shabd-logo

রতন আর লক্ষ্মী

23 November 2023

0 Viewed 0

ঠিক কখন থেকে রতনের মনটা খুশিতে ভরে আছে সেটা রতন জানে। দশদিন আগে ছিল চৈত্র সংক্রান্তি। রতন থাকে শিমুলিতে। সেখান থেকে চার ক্রোশ দূরে উজলপুরে সংক্রান্তির খুব বড় মেলা হয়। রতন গিয়েছিল সেই মেলা দেখতে। শুধু দেখতে নয়, মেলা থেকে বাঁশের বাঁশি কেনার শখও ছিল তার, সেটাও একটা উদ্দেশ্য বটে। রতনের গানের কান খুব ভাল; যে কোনও গান দু'বার শুনলে নিজের গলায় তুলে নিতে পারে। সে বাঁশিও বাজায়, কিন্তু ভাল বাঁশি তার নেই। জমজমাট মেলার এক জায়গায় নানারকম বাজনা বিক্রি হচ্ছিল, তার মধ্যে বাঁশিও ছিল অনেক, রতন তারই কয়েকটা হাতে তুলে ফু দিয়ে দেখছিল, এমন সময় চারদিকে একটা শোরগোল পড়ে গেল। উজলপুরের রাজকন্যা লক্ষ্মী এসেছেন ডুলিতে করে মেলা দেখতে। এমনিতে রাজকন্যারা রাজবাড়ির অন্তঃপুরেই বন্দি থাকে, তাকে বাইরের লোকে দেখতে পায় না। কিন্তু লক্ষ্মী তেমন মেয়ে নয়। সে অনেক আগে থেকেই বাপ-মাকে শাসিয়ে রেখেছে-'সংক্রান্তির মেলা আসছে, আমি কিন্তু তাতে যাব। ওসব পর্দাটর্দা মানতে পারব না। লোকে আমাকে দেখলে ক্ষতি কী? তারাও মানুষ, আমিও মানুষ; আর তারা তো আমায় খেয়ে ফেলবে না। আমি ভুলিতে করে যাব। আমার কেষ্টনগরের মাটির পুতুলের খুব শখ; সেই পুতুল আমি নিজে দেখে কিনতে চাই। তোমরা না করতে পারবে না।' লক্ষ্মী বাপ-মায়ের একমাত্র সন্তান, তাই তার আবদার না রেখে উপায় নেই।

হবি তো হ, বাজনার দোকান মাটির পুতুলের দোকানের ঠিক পাশেই। রতন সবে একটা বাঁশিতে একটা মন-মাতানো সুর তুলেছে এমন সময় শোরগোল শুনে পাশ ফিরে দেখে রাজকন্যা। শুধু দেখা নয়, একেবারে চোখে চোখে দেখা। রাজকন্যার বয়স ষোলো, রতনের উনিশ। রতনের চেহারাটাও ভাল। সে ব্রাহ্মণ পুরুতের একমাত্র ছেলে। পাঁচ ঘর যজমান নিয়ে পুরুত হরিনারায়ণের মোটামুটি চলে যায়, কিন্তু তার স্ত্রী অন্নপূর্ণা ছেলে রতনকে এই অবস্থার মধ্যেই মানুষ করেছে খুব যত্ন করে। তাই রতনের চেহারায় কোনও দারিদ্র্যের ছাপ পড়েনি।

রাজকন্যা লক্ষ্মীর চোখে চোখ পড়তেই রতনের মন খুশিতে ভরে উঠল। এমন সুন্দর মেয়ে সে দেখেনি কখনও। আহা, একে যদি গান শোনাতে পারত সে, তা হলে কেমন ভাল হত। অবিশ্যি চোখ পড়তেই রাজকন্যা আবার চোখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল, কিন্তু তাতে কী হয়? তাকে দেখে রাজকন্যার খারাপ লাগেনি এটা রতন বুঝেছে। আর কী চাই? সে একটার জায়গায় তিনটে বাঁশি কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরল। সে পুরুতগিরি করবে না, গান-বাজনা নিয়েই থাকবে, এটা সে বাপকে বলে দিয়েছে। তার বিয়ের কথাও বাপ দু-একবার তুলেছেন, তাতে রতন কিছু বলেনি। এবার যদি তোলেন তা হলে

রতন বলবে উজলপুরের রাজকন্যার মতো সুন্দরী মেয়ে হলেই সে বিয়ে করবে, নইলে নয়। আজ ছিল রবিবার। সময়টা দুপুর; রতন সকালে দু'ঘণ্টা বাঁশি বাজানো অভ্যাস করে একবার গিয়েছিল গোপীনাথ মুদির দোকানে। বাড়ি ফিরে এসে দেখে এক জটাজুটধারী সন্ন্যাসী তার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। সন্ন্যাসীর চোখ দুটো লাল, গলায় চারখানা বড় বড় রুদ্রাক্ষের মালা। হাতে চিমটে আর কমণ্ডলু। রতনকে দেখেই বাবাজি হাত তুলে আশীর্বাদ করে বললেন, 'সেই চাঁদপুর থেকে আসছি, এখনও যেতে হবে তিন ক্রোশ পথ; তোরা তো ব্রাহ্মণ?"

"আজ্ঞে হ্যাঁ।"

'আমাকে এক ঘটি খাবার জল এনে দে তো দেখি।' 'নিশ্চয়ই; আপনি বসুন।'

রতন তাড়াতাড়ি বাবাজির জন্য দাওয়ায় আসন পেতে দিল। তারপর বাড়ির ভিতরে গেল জল আনতে। মা শুনে বললেন, "শুধু জল কেন? অতিথি এসেছেন, পিঠে আছে, দু' খানা দিয়ে দে জলের সঙ্গে।'

আসলে বাবাজির চেহারাটা-বিশেষ করে জবাফুলের মতো চোখ দুটো-রতনের খুব ভাল লাগেনি। তাই মা-র কথা শুনে সে বলল, 'আবার পিঠে কেন? চেয়েছেন তো শুধু জল।' অন্নপূর্ণা ধমকের সুরে বললেন, 'অতিথিসেবায় যত পুণ্যি তত আর কিছুতে হয় না, জানিস? যা

বলছি তাই কর।' রতন অনিচ্ছাসত্ত্বেও জলের সঙ্গে রেকাবিতে করে পিঠে নিয়ে গিয়ে বাবাজিকে দিল। বাবাজি দুই

গ্রাসে দুটো পিঠে খেয়ে ঢকঢক করে পুরো ঘটি জলটা খেয়ে ফেলে বললেন, 'আঃ, বড় তৃপ্তি হল!' কথাটা বলে আরও আরাম করে বসে পা দুটো সামনের দিকে ছড়িয়ে দিয়ে বললেন, 'তোর নাম তো

রতন?'

'আজ্ঞে হ্যাঁ।'..

রতন বুঝল, বাবাজি যেমন-তেমন লোক নন; ইনি গুনতে জানেন। কিন্তু তাও তাঁকে রতনের ভাল লাগল না। এমনভাবে পা ছড়িয়ে দিলেন কেন? দুপুরটা এখানেই কাটাবেন নাকি? 'তা বাবা রতন', বললেন বাবাজি, 'একটু পা দুটো ডলে দে তো দেখি। এখনও অনেকটা পথ যেতে

হবে।'

রতন এটা আশা করেনি। তার কাছে অনুরোধটা একটু বাড়াবাড়ি বলে মনে হল। সে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে দেখে বাবা আবার বললেন, 'কই, একটু পদসেবা কর। তোর পুণ্যি হবে। হাঁ করে দাঁড়িয়ে রইলি কেন?'

রতনের মনটা হঠাৎ শক্ত হয়ে উঠল। ইনি যত বড়ই সাধু হন, রতন পরোয়া করে না। এই লোকটার পা টিপে দেবে না। রাজ্যির ধুলোকাদা লেগে আছে পায়ে, এতখানি পথ হেঁটে। সে মাথা নেড়ে বলল, 'না ঠাকুর, আমায় মাফ করবেন। আমি আমার বাবার পা টিপতে পারি, আর

কারুর নয়।' বাবাজি ছড়ানো পা দুটো টেনে নিলেন। রতন দেখল তাঁর চোখ দুটো যেন আগুনের ভাঁটার মতো জ্বলে উঠল।

'কী বললি? আবার বল তো!'

রতন আবার বলল। এবার আরও স্পষ্ট করে। তার ভয় কেটে গেছে। যতবড় সাধুই হোক—কী আর করতে পারে? এ তো দুর্বাসা মুনি নয় যে অভিশাপ দেবে!

'আমি কে জানিস?' এবার বাবাজি জিজ্ঞেস করলেন। রতন চুপ।

'আমি তোর কী করতে পারি জানিস?' বাবাজি আবার জিজ্ঞেস করলেন। 'তোর ভবিষ্যৎ আমার হাতের মুঠোয়। আমি বিপুলানন্দ তান্ত্রিক। আমি ত্রিকালজ্ঞ। আমার তেজে চরাচর ভস্ম হয়ে যায়।

আমাকে অপমান করার সাহস হল তোর?' রতন এখনও চুপ। সে একদৃষ্টে চেয়ে রয়েছে বাবাজির দিকে। বুকে সামান্য দুরু দুরু ভাব। কী করবে তাকে বাবাজি? কী করতে পারে একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে? কিন্তু বাবাজি যে মানুষের বাড়া সে কথা রতন জানবে কী করে?

'আজ অমাবস্যা', বলে চললেন বাবাজি। 'আজ সায়াহ্নে তুই আর মানুষ থাকবি না। তুই হয়ে যাবি রাক্ষস। আয়তনে তিনগুণ বেড়ে যাবি তুই। সভ্য সমাজে থাকা আর চলবে না তোর। তোর খাদ্য হবে বন্য পশু। আমার পদসেবা করলে তোর মঙ্গলই হত। তাতে যখন তোর এত আপত্তি তখন তোর একটু শিক্ষা হওয়াই দরকার। আমি আসি।'

বাবাজি চিমটে কমণ্ডলু নিয়ে উঠে পড়লেন। রতন পাথর। সে কী করবে বুঝতে পারছে না। হ্যাঁ, একটা পন্থা আছে। নরহরি খুড়োর কাছে যাওয়া। সায়াহ্ন মানে কখন? সূর্যি ডোবার আগে তো নয়। তার মানে সময় আছে অন্তত তিন ঘণ্টা।

বাবাজি 'ব্যোম ভোলানাথ' বলে চলে গেলেন। রতন তাঁকে বেশ কিছুদূর যেতে দিয়ে একছুটে গিয়ে পৌঁছল নরহরি জ্যোতিষীর বাড়ি। 'কী রে রত্না-এই অসময়ে? কী ব্যাপার?'

'খুব বিপদে পড়ে আপনার কাছে এসেছি নরহরি খুড়ো!'

'কী বিপদ?'

'সেটা আর খুলে বলা যাবে না। আপনি একটু গুনে যদি বলেন আমার সামনের ক'টা দিন কেমন

যাবে!' রতনের গানের গলা আর মিষ্টি স্বভাবের জন্য গাঁয়ের সকলেই তাকে স্নেহ করে। নরহরি জ্যোতিষী এমনিতে একটু খিটখিটে মানুষ, কিন্তু রতনের দিশাহারা ভাব দেখে তার অনুরোধ ঠেলতে পারলেন না।

'দাঁড়া দেখি। তোর করকোষ্ঠী আমিই করেছিলাম, তাই না?'

'আজ্ঞে হ্যাঁ।'

'কর্কট রাশি, কৃষ্ণ পক্ষ......'

নরহরি জ্যোতিষী কাগজে কিছুক্ষণ হিজিবিজি কাটলেন, তারপর হঠাৎ ভয়ানক গম্ভীর হয়ে রতনের দিকে চেয়ে বললেন, 'এ যে মহাসংকট। তোর উপর তো শনির দৃষ্টি পড়েছে দেখছি। সামনের ক'টা

দিন তো ঘোর দুর্বিপাকের সময় রে রতন!'

'কিন্তু তার পরে?' ধরা গলায় জিজ্ঞেস করল রতন।

নরহরি জ্যোতিষী আবার নকশার দিকে চেয়ে কিছুক্ষণ ভ্রুকুটি করে রইলেন। তারপর তাঁর ঠোঁটের কোণে হাসি দেখা দিল। তিনি তিনবার পর পর 'বাঃ!' বলে বললেন, 'সব মেঘ কেটে যাবে। শনি সরে গিয়ে বৃহস্পতি উঠবে তুঙ্গে। তোর কষ্ট থাকবে না, অভাব থাকবে না, কিচ্ছু থাকবে না।'

'কিন্তু সেটা ক'দিন পরে নরহরি খুড়ো?'

'বেশি দিন নয়, বেশিদিন নয়। এক পক্ষকাল। আজ অমাবস্যা। পূর্ণিমায় দেখবি মেঘ কেটে গেছে। বুঝেছিস?'

রতন বুঝল।

সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, সূর্য মাথার উপর থেকে পশ্চিমে নামতে শুরু করেছে, তাই রতন আর থাকতে পারল না। নরহরি খুড়োর কাছে ব্যাপারটা আরেকটু পরিষ্কার করে জেনে নিতে পারলে ভাল হত, কিন্তু তার আর উপায় নেই। মোটামুটি যা জানবার তা রতন জেনে নিয়েছে। কিছুদিনের জন্য তাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে। অভিশাপের কথা মা-বাবাকে বলবে না। তারপর আবার কপাল ফিরলে সে বাড়ি ফিরবে।

বাড়ি ফিরে এসে রতন দেখল তার বাপও ফিরেছে। বাপ-মা দু'জনকেই একসঙ্গে পেয়ে রতন বলল, তাকে দু হপ্তার জন্য নারানপুর যেতে হচ্ছে। সেখানে এক নামকরা গাইয়ে এসেছেন, তাঁর কাছে থেকে যদি কিছু শেখা যায় তার চেষ্টা দেখবে রতন।

ছেলের যে গানের নেশা এটা তার বাপ-মা দুজনেই জানে। কাজেই তাকে এ ব্যাপারে নিরস্ত করার চেষ্টা বৃথা। তাই অনিচ্ছাসত্বেও দু'জনকে মত দিতে হল। রতন লাঠির আগায় একটা পোঁটলা বেঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।

গাঁয়ের পশ্চিমপ্রান্তে ঝলসির বন, সেটা পেরোলেই দিনগর। ঝলসির বনে রতন গেছে একবারই, কারণ সেখানে অনেক জানোয়ারের বাস। প্রায় তিনশো বছর আগে ঝলসি ছিল এক সমৃদ্ধ শহর; তখন তার নাম ছিল আজিনগড়। এই আজিনগড়ের ভাঙা কেল্লা দেখতেই রতন গিয়েছিল তার দুই বন্ধু সুবল আর মুকুন্দর সঙ্গে। বিশাল কেল্লা, কিন্তু তার অবস্থা খুবই শোচনীয়। সাপ-বিচ্ছুর বাস বলে আর ভিতরে কেউ যায় না, আর রতন সেখানেই থাকবে বলে মনস্থির করেছে। একটা ডেরা তার চাই; লোকের কাছ থেকে গা ঢাকা দিতে হবে তো!

রতন বনের ধারে গিয়ে একটা ছোট নদী থেকে আঁজলা করে জল নিয়ে খেল। অনেকখানি পথ, বেশ জলপিপাসা পেয়েছিল। এখনও সূর্য ডুবতে এক ঘণ্টা দেরি। বাবাজির কথা যদি ফলেই যায়, তা হলেই সে কেল্লায় গিয়ে ঢুকবে। না হলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার বাড়ি ফিরে যাবে; বলবে, ওস্তাদ ছাত্র নিতে নারাজ তাই সে বাড়ি ফিরে এল।

কিন্তু রতনের মন বলছে বাবাজির কথা ফলবে; কারণ এর মধ্যেই তার শরীরের ভিতরে কতকগুলো লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করেছে। হাড়ে কেমন যেন টান টান ভাব। সঙ্গে পোঁটলায় চিড়ে বাঁধা ছিল, কিন্তু সেটা আর খেতে ইচ্ছা করছে না; অথচ একটা খিদের ভাব রয়েছে, কিন্তু তার জন্য যেন চাই অন্য খাদ্য।

বনের মধ্যে ক্রমে অন্ধকার হয়ে আসছে। সূর্য এখন দূরের গাছপালার ঠিক মাথার উপর নেমে এসেছে। রতন তার নিজের হাত-পায়ের দিকে চেয়ে দেখল। এত লোম তো তার ছিল না!

আর নখও তো এত ধারালো ছিল না! সামনে একটা শুয়োর। দাঁতাল বুনো শুয়োর। বন থেকে বেরিয়ে একটা খোলা জায়গায় এসে তার দিকে চেয়ে দেখছে একদৃষ্টে।

রতন একটা আমলকী গাছের নীচে দাঁড়িয়ে ছিল। গাছের ডাল ছিল তার মাথার চেয়ে প্রায় দশ হাত

উপরে। হঠাৎ রতন বুঝল ডালটা যেন ক্রমে কাছে এগিয়ে আসছে।

শুয়োরটা এখনও দাঁড়িয়ে আছে। রতনের দিকে চেয়ে একটা চাপা গর্জনের মতো শব্দ করল।

তারপর উলটো দিকে ঘুরে ছুটে পালাল।

রতন দেখল যে, তার মাথা আমলকী গাছের ডাল ছাড়িয়ে উপরে উঠেছে। তার মুখ সে দেখতে পাচ্ছে না, কিন্তু গালে হাত দিয়ে বুঝল সেখানেও লোম। এবার রতন বড় বড় পা ফেলে জঙ্গল ভেদ করে রওনা দিল আজিনগড়ের কেল্লার উদ্দেশে।

॥২॥

আজিনগড়ের কেল্লায় যে একটা রাক্ষস এসে বাস করছে, সে খবর শিমুলির লোকে শুনেছে রামদাস কাঠুরের কাছ থেকে। রামদাস কাঠ কাটতে গিয়েছিল ঝলসির বনে। দিনের আলো থাকতে থাকতেই গিয়েছিল যাতে বাঘের খপ্পরে না পড়তে হয়। কেল্লার কাছাকাছি এসে একটা বারো হাত উঁচু দু'-পেয়ে প্রাণী দেখতে পেয়ে সে চম্পট দেয়। প্রাণীটার সর্বাঙ্গে লোম, হাতপায়ের নখ বড় বড়, দু পাশের দাঁতগুলো জানোয়ারের মতো ছুঁচোলো আর বড়, চোখ দুটো লাল, আর মাথাভর্তি জটপাকানো চুল।

রামদাস এই বর্ণনা দেবার পর থেকে ঝলসির বনের ধারেকাছে আর কেউ যায় না। এই দানবের ভয়ে সারা শিমুলি গাঁ কাঁপতে শুরু করেছে, যদিও এটাও ঠিক যে, মানুষের কোনও অনিষ্ট এই রাক্ষস এখন অবধি করেনি।

রতনের মনটা এখনও আগের মতোই রয়েছে, এমনকী তার গলার আওয়াজেও কোনও পরিবর্তন হয়নি, কেবল তার চেহারা আর খিদেটা গেছে বদলে। বনে ফলমূলের অভাব নেই, কিন্তু রতনের খিদে মিটতে লাগে বন্য জানোয়ারের কাঁচা মাংস। তার দেহে শক্তিও হয়েছে অমানুষিক; সে দুই হাতে ধরে যে-কোনও জানোয়ারের ঘাড় মটকে দিতে পারে, তারপর তার ধারালো আর শক্ত দাঁত দিয়ে সেই জানোয়ারের মাংস চিবিয়ে খেতে পারে। তার দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি আর ঘ্রাণশক্তি-তিনটেই অসম্ভব বেড়ে গেছে। বাঘ বন দিয়ে হেঁটে চলে নিঃশব্দে, কিন্তু রতনের কানে তার পায়ের শব্দ ধরা পড়ে। একশো হাত দূর থেকে জানোয়ারের গন্ধ সে পায়, আর পেয়ে নিঃশব্দে তাকে ধাওয়া করে। একবার একটা পুকুরের জলে রতন নিজের চেহারাটা দেখেছিল। দেখে তার নিজেরই ভয় লেগেছিল। জানোয়াররাও তাই দেখে পালায়, রতনকে ঝড়ের বেগে দৌড়ে গিয়ে তাদের ধরতে হয়।

রাত্রে খাওয়াদাওয়ার পর একা ভাঙা কেল্লায় বসে তার সবচেয়ে যার কথাটা বেশি মনে হয় সে হল উজলপুরের রাজকন্যা লক্ষ্মী। সংক্রান্তির মেলায় দেখা তার মুখের সেই হাসির কথা ভেবেই রতনের গলায় গান এসে পড়ে, আর সে আশ্চর্য হয়ে দেখে যে, রাক্ষস হয়েও তার গানের গলা নষ্ট হয়নি। কিন্তু তা হলে কী হবে; সে জানে যে, সে আর কোনওদিন রাজকন্যার কাছেও যেতে পারবে না, মানুষ হয়েও না। গরিব ব্রাহ্মণের ছেলে হয়ে রাজকন্যার কথা ভেবে কী লাভ? তার জন্য কত রাজপুত্র রয়েছে, তাদের একটার সঙ্গে তার বিয়ে হয়ে যাবে আর কিছুদিনের মধ্যেই।

তখনই আবার তার নরহরিখুড়োর কথাটা মনে পড়ে। তার কপাল যে ফিরবে সেটা কোনদিকে? হঠাৎ কি সে বড়লোক হয়ে উঠবে যাতে তার আর কোনও অভাব থাকে না? রাজারাজড়া তো সে আর হতে পারবে না, তা হলে নরহরিখুড়োর কথার মানেটা কী? খুড়োর তো বয়স হয়েছে অনেক; তার গণনায় ভুল হয়নি তো?

দশদিনে কাছাকাছির মধ্যে যা জানোয়ার ছিল সব শেষ করে রতন চলল দিগ্নগরের দিকে। দিনগরের পশ্চিমে ঝলসির লাগোয়া বন শহরকে তিন দিক দিয়ে ঘিরে রয়েছে। এই বনের নাম কী রতন জানে না, কিন্তু এখানে জানোয়ার আছে অনেক, রাজা মৃগয়ায় আসেন, এ খবর রতন রাখে। অনেকদূর পথ হেঁটে রতনের খিদে পেয়েছিল খুব, তাই বাঘের গন্ধ পেয়ে সে সন্তর্পণে এগিয়ে গিয়েছিল, আর গাছপালার ফাঁক দিয়ে সে বাঘকে দেখতেও পেল। কিন্তু সেটার দিকে এগোতে গিয়েই হঠাৎ দেখল একটা তীর এসে বাঘের গায়ে লাগাতে সেটা ছটফট করে মরে গেল। তারপরেই ঘোড়ার খুরের আওয়াজ শুনতে পেয়ে রতন একটা সেগুন গাছের আড়ালে লুকোবার আগেই তাকে দেখে ফেলল ঘোড়সওয়ার। পোশাক দেখেই বোঝা যায় সে রাজপুত্র। মৃগয়ায় বেরিয়েছে। এদিকে রাজপুত্র এমন বিশাল এক রাক্ষসের সামনে পড়ে থতমত। যদিও রতন দেখে আশ্চর্য হল যে রাজপুত্র ডরায়নি। 'তুমিই বুঝি ঝলসির বনের রাক্ষস?' রাজকুমার জিজ্ঞেস করল।

'হ্যাঁ,' বলল রতন। 'কিন্তু তুমি কে?'

'আমি চন্দ্রসেন। দিনগরের রাজকুমার।' তারপর একটু অবাক হয়ে বলল, 'কিন্তু তুমি তো ঠিক মানুষের মতো কথা বলো দেখছি।'

'তার কারণ আমি আসলে মানুষ', বলল রতন। 'এক সন্ন্যাসীর অভিশাপে আমি রাক্ষস হয়েছি। তোমার আমাকে দেখে ভয় করছে না?'

'কই, না তো। তুমি তো আর মানুষ ধরে খাও না; ভয় করবে কেন?' 'কিন্তু আমি তো জানোয়ার খাই। এই বাঘটাকে আমি খাব বলে ঠিক করেছিলাম, সেটাকে তুমি

মারলে।' 'আমি মারলাম তাতে কী হল? আমি আজ অনেক শিকার পেয়েছি। এখন সন্ধ্যা হতে চলল, এবার

ফিরব। এই বাঘটা তুমিই খাও।' 'তুমি কি একাই শিকার করো?' রতন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।

'হ্যাঁ। আগে লোকজন নিয়ে করতাম, এখন একাই করি। আমার ভয় করে না। ভাল কথা, তোমার একটা নাম আছে তো, না কি?'

'হ্যাঁ। আমার মানুষ নাম রতন। এখন আমি রাক্ষস, তাই সে নামের আর কোনও দাম নেই।'

'তুমি কি এখন এই বনেই থাকবে?' 'যদি খাবার পাই তা হলে থাকব।'

'তা হলে তোমার সঙ্গে আবার দেখা হতে পারে। কাল আমি থাকব না। কাল যাব উজলপুর।' উজলপুর শুনেই রতনের চমক লাগল।

'কেন? উজলপুরে কী?'

'সেখানে ডম্বরি পাহাড়ের গুহায় একটা দানব এসে রয়েছে। সে মানুষ খায়। তাকে মারবার জন্য উজলপুরের রাজা ঢ্যাঁড়া দিয়েছেন। আমি গিয়ে দেখব সেটাকে যদি মারতে পারি।'

চন্দ্রসেন বিদায় নিয়ে চলে গেল। রতনের খুব ভাল লাগল রাজকুমারকে। কিন্তু উজলপুরে দানবের ব্যাপারটা শুনে রতন যেন কেমন অন্যমনস্ক হয়ে পড়ল। মানুষখেকো দানব। চন্দ্রসেন যাবে তাকে মারতে। পারবে তো?

পরদিন সকাল থেকে রতন দেখল তার মন বারবার চলে যাচ্ছে উজলপুরের দিকে। একে তো সেখানেই থাকে লক্ষ্মী রাজকন্যা, তার উপর তার রাজ্যে বিপদ দেখা দিয়েছে, মানুষখেকো দানবের আবির্ভাব হয়েছে। উজলপুরের কেউ নিশ্চয়ই সে দানবকে মারতে পারেনি, নইলে আর ঢ্যাঁড়া দেবে কেন? মারতে পারলে কোনও পুরস্কার দেবে কি রাজা? সে-কথা তো চন্দ্রসেন কিছুই বলল না। রতন আর চিন্তা না করে বনের ভিতর দিয়ে উজলপুর রওনা দিল। এখান থেকে দু ক্রোশের বেশি দূর হবে না। সকালে সে একটা বুনো শুয়োর খেয়ে নিয়ে লম্বা পাড়ি দেবার জন্য তৈরি হয়ে নিয়েছে। চন্দ্রসেনের জন্য তার মনে একটা চিন্তা দেখা দিয়েছে। জানোয়ার মারা আর দানব মারা এক জিনিস নয়।

আধঘন্টার মধ্যেই রতন ডম্বরি পাহাড়ের কাছে পৌঁছে গেল। পাহাড়ের চারিদিকে ঘিরে আছে ঘন বন। সেই বন ধরে এগিয়ে গিয়ে পাহাড়ের গায়ে এক জায়গায় একটা প্রকাণ্ড গুহা দেখতে পেল রতন। এটাই কি দানবের গুহা? হ্যাঁ, এটাই। কারণ তার প্রখর দৃষ্টিশক্তির জোরে সে দেখতে পেয়েছে যে, গুহাটার বাইরে ছড়িয়ে পড়ে আছে অনেক মানুষের হাড়।

রতন একটা বটগাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার কান তাকে বলল যে , ঘোড়ার খুরের শব্দ

এগিয়ে আসছে। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছে রতন। একটা ঘোড়া নয়, অনেক ঘোড়া। তবে একটা ছাড়া আর সবগুলোই একটা জায়গাতেই এসে থেমে গেল। তাদের পিঠে রয়েছে বল্লমধারী সৈন্য। আর, যে ঘোড়াটা পাহাড়ের দিকে এগিয়ে চলল তার পিঠে আছে রাজকুমার চন্দ্রসেন।

রাজকুমার নির্ভয়ে পাহাড়ের গা দিয়ে উঠে গেল দানবের গুহা লক্ষ্য করে। গুহার মুখে এসে ঘোড়া থামাল সে। এবার সেনারা দামামা বাজিয়ে জানান দিল যে রাজকুমার উপস্থিত। এই শব্দেই দানবের বাইরে বেরোনো উচিত; এবার তার রাজকুমারের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।

রতনকে আর অপেক্ষা করতে হল না। দামামা বাজানোর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই একটা বিকট হুঙ্কার দিয়ে দানব এক লাফে গুহা থেকে বাইরে বেরিয়ে এল-তার পায়ের চাপে কিছু বড় পাথর পাহাড়ের গা বেয়ে নীচের দিকে গড়িয়ে এল সশব্দে।

দানবটা যে কত বড় সেটা ঘোড়ার পিঠে রাজকুমারের পাশে তাকে দেখে বোঝা গেল। রতন প্রমাদ গুণল। চন্দ্রসেন বিদ্যুদ্বেগে তীর ছুড়তে আরম্ভ করেছে দানবের দিকে, কিন্তু সে তীর দানবের পুরু চামড়া

ভেদ করতে না পেরে চতুর্দিকে ছিটকে পড়ছে।

দানব যেন এটা উপভোগই করছে এমন ভাব করে কিছুক্ষণ বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর

আরেকটা হুঙ্কার দিয়ে সে ঘোড়ার পিঠে চন্দ্রসেনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল।

ঠিক এই মুহূর্তেই রতন বুঝল যে, তার আর চুপ করে থাকা চলে না। সে বটগাছের পাশ থেকে বেরিয়ে কয়েকটা বিশাল লাফ দিয়ে পাহাড় বেয়ে পৌঁছে গেল দানবের পাশে। দানব তখন দু'হাত দিয়ে ঘোড়াসমেত চন্দ্রসেনকে জাপটে ধরেছে, চন্দ্রসেনও ছটফট করছে এই নাগপাশ থেকে মুক্তি পাবার জন্য। এমন সময় এই নতুন প্রতিদ্বন্দ্বীকে দেখতে পেয়ে দানব হঠাৎ হতভম্ব হয়ে ঘোড়াকে ছেড়ে দিল। তারপরেই সে ধেয়ে এল রতনের দিকে।

কিন্তু রতনের খাদ্য বন্য পশু আর দানবের খাদ্য মানুষ, দানব এই রাক্ষসের সঙ্গে পারবে কেন? দানবকে দুহাতে জাপটে নিয়ে তাকে মাথার উপর তুলে রতন প্রথম বুঝল তার নিজের শরীরে কত শক্তি হয়েছে। সেই অবস্থা থেকে সে পাহাড়ের গায়ে একটা প্রকাণ্ড পাথরের উপর দানবকে আছড়ে ফেলল। দানবের জানও কম কড়া নয়; সে সেই অবস্থা থেকে দাঁড়িয়ে উঠে আবার রতনের দিকে ধেয়ে এল। রতন আবার তাকে দুহাতে জড়িয়ে এবার আর ছুড়ে না ফেলে শুধু চাপের জোরে তাকে শেষ করার চেষ্টা করল।

সে চাপ যেন সহস্র অজগরের চাপ। দানব হাত পা ছুড়তে চেষ্টা করেও পারল না। তার চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসছে। তার মুখ হাঁ করে জিভ বেরিয়ে গেছে, আর সেই মুখের মধ্যে দিয়ে রতনের চাপের চোটে দানবের শেষ নিশ্বাস বেরিয়ে এল। এবার রতন হাত আলগা দিতেই দানবের নিষ্প্রাণ দেহ পাহাড়ের গা দিয়ে গড়িয়ে একেবারে নীচে গিয়ে পড়ল। এমন সময় কোলাহল শোনা গেল। সৈন্যদের কোলাহল। উজলপুরেও ঝলসির বনের রাক্ষসের খবর পৌঁছে গেছিল, এখন সেই রাক্ষস এখানে হাজির দেখে একশো সেনা তাদের বল্লম উচিয়ে ধেয়ে এল রতনের দিকে।

এইবারে দুটো ব্যাপার ঘটল: রতন কোনওরকম আক্রোশ দেখাল না। সে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল গুহার সামনে। আর চন্দ্রসেন সৈন্যদের দিকে হাত তুলে বলল, 'এ রাক্ষসই হোক আর যাই হোক, এ আমার প্রাণ বাঁচিয়েছে, আর দানবের সংহার এ-ই করেছে; আমার দ্বারা এ কাজ হত না। কাজেই একে তোমরা রাজপ্রাসাদে নিয়ে যাও; দেখো যেন এর অনিষ্ট না হয়।' রতনকে নিয়ে সৈন্যদের কোনও বেগই পেতে হল না; তারা তাকে নিয়ে রাজপ্রাসাদের দিকে চলল,

আর রতনও সে ব্যাপারে কোনও আপত্তি করল না। রাজপ্রাসাদের কয়েদখানা রতনের পক্ষে যথেষ্ট বড় নয় বলে তাকে প্রাসাদের পিছনে একটা অশ্বত্থ

গাছের সঙ্গে চারগাছা দড়ি দিয়ে বেঁধে দশজন সশস্ত্র প্রহরী পাহারা রেখে দেওয়া হল। এবার রাজা নিজে এলেন রাক্ষসকে দেখতে। বন্য পশু খেয়ে রাক্ষস যে এমন শান্তশিষ্ট হতে পারে এটা রাজা ভাবতেই পারেননি।

আর আরেকজন তাকে দেখল প্রাসাদের দোতলার একটা জানালা থেকে, সে হল রাজকন্যা লক্ষ্মী। এমন কদাকার বিশাল একটা প্রাণী এমন নিরীহ ভাবে বসে থাকতে পারে তাদের দেশের এত বড় একটা

শত্রুর প্রাণ সংহার করে, এটা লক্ষ্মীর কেমন যেন অদ্ভুত লাগল। এ কি সত্যিই রাক্ষস, না অন্য কিছু? ক্রমে দিন ফুরিয়ে রাত এসে পড়ল। রতন এতই নির্জীব হয়ে পড়েছিল যে পেয়াদারা তাদের কাজে একটু একটু ঢিলে দিয়ে কেউ কেউ ঘুমিয়েই পড়েছিল। রতনের তাতে তাপ-উত্তাপ নেই; সে শুধু একজনের মন পাবার আশায় বসে আছে। এমন চেহারা নিয়ে যদিও সে আশা দুরাশা, কিন্তু রতন তবুও হাল ছাড়তে পারে না।

আকাশে চাঁদ দেখে, রাজবাড়ির বাগান থেকে ফুলের গন্ধ পেয়ে রতনের মনে একটা উদাস ভাব এল। চারিদিক নিঝুম হয়ে আছে। তার মধ্যেই রতনের মাথায় একটা গানেব কলি এল। তারপরেই সেই গান তার গলা দিয়ে বেরিয়ে এল। প্রহরীদের মধ্যে যারা জেগে ছিল তারা অবাক হয়ে রাক্ষসের দিকে চাইল। এই রাক্ষস গান গায়? আর এত সুন্দর গলায়?

রাতের নিস্তব্ধতার মধ্যে সে গান ভেসে পৌঁছে গেল রাজবাড়ির দোতলার অন্তঃপুরে। আর সবাই ঘুমে অচেতন, কেবল একজন জেগে আছে তার রেশমের বালিশে মাথা দিয়ে। রাজকুমারী লক্ষ্মী। গানের কলি তার কানে যেতেই লক্ষ্মী চমকে উঠে মোহিত হয়ে গেল। এই সুরই তো সেই ছেলেটি বাঁশিতে বাজিয়েছিল সংক্রান্তির মেলায়! এটা কী করে হয়?

তারপর রাজকন্যার মনে পড়ল ঘোষণার কথা। উজলপুরের রাজার ঘোষণা দেশে দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এ ক'দিনের মধ্যে। 'যে এই দানবকে মারতে পারবে সে পাবে অর্ধেক রাজত্ব, আর সেইসঙ্গে রাজকন্যাকে।' এই রাক্ষসই তো সেই দানবকে মেরেছে!

একি সত্যিই রাক্ষস?

এদিকে রতন গান গেয়েই চলেছে। রাজকন্যা লক্ষ্মীর চোখে ঘুম নেই। তার মাথায় অদ্ভুত সব চিন্তা

এসে জড়ো হয়েছে। কাল সকালে সে বাবার সঙ্গে দেখা করবে। তার মন বলছে-

না, এখনও কিছু বলছে না তার মন, কিন্তু তার মাথার মধ্যে সব গণ্ডগোল হয়ে গেছে। সে এই রহস্যের কোনও কিনারা করতে পারছে না। শেষ পর্যন্ত লক্ষ্মীর চোখে ঘুম এল, আর ঘুমিয়ে সে স্বপ্ন দেখল সেই রাক্ষস তাকে বলছে, 'তুমি হ্যাঁ

বললেই আমার এ দশার শেষ হবে। তা ছাড়া আমার মুক্তি নেই।' পরদিন সকালে লক্ষ্মী তার বাবাকে ডেকে পাঠাল। রাজা তখন সবে নদীতে স্নান সেরে ফিরছেন। তিনি এসে বললেন, 'কী বলছ মা?'

লক্ষ্মী সোজা বাপের দিকে চেয়ে বলল, 'আমি একবার রাক্ষসের সঙ্গে দেখা করতে চাই।' 'কেন মা? এমন ইচ্ছা কেন হল তোমার?'

'তুমি বলেছিলে, যে দানবকে মারবে তাকেই তুমি তোমার মেয়েকে আর অর্ধেক রাজত্ব দেবে। তুমি তো বলোনি যে সে যদি রাক্ষস হয় তা হলে দেবে না।'

'একি পাগলের মতো কথা বলছ তুমি? রাক্ষসের হাতে তুলে দেব তোমাকে আর অর্ধেক রাজত্ব?' 'কেন দেবে না? সে তো কোনও দোষ করেনি। তার চেহারাটাই যা খারাপ। কাল রাত্রে তার গান শুনেছি আমি। এমন আশ্চর্য সুন্দর গলা খুব কম মানুষের হয়।'

'তুমি তো মহা সমস্যায় ফেললে দেখছি!'

'না বাবা। আমি ওকেই বিয়ে করব। একবার আমাকে ওর কাছে নিয়ে চলো।'

'যদি সে কিছু করে?' 'কিছু করবে না। আমার মন বলছে কিছু করবে না।' অগত্যা রাজা লক্ষ্মীকে নিয়ে গেলেন রাক্ষসের কাছে। আর সেখানে গিয়ে দেখলেন এক আশ্চর্য

দৃশ্য।

এই সবে এক পক্ষকাল শেষ হল; আজ পূর্ণিমা। তাই রাক্ষসের গা থেকে লোম মিলিয়ে যাচ্ছে। তার নখ ছোট হয়ে যাচ্ছে, আর সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছোট হয়ে গিয়ে স্বাভাবিক মানুষের আকার নিচ্ছে, আর এ মানুষকে লক্ষ্মী চেনে।

সংক্রান্তির মেলায় একে দেখেছিল তার দিকে চেয়ে হাসতে। আর এখন সেই হাসিই লেগে আছে রতনের ঠোঁটের কোণে।

রতন উঠে দাঁড়াল। তারপর মুখ খুলল। বলল, 'আমার নাম রতন।'

'আর আমার নাম লক্ষ্মী', বলল রাজকন্যা।

'শোনো রতন', বললেন রাজা, 'আমি কথা দিয়েছি যে, যে দানবকে মারবে তাকে আমার অর্ধেক রাজত্ব, আর আমার মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেব।'

'সে তো ভাল কথা', বলল রতন।

'কিন্তু তোমার এমন দশা হল কী করে?' জিজ্ঞেস করল রাজকন্যা লক্ষ্মী। রতন হাসল। তারপর বলল, 'সব বলব, আগে মণ্ডা মিঠাই আনো; বড় খিদে পেয়েছে।'

99
Articles
গল্প ১০১
0.0
ফেলুদা এবং শঙ্কু বাদে সত্যজিৎ রায়ের যাবতীয় লেখা নিয়ে তৈরি একটি সংকলন।
1

বঙ্কুবাবুর বন্ধু

14 November 2023
0
0
0

বঙ্কুবাবুকে কেউ কোনওদিন রাগতে দেখেনি। সত্যি বলতে কি, তিনি রাগলে যে কীরকম ব্যাপারটা হবে, কী যে বলবেন বা করবেন তিনি, সেটা আন্দাজ করা ভারী শক্ত। অথচ রাগবার যে কারণ ঘটে না তা মোটেই নয়। আজ বাইশ বছর তিনি

2

টেরোড্যাকটিলের ডিম

14 November 2023
0
0
0

বদনবাবু আপিসের পর আর কার্জন পার্কে আসেন না। আগে ছিল ভাল। সুরেন বাঁড়ুজ্যের স্ট্যাচুর পাশটায় ঘণ্টাখানেক চুপচাপ বসে বিশ্রাম করে তারপর ট্রামের ভিড়টা একটু কমলে সন্ধ্যায় সন্ধ্যায় শিবঠাকুর লেনে বাড়ি ফ

3

সেপ্টোপাসের খিদে

14 November 2023
0
0
0

কড়া নাড়ার আওয়াজ পেয়ে আপনা থেকেই মুখ থেকে একটা বিরক্তিসূচক শব্দ বেরিয়ে পড়ল। বিকেল থেকে এই নিয়ে চারবার হল; মানুষে কাজ করে কী করে? কার্তিকটাও সেই যে বাজারে গেছে আর ফেরার নামটি নেই। লেখাটা বন্ধ ক

4

সদানন্দের খুদে জগৎ

14 November 2023
0
0
0

আজ আমার মনটা বেশ খুশি-খুশি, তাই ভাবছি এইবেলা তোমাদের সব ব্যাপারটা বলে ফেলি। আমি জানি তোমরা বিশ্বাস করবে। তোমরা তো আর এদের মতো নও। এরা বিশ্বাস করে না। এরা ভাবে আমার সব কথাই বুঝি মিথ্যে আর বানানো। আমি ত

5

অনাথবাবুর ভয়

14 November 2023
0
0
0

অনাথবাবুর সঙ্গে আমার আলাপ ট্রেনের কামরায়। আমি যাচ্ছিলাম রঘুনাথপুর, হাওয়াবদলের জন্য। কলকাতায় খবরের কাগজের আপিসে চাকরি করি। গত ক'মাস ধরে কাজের চাপে দমবন্ধ হবার উপক্রম হয়েছিল। তা ছাড়া আমার লেখার শখ,

6

দুই ম্যাজিশিয়ান

14 November 2023
0
0
0

'পাঁচ, ছয়, সাত, আট, নয়, দশ, এগারো।' সুরপতি ট্রাঙ্কগুলো শুনে নিয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট অনিলের দিকে ফিরে বলল, ঠিক আছে। দাও, গাড়ি পাঠিয়ে দাও সব ব্রেকভ্যানে। আর মাত্র পঁচিশ মিনিট। ' অনিল বলল, 'আপনার গাড

7

শিবু আর রাক্ষসের কথা

16 November 2023
0
0
0

'অ্যাই শিবু—এদিকে শোন। ' শিবুর ইস্কুল যাবার পথে ফটিকদা তাকে প্রায়ই এইভাবে ডাকে। ফটিকদা মানে পাগলা ফটিক। জয়নারায়ণ বাবুদের বাড়ি ছাড়িয়ে চৌমাথার কাছটায় যেখানে একটা পুরনো মরচে-ধরা স্টিম রোলার আজ

8

পটলবাবু ফিল্মস্টার

16 November 2023
1
0
0

পটলবাবু সবে বাজারের থলিটা কাঁধে ঝুলিয়েছেন এমন সময় বাইরে থেকে নিশিকান্তবাবু হাঁক দিলেন, 'পটল আছ নাকি হে?' “আজ্ঞে হ্যাঁ। দাঁড়ান, আসছি।' নিশিকান্ত ঘোষ মশাই নেপাল ভট্টচাজ্যি লেনে পটলবাবুর তিনখানা বাড

9

বিপিন চৌধুরীর স্মৃতিভ্রম

16 November 2023
0
0
0

নিউ মার্কেটের কালীচরণের দোকান থেকে প্রতি সোমবার আপিস ফেরতা বই কিনে বাড়ি ফেরেন বিপিন চৌধুরী। যত রাজ্যের ডিটেকটিভ বই, রহস্যের বই আর ভূতের গল্প। একসঙ্গে অন্তত খান পাঁচেক বই না কিনলে তাঁর এক সপ্তাহের খোর

10

বাদুড় বিভীষিকা

16 November 2023
0
0
0

বাদুড় জিনিসটা আমার মোটেই ধাতে সয় না। আমার ভবানীপুরের ফ্ল্যাটের ঘরে মাঝে মাঝে যখন সন্ধের দিকে জানলার গরাদ দিয়ে নিঃশব্দে এক-একটা চামচিকে ঢুকে পড়ে, তখন বাধ্য হয়েই আমাকে কাজ বন্ধ করে দিতে হয়। বিশেষত

11

নীল আতঙ্ক

16 November 2023
0
0
0

আমার নাম অনিরুদ্ধ বোস। আমার বয়স ঊনত্রিশ। এখনও বিয়ে করিনি। আজ আট বছর হল আমি কলকাতার একটা সদাগরি আপিসে চাকরি করছি। মাইনে যা পাই তাতে একা মানুষের দিব্যি চলে যায়। সর্দার শঙ্কর রোডে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া ন

12

রতনবাবু আর সেই লোকটা

16 November 2023
0
0
0

ট্রেন থেকে প্ল্যাটফর্মে নেমে এদিক ওদিক দেখে রতনবাবুর মনে একটা খুশির ভাব জেগে উঠল। জায়গাটা তো ভাল বলেই মনে হচ্ছে। স্টেশনের পিছনে শিরীষ গাছটা কেমন মাথা উচিয়ে রয়েছে, তার ডালে আবার একটা লাল ঘুড়ি আটকে

13

ফ্রিৎস

17 November 2023
0
0
0

জয়ন্তর দিকে মিনিটখানেক তাকিয়ে থেকে তাকে প্রশ্নটা না করে পারলাম না। 'তোকে আজ যেন কেমন মনমরা মনে হচ্ছে? শরীর-টরীর খারাপ নয় তো?' জয়ন্ত তার অন্যমনস্ক ভাবটা কাটিয়ে নিয়ে একটা ছেলেমানুষি হাসি হেসে বল

14

ব্রাউন সাহেবের বাড়ি

17 November 2023
0
0
0

ব্রাউন সাহেবের ডায়রিটি হাতে আসার পর থেকেই ব্যাঙ্গালোর যাবার একটা সুযোগ খুঁজছিলাম। সেটা এল বেশ অপ্রত্যাশিত ভাবে। আমাদের বালিগঞ্জ স্কুলের বাৎসরিক রি-ইউনিয়নে দেখা হয়ে গেল আমার পুরনো সহপাঠী অনীকেন্দ্র

15

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ্

17 November 2023
0
0
0

আমার ঘটনাটা কেউ বিশ্বাস করবে বলে বিশ্বাস হয় না। না করুক—তাতে কিছু এসে যায় না। নিজে চোখে না দেখা অবধি অনেকেই অনেক কিছু বিশ্বাস করে না। যেমন ভূত। আমি অবিশ্যি ভূতের কথা লিখতে বসিনি। সত্যি বলতে কি, এটাক

16

বাতিকবাবু

17 November 2023
0
0
0

বাতিকবাবুর আসল নামটা জিজ্ঞেস করাই হয়নি। পদবি মুখার্জি। চেহারা একবার দেখলে ভোলা কঠিন। প্রায় ছ' ফুট লম্বা, শরীরে চর্বির লেশমাত্র নেই, পিঠটা ধনুকের মতো বাঁকা, হাতে পায়ে গলায় কপালে অজস্র শিরা উপশিরা চ

17

খগম

17 November 2023
0
0
0

পেট্রোম্যাক্সের আলোতে বসে ডিনার খাচ্ছি, সবেমাত্র ডালনার ডিমে একটা কামড় দিয়েছি, এমন সময় চৌকিদার লছমন জিজ্ঞেস করল, আপলোগ ইমলি-বাবাকো দর্শন নেহি করেঙ্গে ? বলতে বাধ্য হলাম যে, ইমলিবাবার নামটা আমাদের ক

18

বারীন ভৌমিকের ব্যারাম

17 November 2023
0
0
0

কন্‌ডাকটরের নির্দেশমতো 'ডি' কামরায় ঢুকে বারীন ভৌমিক তাঁর সুটকেসটা সিটের নীচে ঢুকিয়ে দিলেন। ওটা পথে খোলার দরকার হবে না। ছোট ব্যাগটা হাতের কাছে রাখা দরকার। চিরুনি, বুরুশ, টুথ-ব্রাশ, দাড়ি কামানোর সরঞ্

19

ভক্ত

17 November 2023
0
0
0

অরূপবাবু—অরূপরতন সরকার—পুরী এসেছেন এগারো বছর পরে। শহরে কিছু কিছু পরিবর্তন চোখে পড়েছে—কিছু নতুন বাড়ি, নতুন করে বাঁধানো কয়েকটা রাস্তা, দু-চারটে ছোট-বড় নতুন হোটেল—কিন্তু সমুদ্রের ধারটায় এসে বুঝতে পা

20

ফটিকচাঁদ

18 November 2023
0
0
0

ও যে কখন চোখ খুলেছে, ও জানে না। চোখে কিছু দেখার আগে ও বুঝেছে ওর শীত করছে, ওর গা ভিজে, ওর পিঠের তলায় ঘাস, ওর মাথার নীচে একটা শক্ত জিনিস। আর তার পরেই বুঝেছে ওর গায়ে অনেক জায়গায় ব্যথা। তবু ডান হাতটাক

21

বিষফুল

18 November 2023
0
0
0

*ওদিকে যাবেন না বাবু । জগন্ময়বাবু চমকে উঠলেন। কাছাকাছির মধ্যে যে আর কোনও লোক আছে সেটা উনি টের পাননি; তার ফলেই এই চমকানি। এবার দেখলেন তাঁর ডাইনে হাত দশেক দূরে দাঁড়িয়ে আছে একটি তেরো-চোদ্দো বছরের ছেল

22

অসমঞ্জবাবুর কুকুর

18 November 2023
0
0
0

হাসিমারায় বন্ধুর বাড়িতে ছুটি কাটাতে এসে অসমঞ্জবাবুর একটা অনেকদিনের শখ মিটল। ভবানীপুরের মোহিনীমোহন রোডে দেড়খানা ঘর নিয়ে থাকেন অসমঞ্জবাবু। লাজপত রায় পোস্টঅফিসের রেজিস্ট্রি বিভাগে কাজ করেন তিনি; কা

23

লোড শেডিং

18 November 2023
0
0
0

ফণীবাবু তাঁর গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ আগে থেকেই আঁচ করলেন যে তাঁর পাড়ায় লোড শেডিং হয়ে গেছে। আজ আপিসে ওভারটাইম করে বেরুতে বেরুতে হয়ে গেছে সোয়া আটটা। ডালহৌসি থেকে বাসে তাঁর পাড়ায় পৌঁছাতে লা

24

ক্লাস ফ্রেন্ড

19 November 2023
0
0
0

সকাল সোয়া নটা। মোহিত সরকার সবেমাত্র টাইয়ে ফাঁসটা পরিয়েছেন, এমন সময় তাঁর স্ত্রী অরুণা ঘরে ঢুকে বললেন, 'তোমার ফোন। *এই সময় আবার কে ? কাঁটায় কাঁটায় সাড়ে ন'টায় অফিসে পৌঁছানোর অভ্যাস মোহিত সরকা

25

সহদেববাবুর পোট্রেট

19 November 2023
0
0
0

যেটার আগে নাম ছিল ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, সেই মিরজা গালিব স্ট্রিটে ল্যাজারাসের নিলামের দোকানে প্রতি রবিবার সকালে সহদেববাবুকে দেখা যেতে শুরু করেছে মাস তিনেক হল। প্রথম অবস্থায় লোকাল ট্রেনে হেঁয়ালির বই, গো

26

মিঃ শাসমলের শেষ রাত্রি

19 November 2023
0
0
0

শাসমল আরাম কেদারাটায় গা এলিয়ে দিয়ে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন । মোক্ষম জায়গা বেছেছেন তিনি—উত্তর বিহারের এই ফরেস্ট বাংলো। এর চেয়ে নিরিবিলি মিঃ নিরাপদ নিরুপদ্রব জায়গা আর হয় না। ঘরটিও দিব্যি। স

27

পিন্টুর দাদু

19 November 2023
0
0
0

পিন্টুর আপসোস এইখানেই। তার বন্ধুদের মধ্যে অনেকেরই দাদু আছে, কিন্তু কই, তাদের কেউই তো তার নিজের দাদুর মতো নয়। রাজুর দাদুকে সে দেখেছে নিজে হাতে লাল আর বেগুনি কাগজের ফিতে পর পর জুড়ে রাজুর ঘুড়ির জন্য ল

28

বৃহচ্চঞ্চু

19 November 2023
0
0
0

ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রিটে তাঁর আপিসের যেখানে বসে তুলসীবাবু কাজ করেন, তার পাশেই জানালা দিয়ে পশ্চিম আকাশে অনেকখানি দেখা যায়। সেই আকাশে এক বর্ষাকালের সকালে যখন জোড়া রামধনু দেখা দিল, ঠিক তখনই তুলসীবাবুর

29

চিলেকোঠা

19 November 2023
0
0
0

ন্যাশনাল হাইওয়ে নাম্বার ফর্টি থেকে ডাইনে রাস্তা ধরে দশ কিলোমিটার গেলেই ব্রহ্মপুর। মোড়টা আসার কিছু আগেই আদিত্যকে জিজ্ঞেস করলাম, 'কী রে, তোর জন্মস্থানটা একবার ঢুঁ মেরে যাবি নাকি ? সেই যে ছেড়েচিস, তার

30

ভূতো

19 November 2023
0
0
0

নবীনকে দ্বিতীয়বার হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হল। অক্রূরবাবুর মন ভেজানো গেল না। উত্তরপাড়ার একটা ফাংশনে নবীন পেয়েছিল অজুর চৌধুরীর আশ্চর্য ক্ষমতার পরিচয়। ভেনট্রিলোকুইজ্‌জ্ম। খেলার নামটা নবীনের জানা ছিল না।

31

অতিথি

19 November 2023
0
0
0

মন্টু ক'দিন থেকেই শুনেছে তার মা-বাবার মধ্যে কথা হচ্ছে দাদুকে নিয়ে। মন্টুর ছোটদাদু, মা-র ছোটমামা । দাদুর চিঠিটা যখন আসে তখন মন্টু বাড়ি ছিল। মা চিঠি পড়ে প্রথমে আপন মনে বললেন, 'বোঝো ব্যাপার।' তারপর ব

32

ম্যাকেঞ্জি ফ্রুট

19 November 2023
0
0
0

ম্যাকেঞ্জি সাহেবের বাগানে আশ্চর্য গাছটা আবিষ্কার করলেন নিশিকান্তবাবু। সাহেব যে গাছপালা ভালবাসতেন সেটা করিমগঞ্জে এসেই শুনেছিলেন নিশিকান্তবাবু। ভারত স্বাধীন হবার বছর সাতেকের মধ্যেই সাহেব অস্ট্রেলিয়ায়

33

ফার্স্ট ক্লাস কামরা

20 November 2023
0
0
0

আগের আমলের ফার্স্ট ক্লাস কামরা-বাথরুম সমেত ফোর বার্থ বা সিক্স বার্থ কম্পার্টমেন্ট-আজকাল উঠেই গেছে। এটা যে সময়ের গল্প, অর্থাৎ নাইনটিন সেভেনটি-তখনও মাঝে মাঝে এক-আধটা এই ধরনের কামরা কী করে জানি ট্রেনের ম

34

ডুমনিগড়ের মানুষখেকো

20 November 2023
0
0
0

'আমি তখন ছিলাম ডুমনিগড় নেটিভ স্টেটের ম্যানেজার', বললেন তারিণীখুড়ো। 'ডুমনিগড় ম্যাপে আছে?' জিজ্ঞেস করল ন্যাপলা। ন্যাপলার মুখে কিছু আটকায় না। 'তোর কি ধারণা ম্যাপে যা আছে তার বাইরে আর কিছু নেই?' চোখ-কান

35

ধাপ্পা

20 November 2023
0
0
0

'চার্লস ওয়েকম্যানের 'হিস্ট্রি অফ ম্যাজিক' আপনার ক' ভল্যুম ছিল?' সমরেশ ব্রহ্ম ইন্টারন্যাশনাল ম্যাজিক সার্কেলের চিঠির উত্তরে সইটা করে মুখ তুলে চাইল মহিমের দিকে। তার বন্ধু অধ্যাপক রণেন সেনগুপ্তর ছেলে মহ

36

কনওয়ে কাস্লের প্রেতাত্মা

20 November 2023
0
0
0

তারিণীখুড়ো তাঁর এক্সপোর্ট কোয়ালিটি বিড়িতে দুটো টান দিয়ে বললেন, 'ভূতের গল্প অনেকে বলতে পারে, তবে পার্সোনাল এক্সপিরিয়েন্স থেকে বলা গল্পের জাতই আলাদা। সেটা আর কজন পারে বলো।' 'আপনি পারেন?' প্রশ্ন করল ন্য

37

অঙ্ক স্যার, গোলাপীবাবু আর টিপু

20 November 2023
0
0
0

টিপু ভূগোলের বইটা বন্ধ করে ঘড়ির দিকে দেখল। সাতচল্লিশ মিনিট পড়া হয়ে গেছে একটানা। এখন তিনটে বেজে তেরো মিনিট। এবার যদি ও একটু ঘুরে আসে তা হলে ক্ষতি কী? ঠিক এমনি সময় তো সেদিন লোকটা এসেছিল। সে তো বলেছিল

38

শেঠ গঙ্গারামের ধনদৌলত

20 November 2023
0
0
0

'আমার এখন যে চেহারা দেখছিস,' বললেন তারিণীখুড়ো, 'তা থেকে আমার ইয়াং বয়সের চেহারা তোরা কল্পনাই করতে পারবি না।' 'কীরকম চেহারা ছিল আপনার, খুড়ো?' জিজ্ঞেস করল ন্যাপলা, 'ধর্মেন্দরের মতো?' 'য্যা য্যাঃ!' বললে

39

স্পটলাইট

20 November 2023
0
0
0

ছোটনাগপুরের এই ছোট্ট শহরটায় পুজোর ছুটি কাটাতে আমরা আগেও অনেকবার এসেছি। আরও বাঙালিরা আসে; কেউ কেউ নিজেদের বাড়িতে থাকে, কেউ কেউ বাড়ি-বাংলো-হোটেল ভাড়া করে থাকে, দিন দশেকে অন্তত মাস ছয়েক আয়ু বাড়িয়ে নিয়ে

40

তারিণীখুড়ো ও বেতাল

20 November 2023
0
0
0

শ্রাবণ মাস, দিনটা ঘোলাটে, সকাল থেকে টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে, তারই মধ্যে সন্ধের দিকে তারিণীখুড়ো এসে হাজির। হাতের ভিজে জাপানি ছাতাটা সড়াত করে বন্ধ করে দরজার পাশটায় দাঁড় করিয়ে রেখে তক্তপোশে তাঁর জায়গাটায়

41

বহুরূপী

21 November 2023
0
0
0

নিউ মহামায়া কেবিনের একটি চেয়ার দখল করে হাফ কাপ চা আর আলুর চপ অর্ডার দিয়ে নিকুঞ্জ সাহা একবার চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিল। তার চেনা-পরিচিতের কেউ এসেছে কি? হ্যাঁ, এসেছে বইকী। ওই তো রসিকবাবু, আর ওই যে শ্রীধর।

42

মানপত্র

21 November 2023
0
0
0

শতদল সংস্থার সেক্রেটারি প্রণবেশ দত্ত বিস্ফোরক সংবাদটি ঘোষণা করবার পর উপস্থিত সদস্যদের মুখ দিয়ে প্রায় এক মিনিট কোনও কথা বেরোল না। ক্লাবঘরে জরুরি মিটিং বসেছে নববর্ষের পাঁচদিন আগে। মিটিং-এর উদ্দেশ্য প্রণ

43

অপদার্থ

21 November 2023
0
0
0

অপদার্থ কথাটা অনেক লোক সম্বন্ধে অনেক সময়ই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন আমাদের চাকর নবকেষ্ট। 'নব, তুই একটা অপদার্থ'-এই কথাটা ছেলেবেলায় মার মুখে অনেকবার শুনেছি। নব কিন্তু কাজ ভালই করত; দোষের মধ্যে সে ছিল

44

সাধনবাবুর সন্দেহ

21 November 2023
0
0
0

সাধনবাবু একদিন সন্ধ্যাবেলা কাজ থেকে ফিরে তাঁর ঘরে ঢুকে দেখলেন মেঝেতে একটা বিঘতখানেক লম্বা সরু গাছের ডাল পড়ে আছে। সাধনবাবু পিটপিটে স্বভাবের মানুষ। ঘরে যা সামান্য আসবাব আছে-খাট, আলমারি, আলনা, জলের কুঁজো

45

গগন চৌধুরীর স্টুডিও

21 November 2023
0
0
0

একটা ফ্ল্যাট দিনের বেলা দেখে পছন্দ হলেও, সেখানে গিয়ে থাকা না অবধি তার সুবিধে-অসুবিধেগুলো ঠিক বোঝা যায় না। সুধীন সরকার এইটেই উপলব্ধি করল ভবানীপুরের এই ফ্ল্যাটে বসবাস আরম্ভ করে। এই একটা ব্যাপারেই ভাগ্যল

46

লখনৌর ডুয়েল

21 November 2023
0
0
0

'ডুয়েল মানে জানিস?' জিজ্ঞেস করলেন তারিণীখুড়ো। 'বাঃ, ডুয়েল মানে জানব না?' বলল ন্যাপলা। 'ডুয়েল রোল, মানে দ্বৈত ভূমিকা। সন্তোষ দত্ত গুপী গাইনে ডুয়েল রোল করেছিলেন-হাল্লার রাজা, শুণ্ডীর রাজা।' 'সে ডুয়েলে

47

ধুমলগড়ের হান্টিং লজ

21 November 2023
0
0
0

'মাথায় অনেকরকম উদ্ভট শখ চাপে মানুষের', বললেন তারিণীখুড়ো, 'কিন্তু আমার যেমন চেপেছে, তেমন কজনের চাপে জানি না।' আমরা পাঁচজন ঘিরে বসেছি খুড়োকে। বাইরে এক পশলা বেশ ভাল বৃষ্টি হয়ে গিয়ে এখন সেটা অবিরাম ঝিরঝি

48

লাখপতি

21 November 2023
0
0
0

ত্রিদিব চৌধুরী আর থাকতে না পেরে বিরক্তভাবে বেয়ারাকে ডাকার বোতামটা টিপলেন। কিছুক্ষণ থেকেই তিনি অনুভব করছেন যে, কামরাটা যত ঠাণ্ডা থাকার কথা মোটেই তত ঠাণ্ডা নয়। অথচ তাঁর তিন সহযাত্রীই দিব্যি নাক ডাকিয়ে ঘ

49

খেলোয়াড় তারিণীখুড়ো

21 November 2023
0
0
0

ডিসেম্বরের ঊনত্রিশে, শীতটা পড়েছে বেশ জাঁকিয়ে। সন্ধেবেলা তারিণীখুড়ো এলেন গলায় আর মাথায় মাফলার জড়িয়ে। 'তোরা মাঠে যাচ্ছিস না খেলা দেখতে?' তক্তপোষে বসেই প্রশ্ন করলেন খুড়ো, 'নাকি দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাবার ত

50

টলিউডে তারিণীখুড়ো

21 November 2023
0
0
0

তাকিয়াটাকে কোলের উপর টেনে নিয়ে আরও জমিয়ে বসে ঝুঁকে পড়ে তারিণীখুড়ো তাঁর গল্প আরম্ভ করলেন। - আমার তখন তেইশ বছর বয়স, তবে একটা তেকোনা ফ্রেঞ্চকাট গোছের দাড়ি রেখেছিলাম বলে মনে হত তেত্রিশ। বেয়াল্লিশ সালের ক

51

আমি ভূত

22 November 2023
1
0
0

আমি ভূত। আজ থেকে ঠিক সাড়ে তিন বছর আগে আমি জ্যান্ত ছিলাম। সেই সময় এই দেওঘরের এই বাড়িতেই আগুনে পুড়ে আমার জ্যান্ত অবস্থার শেষ হয়। এই বাড়ির নাম লিলি ভিলা। আমি এখানে এসেছিলাম আমার এক বন্ধুর সঙ্গে ছুটি কাটা

52

বামধনের বাঁশি

22 November 2023
0
0
0

রামধনের লোকটাকে চেনা চেনা লাগায় আরেকটু কাছে গিয়ে একটা গাছের আড়াল থেকে দেখে তার বুকের ভিতরটা হিম হয়ে গেল। দশ বছর পেরিয়ে গেলেও চিনতে কোনও অসুবিধা নেই। এই সেই খগেশবাবু। খগেশ খাস্তগির, পুরনো ইটপাথর নিয়ে ঘ

53

জুটি

22 November 2023
0
0
0

'আজ আমি একজন ফিল্মস্টারের কথা বলতে যাচ্ছি,' চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন তারিণীখুড়ো। 'কে তিনি? তাঁর নাম কী?' আমরা সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠলাম। 'তাঁর নাম তোরা শুনিসনি,' বললেন তারিণীখুড়ো। 'তিনি যখন রিটায়ার করেন তখন

54

মাস্টার অংশুমান

22 November 2023
0
0
0

সেই সকালটার কথা আমি কোনওদিন ভুলতে পারব না। সেদিন ছিল রবিবার। তিনদিন ধরে সমানে বাদলা করে সেদিনই প্রথম ঝলমলে রোদ বেরিয়েছে। আমি একটা অঙ্ক কষে আমার খাতাটা বন্ধ করেছি এমন সময় বিশুদা এল। বিশুদা, বিশ্বনাথ গা

55

নিধিরামের ইচ্ছাপূরণ

22 November 2023
0
0
0

কোনও মানুষই তার নিজের অবস্থা সম্পর্কে ষোলো আনা সন্তুষ্ট বোধ করে না। কোনও-না-কোনও ব্যাপারে একটা খুঁতখুঁতেমির ভাব প্রায় সবার মধ্যেই থাকে। রাম ভাবে তার শরীরে আরও মাংস হল না কেন-হাড়গুলো বড্ড বেশি বেরিয়ে থ

56

কানাইয়ের কথা

22 November 2023
0
0
0

নসু কবরেজ প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে বলরামের নাড়ি ধরে বসে রইলেন। শিয়রের কাছে দাঁড়িয়ে বলরামের সতেরো বছরের ছেলে কানাই কবরেজের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে আছে। আজ দশদিন হল তার বাপের অসুখ। কোনও কিছু খাবারে তার রুচি নেই;

57

রতন আর লক্ষ্মী

23 November 2023
0
0
0

ঠিক কখন থেকে রতনের মনটা খুশিতে ভরে আছে সেটা রতন জানে। দশদিন আগে ছিল চৈত্র সংক্রান্তি। রতন থাকে শিমুলিতে। সেখান থেকে চার ক্রোশ দূরে উজলপুরে সংক্রান্তির খুব বড় মেলা হয়। রতন গিয়েছিল সেই মেলা দেখতে। শুধু

58

গঙ্গারামের কপাল

23 November 2023
0
0
0

নদীর ধারে খোলামকুচি দিয়ে ব্যাঙবাজি খেলতে খেলতে হঠাৎ গঙ্গারামের চোখে পড়ল পাথরটা। এ নদীতে জল নেই বেশি; যেখানে সবচেয়ে গভীর সেখানেও হাঁটু ডোবে না। জলটা কাচের মতো স্বচ্ছ, তাই তার নীচে লাল নীল সবুজ হলদে খয়ে

59

সুজন হরবোলা

23 November 2023
0
0
0

সুজনের বাড়ির পিছনেই ছিল একটা সজনে গাছ। তাতে থাকত একটা দোয়েল। সুজনের যখন আট বছর বয়স তখন একদিন দোয়েলের ডাক শুনে সে ভাবল-আহা, এ পাখির ডাক কেমন মিষ্টি। মানুষে কি কখনও এমন ডাক ডাকতে পারে? সুজন সেইদিন থেকে

60

নিতাই ও মহাপুরুষ

23 November 2023
0
0
0

কোনও এক জ্ঞানী ব্যক্তি বলে গেছেন যে মানুষের মধ্যে বেশিরভাগই মাঝারি দলে পড়ে। কথাটা হয়তো সত্যি, কিন্তু নিতাইকে মাঝারিও বলা চলে না। অনেক ব্যাপারেই সে অত্যন্ত খাটো। দেহের দিক দিয়ে যেমন, মনের দিক দিয়েও ছেল

61

মহারাজা তারিণীখুড়ো

23 November 2023
0
0
0

'আজ আপনার কপালে ভ্রুকুটি কেন খুড়ো?' জিজ্ঞেস করল ন্যাপলা। এটা অবিশ্যি আমিও লক্ষ করেছিলাম। খুড়ো তক্তপোশের উপর বাবু হয়ে বসে ডান হাতটা পায়ের পাতায় রেখে অল্প অল্প দুলছেন, তাঁর কপালে ভাঁজ। খুড়ো বললেন, 'এই

62

হাউই

23 November 2023
0
0
0

জয়ন্ত নন্দী : ছোটদের পত্রিকা 'হাউই'-এর সম্পাদক তরুণ সান্যাল : জয়ন্তর বন্ধু তিনকড়ি ধাড়া: 'হাউই'-এর দপ্তরের কর্মচারী। কাজ-বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করা তন্ময় সেনগুপ্ত: লেখক মুকুল : দপ্তরের কর্মচারী ধনঞ্জয়/

63

প্রতিকৃতি

23 November 2023
0
0
0

রঞ্জন পুরকায়স্থ কলকাতার একজন নামকরা চিত্রকর। শুধু কলকাতা কেন, তাঁর খ্যাতি পশ্চিমবাংলার বাইরে সারা ভারতবর্ষেই ছড়িয়ে পড়েছে-বোম্বাই, মাদ্রাজ, দিল্লি, ব্যাঙ্গালোর, হায়দ্রাবাদে তাঁর আঁকা ছবির প্রদর্শনী হয়ে

64

তারিণীখুড়ো ও ঐন্দ্রজালিক

23 November 2023
0
0
0

'কই, আর সব কই?' বললেন তারিণীখুড়ো। 'সব্বাইকে খবর দে, নইলে গল্প জমবে কী করে?' আমি বললাম, 'খবর পাঠানো হয়ে গেছে খুড়ো। এই এসে পড়ল বলে!' 'তা হলে এই ফাঁকে চা-টা বলে দে।' বললাম, 'তাও বলা হয়ে গেছে-দুধ চিনি ছা

65

অনুকূল

23 November 2023
0
0
0

'এর একটা নাম আছে তো?' নিকুঞ্জবাবু জিজ্ঞেস করলেন। 'আজ্ঞে হ্যাঁ, আছে বইকী।' 'কী বলে ডাকব?' 'অনুকূল।' চৌরঙ্গিতে রোবট সাপ্লাই এজেন্সির দোকানটা খুলেছে মাস ছয়েক হল। নিকুঞ্জবাবুর অনেকদিনের শখ একটা যান্ত্

66

কাকতাড়ুয়া

24 November 2023
0
0
0

মৃগাঙ্কবাবুর সন্দেহটা যে অমূলক নয় সেটা প্রমাণ হল পানাগড়ের কাছাকাছি এসে। গাড়ির পেট্রল ফুরিয়ে গেল। পেট্রলের ইনডিকেটরটা কিছুকাল থেকেই গোলমাল করছে, সে-কথা আজও বেরোবার মুখে ড্রাইভার সুধীরকে বলেছেন, কিন্তু

67

নরিস সাহেবের বাংলো

24 November 2023
0
0
0

তারিণীখুড়োকে ঘিরে আমরা পাঁচ বন্ধু বসেছি, বাদলা দিন, সন্ধে হব-হব, খুড়োর চা খাওয়া হয়ে গেছে। এবার বিড়ি ধরিয়ে হয়তো গল্প শুরু করবেন। খুড়ো এলে সন্ধেতেই আসেন, আর এলেই একটি করে গল্প লাভ হয় আমাদের। সবই খুড়োর জ

68

কুটুম-কাটাম

24 November 2023
0
0
0

'কোথায় পেলি এটা?' 'আমাদের বাড়ির কাছেই ছিল,' বলল দিলীপ। 'একটা জমি পড়ে আছে কাঠা তিনেক, তাতে কয়েকটা গাছ আর ঝোপঝাড়। একটা গাছের নীচে এটা পড়ে ছিল। অলোকের বাড়িতে সেদিন দেখছিলাম একটা গাছের গুঁড়িকে কেটে তার উপ

69

টেলিফোন

24 November 2023
0
0
0

ক্রিং-ক্রিং... ক্রিং-ক্রিং... ক্রিং-ক্রিং... বীরেশবাবু বিরক্ত হয়ে খাটের পাশের টেবিলের ওপর রাখা টেলিফোনটার দিকে দেখলেন। টেলিফোনের পাশেই ঘড়ি, তাতে বারোটা বাজে। রাত বারোটা। বীরেশবাবু সবে হাতের বইটা বন্ধ

70

গণেশ মুৎসুদ্দির পোট্রেট

24 November 2023
0
0
0

সুখময় সেনের বয়স পঁয়ত্রিশ। এই বয়সেই সে চিত্রকর হিসাবে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে। পোর্ট্রেটেই তার দক্ষতা বেশি। সমঝদারেরা বলে সুখময় সেনের আঁকা কোনও মানুষের প্রতিকৃতি দেখলে সেই মানুষের জ্যান্ত রূপ দেখতে পাওয়

71

মৃগাঙ্কবাবুর ঘটনা

24 November 2023
0
0
0

মৃগাঙ্কবাবু তাঁর সহকর্মী সলিল বসাকের কাছ থেকে প্রথম জানতে পারলেন যে বাঁদর থেকে মানুষের উদ্ভব হয়েছে। এ খবর আজকের দিনে শিক্ষিত লোকমাত্রই জানে, কিন্তু ঘটনাচক্রে খবরটা মৃগাঙ্কবাবুর গোচরে আসেনি। আসলে তাঁর

72

নতুন বন্ধু

24 November 2023
0
0
0

বর্ধমান স্টেশনের রেস্টোর‍্যান্টে ভদ্রলোক নিজেই যেচে এসে আলাপ করলেন। ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি আর গোঁফ, মোটামুটি আমারই বয়সী-অর্থাৎ বছর চল্লিশ-বেয়াল্লিশ-বেশ হাসিখুশি অমায়িক হাবভাব। বারোটা বাজে, তাই লাঞ্চটা সেরে ন

73

শিশু সাহিত্যিক

24 November 2023
0
0
0

ছোটদের মাসিক পত্রিকা 'বহুরূপী' এক বছর হল বেরোচ্ছে। সম্পাদক সুপ্রকাশ সেনগুপ্ত আপ্রাণ চেষ্টা করেন কাগজটাকে ভাল করতে। টাকার জোর নেই, তাই কাজটা সহজ নয়। গ্রাহক সংখ্যা দেড় হাজারের মতো; বিজ্ঞাপন যা আসে তার থ

74

মহিম সান্যালের ঘটনা

24 November 2023
0
0
0

তারিণীখুড়ো তাকিয়াটা বুকের কাছে টেনে নিয়ে বললেন, 'চমকলালের কথা তো তোদের বলেছি, তাই না?' 'হ্যাঁ হ্যাঁ,' বলল ন্যাপলা। 'সেই ম্যাজিশিয়ান তো? যাঁর আপনি ম্যানেজার ছিলেন?' 'হ্যাঁ। কিন্তু আরেকজন জাদুকর আছেন

75

গণৎকার তারিণীখুড়ো

24 November 2023
0
0
0

তারিণীখুড়োর এক ভাইপো এক চা কোম্পানিতে ভাল কাজ করে, সে খুড়োকে এক টিন স্পেশাল কোয়ালিটির চা দিয়েছে। খুড়ো টিনটা আমার হাতে চালান দিয়ে বললেন, 'এটা খোলাবার ব্যবস্থা কর; আজ তোদের চা না খেয়ে এইটে খাব।' বৈশাখ

76

গল্পবলিয়ে তারিণীখুড়ো

24 November 2023
0
0
0

'তোরা তো আমাকে গল্পবলিয়ে বলেই জানিস', বললেন তারিণীখুড়ো, 'কিন্তু এই গল্প বলে যে আমি এককালে রোজগার করেছি সেটা কি জানিস?' 'না বললে জানব কী করে?' বলল ন্যাপলা। 'সে আজ থেকে বাইশ বছর আগের কথা,' বললেন তারিণ

77

নিতাইবাবুর ময়না

24 November 2023
0
0
0

নিতাইবাবুর অনেকদিনের শখ একটা ময়না কেনার। তাঁর বন্ধু শশাঙ্ক সেনের বাড়িতে একটা ময়না আছে। সেটা হেন বাংলা কথা নেই যে বলে না। তার কথা শুনতেই নিতাইবাবু মাসে অন্তত তিনবার করে শশাঙ্কবাবুর বাড়িতে যান। সেদিন তো

78

রন্টুর দাদু

24 November 2023
0
0
0

রন্টুর বয়স পনেরো, কিন্তু এর মধ্যেই তার গানের গলা হয়েছে চমৎকার। সে সকালে ওস্তাদের কাছে একঘণ্টা গান শেখে। যে তার গান শোনে সেই বলে, 'এ ছেলে আর কয়েক বছরের মধ্যেই আসরে গান গাইবে।' এ গুণটা যে সে কোথা থেকে প

79

সহযাত্রী

24 November 2023
0
0
0

ত্রিদিববাবুর সাধারণত একটা হালকা বই পড়েই সময়টা কেটে যায়। কলকাতা থেকে দিল্লি ট্রেনে যাওয়া। কাজের জন্যই যেতে হয় দু মাসে অন্তত একবার। একটা ইলেকট্রনিক্স কোম্পানিতে উচ্চপদস্থ কর্মচারী তিনি, হেড আপিস দিল্লিত

80

ব্রজবুড়ো

25 November 2023
0
0
0

শঙ্কর চৌধুরী আধখানা হাতের রুটি ছিঁড়ে ডালে চুবিয়ে মুখে পুরে একবার পাশে বসা ছেলের দিকে চেয়ে নিলেন। তারপর চিবোতে চিবোতে বললেন, 'তোকে একটা কথা বলব-বলব করেও বলা হয়নি। আমাদের ডাইনে একটা বাড়ির পরে একটা দোতলা

81

দুই বন্ধু

25 November 2023
0
0
0

মহিম বাঁ হাতের কবজি ঘুরিয়ে হাতের ঘড়িটার দিকে এক ঝলক দৃষ্টি দিল। বারোটা বাজতে সাত। কোয়ার্টজ ঘড়ি-সময় ভুল হবে না। সে কিছুক্ষণ থেকেই তার বুকের মধ্যে একটা স্পন্দন অনুভব করছে, যেটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। বিশ বছ

82

শিল্পী

25 November 2023
0
0
0

অবনীশ ছবিটার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল। অয়েল পেন্টিং। একজন মাঝবয়সি সুপুরুষ ভদ্রলোকের পোর্ট্রেট। অবনীশের স্টুডিওর এক কোনায় আরও আট-দশটা ছবির পিছনে দাঁড় করানো ছিল। অবনীশের আঁকা প্রথম অয়েল পোর্ট্রেট। গভর্নমে

83

অক্ষয়বাবুর শিক্ষা

25 November 2023
0
0
0

অক্ষয়বাবু ছেলের হাত থেকে লেখাটা ফেরত নিলেন। 'কী রে-এটাও চলবে না?' ছেলে মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিল-না, চলবে না। এটা অক্ষয়বাবুর পাঁচ নম্বর গল্প যেটা ছেলে নাকচ করে দিল। অক্ষয়বাবুর ছেলের নাম অঞ্জন। তার বয়স চ

84

প্রসন্ন স্যার

25 November 2023
0
0
0

অর্ধেন্দু সেনগুপ্ত সাতদিনের ছুটি নিয়ে শিমুলতলায় এসেছে। সে একটা ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে ভাল চাকরি করে, যদিও মাত্র পঁচিশ বছর বয়স। চেহারা সুশ্রী, চলনে বলনে রীতিমতো স্মার্ট। ব্যাচেলার হিসেবে তার এই শেষ ছুটি ভ

85

অভিরাম

25 November 2023
0
0
0

'তোমার নাম কী?' 'অভিরাম সাউ, বাবু।' 'তোমার বাড়ি কোথায়?' 'উলুইপুর গাঁয়ে বাবু। উড়িষ্যা।' 'বাড়িতে আছে কে?' 'আমার দাদা আছে, বউদি আছে, দুই ভাইপো আছে।' 'তোমার বাড়ি যেতে হয় না?' 'কালে ভদ্রে বাবু। আমি

86

ব্লু-জন গহ্বরের বিভীষিকা (অনুবাদ)

25 November 2023
0
0
0

    ১৯০৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সাউথ কেনসিংটনের ৩৬ নং আপার কভেন্ট্রি ফ্ল্যাটে যক্ষ্মা রোগে ডাঃ জেমস হার্ডকালের মৃত্যুর পর, তাঁর কাগজপত্রের মধ্যে নিম্নলিখিত কাহিনীটি পাওয়া যায়। যাঁরা হার্ডকাফ্লকে ঘনিষ্ঠভাব

87

মোল্লা নাসিরুদ্দিনের গল্প (অনুবাদ)

25 November 2023
0
0
0

☆☆☆ নাসিরুদ্দিনের বন্ধুরা একদিন তাকে বললে, 'চলো, আজ রাত্রে আমরা তোমার বাড়িতে খাব।' 'বেশ, এসো আমার সঙ্গে', বললে নাসিরুদ্দিন। বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে সে বললে, 'তোমরা একটু সবুর করো, আমি আগে গিন্নিকে বলে আ

88

মোল্লা নাসিরুদ্দিনের আরো গল্প (অনুবাদ)

25 November 2023
0
0
0

একদিন এক জ্ঞাতি এসে নাসিরুদ্দিনকে একটা হাঁস উপহার দিলে। নাসিরুদ্দিন ভারী খুশি হয়ে সেটার মাংস রান্না করে জ্ঞাতিকে খাওয়ালে। কয়েকদিন পরে মোল্লাসাহেবের কাছে একজন লোক এসে বললে, 'আপনাকে যিনি হাঁস দিয়েছিলে

89

মোল্লা নাসিরুদ্দিনের আরো গল্প (অনুবাদ)

26 November 2023
0
0
0

রাজদরবারে নাসিরুদ্দিনের খুব খাতির। একদিন খুব খিদের মুখে বেগুন ভাজা খেয়ে ভারী খুশি হয়ে রাজা নাসিরুদ্দিনকে বললেন, 'বেগুনের মতো এমন সুস্বাদু খাদ্য আর আছে কি?' 'বেগুনের জবাব নেই,' বললে নাসিরুদ্দিন। রাজ

90

আবার মোল্লা নাসিরুদ্দিন (অনুবাদ)

26 November 2023
0
0
0

রাজামশাই একদিন নাসিরুদ্দিনকে ডেকে বললেন, 'বনে গিয়ে ভাল্লুক মেরে আনো।' নাসিরুদ্দিন রাজার আদেশ অমান্য করে কী করে? অগত্যা তাকে যেতেই হল। বন থেকে ফেরার পর একজন তাকে জিজ্ঞেস করলে, 'কেমন হল শিকার, মোল্লাসাহ

91

আর এক দফা মোল্লা নাসিরুদ্দিন (অনুবাদ)

26 November 2023
1
0
0

☆☆☆ নাসিরুদ্দিন রাস্তা দিয়ে হাঁটছে, পাশে ফুলে ফলে ভরা বাগিচা দেখে তার মধ্যে গিয়ে ঢুকল। প্রকৃতির শোভাও উপভোগ করা হবে, শর্টকাটও হবে। কিছুদূর যেতে না যেতেই নাসিরুদ্দিন এক গর্তের মধ্যে পড়ল, আর পড়তেই তার

92

ব্রেজিলের কালো বাঘ (অনুবাদ)

26 November 2023
0
0
0

মেজাজটা বনেদি, প্রত্যাশা অসীম, অভিজাত বংশের রক্ত বইছে ধমনীতে, অথচ পকেটে পয়সা নেই, রোজগারের কোনও রাস্তা নেই-একজন যুবকের পক্ষে এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে? আমার বাবা ছিলেন সহজ, সরল মানুষ। তাঁর দাদা

93

মঙ্গলই স্বর্গ (অনুবাদ)

26 November 2023
0
0
0

মহাকাশ থেকে রকেটটা নেমে আসছে তার গন্তব্যস্থলের দিকে। এতদিন সেটা ছিল তারায় ভরা নিঃশব্দ নিকষ কালো মহাশূন্যে একটি বেগবান ধাতব উজ্জ্বলতা। অগ্নিগর্ভ রকেটটা নতুন। এর দেহ থেকে নিঃসৃত হচ্ছে উত্তাপ। এর কক্ষের

94

ঈশ্বরের ন' লক্ষ কোটি নাম (অনুবাদ)

27 November 2023
0
0
0

'আপনাদের অর্ডারটা একটু অস্বাভাবিক ধরনের', বিস্ময়ের মাত্রাটা যথাসম্ভব কমিয়ে বললেন ডাঃ ওয়াগনার- 'আমি যতদূর জানি, এর আগে কোনও তিব্বতি গুম্ফা থেকে অটোমেটিক সিকুয়েন্স কম্পিউটারের জন্য অর্ডার আসেনি। আপনাদের

95

ইহুদির কবচ (অনুবাদ)

27 November 2023
0
0
0

প্রাচ্যের পুরাতত্ত্ব সম্পর্কে আমার বিশিষ্ট বন্ধু ওয়র্ড মর্টিমারের জ্ঞান ছিল অসামান্য। সে এ বিষয়ে বিস্তর প্রবন্ধ লিখেছিল, মিশরের ভ্যালি অফ দ্য কিংস-এ খননকার্য তদারকের সময় একটানা দু' বছর থিবিসের একটি সম

96

ময়ূরকণ্ঠি জেলি (অনুবাদ)

27 November 2023
0
0
0

শশাঙ্ক টেবিলের উপর থেকে খাতাটা তুলে নিল। নীল মলাটের ছোট সাইজের সাধারণ নোটবুক! দাম বোধহয় আজকের দিনে আনা আষ্টেক। কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে শশাঙ্ক এরকম নোটবুক ব্যবহার করেছে, তখন দাম ছিল দু'আনা। মনে আছে

97

সবুজ মানুষ (অনুবাদ)

27 November 2023
0
0
0

আমি যার কথা লিখতে যাচ্ছি তার সঙ্গে সবুজ মানুষের কোনও সম্পর্ক আছে কিনা, তা আমার সঠিক জানা নেই। সে নিজে পৃথিবীরই মানুষ, এবং আমারই একজন বিশিষ্ট বন্ধু-স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক-প্রফেসর নারা

98

আর্যশেখরের জন্ম ও মৃত্যু (অনুবাদ)

27 November 2023
1
0
0

অনেকের মতে আর্যশেখর ছিলেন যাকে ইংরাজিতে বলে চাইল্ড প্রডিজি। তাঁর যখন দশ বছর বয়স তখন একদিন স্টেটসম্যান পত্রিকার প্রথম পাতায় নীচের দিকে এক লাইন লেখা তাঁর চোখে পড়ল-সান রাইজেজ টুডে অ্যাট সিক্স থার্টিন এ এ

99

পিকুর ডায়রি (অনুবাদ)

27 November 2023
0
0
0

আমি ডাইরি লিখছি। আমি আমার নীল নতুন নীল খাতায় ডাইরি লিখছি। আমি আমার বিছানার উপর বসে লিখছি। দাদুও ডাইরি রোজ লেখে কিন্তু এখন না এখন অসুক করেছিল তাই। সেই অসুকটার নাম আমি জানি আর নামটা করোনানি থমবোসি। বাবা

---