মাধুরী শিশুকাল হইতেই কলিকাতায় মামার বাড়ি থাকে। মহাকালী পাঠশালায় পড়ে । ইংরাজী, বাংলা, সংস্কৃত শিখিয়াছে। গাহিতে বাজাইতে, কার্পেট বুনিতেও জানে, আবার শিব গড়িতে, স্তোত্র আওড়াইতেও পারে। দেখিতেও অতিশয় সুখী। এইবার পূজার সময় মাস দুয়ের জন্য বাটী আসিয়াছিল, সেই সময়েই কথাবার্তা পাকা হইয়া গিয়াছে। অতুলের মত দুর্লভ পাত্র চেষ্টা করিয়া সংগ্রহ করিতে হয় নাই, পাত্র আপনিই ধরা দিয়াছে। অবশ্য স্বর্ণ মাঝখানে ছিলেন।
ছোটবৌয়ের ভাইয়েরা অবস্থাপন্ন। যা বাঁচিয়া আছেন, আসন্ন প্রসবা মেয়েকে তিনি বাড়ি লইয়া যাইবার জন্য লোক পাঠাইলেন, সঙ্গে মাধুরীও আসিল। মেজজ্যাঠাইকে সে অনেকদিন দেখে নাই, আসিয়াই প্রণাম করিল।
দীর্ঘজীবী হত মা। বলিয়া আশীর্বাদ করিয়া করিয়া দুর্গা নির্নিমেষচক্ষে চাহিয়া রহিলেন। একে ত সুন্দরী, তাহাতে মামী সাজাইয়া গুজাইয়া পাঠাইয়া দিয়াছিল। মামী করিকাতার মেয়ে- কেমন করিয়া সাজাইয়া দিতে হয় জানে। পরে এটি কয়েক বাছা বাছা স্বর্ণালঙ্কার, পরনে কোঁচানো চওড়া লালপেড়ে শাড়ি পিঠের উপর চুল এলো করা, কপালে টিপ। চাহিয়া চাহিয়া দুর্গার চোখের পাতা আর পড়ে না। হঠাৎ একটা দীর্ঘনিশ্বাসের সঙ্গে বাহির হইয়া আসিল- আহা! মেয়ে ত নয় যেন স্বর্ণপ্রতিমা। এবং সঙ্গে সঙ্গেই তাহার পদতলে উপবিষ্টা নিজের এ মলিন, শ্রীহীন মেয়েটার পানে চাহিয়া তাঁহার দু'চক্ষু সহসা যেন জ্বলিয়া গেল, পাশ ফিরিয়া রুক্ষস্বরে কহিলেন, আর আমি মেয়ে পেটে ধরেছি যেন কাপ্যাচা।
মাধুরী ঘরে ঢুকিবামারই তাহার রূপ এবং সাজসজ্জার পানে চাহিয়া জ্ঞানদা নিজেই হীনতার সঙ্কোচে মাটির সঙ্গে মাটির সঙ্গে মিশিয়া গিয়াছিল। মাধুরী কহিল, দিদি, চল না, একটু গল্প করি গে।
প্রত্যুতরে জ্ঞানদা অব্যক্তিস্বরে কি কহিল, বোঝা গেল না। কিন্তু সেই শব্দটা মাত্র শুনিতে পাইয়াই দুর্গা তিক্তকণ্ঠে বলিয়া উঠিলেন, ও পেড়ামুখ লোকের সামনে আর বার করিস নে গেি বসে থাক। জ্ঞানদা নীরবে বসিয়া রহিল। মাধুরী চলিয়া গেলে, দুর্গা বোধ করি নিতান্তই মনের জ্বালায় বার-দুই আঃ উঃ করিলেন। জ্ঞানদা আস্তে আস্তে কহিল, কপালটা একটু টিপে দেব না।
না।
ওষুধটা একবার -গুলো, না, না, না। যা, আমার বিছানা থেকে উঠে যা হারানয়াদী। তোর মুখ দেখলেও আমার সর্বাঙ্গ যেন জ্বলেপুড়ে যায়। বলিয়া পা নিয়া তিনি মেয়েকে সজোড়ে ঠেলিয়া দিলেন।
জাসদা অনেক সহিয়াছিল, কিন্তু লাথিটা সহ্য করিতে পারিল না। নিঃশব্দে নীচে নামিয়া আসিয়া একেবারে মেঝের উপর উপুর হইয়া পড়িল, এবং সঙ্গে সঙ্গেই তাহার দুচক্ষের জলে মাটি ভিজিয়া গেল। দুই হাতে সম্মুখে প্রসারিত করিয়া দিয়া মনে মনে বলিতে লাগিল, - ভগবান । আমি তার কাঝে কি দোষ করিয়াছি যে সকলেরই চক্ষুশূল। আমার রূপ নাই, বেসন-ভূষণ নাই, আমার বাপ নাই, সে কি আমার দোষ আমার রোপগ্রন্থ এই কঙ্কালসার দেহ, তবুও আমার বয়স বাড়িয়া যাইতেছে সেও কি আমার অপরাধ প্রভু! এতই যদি আমার দোষ, তবে আমাকে আমার বাবার কাছে পাঠাইয়া দাও তিনি আমাকে কখনও ফেলতে পারিবেন না।
জ্ঞানদা বলিয়া দুর্গা পাশ ফিরিলেন মায়ের ডাকে সে চোখ মুছিয় ধড়মড় করিয়া উঠিয়া বসিল।
রোগা শরীর ভিজে মাটির ওপর কেন মা বলিয়া দুর্গা উৎকণ্ঠায় নিজেই উঠিয়া বসিলেন।
৩। বকেছি বুঝি মা। বলিয়া চক্ষের পলকে দুই হাত বাড়াইয়া মেয়েকে বুকের উপর টানিয়া লইয়া ফুকারিয়া কাঁদিয়া ফেলিলেন আজ সন্ধ্যার পরে হঠাৎ অনাথ দুর্গামণির ঘরে ঢুকিয়া বিশ্বমুখে কহিল, আজ কেমন আছ মেজবৌঠান থাক থাক, আর উঠো না তা তা ওষুধপত্র কিছুই খেতে চাওনা শুনলাম অমন করলে ত আরাম হতে পারবে না।
কথাটা সত্য। যদিচ ঔষধ যাহা দেওয়া হইতেছিল, তাহা না দিলেও ক্ষতি ছিল না, কিন্তু সেও তিনি একেবারে খাওয়া ছাড়িয়া দিয়াছিলেন। তাঁহার বাড়িবার আশাও ছিল না, 'ইচ্ছাও ছিল না। কণ্ঠস্বর প্রতিদিন গহ্বরে ঢুকিতেছিল খুব কাছে না আসিলে আজকাল আ শুনিতেই পাওয়া যাইত না। দেবরের আকস্মিক আত্মীয়তায় দুর্গা শঙ্কিত হইয়া উঠিলেন। তথাপি অব্যায়ামরে প্রত্যুত্তরে যাহা কহিলেন, অন্য ঘাড়টা কাত করিয়া, বিশেষ চেষ্টা করিয়া শুনিয়া, বলিলেন, সে ত সত্যি কথাই বৌঠান। বিধবা হয়ে আর বেঁচে লাভ কি কোন হিন্দুসন্তান এ কথার প্রতিবাদ করবে বল ? তবে কিল, আরহত্যাটা না করে কোনগতিকে ক'টা দিন সংসারে থাকা- তোমার আবার যে-রকম দেহের অবস্থা, তাতে এসব কথা আমার না বলাই উচিত, কিন্তু না বললেও যে নয় কিনা, তাই বলি কি, নিজেও দেখতে পাচ্চ চেষ্টার আমি ত্রুটি করচি নে, কিন্তু কি হতভাগা মেয়ে কোনমতেই কি একটা গীথ না। ছ-সাতটা সম্বন্ধ সব কটাহ ভেঙ্গে গেল – মেয়ে দেখে আর কারুর পছন্দ হ'লো না।
দুর্গা কিছুই বলিলেন না। একটুখানি থামিয়া অনাথ পুনরায় কহিতে লাগিল, মেজদা মরে তুমি আবার আমার সংসারে এসেছ কিনা। গোল হচ্ছে ত তাই নিয়ে। নীলকণ্ঠ মুহুয়োকে ত চেনই বাড়ি বাড়ি গিয়ে বেশ তালগোল পাকাচ্চে তোমার ছুতো করে আমাকে কি করে ঠেলবে। আর, তাদের দোষই বা দিই কি করে, নিজেরাও ত মেয়ের রয়সটা দেখতে পাচ্ছি। আবার তাও বলি, শহরে বাপু এত নেই পোড়া পাড়াগাঁয়েই আমাদের যত হাগামা, যত বিচার । বলিয়া জোর করিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাপ করিল।
দেবর যে কিসের ভূমিকা করিতেছেন, কোনদিকে ইহার পতি তাহা ধরিতে না পারিয়া - দুর্গা তেমনি নিঃশব্দে চাহিয়া রহিলেন, কিন্তু শীর্ণ মুখের উপর একটা অনিশ্চিত শঙ্কার ছায়া পড়িল।
একবার কাশিয়া একটুখানি ইত্যতঃ করিয়া অনাথ এইবার আসল কথা প্রকাশ করিল, কহিল, তোমার এ অবস্থায় সত্যিই ত আর কোথাও যাওয়া-আসা চলে না- সে আমি বলিতে, কিন্তু কি জান মেজবৌঠান নিজের মেয়েটাও ত বিবাহযোগ্য হ'ল তাই আমি বলটি কি জান, - সব দিক আমার বাঁচিয়ে চলা ত আবশ্যক - আমি বলি কি - গেনিকে এ সময় আর কোথাও না পাঠালেই নয়, এ বাড়িতে আর ত তাকে রাখা যায় না। বড্ড হৈ চৈ হচ্চে।
দুর্গার ক্ষীণ কন্ঠস্বর ওষ্ঠাধরের মধ্যেই যেন মিলাইয়া গেল, কোথায় সে যাবে ঠাকুরপো?
অনাথ কহিল, হরিপালেই থাক ।
সেখানে কি করে যাবে ? গিয়েই বা কি হবে ঠাকুরপো
অনাথ এবার রুষ্ট হইল, কহিল, এ তোমার অন্যায়, মেজবৌঠান কেবল নিজেরটি দেখলেই ত চলে না, যার সংসার আছে অসময়ে যে তোমাদের ঘাড়ে নিলে তার ভালমন্দ ত চেয়ে দেখা চাই।
দুর্গা জবাব দিতে পারিলেন না শুধু একটা নিঃশ্বাস ফেলিলেন। এ নিঃশ্বাসে এইটুকু কাজ হইল যে, অনথ গলাটা একটু কোমল করিয়া কহিতে লাগিল, এ অবস্থায় তোমার একটু কষ্ট হবে বটে, তা বুঝতে পারছি। কিন্তু উপায় কি ? আর তোমার নিজের দোষও আছে মেজবৌঠান। তোমার দাদাকে চিঠি লিখেছিলাম তিনি ত স্পষ্টই লিখছেন সেখানে বিয়ের সমস্ত যোগাড় হয়েছিল, তুমি শুধু একটা অসম্ভব আশায় ভুলে, রাগারাগি করে মেয়ে নিয়ে চলেল এনে। তা না করলে আজ স্বচ্ছন্দে স্বাচ্ছন্দে যে কি হইতে পারিত, সেটা আর অনাহ খুলিয়া বলিল না। কিন্তু দুর্গা বুঝিলেন -- হঠাৎ কেন সে আজ জ্ঞানদাকে বিদায় করিবার প্রস্তাব লইয়া উপস্থিত হইয়াছে। কিছুমাত্র হাঙ্গামা না পোহাইয়া, একটা পয়সা খরচ না করিয়া এই দায় হইতে নিষ্কৃতি পাইবার সন্ধান যখন তাহার মিলিয়াছে, তখন এ লোভ ত্যাগ করিবে সে লোক অনাথ নয়।
সে চলিয়া গেলে খানিক পরে কাজকর্ম সারিয়া জ্ঞানদা ঘরে ঢুকিয়া, মায়ের অবস্থা দেখিয়া ভয়ে চমকাইয়া উঠিল। তাহার কেটির প্রবিষ্ট রক্তশূন্য চোখ দুটি আজ ফুলিয়া রাঙ্গা হইয়া উঠিয়াছে। মেয়েকে দেখিবামাত্রই তাঁহার ক্রন্দনের বেগ একেবারে সহস্রমুখী হইয়া উঠিল । ইঙ্গিতে কাছে ডাকিয়া মেয়ের বুকে মুখ রাখিয়া না আজ ছোট মেয়েটির মত ফোঁপাইয়া কোপাইয়া কাঁদিতে লাগিলেন।
বহুক্ষণে কান্না যখন থালি, তখন মেয়ে কহিল, আমাকে কি তুমি চেন না মা যে, কেই আমাকে তোমার কাছ ছাড়া করতে পারে এত কাকার বাড়ি নয় মা, এ আমার বাবার বাড়ি। তিনি খেতে না দেন তখন ত আর লজ্জা থাকবে না যা করে হোক তখন তোমাকে আমি খাওয়াতে পারব না। বলিয়া মেয়ে আজ মা হইয়া মাকে মেয়ের মত কোলে করিয়া বসিয়া রহিল। খানিক পরে মা শান্ত দেহে ঘুমাইয়া পড়িলেন। কিন্তু চেয়ে গভীর রাত্রি পর্যন্ত জাগিয়া থাকিয়াও স্থির করিতে পারিল না, তাহার এই 'যা হোক'টা তখন কি হইবে। সে-দুর্দিনে মায়ের খাওয়া পরাটা সে কেমন করিয়া কোথা হইতে সংগ্রহ করিবে।
জ্ঞানদাকে বিদায় করার প্রস্তাবটা ছোটবৌ শুনিতে পাইয়া স্বামীকে নির্জনে ডাকিয়া কহিল, তোমার কি ভীমরতি হয়েছে যে, ভাজের পরামর্শে এই অসময়ে মায়ের কাছ থেকে মেয়েকে দূর করবার কথা বলে এলে কসাই, যাদের জবাই করাহ ব্যাবসা তাদেরও তোমাদের চেয়ে দয়ামায়া আছে। যাই হোক, কাজটা নাকি একেবারেই অসম্ভব, তাই অনাথ চুপ করিয়া গেল, না হইলে এ সকল ব্যাপারে সে স্ত্রীর বাধ্য, এতবড় দোষারোপ তাহার অতিবড় শত্রুরাও তাহার প্রতি করিতে পারিত না। কিন্তু দুর্গা হয়ত এই আকালেও মেয়ে লইয়া আর একবার হরিপাল যাইতে পারিতেন, কিন্তু সেখানে সেই যে পাত্র, যে নিজের পাঁচ-ছয়টি সন্তানের জননীকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় লাথি মারিয়া হত্যা করিয়াছে, তাহার কথা মনে হইলেই তাঁহার হৃৎকম্প উপস্থিত হইল ।
পরদিন অনাথকে নিজের শয্যাপার্শ্বে ডাকাইয়া আনিয়া দুর্গা তাহার হাতদুটি চাপিয়া ধরিয়া কাঁদিয়া কহিলেন, ঠাকুরপো, সম্পর্কে বড় না হলে, আজ তোমার পায়ে ধরে ভিক্ষে চাইতাম ভাই, তোমার যাকে ইচ্ছে হয় একে দাও, কিন্তু মেয়েকে এ সময়ে আমার কাছ ছাড়া ক'র না। বলিয়া জ্ঞানদার হাতখানি তুলিয়া লইয়া তাহার কাকার হাতের উপর রাখিলেন অনাথ হাতটা টানিয়া লইয়া বিরক্ত হইয়া কহিল, পরের দায়ে আমার জাত যায়। আমি কি চেষ্টার কচি কচি মেজবৌঠান । কিন্তু ঘাটের মড়াও যে এ শকুনিকে বিয়ে করতে চায় না । বলি, তোমার সেই বালাজোড়াটা যে ছিল, কি করলে ?
সে ত তোমার দাদার শ্রাদ্ধের সময়েই পেছে ঠাকুরপো।
অনাথ হাতটা উল্টাইয়া কহিল, তা হলে আর আমি কি করে! একটা পয়সাও দেবে না, মেয়েও ছাড়বে না, তার মানে, আমারে মাথায় পা দিয়ে ডুবোতে চাও আর কি। বলিয়া রাগ করিয়া চলিয়া গেল।
সে চলিয়া গেলে দুর্গা ক্ষণকাল স্থির থাকিয়া, অকস্মাৎ মেয়ের হাতটা সজোরে ঠেলিয়া দিয়া বলিলেন, বসে আছিস। ঘরে সন্ধ্যা দিবিনে যে সমস্ত আলোচনা এইমাত্র হইয়া গেল, তাহারই দহনে বোধ করি জ্ঞানদা একটুখানি অন্যমনস্ক হইয়া পড়িয়াছিল। জবাব দিবার পূর্বেই মা নিরতিশয় কঠিন হইয়া বলিয়া উঠিলেন, মরণ আর কি! রাজকন্যার মত আবার অভিমান করে বসে আছেন। হ লাগেনি, এত ধিকারেও তোর ত প্রাণ বেরোয় না। যদু ঘোষের এক ছেলে সেদিন তিনদিনের জ্বরে মালো আর এই একটা বছর ধরে তুই নিত্যি জ্বরের সঙ্গে যুঝছিস, কিন্তু তোকে ত যা নিতে পারলে না। তুই বলে তাই এখনো মুখ দেখাস, আর কোন মেয়ে হলে মনের ঘেন্নায় এতদিন জলে ডুবে মরত। যা যা, সুমুখ থেকে একটু নড়ে যা শকুনি, একদন্ড হাঁপ ফেলে বাঁচি । দিবারাত্রি আমাকে যেন জোঁকের মত কামড়ে পড়ে আছে। বলিয়া একটা ঠেলা দিয়া মুখ ফিরাইয়া শুইলেন।
বাস্তবিকত মায়ের কথাটা সত্য যে, আর কোন মেয়ে হইলে শুধুমাত্র মনের ঘৃণাতেই আত্মহত্যা করিত, এমন কত মেয়েই ত করিয়াছে, কিন্তু এই মেয়েটিকে উপবান যেন কোন নিপুঢ় কারণে মা বসুন্ধরার মতই সহিষ্ণু করিয়া পড়িয়াছিলেন। সে নীরবে উঠিয়া পিয়া নিয়মিত গৃহকার্যে প্রকৃত হইল। এতবড় নির্দয় লাঞ্ছনাতেও মুহূর্তের জন্য আত্মবিস্মৃত হইয়া বলিল, - লা মা, মরিতে আমিও জানি। শুধু তুমি ব্যথা পাইবে বলিয়াই সব সহিয় বাঁচিয়া আছি।
ঘরে প্রদীপ দিয়া গঙ্গা জল ছড়া দিয়া শুনা দিয়া সে আর একটি ক্ষুদ্র দীপ হাতে করিয়া তুলসী-বেদীমূলে দিতে গেল। বাঙ্গালীর মেয়ে শিশুকাল হইতেই এই ছোট গাছটিকে দেবতা কলিয়া ভাবিতে শিখিয়াছে। এইখানে আসিয়া আজ আর সে কিছুতেই সামলাইতে পারিল না ।
গলায় আঁচল দিয়া প্রণাম করিতে গিয়া আর উঠিতে পারিল না। দুই হাত সুমুখে হুড়াইয়া দিয়া কঁদিয়া সাষ্টাঙ্গে লুটাইয়া পড়িল।
ঠাকুর। দয়াময়। এইখানে তুমি আমার বাবাকে লইয়াদ এইবার আমার মাকে আর আমাকে কোলে লইয়া আমার বাবার কাছে পাঠাইয়া দাও ঠাকুর। আমরা আর সহিতে পারিতেছি না।