সতর্ক এবং অভিজ্ঞ লোকদিগের স্বভাব এই যে, তাহারা চক্ষুর নিমিষে কোন দ্রব্যের দোষগুণ সম্বন্ধে দৃঢ় মতামত প্রকাশ করে না-_সবটুকুর বিচার না করিয়া,
সবটুকুর ধারণা করিয়া লয় না; দুটো দিক দেখিয়া চারিদিকের কথা কহে না। কিন্তু আর একরকমের লোক আছে, যাহারা ঠিক ইহার উলটা । কোন জিনিস
বেশীক্ষণ ধরিয়া চিন্তা করার ধৈর্য ইহাদের নাই, কোন-কিছু হাতে পড়িবামাত্র স্থির করিয়া ফেলে-__ইহা ভাল কিংবা মন্দ; তলাইয়া দেখিবার পরিশ্রমটুকু ইহারা
বিশ্বাসের জোরে চালাইয়া লয়। এ-সকল লোক যে জগতে কাজ করিতে পারে না তাহা নহে, বরঞ্চ অনেক সময় বেশী কাজ করে। অদৃষ্ট সুপ্রসন্ন হইলে
ইহাদিগকে উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে দেখিতে পাওয়া যায়। আর না হইলে, অবনতির গভীর কন্দরে চিরদিনের জন্য শুইয়া পড়ে; আর উঠিতে পারে না, আর
বসিতে পারে না, আর আলোকের পানে চাহিয়া দেখে না; নিশ্চল, মৃত জড়পিগ্ডের মত পড়িয়া থাকে এই শ্রেণীর মানুষ দেবদাস।
পরদিন প্রাতঃকালে সে বাড়ি আসিয়া উপস্থিত হইল । মা আশ্চর্য হইয়া কহিলেন, দেবা, কলেজের কি আবার ছুটি হলঃ
দেবদাস “হা” বলিয়া অন্যমনক্কের ন্যায় চলিয়া গেল। পিতার প্রশ্নও সে এমনি কি-একটা জবাব দিয়া পাশ কাটাইয়া সরিয়া গেল। তিনি ভাল বুঝিতে না
পারিয়া গৃহিণীকে প্রশ্ন করিলেন। তিনি বুদ্ধি খাটাইয়া কহিলেন, গরম এখনো কমেনি বলে আবার ছুটি হয়েচে।
দিন-দুই দেবদাস ছটফট করিয়া বেড়াইল। কেননা, যাহা কামনা তাহা হইতেছে না- পার্বতীর সহিত নির্জনে মোটেই সাক্ষাৎ হইল না। দিন-দুই পরে
পার্বতীর জননী দেবদাসকে সুমুখে পাইয়া বলিলেন, যদি এসেচিস বাছা, ত পারুর বিয়ে পর্যন্ত থেকে যা।
দেবদাস কহিল, আচ্ছা।
দুপুরবেলা আহারাদি শেষ হইবার পর পার্বতী নিত্য বাধে জল আনিতে যাইত। কক্ষে পিস্তল-কলসী লইয়া আজিও সে ঘাটের উপর আসিয়া দীড়াইল;
দেখিতে পাইল, অদূরে একটা কুলগাছের আড়ালে দেবদাস জলে ছিপ ফেলিয়া বসিয়া আছে। একবার তাহার মনে হইল, ফিরিয়া যায়; একবার মনে হইল, নিঃশব্দে জল লগইয়া প্রস্থান করে; কিন্তু তাড়াতাড়ি কোন কাজটাই সে করিতে পারিল না। কলসীটা ঘাটের উপর রাখিতে গিয়া বোধ হয় একটু শব্দ হওয়ায়
দেবদাস চাহিয়া দেখিল। তাহার পর হাত নাড়িয়া ডাকিয়া কহিল, পারু, শুনে যাও।
পার্বতী ধীরে ধীরে কাছে গিয়া দাড়াইল। দেবদাস একটিবার মাত্র মুখ তুলিল, তাহার পর বহুক্ষণ ধরিয়া শূন্যদৃষ্টিতে জলের পানে চাহিয়া রহিল।
পার্বতী কহিল, দেবদা, আমাকে কিছু বলবে?
দেবদাস কোনদিকে না চাহিয়া কহিল, ই,__-বোসো। পার্বতী বসিল না, আনতমুখে দীড়াইয়া রহিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর্যন্ত যখন কোন কথাই হইল না, তখন
পার্বতী এক-পা এক-পা করিয়া ধীরে ধীরে ঘাটের দিকে ফিরিয়া চলিতে লাগিল । দেবদাস একবার মুখ তুলিয়া চাহিল; তাহার পর পুনরায় জলের প্রতি দৃষ্টি
নিক্ষেপ করিয়া কহিল, শোন।
পার্বতী ফিরিয়া আসিল; কিন্তু তথাপি দেবদাস আর কোন কথা কহিতে পারিল না দেখিয়া সে আবার ফিরিয়া গেল । দেবদাস নিস্তব্ধ হইয়া বসিয়া রহিল।
অল্পক্ষণ পরে সে ফিরিয়া দেখিল; পার্বতী জল লইয়া প্রস্থানের উদ্যোগ করিতেছে । তখন সে ছিপ গুটাইয়া ঘাটের নিকট আসিয়া দীড়াইল; কহিল, আমি
এসেচি।
পার্বতী ঘড়াটা শুধু নামাইয়া রাখিল, কথা কহিল না।
আমি এসেচি, পারু!
পার্বতী কিছুক্ষণ কথা না কহিয়া, শেষে অতি মৃদুম্বরে জিজ্ঞাসা করিল, কেন?
তুমি আসতে লিখেছিলে, মনে নেই?
না।
সে কি পারু! সে-রাত্রের কথা মনে পড়ে না?
তা পড়ে । কিন্তু সে-কথায় আর কাজ কি?
তাহার কণ্ঠস্বর স্থির, কিন্তু অতি রক্ষ। কিন্তু দেবদাস তাহার মর্ম বুঝিল না; কহিল, আমাকে মাপ কর, পারু। আমি তখন অত বুঝিনি।
চুপ কর। ও-সব কথা আমার শুনতেও ভাল লাগে না।
আমি যেমন করিয়া পারি, মা-বাপের মত করিব। শুধু তুমি__
পার্বতী দেবদাসের মুখপানে একবার তীক্ষু দৃষ্টিপাত করিয়া বলিল, তোমার মা-বাপ আছেন, আমার নেই? তাদের মতামতের প্রয়োজন নেই?
দেবদাস লজ্জিত হইয়া কহিল, তা আছে বৈ কি পারু, কিন্তু তাদের ত অমত নেই,_তুমি শুধু
কি করে জানলে তাদের অমত নেই? সম্পূর্ণ অত।
দেবদাস হাসিবার ব্যর্থ প্রয়াস করিয়া কহিল-_না গো, তাদের একটুকুও অমত নেই--সে আমি বেশ জানি । শুধু তুমি_
পার্বতী কথার মাঝখানেই তীব্রকণ্ঠে বলিয়া উঠিল, শুধু আমি! তোমার সঙ্গে? ছিঃ__
চক্ষের পলকে দেবদাসের দুই চক্ষু আগুনের মত জুলিয়া উঠিল । কঠিনকণ্ঠে কহিল, পার্বতী! আমাকে কি ভুলে গেলে?
প্রথমটা পার্বতী থতমত খাইল; কিন্তু পরক্ষণেই আত্মসংবরণ করিয়া লইয়া শান্ত কঠিনস্বরে জবাব দিল, না, ভুলব কেন? ছেলেবেলা থেকে তোমাকে দেখে
আসচি, জ্ঞান হওয়া পর্যন্ত ভয় করে আসচি-_তুমি কি তাই আমাকে ভয় দেখাতে এসেচঃ কিন্তু আমাকেই কি তুমি চেন না? বলিয়া সে নিীক দুই চক্ষু তুলিয়া
দীড়াইল।
প্রথমে দেবদাসের বাক্য-নিঃসরণ হইল না; পরে কহিল, চিরকাল ভয় করেই আমাকে এসেচ,_আর কিছু না?
পার্বতী দৃঢস্বরে বলিল, না, আর কিছুই না।
সত্যি বলচ?
হা, সত্যিই বলচি। তোমাতে কিছুমাত্র আমার আস্থা নেই। আমি যাঁর কাছে যাচ্ছি, তিনি ধনবান্ বুদ্ধিমান্-_শান্ত এবং স্থির । তিনি ধার্মিক। আমার মা-বাপ
আমার মঙ্গল কামনা করেন; তাই তারা তোমার মত একজন অজ্ঞান, চঞ্চলচিত্ত, দুর্দান্ত লোকের হাতে আমাকে কিছুতেই দেবেন না। তুমি পথ ছেড়ে দাও।
একবার দেবদাস একটুখানি ইতত্ততঃ করিল, একবার যেন একটু পথ ছাড়িতেও উদ্যত হইল, কিন্তু পরক্ষণেই দৃঢ়পদে মুখ তুলিয়া কহিল--এত অহঙ্কার!
পার্বতী বলিল, নয় কেন? তুমি পার, আমি পারিনে? তোমার রূপ আছে, গুণ নেই-_-আমার রূপ আছে, গুণও আছে। তোমরা বড়লোক, কিন্তু আমার বাবাও
ভিক্ষে করে বেড়ান না। তা ছাড়া, দুদিন পরে আমি নিজেও তোমাদের চেয়ে কোন অংশে হীন থাকবো না, সে তুমি জানো?
দেবদাস অবাক হইয়া গেল।
পার্বতী পুনরায় কহিয়া উঠিল-_তুমি ভাবচ যে, আমার অনেক ক্ষতি করবে । অনেক না হোক, কিছু ক্ষতি করতে পার বটে, সে আমি জানি। বেশ, তাই
করো । আমাকে শুধু পথ ছেড়ে দাও।
দেবদাস হতবৃদ্ধি হইয়া কহিল, ক্ষতি কেমন করে করবো?
পার্বতী তৎক্ষণাৎ বলিয়া দিল-_অপবাদ দিয়ে । তাই দাও গে যাও।
কথা শুনিয়া দেবদাস বজ্রাহতের মত চাহিয়া রহিল । তাহার মুখ দিয়া শুধু বাহির হইল--অপবাদ দেব আমি!
পার্বতী বিষের মত একটুখানি ক্রুর হাসি হাসিয়া বলিল, যাও, শেষ সময়ে আমার নামে একটা কলঙ্ক রটিয়ে দাও গে; সে রাত্রে তোমার কাছে একাকী
গিয়েছিলাম, এই কথা চারিদিকে রাষ্ট্র করে দাও গে। মনের মধ্যে অনেকখানি সান্ত্বনা পেতে পারবে । বলিয়া পার্বতীর দর্পিত ক্রুদ্ধ ওষ্ঠাধর কীপিয়া কীপিয়া
থামিয়া গেল।
কিন্তু দেবদাসের বুকের ভিতরটায় রাগে অপমানে অগ্যুৎপাতের ন্যায় ভীষণ হইয়া উঠিল। সে অব্যক্তস্বরে কহিল, মিথ্যে দুর্নাম রটিয়ে মনের মধ্যে সান্তনা
পাব আমি? এবং পরক্ষণেই সে ছিপের মোটা বাটটা সজোরে ঘুরাইয়া ধরিয়া ভীষণকণ্ঠে কহিল, শোন পার্বতী, অতটা রূপ থাকা ভাল নয়। অহঙ্কার বড় বেড়ে
যায়। বলিয়া গলাটা একটু খাটো করিয়া কহিল, দেখতে পাও না, চাদের অত রূপ বলেই তাতে কলঙ্কের কালো দাগ; পদ্ম অত সাদা বলেই তাতে কালো ভ্রমর
বসে থাকে । এস, তোমারও মুখে কিছু কলঙ্কের ছাপ দিয়ে দিই।
দেবদাসের সহ্যের সীমা অতিক্রম করিয়াছিল। সে দৃঢ়মুষ্টিতে ছিপের বাট ঘুরাইয়া লইয়া সজোরে পার্বতীর মাথায় আঘাত করিল; সঙ্গে সঙ্গেই কপালের
উপর বাম ভুর নীচে পর্যন্ত চিরিয়া গেল। চক্ষের নিমিষে সমস্ত মুখ রক্তে ভাসিয়া গেল।
দেবদাস ছিপটা টুকরা টুকরা করিয়া ভাঙ্গিয়া জলে ভাসাইয়া দিতে দিতে স্থিরভাবে উত্তর দিল, বেশী কিছু নয়, সামান্য খানিকটা কেটে গেছে মাত্র।
পার্বতী আকুলকণ্ঠে কীদিয়া উঠিল--ও গো, দেবদা!
দেবদাস নিজের পাতলা জামার খানিকটা ছিড়িয়া লইয়া, জলে ভিজাইয়া পার্বতীর কপালের উপর বাধিতে বাঁধিতে কহিল, ভয় কি পারু! এ আঘাত শীদ্ব
সেরে যাবে- শুধু দাগ থাকবে । যদি কেউ কখনো এ কথা জিজ্ঞাসা করে, মিথ্যা কথা বলো; নাহয়, সত্য বলে নিজের কলঙ্ক নিজেই প্রকাশ করো ।
ও গো, মা গো!
ছিঃ অমন করে না পারু। শেষ-বিদায়ের দিনে শুধু একটুখানি মনে রাখবার মত চিহ্ন রেখে গেলাম । অমন সোনার মুখ আরশিতে মাঝে মাঝে দেখবে ত?
বলিয়া উত্তরের জন্য অপেক্ষামাত্র না করিয়া চলিতে উদ্যত হইল।
পার্বতী আকুল হইয়া কীদিয়া উঠিয়া বলিল, দেবদাদা গো-__
দেবদাস ফিরিয়া আসিল । চোখের কোণে একফৌটা জল।
বড় ন্নেহজড়িতকণ্ঠে কহিল, কেন রে পার?
কাউকে যেন বলো না।
দেবদাস নিমেষে ঝুঁকিয়া দাঁড়াইয়া পার্বতীর চুলের উপর ওষ্ঠাধর স্পর্শ করিয়া বলিল, ছিঃ__ তুই কি আমার পর পার? তোর মনে নেই, দুষ্টামি করলে
ছেলেবেলায় কত তোর কান মলে দিয়েচি।
দেবদাদা__মাপ কর আমাকে ।
তা তোকে বলতে হবে না ভাই । সত্যিই কি পারু, আমাকে একেবারে ভুলে গেছিস? কবে তোর ওপর রাগ করেছিলাম? কবে মাপ করিনি?
দেবদাদা__
পার্বতী, তুমি ত জানো আমি বেশী কথা বলতে পারিনে; বেশী ভেবেচিন্তে কাজ করতেও পারিনে । যখন যা মনে হয় করি। বলিয়া দেবদাস পার্বতীর মাথায়
হাত দিয়া আশীর্বাদ করিয়া বলিল, তুমি ভালই করেছ আমার কাছে তুমি ত সুখ পেতে না; কিন্তু তোমার এই দেবদাদার অক্ষয় স্বর্গবাস ঘটত।
এই সময় বাধের অন্যদিকে কাহারা আসিতেছিল। পার্বতী ধীরে ধীরে জলে আসিয়া নামিল। দেবদাস চলিয়া গেল। পার্বতী যখন বাটা ফিরিয়া আসিল, তখন
বেলা পড়িয়া গিয়াছে। ঠাকুমা না দেখিয়াই কহিতেছিলেন, পার, পুকুর খুঁড়ে কি জল আনচিস দিদি!
কিন্তু তার মুখের কথা মুখেই রহিয়া গেল। পার্বতীর মুখপানে চাহিবামাত্রই চীৎকার করিয়া উঠিলেন, ও মা গো! এ সর্বনাশ কেমন করে হল?
ক্ষতস্থান দিয়া তখনও রক্তপ্রাব হইতেছিল; বন্ত্রখণড প্রায় সমস্তটাই রক্তে রাঙ্গা । কীদিয়া কহিলেন, ওগো মা গো! তোর যে বিয়ে পারু!
পার্বতী স্থিরভাবে কলসী নামাইয়া রাখিল । মা আসিয়া কীদিয়া প্রশ্ন করিলেন, এ সর্বনাশ কি করে হলো, পারু!
পারু সহজভাবে বলিল, ঘাটে পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলুম। ইটে মাথা লেগে কেটে গেছে।
তাহার পর সকলে মিলিয়া শুশ্রীধা করিতে লাগিল । দেবদাস সত্য কথাই কহিয়াছিল__ আঘাত বেশী নয় । চার-পাচ দিনেই শুকাইয়া উঠিল । আরো আট-দশ
দিন অমনি গেল। তাহার পর একদিন রাত্রে হাতীপোতা গ্রামের জমিদার শ্রীযুক্ত ভুবনমোহন চৌধুরী বর সাজিয়া বিবাহ করিতে আসিলেন। উৎসবে ঘটাপটা
তেমন হইল না। ভুবনবাবু নির্বোধ লোক ছিলেন না,_-প্রৌট বয়সে আবার বিবাহ করিতে আসিয়া ছোকরা সাজাটা ভাল বোধ করেন নাই।
বরের বয়স চল্লিশের নীচে নহে,_কিছু উপর; গৌরবর্ণ, মোটাসোটা নন্দদুলাল ধরনের শরীর । কীচাপাকা গৌফ, মাথার সামনে একটু টাক। বর দেখিয়া
কেহ হাসিল, কেহ চুপ করিয়া রহিল। ভুবনবাবু শান্ত-গন্তীরমুখে কতকটা যেন অপরাধীর মত, ছাদনাতলায় আসিয়া দীড়াইলেন। কানমলা প্রভৃতি অত্যাচার
উপদ্রব হইল না; কারণ, অতখানি বিজ্ঞ গল্তীর লোকের কানে কাহারও হাত উঠিল না। শুভদৃষ্টির সময় পার্বতী কটমট করিয়া চাহিয়া রহিল। ওষ্ঠের কোণে একটু
হাসির রেখা,__ভুবনবাবু ছেলেমানুষটির মত দৃষ্টি অবনত করিলেন । পাড়ার মেয়েরা খিলখিল করিয়া হাসিয়া উঠিল । চক্রবর্তী মহাশয় ছুটাছুটি করিয়া বেড়াইতে
লাগিলেন । প্রবীণ জামাতা লইয়া তিনি কিছু ব্যস্ত হইয়া উঠিয়াছিলেন। জমিদার নারাণ মুখুয্যে আজ কন্যাকর্তা। পাকা লোক-_-কোন পক্ষে, কোনদিকেই ক্রুটি
হইল না। শুভকর্ম সুশৃঙ্খলায় সমাধা হইয়া গেল।
পরদিন প্রাতঃকালে চৌধুরীমহাশয় একবাক্স অলঙ্কার বাহির করিয়া দিলেন। পার্বতীর সর্বাঙ্গে সে-সকল ঝলমল করিয়া উঠিল। জননী তাহা দেখিয়া আঁচল
দিয়া চোখের কোণ মুছিলেন। নিকটে জমিদার-গৃহিণী দীড়াইয়া ছিলেন,_তিনি সন্নেহে তিরঙ্কার করিয়া বলিলেন, আজ চোখের জল ফেলে অকল্যাণ করিস নে
দিদি!
সন্ধ্যার কিছু পূর্বে মনোরমা পার্বতীকে একটা নির্জন ঘরে টানিয়া লইয়া গিয়া আশীর্বাদ করিল-_যা হল, ভালই হল । এখন থেকে দেখবি__কত সুখে থাকবি ।
পার্বতী অল্প হাসিয়া বলিল, তা থাকব । যমের সঙ্গে কাল একটুখানি পরিচয় হয়েছে কিনা!
ও কিকথা রে!
সময়ে সব দেখতে পাবি।
মনোরমা তখন অন্য কথা পাড়িল; কহিল, একবার ইচ্ছে করে, দেবদাসকে ডেকে এনে এই সোনার প্রতিমা দেখাই!
পার্বতীর যেন চমক ভাঙ্গিল। পারিস দিদি? একবার ডেকে আনতে পারা যায় না?
কণ্ঠস্বরে মনোরমা শিহরিয়া উঠিল,_কেন পারু!
পার্বতী হাতের বালা ঘুরাইতে ঘুরাইতে অন্যমনস্কভাবে কহিল, একবার পায়ের ধুলা মাথায় নেব__আজ যাব কিনা!
মনোরমা পার্বতীকে বুকের ভিতর টানিয়া লইয়া, দুজনে বড় কান্না কীদিল। সন্ধ্যা হইয়া গিয়াছে, ঘর অন্ধকার--পিতামহী দ্বার ঠেলিয়া বাহির হইতে
কহিলেন, ও পারু, ও মনো, তোরা বাইরে আয় দিদি!
সেই রাত্রিতেই পার্বতী স্বামীর ঘরে চলিয়া গেল।