shabd-logo

চুরি চামারি

30 December 2023

0 Viewed 0

লোকেশ মাইনে পেল চাব তারিখে। রাত্রে তার ঘবে চুবি হয়ে গেল।

সেদিনও আপিস থেকে বাড়ি ফিবতে লোকেশের বাত ন টা বেজে গিয়েছে। কোথাও আড্ডা দিতে সিনেমা দেখতে বা নিজেব জবুনি কাজ সারতে গিয়ে নস, সোজা আপিস থেকে বাড়ি ফিরতেই দেবি। ছোট্টো বেসবকাবি আপিস- গদিও আধা সরকারিভাবে সবকাবের সাঙ্গ যোগ আছে। লোক খাটে কম যত লোকের খাটা দরকার তাব চেয়েও কম।

এমনিতেই দু একঘণ্টা বেশি পাটিয়ে নেয় ওভারটাইম না দিয়েই, মাসকাবাবে ক দিন আটটা সাডে অটিটা পর্যন্ত আপিসে থাকতে হয। খুব সোজা বৌষ্প, বেতন দেবার সুনিশ্চিত আশ্বাস দিয়েও সময়মতো বেতন না দিয়ে আটিকে রেখে খাটিযে নেওয়া। এবং এমনই তাদের প্রচণ্ড প্রয়োজন মাসকাবারি বেতনটার যে আশায় আশাষ বাত আটটা নটা পর্যন্ত কাজ করে যায়।

মাইনে অঘোব দেবে, না দিয়ে উপায় নেই। আজ দিয়েও তো দিতে পাবে?

অঘোর বলে, বসে থাকবেন না, বসে থাকবেন না। মাইনে পান খেটে খান-এ ভাবটা ভুলতে চেষ্টা করুন। ও একম ভাববে কাবখানার বুলিবা। মনে বাখবেন, বড়ো মন্দাব বাজস্ব। আপিস টিকে থাকলে তবেই আপনাবা টিকে বইলেন আপিসের উন্নতি হলে তবেই আপনাদের উন্নতি।

তাবা গুজগাজ ফোঁসফাস কবে। চাপা গলায় কেউ গর্জে ওঠে, দুত্তেবি তোব-ক্ষোভ বুকে নিয়ে তবু কাজ করে যায়। কৌশলটা খাটছে না দেখলে অঘোর হয়তো চটে গিয়ে আবও বেতন গোনা একদিন পিছিয়ে দেবে শোধ নিতে।

কদাচিৎ পয়লা দোসবা তাবিখেও বেতন মিটিয়ে দেয়। যে তারিখেই মাইনে পাক তারা সই কবে পয়লা তাবিখে পেয়েছে বলে।

উদবেগ চেপে বেখে ছবি প্রশ্ন কবে পেসেত্ব গ্রাজ পেযেছি।

নেট কটা ছবিব হাতে দিয়ে সে জামাকাপড় ছাড়তে থাকে।

মুখ-হাত ধোযা হতে না হতে ঘবের বাইবে বাড়িওলা সুবেনের গলা শোনা যাষ- আছেন নাকি লোকেশবাবু?

লোকেশ ঘবেব ভেতর থেকেই বলে, আছি মশায, আছি। এত অস্থিব হন কেন? সাবাদিন খেটেখুটে এলাম, সকালে দিলে হত না?

দেবাবটা দিলেই চুকে যায়।

ছবি এলে, দিয়ে দাও চুকে যাক।

সুবেনকে ঘবখানার ভাড়া দিয়ে বশিদ নিয়ে খেতে বসে ক্ষুব্ধ লোকেশ বলে, কই আমবা তো পাওনা টাকা এভাবে আদায় করতে পাবি না? প্রত্যেক মাসে মাইনে দিতে টান বাহানা করবে, বেশি বেশি খাটিয়ে নেবে।

খাটেন কেন? জোব কবে বলতে পাবেন না পয়লা তাবিখে মাইনে চাই, বেশিক্ষণ খাটালে পযসা চাই?

রুটি চিবোতে চিবোতে লোকেশ একটু ঝাঁঝালো হাসি হেসে বলে, আপনি কী বুঝবেন বলুন? কম লোক, ইউনিয়ন-ফিউনিয়ন নেই, যে তেড়িবেড়ি করবে তাকে দেবে খেদিয়ে। আমরা কী বলাবলি করি না ভেবেছেন যে এ সব অন্যায় আর সইব না? কিন্তু ওই বলাবলিই সার হয়। একজনকে এগিয়ে হাল ধরতে হবে তো? যে এগোবে সঙ্গে সঙ্গে তাকে বরখাস্ত করবে। বাটিা এক নম্বর চামার।

ছবি গোমড়া মুখে বলে, সত্যি। যা দিনকাল, এর মধ্যে চাকরি-বাকরি চলে গেলে- সে যেন শিউরে ওঠে।

রাত্রে দুজনেই তারা খানিকটা নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমোয়। কাল দোকানের ধার দুধের দাম এ সব মিটিয়ে দেওয়া যাবে। রেশন আসবে, অনেকদিন পরে আধপো মাছ এনে স্বাদে গন্ধে ভাত খাবে। ছবির জন্য শাড়ি একখানা চোখ-কান বুজে কিনে ফেলা হবে কি না সেটাও ঠিক করে ফেলা যাবে।

ঘুমের মধ্যে রাত্রে চুরি হয়ে যায়।

তারা টেরও পায় না।

ভোরে অন্য লোকের ডাকাডাকিতে ঘুম ভেঙে দ্যাখে এই ব্যাপার!

পাড়াতেই দু-তিন ঘরে চুরি হয়ে গেছে কিছুদিনের মধ্যে, তাদেব ঘবে চুরি হওয়াটা মোটেই আশ্চর্য ব্যাপার নয়। কিন্তু জানালার বাঁকানো শিক, খোলা দরজা আর তাদের যথাসর্বম্বেব শূন্যস্থান দেখেও যেন তাদের বিশ্বাস হতে চায় না যে সত্যসত্যই তাদের ঘরে চুরি হয়ে গেছে।

কেবল দুটি মানুষ বলেই সামান্য মাইনেতে তাদের একখানা ভাড়াটে ঘরে মুখ গুঁজে কোনোরকমে চলে যায়, তাদের ঘরে চুরি। পাড়াতেই তো কত পয়সাওলা লোক আছে, এ বাড়ির দোতলাতেই বাস করে বাড়িওলা সুরেন-ওদের বাদ দিয়ে তাদের ঘরে হানা দেবার জন্য এত হালঙ্গামা করার তো কোনো মানেই হয় না!

তারা পরস্পরের মুখের দিকে তাকায়।

লোক জড়ো হয়েছে, জিজ্ঞাসা মন্তব্য আর এখন তাদের কী করা কর্তব্য সম্পর্কে উপদেশ দেওয়া চলছে, নিঃশব্দে তলার কাঠ কেটে চোরেরা কী করে এত মোটা শিক বাকিয়ে দিল তাই নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ ও জল্পনা-কল্পনা চলছে-কিন্তু লোকেশ আর ছবির কাছে কিছুতেই যেন ঠিকমতো গুরুতর হয়ে উঠতে পারছে না ব্যাপারটা।

সুরেন বলে, দেখলেন তো মশায়? ভাগ্যে ভাড়াটা আদায় কবে নিয়ে গেছলাম, নইলে ওই টাকাটাও গচ্ছা যেত আপনার।

শুনে লোকেশের যেন হাসিই পায়।

যার এক রকম সর্বস্ব চুরি হয়ে গেছে, ভাড়ার ওই ক-টা টাকা বেঁচে গেছে বলে তাকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা।

এই কথাটা উল্লেখ করে ছবিও পরে বলেছিল, আমার কানপাশা যে বাঁধা দিয়েছিলে সেটাও তাহলে আমাদের ভাগ্যি বলতে হবে।

ঘরে ছিল একটি ট্রাংক, একটি চামড়ার সুটকেস একটি হাতবাকসো, তাকে সাজানো কিছু বাড়তি বাসন আর আলনায় সাজানো জামাকাপড়। এ সব কিছুই চোরেরা রেখে যায়নি।

নিত্য ব্যবহারের অর্থাৎ গায়ের গহনা আর রান্না-খাওয়ার বাসনগুলি আছে। আটগাছা চুড়ির মধ্যে চারগাছা আছে, হাতে, গলায় হারটা আছে আর কানে দুল। অন্য ভাড়াটের সঙ্গে সিঁড়ির নীচেকার ছোট্ট ঘরটিতে তাদের রত্না হয়, ও ঘরে থাকায় মাজা-বাসন ক-টা রয়ে গেছে।

আর সমস্ত কিছুই চোবে নিয়েছে। সোনা রূপার গয়না ও উপহার দ্রব্য, বিয়েতে এবং অন্যভাবে পাওয়া সমস্ত দামি জামাকাপড় সাধারণ ভালো জামাকাপড় ক-টা পর্যন্ত।

আলনাটা পর্যন্ত খালি করে নিয়ে গেছে?

এটাই যেন সকালে তাদের পীড়ন করে সব চেয়ে বেশি।

পরনের লুঙ্গি আর একটা ছেঁড়া পাঞ্জাবি ছাড়া কিছুই নেই লোকেশের যে পরে আপিস যাবে।

লুঙ্গি আর ছেঁড়া পাঞ্জাবিটা পরে বেরিয়ে রাস্তায় যে জামাকাপড় কিনে নেবে তারও উপায় নেই, সারা ঘর হাতড়ে বেড়ালে দুটো তামার পয়সা মিলবে কিনা সন্দেহ।

পয়সাকড়ি সব ওই হাতবাকসোটায় থাকত।

তারপর আছে পেটের ব্যাপার। রেশন আনলে, বাজার করলে তবে খাওয়া জুটবে।

ছবিব মুখে সত্যই একঝলক হাসি ফোটে। চোবেবা যেন তাদের জন্য একটা ভারী মজার অবস্থার সৃষ্টি করে গেছে।

খাওয়া তো পরের কথা। একদানা চিনি নেই যে তোমায় এক কাপ চা করে দেব। এতক্ষণ বড়োই চিন্তাক্লিষ্ট দেখাচ্ছিল লোকেশের মুখ, ছবির কথা বলার ভঙ্গিতে তার মুখেও হাসি ফোটে।

ক-টা ঢাকা ধারের চেষ্টা দেখি। তারপর যা হয় হবে।

ছবির মুখের ভাব শক্ত হয়ে যায়।

কার কাছে ধার চাইবে? সেদিন যারা দর্শটা টাকা দিল না, কানপাশা দুটো বাঁধা দিতে হল, আবার তাদের কাছে হাত পাততে যাবে ?

লোকেশ বলে, তা নয়, তখন মাসের শেষ, কারও হাতে সামান্য টাকাও ছিল না। নইলে কী রমেশবাবু, তিলকবাবু ক-দিনের জন্যে দশটা টাকা দিত না ? এমন বিপদ ঘটল, আজ যার কাছে

চাইপ সেই দেবে।

ছবি ধীরে ধীরে মাথা নাড়ে।

ক-দিনের জন্য তো ধার নেবে, ক-দিন বাদে শোধ দেবে কোথে? সারা মাস চালাবে স্কী দিয়ে ?

লোকেশ গোমড়া মুখে বলে, সে যা হোক একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। উপায় কী?

থাক, তোমার আর আবোল তাবোল ব্যবস্থা করে কাজ নেই। আমি ব্যবস্থা করছি- বেশ খানিকটা মরিয়া বেপরোয়া মনে হয় ছবিকে। চোরেরা যেন ঘব খালি করে নিয়ে যাবার সঙ্গে তার মনের ভয়-ভাবনাগুলিও চুরি করে নিয়ে গেছে।

আজ আপিস না গেলে হয় না?

মাইনে পেয়েই কামাই করাটা...

সমস্ত সমস্যা যেন মীমাংসা করে ফেলেছে এমনইভাবে ছবি বলে, তাহলে এক কাজ করো। বেলা হয়ে গেছে, রেশন এ্যান সাড়ে আটটায় "য়ে বেরোতে পারবে না। দোকানে চা খেয়ে ওই বুড়ির কাছ থেকে আধসের চাল আর দোকানে ডিম-টিম যা পার এনে দাও-এবার লোকেশ চটে যায়।

চা খেতে, চাল ডিম আনতে পয়সা লাগবে না?

পয়সা আমি দিচ্ছি!

বিয়ের কমদামি খাটের বিছানার তলায় ডান হাতটা প্রায় সমস্তখানি ঢুকিয়ে দিয়ে হাতড়ে হাতড়ে ছবি বার করে আনে আস্ত একটা পাঁচ টাকার নোট। বলে, ছ সাতমাস আগে পাঁচ টাকা হিসেবে মেলেনি মনে আছে? হারিয়ে যায়নি, আমি চুরি করেছিলাম।

তারপর একটু উদ্বেগের সঙ্গে জিজ্ঞাসা কবে, চলবে তো? দুমড়ে মুচড়ে গেছে।

লোকেশ বলে, চলবে। একশোবার চলবে। তোমার জন্য চা আনব না?

আমি মনোদির সাথে থাবখন। এমন বিপদে পড়েও টাকা চালডাল ধার চাইছি না-এতখানি দয়ার বদলে এক কাপ চা না খাওয়ালে চলবে কেন।

লোকেশ তবু ইতস্তত করে।

ছবি তাগিদ নিয়ে বলে, দাঁড়িয়ে রইলে যে? বেলা বাড়ছে না?

সব তো বুঝলাম। আমি আপিস যাব কী পরে?

সে ব্যবস্থা করছি। শুধু চা খাব না, মনোদির কাছে রবীনবাবুর একখানা ধৃতি ধার করব। পরশু তরশ লন্ড্রিতে আর্জেন্ট ধুইয়ে ফেরত দিলেই চলবে।

লোকেশ তবু ইতস্তত করে। সে তো বুঝলাম। কিন্তু তারপর কী করব?

ওর জবাব সেই এককথা। কী আবার করবে, আপিস যাবার সময় নিয়ে যাবে।

লোকেশদের আপিসে সেদিন কাজে বড়োই ব্যাঘাত ঘটে। কাজ আরম্ভই হয় ঘণ্টাখানেক দেরিতে। সবাই এসে পৌঁছে গেলে লোকেশ সকলকে বলে, টুল-ফুল নিয়ে সবাই জড়ো হয়ে বসুন দিকি একসাথে। ভীষণ জরুরি কথা আছে।

তার মুখ দেখে আর কথা শুনে সবাই একটু হকচকিয়ে যায় বটে কিন্তু তাকে ঘিরে বসে সকলেই। কোনো রকম ভূমিকা না করে লোকেশ জোরের সঙ্গো ঝাঁঝের সঙ্গে বলে, আমরা কী কুকুর বিড়াল, যত ইচ্ছা খাটিয়ে নেবে, সকাল ন-টায় শুরু করিয়ে রাত ন-টায় ছুটি দেবে? সময়মতো মাইনে দেবে না?

একজন বলতে যায়, তোমার বাড়িতে নাকি চুরি হয়েছে শুনলাম?

লোকেশ বলে, ঘর খালি করে সব নিয়ে গেছে। সে গল্প পরে বলছি। এখন কাজের কথা শুনুন। আমরা চুপচাপ মেনে নিই বলে আরও পেয়ে বসেছে! আজ আমরা সাফ জানিয়ে দেব যে আমরা আপিস আইনের বাঁধা-টাইমেব বেশি খাটব না, খাটালে ওভারটাইম দিতে হবে। ঠিক তারিখে মাইনে দিতে হবে আমাদের।

সকলে নির্বাক হয়ে থাকে।

লোকেশ শান্তভাবেই বলে, ভয় পাবেন না। যা বলার আমিই বলব অঘোরবাবুকে, আমিই সকলের হয়ে ঝগড়া করব। আপনারা শুধু আমার পিছনে থাকবেন। যদি ক্ষতি করে আমার করবে, আপনাদের কিছু করবে না।

তবে বাড়ির চুরির ব্যাপারটা জানতে চেয়েছিল প্রৌঢ়বয়সি যতীন। সে সঙ্গো সংঙ্গে জোর দিয়ে বলে তোমার একলার ক্ষতি করবে মানে? আমরা তা মানব কেন ?

এক ঘণ্টা আলোচনার পর যে যার জায়গায় গিয়ে বসে। কিন্তু কাজে কারও মন বসে না। অঘোর আরও দেরিতে আসবে, কিন্তু খবর তার কানে পৌঁছুবে। নিশ্চয় ডেকে পাঠাবে লোকেশকে।

তারপর কী নাটক আরস্ত হবে কে জানে ছা-পোষ্য চাকরি-সর্বস্ব তাদের আপিস-জীবনে ? অঘোর যথাসময়ে আসে। নিজের ঘরে বসে। কাজ করার বদলে সকলে এক ঘণ্টা জটলা করেছে, খাস ও একমাত্র বেয়ারা বেচুর কাছে এ খবরও নিশ্চয় সে শোনে। কিন্তু সারাদিন কেটে যায়, লোকেশকে সে ডাকে না। আপিসের মুষ্টিমেয় মানুষ ক-টার বিদ্রোহের খবর যে সে পেয়েছে সেটা টের পাওয়া যায় একটিবারও তার আপিস ঘরে না আসায়। রোজ সে তিন-চারবার টহল দিয়ে যায়।

ক্রমে ক্রমে সকলে এটাও টের পায় যে অঘোর প্রতীক্ষা করছে। তারা নিজে থেকে কী করে না দেখে সে কিছুই করবে না।

পাঁচটা বাজতেই সকলে কাজ বন্ধ করে উঠে দাঁড়ায়। লোকেশ বেচুকে ডেকে বলে, বল গে যাও, আমবা যাচ্ছি!

মিনিট পাঁচেক পবে অঘোর নিজেব ঘর থেকে বেরিয়ে এসে শান্ত কিন্তু গম্ভীর গলায় জিজ্ঞাসা কবে, কী ব্যাপার?

অবুঝ ছেলেরা দুষ্টামি করে বায়না ধরেছে। সে পিতার মতো শূনতে চায় তাদের নালিশ! শূনে নিশ্চয় স্নেহময় কিন্তু তাদের মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী অভিভাবক পিতার মতোই বিচার করবে।

লোকেশও শান্ত গম্ভীরভাবে তাদের নালিশ জানায়, তাবা অতঃপর কী করবে স্থির করেছে তাও জানায়।

অঘোর উদাস-উদাবভাবে বলে, বেশ তো। তোমরা চাকবি করার সরকারি আইনমতো চাকরি করতে চাইলে আমি কি না বলতে পারি? আমি কি আইন ভেঙে গায়ের জোরে তোমাদের বেশি খাটিয়েছি? ও সব আইন-টাইনের কথা খেয়ালও ছিল না আমার। আমরা মিলেমিশে কাজ করছি, মানিয়ে চলছি, ব্যাস।

লোকোশের দিকে দৃষ্টিনিবন্ধ রেখে বলে, তোমরা যে ঘবোয়া ব্যবস্থাটা পছন্দ করছ না আমাকে জানালেই হত। হঠাৎ এ রকম গন্ডগোল করাব কোনো মানে হয়?

নিজেব আপিসেব উপরেই যেন বিতৃষ্ণা এসেছে এমনিভাবে নাক-মুখ সিঁটকোতে সিঁটকোতে অঘোর সকলের আগে বেরিয়ে গিয়ে গাড়িতে ওঠে।

একটা মস্ত যুদ্ধে যেন জয়লাভ করেছে, প্রকাণ্ড অনিয়ম থেকে বেহাই পেয়েছে, এমনইভাবেই সকলে কলবব করে, সমবয়সি দু-একজন পিঠ চাপড়ে দেয় লোকেশের।

প্রৌঢ় যতীন বলে, আজকেই শেষ হয়ে গেল ভাবছ নাকি তোমরা? আমরা গুটিসুটি মেরে পিছনে দাঁড়িয়ে রইলাম, লোকেশ বেচারা এগিয়ে গিয়ে ঝগড়া করল-ব্যাস অমনি সব ঠিক হয়ে গেল। বেকায়দায় পড়ে মেনে নিয়েছে তাই। শোধ না তুলে ছাড়বে ভেবেছ? সবাই চিন্তিত হয়ে বাড়ি ফেরে।

গতরাত্রে চুবি হয়ে গেছে- গয়নাগাটি মালপত্র। আজ ভোবরাত্রেও যে চোব আসবে কে তা জানত।

ছবির আব সব গেছে। অল্পদামি বিয়ের খাটে লোকেশের পাশে শুয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর অধিকারটা বজায় ছিল।

শেষরাত্রে প্রকাশ্যভাবে ড্যান চালিয়ে চোর এসে তার বাহুবন্ধন থেকে চুরি করে নিয়ে যায় লোকেশকে। আটক আইনের জোরে। 

12
Articles
ফেরিওয়ালা
0.0
"ফেরিওয়ালা" একটি উপন্যাস যা একজন ফেরিম্যানের জীবনকে ঘিরে আবর্তিত হয়, এই পেশায় ব্যক্তিদের মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জ এবং অভিজ্ঞতাগুলিকে তুলে ধরে। উপন্যাসটি তৎকালীন সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার সূচনা করে, বাংলার নদী সংস্কৃতির একটি প্রাণবন্ত চিত্র উপস্থাপন করে। মানিক বন্দোপাধ্যায়ের গল্প বলা তার গভীরতা এবং মানুষের আবেগের চিত্রায়নের জন্য পরিচিত, এবং "ফেরিওয়ালা" ব্যতিক্রম নয়। উপন্যাসটি দারিদ্র্য, শ্রেণী সংগ্রাম এবং ব্যক্তির উপর সামাজিক নিয়মের প্রভাবের মতো বিষয়গুলিকে সম্বোধন করে। মানিক বন্দোপাধ্যায়ের লেখা প্রায়শই মানুষের মনোবিজ্ঞানের গভীর উপলব্ধি এবং সামাজিক পরিস্থিতির গভীর পর্যবেক্ষণ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। "ফেরিওয়ালা" তার উল্লেখযোগ্য কাজগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয় এবং একটি গ্রামীণ পরিবেশে সাধারণ মানুষের সংগ্রামের চিত্রায়নের জন্য প্রশংসিত হয়।
1

ফেরিওলা

28 December 2023
1
0
0

বর্ষাকালটা ফেরিওলাদের অভিশাপ। পুলিশ জ্বালায় বারোমাস। দুমাসে বর্ষা হয়রানির একশেষ করে। পথে ঘুরে ঘুরে যাদের জীবিকা কুড়িয়ে বেড়ানো তাদের প্রায় পথে বসিয়ে দেয়। না ঘুরলে পয়সা নেই ফেরিওলার। তাব মানেই কোনোমতে

2

সংঘাত

28 December 2023
1
0
0

বিন্দের মা তার খড়ের ঘবের সামনের সবু বারালটুকুর ঘেবা দিকে তাদের আশ্রয় দিয়েছিল। ঘরে ঢুকবার দরজা বাবান্দার মাঝামাঝি, তার এদিকের অংশটা ঘেবা, ওদিকটা ফাঁকা। চালাটা বারান্দার উপরে নেমে এসেছে, কোমর বাঁকিয়ে ন

3

সতী

29 December 2023
1
0
0

বাস্তার ধারে একটা লোক মরে পড়ে আছে। আগের দিন পাড়ায় কেউ তাকে মরাব আযোজন করতে দ্যাখেনি। তীর্থগামিনী পিসিকে হাওড়া স্টেশনে গাড়িতে তুলে দিয়ে প্রায় বাত এগারোটার সময় নরেশ বোধ হয় শেষ বাসেই রাস্তায় প্রায় ওখানট

4

লেভেল ক্রসিং

29 December 2023
1
0
0

দুর্ঘটনায় গাড়িটা জখম হয়। অল্পের জন্য বেঁচে যায় ভূপেন, তার মেয়ে ললনা এবং ড্রাইভার কেশব। খানিকক্ষণ কেউ কথা বলতে পারে না। ললনা থরথর করে কাঁপে। রুমালে চশমা মুছে, মুখ মুছে ভূপেন জিজ্ঞাসা করে, এটা কীরকম ব

5

ধাত

29 December 2023
1
0
0

একটা নতুন বাড়ি উঠছে শহরতলিতে। খাস শহরে স্থানাভাব হলেও আনাচে-কানাচে এবং শহরের আশেপাশে বাড়ি তো উঠছে কতই। কাঠা তিনেক জমিতে ছোটোখাটো এই দোতলা বাড়িটা কিন্তু উঠছে আমাদের গল্পের জন্য। বাড়িটা উঠছে তরুণী অমলা

6

ঠাঁই নাই ঠাঁই চাই

30 December 2023
0
0
0

দেবানন্দ প্রথমে তাদের দায়িত্ব ঘাড়ে নিতে কিছুতেই রাজি হতে চায়নি। তার নিজের ঘাড়ের বোঝাটাই কম নয়। রোগা দুর্বল স্ত্রী, একটি বিবাহিত ও একটি কুমারী মেয়ে, দুটি অল্পবয়সি ছেলে এবং একটি শিশু নাতি। যে অবস্থায় য

7

চুরি চামারি

30 December 2023
0
0
0

লোকেশ মাইনে পেল চাব তারিখে। রাত্রে তার ঘবে চুবি হয়ে গেল। সেদিনও আপিস থেকে বাড়ি ফিবতে লোকেশের বাত ন টা বেজে গিয়েছে। কোথাও আড্ডা দিতে সিনেমা দেখতে বা নিজেব জবুনি কাজ সারতে গিয়ে নস, সোজা আপিস থেকে বাড়ি

8

দায়িক

30 December 2023
1
0
0

অলুক্ষুনে সন্তান? নইলে প্রায় এগারোটি মাস মায়ের পেট দখল করে থেকে এমন অসময়ে ভূমিষ্ঠ হয়, অসময়েব এই বাদল! আর হাড়-কাঁপানি শীত শুরু হবার পর? মেয়েটাকে মারবার জন্যই কি দেবতাদের ইঙ্গিতে প্রকৃতির এই নিষমভাঙা

9

মহাকর্কট বটিকা

1 January 2024
1
0
0

ঘুষঘুষে স্বব ছিল। পুত্তমুক বাশি। তার ওপর গলা দিয়ে উঠন দুফোটা বত্ত। আবও টা লমণ দরব'র হস ব্যাপার বুঝতে এব পরেও এই মনুষ খানিকটা হয়তো মেশানো আশাও করতে পাবে যে ধ্রুব কাশি জ্ঞার বক্ত ওঠাটা সে রকম এয়ানর কি

10

আর না কান্না

1 January 2024
1
0
0

কান্না গল্পের সাত বছরের ছিচকাদুনে মেয়েটা মাইরি আমায় অবাক করেছে। যেমন মা-বাবা, তেমনই মেয়ে। শুধু কান্না আর কান্না। যত চাও রুটি খাও শুনে কোথায় খুশিতে ডগমগ হবে, ভাববে থাকগে, আজকে পেটটা আমার ভরবেই ভরবে-তা

11

মরব না সস্তায়

1 January 2024
1
0
0

বলে কিনা, চুলোয় যাক তোমার ঘরসংসার! আমি এত খেটে খেটে মরতে পারব না। দুজনেই বলে, যখন-তখন-যে যাকে যখন বলার একটা সুযোগ বা অজুহাত পায়। পরস্পরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চুলোয় পাঠাবার জন্যই যেন এতকাল ধরে গায়ের রক্

12

এক বাড়িতে

2 January 2024
1
0
0

বিলাসময়ের স্ত্রী সুরবালা শুনে বলে, না, আত্মীয়বন্ধুর সলো দেনা পাওনার সম্পর্ক করতে নেই। বড়ো মুশকিল হয়। বাইরের লোকের সঙ্গে সোজাসুজি কারবার, যা বলবার স্পষ্ট বলতে পারবে। আত্মীয় বন্ধুর কাছে চক্ষুলজ্জায় মুখ

---