shabd-logo

ছয়

28 October 2023

2 Viewed 2

সংবাদ দিবার প্রয়োজন ছিল না বলিয়াই দুর্গা চিঠি না লিখিয়াই আসিয়াছিলেন। জ্ঞানদার চেহারা দেখিয়া জ্যাঠাইমা হাসিয়াই খুনগুলো ওগেনি, গালদুটো তোর চড়িয়ে ভেঙ্গে দিলে কে লো মা কি ঘেন্না। মাথায় টাক পড়ল কি করে লো? ও ছোটবৌ শিপরি আয়, শিগগির আয় - আমাদের জ্ঞানদাসুন্দরীকে একবার দেখে যা। পায়ের চামড়াটাও কি তোর মামা মামী ছ্যাকা দিয়ে পুড়িয়োচে নাকি লো । জ্ঞানদা নিরুত্তরে ঘাড় হেঁট করিয়া বসিয়া রহিল।

ছোটখুড়ী আসিতেই তাড়াতাড়ি উঠিয়া প্রণাম করিয়া পায়ের ধুলা লইল। ছোটবো শিহরিয়া উঠিল ইস এ কি হয়ে গেছিল মা ?

জ্যাঠাইমা নিতান্ত অত্যুক্তি করিলেন না, কহিলেন, বাঁশবনের পেত্নী। অন্ধকারে আঁতকে উঠতে হয়। বলিয়া খিলখিল করিয়া হাসিতে লাগিলেন। আজ কিন্তু ছোটবৌ তাহাতে যোগ দিল না। সে আর যাই হউক, সন্তানের জননী ত মেয়েটির এই কঙ্কালসার পাণ্ডুর মুখের পানে চাহিয়া তাহার মায়ের প্রাণ যেন শতধা বিদীর্ণ হইয়া গেল ।

কাছে বসিয়া তাহার মাথায় মুখে হাত বুলাইয়া দিয়া, একটি একটি করিয়া রোগের কথা শুনিয়া, নিঃশ্বাস ফেলিয়া কহিল, কেন তবে তখুনি চলে এলিনে না! আমি ত তোদের আসতে

মানা করিনি। মেরুদি কোথায়।

মার গাড়িতে জ্বর এসেছিল, ঘরে শুইয়ে দিয়েছি।

স্বর্ণ কহিলেন, হবে না ? আমি হাজার হই বড়জা তা অত তেজ করে চলে গেলে কি সয় ছোটবৌ জ্ঞানদার হাত ধরিয়া তাহার মাকে দেখিবার জন্য উঠিয়া দাঁড়াইয়াছিল। বড়জায়ের এই নিতান্ত গায়ে পড়া কটুকথাগুলো আজ তাহার এতই বিশ্রী লাগিল যে, সে সহিতে পারিল না; কহিল, দিদি, বছর দুই মধু-সংক্রান্তির এতো করো আর জন্যে মুখখানা যদি একটু ভাল হয়। স্বর্ণ এই অপ্রত্যাশিত মন্তরে গেছে বিস্ময়ে হঠাৎ অবাক হইয়া গেলেন। কিন্তু পরক্ষণেই তীব্রস্বরে পর্শিয়া উঠিলেন, তবু ভাল লো ছোটবৌ, তবু ভাল। এতকাল পরেও যা হোক মোজাকে দেখে লোকটা উৎলে উঠেচে। মাইরি, কত ঢঙই তুই জানিস। ছোটৰো জবাব দিল না। জানদার হাত ধরিয়া ও-বাড়ি চলিয়া গেল। কিন্তু সে যাওয়া জ্ঞানদার পক্ষে একেবারে মারাত্মক হইয়া উঠিল। কারণ তাহার ও তাহার মাতার বিরুদ্ধে স্বামঞ্জরীর এমনই ত বিদ্বেষের অবধি ছিল না, কিন্তু ছোটবৌয়ের ব্যাবহারে আজিকার বিদ্বেষ তাহাকেও অতিক্রম করিয়া পেল।

হরিপালে থাকিতে দুর্গ জ্বার আসিলে শুইয়া পড়িতেন, ছাড়িলে উঠিয়া নড়াচড়া করিতেন। সাধ্যে কুলাইলে মান-আহ্নিক করিয়া একবেলা একমুঠো ভাতও খাইতেন। কিন্তু

এখানে আসিয়া আর একপ্রকার ঘটিল। পাড়ার মেয়েরা অহোরাত্র সহানুভূতি করিয়া দু-পাঁচদিনই তাহাকে একেবারে শয্যাশায়িনী করিয়া দিল। নীলকণ্ঠ মুখুয্যেমশায়ের পরিবার মেজাবাকে দেখিতে আসিয়া একেবারে আকাশ হইতে পড়িলেন। চোখ কপালে তুলিয়া বলিলেন, এ কি করেচিস মেঘবৌ, মেয়ের বিয়ে দিবি কবে ? ওর পানে যে আর চাইতে পারা যায় না।

দুর্গা প্রান্ত চোখ দুটি নিমীলিত করিয়া ক্ষিণকণ্ঠে কহিলেন, কি জানি পিসীমা, করে উপবান মুখ তুলে চাইবেন ।

তা ত জানি মা। কিন্তু চষ্টা করতে হবে । ভগবান ত আর বর জুটিয়ে এনে দিয়ে যাবেন না।

দুর্গা আর জবাব নিলেন না

একমিনিট প্রতীক্ষা করিয়া তিনি পুনরায় কহিলেন, বলি বাপের বাড়ি গেলি, ভাই কিছু জোগাড় করে দিলে না ? দেবর কি বলে ?

ভগবান জানেন । বলিয়া দুর্গা পাশ ফিরিয়া লইলেন।

ঘন্টা খানেক পরেই আদরিণী বেড়াইতে আসিরা চৌকাঠের বাহিরে দাঁড়াইয়া উকি মারিয়া কহিল, বলি এ-বেলাটায় কেমন আছ মেজবৌ জ্ঞানদা শয্যার একপ্রান্তে বসিয়া মায়ের পায়ে হাত কুনাইয়া দিতেছিল, কহিল, জ্বর এখনো ছাড়েনি পিসীমা। দুর্গা মুখ ফিরাইয়া চাহিয়া দেখিলেন, বলিলেন, ব'সো ঠাকুরঝি।

না বৌ, বেলা গেল, আর বসব না। তা বলি কি মেজবৌ, যাকে হোক ধরে উচ্ছ্বতা করে লাও, আর খুঁতখুঁত করো না বলতে নেই, তখন তবু মেয়েটার যা হোক একটু ছিরি ছিল, কিন্তু ম্যালেরিয়া জ্বরে একেবারে যেন পোড়া কাঠটি হয়ে গেছে। হ্যাঁ লো গেনি, সুমুখের চুলগুলো বুঝি উঠে গেল ? ছান্দা ঘাড় নাড়িয়া নীরবে নতমুখে বসিয়া রহিল। আর মৃদু করা হল, অনচি নাকি ও-পাড়ার গোপাল ভটচাযি আবার বিয়ে করবে। একবার অনাবদাকে পাঠিয়ে খবরটা কেন নিলে না মেজবো ?

আচ্ছা, বলব, বলিয়া দুর্গা নিশ্বাস ফেলিয়া পুনরায় দেয়ালের দিকে মুখ ফিরাইয়া শুইলেন।

এমনি করিয়া কত লোক যে হিতোপদেশ দিয়া গেল, তাহার সংখ্যা রহিল না। কিন্তু যাহাদের পথ চাহিয়া দুর্গ অনুক্ষণ কান খাড়া করিয়া রহিলেন, তাহারা দেখা দিল না। আি অতুল, না আসিল তাহার মা।

ছোটবৌয়ের দেহে দয়ামায়া ছিল, কিন্তু সে ভারী অলস, তাহাতে অত্যা। সুতরাং স্বর্ণ জ্ঞানদাকে যখন বলিলেন, বাছা, রোগ বলে ত আর চিরকাল চলে না, তোমার মা যেন ধরুন পারে না, কিন্তু তুমি বাপু সোরে মেয়ে সকালে কাকার ভাত দুটি করে আর রেঁধে দিতে পার না " ঘরের ভিতর হইতে ছোটবৌ কথাটা অন্যায় বুঝিয়াও চুপ করিয়া রহিল। পরের দুঃখে সে ব্যথা অনুভব করিত, কিন্তু তাই বলিয়া নিজেকে পরিশ্রম দিয়া সে দুঃখ দূর করা তাহার পক্ষে অসাধ্য।

জ্ঞানদা তৎক্ষণাৎ রাজী হইয়া মৃদুকণ্ঠে বলিল, আমিই দেব জ্যাঠাইমা ।

যদিচ এখনও প্রতিরাত্রেই তাহার জ্বর হইত, কিন্তু মায়ের যন্ত্রণা বাড়াইবার ভয়ে এ কথা সে প্রণপণে গোপন করিয়া রাখিয়াছিল। ফোপাইয়া নির্জীব দেহটাকে সে সকালে বিছানা হইতে যেন চানিয়া তুলিতেই পারিত না, তথাপি একবার ইততঃ করিল না একটিবার সুখডার করিল না।

দুঃখী পিতা-মাতার কন্যা হইলেও সে একমাত্র সন্তান, তাঁহাদের বড় আদরে যত্নে লালিত-পালিত হইয়াছিল। কিন্তু ছেলেবেলা হইতেই গুরুজনের আজ্ঞা ন্যায়-অন্যায় যাই হউক - নির্বিচারে মাথা পাতিয়া লইতে, সেবা করিতে, মুখ বুষ্টিয়া সহ্য করিতে, সংসারে বোধ করি আর তাহার জুড়ি ছিল না। কিন্তু আজ সে যে কতবড় গুরুভার মাথায় করিয়া লইল, তাহা আর কেহ না বুঝুক, ছোটবৌ বুঝিল। সুতরাং বহুজায়ের এই অত্যন্ত অলার আদেশে তাহার অন্তর জ্বলিতে লাগিল, তথাপি মুখ ফুটিয়া প্রতিবাদ করিতেও তাহার সাহস হইল না - পাছে, বলিতে পেলেই পালার শর্তমত তাহাকে ভোরে উঠিয়া রাঁধিতে হয়। পরদিন যথাসময়ে কাকাকে স্নানঘরে যাইতে দেখিয়া, জ্ঞানদা ভাতের থালাটি হাতে করিয়া দিতে যাইতেছিল, কোথা হইতে জ্যাঠাইমা হাঁ-হাঁ করিয়া ছুটিয়া আসিয়া পড়িলেন - কোথা যাস লাগেনি জ্ঞানদা থতমত খাইয়া বলিল, কাকা স্নান করে এলেন যে।

তাতে তোর কি ? বলিয়া জ্যাঠাইমা চেঁচাইয় উঠিলেন – মানা করে দিয়েচি না ভাত

বেড়ে নিয়ে যেতে ? তোর হাতে পুরুষমানুষ খেতে পারে লা দুর্গা সেইমাত্র উঠিয়া ঘরের সুমুখে বসিয়াছিলেন চেঁচামেচি শুনিয়া সভয়ে চাহিয়া डলেন।

ছোটবৌ ঘর হইতে বাহির হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, কি হয়েছে দিদি স্বর্ণা কাহারো প্রতি ভ্রূক্ষেপ না করিয়া, সেই নির্বাক সিম্পল মেয়েটিকে লক্ষ্য করিয়া তিরষ্কার করিতে লাগিলেন হাতে করে থানা নিয়ে গেলে কাকা খুশী হয়ে তোমাকে মাথায় করে নিয়ে নাচবে রাজপুকুর এনে দিয়ে দেবে, না এইবয়সে কি মন যোগাইতেই শিখেছিস মাইরী। বলিয়া থানা ছিনাইয়া লইয়া চলিয়া গেলেন।

দুর্গা সহস্র জ্বালায় জ্বলিয়া মশাই অসহিষ্ণু হইয়া উঠিতেছিলেন, মেয়েকে উদ্দেশ করিয়া কাঁদিয়া কহিলেন, গোড়ামুখী, গুরুজনের কথা শুনবি নে যদি, তোর মরণ হয় না কেন জ্ঞানদা নীরবে রান্নাঘরে চলিয়া গেল। একবার বলিল না, এ বিষয়ে তাহাকে কেহই নিষেধ করিয়া দেয় নাই। মুখ তুলিয়া প্রতিবাদ করিতে সে বোধ করি জানিতই না।

প্রতিবাদ যে করিতে পারিত, সে ছোটবো। কিন্তু সে বড়জাকে চিহ্নিত বলিয়া কথা কহিল না। বড়জা যেমন মুখরা, তেমনি আত্মমর্যাদাজ্ঞানশূন্য। মুখের উপর তাহার সহস্র দোষ দেখাইয়া দিলেও লজ্জা পাইবে না, বরঞ্চ অধিকতর নিষ্ঠুর হইয়া যন্ত্রণা দিবে জানিয়াহ, ছোটবো নীরবে জ্ঞানদার অনুসরণ করিয়া রান্নাঘরে আসিয়া সমহে সবরে তাহার হাতখানি ধরিয়া কহিল, দিদির কথাটা কেন শুনিস নি এতক্ষণের এত কঠোর লাঞ্ছনা সে সহিয়া ছিল, কিন্তু সেই স্নেহের অনুযোগ সহিতে পারিল না। একটিবার মাত্র চোখ তুলিয়া ছোটখুদীর মুখের পানে চাহিয়াই সে তাহার পদতলে ভাঙ্গিয় পড়িল - আমাকে কেউ নিষেধ করে দেয়নি খুড়ীমা, বলিয়া উচ্ছ্বসিত হইয়া কাঁদিয়া ফেলিল।

ছোটখুড়ী কাছে বসিয়া তাহার চোখ মুছাইয়া দিল, কিন্তু কি বলিয়া যে এই মেয়েটাকে স্বান্ত্বনা দিবে তাহা ভাবিয়া পাইল না। এমনি করিয়া এই হীনা হতভাগ্য অনুঢ়া কন্যার দিন কাটিতে লাগিল ঘরে-বাইরে আত্মীয়- সবাই মিলিয়া অনুক্ষণ কেবল লাঞ্ছনা দিতেই লাগিল, কিন্তু পরিত্রাণ করিবার কেহ চেষ্টামাত্রও করিল না। এমনি করিয়া এই হীনা হতভাগ্য অনুঢ়া কন্যার দিন কাটিতে লাগিল ঘরে-বাইরে আত্মীয়- সবাই মিলিয়া অনুক্ষণ কেবল লাঞ্ছনা দিতেই লাগিল, কিন্তু পরিত্রাণ করিবার কেহ চেষ্টামাত্রও করিল না।

10
Articles
অরক্ষণীয়া
0.0
"আরক্ষনিয়া" সত্যবতী নামে এক যুবতীর গল্প বলে, যিনি একটি রক্ষণশীল এবং গোঁড়া বাঙালি পরিবারের অন্তর্গত। সত্যবতীর জীবন তার সমাজে নারীদের প্রতি স্থাপিত ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধ ও প্রত্যাশার দ্বারা গঠিত। তিনি একজন বয়স্ক ব্যক্তি বিকাশের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, যিনি একজন কঠোর এবং নিপীড়ক ব্যক্তিত্ব। এই বিবাহ তার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসাবে প্রমাণিত হয়। সত্যবতীর স্বামী বিকাশকে এমন একটি চরিত্র হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে যিনি সমাজের নিপীড়ক এবং পুরুষতান্ত্রিক দিকগুলিকে প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি সত্যবতীর সাথে খারাপ ব্যবহার করেন এবং তার জীবন তার বৈবাহিক বাড়ির সীমানার মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য একটি অবিরাম সংগ্রামে পরিণত হয়। অসুবিধা সত্ত্বেও, সত্যবতী স্থিতিস্থাপকতা এবং তার জীবন পরিবর্তন করার দৃঢ় সংকল্প প্রদর্শন করে।উপন্যাসটি আত্ম-আবিষ্কারের দিকে সত্যবতীর যাত্রা এবং তার স্বাধীনতার সংগ্রামকে অন্বেষণ করে। তিনি সমাজ কর্তৃক তার উপর আরোপিত নিয়ম ও মূল্যবোধ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং ঐতিহ্যের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে চান। শরৎচন্দ্র সত্যবতীকে নারীর ক্ষমতায়ন এবং তাদের অধিকারের জন্য লড়াইয়ের প্রতীক হিসেবে চিত্রিত করেছেন।গল্পটি উন্মোচিত হওয়ার সাথে সাথে, সত্যবতীর ক্রিয়াকলাপ বিদ্যমান সামাজিক নিয়মগুলিকে চ্যালেঞ্জ করে, যা একটি চিন্তা-উদ্দীপক আখ্যানের দিকে পরিচালিত করে যা লিঙ্গ, শ্রেণী এবং সামাজিক প্রত্যাশার সমস্যাগুলিকে সম্বোধন করে। উপন্যাসটি শেষ পর্যন্ত নারীর মুক্তির বৃহত্তর বিষয়বস্তু এবং মর্যাদা ও আত্মসম্মানে জীবনযাপন করার জন্য তাদের আকাঙ্ক্ষার মধ্যে পড়ে।"অরক্ষনীয়া" সাহিত্যের একটি শক্তিশালী কাজ যা মানবিক সম্পর্কের জটিলতা এবং একটি ঐতিহ্যবাহী সমাজে নারীদের মুখোমুখি হওয়া সংগ্রামকে চিত্রিত করার জন্য শরৎচন্দ্রের প্রতিভা প্রদর্শন করে। এটি বাংলা সাহিত্যে একটি উল্লেখযোগ্য অবদান হিসাবে রয়ে গেছে এবং লিঙ্গ সমতা এবং সামাজিক সংস্কারের আলোচনায় প্রাসঙ্গিক হতে চলেছে।
1

এক

27 October 2023
0
0
0

মেজমাসীমা, মা মহাপ্রসাদ পাঠিয়ে দিলেন ধরো। - কে রে, অতুল ? আয় বাবা, আয়, বলিয়া দুর্গামণি রান্নাঘর হইতে বাহির হইলেন। অতুল প্রণাম করিয়া পায়ের ধুলা গ্রহণ করিল । নীরোগ হও বাবা, দীর্ঘজীবী হও। ওরে ও জ

2

দুই

27 October 2023
0
0
0

বড়ভাই গোলকনাথ মারা গেলে, তাঁর বিধবা স্ত্রী স্বর্ণমঞ্জরী নির্বংশ পিতৃকুলের যৎসামা বিষয় আশয় বিক্রয় করিয়া হাতে কিছু নগদ পুঁজি করিয়া কনিষ্ঠ দেবর অনাথনাথকেই আশ্রয় করিয়াছিলেন। তাহারই বিষের অসহ্য জ্ব

3

তিন

27 October 2023
0
0
0

ছোটভাই অনাথকে বাধ্য হইয়া প্রাঙ্গণের প্রাচীরে একটা দ্বারা ফুটাইতে হইল। অগ্রজের শ্রাদ্ধ-শান্তি হইয়া গেলে পনর-ষোল দিন পরে একদিন তিনি অফিসে যাইবার মুখে চৌকাঠের উপর দাঁড়াইয়া পান চিবাইতে চিবাইতে বলিলেন,

4

চার

27 October 2023
0
0
0

এগার বৎসর পরে দুর্গামণি হরিপালের বাপের ভিটায় আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তখন শরতের সন্ধ্যা এমনই একটা অস্বাস্থ্যকর ঝাপসা ধুয়া লইয়া সমস্ত প্রামখানার উপর হুমড়ি খাইয়া বসিয়াছিল যে, তাহার ভিতরে প্রবেশ করিবা

5

পাঁচ

27 October 2023
1
0
0

প্রথম অগ্রহায়ণের শীতের বাতাস বহিতেছিল। দুর্গার এক ছেলেবেলার সাথী বাপের বাড়ি আসিয়াছিল। আজ দুপুরবেলা মেয়েকে একটু ভাল দেখিয়া দুর্গা তাহার সহিত দেখা করিতে বাহির হইয়াছিল। পথে ডাক-পিয়নের সাক্ষাৎ পাইয

6

ছয়

28 October 2023
1
0
0

সংবাদ দিবার প্রয়োজন ছিল না বলিয়াই দুর্গা চিঠি না লিখিয়াই আসিয়াছিলেন। জ্ঞানদার চেহারা দেখিয়া জ্যাঠাইমা হাসিয়াই খুনগুলো ওগেনি, গালদুটো তোর চড়িয়ে ভেঙ্গে দিলে কে লো মা কি ঘেন্না। মাথায় টাক পড়ল ক

7

সাত

28 October 2023
0
0
0

আজকাল ধরিয়া না তুলিলে দুর্গা প্রায় উঠিতেই পারিতেন না। মেয়ে ছাড়া তাঁহার কোন উপায়ই ছিল না। তাই সহস্র কর্মের মধ্যেও জ্ঞানদা যখন-তখন ঘরে ঢুকিয়া মায়ের কাছে বসিত। আজিকার সকালেও একটুখানি ফাঁক পাইয়া,

8

আট

28 October 2023
0
0
0

মাধুরী শিশুকাল হইতেই কলিকাতায় মামার বাড়ি থাকে। মহাকালী পাঠশালায় পড়ে । ইংরাজী, বাংলা, সংস্কৃত শিখিয়াছে। গাহিতে বাজাইতে, কার্পেট বুনিতেও জানে, আবার শিব গড়িতে, স্তোত্র আওড়াইতেও পারে। দেখিতেও অতিশয়

9

নয়

28 October 2023
0
0
0

চৈত্রের শেষ কয়টা দিন বলিয়া ছোটবৌয়ের বাপের বাড়ি যাওয়া হয় নাই। মাসটা শেষ হইতেই তাহার ছোটভাই তাহাকে এবং মাধুরীকে লইবার জন্য আসিয়া উপস্থিত হইল। আজ ভাল দিন খাওয়াদাওয়ার পরেই যাত্রার সময়। অতুল বাড

10

দশ

28 October 2023
0
0
0

দুর্গার এমন অবস্থা যে, কখন কি ঘটে বলা যায় না। তাহার উপর যখন তিনি পাড়ার সর্বশাস্ত্রদশী প্রবীণাদের মুখে শুনিলেন, তাহার প্রাপ্তবয়স্কা অলা কন্যা শুধু যে পিতৃপুরুষদিগেরই দিন দিন অধোপতি করিতেছে তাহা নাহে

---