shabd-logo

ধাত

29 December 2023

2 Viewed 2

একটা নতুন বাড়ি উঠছে শহরতলিতে। খাস শহরে স্থানাভাব হলেও আনাচে-কানাচে এবং শহরের আশেপাশে বাড়ি তো উঠছে কতই। কাঠা তিনেক জমিতে ছোটোখাটো এই দোতলা বাড়িটা কিন্তু উঠছে আমাদের গল্পের জন্য।

বাড়িটা উঠছে তরুণী অমলার, বিনোদের টাকায়। নিজের আপিসে প্রায় বিনা খাটুনিতে একটা চাকরি তাকে বিনোদ দিয়েছে। কিন্তু অমলা জানে রূপ যৌবন আজ আছে কাল নেই। বিনোদের আপিসের চাকরি আরও অনিশ্চিত, বিনোদ যখন খুশি যাকে খুশি বিদায় করে। তার চাকরি করার ছ-মাসের মধ্যে তিনজনকে সে ছাঁটাই করেছে, তাব মধ্যে দুজন পুরানো লোক।

অথচ এদিকে একটা মুখোশ আছে প্রেমের, নগদ টাকা নেওয়া যায় না। মুখোশটা তারা দুজনেই বজায় রেখেছে নিজের নিজের সুবিধার জন্য। বাড়ি নেওয়া যায়। অন্য লোকের এত বাড়ি তৈরি বাশ দিয়ে দিয়ে বিনোদ ফেঁপে যাচ্ছে, তাকে একটা ছোটোখাটো বাড়িই করে দিক। সকলকে নিয়ে মাথা গুজবার স্থায়ী একটা ঠাঁই, নিশ্বাস ফেলে ফেলে মাসে মাসে ভাড়া-গোনা থেকে রেহাই।

ভিতের পর গাঁথনি শুরু হয়ে গেছে। রাজমিস্ত্রি খাটছে দুজন, সাদেক আর পণ্ডিত। সাদেক পাকা বাজমিস্ত্রি, এটাই তার বংশগত পেশা। বিনোদের ফার্মের সে বাঁধা লোক, এ রকম ছুটকো বাড়ি গাঁথার কাজে বিনোদ তাকে সাধারণত লাগায় না, কিন্তু অমলার কথা ভিন্ন।

ভালো মালমশলা আর ভালো মিস্ত্রি দিয়ে বাড়িটা না করে দিলে অমলা অভিমানের ছলনায় ঝঞ্ঝাট বাড়াবে।

পণ্ডিত ক-বছর আগেও মজুর খাটত। মশলা মেশাবার কালে সে ছিল ওস্তাদ। যুদ্ধের পর বেড়ে গেছে বাড়ি করার হিড়িক। যুদ্ধের সময়কার কাঁচা পয়সা এবং এস ও চোরাবাজারের পয়সার নামে বেনামিতে বাড়ির রূপ নেবার ঝোকের সঙ্গে যোগ হয়েছে পাকস্তান থেকে ব্যাবসা গুটিয়ে ভিটেমাটি বেচে চলে আসা মানুষগুলির সবার আগে একটা ভিটের ব্যবস্থা করাব ঝোঁক।

বাড়ির জন্য এমনই প্রাণে খাঁ-খাঁ করে এদের যে তৈরি বাড়ি কিনতে পেলে যেন বর্তে যান। বিনোদের মতো মানুষেরা এটা কাজে লাগাতে কসুর করেনি। সে একাই ওচা মাল আর পচা মশলা দিয়ে চটপট যেমন তেমন করে গেথে তোলা বাড়ি বেচে ও রকম সাতজন বাড়ি-পাগল মানুষেব সম্বলে মোটা ভাগ বসিয়েছে।

ওই বাড়িগুলি গাঁথবার সময় বড়োই সে বিরক্ত হয়েছিল সাদেকের উপর।

তোমায় বারবার বলছি অত নিখুঁত কাজে আমার দরকার নেই, স্পিড বাড়িয়ে দাও, চটপট

তুলে দাও-কিছুতে তুমি কথা শুনবে না!

ও রকম কাজ করতে শিখিনি বাবু। যেমন শিখেছি, তেমনই কাজ করছি।

পাকাপোক্ত বাড়িও গেঁথে দিতে হয় হিসেবি পাকা লোকের শোনদৃষ্টির সামনে, সাদেককে তাই বিনোদ ছাড়তে পারেনি।

রাজমিস্ত্রির ওই চাহিদার সময় মোটামুটি কাজ শিখেই পণ্ডিত হয়েছিল রাজমিস্ত্রি। সাদেকের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পারলেও কাজ পণ্ডিত ঠিকমতোই করে যায়। সাদেকের চেয়ে সে বরং তাড়াতাড়ি কাজ এগিয়ে দিতে পারে, যদিও গাঁথনি হয় একটু কম মজবুত।

পণ্ডিত তার আসল নাম নয়। পাণ্ডিত্য বা পণ্ডিতেব বংশে জন্মানোর জন্য তার এ নাম হয়নি। পণ্ডিতদের মতোই সব বিষয়ে সব প্রশ্নের যেমন হোক একটা মানে করে দেয় বলে কে একজন তামাশা করে তাকে পণ্ডিত বলে ডাকতে শুরু করেছিল, সকলের কাছে তার এখন এটাই নাম দাঁড়িয়ে গেছে।

এখনও ভারা বাঁধার দরকার হয়নি, দেয়াল এখনও কোমরের নীচে। নীচে দাঁড়িয়েই মশলা ঢেলে ইট সাজানো যায়। ভগলু বালতি করে জল এনে ইট ভিজিয়ে দেয়, জগদেও মশলা মেখে কড়াইতে ভরে। মাথায় করে ইট আর মশলাব কড়াই নিয়ে টিকিন মিস্ত্রিদের জোগান দেয়। ছোকরা রাখাল খাটে ফুটফাট ফরমাশ।

এদের টাইমের কাজ। রতন আর জগন্নাথ সকাল সকাল এসে ইট ভেঙে ছোটোবড়ো খোয়া করতে লেগে যায়-সারাদিন তাদের হাতুড়ি দিয়ে ইট ভাঙা চলে, রোদ চড়লে খোয়ার স্তুপে একটা শিক ঢুকিয়ে মাথার উপর ছাতি বেঁধে নেয়। তাদের চুক্তির কাজ। কয়েকদিন খোযা ভাঙার পর একফুট উঁচু আর চারকোনা করে সাজিয়ে দেবে, মাপজোখ হবার পর স্কোয়ারফুট হিসাবে মজুরি

পাবে।

হরে-দরে টাইমের মজুরদের সমানই দাঁড়ায় তাদের মজুরি।

টিকিনের মাথায় রাশীকৃত চুলের মস্ত খোঁপা, হাতে মোটা মোটা রূপার বালা এবং সাবাদোহে নানাপ্যাটার্নের উলকির নকশাকাটা।

টিকিন পণ্ডিতের সঙ্গে থাকে। এই বয়সেব যুবতি মেয়ের পক্ষে একজন পুরুষের সসো থাকাই নিয়ম। একা থাকতে চাইলে তার মানে দাঁড়াবে যে সে দশটা পুরুদেব সঙ্গে বজ্জাতি করাব স্বাধীনতা চায়, বেশ্যা হয়ে যেতে চায়। তা সে খুশি হলে হতে পাবে কিন্তু যথানিয়মে দেহের দোকান খুলতে হবে, দশজনের সঙ্গে খেটে খাওযার সম্মান বজায় রাখা চলবে না। আরও দশটা মেয়ে তো খেটে খাচ্ছে, বাচ্চা-কাচ্চার ঝামেলা পোযাচ্ছে, তাদের সাথে থেকে তাদের মরদদের সঙ্গে খেলা করার অধিকারও টিকিনের থাকলে চলবে কেন? নিয়ম তো থাকা চাই সংসারে। একজন পুরুষের সঙ্গে থাকলে সে তাকে সামলে বাখবে, বেইমানি করতে দেবে না।

একজনের সাথে বনিবনা না হলে ছাড়াছাড়ি হবে, আবেকজনের কাছে যাবে। কিন্তু তাকে থাকতেই হবে একজন পুরুষের সলো।

পণ্ডিত অবশ্য তাকে খাটতে না দিয়ে পুষতে পারে-বউয়ের মতো। বিয়ে করা বউটা বেঁচে থাকলে সে যেমন আর খাটতে যেত না, ঘবে বেখে তাকে পুষতে হত। স্বামী স্ত্রীতে খাটা অবশ্য নিষিদ্ধ নয় মোটেই। ভগলু জগদেও বতন জগন্নাথ সকলের বউ ঘব ছেড়ে খাটতে যায়, কেউ টাইমের কেউ ঠিকাকাজে।

কিন্তু পণ্ডিতের হল রাজমিস্ত্রির রোজগার, তার বিয়ে-করা বউ বাইরে খাটতে যেতে রাজি হবে

না, বউকে খাটাবার অধিকাবও তার নেই।

এবং ঠিক এই জন্যই টিকিনকেও সে জোর করে বলতে পারে না যে তোর খাটতে গিয়ে কাজ নেই, আমি তোকে ঘবে রেখে পুসব।

টিকিন নিজেই রাজি হবে না।

স্বেচ্ছায় সে পণ্ডিতের সঙ্গে আছে। অনা পুরুষ নিয়ে বেইমানি করা ছাড়া, পণ্ডিতের বেশি রোজগারে ভাগ বসানোর জন্য খানিকটা বাধ্যবাধকতা ছাড়া, খুশিমতো চলাফেরার অধিকার, যখন ইচ্ছা পণ্ডিতকে ছেড়ে যাবাব অধিকার পুরোমাত্রায় বজায় আছে।

শাস্ত্রমতে আইনমতে বা প্রথামতে বিয়ে করা বউ ঘরে বসে খেলেও তার কতগুলি বিশেষ অধিকার থাকে। পোষা হয়ে থাকলে কিন্তু টিকিন বিয়ে-করা বউয়ের এই বিশেষ অধিকারগুলিও পাবে না, নিজেব বিশেষ অধিকাবগুলিও হাবাবে। পণ্ডিতকে যখন খুশি ছেড়ে যাবার অধিকার পর্যন্ত সে হাবিষে বসবে।

ছাড়তে চাইলেই পণ্ডিত বলবে, অ্যাদ্দিন যে পুষেছি, সেটা শোধ দিয়ে যাবি।

তবু জোব কবে যেতে চাইলে পণ্ডিত যদি তাব বালা থেকে গায়েব কাপড় পর্যন্ত কেডে নিয়ে ঘাড়ে ধবে বাস্তাষ সেলে দেয়, লোকে তাকে দোষ দেবে না।

বলবে, ঠিক করেছে। এতদিন ঘাড় ভেঙে খেয়ে পরে আবামে থেকে আজ মাগি বেইমানি করছে।

বউকে টাইমে খাটতে পাঠায় যে ভগল, সে ও হয়তো বেগে গিয়ে থুতুব সঙ্গে মুখের খইনিটা পর্যন্ত ফেলে দিয়ে বলবে, তেবা শবম নেহি লাগতা কুত্তা সে ভি নাচা হো গিযা

সবাই সায় দেবে তাব কথায়। সবাই জেনে যাবে মানুসের সব চেয়ে বড়ো দোষটা আছে টিকিনের মধ্যে, সে নিমবহাবামি কবে।

সাপের মতো যে তাকে পোযে তারেও সে সুযোগ পেলে দংশায়।

কাজের তদাবক কবে আব দিনান্তে মিস্ত্রি মজুব মজুবনির্ব মজুরি মিটিয়ে দেয় কার্তিক। বিনোদের বাঁ একম এক বোলো ছেলে, একটা পা তাব একটু বাকা, চেবা ঠোঁটের জন্য পান বাঙা বড়ো বড়ো দাঁতগুলি সর্বদা বেবিয়ে থাকে। সম্পর্কের হিসাবেই সে বিনোদের অশ্রয়ে থাকে কিছু বিনোদ কাউকে বিনামূলো আশ্রয় দেওয়ার মানুষ মোটেই নয়,-খাওয়া পরা মাথা গুঁজে থাকার ভাড়া সব কিছুর অনেক বেশি দাম কর্ণতককে খাটিয়ে তুলে নেয়।

খানিক তফাতের আমগাছটার ছাযায় বসে নে তাদের বাজ দ্যাখে বিডি টানে কিম্য,

বুকাবের বাটিতে আনা বুটি তবকাবি খেয়ে লম্বা ঘুম দেয়, আজ এ বাড়ি কাল ও বাড়ি থেকে খববেব কাগজ চেযে এনে পড়ে। কাজের ফাকে টিকিন গিয়ে আবদদ জানায়, একটো বিডি হোবে বাবু।

কার্তিক ভাকে একটা বিডি দিয়ে জিজ্ঞাসা কাল তোমাদের কড়া হচ্ছিল কেন?

ঝগড়া ঝগড়া বেনে ক্রোবে পণ্ডিতের সাথমে কথা বলাছ

তুমি পণ্ডিতের বউ না

টিকিন খিলখিলিয়ে হাসে। দেখা যাথ কাতিকেব পান বাঙা দাতগুলিব চেয়ে ঢের বেশি ঘন গাঢ় বং টিকিনের দীতে। মিশিতে কুচকুচে কালো হয়ে আছে দাতগুলি। ঠিক যেন সাজানো কালো দুসাবি মুক্তা।

টিকিন টের পায় কার্তিক তাব মুখ দেখবে না দেহের গড়ন খোব ঠিক করাতে পারছে না। সে কাছাকাছি চোখের সামনে এলেই কার্তিক এ বকম কবে, ঠিক যন্ত্রের মতো বাঁধা নিয়মে খানিক মুখের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থেকে সর্বাঙ্গে একবার চোখ বুলিয়ে বে। কিন্তু কাচুমাচু কবে না তাব শান্ত বিষণ্ণ উদাস ভাবটাও ঘোচে না। সে শুধু যেন একটু অবাক হয়ে গো। বড়ো ভালো ছোকবা, গাছতলায় বসে তাদের কাজ দেখে, শেষবেলায় কাজের শেষে যাব যা পাওনা মিটিয়ে দেয়-বাসভাড়া বিডি সিগ্রেট ক্যাশবাবুব সেলামি তাব নিজের সেলামি এ সব কোনো বাবদে দুটো পয়সাও সে কোনোদিন কাটে না কাবও মজুবি থেকে।

পণ্ডিত ধীরে ধীবে সুব কবে যে পুঁথি পড়ে, সেই পুঁথিতে যে জোষানবয়সি ঋষিব ছেলেব কথা আছে কার্তিক যেন চাল', 'ন ভাবেসাবে সেই বকম-শুধু চেহাবা তাব বিচ্ছিবি। বিডি ধবিয়ে টিকিন বলে, বোজ নাই মিলেছে। আজ মিলবে তো ঠিক? কার্তিক নোংরা ন্যাকড়ার নসা দেওয়া নাক ঝেড়ে বলে, আমি কি রোজ দেবার মালিক? আজ সঙ্গে টাকা দিয়ে দেয়নি, পিয়োন দিয়ে টাকা পাঠিয়ে দেবে বলেছে। টাকা এলে পেয়ে যাবে। দুরোজ তো পিয়োন না এল? আজ যদি নাই আসে? ই কীরকম মজা হল বাবু! কার্তিক কোনো কথা না বলে শুধু মুখ বাঁকায়। মুখ বাঁকালে মুখটা আরও কুৎসিত দেখায়।

টিকিন গজরগজর করতে করতে ফিরে যায়। জীর্ণ পুরানো যে বাড়িটার পাশে নতুন বাড়িটা উঠছে তার চুনবালি খসা দেওয়ালটার ছায়ায় হাঁটু মুড়ে দেয়ালে ঠেস দিয়ে আরাম করে বসে আঁচলে বাঁধা শুকনো পান আর তামাক পাতা মুখে ছেড়ে দেয়।

সাদেক হেঁকে বলে, ইটা ল'ও, জলদি-

পণ্ডিত বলে, আরে হেই, মশলা ?

টিকিন হাই তুলে ভগলুকে বলে, পিয়োন রূপেয়া লিয়ে আসবে তবে আজ রোজ মিলবে ভগলু! সাদেক বলে, রোজ আলবাত মিলেগা। ইটা লাও।

কিন্তু টিকিনের ধাতের সঙ্গে যেন কাপে মেলানো মরদগুলির ধাত।

পণ্ডিত হাই তুলে বলে, পানি পিয়েগা, পিয়াস জানাতা।

বলে দেড় হাত উঁচু নতুন গাঁথা দেওয়ালের মায়া কাটিয়েই সে টিকিনের পাশে জীর্ণ পুরানো দেয়াল ঘেঁষে বসে চোখ বোজে।

বালতির জলে হাত-পা ধুতে ধুতে ভগলু ভাঙা গলায় গান গেয়ে উঠবার চেষ্টা করে।

জগদেও বলে, বহুত আচ্ছা ওস্তাদজি!

সমতল চৌকোণ করে সাজানো খোয়ার স্তুপের খানিক তফাতে রতন জগন্নাথ ছোটো খোয়া ভাঙছিল-কাজ যদি ঠিকমতো চলে, দেয়াল গেঁথে উঠে ছাদ গাঁথার প্রয়োজন খুব বেশি দূর ভবিষ্যৎ নয়। টিকিন সাদেক পণ্ডিতদের মতো তাদেরও হাত যেন শিথিল হয়ে আসে।

তারাও উঠে গিয়ে বসে পড়ে দেওয়ালের ছায়াতে। ডিবা থেকে বিড়ি বার কবে রঙন সাদেককে একটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে, মেচিস হ্যায়?

সাদেক দেশলাই জ্বালে। একটা কাঠিতে বিড়ি ধরে পাঁচটা।

খেদের সঙ্গে সাদেক বলে, বড়া লুচ্চা বেইমান বিনোদবাবু। খালি মতলব, খালি মতলব! তাদের দিকে তাকিয়েই যেন এতক্ষণে কার্তিকের ঘুম পেয়ে যায়। মাথার নীচে হাত রেখে সে সটান চিত হয়ে শুয়ে পড়ে।

সূর্য মাথার উপর থেকে পশ্চিমে ঢলে পড়ে অনেকটা। আকাশে রূপার চাকৃতির মতো লেপটে আছে চাঁদ, একটা দিকে একটুখানি কাটা। টিকিন একটা কঠিন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে বসে মরদগুলিকে। সূর্য কেবল দিনের বেলা আকাশের অধিকার পায় চাঁদ কেন রাতেও ওঠে দিনেও ওঠে? পণ্ডিত সঙ্গে সঙ্গে পণ্ডিতের মতোই ব্যাখ্যা করে বলে, চাঁদ সুরযকা বহু এই সিধা বাত তুম জানতা নেহি? দিনভর খাটকে রাতমে সূরয নিদ যাতা, রাত ভোর মজা লুটতা মেরে চাঁদ বিবি। দিনমে আকাশ পর উঠকে দেখাতা যে মায় খাঁটি হ্যায় দূরয দেওকা সাচ্চী পত্নী হ্যায়। টিকিন খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। সেই হাসিব সঙ্গে বড়োই বেসুরো বড়োই বেমানান ঠেকে অমলাব ধমকের সুবে উদবেগ কাতব প্রশ্ন তোমবা কাজ করছ না কেন ?

টিকিন বলে, দিন মঞ্জুবকো বোজ না মিলনেসে কেইস্যা খাটেগা মাইজি হাওযা খায়েগা মাইজি। অমলা তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে টিকিনের দিকে তাকায়। একবাবেব বেশি দুবাব তাকাতে হয় না, দেখলেই টেব পাওযা যায় টিকিনের ছেলেপিলে হবে তিন কা বড়োজোব চাব মাসের মধ্যে।

কিন্তু তাব তো মোটে তিন মাস অনেক হিসাব কবে দেখেছে, তিন মাসের বেশি তাব হতেই পাবে না-তাকে দেখে কি টেব পাওয়া যায় সে ও মা হবে নইলে মাইজি বলে কেন।

অমলা তীক্ষ্ণস্ববে ডাকে, কার্তিক।

কার্তিক ধডমন্ড কবে উঠে আসে। এদেব বোজ দিচ্ছ না কেন দ

ক্যাশবাবু টাকা না দিলে আমি কী করব বলেছে পাঠিয়ে দেবে। অমলা চুপ কবে দাঁড়িয়ে থাকে। কালকের চেয়ে আছ আবও বেশি শুকনো দেখাচ্ছে তাব মুখ। বাল ছিল না, আজ যেন কালিও পড়েছে চোখের কোণে।

এই গরমে পাঞ্জাবিব উপব ভাজ ববা সাদা চাদব কাঁধে মাঝবয়সি মোটাসোটা ভদ্রলোকটিকে সাথে নিয়ে সয়ং বিনোদ গাড়ি নিয়ে হাজিব হলে অমলার কালি পড়া চোখে আগুনের ঝিলিক খেলে যায় কিন্তু মুখে কথা সবে না।

এই লোকটিকে কয়েক দিন ধবে বিনোদের কাছে যাতাযাত করতে দেখেছে। আজ ওকে সাথে

নিয়ে এখানে আসতে দেখে অমলার বুঝতে বাকি থাকে না।

একটা দাঁও পেযেছে বিনোদ। তৈবি বাডি তাব হাতে নেই একটাও, অমলাব জন্য এ বাডিটা তবু খানিকটা তৈবি হয়ে আছে।

তাকে দেখে বিনোদ বিবক্ত হয়ে বলে তুমি এখানে কী করছ?

অমলা নিশ্বাস ফেলে ঢোক গেলে।

এমনিই এসেছিলাম। আধঘণ্টা পরে অমলা আব কার্তিক বিনোদের সঙ্গে গাড়িতে'শ যায়, চাদব দিয়ে মুখের ঘাম মুছে ভদ্রলোক তাদের বলে তোমবা বইসা বইছ ক্যান কাম কর' না

সাদেক বলে, দু বোজেব মজুবি মেলেনি।

ততক্ষণে কোথায কতদূবে চলে গেছে বিনোদের গাড়ি তবু দাঁত মুখ খিঁচিয়ে সেইদিকে চেযে ভদ্রলোক বলে, হাবামজাদা ডাকাইত। মজুরি পর্যন্ত বাকি খুইছে।

তাবপর মুখ ফিরিয়ে আবার চাদর দিয়ে মুখের খাম মুছে ভদ্রলোক বলে, কাম কব, আমি তোমাগো মজুবি দিমু।

পেটের সাত মাসের সন্তানের ভাব সামলে উঠতে গিয়ে পণ্ডিতের মুখের দিকে চেয়ে মিশমিশে কালো দাঁত বাব কবে টিকিন হাসে।

12
Articles
ফেরিওয়ালা
0.0
"ফেরিওয়ালা" একটি উপন্যাস যা একজন ফেরিম্যানের জীবনকে ঘিরে আবর্তিত হয়, এই পেশায় ব্যক্তিদের মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জ এবং অভিজ্ঞতাগুলিকে তুলে ধরে। উপন্যাসটি তৎকালীন সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার সূচনা করে, বাংলার নদী সংস্কৃতির একটি প্রাণবন্ত চিত্র উপস্থাপন করে। মানিক বন্দোপাধ্যায়ের গল্প বলা তার গভীরতা এবং মানুষের আবেগের চিত্রায়নের জন্য পরিচিত, এবং "ফেরিওয়ালা" ব্যতিক্রম নয়। উপন্যাসটি দারিদ্র্য, শ্রেণী সংগ্রাম এবং ব্যক্তির উপর সামাজিক নিয়মের প্রভাবের মতো বিষয়গুলিকে সম্বোধন করে। মানিক বন্দোপাধ্যায়ের লেখা প্রায়শই মানুষের মনোবিজ্ঞানের গভীর উপলব্ধি এবং সামাজিক পরিস্থিতির গভীর পর্যবেক্ষণ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। "ফেরিওয়ালা" তার উল্লেখযোগ্য কাজগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয় এবং একটি গ্রামীণ পরিবেশে সাধারণ মানুষের সংগ্রামের চিত্রায়নের জন্য প্রশংসিত হয়।
1

ফেরিওলা

28 December 2023
1
0
0

বর্ষাকালটা ফেরিওলাদের অভিশাপ। পুলিশ জ্বালায় বারোমাস। দুমাসে বর্ষা হয়রানির একশেষ করে। পথে ঘুরে ঘুরে যাদের জীবিকা কুড়িয়ে বেড়ানো তাদের প্রায় পথে বসিয়ে দেয়। না ঘুরলে পয়সা নেই ফেরিওলার। তাব মানেই কোনোমতে

2

সংঘাত

28 December 2023
1
0
0

বিন্দের মা তার খড়ের ঘবের সামনের সবু বারালটুকুর ঘেবা দিকে তাদের আশ্রয় দিয়েছিল। ঘরে ঢুকবার দরজা বাবান্দার মাঝামাঝি, তার এদিকের অংশটা ঘেবা, ওদিকটা ফাঁকা। চালাটা বারান্দার উপরে নেমে এসেছে, কোমর বাঁকিয়ে ন

3

সতী

29 December 2023
1
0
0

বাস্তার ধারে একটা লোক মরে পড়ে আছে। আগের দিন পাড়ায় কেউ তাকে মরাব আযোজন করতে দ্যাখেনি। তীর্থগামিনী পিসিকে হাওড়া স্টেশনে গাড়িতে তুলে দিয়ে প্রায় বাত এগারোটার সময় নরেশ বোধ হয় শেষ বাসেই রাস্তায় প্রায় ওখানট

4

লেভেল ক্রসিং

29 December 2023
1
0
0

দুর্ঘটনায় গাড়িটা জখম হয়। অল্পের জন্য বেঁচে যায় ভূপেন, তার মেয়ে ললনা এবং ড্রাইভার কেশব। খানিকক্ষণ কেউ কথা বলতে পারে না। ললনা থরথর করে কাঁপে। রুমালে চশমা মুছে, মুখ মুছে ভূপেন জিজ্ঞাসা করে, এটা কীরকম ব

5

ধাত

29 December 2023
1
0
0

একটা নতুন বাড়ি উঠছে শহরতলিতে। খাস শহরে স্থানাভাব হলেও আনাচে-কানাচে এবং শহরের আশেপাশে বাড়ি তো উঠছে কতই। কাঠা তিনেক জমিতে ছোটোখাটো এই দোতলা বাড়িটা কিন্তু উঠছে আমাদের গল্পের জন্য। বাড়িটা উঠছে তরুণী অমলা

6

ঠাঁই নাই ঠাঁই চাই

30 December 2023
0
0
0

দেবানন্দ প্রথমে তাদের দায়িত্ব ঘাড়ে নিতে কিছুতেই রাজি হতে চায়নি। তার নিজের ঘাড়ের বোঝাটাই কম নয়। রোগা দুর্বল স্ত্রী, একটি বিবাহিত ও একটি কুমারী মেয়ে, দুটি অল্পবয়সি ছেলে এবং একটি শিশু নাতি। যে অবস্থায় য

7

চুরি চামারি

30 December 2023
0
0
0

লোকেশ মাইনে পেল চাব তারিখে। রাত্রে তার ঘবে চুবি হয়ে গেল। সেদিনও আপিস থেকে বাড়ি ফিবতে লোকেশের বাত ন টা বেজে গিয়েছে। কোথাও আড্ডা দিতে সিনেমা দেখতে বা নিজেব জবুনি কাজ সারতে গিয়ে নস, সোজা আপিস থেকে বাড়ি

8

দায়িক

30 December 2023
1
0
0

অলুক্ষুনে সন্তান? নইলে প্রায় এগারোটি মাস মায়ের পেট দখল করে থেকে এমন অসময়ে ভূমিষ্ঠ হয়, অসময়েব এই বাদল! আর হাড়-কাঁপানি শীত শুরু হবার পর? মেয়েটাকে মারবার জন্যই কি দেবতাদের ইঙ্গিতে প্রকৃতির এই নিষমভাঙা

9

মহাকর্কট বটিকা

1 January 2024
1
0
0

ঘুষঘুষে স্বব ছিল। পুত্তমুক বাশি। তার ওপর গলা দিয়ে উঠন দুফোটা বত্ত। আবও টা লমণ দরব'র হস ব্যাপার বুঝতে এব পরেও এই মনুষ খানিকটা হয়তো মেশানো আশাও করতে পাবে যে ধ্রুব কাশি জ্ঞার বক্ত ওঠাটা সে রকম এয়ানর কি

10

আর না কান্না

1 January 2024
1
0
0

কান্না গল্পের সাত বছরের ছিচকাদুনে মেয়েটা মাইরি আমায় অবাক করেছে। যেমন মা-বাবা, তেমনই মেয়ে। শুধু কান্না আর কান্না। যত চাও রুটি খাও শুনে কোথায় খুশিতে ডগমগ হবে, ভাববে থাকগে, আজকে পেটটা আমার ভরবেই ভরবে-তা

11

মরব না সস্তায়

1 January 2024
1
0
0

বলে কিনা, চুলোয় যাক তোমার ঘরসংসার! আমি এত খেটে খেটে মরতে পারব না। দুজনেই বলে, যখন-তখন-যে যাকে যখন বলার একটা সুযোগ বা অজুহাত পায়। পরস্পরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চুলোয় পাঠাবার জন্যই যেন এতকাল ধরে গায়ের রক্

12

এক বাড়িতে

2 January 2024
1
0
0

বিলাসময়ের স্ত্রী সুরবালা শুনে বলে, না, আত্মীয়বন্ধুর সলো দেনা পাওনার সম্পর্ক করতে নেই। বড়ো মুশকিল হয়। বাইরের লোকের সঙ্গে সোজাসুজি কারবার, যা বলবার স্পষ্ট বলতে পারবে। আত্মীয় বন্ধুর কাছে চক্ষুলজ্জায় মুখ

---