shabd-logo

শঙ্কু ও আদিম মানুষ

12 November 2023

0 Viewed 0

এপ্রিল ৭

নৃতত্ত্ববিদ ডা. ক্লাইনের আশ্চর্য কীর্তি সম্বন্ধে কাগজে আগেই বেরিয়েছে। ইনি দক্ষিণ আমেরিকায় আমাজনের জঙ্গলে ভ্রমণকালে এক উপজাতির সন্ধান পান, যারা নাকি ত্রিশ লক্ষ বছর আগে মানুষ যে অবস্থায় ছিল আজও সেই অবস্থাতেই রয়েছে। এটা একটা যুগান্তকারী আবিষ্কার। শুধু তাই নয়; সার্কাস বা চিড়িয়াখানার জন্য যে ভাবে জানোয়ার ধরা হয়, সেইভাবেই এই উপজাতির একটি নমুনাকে ধরে খাঁচায় পুরে ক্লাইন নিয়ে আসেন তাঁর বাসস্থান পশ্চিম জার্মানির হামবুর্গ শহরে। খবরের কাগজে এই মানুষের ছবি আমি দেখেছি। বানরের সঙ্গে তফাত করা খুব কঠিন, যদিও দুই পায়ে হাঁটে। তারপর থেকে ক্লাইনের বিশ্বজোড়া খ্যাতি। এই আদিম মানুষটি এখনও ক্লাইনের বাড়িতে খাঁচার মধ্যেই রয়েছে। কাঁচা মাংস খায়, মুখ দিয়ে জান্তব শব্দ করে, স্বভাবতই কোনও ভাষা ব্যবহার করে না, আর অধিকাংশ সময় ঘুমোয়। আমার ভীষণ ইচ্ছা হচ্ছিল একবার এই আদিমতম মানবের নমুনাটিকে দেখার; সে ইচ্ছা যে পূরণ হবার সম্ভাবনা আছে তা ভাবিনি। কিন্তু সে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কাল ক্লাইনের কাছ থেকে একটা চিঠি পেয়েছি। ক্লাইন লিখছে—

প্রিয় প্রোফেসর শঙ্কু,

ইনভেন্টর হিসেবে তোমার খ্যাতি আজ বিশ্বজোড়া। সব দেশের বিজ্ঞানীরাই তোমাকে সন্মান করে। আমি যে আদিমতম মানুষের—যাকে বলা হয় হোমো অ্যাফারেনসিস— একটি নমুনা সংগ্রহ করেছি সে খবর হয়তো তুমি কাগজে পড়েছ। আমি চাই তুমি একবার আশ্চর্য মানুষটিকে এসে দেখে যাও। আমি জানি তুমি বছরে অন্তত একবার ইউরোপে আসো। এ বছর কি তোমার আসার সম্ভাবনা আছে? যদি থাকে তো আমাকে জানিয়ো। যেখানেই থাক না কেন, সেখান থেকে তোমাকে আমি হামবুর্গ আসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। সব খরচ আমার। যে সময় তুমি আসবে, সে সময় আমি আরও কয়েকজন বৈজ্ঞানিককে ডাকতে চাই। এমন আশ্চর্য আদিম প্রাণী দেখার সুযোগ তোমাদের আর হবে না। আমরা যখন যাই, তখন এই প্রাণীর আর মাত্র বারোজন অবশিষ্ট ছিল। তারাও আর বেশিদিন বাঁচবে না। আর অন্য কোনও দলও যে সেখানে গিয়ে তাদের দেখা পাবে, এ সম্ভাবনাও কম, কারণ পথ অত্যন্ত দুর্গম আর নানারকম হিংস্র প্রাণীতে ভর্তি। আমার তরুণ বন্ধু বিশিষ্ট বৈজ্ঞানিক হেরমান বুশ তো নৌকো থেকে নদীর জলে পড়ে কুমিরের খাদ্যে পরিণত হয়। আমাদের নেহাত ভাগা যে আমরা প্রাণ নিয়ে ফিরেছি।

যাই হোক, তুমি কী স্থির কর আমাকে অবিলম্বে জানিও ।

হাইনরিখ ক্লাইন

আগামী সেপ্টেম্বর আমার জিনিভাতে একটা কনফারেন্সে নেমন্তন্ন আছে। যাওয়া নিয়ে দ্বিধা করেছিলাম—বয়স হয়ে গেছে—জেটে ঘোরাঘুরির ধকল আর সয় না- কিন্তু ক্লাইনের এই আমন্ত্রণের জন্য জিনিভাতে যাব বলে স্থির করেছি। এ সুযোগ ছাড়া যায় না। অ্যাদ্দিন যে সমস্ত মানুষের শুধু হাড়গোড়ের জীবাশ্ম বা ফসিল পাওয়া গিয়েছিল, সেই মানুষ জ্যান্ত দেখতে পাব এ কি কম সৌভাগ্য!

এখানে বলে রাখি ক্লাইনের তরুণ সহকর্মী হেরমান বুশের সঙ্গে আমার বছর পাঁচেক আগে ব্রেমেন শহরে আলাপ হয়। ছেলেটি ছিল এক অসাধারণ মেধাবী জীবতাত্ত্বিক। তার এ হেন মৃত্যু আমাকে মর্মাহত করেছিল। ক্লাইনের সঙ্গে আমার আলাপ হবার সুযোগ হয়নি। শুনেছি সে অতি সজ্জন ব্যক্তি। নৃতত্ব নিয়ে তার অনেক মৌলিক গবেষণা আছে।

মুশকিল হচ্ছে আমাকে সেপ্টেম্বরে বাইরে যেতে হলে আমার একটা কাজ হয়তো আমি শেষ করে যেতে পারব না। অবিশ্যি এলিক্সিরামের অভাবে এমনিও আমি আর খুব বেশি দূর অগ্রসর হতে পারব বলে মনে হয় না। আসলে আমি একটা ড্রাগ প্রস্তুতের ব্যাপারে একটা পরীক্ষা চালাচ্ছিলাম। এই ড্রাগ তৈরি হলে চতুর্দিকে সাড়া পড়ে যেত। এর সাহায্যে একজন মানুষের ক্রমবিবর্তনের মাত্রা লক্ষগুণ বাড়িয়ে দেওয়া যায়। অর্থাৎ একজন মানুষকে এই ড্রাগ

ইনজেক্ট করলে পাঁচ মিনিটের ভিতর তার মধ্যে দশ হাজার বছর বিবর্তনের চেহারা দেখা যেত। ওষুধ আমি তৈরি করেছি। প্রথমবার আমার চাকর প্রহ্লাদের উপর প্রয়োগ করে কোনও ফল পাইনি। তারপর এলিক্সিরামের মাত্রা একটু বাড়িয়ে দিয়ে আবার ইনজেক্ট করাতে দেখি প্রহ্লাদ অত্যন্ত জটিল গাণিতিক বিষয় নিয়ে বক্তৃতা দিতে আরম্ভ করেছে।

কিন্তু এই অবস্থা বেশিক্ষণ টেকেনি। দশ মিনিটের মধ্যে প্রহ্লাদ ঘুমিয়ে পড়ে। তারপর ঘুম যখন ভাঙে তখন দেখি সে আবার যেই কে সেই অবস্থায় ফিরে এসেছে। বলল, 'আপনি সুই দেবার পর মাথাটা ভোঁভোঁ করছিল। আমি বোধ হয় ভুল বকছিলাম, তাই না?'

আমার কাছে এলিক্সিরাম আর নেই। গত বছর জাপান থেকে এক শিশি এনেছিলাম। এই ড্রাগটিও মাত্র বছরতিনেক আবিষ্কার হয়েছে। অত্যন্ত শক্তিশালী ড্রাগ এবং দামও অনেক। তবে প্রহ্লাদের উপর প্রয়োগের ফলে যেটুকু ফল পেয়েছিলাম তাতেই যথেষ্ট উৎসাহিত বোধ করেছিলাম। ভবিষ্যতের মানুষের মস্তিষ্কের আয়তন বাড়বে তাতে আমার সন্দেহ নেই। তার পরের অবস্থায় হয়তো দীর্ঘকাল যন্ত্রের উপর নির্ভরের ফলে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দুর্বল হয়ে আসবে, কিন্তু নতুন নতুন যন্ত্র উদ্ভাবনের তাগিদে মস্তিষ্ক বেড়েই চলবে। অবিশ্যি এসব ঘটতে সময় লাগবে অনেক। বিবর্তনের ফলে রূপান্তরের চেহারা ধরা পড়তে পড়তে বিশ-পঁচিশ হাজার বছর পেরিয়ে যায়।

আমার ওষুধটা তৈরি হলে ভবিষ্যৎ মানুষ সম্বন্ধে আর অনুমান করতে হবে না; চোখের সামনে দেখতে পাব মানুষ কী ভাবে বদলাবে।

ক্লাইনের চিঠির জবাব আমি দিয়ে দিয়েছে। তাতে এও লিখেছি যে, আমার দুই বন্ধু ক্রোল আর সন্ডার্সকে সে যদি আমন্ত্রণ জানায় তা হলে খুব ভাল হয়, কারণ এদের দু'জনই স্ব স্ব ক্ষেত্রে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ক্রোল হল নৃতাত্ত্বিক আর সন্ডার্স জীববিদ্যা বিশারদ। আমার যাওয়া সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। প্রথমে জিনিভা, তারপর হামবুর্গ।

সেপ্টেম্বর ১০

আজ আমি জিনিভা রওনা দিচ্ছি। ক্রোল আর সন্ডার্স দু'জনেরই চিঠি বেশ কিছুদিন হল। পেয়েছি। দু'জনকেই ক্লাইন আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ক্রোলকে আমার ড্রাগের কথা লিখেছিলাম। সে উত্তরে লিখেছে,

'তোমার ওষুধ যে অবস্থায় রয়েছে সে অবস্থায়ই সঙ্গে করে নিয়ে এসো। ইউরোপের যে কোনও বড় শহরে এলিক্সিরাম পাওয়া যায়। হয়তো ক্লাইনের কাছেই থাকতে পারে। একই সঙ্গে অতীত ও ভবিষ্যতের মানুষকে দেখতে পারলে একটা দারুণ ব্যাপার হবে। ক্লাইন লোকটাকে আমার বেশ ভাল লাগে। আমার বিশ্বাস, সে নিশ্চয়ই তোমাকে তার ল্যাবরেটরিটা ব্যবহার করতে দেবে ।

আমি তাই সঙ্গে করে আমার ওষুধ এডলিউটিন-এর শিশিটা নিয়ে যাচ্ছি। সুযোগ পেলে প্রস্তাবটা ক্লাইনকে দেব।

সেপ্টেম্বর ১৬, হামবুর্গ

জিনিভার কাজ শেষ করে কাল হামবুর্গ পৌঁছেছি। অন্য অতিথিরাও একই দিনে এসেছে। ক্রোল আর সন্ডার্স ছাড়া আছে ফরাসি ভূতাত্ত্বিক মিশেল রামো, ইটালিয়ান পদার্থবিজ্ঞানী মার্কো বার্তেল্লি আর রুশ স্নায়ুবিশেষজ্ঞ ডা. ইলিয়া পেট্রফ।

আমি পৌঁছেছি রাত্রে। ক্লাইন আমাকে অভিবাদন জানিয়ে বলল, 'আমার সে মানুষ সন্ধ্যা থেকেই ঘুমোয়। ত্রিশ লক্ষ বছর আগে আদিম মানুষও তা-ই করত বলে আমার বিশ্বাস। আমি তাই কাল সকালে তোমাদের সকলকে তার কাছে নিয়ে যাব।'

আমি আর ল্যাবরেটরির কথাটা তুললাম না। দু'-একদিন এখানে থাকি, তারপর বলব। তবে তার সহকর্মীর মৃত্যুতে সমবেদনা জানানোর কথাটা ভুলিনি। তাকে যে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনতাম, সে কথাও বললাম। ক্লাইন বলল যে, অষ্টাদশ শতাব্দীর এক স্প্যানিশ পর্যটকের লেখা একটা অত্যন্ত দুষ্প্রাপ্য ভ্রমণকাহিনীতে নাকি ব্রেজিলের এই উপজাতির উল্লেখ আছে। লেখক বলেছেন, তারা বাঁদর ও মানুষের ঠিক মাঝের অবস্থায় রয়েছে। এতদিন আগের এই আশ্চর্য সিদ্ধান্ত ক্লাইনকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করেছিল। এই বিবরণই ক্লাইনকে টেনে নিয়ে যায় আমাজনের গভীর জঙ্গলে। সেটা যে সফল হবে তা সে কল্পনাও করতে পারেনি।

নৈশভোজের কোনও ত্রুটি হল না। পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়া ছাড়াও তিনজন অচেনা বৈজ্ঞানিকের সঙ্গে আলাপ করেও খুব ভাল লাগল। বার্তেল্লি, রামো আর পেট্রফ তিনজনেই আদিমতম মানুষটিকে দেখার জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে আছে। সকলেই স্বীকার করল যে, এ একটি আশ্চর্য আবিষ্কার, আর আমাজনের জঙ্গল এক অতি আশ্চর্য জায়গা। পেট্রফ ক্লাইনকে প্রশ্ন করল, 'তুমি কি এই মানুষটিকে সভ্যতার পথে খানিকটা এগিয়ে নিয়ে যাবার কোনও চেষ্টা করছ?'

ক্লাইন বলল, 'যে মানুষ প্রায় ত্রিশ লক্ষ বছর আগের অবস্থায় রয়েছে, তাকে কিছু শেখানো যাবে বলে মনে হয় না। সবচেয়ে আশ্চর্য এই যে, এতদিন এসব মানুষের ফসিল পাওয়া গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়, আর আসল মানুষটি পাওয়া গেল দক্ষিণ আমেরিকায়।'

'ওকে রেখেছ কীভাবে?' বার্তেল্লি জিজ্ঞেস করল।

'আমারই কম্পাউন্ডে একশো গজ ব্যাসের একটি শিক দিয়ে ঘেরা জায়গা করে তার মধ্যে রেখেছি। ঘরের মধ্যে খাঁচার ভিতর রাখার ইচ্ছে আমার আদৌ ছিল না। প্রাকৃতিক পরিবেশে ও দিব্যি আছে। ওর দলের লোকের অভাব বোধ করার কোনও লক্ষণ এখনও দেখিনি। ওর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি সশস্ত্র লোক রাখতে হয়েছে। এমনিতে ও কোনও হিংস্র ভাব দেখায় না, কিন্তু আমি জানি ওর শারীরিক শক্তি প্রচণ্ড। একটা গাছের মোটা ডাল সে হাত দিয়ে মট করে ভেঙে দিয়েছিল।'

‘ওর মধ্যে সুখদুঃখ জাতীয় অভিব্যক্তির কোনও লক্ষণ দেখেছ?' আমি প্রশ্ন করলাম। 'না,' বলল ক্লাইন। 'ও শুধু মাঝে মাঝে মুখ দিয়ে একরকম শব্দ করে যার সঙ্গে গোরিলার হুংকারের কিছুটা মিল আছে।'

'চার পায়ে আদৌ হাঁটে কি?

না। এ যে মানুষ তাতে কোনও সন্দেহ নেই। সব সময় দু' পায়েই হাঁটে। ফলমূল খায়, মাংসও খায়। তবে মাংসটা খায় কাঁচা, ঝলসে নয়। এ মানুষ এখনও আগুনের ব্যবহার শেখেনি। একদিন ওর সামনে আগুন জ্বালিয়ে দেখেছি, ও চিৎকার করে দূরে পালিয়ে যায়। সাড়ে দশটা নাগাদ আমরা যে যার ঘরে চলে গেলাম। অতিথিসৎকারের কোনও ত্রুটি করেনি ক্লাইন, এটা স্বীকার করতেই হবে।

সেপ্টেম্বর ১৭, রাত ১১টা

আজ বিচিত্র অভিজ্ঞতা। আমরা ছয়জন বৈজ্ঞানিক আজ একটি জ্যান্ত 'হোমো অ্যাপারেনিসস'-কে দেখলাম। দু' পায়ে না হাঁটলে ওকে বাঁদর বলেই মনে হত। সর্বাঙ্গ খয়েরি লোমে ঢাকা। ক্লাইন মানুষটাকে একটা হাফপ্যান্ট পরিয়ে তার মধ্যে খানিকটা সভ্য ভাব আনবার চেষ্টা করেছে, আর কাছেই ফেলে রেখেছে একটা ভাল্লুকের লোম — শীত লাগলে গায়ে জড়াবার জন্য। সেটা নাকি এখনও পর্যন্ত ব্যবহার করার কোনও দরকার হয়নি। মাটিতে একটা সিমেন্ট করা গর্তে জল রাখা রয়েছে, সেটা তৃষ্ণা নিবারণের জন্য। আমাদের সামনেই প্রাণীটা তার থেকে জল খেল জানোয়ারের মতো করে। তারপর আমাদের এতজনকে একসঙ্গে দেখেই বোধ হয় একটা চেস্টনাট গাছের পিছনে গিয়ে কিছুক্ষণ লুকিয়ে থেকে তারপর অতি সন্তর্পণে আবার বেরিয়ে এল। ক্লাইন বোধ হয় ইচ্ছা করেই চারিদিকে ছোটবড় পাথরের টুকরো ছড়িয়ে রেখেছে। মানুষটা

এবার তারই একটা হাতে নিয়ে এদিকে ওদিকে ছুড়ে যেন খেলা করতে লাগল। সত্যি, এমন দৃশ্য কোনওদিন দেখব তা স্বপ্নেও ভাবিনি। পেট্রফ তার ক্যামেরা দিয়ে কিছু ছবি তুলল। যদিও লোকটা বিশ গজের বেশি কাছে আসছে না।

আমরা থাকতে থাকতেই সশস্ত্র প্রহরী একটা প্লাস্টিকের বালতিতে কাঁচা গোরুর মাংস নিয়ে গিয়ে মানুষটাকে খেতে দিল। তার চোয়ালের জোর সাংঘাতিক, সেটা চোখের সামনেই দেখতে পেলাম।

দুপুরে লাঞ্চ খেতে খেতে ক্রোল একটা কথা বলল ক্লাইনকে।

'তোমার এই মানুষটি যে নেটা বা লেফট-হ্যান্ডেড, সেটা লক্ষ করেছ বোধহয়।

সেটা আমিও লক্ষ করেছিলাম। সে পাথরগুলো বাঁ হাত দিয়ে তুলছিল। ক্লাইন বলল, “জানি। ওটা আমি প্রথম দিনই লক্ষ করেছি।'

রামো বলল, 'তোমার এই আদিম মানুষের চাহনিতে কিন্তু একটা বুদ্ধির আভাস আছে; যেভাবে সে আমাদের দিকে চেয়ে চেয়ে দেখছিল—'

ক্লাইন কথার পিঠে কথা চাপিয়ে বলল, 'তার মানেই বুঝতে হবে হোমো অ্যাফারেনসিসকে আমরা যত বোকা ভাবতাম, আসলে সে তত বোকা নয়। চার পা থেকে দু'পায়ে হাঁটবার সঙ্গে সঙ্গেই তার মস্তিষ্কের আয়তনও নিশ্চয়ই বেড়ে গিয়েছিল।'

আমি এইবার ক্লাইনকে অনুরোধ করলাম তার ল্যাবরেটরিটা দেখবার জন্য। ক্লাইন খুশি হয়েই সম্মত হল। বলল, 'বেশ তো, খাবার পরেই না হয় যাওয়া যাবে।'

লাঞ্চের শেষে চমৎকার ব্রেজিলিয়ান কফি খাইয়ে ক্লাইন আমাদের নিয়ে গেল তার গবেষণাগার দেখাতে। যন্ত্রপাতি ওষুধপত্রে পরিপূর্ণ ল্যাবরেটরি, দেখে মনে হল সেখানে যে কোনওরকম এক্সপেরিমেন্ট চালানো যায়। সবচেয়ে ভাল লাগল দেখে যে, ল্যাবরেটরির একপাশে একটা সেলফে অনেকগুলি শিশি বোতলের মধ্যে তিনটে পাশাপাশি শিশিতে এলিক্সিরাম রয়েছে। অবিশ্যি আমার ড্রাগের কথা এখনও ক্লাইনকে বলিনি।

রাত্রে ডিনার খেয়ে কিছুক্ষণ গল্প করে পরস্পরকে গুড নাইট জানিয়ে যে যার ঘরে চলে গেলাম। আমার মনে কীসের জন্য জানি একটা খটকা লাগছে, অনেক ভেবেও তার কোনও কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। এমন সময় দরজায় টোকা পড়ল। ঘড়িতে দেখি পৌনে এগারোটা। এত

রাত্রে কে?

দরজা খুলে দেখি ক্রোল আর সন্ডার্স। ব্যাপার কী?

ক্রোল বলল, 'আমি যে ঘরে রয়েছি সে ঘরে নিশ্চয়ই কোনও সময় হেরমান বুশ ছিল।

কারণ তার একটা খাতা একটা দেরাজের মধ্যে পেলাম।'

'কী আছে সে খাতায় ?'

'যা আছে তা পড়লে মন খারাপ হয়ে যায়। আমাজনের জঙ্গলে নদীপথে সাড়ে তিনশো মাইল যাবার পরেও আদিম মানুষের দেখা না পেয়ে ক্লাইন নাকি হাল ছেড়ে দিয়েছিল। বুশই তাকে উৎসাহ দিয়ে নিয়ে যায়। সে বলে যে, স্প্যানিশ পর্যটকের বিবরণ কখনও ভুল হতে পারে না। কিন্তু—'

“কিন্তু কী ?”

“বুশের মনে একটা সংশয় দেখা দিয়েছিল। তার মন বলছিল যে, সে এই অভিযানের শেষ দেখে যেতে পারবে না। সে বলছে যে, তার মধ্যে যে একটা ভবিষ্যৎ দর্শনের অলৌকিক ক্ষমতা আছে সেটা সে অনেক সময় লক্ষ করেছে। ক্লাইনের মধ্যে কোনও সংশয় ছিল না; প্রাণের ভয় সে কখনই করেনি। সে অত্যন্ত সাহসী ছিল। জাহাজে যেতে যেতেও সে একাগ্রমনে একটা এক্সপেরিমেন্ট চালিয়ে যাচ্ছিল।'

'কী এক্সপেরিমেন্ট?'

'সেটা বুশ বলেনি। বুশ নিজেও জানত বলে মনে হয় না।

"বেচারি বুশ!

বুশের মৃত্যুতে এমনিই আমি আঘাত পেয়েছিলাম, এ খবরে মনটা আরও বেশি খারাপ হয়ে

গেল।

'শুধু তাই নয়,' বলল ক্রোল। 'ক্লাইন যে একটা যুগান্তকারী আবিষ্কার করে বিশ্ববিখ্যাত হয়ে যাবে সেটাও বুশ বুঝতে পেরেছিল। তাই সে আরও চাইছিল যাতে ক্লাইন না পিছু হটে।'

সভার্স কিছুক্ষণ থেকে একটু অন্যমনস্ক ছিল। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম সে কী ভাবছে। সে বলল, 'কিছুই না। একটা সামান্য খটকা। আমার ধারণা ছিল আদিম মানুষ বুঝি বেঁটে হয়, কিন্তু এ দেখছি প্রায় পাঁচ ফুট ন' ইঞ্চির কাছাকাছি।'

আমি বললাম, 'তার কারণ আর কিছুই নয়; এ মানুষ আদিম হলেও আসলে সে বিংশ শতাব্দীর প্রাণী। এর সব লক্ষণ হোমো অ্যাফারেনসিসের সঙ্গে মিলবে এটা মনে করা ভুল।'

'তা বটে।'

রাত হয়েছিল। তাই আমাদের কথা বেশিদূর এগোল না। ক্রোল বিদায় নেবার সময় বলে গেল, 'এবার তোমার ড্রাগের কথাটা ক্লাইনকে বলো। ওর এলিক্সিরাম তো তোমার লাগবে।

সে ব্যাপারে আশা করি ও কোনও আপত্তি করবে না।

পরিণামে কী আছে জানি না, কিন্তু কাল সকালেই ক্লাইনকে আমার ড্রাগটা সম্বন্ধে বলতে হবে।

সেপ্টেম্বর ১৮

আজ সকালে ব্রেকফাস্টের টেবিলে সকলের সামনে আমার এভিনিউটিন-এর কথাটা বললাম। আমার চাকরের উপর পরীক্ষা করে কী ফল হয়েছে সেটাও জানালাম, আর সব শেষে ক্লাইনের কাছে আমার আর্জি পেশ করলাম। —'তোমার এলিক্সিরামের এক চামচ পেলেই মনে হয় আমার কাজটা সফল হবে। তার জন্য যা দাম লাগে, আমি দিতে রাজি।' ক্লাইন দেখলাম রীতিমতো অবাক হল আমার ওষুধটার কথা শুনে। বলল, 'এক চামচ

এলিক্সিরামের জন্য দাম দেবার কথা বলছ? কীরকম মানুষ তুমি? কিন্তু এই ওষুধ তৈরি হলে

তুমি কার উপর পরীক্ষা করবে? সে লোক কোথায় ? আমি হেসে বললাম, 'কেন, তোমার হোমো অ্যাফারেনসিস তো রয়েছে। তার উপর পরীক্ষা করলে সে আধ ঘণ্টার মধ্যে আধুনিক মানুষ হোমো স্যাপিয়েনসে পরিণত হবে।' আমি ঠিক জানি না, কিন্তু মনে হল আমার কথাটা শুনে ক্লাইনের চোখে একটা ঝিলিক খেলে গেল। সে বলল, 'এর অ্যান্টিডোট তুমি তৈরি করেছ, যাতে সেটা খাইয়ে মানুষকে আবার পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায় ?'

আমি মাথা নেড়ে বললাম, 'সে ব্যবস্থাও আছে।'

'তুমি দেখছি খুব থরো,' বলল ক্লাইন। যাই হোক, আমার একটা ব্যাপার আছে, সেটা আমি। বলিনি-আমি জ্যোতিষে বিশ্বাস করি। আজকের দিনটা এই জাতীয় পরীক্ষার পক্ষে ভাল নয়। তোমাকে আমি এলিক্সিরাম দেব কাল। কাল সকালে।'

ব্রেকফাস্টের পর আমরা আবার আদিম মানুষটিকে দেখতে গেলাম। আজ দেখলাম তার ভয় অনেকটা কমে গেছে। সে আমাদের দশ হাতের মধ্যে এগিয়ে এসে আমাদের দিকে চেয়ে দেখতে লাগল। আমার উপর দৃষ্টি রাখল প্রায় দু'মিনিট। তারপর মুখ দিয়ে একটা রুক্ষ শব্দ করল, যদিও তার মধ্যে রাগের কোনও চিহ্ন ছিল না।

আমার মন থেকে কিন্তু খটকা যাচ্ছে না। অ্যাফারেনসিসের এই বিশেষ নমুনাটিকে দেখলেই আমি কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে পড়ি। কেন তা বলতে পারব না। হয়তো বয়সের সঙ্গে আমার চিন্তাশক্তিও কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।

সেপ্টেম্বর ১৮, রাত দশটা

আজ ডিনার খাবার পর থেকে গা-টা কেমন গুলোচ্ছিল। শুধু গা গুলোচ্ছিল বললে ভুল হবে, সেইসঙ্গে মাথাটাও কেমন জানি গোলমাল লাগছিল, চিন্তা ওলটপালট হয়ে যাচ্ছিল। আমার সঙ্গে আমারই তৈরি আশ্চর্য ওষুধ মিরাকিউরল ছিল। তার এক ডোজ খেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলাম। এরকম আমার কখনও হয় না। আজ কেন হল?

দশ মিনিটের মধ্যে দরজায় টোকা পড়ল। খুলে দেখি সন্ডার্স আর ক্রোল। ক্রোল বলল, "আজ ডিনারে আমাদের পানীয়তে বোধ হয় কিছু মেশানো ছিল। মাথাটা ঘুরছে, চিন্তা সব গোলমাল হয়ে যাচ্ছে।'

সন্ডার্স বলল, 'আমারও সেই অবস্থা।'

আমি দু'জনকেই মিরাকিউরল খাইয়ে সুস্থ করলাম।

কিন্তু অন্য তিনজনের কী হবে?

আমরা তিনজন ওষুধ নিয়ে ছুটলাম। ওদের ঘর জানা ছিল, দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলিয়ে সকলকেই ওষুধ দিলাম। সকলেরই একই অবস্থা। পেট্রফ ভাল ইংরিজি জানে, আমাদের সঙ্গে ইংরিজিতেই কথা বলে, কিন্তু এখন সে রাশিয়ান ছাড়া কিছুই বলছে না—তাও আবার ব্যাকরণে ভুল। বার্তেল্লি তার ভাষায় কেবল মাম্মা মিয়া, মাম্মা মিয়া' অর্থাৎ 'মাগো, মাগো' বলছে, আর আমাদের ফরাসি বন্ধু কোনও কথাই বলছে না, কেবল ঘোলাটে দৃষ্টি নিয়ে ফ্যালফ্যাল করে সামনের দিকে চেয়ে আছে। যাই হোক, আমার আশ্চর্য ওষুধের গুণে সকলেই সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এল।

প্রশ্ন হল—এখন কী কর্তব্য। ক্লাইন কি কোনও কারণে আমাদের পিছনে লেগেছে? কিন্তু কেন? আমায় বাধা দেওয়ায় তার আগ্রহ হবে কেন, আর সেইসঙ্গে অন্য সকলের উপরেও

আক্রোশ কেন? এ নিয়ে এখন ভেবে লাভ নেই। আমরা পরস্পরের কাছে বিদায় নিয়ে যে যার ঘরে ফিরে এলাম। 

আর তার পরেই আমার মনের খটকার কারণটা বুঝতে পারলাম, আর সেইসঙ্গে বুঝলাম যে, আমার এভলিউটিন ওষুধ যথাশীঘ্র সম্ভব তৈরি করা দরকার।

কিন্তু ক্লাইনের সঙ্গে আমাদের যা সম্পর্ক, সে কি আমাদের কোনওরকম সাহায্য করবে? সেটা কাল সকালের আগে জানা যাবে না।

সেপ্টেম্বর ১৯

আজ সকালে ব্রেকফাস্টে নামতেই ক্লাইন জিজ্ঞেস করল, কাল তোমরা সুস্থ ছিলে ? আমার শরীরটা কিন্তু খুব খারাপ হয়েছিল। মনে হয় কোনও খাবারে কোনও গোলমাল ছিল।' আমরা অবিশ্যি সকলেই স্বীকার করলাম যে, আমাদেরও শরীরটা খারাপ হয়েছিল এবং ওষুধ খেয়ে তবে সুস্থ হয়েছি।

'কী ওষুধ খেলে?' জিজ্ঞেস করল ক্লাইন।

'প্রোফেসর শঙ্কুর তৈরি একটা ওষুধ', বলল সন্ডার্স।

'আহা, আমি জানলে তো আমিও খেতাম,' বলল ক্লাইন। আমাকে সারা রাত ছটফট করতে হয়েছে। আজ সকালে ছটার পরে অনুভব করলাম উদ্বেগটা কেটে গেছে।'

আমি বললাম, ভাল কথা, আজ যদি এলিক্সিরামটা পাই তা হলে খুব কাজ হয়। '

'বেশ তো, ব্রেকফাস্টের পরই দেব তোমায়।

ব্রেকফাস্টের পর ক্রোল, সন্ডার্স আর পেট্রফ একটু বেড়াতে বেরোল। বার্তেল্লি আর রামো বলল যে, তারা আজ আদিম মানুষের কয়েকটা ছবি তুলবে। মানুষটা যখন ভয় কাটিয়ে উঠে কাছে আসতে শুরু করেছে, তখন ভাল ছবি উঠবে।

ক্লাইনের সঙ্গে আমি গেলাম ল্যাবরেটরিতে। ক্লাইন তাক থেকে একটা এলিক্সিরামের শিশি নামাতেই দেখলাম ওষুধ পালটানো হয়েছে। এর চেহারা এবং গন্ধ এলিক্সিরামের নয়। এলিক্সিরামে একটা খুব হালকা নীলের আভাস পাওয়া যায়; এটা একেবারে জলের মতো দেখতে। আমার চোখে ধুলো দেওয়া অত সহজ নয়।

তবে বাইরে আমি কিছু প্রকাশ করলাম না। একটা ঢাকনাওয়ালা পাত্রে তরল পদার্থটার এক চামচ নিয়ে ঢাকনা বন্ধ করে দিলাম।

ব্যর্থ মনোরথ হওয়াতে মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল, তাই নিজের ঘরে চলে এলাম। আজ আর আদিম প্রাণীটাকে দেখতে ইচ্ছা করছিল না। আমার গবেষণা সার্থক হতে হতে হল না। এর চেয়ে আপশোসের আর কী হতে পারে? অবিশ্যি শহরে খোঁজ করলে ড্রাগিস্টের দোকানে নিশ্চয়ই এলিক্সিরাম পাওয়া যাবে, কিন্তু সে ব্যাপারে যে ক্লাইন ব্যাগড়া দেবে না তার কী স্থিরতা?

সাড়ে দশটায় দরজায় টোকা পড়ল। খুলে দেখি সন্ডার্স আর ক্রোল।

'ড্রাগ নিয়েছ?' প্রশ্ন করল কোল।

বললাম, 'নিয়েছি, কিন্তু সেটা আসল জিনিস নয়। ভেজাল।'

'সেটা আমি আন্দাজ করেছিলাম। এই নাও তোমার এলিক্সিরাম।' ক্রোল পকেট থেকে একটা শিশি বার করে আমাকে দিল।

আমার ধড়ে প্রাণ এল। আমি তৎক্ষণাৎ আমার ওষুধের সঙ্গে এক চামচ এলিক্সিরাম মিশিয়ে দিলাম।

'কিন্তু এটা তুমি কার উপর প্রয়োগ করতে চাও?' জিজ্ঞেস করল সন্ডার্স।

আমি বললাম, 'যার উপর করলে একটা বিরাট রহস্য উদ্ঘাটিত হবে। কিন্তু এখন নয়। রাত্রে।'

কোল আর সন্ডার্সের অনেক পীড়াপীড়ি সত্ত্বেও আমি কী করতে যাচ্ছি সেটা বললাম না। দুপুরে লাঞ্চের সময় ক্লাইন বলে পাঠাল যে, তার শরীরটা আবার খারাপ হয়েছে, তাকে যেন আমরা ক্ষমা করি এবং তাকে ছাড়াই খেয়ে নিই। বিকেলে আমরা সকলে হামবুর্গ শহর দেখতে বেরোলাম। সন্ধ্যা সাতটায় ফিরে এসে

জানলাম যে, ক্লাইন সুস্থ, একটু বেরিয়েছেন এবং ডিনারের আগেই ফিরবেন। আমার কেন জানি বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠল। ক্লাইন বেরিয়েছে? সে একা, না তার সঙ্গে আর কেউ গেছে?

আমি বাকি পাঁচজনের দিকে চেয়ে বললাম, 'আমি একটা গোলমালের আশঙ্কা করছি।

আমাদের একবার দেখা দরকার আদিম মানুষটা তার খাঁচায় আছে কি না। তোমরা এক মিনিট অপেক্ষা করো, আমি আমার অস্ত্রটা নিয়ে নিই, কারণ কী ঘটবে কিছুই বলা যায় না।'

আমার অ্যানাইহিলিন পিস্তলটা যে আমি সব সময় সঙ্গে নিয়ে সফরে যাই তা নয়, কিন্তু এবার কেন জানি নিয়ে এসেছিলাম। বাক্স থেকে সেটা বার করে নিয়ে বাকি পাঁচজনকে নিয়ে ছুটলাম বাড়ির উত্তর দিকে লোহার শিকে ঘেরা অ্যাফারেনসিসের খাঁচার উদ্দেশে।

শিকের এক জায়গায় একটা লোহার গেট, সেখান দিয়েই ভিতরে ঢুকতে হয়। গেটের সামনে সশস্ত্র প্রহরী দাঁড়িয়ে রয়েছে—ক্লাইনের বিশ্বস্ত রুডলফ। আমাদের দেখে সে রিভলভার বার করল। কী আর করি—আমার অ্যানাইহিলিনের সাহায্যে তাকে অস্ত্রসমেত নিশ্চিহ্ন করে দিতে হল।

এখন পথ খোলা। আমরা ছয়জন ঢুকলাম খাঁচার মধ্যে। কিন্তু মিনিটখানেক এদিক ওদিক দেখেই বুঝলাম যে, আদিম মানুষ নেই। অর্থাৎ ক্লাইন তাকে নিয়েই বেরিয়েছে।

এবারে ক্রোল তার তৎপরতা দেখাল। সে বাড়ির ভিতরে গিয়ে সোজা পুলিশ স্টেশনে ফোন করল। ক্লাইনের ডেমলার গাড়ির নম্বরটা আমার মনে ছিল। সেটা ক্রোল পুলিশকে জানিয়ে দিয়ে বলল, এ গাড়ির জন্য এক্ষুনি যেন অনুসন্ধান করা হয়।

বিশ মিনিট লাগল পুলিশের কাছ থেকে উত্তর আসতে। কোনিগস্ট্রাসে আর গুনবার্গ স্ট্রাসের সঙ্গমস্থলে গাড়িটা ধরা পড়েছে, ক্লাইন রিভলভার দিয়ে একটি পুলিশকে জখমও করেছে। ক্লাইনের সঙ্গে একটি বুনো লোক রয়েছে, দু'জনকেই পুলিশ স্টেশনে নিয়ে আসা হয়েছে, আমরা যেন সেখানে যাই।

ফোন করে দুটো ট্যাক্সি আনিয়ে আমরা ক'জন পুলিশ স্টেশনে গিয়ে হাজির হলাম । ক্লাইনকে জেরা করা হচ্ছে, আমরা দেখতে চাইলাম বুনো মানুষটিকে। একটি কনস্টেবল আমাদের একটা ভিতরের ঘরে নিয়ে গেল। ঘরে আসবার বলতে একটিমাত্র টেবিল আর একটি চেয়ার। মেঝের এক কোণে কুণ্ডলী পাকিয়ে আমাদের পরিচিত হোমো অ্যাফারেনসিস ঘুমোচ্ছে।

আমি আমার পকেট থেকে একটা বাক্স বার করে ঘুমন্ত মানুষটির দিকে এগিয়ে গেলাম। বাক্সে ইনজেকশনের সব সরঞ্জাম আর আমার এভলিউটিন ড্রাগ ছিল। ড্রাগটা সিরিঞ্জে ভরে ঘুমন্ত মানুষটির লোমশ হাতে একটা ইনজেকশন দিয়ে দিলাম।

তারপর গভীর উৎকণ্ঠায় আমরা ছয়জন বৈজ্ঞানিক ইনজেকশনের প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।

পাঁচ মিনিটের মধ্যেই রূপান্তর শুরু হল। গায়ের লোম মিলিয়ে এল, কপাল প্রশস্ত হল, চোয়াল বসে গেল, চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে এল, শরীরের মাংসপেশী কমে এল।

পনেরো মিনিটের মাথায় বোঝা গেল, আমরা যাকে দেখছি সে ব্রেজিলের কোনও উপজাতির অন্তর্গত নয়; সে ইউরোপের অধিবাসী, তার গায়ের রং আমার বন্ধুদেরই মতো। তার মাথার চুল সোনালি, তার শরীর দেখলে মনে হয় না তার বয়স ত্রিশের বেশি, তার নাক চোখে বোঝা যায় সে সুপুরুষ।

'মাইন গট!' বলে উঠল ক্রোল। 'এ যে হেরমান বুশ।'

আমি এবার আরেকটা ইনজেকশন দিয়ে বিবর্তন বন্ধ করে দিলাম। তারপর হাত দিয়ে ঠেলা দিতেই বুশ ধড়মড়িয়ে উঠে বসে চোখ কচলে জার্মান ভাষায় প্রশ্ন করল, 'তোমরা কে? আমি কোথায় ?'

আমি বললাম, 'আমরা তোমার বন্ধু। তোমার যে শত্রু সে এখন পুলিশের জিম্মায়। এবার বলো তো ক্লাইন কী এক্সপেরিমেন্ট করছিল?" 'ওঃ!' বুশ কপাল চাপড়াল। হি ওয়াজ প্রিপেয়ারিং দ্য ড্রাগ অব সেটান।' অর্থাৎ সে

শয়তানের দাওয়াই তৈরি করছিল। ওটা ইনজেক্ট করলে মানুষ বিবর্তনের পথে পিছিয়ে যেত।

ক্লাইন সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলে আমাকে রেজিলে নিয়ে যায়; তারপর একদিন সুযোগ পেয়ে আমাজন নদীতে আমাদের জাহাজের একটা ঘরে আমাকে রিভলভার দেখিয়ে জোর করে ইঞ্জেকশনটা দেয়। তারপর কী হয়েছে আমি জানি না। কিন্তু তোমরা...তোমাদের তো অনেককেই চিনি দেখছি। ইউ আর প্রোফেসর শঙ্কু, তাই না?”

“তাই। এবার আমি তোমাকে একটা প্রশ্ন করতে চাই।'

''কী?'

“তুমি তো লেফট হ্যান্ডেড – তাই না? আমার ডায়রিতে তুমি তো তোমার নামঠিকানা লিখে দিয়েছিলে। তখন থেকেই আমার মনে আছে।'

'ইয়েস—আই অ্যাম লেফট হ্যান্ডেড।'

আমার খটকার কারণ ছিল এটাই। আশ্চর্য এই যে, আমরা দু'জন বৈজ্ঞানিক প্রায় একই গবেষণায় লিপ্ত ছিলাম, ও যাচ্ছিল পিছন দিকে, আমি যাচ্ছিলাম ভবিষ্যতের দিকে। এখন দেখছি যে, বিবর্তন নিয়ে বেশি কৌতূহল প্রকাশ না করাই ভাল। যা হচ্ছে তা আপনা থেকেই হোক। আমার এভলিউটিনের শিশি আমার গিরিডির তাকেই শোভা পারে—ওটা আর ব্যবহার করার কোনও প্রশ্ন ওঠে না। তবে এটা স্বীকার করতেই হবে যে বর্তমান ক্ষেত্রে এটা কাজ দিয়েছে আশ্চর্যভাবে।

ক্লাইনের নিস্তার নেই, কারণ তার গুলিতে যে পুলিশটি জখম হয়েছিল, সে এইমাত্র মারা গেছে।

38
Articles
শঙ্কু সমগ্র
0.0
একটি প্রফেসর এর জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু মহাজাগতিক ঘটনার সম্মিলিত রূপ
1

ব্যোমযাত্রীর ডায়রি

30 October 2023
1
0
0

প্রোফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কুর ডায়রিটা আমি পাই তারক চাটুজ্যের কাছ থেকে । একদিন দুপুরের দিকে আপিসে বসে পুজো সংখ্যার জন্য একটা লেখার প্রুফ দেখছি, এমন সময় তারকবাবু এসে একটা লাল খাতা আমার সামনে ফেলে দিয়ে

2

প্রোফেসর শঙ্কু ও ঈজিপ্সীয় আতঙ্ক

30 October 2023
1
0
0

পোর্ট সেইডের ইম্পিরিয়াল হোটেলের ৫ নং ঘরে বসে আমার ডায়রি লিখছি ! এখন রাত সাড়ে এগারোটা। এখানে বোধ হয় অনেক রাত অবধি লোকজন জেগে থাকে, রাস্তায় চলাফেরা করে, হইহল্লা করে। আমার পূর্বদিকের খোলা জানালাটা দ

3

প্রোফেসর শঙ্কু ও হাড়

30 October 2023
1
0
0

(বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক প্রোফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু বেশ কয়েক বছর যাবৎ নিখোঁজ । তাঁর একটি ডায়রি কিছুদিন আগে আকস্মিকভাবে আমাদের হাতে আসে। 'ব্যোমযাত্রীর ডায়রি' নাম দিয়ে আমরা সন্দেশে ছাপিয়েছি। ইতিমধ্যে আম

4

প্রোফেসর শঙ্কু ও ম্যাকাও

30 October 2023
1
0
0

৭ই জুন বেশ কিছুদিন থেকেই আমার মন মেজাজ ভাল যাচ্ছিল না। আজ সকালে একটা আশ্চর্য ঘটনার ফলে আবার বেশ উৎফুল্ল বোধ করছি। আগে মেজাজ খারাপ হবার কারণটা বলি। প্রোফেসর গজানন তরফদার বলে এক বৈজ্ঞানিক কিছুদিন আগে

5

প্রোফেসর শঙ্কু ও আশ্চর্য পুতুল

30 October 2023
2
0
0

আজ আমার জীবনে একটা স্মরণীয় দিন! সুইডিস অ্যাকাডেমি অফ সায়ান্স আজ আমাকে ডক্টর উপাধি দান করে আমার গত পাঁচ বছরের পরিশ্রম সার্থক করল। এক ফলের বীজের সঙ্গে আর এক ফলের বীজ মিশিয়ে এমন আশ্চর্য সুন্দর, সুগন্ধ

6

প্রোফেসর শঙ্কু ও গোলক-রহস্য

31 October 2023
1
0
0

৭ই এপ্রিলঅবিনাশবাবু আজ সকালে এসেছিলেন। আমাকে বৈঠকখানায় খবরের কাগজ হাতে বসে থাকতে দেখে বললেন, 'ব্যাপার কী ? শরীর খারাপ নাকি ? সকালবেলা এইভাবে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে দেখেছি বলে তো মনে পড়ে না।'আমি বল

7

প্রোফেসর শঙ্কু ও চী-চিং:

31 October 2023
1
0
0

১৮ই অক্টোবরআজ সকালে সবে ঘুম থেকে উঠে মুখটুখ ধুয়ে ল্যাবরেটরিতে যাব, এমন সময় আমার চাকর প্রহ্লাদ এসে বলল, 'বৈঠকখানায় একটি বাবু দেখা করতে এয়েছেন। আমি বললাম, 'নাম জিজ্ঞেস করেছিস ?"প্রহ্লাদ বলল, 'আজ্ঞে

8

প্রোফেসর শঙ্কু ও খোকা

31 October 2023
1
0
0

৭ই সেপ্টেম্বরআজ এক মজার ব্যাপার হল। আমি কাল সকালে আমার ল্যাবরেটরিতে কাজ করছি, এমন সময় চাকর প্রহ্লাদ এসে খবর দিল যে একটি লোক আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। কে লোক জিজ্ঞেস করতে প্রহ্লাদ মাথা চুলকে বলল 'আজ

9

প্রোফেসর শঙ্কু ও ভূত

31 October 2023
1
0
0

১০ই এপ্রিলভূতপ্রেত প্ল্যানচেট টেলিপ্যাথি ক্লেয়ারভয়েন্স—এ সবই যে একদিন না একদিন বিজ্ঞানের আওতায় এসে পড়বে, এ বিশ্বাস আমার অনেকদিন থেকেই আছে। বহুকাল ধরে বহু বিশ্বস্ত লোকের ব্যক্তিগত ভৌতিক অভিজ্ঞতার ক

10

প্রোফেসর শঙ্কু ও রোবু

2 November 2023
1
0
0

১৬ই এপ্রিল আজ জার্মানি থেকে আমার চিঠির উত্তরে বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক প্রোফেসর পমারের চিঠি পেয়েছি। পমার লিখছেন— প্রিয় প্রোফেসর শঙ্কু, তোমার তৈরি রোবো (Robot) বা যান্ত্রিক মানুষ সম্বন্ধে তুমি যা লিখেছ,

11

প্রোফেসর শঙ্কু ও রক্তমৎস্য রহস্য

2 November 2023
1
0
0

১৩ই জানুয়ারি গত ক'দিনে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেনি, তাই আর ডায়রি লিখিনি। আজ একটা স্মরণীয় দিন, কারণ আজ আমার লিঙ্গুয়াগ্রাফ যন্ত্রটা তৈরি করা শেষ হয়েছে। এ যন্ত্রে যে কোনও ভাষার কথা রেকর্ড হয়ে গিয়ে তিন

12

প্রোফেসর শঙ্কু ও কোচাবাম্বার গুহা

2 November 2023
1
0
0

৭ই আগস্ট আজ আমার পুরনো বন্ধু হনলুলুর প্রোফেসর ডাম্বার্টনের একটা চিঠি পেয়েছি। তিনি লিখছেন— প্রিয় শ্যাঙ্কস, খামের উপর ডাকটিকিট দেখেই বুঝতে পারবে যে বোলিভিয়া থেকে লিখছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকেও যে

13

প্রোফেসর শঙ্কু ও গোরিলা

2 November 2023
1
0
0

১২ই অক্টোবর আজ সকালে উশ্রীর ধার থেকে বেড়িয়ে ফিরছি, এমন সময় পথে আমার প্রতিবেশী অবিনাশবাবুর সঙ্গে দেখা। ভদ্রলোকের হাতে বাজারের থলি। বললেন, 'আপনাকে সবাই একঘরে করবে, জানেন তো। আপনি যে একটি আস্ত শকুনির

14

প্রোফেসর শঙ্কু ও বাগ্দাদের বাক্স

2 November 2023
1
0
0

১৯শে নভেম্বর গোল্ডস্টাইন এইমাত্র পোস্টআপিসে গেল কী একটা জরুরি চিঠি ডাকে দিতে। এই ফাঁকে ডায়রিটা লিখে রাখি। ও থাকলেই এত বকবক করে যে তখন ওর কথা শোনা ছাড়া আর কোনও কাজ করা যায় না। অবিশ্যি প্রোফেসর পেত্

15

স্বপ্নদ্বীপ

2 November 2023
1
0
0

২২শে মার্চ অনেকে বলেন যে, স্বপ্নে নাকি আমরা সাদা আর কালো ছাড়া অন্য কোনও রং দেখি না। আমার বিশ্বাস আসল ব্যাপারটা এই যে, বেশিরভাগ সময় স্বপ্নের ঘটনাটাই কেবল আমাদের মনে থাকে; রং দেখেছি কি না দেখেছি, সেট

16

আশ্চর্য প্রাণী

3 November 2023
1
0
0

১০ই মার্চ গবেষণা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। আমার জীবনে এর আগে এ রকম কখনও হয়নি। একমাত্র সান্ত্বনা যে এটা আমার একার গবেষণা নয়, এটার সঙ্গে আরও একজন জড়িত আছেন । হামবোল্টও বেশ মুষড়ে পড়েছে। তবে এত সহজে নিরুদ্যম

17

মরুরহস্য

3 November 2023
2
0
0

১০ই জানুয়ারি নতুন বছরের প্রথম মাসেই একটা দুঃসংবাদ। ডিমেট্রিয়াস উধাও! প্রোফেসর হেক্টর ডিমেট্রিয়াস, বিখ্যাত জীবতত্ত্ববিদ। ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত ক্রীট দ্বীপের রাজধানী ইরাক্লিয়ন শহরের অধিবাসী ছিলেন ডিম

18

কভার্স

3 November 2023
1
0
0

১৫ই আগস্ট পাখি সম্পর্কে কৌতূহলটা আমার অনেক দিনের। ছেলেবেলায় আমাদের বাড়িতে একটা পোষা ময়না ছিল, সেটাকে আমি একশোর উপর বাংলা শব্দ পরিষ্কারভাবে উচ্চারণ করতে শিখিয়েছিলাম। আমার ধারণা ছিল, পাখি কথা বললেও

19

একশৃঙ্গ অভিযান

4 November 2023
3
0
0

১লা জুলাই আশ্চর্য খবর। তিব্বত পর্যটক চার্লস উইলার্ডের একটা ডায়রি পাওয়া গেছে। মাত্র এক বছর আগে এই ইংরাজ পর্যটক তিব্বত থেকে ফেরার পথে সেখানকার কোনও অঞ্চলে যাম্‌পা শ্রেণীর এক দস্যুদলের হাতে পড়ে। দস্য

20

ডক্টর শেরিং-এর স্মরণশক্তি

4 November 2023
1
0
0

২রা জানুয়ারি আজ সকালটা বড় সুন্দর। চারিদিকে ঝলমলে রোদ, নীল আকাশে সাদা সাদা হৃষ্টপুষ্ট মেঘ, দেখে মনে হয় যেন ভুল করে শরৎ এসে পড়েছে। সদ্য পাড়া মুরগির ডিম হাতে নিলে যেমন মনটা একটা নির্মল অবাক আনন্দে

21

হিপনোজেন

5 November 2023
1
0
0

৭ই মে আমার এই ছেষট্টি বছরের জীবনে পৃথিবীর অনেক জায়গা থেকে অনেকবার অনেক রকম নেমন্তন্ন পেয়েছি; কিন্তু এবারেরটা একেবারে অভিনব। নরওয়ের এক নাম-না-জানা গণ্ডগ্রাম থেকে এক এক্সপ্রেস টেলিগ্রাম; টেলিগ্র

22

শঙ্কুর শনির দশা

5 November 2023
2
0
0

৭ই জুন আমাকে দেশ বিদেশে অনেকে অনেক সময় জিজ্ঞাসা করেছে আমি জ্যোতিষে বিশ্বাস করি। কি না। প্রতিবারই আমি প্রশ্নটার একই উত্তর দিয়েছি—আমি এখনও এমন কোনও জ্যোতিষীর সাক্ষাৎ পাইনি যাঁর কথায় বা কাজে আমার জ্য

23

শঙ্কুর সুবর্ণ সুযোগ

6 November 2023
2
0
0

২৪শে জুনইংলন্ডের সল্সবেরি প্লেনে আজ থেকে চার হাজার বছর আগে তৈরি বিখ্যাত স্টোনহেঞ্জের ধারে বসে আমার ডায়রি লিখছি। আজ মিড-সামার ডে, অর্থাৎ কর্কটক্রান্তি । যে সময় স্টোনহেঞ্জ তৈরি হয়, তখন এ দেশে প্রস্তর

24

মানরো দ্বীপের রহস্য

6 November 2023
1
0
0

মানরো দ্বীপ, ১২ই মার্চএই দ্বীপে পৌঁছানোর আগে গত তিন সপ্তাহের ঘটনা সবই আমার ডায়রিতে বিক্ষিপ্তভাবে লেখা আছে। হাতে যখন সময় পেয়েছি তখন সেগুলোকেই একটু গুছিয়ে লিখে রাখছি। আমি যে আবার এক অভিযানের দলে ভিড

25

কম্পু

8 November 2023
0
0
0

১২ই মার্চ, ওসাকা আজ সারা পৃথিবী থেকে আসা তিনশোর উপর বৈজ্ঞানিক ও শ'খানেক সাংবাদিকের সামনে কম্পুর ডিমনস্ট্রেশন হয়ে গেল। ওসাকার নামুরা টেকনলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের হলঘরের একপ্রান্তে মঞ্চের উপর একটা তিন ফু

26

মহাকাশের দূত

8 November 2023
0
0
0

২২শে অক্টোবরপ্রিয় শঙ্কু,ব্রেন্টউড, ১৫ই অক্টোবরমনে হচ্ছে আমার বারো বছরের পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের ফল পেতে চলেছি। খবরটা এখনও প্রচার করার সময় আসেনি, শুধু তোমাকেই জানাচ্ছি।কাল রাত একটা সাঁইত্রিশে এপসাইলন ই

27

নকুড়বাবু ও এল ডোরাডো

9 November 2023
0
0
0

১৩ই জুনআজ সকালের ঘটনাটা আমার কাজের রুটিন একেবারে তছনছ করে দিল। কাজটা অবিশ্যি আর কিছুই না : আমার যাবতীয় আবিষ্কার বা ইনভেশনগুলো সম্বন্ধে একটা প্রবন্ধ লিখছিলাম সুইডেনের বিখ্যাত 'কসমস' পত্রিকার জন্য। এ ক

28

শঙ্কুর কঙ্গো অভিযান

9 November 2023
0
0
0

প্রিয় শঙ্কু,আমার দলের একটি লোকের কালাজ্বর হয়েছে তাই তাকে নাইরোবি পাঠিয়ে দিচ্ছি। তার হাতেই চিঠি যাচ্ছে, সে ডাকে ফেলে দেবার ব্যবস্থা করবে। এই চিঠি কেন লিখছি সেটা পড়েই বুঝতে পারবে। খবরটা তোমাকে না দি

29

প্রোফেসর শঙ্কু ও ইউ.এফ.ও.

11 November 2023
0
0
0

১২ই সেপ্টেম্বরইউ. এফ.ও. অর্থাৎ আনআইডেনটিফাইড ফ্লাইং অবজেক্ট অর্থাৎ অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তু। এই ইউ.এফ.ও. নিয়ে যে কী মাতামাতি চলছে গত বিশ-পঁচিশ বছর ধরে। সারা বিশ্বে বহু সমিতি গড়ে উঠেছে, যাদের কাজই হল এই ই

30

আশ্চর্জন্তু

11 November 2023
0
0
0

আগস্ট ৭আজ এক আশ্চর্য দিন।সকালে প্রহ্লাদ যখন বাজার থেকে ফিরল, তখন দেখি ওর হাতে একটার জায়গায় দুটো থলি। জিজ্ঞেস করাতে বলল, 'দাঁড়ান বাবু, আগে বাজারের থলিটা রেখে আসি। আপনার জন্য একটা জিনিস আছে, দেখে চমক

31

প্রোফেসর রন্ডির টাইম মেশিন

11 November 2023
0
0
0

নভেম্বর ৭পৃথিবীর তিনটি বিভিন্ন অংশে তিনজন বৈজ্ঞানিক একই সময় একই যন্ত্র নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে, এরকম সচরাচর ঘটে না। কিন্তু সম্প্রতি এটাই ঘটেছে। এই তিনজনের মধ্যে একজন অবিশ্যি আমি, আর যন্ত্রটা হল টাইম মে

32

শঙ্কু ও আদিম মানুষ

12 November 2023
0
0
0

এপ্রিল ৭ নৃতত্ত্ববিদ ডা. ক্লাইনের আশ্চর্য কীর্তি সম্বন্ধে কাগজে আগেই বেরিয়েছে। ইনি দক্ষিণ আমেরিকায় আমাজনের জঙ্গলে ভ্রমণকালে এক উপজাতির সন্ধান পান, যারা নাকি ত্রিশ লক্ষ বছর আগে মানুষ যে অবস্থায় ছিল

33

নেফ্রুদেৎ-এর সমাধি

12 November 2023
0
0
0

ডিসেম্বর ৭ এইমাত্র আমার জার্মান বন্ধু ক্রোলের কাছ থেকে একটা টেলিগ্রাম পেলাম। কোল লিখছে— সব কাজ ফেলে কায়রোতে চলে এসো। তুতানখামেনের সমাধির মতো আরেকটি সমাধি আবিষ্কৃত হতে চলেছে। সাকারার দু মাইল দক্ষিণে

34

শঙ্কুর পরলোকচর্চা

12 November 2023
0
0
0

সেপ্টেম্বর ১২ আজ বড় আনন্দের দিন। দেড় বছর অক্লান্ত পরিশ্রমের পর আজ আমাদের যন্ত্র তৈরির কাজ শেষ হল। 'আমাদের' বলছি এই কারণে যে, যদিও যন্ত্রের পরিকল্পনাটা আমার, এটা তৈরি করা আমার একার পক্ষে সম্ভব ছিল ন

35

শঙ্কু ও ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন

12 November 2023
0
0
0

৭ মে কাল জার্মানি থেকে আমার ইংরেজ বন্ধু জেরেমি সন্ডার্সের একটা চিঠি পেয়েছি। তাতে একটা আশ্চর্য খবর রয়েছে। চিঠিটা এখানে তুলে দিচ্ছি। প্রিয় শঙ্কু, জার্মানিতে আউগ্‌গ্সবুর্গে এসেছি ক্রোলের সঙ্গে ছুটি

36

ডাঃ দানিয়েলির আবিষ্কার

12 November 2023
0
0
0

১৫ এপ্রিল, রোম কাল এক আশ্চর্য ঘটনা। এখানে আমি এসেছি একটা বিজ্ঞানী সম্মেলনে। কাল স্থানীয় বায়োকেমিস্ট ডাঃ দানিয়েলির বক্তৃতা ছিল। তিনি তাঁর ভাষণে সকলকে চমৎকৃত করে দিয়েছেন। অবিশ্যি আমি যে অন্যদের মতো

37

ডন ক্রিস্টোবাল্ডির ভবিষ্যদ্বাণী

13 November 2023
0
0
0

সেপ্টেম্বর ৬ আজ আমার বন্ধু জেরেমি সন্ডার্সের কাছ থেকে একটা আশ্চর্য চিঠি পেয়েছি। সেটা হল এই— প্রিয় শঙ্কু, তোমাকে একটা অদ্ভুত খবর দেবার জন্য এই চিঠির অবতারণা। আমাদের দেশের কাগজে খবরটা বেরিয়ে

38

স্বর্ণপর্ণী

13 November 2023
0
0
0

১৬ জুনআজ আমার জন্মদিন । হাতে বিশেষ কাজ নেই, সকাল থেকে টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে, আমি বৈঠকখানায় আমার প্রিয় আরামকেদারাটায় বসে কড়িকাঠের দিকে চেয়ে আকাশপাতাল ভাবছি। বৃদ্ধ নিউটন আমার পায়ের পাশে কুণ্ডলী

---