shabd-logo

প্রোফেসর শঙ্কু ও গোলক-রহস্য

31 October 2023

153 Viewed 153




৭ই এপ্রিল
অবিনাশবাবু আজ সকালে এসেছিলেন। আমাকে বৈঠকখানায় খবরের কাগজ হাতে বসে থাকতে দেখে বললেন, 'ব্যাপার কী ? শরীর খারাপ নাকি ? সকালবেলা এইভাবে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে দেখেছি বলে তো মনে পড়ে না।'
আমি বললুম, 'এর আগে কখনও এইভাবে বসে থাকিনি তাই দেখেননি।' 'কিন্তু কারণটা কী ?
'একটা নতুন যন্ত্র নিয়ে প্রায় দেড় বছর একটানা কাজ করে কাল সকালে সেটার কাজ শেষ হয়েছে। অর্থাৎ এক্সপেরিমেন্ট সফল হয়েছে। তাই ঠিক করেছি সাত দিন বিশ্রাম নেব।'
অবিনাশবাবু একটা বিরক্তিসূচক শব্দ করে মাথা নেড়ে বললেন, 'আপনাকে পই পই করে বলছি এবার রিটায়ার করুন। আরে মশাই, বিজ্ঞানেরও তো একটা শেষ আছে নাকি মানুষ অনাদি অনন্তকাল ধরে একটার পর একটা নতুন গবেষণা চালিয়েই যাবে ?'
আমি একটু হেসে বললাম, 'আমার তো তাই বিশ্বাস। মানুষের জিজ্ঞাসার শেষ নেই। ' "মানুষের না থাকলেও, আপনার জিজ্ঞাসার অন্তত সাময়িক বিরতি আছে দেখে খুশি হলুম। চলুন, বেড়িয়ে আসি। '
কাজের সময় অবিনাশবাবু এসে পড়লে রীতিমতো ব্যাঘাত হয়। অযথা আজেবাজে প্রশ্ন করেন, টিটকিরি দেন, আর আমার সূক্ষ্ম গভীর তাৎপর্যপূর্ণ কাজগুলো পণ্ড করার নানান ছেলেমানুষি চেষ্টা করেন। এতে যে উনি কী আনন্দ পান তা জানি না। তবে ভদ্রলোক আমার প্রায় পঁচিশ বছরের প্রতিবেশী, তাই সবই সহ্য করি।
আজ যখন হাত খালি, তখন কিন্তু অবিনাশবাবুর সঙ্গটা খারাপ নাও লাগতে পারে। হাজার হোক, রসিক লোক। আর আমাকে ঠাট্টা করলেও আমার অমঙ্গল কামনা করেন এমন কখনই মনে হয়নি। তাই অবিনাশবাবুর প্রস্তাবে রাজি হয়ে তাঁর সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম ।
গিরিডিতে বেড়াবার কথা বললে উশ্রীর ধারটাই মনে হয়, কিন্তু অবিনাশবাবু দেখি চলেছেন উলটো দিকে অর্থাৎ তাঁর বাড়ির দিকে। ব্যাপার কী ? কী মতলব ভদ্রলোকের ? কিছুদূর যাবার পরে অবিনাশবাবু নিজেই কারণটা বললেন— 'আজ একটা খেলনা
পেয়েছি। সেটা আপনাকে দেখাব। 'চলুন না। দেখলে আপনারও লোভ লাগবে--কিন্তু আপনাকে দেব না সেটি।'
'খেলনা ?'
মনে মনে বললাম—'খেলনার বয়স আপনার হয়তো থাকতে পারে—কিন্তু আমার কি
আর আছে ?
অবিনাশবাবু তাঁর বাড়িতে পৌঁছে সোজা নিয়ে গেলেন তাঁর বৈঠকখানায়। সেখানে একটা কাচের আলমারির সামনে নিয়ে গিয়ে তার দরজাটা খুলে অঙ্গুলি নির্দেশ করে বললেন, "দেখুন ।
আলমারির উপরের তাকে দেখি অনেক রকম গ্রাম্য খেলনা সাজানো রয়েছে— কেষ্টনগরের মাটির পুতুল, পোড়ামাটি ও চিনেমাটির জন্তু জানোয়ার, শোলার গাছ ও পাখি, কাশীর বাঘ ও আরও কত কী। আর এসবের মাঝখানে রয়েছে একটি মসৃণ বল । অবিনাশবাবুর আঙুল সেই বলের দিকেই পয়েন্ট করেছে।
“কেমন লাগছে আমার বলটা ?'
বলের মতোই মসৃণ গোল জিনিসটা — তবে সেটা যে কীসের তৈরি তা বোঝা মুশকিল আর তার রংটা বর্ণনা করা বেশ কঠিন। কিছুটা মেটে, কিছুটা সবুজ, কিছুটা আবার হলদে আর লাল মেশানো একটা পাঁচমিশালি রং বলা যেতে পারে। বেশ মজা লাগল দেখতে বলটাকে।
আমার ইন্টারেস্ট দেখে অবিনাশবাবুর যেন বেশ খুশি খুশি ভাব হয়েছে বলে মনে হল । জিজ্ঞেস করলাম, 'এ কোথায় তৈরি ? কোত্থেকে পেলেন ?”
অবিনাশবাবু বললেন, 'প্রথমটির উত্তর জানা নেই। দ্বিতীয়টি খুব সহজ। কাল উশ্রীর ধারে বেড়াতে গিয়ে দেখি বালির ওপর একটা জলঢোঁড়া সাপ মরে পড়ে আছে। সাপটাকে দেখছিলুম, হাতখানেক দূরেই যে বলটা পড়ে আছে সেটা প্রথমে লক্ষ করিনি। যখন করলুম, তখন এত ভাল লাগল যে তুলে নিয়ে এলুম। একবার হাতে নিয়ে দেখবেন ? ওজন আছে বেশ।” অবিনাশবাবু খুব সাবধানে তাক থেকে বলটা নামিয়ে আমার হাতে দিলেন। সত্যিই বেশ ভারী। আর রীতিমতো ঠাণ্ডা। সাইজে একটা টেনিস বলের দ্বিগুণ। কিন্তু হাতে নিয়েও বুঝতে পারলাম না সেটা কীসের তৈরি। মাটির ভাগ হয়তো কিছুটা আছে কিন্তু তার সঙ্গে বোধ হয় আরও কিছু মেশানো আছে।
কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে বলটা ফেরত দিয়ে বললুম, 'বেশ ইন্টারেস্টিং জিনিস।' অবিনাশবাবু আলমারির ভেতর বলটা রাখতে রাখতে বললেন, 'হুঁহুঁ। তা হলে স্বীকার করুন যে আপনি ছাড়া অন্য লোকের কাছেও আশ্চর্য জিনিস থাকতে পারে। যাকগে, এবার চলুন সত্যিই একটু বেড়িয়ে আসা যাক। বেশ মেঘলা মেঘলা দিনটা করছে।
ঘণ্টা দু-এক পরে বাড়িতে ফিরে এসে আর একবার আমার নতুন যন্ত্রটাকে দেখে এলাম । এ যন্ত্র সম্বন্ধে বাইরে জানাজানি হলে আবার নতুন করে যে সম্মান পাব সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ।
যন্ত্রটার নাম দিয়েছি—মাইক্রোসোনোগ্রাফ। প্রকৃতির সব সূক্ষাতিসূক্ষ্ম শব্দ, যা মানুষের কানে আজ অবধি কখনও শোনা যায়নি এমনকী যার অনেক শব্দের অস্তিত্বই মানুষে জানত না—সেই সব শব্দ এই যন্ত্রের সাহায্যে পরিষ্কার শোনা যায়।

কাল পিঁপড়ের ডাক শুনেছি এই যন্ত্রে। সে এক আশ্চর্য অভিজ্ঞতা। কতকটা ঝিঁঝির ডাকের মতন, তবে ওরকম একটানা একঘেয়ে নয়। অদ্ভুত বিচিত্র সুরের ওঠানামা, স্বরের তারতম্য—সব কিছুই আছে ওই পিঁপড়ের ডাকে। আমার তো মনে হয় এই যন্ত্রের সাহায্যে ভবিষ্যতে আমি পিঁপড়ের ভাষাও বুঝতে পারব। আর শুধু পিঁপড়ে কেন ? এতে প্রকৃতির এমন কোনও সূক্ষ্ম শব্দ নেই যা শোনা যায় না। একটা knob আছে, সেইটে ঘুরিয়ে এর ওয়েভলেংথ পরিবর্তন করা যায়। এবং এই ঘোরানোর ফলেই বিভিন্ন স্তরের, বিভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত আওয়াজগুলো ধরা পড়তে থাকে।
আমি বাড়ি ফিরে এসে একটা বিশেষ ওয়েভলেংথে knob-টা সেট করে, আমার বারান্দার টবের গোলাপগাছের একটা ফুল ছিঁড়তেই অতি তীক্ষ্ণ বেহালার স্বরের মতো একটা আর্তনাদ আমার যন্ত্রটায় ধরা পড়ল। এটা যে ওই গাছেরই যন্ত্রণার শব্দ সেটা ভাবতেও অবাক লাগে ।
অবিনাশবাবু আমাকে তাঁর বল দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দেবার চেষ্টায় ছিলেন। আমার যন্ত্রটার বাহাদুরির দু-একটা নমুনা দেখলে না জানি তাঁর মনের অবস্থা কী হবে !
১২ই এপ্রিল
আজ সকালে আমার মাইক্রোসোনোগ্রাফটা দেখানোর জন্য অবিনাশবাবুর কাছে আমার চাকর প্রহ্লাদকে পাঠাব ভাবছিলাম এমন সময় দেখি ভদ্রলোক নিজেই এসে হাজির ।
তাঁর চোখমুখের ভাব এবং নিশ্বাসপ্রশ্বাসের রকম দেখে মনে হল তিনি বেশ উত্তেজিত। আমি তখন যন্ত্রটা আমার বাগানের ঘাসের ওয়েভলেংথের সঙ্গে মিলিয়ে আমার মালির ঘাস কাটার সঙ্গে সঙ্গে ঘাসের সমবেত চিৎকার শুনছি। অবিনাশবাবু আমার ল্যাবরেটরিতে ঢুকে হাতের লাঠিটা দড়াম করে টেবিলের উপর ফেলে দিয়ে টিনের চেয়ারটায় ধপ্ করে বসে পড়লেন। তারপর একটা বড় নিশ্বাস টেনে নিয়ে বললেন, 'আজেবাজে কাজে সময় নষ্ট করছেন—আর এদিকে আমার বাড়িতে যে তাজ্জব কাণ্ড চলেছে।'
অবিনাশবাবুর তাচ্ছিল্যের সুরটা মোটেই ভাল লাগল না। গলার স্বরটা যথাসম্ভব গাম্ভীর করে বললাম, 'কী কাণ্ড ?
“শুনবেন কী কাণ্ড ? আমার সেই বল—মনে আছে ? 'আছে।'
*কেবল ঘণ্টায় ঘণ্টায় রং বদলাচ্ছে। '
'কী রকম?'
'এত ধীরে বদলাচ্ছে, যে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেও চোখে ধরা পড়ে না। কিন্তু আপনি যদি এখন দেখে আবার দু ঘণ্টা বাদে গিয়ে দেখেন, তা হলে চেঞ্জটা স্পষ্ট বুঝতে পারবেন। আমি তো নাওয়াখাওয়া ভুলে গিয়ে ক'দিন থেকে এই করছি।
'এখন কী রকম দেখলেন ?
'এখন তো সকাল। সকালের চেহারা সেদিনের সকালের চেহারার মতোই। এখন যদি দেখেন তো সেদিনের মতোই দেখবেন। কিন্তু ঘণ্টাখানেক পরে গেলে দেখবেন একেবারে অন্যরকম। সব চেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার শুরু হয় সন্ধে থেকে। কী রকম একটা সাদা সাদা ছোপ পড়তে থাকে। পরে মাঝরাত্তিরে যদি দেখেন তো দেখবেন একেবারে ধপধপে সাদা । যেন একটা জায়ান্ট সাইজ ন্যাফথ্যালিনের বল ! '
'ভারী আশ্চর্য তো।'
'ভাবছি খবরের কাগজে একটা খবর পাঠিয়ে দিই। তবু এই গোলক রহস্যের জোরে যদি কিছুটা খ্যাতি হয়। জীবনে তো কিছুই হল না। চাইকী, জাদুঘরের জন্য গভর্নমেন্টকে বেচে যদি দুপয়সা করে নেওয়া যায়, তাই বা মন্দ কী?'
অবিনাশবাবুর কথা শুনে বুঝলাম তিনি আকাশকুসুম দেখছেন। মুখে বললাম, 'এসব
করার আগে একবার জিনিসটা নিয়ে একটু পরীক্ষা করে দেখলে হত না ? হয়তো দেখবেন
চোখের ধাঁধা কিংবা আপনার দেখার ভুল ।
অবিনাশবাবু এবার যেন রীতিমতো রেগে উঠলেন। তড়াক করে চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠে লাঠিটা বগলদাবা করে নিয়ে বললেন, 'ভুল তো ভুল। আপনি থাকুন আপনার হাতুড়ে
কারবার নিয়ে। আমি দেখি আমার বলের দৌলত কতখানি। ' এর প্রত্যুত্তরে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ভদ্রলোক হন্‌হনিয়ে আমার ঘর
থেকে বেরিয়ে গেলেন । বিকেলের দিকে অনুভব করলাম যে বলটা সম্পর্কে আমারও মনের কোণে কেমন যেন একটা কৌতূহল উকি দিচ্ছে ।
আমার যন্ত্রটা তখন একটু গণ্ডগোল করছে— বোধ হয় ভিতরে কোনও কনট্যাক্টের গোলমাল হয়ে থাকবে। সেটাকে পরে শোধরাব স্থির করে অবিনাশবাবুর বাড়ির উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লাম ।
গিয়ে দেখি ভদ্রলোক তাঁর বৈঠকখানার টেবিলের উপর ঝুঁকে পড়ে অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে একটা চিঠি লিখছেন। আমাকে দেখিয়ে বললেন – দেখুন তো মশাই ভাষাটা কেমন হয়েছে। এটা আনন্দবাজারকে লিখেছি। —'সবিনয় নিবেদন, আমি সম্প্রতি একটি আশ্চর্য গোলক সংগ্রহ করিয়াছি যাহার তুল্য বস্তু পৃথিবীতে আছে বলিয়া আমার জানা নাই । গোলকটির একাধিক বিস্ময়কর গুণ আছে। যথা, ইহা কোন পদার্থের সংমিশ্রণে নির্মিত তাহা নির্ধারণ করা অসম্ভব (স্থানীয় বৈজ্ঞানিক প্রোফেসর ত্রিলোকেশ্বরবাবু মহাশয়ও এ ব্যাপারে আমার সহিত একমত)। গোলকটির দ্বিতীয় গুণ—ইহার বর্ণ আপনা হইতেই প্রহরে প্রহরে পরিবর্তিত হয়। তৃতীয়ত — কেমন হচ্ছে ?”
'বেশ তো। তৃতীয় গুণটি কী ? '
'ওইটেই এখন লিখছি। সেটা হল—মাঝে মাঝে বলটাকে ধরলে কেমন ভিজে ভিজে মনে হয়। এখন দেখলেই বুঝতে পারবেন।'
অবিনাশবাবু চিঠি লেখা বন্ধ করে আমাকে তাঁর আলমারির কাছে নিয়ে গেলেন। এবারে দেখলাম ভদ্রলোককে চাবি দিয়ে আলমারিটা খুলতে হল। খুলে বললেন, 'হাত দিয়ে দেখুন, ভিজে টের পাবেন। আর ওই দেখুন কেমন সাদার ছোপ ধরতে আরম্ভ হয়েছে।'

আমি ডান হাতটা বাড়িয়ে বলটা ছুঁতেই আমার শরীরে একটা শিহরন খেলে গেল ।
আসলে আর কিছুই না— দেখলাম যে বলটা শুধু ভিজে নয় একেবারে বরফের মতো ঠাণ্ডা। অবিনাশবাবু বললেন, 'সেদিনের চেয়ে তফাত দেখলেন তো ? এবার বলি কী, কিছুক্ষণ আরও থেকে অন্তত আরও কিছুটা পরিবর্তন দেখে যান। আমি ভেতরে বলে দিচ্ছি—আপনার রাত্রের খাওয়াটা এখানেই সারুন, কেমন ?"
গোলকের রূপান্তর দেখে সত্যিই আমার বৈজ্ঞানিক কৌতূহল অনেকখানি বেড়ে গিয়েছিল। তাই অবিনাশবাবু অনুরোধ না করলে আমি নিজেই হয়তো আরও কিছুক্ষণ থেকে যাওয়ার প্রস্তাব করতাম।
পাঁচ ঘন্টা ধরে বলের রং পরিবর্তন স্টাডি করে এই কিছুক্ষণ হল বাড়ি ফিরেছি। অবিনাশবাবুর বাড়ি থেকে যখন বেরিয়েছি তখন রাত সাড়ে এগারোটা। বলের চেহারা তখন সত্যিই একটা অতিকায় ন্যাফথালিনের গোলার মতো। আমার ইচ্ছে ছিল বলটাকে অন্তত একবার একদিনের জন্য আমার কাছে এনে সেটাকে নিয়ে একটু গবেষণা করি—কিন্তু অবিনাশবাবু নাছোড়বান্দা। আমার উপর টেক্কা দেওয়ার সুযোগ কি সহজে ছাড়েন তিনি ! তাঁর বিশ্বাস-গিরিডিতে আমিও থাকি, তিনিও থাকেন অথচ আমারই কেবল জগৎজোড়া নামডাক হবে, আর তিনি অখ্যাত থেকে যাবেন—এটা ভারী অন্যায় ।
কাল একবার দুপুরের দিকে বলের চেহারাটা দেখে আসতে হবে।
১৩ই এপ্রিল
আজ অবিনাশবাবু একটি গামছায় মুড়ে বলটাকে আমার কাছে দিয়ে গেছেন। আপাতত সেটা আমারই ল্যাবরেটরিতে একটা টেবিলের উপর কাচের ছাউনির তলায় সযত্নে রাখা হয়েছে। সারাদিন ধরে প্রাণ ভরে এর রং পরিবর্তন লক্ষ করছি।
অবিশ্যি অবিনাশবাবু এলেন নাটকীয় ভাবেই। তিনি যখন গামছার পুঁটলি হাতে আমার বৈঠকখানায় ঢুকলেন, তখন তাঁর মধ্যে গতকালের উৎফুল্লতার লেশমাত্র ছিল না বরং যে ভাবটা ছিল সেটা তার বিপরীত। যেন তিনি একটা অন্যায় করে ফেলেছেন এবং তার জন্য তাঁকে একটা বিশেষরকম মানসিক ক্লেশ ও অশান্তি ভোগ করতে হচ্ছে ।
আমি তখন সবে কফি খাওয়া শেষ করছি। অবিনাশবাবু ঘরে ঢুকে টেবিলের উপর বলসমেত গামছাটি রেখে ধুতির খুঁটে কপালের ঘাম মুছে বলছেন, 'না মশাই, আমাদের এসব জিনিস হ্যান্ডল করা পোষায় না। এ রইল আপনার কাছে। কলকাতা থেকে সাংবাদিক এলে আপনার কাছেই পাঠিয়ে দেব।'
আমি বেশ একটু অবাক হয়ে বললাম, 'কী হল ? এক রাতের মধ্যে এমন কী হল যে এত সাধের বলের উপর একেবারে বিতৃষ্ণা এসে গেল ?' *আর বলবেন না মশাই ! এ বল অতি সাংঘাতিক বল একেবারে শয়তান বল । জানেন,
আলমারিটার মাথার উপর একটা টিকটিকি ছিল--সকালে দেখি মরে আছে। শুধু তাই
নয়—আলমারির ভেতর থেকে ডজন খানেক মরা আরশোলা বেরিয়েছে। '
আমি না হেসে পারলাম না। বললাম, 'বিনি পয়সায় এমন একটা ইন্‌সেক্‌টিসাইড পেয়ে গেলেন, আর আপনি তাই নিয়ে আফশোষ করছেন ?"
'আরে মশাই, শুধু ইনসেক্‌ট হলে তো কথাই ছিল না। আমার নিজেরই যে কেমন জানি গা গুলোনো ভাব হচ্ছে।"
"দিন রাত জেগে বলটার রং বদলানো লক্ষ করছিলেন না ?'
'তা করেছি।'
“তার মানেই ঘুমের অভাব হয়েছে—তাই নয় কি ?'
“তা হয়েছে।"
“তবে? গা গুলোনোর কারণ তো পরিষ্কার।
'কী জানি মশাই। হতে পারে। কিন্তু তাও বলছি—এ বল আপনার কাছেই থাক। কেমন জানি উৎসাহ চলে গেছে — বুঝছেন না ??
আমি মনে মনে যা বুঝলাম তা হল এই—অবিনাশবাবু তো বিজ্ঞান মানেন না তিনি যেটা মানেন সেটা হল কুসংস্কার। বলটার কাছাকাছি কটা পোকামাকড় মরতে দেখেই তাঁর ধারণা হয়েছে যে বলটার মধ্যে বুঝি কোনও শয়তানি শক্তি লুকানো আছে।
তবে অবিশ্যি আশ্চর্য হবার কোনও কারণ নেই। আমার দিক থেকে দেখলে ঘটনাটা লাভজনকও বটে। তাই আমি দ্বিরুক্তি না করে বলটা রেখেই দিলাম ।
এখন রাত সাড়ে বারোটা। সকাল আটটা থেকে কাচের ঢাকনার বাইরে থেকে বলটার রং-পরিবর্তন স্টাডি করছি। সকালে মেটে, সবুজ, লাল, আর হলদে রঙের খেলা। দুপুরের দিকে লাল আর হলদেটে কমে আসে, সবুজটা আরেকটু গাঢ় হয়। বিকেলের দিকে সবুজটা ক্রমশ লাল আর কমলার দিকে যেতে থাকে। তারপর যত সন্ধ্যা হয়—সেটা হয়ে আসে টকটকে লাল যেন বলটা একটা পাকা আপেল ।
সন্ধ্যা সাতটা থেকেই লক্ষ করছি বলের সমস্ত রং চলে গিয়ে কেমন যেন একটা ছাই ছাই রুক্ষ ভাব নেয়। দশটা নাগাদ সেই ছাই রঙের উপর সাদার ছোপ পড়তে থাকে ।
এখন বলটা একেবারে ধপধপে ঝকঝকে সাদা। তারপর তার উপর আমার দেড়শো পাওয়ার ইলেকট্রিক লাইট পড়েছে যেন তা থেকে জ্যোতি বিচ্ছুরিত হচ্ছে। কাচের ছাউনির ভেতরে একটা আবছা কুয়াশার মতো কী যেন জমা হচ্ছে বরফ থেকে বাষ্প বেরিয়ে যে রকম হয় কতকটা সেইরকম।
কালকের দিনটাও এর রং পরিবর্তন স্টাডি করে, পরশু বলটাকে আমার টেবিলের উপর ফেলে এর একটা কেমিক্যাল অ্যানালিসিস করার ইচ্ছে।
১৪ই এপ্রিল
কাল সারারাত নিউটনটা কেঁদেছে। বলটা আনার পর থেকেই লক্ষ করছি তার মেজাজটা যেন কেমন খিটখিটে হয়ে গেছে। কাল সারাদিনে অনেকবার দেখেছি সে একদৃষ্টে বিরক্তভাবে কাচের ঢাকনাটার দিকে চেয়ে আছে। কী কারণ কে জানে ।
ঘুমের অভাবেই বোধ হয়— আমার মাথাটাও কেমন জানি একটু ধরেছিল। তাই
ল্যাবরেটরিতে যাবার আগে আমার তৈরি সেই বড়ির একটা খেয়ে নিলাম। দুশো সাতাত্তর
রকমের ব্যারাম সারে আমার তৈরি এই 'অ্যানাইহিলিন ট্যাবলেটের গুণে।

আমার ল্যাবরেটরিতে গিয়ে প্রথমে একটা জিনিস লক্ষ করলাম। কতগুলি কাচের বৈয়ামের মধ্যে আমার ছোট ছোট পোকামাকড়ের একটা সংগ্রহ ছিল— ইচ্ছে ছিল মাইক্রোসোনোগ্রাফে তাদের ভাষা শুনে রেকর্ড করব। এখন দেখি প্রত্যেক বৈয়ামের প্রত্যেকটি পোকা মৃত অবস্থায় পড়ে আছে।
এটা অবিশ্যি আমার ভুলেই হয়েছে। বলের এই মারাত্মক ক্ষমতার কথা জেনেও সেগুলোকে সরিয়ে রাখতে ভুলে গিয়েছিলাম। কী আর করি। মরা পোকাগুলোকে ফেলে দিয়ে খালি বৈয়ামগুলো যথাস্থানে রেখে দিলাম ।
এবার বলটার দিকে চেয়ে দেখি—গত কদিন সকালে যে রকম রং দেখেছি আজও ঠিক সেইরকম। রং বদলানোর নিয়মের কোনও পরিবর্তন নেই দেখে আশ্বস্ত হলাম। এ জিনিসটা বেনিয়মে বা খামখেয়ালি ভাবে হলে গবেষণার খুব মুশকিল হত।
কাচের ঢাকনার গায়ে বাষ্প জমে কাচের সর্বাঙ্গ বিন্দু বিন্দু জলে ভরে গিয়েছিল। আমি তাই ঢাকনাটা তুলে সেটা পরিষ্কার করতে গেছি। এমন সময় ল্যাবরেটরির দরজার দিক থেকে একটা শব্দ পেয়ে ঘুরে দেখি, নিউটন দরজার চৌকাঠের উপর পিঠ উচিয়ে লেজ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে—তার দৃষ্টি বলের দিকে।
নিউটন যে একটা লম্ফ দেওয়ার জোগাড় করছে সেটা আমি দেখেই বুঝেছিলাম, এবং আমি সেটার জন্য প্রস্তুতও ছিলাম। লাফটা দিতেই আমি বিদ্যুদ্বেগে বলটার সামনে গিয়ে থপ্ করে দুহাতে বেড়ালটাকে ধরে নিলাম। তারপর তাকে ল্যাবরেটরির বাইরে বার করে দিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলাম।
বাকি যেটুকু সময় ল্যাবরেটরিতে ছিলাম, দরজায় নিউটনের আঁচড়ের শব্দ পেয়েছি। সামান্য একটা মাটির বলের উপর বেড়ালের এ আক্রোশ ভারী রহস্যজনক ।

আজ সারাদিন আমার মাইক্রোসোনোগ্রাফ চালিয়ে নানান সূক্ষ্ম প্রাকৃতিক শব্দের চার্ট করেছি, আর সে সমস্ত শব্দই আমার টেপরেকর্ডারে রেকর্ড করেছি। এই শব্দ সংগ্রহ শেষ হলে পর, শব্দের মানে করার পর্ব শুরু হবে। অবিনাশবাবু বলছিলেন বিজ্ঞানের নাকি একটা সীমা আছে। হায়রে ! কত যে জানবার বিষয় এখনও পড়ে আছে জগতে, অবিনাশবাবু তার কী বুঝবেন ?
এখন রাত একটা। এবারে ঘুমোতে যাব। কিছুক্ষণ থেকেই যন্ত্রটার কথা ছেড়ে বার বার বলটার কথা মনে হচ্ছে ।
ওই যে রং পরিবর্তনের ব্যাপারটা — ওটার মধ্যে কীসের জানি একটা ইঙ্গিত রয়েছে। কীসের সঙ্গে যেন ওর একটা সাদৃশ্য আছে। সে সাদৃশ্যটা যেন আমার ধরতে পারা উচিত, কিন্তু আমি পারছি না। সাদা অবস্থায় বলটা যদি বরফে আচ্ছাদিত হয়ে যায়, তা হলে অন্য অবস্থাগুলো কী ? সবুজ, লাল, হলদে, কমলা—এগুলো তা হলে কীসের রং? এই রং পরিবর্তনের কারণ কী ? আমিই যদি না বুঝলাম তা হলে বুঝবে কে ?
হয়তো কাল থেকে গবেষণার কাজ শুরু করলে ওর রহস্য ধরা পড়বে। হয়তো ব্যাপারটা আসলে অত্যন্ত সহজ। ক্রমাগত জটিল জিনিস নিয়ে মাথা ঘামালে, অনেক সময় সহজ সমস্যার সামনে পড়ে মানুষের কেমন জানি সব গণ্ডগোল হয়ে যায়। আমার মতো বৈজ্ঞানিকের পক্ষেও এটা অসম্ভব নয় ।
যাকগে। আজ আর ভাবব না। কাল দেখা যাবে।
১৫ই এপ্রিল
আমার জীবনে যত বিচিত্র, বীভৎস, অবিশ্বাস্য সব ঘটনা ঘটেছে, অন্য কোনও বৈজ্ঞানিকের জীবনে তেমন ঘটেছে কি ? জানি না। এক এক সময় মনে হয় আমি সাহিত্যিক হলে এসব ঘটনা আরও সুন্দর করে গুছিয়ে লিখতে পারতাম। কিন্তু তার পরেই আবার মনে হয় যে অত গুছিয়ে লেখার দরকার কী ?
আমি তো আর বানানো কাল্পনিক ঘটনা লিখছি না – আমি লিখছি ডায়রি। সোজা কথায়
সরলভাবে আমার জীবনে যা ঘটেছে তাই লিখছি। সেখানে অত ভাষার ব্যবহারের প্রয়োজন
আছে কি ? যাই হোক এবার যথাসম্ভব পরিষ্কার করে ঠাণ্ডা মাথায় এই কিছুক্ষণ আগেকার ঘটনাটি লেখার চেষ্টা করা যাক ।
কাল রাত্রে ডায়রি লেখা শেষ করে বিছানায় শুয়ে তারপর কিছুতেই ঘুম আসছিল না । আমি কাল লিখেছিলাম, যে এই রং বদলানোর মধ্যে বিশেষ যেন একটা ইঙ্গিত ছিল যেটা আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। বিছানায় কিছুক্ষণ শুয়ে ওটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ যেন অজ্ঞানতার অন্ধকারে একটা আলো দেখতে পেলাম। পরপর রঙের পরিবর্তনগুলো আর একবার ঝালিয়ে নিলাম মনের মধ্যে। মাঝরাত্তিরে বলটা সাদা তারপর সকালের দিকে ক্রমে সাদাটা চলে গিয়ে হলদে লাল সবুজ ইত্যাদি বেশ একটা জমকালো রঙের খেলা শুরু হয়। দুপুর যত এগিয়ে আসে তত সবুজটা গাঢ় হতে থাকে, হলদে লাল ইত্যাদি উজ্জ্বল রংগুলো কমে গিয়ে বলটা ক্রমশ একটা গম্ভীর অথচ স্নিগ্ধ চেহারা নেয়। তারপর বিকেলের দিকে সবুজ জায়গাগুলো আস্তে আস্তে লাল আর খয়েরি মেশানো একটা অবস্থায় পৌঁছে শেষ পর্যন্ত সন্ধের দিকে একটা ছাই ছাই ভাব এবং রাত বাড়লে পর সাদার ছোপ ধরা শুরু ।
কীসের সঙ্গে মিল এই পরিবর্তনের
আমার এখনও স্পষ্ট মনে আছে— বৈঠকখানার দেয়ালের ঘড়িতে দুটো বাজার শব্দের সঙ্গে সঙ্গে এ প্রশ্নের উত্তরটা হঠাৎ বিদ্যুতের ঝলকের মতো আমার মাথায় এসে গেল । আমাদের পৃথিবীর ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে এই বলের রং পরিবর্তনের আশ্চর্য মিল!

তফাত কেবল এই যে, পৃথিবীতে যে পরিবর্তন ঘটতে এক বছর লাগছে—এই বলের সেটা ঘটতে লাগছে এক দিন, অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টা। রাত বারোটায় এই বলের চরম শীতের অবস্থা যখন এর সবটাই বরফের আবরণে ঢাকা। তারপর সেটা কমে গিয়ে সূর্যোদয়ের সময় থেকে লাল হলদে সবুজের খেলায় এর বসন্তকাল। সূর্য যতই মাথার উপরে উঠতে থাকে এই বল ততই গ্রীষ্মের দিকে এগোয় আর রঙের বাহারও কমে আসে। গ্রীষ্মের পর বিকেলের দিকে বর্ষা এলে বলটায় হাত দিলে ভিজে ভিজে ঠেকে। সূর্যাস্তের সময় থেকে এর শরৎ ; সন্ধ্যা বাড়লে প্রথম সাদার ছোপে হেমন্তকাল এবং সেই সাদা বেড়ে গিয়ে মাঝরাতে রাত বারোটাতে আবার চরম শীতের অবস্থা।
এই বলটি কি তা হলে আমাদের পৃথিবীরই একটা খুদে সংস্করণ ? নাকি, এটা একটা স্বতন্ত্র গ্রহ—সেখানে ঋতু পরিবর্তন আছে, প্রাণ আছে, প্রাণী আছে ? আমি জানি এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে অসম্ভব বলে প্রায় কিছুই নেই—কিন্তু এই ক্ষুদ্রাদপিক্ষুদ্র গ্রহের
কথা যে আমি পর্যন্ত স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি । আমার চিন্তাধারা হয়তো অবিচ্ছিন্ন ভাবেই চলত—কিন্তু একটা অদ্ভুত শব্দের ফলে তার গতি ব্যাহত হল ।
শব্দটা আসছে একতলা থেকে। সম্ভবত আমার ল্যাবরেটরি থেকেই ।
নিউটন আজ আমার ঘরেই শুয়েছিল— সেও দেখি শব্দটা শুনেই কান খাড়া করে সোজা হয়ে উঠে বসেছে। ওর হাবভাব দেখে আমি ওকে কোলে তুলে নিলাম। তারপর ওকে নিয়ে একতলায় রওনা দিলাম ল্যাবরেটরির উদ্দেশে ।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতেই শব্দটা আমার কানে অনেকটা স্পষ্ট হয়ে উঠল ।
'শঙ্কু ! শঙ্কু ! শঙ্কু !'
আমার নামটা ধরে কে যেন বারবার চিৎকার করে যাচ্ছে। উচ্চারণ স্পষ্ট হলেও, স্বর কিন্তু একেবারেই মানুষের স্বর নয়; কিংবা মানুষ হলেও আমাদের অভিজ্ঞতার মধ্যে পড়ে এমন কোনও মানুষের মতো নয়। ল্যাবরেটরির দরজা খুলে ঢুকতেই শব্দটা যেন চারগুণ বেড়ে গেল। আর নিউটনের সে
কী প্রচণ্ড আস্ফালন। কোনওরকমে তাকে বগলদাবা করে এগিয়ে গেলাম আমার টেবিলের
দিকে। শব্দটা আসছে আমার যন্ত্রটা থেকে বলের দিক থেকে নয়। আমি এসে দাঁড়াতেই চিৎকারটা থেমে গেল।
তারপর প্রায় আধমিনিট সব চুপচাপ। আমার বগলের তলায় বুঝতে পারলাম নিউটন থরথর করে কাঁপছে ।
হঠাৎ আবার তীক্ষ্ণস্বরে সেই চিৎকার শুরু হল ।
‘টেরাটম্! টেরাটম্! টেরাট গ্রহ থেকে বলছি। কলির শঙ্কু কলির শঙ্কু ! তুমি আমাদের কথা শুনতে পাচ্ছ ?'
আমি কী বলব ? আমার নিজের কানকে বিশ্বাস করাই যে কঠিন হয়ে পড়েছিল। আবার প্রশ্ন এল— 'শঙ্কু, আমাদের কথা শুনতে পাচ্ছ ? তোমার মাইক্রোসোনোগ্রাফ যে ওয়েভলেংথে রয়েছে সেই ওয়েভলেংথেই আমরা কথা বলছি। শুনতে পাচ্ছ তো 'হ্যাঁ' বলো— আরও কথা আছে। '
আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো বললাম, 'পাচ্ছি শুনতে। কী বলবে বলো।”
উত্তর এল, 'আমরা তোমার ঘরে বন্দি। বুঝতে পারছি, তুমি না জেনে এ কাজ করেছ। কিন্তু করে অন্যায় করেছ। আমরা সৌরজগতের ক্ষুদ্রতম গ্রহ। কিন্তু তাতে তাচ্ছিল্য করার কোনও কারণ নেই ; পৃথিবীর চেয়ে পাঁচ-লক্ষগুণ বড় গ্রহও সৌরজগতের বাইরে রয়েছে । আমাদের শক্তি আমাদের আয়তনে নয়। আমাদের শক্তি আমাদের বিজ্ঞানে, আমাদের বুদ্ধিতে। তোমাদের পৃথিবীর যা সম্পদ, সে অনুপাতে আমাদের টেরাটস্ গ্রহের সম্পদ লক্ষ গুণ বেশি। আমরা কক্ষচ্যুত হয়ে পৃথিবীতে এসে পড়েছি। জলের মধ্যে পড়েছিলাম, তাই আমাদের কোনও ক্ষতি হয়নি, কারণ আমরা মাটির নীচে বাস করি। কিন্তু তোমার এই কাচের আচ্ছাদন আমাদের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর, কারণ অক্সিজেন আমাদের পক্ষে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। মানুষের যেমন এ জিনিসটা দরকার, তেমনি আমাদেরও। এমনিতে মানুষের সঙ্গে আমাদের তফাত সামান্যই, তবে আমাদের বুদ্ধি অনেকগুণে বেশি, আর আয়তন আমাদের এতই ছোট যে তোমাদের সাধারণ মাইক্রোস্কোপে আমাদের দেখা যাবে না।' কয়েক মুহূর্তের জন্য কথা থামল। আমি যে এরমধ্যে কখন চেয়ারে বসে পড়েছি তা নিজেই। ঠাহর পাইনি। তারপর আবার কথা শুরু হল ।
“তোমার কাছে আমাদের অনুরোধ কাচের আচ্ছাদন খুলে ফেলো। আমাদের আয়ু এমনিতেই কমে এসেছে। একটা আস্ত গ্রহের সমস্ত অধিবাসীদের হত্যা করার অপরাধের ভার কি তুমি সারা জীবন বইতে পারবে ? তাই অনুরোধ করছি— আমাদের মুক্তি দাও। তুমি বৈজ্ঞানিক। আমাদের সম্বন্ধে তোমার মনে কোনওরকম সহানুভূতির ভাব নেই ?"
একটা প্রশ্ন মনের মধ্যে খোঁচা দিচ্ছিল। এবারে সেটা না জিজ্ঞেস করে পারলাম না ।
'তোমাদের মধ্যে কি এমন কোনও ক্ষমতা আছে যাতে তোমরা তোমাদের চেয়ে আয়তনে অনেক বড় প্রাণীকেও হত্যা করতে পার ?' কিছুক্ষণ কোনও উত্তর নেই। আমি বললাম, 'আমার প্রশ্নের জবাব দাও। গত ক'দিনের।
মধ্যে তোমাদের কাছাকাছি কতগুলি প্রাণীর যে মৃত্যু হয়েছে— তার জন্য কি তোমরা দায়ী ?'
এবারে আমার প্রশ্নের উত্তরে একটা পালটা প্রশ্ন এল— ' ভাইরাস কাকে বলে জান ?'
'নিশ্চয়ই।'
'কাকে বলে ?'
আমার ভারী অপমান বোধ হচ্ছিল, তাও উত্তর দিলাম—' রোগবহনকারী বিষাক্ত বীজকে বলে ভাইরাস। '
'ঠিক। এই ভাইরাসের আয়তন কী ?'
'মাইক্রোস্কোপে দেখতে হয় !
'ঠিক। কিন্তু এই বীজ থেকে একটা গোটা শহরের লোক নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে সেটা জান ?'

'শুধু শহর কেন ? একটা সম্পূর্ণ দেশের লোকসংখ্যা লোপ পেয়ে যেতে পারে। মহামারীর কথা কে না জানে ?
'ঠিক। এখনও কি বুঝতে পারছ না আমাদের ক্ষমতা কোথায় ?" “তোমরা কি ভাইরাস ছড়িয়ে দাও ?
'ছড়িয়ে দেব কেন ?”
'তা হলে ?"
কোনও উত্তর নেই। আমি অনুভব ক
38
Articles
শঙ্কু সমগ্র
0.0
একটি প্রফেসর এর জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু মহাজাগতিক ঘটনার সম্মিলিত রূপ
1

ব্যোমযাত্রীর ডায়রি

30 October 2023
1
0
0

প্রোফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কুর ডায়রিটা আমি পাই তারক চাটুজ্যের কাছ থেকে । একদিন দুপুরের দিকে আপিসে বসে পুজো সংখ্যার জন্য একটা লেখার প্রুফ দেখছি, এমন সময় তারকবাবু এসে একটা লাল খাতা আমার সামনে ফেলে দিয়ে

2

প্রোফেসর শঙ্কু ও ঈজিপ্সীয় আতঙ্ক

30 October 2023
1
0
0

পোর্ট সেইডের ইম্পিরিয়াল হোটেলের ৫ নং ঘরে বসে আমার ডায়রি লিখছি ! এখন রাত সাড়ে এগারোটা। এখানে বোধ হয় অনেক রাত অবধি লোকজন জেগে থাকে, রাস্তায় চলাফেরা করে, হইহল্লা করে। আমার পূর্বদিকের খোলা জানালাটা দ

3

প্রোফেসর শঙ্কু ও হাড়

30 October 2023
1
0
0

(বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক প্রোফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু বেশ কয়েক বছর যাবৎ নিখোঁজ । তাঁর একটি ডায়রি কিছুদিন আগে আকস্মিকভাবে আমাদের হাতে আসে। 'ব্যোমযাত্রীর ডায়রি' নাম দিয়ে আমরা সন্দেশে ছাপিয়েছি। ইতিমধ্যে আম

4

প্রোফেসর শঙ্কু ও ম্যাকাও

30 October 2023
1
0
0

৭ই জুন বেশ কিছুদিন থেকেই আমার মন মেজাজ ভাল যাচ্ছিল না। আজ সকালে একটা আশ্চর্য ঘটনার ফলে আবার বেশ উৎফুল্ল বোধ করছি। আগে মেজাজ খারাপ হবার কারণটা বলি। প্রোফেসর গজানন তরফদার বলে এক বৈজ্ঞানিক কিছুদিন আগে

5

প্রোফেসর শঙ্কু ও আশ্চর্য পুতুল

30 October 2023
2
0
0

আজ আমার জীবনে একটা স্মরণীয় দিন! সুইডিস অ্যাকাডেমি অফ সায়ান্স আজ আমাকে ডক্টর উপাধি দান করে আমার গত পাঁচ বছরের পরিশ্রম সার্থক করল। এক ফলের বীজের সঙ্গে আর এক ফলের বীজ মিশিয়ে এমন আশ্চর্য সুন্দর, সুগন্ধ

6

প্রোফেসর শঙ্কু ও গোলক-রহস্য

31 October 2023
1
0
0

৭ই এপ্রিলঅবিনাশবাবু আজ সকালে এসেছিলেন। আমাকে বৈঠকখানায় খবরের কাগজ হাতে বসে থাকতে দেখে বললেন, 'ব্যাপার কী ? শরীর খারাপ নাকি ? সকালবেলা এইভাবে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে দেখেছি বলে তো মনে পড়ে না।'আমি বল

7

প্রোফেসর শঙ্কু ও চী-চিং:

31 October 2023
1
0
0

১৮ই অক্টোবরআজ সকালে সবে ঘুম থেকে উঠে মুখটুখ ধুয়ে ল্যাবরেটরিতে যাব, এমন সময় আমার চাকর প্রহ্লাদ এসে বলল, 'বৈঠকখানায় একটি বাবু দেখা করতে এয়েছেন। আমি বললাম, 'নাম জিজ্ঞেস করেছিস ?"প্রহ্লাদ বলল, 'আজ্ঞে

8

প্রোফেসর শঙ্কু ও খোকা

31 October 2023
1
0
0

৭ই সেপ্টেম্বরআজ এক মজার ব্যাপার হল। আমি কাল সকালে আমার ল্যাবরেটরিতে কাজ করছি, এমন সময় চাকর প্রহ্লাদ এসে খবর দিল যে একটি লোক আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। কে লোক জিজ্ঞেস করতে প্রহ্লাদ মাথা চুলকে বলল 'আজ

9

প্রোফেসর শঙ্কু ও ভূত

31 October 2023
1
0
0

১০ই এপ্রিলভূতপ্রেত প্ল্যানচেট টেলিপ্যাথি ক্লেয়ারভয়েন্স—এ সবই যে একদিন না একদিন বিজ্ঞানের আওতায় এসে পড়বে, এ বিশ্বাস আমার অনেকদিন থেকেই আছে। বহুকাল ধরে বহু বিশ্বস্ত লোকের ব্যক্তিগত ভৌতিক অভিজ্ঞতার ক

10

প্রোফেসর শঙ্কু ও রোবু

2 November 2023
1
0
0

১৬ই এপ্রিল আজ জার্মানি থেকে আমার চিঠির উত্তরে বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক প্রোফেসর পমারের চিঠি পেয়েছি। পমার লিখছেন— প্রিয় প্রোফেসর শঙ্কু, তোমার তৈরি রোবো (Robot) বা যান্ত্রিক মানুষ সম্বন্ধে তুমি যা লিখেছ,

11

প্রোফেসর শঙ্কু ও রক্তমৎস্য রহস্য

2 November 2023
1
0
0

১৩ই জানুয়ারি গত ক'দিনে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেনি, তাই আর ডায়রি লিখিনি। আজ একটা স্মরণীয় দিন, কারণ আজ আমার লিঙ্গুয়াগ্রাফ যন্ত্রটা তৈরি করা শেষ হয়েছে। এ যন্ত্রে যে কোনও ভাষার কথা রেকর্ড হয়ে গিয়ে তিন

12

প্রোফেসর শঙ্কু ও কোচাবাম্বার গুহা

2 November 2023
1
0
0

৭ই আগস্ট আজ আমার পুরনো বন্ধু হনলুলুর প্রোফেসর ডাম্বার্টনের একটা চিঠি পেয়েছি। তিনি লিখছেন— প্রিয় শ্যাঙ্কস, খামের উপর ডাকটিকিট দেখেই বুঝতে পারবে যে বোলিভিয়া থেকে লিখছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকেও যে

13

প্রোফেসর শঙ্কু ও গোরিলা

2 November 2023
1
0
0

১২ই অক্টোবর আজ সকালে উশ্রীর ধার থেকে বেড়িয়ে ফিরছি, এমন সময় পথে আমার প্রতিবেশী অবিনাশবাবুর সঙ্গে দেখা। ভদ্রলোকের হাতে বাজারের থলি। বললেন, 'আপনাকে সবাই একঘরে করবে, জানেন তো। আপনি যে একটি আস্ত শকুনির

14

প্রোফেসর শঙ্কু ও বাগ্দাদের বাক্স

2 November 2023
1
0
0

১৯শে নভেম্বর গোল্ডস্টাইন এইমাত্র পোস্টআপিসে গেল কী একটা জরুরি চিঠি ডাকে দিতে। এই ফাঁকে ডায়রিটা লিখে রাখি। ও থাকলেই এত বকবক করে যে তখন ওর কথা শোনা ছাড়া আর কোনও কাজ করা যায় না। অবিশ্যি প্রোফেসর পেত্

15

স্বপ্নদ্বীপ

2 November 2023
1
0
0

২২শে মার্চ অনেকে বলেন যে, স্বপ্নে নাকি আমরা সাদা আর কালো ছাড়া অন্য কোনও রং দেখি না। আমার বিশ্বাস আসল ব্যাপারটা এই যে, বেশিরভাগ সময় স্বপ্নের ঘটনাটাই কেবল আমাদের মনে থাকে; রং দেখেছি কি না দেখেছি, সেট

16

আশ্চর্য প্রাণী

3 November 2023
1
0
0

১০ই মার্চ গবেষণা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। আমার জীবনে এর আগে এ রকম কখনও হয়নি। একমাত্র সান্ত্বনা যে এটা আমার একার গবেষণা নয়, এটার সঙ্গে আরও একজন জড়িত আছেন । হামবোল্টও বেশ মুষড়ে পড়েছে। তবে এত সহজে নিরুদ্যম

17

মরুরহস্য

3 November 2023
2
0
0

১০ই জানুয়ারি নতুন বছরের প্রথম মাসেই একটা দুঃসংবাদ। ডিমেট্রিয়াস উধাও! প্রোফেসর হেক্টর ডিমেট্রিয়াস, বিখ্যাত জীবতত্ত্ববিদ। ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত ক্রীট দ্বীপের রাজধানী ইরাক্লিয়ন শহরের অধিবাসী ছিলেন ডিম

18

কভার্স

3 November 2023
1
0
0

১৫ই আগস্ট পাখি সম্পর্কে কৌতূহলটা আমার অনেক দিনের। ছেলেবেলায় আমাদের বাড়িতে একটা পোষা ময়না ছিল, সেটাকে আমি একশোর উপর বাংলা শব্দ পরিষ্কারভাবে উচ্চারণ করতে শিখিয়েছিলাম। আমার ধারণা ছিল, পাখি কথা বললেও

19

একশৃঙ্গ অভিযান

4 November 2023
3
0
0

১লা জুলাই আশ্চর্য খবর। তিব্বত পর্যটক চার্লস উইলার্ডের একটা ডায়রি পাওয়া গেছে। মাত্র এক বছর আগে এই ইংরাজ পর্যটক তিব্বত থেকে ফেরার পথে সেখানকার কোনও অঞ্চলে যাম্‌পা শ্রেণীর এক দস্যুদলের হাতে পড়ে। দস্য

20

ডক্টর শেরিং-এর স্মরণশক্তি

4 November 2023
1
0
0

২রা জানুয়ারি আজ সকালটা বড় সুন্দর। চারিদিকে ঝলমলে রোদ, নীল আকাশে সাদা সাদা হৃষ্টপুষ্ট মেঘ, দেখে মনে হয় যেন ভুল করে শরৎ এসে পড়েছে। সদ্য পাড়া মুরগির ডিম হাতে নিলে যেমন মনটা একটা নির্মল অবাক আনন্দে

21

হিপনোজেন

5 November 2023
1
0
0

৭ই মে আমার এই ছেষট্টি বছরের জীবনে পৃথিবীর অনেক জায়গা থেকে অনেকবার অনেক রকম নেমন্তন্ন পেয়েছি; কিন্তু এবারেরটা একেবারে অভিনব। নরওয়ের এক নাম-না-জানা গণ্ডগ্রাম থেকে এক এক্সপ্রেস টেলিগ্রাম; টেলিগ্র

22

শঙ্কুর শনির দশা

5 November 2023
2
0
0

৭ই জুন আমাকে দেশ বিদেশে অনেকে অনেক সময় জিজ্ঞাসা করেছে আমি জ্যোতিষে বিশ্বাস করি। কি না। প্রতিবারই আমি প্রশ্নটার একই উত্তর দিয়েছি—আমি এখনও এমন কোনও জ্যোতিষীর সাক্ষাৎ পাইনি যাঁর কথায় বা কাজে আমার জ্য

23

শঙ্কুর সুবর্ণ সুযোগ

6 November 2023
2
0
0

২৪শে জুনইংলন্ডের সল্সবেরি প্লেনে আজ থেকে চার হাজার বছর আগে তৈরি বিখ্যাত স্টোনহেঞ্জের ধারে বসে আমার ডায়রি লিখছি। আজ মিড-সামার ডে, অর্থাৎ কর্কটক্রান্তি । যে সময় স্টোনহেঞ্জ তৈরি হয়, তখন এ দেশে প্রস্তর

24

মানরো দ্বীপের রহস্য

6 November 2023
1
0
0

মানরো দ্বীপ, ১২ই মার্চএই দ্বীপে পৌঁছানোর আগে গত তিন সপ্তাহের ঘটনা সবই আমার ডায়রিতে বিক্ষিপ্তভাবে লেখা আছে। হাতে যখন সময় পেয়েছি তখন সেগুলোকেই একটু গুছিয়ে লিখে রাখছি। আমি যে আবার এক অভিযানের দলে ভিড

25

কম্পু

8 November 2023
0
0
0

১২ই মার্চ, ওসাকা আজ সারা পৃথিবী থেকে আসা তিনশোর উপর বৈজ্ঞানিক ও শ'খানেক সাংবাদিকের সামনে কম্পুর ডিমনস্ট্রেশন হয়ে গেল। ওসাকার নামুরা টেকনলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের হলঘরের একপ্রান্তে মঞ্চের উপর একটা তিন ফু

26

মহাকাশের দূত

8 November 2023
0
0
0

২২শে অক্টোবরপ্রিয় শঙ্কু,ব্রেন্টউড, ১৫ই অক্টোবরমনে হচ্ছে আমার বারো বছরের পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের ফল পেতে চলেছি। খবরটা এখনও প্রচার করার সময় আসেনি, শুধু তোমাকেই জানাচ্ছি।কাল রাত একটা সাঁইত্রিশে এপসাইলন ই

27

নকুড়বাবু ও এল ডোরাডো

9 November 2023
0
0
0

১৩ই জুনআজ সকালের ঘটনাটা আমার কাজের রুটিন একেবারে তছনছ করে দিল। কাজটা অবিশ্যি আর কিছুই না : আমার যাবতীয় আবিষ্কার বা ইনভেশনগুলো সম্বন্ধে একটা প্রবন্ধ লিখছিলাম সুইডেনের বিখ্যাত 'কসমস' পত্রিকার জন্য। এ ক

28

শঙ্কুর কঙ্গো অভিযান

9 November 2023
0
0
0

প্রিয় শঙ্কু,আমার দলের একটি লোকের কালাজ্বর হয়েছে তাই তাকে নাইরোবি পাঠিয়ে দিচ্ছি। তার হাতেই চিঠি যাচ্ছে, সে ডাকে ফেলে দেবার ব্যবস্থা করবে। এই চিঠি কেন লিখছি সেটা পড়েই বুঝতে পারবে। খবরটা তোমাকে না দি

29

প্রোফেসর শঙ্কু ও ইউ.এফ.ও.

11 November 2023
0
0
0

১২ই সেপ্টেম্বরইউ. এফ.ও. অর্থাৎ আনআইডেনটিফাইড ফ্লাইং অবজেক্ট অর্থাৎ অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তু। এই ইউ.এফ.ও. নিয়ে যে কী মাতামাতি চলছে গত বিশ-পঁচিশ বছর ধরে। সারা বিশ্বে বহু সমিতি গড়ে উঠেছে, যাদের কাজই হল এই ই

30

আশ্চর্জন্তু

11 November 2023
0
0
0

আগস্ট ৭আজ এক আশ্চর্য দিন।সকালে প্রহ্লাদ যখন বাজার থেকে ফিরল, তখন দেখি ওর হাতে একটার জায়গায় দুটো থলি। জিজ্ঞেস করাতে বলল, 'দাঁড়ান বাবু, আগে বাজারের থলিটা রেখে আসি। আপনার জন্য একটা জিনিস আছে, দেখে চমক

31

প্রোফেসর রন্ডির টাইম মেশিন

11 November 2023
0
0
0

নভেম্বর ৭পৃথিবীর তিনটি বিভিন্ন অংশে তিনজন বৈজ্ঞানিক একই সময় একই যন্ত্র নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে, এরকম সচরাচর ঘটে না। কিন্তু সম্প্রতি এটাই ঘটেছে। এই তিনজনের মধ্যে একজন অবিশ্যি আমি, আর যন্ত্রটা হল টাইম মে

32

শঙ্কু ও আদিম মানুষ

12 November 2023
0
0
0

এপ্রিল ৭ নৃতত্ত্ববিদ ডা. ক্লাইনের আশ্চর্য কীর্তি সম্বন্ধে কাগজে আগেই বেরিয়েছে। ইনি দক্ষিণ আমেরিকায় আমাজনের জঙ্গলে ভ্রমণকালে এক উপজাতির সন্ধান পান, যারা নাকি ত্রিশ লক্ষ বছর আগে মানুষ যে অবস্থায় ছিল

33

নেফ্রুদেৎ-এর সমাধি

12 November 2023
0
0
0

ডিসেম্বর ৭ এইমাত্র আমার জার্মান বন্ধু ক্রোলের কাছ থেকে একটা টেলিগ্রাম পেলাম। কোল লিখছে— সব কাজ ফেলে কায়রোতে চলে এসো। তুতানখামেনের সমাধির মতো আরেকটি সমাধি আবিষ্কৃত হতে চলেছে। সাকারার দু মাইল দক্ষিণে

34

শঙ্কুর পরলোকচর্চা

12 November 2023
0
0
0

সেপ্টেম্বর ১২ আজ বড় আনন্দের দিন। দেড় বছর অক্লান্ত পরিশ্রমের পর আজ আমাদের যন্ত্র তৈরির কাজ শেষ হল। 'আমাদের' বলছি এই কারণে যে, যদিও যন্ত্রের পরিকল্পনাটা আমার, এটা তৈরি করা আমার একার পক্ষে সম্ভব ছিল ন

35

শঙ্কু ও ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন

12 November 2023
0
0
0

৭ মে কাল জার্মানি থেকে আমার ইংরেজ বন্ধু জেরেমি সন্ডার্সের একটা চিঠি পেয়েছি। তাতে একটা আশ্চর্য খবর রয়েছে। চিঠিটা এখানে তুলে দিচ্ছি। প্রিয় শঙ্কু, জার্মানিতে আউগ্‌গ্সবুর্গে এসেছি ক্রোলের সঙ্গে ছুটি

36

ডাঃ দানিয়েলির আবিষ্কার

12 November 2023
0
0
0

১৫ এপ্রিল, রোম কাল এক আশ্চর্য ঘটনা। এখানে আমি এসেছি একটা বিজ্ঞানী সম্মেলনে। কাল স্থানীয় বায়োকেমিস্ট ডাঃ দানিয়েলির বক্তৃতা ছিল। তিনি তাঁর ভাষণে সকলকে চমৎকৃত করে দিয়েছেন। অবিশ্যি আমি যে অন্যদের মতো

37

ডন ক্রিস্টোবাল্ডির ভবিষ্যদ্বাণী

13 November 2023
0
0
0

সেপ্টেম্বর ৬ আজ আমার বন্ধু জেরেমি সন্ডার্সের কাছ থেকে একটা আশ্চর্য চিঠি পেয়েছি। সেটা হল এই— প্রিয় শঙ্কু, তোমাকে একটা অদ্ভুত খবর দেবার জন্য এই চিঠির অবতারণা। আমাদের দেশের কাগজে খবরটা বেরিয়ে

38

স্বর্ণপর্ণী

13 November 2023
0
0
0

১৬ জুনআজ আমার জন্মদিন । হাতে বিশেষ কাজ নেই, সকাল থেকে টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে, আমি বৈঠকখানায় আমার প্রিয় আরামকেদারাটায় বসে কড়িকাঠের দিকে চেয়ে আকাশপাতাল ভাবছি। বৃদ্ধ নিউটন আমার পায়ের পাশে কুণ্ডলী

---