shabd-logo

সপ্তম পরিচ্ছেদ

8 October 2023

2 Viewed 2

পরদিন পিতার সহিত দেবদাসের অল্পক্ষণের জন্য কথাবার্তা হইল।

পিতা কহিলেন, তুমি চিরদিন আমাকে জ্বালাতন করিয়াছ, যতদিন বাঁচিব, ততদিনই জ্বালাতন হইতে হইবে । তোমার মুখে এ কথায় আশ্চর্য হইবার কিছু
নাই।

দেবদাস নিঃশব্দে অধোবদনে বসিয়া রহিল ।

পিতা কহিলেন, আমি ইহার ভিতর নাই। যা ইচ্ছা হয়, তুমি ও তোমার জননীতে মিলিয়া কর।

দেবদাসের জননী এ কথা শুনিয়া কীদিয়া কহিলেন__বাবা, এতও আমার অদৃষ্টে ছিল!

সেই দিন দেবদাস তোড়জোড় বাঁধিয়া কলিকাতায় চলিয়া গেল।

পার্বতী এ কথা শুনিয়া কঠোর মুখে আরও কঠিন হাসিয়া চুপ করিয়া রহিল । গতরাত্রের কথা কেহই জানে না, সেও কাহাকে কহিল না। তবে মনোরমা
আসিয়া ধরিয়া বসিল, পারু, শুনলাম দেবদাস চলে গেছে?

হা

তবে, তোর উপায় কি করেচে?

উপায়ের কথা সে নিজেই জানে না, অপরকে কি বলিবেঃ আজ কয়দিন হইতে সে নিরন্তর ইহাই ভাবিতেছিল। কিন্তু কোনক্রমেই স্থির করিতে পারিতেছিল
না যে, তাহার আশা কতখানি এবং নিরাশা কতখানি । তবে একটা কথা এই যে, মানুষ এমনি দুঃসময়ের মাঝে আশা-নিরাশার কুলকিনারা যখন দেখিতে পায়
না, তখন দুর্বল মনে বড় ভয়ে ভয়ে আশার দিকটাই চাপিয়া ধরিয়া থাকে। যেটা হইলে তাহার মঙ্গল, সেইটাই আশা করে । ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় সেই দিক
পানেই নিতান্ত উৎসুক নয়নে চাহিয়া দেখিতে চাহে। পার্বতীর এই অবস্থায় সে কতকটা জোর করিয়া আশা করিতেছিল যে, কাল রাত্রের কথাটা নিশ্চয়ই বিফল
হইবে না। বিফল হইলে তাহার দশা কি হইবে, এটা তাহার চিন্তার বাহিরে গিয়া পড়িয়াছিল। তাই সে ভাবিতেছিল, দেবদাদা আবার আসিবে, আবার আমাকে
ডাকিয়া বলিবে, পারু, তোমাকে আমি সাধ্য থাকিতে পরের হাতে দিতে পারিব না।

কিন্তু দিন-দুই পরে পার্বতী এইরূপ পত্র পাইল-_

পার্বতী, আজ দুইদিন হইতে তোমার কথাই ভাবিয়াছি। পিতামাতার কাহারও ইচ্ছা নহে যে, আমাদের বিবাহ হয়। তোমাকে সুখী করিতে হইলে,
তাহাদিগকে এতবড় আঘাত দিতে হইবে, যাহা আমার দ্বারা অসাধ্য । তা ছাড়া, তাহাদের বিরুদ্ধে এ কাজ করিবই বা কেমন করিয়া? তোমাকে আর যে কখন
পত্র লিখিব, আপাততঃ এমন কথা ভাবিতে পারিতেছি না। তাই এ পত্রেই সমস্ত খুলিয়া লিখিতেছি। তোমাদের ঘর নীচু । বেচা-কেনা ঘরের মেয়ে মা
কোনমতেই ঘরে আনিবেন না; এবং ঘরের পাশে কুটুম্ব, ইহাই তাহার মতে নিতান্ত কদর্য। বাবার কথা-_সে ত তুমি সমস্তই জান । সে রাত্রের কথা মনে করিয়া
বড় ক্রেশ পাইতেছি। কারণ, তোমার মত অভিমানিনী মেয়ে কতবড় ব্যথায় যে সে-কাজ পারিয়াছিল, সে আমি জানি ।

আর এক কথা-__ তোমাকে আমি যে বড় ভালবাসিতাম, তাহা আমার কোনদিন মনে হয় নাই__আজিও তোমার জন্য আমার অন্তরের মধ্যে নিরতিশয় ক্লেশ
বোধ করিতেছি না। শুধু এই আমার বড় দুঃখ যে, তুমি আমার জন্য কষ্ট পাইবে। চেষ্টা করিয়া আমাকে ভুলিও, এবং আন্তরিক আশীর্বাদ করি, তুমি সফল
হও ।_দেবদাস।

পত্রখানা যতক্ষণ দেবদাস ডাকঘরে নিক্ষেপ করে নাই, ততক্ষণ এক কথা ভাবিয়াছিল; কিন্তু রওনা করিবার পরমুহূর্ত হইতেই অন্য কথা ভাবিতে লাগিল ।
হাতের টিল ছুঁড়িয়া দিয়া একদৃষ্টে সেই দিকে চাহিয়া রহিল। একটা অনির্দিষ্ট শঙ্কা তাহার মনের মাঝে ক্রমে ক্রমে জড় হইতেছিল। সে ভাবিতেছিল, এ টিলটা
তাহার মাথায় কিভাবে পড়িবে । খুব লাগিবে কি? বাচিবে ত? সে-রাত্রে পায়ের উপর মাথা রাখিয়া সে কেমন করিয়া কীদিয়াছিল, পোস্ট অফিস হইতে বাসায়
ফিরিবার পথে প্রতি পদক্ষেপে দেবদাসের ইহাই মনে পড়িতেছিল। কাজটা ভাল হইল কি? এবং সকলের উপরে দেবদাস এই ভাবিতেছিল যে, পার্বতীর নিজের
যখন কোন দোষ নাই, তখন কেন পিতামাতা নিষেধ করেন? বয়সের বৃদ্ধির সহিত, এবং কলিকাতায় থাকিয়া, সে এই কথাটি বুঝিতে পারিতেছিল যে, শুধু-
লোক-দেখানো কুলমর্ধাদা এবং একটা হীন খেয়ালের উপর নির্ভর করিয়া নিরর্থক একটা প্রাণনাশ করিতে নাই। যদি পার্বতী না বাঁচিতে চাহে, যদি সে নদীর
জলে অন্তরের জ্বালা জুড়াইতে ছুটিয়া যায়, তা হইলে বিশ্বপতির চরণে কি একটা মহাপাতকের দাগ পড়িবে না?

বাসায় আসিয়া দেবদাস আপনার ঘরে শুইয়া পড়িল। আজকাল সে একটা মেসে থাকে। মাতুলের আশ্রয় সে অনেকদিন ছাড়িয়া দিয়াছে,_সেখানে তাহার
কিছুতেই সুবিধা হইত না। যে ঘরে দেবদাস থাকে, তাহারই পাশের ঘরে চুনিলাল বলিয়া একজন যুবক আজ নয় বসর হইতে বাস করিয়া আসিতেছেন।

তাহার এই দীর্ঘ কলিকাতা বাস বি এ পাস করিবার জন্য অতিবাহিত হইয়াছে__আজিও সফলকাম হইতে পারেন নাই বলিয়া এখনো এইখানেই তাহাকে
থাকিতে হইয়াছে। চুনিলাল তাহার নিত্যকর্ম সান্ধ্যভ্রমণে বাহির হইয়াছেন, ভোর নাগাদ বাটী ফিরিবেন। বাসায় আর কেহ এখনও আসেন নাই। ঝি আলো
জ্ালিয়া দিয়া গেল, দেবদাস দ্বার র্ধ করিয়া শুইয়া পড়িল।

তাহার পর একে একে সকলে ফিরিয়া আসিল । খাইবার সময় দেবদাসকে ডাকাডাকি করিল, কিন্তু সে উঠিল না । চুনিলাল কোনদিন রাত্রে বাসায় আসে না,
আজিও আসে নাই।

তখন রাত্রি একটা বাজিয়া গিয়াছে। বাসায় দেবদাস ব্যতীত কেহই জাগিয়া নাই। চুনিলাল গৃতপ্রত্যাবর্তন করিয়া দেবদাসের ঘরের সম্মুখে দীড়াইয়া দেখিল,
দ্বার রুদ্ধ কিন্তু আলো জুলিতেছে; ডাকিল, দেবদাস কি জেগে আছ নাকি হে?

দেবদাস ভিতর হইতে কহিল, আছি, তুমি এর মধ্যে ফিরলে যে?

চুনিলাল ঈষৎ হাসিয়া কহিল, হা, শরীরটা আজ ভাল নেই, বলিয়া চলিয়া গেল। কিছুক্ষণ পরে ফিরিয়া আসিয়া কহিল, দেবদাস, একবার দ্বার খুলতে পার?

পারি, কেন?

তামাকের জোগাড় আছে?

আছে। বলিয়া দেবদাস দ্বার খুলিয়া দিল । চুনিলাল তামাক সাজিতে বসিয়া কহিল; দেবদাস, এখনো জেগে কেন?

রোজ রোজই কি ঘুম হয়?

হয় নাঃ

চুনিলাল যেন একটু বিদ্রপ করিয়া কহিল, আমি ভাবতুম তোমাদের মত ভাল ছেলেরা কখনো দুপুর রাত্রের মুখ দেখেনি__আমার আজ একটা নূতন শিক্ষা
হল।

দেবদাস কথা কহিল না। চুনিলাল আপনার মনে তামাক খাইতে খাইতে কহিল, দেবদাস, বাড়ি থেকে ফিরে এসে পর্যন্ত যেন ভাল নেই। তোমার মনে যেন
কি ক্লেশ আছে।

দেবদাস অন্যমনস্ক হইয়াছিল । জবাব দিল না।

মনটা ভাল নেই, না হে?

দেবদাস হঠাৎ বিছানার উপর উঠিয়া বসিল। ব্যগ্রভাবে তাহার মুখপানে চাহিয়া বলিল, আচ্ছা চুনিবাবু, তোমার মনে কি কোন ক্রেশ নেই?

চুনিলাল হাসিয়া উঠিল-_কিছু না।

কখন এ জীবনে ক্লেশ পাওনি?

এ কথা কেন?

আমার শুনতে বড় সাধ হয়।

তা হলে আর একদিন শুনো।

দেবদাস বলিল, আচ্ছা, চুনি, তুমি সারারাত্রি কোথায় থাক?

চুনিলাল মৃদু হাসিয়া কহিল, তা কি তুমি জানো না?

জানি, কিন্তু ঠিক জানিনে ।

চুনিলালের মুখ উৎসাহে উজ্জ্বল হইয়া উঠিল। এ-সব আলোচনার মধ্যে আর কিছু না থাক, একটা চক্ষুলজ্জাও যে আছে, দীর্ঘ অভ্যাসের দোষে সে তাহাও
বিন্ৃত হইয়াছিল। কৌতুক করিয়া চক্ষু মুদিয়া বলিল, দেবদাস, ভাল করে জানতে হলে কিন্তু ঠিক আমার মত হওয়া চাই। কাল আমার সঙ্গে যাবে?

দেবদাস একবার ভাবিয়া দেখিল। তাহার পর কহিল, শুনি, সেখানে নাকি খুব আমোদ পাওয়া যায়। কোন কষ্ট মনে থাকে না; এ কি সত্যিঃ
একেবারে খাটি সত্যি।

তা যদি হয়, ত আমাকে নিয়ে যেয়ো__আমি যাবো।

পরদিন সন্ধ্যার প্রাক্কালে চুনিলাল দেবদাসের ঘরে আসিয়া দেখিল, সে ব্যন্তভাবে জিনিসপত্র বাঁধিয়া গুছাইয়া সাজাইয়া লইতেছে। বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা
করিল, কি হে, যাবে না?

দেবদাস কোনদিকে না চাহিয়া কহিল, হা, যাবো বৈ কি।

তবে এ-সব কি করচ ?

যাবার উদ্যোগ করচি।

চুনিলাল ঈষৎ হাসিয়া ভাবিল, মন্দ উদ্যোগ নয়; কহিল, ঘরবাড়ি কি সব সেখানে নিয়ে যাবে নাকি হে?

তবে কার কাছে রেখে যাব?

চুনিলাল বুঝিতে পারিল না। কহিল, জিনিসপত্র আমি কার কাছে রেখে যাই? সব ত বাসায় পড়ে থাকে।

দেবদাস যেন হঠাৎ সচেতন হইয়া চোখ তুলিল। লঙ্জিত হইয়া কহিল, চুনিবাবু, আজ আমি বাড়ি যাচ্ছি।

সে কি হে? কৰে আসবে?

দেবদাস মাথা নাড়িয়া বলিল, আমি আর আসব না।

বিম্ময়ে চুনিলাল তাহার মুখপানে চাহিয়া রহিল। দেবদাস কহিতে লাগিল-_এই টাকা নাও; আমার যা কিছু ধার আছে, এই থেকে শোধ করে দিয়ো । যদি
কিছু বাচে, বাসার দাসী-চাকরকে বিলিয়ে দিয়ো । আমি আর কখনো কলকাতায় ফিরব না।

মনে মনে বলিতে লাগিল, কলকাতায় এসে আমার অনেক গেছে, অনেক গেছে।

আজ যৌবনের কুয়াশাচ্ছন্ন আধার ভেদ করিয়া তাহার চোখে পড়িতেছে-__সেই দুর্দান্ত দুর্বিনীত কিশোর বয়সের সেই অযাচিত পদদলিত রত আজ সমস্ত

কলিকাতার তুলনাতেও যেন অনেক বড়, অনেক দামী । চুনিলালের মুখপানে চাহিয়া বলিল, চুনি শিক্ষা বিদ্যা বুদ্ধি জ্ঞান উন্নতি-_যা কিছু, সব সুখের জন্য ।
যেমন করেই দেখ না কেন, নিজের সুখ বাড়ানো ছাড়া এ-সকল আর কিছুই নয়__
চুনিলাল বাধা দিয়া বলিয়া উঠিল, তবে তুমি কি আর লেখাপড়া করবে না নাকি?

না। লেখাপড়ার জন্যে আমার যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে । আগে যদি জানতাম, এতখানির বদলে আমার এইটুকু লেখাপড়া হবে, তাহলে আমি জন্মে কখনো
কলিকাতার মুখ দেখতাম না।

তোমার হয়েছে কিঃ

দেবদাস ভাবিতে বসিল; কিছুক্ষণ পরে কহিল, আবার যদি কখন দেখা হয়, সব কথা বলব।

রাত্রি তখন প্রায় নয়টা বাজিয়াছে। বাসায় সকলে এবং চুনিলাল নিরতিশয় বিস্মিত হইয়া দেখিল, দেবদাস গাড়িতে সমস্ত দ্রব্যাদি বোঝাই করিয়া চিরদিনের
মত বাসা পরিত্যাগ করিয়া বাটী চলিয়া গেল। সে চলিয়া গেলে চুনিলাল রাগ করিয়া বাসার অপর সকলকে বলিতে লাগিল-_-এইরকম ভিজে-বেড়ালগোছ
লোকগুলোকে আদতে চিনিতে পারা যায় না।

16
Articles
দেবদাস
0.0
"দেবদাস" প্রখ্যাত বাঙালি লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা একটি কালজয়ী ক্লাসিক। এই মর্মস্পর্শী আখ্যানটি দেবদাসের করুণ কাহিনি, অপ্রত্যাশিত প্রেমের দ্বারা গ্রাস করা এক যুবককে নিয়ে আসে। 20 শতকের গোড়ার দিকে স্থাপিত, গল্পটি ঔপনিবেশিক ভারতে সামাজিক নিয়ম এবং শ্রেণীগত পার্থক্যগুলির জটিলতাগুলি অন্বেষণ করে। বইটি স্পষ্টভাবে মদ্যপান এবং হতাশার মধ্যে দেবদাসের আত্ম-ধ্বংসাত্মক বংশদ্ভুত চিত্রিত করে, পারোর প্রতি তার প্রেম এবং পারিবারিক চাপের কারণে তাকে বিয়ে করতে না পারা থেকে উদ্ভূত। শরৎচন্দ্রের উদ্দীপনামূলক গল্প বলার এবং গভীর চরিত্রের অন্বেষণ "দেবদাস" কে একটি স্থায়ী সাহিত্যিক মাস্টারপিস করে তোলে, প্রেম, ক্ষতি এবং সামাজিক সীমাবদ্ধতার থিমগুলিকে উস্কে দেয় যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পাঠকদের সাথে অনুরণিত হতে থাকে।
1

প্রথম পরিচ্ছেদ

7 October 2023
1
0
0

একদিন বৈশাখের দ্বিপ্রহরে রৌদ্রেরও অন্ত ছিল না, উত্তাপেরও সীমা ছিল না। ঠিক সেই সময়টিতে মুখৃষ্যেদের দেবদাস পাঠশালা-ঘরের এক কোণে ছেঁড়া মাদুরের উপর বসিয়া, শ্রেট হাতে লইয়া, চক্ষু চাহিয়া, বুজিয়া, পা

2

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

7 October 2023
0
0
0

দেবদাসকে পরদিন খুব মারধর করা হইল-_সমস্তদিন ঘরে রুদ্ধ করিয়া রাখা হইল। তাহার পর, তাহার জননী যখন ভারী কান্নাকাটি করিতে লাগিলেন, তখন দেবদাসকে ছাড়িয়া দেওয়া হইল। পরদিন ভোরবেলায় সে পলাইয়া আসিয়া পার্ব

3

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

7 October 2023
0
0
0

দিনের পর দিন যায়__এ দুটি বালক-বালিকার আমোদের সীমা নাই-_সমস্ত দিন ধরিয়া রোদে রোদে ঘুরিয়া বেড়ায়, সন্ধ্যার সময় ফিরিয়া আসিয়া মারধর খায়, আবার সকালবেলায় ছুটিয়া পলাইয়া যায়__আবার তিরক্কার-প্রহার

4

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

7 October 2023
1
0
0

এমনি করিয়া এক বৎসর কাটিল বটে, কিন্তু আর কাটিতে চাহে না। দেবদাসের জননী বড় গোলযোগ করিতে লাগিলেন । স্বামীকে ডাকিয়া বলিলেন, দেবা যে মুখ্য চাষা হয়ে গেল,__-একটা যা হয় উপায় কর। তিনি ভাবিয়া বলিলেন,

5

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

7 October 2023
0
0
0

পার্বতী এই তের বছরে পা দিয়াছে_-ঠাকুরমাতা এই কথা বলেন। এই বয়সে শারীরিক সৌন্দর্য অকম্মাৎ যেন কোথা হইতে ছুটিয়া আসিয়া কিশোরীর সর্বাঙ্গ ছাইয়া ফেলে। আত্মীয়স্বজন হঠাৎ একদিন চমকিত হইয়া দেখিতে পান যে,

6

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

8 October 2023
0
0
0

রাত্রি বোধ হয় একটা বাজিয়া গিয়াছে । তখনও স্লান জ্যোৎস্না আকাশের গায়ে লাগিয়া আছে। পার্বতী বিছানার চাদরে আপাদমস্তক মুড়ি দিয়া ধীরপদবিক্ষেপে সিঁড়ি বাহিয়া নীচে নামিয়া আসিল। চারিদিকে চাহিয়া দেখিল

7

সপ্তম পরিচ্ছেদ

8 October 2023
0
0
0

পরদিন পিতার সহিত দেবদাসের অল্পক্ষণের জন্য কথাবার্তা হইল। পিতা কহিলেন, তুমি চিরদিন আমাকে জ্বালাতন করিয়াছ, যতদিন বাঁচিব, ততদিনই জ্বালাতন হইতে হইবে । তোমার মুখে এ কথায় আশ্চর্য হইবার কিছু নাই। দে

8

অষ্টম পরিচ্ছেদ

8 October 2023
0
0
0

সতর্ক এবং অভিজ্ঞ লোকদিগের স্বভাব এই যে, তাহারা চক্ষুর নিমিষে কোন দ্রব্যের দোষগুণ সম্বন্ধে দৃঢ় মতামত প্রকাশ করে না-_সবটুকুর বিচার না করিয়া, সবটুকুর ধারণা করিয়া লয় না; দুটো দিক দেখিয়া চারিদিকের কথ

9

নবম পরিচ্ছেদ

8 October 2023
0
0
0

আর দেবদাসঃ সে রাত্রিটা সে কলিকাতা ইডেন গার্ডেনের একটা বেঞ্চের উপর বসিয়া কাটাইয়া দিল। তাহার খুব যে ক্লেশ হইতেছিল, যাতনায় মর্মভেদ হইতেছিল, তাহা নয়। কেমন একটা শিথিল ওঁদাস্য ধীরে ধীরে বুকের মধ্যে জমা

10

দশম পরিচ্ছেদ

8 October 2023
0
0
0

পার্বতী আসিয়া দেখিল, তাহার স্বামীর মস্ত বাড়ি। নৃতন সাহেবী ফ্যাশনের নহে, পুরাতন সেকেলে ধরনের । সদর মহল, অন্দর মহল, পূজার দালান, নাটমন্দির, অতিথিশালা, কাছারি-বাড়ি, তোশাখানা, কত দাসদাসী-_পার্বতী অবাক

11

একাদশ পরিচ্ছেদ

8 October 2023
0
0
0

তাহার পর দুই-তিনদিন দেবদাস মিছিমিছি পথে পথে ঘুরিয়া বেড়াইল-_-অনেকটা পাগলের মত । ধর্মদাস কি কহিতে গিয়াছিল, তাহাকে চক্ষু রাঙ্গাইয়া ধমকাইয়া উঠিল। গতিক দেখিয়া চুনিলালও কথা কহিতে সাহস করিল না। ধর্মদা

12

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ

10 October 2023
0
0
0

দুই ভাই দ্বিজদাস ও দেবদাস ও গ্রামের অনেকেই জমিদার নারায়ণ মুখৃয্যের সৎকার করিয়া বাড়ি ফিরিয়া আসিল। দ্বিজদাস চীৎকার করিয়া কীদিয়া পাগলের মত হইয়াছে__পাড়ার পাচজন তাহাকে ধরিয়া রাখিতে পারিতেছে না।

13

ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

10 October 2023
0
0
0

পিতার মৃত্যুর পর ছয় মাস ধরিয়া ক্রমাগত বাটীতে থাকিয়া, দেবদাস একেবারে জ্বালাতন হইয়া উঠিল। সুখ নাই, শান্তি নাই, একান্ত একঘেয়ে জীবন। তার উপর ক্রমাগত পার্বতীর চিন্তা; আজকাল সব কাজেই তাহাকে মনে পড়ে ।

14

চতুর্দশ পরিচ্ছেদ

10 October 2023
0
0
0

বৎসর-দুই হইল পার্বতী মহেন্দ্রের বিবাহ দিয়া অনেকটা নিশ্চিন্ত হইয়াছে । জলদবালা বুদ্ধিমতী ও কর্মপটু । পার্বতীর পরিবর্তে সংসারের অনেক কাজ সে-ই করে। পার্বতী এখন অন্যদিকে মন দিয়াছে । আজ পাঁচ বৎসর হইল তা

15

পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ

10 October 2023
0
0
0

আজ দুই বৎসর হইতে অশথঝুরি গ্রামে চন্দরমুখী ঘর বীধিয়াছে। ছোট নদীর তীরে একটা উঁচু জায়গায় তাহার ঝরঝরে দু'খানি মাটির ঘর; পাশে একটা চালা,তাহাতে কাল রংয়ের একটা পরিপুষ্ট গাভী বাধা থাকে । ঘর-দুইটির একটিতে

16

ষোড়শ পরিচ্ছেদ

10 October 2023
0
0
0

কলিকাতা ত্যাগ করিয়া কিছুদিন যখন দেবদাস এলাহাবাদে বাস করিতেছিল, তখন হঠাৎ একদিন সে চন্দ্রমুখীকে চিঠি লিখিয়াছিল, বৌ, মনে করেছিলাম, আর কখনো ভালবাসব না। একে ত ভালবেসে শুধুহাতে ফিরে আসাটাই বড় যাতনা, তার

---