shabd-logo

দশম পরিচ্ছেদ

8 October 2023

0 Viewed 0

পার্বতী আসিয়া দেখিল, তাহার স্বামীর মস্ত বাড়ি। নৃতন সাহেবী ফ্যাশনের নহে, পুরাতন সেকেলে ধরনের । সদর মহল, অন্দর মহল, পূজার দালান, নাটমন্দির,
অতিথিশালা, কাছারি-বাড়ি, তোশাখানা, কত দাসদাসী-_পার্বতী অবাক হইয়া গেল। সে শুনিয়াছিল, তাহার স্বামী বড়লোক, জমিদার । কিন্তু এতটা ভাবে নাই।
অভাব শুধু লোকের । আত্মীয়, কুটুম্ব-কুটুষ্বিনী কেহই প্রায় নাই । অতবড় অন্দর মহল জনশূন্য । পার্বতী বিয়ের কনে, একেবারে গৃহিণী হইয়া বসিল। বরণ করিয়া
ঘরে তুলিবার জন্য একজন বৃদ্ধা পিসী ছিলেন। ইনি ভিন্ন কেবল দাসদাসীর দল ।

সন্ধ্যার পূর্বে একজন সুষ্রী সুন্দর বিংশবর্ষীয় যুবাপুরুষ প্রণাম করিয়া অদূরে দীড়াইয়া কহিল, মা, আমি তোমার বড়ছেলে ।

পার্বতী অবগুষ্ঠনের মধ্য দিয়া ঈষৎ চাহিয়া দেখিল, কথা কহিল না। সে আর একবার প্রণাম করিয়া কহিল, মা, আমি তোমার বড়ছেলে- প্রণাম করি।

পার্বতী দীর্ঘ অবপ্ুষ্ঠন কপালের উপর পর্যন্ত তুলিয়া দিয়া এবার কথা কহিল । মৃদুকণ্ঠে বলিল, এস বাবা, এস।

ছেলেটির নাম মহেন্দ্র। সে কিছুক্ষণ পার্বতীর মুখপানে অবাক হইয়া চাহিয়া রহিল; তৎপর অদূরে বসিয়া পড়িয়া বিনীতস্বরে বলিতে লাগিল, আজ দুবছর
হল আমরা মা হারিয়েচি। এই দুবছর আমাদের দুঃখে-কষ্টেই দিন কেটেচে । আজ তুমি এলে,__আশীর্বাদ কর মা, এবার যেন সুখে থাকতে পাই।

পার্বতী বেশ সহজ গলায় কথা কহিল। কেননা, একেবারে গৃহিণী হইতে হইলে অনেক কথা জানিবার এবং বলিবার প্রয়োজন হয়। কিন্তু এ কাহিনী অনেকের
কাছেই হয়ত একটু অস্কভাবিক শুনাইবে ৷ তবে যিনি পার্বতীকে আরও একটু ভাল করিয়া বুঝিয়াছেন তিনি দেখিতে পাইবেন, অবস্থার এই নানারূপ পরিবর্তনে
পার্বতীকে তাহার বয়সের অপেক্ষা অনেকখানি পরিপকৃ করিয়া দিয়াছিল। তা ছাড়া নিরর্থক লঙ্জা-শরম, অহেতুক জড়তা-সক্কোচ তাহার কোনদিনই ছিল না।
সে জিজ্ঞাসা করিল, আমার আর সব ছেলেমেয়েরা কোথায় বাবা?

মহেন্দ্র একটু হাসিয়া বলিল, বলচি। তোমার বড় মেয়ে, আমার ছোটবোন তার শ্বশুরবাড়িতেই আছে। আমি চিঠি লিখেছিলুম, কিন্তু যশোদা কিছুতেই আসতে
পারলে না।

পার্বতী দুঃখিত হইল; জিজ্ঞাসা করিল, আসতে পারলে না, না ইচ্ছা করে এলো না?

মহেন্দ্র লঙ্জা পাইয়া কহিল, ঠিক জানিনে মা।

কিন্তু তাহার কথার ও মুখের ভাবে পার্বতী বুঝিল, যশোদা রাগ করিয়াই আইসে নাই; কহিল, আর আমার ছোটছেলে?

মহেন্দ্র কহিল, সে শিগগির আসবে । কলকাতায় আছে, পরীক্ষা দিয়েই আসবে ।

ভূবন চৌধুরী নিজেই জমিদারির কাজকর্ম দেখিতেন। তা ছাড়া, স্বহস্তে নিত্য শালগ্রাম-শিলার পূজা করা, ব্রত-নিয়ম-উপবাস, ঠাকুরবাড়ি ও অতিথিশালায়
সাধু-সন্ন্যাসীর পরিচর্ধা_-এই সব কাজে তাহার সকাল হইতে রাত্রি দশটা-এগারটা পর্যন্ত কাটিয়া যাইত। নৃতন বিবাহ করিয়া কোনপ্রকার নৃতন আমোদ-আহ্রাদ
তাহাতে প্রকাশ পাইল না। রাত্রে কোনদিন ভিতরে আসিতেন, কোনদিন বা আসিতে পারিতেন না। আসিলেও অতি সামান্যই কথাবার্তা হইত- শয্যায় শুইয়া
পাশবালিশটা টানিয়া লইয়া, চোখ বুজিয়া বড়জোর বলিতেন, তা তুমিই হলে বাড়ির গৃহিণী, সব দেখেশুনে, বুঝেপড়ে নিজেই নিয়ো_

পার্বতী মাথা নাড়িয়া বলিত, আচ্ছা।

ভুবন বলিতেন, আর দেখ, তা এই ছেলেমেয়েরা,__হী, তা এরা তোমারই ত সব__

স্বামীর লঙ্জা দেখিয়া পার্বতীর চোখের কোণে হাসি ফুটিয়া বাহির হইত। তিনি আবার একটু হাসিয়া কহিতেন, হা, আর এই দেখ, এই মহেন তোমার
বড়ছেলে, সেদিন বি এ পাস করেছে,__এমন ভাল ছেলে, এমন দয়ামায়া__কি জান, একটু যত্বু-আত্মীয়তা__

পার্বতী হাসি চাপিয়া বলিত, আমি জানি, সে আমার বড়ছেলে__

তা জানবে বৈ কি! এমন ছেলে কেউ কখনও দেখেনি । আর আমার যশোমতী, মেয়ে ত নয়_ প্রতিমা । তা আসবে বৈ কি! আসবে বৈ কি! বুড়ো বাপকে
দেখতে আসবে না! তা সে এলে তাকে-_

পার্বতী নিকটে আসিয়া টাকের উপর মৃণালহস্ত রাখিয়া মৃদুস্বরে বলিত, তোমাকে ভাবতে হবে না। যশোকে আনবার জন্য আমি লোক পাঠাব-_নাহয় মহেন
নিজেই যাবে।

যাবে! যাবে! আহা, অনেকদিন দেখিনি__তুমি লোক পাঠাবে?

পাঠাব বৈ কি। আমার মেয়ে, আমি আনতে পাঠাব না!

বৃদ্ধ এই সময়ে উৎসাহে উঠিয়া বসিতেন। উভয়ের সম্বন্ধ ভুলিয়া পার্বতীর মাথায় হাত দিয়া আশীর্বাদ করিয়া কহিতেন-__তোমার ভাল হবে। আমি আশীর্বাদ
করচি-_তুমি সুখী হবে-_-ভগবান তোমার দীর্ঘায়ু করবেন।

তাহার পর হঠাৎ কি-সব কথা বৃদ্ধের যেন মনে পড়িয়া যাইত। পুনরায় শয্যায় শুইয়া পড়িয়া, চক্ষু মুদিয়া মনে মনে বলিতেন, বড়মেয়ে, এ এক মেয়ে,_সে
বড় ভালবাসত-_

এ সময়ে কীচা-পাকা গৌফের পাশ দিয়া একফৌটা চোখের জল বালিশে আসিয়া পড়িত। পার্বতী মুছাইয়া দিত। কখনো কখনো বা চুপি চুপি বলিতেন,
আহা, তারা সবাই আসবে, আর-একবার বাড়িঘরদোর জমজম করবে-_-আহা, আগে কি জমকালো সংসারই ছিল! ছেলেরা, মেয়ে, গিনী_হৈচৈ_নিত্য
দুর্গোৎসব । তারপর একদিন সব নিবে গেল । ছেলেরা কলকাতায় চলে গেল, যশোকে তার শ্বশুর নিয়ে গেল। তারপর অন্ধকার শাশান__

এই সময় আবার গৌফের দু'পাশ ভিজিয়া বালিশ ভিজিতে শুরু করিত। পার্বতী কাতর হইয়া মুছাইয়া দিয়া কহিত, মহেনের কেন বিয়ে দিলে না?

বুড়ো বলিতেন, আহা, সে ত আমার সুখের দিন। তাইত ভেবেছিলাম কিন্তু কি যে ওর মনের কথা, কি যে ওর জিদ-_কিছুতেই বিয়ে করল না। তাইত বুড়ো
বয়সে-_বাড়ি ঘর খাখা করে, লক্ষ্মীছাড়া বাড়ির মতই সমস্তই মলিন, একটা জলুস কিছুতেই দেখতে পাইনে__তাইতেই-__

কথা শুনিয়া পার্বতীর দুঃখ হইত । করুণসুরে, হাসির ভান করিয়া মাথা নাড়িয়া বলিত, তুমি বুড়ো হলে আমিও শিগগির বুড়ো হয়ে যাব। মেয়েমানুষের বুড়ো
হতে কি বেশী দেরি হয় গা?

ভুবন চৌধুরী উঠিয়া বসিয়া একহাতে তাহার চিবুক ধরিয়া নিঃশব্দে বহুক্ষণ চাহিয়া থাকিতেন। কারিগর যেমন করিয়া প্রতিমা সাজাইয়া, মাথায় মুকুট
পরাইয়া দক্ষিণে ও বামে হেলিয়া অনেকক্ষণ ধরিয়া দেখিতে থাকে, একটু গর্ব, আর অনেকখানি স্নেহ সেই সুন্দর মুখখানির আশেপাশে জমা হইয়া উঠে,
ভুবনবাবুরও ঠিক তেমনি হয়।

কোনদিন বা তাহার অক্ফুটে মুখ দিয়া বাহির হইয়া পড়ে, আহা, ভাল করনি__

কি ভালো করিনি গো?

ভাবছি_-এখানে তোমাকে সাজে না

পার্বতী হাসিয়া উঠিয়া বলিত, খুব সাজে! আমাদের আবার সাজাসাজি কি?

বৃদ্ধ আবার শুইয়া পড়িয়া যেন মনে মনে বলিতেন, তা বুঝি__তা বুঝি | তবে, তোমার ভাল হবে। ভগবান তোমাকে দেখবেন।
এমনি করিয়া প্রায় একমাস অতীত হইয়া গেল। মধ্যে একবার চক্রবর্তী মহাশয় কন্যাকে লইতে আসিয়াছিলেন,_ পার্বতী নিজেই ইচ্ছা করিয়া গেল না।
পিতাকে কহিল, বাবা, বড় অগোছাল সংসার, আর কিছুদিন পরে যাব ।

তিনি অলক্ষ্যে মুখ টিপিয়া হাসিলেন। মনে মনে বলিলেন, মেয়েমানুষ এমনি জাতই বটে!

তিনি বিদায় হইলে পার্বতী মহেন্দ্রকে ডাকিয়া কহিল, বাবা, আমার বড়মেয়েকে একবার নিয়ে এস।

মহেন্দ্র ইতস্ততঃ করিল। সে জানিত, যশোদা কিছুতেই আসিবে না। কহিল, বাবা একবার গেলে ভাল হয়।

ছিঃ তা কি ভাল দেখায়! তার চেয়ে চল, আমরা মা-ব্যাটায় মেয়েকে নিয়ে আসি ।

মহেন্দ্র আশ্চর্য হইল-_তুমি যাবে?

ক্ষতি কি বাবাঃ আমার তাতে লজ্জা নাই; আমি গেলে যশোদা যদি আসে-_যদি তার রাগ পড়ে, আমার যাওয়াটা কি এতই কঠিন!

কাজেই মহেন্দ্র পরদিন একাকী যশোদাকে আনিতে গেল । সেখানে সে কি কৌশল করিয়াছিল জানি না, কিন্তু চারদিন পরে যশোদা আসিয়া উপস্থিত হইল।
সেদিন পার্বতীর সর্বাঙ্গে বিচিত্র নূতন বহুমূল্য অলঙ্কার; এই সেদিন ভুবনবাবু কলিকাতা হইতে আনাইয়া দিয়াছিলেন__পার্বতী আজ তাহাই পরিয়া বসিয়াছিল।
পথে আসিতে আসিতে যশোদা ক্রোধ-অভিমানের অনেক কথা মনে মনে আবৃত্তি করিতে করিতে আসিয়াছিল। নূতন বৌ দেখিয়া সে একেবারে অবাক হইয়া
গেল। সে-সব বিদ্বেষের কথা তাহার মনেই পড়িল না। শুধু অক্ফুটেই কহিল, এই!

পার্বতী যশোদার হাত ধরিয়া ঘরে লইয়া গেল। কাছে বসাইয়া হাতে পাখা লইয়া কহিল, মা, মেয়ের উপর নাকি রাগ করেচ?

যশোদার মুখ লজ্জায় রাঙ্গা হইয়া গেল। পার্বতী তখন সে সমস্ত অলঙ্কার একটির পর একটি করিয়া যশোদার অঙ্গে পরাইতে লাগিল। বিম্মিতা যশোদা
কহিল, এ কি?

কিছুই না। শুধু তোমার মেয়ের সাধ।

গহনা পরিতে যশোদার মন্দ লাগিল না এবং পরা শেষ হইলে তাহার ওষ্ঠাধরে হাসির আভাস দেখা দিল। সর্বাঙ্গে অলঙ্কার পরাইয়া নিরাভরণা পার্বতী কহিল,
মা, মেয়ের উপর রাগ করেচ?

না, না__রাগ কেন? রাগ কি?

তা বৈ কি মা, এ তোমার বাপের বাড়ি, এতবড় বাড়ি, কত দাসদাসীর দরকার । আমি একজন দাসী বৈ ত নয়! ছি মা, তুচ্ছ দাসদাসীর ওপর কি তোমার রাগ
করা সাজে?

যশোদা বয়সে বড়, কিন্তু কথা কহিতে এখনো অনেক ছোট । সে প্রায় বিহ্বল হইয়া পড়িল। বাতাস করিতে করিতে পার্বতী আবার কহিল,__দুঃখীর মেয়ে,
তোমাদের দয়ায় এখানে একটু স্থান পেয়েচি। কত দীন, দুঃখী, অনাথ তোমাদের দয়ায় এখানে নিত্য প্রতিপালিত হয়; আমি ত মা তাদেরই একজন । যে
আশ্রিত

যশোদা অভিভূত হইয়া শুনিতেছিল, এখন একেবারে আত্মবিস্মৃত হইয়া পায়ের কাছে টিপ করিয়া প্রণাম করিয়া বলিয়া উঠিল, তোমার পায়ে পড়ি মা

পার্বতী তাহার হাত ধরিয়া ফেলিল।

যশোদা কহিল, দোষ নিও না মা।

পরদিন মহেন্দ্র যশোদাকে নিভৃতে ডাকিয়া কহিল, কি রে, রাগ থেমেচে?

যশোদা তাড়াতাড়ি দাদার পায়ে হাত দিয়া কহিল, দাদা, রাগের মাথায়_ছি ছি, কত কি বলেচি। দেখো যেন সে-সব প্রকাশ না পায়।

মহেন্দ্র হাসিতে লাগিল । যশোদা কহিল, আচ্ছা দাদা, সৎমায়ে এত যত্র-আদর করতে পারে?

দিন-দুই পরে যশোদা পিতার নিকট নিজে কহিল, বাবা, ওখানে চিঠি লিখে দাও-_ আমি এখন দু'মাস এখান থেকে যাব না।

ভূবনবাব্‌ একটু আশ্চর্য হইয়া কহিলেন, কেন মাঃ

যশোদা লঙ্জিতভাবে মৃদু হাসিয়া কহিল, আমার শরীরটা তেমন ভাল নেই_-এখন দিনকতক ছোটমা*র কাছে থাকি!

আনন্দে বৃদ্ধের চক্ষু ফাটিয়া জল বাহির হইল । সন্ধ্যার সময় পার্বতীকে ডাকিয়া কহিলেন, তুমি আমাকে লজ্জা থেকে মুক্তি দিয়েচ। বেঁচে থাকো, সুখে
থাকো।

পার্বতী কহিল, সে আবার কি?

কি তা তোমাকে বোঝাতে পারিনে। নারায়ণ! কত লজ্জা, কত আত্মগ্রানি থেকে আজ আমাকে নিষ্কৃতি দিলে।

সন্ধ্যার আধারে পার্বতী দেখিল না যে তাহার স্বামীর দুই চক্ষু জলে ভরিয়া গিয়াছে। আর বিনোদলাল-_সে ভূবনমোহনের কনিষ্ঠ পুত্র, পরীক্ষা দিয়া সে বাড়ি
আসিয়া আর পড়িতেই গেল না।

16
Articles
দেবদাস
0.0
"দেবদাস" প্রখ্যাত বাঙালি লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা একটি কালজয়ী ক্লাসিক। এই মর্মস্পর্শী আখ্যানটি দেবদাসের করুণ কাহিনি, অপ্রত্যাশিত প্রেমের দ্বারা গ্রাস করা এক যুবককে নিয়ে আসে। 20 শতকের গোড়ার দিকে স্থাপিত, গল্পটি ঔপনিবেশিক ভারতে সামাজিক নিয়ম এবং শ্রেণীগত পার্থক্যগুলির জটিলতাগুলি অন্বেষণ করে। বইটি স্পষ্টভাবে মদ্যপান এবং হতাশার মধ্যে দেবদাসের আত্ম-ধ্বংসাত্মক বংশদ্ভুত চিত্রিত করে, পারোর প্রতি তার প্রেম এবং পারিবারিক চাপের কারণে তাকে বিয়ে করতে না পারা থেকে উদ্ভূত। শরৎচন্দ্রের উদ্দীপনামূলক গল্প বলার এবং গভীর চরিত্রের অন্বেষণ "দেবদাস" কে একটি স্থায়ী সাহিত্যিক মাস্টারপিস করে তোলে, প্রেম, ক্ষতি এবং সামাজিক সীমাবদ্ধতার থিমগুলিকে উস্কে দেয় যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পাঠকদের সাথে অনুরণিত হতে থাকে।
1

প্রথম পরিচ্ছেদ

7 October 2023
1
0
0

একদিন বৈশাখের দ্বিপ্রহরে রৌদ্রেরও অন্ত ছিল না, উত্তাপেরও সীমা ছিল না। ঠিক সেই সময়টিতে মুখৃষ্যেদের দেবদাস পাঠশালা-ঘরের এক কোণে ছেঁড়া মাদুরের উপর বসিয়া, শ্রেট হাতে লইয়া, চক্ষু চাহিয়া, বুজিয়া, পা

2

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

7 October 2023
0
0
0

দেবদাসকে পরদিন খুব মারধর করা হইল-_সমস্তদিন ঘরে রুদ্ধ করিয়া রাখা হইল। তাহার পর, তাহার জননী যখন ভারী কান্নাকাটি করিতে লাগিলেন, তখন দেবদাসকে ছাড়িয়া দেওয়া হইল। পরদিন ভোরবেলায় সে পলাইয়া আসিয়া পার্ব

3

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

7 October 2023
0
0
0

দিনের পর দিন যায়__এ দুটি বালক-বালিকার আমোদের সীমা নাই-_সমস্ত দিন ধরিয়া রোদে রোদে ঘুরিয়া বেড়ায়, সন্ধ্যার সময় ফিরিয়া আসিয়া মারধর খায়, আবার সকালবেলায় ছুটিয়া পলাইয়া যায়__আবার তিরক্কার-প্রহার

4

চতুর্থ পরিচ্ছেদ

7 October 2023
1
0
0

এমনি করিয়া এক বৎসর কাটিল বটে, কিন্তু আর কাটিতে চাহে না। দেবদাসের জননী বড় গোলযোগ করিতে লাগিলেন । স্বামীকে ডাকিয়া বলিলেন, দেবা যে মুখ্য চাষা হয়ে গেল,__-একটা যা হয় উপায় কর। তিনি ভাবিয়া বলিলেন,

5

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

7 October 2023
0
0
0

পার্বতী এই তের বছরে পা দিয়াছে_-ঠাকুরমাতা এই কথা বলেন। এই বয়সে শারীরিক সৌন্দর্য অকম্মাৎ যেন কোথা হইতে ছুটিয়া আসিয়া কিশোরীর সর্বাঙ্গ ছাইয়া ফেলে। আত্মীয়স্বজন হঠাৎ একদিন চমকিত হইয়া দেখিতে পান যে,

6

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

8 October 2023
0
0
0

রাত্রি বোধ হয় একটা বাজিয়া গিয়াছে । তখনও স্লান জ্যোৎস্না আকাশের গায়ে লাগিয়া আছে। পার্বতী বিছানার চাদরে আপাদমস্তক মুড়ি দিয়া ধীরপদবিক্ষেপে সিঁড়ি বাহিয়া নীচে নামিয়া আসিল। চারিদিকে চাহিয়া দেখিল

7

সপ্তম পরিচ্ছেদ

8 October 2023
0
0
0

পরদিন পিতার সহিত দেবদাসের অল্পক্ষণের জন্য কথাবার্তা হইল। পিতা কহিলেন, তুমি চিরদিন আমাকে জ্বালাতন করিয়াছ, যতদিন বাঁচিব, ততদিনই জ্বালাতন হইতে হইবে । তোমার মুখে এ কথায় আশ্চর্য হইবার কিছু নাই। দে

8

অষ্টম পরিচ্ছেদ

8 October 2023
0
0
0

সতর্ক এবং অভিজ্ঞ লোকদিগের স্বভাব এই যে, তাহারা চক্ষুর নিমিষে কোন দ্রব্যের দোষগুণ সম্বন্ধে দৃঢ় মতামত প্রকাশ করে না-_সবটুকুর বিচার না করিয়া, সবটুকুর ধারণা করিয়া লয় না; দুটো দিক দেখিয়া চারিদিকের কথ

9

নবম পরিচ্ছেদ

8 October 2023
0
0
0

আর দেবদাসঃ সে রাত্রিটা সে কলিকাতা ইডেন গার্ডেনের একটা বেঞ্চের উপর বসিয়া কাটাইয়া দিল। তাহার খুব যে ক্লেশ হইতেছিল, যাতনায় মর্মভেদ হইতেছিল, তাহা নয়। কেমন একটা শিথিল ওঁদাস্য ধীরে ধীরে বুকের মধ্যে জমা

10

দশম পরিচ্ছেদ

8 October 2023
0
0
0

পার্বতী আসিয়া দেখিল, তাহার স্বামীর মস্ত বাড়ি। নৃতন সাহেবী ফ্যাশনের নহে, পুরাতন সেকেলে ধরনের । সদর মহল, অন্দর মহল, পূজার দালান, নাটমন্দির, অতিথিশালা, কাছারি-বাড়ি, তোশাখানা, কত দাসদাসী-_পার্বতী অবাক

11

একাদশ পরিচ্ছেদ

8 October 2023
0
0
0

তাহার পর দুই-তিনদিন দেবদাস মিছিমিছি পথে পথে ঘুরিয়া বেড়াইল-_-অনেকটা পাগলের মত । ধর্মদাস কি কহিতে গিয়াছিল, তাহাকে চক্ষু রাঙ্গাইয়া ধমকাইয়া উঠিল। গতিক দেখিয়া চুনিলালও কথা কহিতে সাহস করিল না। ধর্মদা

12

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ

10 October 2023
0
0
0

দুই ভাই দ্বিজদাস ও দেবদাস ও গ্রামের অনেকেই জমিদার নারায়ণ মুখৃয্যের সৎকার করিয়া বাড়ি ফিরিয়া আসিল। দ্বিজদাস চীৎকার করিয়া কীদিয়া পাগলের মত হইয়াছে__পাড়ার পাচজন তাহাকে ধরিয়া রাখিতে পারিতেছে না।

13

ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ

10 October 2023
0
0
0

পিতার মৃত্যুর পর ছয় মাস ধরিয়া ক্রমাগত বাটীতে থাকিয়া, দেবদাস একেবারে জ্বালাতন হইয়া উঠিল। সুখ নাই, শান্তি নাই, একান্ত একঘেয়ে জীবন। তার উপর ক্রমাগত পার্বতীর চিন্তা; আজকাল সব কাজেই তাহাকে মনে পড়ে ।

14

চতুর্দশ পরিচ্ছেদ

10 October 2023
0
0
0

বৎসর-দুই হইল পার্বতী মহেন্দ্রের বিবাহ দিয়া অনেকটা নিশ্চিন্ত হইয়াছে । জলদবালা বুদ্ধিমতী ও কর্মপটু । পার্বতীর পরিবর্তে সংসারের অনেক কাজ সে-ই করে। পার্বতী এখন অন্যদিকে মন দিয়াছে । আজ পাঁচ বৎসর হইল তা

15

পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ

10 October 2023
0
0
0

আজ দুই বৎসর হইতে অশথঝুরি গ্রামে চন্দরমুখী ঘর বীধিয়াছে। ছোট নদীর তীরে একটা উঁচু জায়গায় তাহার ঝরঝরে দু'খানি মাটির ঘর; পাশে একটা চালা,তাহাতে কাল রংয়ের একটা পরিপুষ্ট গাভী বাধা থাকে । ঘর-দুইটির একটিতে

16

ষোড়শ পরিচ্ছেদ

10 October 2023
0
0
0

কলিকাতা ত্যাগ করিয়া কিছুদিন যখন দেবদাস এলাহাবাদে বাস করিতেছিল, তখন হঠাৎ একদিন সে চন্দ্রমুখীকে চিঠি লিখিয়াছিল, বৌ, মনে করেছিলাম, আর কখনো ভালবাসব না। একে ত ভালবেসে শুধুহাতে ফিরে আসাটাই বড় যাতনা, তার

---