দেবানন্দ প্রথমে তাদের দায়িত্ব ঘাড়ে নিতে কিছুতেই রাজি হতে চায়নি।
তার নিজের ঘাড়ের বোঝাটাই কম নয়। রোগা দুর্বল স্ত্রী, একটি বিবাহিত ও একটি কুমারী মেয়ে, দুটি অল্পবয়সি ছেলে এবং একটি শিশু নাতি। যে অবস্থায় যেভাবে এদের নিয়ে বিদেশ যাত্রা, তার ওপর একজন বিধবা ও তার বয়স্কা মেয়েকে সাথে নিতে সত্যই তার সাহস হয়নি।
শোভার মা জোর দিয়ে বলেছিল, আপনার কোনো দায়িত্ব নাই। আমাগো খালি সাথে নিবেন। আমি টিকিট কাটুম, ভিড় ঠেইলা আপনাগো লগে রেল স্টিমারে উঠুম।
তাকী হয়?
হইব না ক্যান? আপনারা না গেলে মাহইয়াব হাত ধইরা রওনা দিতাম না?
না, বোঝা হয়ে তাদের ঘাড়ে চাপতে চায় না শোভা ও শোভার মা। পথে কোনো সাহায্য বা সহায়তারই দাবি তারা তুলবে না। কথাটা শুধু এই যে, দুটি মেয়েলোক পুরুষ অভিভাবক ছাড়া একলা চলেছে এটা টের পেলেই চোর-ছ্যাচড় বজ্জাতরা বড়ো বেশি পিছনে লাগে। দেবানন্দের সঙো গেলে এই দুর্ভোগ থেকে তারা রেহাই পাবে।
তখন দেবানন্দ তার আসল দুর্ভাবনা বাক্ত করেছিল। বলেছিল সাথে নয় গেলেন। কলকাত্তা পৌঁছাইয়া কই যাইবেন? সংবাদ শুনি, শহরের ফুটপাতে তিল ধাবণের ঠাঁই নাই। আমি নিজে কই যামু কী করুম জানি না। আপনারে নিয়া বিপদ বাড়ামু?
আমাগো ঠাঁই আছে।
শোভার মা নাকি কলকাতায় ছোটোখাটো একখানা বাড়ির অর্ধাংশের মালিক। বাড়িটা হয়েছিল শোভার বাবা আর জ্যাঠামশাই ঘনশ্যামের নামে। দেশের জমিজমা ঘরবাড়ি দেখার জন্য শোভাব বাবা দেশেই থেকেছে বরাবর, জ্যাঠা থেকেছে কলকাতার বাড়িতে। মাঝে মাঝে কয়েক দিনের জন্য কলকাতা বেড়াতে গিয়ে তারা ও বাড়িতে বাসও করেছে কয়েকবার।
তবে শোভার বাবা মারা যাওয়ার পর গত ৮-সাতবস্থব শোভার জ্যাঠাও তাদের খোঁজখবর নেয়নি, তারাও অভিমান করে নিজেদের কোনো খবর দেয়নি শোভার জ্যাঠাকে।
কিন্তু এখন তো আর অভিমান করে বসে থাকার উপায় নেই। বয়স্থা মেয়েকে নিয়ে কলকাতা যেতেই হবে।
ঘনশ্যামকে চিঠি দিয়েছিল। জবাবে ঘনশ্যাম তাদের যেতে বারণ করেছে। ভয় দেখিয়ে লিখেছে যে, বারণ না শুনে গেলে তারা বিপদে পড়বে। কিন্তু-তা তো আর হয় না। ঘনশ্যাম তাদের খেতে দিক বা না দিক-বাড়িতে মাথা গুঁজতে না দিয়ে তো পারবে না। পেটের ব্যবস্থা কী হয় না হয় সেটা পরে দেখা যাবে।
দেবানন্দের দুর্ভাবনা ও আপত্তি তখন হ্রাস পেয়েছিল, ওদের যখন মাথা গুঁজবার ঠাঁই আছে, একেবারে একটা বাড়ির অর্ধাংশের মালিকানা-স্বত্বে, তখন আর ওদের সঙ্গে নিতে বিশেষ ভাবনার কী আছে?
হয়তো ওদের বাড়ির অংশে দু-চারদিনের জন্য তারাও আশ্রয় পেতে পারে। তাছাড়া শোভার না তেমন দুর্বল। নয়-শোভাও বুথি নয়। প্রতিবেশিনী হিসাবে শোভার মা দেবানন্দের সামাজিক অভিভাবকত্ব ঘোষণা করেছে দশজনের কাছে-কিন্তু নিজেও কখনও তার কাছে ঘেঁধেনি বা তাকে কাছে ঘেঁষতে দেয়নি। সামাজিক অভিভাবকের সঙ্গে পরামর্শের দরকার হলে বরাবর মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে তার কাছারি ঘরে এসেছে, সকালবেলা, সে যখন সসকাব গোমস্তা আাব পাঁচজন প্রজ্ঞাকে নিয়ে বিষয়কর্মে বাস্ত। ঘোমটা টেনে খানিক তফাতে দাঁড়িয়ে শোভাকে মাঝখানে মধ্যস্থ দেখে শোভাব মা তার সঙ্গে কথাবার্তা বলেছে।
গোডাপ দিকে বিবেকের উপবোধে মাত্র দু একবার অভিভাবকের দায়িত্ব জাহির করতে বাডি সয়ে খবব নিতে গিয়েছিল। শোভা পর্যন্ত সামনে আসেনি। দরজা একটু ফাঁক কবে শুধু মুখখানা বাব করে বলেছিল, কষ্ট কইবা মাপনার আসনের কাম কী? আমাগো দরকার পড়ল আমক কমু গিয়া।
অত্যন্ত অপমান বোধ হয়েছিল দেবানন্দের।
তোমাগো সাওনের বা কিছু কওনের দরকার নাই।
দবজাব ফাকে দেখা গিয়েছিল শোভার মুখ। সে মুখে কথা জুগিয়েছিল কানের পিছনে শোভাব মা ব মুখ। বোধ হয় দুবাব তিনবার শুনবার পর শোভাব মুখে মুখস্ত কথা বলেছিল আপনে বোঝেন না। আপনে আইলে লোকে বদনাম দিব।
তাতে আবও অপমান বোর হয়েছিল দেবানন্দের।
কিন্তু অপমান বোধ বাধ্য হয়েছিল শ্রদ্ধায় স্বীকৃতি দিলে তলিয়ে যেতে। শোভাব এক মামা এসে হয়েছিল হাজিব। বোনের এবং ভাগনির অভিভাবক হবে জমিজমা ঘব পুকুরের মালিক হবে।
দেবানন্দের কাছারি ঘবে একটা সামাজিক ব্যাপারের ছুতাথ বাজনৈতিক অবস্থা ও ব্যবস্থা নিয়ে অগলাচনার জন্য জনদশেক স্থানীয় বিশিষ্ট লোক জমায়েত হয়েছিল-মেয়েকে সামনে ধবে শোভাব মা
সেইখানে হাজিব।
শোভার মুখ দিয়ে নয়, শোভাকে সামনে বেথে নিজের মুখে স্পষ্টভাষায় জানিয়েছিল যে সে বিপদের প্রতিকার চাইতে এসেছে। দেবানন্দকে বাপ ধবে নিয়ে সে পুরুষ অভিভাবক ছাড়াই মেয়েকে মানুষ কণছে, সব কাজ কাববার দেখাশোনা বিলি ব্যবস্থা কবে আসছে। হঠাৎ একজন আত্মীয়তাব অজুহাতে এসে তার ঘব দুযাব দখল কবে তাদের পথে বসাবাব চেষ্টা করবে, এটা সে বরদাস্ত বরবে না।
একজন বলেছিল, কেডা আইছে গো-গোবর্ধন সে না শোভাব মামা ও বুড়ো হবিনাকষণ চমকে উঠে বলেছিল, মায়ের পেটের ভাই না তোমাব ভাই। একযুগ বইনেব খবর নেয় নাই সে ও ভাই? চোবডাকাতে বাতে সিঁদ কাটে, হানা দেয়। বইনের কেউ নাই জাইনা দিনদুপুরে দশজনেবে জানান দিয়া ভাই হইযা বইনের সব লুটকার আইছে। সে ও ভাই? ভাই দিয়া আমার কাম নাই মাইযার কাম নাই মানা দিয়া। যাইতে কই যায না। আপ্পাবা বিহিত করেন।
বিহিত তাদের করতে হয়েছিল শোভাব মামাকে ভাগিয়ে দিয়ে। দেবানন্দ টের পেয়েছিল, শোভার মা এ বুকের পাটা শক্তই আছে।
শিয়ালদহ নেমে চার্বিদিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ তাবা স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বিবেণ আগেই শুনেছিল, কিন্তু এত মানুষ এইটুকু জায়গায় এভাবে গাদাগাদি কমবে দিনবাত কাটাতে পাবে চোখে দেখাব আগে এটা কল্পনা করা সম্ভব ছিল না। মনে হয়, ক টা পিজবাপোলীয হাসপাতাল যেন গড়ে তুলেছে জগতের পবিতাক্ত মানুষ কচিশিশু থেকে শেষ বয়সেব মেযেপুরুষ।
পৃথিবীতে এত অনটন ঘটেছে স্থানেব
শোভাব মা বলে, বাবা, আপনাবা কই গিষা উঠবেন? দেবানন্দ বলে, তোমাগো আগে পৌঁছাইযা দিযা আসি ফিবা আইসা ঠাঁই খোঁজনের চেষ্টা কবুম। মনুষ্যত্বের এই পিজরাপোলে সকলকে বসিয়ে রেখে দেবানন্দ তাদের পৌঁছে দিতে যাবে-এই সহজ কথাটা যেন শোভার মা বুঝতে পারে না। সে একটু ব্যাকুল দুর্বোধ্য দৃষ্টিতে দেবানন্দের মুখের দিকে চেয়ে থাকে। পথের বাস্তবটা ঘণ্টাকয়েক সময়ের মধ্যেই দেবানন্দের কাছে তার বহু যুগের ঘোমটার আড়াল প্রায় ঘুচিয়ে দিয়েছে।
শোভা বলে, মা? আমরা দুইখান ঘর পামু না?
শোভার মা চিন্তিত মুখে বলে, সেই কথাই তো ভাবি। দুইখান ক্যান, একখান ঘর পামু সঠিক জাইনা কী চুপ কইরা আছিস ভাবস? যে চিঠি লিখছে তোর জ্যাঠা-
শোভা বলে, দিব না কও? আমাদের ভাগের ঘর দিব ন' ক্যান? জোর কইরা দখল করুম।
শোভার ছেলেমানুষি তেজে যেন তার মার সম্বিত ফিরে আসে। তার মফস্বলের তেজ ও দৃঢ়তা অনভ্যস্ত অচিন্তিত অবস্থায় এসে পড়ে খানিকটা ঝিমিয়ে গিয়েছিল। সে আর দ্বিধা করে না, দেবানন্দকে বলে, আপনারাও আসেন আমাগো লগে। যে কয়দিন বাসা খুইজা না পান, মাথা গুইজা থাকবেন।
তা কি হয়?
হয। মা-বইন বাপ-ভাই আপনাগো ফেইলা আমি গিয়া ঘরে উঠুম? আমি আপনার অমন মাইয়া না।
সেবানন্দের বড়োমেয়ে মায়া ছলছল চোখে চেয়ে বলে, বাবা আবার তোমারে সঙ্গে নিতে ডরাইছিল!
তার ছোটোবোন ছায়া শোভার দিকে চেয়ে একটু হাসে। আগে তাদের জানাশোনা ছিল, পথের কষ্টকর গা-ঘেঁষাঘেঁষি ঘনিষ্ঠতায় তারা সখীতে পরিণত হয়ে গেছে।
শোভার মা বলে, আমি তো ডরাই। ভাসুর যা চিঠি লিখছে রওনা দিতে বারণ কইবা। বিষন নাকি বিপদ হইব। তা মরার বাড়া বিপদ কী?
দেবানন্দ বলে, তোমরা আইসা ভাগ, বসাইবা তাই বারণ করছে। ভয় দেখাইয়া যদি ঠেকান যায়। শোভার মা ধীরে ধীরে মাথা নাড়ে। চিঠির ধরণ তেমন না। ওই কুমতলব থাকলে বানাইয়া দশটা অজুহাত দিত, লিখত যে এই এই ব্যাপার হইছে কাজেই তোমরা আইসো না। কোনো কারণ না, কেমন যেন দিশাহারাভাবে লিখছে চিঠিখান। মনে লাগে, কিছু ঘটছে।
একটা গাড়ি ভাড়া কবে তারা রওনা দেয়।
বাড়িটা শহরের এক ঘিঞ্জি নোংরা প্রান্তে। কলকাতায় বাড়ি করার আসল দরকারটা ছিল ঘনশ্যামেরই, শহরেই তার স্থায়ী বসবাস। একটু বুদ্ধি খাটিয়ে ভাগাভাগিতে বাড়ি করার প্রস্তাব সে-ই করেছিল শোভাব বাবার কাছে-ওরা দেশেই থাকবে বরাবর, মাঝে মাঝে কেবল কিছুদিনের জন্য বেড়াতে আসবে, বাড়িটা এক রকম সে-ই সপরিবারে ভোগ-দখল করবে।
সমস্ত নগদ সঞ্চয় দিয়ে এবং জমি বেচে শোভার বাবা নিজের ভাগের টাকা দিয়েছিল, কলকাতা শহরে একটা বাড়ির অংশ থাকবে শুধু এইটুকুর জন্য।
আর আজ বিপদে পড়ে সেই ভাইয়ের বউ আর মেয়ে কলকাতা আসতে চাইলে ঘনশ্যাম বিপদের ভয় দেখিয়ে তাদের আসতে নিষেধ করে। গলির মধ্যে গাড়ি ঢুকবে না। গলির মুখে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দেবানন্দ আর শোভার মা গলিতে ঢোকে। ছোটা দোতলা বাড়িটার সদরের কড়া নাড়তে অল্পবয়সি কালো একটি ছেলে দরজা খোলে।
-শোভার মা-র সে অচেনা!
কাকে চান?
দেবানন্দ বলে, ঘনশ্যামবাবুরে ডাইকা দাও।
ছেলেটি বলে, ঘনশ্যামবাবু? তিনি তো এখানে থাকেন না।
শোভার মা বলে, কী কথা কও থাকেন না? তার বাড়ি না এটা? ছেলেটি মাথা নেড়ে বলে, না। এটা আমাদের বাড়ি, কিনে নিয়েছি। দেবানন্দ আর শেশভার মা মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে।
কতদিন কিনা নিছ?
আর বছর।
শোভার মা হতভম্ব হয়ে থাকে। দেবানন্দ হিসাবি-বিষয়ী মানুষ, এইটুকু ছেলের সঙ্গে আলাপ করে লাভ নেই বুঝে বলে, থোকা তোমার বাবারে ডাইকা দিবা?
আমার বাবা নেই। এটা মামার বাড়ি।
মামা বাড়ি আছেন? ওনারেই ডাইকা দাও।
খানিক পরে ভুঁড়িওলা প্রৌঢ়বর্যাস কৃষ্ণদাস বাইবে এসে দেবানন্দ জিজ্ঞাসা করে, আপনে এই বাড়ি কিনছে।
আজ্ঞে হ্যাঁ। আপনারা কী চান?
আমি ঘনশ্যামবাবুর দ্যাশের লোক। ইনি তার ভায়ের বউ।
কৃষ্ণদাস বলে, তা আপনারাই আসবেন জানিয়ে কার্ড লিখেছিলেন? চিঠিটা আমি তো সঙ্গে
সঙ্গে ঘনশ্যামবাবুর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। উনি আপনাদের ঠিকানা জানাননি। দুজনেই তারা স্বস্তি বোধ করে বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে থাক, ঘনশ্যামেব পস্তা অন্তত পাওয়া যাবে।
দেবানন্দ বলে, চিঠি লিখেছেন কিন্তু ঠিকানা দিতে ভুলে গেছেন।
প্রকাণ্ড একটা হাঁ করে হাই তুলে কৃষ্ণদাস বসে ভুলে হয়তো "ননি, ইচ্ছা করেই ঠিকানা জানাননি। মানুষটার বড়ো দুরবস্থা। ঘনশ্যামের দুরবস্থার বিবরণ শুনতে শুনতে দেবানন্দ ও শোভার মা আবাব মুখ চাওয়া চাওয়ি করে। কাজ নেই। রোজগার নেই। বোগে ভুগছে। দেনায় বিকিয়ে গেছে এই বাড়ি। ঘনশ্যামকেও উদ্বাস্তু হতে হয়েছে। ওইখানে উঠে গেছেন-হাত বাড়িয়ে আঙুলের সংকেতে কৃষ্ণদাস গলির আরও ভিতরের দিকে বাকের ও পাশে খোলার চালাগুলি দেখিয়ে দেয়। দুটো পাকা বাড়ির ফাঁকে দু-তিনটে খোলার চালাই শুধু দেখা যাচ্ছিল।
শোভার মা সেদিকে পা বাড়াতেই দেবানন্দ বলে, রও, রও। গাড়িটারে ছাইড়া দিয়া আসি। বেশি দেরি হইলে ব্যাটা তিনগুণ ভাড়া আদায় করব।
রাস্তার শুধু একদিকে দু-হাত চওড়া ফুটপাত, তার গা ঘেঁষে উপরে মাথা তুলেছে শীর্ণ বুগা অজানা গাছটা।
ওই গাছের তলে ফুটপাতে জিনিসপত্র নামিয়ে সকলকে বসিয়ে গাড়ির ভাড়া চুকিয়ে দিয়ে দেবানন্দ আর শোভার মা আবার পলিতে ঢোকে। খেলার বাড়ি খোলার ঘর হলেই নোংরা হয় না। খোলার ঘরের গরিব বাসিন্দারাও ঝাঁট দিয়ে লেপে পুঁছে ঘর-দুয়ার সাফ রাখতে জানে-এ রকম সাফ রাখাটা প্রায় শুচিবাইয়ের পর্যায়ে উঠে যায়। কিন্তু খোলার ঘরের সামান্য আশ্রয়েও এমন গিজগিজে ভিড় জমেছে মানুষের যে সাফসুবুত রাখার চেষ্টা অসম্ভব হয়ে গেছে।
মানুষ জাতীয় জীবের খাটালে পরিণত হয়েছে বাড়িগুলি।
দুর্গন্ধে অন্নপ্রাশনের অন্ন উঠে আসবে, আজও যাদের অন্নপ্রাশন হয়।
দুজনের কোনোরকমে থাকবার মতো আঁধারে একটা স্যাঁতসেঁতে ঘর।
সেই ঘরে ঠাঁই জুটেছে ঘনশ্যামের পরিবারের ছোটোবড়ো মোট আটজন মানুষের। এক কোণে ঘনশ্যাম পড়েছিল চাদর মুড়ি দিয়ে। ঘনশ্যাম অথবা তার কক্কাল চেনাই মুশকিল।
শোভার মা-কে দেখে ঘনশ্যাম কাতরাতে কাতরাতে বলে, বারণ করলাম, তবু আইলা? এখন সামলাও।
দুজনকে বসতে দেওয়া হয় দুটুকরো তক্তায়। বোঝা যায়, তক্তার টুকরো দুটো সংগ্রহ করে আনা-ছেলেমেয়েদের দ্বারা। কাছেই কোথাও কংক্রিটের গাঁথনি উঠছে বোধ হয়।
আমাগো যে জানান নাই?
জানাব ভাবছিলাম। তোমাগো কী অবস্থা কে জানে। তারপর চিঠি পাইলাম, বারণ কইরা লিখলাম আইসো না। এখন মজা বোঝ।
শোভার মা মফস্বলের তেজে ফোঁস করে ওঠে, মজা কীসের? এত বড়ো পৃথিবীতে মাথা গোঁজনের ঠাঁই পামু না? ঠাঁই আদায় কইরা নিম্ন।