shabd-logo

আলোয় কালোয়

24 November 2023

22 Viewed 22

পুবের পাখি তারা বাসা বেঁধে থাকে মলয় দ্বীপে চন্দন বনে। বঝাঁক বেঁধে ওড়ে পুব আকাশে সোনার আলোয়। ধান-ক্ষেতের কচি সবুজ মেখে নিয়ে সবুজ হল তাদের ডানা, হিঙ্গুল ফলের কম লেগে হল রাঙা তাদের ঠোঁট।

তার একটি পাখি একদিন ধরা পড়ল। সওদাগর তাকে জাহাজে করে নিয়ে গেল, উদয়াচল ঘুরে পশ্চিম সাগর পার হয়ে আজব সহরে। সেখানে সবুজ নেই-কেবল বাড়ি, কেবল বাড়ি! ইট, কাঠ, চুন, সুরকি, কলকারখানা, ধুয়া, ধুলো আর কুয়াসায় দিকবিদিক আকাশ বাতাস পর্যন্ত ঢাকা, দিন রাত্রি সমান অন্ধকার। আলোগুলো যেন সেখানে জ্বলছে  না। কুয়াসায় ভিজে কম্বলমুড়ি দিয়ে রাস্তার ধারে বসে সে জ্বরে কাঁপছে। সূর্যের রথ সহরের পাঁচিলে এসে ধাক্কা খেয়ে ফিরে যায় সহর ছেড়ে। মলয় বাতাস দুয়োরের কপাট ধরে নাড়া দিয়ে দেখে কিন্তু ঘর খোলা পায় না কোনদিন।

সবুজ পাখি সেখানে খাঁচায় রইল--- কালো লোহার শক্ত খাঁচা-কলের কুলুপে চাবি- দেওয়া খাঁচা। খায় দায় পাখি, থেকে-থেকে কুলুপ নাড়া দেয়। কুলুপ নড়ে চড়ে কিন্তু খোলে না। কল-ঘরের এক কোণে পাখির খাঁচা---কলের ধুয়া থেকে ভুষো ছিটিয়ে যায় তার গায়ে, সবুজ পাখনা কালো হয় দিনে দিনে। পাখি সেখানে থাকে মনের দুঃখে, শুনতে শুনতে শেখে সব খটোমটো বুলি, যেন লোহার কলের খটখটাং। তাই শুনতে লোক জড়ো হয়। সেই কলের ছাই-ভস্ম- মাখা পাখনা দেখে অবাক হয়ে যায়-এ কী আশ্চর্য পাখি! নাচতে পারে, গাইতে পারে, বলতে পারে, কইতে পারে, পড়তেও পারে!

পাখি সে থেকে থেকে নিজের কথা চেঁচিয়ে বলে, 'ওরে উড়তে পারিনে রে, উড়তে পারিনে-- বেঁচে আমি মরে আছি!' থেকে-থেকে রাগ করে গা-ঝাড়া দেয়-লোকে তার মনের কথা বোঝে না, তামাসা দেখে হাসে, হাততালি দেয়। আজব সহরের মানুষ তারা, কেউ বোঝে না মলয় দ্বীপের গাখির কী দুঃখ। তার দুঃখটা বোঝে শুধু ভোরের আলো। সে কোনদিন কুয়াসা সরিয়ে কারখানা-ঘরের কোণটিতে এসে দেখা দেয়, সবুজ পাখির গায়ে হাত বোলায়। ভয়ে-ভয়ে আসে আলো, ভয়ে-ওয়ে সরে যায়। পাখি বলে, 'যদি কোনদিন সিন্ধু-পারে যাও হে আলো, তবে ভুলো না, মলয় দ্বীপের সবুজ ঘরে আমার খবর পৌছে দিও। বোলো আমি বেঁচে মরে আছি!'

আলো বলে, 'যেদিন আমি বড় হয়ে উঠব সেদিন নিশ্চয় নিশ্চয় তোমার কথা তোমার আপনার লোকের কাছে জানিয়ে আসব।'

শীত কাটল, পরিষ্কার হল দিনে দিনে আকাশ, আলোর তেজ বেড়েই চলল। আর সে ভয়ে-ভয়ে আসে না। অন্ধকারের ঘরে আসে রানীর মতো চারিদিক আলো করে, কারখানার কলকব্জা ঝকঝক করতে থাকে আলো পেয়ে।

পাখি আলো-মাখা ডানা কাঁপিয়ে বলে, 'আর কেন, এইবার।'

আলো বলে, 'থাকো থাকো, আজ রাতের শেষে খবর পাবে!'

খাঁচার পাখি ছট্‌ফট্ করে-সকাল কখন হয় তারই আশায়।

সেদিন ভোরের বেলায় কলের খাঁচায় ধরা ক্লান্ত পাখি ঘুমিয়ে গেল---সেই সময় কারখানার বাঁশি ডাক দিল কুলিদের।

পাখির কাছে আলো এসে বললে চুপি চুপি, 'মলয় দ্বীপে গিয়েছিলেম, তাদের তোমার দুঃখের খবর দিলেম।'

পাখি ঘুমন্ত চোখ একটু খুলে শুধোলো, 'তারা কী বলে পাঠালে শুনি?'

আলো খাঁচার মধ্যে এগিয়ে এসে বললে, 'সবাই আহা করলে, কেবল একটি পাখি সে যেমন ছিল তেমনই রইল।'

পাখির ঘাড় তুলে বললে, তারপর?'

আলো তার পিঠে হাত বুলিয়ে বললে, 'তারপর সে ঝরা-পাতার মতো গাছের তলায় লুটিয়ে পড়ল ধুলোতে, আর সবাই বললে, 'আহা মরে বাঁচল রে!'

খাঁচার পাখি আর কোন সাড়া দিলে না।

কল-ঘরের কল চলল বেজে-খটখটাং।

যার পাখি সে খাঁচার কাছে এসে দেখলে-পাখি মরে গেছে, আলো তার উপর পড়ে কাঁদছে।

7
Articles
কানকাটা রাজার দেশ
0.0
আলো থেকে দূরে নির্জনে বসবাসকারী রহস্যময় রাজাকে ঘিরে নাটকটি আবর্তিত হয়েছে। তার রানী সীতা তাকে দেখতে চায় এবং তার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে। নাটকটি প্রেম, আত্ম-আবিষ্কার এবং সত্যের সাধনার বিষয়বস্তু অন্বেষণ করে। গল্পটি উন্মোচিত হওয়ার সাথে সাথে, সীতার অধ্যবসায় রাজার প্রকৃতি এবং অভ্যন্তরীণ অন্ধকার সম্পর্কে একটি প্রকাশের দিকে নিয়ে যায় যা তাকে আবৃত করে। নাটকটি প্রতীকী এবং মানব সম্পর্কের জটিলতা এবং জ্ঞানার্জনের সন্ধানে তলিয়ে যায়। ঠাকুরের কাব্যিক ভাষা এবং গভীর দার্শনিক অন্তর্দৃষ্টি পুরো আখ্যান জুড়ে স্পষ্ট। "কান কাটার রাজার দেশ" একটি নিরবধি কাজ যা মানুষের চেতনার অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রগুলির প্রতিফলনকে আমন্ত্রণ জানায়।
1

কানকাটা রাজার দেশ

23 November 2023
1
0
0

এক ছিল রাজা আর তাঁর ছিল এক মস্ত বড় দেশ তার নাম হল কানকাটার দেশ। সেই দেশের সকলেরই কান কাটা। হাতি, ঘোড়া, ছাগল, গরু, মেয়ে, পুরুষ, গরিব, বড়মানুষ, সকলেরই কান কাটা। বড়লোকদের এক কান, মেয়েদের এক কানের আধখানা,

2

কাঁচায় পাকায়

23 November 2023
1
0
0

বাদশার আগাগোড়া পাকা দাড়ির মাঝে একটি মাত্র কাঁচা ও বেগমের সব কাঁচা চুলের মধ্যে একটি পাকা চুল দেখা যায়। বেগমের কিছুতেই পছন্দ হয় না বাদশার দাড়ি-তা যতই কেন বাদশা আতর কস্তুরীতে দাড়ি মাজুন। ওদিকে বেগমসাহেবা

3

কারিগর ও বাজিকর

24 November 2023
0
0
0

কারিগর যেখানে থেকে কারিগরি করে সে দেশে কাজ হয় আস্তে আস্তে ধীরে সুস্থে। এতটুকু বীজ যেমন হয়ে ওঠে মস্ত গাছ আস্তে আস্তে, গুটিপোকা যেমন আস্তে ধীরে হয়ে ওঠে রঙিন প্রজাপতি, সেইভাবে কাজ চলে কারিগরি-পাড়ায়। হঠাৎ

4

আলোয় কালোয়

24 November 2023
0
0
0

পুবের পাখি তারা বাসা বেঁধে থাকে মলয় দ্বীপে চন্দন বনে। বঝাঁক বেঁধে ওড়ে পুব আকাশে সোনার আলোয়। ধান-ক্ষেতের কচি সবুজ মেখে নিয়ে সবুজ হল তাদের ডানা, হিঙ্গুল ফলের কম লেগে হল রাঙা তাদের ঠোঁট। তার একটি পাখি এ

5

বড় রাজা ছোটরাজার গল্প

24 November 2023
0
0
0

দুই রাজা থাকেন-বড় রাজা আর ছোট রাজা। দুজনে একদিন দিবিজয় করতে চললেন। বড় রাজা চললেন বড় বড় হাতী ঘোড়া কামান বন্দুক সাজিয়ে মস্ত মস্ত জয়ঢাক পিটিয়ে বড় বড় সেনাপতির সঙ্গে, বড় বড় রাজত্ব জয় করতে করতে। এদিকে ছোট র

6

টুকরি বুড়ি

24 November 2023
0
0
0

জন্মেই শুরু করলে ছেলেটি কান্না-উ-এঁ-৩-৩-৩, সে কান্না আর থামে না। 'ও ছেলের মা, দুধ দাও গো ভুখ লেগেছে, ছেলে যে গেল!' দুধ টেনে খায় ছাওয়াল চোঁ-চোঁ, পেট ভরে, তারপর আবার শুরু ৩-৩। মা বলে, 'বুকে যে দুধ নেই

7

ভোম্বল দাসের কেলাশ যাত্রা

24 November 2023
0
0
0

সিংহির মামা ভোম্বলদাস নেহাৎ সেকালের জানোয়ার। রাজকার্য চালাবার মতো বুদ্ধিও তাঁর ছিলনা, গায়ের জোর যে খুব ছিল, তাও নয়। খোস-মেজাজে সেজে- গুজে সিংহাসনে বসে আয়েস আর আমোদ-আহলাদ করতেই তাঁর জন্ম হয়েছিল। রাজকার

---