আমি ভূত। আজ থেকে ঠিক সাড়ে তিন বছর আগে আমি জ্যান্ত ছিলাম। সেই সময় এই দেওঘরের এই বাড়িতেই আগুনে পুড়ে আমার জ্যান্ত অবস্থার শেষ হয়। এই বাড়ির নাম লিলি ভিলা। আমি এখানে এসেছিলাম আমার এক বন্ধুর সঙ্গে ছুটি কাটাতে। একদিন স্টোভে চা করতে গিয়ে স্টোভ ফেটে আমার কাপড়ে আগুন ধরে যায়! আমার মুখেও আগুন লেগেছিল এইটুকু আমার মনে আছে। তারপর আর কিছু মনে নেই। তারপর থেকে আমি এই বাড়িরই বাসিন্দা হয়ে গেছি। আমার চেহারা এখন কীরকম তা আমি নিজে জানি না, কারণ আয়নায় ভূতের ছায়া পড়ে না। জলেও যে পড়ে না সেটা বাঁডুজোদের পুকুরে পরখ করে দেখেছি। খুব যে আহামরি চেহারা নয় সেটা বুঝেছি একটা ঘটনা থেকে। লিলি ভিলায় দু' বছর আগে একটা পরিবার ছুটি কাটাতে এসেছিল। সেই পরিবারের কর্তা একদিন আমার মুখোমুখি পড়ে গিয়ে চোখ কপালে তুলে ভিরমি গিয়েছিলেন। দোষটা আমারই; ভূত দেখা দেবে কি অদৃশ্য থাকবে সেটা ভূতের মর্জির উপরই নির্ভর করে। আমি অদৃশ্য থাকতে চেয়েছিলাম, কিন্তু অন্যমনস্কতার ফলে ভুল করে দেখা দিয়ে ফেলেছিলাম। এই ঘটনার পরে বুঝতে পেরেছিলাম যে, আগুনে পুড়ে শরীর আর মুখের যে অবস্থা হয়েছিল, ভূত হয়েও সেই অবস্থাটাই রয়ে গেছে।
এই ভিরমি দেবার ঘটনার পর থেকেই এ বাড়িতে আর কেউ আসে না, কারণ হানাবাড়ি বলে এটার একটা বদনাম রটে গেছে। আমার পক্ষে এটা লোকসান, কারণ বাড়িতে জ্যান্ত লোকজন থাকলে আমার বেশ ভালই লাগে। না হলে তো সেই একা একা দিন কাটানো। ভূত এ তল্লাটে আরও অনেক আছে, কিন্তু এ বাড়িতে তো নেই, কারণ এখানে আর কেউ কখনও অপঘাতে মরেনি। শহরের অন্য জায়গায় যে ভূত আছে তাদের সকলকে আমার পছন্দ নয়। কয়েকজন তো রীতিমতো মন্দ। যেমন নস্করদা, বা ভীম নস্করের ভূত। ওর মতো কুচক্রী ফন্দিবাজ ভূত দুনিয়ায় দুটো হয় না। এই দেওঘরে কিছুদিন আগে লক্ষ্মণ ত্রিপাঠী বলে এক পোস্টমাস্টার ছিলেন। লক্ষ্মণের সঙ্গে সাপে-নেউলে সম্পর্ক ছিল স্টেট ব্যাঙ্কের কর্মচারী কান্তিভাই দুবের। এক সন্ধ্যায় লক্ষ্মণ ত্রিপাঠী পোস্টাপিস থেকে বাড়ি ফিরছেন; শা-বাবুদের বাড়ি পেরিয়ে মাঠটার কাছে আসতেই ভীম নস্করের ভূত করল কি, ঝপ করে একটা তেঁতুল গাছ থেকে নেমে ত্রিপাঠী মশাইয়ের ঘাড়টা মটকে দিল। তারপর সে কী হই-হুল্লোড়!-থানা দারোগা কোর্ট কাচারি মামলা মকদ্দমা, সব শেষে ফাঁসি পর্যন্ত। কার ফাঁসি? লক্ষ্মণ ত্রিপাঠীর দুশমন কান্তিভাই দুবের। যে-খুনটা করল ভীম নস্করের ভূত, ঘটনাচক্রে সেই খুনের জন্য দায়ী হল কান্তিভাই দুবে। এই উদোর বোঝা যে বুধোর ঘাড়ে চাপবে সেটা জেনেশুনেই নস্করের ভূত করেছিল কাণ্ডটা। আমি বাধা দিয়ে নস্করদাকে বললাম যে তুমি কাজটা ভাল করোনি। ভূত হয়েছ বলেই যে জ্যান্ত মানুষের অপকার করতে হবে এমন তো কোনও কথা নেই। তুমি তোমার রাজ্যে তোমার ধান্দা নিয়ে থাকো, আর জ্যান্তরা থাকুক তাদের ধান্দা নিয়ে। দুই জগতে ঠোকাঠুকি হলেই যত অনাসৃষ্টি।আমি নিজে সজ্ঞানে কোনও জ্যান্ত মানুষের অনিষ্ট করতে যাইনি। বিশেষ করে যেদিন থেকে বুঝেছি যে আমার চেহারাটা মানুষের মনে আতঙ্ক জাগায়, সেদিন থেকে আমি একদম সাবধান। লিলি ভিলার পিছনে আম-কাঁঠাল বনের একপাশে একটা পুরনো ভাঙা মালির ঘর আছে, সেইখানেই আমি পড়ে থাকি বেশির ভাগটা সময়। অবিশ্যি লিলি ভিলা এখন অনেকদিন থেকেই খালি; কিন্তু কাছেই চৌধুরী বাড়ি থেকে ছেলেরা এখানে লুকোচুরি খেলতে আসে। আশ্চর্য, এই ছেলেগুলোর একদম ভূতের ভয় নেই। কিংবা হয়তো ভূত আছে জেনেই তারা এখানে আসে। যাই হোক, সেই সময়টা আমাকে একদম অদৃশ্য থাকতে হয়। বড়রাই যদি আমাকে দেখে ভিরমি যায়, তা হলে ছোটদের কী অবস্থা হবে ভাবো তো! না; ওসবের মধ্যে আমি নেই।
তবে এটাও ঠিক যে, ভূতদেরও একা-একা লাগে। আমারই একটা গলতির জন্য লিলি ভিলা এখন হানাবাড়ি। তাই এখানে কেউ এসে থাকতে চায় না; আর আমিও জ্যান্ত মানুষের গলার আওয়াজ, তাদের চলাফেরা কাজকর্ম হাসি-তামাশার শব্দ কিছুই পাই না। তাই মনটা এক-একসময় হু হু করে ওঠে। জ্যান্তরা যদি জানত যে ভূতরা তাদের সান্নিধ্য কত পছন্দ করে, তা হলে কি তারা ভূতকে এত ভয় পেত? কখনওই না।
কিন্তু লিলি ভিলাতেও শেষ পর্যন্ত লোক এসে হাজির হল। একদিন সকালে একটা সাইকেল রিকশার হর্ন শুনে ঘর থেকে গলা বাড়িয়ে দেখি রিকশা থেকে মাল নামছে। ক'জন লোক? দু'জন। একজন বাবু, আর একটি চাকর। তাই সই। বেশি লোকের দরকার নেই আমার। নাই-মামার চেয়ে কানা মামা ভাল।
ভূতরা দূর থেকেই খুব স্পষ্ট দেখতে পায়, তাই বলছি-বাবুটির বয়স বছর পঞ্চাশের কাছাকাছি, বেঁটে, মাথায় টাক, খোঁচা খোঁচা গোঁফ, ঘন ভুরু, আর ভ্রুকুটি করা চোখ। বাড়িতে ঢুকেই চাকরটিকে বাবু বললেন, 'সব দেখেশুনে বুঝে নাও। আধঘণ্টার মধ্যে আমার চা চাই। তারপর আমি কাজে বসব।'
এই কথাগুলো অবিশ্যি আমি মালির ঘর থেকেই শুনতে পেলাম। আমরা যেমন দেখি বেশি, তেমনই শুনিও বেশি। আমাদের চোখ কান দুটোই যেন দুরবিনের মতো কাজ করে।
চাকর আধঘণ্টার মধ্যেই বাবুকে চা বিস্কুট এনে দিল। বাবু তখন বাগানের দিকের ঘরটায় তাঁর বাক্স খুলে জিনিসপত্র বার করে গুছিয়ে রাখছেন। জানালার সামনে একটা টেবিল-চেয়ার। তার উপর দোয়াত কলম কাগজ সব রাখা হয়েছে।
ইনি তা হলে লেখক। খুব নামকরা লেখক কি?
হ্যাঁ, তাই।
ভদ্রলোক আসার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই দেওঘরের জনা আষ্টেক বাঙালি এসে হাজির হল লিলি ভিলাতে। তখনই জানলাম ভদ্রলোকের নাম নারায়ণ শর্মা। আসল নাম না ছদ্ম তা জানি না, তবে এই নামেই সকলে তাঁকে ডাকে। বাঙালির দল নারায়ণবাবুকে দেওঘরে পেয়ে কৃতার্থ। এতবড় একজন কাউকে তো সবসময় পাওয়া যায় না। তাই, যদি ভদ্রলোকের আপত্তি না থাকে, তা হলে এখানকার সকলে তাঁকে একদিন সংবর্ধনা জানাতে ইচ্ছুক।
নারায়ণ শর্মা লোকটি দেখলাম বেশ কড়া। বললেন, 'এখানে নিরিবিলিতে কাজ করতে পারব বলে কলকাতা ছেড়ে এলাম, আর আসামাত্র আপনারা এসে সংবর্ধনার জন্য পীড়াপীড়ি করছেন?'
এ-কথায় অবিশ্যি সকলেই একটা কাঁচুমাচু ভাব করলেন। তাতে আবার নারায়ণ শর্মা নিজেই নরম হয়ে বললেন, 'বেশ, আমাকে দিন পাঁচেক একটু নির্ঝঞ্ঝাটে কাজ করতে দিন, তারপর হবেখ'ন সংবর্ধনা। বেশি বিব্রত করলে কিন্তু আমি আবার তল্পিতল্পা গুটিয়ে কলকাতা ফিরে যাব।'
এই সময় ঘোষ বাড়ির কর্তা নিতাইবাবু হঠাৎ একটা প্রশ্ন করে বসলেন যেটা আমার মোটেই ভাল লাগল না। তিনি বললেন, 'এখানে এত বাড়ি থাকতে আপনি লিলি ভিলায় এসে উঠলেন কেন?'
নারায়ণবাবুর মুখে এই প্রথম হাসির রেখা ফুটে উঠল। তিনি বললেন, 'হানাবাড়ি বলে বলছেন তো? তা, ভূত যদি আসে তা হলে তো ভালই, একজন সঙ্গী পাওয়া যাবে।'
'আপনি বোধহয় আমাদের কথাটা সিরিয়াসলি নিচ্ছেন না,' বললেন হারু তালুকদার। 'কলকাতার এক ডাক্তার এখানে সপরিবারে এসেছিলেন। ভদ্রলোক নিজের চোখে দেখেছিলেন ভূত। আর সে নাকি বীভৎস ব্যাপার। প্রায় পনেরো মিনিট পরে জ্ঞান ফেরে ভদ্রলোকের। এখানে ভাল ডাকবাংলো আছে; ম্যানেজার আপনার খুব ভক্ত। বললে উনি নিজে সব ব্যবস্থা করে দেবেন। আপনি লিলি ভিলা ছাড়ুন।'
এইবার নারায়ণ শর্মা একটা অদ্ভুত কথা বললেন।
'আপনারা বোধহয় জানেন না যে, প্রেততত্ত্ব সম্বন্ধে আমি যতটা জানি ততটা খুব কম লোকেই জানে। আমার এখানকার লেখার বিষয়ও হচ্ছে ওই প্রেততত্ত্ব। সেই ডাক্তারের অবস্থায় আমাকে কোনওদিন পড়তে হবে না এটা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি। তিনি ভূতের বিরুদ্ধে কোনও প্রি-কশন নেননি, কোনও ব্যবস্থা করেননি; আমি সেটা নেব এবং করব। ভূত আমার কিছু করতে পারবে না। আপনারা সদুদ্দেশ্য নিয়েই উপদেশ দিতে এসেছেন তা জানি, কিন্তু আমি এই লিলি ভিলাতে থেকেই কাজ করতে চাই। এ বাড়িতে আমি ছেলে বয়সে এসেছি। তখনকার অনেক স্মৃতি আমার এই বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে আছে।'
ভূতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার কথাটা আমি এই প্রথম শুনলাম। কথাটা ভাল লাগল না। আর প্রেততত্ত্ব? ভূত নিয়েও তত্ত্ব হয় নাকি? এসব কী বলছেন নারায়ণ শর্মা?
অবিশ্যি এখন এসব ভেবে কোনও লাভ নেই। রাতটা আসুক, আপনা থেকেই সব প্রশ্নের উত্তর
মিলবে বলে আমার বিশ্বাস।
তবে এই ব্যবস্থার কথাটা শুনে অবধি আমার মন বলছিল যে খবরটা একবার-অন্তত মজা দেখার জন্যও ভীম নস্করকে জানানো উচিত। সে জ্যান্ত মানুষের ঘাড় মটকাবার কায়দা রপ্ত করেছে; না জানি সে এ খবর শুনে কী বলবে!
বেলা যতই বাড়তে লাগল ততই আমার ছটফটানিও বেড়ে চলল। শেষটায় আর না পেরে অদৃশ্য
অবস্থায় মল্লিকদের দুশো বছরের পুরনো পোড়ো বাড়িটায় গিয়ে নস্করদার নাম ধরে ডাক দিলাম। সে
দোতলার পুবদিকের ছাত ভাঙা ঘরটা থেকে হাওয়ায় ভেসে নীচে এসে বেশ কড়া সুরেই বলল, 'এই
অসময়ে কেন?'
আমি তাকে নারায়ণ শর্মার কথাটা বললাম। শুনে নস্করদা প্রচণ্ড ভ্রুকুটি করে বলল, 'বটে? বলি, ব্যবস্থা কি সে একাই করতে পারে? আমরা পারি না?'
'কী ব্যবস্থা করবে?' ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম আমি। আমি বুঝেছিলাম যে নস্করদার মাথায় ফন্দি খেলছে।
নস্করদা বলল, 'কেন? বেঁচে থাকতে বত্রিশ বছর ধরে ব্যায়াম করেছিলুম-ডন বৈঠক মুগুর ডামবেল চেস্ট-এক্সপান্ডার কিছুই বাদ দিইনি। নারায়ণ ছোকরার ঘাড় মটকাবার শক্তি কি আমার নেই?' ব্যায়াম যে সে করত সেটা ভীম নস্করকে দেখলেই বোঝা যায়। সে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছিল;
তাতে তার দেহের কোনও বিকার ঘটেনি; তাই এখনও হাত পা নাড়লে শরীরে মাংসপেশি ঢেউ খেলে যায়। আমি বললাম, 'তা হলে?' আমি জানি যে আমার হৃৎপিণ্ড থাকলে তা এখন ধুকপুক করত।
'তা হলে আর কিছুই না,' বলল নস্করদা। 'আজ রাত বারোটায় নারায়ণ শর্মার আয়ু শেষ। ভূতের সঙ্গে চালাকি করলে আর যেই করুক, ভূত কখনও ক্ষমা করবে না।'
বাকি দিনটা যে কীভাবে কাটল তা আমিই জানি। এদিকে নারায়ণ শর্মা সারাদিন তাঁর ঘরে বসে লিখেছেন। বিকেলে সূর্য ডোবার বেশ কিছু আগে ভদ্রলোক ঘর থেকে বেরিয়ে উত্তরের রাস্তাটা ধরে বেশ খানিক হেঁটে আকাশে সন্ধেতারাটা বেরোবার কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ি ফিরলেন। আজ অমাবস্যা, তাই চাঁদ নেই।
আমি আমার ডেরা থেকে সবই লক্ষ করে যাচ্ছি। এবার নারায়ণ শর্মাকে দেখলাম একটা অদ্ভুত জিনিস করতে। সুটকেস খুলে একটা থলে বার করে তার থেকে একটা গুঁড়ো জিনিসের এক মুঠো নিয়ে একটা ধুনুচির মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে তাতে আগুন দিয়ে ধুনুচিটা ঘরের দরজার চৌকাঠের বাইরে রেখে দিলেন। সেই ধুনুচি থেকে গলগল করে ধোঁয়া উঠতে লাগল, আর দক্ষিণের হাওয়া সেই ধোঁয়াকে সোজা এনে ফেলল আমার ডেরায়। বাপ্ রে-এ কী ব্যবস্থা! ভূতেরা কোনও গন্ধ পায় না, কিন্তু এ গন্ধ দেখছি নাকের মধ্যে দিয়ে একেবারে ব্রহ্মতালুতে পৌঁছে গেছে। এ কী সর্বনাশ! এ অবস্থায় নস্করদাও এই বাড়ির ত্রিসীমানায় আসতে পারবে না।
আর সত্যিই তাই হল। মাঝরাত্তির নাগাদ আমার ঘরের পিছনের পাঁচিলের ওদিক থেকে চাপা গোঙানি শুনলাম-'সুধন্য! ও সুধন্য!'
সুধন্য আমার নাম।
বাইরে বেরিয়ে দেখি রাস্তার ধারে ঘাসের উপর নাক টিপে বসে আছে ভীম নস্কর। নাকিসুরেই কথা
বলল সে-
'একুশ বছর হল গঙ্গাপ্রাপ্তি ঘটেছে আমার, আর এই প্রথম জ্যান্ত লোকের কাছে হার মানতে হল। মানুষ যে এত কল করতে পারে সে তো আমার জানা ছিল না।'
'ও লোকটা পড়াশুনা করে, নস্করদা। ও অনেক কিছু জানে।'
'ও হো হো! এমন একটা লোকের ঘাড় মটকাতে পারলে কী সুখ হত বল দিকিনি।' 'সে যে আর হবার নয় সে তো বুঝতেই পারছ।'
'তা পারছি। আজ আসি। এ এক নতুন অভিজ্ঞতা হল বটে!'
নস্করদা চলে গেল, আর আমিও নিজের ঘরে ফিরে এলাম। আর তার পরেই বুঝতে পারলাম যে আমার ঘুম পাচ্ছে। ভূতের চোখে ঘুম-এ যে অভাবনীয়, অবিশ্বাস্য ব্যাপার! কিন্তু তা হলে কী হবে- ওই ধোঁয়াতে এমন জিনিস আছে যে, ভূতকেও ঘুম পাড়ায়। অথচ রাতই হল ভূতের চরে বেড়াবার সময়! আমি আর থাকতে পারলাম না। একটা ঝিমধরা অবস্থায় ঘরের মেঝেতে শুয়ে পড়লাম।
ঘুম ভাঙল একটা গলার শব্দে। সময়টা সকাল।
আমি ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলাম। বসেই সামনে তাকিয়ে চক্ষুস্থির। ইনি যে নারায়ণ শর্মা সেটা বুঝতে
পারছি, কিন্তু এঁর এমন দশা হল কী করে?
নারায়ণ শর্মাই আমার প্রশ্নের জবাব দিলেন।
'চাকরটা ঘুম থেকে ওঠেনি দেখে স্টোভ জ্বালিয়ে চা করতে গেসলুম। স্টোভটা বার্স্ট করে। ওরা বোধ হয় ওদিকে আমার মৃতদেহের সৎকারের ব্যবস্থা করছে। আমি একটা ডেরা খুঁজছিলুম, তখন এ ঘরটা দেখতে পাই। এখানে আরেকজনের ঠাঁই হবে কি?'
আমি অত্যন্ত খুশি হয়ে বললাম, 'নিশ্চয়ই হবে।' যাক-দুই মুখ-পোড়ায় জমবে ভাল!