ভিতরে এবং বাইরে শান্ত গম্ভীর হয়ে প্রমথ সেদিন বাড়ি ফেরে। অনেকদিন পরে মাজ গভীর শাস্তি অনুভব করেছে, পরম মুক্তির স্বাদ পেয়েছে। ভেবেচিন্তে মন স্থির করে ফেলবার পরেই এ রকম আশ্চর্যভাবে শান্ত হয়ে গেছে মনটা।
সারাদিন আপিসে সে আজ কোনো কাজ করেনি, করতে পারেনি। জরুরি কাজ ছিল অনেক। অন্যদিন আপিসে কাজের মধ্যে ডুবে গিয়ে ভেতরের বিপর্যয়ের হাত থেকে সে পানিকটা মুক্তি পেয়েছে, কাজ যত হয়েছে দায়িত্ব ও গুরুত্বপূর্ণ নিজেকে সে ভুলতে পেরেছে তত বেশি গভীরভাবে। কর্তব্য পালনের তাগিদ তার মধ্যে চিরদিনই খুব জোরালো, অভ্যাস পুরানো।
কিন্তু কাজও সব সময় ভালো লাগেনি। হঠাৎ মাঝে মাঝে কাজের প্রবল উৎসাহ কীভাবে যেন মাঝপথে জুড়িয়ে গিয়ে ঘনিয়ে এসেছে গভীর বিষাদ ও অবসাদ। এমনও মনে হয়েছে, এ ভাবে আর বাঁচা যায় না।
মনে পড়েছে গীতাকে। গীতার সঙ্গে জীবনযাপনের সমগ্র অর্থহীনতাকে।
চার বছরের সংঘাত, বিরক্তি, গ্লানিবোধ আর হতাশার কবল থেকে রেহাই পাবার চরম ব্যবস্থা সে ঠিক করে ফেলেছে। গীতার জন্য বাধা হয়ে তাকে আর সংকীর্ণ, স্বার্থপ্রধান, আদর্শচ্যুত শ্রীহীন জীবনযাপন করতে হবে না। অতি বড়ো, অতি পালনীয় কর্তব্য পালনের গৌরবও সে অর্জন করবে, আত্মবিরোধী জীবনযাপন থেকেও রেহাই পাবে। শুধু কাপড়-গয়না, ভালো খাওয়া, আড্ডা-সিনেমা নিয়ে আর বিরামহীন আবদার, মতান্তর, অভিমান, নাকি কান্না সয়ে অতিষ্ঠ হয়ে থাকতে হবে না। দু-চারদিনের মধ্যেই শুরু হবে আন্দোলন। আন্দোলনে যোগ দিয়ে সে জেলে যাবে-গীতার নাগালের বাইরে।
গীতার হয়তো শিক্ষা হবে ভালোরকম। চাকরির মায়া না করে, ঘরসংসারের কথা না ভেবে, তাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে দেশের জন্য স্বামী তার জেলে যেতে পারে, এর আঘাত হয়তো তাকে একেবারে বদলে দিতে পারে। তার জেলে থাকার সুদীর্ঘ সময়টা এ বিষয়ে চিন্তা করে করে হয়তো সে বুঝতে শিখাবে জীবনের গুরুত্ব কতখানি। হালকা স্বার্থপর অর্থহীন জীবনের ওপর হয়তো তার স্থায়ী বিতৃষ্ণা এসে যাবে। জেল থেকে বেরিয়ে হয়তো সে সুখী হতে পারবে গীতাকে নিয়ে, তাদের মধ্যে সামঞ্জস্য আসবে। দেশ ও সমাজের কথা একটু ভাবে, পদে পদে বিরোধিতা করার বদলে কিছু
কিছু কাজ আর ত্যাগ স্বীকার করে হাসি মুখে। পথের মানুষকে আজ তার সুখী মনে হয়। তার মতো ওদের কারও জীবনেও বিরামহীন প্রতিকারহীন সংঘর্ষ স্থায়ী রোগযন্ত্রণার মতো একটানা অশান্তি এনে দিয়েছে কিনা-প্রতিদিনের এই প্রশ্ন আজ যেন মন থেকে মুছে গিয়েছে।
একটা কথা অবশ্য প্রমথ জানে। নিজের কাছে এ বিষয়ে তার ফাঁকিবাজি নেই। দেহমন তার এমনভাবে হালকা হয়ে যাবার কারণ অন্য কিছুই নয়, গীতার হাত থেকে মুক্তি পাবার কল্পনাই তাকে এ ভাবে ভয়মুক্ত করে দিয়েছে। এ কথাটাকে সে আমল দেয় না, এ নিয়ে ভাবে না। মুক্তিলাভের এ পথ বেছে নেবার আরেকটা দিকও তো আছে। যত অসহাই হোক গীতাকে জীবন থেকে ছেঁটে ফেলে রেহাই পাবার যত সহজ, সাধারণ, হীনপথই খোলা থাক, ও ভাবে সে মুক্তি পাবারও চেষ্টা করেনি, অবস্থার প্রতিকারের অন্যায় ব্যবস্থাও করেনি। স্বামী ও প্রেমিকের কর্তব্য সে পালন করে গেছে বরাবর। গীতাকে ভালো করে জেনেশুনেও ওকে ভালোবেসে বিয়ে করার ভুলটা তার, সে ভুলের জন্য গীতাকে শাস্তি দিয়ে মনের জ্বালা জুড়োবার মতো অন্যায় সে কোনোদিন করেনি। এ উপায়ের কথা না ভাবলে, এ সুযোগ না পেলে, চিরদিন সে এই আত্মবিরোধভরা বন্দীর জীবনটাই যাপন করত। এ গৌরব সে দাবি করতে পারে।
বাড়িতে ঢুকতে প্রথমেই চোখে পড়ল ছোটোভাই সুমথের কচি ছেলেটা, বারান্দায় এই অবেলায় ঘুমিয়েছে। বিয়ের দু বছরের মধ্যে একটি ছেলে হয়েছে সুমথের, চারবছরের বেশি হয়ে গেল গীতাকে সে একটি সন্তানের মা হতে রাজি করাতে পারল না। মনে মনে সংকল্প আরও দৃঢ় হয়ে যায় প্রমথের।
গীতা বাড়ি ছিল না। নতুন কিছু নয়, আপিস থেকে বাড়ি ফিরে গীতার সঙ্গে তার কদাচিৎ দেখা হয়। জামা-কাপড় ছোড়ে স্নান করার পর সুমথের স্ত্রী তাকে চা জলখাবার দেয়, তার গম্ভীর মুখ দেখে মমতা অনুভব করে। এক সময় সুমথকে সে বলে, দাদার মুখ বড়ো ভার দেখলাম।
সুমথ গম্ভীরভাবে মাথা হেলায়। যা অশান্তি। দাদা বলে সহ্য করে, আমি হলে-
কী করতে।
দূর করে তাড়িয়ে দিতাম।
পারতে না। তুমিও তো দাদার ভাই।
সুমথ মুখে একটু হাসে, মনে কথাটা মানে না। সে যে দাদার ভাই এ যুক্তিটাতে নয়, সে হলেও গীতাকে দূর করে তাড়িয়ে দিতে পারত না, স্ত্রীর এই ঘোষণাকে।
রাত প্রায় আটটার সময় গীতা ফিরে আসে। খুব জমকালো একখানা শাড়ি সে পরেছে, মুখে- চোখে আর চলনে তার উপচে পড়ছে খুশির ভাব।
কোথায় গিয়েছিলাম জানো? বলতে বলতে সামনে এগিয়ে এসে প্রমথের মুখ দেখে সে মুখ বাঁকায়।-ই, রাগ করেছ তো!
না, রাগ করিনি। একটা কথা ভাবছিলাম। তোমার ওপর আর কোনোদিন রাগ করব না।
তার মানে ?
কাপড় বদলে শাস্ত্র হয়ে বোসো, বলছি।
ও বাবা। তবে তো গুরুতর কথা!
কিন্তু তার না-বলা কথাকে বিশেষ গুরুত্ব যে সে দেয়নি প্রমথ তা বুঝতে পারে। গীতা সম্ভবত ধরে নিয়েছে, সে কিছু উপদেশ ঝাড়বে, কোনো কথা ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেবার চেষ্টা করবে। গীতার ফিরে আসতে আধঘণ্টা সময় লাগায় এই অনুমানটাই সত্য মনে হয়। নতুন কিছু তার বলবার আছে মনে করলে এতক্ষণ কৌতূহল দমন করে থাকা তার পক্ষে সম্ভব হত না।
উপদেশ দিয়ে বুঝিয়ে গীতাকে বদলে ফেলার চেষ্টার মধ্যে যে বোকামি ছিল 'আজ প্রমথের কাছে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কতখানি হতাশ আর নিরুপায় বোধ থেকে গীতাকে ও ভাবে সংশোধন করার উপায়টা সে অন্ধের মতো আঁকড়ে ধরেছিল ভাবতে গিয়ে আসন্ন মুক্তির রূপটাই তার কাছে আরও বিরাট হয়ে ওঠে।
আবার তার কথা শুনে গীতা কেমন চমকে যাবে ভেবেও প্রমথ বেশ আমোদ অনুভব করে। গীতা ফিরে এসে একটু এদিক-ওদিক ঘুরে টেবিল থেকে রঙিন মলাটের একটি বই তুলে নিয়ে শোবার ঘরের দিকে পা বাড়ায়। প্রমথ যে তাকে বিশেষ কিছু বলবে বলেছিল সে তা একেবারে ভুলে গিয়েছে মনে হয়। তাকে ডাকতে গিয়ে প্রমথ চুপ করে যায়। মিনিট পনেরো সে চুপ করে বসে ভাবে। তারপর শান্তভাবেই শোবার ঘরে যায়। তোমায় যা বলছিলাম।
গীতা তার বিছানায় শুয়ে পড়ছিল। বই নামিয়ে হাই তুলে উদাসভাবে বলে, কী বলছিলে? প্রমথ কাছে গিয়ে বিছানাতেই বসে। গুছিয়েই সে সব কথা বলে, স্পষ্ট জোরালো ভাষায়। কিন্তু গীতার বিশেষ চমক লেগেছে মনে হয় না। কথাটাকে সে তেমন গুরুতর মনে করেছে কীনা সে বিষয়েও প্রমথের সন্দেহ জাগে।
এই বুঝি তুমি রাগ করনি?
রাগের কথা কী হল?
আমার জন্যে জেলে যাবে বলছ, অথচ তুমি রাগ করনি। করে ধমকে মেরে বলবে তোমার রাগ হয়নি।
তোমার জন্যে জেলে যাচ্ছি না গীড়।
তবে কী জন্যে? স্বদেশি করে জোলে যাবার জন্যে বুঝি তিনশো টাকার, চাকরি নিয়েছিলে, বিয়ে করেছিলে? জেলে যাব না ছাই, এমনি করে তুমি আমায় বলতে চাও, আমায় নিয়ে কি অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছ। গীতার চোখ ছলছল করে, কী দোষ করেছি বলো, মাপ চাইছি। অমন কর কেন ?
প্রমথ অবাক হযে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। একি অভিনয়, না ন্যাকামি। ন্যাকামি হওয়াই সম্ভব। ওর স্বভাবটাই এ রকম বিকারগ্রস্ত।
তোমায় বলে কী হবে? তুমি বুঝবে না।
বুঝব না। আমি অবুঝ। বোকা। না বজ্জাত ?
প্রমথ আর কথা বলে না। শান্ত নির্বিকার হয়ে চুপচাপ বসে পাকে। তাতে গীতার রাগ যায় আরও বেড়ে। একতরফা কিছুক্ষণ ঝগড়া চালিয়ে সে কাঁদতে আরম্ভ করে। প্রমথ তখনও বসে থাকে পাথরের মূর্তির মতো, তার দিকে ফিরেও তাকায় না।
সাতদিন পরে প্রমথ গ্রেপ্তার এয় আরও অনেকের সঙ্গে। বিচারে তার জেল হয় তিন বছরের। জেলে প্রনথের দিন কাটে একে একে। বুড়ি মা, সুমথ ও অন্যান্য আত্মীয়বন্ধুরা চিঠি লেখে, মাঝে মাঝে দেখাও করতে আসে। গীতা চিঠিও লেখে না, দেখাও করতে আসে না। বিচারের সময়।সে কোর্টে আসত, আহত বিস্ময় আর তীর অভিযোগ ভরা এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকত তার দিকে। সুমদের কাছে সে খবর পায় যে বিচার শেষ হবার পরেই গীতা ঢাকায় তার বাবার কাছে চলে গিয়েছে। এটা প্রমথ বুঝতে পাবে। কিন্তু দেখা করতে আসে না কেন একটিবার? চিঠি লেখে না কেন? রাগ হওয়াই তার পক্ষে স্বাভাবিক, কিন্তু এমন রাগ হবার মতোই কি বিকৃত তার মন যে রাগ কিছুতেই কমে না, অন্তত চিঠির জবাবে দু লাইন একটি চিঠি লেখার মতো?
প্রমথ ক্ষুত্ত হয়, মনটা তার খারাপ হয়ে যায়। এই যদি প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে গীতার মধ্যে তার কারাবরণ করার, ওর হৃদয়-মনের কী পরিবর্তন সে আশা করতে পারে।
কিন্তু যাই হোক, মুক্তি সে পেয়েছে। আত্মবিরোধী জীবনের তার অবসান হয়েছে চিরদিনের জন্য। বাকি জীবনটা শান্তিতে হোক অশান্তিতে হোক, সুখে হোক দুঃখে হোক, নিজের মতিগতি আর আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে কাটিয়ে দিতে পারবে।
জেলে যখন তার দেড় বছর পূর্ণ হয়েছে হঠাৎ গীতার কাছ থেকে সে অদ্ভুত চিঠি পেল। চিঠিখানা খুব সংক্ষিপ্ত।
গীতা লিখেছে এতদিন ভেবে ভেবে সে বুঝতে পেরেছে প্রমথ আর তার মধ্যে মনের মিল না থাকলে জীবনে তারা সুখী হতে পারবে না। তাই, নিজেকে গড়ে পিটে প্রমথের উপযুক্ত করে তুলবার জন্য কিছুদিন সে এক শিক্ষাসদনে গিয়ে থাকবে স্থির করেছে। সে যেন কিছু না ভাবে। যথাসময়ে দেখা হবে। বারবার প্রমথ চিঠিখানা পড়ে, তার ধাঁধা ঘুচতে চায় না। শিক্ষাসদন ? এমন শিক্ষাসদন কোথায় আছে যেখানে স্ত্রীদের গড়েপিটে স্বামীর উপযুক্ত করে তুলবার ব্যবস্থা আছে? সাধন-ভজন জপতপ করে নিজেকে শোধরাবার জন্য কোনো সাধু-সন্ন্যাসীর আশ্রমে যাবার বুদ্ধি করেনি তো গীতা? অথবা মাথাটা তার খারাপ হয়ে গেছে একেবারে, পাগলামির ঝোঁকে একখানা চিঠি লিখে ফেলেছে আবোল-তাবোল। নিজের দোষ যদি বুঝে থাকে গীতা, তাই যথেষ্ট ছিল। আদর্শহীন জীবনের ব্যর্থতা টের পেলে, দায়িত্ববোধ জন্মালে প্রমথ নিজেই তাকে সহজ সাধারণভাবে শুধরে নিত।
মনের মধ্যে নানা ভাবনা পাক খায়, কিন্তু নতুন একটা আনন্দ ও উৎসাহও প্রমথ অনুভব করে। তার আশা তবে একেবারে বার্থ হয়নি। গীতা অন্তত এটুকু ভাবতে শিখেছে যে মনের মিল না হলে তারা সুখী হতে পারবে না।
গীতা কোনো ঠিকানা দেয়নি। প্রমথ ঢাকায় তার বাবার ঠিকানায় জবাব দেয়। লেখে যে গীতা যেন মনে না করে সে তাকে একেবারে তারই মনের মতো ছাঁচে ঢালতে চায়। গীতার ওপর কোনোদিন সে জোর খাটায়নি, কোনোদিন খাটাবার ইচ্ছেও রাখে না। তাদের বিরোধিতার অবসান হলেই তারা সুখী হতে পারবে ইত্যাদি অনেক কথা।
একেবারে শেষে সে লেখে। শিক্ষায়তনের নামটা কী, গীতা কোন শিক্ষায়তনে যোগ দিয়েছে ?
এ চিঠির কোনো জবাব আসে না।
কয়েকদিন পরে সুমথ দেখা করতে এলে তাকে সে এ বিষয়ে প্রশ্ন করে। কিন্তু সুমথ গীতার কোনো খবরই বলতে পারে না। গীতা তাদের কাছে চিঠিপত্র লেখেনি একখানাও।
খবর নেব?
প্রথম ভেবেচিন্তে বলে, না, থাক।
মাস চারেক পরে হঠাৎ একদিন প্রমথ জেল থেকে ছাড়া পায়-আরও কয়েকজন রাজনৈতিক বন্দীর সঙ্গে। বাড়ি পৌঁছে সে দুদিন বিশ্রাম করে, তারপর ঢাকা রওনা হয়ে যায়।
গীতার রায়বাহাদুর বাবা অত্যন্ত গম্ভীর মুখে জামাইকে অভ্যর্থনা করেন, এসো। বসো।
গীতা ফেরেনি শিক্ষাসদন থেকে? কোন শিক্ষাসদন?
ও আমায় লিখেছিল শিক্ষাসদনে যাচ্ছে। নাম ঠিকানা জানায়নি কিছু।
রায়বাহাদুর ভুরু কুঁচকে তাকান। শিক্ষাসদন ? ও তো জেলে।
জেলে ।
ও মেয়ের কথা বোলো না। পাগলের মতো যাতা বক্তৃতা দিয়ে সিডিশনের চার্জে ছমাস জেলে গেছে। ফাইনের ওপর দিয়ে কাটিয়ে দিতে পারতাম, তা কোর্টে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে এমন সব কথা বলতে লাগল-রায়বাহাদুর মুখে অদ্ভুত আওয়াজ করেন, প্রমথ বুঝতে পারে ওটা আপশোশের আওয়াজ, আগে অনেকবার শুনেছে। বেশ মিলেছ তোমরা দু জনে।
আবার রেলে স্টিমারে পাড়ি দিতে হয়। এবার প্রমথের মনে হাতে থাকে মুহূর্তগুলি বড়ো বেশি দীর্ঘ। স্টিমার ও রেল বড়ো আস্তে চলে, সময় কাটতে চায় না।
জেলে গীতাকে দেখেই সে বুঝতে পারে তার চেহারার অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। সে চিরদিনই ছিপছিপে, এখন বড়ো বেশি রোগা দেখাচ্ছে। তার চোখে চপল দৃষ্টির বদলে কেমন বিষণ্ণ
হাসিভরা গাম্ভীর্য।
প্রমথ অনুযোগ দিয়ে বলে, মিছিমিছি জেলে আসবার তোমার কী দরকার ছিল বলো তো গীতু? প্রতিশোধ নিতে?
গীতার গলা আরও সরু, আরও তীক্ষ্ণ হয়েছে। প্রমথের কথায় সে যেন খনখন করে বেজে ওঠে, প্রতিশোধ কী? জেল না খাটলে তোমার সঙ্গে ঘর করব কী করে? আমাদের মধ্যে সামপ্লস্য থাকা চাই তো।
প্রমথ ক্ষুব্ধ হয়ে বলে, তা বেশ করেছ। তবে এর বদলে যদি-
প্রমথ তার এত বড়ো কাজকে সমর্থন করে না। রাগে অভিমানে লাল হয়ে যায় গীতার মুখ। জেলেও উপদেশ ঝাড়তে এসেছ? কটা দিন নয় সবুর করতে বেরোনো পর্যন্ত।
প্রমথ ঢোক গেলে। গীতার চোখ মিটমিট করে।