরপতি ট্রাঙ্কগুলো শুনে নিয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট অনিলের দিকে ফিরে বলল, ঠিক আছে। দাও, গাড়ি পাঠিয়ে দাও সব ব্রেকভ্যানে। আর মাত্র পঁচিশ মিনিট। ' অনিল বলল, 'আপনার গাড

7

শিবু আর রাক্ষসের কথা

16 November 2023
0
0
0

'অ্যাই শিবু—এদিকে শোন। ' শিবুর ইস্কুল যাবার পথে ফটিকদা তাকে প্রায়ই এইভাবে ডাকে। ফটিকদা মানে পাগলা ফটিক। জয়নারায়ণ বাবুদের বাড়ি ছাড়িয়ে চৌমাথার কাছটায় যেখানে একটা পুরনো মরচে-ধরা স্টিম রোলার আজ

8

পটলবাবু ফিল্মস্টার

16 November 2023
1
0
0

পটলবাবু সবে বাজারের থলিটা কাঁধে ঝুলিয়েছেন এমন সময় বাইরে থেকে নিশিকান্তবাবু হাঁক দিলেন, 'পটল আছ নাকি হে?' “আজ্ঞে হ্যাঁ। দাঁড়ান, আসছি।' নিশিকান্ত ঘোষ মশাই নেপাল ভট্টচাজ্যি লেনে পটলবাবুর তিনখানা বাড

9

বিপিন চৌধুরীর স্মৃতিভ্রম

16 November 2023
0
0
0

নিউ মার্কেটের কালীচরণের দোকান থেকে প্রতি সোমবার আপিস ফেরতা বই কিনে বাড়ি ফেরেন বিপিন চৌধুরী। যত রাজ্যের ডিটেকটিভ বই, রহস্যের বই আর ভূতের গল্প। একসঙ্গে অন্তত খান পাঁচেক বই না কিনলে তাঁর এক সপ্তাহের খোর

10

বাদুড় বিভীষিকা

16 November 2023
0
0
0

বাদুড় জিনিসটা আমার মোটেই ধাতে সয় না। আমার ভবানীপুরের ফ্ল্যাটের ঘরে মাঝে মাঝে যখন সন্ধের দিকে জানলার গরাদ দিয়ে নিঃশব্দে এক-একটা চামচিকে ঢুকে পড়ে, তখন বাধ্য হয়েই আমাকে কাজ বন্ধ করে দিতে হয়। বিশেষত

11

নীল আতঙ্ক

16 November 2023
0
0
0

আমার নাম অনিরুদ্ধ বোস। আমার বয়স ঊনত্রিশ। এখনও বিয়ে করিনি। আজ আট বছর হল আমি কলকাতার একটা সদাগরি আপিসে চাকরি করছি। মাইনে যা পাই তাতে একা মানুষের দিব্যি চলে যায়। সর্দার শঙ্কর রোডে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া ন

12

রতনবাবু আর সেই লোকটা

16 November 2023
0
0
0

ট্রেন থেকে প্ল্যাটফর্মে নেমে এদিক ওদিক দেখে রতনবাবুর মনে একটা খুশির ভাব জেগে উঠল। জায়গাটা তো ভাল বলেই মনে হচ্ছে। স্টেশনের পিছনে শিরীষ গাছটা কেমন মাথা উচিয়ে রয়েছে, তার ডালে আবার একটা লাল ঘুড়ি আটকে

13

ফ্রিৎস

17 November 2023
0
0
0

জয়ন্তর দিকে মিনিটখানেক তাকিয়ে থেকে তাকে প্রশ্নটা না করে পারলাম না। 'তোকে আজ যেন কেমন মনমরা মনে হচ্ছে? শরীর-টরীর খারাপ নয় তো?' জয়ন্ত তার অন্যমনস্ক ভাবটা কাটিয়ে নিয়ে একটা ছেলেমানুষি হাসি হেসে বল

14

ব্রাউন সাহেবের বাড়ি

17 November 2023
0
0
0

ব্রাউন সাহেবের ডায়রিটি হাতে আসার পর থেকেই ব্যাঙ্গালোর যাবার একটা সুযোগ খুঁজছিলাম। সেটা এল বেশ অপ্রত্যাশিত ভাবে। আমাদের বালিগঞ্জ স্কুলের বাৎসরিক রি-ইউনিয়নে দেখা হয়ে গেল আমার পুরনো সহপাঠী অনীকেন্দ্র

15

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ্

17 November 2023
0
0
0

আমার ঘটনাটা কেউ বিশ্বাস করবে বলে বিশ্বাস হয় না। না করুক—তাতে কিছু এসে যায় না। নিজে চোখে না দেখা অবধি অনেকেই অনেক কিছু বিশ্বাস করে না। যেমন ভূত। আমি অবিশ্যি ভূতের কথা লিখতে বসিনি। সত্যি বলতে কি, এটাক

16

বাতিকবাবু

17 November 2023
0
0
0

বাতিকবাবুর আসল নামটা জিজ্ঞেস করাই হয়নি। পদবি মুখার্জি। চেহারা একবার দেখলে ভোলা কঠিন। প্রায় ছ' ফুট লম্বা, শরীরে চর্বির লেশমাত্র নেই, পিঠটা ধনুকের মতো বাঁকা, হাতে পায়ে গলায় কপালে অজস্র শিরা উপশিরা চ

17

খগম

17 November 2023
0
0
0

পেট্রোম্যাক্সের আলোতে বসে ডিনার খাচ্ছি, সবেমাত্র ডালনার ডিমে একটা কামড় দিয়েছি, এমন সময় চৌকিদার লছমন জিজ্ঞেস করল, আপলোগ ইমলি-বাবাকো দর্শন নেহি করেঙ্গে ? বলতে বাধ্য হলাম যে, ইমলিবাবার নামটা আমাদের ক

18

বারীন ভৌমিকের ব্যারাম

17 November 2023
0
0
0

কন্‌ডাকটরের নির্দেশমতো 'ডি' কামরায় ঢুকে বারীন ভৌমিক তাঁর সুটকেসটা সিটের নীচে ঢুকিয়ে দিলেন। ওটা পথে খোলার দরকার হবে না। ছোট ব্যাগটা হাতের কাছে রাখা দরকার। চিরুনি, বুরুশ, টুথ-ব্রাশ, দাড়ি কামানোর সরঞ্

19

ভক্ত

17 November 2023
0
0
0

অরূপবাবু—অরূপরতন সরকার—পুরী এসেছেন এগারো বছর পরে। শহরে কিছু কিছু পরিবর্তন চোখে পড়েছে—কিছু নতুন বাড়ি, নতুন করে বাঁধানো কয়েকটা রাস্তা, দু-চারটে ছোট-বড় নতুন হোটেল—কিন্তু সমুদ্রের ধারটায় এসে বুঝতে পা

20

ফটিকচাঁদ

18 November 2023
0
0
0

ও যে কখন চোখ খুলেছে, ও জানে না। চোখে কিছু দেখার আগে ও বুঝেছে ওর শীত করছে, ওর গা ভিজে, ওর পিঠের তলায় ঘাস, ওর মাথার নীচে একটা শক্ত জিনিস। আর তার পরেই বুঝেছে ওর গায়ে অনেক জায়গায় ব্যথা। তবু ডান হাতটাক

21

বিষফুল

18 November 2023
0
0
0

*ওদিকে যাবেন না বাবু । জগন্ময়বাবু চমকে উঠলেন। কাছাকাছির মধ্যে যে আর কোনও লোক আছে সেটা উনি টের পাননি; তার ফলেই এই চমকানি। এবার দেখলেন তাঁর ডাইনে হাত দশেক দূরে দাঁড়িয়ে আছে একটি তেরো-চোদ্দো বছরের ছেল

22

অসমঞ্জবাবুর কুকুর

18 November 2023
0
0
0

হাসিমারায় বন্ধুর বাড়িতে ছুটি কাটাতে এসে অসমঞ্জবাবুর একটা অনেকদিনের শখ মিটল। ভবানীপুরের মোহিনীমোহন রোডে দেড়খানা ঘর নিয়ে থাকেন অসমঞ্জবাবু। লাজপত রায় পোস্টঅফিসের রেজিস্ট্রি বিভাগে কাজ করেন তিনি; কা

23

লোড শেডিং

18 November 2023
0
0
0

ফণীবাবু তাঁর গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ আগে থেকেই আঁচ করলেন যে তাঁর পাড়ায় লোড শেডিং হয়ে গেছে। আজ আপিসে ওভারটাইম করে বেরুতে বেরুতে হয়ে গেছে সোয়া আটটা। ডালহৌসি থেকে বাসে তাঁর পাড়ায় পৌঁছাতে লা

24

ক্লাস ফ্রেন্ড

19 November 2023
0
0
0

সকাল সোয়া নটা। মোহিত সরকার সবেমাত্র টাইয়ে ফাঁসটা পরিয়েছেন, এমন সময় তাঁর স্ত্রী অরুণা ঘরে ঢুকে বললেন, 'তোমার ফোন। *এই সময় আবার কে ? কাঁটায় কাঁটায় সাড়ে ন'টায় অফিসে পৌঁছানোর অভ্যাস মোহিত সরকা

25

সহদেববাবুর পোট্রেট

19 November 2023
0
0
0

যেটার আগে নাম ছিল ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, সেই মিরজা গালিব স্ট্রিটে ল্যাজারাসের নিলামের দোকানে প্রতি রবিবার সকালে সহদেববাবুকে দেখা যেতে শুরু করেছে মাস তিনেক হল। প্রথম অবস্থায় লোকাল ট্রেনে হেঁয়ালির বই, গো

26

মিঃ শাসমলের শেষ রাত্রি

19 November 2023
0
0
0

শাসমল আরাম কেদারাটায় গা এলিয়ে দিয়ে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন । মোক্ষম জায়গা বেছেছেন তিনি—উত্তর বিহারের এই ফরেস্ট বাংলো। এর চেয়ে নিরিবিলি মিঃ নিরাপদ নিরুপদ্রব জায়গা আর হয় না। ঘরটিও দিব্যি। স

27

পিন্টুর দাদু

19 November 2023
0
0
0

পিন্টুর আপসোস এইখানেই। তার বন্ধুদের মধ্যে অনেকেরই দাদু আছে, কিন্তু কই, তাদের কেউই তো তার নিজের দাদুর মতো নয়। রাজুর দাদুকে সে দেখেছে নিজে হাতে লাল আর বেগুনি কাগজের ফিতে পর পর জুড়ে রাজুর ঘুড়ির জন্য ল

28

বৃহচ্চঞ্চু

19 November 2023
0
0
0

ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রিটে তাঁর আপিসের যেখানে বসে তুলসীবাবু কাজ করেন, তার পাশেই জানালা দিয়ে পশ্চিম আকাশে অনেকখানি দেখা যায়। সেই আকাশে এক বর্ষাকালের সকালে যখন জোড়া রামধনু দেখা দিল, ঠিক তখনই তুলসীবাবুর

29

চিলেকোঠা

19 November 2023
0
0
0

ন্যাশনাল হাইওয়ে নাম্বার ফর্টি থেকে ডাইনে রাস্তা ধরে দশ কিলোমিটার গেলেই ব্রহ্মপুর। মোড়টা আসার কিছু আগেই আদিত্যকে জিজ্ঞেস করলাম, 'কী রে, তোর জন্মস্থানটা একবার ঢুঁ মেরে যাবি নাকি ? সেই যে ছেড়েচিস, তার

30

ভূতো

19 November 2023
0
0
0

নবীনকে দ্বিতীয়বার হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হল। অক্রূরবাবুর মন ভেজানো গেল না। উত্তরপাড়ার একটা ফাংশনে নবীন পেয়েছিল অজুর চৌধুরীর আশ্চর্য ক্ষমতার পরিচয়। ভেনট্রিলোকুইজ্‌জ্ম। খেলার নামটা নবীনের জানা ছিল না।

31

অতিথি

19 November 2023
0
0
0

মন্টু ক'দিন থেকেই শুনেছে তার মা-বাবার মধ্যে কথা হচ্ছে দাদুকে নিয়ে। মন্টুর ছোটদাদু, মা-র ছোটমামা । দাদুর চিঠিটা যখন আসে তখন মন্টু বাড়ি ছিল। মা চিঠি পড়ে প্রথমে আপন মনে বললেন, 'বোঝো ব্যাপার।' তারপর ব

32

ম্যাকেঞ্জি ফ্রুট

19 November 2023
0
0
0

ম্যাকেঞ্জি সাহেবের বাগানে আশ্চর্য গাছটা আবিষ্কার করলেন নিশিকান্তবাবু। সাহেব যে গাছপালা ভালবাসতেন সেটা করিমগঞ্জে এসেই শুনেছিলেন নিশিকান্তবাবু। ভারত স্বাধীন হবার বছর সাতেকের মধ্যেই সাহেব অস্ট্রেলিয়ায়

33

ফার্স্ট ক্লাস কামরা

20 November 2023
0
0
0

আগের আমলের ফার্স্ট ক্লাস কামরা-বাথরুম সমেত ফোর বার্থ বা সিক্স বার্থ কম্পার্টমেন্ট-আজকাল উঠেই গেছে। এটা যে সময়ের গল্প, অর্থাৎ নাইনটিন সেভেনটি-তখনও মাঝে মাঝে এক-আধটা এই ধরনের কামরা কী করে জানি ট্রেনের ম

34

ডুমনিগড়ের মানুষখেকো

20 November 2023
0
0
0

'আমি তখন ছিলাম ডুমনিগড় নেটিভ স্টেটের ম্যানেজার', বললেন তারিণীখুড়ো। 'ডুমনিগড় ম্যাপে আছে?' জিজ্ঞেস করল ন্যাপলা। ন্যাপলার মুখে কিছু আটকায় না। 'তোর কি ধারণা ম্যাপে যা আছে তার বাইরে আর কিছু নেই?' চোখ-কান

35

ধাপ্পা

20 November 2023
0
0
0

'চার্লস ওয়েকম্যানের 'হিস্ট্রি অফ ম্যাজিক' আপনার ক' ভল্যুম ছিল?' সমরেশ ব্রহ্ম ইন্টারন্যাশনাল ম্যাজিক সার্কেলের চিঠির উত্তরে সইটা করে মুখ তুলে চাইল মহিমের দিকে। তার বন্ধু অধ্যাপক রণেন সেনগুপ্তর ছেলে মহ

36

কনওয়ে কাস্লের প্রেতাত্মা

20 November 2023
0
0
0

তারিণীখুড়ো তাঁর এক্সপোর্ট কোয়ালিটি বিড়িতে দুটো টান দিয়ে বললেন, 'ভূতের গল্প অনেকে বলতে পারে, তবে পার্সোনাল এক্সপিরিয়েন্স থেকে বলা গল্পের জাতই আলাদা। সেটা আর কজন পারে বলো।' 'আপনি পারেন?' প্রশ্ন করল ন্য

37

অঙ্ক স্যার, গোলাপীবাবু আর টিপু

20 November 2023
0
0
0

টিপু ভূগোলের বইটা বন্ধ করে ঘড়ির দিকে দেখল। সাতচল্লিশ মিনিট পড়া হয়ে গেছে একটানা। এখন তিনটে বেজে তেরো মিনিট। এবার যদি ও একটু ঘুরে আসে তা হলে ক্ষতি কী? ঠিক এমনি সময় তো সেদিন লোকটা এসেছিল। সে তো বলেছিল

38

শেঠ গঙ্গারামের ধনদৌলত

20 November 2023
0
0
0

'আমার এখন যে চেহারা দেখছিস,' বললেন তারিণীখুড়ো, 'তা থেকে আমার ইয়াং বয়সের চেহারা তোরা কল্পনাই করতে পারবি না।' 'কীরকম চেহারা ছিল আপনার, খুড়ো?' জিজ্ঞেস করল ন্যাপলা, 'ধর্মেন্দরের মতো?' 'য্যা য্যাঃ!' বললে

39

স্পটলাইট

20 November 2023
0
0
0

ছোটনাগপুরের এই ছোট্ট শহরটায় পুজোর ছুটি কাটাতে আমরা আগেও অনেকবার এসেছি। আরও বাঙালিরা আসে; কেউ কেউ নিজেদের বাড়িতে থাকে, কেউ কেউ বাড়ি-বাংলো-হোটেল ভাড়া করে থাকে, দিন দশেকে অন্তত মাস ছয়েক আয়ু বাড়িয়ে নিয়ে

40

তারিণীখুড়ো ও বেতাল

20 November 2023
0
0
0

শ্রাবণ মাস, দিনটা ঘোলাটে, সকাল থেকে টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে, তারই মধ্যে সন্ধের দিকে তারিণীখুড়ো এসে হাজির। হাতের ভিজে জাপানি ছাতাটা সড়াত করে বন্ধ করে দরজার পাশটায় দাঁড় করিয়ে রেখে তক্তপোশে তাঁর জায়গাটায়

41

বহুরূপী

21 November 2023
0
0
0

নিউ মহামায়া কেবিনের একটি চেয়ার দখল করে হাফ কাপ চা আর আলুর চপ অর্ডার দিয়ে নিকুঞ্জ সাহা একবার চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিল। তার চেনা-পরিচিতের কেউ এসেছে কি? হ্যাঁ, এসেছে বইকী। ওই তো রসিকবাবু, আর ওই যে শ্রীধর।

42

মানপত্র

21 November 2023
0
0
0

শতদল সংস্থার সেক্রেটারি প্রণবেশ দত্ত বিস্ফোরক সংবাদটি ঘোষণা করবার পর উপস্থিত সদস্যদের মুখ দিয়ে প্রায় এক মিনিট কোনও কথা বেরোল না। ক্লাবঘরে জরুরি মিটিং বসেছে নববর্ষের পাঁচদিন আগে। মিটিং-এর উদ্দেশ্য প্রণ

43

অপদার্থ

21 November 2023
0
0
0

অপদার্থ কথাটা অনেক লোক সম্বন্ধে অনেক সময়ই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন আমাদের চাকর নবকেষ্ট। 'নব, তুই একটা অপদার্থ'-এই কথাটা ছেলেবেলায় মার মুখে অনেকবার শুনেছি। নব কিন্তু কাজ ভালই করত; দোষের মধ্যে সে ছিল

44

সাধনবাবুর সন্দেহ

21 November 2023
0
0
0

সাধনবাবু একদিন সন্ধ্যাবেলা কাজ থেকে ফিরে তাঁর ঘরে ঢুকে দেখলেন মেঝেতে একটা বিঘতখানেক লম্বা সরু গাছের ডাল পড়ে আছে। সাধনবাবু পিটপিটে স্বভাবের মানুষ। ঘরে যা সামান্য আসবাব আছে-খাট, আলমারি, আলনা, জলের কুঁজো

45

গগন চৌধুরীর স্টুডিও

21 November 2023
0
0
0

একটা ফ্ল্যাট দিনের বেলা দেখে পছন্দ হলেও, সেখানে গিয়ে থাকা না অবধি তার সুবিধে-অসুবিধেগুলো ঠিক বোঝা যায় না। সুধীন সরকার এইটেই উপলব্ধি করল ভবানীপুরের এই ফ্ল্যাটে বসবাস আরম্ভ করে। এই একটা ব্যাপারেই ভাগ্যল

46

লখনৌর ডুয়েল

21 November 2023
0
0
0

'ডুয়েল মানে জানিস?' জিজ্ঞেস করলেন তারিণীখুড়ো। 'বাঃ, ডুয়েল মানে জানব না?' বলল ন্যাপলা। 'ডুয়েল রোল, মানে দ্বৈত ভূমিকা। সন্তোষ দত্ত গুপী গাইনে ডুয়েল রোল করেছিলেন-হাল্লার রাজা, শুণ্ডীর রাজা।' 'সে ডুয়েলে

47

ধুমলগড়ের হান্টিং লজ

21 November 2023
0
0
0

'মাথায় অনেকরকম উদ্ভট শখ চাপে মানুষের', বললেন তারিণীখুড়ো, 'কিন্তু আমার যেমন চেপেছে, তেমন কজনের চাপে জানি না।' আমরা পাঁচজন ঘিরে বসেছি খুড়োকে। বাইরে এক পশলা বেশ ভাল বৃষ্টি হয়ে গিয়ে এখন সেটা অবিরাম ঝিরঝি

48

লাখপতি

21 November 2023
0
0
0

ত্রিদিব চৌধুরী আর থাকতে না পেরে বিরক্তভাবে বেয়ারাকে ডাকার বোতামটা টিপলেন। কিছুক্ষণ থেকেই তিনি অনুভব করছেন যে, কামরাটা যত ঠাণ্ডা থাকার কথা মোটেই তত ঠাণ্ডা নয়। অথচ তাঁর তিন সহযাত্রীই দিব্যি নাক ডাকিয়ে ঘ

49

খেলোয়াড় তারিণীখুড়ো

21 November 2023
0
0
0

ডিসেম্বরের ঊনত্রিশে, শীতটা পড়েছে বেশ জাঁকিয়ে। সন্ধেবেলা তারিণীখুড়ো এলেন গলায় আর মাথায় মাফলার জড়িয়ে। 'তোরা মাঠে যাচ্ছিস না খেলা দেখতে?' তক্তপোষে বসেই প্রশ্ন করলেন খুড়ো, 'নাকি দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবার ত

50

টলিউডে তারিণীখুড়ো

21 November 2023
0
0
0

তাকিয়াটাকে কোলের উপর টেনে নিয়ে আরও জমিয়ে বসে ঝুঁকে পড়ে তারিণীখুড়ো তাঁর গল্প আরম্ভ করলেন। - আমার তখন তেইশ বছর বয়স, তবে একটা তেকোনা ফ্রেঞ্চকাট গোছের দাড়ি রেখেছিলাম বলে মনে হত তেত্রিশ। বেয়াল্লিশ সালের ক

51

আমি ভূত

22 November 2023
1
0
0

আমি ভূত। আজ থেকে ঠিক সাড়ে তিন বছর আগে আমি জ্যান্ত ছিলাম। সেই সময় এই দেওঘরের এই বাড়িতেই আগুনে পুড়ে আমার জ্যান্ত অবস্থার শেষ হয়। এই বাড়ির নাম লিলি ভিলা। আমি এখানে এসেছিলাম আমার এক বন্ধুর সঙ্গে ছুটি কাটা

52

বামধনের বাঁশি

22 November 2023
0
0
0

রামধনের লোকটাকে চেনা চেনা লাগায় আরেকটু কাছে গিয়ে একটা গাছের আড়াল থেকে দেখে তার বুকের ভিতরটা হিম হয়ে গেল। দশ বছর পেরিয়ে গেলেও চিনতে কোনও অসুবিধা নেই। এই সেই খগেশবাবু। খগেশ খাস্তগির, পুরনো ইটপাথর নিয়ে ঘ

53

জুটি

22 November 2023
0
0
0

'আজ আমি একজন ফিল্মস্টারের কথা বলতে যাচ্ছি,' চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন তারিণীখুড়ো। 'কে তিনি? তাঁর নাম কী?' আমরা সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠলাম। 'তাঁর নাম তোরা শুনিসনি,' বললেন তারিণীখুড়ো। 'তিনি যখন রিটায়ার করেন তখন

54

মাস্টার অংশুমান

22 November 2023
0
0
0

সেই সকালটার কথা আমি কোনওদিন ভুলতে পারব না। সেদিন ছিল রবিবার। তিনদিন ধরে সমানে বাদলা করে সেদিনই প্রথম ঝলমলে রোদ বেরিয়েছে। আমি একটা অঙ্ক কষে আমার খাতাটা বন্ধ করেছি এমন সময় বিশুদা এল। বিশুদা, বিশ্বনাথ গা

55

নিধিরামের ইচ্ছাপূরণ

22 November 2023
0
0
0

কোনও মানুষই তার নিজের অবস্থা সম্পর্কে ষোলো আনা সন্তুষ্ট বোধ করে না। কোনও-না-কোনও ব্যাপারে একটা খুঁতখুঁতেমির ভাব প্রায় সবার মধ্যেই থাকে। রাম ভাবে তার শরীরে আরও মাংস হল না কেন-হাড়গুলো বড্ড বেশি বেরিয়ে থ

56

কানাইয়ের কথা

22 November 2023
0
0
0

নসু কবরেজ প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে বলরামের নাড়ি ধরে বসে রইলেন। শিয়রের কাছে দাঁড়িয়ে বলরামের সতেরো বছরের ছেলে কানাই কবরেজের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে আছে। আজ দশদিন হল তার বাপের অসুখ। কোনও কিছু খাবারে তার রুচি নেই;

57

রতন আর লক্ষ্মী

23 November 2023
0
0
0

ঠিক কখন থেকে রতনের মনটা খুশিতে ভরে আছে সেটা রতন জানে। দশদিন আগে ছিল চৈত্র সংক্রান্তি। রতন থাকে শিমুলিতে। সেখান থেকে চার ক্রোশ দূরে উজলপুরে সংক্রান্তির খুব বড় মেলা হয়। রতন গিয়েছিল সেই মেলা দেখতে। শুধু

58

গঙ্গারামের কপাল

23 November 2023
0
0
0

নদীর ধারে খোলামকুচি দিয়ে ব্যাঙবাজি খেলতে খেলতে হঠাৎ গঙ্গারামের চোখে পড়ল পাথরটা। এ নদীতে জল নেই বেশি; যেখানে সবচেয়ে গভীর সেখানেও হাঁটু ডোবে না। জলটা কাচের মতো স্বচ্ছ, তাই তার নীচে লাল নীল সবুজ হলদে খয়ে

59

সুজন হরবোলা

23 November 2023
0
0
0

সুজনের বাড়ির পিছনেই ছিল একটা সজনে গাছ। তাতে থাকত একটা দোয়েল। সুজনের যখন আট বছর বয়স তখন একদিন দোয়েলের ডাক শুনে সে ভাবল-আহা, এ পাখির ডাক কেমন মিষ্টি। মানুষে কি কখনও এমন ডাক ডাকতে পারে? সুজন সেইদিন থেকে

60

নিতাই ও মহাপুরুষ

23 November 2023
0
0
0

কোনও এক জ্ঞানী ব্যক্তি বলে গেছেন যে মানুষের মধ্যে বেশিরভাগই মাঝারি দলে পড়ে। কথাটা হয়তো সত্যি, কিন্তু নিতাইকে মাঝারিও বলা চলে না। অনেক ব্যাপারেই সে অত্যন্ত খাটো। দেহের দিক দিয়ে যেমন, মনের দিক দিয়েও ছেল

61

মহারাজা তারিণীখুড়ো

23 November 2023
0
0
0

'আজ আপনার কপালে ভ্রুকুটি কেন খুড়ো?' জিজ্ঞেস করল ন্যাপলা। এটা অবিশ্যি আমিও লক্ষ করেছিলাম। খুড়ো তক্তপোশের উপর বাবু হয়ে বসে ডান হাতটা পায়ের পাতায় রেখে অল্প অল্প দুলছেন, তাঁর কপালে ভাঁজ। খুড়ো বললেন, 'এই

62

হাউই

23 November 2023
0
0
0

জয়ন্ত নন্দী : ছোটদের পত্রিকা 'হাউই'-এর সম্পাদক তরুণ সান্যাল : জয়ন্তর বন্ধু তিনকড়ি ধাড়া: 'হাউই'-এর দপ্তরের কর্মচারী। কাজ-বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করা তন্ময় সেনগুপ্ত: লেখক মুকুল : দপ্তরের কর্মচারী ধনঞ্জয়/

63

প্রতিকৃতি

23 November 2023
0
0
0

রঞ্জন পুরকায়স্থ কলকাতার একজন নামকরা চিত্রকর। শুধু কলকাতা কেন, তাঁর খ্যাতি পশ্চিমবাংলার বাইরে সারা ভারতবর্ষেই ছড়িয়ে পড়েছে-বোম্বাই, মাদ্রাজ, দিল্লি, ব্যাঙ্গালোর, হায়দ্রাবাদে তাঁর আঁকা ছবির প্রদর্শনী হয়ে

64

তারিণীখুড়ো ও ঐন্দ্রজালিক

23 November 2023
0
0
0

'কই, আর সব কই?' বললেন তারিণীখুড়ো। 'সব্বাইকে খবর দে, নইলে গল্প জমবে কী করে?' আমি বললাম, 'খবর পাঠানো হয়ে গেছে খুড়ো। এই এসে পড়ল বলে!' 'তা হলে এই ফাঁকে চা-টা বলে দে।' বললাম, 'তাও বলা হয়ে গেছে-দুধ চিনি ছা

65

অনুকূল

23 November 2023
0
0
0

'এর একটা নাম আছে তো?' নিকুঞ্জবাবু জিজ্ঞেস করলেন। 'আজ্ঞে হ্যাঁ, আছে বইকী।' 'কী বলে ডাকব?' 'অনুকূল।' চৌরঙ্গিতে রোবট সাপ্লাই এজেন্সির দোকানটা খুলেছে মাস ছয়েক হল। নিকুঞ্জবাবুর অনেকদিনের শখ একটা যান্ত্

66

কাকতাড়ুয়া

24 November 2023
0
0
0

মৃগাঙ্কবাবুর সন্দেহটা যে অমূলক নয় সেটা প্রমাণ হল পানাগড়ের কাছাকাছি এসে। গাড়ির পেট্রল ফুরিয়ে গেল। পেট্রলের ইনডিকেটরটা কিছুকাল থেকেই গোলমাল করছে, সে-কথা আজও বেরোবার মুখে ড্রাইভার সুধীরকে বলেছেন, কিন্তু

67

নরিস সাহেবের বাংলো

24 November 2023
0
0
0

তারিণীখুড়োকে ঘিরে আমরা পাঁচ বন্ধু বসেছি, বাদলা দিন, সন্ধে হব-হব, খুড়োর চা খাওয়া হয়ে গেছে। এবার বিড়ি ধরিয়ে হয়তো গল্প শুরু করবেন। খুড়ো এলে সন্ধেতেই আসেন, আর এলেই একটি করে গল্প লাভ হয় আমাদের। সবই খুড়োর জ

68

কুটুম-কাটাম

24 November 2023
0
0
0

'কোথায় পেলি এটা?' 'আমাদের বাড়ির কাছেই ছিল,' বলল দিলীপ। 'একটা জমি পড়ে আছে কাঠা তিনেক, তাতে কয়েকটা গাছ আর ঝোপঝাড়। একটা গাছের নীচে এটা পড়ে ছিল। অলোকের বাড়িতে সেদিন দেখছিলাম একটা গাছের গুঁড়িকে কেটে তার উপ

69

টেলিফোন

24 November 2023
0
0
0

ক্রিং-ক্রিং... ক্রিং-ক্রিং... ক্রিং-ক্রিং... বীরেশবাবু বিরক্ত হয়ে খাটের পাশের টেবিলের ওপর রাখা টেলিফোনটার দিকে দেখলেন। টেলিফোনের পাশেই ঘড়ি, তাতে বারোটা বাজে। রাত বারোটা। বীরেশবাবু সবে হাতের বইটা বন্ধ

70

গণেশ মুৎসুদ্দির পোট্রেট

24 November 2023
0
0
0

সুখময় সেনের বয়স পঁয়ত্রিশ। এই বয়সেই সে চিত্রকর হিসাবে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে। পোর্ট্রেটেই তার দক্ষতা বেশি। সমঝদারেরা বলে সুখময় সেনের আঁকা কোনও মানুষের প্রতিকৃতি দেখলে সেই মানুষের জ্যান্ত রূপ দেখতে পাওয়

71

মৃগাঙ্কবাবুর ঘটনা

24 November 2023
0
0
0

মৃগাঙ্কবাবু তাঁর সহকর্মী সলিল বসাকের কাছ থেকে প্রথম জানতে পারলেন যে বাঁদর থেকে মানুষের উদ্ভব হয়েছে। এ খবর আজকের দিনে শিক্ষিত লোকমাত্রই জানে, কিন্তু ঘটনাচক্রে খবরটা মৃগাঙ্কবাবুর গোচরে আসেনি। আসলে তাঁর

72

নতুন বন্ধু

24 November 2023
0
0
0

বর্ধমান স্টেশনের রেস্টোর‍্যান্টে ভদ্রলোক নিজেই যেচে এসে আলাপ করলেন। ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি আর গোঁফ, মোটামুটি আমারই বয়সী-অর্থাৎ বছর চল্লিশ-বেয়াল্লিশ-বেশ হাসিখুশি অমায়িক হাবভাব। বারোটা বাজে, তাই লাঞ্চটা সেরে ন

73

শিশু সাহিত্যিক

24 November 2023
0
0
0

ছোটদের মাসিক পত্রিকা 'বহুরূপী' এক বছর হল বেরোচ্ছে। সম্পাদক সুপ্রকাশ সেনগুপ্ত আপ্রাণ চেষ্টা করেন কাগজটাকে ভাল করতে। টাকার জোর নেই, তাই কাজটা সহজ নয়। গ্রাহক সংখ্যা দেড় হাজারের মতো; বিজ্ঞাপন যা আসে তার থ

74

মহিম সান্যালের ঘটনা

24 November 2023
0
0
0

তারিণীখুড়ো তাকিয়াটা বুকের কাছে টেনে নিয়ে বললেন, 'চমকলালের কথা তো তোদের বলেছি, তাই না?' 'হ্যাঁ হ্যাঁ,' বলল ন্যাপলা। 'সেই ম্যাজিশিয়ান তো? যাঁর আপনি ম্যানেজার ছিলেন?' 'হ্যাঁ। কিন্তু আরেকজন জাদুকর আছেন

75

গণৎকার তারিণীখুড়ো

24 November 2023
0
0
0

তারিণীখুড়োর এক ভাইপো এক চা কোম্পানিতে ভাল কাজ করে, সে খুড়োকে এক টিন স্পেশাল কোয়ালিটির চা দিয়েছে। খুড়ো টিনটা আমার হাতে চালান দিয়ে বললেন, 'এটা খোলাবার ব্যবস্থা কর; আজ তোদের চা না খেয়ে এইটে খাব।' বৈশাখ

76

গল্পবলিয়ে তারিণীখুড়ো

24 November 2023
0
0
0

'তোরা তো আমাকে গল্পবলিয়ে বলেই জানিস', বললেন তারিণীখুড়ো, 'কিন্তু এই গল্প বলে যে আমি এককালে রোজগার করেছি সেটা কি জানিস?' 'না বললে জানব কী করে?' বলল ন্যাপলা। 'সে আজ থেকে বাইশ বছর আগের কথা,' বললেন তারিণ

77

নিতাইবাবুর ময়না

24 November 2023
0
0
0

নিতাইবাবুর অনেকদিনের শখ একটা ময়না কেনার। তাঁর বন্ধু শশাঙ্ক সেনের বাড়িতে একটা ময়না আছে। সেটা হেন বাংলা কথা নেই যে বলে না। তার কথা শুনতেই নিতাইবাবু মাসে অন্তত তিনবার করে শশাঙ্কবাবুর বাড়িতে যান। সেদিন তো

78

রন্টুর দাদু

24 November 2023
0
0
0

রন্টুর বয়স পনেরো, কিন্তু এর মধ্যেই তার গানের গলা হয়েছে চমৎকার। সে সকালে ওস্তাদের কাছে একঘণ্টা গান শেখে। যে তার গান শোনে সেই বলে, 'এ ছেলে আর কয়েক বছরের মধ্যেই আসরে গান গাইবে।' এ গুণটা যে সে কোথা থেকে প

79

সহযাত্রী

24 November 2023
0
0
0

ত্রিদিববাবুর সাধারণত একটা হালকা বই পড়েই সময়টা কেটে যায়। কলকাতা থেকে দিল্লি ট্রেনে যাওয়া। কাজের জন্যই যেতে হয় দু মাসে অন্তত একবার। একটা ইলেকট্রনিক্স কোম্পানিতে উচ্চপদস্থ কর্মচারী তিনি, হেড আপিস দিল্লিত

80

ব্রজবুড়ো

25 November 2023
0
0
0

শঙ্কর চৌধুরী আধখানা হাতের রুটি ছিঁড়ে ডালে চুবিয়ে মুখে পুরে একবার পাশে বসা ছেলের দিকে চেয়ে নিলেন। তারপর চিবোতে চিবোতে বললেন, 'তোকে একটা কথা বলব-বলব করেও বলা হয়নি। আমাদের ডাইনে একটা বাড়ির পরে একটা দোতলা

81

দুই বন্ধু

25 November 2023
0
0
0

মহিম বাঁ হাতের কবজি ঘুরিয়ে হাতের ঘড়িটার দিকে এক ঝলক দৃষ্টি দিল। বারোটা বাজতে সাত। কোয়ার্টজ ঘড়ি-সময় ভুল হবে না। সে কিছুক্ষণ থেকেই তার বুকের মধ্যে একটা স্পন্দন অনুভব করছে, যেটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। বিশ বছ

82

শিল্পী

25 November 2023
0
0
0

অবনীশ ছবিটার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল। অয়েল পেন্টিং। একজন মাঝবয়সি সুপুরুষ ভদ্রলোকের পোর্ট্রেট। অবনীশের স্টুডিওর এক কোনায় আরও আট-দশটা ছবির পিছনে দাঁড় করানো ছিল। অবনীশের আঁকা প্রথম অয়েল পোর্ট্রেট। গভর্নমে

83

অক্ষয়বাবুর শিক্ষা

25 November 2023
0
0
0

অক্ষয়বাবু ছেলের হাত থেকে লেখাটা ফেরত নিলেন। 'কী রে-এটাও চলবে না?' ছেলে মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিল-না, চলবে না। এটা অক্ষয়বাবুর পাঁচ নম্বর গল্প যেটা ছেলে নাকচ করে দিল। অক্ষয়বাবুর ছেলের নাম অঞ্জন। তার বয়স চ

84

প্রসন্ন স্যার

25 November 2023
0
0
0

অর্ধেন্দু সেনগুপ্ত সাতদিনের ছুটি নিয়ে শিমুলতলায় এসেছে। সে একটা ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে ভাল চাকরি করে, যদিও মাত্র পঁচিশ বছর বয়স। চেহারা সুশ্রী, চলনে বলনে রীতিমতো স্মার্ট। ব্যাচেলার হিসেবে তার এই শেষ ছুটি ভ

85

অভিরাম

25 November 2023
0
0
0

'তোমার নাম কী?' 'অভিরাম সাউ, বাবু।' 'তোমার বাড়ি কোথায়?' 'উলুইপুর গাঁয়ে বাবু। উড়িষ্যা।' 'বাড়িতে আছে কে?' 'আমার দাদা আছে, বউদি আছে, দুই ভাইপো আছে।' 'তোমার বাড়ি যেতে হয় না?' 'কালে ভদ্রে বাবু। আমি

86

ব্লু-জন গহ্বরের বিভীষিকা (অনুবাদ)

25 November 2023
0
0
0

    ১৯০৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সাউথ কেনসিংটনের ৩৬ নং আপার কভেন্ট্রি ফ্ল্যাটে যক্ষ্মা রোগে ডাঃ জেমস হার্ডকালের মৃত্যুর পর, তাঁর কাগজপত্রের মধ্যে নিম্নলিখিত কাহিনীটি পাওয়া যায়। যাঁরা হার্ডকাফ্লকে ঘনিষ্ঠভাব

87

মোল্লা নাসিরুদ্দিনের গল্প (অনুবাদ)

25 November 2023
0
0
0

☆☆☆ নাসিরুদ্দিনের বন্ধুরা একদিন তাকে বললে, 'চলো, আজ রাত্রে আমরা তোমার বাড়িতে খাব।' 'বেশ, এসো আমার সঙ্গে', বললে নাসিরুদ্দিন। বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে সে বললে, 'তোমরা একটু সবুর করো, আমি আগে গিন্নিকে বলে আ

88

মোল্লা নাসিরুদ্দিনের আরো গল্প (অনুবাদ)

25 November 2023
0
0
0

একদিন এক জ্ঞাতি এসে নাসিরুদ্দিনকে একটা হাঁস উপহার দিলে। নাসিরুদ্দিন ভারী খুশি হয়ে সেটার মাংস রান্না করে জ্ঞাতিকে খাওয়ালে। কয়েকদিন পরে মোল্লাসাহেবের কাছে একজন লোক এসে বললে, 'আপনাকে যিনি হাঁস দিয়েছিলে

89

মোল্লা নাসিরুদ্দিনের আরো গল্প (অনুবাদ)

26 November 2023
0
0
0

রাজদরবারে নাসিরুদ্দিনের খুব খাতির। একদিন খুব খিদের মুখে বেগুন ভাজা খেয়ে ভারী খুশি হয়ে রাজা নাসিরুদ্দিনকে বললেন, 'বেগুনের মতো এমন সুস্বাদু খাদ্য আর আছে কি?' 'বেগুনের জবাব নেই,' বললে নাসিরুদ্দিন। রাজ

90

আবার মোল্লা নাসিরুদ্দিন (অনুবাদ)

26 November 2023
0
0
0

রাজামশাই একদিন নাসিরুদ্দিনকে ডেকে বললেন, 'বনে গিয়ে ভাল্লুক মেরে আনো।' নাসিরুদ্দিন রাজার আদেশ অমান্য করে কী করে? অগত্যা তাকে যেতেই হল। বন থেকে ফেরার পর একজন তাকে জিজ্ঞেস করলে, 'কেমন হল শিকার, মোল্লাসাহ

91

আর এক দফা মোল্লা নাসিরুদ্দিন (অনুবাদ)

26 November 2023
1
0
0

☆☆☆ নাসিরুদ্দিন রাস্তা দিয়ে হাঁটছে, পাশে ফুলে ফলে ভরা বাগিচা দেখে তার মধ্যে গিয়ে ঢুকল। প্রকৃতির শোভাও উপভোগ করা হবে, শর্টকাটও হবে। কিছুদূর যেতে না যেতেই নাসিরুদ্দিন এক গর্তের মধ্যে পড়ল, আর পড়তেই তার

92

ব্রেজিলের কালো বাঘ (অনুবাদ)

26 November 2023
0
0
0

মেজাজটা বনেদি, প্রত্যাশা অসীম, অভিজাত বংশের রক্ত বইছে ধমনীতে, অথচ পকেটে পয়সা নেই, রোজগারের কোনও রাস্তা নেই-একজন যুবকের পক্ষে এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে? আমার বাবা ছিলেন সহজ, সরল মানুষ। তাঁর দাদা

93

মঙ্গলই স্বর্গ (অনুবাদ)

26 November 2023
0
0
0

মহাকাশ থেকে রকেটটা নেমে আসছে তার গন্তব্যস্থলের দিকে। এতদিন সেটা ছিল তারায় ভরা নিঃশব্দ নিকষ কালো মহাশূন্যে একটি বেগবান ধাতব উজ্জ্বলতা। অগ্নিগর্ভ রকেটটা নতুন। এর দেহ থেকে নিঃসৃত হচ্ছে উত্তাপ। এর কক্ষের

94

ঈশ্বরের ন' লক্ষ কোটি নাম (অনুবাদ)

27 November 2023
0
0
0

'আপনাদের অর্ডারটা একটু অস্বাভাবিক ধরনের', বিস্ময়ের মাত্রাটা যথাসম্ভব কমিয়ে বললেন ডাঃ ওয়াগনার- 'আমি যতদূর জানি, এর আগে কোনও তিব্বতি গুম্ফা থেকে অটোমেটিক সিকুয়েন্স কম্পিউটারের জন্য অর্ডার আসেনি। আপনাদের

95

ইহুদির কবচ (অনুবাদ)

27 November 2023
0
0
0

প্রাচ্যের পুরাতত্ত্ব সম্পর্কে আমার বিশিষ্ট বন্ধু ওয়র্ড মর্টিমারের জ্ঞান ছিল অসামান্য। সে এ বিষয়ে বিস্তর প্রবন্ধ লিখেছিল, মিশরের ভ্যালি অফ দ্য কিংস-এ খননকার্য তদারকের সময় একটানা দু' বছর থিবিসের একটি সম

96

ময়ূরকণ্ঠি জেলি (অনুবাদ)

27 November 2023
0
0
0

শশাঙ্ক টেবিলের উপর থেকে খাতাটা তুলে নিল। নীল মলাটের ছোট সাইজের সাধারণ নোটবুক! দাম বোধহয় আজকের দিনে আনা আষ্টেক। কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে শশাঙ্ক এরকম নোটবুক ব্যবহার করেছে, তখন দাম ছিল দু'আনা। মনে আছে

97

সবুজ মানুষ (অনুবাদ)

27 November 2023
0
0
0

আমি যার কথা লিখতে যাচ্ছি তার সঙ্গে সবুজ মানুষের কোনও সম্পর্ক আছে কিনা, তা আমার সঠিক জানা নেই। সে নিজে পৃথিবীরই মানুষ, এবং আমারই একজন বিশিষ্ট বন্ধু-স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক-প্রফেসর নারা

98

আর্যশেখরের জন্ম ও মৃত্যু (অনুবাদ)

27 November 2023
1
0
0

অনেকের মতে আর্যশেখর ছিলেন যাকে ইংরাজিতে বলে চাইল্ড প্রডিজি। তাঁর যখন দশ বছর বয়স তখন একদিন স্টেটসম্যান পত্রিকার প্রথম পাতায় নীচের দিকে এক লাইন লেখা তাঁর চোখে পড়ল-সান রাইজেজ টুডে অ্যাট সিক্স থার্টিন এ এ

99

পিকুর ডায়রি (অনুবাদ)

27 November 2023
0
0
0

আমি ডাইরি লিখছি। আমি আমার নীল নতুন নীল খাতায় ডাইরি লিখছি। আমি আমার বিছানার উপর বসে লিখছি। দাদুও ডাইরি রোজ লেখে কিন্তু এখন না এখন অসুক করেছিল তাই। সেই অসুকটার নাম আমি জানি আর নামটা করোনানি থমবোসি। বাবা

---