অলুক্ষুনে সন্তান?
নইলে প্রায় এগারোটি মাস মায়ের পেট দখল করে থেকে এমন অসময়ে ভূমিষ্ঠ হয়, অসময়েব এই বাদল! আর হাড়-কাঁপানি শীত শুরু হবার পর?
মেয়েটাকে মারবার জন্যই কি দেবতাদের ইঙ্গিতে প্রকৃতির এই নিষমভাঙা খাপছাড়া আচরণ?
কে জানে।
একটা ছেলেকে মারবার জন্য দেবতারা ব্যস্ত হয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটাবে, এটা ভাবতেও
আবার মনটা খুঁতখুঁত করে গোবিন্দের।
কেন তবে তার প্রথম সন্তানের নিশ্চিত মরণ এভাবে ঘনিয়ে আসবে ?
ক্রমে রুমে শীতের এখন বিদায় নেবার পালা। এলোমেলো উলটো-পালটা বাতাস বইবে কখনও উত্তর কখনও দক্ষিণ থেকে, রাতে কাঁথাকাপড় দরকার হলেও দিনের বেলায় ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব খালি-গা জুড়িয়ে দেবে। তার বদলে বলা নেই কওয়া নেই শুরু হয়েছে টিপটিপ বৃষ্টির সঙ্গে কনকনে উত্তুরে হাওয়া।
কী দাপট শীতের।
হোল্লার একরত্তি আঁতুড়ঘর। গোয়ালের পাশে ছিটালের গা ঘেঁষে তোলা। ভিতের লেপা পৌঁছার বালাই নেই, মানুষের জন্মলাভের মতো নোংরা অস্থায়ী ব্যাপারটার জন্য অত হাঙ্গামা কে করে? মাটিটা শুধু একটু চেঁছে দেওয়া হয়েছে কোদাল দিবে।
সস্তা পুরানো হোগলার চালাটা তুলে ভিতরে দুটি খড় বিছিয়ে দেওয়া হযেছে। খড়ের উপর বস্তা-কাটা পুরানো ছেঁড়া একটা চট।
মোটে একটা মাসের ব্যাপার। মাস কাটলেই আঁতুড় উঠবে, স্নান করে শুদ্ধ হয়ে ছেলে নিয়ে রেবর্তী ঘরে উঠতে পাবে। তখন ফেলে দেওয়া হবে হোগলার চালা।
চিরকালের এই রীতি।
তার বাপদাদারাও এমনি চালার ঘরে জন্মেছে, তার নিজের বেলাও অন্য কোনো ব্যবস্থা হয়নি। অনেক পুরুষ ধরে অনেকে যেমন জন্মেছে তেমনই অনেকে অবশ্য মরেও গেছে এই আঁতুড়ে। তা তো মরবেই। জন্ম আর মৃত্যু নিয়ে সংসার-শুধু জন্ম নিয়ে তো নয়।
মেয়েটা বাঁচবে আশা করতে ভরসা হয় না। রেবতীও বাঁচবে কি না সন্দেহ। বাদলা ধরার বা শীত কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বেড়ার চারিদিকে মাটির অল তুলে দিয়ে গোবিন্দ ভিতরে জল গড়িয়ে যাওয়া ঠেকিয়েছে, কিন্তু হোগলার ফাঁক দিয়ে জলের ছাঁট যাওয়া বন্ধ করা যায়নি।
দাওয়ায় বসে গোবিন্দ আকাশ-পাতাল ভাবে, রেবর্তীর ক্ষীণকণ্ঠ কানে এলেও কিছুক্ষণ সাড়া দেয় না। তারপর ধীরে ধীরে উঠে মানপাতাটা তুলে মাথায় দিয়ে আঁতুড়ের কাছে যায়। আঁতুড়ের হোগলার উপরে চাপাবার জন্যই সে কয়েকটা মানপাতা কেটে এনেছিল।
রেবর্তী শীতে কাঁপছিল কিন্তু কথা বলতে গিয়ে গলা তার কেঁপে যায়। ভয়েই বলে, সেঁক তো দিলাম, আওয়াজ দিচ্ছে না যে? আরেকটু আগুন করে দাৎ। দিচ্ছি।
সে একদৃষ্টে খানিকক্ষণ দুদিনের বাচ্চাটার দিকে চেয়ে থাকে। শবারটা কাথায ঢাকা, মুখচা শুর দেখা যায়। শ্যামবর্ণ শিশুব মুখের চামড়াটা যেন খানিকটা নাল হয়ে কালচে মেবে গেছে মনে হয।
বেবর্তী ক্ষীণগলাম আবাব বলে, ছাট লেগে ভিজে যাচ্ছি। হাড়ের তেজ নেই? ভেতর থেকে কাঁপছে। হাত পাগুলো অবশ লাগছে।
গোবিন্দ নীববে শোনে।
দাওযায় ফিবে যাবার উপক্রম করতেই বসুইঘব থেকে মা ডেকে বলে আবার ভেঙবে ঢুকলি কেন বে যা, ডুব দিয়ে আয় পুকুর থেকে-
তুমি একটু আগুন কবে দাও দিকি।
বলে গোবিন্দ গটগট করে দাওনান উঠতেত্ব বসুইঘাবে মা আর মাসি পিসি চেচামেচি জুতে দেয়, ঘব থেকে গগন বেবিয়ে এসে ঝাঁঝের সঙ্গে বলে আহা হাহা এত বড়ো ধোও মানুষটা, তোব কী বুদ্ধি বিবেচনা-আঁতুড ঘেঁটে সেই কাপাড ঘবে ঢুকছিস?
ঘবে ঢুকছি না।
গোবিন্দ ব্যাজাব হযে দাওযাথ উবু হয়ে বসে পড়ে।
গগন বলে, দাওযায উঠলি কী বলে?
গোবিন্দ কথা কয় না। বাড়ির মানুষেবা অনেকক্ষণ পশুপম্ভব কবে, বাববার গোবিন্দকে অন্তঃ ঘাটে গিয়ে কাপওটা কেটে আসবাব জন্য বলা হয়- কখনও মিনতি করে, কখনও বাগ দেখিয়ে।
শেষে গোবিন্দ বলে, আমার আব কাপড নেই।
গগন বলে, আমার কাপড়টা দিচ্ছি তুই ঘাটে যা দিকি ঘরদোর অশুচি কবলে তোব ছেলে বউযেবই অকল্যাণ আগে হবে, এই সিদে কথাটা বুঝিস নে তুই?
গোবিন্দ অগত্যা ঘাটে গিয়ে ডুব দিয়ে আসে বাড়ির মানুষের চাপ বা পপের ভয়েই ঠিক নয়। তাব নিজেব মনটাও খুঁতখুঁত করছিল। সে ঘাটে যেতেই অন্নদা তাড়াতাড়ি সমস্ত দাওয়াটা গোবব জলে লেপে দেয়।
ডোবাপুকুরে ডুব দিয়ে এসে বেবতীব একটা পুবানো ছেতা শাডি৮ 'জ করে 'কামবে জড়িয়ে ভিজে কাপডটা দাওযায় টান করে মেলে দিয়ে গোবিন্দ দাওয়াতেই উবু হয়ে বাস আকাশ পাতাল ভাবে।
গগন পরনের কাপড়খানা ছেড়ে দিতে চাইলেও সে কাপড় পরা যায় না। গগনকে তাহলে গামছা পরতে হয। গায়ে একটা কুর্তা আছে বটে কিন্তু এই ঠান্ডায় আধভেজা গামছা পরে থাকলে
বুড়ো গগনকে নির্ঘাত বিছানা নিতে হবে।
এবং সম্ভবত বিছানা থেকেই তারে চালান করতে হবে শ্মশানে।
ইেডা শাড়িটা দিয়ে বাচ্চাটাকে আবেকটু ঢোকে দেবার কথা ভালছিল। এখন বাবা হযে নিজের কোমবেই সেটা জড়াতে হয়।
বাড়ির চাবিদিকে এককালে বেডা ছিল, বছবখানেক হয ভেঙে পড়েছে। গগনের মেটেপথ থেকে ঘবেক দাওযায় বসা মানুষেবও বুক পর্যন্ত নজরে পড়ে।
জলে-কাদায পিছল পথে জুতো হাতে নিয়ে আঙুল টিপে টিপে চলতে চলতে নাবেন দাঁড়িয়ে প্রশ্ন কবে, খবব কী গোবিন্দ ?
গোবিন্দ উঠে গিয়ে বলে, আর খবর, খবর আমার চোদ্দোপুরুষের পিন্ডি।
অল্পক্ষণের জন্য বৃষ্টিটা একটু ধরেছিল, ভাঙা ছাতিটা ছিল নরেনের বগলে। তবে বৃষ্টি একেবারে বন্ধ হবে সে আশা নেই। আকাশ দেখেই টের পাওয়া যায় খানিক বাদে আবার নামবে।
হোগলার চালাটার দিকে চেয়ে নরেন জিজ্ঞাসা করে, কেমন আছে?
এখনও টিকে আছে। বাচ্চাটা বোধ হয় ও বেলাই যাবে, ওর মা-টার হয়তো বা আরও দু-চার দিন লাগতে পারে। নরেন গম্ভীর হয়ে বলে, তবু হাত-পা গুটিয়ে দাওয়ায় বসে আছ? মানুষ খুন করলে পাপ হয় জানো না? ঘরে নিলে যদি পাপ হয়, সেটা অনেক ছোটো পাপ।
গোবিন্দ ঝাঁঝের সঙ্গে বলে, হা। পাপের কথা ভাবছে কে? মন নয় একটু খুঁতখুঁত করবে, সাতপুরুষের নিয়ম ভাঙা হল। সে জন্য অটিকে আছে নাকি! ঘবে নিলে বাড়ির সবাই হাউমাউ করে উঠবে না ?
করুক হাউমাউ। তোমার ছেলেবউ তো বাঁচবে।
গোবিন্দ করুণভাবে একটু হাসবার চেষ্টা করে। রোজ আপিস যাচ্ছ, মাসকাবারে বেতন গুনছ। বেকারের দশা কী বুঝবে? ঘরবাড়ি বুড়ো বাপের, বাপের ঘাড়ে বাই। সোজা বলবে, শ্লেচ্ছ অনাচাবী পাষণ্ড, বেরো আমার বাড়ি থেকে, দূর হয়ে যা।
নরেন সঙ্গে সঙ্গে বলে, বলুক না? পরে নয় বেরিয়েই যাবে, আজ তো ওদের বাঁচাও! গায়ের জোরে তো ওরা পারবে না তোমার সঙ্গে? গায়ের জোরে ঘরে নিয়ে যাও। কয়লা কাঠ না থাকে, ঘরের খুঁটি ভেঙে আগুন করে সেঁক দাও। এটুকু যদি না কর, আমি তোমাকে খুনি বলব। বলে বেড়াব, তুমিই নিজের বউছেলেকে খুন করেছ।
নরেন আর দাঁড়ায় না। আটটার গাড়ি ধরতে না পারলে অফিসে লেট হয়ে যাবে। সেটা কম বিপদের কথা নয়, তবু আরও কিছুক্ষণ দাঁড়ালে যদি কিছু লাভ থাকত তবে না হয় আজ লেটই করত। গোবিন্দকেও তো সে জানে। বাড়িব লোক হাউমাউ করবে এটা বাজে অজুহাত, আসল বাধা গোবিন্দের নিজের মনে।
নিজের মন থেকেই সে সায় পাচ্ছে না। নইলে বাড়ির লোকের অসন্তোষের খাতিরে কেউ চোখের সামনে বড়ছেলেকে মরে যেতে দিতে পারে-ঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে একটু আড়াল আর আগুনের তাপের ব্যবস্থা করলেই দুজনে বেঁচে যাবে যখন জানা আছে?
এদিকে গোবিন্দ গালে হাত দিয়ে বসে নিজের মনে বলে, এতই যেন সহজ! মুখে বলা আর কাজে করা।
ওদের ঘরে তুলবার চেষ্টা করলেই যে কী কাণ্ড শুরু হবে নরেন তার কী জানবে? সে তার গায়ের জোরটাই দেখছে, গায়ের জোরটাই যেন সব।
গায়ের জোরে যেন তাকে ঠেকাবার চেষ্টা করা হবে আর জোরে না পারলে হার মেনে শুধু চেঁচামেচি করে তাকে দুর হয়ে যেতে বলেই সবাই ক্ষান্ত থাকবে।
হঠাৎ সত্যিকারের উম্মাদ হয়ে যাবে বুড়ো বাপটা, বুক চাপড়ে চেঁচিয়ে মাথার চুল ছিঁড়ে জলে- কাদায় গড়াগড়ি দিয়ে তো বা মেরেই ফেলবে নিজেকে। মা ঘরের কোনার সিঁদুর মাখানো পটটার সামনে হুমড়ি খেয়ে পাড়ে একটানা আর্তনাদ করে যাবে এবং খুব সম্ভব একফাকে এই শীত-বাদলার মধ্যে এক কাপড়ে বেরিয়ে চলে যাবে যেদিকে দুচোখ যায়। অন্যেরা কী করবে সে হিসাব নয় নাই ধরল। মা-বাপের কথাটা না ভাবলে চলে কী করে? গোবিন্দ অসহায়ের মতো চেয়ে থাকে। মানে হয়, সে যেন জাঁতাকলে পড়েছে, যে জাঁতাকলে মানুষের ভেতরটা পিষে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। নরেন কী করে বুঝবে চোখের সামনে ছেলেবউকে অত্যাচারের হাতে মরতে দিয়ে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে হলে মুহূর্তগুলি কেমন কর। তের দাঁতের মতো হয়ে ওঠে, সময় কীভাবে প্রাণটাকে ধীরে ধীরে চিরে চিরে দিয়ে যেতে থাকে।
কাঠের উনানের কিছু জ্বলন্ত কয়লা একটা সরায় নিয়ে গামছা পরে অন্নদা আঁতুড়ে যায়-বেরিয়ে ঘাটে গিয়ে ডুব দিয়ে এসে রান্নাঘরে ঢুকবে।
একটু পরেই অন্নদা বেনিয়ে আসে, গোবিন্দেব ছোটোপিসিকে ডেকে আঁতুড়ে পাঠিয়ে দেয়।
ঘাটে যাবার বদলে ছেলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে মৃদুষবে বলে, ভাবিস কেন? ভগবানকে ডাক।
ভগবান তো সবই করছেন।
ও কথা বলতে নেই বাবা।
একটু ইতস্তত করে অন্নদা আবার বলে, টিন জোগাড় হয় না?
কোথা পাব?
একটু দাঁড়িয়ে নিজের মনে কী যেন ভাবে অন্নদা, তারপর ঘাটে গিয়ে স্নান করে গামছা কেচে শুদ্ধ হয়ে না এসেই ঘরের মধ্যে গিয়ে ঢোকে।
গোবিন্দ স্বাক হয়ে চেয়ে থাকে।
তার সঙ্গে কথা কইতে কইতে মা কী ভুলে গেছে তার সদ্য সদ্য আঁতুড় থেকে বেরিয়ে আসার কথা ও
খানিক আগে তাকে আঁতুড় থেকে বেরিয়ে শুধু দাওয়ায় উঠতে দেখে চেঁচামেচি জুড়েছিল, ঘাটে গিয়ে ডুব দিয়ে আসতে বাধ্য করেছিল, আর নিজের বেলা সব ভুলে গিয়ে সোজা ঘরের মধ্যে গিয়ে ঢুকল!
কী আজব ব্যাপার।
তারপর ভিতরে গগনের সঙ্গে। তাকে নিচুগলায় কথা বলতে শুনে গোবিন্দের প্রাণটা ছলাত
করে ওঠে। শেষ হয়ে গেছে? আঁতুড়ের মৃত্যুর ধাক্কায় মা-র খেয়াল নেই নগন থেকে বেরিয়ে স্নান না করে ঘরে ঢোকা চলে না?
বাচ্চাটা? না, বউটা?
উঠে গিয়ে দেখে আসবে সে শক্তি যেন গোবিন্দ পায় না। বসে বসে সে একটা কথাই বার- বার মনে এনে সে আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করে যে চিৎকার কবে চেঁচিয়ে কেঁদে না উঠে মরণকে এমন চুপচাপ বরণ করার মানুষ তো তার মা নয়।
বাচ্চাটা শেষ হয়ে গিয়ে থাকলেও এতক্ষণে মা-র কান্নার আওয়াজে চারিপাশের অনেক বাড়িতেই জানাজানি হয়ে যেত, এ বাড়িতে মৃত্যুর পদার্পণ ঘটেছে।
খানিক পরে গগন আর অন্নদা দাওয়ায় বেরিয়ে আসে।
গগন জিজ্ঞাসা করে, একটা কিছু ব্যবস্থার ক ভেবে পাচ্ছ না?
গোবিন্দ বলে, কী আর ব্যবস্থা করব?
গগন আপশোশ করে বলে, হাতে একটা পয়সা নেই যে কিছু করি। পাঁচজনের কাছে ধার জমে আছে, আবার গিয়ে চাইলে কেউ দেবে না। কপাল রে।
অন্নদা একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে।
গোবিন্দ নীরবে দুজনের ভাব লক্ষ করে। তার মনে হয় শুধু এই কথাগুলি বলার জন্য ধবের মধ্যে পরামর্শ করে তারা যেন দাওয়ায় আসেনি, এটা নিছক ভূমিকা, তাদের আরও কিছু বলাব আছে এবং সেটাই আসল বক্তব্য।
গগন বলতে যায়, আমি ভাবছিলাম কী——
অন্নদা তাড়াতাড়ি যোগ দেয়, মাথা ঠান্ডা করে শুনিস বাবা, কথাটা, একটু বিবেচনা করে দেখিস। এমন ঝপ করে খেপে যাস, তোকে কিছু বলতেই ভয় হয়।
গোবিন্দ ধীরে বলে, কী বলছ শুনি না?
গগন বলে, বউমাকে ওখান থেকে সরাতে হয়, বাচ্চাটা তেমন নড়াচড়া করছে না।
অন্নদা বলে, এমনি কড়া শীত হলে ভাবনা ছিল না, বাদলটা নামায় হয়েছে মুশকিল।
গোবিন্দ নীরবে প্রতীক্ষা করে।
সে টের পায় তার কাছে হঠাৎ কথাটা পাড়তে গগনও সাহস পাচ্ছে না, ইতস্তত করছে। গোবিন্দ আশ্চর্য হয়ে ভাবে যে ঘরের মধ্যে এতটুকু সময় একটু পরামর্শ করেই কী এমন গুরুত্বপূর্ণ কথা তাবা ঠিক করে ফেলেছে যা তাকে বলতে গিয়ে এতখানি ভূমিকা দরকার হয়, এতবার ঠেকে গিয়ে গগনকে ঢোক গিলতে হয়?
দুজনে চুপ করে আছে দেখে গোবিন্দ শান্তভাবে বলে, কী বলছিলে বলো না?
কথাটা শেষ পর্যন্ত বলে ফ্যালে অন্নদাই।
বলে, আমবা বউমাদের ঘরে আনব ঠিক করেছি, তুই কিছু বলতে পারবি না।
গগন তাড়াতাড়ি বলে, ওখান থেকে না সরালে বাঁচবে না।
গোবিন্দ হতবাক হয়ে থাকে।
তার বউ ও বাচ্চাটাকে ঘরে আনার প্রস্তাবে সে সম্মতি দিতে পারছে না ধরে নিয়েই যেন গগন
তাকে বুঝিয়ে বলে, এমন কিছু দোষ হবে না। একটা কোনা সাফ করে পুরনো তক্তপোশটা পেতে দিলেই হবে, পরে নয় ফেলেই দেব ওটা। আতুড় উঠলে ঠাকুরমশায়কে ডেকে ঘরটা সুদ্ধ করে নেয়া, একটা প্রাচিত্তির করা ফুরিয়ে গেল। এতে আপত্তি করার কী আছে?
অন্নদা হঠাৎ যেন ছেলের ওপর বিষম চটে যায়। চেঁচিয়ে জোর দিয়ে বলে, না তোর মানা শূনব ন' আমরা, ছোলেব ঘরের প্রথম নাতি তার গলার কথা অটিকে যায়।
গোবিন্দের মনে হয় ভেতর থেকে যেন প্রচন্ড একটা হাসির বেগই ঠেলে উঠেছে, কিন্তু হাসি তাব আসে না।
কোনো রকমে সে উচ্চারণ করে, আনো ঘরে।
অন্নদা তারই অনুমতির জনাই যেন কোনো রকমে ধৈর্য ধরেছিল, আঁতুড়ে ছুটে যায়। আগুনের মালসা হাতে নিয়ে একটা ন্যাকড়ার পুটলি বুকে করে এসে ঘরে ঢোকে।
গোবিন্দের চমক ভাঙে অন্নদার ডাকেই।
পাঁজাকোলা করে তুই বউমাকে তুলে নিয়ে আয় বাবা। উঠে আসতে পারবে না।