shabd-logo

শঙ্কুর সুবর্ণ সুযোগ

6 November 2023

3 Viewed 3


২৪শে জুন
ইংলন্ডের সল্সবেরি প্লেনে আজ থেকে চার হাজার বছর আগে তৈরি বিখ্যাত স্টোনহেঞ্জের ধারে বসে আমার ডায়রি লিখছি। আজ মিড-সামার ডে, অর্থাৎ কর্কটক্রান্তি । যে সময় স্টোনহেঞ্জ তৈরি হয়, তখন এ দেশে প্রস্তরযুগ শেষ হয়ে ব্রঞ্জ যুগ সবে শুরু হয়েছে। মানুষ ধাতুর ব্যবহার শিখে দেখতে দেখতে সভ্যতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মিশর, ভারত, মেসোপটেমিয়া, পারস্য ইত্যাদির তুলনায় অবিশ্যি ইউরোপে সভ্যতা এসেছে অনেক পরে। কিন্তু চার হাজার বছর আগে এই ইংলন্ডেই যারা স্টোনহেঞ্জ তৈরি করতে পেরেছে, তাদের অসভ্য বলতে দ্বিধা হয়। বহু দূর থেকে আনা বিশাল বিশাল পাথরের স্তম্ভ দাঁড় করানো মাটির উপর, প্রতি দুটো পাশাপাশি স্তম্ভের উপর আবার আড়াআড়ি ভাবে রাখা হয়েছে আরেকটা পাথর। এই পাশাপাশি তোরণগুলো আবার একটা বিরাট বৃত্ত রচনা করেছে। অ্যাদ্দিন লোকের ধারণা ছিল, এই স্টোনহেঞ্জ ছিল কেল্টদের ধর্মানুষ্ঠানের জায়গা। এই কিছুদিন হল প্রত্নতাত্ত্বিকরা বুঝেছে যে এটা আসলে ছিল একটা মানমন্দির । পৃথিবীর প্রাচীনতম মানমন্দিরের অন্যতম কারণ পাথরগুলোর অবস্থানের সঙ্গে সূর্যের গতিবিধির একটা পরিষ্কার সম্বন্ধ পাওয়া গেছে, যেটা বিশেষ করে আজকে, অর্থাৎ ২৪শে জুন কর্কটক্রান্তিতে, সবচেয়ে পরিষ্কার ভাবে ধরা পড়ে। ভাবতে অবাক লাগে যে আজকের দিনে আধুনিক এঞ্জিনিয়ারিং বলতে আমরা যা বুঝি, তার অভাবে সে কালে কী করে এই পাথরগুলোকে এমনভাবে হিসেব করে বসানো হয়েছিল। আমার বন্ধু ক্রোল অবিশ্যি অন্য কথা বলে। তার ধারণা প্রাচীনকালে মানুষ এমন কোনও রাসায়নিক উপায় জানত, যার ফলে সাময়িকভাবে পাথরের ওজন কমিয়ে ফেলা যেত। সেই কারণে নাকি পিরামিড বা স্টোনহেঞ্জের মতো জিনিস তৈরি করা আজকের চেয়ে সে কালে অনেক বেশি সহজ ছিল। উইলহেল্‌ম ক্রোল চিরকালই আদিম মানুষের অলৌকিক ক্ষমতায় বিশ্বাসী। প্রাচীন জাদুবিদ্যা, প্রেততত্ত্ব, উইচক্রাফট ইত্যাদি নিয়ে তার অগাধ পড়াশুনা। সে আমার সঙ্গে তিব্বতে গিয়েছিল একশৃঙ্গ অভিযানে। এখন সে স্টোনহেঞ্জেরই একটা পাথরে হেলান দিয়ে ঘাসের উপর বসে একটা বিশেষ রকমের বাঁশি বাজাচ্ছে, যেটা সে তিব্বতের একটা গুম্‌ফা থেকে সংগ্রহ করেছিল। এ বাঁশি মানুষের পায়ের হাড় দিয়ে তৈরি। এ থেকে যে এমন আশ্চর্য সুন্দর জার্মান লোকসংগীতের সুর বেরোতে পারে, তা কে জানত?
কোল ছাড়া তিব্বত অভিযানে আমার আর এক সঙ্গীও কাছেই বসে ফ্লাস্ক থেকে ঢেলে কফি খাচ্ছে। সে হল আমার বিশিষ্ট বন্ধু ইংরেজ ভূতত্ত্ববিদ জেরেমি সন্ডার্স। সন্ডার্সের আমন্ত্রণেই এবার আমার লন্ডনে আসা। হ্যাম্পস্টেডে ওর বাড়িতে ক্রোল আর আমি অতিথি হয়ে আছি। আরও দিন সাতেক থাকার কথা। এবার ইংলন্ডে গ্রীষ্মকালটা ভারী উপভোগ্য মনে হচ্ছে। বৃষ্টি নেই। নীল আকাশে সাদা মেঘের ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি মানুষের মন ও শরীরকে তাজা করে দিচ্ছে ।
এবারে লেখা শেষ করি। ক্রোলের বাঁশি থেমেছে। তার সঙ্গে লন্ডনের এক নিলামঘরে যেতে হবে। সেখানে নাকি অ্যালকেমি সম্বন্ধে স্প্যানিশ ভাষায় ত্রয়োদশ শতাব্দীর একটা পাণ্ডুলিপি বিক্রি আছে। ক্রোলের ধারণা, সেটা সে সস্তায় হাত করতে পারবে, কারণ অ্যালকেমি সম্বন্ধে আজকাল আর লোকের তেমন উৎসাহ নেই। আণবিক যুগে কৃত্রিম উপায়ে সোনা তৈরি করা ব্যয়সাপেক্ষ হলেও আর অসম্ভব নয় ।
২৪শে জুন, রাত সাড়ে দশটা
নিলামে বিচিত্র অভিজ্ঞতা। বাভারিয়ার অধিবাসী ক্রোল স্বভাবত হাসিখুশি দিলদরিয়া মানুষ, তাকে এভাবে উত্তেজিত হতে বড় একটা দেখিনি। অ্যালকেমি সম্বন্ধে যে প্রাচীন পাণ্ডুলিপিটা সে পঞ্চাশ পাউন্ডের মধ্যে পাবে বলে আশা করেছিল, তার জন্য শেষপর্যন্ত তাকে দিতে হল দেড় হাজার পাউন্ড। অর্থাৎ আমাদের হিসাবে প্রায় পঁচিশ হাজার টাকা। এতটা দাম চড়ার কারণ একটি মাত্র ব্যক্তি, যিনি ক্রোলের সঙ্গে যেন মরিয়া হয়ে পাল্লা দিয়ে সাতশো বছরের পুরনো জীর্ণ কাগজের বান্ডিলটাকে জলের দর থেকে দেখতে দেখতে আগুনের দরে চড়িয়ে দিলেন। ভদ্রলোকের পোশাক ও কথার উচ্চারণ থেকে তাঁকে আমেরিকান বলে মনে হচ্ছিল। ক্রোলের কাছে শেষপর্যন্ত হেরে যাওয়াতে তিনি যে আদৌ খুশি হননি সেটা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছিল। এর পরে যতক্ষণ ছিলেন নিলামে, ততক্ষণ তাঁর কপালে ভূকুটি দেখেছি।

ক্রোল অবিশ্যি বাড়ি ফেরার পর থেকেই পাণ্ডুলিপিটার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছে । কাগজের অবস্থা জীর্ণ হলেও, হাতের লেখা অত্যন্ত পরিষ্কার, কাজেই পড়তে কোনও অসুবিধা হবে না। আর ক্রোল স্প্যানিশ ভাষাটা বেশ ভালই জানে। স্পেনে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে অ্যালকেমি নিয়ে রীতিমতো আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছিল সেটা আমি জানি। প্রভাবটা এসেছিল আরব দেশ থেকে, আর সেটা ইউরোপের অনেক জায়গাতেই বেশ স্থায়ী ভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। ধাতুর রাজা হল সোনা। সোনা শুধু দেখতেই সুন্দর নয়, সোনা অক্ষয় । পুরাণে সোনাকে বলা হয় সূর্য, আর রুপোকে চাঁদ। হাজার হাজার বছর ধরে এক শ্রেণীর লোক তামা, সিসা ইত্যাদি সাধারণ ধাতু থেকে কৃত্রিম উপায়ে সোনা তৈরি করা যায় কি না তাই নিয়ে মাথা ঘামিয়ে এসেছে। এদেরই বলা হত অ্যালকেমিস্ট, যার বাংলা হল অপরাসায়নিক। এ কাজে বৈজ্ঞানিক উপায়ের সঙ্গে নানারকম মন্ত্রতন্ত্র মেশানো হত বলেই খাঁটি বৈজ্ঞানিকরা অ্যালকেমিস্টদের কোনওদিন আমল দেয়নি। আমাদের দেশেও যে অ্যালকেমির চর্চা হয়েছে তার প্রমাণ আছে আমার সংগ্রহের একটা সংস্কৃত পুঁথিতে। এর নাম ধনদা প্রকরণতন্ত্রসার। এতে সোনা তৈরির অনেক উপায় বাতলানো আছে। তার মধ্যে একটা এখানে তুলে দিচ্ছি—
“তাম্র সিসা কিংবা পিত্তল জারিত করিয়া ভস্ম করিয়া লইবে। তৎপরে মৃত্তিকাতে চারিহন্ত গভীর একটি গর্ত করিয়া কপিখবৃক্ষের অঙ্গার দ্বারা ওই গর্তের অর্ধ পূর্ণ করিয়া তদুপরে তাম্রভস্ম দিয়া বনঘুইটা দ্বারা গর্ত সমুদায় পূর্ণ করিয়া তাহাতে অগ্নিপ্রদান করিবে। সপ্তাহ পর্যন্ত জ্বাল দিয়া পরে উহা উঠাইয়া সেই পাত্রে করিয়া বিরজাঙ্গারের অগ্নিতে জ্বাল দিবে। এইরূপ করিলে তামা গলিয়া যাইবে, তৎপর তাহাতে তামার অর্ধ পারদ দিয়া তাহাতে বিরজা কাঠের রস বাসকের রস ও সিজের রস দিবে। এইরূপ করিলে স্বর্ণ হইয়া থাকে। এখানে শেষ হলে তাও না হয় হত, কিন্তু তার পরেই বলা হয়েছে—'এই প্রক্রিয়ার পূর্বে দশ সহস্র ধনদা মন্ত্র জপ ও তৎপূজা এবং হোম করিতে হইবে। তাহা হইলেই কার্য সফল হইবে।
সাধে কি আর আমি ব্যাপারটা কোনওদিন চেষ্টা করে দেখিনি। অবিশ্যি আমি না করলে কী হবে। ইতিহাসে অ্যালকেমিস্টদের উল্লেখ সর্বকালেই পাওয়া যায়। ইউরোপের অনেক রাজারা মাইনে করে অ্যালকেমিস্ট রাখতেন এবং তাদের জন্য ল্যাবরেটরি তৈরি করে দিতেন এই আশায় যে, রাজকোষে সোনা কম পড়লে এরা সে অভাব মিটিয়ে দিতে পারবে। অবিশ্যি কেউ কোনওদিন পেরেছে কি না সে খবর জানি না। মোট কথা, ক্রোল যে ব্যাপারটা বিশ্বাস করে সেটা তো স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে। নইলে আর একটা পাণ্ডুলিপির পিছনে এত খরচ করে ? সন্ডার্স বলছে, ক্রোলের বিশ্বাস, ল্যাবরেটরিতে বসে সোনা তৈরি করে অনায়াসে খরচ পুষিয়ে নেবে। ওর এই উদ্ভট খেয়াল নিয়ে বেশি হাসাহাসি না করলে হয়তো আমরাও সে সোনার ভাগ পেতে পারি !
২৫শে জুন
আমি লন্ডনে এসে আমার গিরিডির অভ্যাস মতো ভোর পাঁচটায় উঠে প্রাতভ্রমণে বেরোই। এখানে গ্রীষ্মকালে পাঁচটায় দিব্যি ফুটফুটে আলো, কিন্তু সকালে সাহেবদের ওঠার অভ্যাস নেই বলে রাস্তাঘাট ও আমার বেড়াবার প্রিয় জায়গা হ্যাম্পস্টেড হিথ থাকে জনমানবশূন্য। সমুদ্রের মতো ঢেউ খেলানো এই সবুজ মাঠে একা ঘণ্টাখানেক বেড়িয়ে ভোরের আলো-বাতাসে শরীরটাকে তাজা করে আমি যখন বাড়ি ফিরি, ততক্ষণে সন্ডার্স উঠে কফি তৈরি করে ফেলে। ক্রোলের উঠতে হয় নটা, কারণ তার রাত জেগে পড়া অভ্যাস ।
আজ দেখে অবাক হলাম যে ক্রোল এরই মধ্যে সন্ডার্সেরও আগে নিজেই কফি বানিয়ে নিয়ে বৈঠকখানায় ব্যস্তভাবে পায়চারি করছে। আমাকে দোরগোড়ায় দেখে সে টক্ করে হাঁটা থামিয়ে আমার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থেকে এক অবাক প্রশ্ন করে বলল-
"তোমার রাশি তো বৃশ্চিক—তাই নয় কি ?'
আমি মাথা নেড়ে 'হ্যাঁ' জানালাম ।
'তোমার চুলের রং পাকার আগে কালো ছিল কি ?
আবার 'হ্যাঁ।'
"তোমার রসুন খাওয়া অভ্যেস আছে ?”
“তা মাঝে মাঝে খাই ব‍ই কী।'
"ব্যস। তা হলে তোমাকে ছাড়া চলবে না। কারণ সন্ডার্স সিংহ রাশি আর আমি বৃষ। সন্ডার্সের চুলের রং কটা, আমার সোনালি। আর আমরা দুজনের কেউই রসুন খাই না । '
'কী হেঁয়ালি করছ বলো তো তুমি ?
*হেঁয়ালি নয় শঙ্কু। মানুয়েল সাভেদ্রা তার পাণ্ডুলিপিতে লিখেছে, কৃত্রিম উপায়ে সোনা তৈরি করতে গেলে ল্যাবরেটরিতে এই তিনটি গুণসম্পন্ন ব্যক্তির অন্তত একজন থাকা চাই । কাজেই তোমাকে চাই।'
'কোথায় চাই ? কাজটা কি এই হ্যাম্পস্টেডে বসেই হচ্ছে নাকি ? সন্ডার্স-এর এই বৈঠকখানা হবে অ্যালকেমিস্টের গবেষণাগার ?' ক্রোলকে সিরিয়াসলি নেওয়া উচিত কি না সেটা আমি বুঝতে পারছিলাম না। ক্লোল গম্ভীর ভাবে দেয়ালে টাঙানো একটা পৃথিবীর মানচিত্রের দিকে আঙুল দেখিয়ে
বলল, 'ফোর ডিগ্রি ওয়েস্ট বাই থার্টি সেভেন পয়েন্ট টু ডিগ্রি নর্থ।' আমি ম্যাপের দিকে না দেখেই বললাম, 'সে তো স্পেন বলে মনে হচ্ছে। গ্রানাডা অঞ্চল না ?
'ঠিকই বলেছ,' বলল ক্রোল, 'তবে আসল জায়গাটার নাম ম্যাপ না দেখলে জানতে পারবে না।'

আমি ম্যাপের দিকে এগিয়ে গেলাম। হিসেব করে যেখানে আঙুল গেল, সেখানে একটি মাত্র নাম পেলাম—মন্টেফ্রিও। ক্রোল বলল, 'এই মন্টেফিওই ছিল নাকি পাণ্ডুলিপির লেখক মানুয়েল সাভেদ্রার বাসস্থান। '
"তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে ?' – আমি না বলে পারলাম না। 'সাতশো বছরের পুরনো বাড়ি এখনও সেখানে রয়েছে, এ কথা কে বলল তোমায় ? আর তা ছাড়া পাণ্ডুলিপিতে যদি সোনা তৈরির উপায় লেখাই থাকে, তা হলে সে তো যে কোনও ল্যাবরেটরিতেই পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে। তার জন্য স্পেনে যাবার দরকার হচ্ছে কেন ?' ক্রোল যেন আমার কথায় বেশ বিরক্ত হল। হাতের কফি কাপটা সশব্দে টেবিলে নামিয়ে
রেখে বলল, 'তুমি যে ধরনের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার কথা বলছ এটা সে রকম নয় শঙ্কু । তাই যদি হত, তা হলে তুমি রসুন খাও কি না আর তোমার চুলের রং কালো ছিল কি না, এ সব জিজ্ঞেস করার কোনও দরকার হত না। এখানে বিজ্ঞানের সঙ্গে দিনক্ষণ, লগ্ন, গবেষণাগারের ভৌগোলিক অবস্থান, পরীক্ষকের মনমেজাজ-স্বাস্থ্য-চেহারা সব কিছুরই সমন্বয় ঘটছে। এ জিনিস ফেলনা নয়; একে ঠাট্টা কোরো না। আর সাতশো বছরের পুরনো বাড়ি থাকবে না কেন ? ইউরোপে মধ্যযুগের কেল্লা দেখনি? তারা তো এখনও দিব্যি মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। সাভেদ্রা ছিল ধনী বংশের ছেলে। তার বাড়ির যা বর্ণনা পাচ্ছি, তাতে সেটাকে একটা ছোটখাটো কেল্লা বলেই মনে হয়। হলই না হয় একটু জীর্ণ অবস্থা; তার মধ্যে একটা ঘর কি পাওয়া যাবে না, যেটাকে আমরা ল্যাবরেটরি হিসেবে ব্যবহার করতে পারি ? অবিশ্যি সে বাড়িতে যদি এখনও লোক থেকে থাকে, তা হলে তাদের সঙ্গে হয়তো একটা বোঝাপড়া করতে হতে পারে। কিন্তু পয়সা দিলে কাজ হবে না এটা আমি বিশ্বাস করি না। অ্যালকেমি তো— ?"
*এই সাতসকালে কী নিয়ে এত বচসা হচ্ছে তোমাদের মধ্যে ?"
সন্ডার্সকে ঘরে ঢুকতে আমরা কেউই দেখিনি। ক্রোল সহজে ছাড়বার পাত্র নয়। সে সন্ডার্সকে পুরো ব্যাপারটা বলল। সব শেষে বলল, একটা কাল্পনিক জানোয়ারের সন্ধানে আমরা তিব্বত যেতে পারি, আর যেখানে সোনা তৈরি করার সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে মাত্র দু' ঘণ্টার প্লেন জার্নি করে ঘরের কোনায় স্পেনে যেতে এত আপত্তি ?'
সন্ডার্স দেখলাম তর্কের মধ্যে গেল না। কারণ বোধ হয় এই যে, ক্রোলের হাবভাবে একটা সাংঘাতিক গোঁ আর একটা চরম উত্তেজনার ভাব ফুটে বেরোচ্ছিল। সন্ডার্স বলল, 'স্পেনে যেতে আমার আপত্তি নেই, হয়তো শঙ্কুরও নেই, কিন্তু তোমার এই গবেষণায় এক শঙ্কু ছাড়া আর কী কী উপাদান লাগবে সেটা জানতে পারি কি ?”
“উপাদানের চেয়েও যেটা বেশি জরুরি, বলল ক্রোল, 'সেটা হল সময়টা। সাভেদ্রা মিডসামারের সাত দিন আগে বা পরে যে কোনওদিন ঠিক দুপুর বারোটার সময় কাজ আরম্ভ করতে বলেছে—কারণ সারা বছরের মধ্যে ওই কটা দিন সূর্যের তেজ থাকে সবচেয়ে বেশি । মালমশলা অত্যন্ত সহজলভ্য। পারা আর সিসার কথা তো সব দেশের অ্যালকেমিতেই পাওয়া যায়; এখানে সে দুটো আছে। এ ছাড়া লাগবে জল, গন্ধক, নুন, কিছু বিশেষ গাছের ডাল, পাতা ও শিকড়। যন্ত্রপাতির মধ্যে মাটি আর কাচের জিনিস ছাড়া আর কিছু চলবে না—এটাও অন্য অ্যালকেমির বইয়েতেও লেখে—আর এ ছাড়া চাই একটা হাপর, চুল্লি, মেঝেতে একটা চৌবাচ্চা—'
"কেন, চৌবাচ্চা কেন? প্রশ্ন করল সন্ডার্স ।
বৃষ্টির জল ধরে জমিয়ে রাখতে হবে তাতে। এটা অন্য কোনও অ্যালকেমির বইয়েতে পাইনি।'
'পরশপাথরের কথা বলেছে কি ?' আমি প্রশ্ন করলাম। পরশপাথরের সংস্কার সব দেশেই আছে। আমি যে সব অ্যালকেমির বিবরণ পড়েছি, তাতে পরশপাথর তৈরিই হল গবেষণার প্রথম কাজ। তারপর সেই পাথর ছুঁইয়ে অন্য ধাতুকে সোনায় পরিণত করা হয় ।
কোল বলল, 'না। সাভেদ্রা পরশপাথরের কোনও উল্লেখ করেনি। উপাদানগুলো রাসায়নিক প্রক্রিয়ার ফলে একটা চিটচিটে পদার্থে পরিণত হবে। সেটাকে বৃষ্টির জলের সঙ্গে মিশিয়ে পিউরিফাই করার একটা পর্ব আছে। তার ফলে যে তরল পদার্থের সৃষ্টি হয়, সেটাই ক্যাটালিস্টের কাজ করে। অর্থাৎ এই তরল পদার্থের সংস্পর্শে এসেই সাধারণ ধাতু সোনা হয়ে যায়।'
'সাভেদ্রার ক্ষেত্রে পরীক্ষা সফল হয়েছিল কি ? সন্ডার্স একটু বাঁকাভাবে প্রশ্নটা করল। ক্রোল একটুক্ষণ চুপ থেকে পাইপে তামাক ভরে বলল, 'পাণ্ডুলিপিটা আসলে একটা ডায়রি। অন্যের উপকারের জন্য টেক্সট বই হিসেবে লেখা নয় এটা। পরীক্ষা যত সফলতার দিকে গেছে, সাভেদ্রার ভাষা ততই কাব্যময় হয়ে উঠেছে। “আজ অমুক সময় আমি সোনা তৈরি করলাম”–এ ধরনের কথা কোথাও লেখা নেই ঠিকই, কিন্তু সাভেদ্রা শেষের দিকে বলেছে,' – ক্রোল পিয়ানোর ওপরে রাখা পাণ্ডুলিপিটা তুলে নিয়ে তার শেষ পাতাটা খুলে পড়ল—“আজ নিজেকে শুধু বিজ্ঞানী বা জাদুকর বলে মনে হচ্ছে না ; আজ মনে হচ্ছে আমি শিল্পীর সেরা শিল্পী—যার মধ্যে এক ঐশ্বরিক প্রতিভার বিকাশ ঘটেছে, যার হাতের মুঠোয় এসে গেছে সৃষ্ট বস্তুকে অবিনশ্বর রূপ দেবার অমোঘ ক্ষমতা... । ” এ থেকে কী বুঝতে চাও তোমরাই বুঝে নাও।'

আমি আর সন্ডার্স পরস্পরের দিকে চাইলাম। কিছুক্ষণ তিনজনেই চুপ; বুঝতে পারছি আমার মতো সন্ডার্সের মনেও হয়তো ক্রোলের উৎসাহের কিছুটা ছোঁয়াচ লেগেছে। সন্ডার্স যেন উৎসাহটাকে জোর করে চাপা দিয়ে পরের প্রশ্নটা করল।
*অনুষ্ঠান বা মন্ত্রতন্ত্রের প্রয়োজন হয় না এতে ?’
ক্রোল পাইপে টান দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে বলল, প্রেতাত্মা নামানোর ব্যাপার একটা আছে—যে দিন কাজ শুরু করা হবে, তার আগের দিন রাত্রে। '
'কার প্রেতাত্মা ?'
জগদ্বিখ্যাত আরবদেশীয় অ্যালকেমিস্ট জবীর ইবন হায়ানের। দশম শতাব্দীর এই মহান ব্যক্তিটির নাম তোমরা নিশ্চয়ই শুনেছ। আর কিছুই না—তাঁর কাছ থেকে আশীর্বাদ চেয়ে নেওয়া আর কী। তবে সে কাজটা আমি থাকতে কোনও অসুবিধা হবে না ।
ক্রোল মিউনিকে একটা প্ল্যানচেট সমিতির সভাপতি, সেটা আমি জানতাম ।
"আর দরকার লাগবে ওকে।
কথাটা বলল ক্রোল—আর তার দৃষ্টি ঘরের দরজার চৌকাঠের দিকে। চেয়ে দেখি, সেখানে সন্ডার্সের পারস্য দেশীয় মাজার মুস্তাফা' দণ্ডায়মান ।
*ওকে মানে ?' চেঁচিয়ে প্রশ্ন করল সন্ডার্স। সন্ডার্স বেড়াল-পাগল—কতকটা আমারই মতো। তিন বছর আগে আমার গিরিডির বাড়িতে এসে সে আমার বেড়াল নিউটনের গলায় একটা লাল সিল্কের রিবন বেঁধে দিয়ে গিয়েছিল।
ক্রোল বলল, ‘বেড়াল সম্বন্ধে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে গেছে সাভেদ্রা। গবেষণাগারে বেড়ালের উপস্থিতি অব্যর্থভাবে কাজে সাহায্য করে। তার অভাবে প্যাঁচা। কিন্তু আমার মনে হয়,
বেড়াল যখন হাতের কাছে রয়েছেই, তখন প্যাঁচার চেয়ে.... সন্ডার্স বা আমি কেউই সরাসরি ক্রোলকে স্পেন যাওয়া নিয়ে কথা দিলাম না – যদিও ক্রোল বার বার বলে দিল কর্কটক্রান্তির সুযোগটা না নিলে আবার এক বছর অপেক্ষা করতে
হবে । ব্রেকফাস্ট খেয়ে আমরা তিন জনে হ্যাম্পস্টেড হিথে মেলা দেখতে গেলাম। এটা প্রতি বছর এক বার করে হয় এই গ্রীষ্মের সময়। দোকানপাট, জুয়োর জায়গা, নাগরদোলা, মেরি-গো-রাউন্ড আর ছেলেমেয়ে বুড়োবুড়ির ভিড়ের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে যেখানে পৌঁছোলাম সেখানে একটা সুসজ্জিত ক্যারাভান জাতীয় গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, তার গায়ে লেখা—'কাম অ্যান্ড হ্যাভ ইওর ফরচুন টোল্ড বাই ম্যাডাম রেনাটা ।
মহিলা নিজেই পরদা দেওয়া জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে রয়েছেন, আমাদের দেখে সহাস্যে 'গুড মর্নিং' করলেন। এ জাতীয় বেদে শ্রেণীর মহিলা ফরচুন-টেলারদের এ দেশে প্রায়ই দেখা যায়—বিশেষ করে মেলায়। ক্রোল তো তৎক্ষণাৎ স্থির করে বসল যে আমাদের ভাগ্য গণনা করিয়ে নিতে হবে। তার পাল্লায় পড়ে আমরা তিনজনেই ক্যারাভ্যানে গিয়ে উঠলাম।
বিশালবপু ম্যাডাম রেনাটা ঘর সাজিয়ে দোকান সাজিয়ে বসে আছেন খদ্দেরের অপেক্ষায়। সরঞ্জাম সামান্যই। একটা গোলটেবিলের উপর কাচের ফুলদানিতে একটি মাত্র লাল গোলাপ, আর তার পাশে একটা কাচের বল—যাকে এঁরা ক্রিস্ট্যাল বলে থাকেন। এই ক্রিস্ট্যালের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে এঁরা নাকি খদ্দেরদের ভবিষ্যতের ঘটনা চোখের সামনে ছবির মতো দেখতে পান।
ক্রোল আর ভনিতা না করে বলল, 'বলুন তো ম্যাডাম আমাদের তিন বন্ধুর জীবনে সামনে কোনও উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটতে চলেছে কি না। আমরা তিনজনে একসঙ্গে একটা বড় কাজে হাত দিতে যাচ্ছি।'
রেনাটা কনুই দুটোকে টেবিলের ওপর ভর করে ক্রিস্ট্যালের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেন। আমরা তিনজনে তাঁর সামনে টেবিলটাকে ঘিরে তিনটে চেয়ারে বসেছি। বাইরে থেকে নাগরদোলার বাজনার শব্দ শোনা যাচ্ছে, আর তার সঙ্গে বাচ্চাদের কোলাহল। ক্রোলও দেখি মাথাটা এগিয়ে দিয়েছে বলটার দিকে ।
'আই সি দ্য সান রাইজিং ——প্রায় পুরুষালি কণ্ঠে ফিসফিস করে বললেন ম্যাডাম রেনাটা। ক্রোলের নিশ্বাস হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল। সান বলতে সে সোনাই ধরে নিয়েছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই ।
"আই সি দ্য সান রাইজিং ফর ইউ', আবার বললেন ম্যাডাম রেনাটা। 'অ্যান্ড—' মহিলা চুপ। এবার আমারও যেন বুকটা দুরদুর করছে। এ সব ব্যাপারে বয়স্ক লোকদেরও যেন আপনা থেকেই ছেলেমানুষ হয়ে যেতে হয় ।
'অ্যান্ড হোয়াট ?' অসহিষ্ণুভাবে প্রশ্ন করল ক্রোল। তার আর তর সইছে না। কিন্তু ম্যাডাম রেনাটা নির্বিকার। তাঁর হাত দুটো বলটাকে দু পাশ থেকে ঘিরে রেখেছে— বোধ হয় বাইরের আলো বাঁচিয়ে ভবিষ্যতের ছবিটাকে আরও স্পষ্ট করার জন্য ।
'অ্যান্ড—' আবার সেই খসখসে পুরুষালি কণ্ঠস্বর 'অ্যান্ড আই সি ডেথ। ইয়েস, ডেথ। ' 'হুজ ডেথ ?' ক্রোলের গলা এই দুটো কথা বলতেই কেঁপে গেল। আবার দ্রুত পড়ছে তার নিশ্বাস।
"দ্য ডেথ অফ এ রেডিয়্যান্ট ম্যান। '
অর্থাৎ একজন দীপ্যমান পুরুষের মৃত্যু।
এর বেশি আর কিছু খুলে বললেন না ম্যাডাম রেনাটা। দীপ্যমান পুরুষটি কেমন দেখতে জিজ্ঞেস করতে বললেন, 'হিজ ফেস ইজ এ রার।' অর্থাৎ তার মুখ ঝাপসা । সন্ডার্স চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ল । ভদ্রমহিলার ঘোর কেটে গেছে। তিনি হাসিমুখে তাঁর হাতখানা বাড়িয়ে দিয়েছেন। সন্ডার্স সেই হাতে যথোপযুক্ত পারিশ্রমিক দিয়ে দিল। আমরা তিনজনে ক্যারাভান থেকে বেরিয়ে এলাম।
২৬শে জুন

মন্টেফিওতে কী পাওয়া যাবে না যাবে সে নিয়ে আর চিন্তা না করে আমরা এখান থেকেই আমাদের অ্যালকেমিক ল্যাবরেটরির জন্য যাবতীয় জিনিস কিনে নিয়েছি। পোর্টোবেলো স্ট্রিটে এখানকার চোরাবাজার। সেখানে আড়াই ঘণ্টা কাটিয়ে ঠিক পুরনো ছবিতে যেমন দেখা যায় তেমনই সব মাটির পাত্র, কাচের ফ্লাস্ক, রিটর্ট ইত্যাদিও জোগাড় করেছি। সভার্সের এক বন্ধু এখানকার নাম করা ফিলম্ প্রোডিউসার। তিনি নাকি বছর তিনেক আগে অ্যালকেমি সংক্রান্ত একটা ভুতুড়ে ছবি করেছিলেন। সেই ছবিতে গবেষণাগারের দৃশ্যে ব্যবহারের জন্য নানারকম হাতা খুণ্ডি ঘটি বাটি কড়া ইত্যাদি তৈরি করানো হয়েছিল। সন্ডার্স তার কিছু জিনিস ভাড়া নেবার ব্যবস্থা করেছে।
সন্ডার্সের বেড়াল মুস্তাফাও অবিশ্যি আমাদের সঙ্গে যাচ্ছে। আমার ধারণা কোল না বললেও সন্ডার্স তাকে সঙ্গে নিত, কারণ মুস্তাফাকে বেশি দিন ছেড়ে থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয় ।
সোনা তৈরি নিয়ে আমার বিশেষ আগ্রহ নেই, বা তৈরি হলেও সে সোনায় আমার কোনও
লোভ নেই। আমার আগ্রহের প্রধান কারণ আমি স্পেনের এ অংশটা দেখিনি। সভার্সের
হাতে বিশেষ কোনও কাজ নেই, তাই ও এই আউটিং-এর ব্যাপারে মোটামুটি উৎসাহই বোধ
করছে। আর ক্রোলের কথা কী আর বলব। উত্তেজনার ঠেলায় সে এক মুহূর্ত চুপ করে বসে থাকতে পারছে না। মাঝে মাঝে আবার দেখছি পিয়ানোর উপর নোটবই রেখে তাতে কী সব যেন হিজিবিজি জ্যামিতিক নকশা কাটছে—- দেখে অনেকটা তান্ত্রিক মণ্ডলের মতো মনে হয় । বিকেলের দিকে বাস গুছোচ্ছি, এমন সময় নীচ থেকে কলিংবেলের শব্দ পেলাম। তার কিছুক্ষণ পরেই নীচের দরজা খোলার শব্দের সঙ্গে সঙ্গে একটা চেনা কণ্ঠস্বর পেলাম। ইনি সেই ক্রোলের প্রতিদ্বন্দ্বী আমেরিকান ভদ্রলোক। কৌতূহল হওয়াতে আমিও নীচে গেলাম ।
সন্ডার্স ততক্ষণে ভদ্রলোককে বৈঠকখানায় বসিয়েছে। ক্রোলও নিশ্চয়ই আগন্তুকের গলার আওয়াজ পেয়েছিল, কারণ মিনিটখানেকের মধ্যে সেও নেমে এল । আগন্তুক প্রথমেই পকেট থেকে তিনটে ভিজিটিং কার্ড বার করে আমাদের তিনজনের
হাতে তুলে দিল। তাতে নাম লেখা আছে— রিউফাস এইচ. ব্ল্যাকমোর । 'রিউফাস ব্ল্যাকমোর ?' বলে উঠল ক্রোল। 'তুমিই কি "ব্ল্যাক আর্ট এন্ড হোয়াইট ম্যাজিক” নামে বইটা লিখেছ ?"
'আজ্ঞে হ্যাঁ, আমিই সেই ব্যক্তি।'
আমি মুখটা ভাল করে দেখছিলাম। লম্বাটে গড়ন। চামড়া অস্বাভাবিক রকম
ফ্যাকাশে। মাথার কালো লম্বা চুল কানের পাশ দিয়ে কাঁধ অবধি ঝুলে আছে। চোখের চাহনিতে এখন যে ঠাণ্ডা অলস ভাবটা রয়েছে সেটা স্থায়ী নয় নিশ্চয়ই, কারণ এই চোখকেই জ্বলতে দেখেছি সেদিন কলিংউডের নিলামঘরে।
ভদ্রলোক এবার তাঁর কোটের ডান পকেট থেকে বার করলেন তিনটে রুপালি বল, সাইজে পিংপং বলের মতো। তারপর চোখের সামনে সেগুলো দিয়ে পরপর অন্তত পঁচিশ রকম ম্যাজিক দেখিয়ে ফেললেন। ঝলমলে বলগুলো এই আছে এই নেই। কোথায় যে যাচ্ছে চোখের নিমেষে তা বোঝার কোনও উপায় নেই, এমনই হাত সাফাই মিঃ ব্লাকমোরের। সব শেষে অদৃশ্য বল তিনটে যখন একটা একটা করে আমাদের তিনজনের পকেট থেকে বার করলেন, তখন আপনা থেকেই হাততালি দিয়ে উঠলাম। '
তোমার ক্ষমতার তারিফ না করে উপায় নেই, বলে ফেলল উইলহেল্‌ম ক্রোল ।
'কী দেখলে আমার ক্ষমতা ?' শুকনো হাসি হেসে বলল রিউফাস ব্ল্যাকমোর। 'এ তো অত্যন্ত মামুলি ম্যাজিক। আমার আসল ম্যাজিক কোনটা জান ?”
এই বলে ব্ল্যাকমোর একটা বল তার ডান হাতের তর্জনী আর বুড়ো আঙুলে ধরে আমাদের সামনে তুলে ধরে বলল, 'এই বল রুপোর তৈরি আর এই রুপো আমার তৈরি। এর চেয়ে বেশি খাঁটি রুপো পৃথিবীর কোনও খনিতে পাওয়া যাবে না।'
আমরা তিনজনেই চুপ। ব্ল্যাকমোরের শান্ত চোখ এখন জ্বলজ্বল করছে।
‘অ্যালকেমির অর্ধেক জাদু এখন আমার হাতের মুঠোয়' বলে চলল ব্ল্যাকমোর, 'কিন্তু সোনা তৈরির কাজে এখনও সফল হতে পারিনি আজ তিন বছর ধরে চেষ্টা করেও। আমার বিশ্বাস সাভেদ্রার ডায়রিতে তার বিবরণ আছে। সাভেদ্রা যে একটা ডায়রি লিখেছিল, সে খবর আমি আমার গুরুর কাছ থেকে পাই। সেটা কলিংউডে নিলামে চড়বে জেনে আমি সানফ্রানসিস্কো থেকে ফ্লাই করে চলে আসি। ভেবেছিলাম সস্তায় পেয়ে যাব, কিন্তু প্রোফেসর ক্রোলের মাথায় যে খুন চাপবে সেটা বুঝতে পারিনি। আমি সে দিন তাঁকে ওভারবিড করতে পারতাম, কিন্তু পরে মনে হল আমার সঙ্গে ভাল করে আলাপ হলে তিনি নিজেই হয়তো ওই একই দামে ডায়রিটা আবার আমায় বেচে দেবেন। আমার বিশ্বাস প্রোফেসর ক্রোল ডায়রিটা তাঁর সংগ্রহের জন্য কিনেছেন, যেমন আর পাঁচজন কালেকটর কিনে থাকেন। কিন্তু আমি নিজে অ্যালকেমিস্ট। আমেরিকার – সম্ভবত সারা বিশ্বের একমাত্র খাঁটি অ্যালকেমিস্ট। আমার শুরু এখন জীবিত নেই। এখন একমাত্র আমিই ওই ডায়রিটার সদ্ব্যবহার করতে পারি। আমি টাকা নিয়ে এসেছি। ডায়রিটা আমার চাই।'
রিউফাস ব্ল্যাকমোর এবার তার কোটের পকেট থেকে একটা সুদৃশ্য চামড়ার নোটকেস বার করল। তারপর তা থেকে এক তাড়া দশ পাউন্ডের নোট বার করে সামনের টেবিলের উপরে রাখল। এবার ক্রোল মুখ খুলল ।
"আপনি ও টাকা ফিরিয়ে নিন, মিস্টার ব্ল্যাকমোর সাভেদ্রার ডায়রি হাতছাড়া করার কোনও বাসনা নেই আমার। '
“আপনি ভুল করছেন প্রোফেসর ক্রোল।'

"বোধ হয় না। আপনি জাদুকর হতে পারেন, কিন্তু আপনি যে অ্যালকেমিস্ট, তার কোনও প্রমাণ নেই। ওই বলের রুপো যে আপনারই তৈরি সেটা আমি মানতে বাধ্য নই।' রিউফাস ব্ল্যাকমোর কয়েক মুহূর্ত চুপ। তারপর আমাদের তিনজনের দিকে নির্মম দৃষ্টি হেনে নোটের উপর তাড়াটা তুলে পকেটে পুরে এক ঝটকায় চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল । তারপর ক্রোলের দিকে তাকিয়ে বলল, 'শতকরা নিরানব্বুই ভাগ খাঁটি রুপো গবেষণাগারে রাসায়নিক উপায়ে তৈরি করা সম্ভব হয়েছে সেটা জান বোধ হয়। কিন্তু হান্ড্রেড পার্সেন্ট খাঁটি রুপোর কোনও হদিস পাওয়া যায় না—এক আমার তৈরি এই রুপো ছাড়া।'
এই বলে ব্ল্যাকমোর তিনটে বলের একটা ক্রোলের দিকে ছুড়ে দিল। বলটা ক্রোলের কোলে গিয়ে পড়ল । “তোমরা তিনজনেই বৈজ্ঞানিক বলে জানি', বলে চলল ব্ল্যাকমোর। অন্তত আমার কথাটা সত্যি কি না বিচার করে দেখার জন্য এই রুপো তোমাদের যাচাই করে দেখতে অনুরোধ
করছি। দু' দিন সময় দিচ্ছি। আমি ওয়লডর্ফ হোটেলে রয়েছি; আমার ঘরের নম্বর চারশো ঊনত্রিশ। যদি তোমাদের মত বদলায়, এবং তোমরা সাভেদ্রার ডায়রিটা আমাকে বিক্রি করা স্থির কর, তা হলে আমাকে ফোন করে দিয়ো। আর যদি বিক্রি না কর, তা হলে এটুকু বলে যাচ্ছি যে তোমাদের দ্বারা তৈরি হবে না।
এই নাটকীয় বক্তৃতাটা দিয়ে আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে রিউফাস্ ব্ল্যাকমোর গটগট করে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। দরজার মুখে সে যে কাজটা করল, সেটাকে কোনও মতেই সমর্থন করা যায় না। সন্ডার্সের বেড়াল মুস্তাফা চৌকাঠের পাশে বসে ছিল, তাকে ব্ল্যাকমোর তার পেটেন্ট লেদারের ছুঁচোলো জুতোর ডগা দিয়ে এক লাথি মেরে তিন হাত দূরে ছিটকে ফেলে দিল । সন্ডার্স 'হোয়াট দ্য হেল—' বলে উঠে দাঁড়িয়ে লোকটাকে বোধ হয় আক্রমণই করতে যাচ্ছিল, কিন্তু ক্রোল তাকে বাধা দিল। ততক্ষণে অবিশ্যি ব্ল্যাকমোর রাস্তায় বেরিয়ে গেছে। ক্রোল বলল, 'লোকটা মোটেই সুবিধের বলে মনে হচ্ছে না; ওর পিছনে না লাগাই ভাল। '
মুস্তাফা রাগে যন্ত্রণায় গরগর করছে। সভার্স তাকে কোলে নিয়ে আদর করতে ক্রমে তার রাগ পড়ল। অ্যালকেমিস্টের যদি এই নমুনা হয়, তা হলে বোধ হয় অপরসায়ন জিনিসটাকে দূরে রাখাই ভাল। কিন্তু সে আর উপায় নেই। আমরা পরশুই গ্রানাডার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ছি। কী আছে কপালে কে জানে ।
মন্টেফ্রিও, ২৯শে জুন
বৃষ্টি পড়ছে। আকাশের যা অবস্থা তাতে সহজে মেঘ কাটবে বলে মনে হয় না। ক্রোলের মতে এর চেয়ে শুভলক্ষণ আর কিছু হতে পারে না, কারণ আমাদের গবেষণার একটা প্রধান উপাদান অনায়াসে সংগ্রহ হয়ে যাচ্ছে। সাভেদ্রা কালে'র দোতলার একটা খোলা ছাতে একটা প্লাস্টিকের গামলা রেখে দেওয়া হয়েছে। মনে হয় বিকেলের মধ্যেই সেটা ভরে যাবে।
আমরা অবিশ্যি কালে উঠিনি; উঠেছি হোটেলে। আরও দিন দুয়েক হোটেলেই থাকতে হবে। সাভেদ্রা কালে কেউ থাকে না, এবং কতকাল যে থাকে না তার কোনও হিসেব নেই । তবে সাভেদ্রা পরিবারের নাম এখানে সকলেই জানে। আমরা মন্টেফ্রিও পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় প্রথম যে লোকটিকে জিজ্ঞেস করলাম সে-ই কেল্লার হদিস দিয়ে দিল । গ্রানাডাতে রাত্রে বিশ্রাম নেবার সুযোগ হওয়াতে আমরা দিব্যি তাজা বোধ করছিলাম, তাই আর সময় নষ্ট না করে সেই লোকের নির্দেশ অনুযায়ী মন্টেফিও পোস্টআপিসের পাশ দিয়ে বাঁ দিকে মোড় নিয়ে পাহাড়ি পথ ধরে চলতে শুরু করলাম ।
দ্বিতীয় ল্যান্ডমার্কে পৌঁছাতে লাগল দশ মিনিট। এটা একটা প্রাচীন মুরীয় সরাইখানার ধ্বংসাবশেষ। স্পেনের এ অংশটা অষ্টম শতাব্দী থেকে সাতশো বছর আরব দেশীয় মুসলমানদের বা মূরদের অধীন ছিল। তার চিহ্ন এখনও সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। গ্রানাডার আলহামরা প্রাসাদ তো জগদ্বিখ্যাত ।
বিধ্বস্ত সরাইখানার পাশে গাছতলায় একটি ছেলে গলায় দড়ি বাঁধা একটা পোষা বেজি। কাঁধে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। সে আমাদের ট্যাক্সি থামতে কৌতূহলভরে এগিয়ে এল। তাকে সাভেদ্রা কাল-এর কথা জিজ্ঞেস করতে সে-ই খবর দিল যে সেখানে কেউ থাকে না। আমরা বললাম যে সেখানে কারুর সঙ্গে দেখা করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়; আমরা শুধু একবার কালটা দেখতে চাই। তাতে সে বলল যে, তাকে গাড়িতে তুলে নিলে সে খুব সহজেই পথ দেখিয়ে দিতে পারবে। শুধু তাই নয়—সে এখানকার গাইড হিসেবেও কাজ করতে পারবে। এতে আমাদের আপত্তি নেই, কাজেই তাকে তুলে নিলাম ।

ছেলেটা খুব গোপে। না জিজ্ঞেস করতেই নিজের সম্বন্ধে এক ঝুড়ি খবর দিয়ে দিল । তার নাম পাবলো, তার আরও পাঁচটি ভাই ও সাতটি বোন আছে। সে নিজে সবচেয়ে ছোট। সে এখন কোনও কাজ করে না। তার বাপের একটা মদের দোকান আছে, তিন ভাই সেখানে কাজে লেগে গেছে। আর দুভাই-এর একজনের ফলের দোকান আছে, আর একজন রেস্টোরান্টে বাজনা বাজায়। বোনেদের সকলেরই বিয়ে হয়ে গেছে। পাবলো মন্টেফ্রিওর ইতিহাস জানে। কোন বাড়ির কত বয়স, কোথায় কে থাকত, কোন রাজা কোন যুদ্ধে মারা গিয়েছিল— সে সবই জানে। মাঝে মাঝে টুরিস্টদের গাইড হিসেবে কাজ করে সে দু' পয়সা কামিয়ে নেয়, যদিও পড়াশুনা বিশেষ করেনি বলে ভাল কাজ পায় না। তার আসল শখ হল জন্তু ধরা এবং পোষা। এই বেজিটাকে ধরেছে মাত্র তিন দিন আগে, কিন্তু এর মধ্যেই দিব্যি পোষ মেনে গেছে।
সামনের সিটে বসে সে আত্মজীবনী শোনাচ্ছিল। আমরা তিনজনে পিছনে বসে পরস্পরের সঙ্গে ফিসফিস করে ঠিক করে নিলাম যে পাবলোকে প্রস্তাব করব আমরা যে কদিন এখানে আছি সে কদিন সে আমাদের ফাইফরমাশ খাটবে, তাকে আমরা পয়সা দেব । অবিশ্যি আমাদের কাজটা আদৌ করা সম্ভব হবে কি না সেটা সাভেদ্রা কাল না দেখা পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছে না।
জঙ্গলের মধ্যে এঁকাবেঁকা পথ ধরে আরও মিনিট পনেরো গিয়ে একটা জায়গায় এসে পাবলো গাড়ি থামাতে বলল। বাকি পথটা আমাদের হেঁটে যেতে হবে। 'কতদূর ?' জিজ্ঞেস করল ক্রোল। 'বেশি নয়, দুমিনিটের পথ' আশ্বাস দিয়ে বলল পাবলো ।
ঘড়ি ধরে দু মিনিট না হলেও, আগাছা ভেদ করে মিনিট পাঁচেকের মধ্যে আমরা যে বাড়িটার ফটকের সামনে পৌঁছোলাম, সেটা কাল বলতে যে বিরাট অট্টালিকার চেহারা আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেরকম বড় অবশ্যই নয়, কিন্তু শতখানেক লোক একসঙ্গে থাকার পক্ষে যে যথেষ্ট বড় তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এই দুর্গের চারদিকে পরিখা নেই, বা কোনওকালে ছিলও না। রাস্তা থেকে সোজা গেটের ভিতর দিয়ে ঢুকে বাঁকা পথ দিয়ে কিছুদূর গেলেই বাড়ির সদর দরজায় পৌঁছানো যায় ।
পাবলো বুঝেছে যে আমরা বাড়ির ভিতর ঢুকতে চাই, তাই সে সতর্ক করে দিল—ও বাড়ি এখন হাজারখানেক বাদুড়ের বাসা। তা ছাড়া ইঁদুর, সাপ এ সবও আছে।' সন্ডার্স বলল, 'তুমি ও বাড়ির ভিতর সম্বন্ধে এত জানলে কী করে ?"
পাবলো বলল, 'একবার একটা স্যালাম্যান্ডারকে তাড়া করে কালের মধ্যে ঢুকেছিলাম । খুব নাজেহাল করেছিল জানোয়ারটা একেবারে ছাত পর্যন্ত দৌড় করিয়েছিল। '
স্যালাম্যান্ডার হল গিরগিটি শ্রেণীর জানোয়ার। স্পেনের এ অঞ্চলে পাওয়া যায় এটা জানতাম ।
'বাড়ির ভিতর আর কী দেখলে ?' প্রশ্ন করল ক্রোল ।
পাবলো বলল, আসবাবপত্র বলতে কয়েকটা ভাঙা কাঠের চেয়ার আর টেবিল ছাড়া কিছু নেই। দেয়ালের গায়ে কিছু মরচে ধরা অস্ত্রশস্ত্র নাকি এখনও টাঙানো আছে। কয়েকটা ঘরে
নাকি ছাতের কড়িবরগা আলগা হয়ে নীচে ঝুলে পড়েছে, আরেকটা ঘরে তালা দেওয়া বলে তাতে ঢোকা যায় না । তবে আশ্চর্য এই যে, কালে একটা রান্নাঘর রয়েছে তাতে নাকি কিছু পুরনো বাসনপত্র এখনও পড়ে আছে। পাবলো সেখান থেকে একটা মাটির পাত্র নিয়ে গিয়ে তার মাকে উপহার দিয়েছিল।
এই কথাটা শুনে আমাদের তিনজনের কৌতূহল সপ্তমে চড়ে গেল। সে রান্নাঘর আমাদের দেখাতে পারবে ? চাপা স্বরে প্রশ্ন করল ক্রোল।
* কেন পারব না ?' বলল পাবলো। 'আপনারা চলুন না আমার সঙ্গে।"
আমরা গেলাম, এবং গিয়ে দেখলাম আমাদের অনুমান মিথ্যে হয়নি। সাভেদ্রা কালের দক্ষিণপূর্ব কোণে একটা ঘর যে আজ থেকে সাতশো বছর আগে কোনও অ্যালকেমিস্টের গবেষণাগার হিসেবে ব্যবহার হয়েছিল তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। চুল্লি, মেঝের মাঝখানে চৌবাচ্চা, মাটির পাত্র, কাচের বোয়াম, রিটট—কোনও জিনিসেরই অভাব নেই, যদিও সব কিছুর উপরেই রয়েছে সাত শতাব্দীর ধুলোর আচ্ছাদন। একটা হাপরও রয়েছে সেই যুগের, যেটা নেড়েচেড়ে ক্রোল বলল তাতে এখনও অনায়াসে কাজ চলবে। আশ্চর্য লাগছিল, কারণ ঠিক এইরকম জিনিসপত্র সমেত এইরকমই ঘরের ছবি বহু প্রাচীন অ্যালকেমির বইয়েতে দেখেছি—কেবল তফাত এই যে যারা এখানে কাজ করতে চলেছে তারা বিংশ শতাব্দীর মানুষ। তবে এও ঠিক যে ক্রোলের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মনও ক্রমে পৌঁছিয়ে যাচ্ছে সেই মধ্যযুগে। নাড়ীর মধ্যে যে চাঞ্চল্য অনুভব করছি, ঠিক সেইরকমই চাঞ্চল্য নিশ্চয় অনুভব করত মধ্যযুগের অ্যালকেমিস্টরা।
পাবলোকে আমরা কাজে বহাল করে নিলাম। দিনে হাজার পেসেটা, অর্থাৎ দশ টাকার মতো নেবে। ল্যাবরেটরিটাকে ও একদিনের মধ্যেই ঝাড়পোঁছ করে রেখে দেবে, যাতে পরশু থেকে আমরা কাজ আরম্ভ করতে পারি। আরও খানদুয়েক ঘর পরিষ্কার করতে হবে, কারণ আমরা তিনজন রাত্রে কালেই থাকব। একবার সোনা তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেলে কাস্‌ ছেড়ে আর কোথাও যাওয়া চলবে না। পাবলোকে দিয়ে খাবার আনিয়ে নেব। শোবার ব্যাপারে সমস্যা নেই, কারণ আমাদের তিনজনেরই স্লিপিং ব্যাগ আছে। খাটপালঙ্কের দরকার হবে না, মেঝেতে শুয়ে পড়লেই হল ।

সাভেদ্রা কাল থেকে হোটেলে ফিরেছি দুপুর দেড়টায়। তার আধ ঘণ্টার মধ্যেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে, এবং সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্লাস্টিকের গামলা সমেত পাবলোকে কালে পাঠিয়ে দিয়েছি জল ধরে রাখবার ব্যবস্থা করতে। এখন রাত সাড়ে আটটা। বৃষ্টিটা একটু ধরেছে। এ অঞ্চলটা শুকনো বলেই জানতাম নেহাতই কপালজোরে আমরা এসেই বৃষ্টি পেয়ে গেছি।
ক্রোল আর সন্ডার্স এইমাত্র ফোন করে জানাল যে তারা ডিনারের জন্য তৈরি। একটা কথা লিখতে ভুলে গেছি — রিউফাস ব্ল্যাকমোর যে বলটা দিয়ে গিয়েছিল সেটা আসার আগে যাচাই করিয়ে জেনেছি যে তাতে যে রুপো ব্যবহার করা হয়েছে সেটা হান্ড্রেড পার্সেন্ট বিশুদ্ধ। অর্থাৎ ব্ল্যাকমোরকে আর জাদুকর বলা চলবে না; অ্যালকেমিস্ট হিসাবেও যে সে কৃতকার্য হয়েছে সেটা আর অস্বীকার করা চলে না। ব্ল্যাকমোরকে টেক্কা দিতে হবে কৃত্রিম উপায়ে হান্ড্রেড পার্সেন্ট খাঁটি সোনা তৈরি করে। এ ব্যাপারে আমরা তিনজনেই দৃঢ়সংকল্প ।
৩০শে জুন রাত সাড়ে বারোটা
সবেমাত্র সাভেদ্রা কাল থেকে হোটেলে ফিরেছি। গত দুঘণ্টা আমরা কাটিয়েছি আমাদের অ্যালকেমিক ল্যাবরেটরিতে। সোনা তৈরির কাজ শুরু করার আগে সাভেদ্রার ডায়রির নির্দেশ অনুযায়ী একটা জরুরি কাজ আমাদের সেরে নিতে হল। সেটার কথাই এখন লিখে রাখছি। আগেই বলে রাখি, দশম শতাব্দীর জগদ্বিখ্যাত আরবদেশীয় অ্যালকেমিস্টের প্রেতাত্মা আমাদের উদ্দেশে তার আশীর্বাদ জানিয়ে গেছে। কাল ঠিক দুপুর বারোটায় আমাদের হাপর চলতে শুরু করবে। কাজের যাবতীয় উপাদান যথেষ্ট পরিমাণে ল্যাবরেটরিতে রাখা হয়ে গেছে। ঘরের দরজায় একটা মজবুত নতুন তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাল থেকে আমরা কালে গিয়ে থাকছি। পাবলোও থাকবে। আমরা কী কাজ করতে যাচ্ছি সেটা আমরা মোটামুটি ওকে বুঝিয়ে দিয়েছি। ছেলেটির মধ্যে এমন একটা সরলতা আছে যে তার উপর বিশ্বাস রাখতে আমাদের কোনও দ্বিধা হয়নি।
জবীর ইবন হায়ানের প্রেতাত্মা নামানোর ব্যাপারে ক্রোল যে পন্থাটা ব্যবহার করল সেটার মধ্যে নতুনত্ব বলতে ছিল শুরুতে ল্যাটিন ও তিব্বতি মন্ত্র উচ্চারণ। প্রথমটা করল সন্ডার্স ও দ্বিতীয়টা ক্রোল। তারপর ক্রোল তার মানুষের হাড়ের তৈরি বাঁশিতে মিনিট পাঁচেক ধরে একটা মধ্যযুগীয় ইউরোপীয় ধর্মসংগীতের সুর ভাঁজল। এখানে বলে রাখি যে এই প্ল্যানচেটের সময় আমাদের ঘরে আমরা তিনজন বাদে আরও একটি প্রাণী ছিল। সে হল সম্ভার্সের বেড়াল মুস্তাফা। মুস্তাফা এই কালে এসে এরই মধ্যে তিনটি ইঁদুর সংহার করেছে। আরও ইঁদুরের আশা আছে বলেই বোধ হয় তার মেজাজ এতটা খোশ ।
স্তোত্র ও বাঁশির পর আমরা প্রচলিত কায়দায় একটা টেবিলকে ঘিরে বসে জবীর ইবন হায়ানের চিন্তায় মগ্ন হলাম। ক্রোল আর আমি দুজনেই আরবি ভাষা জানি, কাজেই প্রেতাত্মার সঙ্গে কথা বলতে কোনও অসুবিধা হবে না। ক্রোলই মিডিয়াম, সুতরাং তার মধ্যে দিয়েই আত্মার আবির্ভাব হবে। সে চোখ বুজে রয়েছে; আমি আর সন্ডার্স তার দিকে প্রায় নিষ্পলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি। ঘরে আলো বলতে কেবল দুটি মোমবাতি। তার শিখা অল্প অল্প দুলছে, সেইসঙ্গে আমাদের তিনজনের ছায়াও ঘরের দেয়ালে সদা কম্পমান ।
মিনিট পনেরো ক্রোলের দিকে চেয়ে থাকার পর খেয়াল হল দেয়ালে হঠাৎ একটা কীসের ছায়া খেলে গেল। ছায়ার গতি অনুসরণ করে উপরে চেয়ে দেখি একটা বাদুড় ঢুকে কড়িকাঠে আশ্রয় নিয়েছে। এ সব বাড়িতে কড়িকাঠ থেকে বাদুড় ঝোলাটা অস্বাভাবিক দৃশ্য। নয়, কিন্তু এ বাদুড়ের বিশেষত্ব হল সেটা ঘড়ির পেণ্ডুলামের মতো দুলছে, নিঃশব্দে দুলছে, আর তার চোখদুটো সটান তাগ করে আছে আমাদের তিনজনের দিকে। সভার্সের কোলে মুস্তাফাও দেখলাম একদৃষ্টে চেয়ে রয়েছে ঝুলন্ত বাদুড়ের দিকে ।
ক্রোলের চেহারায় একটা পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। চেহারায় বলব না, বরং তার বসার ভঙ্গিতে। তার কোমর থেকে মাথা অবধি শরীরটা কেমন যেন আপনা থেকে ভাঁজ হয়ে সামনের দিকে নুয়ে পড়ছে, আর সেইসঙ্গে তলার অংশটা যেন চেয়ার ছেড়ে শূন্যে উঠছে।
মিনিট দু-এক পরে ক্রোলের দেহটা আপনা থেকেই যে ভঙ্গিটা নিল, সেটাকে নমাজ পড়ার একটা অবস্থা বলা চলে। আমি আর সন্ডার্স দুজনেই স্পষ্ট দেখলাম যে তার পা আর মাটিতে ঠেকে নেই। আর সে যে চেয়ারের উপর বসেছিল, তার কোনও অংশের সঙ্গেই তার দেহের কোনও যোগ নেই ।
ঘরে কোত্থেকে জানি আতরের গন্ধ এসে ঢুকেছে। এটা বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে একটা মৃদু 'ঝুপ্' শব্দ হল। দেখলাম টেবিলের উপর ক্রোলের নুইয়ে পড়া মাথাটার সামনে এসে পড়েছে একটা মুক্তোর জপমালা — যাকে মুসলমানরা বলে তসবি ।
তারপর আরও বিস্ময় । মুহূর্তের মধ্যে দেখতে দেখতে মালার মুক্তোগুলো আপনা থেকেই আলগা হয়ে টেবিলের উপর ছড়িয়ে পড়ল, পরমুহূর্তেই আবার আপনা থেকেই সাজিয়ে গিয়ে এক লাইন আরবি লেখা হয়ে গেল । এই লেখার মানে হল 'তোমরা সফল হও'।

দশ সেকেন্ড লেখাটা টেবিলের উপর থেকে আবার এলোমেলো হয়ে গিয়ে আবার একটা নতুন লেখায় পরিণত হল। এ লেখার মানে 'সোনার মূল্য'। ভাবছি এই কথাটা দিয়ে প্রেতাত্মা কী বোঝাতে চাইছে। এমন সময় তৃতীয়বার মুক্তোগুলো ম্যাজিকের মতো আরেকটা বাক্যের সৃষ্টি করল- 'জীবনের মূল্য'। আর তারপরেই মুক্তো উধাও !
ক্রোলের দেহ এবার সশব্দে শূন্য থেকে চেয়ারের উপর পড়ল। আমি সন্ডার্সকে লেখাগুলোর মানে বুঝিয়ে দিলাম। সে বলল, 'সফল হওয়া তো বুঝলাম, কিন্তু 'সোনার মূল্য জীবনের মূল্য' আবার কী রকম কথা ? দ্য প্রাইস অফ গোল্ড ইজ দ্য প্রাইস অফ লাইফ ? এর মানে কী ?'
ক্রোল এ প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারল না। সে বলল সে গভীর তন্দ্রার মধ্যে ছিল, এবং সে অবস্থায় কী করেছে সে নিজেই জানে না ।
আমার মতে অবিশ্যি দ্বিতীয় ও তৃতীয় বাক্যটায় বিশেষ আমল দেবার দরকার নেই। সফল হও—এইটুকুই যথেষ্ট।
আমরা প্রেতাত্মা নামানো সেরে যখন ঘর থেকে বেরোচ্ছি তখনও কড়িকাঠের দিকে চেয়ে দেখি বাদুড়টা ঝুলছে। ইনি কি আমাদের গবেষণাগারের চিরস্থায়ী বাসিন্দা হয়ে গেলেন নাকি ?
১লা জুলাই
আজ সকালে আমরা হোটেল ছেড়ে সাভেদ্রা কালে চলে এসেছি। আসার আগে একটা ঘটনা ঘটে গেছে যেটা আমাদের তিনজনকেই বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। এটার জন্য দায়ী প্রধানত হোটেলের কর্তৃপক্ষ, তাই ম্যানেজারমশাইকে আমাদের কথা শুনিয়ে আসতে হয়েছে। ব্যাপারটা খুলে বলি ।
যে কোনও সাধারণ হোটেলেও একটা ঘরের চাবি অন্য ঘরে লাগা উচিত না; কিন্তু এখানে এসে প্রথম দিনেই দেখি যে সম্ভার্সের ঘরের চাবি দিয়ে ক্রোলের ঘরের দরজা দিব্যি খুলে যায়। তা সত্ত্বেও, হোটেলের পরিবেশটা সুন্দর আর নিরিবিলি বলে আমরা সেখানেই থেকে যাই। আজ সকালে ক্রোল আমার ঘরে এসে প্রচণ্ড তম্বি। বলে মাঝরাত্রে নাকি তার ঘরে চোর ঢুকে তার সমস্ত জিনিস তছনছ করেছে। 'কিছু নিয়েছে কি ?' আমি ব্যস্তভাবে জিজ্ঞেস করলাম। 'না, তা নেয়নি' বলল ক্রোল, 'কিন্তু অনায়াসে নিতে পারত। বিশেষত সাভেদ্রার ডায়রিটা যদি আমার সঙ্গে থাকত তা হলে কী হত ভেবে দেখো । এটা বলা হয়নি যে লন্ডনে থাকতেই ক্রোল ডায়রি থেকে সোনা বানানোর পদ্ধতিটা
সাংকেতিক ভাষায় কপি করে নিয়ে মূল ডায়রিটা তার ব্যাঙ্কের জিম্মায় রেখে এসেছে। এই কপি আবার আমাদের তিনজনের মধ্যে ভাগাভাগি করে রাখা হয়েছে। প্রত্যেকের ভাগে পড়েছে তিনটে করে ফুলস্ক্যাপ কাগজ। এরকম না করলে যে সত্যিই বিপদ হতে পারত সেটা বেশ বুঝতে পারছি। সন্ডার্স তো সোজা ম্যানেজারের ঘরে গিয়ে তাকে এই মারে তো সেই মারে। ভদ্রলোক কাঁদো কাঁদো হয়ে বললেন যে গত ছাব্বিশ বছরে অর্থাৎ যেদিন থেকে হোটেল খুলেছে সেদিন থেকে একটিবারও নাকি হোটেলে চোর ঢোকেনি। হোটেলের যে নাইটওয়াচম্যান, সেই পেড্রো লোকটির বয়স ষাটের উপরে। তাকে জেরা করাতে সে বলল যে একজন টুরিস্ট নাকি রাত একটার পরে হোটেলে আসে ঘরের খোঁজ করতে। পেড্রো তাকে বলে ঘর নেই। তখন লোকটি পেড্রোকে একটি সিগারেট অফার করে। ভাল ফরাসি সিগারেট দেখে পেড্রো ধূমপানের লোভ সামলাতে পারে না । এই সিগারেটে টান দেবার সঙ্গে সঙ্গে নাকি তার চোখ ঘুমে জড়িয়ে আসে, সেই ঘুম ভেঙেছে একেবারে সকাল সাড়ে ছটায়। কীরকম দেখতে লোকটা ?' প্রশ্ন করল ক্রোল। 'দাড়ি গোঁফে ঢাকা মুখ, চোখে কালো চশমা, বলল পেড়ো। পেড্রোর বিশ্বাস যে চোর সদর দরজা ব্যবহার করেনি। হোটেলের দক্ষিণ দিকের দেয়ালের পাইপ বেয়ে দোতলার বারান্দায় ওঠা নাকি তেমন কঠিন ব্যাপার নয়; আর বারান্দায় নেমে প্যাসেজ ধরে এগিয়ে গেলেই সিঁড়ি ।
এবার আমি ক্রোলকে জিজ্ঞেস করতে বাধ্য হলাম তার ঘরে এত কাণ্ড হয়ে গেল অথচ তার ঘুম ভাঙল না কেন। তাতে ক্রোল বলল যে সে নাকি গতকাল দুটো ঘুমের বড়ি খেয়েছিল—কাজ শুরু হবার আগে অন্তত একটা রাত ভাল করে ঘুমিয়ে নিতে পারবে বলে । যাই হোক, ক্রোলের যখন টাকাকড়ি বা জিনিসপত্র কিছু মারা যায়নি, এবং আমরা যখন হোটেল ছেড়ে চলেই যাচ্ছি, তখন এই নিয়ে আর মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। ম্যানেজার বললেন, তিনি যথারীতি পুলিশে খবর দেবেন। বিশেষ করে অন্য হোটেলে যদি সম্প্রতি কোনও নতুন টুরিস্ট এসে থাকে, তাদের মধ্যে অনুসন্ধান করে দেখবেন ।
এখানে এসে আমরা তিনজনে দিনের আলোয় কালটা বেশ ভাল করে ঘুরে দেখেছি। শুধু একবার দেখলে বাড়িটার জটিল প্ল্যান মাথায় ঠিক ভাবে ঢোকে না। সত্যি বলতে কী, পাবলো সঙ্গে না থাকলে আমরা অনেক সময় রাস্তা গুলিয়ে ফেলতাম ।
দোতলার পুবদিকের একটা ঘরের দরজায় যে তালা দেওয়া সেটা আগেই শুনেছিলাম ;
আজ সেটা নিজের চোখে দেখলাম। একটা বিশাল তালা দরজায় ঝুলছে। সেটা নেড়েচেড়ে বিশেষ সুবিধা করা গেল না। আমাদের কাছে যে সব চাবি আছে সেগুলো দিয়ে এ তালা খোলার চেষ্টা হাস্যকর। ক্রোল বলল, 'আমরা তো এখানেই থাকছি; এরমধ্যে একদিন হাতুড়ি এনে গায়ের জোর প্রয়োগ করে দেখা যাবে তালা ভাঙে কি না । '
সন্ডার্সকে কাল থেকেই একটু মনমরা বলে মনে হচ্ছে। সেই জিপসি মহিলার ভবিষ্যদ্বাণী, আর কালকের প্রেতাত্মার কথার মধ্যে সে একটা যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছে ।

বলল, 'ম্যাডাম রেনাটা বলেছে আই সি ডেথ, আর কালকে প্ল্যানচেটে কথা বেরোল দ্য প্রাইস অফ গোল্ড ইজ দ্য প্রাইস অফ লাইফ। সোনার লোভে যদি দেখি প্রাণ নিয়ে টানাটানি, তা হলে আমি কিন্তু সরে পড়ব। আর শুধু আমার নিজের প্রাণ নয়, মুস্তাফার প্রাণের মূল্যও আমার মতে সোনার চেয়ে কিছু কম নয়।'
কোল দেখলাম ষোলো আনা আশাবাদী। বলল, 'ওই বেদেনির কথা নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনও দরকার নেই। সোনার সঙ্গে মৃত্যুর কোনও সম্পর্ক থাকতে পারে না। জবীর হায়ানের প্রেতাত্মা যা বলেছে তাতে অ্যালকেমিক সোনা যে একটি অমূল্য ধাতু সেইটাই বোঝায়। '
কাঁটায় কাঁটায় দুপুর বারোটার সময় আমরা চুল্লিতে অগ্নিসংযোগ করে আমাদের কাজ শুরু করে দিলাম। কাজের পন্থায় কোনও জটিলতা নেই—সবই জলের মতো সহজ—কেবল সময় ও ধৈর্যের প্রয়োজন। আজকের দিনটা শুধু গেছে নানারকম গাছগাছড়াকে ভস্মে পরিণত করতে, আর উপাদানগুলোকে (প্রধানত পারা, গন্ধক আর নুন) নিক্তি দিয়ে ওজন করে বিশেষ পরিমাণে বিশেষ বিশেষ পাত্রের মধ্যে রাখতে। বৃষ্টির জলটা ঘরের মাঝখানে ডিম্বাকৃতি চৌবাচ্চাটার মধ্যে রাখা হয়েছে।
এখন রাত দশটা। আমরা তিনজনেই পালা করে ঘুমিয়ে নিয়েছি, কারণ গবেষণাগারে সব সময়ই অন্তত দুজনকে জেগে থাকতে হবে। পাবলো রাত জেগে পাহারা দেবে, তাই সেও দুপুরে ঘণ্টাচারেক ঘুমিয়ে নিয়েছে।
৪ঠা জুলাই
গত তিনদিন উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটেনি তাই আর ডায়রি লিখিনি। আজকের কাজ ঠিকমতো এগিয়ে চলেছে। আজ দুপুরে একটা ঘটনা ঘটেছে যেটা লিখে রাখা দরকার ।
সাড়ে বারোটার সময় পাশের ঘর থেকে সন্ডার্সের অ্যালার্ম ঘড়িতে ঘণ্টার শব্দ শুনে বুঝলাম এবার ওকে আসতে হবে কাজে, আর আমার ঘুমানোর পালা। এদিকে বেশ বুঝতে পারছি আমার ঘুম আসবে না, কারণ আমার স্নায়ু সম্পূর্ণ সজাগ। যাই হোক, রুটিন রক্ষা না করলে পরে গোলমাল হতে পারে বলে সন্ডার্স আসামাত্র আমি ল্যাবরেটরি থেকে পাশের ঘরে চলে গেলাম। ঠিক করলাম এই তিনটে ঘণ্টা একটু এদিক ওদিক ঘুরে দেখব।
আপনা থেকেই মনটা চলে গেল দোতলার সেই বন্ধ দরজাটার দিকে। সারা দুর্গের ছাব্বিশটা ঘরের মধ্যে কেবলমাত্র একটা ঘরের দরজায় কেন তালা থাকবে এটা আমার কাছে একটা বিরাট খটকা ও কৌতূহলের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ।
দোতলায় পৌঁছে অন্ধকার প্যাসেজ দিয়ে দরজাটার দিকে এগিয়ে গেলাম। বিশাল দরজা—দৈর্ঘ্যে অন্তত দশ ফুট আর প্রস্থে সাড়ে চার ফুট তো বটেই। দরজার গায়ে নকশা করা তামার পাত বসানো। লোহার তালাটাও নকশা করা। সঙ্গে টর্চ ছিল। দরজার উপর ফেলে আলোটা এদিক ওদিক ঘোরাতে একটা জায়গায় কাঠে একটা ছোট্ট ফাটল চোখে পড়ল। চশমা খুলে আমার ডান চোখটা প্রায় ফাটলের সঙ্গে লাগিয়ে দিলাম। কিছু যে দেখতে পাব এমন আশা ছিল না। কারণ ঘরের ভিতর নিশ্চয়ই দুর্ভেদ্য অন্ধকার; আর ফুটো দিয়ে যদি টর্চ ফেলতে হয় তা হলে চোখ লাগাবার আর জায়গা থাকে না ।
কিন্তু এই সিকি ইঞ্চি লম্বা সুতোর মতো সরু ফাটল দিয়েও দেখে বুঝলাম যে ঘরের ভিতরটা অন্ধকার নয়। সম্ভবত একটা জানালা বা স্কাইলাইট দিয়ে আলো আসছে, আর স্পষ্ট বুঝতে পারছি যে আলোটার একটা হলদে আভা রয়েছে। হয় ঘরের দেয়ালের রং হলদে, না হয় জানালায় হলদে কাচ রয়েছে।
আমার পক্ষে এর চেয়ে বেশি অনুসন্ধান সম্ভব নয়; সেটা পারে আরেকজন। আমি আর অপেক্ষা না করে সেই আরেকজনের সন্ধানে কাল থেকে বেরিয়ে এলাম ।
পাবলোকে পেতে বেশি সময় লাগল না। কালের বাগানে আগাছা আর ঝোপঝাড়ে ঘেরা একটা ওক গাছের নীচে সে একটা ফাঁদ পাতার বন্দোবস্ত করছে। বলল একটা শজারু দেখেছে, সেটাকে ধরবে। আমি বললাম, 'শজারু পরে হবে, আগে আমার একটা কাজ করে দেবে চলো।'
পাবলোকে ঘরটা দেখিয়ে বললাম, 'সিঁড়ি দিয়ে তেতলায় উঠে গিয়ে দেখতে এই ঘরের উপর কোনও ছাত আছে কি না, এবং সেই ছাতে এই ঘরে আলো প্রবেশ করতে পারে এমন কোনও স্কাইলাইট আছে কি না। '
পাবলো দশ মিনিটের মধ্যে হাঁপাতে হাঁপাতে ঘুরে এল। তার চোখদুটো জ্বলজ্ব করছে। – প্রোফেসর, চলে এসো আমার সঙ্গে !!
তিনতলার ছাত অবধি সারা পথ পাবলো আমার হাত ছাড়েনি। বলতে গেলে একরকম হিড়হিড় করে টেনেই নিয়ে গেল আমাকে। ছাতে পৌঁছে সে অঙ্গুলি নির্দেশ করল । “ওই যে স্কাইলাইট। একবার চোখ লাগিয়ে দেখো ঘরে কী আশ্চর্য জিনিস রয়েছে।
শুধু দেখেই সন্তুষ্ট হইনি; মোটা দড়ি সংগ্রহ করে স্কাইলাইটের কাচ ভেঙে পাবলোকে দড়ির সাহায্যে ঘরের ভিতরে নামিয়ে দিয়েছি। সে যখন আবার দড়ি বেয়ে উপরে উঠে এল, তখন তার সঙ্গে রয়েছে সোনার তৈরি একটা জানোয়ার, একটা পাখি আর একটা ফুল । জানোয়ারটা একটা কাঠবেড়ালি, পাখিটা প্যাঁচা আর ফুলটা গোলাপ। রুমাল দিয়ে মুছতে সোনার যে জৌলুস বেরোল তাতে চোখ ঝলসে যায়। এ সোনা যে শতকরা একশো ভাগ খাঁটি তাতে সন্দেহ নেই ।

আর এতেও সন্দেহ নেই যে এ হল এয়োদশ শতাব্দীর স্প্যানিশ অ্যালকেমিস্ট মানুয়েল সাভেদ্রার তৈরি সোনা। আজ বুঝতে পারছি সাভেদ্রা নিজেকে শিল্পী বলেছিল কেন। সে যে শুধু অ্যালকেমিতেই অদ্বিতীয় ছিল তা নয়, সেই সঙ্গে ছিল অপূর্ব স্বর্ণকার যার হাতের কাজের কাছে ষোড়শ শতাব্দীর ইতালির বিখ্যাত স্বর্ণকার বেনভেনুতো চেল্লিনির কাজও স্নান হয়ে যায় ।
৫ই জুলাই
সোনার জিনিসগুলো ভেবেছিলাম আপাতত সন্ডার্স আর ক্রোলকে দেখাব না। শেষপর্যন্ত সন্ডার্সের কথা ভেবেই সে দিনই মূর্তিগুলো ওদের দেখিয়ে দিলাম। কাজ শুরু করার দুদিন পর থেকেই সন্ডার্স যেন একটু নিরুৎসাহ হয়ে পড়েছিল—তার একটা কারণ অবিশ্যি এই যে অ্যালকেমির পদ্ধতিটাকে একজন বৈজ্ঞানিকের পক্ষে সিরিয়াসলি নেওয়া বেশ কঠিন। এটা আমি বুঝতে পারি। আমি নিজে ভারতীয় বলেই হয়তো ভূতপ্রেত মন্ত্রতন্ত্রের ব্যাপারটাকে সব সময়ে উড়িয়ে দিতে পারি না। আমার নিজের জীবনেই এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যার কোনও বৈজ্ঞানিক কারণ খুঁজে পাওয়া শক্ত। কিন্তু সন্ডার্স হল খাঁটি ইংরেজ সে 'মাম্বোজাম্বো' বা তুকতাকে মোটেই বিশ্বাস করে না ।
আজ অবিশ্যি সন্ডার্সের ভোল পালটে গেছে, আর তার একমাত্র কারণ সাভেদ্রার তৈরি সোনা। জিনিসগুলোকে আমরা গবেষণাগারের তাকে সাজিয়ে রেখেছি। তার ফলে ঘরের শোভা যে কতগুণ বেড়ে গেছে তা বলতে পারি না। অবিশ্যি সেইসঙ্গে চোরের উপদ্রবের কথাটাও ভাবতে হচ্ছে। আমরা তিন জনেই সঙ্গে অস্ত্র এনেছি। সন্ডার্স দূর্ধর্ষ শিকারি, আর
কোলও পিস্তল চালাতে জানে। আমার কোটের পকেটে সব সময়ই থাকে 'অ্যানাইহিলিন
গান'। কাজেই ভয়ের কারণ নেই।
পাবলো রাত্রে পাহারা দিচ্ছে। নিয়মিত। তার ফাঁদে শজারু ধরা পড়েছে। বেজি আর শজারু নিয়ে সে দিব্যি আছে।
মনে হচ্ছে আমাদের কাজ শেষ হতে আর দুদিন লাগবে। আজ সেই চিটচিটে পদার্থটা তৈরি হয়েছে। ভারী অদ্ভুত চেহারা জিনিসটার। একেক দিক থেকে একেক রকম রং মনে হয়, আর পারা থাকার ফলেই বোধ হয় সব রঙের মধ্যেই একটা রুপালি আভাস লক্ষ করা যায়।
৬ই জুলাই
আজ একটা দুশ্চিন্তার কারণ ঘটেছে। মনে হচ্ছে চোর এখনও আমাদের পিছু ছাড়েনি আজ সকালে পাবলো এসে খবর দেওয়াতে বাইরে গিয়ে দেখি বাগানে একটা অচেনা পায়ের ছাপ। ছাপটা নানান জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে। আর তার কিছু আবার আমাদের ল্যাবরেটরির জানালার বেশ কাছে পর্যন্ত চলে এসেছে। অথচ পাবলো কিছুই টের পায়নি। সেটা অবিশ্যি তেমন আশ্চর্যের কিছু নয়, কারণ সদর ফটক ছাড়াও কালের বাগানে ঢোকার অন্য পথ আছে। সাতশো বছরের পুরনো পাঁচিলের অনেক অংশই ভেঙে পড়েছে। সেই সব ভাঙা অংশের একটা দিয়ে বাইরে থেকে লোক এসে ঝোপঝাড়ের পিছনে আত্মগোপন করে নিঃশব্দে ঘোরাফেরা করতে পারে বই কী। পাবলোকে এবার থেকে আরও সজাগ থাকতে হবে।
এখন সকাল ন'টা। সবেমাত্র কফি খেয়ে ডায়রি লিখতে শুরু করেছি। এবার ক্রোলের ঘুমানোর পালা, কিন্তু আজ আমাদের তিনজনের একজনের পক্ষেও ঘুমোনো সম্ভব হবে কি না জানি না। আজ বৃষ্টির জলে সেই চিটচিটে পদার্থটাকে মিশিয়ে তাকে পিউরিফাই বা বিশুদ্ধ করতে হবে টানা সাত ঘণ্টা ধরে। তারপর দুর্গা বলে আমাদের সঙ্গে আনা তামা পিতল টিন লোহা ইত্যাদি নানারকম ধাতুর তৈরি ঘটি বাটির যে কোনও একটাকে ওই তরল পদার্থের মধ্যে চিমটে দিয়ে চুবিয়ে দেখতে হবে আমাদের অ্যালকেমি সফল হল কি না। না হলে তার পরের রাস্তাটা যে কী হতে পারে তা আমাদের কারুরই জানা নেই। সম্ভবত সুবোধ বালকের মতো ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যেতে হবে। কারণ জিজ্ঞেস করলে বলতে পারব না, কিন্তু আমার মন বলছে আমাদের গবেষণা সফলতার দিকে চলেছে।
- আকাশে মেঘের লেশমাত্র নেই। সূর্যদেব হাসিমুখে যেন আমাদের বাহবা দেবার জন্য তৈরি হয়ে আছেন ।
৭ই জুলাই

চরম হতাশা। অ্যালকেমিক প্রক্রিয়ায় অসীম ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের সাহায্যে তৈরি তরল পদার্থটির সাহায্যে সোনা তৈরির কোনও সম্ভাবনা নেই। আমাদের কাছে ধাতুর তৈরি যা কিছু ছিল তার প্রত্যেকটি চিমটে দিয়ে এই লিকুইডে ডুবিয়ে দেখেছি— কোনওটারই কোনও পরিবর্তন হয়নি। অথচ এটার যে একটা বিশেষ গুণ আছে সেটা বুঝতে পারছি ; জিনিসটা ঠাণ্ডা হবার কথা, কিন্তু হাত কাছে নিলেই মনে হচ্ছে অজস্র ছুঁচের মতো অদৃশ্য কী সব যেন হাতে এসে ফুটছে। অবিশ্যি সাভেদ্রা তার ডায়রিতে বলেই গেছে যে এই লিকুইডে হাত দেওয়া চলবে না। সন্ডার্স মুস্তাফাকে নিয়ে গবেষণাগার থেকে বেরিয়ে বাগানে গিয়ে বসে আছে । ক্রোল একটা টুলে বসে বোকার মতো ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে ডিম্বাকৃতি চৌবাচ্চাটার দিকে চেয়ে আছে। মাথার উপর সেই বাদুড়টা ঝুলছে এখনও। সেই প্রথম দিন ঢোকার পরে এটা ঘর থেকে আর বেরোয়নি। ক্রোলের যে প্রায় উন্মাদ অবস্থা সেটা বুঝলাম, হঠাৎ তাকে বাদুড়টার উপর খেপে উঠতে দেখলাম। জার্মান ভাষায় একটা বিশ্রী গালাগাল সিলিং-এর দিকে ছুড়ে দিয়ে সে পকেট থেকে রিভলভার বার করে এক গুলিতে বাদুড়টাকে মেরে ফেলল। আশ্চর্য বাদুড়। —মরে গিয়েও সেটা সেই একইভাবে সিলিং থেকে ঝুলতে লাগল—কেবল তার গা থেকে টপটপ করে রক্ত মেঝের উপর পড়তে লাগল । রিভলভারের আওয়াজ শুনে সন্ডার্স হস্তদন্ত ল্যাবরেটরিতে ছুটে এসে ব্যাপারটা বুঝে ক্রোলের উপর চোটপাট শুরু করে দিল। আমি বেগতিক দেখে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম। অ্যাদ্দিনের পরিশ্রম আর রাত্রিজাগরণের পর সাফল্যের অভাবে বেশ ক্লান্তি অনুভব করছি। সচরাচর আমার অভিযানগুলো ব্যর্থ হয় না। কিন্তু এবারে বোধ হয় তাই হতে চলেছে।
৭ই জুলাই, রাত এগারোটা
আমার জীবনের সবচেয়ে লোমহর্ষক, সবচেয়ে স্মরণীয় দিন ।
ক্রোল-সন্ডার্সের ঝগড়ার শুরু দেখে ল্যাবরেটরি থেকে বেরিয়ে আসার দশ মিনিটের মধ্যেই শ্বাসরোধকারী ঘটনাগুলো ঘটে গেল। কীভাবে হল সেটাই গুছিয়ে বলার চেষ্টা করছি।
ল্যাবরেটরি থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরে না গিয়ে বাগানে গেলাম। দুমিনিট আগে রোদ থাকা অবস্থাতেই একপশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। বাইরে এসে পূব দিকে চেয়ে দেখি স্পেনের উচ্চতম পাহাড়ের চুড়ো মূলহাসেন দেখা যাচ্ছে, আর চুড়োর উপরে আকাশ জুড়ে এক আশ্চর্য সুন্দর জোড়া রামধনু। সেই রামধনু দেখতে দেখতে একটা অস্ফুট আর্তনাদের শব্দ কানে গেল ।
শব্দ লক্ষ্য করে দৌড়ে এগিয়ে গিয়ে দেখি পাবলো ঘাসের উপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। তার চোয়ালে কালসিটে, তার একটা দাঁত ভেঙে মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে।
তার পরমুহূর্তেই ল্যাবরেটরির ভিতর থেকে নানারকম উদ্বেগজনক শব্দ । ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে গিয়ে দরজার মুখেই থ হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। রিউফাস ব্ল্যাকমোর মুখে এক পৈশাচিক হাসি ও হাতে একটা . ৩৮ কোল্ট রিভলভার নিয়ে সন্ডার্স ও ক্রোলের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখেই বলল, 'চৌকাঠ পেরোলেই মৃত্যু অনিবার্য ।
এই বলে প্রথমেই সে টেবিলের উপর রাখা সোনা তৈরির ফরমুলাটা—অর্থাৎ তিন-তিরিক্ষে নখানা ফুলস্ক্যাপ কাগজ — হাত করল। তারপর ডান দিকে দেয়ালের গায়ে তাকে রাখা সোনার জিনিসগুলোর দিকে এগোতে লাগল ।
তার পরমুহূর্তেই যে জিনিসটা ঘটল সেটা ভাবতে আতঙ্কে ও বিস্ময়ে এখনও আমার রোমাঞ্চ হচ্ছে। সন্ডার্সের কোল থেকে হঠাৎ একটা লোমশ পিও শূন্য দিয়ে তিরবেগে গিয়ে ব্ল্যাকমোরের
বুকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হিংস্র আঁচড়ে তার মুখ ক্ষতবিক্ষত করে দিল। ব্ল্যাকমোরের হাতের রিভলভার ছুটে গেল, কিন্তু গুলি আমাদের গায়ে না লেগে লাগল একটা কাচের রিটর্টে।
আর সেইসঙ্গে বেসামাল হয়ে ব্ল্যাকমোর হুমড়ি খেয়ে পড়ল ঘরের মাঝখানে চৌবাচ্চাটার ভিতর। মুস্তাফা তার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করে আবার তার প্রভুর কাছে ফিরে গেছে। ব্লাকমোরের শরীরটা তরল পদার্থের সংস্পর্শে এসেই বোয়াল মাছের ঘাই মারার মতো করে একবার লাফিয়ে উঠে, তৎক্ষণাৎ অসাড় হয়ে সেই জলেই পড়ে রইল । আমরা তিনজনে
বিস্ফারিত চোখে দেখলাম যে তার শরীরের যে অংশগুলো অনাবৃত – অর্থাৎ গলা পর্যন্ত মুখ আর কবজি পর্যন্ত হাত—সেগুলো দেখতে দেখতে চোখ ঝলসানো সোনায় রূপান্তরিত হচ্ছে !
সন্ডার্স অস্ফুটস্বরে বলল, 'দ্য প্রাইস অফ গোল্ড... ইজ দ্য প্রাইস অফ লাইফ. ...' অর্থাৎ সাভেদ্রার অ্যালকেমিতে সোনা করতে হলে ধাতুর বদলে জীবন্ত প্রাণীর প্রয়োজন—যেমন মানুষ, ফুল, জন্তু, পাখি ইত্যাদি ।
এই ব্ল্যাকমোর, ওই প্যাঁচা, ওই কাঠবেড়ালি, ওই গোলাপ—সবই এককালে ছিল নশ্বর প্রাকৃতিক জীব ।
এখন আর তাদের বিনাশ নেই।
 | 44873
38
Articles
শঙ্কু সমগ্র
0.0
একটি প্রফেসর এর জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু মহাজাগতিক ঘটনার সম্মিলিত রূপ
1

ব্যোমযাত্রীর ডায়রি

30 October 2023
1
0
0

প্রোফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কুর ডায়রিটা আমি পাই তারক চাটুজ্যের কাছ থেকে । একদিন দুপুরের দিকে আপিসে বসে পুজো সংখ্যার জন্য একটা লেখার প্রুফ দেখছি, এমন সময় তারকবাবু এসে একটা লাল খাতা আমার সামনে ফেলে দিয়ে

2

প্রোফেসর শঙ্কু ও ঈজিপ্সীয় আতঙ্ক

30 October 2023
1
0
0

পোর্ট সেইডের ইম্পিরিয়াল হোটেলের ৫ নং ঘরে বসে আমার ডায়রি লিখছি ! এখন রাত সাড়ে এগারোটা। এখানে বোধ হয় অনেক রাত অবধি লোকজন জেগে থাকে, রাস্তায় চলাফেরা করে, হইহল্লা করে। আমার পূর্বদিকের খোলা জানালাটা দ

3

প্রোফেসর শঙ্কু ও হাড়

30 October 2023
1
0
0

(বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক প্রোফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু বেশ কয়েক বছর যাবৎ নিখোঁজ । তাঁর একটি ডায়রি কিছুদিন আগে আকস্মিকভাবে আমাদের হাতে আসে। 'ব্যোমযাত্রীর ডায়রি' নাম দিয়ে আমরা সন্দেশে ছাপিয়েছি। ইতিমধ্যে আম

4

প্রোফেসর শঙ্কু ও ম্যাকাও

30 October 2023
1
0
0

৭ই জুন বেশ কিছুদিন থেকেই আমার মন মেজাজ ভাল যাচ্ছিল না। আজ সকালে একটা আশ্চর্য ঘটনার ফলে আবার বেশ উৎফুল্ল বোধ করছি। আগে মেজাজ খারাপ হবার কারণটা বলি। প্রোফেসর গজানন তরফদার বলে এক বৈজ্ঞানিক কিছুদিন আগে

5

প্রোফেসর শঙ্কু ও আশ্চর্য পুতুল

30 October 2023
2
0
0

আজ আমার জীবনে একটা স্মরণীয় দিন! সুইডিস অ্যাকাডেমি অফ সায়ান্স আজ আমাকে ডক্টর উপাধি দান করে আমার গত পাঁচ বছরের পরিশ্রম সার্থক করল। এক ফলের বীজের সঙ্গে আর এক ফলের বীজ মিশিয়ে এমন আশ্চর্য সুন্দর, সুগন্ধ

6

প্রোফেসর শঙ্কু ও গোলক-রহস্য

31 October 2023
1
0
0

৭ই এপ্রিলঅবিনাশবাবু আজ সকালে এসেছিলেন। আমাকে বৈঠকখানায় খবরের কাগজ হাতে বসে থাকতে দেখে বললেন, 'ব্যাপার কী ? শরীর খারাপ নাকি ? সকালবেলা এইভাবে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে দেখেছি বলে তো মনে পড়ে না।'আমি বল

7

প্রোফেসর শঙ্কু ও চী-চিং:

31 October 2023
1
0
0

১৮ই অক্টোবরআজ সকালে সবে ঘুম থেকে উঠে মুখটুখ ধুয়ে ল্যাবরেটরিতে যাব, এমন সময় আমার চাকর প্রহ্লাদ এসে বলল, 'বৈঠকখানায় একটি বাবু দেখা করতে এয়েছেন। আমি বললাম, 'নাম জিজ্ঞেস করেছিস ?"প্রহ্লাদ বলল, 'আজ্ঞে

8

প্রোফেসর শঙ্কু ও খোকা

31 October 2023
1
0
0

৭ই সেপ্টেম্বরআজ এক মজার ব্যাপার হল। আমি কাল সকালে আমার ল্যাবরেটরিতে কাজ করছি, এমন সময় চাকর প্রহ্লাদ এসে খবর দিল যে একটি লোক আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। কে লোক জিজ্ঞেস করতে প্রহ্লাদ মাথা চুলকে বলল 'আজ

9

প্রোফেসর শঙ্কু ও ভূত

31 October 2023
1
0
0

১০ই এপ্রিলভূতপ্রেত প্ল্যানচেট টেলিপ্যাথি ক্লেয়ারভয়েন্স—এ সবই যে একদিন না একদিন বিজ্ঞানের আওতায় এসে পড়বে, এ বিশ্বাস আমার অনেকদিন থেকেই আছে। বহুকাল ধরে বহু বিশ্বস্ত লোকের ব্যক্তিগত ভৌতিক অভিজ্ঞতার ক

10

প্রোফেসর শঙ্কু ও রোবু

2 November 2023
1
0
0

১৬ই এপ্রিল আজ জার্মানি থেকে আমার চিঠির উত্তরে বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক প্রোফেসর পমারের চিঠি পেয়েছি। পমার লিখছেন— প্রিয় প্রোফেসর শঙ্কু, তোমার তৈরি রোবো (Robot) বা যান্ত্রিক মানুষ সম্বন্ধে তুমি যা লিখেছ,

11

প্রোফেসর শঙ্কু ও রক্তমৎস্য রহস্য

2 November 2023
1
0
0

১৩ই জানুয়ারি গত ক'দিনে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেনি, তাই আর ডায়রি লিখিনি। আজ একটা স্মরণীয় দিন, কারণ আজ আমার লিঙ্গুয়াগ্রাফ যন্ত্রটা তৈরি করা শেষ হয়েছে। এ যন্ত্রে যে কোনও ভাষার কথা রেকর্ড হয়ে গিয়ে তিন

12

প্রোফেসর শঙ্কু ও কোচাবাম্বার গুহা

2 November 2023
1
0
0

৭ই আগস্ট আজ আমার পুরনো বন্ধু হনলুলুর প্রোফেসর ডাম্বার্টনের একটা চিঠি পেয়েছি। তিনি লিখছেন— প্রিয় শ্যাঙ্কস, খামের উপর ডাকটিকিট দেখেই বুঝতে পারবে যে বোলিভিয়া থেকে লিখছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকেও যে

13

প্রোফেসর শঙ্কু ও গোরিলা

2 November 2023
1
0
0

১২ই অক্টোবর আজ সকালে উশ্রীর ধার থেকে বেড়িয়ে ফিরছি, এমন সময় পথে আমার প্রতিবেশী অবিনাশবাবুর সঙ্গে দেখা। ভদ্রলোকের হাতে বাজারের থলি। বললেন, 'আপনাকে সবাই একঘরে করবে, জানেন তো। আপনি যে একটি আস্ত শকুনির

14

প্রোফেসর শঙ্কু ও বাগ্দাদের বাক্স

2 November 2023
1
0
0

১৯শে নভেম্বর গোল্ডস্টাইন এইমাত্র পোস্টআপিসে গেল কী একটা জরুরি চিঠি ডাকে দিতে। এই ফাঁকে ডায়রিটা লিখে রাখি। ও থাকলেই এত বকবক করে যে তখন ওর কথা শোনা ছাড়া আর কোনও কাজ করা যায় না। অবিশ্যি প্রোফেসর পেত্

15

স্বপ্নদ্বীপ

2 November 2023
1
0
0

২২শে মার্চ অনেকে বলেন যে, স্বপ্নে নাকি আমরা সাদা আর কালো ছাড়া অন্য কোনও রং দেখি না। আমার বিশ্বাস আসল ব্যাপারটা এই যে, বেশিরভাগ সময় স্বপ্নের ঘটনাটাই কেবল আমাদের মনে থাকে; রং দেখেছি কি না দেখেছি, সেট

16

আশ্চর্য প্রাণী

3 November 2023
1
0
0

১০ই মার্চ গবেষণা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। আমার জীবনে এর আগে এ রকম কখনও হয়নি। একমাত্র সান্ত্বনা যে এটা আমার একার গবেষণা নয়, এটার সঙ্গে আরও একজন জড়িত আছেন । হামবোল্টও বেশ মুষড়ে পড়েছে। তবে এত সহজে নিরুদ্যম

17

মরুরহস্য

3 November 2023
2
0
0

১০ই জানুয়ারি নতুন বছরের প্রথম মাসেই একটা দুঃসংবাদ। ডিমেট্রিয়াস উধাও! প্রোফেসর হেক্টর ডিমেট্রিয়াস, বিখ্যাত জীবতত্ত্ববিদ। ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত ক্রীট দ্বীপের রাজধানী ইরাক্লিয়ন শহরের অধিবাসী ছিলেন ডিম

18

কভার্স

3 November 2023
1
0
0

১৫ই আগস্ট পাখি সম্পর্কে কৌতূহলটা আমার অনেক দিনের। ছেলেবেলায় আমাদের বাড়িতে একটা পোষা ময়না ছিল, সেটাকে আমি একশোর উপর বাংলা শব্দ পরিষ্কারভাবে উচ্চারণ করতে শিখিয়েছিলাম। আমার ধারণা ছিল, পাখি কথা বললেও

19

একশৃঙ্গ অভিযান

4 November 2023
3
0
0

১লা জুলাই আশ্চর্য খবর। তিব্বত পর্যটক চার্লস উইলার্ডের একটা ডায়রি পাওয়া গেছে। মাত্র এক বছর আগে এই ইংরাজ পর্যটক তিব্বত থেকে ফেরার পথে সেখানকার কোনও অঞ্চলে যাম্‌পা শ্রেণীর এক দস্যুদলের হাতে পড়ে। দস্য

20

ডক্টর শেরিং-এর স্মরণশক্তি

4 November 2023
1
0
0

২রা জানুয়ারি আজ সকালটা বড় সুন্দর। চারিদিকে ঝলমলে রোদ, নীল আকাশে সাদা সাদা হৃষ্টপুষ্ট মেঘ, দেখে মনে হয় যেন ভুল করে শরৎ এসে পড়েছে। সদ্য পাড়া মুরগির ডিম হাতে নিলে যেমন মনটা একটা নির্মল অবাক আনন্দে

21

হিপনোজেন

5 November 2023
1
0
0

৭ই মে আমার এই ছেষট্টি বছরের জীবনে পৃথিবীর অনেক জায়গা থেকে অনেকবার অনেক রকম নেমন্তন্ন পেয়েছি; কিন্তু এবারেরটা একেবারে অভিনব। নরওয়ের এক নাম-না-জানা গণ্ডগ্রাম থেকে এক এক্সপ্রেস টেলিগ্রাম; টেলিগ্র

22

শঙ্কুর শনির দশা

5 November 2023
2
0
0

৭ই জুন আমাকে দেশ বিদেশে অনেকে অনেক সময় জিজ্ঞাসা করেছে আমি জ্যোতিষে বিশ্বাস করি। কি না। প্রতিবারই আমি প্রশ্নটার একই উত্তর দিয়েছি—আমি এখনও এমন কোনও জ্যোতিষীর সাক্ষাৎ পাইনি যাঁর কথায় বা কাজে আমার জ্য

23

শঙ্কুর সুবর্ণ সুযোগ

6 November 2023
2
0
0

২৪শে জুনইংলন্ডের সল্সবেরি প্লেনে আজ থেকে চার হাজার বছর আগে তৈরি বিখ্যাত স্টোনহেঞ্জের ধারে বসে আমার ডায়রি লিখছি। আজ মিড-সামার ডে, অর্থাৎ কর্কটক্রান্তি । যে সময় স্টোনহেঞ্জ তৈরি হয়, তখন এ দেশে প্রস্তর

24

মানরো দ্বীপের রহস্য

6 November 2023
1
0
0

মানরো দ্বীপ, ১২ই মার্চএই দ্বীপে পৌঁছানোর আগে গত তিন সপ্তাহের ঘটনা সবই আমার ডায়রিতে বিক্ষিপ্তভাবে লেখা আছে। হাতে যখন সময় পেয়েছি তখন সেগুলোকেই একটু গুছিয়ে লিখে রাখছি। আমি যে আবার এক অভিযানের দলে ভিড

25

কম্পু

8 November 2023
0
0
0

১২ই মার্চ, ওসাকা আজ সারা পৃথিবী থেকে আসা তিনশোর উপর বৈজ্ঞানিক ও শ'খানেক সাংবাদিকের সামনে কম্পুর ডিমনস্ট্রেশন হয়ে গেল। ওসাকার নামুরা টেকনলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের হলঘরের একপ্রান্তে মঞ্চের উপর একটা তিন ফু

26

মহাকাশের দূত

8 November 2023
0
0
0

২২শে অক্টোবরপ্রিয় শঙ্কু,ব্রেন্টউড, ১৫ই অক্টোবরমনে হচ্ছে আমার বারো বছরের পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের ফল পেতে চলেছি। খবরটা এখনও প্রচার করার সময় আসেনি, শুধু তোমাকেই জানাচ্ছি।কাল রাত একটা সাঁইত্রিশে এপসাইলন ই

27

নকুড়বাবু ও এল ডোরাডো

9 November 2023
0
0
0

১৩ই জুনআজ সকালের ঘটনাটা আমার কাজের রুটিন একেবারে তছনছ করে দিল। কাজটা অবিশ্যি আর কিছুই না : আমার যাবতীয় আবিষ্কার বা ইনভেশনগুলো সম্বন্ধে একটা প্রবন্ধ লিখছিলাম সুইডেনের বিখ্যাত 'কসমস' পত্রিকার জন্য। এ ক

28

শঙ্কুর কঙ্গো অভিযান

9 November 2023
0
0
0

প্রিয় শঙ্কু,আমার দলের একটি লোকের কালাজ্বর হয়েছে তাই তাকে নাইরোবি পাঠিয়ে দিচ্ছি। তার হাতেই চিঠি যাচ্ছে, সে ডাকে ফেলে দেবার ব্যবস্থা করবে। এই চিঠি কেন লিখছি সেটা পড়েই বুঝতে পারবে। খবরটা তোমাকে না দি

29

প্রোফেসর শঙ্কু ও ইউ.এফ.ও.

11 November 2023
0
0
0

১২ই সেপ্টেম্বরইউ. এফ.ও. অর্থাৎ আনআইডেনটিফাইড ফ্লাইং অবজেক্ট অর্থাৎ অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তু। এই ইউ.এফ.ও. নিয়ে যে কী মাতামাতি চলছে গত বিশ-পঁচিশ বছর ধরে। সারা বিশ্বে বহু সমিতি গড়ে উঠেছে, যাদের কাজই হল এই ই

30

আশ্চর্জন্তু

11 November 2023
0
0
0

আগস্ট ৭আজ এক আশ্চর্য দিন।সকালে প্রহ্লাদ যখন বাজার থেকে ফিরল, তখন দেখি ওর হাতে একটার জায়গায় দুটো থলি। জিজ্ঞেস করাতে বলল, 'দাঁড়ান বাবু, আগে বাজারের থলিটা রেখে আসি। আপনার জন্য একটা জিনিস আছে, দেখে চমক

31

প্রোফেসর রন্ডির টাইম মেশিন

11 November 2023
0
0
0

নভেম্বর ৭পৃথিবীর তিনটি বিভিন্ন অংশে তিনজন বৈজ্ঞানিক একই সময় একই যন্ত্র নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে, এরকম সচরাচর ঘটে না। কিন্তু সম্প্রতি এটাই ঘটেছে। এই তিনজনের মধ্যে একজন অবিশ্যি আমি, আর যন্ত্রটা হল টাইম মে

32

শঙ্কু ও আদিম মানুষ

12 November 2023
0
0
0

এপ্রিল ৭ নৃতত্ত্ববিদ ডা. ক্লাইনের আশ্চর্য কীর্তি সম্বন্ধে কাগজে আগেই বেরিয়েছে। ইনি দক্ষিণ আমেরিকায় আমাজনের জঙ্গলে ভ্রমণকালে এক উপজাতির সন্ধান পান, যারা নাকি ত্রিশ লক্ষ বছর আগে মানুষ যে অবস্থায় ছিল

33

নেফ্রুদেৎ-এর সমাধি

12 November 2023
0
0
0

ডিসেম্বর ৭ এইমাত্র আমার জার্মান বন্ধু ক্রোলের কাছ থেকে একটা টেলিগ্রাম পেলাম। কোল লিখছে— সব কাজ ফেলে কায়রোতে চলে এসো। তুতানখামেনের সমাধির মতো আরেকটি সমাধি আবিষ্কৃত হতে চলেছে। সাকারার দু মাইল দক্ষিণে

34

শঙ্কুর পরলোকচর্চা

12 November 2023
0
0
0

সেপ্টেম্বর ১২ আজ বড় আনন্দের দিন। দেড় বছর অক্লান্ত পরিশ্রমের পর আজ আমাদের যন্ত্র তৈরির কাজ শেষ হল। 'আমাদের' বলছি এই কারণে যে, যদিও যন্ত্রের পরিকল্পনাটা আমার, এটা তৈরি করা আমার একার পক্ষে সম্ভব ছিল ন

35

শঙ্কু ও ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন

12 November 2023
0
0
0

৭ মে কাল জার্মানি থেকে আমার ইংরেজ বন্ধু জেরেমি সন্ডার্সের একটা চিঠি পেয়েছি। তাতে একটা আশ্চর্য খবর রয়েছে। চিঠিটা এখানে তুলে দিচ্ছি। প্রিয় শঙ্কু, জার্মানিতে আউগ্‌গ্সবুর্গে এসেছি ক্রোলের সঙ্গে ছুটি

36

ডাঃ দানিয়েলির আবিষ্কার

12 November 2023
0
0
0

১৫ এপ্রিল, রোম কাল এক আশ্চর্য ঘটনা। এখানে আমি এসেছি একটা বিজ্ঞানী সম্মেলনে। কাল স্থানীয় বায়োকেমিস্ট ডাঃ দানিয়েলির বক্তৃতা ছিল। তিনি তাঁর ভাষণে সকলকে চমৎকৃত করে দিয়েছেন। অবিশ্যি আমি যে অন্যদের মতো

37

ডন ক্রিস্টোবাল্ডির ভবিষ্যদ্বাণী

13 November 2023
0
0
0

সেপ্টেম্বর ৬ আজ আমার বন্ধু জেরেমি সন্ডার্সের কাছ থেকে একটা আশ্চর্য চিঠি পেয়েছি। সেটা হল এই— প্রিয় শঙ্কু, তোমাকে একটা অদ্ভুত খবর দেবার জন্য এই চিঠির অবতারণা। আমাদের দেশের কাগজে খবরটা বেরিয়ে

38

স্বর্ণপর্ণী

13 November 2023
0
0
0

১৬ জুনআজ আমার জন্মদিন । হাতে বিশেষ কাজ নেই, সকাল থেকে টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে, আমি বৈঠকখানায় আমার প্রিয় আরামকেদারাটায় বসে কড়িকাঠের দিকে চেয়ে আকাশপাতাল ভাবছি। বৃদ্ধ নিউটন আমার পায়ের পাশে কুণ্ডলী

---